ঝিমঝিমে অন্ধকার। তীব্র গন্ধ। গন্ধটা সদ্য ফোটা জুইঁফুলের। দু-তিনটে জুইঁফুলের ঝোপ, আর একটা লতানে মাধবীলতা। লতিয়ে আছে তার বাংলোর দেয়ালে। চ্যাপটা হলদে রঙের বাড়ির সামনের পথে সু ঘুরছে। আজকাল রুটিন করেছে এটাই। সন্ধেবেলা হাঁটতে হয় সু-কে। নইলে খাবার হজম হয় না তার।
সে আজকাল এবাড়িতে একা থাকে। একাই জীবনকে একভাবে গুছিয়ে নিয়েছে। এখন যে আধো-অন্ধকারে হাঁটছে, বাইরের দিকে মুখ ফেরানো এলইডি বালবের আলো জ্বলছে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে। বাকি পথ অন্ধকার। এখানে তার ভয় করে না। যেন এই গেট দেওয়া অল্প বাগান আর ছোটো লন, এই বাঁধানো রাস্তা, নিরাপত্তার বলয়।
অথচ রাতে একলা শোবার ঘরে দেয়ালগুলো চেপে আসতে চায়। একা ঘুম আসে না। চোখ জ্বালা জ্বালা করে।
সু এইমাত্র অনুভব করল তার ঘাড়ে শ্বাস ফেলছে একটা ঠান্ডা হাওয়া। ভূত নয়, ভূতের মতন। ভূত তো বিপজ্জনক না। আসলে মানুষই বেশি বিপদের। তবে এখানে তার মানুষের থেকেও ভয় নেই। লোহার গেট আঁটা। আউটহাউজে পাহারাদার আছে।
আসলে আউটহাউজে যারা আছে তারা তো ব্যাকগ্রাউন্ডে মিলিয়ে আছে। তাদের কথা মনেই পড়ে না। তার একাকিত্বে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। তারা বাহিরের লোক। সুকন্যার অন্দরমহল বিরান। সেখানে শুধু ইউটিউবে সলিল চৌধুরীর গান আর সন্ধেবেলা জুঁইফুলের শ্বাস।
সুকন্যার অনেকদিন ধরে মনে হয় সে যখন হাঁটে কে যেন তাকে লক্ষ করে। কে যেন ওপর থেকে তার দিকে নজর রাখে। অনেক ওপর থেকে। যেভাবে পাঁচরঙা মানচিত্রে ফুটকির মতো শহর দেখা যায়। সেভাবে এই নতুন শহরে সু-কে একা একা হাঁটতে দেখা যায়।
রাজ্যপাটের একলা অধিশ্বরীর মতো সারা দিন অফিসের পলিটিকস আর সন্ধেতে এই সোসাইটিবিহীন জীবনযাপনের একটা ছোট্ট ডট। ফুটকি। একটা জনহীন শহর যেন। দুটো দাঁড়ির চিহ্নে আঁকা সাঁকো নেই কোনো অন্য শহরের সঙ্গে। বা শুয়োঁপোকার মতন রেলপথ জুড়ে দিচ্ছে না মানুষের সঙ্গে।
মানুষ নেই। তবে পাশের বাংলোর রাঙচিতের বেড়া টপকে আসা লেজ নাড়া নেড়ি কুকুর আছে। সেদিন ওপরে তাকিয়ে দেখেছে বাড়ির বাইরের দিকে, ঘুলঘুলির খোপে বেড়াল বসে আছে। অন্ধকারে সিল্যুয়েট দেখা যায়। বেড়ালটার চোখ জ্বলছে।
এই অন্ধকারকে ভয় হয় না ওর। একদা তো অন্ধকারকে প্রায় ভজনাই করত সু। পূজা করত অন্ধকারের। মনে হত, আলো নিভে গেলে কীরকম শান্তি আসে। সন্ধেবেলা আপিস থেকে বাড়ি ফিরে সে চুপচাপ বসে থাকত অন্ধকারে। ভাবত, সভ্যতা মানে আলো। জোর করে আলো জ্বেলে রাখা সন্ধ্যায়, যেন প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ। আসলে তো বায়োলজিকালি এত আলো সহ্য হয় না আমাদের। এই জন্য আমাদের চামড়া কুঁকড়ে যাচ্ছে। আত্মাও কুঁকড়ে যাচ্ছে। ঝরে যাচ্ছে।
পড়েছিল, ইউরোপে একদল প্রকৃতিপ্রেমী রাতের দিকে বেরিয়ে ডান্ডা মেরে মেরে সুপারমার্কেটের বাইরের আলোগুলো ভেঙে নিভিয়ে দেয়। তারা নাকি স্টাডি করে দেখেছে কত হাজার পাখি কত কীটপতঙ্গ কাছাকাছি গাছপালার, পালিয়ে গিয়েছে বা মরে গিয়েছে ঘুমের অভাবে। সারারাত জোরালো গ্লো-সাইনের আলো, দোকানের বাইরের লোকদ্যাখানি আলো, সব জ্বলতেই থাকে বলে তাদের দিন রাতের বোধ নষ্ট হয়েছে, নার্ভ জ্বলে গেছে, তারা মরে মরে ঝরে গেছে গাছ থেকে।
তাই সব আলো নিভিয়ে দিতে চেয়েছে প্রকৃতিপ্রেমীরা।
সু এরকম কোনো মহৎ অবদান রাখেনি সমাজে বা জীবনে। আপিস যায়, বাড়ি আসে। আগে শপিং করত, প্রচুর দোকান বাজারে ঘোরাঘুরি করত সে। এখন আপিস থেকে সোজা বাড়ি। তারপর এই সান্ধ্য হাঁটাহাঁটি, অন্ধকারে। সে বৈচিত্র্য কামনা করে না কতকাল। এখন সে রুটিনে বাঁচে। রুটিনে শ্বাস নেয়। রুটিনে আরাম বোধ করে। এখন প্রতিদিন তার ঠিক আগের দিনের মতো। পরের দিনটি তার আজকের দিনের মতো।
একদা অনেক অভিজ্ঞতা ছিল। উত্তেজনা ছিল। সঙ্গে সঙ্গে যা যা আরও থাকে। ভয়, সংশয়, বঞ্চনা। অনেক গল্প। আজকাল অবাক হয়ে সে নিজেকে দেখে। উত্তেজনাহীন, রুটিন, গল্পহীন সে।
অনেক ওপর থেকে যে তাকে লক্ষ করছে মনে হয়, সেও দেখে। যে, সু রোজ নিয়ম করে কাজ করা পছন্দ করে এখন। একটা দিন ছিল, সময় ছিল তারও, যখন প্রতিটি দিন নতুন হোক চাইত সু। বোরডম নামে এক শব্দ তাকে প্রচণ্ডভাবে তাড়না করে বেড়াত। সে শব্দ শেখার আগে ছিল মনখারাপ। বিষাদ, বিষাদ। বর্ষার বিকেলের মতো ঝিমঝিমে বিষাদ।
ঘরে ঢোকার মুখে মনে পড়ল বাইরের ঘরের প্রথম আলোর বালবটা কেটে গেছে বেশ কদিন। সু এমনই গেঁতো হয়েছে। নষ্ট বালব পালটানোর কথাও মনে হয় না। অন্ধকারের কাছে ফিরে আসতে চায় আজ। ইলেকট্রিশিয়ান আসুক, সে চায় না। তবু, ঘরে ঘরে নানারকমের বাতি জ্বেলে দিতে তার আগে খুব ইচ্ছে করত বটে। কিন্তু সেসব বাতি জ্বালানোর জন্য ইলেকট্রিশিয়ান আসবে, তাদের নানা নখড়াছকড়া সইতে হবে সু-কে, এখন আর ইচ্ছে করে না।
এখন সু-র সব কিছু শরীরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। তাকে সকালে অনেক ক্ষণ বাথরুমে থাকতে হয় যেমন। তেমন বিকেলে অনেকক্ষণ তাকে হাঁটতে হয়। কুড়ি থেকে ত্রিশ মিনিট না হাঁটলে সু-র সারাদিন ভালো কাটে না। সে বিক্ষুব্ধ হয়ে যায়। রাতে ঘুম আসে না। তাকে আজকাল প্রাণায়াম করতে হয়। প্রাণায়ামের পর সে অক্সিমিটার দিয়ে নিজের ব্লাডে অক্সিজেন লেভেল চেক করে। ৯৭ থেকে ১০০ হয় প্রতিবার তার প্রাণায়ামের পরে।
একা থাকে সু। এই একা থাকাটা সে চিরতার জলের মতো চেটে চেটে খাচ্ছে। ছোটোবেলায় মা চিরতা ভেজানো জল খাওয়াত তাকে। এখনও সে গায়ে গোটা বেরোলে মেথি সেদ্ধ করে সেই তেতো জলটা খায়। শরীর থেকে সব বিষ বের করে দিতে অল্প তেতো লাগে জীবনে।
সু একা থাকে। সেই থাকাটা তেতো। কিন্তু বিশুদ্ধকারী।
দূর থেকে কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে। নজরে রাখছে তাকে।
এই নজরে রাখার ব্যাপারটা কি আসলে তার মনে র কল্পনা? ভাবে সু। এত এত থ্রিলারের সঙ্গে বসবাসের পর? গত তিন বছরে সে যতগুলো ইংরেজি ক্রাইম থ্রিলার সিনেমা দেখে ফেলেছে তার সারাজীবনের কোটা পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
কাচা কাপড় টাঙিয়ে দিয়েছে চার চৌকো উঠোনে শ্রীধর। সুকন্যা আগে তাকে সব কাচতে দিলেও নীচের জামা দিত না, এখন অকাতরে তাও কাচতে দিয়ে দেয়। বোরিং, পদস্থ ও সম্পূর্ণ লিঙ্গহীন রাজনৈতিক অস্তিত্ব পেয়েছে যেন সু। তার আন্ডার গারমেন্টস-এ কোনো নারীত্বচিহ্ন আর নেই।
শ্রীধর সোঁয়াই। শ্রীধরকে নিয়োগ করেছে আপিস। সে আউটসোর্সড স্টাফ। নীরবে কাজ করে।
শ্রীধরকে নিয়োগ করার সময় সুকন্যার একবারের জন্যও মনে হয়নি, একটা এত্ত বড়ো বাড়িতে সে এক মহিলা আর শ্রীধর পুরুষ। বা মেয়েমানুষ হয়ে তার একা থাকাটা কারও চোখে লাগতে পারে। যদিও ভিন শহরে স্বামী ও সন্তান আছে অফিসে সবাই জানে, আর তারা এত কম আসে কেন তা নিয়ে মাথাও ঘামায়, কিন্তু সু সেসব ভাবে না, পাত্তাও দেয় না। নিজের ক্ষমতাবলয়ে মুখ তুলে কেউ কথা বলবে না বলেই সেটা রক্ষাকবচ। নিয়োগকর্ত্রী, চাকরির বড়ো সাহিবা, সোজা কথায় ম্যাডাম বলে কথা। স্টিলের বলয়ে নিশ্চিত আর নিরাপদ জীবন। সব বাকিরা ব্যাকগ্রাউন্ড অবজেক্ট। তাৎপর্যহীন।
শ্রীধর তো মানুষই না। সে তো তার থেকে হায়ারার্কিতে অনেক অনেক নীচে। মধ্যিখানে আছে নাজির টাকলুবাবু, মানে শ্রী নিশিকান্ত পরিজা, যিনি রঙিন পর্দা থেকে রেফ্রিজারেটর নাজিরিপনা করে ম্যাডামের সামনে দাখিল করবেন। বিশাল চুনকাম করা বাংলোর প্রতি ঘরে তীব্র চুনকামের গন্ধে মাথা ধরে যায়। তিনটে বাথরুম-পায়খানার একটা পায়খানায় এক-একদিন হেগে দেখা যায় তিনটের মধ্যে দুটোরই নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে আছে। ফ্লাশ করলে মল যাচ্ছে না। সে কী ট্রমা, আবার ফোন করে পারিজাকে ঝাড়ে সু। প্লাম্বার ডাকে পারিজাবাবু। ওভারহেড ট্যাংকি থেকে জল ঝরছে তো ঝরছেই। বেওয়ারিশ কুকুরে বেড়ালে বাড়িতে এসে যেখানে সেখানে বসে থাকছে। ইঁদুরেরা সোফার ভেতরে বাসা করে সমস্ত স্পঞ্জ গদি কুটিকুটি করে ফেলছে।
এই পারিজাবাবুই সব রকমের সমস্যার সমাধান করবে। এই শ্রীধরকে নিয়োগ করেছে অফিস থেকে। আবার বাড়তি কাজ করার কথাটাও এই শ্রীধরকে বলেছে। শ্রীধর নিজের ছোটো স্টোভ নিয়ে আউট হাউজে থাকবে। দরকারে ম্যাডামের রান্না করবে। ম্যাডাম টাকা দেবে। বা বিনিময় প্রথায় খাবার। ঘরের ভাড়া দিতে হচ্ছে না শ্রীধরকে। ইচ্ছে হলে শ্রীধর যত খুশি আলো জ্বেলে রাখুক।
দেহভঙ্গিতে সে দাসসুলভ বিনয় মাখিয়ে রেখেছিল, কথায়বার্তায়ও তো আপনি-আজ্ঞে ছাড়া নেই। দেশে যদি সে থেকে যেতে পারত, সকাল-বিকেল সবুজ ধানখেতে কলকলিয়ে ওঠা অসংখ্য সবুজ মাথা নোয়ানো ভেতরে নিজেকে রাজা ভাবতে পারত, অথবা বাগানের কাঁঠাল গাছটির সর্বশরীরময় গিজগিজ করে গজিয়ে ওঠা ছোটো কচি কাঁঠাল দেখে ততটাই সুখ লাভ করত যেমন জমিদারতনয় কোনো সুস্তনী মহিলাকে ভোগ করার সময়। চাষের পর ঘর্মাক্ত শরীরে লাল গামছা বোলাতে বোলাতে তার তৃপ্তি আর আত্মগরিমা ফুটে বেরোত। মেয়ে এসে তামাক সেজে দিত। বউ ধুতি-চাদর এগিয়ে দিত। ভাতের থালা।
কোথা থেকে কোথায় এসে পড়েছে সে। সে বলে কিনা জমিজিরেত নিয়ে চাষবাস করা খন্ডাইত। সোঁয়াই। লোকে বলে রাজপুতের জাত এই খন্ডাইত। নিজে চাষ করে আবার বাগদিদের মুলিয়াও রাখে। দেশে ব্রাহ্মণ বা করণদের পরেই খন্ডাইতের মানসম্মান। অথচ, শহরের এই ইঁটকাঠের ভেতরে শ্রীধর কেমন এক নিমেষে ‘এমটিএস’ বনে গেল।
এত বড়ো বাংলোতে একলা রাজার মতো থাকে ম্যাডাম। আর এমটিএস হয়ে সে থাকে কোণের ছোট্ট ঘরে। সে ঘরে কোনো সিলিং পাখা নেই। আছে শুধু একটা স্ট্যান্ড পাখা। খাট নেই। আছে কেবল পেতে শোবার পাতলা গদি।
ম্যাডামের এসির, ফ্রিজের, ভেতর মহলের ইলেকট্রিক লাইন আলাদা। তার মিটারও আলাদা। বাইরের বাতিগুলো আর তার ঘরের বাতির বিল আলাদা আসে। আপিস দেয়।
শ্রীধর নামেই দারোয়ানি করে, আসলে সব কাজ। ম্যাডাম বাড়তি করিয়ে নেয়। অফিস থেকে মাসান্তে মাইনে পায় চোদ্দো হাজার টাকা। তবে খাওয়া পরার অভাব থাকে না। ম্যাডাম যা খায় তাই শ্রীধরকেও দেয়। বাছবিচার নেই।
দাদা-বাবার সংসারে রয়ে গেল তার বউ আর মেয়ে। কী আর করা। মেয়ের বিয়ে তো দিতেই হবে। টাকা জমাতেই হবে। দেশে অল্প পাঠিয়ে দেয়। বাকিটা পোস্টাপিসে নিয়ে ফেলে। বাড়ির প্রতিটি কাজ উৎসাহভরে করে। সামান্য রান্নাবান্না, তা ছাড়া ঘর মোছা, বাসন মাজা সবই তার শরীরের যে ক্ষমতা বা শক্তি তার অল্প খানিকটাই দাবি করে। বাকি সময়ে সে বাগান দেখে। ছোট্ট লনের ঘাস ছাঁটে। বাংলোর ছাতে উঠে যায় এক পাশের গ্রিলের খাঁজে পা রেখে বা দুটো দেয়ালের ওপর বড়ো বড়ো লাফ মেরে, ওঠানামায় কোনো ক্লান্তি নেই। সাইক্লোনের পর প্যাটন ট্যাংকের হাল-হকিকত দেখতে, বা ডিশ টিভিটা নড়ে গেছে কি না দেখতে যায়। ছাতে ঝোঁকা আমগাছের কাঁচা আমের আন্ডিল পেড়েও আনে।
চল্লিশোর্ধ বয়সেও দিব্বি সে তরতরে। সে ম্যাডামের গাছগুলোতে খুব ভালোবেসে জল দেয়। জল দিতে দিতে লক্ষ রাখে ফুল ফুটল কি না। পচা পাতা মুড়িয়ে দেয়, মাটি নিড়িয়ে দেয়। খুব যত্ন তার গাছগাছালির প্রতি।
ম্যাডাম খুব গাছ ভালোবাসে। শ্রীধরও। জমি নেই জায়গা নেই, এই তো একটা ছোটো বাংলোর হাতা। গাড়িবারান্দা অবধি টালিবাঁধানো এই কাঠখোট্টা রাস্তা। যেখানে ম্যাডাম হাঁটে। তারপর বারান্দা আর উঠোন। ওখানেই টবে বাগান করেছে ম্যাডাম। ছোটো ছোটো মাটির গামলায় মাটি দিয়েছে, সে মাটিতে জুইঁফুল ফুটে গ্রীষ্মের সন্ধেতে ম ম করে। তা ছাড়া দোপাটি জুঁই টগর লেবু লংকা জবা। শিউলি আছে, বড়ো টবে। কাঠচাঁপা আছে। ভাঙা ডাল পুঁতলেই গাছ। বুগেনভিলিয়াও করেছে একটা বড়ো ড্রামে। এই এক জায়গায় দুই অসম নরনারী, একজন মালকিন আর একজন কর্মচারী হলেও, মিলে যায় যেন। তারা পরিকল্পনা করে কী কী গাছের চারা আনবে ইউনিট টু-এর নার্সারি গিয়ে।
দুপুরবেলাগুলো কাটতে চায় না শ্রীধরের। দেশের কথা মনে পড়ে। তার চল্লিশ পেরোনো শরীরে যৌবন এখনও খেলা করে। মাছের মতো ঘাই মারে।
এই রাজধানী শহরে, শ্রীধরের ভাড়া না দিতে হওয়া ঘরের আর টাকা না দিতে হওয়া ইলেকট্রিকের সদব্যবহার করতে কিছুদিনের মধ্যেই তার ভাইপো সুদেশ কেওনঝাড় থেকে এসে পড়ে। অফিসের ছোকরা আউটসোর্সড বাপুনাও আসে মাঝেমাঝে। একটু মানুষ মানুষ লাগে চারপাশ। দমচাপা একাকিত্ব আর থাকে না।
বাপুনার সঙ্গে সুদেশের বন্ধুত্ব জমেছে। সুদেশ একটা কলেজে নাইটে বিকম পড়ে। দিনে ইস্ত্রিওয়ালার কাজ করে। তার ইলেকট্রিক ইস্তিরি দিব্য চলে অফিসের ইলেকট্রিকে। এবার সে সেলাইকল কিনবে, দর্জির কাটিং শিখছে। এসব বুদ্ধি শ্রীধরেরই। ক্রমশ সে এই বাংলোর ভেতরে ডালপালা মেলছে যেরকম আমগাছটা। ব্যাবসা জমিয়ে তোলো, নিজের শিকড় বাড়াও। ভবিষ্যতের দিশা করো।
বাংলোর ভেতরমহলে অফিসের থেকে ফেরার পর থেকে সারা সন্ধে এখন সু একা নারী, আর বহির্বলয়ে তিন পুরুষ। তবু সন্তুলন নষ্ট হয় না। সে সারা সন্ধে হাঁটে। ওরা ওদের মতো থাকে। ওদের উপেক্ষা করে, ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে দিব্যি নিশ্চিন্ত সে। ভাবে হাঁকাহাঁকি করাটা দরকার, না দরকার না। ক্রমশ দূর থেকে নিজের ওপর নজর রেখে চলে, নিজেকে দেখে। কী অদ্ভুত জীবন হয়েছে। অদ্ভুত কিন্তু এই রুটিন জীবন অস্বস্তিকর রকমের মানববিচ্ছিন্ন জীবন তার বেশ ভালো লাগতে শুরু করেছে।
তার বেডরুম আর পাশের বাড়তি বেডরুমে সে নড়ে চড়ে। এক ঘরে টিভি আছে। অন্য ঘরে কম্পিউটার। সে দুটো ঘরেই ভাগ করে করে থাকে।
এ ঘরে অর্ণব গোস্বামীর চিৎকার তো ওঘরে ফরিদা খানুমের গজল ইউটিউবে। সন্ধে অবধি বাইরে হেঁটে ফিরে যায় আর এভাবে রাত ঘন হয়।
মাঝে মাঝে অতিষ্ঠ হয়। হাঁক-ডাক করে। শ্রীধর আর সুদেশকে ব্যতিব্যস্ত করে। কী কর তোমরা? পরিষ্কার হয় না কেন ঘরদোর? টিকটিকি মরে আছে কোথাও, গন্ধ পায়। অনেক দিন ধরে পচে-থাকা মরা টিকটিকির গন্ধ পায়।
সবাই খোঁজ খোঁজ। কেউ পায় না। সুকন্যা তারপর খুঁজতে খুঁজতে ডিটেকটিভের মতো একদিন বার করে ফেলে গন্ধের উৎস। জানালা টেনে বন্ধ করার সময়ে দুই পাল্লার খাঁজে মৃত টিকটিকির দেহ শুকনো ফুলের মতো ঝরে পড়ে।
মধ্যে মধ্যে সে ছুটি নিয়ে বাড়ি যায় যখন, দুটি বেডরুমেই তালা দিয়ে দেয়। যদিও চাবির ডুপ্লিকেট থাকে পরিজাবাবুর কাছে। প্রয়োজনে তিনি যাতে এ ঘরগুলো অ্যাক্সেস করতে পারেন, তাই। তথাপি দুই বেডরুমে তালা মূলত শ্রীধর অ্যান্ড কোম্পানির জন্য। কেমন লজ্জা করে। কীই বা আছে এমন এসব ঘরে। কীই বা নিতে পারে এরা।
কিছুদিন পর থেকে বেডরুম খুলে রেখেও এমনি সু চলে যায়। সে একটা উইকেন্ড ছিল। এমন কিছু দীর্ঘ উইকেন্ড নয়। জাস্ট শনি-রবি। তাও পুষিয়ে যায়, যদিও তার পরিবার বলে এত ধকল কেন করা। দুটো শহর বেশি দূর তো নয়।
ফিরে এসে ক-টা দিন পরে সে কম্পিউটার খোলে আর তারপরই বুক ধক করে ওঠে। গুগলের পৃষ্ঠা খুলতেই পৃষ্ঠার কোনা থেকে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে একের পর এক মেয়েদের ছবি। অসংখ্য ছবি উঠে উঠে আসে, যেন পুকুরের মাঝখানে জল ঘুলিয়ে দেওয়া হয়েছে আর উঠে এসেছে শ্যাওলা ও পাঁক। শ্বেতাঙ্গিনী, বাদামি, কালো, ভারতীয় ও অভারতীয়। নানারকম মেয়ে। পিছমোড়া করে হাত বাঁধা, মুখে কাপড় বাঁধা। তীব্রভাবে উলঙ্গ। অর্ধনগ্ন। ছেঁড়া কাপড়ে শন চুলের মেয়েরা, দৃশ্যত অত্যাচারিত ও ধর্ষিত। সঙ্গে অক্ষরগুলি বাঁকাচোরা, অসংলগ্ন। শব্দগুলো ছেঁড়া, বোমা ফাটলে ছুটে আসা যেন কতগুলো আলপিন পেরেক কাচের স্প্লিনটার... চোখে এসে বিঁধল। হট বেবস, ফ্রি সেক্স ডট কম। রিয়েল রেপ ভিডিও। হট গার্লস। এক্স এক্স এক্স। ফ্রি হট ওয়াইট উইমেন। সেক্সি বেবি ডট কম, উ লা লা ডার্টি গার্লস... শকিং ন্যুড... হট ন্যুড...
প্রথম প্রতিক্রিয়ায় সু ভেবে ফেলল, সে নিজেই কোনো ভুল চাবি টিপে টিপে চলে গেছে কোনো নিষিদ্ধ অঞ্চলে। কিন্তু কীভাবে। আজ তো সবে এই এ কম্পিউটার খুলল।
তখন ভাবল, বাড়ি যাবার আগে কোনো এক দিন তার কোনো উলটোপালটা সার্চের ফল এসব। তারপর ধীরে ধীরে অন্য একটা সম্ভাবনার কথা মাথায় আসে। মাথা কান ঝটিতি গরম হয়ে যায়। সন্তুলন ভেঙে চুর।
কালো অন্ধকার মন নিয়ে প্রথমে কিছু করে না শুধু থুম হয়ে বসে থাকে সু। সুকন্যার নিজের নিরাপদ একাকিত্ব, রাজকীয় জমিদারিকে মনে হয় বোকা, নড়বড়ে, আশ্চর্য অনিরাপদ ও ভয়ংকর। এত বড়ো বাতেলাদার অফিসারপনার বেলুন ফুস করে উবে যায়।
দুটো বড়ো বেডরুম, তিনটে আধা অকেজো বাথরুম, এই বড়ো লিভিং রুম যেখানে কখনও সে থাকে না, এইসব জুড়ে একজন ভালনারেবল একলা মেয়ের থাকাটাই বড়ো হয়ে ওঠে। আর আউট হাউজ যা এতদিন ছিল পুরো অদৃশ্য ও প্রেক্ষাপট, জ্বলজ্বল করে সামনে এসে দাঁড়ায়। ওহ কী কদর্য এই পৌরুষ!
এই সন্ধেটা বিশাল ও ভয়াবহ। আক্রমক যেন এ বাড়ির অন্ধিসন্ধিতে ঘুরছে। সুকন্যা নিজের পঞ্চাশোর্ধ্ব আইডেন্টিটির সব সাজসজ্জা ঋদ্ধি ও সিদ্ধি খুইয়ে ফেলে ও জাস্ট একটা নারীশরীর হয়ে যায়। নিজের পোশাকের ভেতরের মেয়ে শরীরের সম্বন্ধে এই প্রথম সে সচেতন হয় আর সমস্ত অনায়াস অভ্যাসের খোলশ চুর চুর হয়ে যায়।
ট্রিপল এক্স.... হট বেবস...শব্দগুলো খোঁচা হয়ে চোখে ঢুকে গেছে। ভাইরাল, স্পাইরাল... গুঁড়ো গুঁড়ো সব ম্যালওয়্যারে ভরে যাচ্ছে তার কম্পিউটার। মনে হয় যতবার পরিষ্কার করবে ততবার আবার ভরে উঠবে। অত্যাচারিত, রেপ হয়ে যাওয়া মেয়েদের ছবিতে।
প্লাম্বার ডাকার আগে যেরকম সেই বাথরুমের কমোডটা। জল ঢালছে আর বুদবুদ কেটে উঠে উঠে আসছে কালচে ঘোলাটে ফেনা-তোলা জল। মলভরতি প্যান।
প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল সবকিছু ডিলিট করে দেওয়া। মুছে দেওয়া। কেননা এসব কাদা, নোংরা। ময়লা জিনিস দেখলে মুছে দেওয়া, পোকা দেখলে পিষে দেওয়া। এটাই তার আজীবনের শিক্ষার ফল। কনভেনশন। অশ্লীল চাউনি দেখলে মুছে দাও। অসভ্য লোক দেখলে নিজের চোখ বন্ধ রাখো, সরিয়ে নাও।
ছিল ভয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া। নিজেকে অদৃশ্য করে দাও। খারাপ জিনিসটাও যেন অদৃশ্য হবে।
তাই প্রথমেই ক্লিয়ার ব্রাউজিং হিস্টরিতে হাত গেল সুকন্যার। তারপরই একটা কথা ভেবে হাত সরিয়ে নিল ছ্যাঁকা লাগার মতো।
না, কোনো কিছু ডিলিট করা চলবে না। কোনো কিছু মুছে দেওয়া যাবে না। প্রমাণ নিতে হবে, প্রমাণ রাখতে হবে। অ্যাকশন নিতে হবে। যে বা যারা তার অনুপস্থিতিতে তার কম্পিউটার খুলেছে, ঘেঁটেছে, সেখানে ভুলভাল সাইট থেকে পর্ন ভিডিও দেখেছে সবাইকে হাতে নাতে ধরতে হবে। তারপর সব ক-টাকে তাড়াবে এখান থেকে। একদম দূর করে দেবে।
না, এ ক্ষেত্রে মেয়ে সুকন্যা, একাকী মেয়ে সুকন্যা যত বড়ো হয়ে তার মনকে অধিগ্রহণ করুক।
তাকে সবটা সে দখল করতেই দেবে না। সে বারো বছরের সুকন্যা নয় আর। যদিও তার মন তাকে টেনে সেই শৈশব, কৈশোরের অন্ধকার খুপরিটাতে ফেরত নিতে চাইছে। তাকে আবার বসিয়ে দিতে চাইছে ইসকুলের চেয়ারে। ছোট্ট চেয়ারে। আবার স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাসকাকু তার হাতে গায়ে হাত বুলোচ্ছে। তার না ফোটা বুকে হাত দিচ্ছে আর আইস্ক্রিম কিনে দেবে বলছে। আবার মাকে ছেড়ে নাচের প্রোগ্রামে একলা বাথরুমে যাওয়া, রবীন্দ্রসদনে, বোকাহাঁদা সুকন্যাকে, বাথরুমের পাশে পুরুষের টয়লেট থেকে বেরোনো সেই চব্বিশ-পঁচিশ বছরের কাকুটা হঠাৎ জড়িয়ে জাপটে ধরছে।
সুকন্যা তার নিজের বর্তমানকে ফেরত চায়। হাশিল করবে সে তাকে। সে অ্যাকশন নেবে এবার। ব্রাউজিং হিস্টরি পুরো তন্ন তন্ন করে খুঁজে, সব প্রমাণ জোগাড় করবে সে। শনিবার মধ্য রাত অবধি এরা কম্পিউটার নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছিল। রাত ক-টায় কোন্ সাইট ভিজিট করা হয়েছিল সব স্ক্রিন শট নিয়ে রাখে একে একে।
আগামীকাল সুকন্যা আপিসে গিয়ে নাজিরকে ডাকবে। মিস্টার পারিজা এই দেখুন আপনার ডেকে আনা আউটসোর্সিংদের কীর্তি। সব প্রমাণ হাতে নাতে। সবকটাকে ভাগান। চাকরি নট করে দিন।
ধীরে ধীরে চিত্ত শান্ত। মাথায় জলের ঝাপট। অনেক ভাবনার পর সে আবার সান্ধ্য হাঁটাহাঁটি করতে যায়। আর তখন আস্তে আস্তে আবার টের পেয়ে যায়, আকাশ থেকে একজোড়া চোখ, তাকে তন্ন তন্ন করে দেখে নিচ্ছে।
কেন সু বেডরুম লক করে যায়নি। কেন কম্পিউটারে কোনো সাইন ইন পাসওয়ার্ড দেয়নি। করতে কে তাকে বাধা দিল। কেন সে উদার হল এত, অথবা অন্যমনা।
পর্ন সাইট দেখার কোনো নৈতিক বাধা কি কারও আছে আদৌ? কেউ কি এসব দেখেছে বলে জেলে যেতে পারে? এই দোষে কি কারুর শাস্তি হয়? হওয়া উচিত? এক সরকারি চাকুরে বলেই, নিজের ক্ষমতার ব্যবহার করে কি শ্রীধর বা বাপুনাকে এই কনট্র্যাক্টের চাকরি থেকে উৎখাত করতে পারে? বিকম পড়তে আসা সুদেশ। ওই কি এসবের পান্ডা? ওকে তাড়াতে পারে। ও বাড়তি একটা লোক... খতরনাক...
হায়, সুকন্যা সিঁটিয়ে যায় ভেবে। এমন সময় এল প্রতিটি বয়সের, প্রতিটি শ্রেণির, গরিব ধনী যে-কোনো রকমের লোককেই পোটেনশিয়াল রেপিস্ট মনে হয়। কী ভয়ানক এই সময়। স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার, এইসব টেকনোলজি হাতের কাছে এসে তো এইসবই হল শুধু। ভালো কি কিছুই হল না তাহলে? আজ কম্পিউটার না থাকলে তো জানাও যেত না কে কী ভাবে, কল্পনা করে। ওর কম্পিউটারে হাত দিতে সাহস করেছে ওরা। এর বাইরে, হয়তো নিজের ফোনেই এসব দেখে, শোনে এরা। কে বলতে পারে। হয়তো কেন, দেখেই তো নিশ্চয়ই।
ছোটোবেলায় এক কাকার ঘরে চটি হলুদ বই পেয়েছিল সুকন্যা। তখন যেখানে যা গল্পবই পেত টেনে টেনে পড়ে ফেলত। ওগুলো পড়তে গিয়ে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু সুকন্যা তো সেই খুকিটি নেই। এখন তো বোঝে এসব পড়াও স্বাভাবিক ছিল কাকার ওই বয়সে। ছিল না?
সুদেশ, সুদেশের মুখে চোখে কোনো অপরাধী তো কখনও দেখেনি সু। এতদিন। অথচ স্পষ্টত এটা সুদেশের কাজ। অথবা বাপুনা। শ্রীধর কি কম্পিউটার বুঝবে? না। কমবয়সি দুটোরই কাজ। দুজন জোট বেঁধে কৌতূহল নিবৃত্ত করেছে, বাসনা পূর্ণ করেছে।
করলি তো করলি। আমার কম্পিউটারে কেন? এ কী সমস্যায় ফেলে দিলি রে ছোকরারা!
হাঁটলে মাথায় অক্সিজেন যায় সু-র। সে হাঁটতে হাঁটতে, ঘুরতে ঘুরতে, নজর করে আউটহাউজের আলো জ্বলছে। সবেগে ইস্ত্রি চালাচ্ছে সুদেশ। রেডিওতে কৃষ্ণনাম বাজছে, এখানে লোকে খুব ওইসব ধর্মীয় গান-টান শোনে। অন্ধকার বাগানে জলের বড়ো পাইপ টেনে টেনে টাইমকলের জল এদিক ওদিক দিচ্ছে শ্রীধর। আর পেঁপে গাছ থেকে পাকা পেঁপে তুলে রেখে গেছে উঠোনে রাখা টুলের ওপর কখন।
সাইকেলের চিড়চিড় আওয়াজে সে তাকিয়ে দেখে বাপুনা ঢুকছে। ওর হঠাৎ মনে পড়ে যায় ইলেকট্রিশিয়ান ডাকা হয়নি। বাপুনাকে ডেকে বলে, ওই আলোটা পালটাতে হবে। বালব কিনে, আউটহাউজ থেকে সিঁড়ি এনে, পালটে দিয়ে যাও দিকি।
মাথাটা ঈষৎ তুলে জুইঁফুলের গন্ধ শুকল সু। হয়তো দশ বছর আগে সে শ্রীধরকে তাড়িয়ে ছাড়ত। এখন সে ইচ্ছেটা আর হচ্ছে না। অন্য নতুন যে আসবে, সেও তো সমান অবিশ্বাসের হবে... এর তো কোনো শেষ নেই। বরং অফিস থেকে দিয়ে যাওয়া এই কম্পিউটারে সাইন ইন পাসওয়ার্ড বসিয়ে নিতে হবে। সব বেডরুমে চাবি দেবে এবার থেকে। আপিস যাবার সময়েও।
বাকিটা যেমন আছে থাক। ওদের শুধু পারিজাকে বলে একটা কশন করে দেওয়া দরকার। ম্যাডাম জেনে গেছেন, তাঁর জিনিসপত্রে হাত দিচ্ছ তোমরা। ওটা আবার করলে কিন্তু বিপদে পড়বে।
ও যে জেনে গিয়েছে ওদের কাণ্ডকীর্তিটা। এটুকুই জানানো হোক আপাতত। পরেরটা পরে ভাববে। ছ্যাঁক ছ্যাঁক অন্ধকারে বিষণ্ণ লাগে হাঁটতে হাঁটতে।
তার মানচিত্র জুড়ে অনেক কাটা কাটা দাগ এখন। নদীর ওপর, ওটা কী? রেলপথ, না বিপজ্জনক ঝুলন্ত সেতু।
প্রাণপণে সু এখন চাইছে সেতুটা না ঝাঁকাতে। খচখচ সহজে যাবে না। এভাবেই চলবে... তাও...
প্রেক্ষাপট যেন প্রেক্ষাপটেই থাকে। সামনে না আসে। নিশ্চিন্তির নিরাপত্তার স্ক্রিন সামনে। পেছন থেকে সূচলো ভয়ংকর কিছু কি এগিয়ে এসে ছিন্নভিন্ন করে দেবে সেই স্ক্রিনটা?
দূর থেকে এবার রেডিওতে হিন্দিগান, কিশোরকুমার ভেসে আসছে। জীবন কি আগের মতো হবে না?
গল্পটা অপূর্ব। ভাবনার ক্রমটা মোটামুটি এরকমই হয়।
বাস্তব ছবি। গল্পের সাথে পুরোপুরি একাত্ম ছিলাম।
গল্পটা খুব ভাল লেগেছে। বাস্তববিচ্যুত নয় একেবারেই, অথচ আবেগ ডানা মেলে আছে। প্রধান চরিত্রকে আপাত শীতল বা যুক্তনির্ভর মনে হলেও তার আবেগ ও কমপ্যাশনের ( বাংলা কী হবে? ) কমতি নেই।
সুকন্যা নিজের পঞ্চাশোর্ধ্ব আইডেন্টিটির সব সাজসজ্জা ঋদ্ধি ও সিদ্ধি খুইয়ে ফেলে ও জাস্ট একটা নারীশরীর হয়ে যায়। - অসাধারণ .
আর বিশ্বাস ভঙ্গের যন্ত্রনাটা খচ খচ করে বিঁধবে না এরপর?
গল্পটিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রের সংশয় ও দোলাচল পড়ে মনে হয় এই দোলাচল প্রতিটি সমকালীন সেনসিটিভ মানুষের।
সহজে স্পর্শ করে যায় এই লেখা, লিখনের মুন্সিয়ানায়।
গল্পটি প্রত্যাশিত বাঁধা রাস্তায় হাঁটেনি। অথচ চরিত্রের ভাবনার যুক্তিসম্মত বিকাশ হয়েছে। লেখকের মুন্সিয়ানাকে কুর্ণিশ।
শ্রীমতী রায়চৌধুরীর গল্পটি খুব সাবলীল, নিজের জীবনের খানিক খন্ড চিত্র প্রতিফলিত হবার সম্ভাবনা থাকতে পারে। একদা উত্তর বঙ্গের এক নির্জন কোণে প্রায় একই পরিবেশে ও রুটিনে মাস ছয়েক আমাকে সবুজের মধ্যে এক জনহীন বিরাট দোতলা সরকারী আবাসে কাটাতে হয় বলে, পড়ার সময় সেই স্ম্মৃৃ তি মনে আসছিল ।
কুশান রঞ্জন কৌশিক এক লহমা প্রত্যেকে আমার কৃতজ্ঞতা নেবেন। খুব আনন্দ পেলাম। আর প্রতিভাদি দময়ন্তী স্বাতী, তোমাদের কথা মাথায় রেখেই ত লেখার উৎসাহ পাই
সুকন্যার একা জীবনের গল্প ভালো লাগলো। লেখায় মুন্সিয়ানা আছে। কি ধীর স্থির লেখা!
গল্পটি ভালো। শেষ করেছেন বা থামিয়ে দিয়েছেন যেভাবে তা খুবই স্বাভাবিক। বয়ন সুন্দর।
খুব সেনসিটিভ ও পরিশ্রমী গদ্য। আল লাগল
*ভাল
ভালো লাগলো গল্পটি।
Khub smart galpo ,besh bhalo laglo