এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ভোটবাক্স  বিধানসভা-২০২১  ইলেকশন

  • নির্বাচনী প্রচারে জনজীবনের মূল বিষয়গুলি কি উপেক্ষিত?

    অচিন চক্রবর্তী
    ভোটবাক্স | বিধানসভা-২০২১ | ০৬ এপ্রিল ২০২১ | ৩৫০৫ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • আমরা মনভাসি ফেসবুক গ্রুপের পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল, যার শীর্ষক এই নিবন্ধেরও শীর্ষনাম। এই নামে এর আগে আরেকটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে, যা ছিল কুমার রাণার আলোচনার লিখিত রূপ। এই লেখাটি, ওই আলোচনারই দ্বিতীয় ভাগ। এই আলোচনার লিখিত রূপ প্রকাশের অনুমতি দেওয়ার জন্য আমরা মনভাসি ফেসবুক গ্রুপের কাছে গুরুচণ্ডা৯ কৃতজ্ঞ।

    জনজীবন বলতে তো একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে বোঝায় না, বিভিন্ন গোষ্ঠীর জীবনের বাস্তবতা বিভিন্ন। তাই বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাহিদাও বিভিন্ন রকম হওয়াই স্বাভাবিক। এবং সেই চাহিদাটা যে শুধুমাত্র তার নিজস্ব শ্রেণি অবস্থানের জন্য যেটা প্রাসঙ্গিক, সেইটাই যে হতে হবে, তার কোনো মানে নেই। এইটা হল প্রথম কথা। অর্থাৎ, আমি একজন শিক্ষক, আমার চাহিদাটা যে শুধুই আমার মাইনে নিয়ে হতেই হবে, বা আমার চাকরির নিরাপত্তা নিয়েই হতে হবে, তার কোনো মানে নেই। অর্থাৎ, একজন শিক্ষক, একজন শ্রমিক, একজন সরকারি কর্মচারী, কিংবা বেসরকারি কর্মচারী — প্রত্যেকেরই কিন্তু একদম নিজস্ব চাকরি সংক্রান্ত নিরাপত্তা ইত্যাদি ছাড়াও, এর বাইরে গিয়ে অনেকেই অন্যদের অভাব-অভিযোগের বিষয়গুলিও খেয়ালে রাখেন। অর্থাৎ আমি একজন শিক্ষক হিসেবে, অথবা কুমার একজন সমাজকর্মী ও গবেষক হিসেবে যাঁদের কথা বললেন, এই এঁদের কথা বলাটা কিন্তু আমাদের সকলেরই কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে বলে মনে করি, এবং সেই কর্তব্যের জায়গা থেকে বলতে বলতে হয়তো একটা জায়গায় গিয়ে যাকে আমরা বলি কনভার্জ করা, সেটা হয়তো হতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা যেটা দেখছি, তার মধ্যে কিন্তু আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি না। কারণ রাজনৈতিক কৌশলগুলির মধ্যে একটা প্রধান কৌশলই হচ্ছে বিভাজনের কৌশল। আর সেই বিভাজনটা যতক্ষণ থাকছে, এবং বিশেষত যখন সেই বিভাজনটা সক্রিয়ভাবে তৈরি করা হচ্ছে, তখন কিন্তু ওই যাকে কনভার্জেন্স বলছি – কোথাও একটা জায়গায় গিয়ে মিলিত হওয়া – সেই সম্ভাবনাটাও বিলুপ্ত হতে থাকে। এই একটা জায়গায় মেলার, অর্থাৎ, জনজীবনের যে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো, এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো একটা জায়গায় মিলতে হবে।

    আজকে সপ্তম বেতন কমিশন আমার জন্য হল কি হল না, এইটা নিয়ে দাবিদাওয়াটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আমার মনে হয়, তার থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিশ্চয়ই সেই মানুষটির আয়ের নিশ্চয়তা, যাঁর মাসিক আয় মাত্র পাঁচহাজার টাকা। কিন্তু আমি যখন সপ্তম বেতন কমিশনের কথা বলি, তখন এই ভাবনাটা আমার মধ্যে থাকছে না। এইরকম একটা বিভাজিত সমাজ যেখানে, সেখানে রাজনীতিকরা যে তার সুযোগসুবিধা নেবেন, এটা খুবই স্বাভাবিক। অর্থাৎ, বিভাজনটা কিন্তু গভীরভাবে সামাজিক, রাজনীতিকরা শুধু তার সুযোগটা নিচ্ছেন, এই পর্যন্তই। দেখবেন, তাঁদের বক্তৃতায় তাঁরা কিন্তু শ্রোতাদের ভীষণভাবে খেয়াল রেখেই কথাগুলো বলছেন। যখন যে শ্রোতাদের কাছে যেভাবে বলতে হয়, তাঁরা কিন্তু ঠিক সেভাবেই কথাটা বলেন। অর্থাৎ, যে রাজনীতিক কুমারের সঙ্গে কথা বলবেন, তিনি একভাষায় বলবেন। আবার সেই রাজনীতিক কোনো মাঠে সভাতে গিয়ে যখন বলছেন, তখন তিনিই একেবারে অন্য ভাষায় বলছেন। তাহলে প্রশ্নটা হচ্ছে, এই যে ভাষার এতরকমের স্তরভেদ, এইটাকে কাটিয়ে, এই তুফান কাটিয়ে আমি বা আমরা কীভাবে কতকগুলো মূল বিষয়ে পৌঁছোতে পারব, সেটা কিন্তু যাকে বলে একটা চ্যালেঞ্জ। এই মূল বিষয়গুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে সংবাদ মাধ্যমে আসে, বিভিন্ন মানুষের কথাবার্তায় আসে, টেলিভিশন চ্যানেলের বিতর্কে যতটা আসার কথা ছিল, তার থেকে খুবই কম আসে। কিন্তু এই বাক্যালাপটা থেমে নেই। কিছুটা হলেও হচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে হচ্ছে। যেমন, আজকে দেখবেন অনেক যুবকযুবতীরা, অল্পবয়সীরা, তাঁরা কিন্তু অনেক অনেক প্রশ্ন করছেন, উত্তর খুঁজছেন। এবং আমার ধারণা একটা চাহিদা কিন্তু তৈরি হয়েছে অন্য কিছু শোনার, অন্য কিছু দেখার, অন্য কিছু তলিয়ে দেখার। অন্য কিছু ভাবনার একটা সম্ভাবনা কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেকের মধ্যেই আছে। তো সেই জায়গা থেকে আমি যদি এটাকে আর একটু এগিয়ে নিতে চাই, তাহলে কোন্‌ কোন্‌ সূত্র ধরে আমরা এগোতে পারি, সেই নিয়ে আমি দু-একটা কথা বলব। নিশ্চয়ই সকলেরই নিজস্ব ভাবনা আছে। আর এটা কিছুটা হলেও আমাদের নিজেদের ভাগাভাগি করে নেওয়ার ব্যাপার। এখানে কোনো বক্তৃতার ব্যাপার নেই যে আমি যেটা বলছি সেটাই সঠিক এবং সবাইকে সেটাই গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু যে কথাগুলির সূত্র কুমার ধরিয়ে দিয়েছেন, তার সূত্র ধরে আমি দু-তিনটি কথা বলব।

    নির্বাচন এসে গেলে একটা বস্তু আছে, যাকে আমরা বলি ইস্তাহার বা ম্যানিফেস্টো, সেটি এসে পড়ে। প্রতিটি পার্টির একটি করে ইস্তাহার থাকে এবং ইস্তাহারগুলো কিন্তু প্রকাশিত হয় মোটামুটি পিঠোপিঠি সময়ের মধ্যেই। একটার পরে পরেই আর-একটা ইস্তাহার প্রকাশিত হয়ে যায়। নিশ্চয়ই তার পিছনে অনেক উদ্যম থাকে, অনেক পরিকল্পনাও থাকে সম্ভবত। কিন্তু এবারের ইস্তাহারগুলোর দিকে তাকিয়ে একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ করছি – প্রতিশ্রুতিগুলির অনেকগুলির মধ্যেই একটা দারুণ মিলের জায়গা পাওয়া যাচ্ছে। সেই মিলগুলো কীরকম? মিলগুলোকে আমি মোটামুটি ভাবে দুটো ভাগে দেখতে পারি। একটা ভাগ হচ্ছে, যাকে বলা হয় ‘দীর্ঘকালীন উন্নয়নমূলক’, আর-একটা ভাগ, যাকে জনপ্রিয় ভাষায় বলতে হলে বলা যায় খয়রাতি—দান-খয়রাতি। তো আমি প্রথমেই বলি, সব পার্টিই কিন্তু এই দুটোকেই কমবেশি রেখেছে। কিন্তু যখন টেলিভিশন চ্যানেলের বিতর্কে এইসব পার্টির মুখপাত্ররা আসছেন, তখন কিন্তু একপক্ষ অপর পক্ষকে খয়রাতি নিয়ে তুমুল তুলোধোনা করছেন। এখানে দেখা যাচ্ছে, যাকে বলে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড, সেই জিনিসটা কিন্তু উন্নয়নের প্রশ্নে বারবার উঠে আসছে। কখন যে তাঁরা কোথায় কোনটা বলবেন, সত্যিই আমি থই পাই না। তাঁদের কথা শুনে কিংবা খবরের কাগজে তাঁদের বিবৃতি পড়ে, আমি সত্যিই কোনো থই পাই না। তাহলে তাঁদের ছেড়ে, তাঁদের কথায় গুরুত্বটা কিছুটা কমিয়ে দিয়ে, আমরা যদি আমাদের কথা বলি, তাহলে কীভাবে বলব কথাগুলো?

    ইস্তাহার থেকেই আবার শুরু করি। ইস্তাহারে, যেটা বললাম, একদিকে যেমন আছে কেউ বলছেন বৃদ্ধির হার নয় শতাংশ দশ শতাংশ করে দেব, কেউ বলছেন আমরা বড়ো বড়ো বিনিয়োগ আনব, এবং এগুলোর ফলে কর্মসংস্থান হবে। কারণ এখানে যুক্তিটা হচ্ছে এই যে, বৃদ্ধি হবে, বিনিয়োগ হবে, ফলে কর্মসংস্থানও হবে। এই যুক্তিটি সব পার্টির কথাতেই শোনা যায়, কারণ তথাকথিত শিক্ষিত মধ্যবিত্তের মাথায় ঢুকে বসে আছে যে কর্মসংস্থানের একমাত্র উপায় হচ্ছে বৃদ্ধিমুখী বিনিয়োগ এবং সেটা সবসময় খুব বড়ো-সড়ো হতে হবে। এই যে বড়ো-সড়ো বিনিয়োগমুখী নীতি থেকে বড়ো-সড়ো বৃদ্ধি এবং তার ফলেই কর্মসংস্থান হতে পারে, এটা কিন্তু, যদি আমরা একটু চোখ মেলে দেখি, তবে আশেপাশের ছবিতে এর খুব একটা সমর্থন পাব না। এর প্রধান উদাহরণ হচ্ছে গুজরাট। গুজরাটে অবশ্যই দীর্ঘকাল ধরে প্রচুর বৃদ্ধিও হচ্ছে বিনিয়োগও হচ্ছে। এবং সেটা বিনিয়োগের পক্ষে সবথেকে বন্ধুরাজ্য বলা যায়। কিন্তু সেখানেও দেখুন, কর্মসংস্থানের জন্য যে ধরনের মানবপুঁজির প্রয়োজন সেই মানবপুঁজিতে কিন্তু গুজরাট যে অন্য অনেক রাজ্য থেকে এগিয়ে আছে তা বলা যায় না। যদি আমি মানবোন্নয়নের সূচক দেখি, যেখানে শিক্ষাও আছে, স্বাস্থ্য আছে, এই দুটিকে যদি আমি মানবপুঁজির উপাদান হিসেবে দেখি, তাহলে দেখব এই দুটিতেই কিন্তু গুজরাট একেবারেই উপর দিকে নেই। বরং মাঝারি থেকে একটু নীচের দিকেই রয়েছে। এটা কেন হচ্ছে? যদি আর-একটু তলিয়ে দেখেন তাহলে দেখবেন যে সেখানে উন্নয়ন হয়েছে উৎপাদন বৃদ্ধির নিরিখে, মানবোন্নয়নের নিরিখে নয়। সেখানে শহর আর গ্রামাঞ্চলের মধ্যে পার্থক্যটাও বিরাট। আমি শুধু একটা পরিসংখ্যান দেব। পশ্চিমবঙ্গে যদি শিশুমৃত্যুর হার দেখেন, সেটায় সব থেকে কমের দিক থেকে দেখতে গেলে সবার উপরে কেরল, তারপর তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, এখন পাঞ্জাবও আছে, আর তারপরেই পশ্চিমবঙ্গ। গুজরাট কিন্তু আরও অনেক নীচে। একেবারে শেষ হিসেব যদি বলি, ২০১৯-এর এসআরএস বুলেটিন, যেখানে এই তথ্য পাওয়া যায়, সেখানে বলা হচ্ছে যে পশ্চিমবঙ্গে শিশুমৃত্যুর হার বাইশ, গুজরাটে আঠাশ। কিন্তু গুজরাটে গ্রামাঞ্চলে শিশুমৃত্যুর হার তেত্রিশ আর শহরাঞ্চলে কুড়ি। পশ্চিমবঙ্গে চিত্রটা কীরকম? গ্রামাঞ্চলে বাইশ, শহরাঞ্চলে কুড়ি।

    তাহলে দেখুন যে এখানে দারুণ একটা উন্নয়ন বা ‘বিকাশ’ যদি আমরা দেখি, যদি ধরেও নিই গত বিশ বছরের উপর গুজরাট খুবই উন্নয়ন করেছে, তাহলেও, উন্নয়নের যে অন্য দিকটা—তার শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে ফেলা, সেখানে স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো হওয়া, শিক্ষার অবস্থা ভালো হওয়া, এই সূচকগুলোতে কিন্তু গুজরাট এখনও মাঝারি রয়ে গেছে। আমি এর জন্য কাউকে দোষারোপ করছি না। কোনো বিশেষ মুখ্যমন্ত্রীর এখানে কোনো অবদানও খোঁজার চেষ্টা করছি না। ভাবা যেতে পারে, প্রত্যেকটা সমাজের কতকগুলো নিজস্ব ডায়নামিকস আছে, তার সঙ্গে রাজনীতিকদের সদিচ্ছা বা সদিচ্ছার অভাব, সেটা যুক্ত হয়। কিন্তু শুধু রাজনীতিকদের সদিচ্ছা দিয়ে যে সবটা বদলে ফেলা যায় তা তো নয়। সমাজের একটা নিজস্ব ডায়নামিকসও আছে। সেই ডায়নামিকসটা বুঝে যদি আমি উন্নয়নের পরিকল্পনাটা করতে পারি, তাহলে সম্ভবত ফলটাও আর একটু বেশি পাব। যেমন ধরা যাক, কর্মসংস্থানের কথাটা কিন্তু বারবার উঠে আসছে, সবকটা ইস্তেহারেই কমবেশি রয়েছে। এবং কর্মসংস্থানের বিভিন্ন সংখ্যা তাঁরা দিচ্ছেন—এত সংখ্যায় পৌঁছে যাব আমরা। প্রশ্ন হল, কর্মসংস্থান কতটা একটা রাজ্য সরকারের হাতে থাকে? এই প্রশ্নটাও কি আমরা করেছি? রাজ্য সরকার যদি কর্মসংস্থান করতে চায়, তাহলে সেটা কেন্দ্র সরকারের প্রধান উন্নয়নের নীতির ধারা যেটা, সেখান থেকে একেবারে বিচ্যুত হয়ে গিয়েও কি তারা করতে পারে? এ প্রশ্নটা নিয়েও কিন্তু একটা বিতর্ক হওয়া উচিত, যেটা কিন্তু কোনো রাজনীতিক কখনও সেভাবে তোলেননি। একটা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মধ্যে রাজ্যে থেকে আমি কী ধরনের কর্মসংস্থান করতে পারি বা পারি না—এই নিয়ে কিন্তু আমি রাজনীতিকদের মধ্যে খুব একটা সচেতনতা দেখিনি। এর জন্য যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে, উন্নয়ন বিষয়ক লেখাপত্রগুলো একটু দেখা, একটু জানা, কর্মসংস্থান কোথায় কীভাবে কতটা হচ্ছে, কিংবা হচ্ছে না।

    যদি আমি একদম শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে এগোই কর্মসংস্থানের ব্যাপারে, তাহলে দেখব যে কর্মসংস্থানের দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়তো খুব পিছিয়ে নেই। পশ্চিমবঙ্গ যেখানে পিছিয়ে আছে সেটা হচ্ছে, যে কর্মসংস্থানগুলো হচ্ছে, সেখান থেকে আয়ের হারটা কিন্তু অনেকটা কম। আমি মজুরির হার যদি দেখি বিভিন্ন রাজ্যে সেখানে পশ্চিমবঙ্গের গড় মজুরির হার কম তো বটেই। এগুলো পরিসংখ্যানই বলছে। এখন একটা বিশেষ রাজনৈতিক দল যদি বলে যে আমি এসে মজুরির হার তিনশো করে দেব বা সাড়ে তিনশো করে দেব, ফল কী হবে? ফল হবে, পশ্চিমবঙ্গে যেটুকু ধুঁকতে থাকা অত্যন্ত নিম্নস্তরের শিল্পগুলো আছে, তারাও কিন্তু বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর সরকার ন্যূনতম মজুরি উঁচু হারে বেঁধে দিলেই যে সব শ্রমিক তা পাবেন তার নিশ্চয়তা নেই। আমাদের ন্যূনতম মজুরির হারটা কিন্তু সবাই পান না। এবং তার থেকে অনেক নীচেই তাঁরা পান। তাহলে উপায়? সরকার সরাসরি যেমন মজুরি বাড়াতে পারে না, সরকার কিন্তু পরোক্ষ ভাবে সেটা পারে। সেটা কীভাবে পারে? সেটা দুদিক থেকে হতে পারে। প্রথমত শ্রমের বাজারের মধ্য দিয়ে হতে পারে। অর্থাৎ শ্রমের বাজারে মজুরির ওঠাপড়ার হার যে কারণে হয়ে থাকে সেই কারণগুলোকে একটু প্রভাবিত করা। যেমন একশ দিনের কাজ বেশি বেশি হলে শ্রমের বাজারে শ্রমের দাম বাড়ে। আর দ্বিতীয়ত, মানুষজন যাঁরা শ্রমের বাজারে আসছেন, তাঁদের কিছু কিছু বেসিক সিকিউরিটি বা নিরাপত্তা প্রদান করা। এই নিরাপত্তাটা থাকলে তাঁরা কিন্তু শ্রমের বাজারে অনেক ভালো ভাবে দর কষাকষি করতে পারবেন, যেটা কেরালায় ঘটে থাকে। তো শ্রমিকরা দর কষাকষি করে যখন একটু ভালো অবস্থানে আসছেন, বা একটু ভালো অবস্থানে থাকার কারণে দর কষাকষি করতে পারছেন, সেটার জন্য কিন্তু মজুরি বাড়ে। তাহলে এই ভালো অবস্থানে যাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে সরকারের বা রাষ্ট্রের একটা বড়ো ভূমিকা আছে। কীরকম ভাবে আছে? এক হচ্ছে, আমার শিক্ষা, এবং একটা ন্যূনতম শিক্ষা না থাকলে আমি কিন্তু শ্রমের বাজারে ওই দর কষাকষিতে পেরে উঠব না। সুতরাং একটা শিক্ষা প্রয়োজন। এই যে সর্বজনীন শিক্ষার ব্যাপারটা আমরা বারবার ঘুরেফিরে অনেকেই বলে থাকি, এটা মধ্যবিত্ত শিক্ষিতের কাছে কিন্তু অনেকসময় একেবারে উলটো ভাবে আসে। তাঁরা বলে থাকেন, এত শিক্ষিত হয়ে হবেটা কী? আরও তো বেকার বেশি বাড়বে! এই যে কথাটি, এটি সর্বৈব ভুল। সারা পৃথিবী খুঁড়লেও কিন্তু কোনো তত্ত্ব বা তথ্য পাওয়া যাবে না এর সপক্ষে। এইটা জোর গলায় বলার মতো বিষয়, কিন্তু আমি কোনো বিতর্ক দেখিনি কোথাও। অর্থাৎ, শিক্ষার হার বেশি হলে বেকারত্ব যে বাড়বেই তার কোনো মানে নেই। বিভিন্ন দেশের বেকারত্বের হার আর সে সব দেশের শিক্ষার হার যদি একসঙ্গে নিয়ে দেখি – এই দুইয়ের মধ্যে কোনো সাধারণ সম্পর্ক নেই। যে-কোনো উন্নত দেশে যেখানে ষাট থেকে সত্তর শতাংশ মানুষ উচ্চশিক্ষায় যাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে তা বাইশ শতাংশ। সুতরাং এইটা যদি আরও বাড়ে তাতে কোনো ক্ষতি নেই। তামিলনাড়ুতে এটি চল্লিশের উপর। এই যে কতকগুলো বিষয়ের মূলে পৌঁছে যাওয়া, যেখানে শিক্ষা থাকবে, স্বাস্থ্য বিষয়ে কিছু ভাবনা থাকবে, এবং কর্মসংস্থান নিয়ে একটি রাজ্য সরকার কী করতে পারে বা পারে না, সেই বিষয়গুলো থাকবে। অবাস্তব কোনো ইস্তাহার নয়।

    গতকালই এক সংবাদপত্রে দেখলাম, মাদুরাইতে একজন নির্দল প্রার্থী, তিনি বলেছেন যে তিনি যদি জেতেন তাহলে প্রত্যেককে চাঁদে ঘুরিয়ে আনবেন। তখনই আমার সেই কার্টুনটির কথা মনে পড়ে গেল, যেটি তার আগের দিনই আমি পেয়েছি। সেই কার্টুনে একজন আর-একজনকে বলছেন, আপনি যে এইসব বলছেন যে এগুলো দেবেন, তো আপনি কি নিশ্চিত যে আপনি জিতবেন না? জিতব না এটা একদম নিশ্চিত না হলে বোধ হয় এরকম প্রতিশ্রুতি দেওয়া যায় না। কিন্তু আমরা সব পার্টির মধ্যেই কিছু কিছু প্রতিশ্রুতি দেখতে পাই যেগুলোর গুরুত্ব বিষয়ে সম্ভবত গভীর ভাবনাচিন্তা না করেই ইস্তাহারে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যেহেতু সেটা জনজীবনের কোনো বিতর্ক থেকে, জনজীবনের খুব দাবি থেকে যে উঠে আসছে তা নয়। আমরা যাকে বলে থাকি ‘অ্যাড হক’, সেই অ্যাড হক ভিত্তিতে উঠে আসে। অর্থাৎ, আমি যদি গতকাল দেখে থাকি যে এই রাজ্য সরকার কন্যাশ্রী নিয়ে প্রচুর প্রচারের আলোয় এসেছেন, তাহলে এটা যদি ‘ক’ পার্টি করে থাকেন, আমি ‘খ’ পার্টি তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বলব, মহিলাদের জন্য আমি আরও পাঁচটা কিছু নিয়ে আসব। অর্থাৎ, অন্তিমে এই যে একটা প্রতিযোগিতামূলক মহিলামুখী ইস্তাহার দেখতে পেলাম, যদি হয় খুবই ভালো কথা, এটার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই, একটি পার্টির ইস্তাহার দেখে, বা না দেখেও, শুধুমাত্র গতিপ্রকৃতি দেখে অন্য আর-একটি পার্টি যদি মনে করেন যে আমাকে এই প্রতিযোগিতায় ঢুকতে গেলে মহিলাদের কিছু আনতেই হবে, তো তাঁরা এনে ফেলবেন। সুতরাং ইস্তেহারের মধ্যে এইগুলো থাকবে, জানি, কিন্তু আমাদের জনজীবনে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর বিতর্কগুলো কিন্তু সেগুলো নিয়েও হতে পারে, সেগুলোর বাইরেও হতে পারে। সেগুলোর বাইরে কুমার কয়েকটা বিষয় বলেছেন, যেগুলো কোনো ইস্তেহারেই সম্ভবত আসবে না, বা আসেনি। বিশেষ বিশেষ কিছু জনগোষ্ঠীর প্রতি আমাদের নজর কিন্তু একেবারেই থাকে না। কারণ আমরা ভীষণ ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিশ্বাসী। আমরা সবাই জানি, সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে প্রচুর বলশালী হওয়া যায়। যাঁরা বিভিন্ন হাউজিং সোসাইটিতে থাকেন তাঁরা জানেন, সেখানকার মিটিং-এ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে অনেক কিছু পাস করে দেওয়া যায়। যে-কোনো হাউজিং সোসাইটিতে গরিষ্ঠতার এতটা জনপ্রিয়তা দেখেছি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত মানুষের মধ্যে, যে গরিষ্ঠতা নিয়ে আমার খুবই ভয়। সেই জন্য জনজীবনে যেগুলো প্রয়োজনীয় জিনিস, সেগুলো যদি গরিষ্ঠ মানুষদের থেকেই শুধু আসে, তাহলে কিন্তু আমি খুবই শঙ্কিত হব। সেইজন্য কুমারের কথায় আবার ফিরে যাই, যেখানে গরিষ্ঠদের কণ্ঠস্বরের বাইরে এই যে লঘিষ্ঠদের বিভিন্ন রকমের নীরবতা আছে, সেই নীরবতাগুলোকে আমরা কীভাবে পড়ব, এই নীরবতাগুলিকে কীভাবে জানব। কুমার বলেছেন সিলিকোসিসের কথা, সিলিকোসিস আক্রান্ত মানুষদের কথা। আমি তাঁদের সম্পর্কে একটু আধটু জেনেছি। কুমার বলেছেন বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে কিছু আদিবাসী পাড়ার কথা, বিশেষ ভাবে কয়েকটি পাড়ার কথা। এগুলো কিন্তু বিশেষ ভাবে, এটা আমি বলছি না শুধু পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা, এটা কমবেশি সব রাজ্যেই আছে, যেটাকে আমরা বলে থাকি মার্জিন অফ দ্য মার্জিন—প্রান্তিকতার ব্যাপারটা কিন্তু সব রাজ্যেই আছে। এই প্রান্তিকতার ব্যাপারটা কিন্তু সাধারণত আমাদের কোনো বিতর্কে খুব একটা আসে না, যদি না কয়েকটা মৃত্যু হয়ে যায়। আচমকা যদি কয়েকজন মানুষ মারা যান, তখন কিন্তু ক-দিন ধরে টেলিভিশনে খুব আলোচনা চলে, কিন্তু তারপর আবার সবাই ভুলে যান। তাহলে জনজীবনের মূল বিষয়গুলোয় যদি আমি আসি, আমি বলব কর্মসংস্থান নিয়ে আমাদের যে অ্যাংজাইটি—নিশ্চয়ই, চাকরি না থাকলে তো অবশ্যই উদ্‌বেগের কথা। কিন্তু তার সঙ্গে এটাও ভাবতে হবে যে সরকার যদি বলে যে আমি একলক্ষ চাকরি দিয়ে দেব এবং সেটা পূরণ করতে তারা যদি বিভিন্ন উপায়ে সরকারি চাকরি সৃষ্টি করে, সেটা সামগ্রিক ভাবে ওই প্রান্তিক মানুষগুলোর যে কী উপকার করবে তা আমার খুব ভালো জানা নেই। অর্থাৎ, সেই গান্ধিজির দিকেই ফিরে যেতে হয় আর কী, যে-কোনো প্রকার উন্নয়নকে আমি যদি একদম প্রান্তিক মানুষটার চোখ দিয়ে দেখতে চাই তাহলে কীভাবে দেখব।

    আজ বলা হচ্ছে শিল্প এসে গেলে দেশে কর্মসংস্থান হবে। এটাতে মধ্যবিত্তরা আশা দেখলেও পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপক জনগণ খুব উদ্‌বেলিত হন না কেন? সেটাও তো ভেবে দেখার আছে। তাঁরা উদ্‌বেলিত হন না। তাঁদের বেশির ভাগই প্রান্তিক কৃষক, তাঁদের সামান্য জমি আছে, কারও সে জমিটুকুও নেই এবং তাঁরা বিভিন্ন ভাবে কিছু কিছু কাজকর্ম করে থাকেন। একটা বৃহৎ শিল্প এলে সঙ্গে সঙ্গে যে তাঁদের সেখানে কর্মসংস্থান হবে, এটার কিন্তু কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে তাঁরা কিন্তু এমন প্রতিশ্রুতিতে খুব ভরসা পান না। এবং যে পার্টি বড়ো শিল্পের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তাঁরা যে এঁদের কাছে খুব জনপ্রিয় হতে পারবেন শুধু ওই কারণে, আমার তা মনে হয় না। কোনো বড়ো শিল্পের কারণে আমাদের চাকরি হবে – আমার মনে হয় – পশ্চিমবঙ্গের আশি শতাংশ মানুষই কিন্তু সেটা মনে করবেন না। তাহলে উপায়? উপায় হচ্ছে, যেটা আমি বললাম, মানুষজনকে একটা স্তরে তুলতে হবে, ওই আশি শতাংশ মানুষকে, সেখানে আবার সেই স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং বুনিয়াদি শিক্ষা থেকে শুরু করে। এখানে কি রাজ্য সরকার এসব বিষয়ে একেবারেই ব্যর্থ? এই ব্যর্থতার প্রশ্নগুলো যখনই আসে, আমি দেখেছি কিছু মানুষকে বিতর্কে লিপ্ত হতে – পরিসংখ্যানবিমুখ নিষ্ফল বিতর্ক। সেই জন্যে আমি পরিসংখ্যানের কথা সবসময় নিয়ে আসার চেষ্টা করি। কেন? পরিসংখ্যানের অনেক ব্যর্থতা আছে। কিন্তু পরিসংখ্যান ছাড়া এগুলো বলা কিন্তু আরও বিপজ্জনক। এবং পরিসংখ্যানটা যে সত্যি কথা বা কিছুটা হলেও সত্যি কথা বলে তার প্রমাণ হচ্ছে বিভিন্ন সরকার পরিসংখ্যানকে চেপে দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। কারণ হচ্ছে ওই—যেহেতু পরিসংখ্যানের একটা সত্যি বলার ক্ষমতা আছে। তাহলে অনেকের কাছে আমার এটা আবেদন থাকবে, একটু যদি পরিসংখ্যান দিয়ে দেখি, হ্যাঁ সবার কাছে পরিসংখ্যান খুব কাছের বস্তু নয়, এটা যেন একটা বিশেষজ্ঞদের ব্যাপার। না, এটা বিশেষজ্ঞদের ব্যাপার নয়। এটা কিন্তু সকলেরই ব্যাপার। কারণ পরিসংখ্যানের গুণগত মানটা তখনই বাড়বে যখন সকলে পরিসংখ্যান নিয়ে খোঁজ রাখবেন, চর্চা করবেন। আমি এটা কিছুটা কেরালায় দেখেছি। কেরালায় পাড়ায় পাড়ায় যখন নানা রকমের সভা হয়, সেই সভাতে কিন্তু পরিসংখ্যানের ছড়াছড়ি। এবং কেরালার যেকোনো মানুষকে জিজ্ঞেস করলেই তাঁরা বলে দেবেন কেরালায় বেকারত্বের হার কত, কেরালায় বৃদ্ধির হার কত, ইত্যাদি ইত্যাদি। তাঁরা সবাই যে খুব উচ্চশিক্ষিত তাও নন, কিন্তু আমরা যাকে বলি সামাজিক পরিসরে আলোচনা, সেই আলোচনার মধ্য দিয়ে অনেকে কিন্তু অনেক কিছু জেনে যান, সংবাদপত্র পড়েও জানেন। সেখান থেকে আমরা কী জানতে পারছি? কয়েকটি বিষয়, যেগুলি কুমার বললেন, কুমার খুব গুরুতর তিনটি বিষয় নিয়ে বলেছেন। একটা হচ্ছে, স্কুল-শিক্ষায় এই যে বন্ধ হয়ে যাওয়া, আরও কত যে স্কুলছুট হয়ে যাবে এর ফলে তার কোনো হিসেব আমাদের নেই। সেটা নিয়ে একটা গুরুতর ভাবনার দরকার ছিল। আর-একটা কুমার যেটা বলেছেন, সেটা হল মেয়েদের অল্পবয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া। এই সমস্যাগুলো একদম নতুন নয় কিন্তু। এটা বেশ কিছুকাল ধরে চলছে। প্রথমটা অবশ্য নতুন, কোভিড সংক্রান্ত সমস্যা, কিন্তু দ্বিতীয়টা ছিলই। কিন্তু এটা কমছে। এটা যতটা কমার কথা ছিল, বিভিন্ন রাজ্যে যতটা কমছে, আমাদের রাজ্যে কিন্তু ততটা কমছে না। এই না কমার কারণ বিশ্লেষণ এবং আরও কীভাবে কী করা যেতে পারে সেটা কিন্তু ভাবনার অবকাশ আছে। এই নিয়ে অনেক বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। কিন্তু শেষ করি আমি এই বলে, ওই উন্নয়ন বনাম খয়রাতি—এই প্রশ্নে। যেগুলোকে আমরা খয়রাতি বলে থাকি সাধারণত—

    দর্শকের প্রশ্ন: অচিনবাবুর কথার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন করি, পশ্চিমবঙ্গে যে উন্নয়ন মডেল গত দশ বছরে দেখেছি, অর্থাৎ, সরাসরি বিভিন্ন সাহায্য সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়া, সেটাই কি একটা দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী পথ হতে পারে না?

    অচিন চক্রবর্তী: খুব ভালো প্রশ্ন এটা। খুবই ভালো প্রশ্ন। দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী পথ... স্থায়ী তো কিছুই নয়, মনুষ্যজীবনও নয়, সবই ক্ষণস্থায়ী। দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী কেউই বলেননি। যেমন জন মেনার্ড কেনস বলেছেন, দীর্ঘকালে আমরা সবাই মৃত। দীর্ঘকালে আমরা সবাই যেহেতু মৃত, আমরা একটু স্বল্পকাল নিয়েই বলি। স্বল্পকালে কিন্তু এই যে যেটা বলছিলাম, পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ মানুষের দারিদ্র্য তো আছে এখনও। যদিও দারিদ্র্য কমেছে অনেকটা, তবু দারিদ্র্য তো আছে। এই দরিদ্র মানুষদের জন্য সরাসরি যেটাকে ট্রান্সফার বলে থাকি আমরা, তা সে অর্থ বলুন, খাদ্য বলুন—এই দু-টাকা কিলো চাল ইত্যাদি ইত্যাদি—এগুলোর একটা মানবোন্নয়নমুখী প্রভাব যেমন আছে, মানবপুঁজিরও উন্নয়ন হয়। এটা সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত, উন্নয়ন কিন্তু শুধু যাকে বলি ‘ফিজিকাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার’, যেমন রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থা—এগুলো যেমন প্রয়োজন, তার থেকে অনেক বেশি প্রয়োজন হচ্ছে মানবপুঁজি। এবং সেদিক থেকে মানবপুঁজি এবং মানব উন্নয়ন দুটো কিন্তু একই জায়গায় চলে আসছে যদি আমি উন্নয়নের আতসকাচ দিয়ে দেখি ব্যাপারটা। অমর্ত্য সেন যদিও বলে থাকেন যে মানব উন্নয়নটা শেষ কথা - মানব উন্নয়ন যেমন একটা লক্ষ্যে পৌঁছনোর জিনিস, আবার সেটাই কিন্তু সব। এইভাবে ভাবা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে একটা ঘাটতি আছে, সেটা হচ্ছে এই মানবপুঁজির জায়গা থেকে। মানুষকে যদি সমর্থ করে তুলতে পারি, তাদের সক্ষমতা যদি বাড়িয়ে তুলতে পারি অনেকটা, তাহলে উন্নয়ন কিন্তু সেই পথেই হতে পারে। যেমন ধরুন, দুরকম মডেলের কথা বলা হয়। একরকমের মডেল যেটাকে বলা হয় ‘সাপোর্ট লেড গ্রোথ’, আর-একটাকে বলা হয় ‘গ্রোথ মিডিয়েটেড ডেভেলপমেন্ট’। সাপোর্ট লেড গ্রোথ যেটাকে আমরা বলে থাকি, সেটা হচ্ছে এই ধরনের মানবমুখী যে খরচগুলো, সেগুলো শেষ পর্যন্ত কিন্তু বৃদ্ধিকেও সমর্থন করে, বৃদ্ধিকেও কিন্তু প্রভাবিত করে। বৃদ্ধি বাড়ে। এটা হচ্ছে সাপোর্ট লেড গ্রোথের মডেল, যেটা কেরালায়ও দেখা গেছে। অনেকের ধারণা কেরালায় বৃদ্ধি হয় না। কেরালার বৃদ্ধি কিন্তু ভারতবর্ষের গড় হারের তুলনায় বেশি। এবং সেটা যে তাদের আগেকার মানব উন্নয়নের কারণে, তা কিন্তু অনেক গবেষকের লেখায় উঠে এসেছে।

    সুতরাং আমি যদি বলি যে আজ মহিলাদের জন্য যে খরচটা করা হচ্ছে, দু-টাকা কিলো যে চালটা দেওয়া হচ্ছে, এই যে বিভিন্ন খাদ্যসুরক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, সরাসরি চাকরি সুরক্ষা নয়, কিন্তু মানবসুরক্ষা... মানবসুরক্ষাটা কিন্তু চাকরিসুরক্ষা থেকে আর-একটু বেশি জিনিস। আমি যদি চাকরিসুরক্ষার কথা ভাবি, কোনো পার্টির ক্ষমতা নেই যে সবাইকে চাকরিসুরক্ষা দেয়। এখন বর্তমানে বিশ্ব-অর্থনীতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে কোনো পার্টির ক্ষমতা নেই যে চাকরিসুরক্ষা দিতে পারে। তাহলে কী দিতে পারে? দিতে পারে যেটা, সেটা হচ্ছে মানবসুরক্ষা। এই মানবসুরক্ষা কিন্তু শুধু চাকরিমুখী হবে না, সেটা আয়ের সংস্থানের দিক থেকে দেখতে হবে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ন্যূনতম প্রয়োজনগুলো সাধিত হচ্ছে কি না সেটাও দেখতে হবে। যেখানে ন্যূনতম প্রয়োজন সাধিত হচ্ছে না, সেখানে কিন্তু আমি বৃদ্ধির হারও উপরে তুলতে পারব না। কারণ কী? কারণ হচ্ছে, আমি আগেই বলেছি, প্রচুর বড়ো বিনিয়োগ দিয়েই যে শুধু বৃদ্ধি হতে পারে, হয়তো কিছুকাল হলেও হতে পারে, কিন্তু শেষপর্যন্ত মানব উন্নয়ন ছাড়া কিন্তু বৃদ্ধির হার ধরে রাখাটা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণা আছে, বিভিন্ন দেশের দীর্ঘকালের পরিসংখ্যান নিয়ে প্রচুর আলোচনা আছে এবং এইটা নিয়ে কিন্তু সত্যি বলতে খুব একটা দ্বন্দ্ব নেই যাঁরা জানেন, তাঁদের কাছে। শুধু এইখানেই, দেশের এই প্রান্তেই দেখি কেবলই খয়রাতি বনাম দীর্ঘকালীন উন্নয়ন নিয়ে একটা তর্ক প্রায়ই চলে আসে। এইটা নিয়ে একটু সমস্যা আছে। এখন যদি বলেন, মানবোন্নয়ন হলেই কি বিনিয়োগ হুড়মুড় করে চলে আসবে? না। বিনিয়োগ আসে দশরকম কারণে। খয়রাতি বেশির কারণে বিনিয়োগ কমবে না। বিনিয়োগ যে কারণে কমবে সেখানে প্রশাসনিকতার একটা ভূমিকা আছে। প্রশাসনিকতা কতটা সক্রিয় তার উপর অনেকটা নির্ভর করছে এবং অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের মানসিকতার দিক থেকেও দেখতে হবে। একটা ইতিহাস থাকে অনেক সময় এবং সেখানে ইতিহাসের কতকগুলো মিথ, সেগুলোও চালু থাকে। এখানে যেমন চালু ধারণা শ্রমিক অসন্তোষ অনেক বেশি বলে বিনিয়োগ হত না, হয় না। আমরা আমাদের গবেষণা থেকে দেখিয়েছি যে শ্রমিক অসন্তোষটা যে ছিল না তা নয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ার অন্য অনেকগুলো কারণ ছিল। এগুলো নানান রকম গবেষণা থেকে আজকাল উঠে আসছে। কিন্তু মানুষের মনে এই যে অতিকথাগুলো ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে, সেগুলোর জন্য কিন্তু আমাদের একটা প্রধান বাধা হচ্ছে, জনজীবনে যেগুলো প্রয়োজনীয় জিনিস, সেগুলো নিয়ে আমরা খুব একটা কথা বলে উঠতে পারছি না। এইটা কিন্তু আমাদের একটা ধারাবাহিক লড়াইয়ের ব্যাপার, আমি বলব। এই মিথগুলো, এই ভ্রান্ত ধারণাগুলো, এগুলোর সঙ্গে লড়তে হবে। একটু পরিসংখ্যান মিশিয়ে, মানুষজন যেগুলো নিয়ে চর্চা করেন, সেগুলোর ভিতরে ঢুকে একটু একটু বোঝার চেষ্টা করা। তাহলে কিন্তু জনজীবনে যেগুলো প্রয়োজনীয় জিনিস, সেগুলো হয়ত স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসবে। তখন কিন্তু আলাদা ভাবে কোনো বিশেষজ্ঞকে কোনো বক্তৃতায় বলতে হবে না মানুষের কাছে কোন বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ। আমি কিন্তু সেই দিকেই তাকিয়ে থাকব যখন কোনো বিশেষজ্ঞের আর প্রয়োজন হবে না জনজীবনে কোনগুলো মূল বিষয়, সেগুলোর সূত্র ধরিয়ে দেওয়ার। এবং আমি আশা করব যে এটা নিয়ে হয়তো আরও বিতর্ক হবে। কারও যদি অনেক প্রশ্ন থাকে সে প্রশ্নগুলো করতে পারেন, আমি যথাসাধ্য উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আর সব প্রশ্নের উত্তর তো আমাদের কাছে থাকে না, উত্তর আমাদের খুঁজতে হবে সমবেতভাবে। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ধৈর্য্য ধরে এই আলোচনা শুনছেন বলে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ভোটবাক্স | ০৬ এপ্রিল ২০২১ | ৩৫০৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ramit Chatterjee | ০৮ এপ্রিল ২০২১ ০০:২২104530
  • এই যে সাক্ষাৎকারে র শেষের দিকে বিনিয়োগ চলে যাওয়ার কারণ সম্মন্ধে আলোচনা  হচ্ছিল   তা  আরো ডিটেলে বললে ভালো লাগত।

  • Ranjan Roy | ০৮ এপ্রিল ২০২১ ০৮:২৪104534
  • অচিনবাবু কি মাশুল সমীকরণের দিকে ইঙ্গিত করলেন?

  • Somenath Guha | ০৮ এপ্রিল ২০২১ ২১:৫০104545
  • কন্যাশরী প্রকল্প সত্ত্বেও কেন মেয়েদের অল্প বয়সে বিবাহের হার কমছে না। 

  • π | ২১ এপ্রিল ২০২১ ০৮:৩৮104972
  • কুমার রাণার অংশে এর কিছুটা উত্তর আছে।  আরো কিছু ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট বলেছিলেন, আশা করি লিখবেন। এই দিকটা প্রায় ধরাই হয়না।

  • :-( | 201.15.***.*** | ২১ এপ্রিল ২০২১ ০৮:৫৭104975
  • অর্থাৎ, সেই গান্ধিজির দিকেই ফিরে যেতে হয় আর কী, যে-কোনো প্রকার উন্নয়নকে আমি যদি একদম প্রান্তিক মানুষটার চোখ দিয়ে দেখতে চাই তাহলে কীভাবে দেখব।


    চিরকালই একদল খায়, একদল মরে। সবাই খাবে উন্নয়নের কোন মডেলে এটা সম্ভব? এ নিয়ে গুরুতে পোচ্চুর তক্কো হয়েছে কিন্তু মডেল জানতে চাইলেই আর উত্তর মেলেনা। হীরাভতে এককবাবু কিছু সলিড পয়েন্ট রেখেছিলেন। খুঁজে পাচ্ছিনা।

  • PT | 43.252.***.*** | ২১ এপ্রিল ২০২১ ১২:৪৫104979
  • "পশ্চিমবঙ্গে একটা ঘাটতি আছে, সেটা হচ্ছে এই মানবপুঁজির জায়গা থেকে। মানুষকে যদি সমর্থ করে তুলতে পারি, তাদের সক্ষমতা যদি বাড়িয়ে তুলতে পারি অনেকটা, তাহলে উন্নয়ন কিন্তু সেই পথেই হতে পারে।"

    এই সক্ষম মানুষেরা তাঁদের সক্ষমতা কোথায় ও কিভাবে ব্যবহার করবেন?

    "এই মানবসুরক্ষা কিন্তু শুধু চাকরিমুখী হবে না, সেটা আয়ের সংস্থানের দিক থেকে দেখতে হবে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ন্যূনতম প্রয়োজনগুলো সাধিত হচ্ছে কি না সেটাও দেখতে হবে।"

    চাকুরী নেই কিন্তু আয় আছে এটা বেশ একটা বেশ খটোমটো ব্যাপার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বোঝা গেল না যে কারখানার জন্য জমি দেওয়া হবে কিনা।

    জার্মানি ও গোটা বিশ্বের কপাল ভাল যে ১৯০৬-১৯১১ তে জার্মানিতে তিনোরা বিরোধী দল হিসেবে ছিল না। তাহলে নিশ্চিত যে ১৯১৩ তে হেবার পদ্ধতির industrialization হতনা। সেটা ভাগ্যিস হয়েছিল।

    " the lower cost of ammonia .....contributed to the development of intensive agriculture and provided support for worldwide population growth"
    এই কারখানা না হলে আজকের ২ টাকা কিলোর চাল দেওয়া নিয়ে তিনোরা এত ঢক্কা নিনাদ করত কি করে? কত জনই বা চাকরী পেয়েছিল ঐ কারখানায়?

    তবে কিনা যারা পরিবেশ নিয়েও ভাবে তার জানে যে ঐ ২ টাকা কিলোর চাল জোগাতে, "Half of the nitrogen in the great quantities of synthetic fertilizers employed today is not assimilated by plants but finds its way into rivers and atmosphere as volatile chemical compounds."

    Hobson's choice?

  • Indranath Mukhopadhyay | ২২ এপ্রিল ২০২১ ০৬:১৬105006
  • মানব উন্নয়নের মডেল নিয়ে আলোচনাটি ভাল লাগলো ।

  • π | ১৮ জুন ২০২১ ২৩:০৯495059
  • যাক। অবশেষে,  অবশেষে সিপিএম এর কেউ কেউ এসব বলছেন!  আগে যারাই বলতে গেছে, খিস্তি খেয়েছে।


    দেবরায়া মুখার্জির পোস্ট।


    'একটা কথা বলার ছিল। অনেকদিন ধরেই বলবো বলবো ভাবছিলাম। বলেই ফেলি।


    একটা কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী, সদস্য বা সমর্থক হয়ে সরকারের সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলোকে "ভিক্ষার রাজনীতি" বা "ডোলের রাজনীতি" বলা যায় না। বিশেষত যে রাজ্যে আশি শতাংশের ওপর মানুষের মাসিক রোজগার পাঁচ হাজার টাকার কম, সেই রাজ্যে রাজনীতি করতে গিয়ে একেবারেই বলা যায় না। সরকারি সমাজকল্যাণমূলক ভাতাগুলোকে "ভিক্ষা" বলা যায় না।


    বরং, ধরে নেওয়া যাক কোনো একটা সরকারি প্রকল্প থেকে (কেন্দ্রীয় বা রাজ্য) কোনো পরিবার যদি ১০০ টাকাও ভাতা পায়, তাদের হাতে সেই ভাতাটা যেন পুরোটা পৌঁছোয় সেটা নিশ্চিত করা। রাজ্যের শাসক দল যেখানে তাদের সরকারি টাকা চুরির জন্য বিখ্যাত, সেখানে চোখ বুজে বলা যায় সেই ১০০ টাকাটার পুরোটা কোনো বেনিফিশিয়ারির হাতে পৌঁছোয় না। ৩০ থেকে ৭০ টাকা শাসক দলের বিভিন্ন স্তরের চোরেদের পকেটে চলে যায়। 


    অনেকক্ষেত্রে অনেক যোগ্য ব্যক্তি সেই ভাতা না পেয়ে অনেক শাসকদল-ঘনিষ্ঠ অযোগ্য ব্যক্তি, যার সেই ভাতা পাওয়ার প্রয়োজন নেই, সেই ভাতা পেয়ে যাচ্ছে। সেই দুর্নীতি বন্ধ করার লড়াইটা শ্রেণীর লড়াই। সাধারণ মানুষের পাশে থাকার লড়াই।


    পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কন্যাশ্রী, যুবশ্রীর টাকা সবাই পাচ্ছে কিনা, রেশন সমস্ত যোগ্য প্রাপকের হাতে পুরোপুরি পৌঁছচ্ছে কিনা, বিধবা ভাতা, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা যাদের পাওয়ার কথা তারা পাচ্ছে কিনা, একশো দিনের কাজের জব কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি হচ্ছে কিনা, যাদের সেই টাকা বা সুবিধা পাওয়ার কথা তারা পাচ্ছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করাটাই শ্রেণীর লড়াই।


    এরকম আরও একশোটা জায়গা আছে যেখানে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, তাদের সুযোগসুবিধার জন্য লড়াই করে, তাদের বিশ্বাস অর্জন করে সঠিক রাজনীতিটা করা যায়। কিন্তু সরকারি ভাতাকে "ভিক্ষা" বলাটা একেবারেই ভুল বামপন্থী রাজনীতি, বিশেষত একটা নয়াউদারবাদী অর্থব্যবস্থার মাঝখানে দাঁড়িয়ে সেটা বলাটা ভীষণ ভীষণ ভুল রাজনীতি।


    সবাই জানে এই সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলোর জন্য সরকারের কোষাগারে চাপ পড়ছে, রাজ্যে কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য কোনো অর্থবরাদ্দ করার মতো অর্থ বাঁচছে না। কোনো ভবিষ্যতমুখী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করার জায়গা থাকছে না।


    কিন্তু সেই সমস্যা সমাধানের অন্য বিকল্প রাস্তা খুঁজতে হবে। জনমুখী পপুলিজমের রাজনীতিকে "ভিক্ষা নয়, চাকরি চাই"-এর মতো আদ্যন্ত মধ্যবিত্ত স্লোগান দিয়ে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। 'চাকরি' বলতে আপনি গোদা কথায় যা বোঝেন সেটা এই রাজ্যে ১০% মানুষেরও স্বপ্ন বা অ্যাস্পিরেশন নয়।'


    যে রাজ্যে আশি শতাংশের ওপর মানুষের মাসিক রোজগার পাঁচ হাজার টাকার কম, সেই রাজ্যে মানুষ সরকারি অনুদানের প্রকল্প থেকে ঘোষিত ১০০ টাকা অনুদানের থেকে ৭০ টাকা চুরি হয়ে ৩০ টাকা হাতে পেলেও উপকৃত হয়। সেই উপকারকে "ভিক্ষা" বললে আপনি আর যাই জিতুন, সেই মানুষের আস্থা বা সমর্থন কোনোদিন জিততে পারবেন না।


    এটুকুই বলার ছিল। খেয়াল রাখবেন।'

  • Ramit Chatterjee | ১৯ জুন ২০২১ ০০:১২495061
  • ৭০ টাকা চুরি তাহলে চলতে পারে ? নাকি তার প্রতিবাদ করা হলে মানুষের থেকে দূরে সরে যাবে। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন