এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  পর্যালোচনা (রিভিউ)  সিনেমা

  • চালচিত্র এখন

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    পর্যালোচনা (রিভিউ) | সিনেমা | ২৭ মে ২০২৪ | ১২৯৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৫ জন)
  • 'চালচিত্র এখন' দেখতে দেখতে  হঠাৎই মনে পড়ল, এই শহরে একদা সত্যজিৎ রায় বসবাস করতেন। সেই সত্যজিৎ, এক কলকাতা বিশেষজ্ঞ যাঁর কাছে দেশলাইয়ের ইতিহাস জানতে গিয়েছিলেন। দেশলাই নিয়ে সত্যজিৎ কেন? কারণ, শতরঞ্জ কি খিলাড়ি বানাতে গিয়ে, হুঁকো কীকরে ধরানো হয়, জানার দরকার পড়েছিল সত্যজিতের। এবং উনবিংশ শতকে দেশলাই চালু হবার ইতিহাস নিয়ে রীতিমতো অনুসন্ধান করেছিলেন তিনি। স্রেফ একটা সিনেমার সামান্য একটা টুকরোর জন্য। 

    ফালতু অত পরিশ্রম না করলে কীই বা হত। ১৮৫৬ সালে ফস করে শিপ দেশলাই জ্বালিয়ে হুঁকো কিংবা প্রদীপ ধরানো হচ্ছে দেখালে কিশোরকুমারপ্রিয় গোদা দর্শকদের আহা-উহু কিছু কম পড়তনা। এখন অমনটা হয়েই থাকে। ওটাই রীতি। এই কদিন আগেই ঘটিয়াখ্যাত অনুরাগ কাশ্যপ বুলবুল নামক একটা সিনেমার গুছিয়ে প্রশংসা করলেন। সেখানে নায়করা হালফ্যাশানের পোশাক পরে, নায়িকা দোল খেতে-খেতে এমন একখানা রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়, যা লেখা হয়েছিল সিনেমার সময়কালের অন্তত বছর কুড়ি পরে, এবং তাতে কিছু যায় আসেনি। 

    চালচিত্র এখন সিনেমাটাও এই রীতি অনুসরণ করেই বানানো। যদিও অত পুরোনো না, এবং অত গভীর অনুসন্ধানেরও প্রয়োজন পড়তনা, কিন্তু সেটুকুও করার দরকার মনে হয়নি। এই সিনেমায় আশির দশকের কলকাতায় দিব্যি ল্যাজ তুলে ঘুরে বেড়ায় নীল-হলুদ বেসরকারি বাস, আশিতে সেসব বাস কেউ চোখে দেখেনি। শব্দ শোনা গেলে তারা হয়তো নিউটাউন-নিউটাউন বলেও হাঁক পাড়ত। দেখা যায়, সবুজ অটো। নায়কের বৌয়ের নাম মাঝেমধ্যেই মিতা থেকে বদলে গীতা হয়ে যায়। এবং মিতা ওরফে গীতা মিনার্ভা থেকে উত্তরপাড়া যেতে নিয়মিত শিয়ালদহ স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরেন। শিয়ালদা থেকে উত্তরপাড়া ট্রেনে চড়ে যাওয়া একেবারে অসম্ভব কিছু না, কিন্তু সে তো নৈহাটি-ব্যান্ডেল হয়েও যাওয়া যায়, সাধারণভাবে সুস্থ লোকে ওই দিক দিয়ে নিয়মিত যায় না আর কি।

    না, ভাববেননা, সিনেমাটাকে গাল দেবার জন্য লিখছি। গাল অবশ্যই দিলাম, এবং এ তো শুধু কয়েকটা জিনিস,  এছাড়াও আরও বহু কিছু বার করা যায় যা লিখলাম না, কিন্তু তাতেও জিনিসটা বসে দেখা গেছে, এবং সত্যি কথা বলতে কি, গুরুত্বপূর্ণই লেগেছে। গুরুত্বপূর্ণ কেন? কারণ, সিনেমার প্রেক্ষাপট, মূলত আশির দশকের। সেটা বামফ্রন্ট জমানার প্রথম দিক। বাংলা বাণিজ্যিক সিনেমা, দাদার-কীর্তির গামা সাফল্যের পর মোটামুটি মায়ের ভোগে যেতে বসেছে।সমান্তরাল সিনেমার দিকপালরা যদিও স্বমহিমায়। সত্যজিৎ রায়  হীরক-রাজার-দেশে বানানোর পর সাময়িক বিরতিতে। মৃণাল সেন কাজ করছেন, তিনিই তো এই সিনেমার উপজীব্য। তপন সিংহ, কয়েক বছর পর বানাবেন আতঙ্ক, যার 'মাস্টারমশাই, আপনি কিন্তু কিছুই দেখেননি' বহুদিন ধরে মুখে-মুখে ফিরবে। ওই বছরই  চালু হবে 'সানন্দা', যাকে তখন মেয়েদের পত্রিকা, এবং পরে লাইফস্টাইল-পত্রিকা বলা হবে। এবং ক্রমশ উঠে আসবেন ঋতুপর্ণ ঘোষ, যাঁর সিনেমা দেখে মনে হবে ঠিক যেন সানন্দার গৃহসজ্জা। পরিচালক হিসেবে উঠে আসবেন অপর্ণা সেন এবং অঞ্জন দত্ত স্বয়ং। উনুনের ধোঁয়া, বিচ্ছিরি দেখতে ঘেমো লোক, প্লাক-না-করা মেয়েছেলে, রঙচটা দেওয়াল, এরা সব  সিনেমা থেকে হাওয়া হয়ে যাবে ক্রমশ। গৌতম ঘোষ বা বুদ্ধদেব দাশগুপ্তরা থাকবেন বটে, কিন্তু ততটা ফোকাসে না। তারও পরে আসবে এসভিএফ যুগ, যখন দু-চারটে ব্যতিক্রম ছাড়া, আর দেখে বোঝার উপায় থাকবেনা, যে কলকাতা নিয়ে সিনেমা হচ্ছে, সেটা সত্যিই পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা কিনা। এর কিছু সিনেমা দেখতে চমৎকার হবে, কিছু অখাদ্য, কিন্তু এগুলো যে বাংলা সিনেমা, বোঝার কোনো উপায় থাকবেনা। এবং তেরোখানা মাল্টিপ্লেক্সের বাইরে এসব আর কেউ দেখবেনা।

    তপন সিংহর আতঙ্ক থেকে উনিশে-এপ্রিল বা যুগান্ত - এদের কালগত দূরত্ব কতই বা, বছর দশেক। কিন্তু স্থানগত দূরত্ব অসীম। মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তের রংচটা বাস্তব থেকে উচ্চাকাঙ্খী সিঁড়িভাঙা শাইনিং উচ্চমধ্যবিত্তের ডিজাইনার বাস্তবতা। সিনেমা হল থেকে মাল্টিপ্লেক্স। দোকান থেকে শপিং মল। ছোটোলোক থেকে আনন্দলোক। মাত্র দশ বছরে কী করে পুরোটা এভাবে বদলে যেতে পারে, তার নানারকম ব্যাখ্যা থাকা সম্ভব। কিন্তু চলচ্চিত্রকারদের ব্যক্তিগত যাত্রাপথটা সেভাবে লিপিবদ্ধ না। এই সিনেমাটাই প্রথম, যেটা, আমার দেখায়, পুরোটা খুলে দেখানোর চেষ্টা করল। সেই জন্যই সিনেমাটা গুরুত্বপূর্ণ। 

    সিনেমায় গপ্পো বিশেষ নেই, তাতে সমস্যাও কিছু নেই, যা আছে, তা মূলত কলকাতার প্রেক্ষাপটে এক আধা-আমেরিকান তরুণের কথা। যে, গিটার বাজিয়ে ইংরিজি গান গায়, স্টেটসম্যানে ইংরিজিতে প্রবন্ধ লেখে, স্বপ্নে দেখে আলপাচিনোকে। সে দার্জিলিং ভালোবাসে, সম্ভবত তার কনভেন্ট ইশকুলকেও, কলকাতাকে অপছন্দ করে, জার্মান নাটক পড়ে, সাদের ইরোটিক লেখাকে মঞ্চে তুলে আনার চেষ্টা করে। মৃণাল সেনের পাল্লায় পড়ে সে ঢুকে পড়ে বাঙালি সংস্কৃতির বৃত্তে। নিম্নমধ্যবিত্ত এক বাঙালির চরিত্রে অভিনয় করে। গপ্পে এর চেয়ে বেশি কিছু নেই। ছেলেটি এর পরে একসময় বাঙালি সংস্কৃতির নেতৃস্থানীয় জায়গায় চলে আসনে, সেটাও না। 

    কিন্তু গল্প তো শুধু কাহিনীরেখাটা নয়, কীভাবে বলা হচ্ছে, তাও গপ্পেরই অংশ, বা পরা-গল্প। সেই পরা-গল্পের সুতোটা যদি অনুসরণ করি, তো দেখব, সিনেমায় আছে শুধু আমেরিকা। ব্যাকগ্রাউন্ডে যতগুলি গান, সেখানে নিউ-অর্লিয়েন্স থেকে শুরু করে ক্যালিফোর্নিয়ার ছড়াছড়ি। এমনকি শেষে একখানা ইংরিজি গানও আছে, কারণ বাংলায় বোধহয় সবটুকু বলে ওঠা যায়নি। শুরুর দিকের যত সংলাপ, তার অর্ধেকের বেশি ইংরিজিতে। কাগজের নাম স্টেটসম্যান। নায়কের বৌ পড়ায় গোখেলে। নায়কের নাটকের দল ফরাসি বিপ্লব এবং সাদ নিয়ে ভাবে। ওইটাই জগৎ।  ওইটাই স্বপ্ন। তারপর সে থেকে যায় কলকাতায়। যীশু যেভাবে থেকে গিয়েছিলেন দুঃখের পৃথিবীতে, সেইভাবে। শ্রীচৈতন্য বা মহম্মদ না বলে যে যীশু বলা হল, সেটা ইচ্ছাকৃত। কারণ যীশু ইউরোপীয়, আর বাঙালির যীশু মোটের উপর ইংরেজ, যারা আবার প্রায় আমেরিকান। পরে এই ছেলেটি সেই যীশুর ভাষায় গানও গাইবে, মেরি-অ্যান মেরি-অ্যান। সেটা অবশ্য সিনেমায় নেই।

    সব মিলিয়ে বিষয়টা পরিষ্কার। ১৯৮৬ থেকে ৯৬ - এই দশ বছরে, আমেরিকা-ইউরোপ থেকে ক্রমশ টপকে পড়েছে বাঙালি সংস্কৃতির নেতৃত্ব। তৈরি হয়েছে এক উচ্ছিষ্ট উপনিবেশ। তার আগে, বাংলা সিনেমার সত্তর বছরের যে বোঝা ছিল, তাকে তাই ছুঁড়ে ফেলা গেছে অতি সহজে। এখন বাংলা গান হয় মূলত আমেরিকান সুরে। বাংলা সিনেমা হয় আমেরিকান অন্তরাত্মা নিয়ে। খোলসটাই শুধু কলকাতার, বা বাংলার। তাই আশির দশকের বাস নীল হয়ে গেলেও কিছু আসে যায়না, আসল  কথা তো ডিটেলিং না, অন্তরাত্মাটুকু। শিয়ালদা দিয়ে উত্তরপাড়া যাওয়াও ভুল কিছু না। কলকাতার বাইরে যা উত্তরপাড়া, তাই উত্তরবঙ্গ, কলকাত্তাইয়া উচ্চবর্ণের কী আসে যায়। যিনি সিনেমার নাম দেন ম্যাডলি বাঙালি, তাঁর কাছে এসবে কিছু এসে যাবার কথা না। সমস্যাটা আমাদের, যারা বামফ্রন্ট সরকারের প্রথম যুগটা দেখেছি, যারা অশোক-মিত্রকে দেখেছি, যারা নামসংকীর্তন, টপ্পা-ঠুংরি, জয়-বাবা-তারকনাথ, যাত্রাপালা, এইসব হাপ-মফস্বলী জিনিসকেও বাঙালিত্বের অভিজ্ঞান ভাবি। আপনারও যদি এইসব ঢপের খোঁয়াড়ি থেকে থাকে তো,  এই সিনেমা দেখুন বিদেশী সিনেমা দেখছেন ভেবে। বাংলা সিনেমায় প্রায়-ইংরিজি ডিলানের গান, বৌবাজারের মোড়ে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, ঠিক করে গুঁজে দিলে তো মজাই লাগে। সেটাও আজকাল অবশ্য দেখা যায়না। সেদিক থেকে এটা সম্ভবত ভালই লাগবে, নইলে পুরোটা দেখতামও না, প্রতিক্রিয়াও দিতামনা। কেবল  মাঝে-মধ্যে মনে পড়ে যেতে পারে, এই সেই শহর, যেখানে একদা সত্যজিৎ রায় বসবাস করতেন। সেইটাই একটু ঝামেলা। 
     
     
    পুঃ ছবিটা সিনেমার নয়। মজা করে দেওয়া। 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • পর্যালোচনা (রিভিউ) | ২৭ মে ২০২৪ | ১২৯৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:1d39:fb00:be8d:***:*** | ২৭ মে ২০২৪ ০৭:২৬532362
  • এই রিভিউটা পড়ে মনে হলো সিনেমাটা দেখে সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না, তার চেয়ে থ্রি ডেজ অফ কন্ডর দেখে ফেলা যায়, রবার্ট রেডফোর্ড, ফে ডানঅ্যাওয়ে, আর ম্যাক্স ভন সিডো আছেন। 
  • অদিতি সেনগুপ্ত | 2409:4061:40e:c335::1be2:***:*** | ২৭ মে ২০২৪ ০৭:৪৯532363
  • ছবিটা কিছুটা দেখার পরেই আর এগোতে ইচ্ছে করেনি। আপনি অসম্ভব খুঁটিনাটি ত্রুটি তুলে ধরেছেন। এবং সর্বোপরি আত্মা যে পরদেশি সেকথা একেবারে অনস্বীকার্য। না এগিয়ে কিছুমাত্র ভুল হয় নি তাহলে। 
  • অরিন | 132.18.***.*** | ২৭ মে ২০২৪ ০৮:৪৩532364
  • এও ইন্টারেস্টিং যে মৃণাল সেনের ওপর সিনেমা তোলা হচ্ছে তা ছবিতে তাঁর নাম তাঁরই ছেলের নামে রাখা হয়েছে  :-)
    রঞ্জন এর ​​​​​​​জায়গায় ​​​​​​​নীল ​​​​​​​হয়নি ​​​​​​​কিন্তু | 
     
    একটা সিনেমায় পিরিয়ড ধরে রাখা যে জরুরী এই ব্যাপারটা না থাকলে সত্যি দৃষ্টিকটু লাগে | আপনার রিভিউ পড়ে মনে হচ্ছে এ সিনেমা দেখার মতন কিছু না | কাটিয়ে দেওয়া যেতে পারে | 
  • Kishore Ghosal | ২৭ মে ২০২৪ ১২:০২532371
  • সিনেমাটা দেখেছি।   সৈকতের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত হয়েও বলছি সিনেমাটা বসে অন্ততঃ একবার দেখা যায়। কিছু দিন  আগে মহাপরিচালক সৃজিতবাবুর "অতি উত্তম"-এর মতো নয় - হাফটাইমে হল থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম।  তবে এটাও ঠিক মৃণালবাবুর দুটো সিনেমা ছাড়া কোন সিনেমাই আমার আহামরি কিছু মনে হয়নি। তবু আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালী পরিচালকের  এই খণ্ড জীবনকাহিনীটুকু মন্দ লাগেনি।  
    "চালচিত্র এখন" দেখতে বসে, মনে আসে অনীক দত্তর "অপরাজিত" সিনেমার কথাও -  অর্থাৎ মৃণাল সেন বনাম সত্যজিৎ - কোন দিক দিয়েই কোন তুলনা হয়?  
     
    "বৌবাজারের মোড়ে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, ঠিক করে গুঁজে দিলে তো মজাই লাগে"  শুধু মজা ?  একেবারে গিরগিটিয়া হয়ে ওঠে। 
  • পাপাঙ্গুল | ২৭ মে ২০২৪ ১২:২২532374
  • অঞ্জন দত্তের সিনেমায় এরকম অনেক টেকনিক্যাল ভুল থাকে। কিন্তু যেটা বলার , অঞ্জন সিনেমায় বা গানে কিছু ফেক করেন না। শিল্পী হিসেবে নিজে যেটা মনে করেন বা যেটা দেখেছেন , সেটাই বানান। কলকাতার 'বং' শ্রেণীর প্রতিনিধি হিসেবেই নিজের কাজে এই মার্কিন ঘেঁষা জিনিসগুলো রাখেন , তার অনেক উত্তরসূরি শিল্পীদের [সৃজিত ইত্যাদি] মত বাজারের কথা চিন্তা না করেই। এই ছবিতেও একজায়গায় মনে হয় ছিল যেখানে নাটকের দলের একটা ছেলে অঞ্জনকে বলে -" লোকাল ট্রেনে করে নাটকের রিহার্স্যাল করতে আসার যন্ত্রণা তুই কি বুঝবি রে ?" অঞ্জনকে আজকের ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী বা প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য্যের মত ইন্ডি ছবি বানিয়েদের পূর্বসূরি বলেই মনে করি।
     
    "১৯৮৬ থেকে ৯৬ - এই দশ বছরে, আমেরিকা-ইউরোপ থেকে ক্রমশ টপকে পড়েছে বাঙালি সংস্কৃতির নেতৃত্ব। তৈরি হয়েছে এক উচ্ছিষ্ট উপনিবেশ।" -  এই কথাটা মৃণাল সেন নিজে যতটা ভাল বুঝতে পেরেছিলেন , সত্যজিৎ ততটা পারেননি। মৃণাল সেনের শেষ দিকের 'মহাপৃথিবী' বা 'অন্তরীণ'কে সেজন্য 'শাখা প্রশাখা' বা আগন্তুকের থেকে অনেক ভাল বলে মনে হয়েছে। 
  • সিএস  | 103.99.***.*** | ২৭ মে ২০২৪ ১২:৪৩532377
  • সিনেমাটা দেখিনি, ট্রেলার দেখেছি, সিনেমাটার নাম কুনাল সেনের যে সিনেমা থেকে নেওয়া হয়েছে সেটা দেখা আছে (যদিও এই সিনেমাটার নামে 'এখন' কেন জোড়া হয়েছে সে বুঝিনি), কিন্তু হাত নিশপিশ করছে এটা বলতে, রিভিউটি পড়ে, যে আইডেন্টিটি পলিটিক্সের প্রতি আগ্রহ আর অ্যান্টি - উপনিশবাদ ইত্যাদি, শিল্প - সাহিত্য নিয়ে লিখতে গিয়ে ক্রমশঃ parochial হয়ে উঠছে, হচ্ছে কারণ পঃবঃ -র ১৯৮০ - ৯০ দশ জুড়ে ঘটে চলা, যাকে বলে সামাজিক - রাজনৈতিক পরিবর্তন, সে সব গণ্য করছে না।

    এই সিনেমাটি যে বানিয়েছে, যদি তার আত্মজীবনের সাথে সিনেমার চরিত্রটিকে মিলিয়ে দেখি (দেখা ঠিক হবে কিনা জানিনা, কারণ সিনেমাটি দেখিনি) তাহলে বলার ১৯৭৮ - ৮০ সময় জুড়ে সেই লোকটি বিদেশী নাটকের অভিনয় করত, খুবই অল্প পরিসরে, বিবিধ হলের বেসমেন্টে, বা পিটার হ্বাইসের 'মারা / সাদে" নাটকের অভিনয় অ্যাকাডেমিতে করতে গিয়ে অতি-বামপন্থীদের দ্বারা অপসংস্কৃতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিল, নাটক বন্ধও হয়েছিল মনে হয়, পরে গিয়ে সে বাঙালী জীবনের বা কলকাতা শহরের বিশেষ দিক নিয়েও সিনেমা বানিয়েছিল (বো ব্যারাক), সেসবের মূল্যমান কেমন সে তর্কে না গিয়ে বলা যায়, কলকাতা শহরের, তথাকথিত বাঙালী মধ্যবিত্তদের থেকে প্রান্তিক অবস্থায় যারা থাকছে তাদের নিয়ে সিনেমা করার অন্তত চেষ্টা করেছে। তো এই দিক যেমন বাংলা সিনেমায় যেমন হয়নি, তেমন মারা / সাদে নাটকের অভিনয়ও বাংলা নাটকে বিদেশী নাটকের ব্যবহারের কন্টিনিউশনের সাথে যুক্ত করে দেখা যায় (ব্রেখটের পরে যেমন পিটার হ্বাইস)। তো এইসব নানারকমের ব্যাপার আছে, এও আছে যে যুগান্ত সিনেমাটি আশ্চর্যভাবে চেষ্টা করেছিল এক দম্পতির ক্রাইসিসের সাথে পৃথিবী বা প্রকৃতির ক্রাইসিসকে যুক্ত করর, কিন্তু দম্পতিটির আচরণ যে ন্যাকামিসুলভ অর্থাৎ বাঙালী মধ্যবিত্ত পরিবার বা জীবনের বাইরে, সেও শুনেছি। তো, এই লেখাটি এইসব প্রসঙ্গ নিয়ে এল, কারণ সিনেমাটির চরিত্ররা বাস্তবের যেসব চরিত্রের ছায়া, তাদের সাথে এসব যুক্ত, কিন্তু লেখাটি এইসব ধরেনি, হয়ত সিনেমাটিও এতকিছু ধরেনি বলেই।
     
     
  • বিপ্লব রহমান | ২৭ মে ২০২৪ ১২:৫৮532378
  • স্বীকার করি, বেশ কিছু ত্রুটি সত্যিই আছে। কিন্তু মৃণাল সেন, এমনকি অঞ্জন দত্তকেও পুনর্নির্মাণে এই ছবি ইতিহাস হয়ে থাকবে। 
     
    অভিনয়, নির্মাণ ও গানে অঞ্জন নিজেকেই ছাপিয়ে গেছেন। 
     
    ব্রাভো broken heart
  • সিএস  | 103.99.***.*** | ২৭ মে ২০২৪ ১৩:০৫532379
  • সিনেমাটি দেখিনি বলে যা লিখছি তা ঠিক লিখছি কিনা বুঝতে পারছি না কিন্তু ইংরেজীনবিশ ভাব, ডিলান - বিদেশী নাটক ইত্যাদি থেকে চরিত্রটি যদি নিম্নমধ্যবিত্ত জীবন নিয়ে সিনেমায় অভিনয় করতে যায়, তাহলে হয়ত ঐসব বিষয়গুলিকে চরিত্রটির পরিবর্তনের প্রমাণ হিসেবে রাখা হয়েছে। কিন্তু সেসব সিনেমা হয়ে উঠেছে কিনা, নাকি নিছকই তথ্য হয়ে থাকছে, সে আমি জানি না। ব্যাপার হল, ১৯৮০ - ৯০ সময় জুড়ে, বাস্তবের চরিত্রদের নিয়েই অতি উৎকৃষ্ট সিনেমা হয়ত বানানো যেত, পঃ বঃ -এর বদলে যাওয়া অবস্থা নিয়ে, কিন্তু যা মনে হল, সিনেমাটিতে "এখন" শব্দটি রাখলেও গল্পটি তখন - এরই, ফলে সিনেমাটি ব্যাপ্তি পায়নি, হ্যাঁ, বলতে পারি সেটি না করতে পারার সঙ্গে পরিচালকের বোধের অভাব, ক্ষমতার অভাব ইত্যাদি যুক্ত হয়ত, বাজারও যুক্ত নিশ্চয়, সেইজন্য বাঙালী স্টলওয়ার্টদের নিয়ে বাওপিক বা ট্রিবিউট তৈরী হচ্ছে, সেসবে নামগুলি যত না থাকছে, তাদের দেশ - কাল - সময় বিশেষ থাকছে না এবং এই না করে উঠতে পারার সাথেও দেশ - কাল - বাজারও যুক্ত।
  • অরিন্দম চক্রবর্তি | 103.238.***.*** | ২৭ মে ২০২৪ ১৩:৪৬532380
  • সিনেমার নাম "চালচিত্র এখন" সিনেমার প্রচারে কোথাও বলা নেই এই ছবি মৃণাল সেনের বায়োপিক। তাই সেই সময়কে হুবহু ফ্রেমে আনতে হবে এমন দায় নেই। আর সবচে বড় ম্যাজিক লুকিয়ে আছে কলকাতায়। সেই ট্রাম, সেই হলুদ ট্যাক্সি, হাতেটানা রিকসা, মুটে। উত্তরের গলি, উঠোনওয়ালা বাড়ি, সবই আছে। একেবারে ফিনিক্স পাখির মতন। অঞ্জন শুধু সেই সময়ের চালচিত্র নির্মানের পিছনের গল্পটা আমাদের বলছেন। আজকের লোকদের। 

    স্ক্রিপ্ট না দিয়েই অ্যাকশান , কাট। প্রতিদিন হাজারো সমস্যা তবুও তারমধ্যে ভালোবাসার শহর কলকাতাকে খুঁজে পাওয়া। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, ইত্যাদি। 

    এই নিয়েই এই সিনেমা। 
    -----------
    অন্যদিকে সমালোচক সৈকত বাবুর অবস্থান দেখে হাসি পাচ্ছে। রোজ 'আমরা বাঙালি ' স্টাইলে বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান বলে চিৎকার করে, কার্যক্ষেত্রে বাংলা সিনেমাকে ন্যাংটো করছেন। সেই অতীতে বিলাসী সত্যজিৎ বাবু কী করেছেন !!!!!
  • অরিন | 2404:4404:1732:e000:e94a:c6f5:58c9:***:*** | ২৭ মে ২০২৪ ১৪:৫৫532387
  • অঞ্জন দত্ত নিজে অবশ্য বলছেন যে এটা তাঁর মৃণাল সেনের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ, কাজেই সিনেমার থিমটা তাঁর "মেন্টর - মেন্টি" সম্পর্ককে কেন্দ্র করে বলেই তো মনে হচ্ছে। (অবশ্য পুরো ছবিটা না দেখে মন্তব্য করছি)
     
    সেক্ষেত্রে চালচিত্র ছবির রেফারেনস টানলে পিরিয়ড ডিটেলস থাকাটা বাঞ্ছনীয়, আমার সৈকতের লেখাটা পড়ে মনে হল সেই সূত্রে সত্যজিৎ রায়ের কথাটা এসেছে। 
     
  • &/ | 151.14.***.*** | ২৯ মে ২০২৪ ০১:০৯532464
  • তাহলে ভালো বাংলা সিনেমা হচ্ছেই না সাম্প্রতিককালে? সিনেমার লোকেদের নিয়ে সিনেমা বানানো জিনিসটা কেমন একটু অধিকন্তু অধিকন্তু হয়ে যায় না? পরিচালকের প্রেম নিয়ে দেখিয়ে দিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ 'বাড়িওয়ালি' সিনেমায়, তারপর থেকেই কি সিনেমার লোকদের নিয়ে এত সিনেমা শুরু হল? কোথাও পরিচালক, কোথাও প্রযোজক, কোথাও নায়ক ?
  • বিপ্লব রহমান | ০৯ জুন ২০২৪ ১১:১৯532939
  • ছবিটিতে অসংগতিগুলো ইচ্ছেকৃত, জানালেন অঞ্জন দত্ত। yes
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন