এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  উৎসব ২০১৪

  • ঝিনুকের খোল

    যশোধরা রায়চৌধুরী লেখকের গ্রাহক হোন
    ইস্পেশাল | উৎসব ২০১৪ | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ | ১০৩০ বার পঠিত
  • এই যে শোন, মামণি, এদিকে শোন। এই মুটকি, এই ঢ্যাবঢেবি, এই যে, এদিকে।

    বারান্দা ইনস্পেকশন সেরে ঘরে ঢুকল প্রতিমা। ইশ, পাখিতে হেগে রেখেছে। কী পায়রা এখানে। জঘন্য। কী একটা হোটেল বাছলে বল তো! 

    দীঘার সবচেয়ে নামকরা সি হক হোটেল বাওয়া! এটাকে খারাপ বলছ। তোমার তো সাহস কম না। বেশি বললে জিভ উপড়ে নেব। এদিকে শোন, গেলাসে মালটা ঢাল। চিপসগুলো কোথায়? সব গুম করে দিয়েছ দেখছি। এত্তোগুলো প্যাকেট কিনে ভরলাম সুটকেসে।

    সুটকেস তোমার মাথায় রাখো। তোয়ালে দিয়ে মুড়ে ওল্ড মঙ্ক। আর আমার হাফ হাফ নেটের শাড়ি বাদ হয়ে গেল। এরকম মানুষ দেখিনি বাপু। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খেলে।

    চুপ। একদম চুপ। এদিকে এস, হোঁতকা সুন্দরী। তোমাকে তো ডানলোপিলোর গদি বানিয়েছিলাম এককালে। আজকাল মাইরি গদিটাও ঠিক জুতসই হচ্ছে না। কেমন ঢেবকে গেছ।

    এরা যে ভাত দিয়েছে, নোংরা হটবক্সে, সেটা থেকে ভকভক করে ভেতো গন্ধ উঠছিল। ফেলে দিয়ে , তুমুল ঝাড় দিয়ে বেয়ারাদের, আবার রুটি আর মাংস আনাল প্রতিমা।

    প্রথম রাত্রিতেই মাল খেয়ে পুরো আউট হারাধন। পরদিন সকালে স্নানের জন্য গলায় তোয়ালে, আর পশ্চাদ্দেশে রঙ্গিন বার্মুডা । বেরোল যেন কলির কার্তিক। এক মাথা ঝাঁকড়া চুল, তাতে কলপের পালিশ। পঞ্চাশ পেরিয়ে এখন তুমুল বিরিয়ানি আর কাবাব খাওয়া, মালখাওয়া চেহারা। ভুঁড়ি বিশাল। তবে সেটা অনেকটা ব্যালেন্স রাখতে সাহায্য করেছে। নইলে এ জলে স্নান? 

     কালো ঝামা পাথরের ওপর দিয়ে ব্যালেন্স করে নামল বিচে। সঙ্গে প্রতিমা ছিলই। ধামাধরা প্রতিমা। মাল খাওয়ার সময় জল আর চিপস জোগানো প্রতিমা। বমি করলে ঠান্ডা তোয়ালে চেপে চেপে গা মুছিয়ে দেওয়া প্রতিমা।

    এরা দম্পতি। 

    সমুদ্দুরে নামতে প্রতিমার ইচ্ছে করছিল। শাড়ি পরেছিল সন্ধেতে। নেটের ওপর জরি, ব্লাউজটা দীপিকা পাডুকোনের মত, সুতি বেনারসি মেটিরিয়ালের। খুব সেজেছিল। এখন নতুন কেনা সালোয়ার কামিজ পরেছে। কামিজটা টাইট হয়ে গায়ে চেপে বসে আছে।

    জলে নেমে ভিজতে ইচ্ছে করে। কিন্তু হারাধনের চোখ রাঙানি। চাদ্দিকে ছেলেছোকরা ঘুরছে। তার মধ্যে গা সাঁটা কামিজে প্রতিমা উঠবে জল থেকে, চোখ দিয়ে পুরো গিলে নেবে না সব?

    কী ইচ্ছে কী ইচ্ছে তার জলের দিকে যাবার। ঢেউয়ের দিকে যাবার। আবার ভয়ও হয়। কোনদিন যায়নি। সেই একবার বিয়ের পর পর কোলপাঁজা করে হারাধনই একবার নিয়ে গেছিল জলের মধ্যে ঝপাং করে ফেলে দিয়ে মজা পেয়েছিল। তখন প্রথম প্রথম বিয়ে। সেই পুরুষালি বড়সড় শরীরটার ভয়ংকর শক্ত বাহুবন্ধনের মধ্যে ছটফট করে আনন্দে মরে যাওয়ার স্মৃতি একমাত্র সম্বল।

    এবার হারাধন যেতেই দিল না তাকে। তুমি ওখানে বসে পাহারা দাও। ব্যাগ , ক্যামেরা, ওয়ালেট।

    প্রতিমা ইচ্ছে চেপে বসে রইল। হারাধনকে বলল, গভীরে যেও না, যেও না, লক্ষ্মীটি!

    ওদের সামনে বিয়ারের বোতল নিয়ে বসেছিল দু তিনটে ছেলে। কয়েকটা স্নান করছিল। ভরা কোটালের জোয়ার বাড়ছিল। জোয়ারের ঢেউতে হারিয়ে যাচ্ছিল ছেলেগুলো আবার ভেসে উঠছিল। সেই ফেনা থেকে উঠে এসে একটা ছেলে অন্য ছেলেগুলোকে ডেকে নিয়ে গেল। ল্যাদ খেয়ে বসে আছিস কেন বোকা ...? চলে আয়।

    বিয়ারের বোতল ফেলে দুটো ছেলে গেল, একটা গেল না। সেটাকে ভিতুর ডিম, মেয়েমানুষ এইসব বলে অন্যরা চলে গেল।

    ভরা কোটাল, খানিক পরে ভেসে এল ওদের মধ্যে দুজনের মৃতদেহ।

    মাতাল বেঁচে থাকা ছেলেটা ডুকরে ডুকরে কাঁদল। 

    মৃতদের একটার প্যান্ট ছিল না। ডোরাকাটা বার্মুডা প্যান্ট ভেসে গেছে জোয়ারের জলে।

    প্রতিমার ভয় হচ্ছিল। ভয়ও একরকমের ইচ্ছে। 

    ওরও ইচ্ছে হচ্ছিল জলে নেমে হারিয়ে যেতে, মরেও যেতে। হয়ত।

    হারাধন যদি মরে যায়! সেটাও। সেটাও ইচ্ছে? অনেক পেনশন গ্রাচুইটি আর ওই ফ্ল্যাটবাড়িতে একলা বাঁচার ইচ্ছে নাকি? ছিঃ যত্তোসব অলুক্ষুণে ভাসা কথা মাথার মধ্যে।

    হারাধনকে ডাকবে ভাবল। এদিকে জোয়ার বাড়ছিল। ভাঁটায় চান অ্যালাউ। কিন্তু জোয়ার এসে যাচ্ছে। কাল পূর্ণিমা ছিল। আজ কিন্তু পূর্ণিমার ভরা কোটালটা আছে। বলছে সবাই। এখুনি মরল দুটো মাতাল।

    হারাধনও মাতাল, সকালেই রাতের খোঁয়ারি কাটাতে টেনেছে খানিক। কিন্তু তাও প্রতিমা ডাকতে পারল না। পুরুষমানুষ যে, তার রাগের ভয় আরো বেশি। তাই হারাধনকে ডেকে ফেরাতে সাহস পেল না।

    কিন্তু হারাধনের কিছু হল না। 

    সালোয়ার কামিজ পরে প্রতিমা বালির ওপর বসে ছিল। জোয়ার উঠতে উঠতে এখন জল এখানেও। সর্বত্র জল। 

    প্রতিমা জলের ওপর বসে ছিল। 

    এখানে কম জল, ঢেউ এসে এসে ফিরে চলে যাচ্ছে। ভিজে সালোয়ারের ভাঁজে বালি। ওটাই ওর ম্যাক্সিমাম সমুদ্র স্নান।

    বুক ঢিপ ঢিপ করছিল। হারাধনের মুন্ডু ঢেউয়ের ওপর একবার উঠছিল, একবার নামছিল। যতবার নামছিল প্রতিমার বুক কাঁপছিল।

    শেষ অব্দি হারাধন উঠে এল। খুব ক্লান্ত।  ততক্ষণে জলে ঘিরে নিয়েছে সবটা বালি। প্রতিমা হাত তুলে এক হাতে স্যান্ডেল জোড়া, অন্যহাতে ক্যামেরা ব্যাগ নিয়ে। চলো উঠি।

    হারাধনই উঁচু উঁচু পাথরগুলোয় টেনে টেনে তুলছিল প্রতিমাকে। প্রতিবার খিস্তি দিচ্ছিল। দীঘাটা আবার একটা আসার জায়গা! যত্তোসব। নিউ দীঘা চলে যাব কাল, নয়ত উদয়পুর। এখানে ত শুধু ঝামাপাথরের ঝাড়।

     একটা একটা করে পা টিপে টিপে টপকাতে হচ্ছিল। হারাধন নিজেই হাফ মাতাল, তায় ক্লান্ত স্নান করে, তাল সামলাতে পারছিল না।

    ফিরেই ধপাস শুল বিছানায়। আবার টেনে নিল বোতলের তলানি। তারপর একগাদা চিনেবাদাম ঘোঁত ঘোঁত গিলে নিল। 

    ততক্ষণ প্রতিমা বারান্দায় ভিজে, বালি ঝুরঝুর তোয়ালে আর পাজামা মেলছিল এখন। ফিরে এসে। আর গজরাচ্ছিল। স্নান করা হচ্ছে। যদি জলে ডুবে মরতে, আমার সিঁদুরটা যেত। আজ সন্ধেবেলা কিন্তু আমি পার্ল কিনবই, পার্লের সেট।


     ইচ্ছে আর অনিচ্ছে নিয়ে ঝগড়া আর আপোশ করে কেটে গেল পনেরো কুড়ি বছর। হারাধন আর প্রতিমার। ছেলেটা সতেরো, নর্থ বেঙ্গলে গেছে পড়তে। হারাধন বলেছিল, এখন আবার আমরা নিজেরা বেড়াব। অফিসে এত চাপ, দুদিন পুরো রিল্যাক্স। একদম ঝাম করবে না।

    প্রতিমা বলেছিল, দুদিন হাত পুড়িয়ে রাঁধতে হবে না। পুরো হোটেলে খাব, বেড টি থেকে শুরু করে সব। মুক্তি পাব। 

    ওরা খাচ্ছিল। বিরিয়ানি, চিলি চিকেন, ফ্রাইডাইস। প্রতিমা শান্তি পাচ্ছিল না-রাঁধার। 

    এসি ঘরের আইডিয়াটাও প্রতিমারই। চাকরি কর, আবার অফিসকে লুকিয়ে প্রোমোটারির ব্যবসা কর মায়ের নামে, পয়সা রোজগার কর, আমাকে বেড়াতে এনে ভাল করে রাখবে। ভাল হোটেল, আর ফুল এসি ঘর চাই কিন্তু। 

    হারাধন তখনই জানে চক্করটা। চাঁদু, দু হাজার টাকার এসি ঘর করেছো যখন পাঁচশো টাকার মুক্তোও দেবে। এবার কেনাকাটিটাও হবে ।

    সন্ধেবেলা বেরিয়ে কেনাকাটির পর ওরা বোল্ডারের ওপর যেখানটা সিট মত বানানো আছে ওখানেই বসে ছিল। আরাম ছিল না। ঘাম হচ্ছিল। চাপা আবহাওয়া । চুড়মুড় খাচ্ছিল ওরা।

     আচ্ছা, এই যে দম্পতি, এরা তো অন্য নামেও হতে পারত। হয়ত অঙ্কিত আর রিমঝিম... অথবা সুতনুকা আর অসামান্য। নামে কী বা আসে যায়। ইচ্ছে আর অনিচ্ছে নিয়ে ঝগড়া আর আপোশ। 

    এটা তো গসাগু। সরল করার সময় বলতে হয়, এদের মধ্যে কেউ কাউকে একটু বেশি মান্য করত বলে,  এদের মধ্যে কারুর, কারোর ওপর একটু বেশি নির্ভর তৈরি হয়েছিল বলে, ওরা রয়ে গেল। 

    তোমরা বলবে প্রতিমা পারত না হারাধনকে ছেড়ে যেতে, টাকা পয়সা থেকে খাওয়াপরা সবের জন্য ওর তো হারাধন ছাড়া আর কিছু ছিল না।

    কিন্তু  সেটাই কি একমাত্র কারণ? তাহলে অঙ্কিত? রিমঝিমের বাবার টাকা ছিল, কিন্তু অঙ্কিতের লড়াই অন্য জায়গায়। ওদের বাচ্চা ছিল না, অঙ্কিতের অক্ষমতা বেরিয়েছিল। আর অঙ্কিত ছোটখাট কাজ করত, বড় চাকরি না। অঙ্কিতের কোন ধনী বাবাও ছিল না। তাও ওরা একসঙ্গে রয়ে গেল।


    ওরা নির্ভরকে বলত ডিপেন্ডেন্স। আর মান্যিকে বলত রেস্পেক্ট। রিমঝিমের নিজের পরিবারের টাকার গরম ছিল বলে ইচ্ছে করে দীঘায় নন এসি ঘর বুক করত অঙ্কিত। ওর যদি টাকার অক্ষমতা থাকে, সেটা রিমঝিমকে মেনে নিতে হবে। 

    তবু, বিকেলে হাঁটতে বেরিয়ে চুরমুরের পর ভাল কোম্পানির সফটি আইসক্রিমও কিনে দিয়েছিল। সরু কোমর, জিনস পা কামড়ানো, রিমঝিম বেশ সেক্সি দেখতে। ওর ভাল ফোটো তুলে দিয়েছিল অঙ্কিত মোবাইল ফোনে। আট মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা।

    তুলতে তুলতে মনে মনে ভেবেছে, অঙ্কিত, এই মেয়েটা বাঁজা, বাঁজা, বাঁজা। আমার দোষ বের করেছে। ডাক্তার তো রিমঝিমদের ফ্যামিলিই অ্যাপয়েন্ট করেছিল, না? গট আপ রিপোর্ট ওটা। ডেফিনিটলি ম্যানিপুলেটেড ।

    আচ্ছা, বাঁজা মেয়েরা কি বেশি সেক্সি হয়? ওর কোমর সরু আছে যতদিন, কামড়ে কুমড়ে খেয়ে চেটেপুটে নেব ওর সেক্স।

    রিমঝিমকে ভাল জামাকাপড় কিনে দেয় কে, কোন শর্মা? এই অঙ্কিত। আচ্ছা আমি ওকে যে হাতখরচ দিই, ওর এক একটা কুর্তি বা আনারকলি স্যুটের দাম তাতে ওঠে তো? নাঃ নির্ঘাৎ ও ওর বাবার কাছ থেকে তোলা তুলছে রেগুলার।

    এত শপিং যায় কেন ও? ওর কি কোন লুকনো আশিক আছে?

    ফোটো তুলতে তুলতে রাগে গা জ্বলছে অঙ্কিতের। কিন্তু ও কিছু বলছে না। ও মিটিমিটি হাসছে। রাতে শোধ তুলবে, সিগারেটের ছ্যাঁকা দেবে, তুমুল দামাদ্দাম ঠুকবে। গায়েও হাত উঠে যেতে পারে, যদি নেশা চড়ে যায়।

    রিমঝিম কিন্তু ততক্ষণে নিজের স্বপ্নে ডুবে গেছে। এই ফোটোগুলো ফেসবুকে পোস্ট করবে । দুশো উনত্রিশটা লাইক পাবে। কেউ জানবে না। ওকে লুকনো আশিকের খোঁজে যেতেই হবে না। অঙ্কিত ইজ এনাফ। 

    ছেলেটার ফিজিক ভাল, প্রেম করে ভাল। কিন্তু তাতেও পুরো আশ মেটে না। নিজের সবটা ভরাট হয়না। খানাখন্দ থেকে যায়। ফোন থেকে শুধু ফোটো আপলোড করে করে আর লাইক নিয়ে নিয়ে সেই খানাখন্দ ভরাট করে রিমঝিম।

    রিমঝিমের জীবনের গল্পটা আসলে পালানোর। কম বয়সে মা বাবার থেকে পালাবে বলে ওদের অমতে অঙ্কিতের সঙ্গে প্রেম করেছিল। এখন অঙ্কিতের থেকে পালাবে বলে ফেসবুকে পালায়, সাজগোজে পালায়, শপিং এ পালায়। 

    বাবা মার কাছে যায়, লুকিয়ে পয়সা নেয় বাবার থেকে, জামাকাপড় নেয়। একবার, শুধু একবারই, হাত পেতেছিল অঙ্কিতের কাছে, স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনবে বলে, লজ্জা করেছিল বলতে কারণটা, আর সেদিন অঙ্কিত দেয়নি। অঙ্কিত বলেছিল, আমার কাছে কোন টাকা থাকে না, মায়ের কাছে চাও, কী কিনতে চাইছ সেটা বলতে পারছ না, এত লুকোছাপা কিসের মাইরি তোমার। 

    সেবারের পর থেকে রিমঝিমের বাবা মার সঙ্গে ভাব হয়ে গেল, অঙ্কিত, শুধু রাতে প্রেম করার সময় ছাড়া, বাকি সময়, হয়ে গেল পালানোর জিনিস। বাবা মা হয়ে গেল পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেবার জিনিস। অঙ্কিতকে না বলে মায়ের কাছে গিয়ে দুটো চিংড়ি ভাপা খেয়ে আসা দুপুর রোদ্দুরে, তার সে কী নিষিদ্ধ সুখ!

    তবে, কেই বা আর পালাচ্ছে না বলো এই দুনিয়ায়? জিন্দেগিতে পালানোটাই তো সব...

    অঙ্কিত যখন রেগে যায়, পালাতে থাকে। রিমঝিম যখন রেগে যায়, পালায়। অঙ্কিতের মা মারা গেছে দু বছর হল ক্যানসারে। বাবা আগেই ছিল না। এখন ওদের বাড়িতে, ভাড়া বাড়িতে, ওরা শুধু দুজন। 

     কিন্তু একটা দু কামরার ফ্ল্যাটে কতদূরই বা পালানো যায়? ওদের রাগের সময় ঝগড়ার সময়, বার বার মুখোমুখি হতে হয়। বার বার ধাক্কা লাগে। তারপর রিমঝিম বাথরুমে ঢুকে কাঁদে। অঙ্কিত কোথাও যেতে পারে না। 

    ছেলেদের পালানোর জায়গা মেয়েদের থেকে কম । রিমঝিমের বাড়িতে থাকলেও অনেক পালানোর জায়গা। সকালে বিছানা ছেড়ে উঠে ও রান্নাঘরে পালায় । রান্নাঘরে দুটো নীলচে অগ্নিকুন্ড, গ্যাসের, পালানোর জন্য  রিমঝিমের রাস্তা খুলে রাখে। সেখানে ঘটনার পর ঘটনা। ফুটে ওঠা, উথলে যাওয়া, ঝরে পড়া, ফুলে ওঠা।  রান্নাঘর আসলে দাম্পত্য সম্পর্কের থেকে ভাল, কম গরম, কম ভ্যাপসা। 

    পালানোর আরো জায়গা আছে। রিমঝিম নিজেদের ভাড়াফ্ল্যাটের বারান্দায় পালায় । বারান্দার গ্রিলের ফুটোগুলো বড় বড়।  বাইরে গাছ, টুকরো আকাশ। তারে তারে মেলা কত না রঙের কাপড়, ওবাড়ির, সেবাড়ির। গাছে গাছে কতরকমের শেডের সবুজ পাতা, এলোমেলো, লাট খায়। তেমনি সব বারান্দাগুলো থেকে নিচে ঝুলিয়ে রাখা তারে শার্ট, প্যান্ট, ম্যাক্সি, এমনকি শীতের দিনে শাল কম্বলও, রঙ্গিন। 

    ওখানে একবার গিয়ে পড়লে  পালানো সোজা। কেউ বুঝতে পারবে না। দেখবে রিমঝিম  বাড়িতেই আছে, বারান্দায় কাপড় মেলছে। অনেকক্ষণ ধরে কাপড় মেলছে তো মেলছেই । কেউ কিচ্ছু বুঝবে না। দেখবে রিমঝিম টুকরো, ফ্যাকাশে আকাশটার দিকে তাকিয়ে, নিভু নিভু শীর্ণ ডালটায় কচি সবুজ পাতাগুলোর দিকে তাকিয়ে চুল মুছছে, চুল ঝাড়ছে, ঝাড়ছে তো ঝাড়ছেই। আসলে তো তখন রিমঝিম পালাচ্ছে। 

    বাথরুমে স্নানে ঢুকে রিমঝিম বড় করে কল খুলে দিয়ে পালায়। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে পালায়। ঝর ঝর করে গায়ের উপরে ঝরতে থাকে জল, আর রিমঝিম তখন কোথায় হারিয়েছে। বড় বড় পাহাড় আর ঝরনার সামনে , সেই এক সবুজ, নরম পৃথিবীতে পালিয়ে গেছে। ছোট্টবেলায় দেখা লিরিল সাবানের বিজ্ঞাপনের মেয়েটার মত হয়ে। 

    যখন সাজতে বসে রিমঝিম, আয়নার মধ্য দিয়ে পালায়। পাখি হয়ে যেতে থাকে ক্রমশ, যেমন যেমন রিমঝিমের ঠোঁটে চেপে চেপে বসায় লিপস্টিক,  চোখে আঁকে আইপেনসিল, এত জোরে জোরে আঁকে যে চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়ে। নিজের ছায়াকে ঝাপসা দেখায় । ঝাপসা যাকিছু, তা-ই তো সুন্দর। 

    কিন্তু অঙ্কিত কোথায় আর পালাবে? তাই ও বসে থাকে। ছুটির দিনে তো অফিস নেই। তাহলে? হয় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। একেবারে দূরে । রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা চলে গিয়ে আবার ফিরে আসতে পারে। পার্কে গিয়ে বিড়ি খেতে পারে। বন্ধুদের সঙ্গে দিয়ে মাল খেতে পারে। বন্ধুরাও , কারুর বাড়িতে কোন পালানোর জায়গা নেই। 

    বাড়িতেই যদি থাকে, রবিবার গুলোতে, যখন বৃষ্টি পড়ছে গুঁড়ো গুঁড়ো, আর ওর বন্ধুরা সব বেড়াতে গেছে, পিশেশ্বশুরের বাড়িতে নেমন্তন্ন খেতে গেছে, তাহলে? তাহলে ওর আর উপায় কি ?

    তখন, কোত্থাও না গিয়ে, বাড়ির কেন্দ্রীয় জায়গায় ওকে বসে থাকতেই হয় । ও যে রাজা । পুরুষসিংহ । ওকে টিভির সামনে সোফায় বসে থাকতে হয় । টিভি দেখার ভাণ করতে হয় । ভাগ্যিস টিভিটা ছিল, ওটা না থাকলে ও যে কী করত!

     অঙ্কিত যে বাড়ির কেন্দ্রীয় চরিত্র তাই ওকে বাড়ির সবচেয়ে মুখর অংশে থাকতে হয় । ওর পালানোর জায়াগা নেই । ফুঁসতে ফুঁসতে ওই মাঝের ঘরটায় থাকা ছাড়া ওর আর গন্তব্য নেই। ওফ কী কষ্ট ।

    অঙ্কিত জানে না অঙ্কিত কষ্ট পায়। তবে প্রেম , দমাদ্দম হাতুড়ির মত, সেটুকু বাদ দিলে, বাকি পালানোগুলো রিমঝিম জানে, আর জেনে, চেখে চেখে খায়। 

    আর, অঙ্কিতের সঙ্গেই থেকে যায়। অঙ্কিতও রিমঝিমের সঙ্গেই থেকে যায়, কারণ, না থাকাটা আরো কষ্টের।

     তা ছাড়া রিমঝিমের তৈরি রুটি এখন ফুলকো ফুলকো হয়। আগে, রান্না করতে যখন জানত না, ওকে ঘাড়ে ধরে রান্না করতে পাঠিয়েছে যে অঙ্কিত, সেটা তো ভালই করেছে। তেড়াবেঁকা রুটি দেখলে যে রেগে খাবার টেবিল ছত্রখান করেছে, সেটা ভালই করেছে। তাই রিমঝিম এখন পুরো গোল, পুরো ফুলকো রুটি বানায়। সেটা না খেলে অঙ্কিতের ভাল্লাগে না।

    ওরা একসঙ্গে থাকে। পরস্পরকে ছেড়ে কোত্থাও যায়না। বেড়াতে এলেই ফোটো তুলে দিতে হয় রিমঝিমকে শুধু। অঙ্কিতের কাছে কখনো কিছু কিনে দেওয়ার বায়না করেনা। 


    আশপাশেই রয়ে গেছে  সুতনুকা আর অসামান্য। দুজনেরই চাকরি, বাচ্চাও আছে, ছ বছরের। জীবনের অন্যান্য দিকে ওদের কোন ক্রাইসিস নেই।

    ক্রাইসিস একটাই ছিল, দুজনেরই ইচ্ছে আর অনিচ্ছে ছিল, আপোশ করার ইচ্ছে কারুরই ছিল না, আর ঝগড়া করতে সুতনুকা একটু বেশিই ভাল বাসত।

    কেন তুমি এরকম করো সুতনুকা? বেড়াতে এসেও মুখটা সাড়ে পাঁচ কেন? যখনই যা বলি, বলবে, আমার ভাল্লাগে না! আজ সমুদ্রে নেমেও স্টিফ হয়ে রইলে। আমি আর রিক স্নান করতে করতে দূরে গেছি বলে সিন ক্রিয়েট করলে এত্তো।

    আইসক্রিম চাটতে চাটতে বলল অসামান্য। 

    তোমরা তা বলে তিনটে ব্রেকার পার হয়ে যাবে! অসহ্য। আর তুমি জানো, তোমাদের এই খিল্লিপনা আমার ভাল্লাগে না। 

    ডাব খেয়ে, বিচে তোয়ালে পেতে বসে রিল্যাক্স কর। তা না, আমাদের সুখে খালি ব্যাগড়া দেওয়া। আমি রিক একটু বেশিক্ষণ চান করব, তোমার সমস্যা শুধু! এত অবদমিত তুমি , এত্তো সাইকি !

    চুপ করো । আমার ডিপ্রেশন হচ্ছে। হাজার বার তো বলেছি, জল আমি ভয় পাই। মা আমাকে ছোট্টবেলায় একবার দীঘা এনেছিল, মায়ের এত ফিয়ার সাইকোসিস ছিল যে আমাকে জলেই নামতে দেয়নি। জানি মায়ের ভয় ছিল স্বাভাবিক।  বাবার চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু সেইজন্য কোনদিন আমি সমুদ্রে স্নান করিনি, জানো, জানো, জানো তুমি? বলল সুতনুকা। ওর চোখে তখনো জল চিকচিক করছিল।

    সেই রাগে তুমি ফিয়ার সাইকোসিসটা রিকের ভেতর ঢোকাতে চাইছ! সেই হিংসেতে তুমি জ্বলছ! ছেলেকে অব্দি নিজের চাইল্ডহুড ট্রমার মধ্যে ঢুকিয়ে নিচ্ছ।

    চাইল্ডহুড ট্রমার কী বোঝ তুমি অসামান্য? নিজে তো বাবা মা দাদু দিদা দাদা দিদির আহ্লাদে আতুপুতু হয়ে মানুষ! আমি ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে!

     ওই গল্পটা আর বলবে না আমাকে। গোটা লাইফ জ্বালিয়ে গেলে। খালি এই নাটক দেখে যাচ্ছি। সাড়ে পাঁচ বছর বয়সে মা আমাকে ওই করেনি, বাবা আমাকে ছেড়ে দু বছর বয়সে চলে গেল। তিন বছর বয়সে  আমার পটি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। উঃ! পারা যাচ্ছে না।  তোমাকে লুকিয়ে দুধের বোতল লুকিয়ে ফেলেছিল মা, তাই তোমার ইনসিকিওরিটি পয়ঁত্রিশ বছর বয়সেও চলছে!!! আরে বাবা, কোন বয়সে তোমার কী কী হয়েছে জেনে আমি কী করব রে বাবা! এত মহা গেরো! ফ্রয়েড এসে তোমার ঘিলুটা পুরো চটকে দিয়ে গেছে দেখি!

    উফফ এত ইনসেনসিটিভ তুমি! এতটা! পারছি না আমি। নিতেই পারছি না।

    আর তুমি যে প্রচন্ড বেশি সেনসিটিভ মামণি! তার ওপোর সাইকোলজি অনার্স। এটাই তোমার প্রবলেম। এখুনি বলতে শুরু করবে, তোমার খুড়তুতো দাদা কবে তোমার আইসক্রিম কেড়ে খেয়ে নিয়েছিল বলে, আইসক্রিম খেতে গেলেও তোমার কান্না পায়।

    অসামান্য, এটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। আমি আজ তোমার জন্যই শুধু সকালে বিচে নেমেছিলাম। জানো আমার ভার্টিগো আছে, তবু আমাকে তুমি নামালে ওখানে। রিক, রিক, এরকম করে না, প্লিজ দুষ্টুমি করবে না। আমার মেজাজ ভাল নেই। দেখছ বাবার সঙ্গে আমার ঝগড়া হচ্ছে।

    রিককে ওইভাবে বলার কি আছে শুনি? এটা কি আমেরিকা? বাচ্চাদের সঙ্গে ফ্র্যাংক হব, বাচ্চাদের সবকিছু খুলে বলব, তাতে রিকের কিছু উপকার হচ্ছে ? উলটে ওর ট্রমা আরো বেড়ে যাবে। সারাদিন দেখছে, বাবা মা কিটকিট করছে। বিয়ে করার পরদিন থেকে শুরু হয়ে গেছে এই ন্যাকামি, পিটপিটানি।

    হ্যাঁ, হ্যাঁ তা তো বলবেই। আমি শুচিবায়ুগ্রস্ত বিধবা !

    তুমি তার চেয়েও খারাপ। শীতল, সেলফিশ...ফ্রিজিড।

    রিক, যেও না ওদিকে ,  হঠাৎ জোয়ারের ঢেউ এসে যাবে। মোজা ভিজে যাব...।

    ও গড! তুমি মোজা জুতো পরিয়ে এনেছ রিককে। তনু তোমার এতটুকু সেন্স নেই! সমুদ্রের ধারে মোজা জুতো পরিয়ে আনে কেউ বাচ্চাকে?

    এতই যদি দরদ তাহলে তুমি স্যান্ডেলটা পরিয়ে আনতে পারতে। সব ব্যাপারে বাই ডিফল্ট আমাকে কাজগুলো করতে হবে। যেন সব দায় মায়ের। বাবা হিসেবে তোমার কিছু করণীয় ছিল না। 

    প্লিজ বকবক না করে আইসক্রিমটা খেতে দাও , প্লিজ। রিক শোন্‌ কাল সকালে আমরা আরো ভোর বেলা উঠব, আর মাম্মাকে না নিয়েই সমুদ্রের ধারে চলে যাব।

    ব্যাস তাহলেই হয়েছে। একদম যাবে না। একদম না।

    কনট্রোল ফ্রিক তুমি। তনু, তুমি খুব টিপিকাল একটা খান্ডার মহিলা। নিজের ইচ্ছে অন্যের ওপর চাপানো ছাড়া তোমার আর কোন প্যাশন নেই জীবনে। কিসসু না। জাস্ট একটা ভাল চাকরি ছিল, একটা মোটামুটি তাকানোর মত চেহারা ছিল, তাই তোমাকে ছেড়ে চলে গেলাম না। তুমি বেঁচে গেলে।

    রিক তখন অন্যদিকে মন, রিক তখন বেলুন, রঙ আলো বেরোন উড়ন্ত খেলনায় ।

    তাই হিস হিসে চাপা শব্দে, অসামান্য আর সুতনুকা ঝগড়া করে গেল। সুতনুকা বলে গেল, আমাকে বাঁচাতে হবে না তোমার। তুমি যাও, যাও, যাও। দাঁত চেপে বলল।

    হ্যাঁ, আমি যাই আর তুমি তোমার মায়ের জীবন তোমার জীবনে রিপিট টেলিকাস্ট করার আনন্দে ধেই ধেই করে নাচো! আর রিকের জীবনটাকেও তোমার মত সাইকটিক, ডিসব্যালেন্সড, মানসিক রোগগ্রস্ত করে রেখে দাও!

    স্টপ ইট, স্টপ ইট, অসামান্য। এত মিন তুমি! এত নোংরা!

    হ্যাঁ, মীনগণ হীন হয়ে রহে সরোবরে... তোমার মত কুয়োর ভেতরে পড়লে, হীন আর মিন না হয়ে উপায় আছে কোন? 

    অসামান্য বহুবার বলেছিল সুতনুকাকে, কাউন্সেলিং কর। তোমার মানসিক পিটপিট ব্যারামের কাউন্সেলিং দরকার। 

    সুতনুকা বলেছিল, আমাদের ম্যারেজ কাউন্সেলিং দরকার আসলে। আমি একা গিয়ে কিছু করতে পারব না।

    তারপর বলেছিল, ম্যারেজ কাউন্সেলিং এর হিস্টরি যদি দেখো, দেখবে, যে, খুব কম ক্ষেত্রেই বিয়েগুলো টিঁকেছে। সাইকায়াট্রিস্ট প্রথমেই বলে দেবে, আপনারা আলাদা হয়ে যান, সুখে থাকবেন। আমি জানি। আই অলরেডি নো। কাজেই, দরকার নেই যাওয়ার কোত্থাও।

    একই ছাতের তলায় ওরা দুজনে থেকে যাবে। কোনদিন অসামান্য গায়ে হাত তুলবে না সুতনুকার। ওরা ভদ্র। শুদ্ধ। পবিত্র। রিপ্রেসড।

    কোনদিন সুতনুকাও মারপিট করবে না। মারাত্মক প্রেমও করবে না, না অসামান্যর সাথে, না অন্য কোন পুরুষের সাথে। কথা বলা ছাড়া কিছু করবে না। 

    ছেড়ে চলে তো যাবেই না। শুধু মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে ব্যাগ প্যাক করবে, চলে যাবার ভান। আবার আনপ্যাক করে নেবে। তখন দেখা যাবে প্যাক করেছিল কিছু পুরনো খবরের কাগজ আর ছেঁড়া পাজামা।

    ওরা কেউ কাউকে ছেড়ে চলে যায়না। কারণ ওদের পালানোর কোন জায়গা নেই। লড়তে ঝগড়তে ওরা এ ওর সঙ্গে থেকে যায়। কারণ আসলে ভেতরটা একটা সলিটারি সেল। কোথাও পালানোর জায়গা নেই। একা থাকলেও জেলখানা, দুজনে থাকলেও জেলখানা। পালাবে কোথায়? এ ওকে ছেড়ে যাবে কোথায়?


    সেদিন সন্ধেবেলা দীঘার সমুদ্রতীরে পর পর তিন চারটে দম্পতি বসে ছিল। প্রত্যেকে নিজেদের মধ্যে ডুবে ছিল।

    তারপর ঢেউ এসেছিল। বড় ঢেউ। ভরা কোটালের সঙ্গে কিছুটা পরিমাণ আয়লা মিশে গেল। আর অনেকটা সুনামি। 

    এক লহমায় সব ছড়িয়ে গেল। লাটপাট হয়ে গেল ওদের শরীর, ওদের ঝগড়াগুলো। গসাগুগুলো। লসাগুগুলো। 

    এক একটা একতলা, দোতলা সমান ঢেউ আর মারাত্মক হাওয়ার ঝাপটা।

    ইচ্ছে অনিচ্ছে। ভয় আকাংক্ষা সবকিছু গুলিয়ে দিয়ে, ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল সবকটা চরিত্রকে। ছটা চরিত্র প্লাস বাচ্চা রিক। ছত্রখান।

    যখন জ্ঞান ফিরল, ওদের পোষাক গায়ে লেপটে ছিল অথবা ছিলই না। সার সার মাংসের সসেজের মত ওরা এ ওর গায়ে কেৎরে ছিল। জ্ঞান ফেরা ইশতক। আশপাশে অনেকের জ্ঞান ফেরেনি। অনেকে দূরে কোথাও ভেসে পড়েছিল। চলে গেছিল ট্রলারদের সীমানার থেকেও বাইরে, অনেক অনেক দূর কোন দরিয়ায়। 

    প্রথম জ্ঞান ফিরল হারাধনের। একটা ইন্ডিয়ার ফ্ল্যাগের রঙে রাঙানো ট্রলারের ওপরে।  কাঠের তক্তার তলার দিকে গুঁজে ছিল ওর শরীর।

    জেগেই ও দেখল একটা অসম্ভব কমবয়সী, সুন্দর সরুমত মেয়ের নগ্ন শরীর ওর শরীরের ওপর পড়ে। এটা অভাবনীয় সুখ। তাই জ্ঞান ফিরেই ও আবার অজ্ঞান হয়ে গেল।

    তারপর আবার জ্ঞান ফিরে ও মেয়েটিকে কোলে করে এক পাশে কাত হয়ে থাকা ট্রলারের ওপর থেকে নামার চেষ্টা করতে শুরু করল পা টেনে টেনে। ঝামাপাথরের বোল্ডারে, ঢেউয়ে, ট্রলারের কাঠের খোঁচাগুলোয় ঠোক্কর খেয়ে খেয়ে তখন সারা শরীরে নিদারুণ ব্যথা, কাটা ছড়া।

    রিমঝিমকে নিয়ে ব্যালান্স করে বাঁকা হয়ে থাকা ট্রলারের থেকে নেমে ও হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল কয়েকটি মৃতদেহের ওপর।

    ওদিকে, বেশ কিছুটা দূরে, একটা অসমান বোল্ডার ভরা বালিয়াড়ির ওপর, অসামান্য পেয়েছিল প্রতিমাকে। মহিলাটির তলায় চাপা পড়ে গেছিল আসলে ও। উষ্ণ আর প্রবল পৃথুলা মহিলাটি।

    প্রতিমা জেগে উঠে লজ্জা পেয়ে কামিজ টানতে গিয়ে দেখল সালোয়ার ভেসে গেছে। অসামান্য দেখেছিল ওর গায়ে কোন পোষাক নেই। চারপাশে বালির খোঁদল, ভর্তি জল। ভাঙাচোরা ভেসে এসে বালির চড়ায় ঠেকে আছে ।

    এরই মধ্যে দেখল, পাশ দিয়ে গুরগুর করে বালিতে ঢোকা বেরোন করছে অনেক ঝিনুক, জ্যান্ত ঝিনুক। ওদের দুটো খোলই মুখোমুখি জোড়া, ভেতর থেকে সরসরে জেলির মত পদার্থ সেটাই ওদের প্রাণবস্তু। দুটো ঝিনুক দু দিক থেকে বেড় দিয়ে রাখে প্রাণবস্তু। একটা ঝিনুক হয়ে যায়। জ্যান্ত ঝিনুক।

    ঝড় আয়লা সুনামিতে কিসসু হয়না ওদের । তাই বেঁচেবর্তে দিব্যি বালি ফুটো করে নেমে যাচ্ছে,  আবার উঠছে।

    মুহূর্তের জন্য অসামান্যর মনে হয়েছিল, মা, আমার মা-ও তো মোটাসোটা ছিল। চিরদিন মোটা মেয়েদের প্রতিই আসলে আমার ক্রাশ। উফফফ, শ্বাস বন্ধ করা এই বিরাট ভার, যা গায়ের ওপর চেপে বসেছে, তাকে উত্তাপের মত গ্রহণ করতে শুরু করতেই, ঝাঁ ঝাঁ করে ফিরে এসেছিল চেতনা। 

    তখনই মনে পড়েছিল, সুতনুকা অনুষ্ণ, শীতল সুতনুকা, কোথায় গেল? মেন্টাল প্রবলেম দেওয়া সুতনুকা ওর কন্যাসন্তান যেন, এখনই ডাক্তারের কাছে আবার নিয়ে যেতে চেয়েছিল যাকে... সে কোথায়? 

    গলা থেকে চীৎকারের বদলে গোঁ গোঁ আওয়াজ উঠে এসেছিল।

    আর সুতনুকা ছিটকে গেছিল। মোহনার জেটিতে আটকে ছিল ও। জ্ঞান ফিরতেই খুঁজেছিল প্রথমে রিককে, দেখেছিল শরীরের অংশভূত রিক তার পাশেই অচেতন। কিন্তু অসামান্য নেই। 

    এক মুহূর্তের জন্য নিশ্চিন্ত বোধ করেছিল ওই অর্ধ চেতনাতেও।  তারপর অপরাধবোধে ঝামরে উঠে দেখেছিল, ওর শরীরে এখনো ফালি ফালি হলুদ কাপড়। সুপারমার্কেটের থেকে কেনা কুর্তিটির টুকরোগুলো হাতে উঠে আসছিল...। তখনই, ট্রলারের দীর্ঘশ্বাস যেন, সে ভাবে হাহাকার করে অসামান্যকে খুঁজেছিল ও।

    ছিটকে গেছিল অঙ্কিতও। প্রাণ আছে কি নেই, রেসকিউ টিম বুঝতে পারেনি। নাড়াচাড়া দিয়ে দেখেছিল, অল্প নিঃশ্বাস প্রশ্বাস। এ থেকেই অনুমান, ও বেঁচে।

    ঝড়ের পর সমুদ্র শান্ত। আবার ভাঁটা। গড়াচ্ছিল রাত্রি, ঝালমুড়ির টিন, এল ই ডি আলো লাগানো প্লাস্টিকের খেলনাগুলো, আর আইসক্রিমের স্টলের ছাতা, উল্টোবাগে।

    ঝিনুকের দুটো খোল দুদিকে ছিটকে গেলে কি আর ফিরে আসে নিজের কাছে? ভেতরের নরম, জেলি জেলি শরীরটা ভেস্তে গেলে আর কি আসা যায়?

    তবু, ওরা,  ওরা রেসকিউ পার্টির কাছে গিয়েছিল। নিজেদের ভাগ্যে যে যেরকম পেয়ে গেছিল, সেই সব দৈবপ্রাপ্ত পরপুরুষ ও পরনারীকে ওদের আর রাখতে ইচ্ছে হয়নি। বদলাবদলি করে নিতে চেয়েছিল। ফেরত চেয়েছিল আগেকার পার্টনারকে। নাম ধরে ধরে খুঁজেছিল পাগলের মত দিগবিদিক।

    পেয়েও গেছিল ঠিক। বেঁচে থাকা দম্পতিরা আবার এক হয়ে গলা জড়াজড়ি করে কেঁদেছিল। টিভিতে দেখিয়েছিল, পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে ওদের কান্না। টানা পাঁচ ছদিন পৃথক থাকার পর, যেন চিরকালীন বন্ধনে জড়িয়ে রয়েছে।

    ঝিনুকের দুটো মুখের মত, জুড়ে গেছে আবার যারা।

     

    আর বাকি পৃথিবীও সেভাবেই ধীরে ধীরে ফিরে এসেছিল স্বাভাবিকতায়। দীঘার সি বিচে মার্বেলের বর্ডার রিপেয়ার হয়েছিল। ট্রাকে করে এনে ফেলা হয়েছিল আরো বড়  বড় বোল্ডার। 

    তবে, বালিতে শামুক ঝিনুকের সংখ্যা আরো একটু কমে গেছিল। কারণ পরের বছর ওই বিচে এসেছিল কিছু বেশি করে দম্পতি। জলে নেমে অসভ্যতা করবে বলে। ঝগড়া করবে বলে। পরস্পরের শ্বাসরোধী কথা বলবে বলে। যাকে কেউ কেউ মিলনের কথা বলে ভুল করে থাকে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ১৯ অক্টোবর ২০১৪ | ১০৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দেবাশিস দেব পুরকায়স্থ | ***:*** | ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২০88943
  • খুব সূন্দর মেডাম ় এক নাগাড়ে পড়লাম়
  • দীপক মান্না | ***:*** | ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ১১:২৫88942
  • অসাধারণ একটা লেখা। দারুন গতিময়। এক নাগাড়ে পড়ে ফেললাম।
  • সুদীপ বিশ্বাস | ***:*** | ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০৫:৩৬88945
  • ঝরঝরে বাংলায় লেখা গল্পটি এক বৈঠকেই শেষ করলাম, থামতে ইচ্ছে করেনি, বেশ লাগলো।
  • ঝর্না বিশ্বাস | ***:*** | ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০৬:৫১88944
  • ইচ্ছা অনিচ্ছা মিলিয়ে এত সুন্দর গল্প খুব ভালোলাগল পড়ে...
  • dd | ***:*** | ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০৬:০৬88948
  • চমোৎকার লাগলো
  • yashodhara | ***:*** | ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০৯:০৫88946
  • ধন্যবাদ, সব্বাইকে...
  • ranjan roy | ***:*** | ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০৯:৩৯88947
  • এক অনন্য স্বাদ। বিস্ময়ে বিপন্নতায়। ভাবতে গেলে একবার নিজের দিকেই আঙুল ওঠে। নমস্কার।
  • রূপঙ্কর সরকার | ***:*** | ২৬ অক্টোবর ২০১৪ ০৫:২৮88949
  • খুব ভাল লাগল, যেমন লাগে আর কি
    তিন নম্বরটা একটু যেন বড় লাগল। তবে লেখাটা পুরোপুরি লেখকের/ লেখিকার ডমেন।
  • চৈতালি | ***:*** | ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৫২88950
  • একনাগাড়ে পড়ে গেলাম।খুব ভালো লাগলো।
  • মধুছন্দা পাল | ***:*** | ০৯ নভেম্বর ২০১৪ ০৪:২৩88953
  • চমৎকার লাগলো ।
  • কৌশিক ভাদুড়ী | ***:*** | ০৯ নভেম্বর ২০১৪ ১২:০৮88951
  • এই জায়গাটা তো আগেই পড়েছিলাম এফবি স্ট্যাটাসে, তখন তো আর গল্প হতে চলেছে বুঝতে পারিনি।
    ""কিন্তু একটা দু কামরার ফ্ল্যাটে কতদূরই বা পালানো যায়? ওদের রাগের সময় ঝগড়ার সময়, বার বার মুখোমুখি হতে হয়। বার বার ধাক্কা লাগে। তারপর রিমঝিম বাথরুমে ঢুকে কাঁদে। অঙ্কিত কোথাও যেতে পারে না।
    ছেলেদের পালানোর জায়গা মেয়েদের থেকে কম । রিমঝিমের বাড়িতে থাকলেও অনেক পালানোর জায়গা। সকালে বিছানা ছেড়ে উঠে ও রান্নাঘরে পালায় । রান্নাঘরে দুটো নীলচে অগ্নিকুন্ড, গ্যাসের, পালানোর জন্য রিমঝিমের রাস্তা খুলে রাখে। সেখানে ঘটনার পর ঘটনা। ফুটে ওঠা, উথলে যাওয়া, ঝরে পড়া, ফুলে ওঠা। রান্নাঘর আসলে দাম্পত্য সম্পর্কের থেকে ভাল, কম গরম, কম ভ্যাপসা।
    স্ট্যাটাসে পড়ার পর থেকে ভাবি...পালানো তো খাঁচা থেকে বনে, আর যেটা বন থেকে কোণে ...সেটা?
  • I | ***:*** | ০৯ নভেম্বর ২০১৪ ১২:৩৪88952
  • আহ্‌!
  • বিশাল ভদ্র - এই সময়ের ক্লাসিক । | ***:*** | ১০ নভেম্বর ২০১৪ ০৬:৩২88955
  • এই সময়ের ক্লাসিক ।
  • অবিন | ***:*** | ১০ নভেম্বর ২০১৪ ০৯:৪৪88956
  • পুরোটা তো দূরের কথা, শুরুর দিকের কিছু লাইন কোনোক্রমে পড়লাম, তারপরে রেখে দিলাম।
  • সে | ***:*** | ১০ নভেম্বর ২০১৪ ১১:৩১88954
  • পুরোটা পড়বার ধৈর্যই রইল না। সরি।
  • santanu kumar das | ***:*** | ১১ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০৬88957
  • Asambhab sundar...haunting..
  • Pradeepta Guptaroy | ***:*** | ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৫88958
  • দারুন লেখা। খুব ভালো লাগলো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন