ফুরফুরা শরিফ নামটি অনেকদিন ধরেই পশ্চিমবাংলার রাজনীতি নিয়ে উৎসাহী মানুষজনের কাছে সুপরিচিত। ইসলাম ধর্মের মানুষ তো বহু আগে থেকেই এ সম্পর্কে ওয়াকিব-হাল। বলা হয়, আজমীর শরিফের পরেই এই উপমহাদেশের ইসলাম ধর্মের মানুষের কাছে পূণ্যভুমি হিসাবে খ্যাত এই ফুরফুরা শরিফ। এটি হজরৎ পীর আবু বকর সিদ্দিকির মাজার।
১৩৭৫ সনে এইখানে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন জনৈক মুকলিশ খাঁ। আঞ্চলিক লোককথায় বলা হয় এক বাগদী রাজাকে যুদ্ধে হারিয়ে দেন শাহ কবীর হাবিবি ও কামারুদ্দীনের মিলিত শক্তি। যুদ্ধ জিতলেও দুজনেই সেই যুদ্ধে শহীদ হন। এইখানেই তাদের সমাধিস্থ করা হয়। এর প্রামাণ্য ইতিহাস সেভাবে পাওয়া যায় না। এখানেই হজরৎ পীর আবু বকর সিদ্দিকি ও তার পাঁচ পুত্রকে, যারা পাঁচ হুজুর কোবলা নামে পরিচিত, তাদেরও সমাধিস্থ করা হয়। । সিলিসিলা-এ-ফুরফুরার প্রতিষ্ঠাতা ফুরফুরা শরিফের হজরত পীর আবু বকর সিদ্দিকি বা দাদাপীর, জন্ম ১৮৪৬, ছিলেন একজন সুপ্রসিদ্ধ ইসলামি পণ্ডিত ও ধর্মগুরু। ইনি ছিলেন তৎকালীন বাহান্ন জেলার এক গুরু পীর। তিনি ধনী-দরিদ্র, হিন্দু-মুসলিম, জাতিধর্ম নির্বিশেষে বাংলা ও অসমের বহু মানুষকে নিজের মুরিদ বা শিষ্য করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর বাংলার জীবিত পীরদের মধ্যে তিনিই সর্বাধিক খ্যাতিমান ছিলেন বলে শোনা যায়। তাঁর দীর্ঘ আভিজাত্যপূর্ণ চেহারা ও অসাধারণ ধর্মীয় পাণ্ডিত্য সমকালীন জ্ঞানীগুণী থেকে সাধারণ মানুষদের তীব্র আকর্ষণ করত। ১৯৩৯এর ১৭ই মার্চ উনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর দিনটিকে কেন্দ্র করে তাঁরই সমাধি-দরগাহে প্রতিবছর বাৎসরিক উৎসব ও মেলা বসে। এই মেলা প্রতিবছর বাংলা বর্ষপঞ্জীর ফাল্গুন মাসের ২১, ২২ ও ২৩ তারিখ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় চলে মুরিদদের শিক্ষা। জ্ঞানী গুরুরা এসময় শিষ্যদের দাদাপীরের সিলসিলা মতে ইসলামি জ্ঞানে দীক্ষা দেন। মসজিদ প্রাঙ্গণে সন্ধ্যায় একসাথে নামাজে বসেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। উৎসবের দিনে দূর দূর থেকে মানুষজন এই মেলায় আসেন। বাংলার বিখ্যাত মেলাগুলির এটি অন্যতম। (তথ্য উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহিত)
তবে পশ্চিম বাংলার মূলধারার রাজনীতিতে ফুরফুরা শরিফের আলাদা মাহাত্ম্য আছে। অনেকগুলো বিতর্কিত বিষয় এই মাহাত্ম্যের সাথে জড়িত। কেউ কেউ মনে করেন মুসলমানেরা অধিকাংশই ধর্মগুরুদের “ফতোয়া” মেনে ভোট দেন। কেউ কেউ মনে করেন মুসলমানেদের ভিতর কৌমচিন্তা খুবই প্রবল, ফলে তাদের বেশীরভাগের ভাবনা একই খাতে বয়। কেউ কেউ মনে করেন ভারতের মুসলমানেরা অধিকাংশই খুব গরীব এবং ধর্মীয় বাধ্যবাধকতায় মাদ্রাসা শিক্ষার বাইরে বের হতে পারেনি, তাই তাদের মগজধোলাই করাটা সহজ। এমত নানা বিতর্কিত বিষয়ের মূল বিষয়টি – মুসলমান ভোটার বলে একটি বর্গ।
মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো সরকারীভাবে কেউই এগুলো স্বীকার করে না। তাদের সকলের বক্তব্য, অমন কিছু হয় না। সকলেই নিজের নিজের বোধবুদ্ধি প্রয়োগ করে মতদান করেন। কিন্তু এও দিবালোকসম মতো স্পষ্ট যে ভোট এলেই এরা সক্কলে লাইন দিয়ে ফুরফুরা শরিফ “ভিজিট” করেন ও আশীর্বাদ (পড়ুন সমর্থন) ভিক্ষা করেন। গত শতকের ৭০ দশক পর্যন্ত কোন কমিউনিস্ট দলেরাই এসবে আগ্রহী ছিলো না। তখন এই কর্মটি কংগ্রসের একচেটিয়া ছিলো। ৬০এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত কংগ্রেস এটি সফলভাবে করে গেছে। ৬০এর দশকের মাঝামাঝি থেকে কংগ্রেস মুসলমানেদের মধ্যে তার জমি হারাতে শুরু করে। মুসলমান সমর্থন অনেকটাই বামেদের দিকে ঝুঁকে পড়ে। বামেদের তখন থেকে মুসলমানেদের “স্বাভাবিক মিত্র” বলে ধরা হতো। এটা ঘুরতে থাকে ৮০র দশক থেকে। তখন সরকারি কমিউনিস্ট নেতারাও ফুরফুরা “ভিজিট” শুরু করেন মাথায় রুমাল দিয়ে। তৃণমূল আদতে কংগ্রেসী ঘরাণারই দল, ফলে তাদের তো এটি অবশ্যকর্তব্য। ২০১১তে তারা সফল হয়।
এতোদিন সব চলছিলো হিসেবমতো, যেমনটা চলার। হিসাব পাল্টালেন ফুরুফুরা শরিফের বর্তমান পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট গঠন করে।
প্রভাবশালী মুসলমান রাজনৈতিক নেতা এ বাংলা কম দেখেনি। শেরে বাঙ্গাল ফজলুল হক, সুরাওয়র্দী, ঢাকার নবাব খ্বাজা সলিমুল্লা বাহাদুর, আবদুল গনি খান থেকে আজকের সিদীকুল্লা চৌধুরী, অনেকে এসেছেন। কিন্তু এই প্রথম একজন ধর্মগুরু সরাসরি রাজনীতিতে এলেন, তাও ফুরুফুরা শরীফের মতো সারা উপমহাদেশের কাছে মান্যতাপ্রাপ্ত এক মাজারের পীরজাদা। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা তার রাজনৈতিক দিশা। না, তিনি শুধু মুসলমানেদের হয়ে কথা বলছেন না। তার দাবী অনুযায়ী তিনি নিম্নবর্ণের হিন্দু, আদিবাসী এমনকি অন্য সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়েরও প্রতিনিধি। এখানেই হিসাব পাল্টালেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি।
সারা ভারতে যখন পরিচয়ের রাজনীতির বোলবোলাও। কাঁসিরাম-মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি, রামবিলাস পাশোয়ান-লালু যাদব-নীতিশদের কুর্মী-চামার-যাদব পরিচিতির উপর গড়ে ওঠা দলগুলি, মহারাষ্ট্রে উচ্চবর্ণ মারাঠি অস্মিতাকে হাথিয়ার করে শিবসেনা বা তার উল্টোদিকে দলিতদের ব্ল্যাক প্যান্থারের মতো সংগঠন থেকে আজকের কবীর কলা মঞ্চ। কিংবা তামিলনাডু আর তেলেঙ্গালায় তামিল ও তেলেগু জাতীয়তার রাজনীতি, তখন পশ্চিমবাংলা সেই কংগ্রেস-সিপিএম-তৃণমূল-মাওবাদী রাজনীতি নিয়েই উত্তাল। জাতপাতের উপদ্রব ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মতো আগ্রাসী না হলেও পশ্চিমবাংলা জাতপাতের প্রভাব মুক্ত এমনটা একেবারেই নয়। বাম আমলেও ”ছোটজাতের” রান্না করা মিড-ডে-মিল খেতে অস্বীকার করেছে উচ্চবর্ণের ইস্কুলে পড়া বাচ্চারা। কিন্তু যে কোন কারনেই হোক “জাতপাতের রাজনীতি” এখানে ততো পাত পায়নি। দেশভাগের সময় যোগেন মন্ডল বা অনেক পরে ৯০এর দশকে সন্তোষ রাণা চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্তু হালে পানি পাননি তারা। আব্বাস সিদ্দিকি সেদিক থেকে আলাদা। আসলেন, দেখলেন ও জয় না করলেও আলোচনার ঝড় তুলে দিলেন।
আব্বাসের মূল পরিচয় একজন ধর্মগুরুর। সেটা তিনি লুকাতেও চান না। ধর্মগুরু হিসাবে তিনি প্রচুর ওয়াজ বা ধর্মসভা করেন। খুব সামান্য আরবী শব্দ ব্যবহার করে, তিনি গোটা ওয়াজে সুর করে বাংলায় তার কথা বলে যান। তবে, একটা বিষয় লক্ষণীয়, রাজনীতিতে যোগদানের আগের ও পরের ওয়াজে ফারাক খুব স্পষ্ট। আগের মত উচ্চগ্রামে কথা নয়, আগের মতো আগুনে কথা নেই। এখন তিনি অনেক পরিশীলিত এবং শুধু মুসলমান নয়, দলিত, আদিবাসী ও অন্য ধর্মের মানুষের কথাও বলেন।
এবারে আব্বাসের অন্যদিকটিতে একটু উঁকি মারা যাক। সে বিষয়ে ওনার এবিপি আনন্দে সুমন দের সাথে সাক্ষাতকারটি প্রতিনিধিত্বমূলক। সেখানে উনি অনেক ভালো ভালো কথা বলেছেন, যেমন সকলেই বলে থাকেন। কিন্তু তার ফাঁকে ফাঁকে কিছু ব্যতিক্রমী কথা বলেছেন, ব্যতিক্রমী আচরণ করেছেন যা সকলে বলে না। সকলে করে না।
উনি নিজের “প্রথম পরিচয়”, “সবচেয়ে বড় পরিচয়”, একজন ভারতীয় ও বাঙ্গালী হিসাবে দিতে চান। কিন্তু উনি জানেন “এক একটা পার্টে এক এক ভাবে আমাকে দেখা হয়”। ওনার পরিবারের জায়গা থেকে উনি পীরজাদা। আবার, উনি “মানুষের সেবা” করতে এসেছেন, স্পষ্ট করে বলছেন, “আমি মানুষের সেবার জন্য ভাবলাম, রাজ ক্ষমতা ছাড়া মানুষের সেবা করাটা খুবই আজকের দিনে বাধা”। অর্থাৎ ভারত সেবাশ্রম, রামকৃষ্ণ মিশন, জেসুইট মিশনারী, আল আমীন বা মুসলিম ফাউন্ডেশনের পথে মানুষের সেবা করাটা তার রাস্তা নয়। তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতা হাসিল করে তার মাধ্যমেই মানুষের সেবা করতে চান, তাই ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। সেখানে “সর্বধর্মের মানুষের কাছে” তিনি “ভালোবাসার মানুষ হিসাবে” পরিচিত হতে চন।
প্রথম ও সবচেয়ে বড় পরিচয় হিসাবে ভারতীয়ত্ব ও বাঙ্গালী জাতি পরিচয়কে তুলে ধরাটা প্রত্যাশিত। কিন্তু উনি অন্য পরিচয়টিকে (পীরজাদা) সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন ও ওনার রাজনৈতিক পরিচয় হিসাবে ধর্মনির্বিশেষে “পিছিয়ে পড়া, অসহায় মানুষের” প্রতিনিধি হিসাবে নিজেকে দেখতে চাইছেন। উনি বাবা সাহেব আম্বেদকরের কথা বলছেন, “বাঁচতে গেলে অধিকার ছিনিয়ে নিতে হয়”। ছিনিয়ে নেবার সঠিক প্রক্রিয়া হিসাবে উনি চিহ্নিত করছেন “রাজনীতি, ভোটার সিস্টেম”। উনি আদর্শ হিসাবে তুলে ধরলেন দলিত নেতা কাঁসিরামের এক সাংঘাতিক বক্তব্য কে – “আমি মজবুত সরকার চাই না, মজবুর সরকার চাই”। একথা বলার সাহস আজকের কোন রাজনীতির মানুষেরই নেই। শক্তিশালী নয় দূর্বল সরকার চাই, যে মানুষের (পড়ুন আমার/আমার দলের) উপর নির্ভরশীল হবে।
উনি মনে করেন “মানুষের সেবার জন্য” রাজনীতি করতে গেলে একটা শক্ত জায়গা চাই। তাই উনি মমতার কাছে ৪৪টা সিট চেয়েছিলেন। মমতা রাজি না হওয়ায় উনি “রিসার্চ” করে দেখলেন বামেরা মুসলমানেদের “৭০%” ক্ষতি করে থাকলে মমতা “২০০%” ক্ষতি করেছেন। তা ছাড়া ওই “রিসার্চ” করে উনি আরও জেনেছেন, যেটা নাকি আগে জানতেন না, যে, তৃণমূল আসলে বিজেপির “প্রাইমারী স্কুল”। তাই উনি বামেদের সাথে গেলেন। যুক্তি হিসাবে খুবই দুর্বল এবং একই সাথে বালখিল্যসুলভ। কিন্তু সম্ভবতঃ উনি আস্থা রেখেছিলেন এবিপি আনন্দ বা আরও নির্দিষ্ট করে সুমন দের উপর। উনি জানেন সুমন সাধারণতন্ত্রী গোঁসাই নন, বরং গোঁসাইবাগানের গোঁসাই গোত্রের। যিনি এই জায়গায় ওনাকে চেপে ধরে নাকের জলে চোখের জলে করে দেবেন না, বরং প্রসঙ্গান্তরে চলে যাবেন। হলোও ঠিক তাইই। ভাবমূর্তি রক্ষার দায় যে বড়ই বিষম। আব্বাস ঝুঁকি নিতে জানেন। জানেন কোথায় ঝুঁকি নেওয়া চলে। এবং একই সাথে বুঝিয়ে দিলেন, নীতি নিয়ে খুব বেশী মাথাব্যথা ওনার নেই। মানুষের সেবা করার জন্য রাজ ক্ষমতাই আসল কথা। তবে, উনি নেতা হতে চান না, “ভালো ভালো লিডার” তৈরী করতে চান এবং পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন, “তাদের নিয়ন্ত্রনটা আমি হাতে রাখবো”। সুপ্ত ক্ষমতার আকাঙ্খাটি গুপ্ত নয়।
নুসরতজাহানকে গাছে বেঁধে পেটানোর প্রসঙ্গে আবারও একটা ব্যতিক্রমী কথা বললেন আব্বাস। উনি পুলিশের অপরাধীকে পেটানোর যুক্তি দিয়ে পার পেতে চেয়েছিলেন এবং সঙ্গতভাবেই সুমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন তুলে সে রাস্তা বন্ধ করে দেন। সেখানে সোজাসুজি স্বীকার করে নিলেন যে এই বিষয়টি (পুলিশ অপরাধীকে পেটাতে পারে না) তিনি জানতেন না। তার জন্য প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে তিনি ক্ষমা চাইলেন। কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পক্ষে ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ। গোটা বিষয়টা হয়ে দাঁড়ালো একজন সহজ মানুষের অজ্ঞতা স্বীকার করে নিয়ে ক্ষমা চাওয়ার সরলতায়। এখানেই আব্বাস কুশলী। পশ্চিমবঙ্গে পুলিশী হেফাজতে অত্যাচারের ঘটনা বিরল নয়। এই অত্যাচারের শিকার ৯০% ক্ষেত্রে নিম্নবর্গের মানুষ। যাদের একটা অংশ পীরজাদা হিসাবে আব্বাসের কাছে প্রায় প্রতিদিনই যান প্রতিকার চাইতে। আব্বাস কলকাতা বিশ্ববিদ্যলয়ে পড়েছেন ও ধর্মতত্ত্বে স্নাতকোত্তর সম্মান লাভ করেছেন। ফলে তিনি আইনের এই প্রাথমিক বিষয়টি জানেন না এমনটা মানা বেশ কঠিন। উনি একটা অযুক্তি দিয়ে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। যখন আটকে গেলেন, আর পাঁচটা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মত অজুহাত খাড়া না করে বিষয়টি নিয়ে ওনার অজ্ঞানতার দোহাই দিলেন ও ক্ষমা চাইলেন। এখানেই উনি অন্যদের চেয়ে নিজেকে আলাদা প্রমাণ করে দিলেন ও একই সাথে সহজ-সরল ভাবমূর্তিটির প্রতিষ্ঠা দিলেন।
মার্চ ২০২১এর প্রথম সপ্তাহে পাওয়া আইএসএফের প্রার্থী তালিকা যা পাওয়া গেছে, সেই অনুযায়ী ঐসব কেন্দ্রগুলি সম্পর্কিত তথ্য নীচে দেওয়া হলো। এইসব কেন্দ্রের তালিকা পরে পাল্টাতেও পারে।
চাপড়া – নদীয়া । হিন্দু ৩৯.০৮%, তফঃশিলী জাতি ১৫.৮৫%, আদিবাসী ০.৬৫%, মুসলিম ৫৭.৫৬% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
কৃষ্ণগঞ্জ – নদীয়া । হিন্দু ৯৩.৯৮%, তফঃশিলী জাতি ৪৫.৫৫%, আদিবাসী ৬.৪৭%, মুসলিম ৫.৮৭% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
রানাঘাট উঃপূঃ – নদীয়া । হিন্দু ৯৩.৮২%, তফঃশিলী জাতি ৩৬.৫৬%, আদিবাসী ১.৯১%, মুসলিম ৫.৬৭% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
অশোকনগর – উঃ ২৪ পরগণা । হিন্দু ৯৭.২০%, তফঃশিলী জাতি তথ্য নেই, আদিবাসী তথ্য নেই, মুসলিম ২.০৫% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
আমডাঙ্গা – উঃ ২৪ পরগনা । হিন্দু ৪১.৩০%, তফঃশিলী জাতি ১৮.১৬%, আদিবাসী ১.৫০%, মুসলিম ৫৮.৪৮% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
মধ্যমগ্রাম – উঃ ২৪ পরগণা । হিন্দু ৮৯.৩৬% , তফঃশিলী জাতি ৪৭.০৪%, আদিবাসী ০.০১%, মুসলিম ৯.৭৬%% । কংগ্রেস ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
হাড়োয়া – উঃ ২৪ পরগনা । হিন্দু ৭৩.৪৬%, তফঃশিলী জাতি ২৩.৬২%, আদিবাসী ৫.৯৪%, মুসলিম ২৫.৮২% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
সন্দেশখালি – উঃ ২৪ পরগনা । হিন্দু ৬৯.১৯%, তফঃশিলী জাতি ৩০.৯০%, আদিবাসী ২৫.৯৫%, মুসলিম ৩০.৪২% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
বসিরহাট উত্তর – উঃ ২৪ পরগনা । হিন্দু ২৯.৬৭%, তফঃশিলী জাতি ৮.৭৫%, আদিবাসী ২.৫১%, মুসলিম ৭০.১০% । সিপিএম ২০১৬তে বিজয়ী।
কুলপি – দঃ ২৪ পরগনা । হিন্দু ৫৮.৪৭%, তফঃশিলী জাতি ২৯.৬৭%, আদিবাসী ০.১১%, মুসলিম ৪০.৬০% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
মন্দিরবাজার - দঃ ২৪ পরগনা । হিন্দু ৬২.০৩%, তফঃশিলী জাতি ৪২.৪৯%, আদিবাসী ০.০১%, মুসলিম ৩৭.৬৫% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
ক্যানিং পূর্ব - দঃ ২৪ পরগনা । হিন্দু ৬১.৯৭%, তফঃশিলী জাতি ২০.৯৩%, আদিবাসী ৫.৩০%, মুসলিম ৩৭.৪৯% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
ভাঙ্গর – দঃ ২৪ পরগনা । হিন্দু ৩২.৩৮%, তফঃশিলী জাতি ২০.৯৯%, আদিবাসী ১.২৬%, মুসলিম ৬৭.৩৮% । বাম নির্দল ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
মেটিয়াবুরুজ - কলকাতা। জনবিন্যাসের তথ্য ধর্ম ও জাত সাপেক্ষে পাওয়া যায় নি। মুসলমান প্রধান এলাকা। সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
এন্টালি - কলকাতা। জনবিন্যাসের তথ্য ধর্ম ও জাত সাপেক্ষে পাওয়া যায় নি। মূলতঃ মুসলমান ও অ্যাংলো ইন্ডিয়ান অধ্যুষিত এলাকা। সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
পাঁচলা – হাওড়া। হিন্দু৫৩.২১%, তফঃশিলী জাতি ৩২.৮৩%, আদিবাসী ০.০১%, মুসলিম ৪৬.৬২% । ফব ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
উলুবেড়িয়া পূর্ব – হাওড়া । হিন্দু ৬০.৫১%, তফঃশিলী জাতি ৭৪.৪৬%, আদিবাসী ০.০২%, মুসলিম ৩৯.৩৬% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
জগতবল্লভপুর – হাওড়া । হিন্দু ৬৯.৩৬%, তফঃশিলী জাতি ২৪.৯০%, আদিবাসী ০.০২%, মুসলিম ২৩.৯৬% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
জাঙ্গিপাড়া – হুগলী । হিন্দু ৭৬.৪১%, তফঃশিলী জাতি ৩০.৮৭%, আদিবাসী ৪.৬১%, মুসলিম ২৩.১৫% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
হরিপাল – হুগলী । হিন্দু ৭৮.৪২%, তফঃশিলী জাতি ২৮.০৩%, আদিবাসী ৬.৭০%, মুসলিম ২০.৩৯% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
খানাকুল – হুগলী । হিন্দু ৮৪.২১%, তফঃশিলী জাতি ৩০.০৭%, আদিবাসী ০.০২%, মুসলিম ১৫.৬৭% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
মহিষাদল - পূর্ব মেদিনীপুর । হিন্দু ৭৯.৯৬%, তফঃশিলী জাতি ১১.২৫%, আদিবাসী ০.০৯%, মুসলিম ১৯.৬৮% । বাম নির্দল ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
চন্দ্রকোনা – পশ্চিম মেদিনীপুর। হিন্দু ৭৮.২২%, তফঃশিলী জাতি ৩০.২৮%, আদিবাসী ৫.৫৫%, মুসলিম ২০.৬৪% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
রায়পুর - বাঁকুড়া । হিন্দু ৭০.৭৬%, তফঃশিলী জাতি২১.৮৬%, আদিবাসী ২৭.৬৬%, মুসলিম ১.৩০% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
আসানসোল উত্তর - পশ্চিম বধমান। হিন্দু ৮০.৮৪, তফঃশিলী জাতি তথ্য নেই, আদিবাসী তথ্য নেই, মুসলিম ১৬.৯৩%। কংগ্রেস ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
ময়ূরেশ্বর – বীরভূম । হিন্দু ৬৯.৮৪%, তফঃশিলী জাতি ৩০.০৭%, আদিবাসী ৬.৬৯%, মুসলিম ২৯.৩৯% । সিপিএম ২০১৬তে প্রতিদ্বন্দীতা করেছিলো।
(তথ্য উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহিত)
দুটি কৌতুহলোদ্দীপক পর্যবেক্ষণ - ১) বেশীরভগ কেন্দ্রের জনবিন্যাস বলছে মুসলমান, হিন্দু নিম্নবর্ণ ও আদিবাসীদের সংখ্যা বেশ উল্লেখযোগ্য। ২) ২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে সিপিএমের ২৩টি আসন (যার মধ্যে একটি কেন্দ্র বসিরহাট উত্তরে সিপিএম প্রার্থী জিতেছিলেন), কংগ্রেস, ফরোয়ার্ড ব্লক ও নির্দলের ১টি করে আসন আইএসএফকে ছাড়া হয়েছে।
এসবই আব্বাস সিদ্দিকির রাজনীতি সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ভাসা ভাসা ধারনা দেয় মাত্র, নির্দিষ্ট করে কোন মতামতের জায়গায় এতে পৌঁছানো যায় না। আব্বাস ভগবান না শয়তান নাকি নেহাৎই আর একজন রাজনীতিক, সে কথা বলার সময় এখনো আসে নি।
তবে এটুকু মনে হয় আব্বাস লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। রাজনীতিতে থাকতে এসেছেন। পশ্চিমবাংলায় পরিচয়ের রাজনীতির আগডোম বাগডোম ঘোড়াডোমের রথের দৌড় হয়তো শুরু হলো। ঢাক, মাদল, কাঁসি হয়তো বাজবে, ঢূলিও ছুটবে। সে ঢুলি নীল, লাল বা কমলাপুলিতে পৌঁছতে পারবে কি না, সূয্যিমামাকে কিছুমিছু দিতে পারবে কিনা, সেসব প্রশ্নের উত্তর মহকালিক রথের অশ্বক্ষুরধুলি হয়ে বাতাসে ধুম্রজালের সৃষ্টি করেছে।
মায়া ক্রমে আসিতেছে। রহিয়া যাইবে কিনা, বলার সময় আসে নাই।
বেশ ভাল লাগল
১
বেশ তথ্য বহুল লেখা, তবে বিনীতভাবে জানাই একই সংগে কিছুটা আবেগতাড়িত, ভাববাদের বুদবুদে ভরপুর; জেহাদি মোল্লা আব্বাসচক্রের
অন্তর্নিহিত সুপ্তফনা এই লেখায় অনুপস্থিত।
২
চণ্ডালের যৎকিঞ্চিত পাঠ বলছে, ফুরফুরা শরীফসহ তাবৎ মাজার বা কবর ঘিরে ওরশ, উৎসব, সিন্নি, জিকির, আসকান ইত্যাদি মূল ইসলামের সংগে বিরোধপূর্ণ, এমনকী পীরতন্ত্র, এবং তৎসংলগ্ন সিলসিলার ভাবের আকাশের রংগিন ঘুড়িসমূহ কোরানিক ব্যাখ্যায় কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এসব কবরপূজারই নামান্তর।
পীরতন্ত্র প্রকৃত অর্থে ধর্মীয় রাজতন্ত্রই, বংশ পরম্পরায়ের প্রভুত্ব।
চল্লিশের দশকে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ তার "লালসালু" উপন্যাসে এইসব পীরজাদা-হারামজাদাদের মুখোশের আড়ালের মুখটিকে চিনিয়েছেন নির্মমভাবে, "শষ্যের চেয়ে টুপি বেশী, ধর্মের চেয়ে ধর্মের আগাছাই বেশী" অমোঘ বাক্যে।
কাজেই ফুরফুরা শরীফের হযরতি কেবলা যতই বোগদাদি আতর গোলাপের সুবাস ছড়াক, বাস্তবতা এই যে এটি নিছকই লাশের বানিজ্য, মাজার ব্যবহার করে ধর্ম ব্যবসা, সামন্ত অবশেষ এবং কূপমণ্ডূকতা সর্বস্ব চরম অবিজ্ঞান।
যদিও কল্লোলবাবুর লেখার কোথাও ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের শেষ কুফল নিয়ে কোনো ইংগিত পর্যন্ত নাই।
৩
"কিন্তু এই প্রথম একজন ধর্মগুরু সরাসরি রাজনীতিতে এলেন, তাও ফুরুফুরা শরীফের মতো সারা উপমহাদেশের কাছে মান্যতাপ্রাপ্ত এক মাজারের পীরজাদা। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা তার রাজনৈতিক দিশা। না, তিনি শুধু মুসলমানেদের হয়ে কথা বলছেন না। তার দাবী অনুযায়ী তিনি নিম্নবর্ণের হিন্দু, আদিবাসী এমনকি অন্য সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়েরও প্রতিনিধি। এখানেই হিসাব পাল্টালেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি।"
মাফ করবেন কল্লোল বাবু, পীরজাদা বা সাহেবজাদা যতোই ধর্মীয় গুরু হোন, তিনি নিজে দাবি করলেই তো আর "নিম্নবর্ণের হিন্দু, আদিবাসী এমনকি অন্য সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়েরও প্রতিনিধি" হয়ে যান না, এক ভোটবাক্সের লড়াইয়ে এপিবি আনন্দের সাক্ষাৎকারেই আটকে থাকলে সত্যিই হিসাবে অশুভংকর ফাঁকিই থেকে যাবে, আগেই বলেছি ছুপা রুস্তম খুবই পাকা খেলোয়াড়।
প্রসংগত, এপারে ২০১৩ সালে শাহবাগ গণবিস্ফোরণের বিপরীতে হেফাজত ইসলাম নামক উগ্র মৌলবাদী দল "নাস্তিক ব্লগারদের ফাঁসির দাবিতে" মতিঝিল শাপলা চত্বরে যখন শোডাউন করে, তখন জামাত-হেফাজত তাত্ত্বিক ফরহাদ মাজহার একে "গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও" এর তকমা দিয়ে রাষ্ট্র বিপ্লব ধারণাটিকে ঘেঁটে দিয়েছিলেন।
পরে জানা গেছে, শাপলা চত্বরের সমাবেশ ও জ্বালাও-পোড়াও আসলে ছিল বিএনপি-জামাত-হেফাজতের তেঁতুল হুজুর কোং-এর সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা! যা অবশ্য শিগগিরই মাঠে মারা যায়। ...
একইভাবে আব্বাস কোনোভাবেই সংখ্যালঘু মুসলিমদের প্রতিনিধি নন, কথিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিভূ তো ননই, একেকটি ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য রাখার তিনি কত টাকা ফি নেন, এটুকু জানা গেলেই জানা যাবে, এই বিশ্বাসের ভাইরাসের জাতই আলাদা, ফ্যানাটিক ফারাবি গোত্রীয়।
৪
সত্যি কথা বলতে, আব্বাসকে ভোটের মাঠে চড়তে দেওয়া হয়েছে, বা আরও বড় কোনো খেলোয়াড়রা তাকে চড়চ্ছেন, চিড়িয়াটি যে সুতোয় বাধা তার রং কালো বলে প্রায় অদৃশ্য। "মানুষের সেবা", "সেকুলারিজম", " সংখ্যালঘুর নেতা" শুনতে ভাল হলেও বাস্তবে মোটেই অতো সস্তা নয়।
অন্যকথায় মেষছাল গায়ে আব্বাস আপাদমস্তক একটি নেকড়ে, ফুরফুরা শরীফের সুফিবাদের আতর-সূর্মা মাখা গাছপাকা তালেবান, উগ্রবাদী জেহাদী, যার দর্শন রক্তাক্ত মুসলিম তরবারীতে খেলাফত প্রতিষ্ঠা।
এরই মধ্যে গুনধর ভাইজান ভোটের ময়দানে যৎসামান্য ভেল্কি দেখিয়েছেন, সময়ে তার দন্তনখর আরও বেরুবে, এটি অনিবার্য প্রায়, ক্রমশ প্রকাশ্য।
ল্যাঞ্জা ইজ ডিফিকাল্ট টু হাইড।
৫
আর কিছুক্ষণের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ। এতে ভাইজানের ঝন্টু বাম জোট চমকপ্রদ কিছু করে ফেলবে এমন নয়, আর সময়েই মাস্কের আড়ালের কুৎসিত মুখটি বেরিয়ে পড়বে।
সেদিক থেকে কল্লোল বাবুর লেখাটিকে ছুপা রুস্তমী আব্বাস মোল্লার কাঠের ঘোড়ার প্রমো বলেই মনে হয়েছে, মোটেই বখতিয়ারের আরবি ঘোড়ার নয়!
বিপ্লব। আব্বাস চতুর খেলোয়াড়। সে বোতলের দৈত্য যাকে সিপিএম ছিপি খুলে বের করে এনেছে। পরিচয়ের রাজনীতি নিয়ে যারা বড় মঞ্চে খেলে,তারা নীতির তোয়াক্কা করে না সেটা মায়াবতী আর চন্দ্রবাবুরা দেখিয়ে দিয়েছে। কাজেই......। তবে আমার ধারনা আব্বাস থাকতে এসেছে।
বিপ্লব। আপনি ঠিকই লিখেছেন- চণ্ডালের যৎকিঞ্চিত পাঠ বলছে, ফুরফুরা শরীফসহ তাবৎ মাজার বা কবর ঘিরে ওরশ, উৎসব, সিন্নি, জিকির, আসকান ইত্যাদি মূল ইসলামের সংগে বিরোধপূর্ণ, এমনকী পীরতন্ত্র, এবং তৎসংলগ্ন সিলসিলার ভাবের আকাশের রংগিন ঘুড়িসমূহ কোরানিক ব্যাখ্যায় কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এসব কবরপূজারই নামান্তর।
পীরতন্ত্র প্রকৃত অর্থে ধর্মীয় রাজতন্ত্রই, বংশ পরম্পরায়ের প্রভুত্ব।"
এ অধমের যতটুকু এ বাংলার গ্রাম ও গ্রামীন ও শহরের গরীব মুসলমান দেখা , তারা মসজিদের ইমামরেও "পীর"ই ভাবে। তারা আজও দরগায় দরগায় মানত করে পুতুল, চাদর চড়ায়। তাদের সাথে "মূল ইসলাম" এর খুব তেমন সম্পক্কো নাই। আমার বাসার কাজে সাহায্য করে যে মেয়েটি সে "কেতাব" পড়ায় আবার দাদাপীরের মাজারে মানত করে উরুষেও যায়।
কল্লোল (দাশগুপ্ত) দা,
১
অনেক দিন পরে আপনার দেখা পেলাম। গুরুতে আর লেখেন না কেন? আরও অনেকের মতো চণ্ডলও আপনার অনুপস্থিতি তীব্র অনুভব করে।
আপনাদের হাত ধরেই গুরুচণ্ডা৯তে আমাদের পথ চলা, নিয়মিত লিখবেন, বিনীত অনুরোধ রইল।
আপনার স্পষ্ট মত পেয়ে ভাল লাগছে। "কল্লোল" নামে সামান্য দ্বিধায় ছিল, পরে দেখা গেল এই লেখার দিকদারি ও মোটিভ আলাদা,
ইনি অন্যকেউ হবেন, মোটেই সেই পরিচিত পুরানো গিটারিস্ট কমরেড নন!
২
"এ অধমের যতটুকু এ বাংলার গ্রাম ও গ্রামীন ও শহরের গরীব মুসলমান দেখা , তারা মসজিদের ইমামরেও "পীর"ই ভাবে। তারা আজও দরগায় দরগায় মানত করে পুতুল, চাদর চড়ায়। তাদের সাথে "মূল ইসলাম" এর খুব তেমন সম্পক্কো নাই। আমার বাসার কাজে সাহায্য করে যে মেয়েটি সে "কেতাব" পড়ায় আবার দাদাপীরের মাজারে মানত করে উরুষেও যায়। "
এইটুকুতে কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি সাধারণ হিন্দু-মুসলমানের নাই। কোরানিক ইসলাম ও শরিয়তপন্থার সাথে সেটি সাংঘর্ষিক হলেও রাজনৈতিক ক্ষমতা লিপ্সা নাই বলে এটি গৃহলক্ষ্মী পর্যায়ের, ব্যক্তি ধর্মকর্ম পর্যায়ের।
জালালুদ্দিন রুমির গোত্রীয় এই সুফিবাদ, আর লালন সাঁইয়ের "মনের মানুষের" সন্ধানে জীবনপাত একই মানবধর্মের কথা বলে।
[দেখুন, এমন মানব সমাজ কবে সৃজন হবে?
]
৩
গোল বাধে তখনই, যখন ফানাফিল্লাহর বদলে নবাবজাদা ভাইজান বিশ্বাসের ভাইরাসে খেলাফত চান, ইসলামের আরবি ঘোড়ার খোয়বে "জেহাদ জেহাদ" বলে স্খালন ঘটান! এবং অনিবার্য, অপরের ভিন্নমতকে কল্লা নাশে "কাফের খুন" ঈমানী দ্বায়িত্ব বা ফরজে কিফায়া বলে মনে করেন।
অথবা অবুঝ মৃদুল দাশগুপ্ত প্রশংসিত "সোনালী কাবিন" এর মুক্তিযুদ্ধের পলাতক এছলামের কবি যেমন বলেন~
-------
আল মাহমুদ-এর কবিতা
বখতিয়ারের ঘোড়া
মাঝে মাঝে হৃদয় যুদ্ধের জন্য হাহাকার করে ওঠে
মনে হয় রক্তই সমাধান, বারুদই অন্তিম তৃপ্তি;
আমি তখন স্বপ্নের ভেতর জেহাদ, জেহাদ বলে জেগে উঠি।
জেগেই দেখি কৈশোর আমাকে ঘিরে ধরেছে।
যেন বালিশে মাথা রাখতে চায় না এ বালক,
যেন ফুৎকারে উড়িয়ে দেবে মশারি,
মাতৃস্তনের পাশে দু'চোখ কচলে উঠে দাঁড়াবে এখুনি;
বাইরে তার ঘোড়া অস্থির, বাতাসে কেশর কাঁপছে।
আর সময়ের গতির ওপর লাফিয়ে উঠেছে সে।
না, এখনও সে শিশু। মা তাকে ছেলে ভোলানো ছড়া শোনায়।
বলে, বালিশে মাথা রাখো তো বেটা। শোনো
বখতিয়ারের ঘোড়া আসছে।
আসছে আমাদের সতেরো সোয়ারি
হাতে নাংগা তলোয়ার।
মায়ের ছড়াগানে কৌতূহলী কানপাতে বালিশে
নিজের দিলের শব্দ বালিশের সিনার ভিতর।
সে ভাবে সে শুনতে পাচ্ছে ঘোড়দৌড়। বলে, কে মা বখতিয়ার?
আমি বখতিয়ারের ঘোড়া দেখবো।
মা পাখা ঘোরাতে ঘোরাতে হাসেন,
আল্লার সেপাই তিনি, দুঃখীদের রাজা।
যেখানে আজান দিতে ভয় পান মোমেনেরা,
আর মানুষ করে মানুষের পূজা,
সেখানেই আসেন তিনি। খিলজীদের শাদা ঘোড়ার সোয়ারি।
দ্যাখো দ্যাখো জালিম পালায় খিড়কি দিয়ে
দ্যাখো, দ্যাখো।
মায়ের কেচ্ছায় ঘুমিয়ে পড়ে বালক
তুলোর ভেতর অশ্বখুরের শব্দে স্বপ্ন তার
নিশেন ওড়ায়।
কোথায় সে বালক?
আজ আবার হৃদয়ে কেবল যুদ্ধের দামামা
মনে হয় রক্তেই ফয়সালা।
বারুদই বিচারক। আর
স্বপ্নের ভেতর জেহাদ জেহাদ বলে জেগে ওঠা।
***
১৯ রমজান...
ঐতিহাসিক বঙ্গ বিজয় দিব।।
***
আপাতত এইটুকু। মুক্তচিন্তা জারি থাক
বিপ্লব। লেখাটা আমারই। আজকাল পদবী ব্যবহার করি না। তবে কমেন্ট বা টইতে লিখতে গেলে লগইন করা আছে বলে নামটা ইংরাজিতে কল্লোল দাশগুপ্ত চলে আসে। কল্লোল ও কল্লল দাশগুপ্ত এ অধমই।
পরিশ্রমী লেখা।পরিশ্রম করেই অনুধাবন করতে হয়।আমি মন্তব্য করতে ভরসা পাচ্ছি না।লেখক খুব যত্নসহকারে বক্তব্য রেখেছেন তথ্য পরিবেশন করেছেন
"বিপ্লব। লেখাটা আমারই। আজকাল পদবী ব্যবহার করি না। তবে কমেন্ট বা টইতে লিখতে গেলে লগইন করা আছে বলে নামটা ইংরাজিতে কল্লোল দাশগুপ্ত চলে আসে। কল্লোল ও কল্লল দাশগুপ্ত এ অধমই। "
---
১
সেকি!! কল্লোল দা,
আমি যে কল্লোল যুগের গিটারিস্টকে চিনতাম, তার ভাব দর্শনের সাথে এই "অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী" আব্বাসীয় প্রমোকে কিছুতেই মেলাতে পারছি না! মানুষ চেনা দায়।
২
ফুক্কা কুল্লা নিজামিন, জেহাদির কবর দিন, আল্লাহুম্মা আমিন।।
৩
আপনার যে কোনো লেখায় এটিই আমার শেষ মন্তব্য। ভাল থাকুন, কম-রেড!
বিপ্লব। আমরা বোধহয় একই অনুভবের রাস্তায় আছি। আমি শুধু পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে নতুন ধারাটিকে ধরতে চেয়েছি, তার সুবিধাজনক অবস্থান, তার চতুরতার জায়গা থেকে। ভালো-মন্দের বৈচারিক ভাবনাটি সচেতনভাবে সরিয়ে রেখেছি। আমার মত পাঠকের উপর চাপিয়ে দিতে চাই নি। পাঠক তার সিদ্ধান্ত নিন। যেমন তুমি নিয়েছো।
আজ দ্যাখো, সংযুক্ত মোর্চার ফয়দা কে তুললো। বাম বা কংগ্রেস মুসলমান বা হিন্দু নিম্নবর্ণের ভোট টানতে পারেনি আব্বাসকে দেখিয়ে। আব্বাস কিন্তু বাম কংগ্রেসের কাঁধে চড়ে খাতা খুলে ফেললো। "মানুষের সেবা" করার জন্য আব্বাসের "একটা শক্ত জায়গা চাই"। তাই আগামীতে সে আবারও "রিসার্চ করে" মমতার সাথে ভিড়ে গেলে অবাক হবো না। কারন এটা পরিষ্কার তার ক্লায়েন্টাল প্রায় গোটাটাই মমতার দিকে ঝুঁকে। করে কম্মে তো খেতে হবে রে ভাই !
@বিপ্লব রহমান
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা এবং পশ্চিমবঙ্গে মমতা দুজনেই এক হিসেবে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছেন | কিন্তু তাদের পরে কি হবে ? দুজনের বয়স তো সত্তরের ওপরে , তাদের পরে এই লড়ায়ের হাল কে ধরবে ? আমার মনে হয় শেখ হাসিনা অনেকটা শক্ত জমিতে আছেন যেহেতু তিনি সেই রকম কোনো শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সম্মুখীন হননি মমতার মতো | তাছাড়া বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তি পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি এর একের দশভাগ শক্তিও ধরেনা কাজেই শেখ হাসিনার লড়াই এত কঠিন হবেনা মমতার মতো | মমতার পরে তো আর কোনো বিজেপি বিরোধী শক্তি রইলোনা পশ্চিমবঙ্গে | কাজেই পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক শক্তি ভবিষ্যতে ক্ষমতা দখল করবে বলেই মনে হয় |
আপনার কি মনে হয় ?
এই ছাড়া আমি একটি কথা জানতে ইচ্ছুক | বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছরের পূর্তি উপলক্ষে হঠাৎ করে ভারতের তরফ থেকে covid ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ করাটা কি হাসিনা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ভারতের প্রতি ক্ষোভ বৃদ্ধি করবে ? মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের মানুষ কতটা কষ্ট ও দুর্ভোগের শিকার হলেন ও এখন শেখ হাসিনা কি তার ভারতপন্থী নীতির পরিবর্তন করবেন ?
পড়লাম। জানিয়ে গেলাম।
লেখা টা এত দিনে এল? এতগুলো আব্বাস লেখা র পরে?
বিপ্লব বাবু বাংলাদেশের হিন্দু দমনে্র বিরুদ্ধে একটূ বেশী চেষ্টা করলে এবং এদিকে জানালে বিজেপির প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে লড়তে একটু সুবিধা হয়। আর বাংলাদেশের হিন্দুদের ও ভালো হয়। মুসলমান রা যে কত ভয়ংকর তা বিজেপির আইটি সেল দিনরাত জানায়, এই ইনফর্মেশন আমাদের আর দরকার নেই।
কি আশ্চর্য! লেখা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হবে না? আব্বাসের সাম্প্রদায়িক চরিত্র ব্যাখ্যার সঙ্গে বিজেপির প্রচারের সম্পর্ক কি? কোথা থেকে জোটে এইসব মাল!
আব্বাসের সঙ্গে সিপিএমের ভাব হওয়ার কারণ সিপিএমের মত আব্বাসকেও নিজের পাড়ার লোক চেনেনা। আব্বাসের নিজের কেন্দ্রে জামানতও মনে হয় টেকাতে পারেনি মোর্চা।
বিজেপির সাথে লড়াই টা ইলেকশনে র সাথেই শেষ হয়ে যায়না, বিজেপি যখন একটা সিটও পায়নি তখনও ছিল, নিজেরা একটা সিট না পেলেও থাকবে। বিজেপির প্রচার ও ইলেকশনে শেষ হয়না। কাজে ই যা খুশি আলোচনা করে যাবো এমন নয়।
দূ,
"বিপ্লব বাবু বাংলাদেশের হিন্দু দমনে্র বিরুদ্ধে একটূ বেশী চেষ্টা করলে এবং এদিকে জানালে বিজেপির প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে লড়তে একটু সুবিধা হয়। আর বাংলাদেশের হিন্দুদের ও ভালো হয়। মুসলমান রা যে কত ভয়ংকর তা বিজেপির আইটি সেল দিনরাত জানায়, এই ইনফর্মেশন আমাদের আর দরকার নেই।"
আপনি ঠিক বলেছেন, আপনাকে ধন্যবাদ। গুরুতে এখন থেকে আপনার এডমিনশিপ মেনে চলবো।
কল্লোল দা,
১
"বিপ্লব। আমরা বোধহয় একই অনুভবের রাস্তায় আছি। আমি শুধু পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে নতুন ধারাটিকে ধরতে চেয়েছি, তার সুবিধাজনক অবস্থান, তার চতুরতার জায়গা থেকে। ভালো-মন্দের বৈচারিক ভাবনাটি সচেতনভাবে সরিয়ে রেখেছি। আমার মত পাঠকের উপর চাপিয়ে দিতে চাই নি। পাঠক তার সিদ্ধান্ত নিন। যেমন তুমি নিয়েছো।"
এই কথায় আবারও আপনার লেখায় ফিরলাম। খানিকটা অভিমান করেই বলেছিলাম, "আপনার যে কোনো লেখায় এটাই শেষ মন্তব্য", ইত্যাদি। সে কথা ফিরিয়ে নিচ্ছি, বুঝতে ভুল হয়েছিল, বেয়াদবি মাফ করবেন, নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থী।
২
"আমি শুধু পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে নতুন ধারাটিকে ধরতে চেয়েছি, তার সুবিধাজনক অবস্থান, তার চতুরতার জায়গা থেকে।"
খেয়াল করে দেখবেন, আমার বিতর্ক এখানেই। পুরো লেখায় আব্বাসে চাতুরী নাই, বরং ফুরফুরা শরীফের পীরজাদার যেন অহিংস-অসাম্প্রদায়িক দিক গ্লোরিফাই করা হয়েছে, তার ভোটবাজীর ভাঁওতা, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার, জেহদী দিক-দর্শন পুরোই চেপে যাওয়া হয়েছে। এমনকি ভাইজানের ভয়াল গোপন মিশনের আভাস পর্যন্ত নাই!
৩
"তাই আগামীতে সে আবারও "রিসার্চ করে" মমতার সাথে ভিড়ে গেলে অবাক হবো না। কারন এটা পরিষ্কার তার ক্লায়েন্টাল প্রায় গোটাটাই মমতার দিকে ঝুঁকে। করে কম্মে তো খেতে হবে রে ভাই !"
নিঃসন্দেহে। এইখানে এ ক ম ত। ভাগীদারী রাজনীতিতে ঝন্টু বাম হেরেছে, কিন্তু আব্বাসের ছুপা রুস্তমী রাজনীতি লাইম লাইটে এসেছে, সে অর্থে তার খেলা শুরু মাত্র।
ভাইজানের ভাই নওশাদ সিদ্দিকী ভাংগরে জিতেছেন। সে অর্থে ধর্মীয় সুরসুরিতে কামিল বক্তা আব্বাস জমিন পেয়ে গেছেন। অর্থাৎ হাতে রইল আলিমুদ্দিনের পলিট ব্যুরো, "আব্বাস সিদ্দিকী সাম্প্রদায়িক নয়" বলে যারা এতোদিন প্রচার করেছেন (এই লেখারও মোটিভ তাই বলে মনে হয়েছে), তারাই পড়ে রইলেন, বেরিয়ে গেলেন ভাইজান।
এখন ভাংগা কুলো সিপিয়াইএমকে ছুঁড়ে ফেলা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এই অর্থে কাঠের ঘোড়াটি অনেক খেলাই দেখাবে। বিশেষ করে অর্ধ-শিক্ষিত তরুণদের মনে সাঈদী-ক্রেজ তোলা শুধু ওয়াজেই যখন সম্ভব।
শান্ত আলোচনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
#
guru,
আপনি আলোচনাটিকে আরেকটু ছড়িয়েছেন, সে জন্য ধন্যবাদ।
তবে সব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য চণ্ডাল মোটেই অধিকারী নয়। তবু ভারত, বিশেষ করে পশ্চিম বংগের রাজনীতির সংগে বাংলাদেশের আগামী অনেকটাই জড়িত বলে একটু সময় করে ব্যক্তিগত মতামত দিতে হবে।
আপনাদের আলোচনা চলুক। শুভ
Guru,
১
"বাংলাদেশে শেখ হাসিনা এবং পশ্চিমবঙ্গে মমতা দুজনেই এক হিসেবে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছেন | কিন্তু তাদের পরে কি হবে ? দুজনের বয়স তো সত্তরের ওপরে , তাদের পরে এই লড়ায়ের হাল কে ধরবে ?"
চণ্ডালের ব্যক্তিগত মত এই যে, এই দুই দক্ষিণপন্থী দল চলছে নিজস্ব অসাম্প্রদায়িক নীতির আদর্শে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, ঘাতক জামাতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে প্রথম থেকেই তরুণ প্রজন্মের মন জয় করেছে। তবে তাদেেরও ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি সর্বত্র অনুসরণে ঘাটতি আছে। বিশেষ করে "মদিিনা সনদে দেশ চলবে" বলেও সরকারের পক্ষ থেকে অনেক আগেেই এক দফায় বলাা হয়েছে।
২
ভোটের স্বার্থে হেফাজতে ইসলামসহ তৎসংলগ্ন জংগী তৎপরতা আওয়ামী লীগকে কিছুদিন প্রশ্রয় দিতে হয়েছে, (যেমন, শাহবাগ গণবিস্ফোরণের পালটা ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্ত্বরে হেফাজত তাণ্ডবকে উপেক্ষা, হেফাজতের দাবি মেনে বেশকিছু ব্লগার গ্রেফতার, তাদের দাবি অনুযায়ী হাইকোর্ট প্রাংগন থেকে ভাস্কর্য অপসারণ, ব্লগার নিধনযজ্ঞ বন্ধে আগেভাগেই শক্ত ভুমিকা না নেওয়া ইত্যাদি)।
৩
কিন্তু হেফাজত সে কোটা পূরণ করে যখন সম্প্রতি বংবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাংগা শুরু করলো, তখনই তারা মুলত সরকারের সাথে হিসেব-নিকেশ চুকিয়েছে। মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও তাণ্ডবের পর সদ্য শুরু হয়েছে উগ্রবাদী হেফাজত দমন প্রক্রিয়া।
ওদিকে, ২০১৬ সালের ১ জুন হলি আর্টিজান ট্রাজেডিতে জংগী হামলায় কয়েক বিদেশিসহ অন্তত ১৪ জন জিম্মি নিহত হন, মারা পড়েন আইএস সমর্থিত ছয়জন জংগীও। আন্তর্জাতিক শিরোনাম হয় বাংলাদেশ। মূলত এরপরেই জংগীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে অভিযান চালায় সরকার। এখন জংগী গোষ্ঠী অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে বলে সরকার প্রচারও করছে। তবে প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে অভিজিৎ রায়সহ আরও অনেক মুক্তমনা প্রাণ হারিয়েছে জংগী হামলায় আগেই।
৪
"হঠাৎ করে ভারতের তরফ থেকে covid ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ করাটা কি হাসিনা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ভারতের প্রতি ক্ষোভ বৃদ্ধি করবে ? মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের মানুষ কতটা কষ্ট ও দুর্ভোগের শিকার হলেন ও এখন শেখ হাসিনা কি তার ভারতপন্থী নীতির পরিবর্তন করবেন ?"
শুধুমাত্র ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের সাথে চুক্তি করে একটি উৎসের ওপর নির্ভর করায় " "কোভিশিল্ড" ডোজ শর্টেজে এরই মধ্যে বন্ধ করতে হয়েছে প্রথম দফায় টিকাদান। বাকী মজুদ দিয়ে চলছে দ্বিতীয় দফায় টিকাদান। তবে তরিঘরি করে রাশিয়ার "স্পুৎনিক ভি" টিকা দেশেই উৎপাদনের চুক্তি করেছে সরকার। চীনা টিকা আমদানির চুক্তিও হয়েছে। শিগগিরই দেশে পৌঁছাবে "সিনোভ্যাক" এর পাঁচ লাখ ডোজ উপহারের টিকা।
কাজেই কিছুটা ছেদ পড়লেও এ পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি আবারও নব উদ্যোমে শিগগিরই শুরু হবে আশা করা যায়।
এদিক থেকে সরকারকে অনেক কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। তাছাড়া গণ টিকাদান কর্মসূচিতে ৪০ বছরের কমবয়সীদের ডোজ দেওয়া শুরু হতে না হতে টিকার চালানের অনিশ্চয়তায় ২ মে থেকে বন্ধ রয়েছে নিবন্ধন। তবে এরই মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ২১ লাখ মানুষ।
আর এতেই সরকারের "ভারতপন্থী নীতি" বদলে যাবে বলে মনে হয় না, কারণ সম্ভবতঃ বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রতিম দেশ ভারত, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যার সূচনা।
এদিকে ভারতে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে টিকা রপ্তানি বন্ধ করায় চুক্তি অনুযায়ী সেরামকে বাংলাদেশের টাকা ফেরত দিতে হবে বলে জানিয়েছেন সরকারের মন্ত্রীরা।
৫
আগ্রহের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ