এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  কাব্য

  • তিলোত্তমা থেকে গণবিস্ফোরণের পথচলা এবং …

    কল্লোল
    কাব্য | ২৯ আগস্ট ২০২৪ | ২৯৩ বার পঠিত
  • জুন থেকে আগষ্ট ২০২৪। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে অভ্যুত্থানের মাস হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

    ৫ জুন ২৪। বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধছে। যা ক্রমশঃ স্বৈরাচার বিরধী গণঅভ্যুত্থানে পরিনত হচ্ছে।
    ৫ আগষ্ট ২৪। গণঅভ্যুত্থানের তীব্রতায় হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেন।
    ২৪ জুলাই ২৪। বালুচিস্তানের গওদার অঞ্চলের বিসেষ দাবী নিয়ে সাধারণ মানুষের বিশাল সমাবেশ। স্বাধীন বালুচিস্থানের আন্দোলন ক্রমশঃ জোরাদার হচ্ছে।
    ৯ আগষ্ট ২৪। আর জি কর হাসপাতালে এক তরুণী ডাক্তারের নির্মম বলাৎকার ও হত্যা।
    ১৪ আগষ্ট ২৪। এর প্রতিবাদে বিচার চেয়ে সারা ভারত জুড়ে রাত দখলের ডাক নারী আন্দোলনের। এই আন্দোলনে গণবিক্ষোভের জোয়ার।

    মেয়েদের এই রাত দখলের আন্দোলন হঠাৎই এক অন্য মাত্রা পেয়ে গেলো ১৪ আগাষ্ট রাতে, সারা ভারত, সারা বিশ্ব জুড়ে পালিত হয়েছে। সারা পশ্চিমবাংলায় অভুতপূর্ব সারা। লক্ষ্য করার বিষয় শুধু নারীরা নয়, সেদিনের মধ্যরাতের কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে যোগ দেন নারী পুরুষ নির্বিশেষে হাজারে হাজারে সাধারণ মানুষ। ১৪ আগষ্টের আন্দোলন আর শুধুই মেয়েদের আন্দোলন রইলো না, হয়ে উঠলো প্রকৃতপক্ষে এক গণবিস্ফোরণ। এখানেই প্রশ্ন আসে কিসের বিরুদ্ধে এই গণবিস্ফোরণ? তা কি শুধুই আর জি কর কান্ডের তিলোত্তমার বিচার চেয়ে নাকি অন্য কিছুও বটে।

    জনতার মুখে সেদিন থেকে বর্ষার বজ্রনির্ঘোষের মত উচ্চারিত হচ্ছে “উই ওয়ান্ট জাস্টিস”। পশ্চিমবাংলার সমস্ত শহর মফঃস্বল গ্রামে ইস্কুল পড়ুয়া থেকে শিক্ষক, কেরানী থেকে আইটি গাই, সবজি বিক্রেতা থেকে মনিহারী দোকানদার, হাই রাইজ থেকে মাটি দিয়ে লেপা ছ্যাঁচা বেড়ার ঘর, ছাত্ররা তো বটেই, এক হয়ে আওয়াজ তুলেছে “উই ওয়ান্ট জাস্টিস”। এই জাস্টিস বা বিচার কিসের? শুধুই একটা ধর্ষন-খুনের বিচার নয়, মানুষ বিচার চাইছে নূন্যাধিক কুড়ি বছর ধরে চলে আসা অপশাসন, জুলুমবাজি, দুর্নীতির। তাদের মুখ বলছে তিলোত্তমার উপরে হওয়া অন্যায়ের বিচার চাই, ভিতরের মন বলছে আমাদের উপর ঘটে চলা অন্যায়েরও বিচার চাই। কোন লক্ষীর ভান্ডার, সাইকেল, কম্পিঊটার, বিনিপয়সার চাল, স্বাস্থ্য সাথী এই বিচার চাওয়াকে আটকাতে পারছে না। এটা আজ সাধারণ মানুষের দাবী।

    প্রশ্ন তবে, আজই কেন? এখনই কেন এ দাবী। অপশাসন, জুলুমবাজি, দুর্নীতি তো আজকের নয়। কোন বিতর্কে না গিয়েও বলা যেতেই পারে এ তো অন্ততঃ বছর দশেক ধরেই চলছে। তবে আগে কেন হয়নি, আজ কেন? হয়তো মানুষের ধৈর্য একটা বিষয়, হয়তো জুলুমের তীব্রতা একটা বিষয়, কিন্তু সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি ছিলো মানুষের আত্মবিশ্বাসের জায়াগাটায়।
    মানুষকে তো এতোদিনকার জ্ঞানচর্চার ভিতর দিয়ে শেখানো হয়েছে, তারা এসবের যোগ্য নয়। তার জন্য দল লাগে, নেতা লাগে।
    ইংরাজ হঠালো কে? কংগ্রেস। কংগ্রেস হঠালো কে? সিপিএম। সিপিএম হঠালো কে? তৃণমূল। এই গল্পে কোত্থাও মানুষ নেই। অথচ সবটা জুড়েই মানুষ। এখানেই বোধহয় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘরের পাশের ঘটনাপ্রবাহ কাজ করেছে। বাংলাদেশের ছাত্রদের আন্দোলন সাধারন মানুষের মনে এই বিশ্বাসের জায়াগা তৈরী করে দিয়েছে “আমরাও পারি”।
    আর অবশ্যই মেয়েদের রাত দখলের আন্দোলনের এই বিস্তির্ণ চেহারা সেই আত্মবিশ্বাসকে আরও পাকা করেছে।

    শাসককের প্রতি মানুষের ভয় ভাঙ্গছিলো। তার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল সন্দেশখালিসহ নানা জায়গায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ধণতন্ত্রের সাংষ্কৃতিক আগ্রাসন, বিশেষ করে নব্বইয়ের দশক থেকে যে চূড়ান্ত আগ্রাসী আক্রমণ চলেছে মানুষের মননে-চেতনায়, তাতে মানুষের কেন্দ্রের প্রতি মোহ বৃহতের প্রতি মোহ এমন এক জায়াগায় গেছে, সেখানে কলকাতায় (পশ্চিমবংলার ক্ষেত্রে) কিছু ঘটলে তার প্রভাব অনেক গভীরে পৌঁছে যায়। ফলে মেয়েদের রাত দখলের আন্দোলন শুধুই মেয়েদের রাত দখলের আন্দোলনে আটকে না থেকে তা সাধারাণ মানুষের রাজনীতি দখলের আন্দোলনে পরিনত হয়ে গেছে।

    এরকম অবস্থায় পশ্চিমবাংলার বাস্তবতায় যা যা ঘটার তা ঘটেই চলেছে। এই আন্দোলনের ফায়দা তুলতে দক্ষিণপন্থী দলেরা তৎপর। বিজেপি রাজ্যের ক্ষমতা দখলের গন্ধ পেয়েছে। তৃণমূল শাসক দল হয়েও “বিচার চাইছে”, দোষীদের শাস্তি চাইছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও সুপ্রিম কোর্টের কাছে। কারন তদন্ত ও বিচার এখন এই দুই সংস্থার হাতে। এই ভাবে তারা গোটা আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে।

    আজ এই আন্দোলনের কাছে চ্যালেঞ্জ এই দুই দক্ষিণপন্থী দলের হাতে আন্দোলন হাইজ্যাক হয়ে যাওয়া থেকে আটকানো ও আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

    পশ্চিমবাংলার রাজনীতি একটা নতুন মোড়ে দাঁড়িয়ে। যেখানে মানুষ ডান-বাম নির্বিশেষে কোন দলের উপরেই আস্থা রাখতে পারছে না। তাই তারা অরাজনৈতিক ও অদলীয় জায়াগায় চলে আসতে চাইছেন। এই প্রবনতা সারা পৃথিবী জুড়েই। কোথাও তা ব্যর্থ হচ্ছে, কোথাও তা চলমান দক্ষি আমেরিকায় জাপাতিস্তা আন্দোলনের ধারায়। বাংলাদেশে সেই নিরীক্ষা এখনো চলমান।

    অন্যদিকে মেয়েদের রাত দখলের আন্দোলন তাদের বক্তব্যে “কাঠামোর বদল” চাইছেন। বিষয়টা তারা এখনো খুব পরিষ্কার করে রাখেননি। কি ধরনের কাঠামো বদল চাইছেন তারা ? হাসপাতালের না স্বাস্থ্য ব্যবস্থার না সরকারের নাকি সমাজের ?

    যেটা মনে হয়, এখন সমস্ত বামমনষ্ক দল যারা এই আন্দোলনটিকে নেহাৎ রাজ্যের ক্ষমতা দখলের জায়াগা থেকে না দেখে সমাজের কাঠামো বদলের আন্দোলনের বীজ হিসাবে দেখবেন, তারা যদি তাদের মতাদর্শগত বিরোধ আপাততঃ সরিয়ে রেখে, মানে বিপ্লবের স্তর, বর্তমান সমাজের সংজ্ঞা, বিশ্ববিপ্লব নাকি এক দেশে বিপ্লব ইত্যাকার বিতর্ককে ভুলে একটা পতাকাহীন, দলহীন সমন্বয় গড়ে তোলেন রাত দখলের আন্দোলনের সাথে, তিলোত্তমার বিচার চাওয়া ছাত্রদের আন্দোলনের সাথে, যেমনটা হয়েছিলো বাংলাদেশের বেলায়। এই বহুত্বকে ধারণ করার মতো সংগঠন যদি গড়ে ওঠে, তবে সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসবেন এই আন্দোলনে। এভাবে আন্দোলন একটা অন্য মাত্রায় পৌঁছাতে পারে যেখানে জন্ম হবে মানুষের নতুন রাজনীতি, মানুষের নতুন মতাদর্শ, যা ২১ শতকের বাস্তবতার উপর দাঁড়াবে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন