এই আধ্যাত্মিকতা এদেশের মানুষের নিজস্ব জীবনবোধ, ভারতের জাতীয়তাও এই চেতনাই। কাউল-সেন দম্পতির উদাহরণ এইজন্য প্রাসঙ্গিক ছিল এই লেখায়। গান্ধীজি মানুষকে মানুষের সমাজকে রাজনীতির থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। গান্ধীজি বিভিন্ন আন্দোলন যখন উঠিয়ে নিয়েছেন, সেইসব পদক্ষেপ নিয়ে কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মীরা ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কিন্তু, দেশবাসীর বিরাট অংশের কাছে তারপরও গান্ধীজির জনপ্রিয়তা হ্রাস হয় নি। এবং আমরা দেখতে পাই, অসহযোগ থেকে আইন অমান্য, সবকটি ক্ষেত্রেই আন্দোলন তুলে নেওয়ার কারণ রাজনৈতিক নয়, সামাজিক। রাষ্ট্রনীতি রূপায়ণের থেকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন সমাজের ক্ষমতায়নকে, সাম্যের লক্ষ্যে সমাজসংস্কারকেও। ... ...
এই তো বাংলার Socialism। এই Socialism – এর জন্ম কার্ল মার্ক্সের পুঁথিতে নয়। এই Socialism এর জন্ম ভারতের শিক্ষাদীক্ষা ও অনুভূতি হইতে। যে গণ-আন্দোলনের সূচনা বিবেকানন্দের উক্তির মধ্যে পাই তাহা আরো পরিস্ফূট হইয়াছে , দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের বাণী ও সাধনার মধ্যে। দেশবন্ধু বলিয়াছেনঃ মনে করিয়ো না শুধু তোমার মধ্যে ও আমার মধ্যে নারায়ণের বিরাজ। সে অহঙ্কার একেবারে ছাড়িয়া দাও। যাহারা দেশের সারবস্তু , যাহারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলিয়া মাটি কর্ষণ করিয়া আমাদের জন্য শস্য উৎপাদন করে – যাহারা ঘোর দারিদ্র্যের মধ্যেও মরিতে মরিতে দেশের সভ্যতা ও সাধনাকে সজাগ রাখিয়াছে, যাহারা সর্বপ্রকার সেবায় নিরত থাকিয়া আজিও দেশের ধর্মকে অটুট ও অক্ষুণ্ণ রাখিয়াছে- যাহারা আজিও , শুদ্ধ চিত্তে সরল প্রাণে, মর্মে মর্মে দেশের মন্দিরে মন্দিরে পূজা দেয়, মসজিদে মসজিদে প্রার্থনা করে- যাহারা জাতির জাতিত্বকে জ্ঞান কি অজ্ঞানে সাগ্নিকের অগ্নির মতো জ্বালাইয়া, জাগাইয়া রাখিয়াছে- যাহারা বাস্তবিকই এদেশের একাধারে রক্তমাংস ও প্রাণ- ‘উঠ, জাগ জাগ’- তাঁহাদেরই মধ্যে ‘নর-নারায়ণ’ জাগ্রত হউক। ... ...
অনিশ্চিত ছোট অন্যান্য উদ্যোগের মতন এখানেও অনিশ্চিত অংশটুকু সমাজ না দেখলে মানুষ সেটা সামলে উঠে উৎপাদনের সামাজিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন কী করে? সরকার সমাজের হয়ে সেই ভূমিকাটা একটা মাত্রা নিচ্ছেন বলেই মনে হয়। অর্থাৎ, আমরা দেখলাম এই রাজ্যে সাধারণ মানুষের রোজগার নেই এরকম না। কিন্তু সেই রোজগার নিশ্চিত করতে সরকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন, যার মধ্যে বিভিন্ন ভাতা অনুদানও এসেছে। ... ...
মৃত্যুর তিন দিন আগে, কংগ্রেসের অবস্থান নিয়ে এক রচনা, যাঁকে তাঁর শেষ উইল বলা হয়, যেখানে তিনি কংগ্রেসের বিলুপ্তি এবং পঞ্চায়েত ভিত্তিক শাসনকাঠামোর পক্ষে সওয়াল করেন, সেখানে তিনি দেশের সাত লক্ষ গ্রামের স্বায়ত্তশাসন এবং স্বরাট আর্থিক বিকাশের কথা বলছেন। নির্মল বসু এই রচনার ফুটনোটে লেখেন- সাত লক্ষ গ্রাম ভারতে নেই, আছে ভারত পাকিস্তান মিলিয়ে। অর্থাৎ, গান্ধিজি দেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় পাকিস্তানকেও বাদ দিচ্ছেন না। ... ...
রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের প্রায় ৮% এই কোমর্বিড ব্যক্তিসমূহ। মৃত্যুকালে তাঁদের প্রতিরোধক্ষমতা কম হওয়ায় তাঁরা সহজে সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন হয় তো, কিন্তু বীজাণুর বাহুল্য ব্যতিরকে এই সংক্রমণ সম্ভব হত না। সরকারি হাসপাতালগুলি অপরিচ্ছন্নতার জন্য ইতিহাসখ্যাত, এই রাজ্যের বেসরকারি স্বাস্থ্যব্যবসার আড়তগুলিও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসম্মত পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে খুব এগিয়ে নেই, তা এদের শৌচাগারে গেলেই টের পাওয়া যায়। আমরা বাড়িতে রোগির কাছে যেতে যতটুকু স্বাস্থ্যবিধি মানি তার অর্ধেকও সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে মানা হয় কী না সন্দেহ। ... ...
আমাকে যখন উদ্যোক্তারা নারায়ণ চৌবে স্মারক বক্তৃতা দিতে আমন্ত্রণ করলেন, আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম। আমি কীভাবে এই বক্তৃতা দেওয়ার যোগ্য বিবেচিত হলাম, তা আমি বুঝতে পারছিলাম না। বক্তৃতাটি যাঁর স্মৃতিতে তিনি শ্রমিক-উৎপাদক মানুষের মঙ্গলকামনায়, তাঁদের পাশে থেকে জীবন উৎসর্গ করেছেন। নারায়ণ চৌবে এরকম অসংখ্য মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যাঁরা আজীবন অশেষ আত্মত্য্যগ স্বীকার করছেন, যাতে আমাদের চারপাশ সুরক্ষিত থাকে, আমাদের সন্তান দুধেভাতে থাকে। আজকের মঞ্চে নারায়ণ চৌবে স্মারক পুরষ্কার পাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্য ... ...
আমার চোখে আধুনিক ভারতের যত সমস্যা তার সবকটির মূলেই দায়ী আছে ব্রিটিশ শাসন। উদাহরণ, হাতে গরম এন আর সি নিন, প্রাক ব্রিটিশ ভারতে এরকম কোনও ইস্যুই ভাবা যেতো না। কিম্বা হিন্দু-মুসলমান, জাতিভেদ, আর্থিক বৈষম্য, জনস্ফীতি, গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থার অভাব, শিক্ষার অভাব সব কিছুই ব্রিটিশ শাসনের ফলে এমন এক রূপে আমরা দেখছি যা আগয়ে অভাবনীয় ছিল। এর মধ্যে কয়েকটি জিনিস নিয়ে বিতর্ক আসতে পারে, যেমন হিন্দু-মুসলমান। কিন্তু, আমি যা সূত্র পাচ্ছি তা আজকের ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশনের বদলে দুটি গোষ্ঠীর আন্তর্সম্পর্ক বই কিছু ছিল না ... ...
সাহেবের কাঁধে আছে পৃথিবীর দায়
ভিন্নগ্রহ থেকে তাই আসেন ধরায়
ঐশী শক্তি, অবতার, আয়ুধাদি সহ
সকলে দখলে নেয় দুরাচারী গ্রহ
মর্ত্যলোকে মানুষ যে স্বভাবে পীড়িত
মূঢ়মতি, ধীরগতি, জীবিত না মৃত
ঠাহরই হবে না, তার কীসে উপশম
সাহেবের দুইগালে দয়ার পশম
ঘোষণা দিলেন ওই অবোধের পাড়া
সেখানে থাকুক শান্তি স্বর্গের পারা
আমি জানি কীসে হবে গ্রহের উন্নতি
আমার পূজাই হোক মানুষের রতি
এইকল্পে লোকহিতে সর্বশক্তি ঢেলে
নেটিভের ঘরে আলো দিয়েছেন জ্বেলে
আলোয় চরম জব্দ দস্যি যত ছেলে