অ্যাই বুলটুন দেখেছিস, একটা নতুন ছেলে এসেছে?
কে রে? ওই লালটু মতনটা? চুপটি করে বসে আছে?
হ্যাঁ, আহা যেন ভেজা বেড়াল। ভাজামাছ উল্টে খেতে জানেনা। কে রে?
কে রে? কে রে?
সবাই এ ওর মুখ চায়। ষোল বছরের মানব, তেরো চোদ্দর বুলটুন আর শুনু... এ ওর মুখে তাকায়।
এই দাঁড়া, মাকে জিগ্যেস করে আসি।
মা, ঐ ছেলেটা কে গো?
শুনু, শোন, সোয়েটার খুলবে না বাঁদরামি করে। হাফ সোয়েটার পরে এসেছ জেদ করে কিন্তু। আজ কিন্তু ঠান্ডা ছিল।
মায়ের এই স্বভাব। যেটা জিগ্যেস করবে সেটার উত্তর দেবে না। উল্টে অন্য কোন জ্ঞান দিয়ে দেবে। দেবেই। মা হাত দিয়ে টেনে টেনে সোয়েটার ঠিক করে দিতে থাকে। চূড়ান্ত অস্বস্তির ব্যাপার। দূরে দাঁড়িয়ে অন্য বাঁদরেরা এদিকে দেখছে। একেবারে প্রেস্টিজে গ্যামাক্সিন।
উফফ। কোথায় ঠান্ডা মা? দেখ না, আমার ঘাম হচ্ছে।
ঘাম হবে না? এসেই যা হুটোপাটি করতে শুরু করলে? শোন খেয়ে উঠেছ, এখন কিন্তু লাফালাফি না। আমরা এবার বসব খেতে। তোমরা একটা জায়গায় বসে শান্ত হয়ে কিছু খেল।
আচ্ছা ঠিকাছে। ঐ ছেলেটা কে, বললে না ত।
ঐ ছেলেটা মানে? ও আচ্ছা ওটা ত মিনুপিসির নাতি। আরে তোমার বাবার পিসি। মনে নেই? গতবছর মারা গেলেন আমরা গেসলাম শ্রাদ্ধে? ঐ যে গোলাপি শাল পরা ওটা মিনুপিসির ছেলের বউ।
নাম কী ওর?
কী যেন, টুকলু বোধ হয়। আহা তোমরা খেলায় নিচ্ছ না কেন ওকে। যাও বন্ধুত্ব কর ওর সঙ্গে। খেল গিয়ে।
মানব আর বুলটুনকে গিয়ে রিপোর্ট করল শুনু।
বুলটুনের মা নেই, বাবার অন্যদিকে মন, সোয়েটার টেনে দেবার কেউ নেই। সে ইতিমধ্যে নিজের সোয়েটার খুলেও ফেলেছে। আর মানব ত এত্তোটা বড়। দুজনকেই কেন যেন হিংসে হল শুনুর। তবে তিনজনের মধ্যে তার বুদ্ধি সবচেয়ে বেশি। সে অংকেও ভাল, আর গুবলেট পাকিয়ে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে চট করে কেটে পড়তে তার মত কেউ পারেনা।
তারা তিনজন মিলে এসে লজ্জায় জড়োসড়ো টুকলুর আশেপাশে এসে ঘুরঘুর করতে লাগল।
টুকলু ওদের সঙ্গে খেতেও বসেছিল এক পাশে, লক্ষ করেছে। বাচ্চাদের ব্যাচ উঠে গেছে একটু আগে। এবার বড়রা খেতে যাবে। ঘাড় লম্বা করে, গত শীতে চিড়িয়াখানায় দেখা পেলিক্যান পাখির মত ওকে নজরে রেখে আছে ওর মা গোলাপি শালের ঐ কাকিমাটা। এবার তাদের, মানে বড়দের খাওয়ার ডাক পড়েছে। কাকিমা কাছে এসে বুলটুনদের বলল, এই তোমরা ওর সঙ্গে গল্প কর, অ্যাই টুক্লু আমি খেতে গেলাম। তুই ভাইদের সঙ্গে খেলা কর।
হ্যাঁ কাকিমা, ঠিক আছে আমরা আছি। কোন ইশকুলে পড়িস রে তুই?
মানব বলল। তাল ঢ্যাঙা , ঘাড়ের কাছটা একটু কুঁজো। নির্লজ্জতা আর কৈশোরের আড়ষ্টতা অদ্ভুতভাবে মিলেমিশে আছে মানবের দেহভঙ্গিতে।
বাবার ঠ্যাঙানি খেয়ে খেয়ে পিঠের আর কিছু নেই। কিন্তু তাতে কি, মনে অনেকগুলো পলেস্তারা পড়েছে। বাবা বলে মারলেও আর কিছু হয়না, মানবের। বেজায় ঠ্যাঁটা হয়ে গিয়েছে নাকি মানব। তা কী করা যাবে। এত ঠ্যাঙালে গন্ডারের চামড়া হবে না? ইশকুলে ভাল ফল করলেও বাবা ঠ্যাঙায়। এদিকে অঙ্কে হয়ত ৯০ তুলেছে, বাবা বলবে কেন ১০০ না। দশ নম্বর কোথায় কাটা গেল রে। ওদিকে ইতিহাসে সত্তর, সেটাতেও খুশি না।
টুকুন তুই কোন ক্লাসে পড়িস রে? আলিপুর বয়েজ এ? বাহ। এদিকে আয়। রস কষ সিঙাড়া বুলবুলি খেলতে জানিস?
সরু সরু ঠ্যাং ওয়ালা রিকেটের রুগির মত কাঠের সরু টেবিল সার দিয়ে সাজানো। তার ওপরে সাদা কাগজ পেতে দিচ্ছে মোটা কাগজের রোল থেকে রাঁধুনির লোক। রাঁধুনি ঠাকুর আর তার পার্টি সেই কখন এসেছে। পাড়ার ছেলে, বাড়ির ছেলে সব ফিট করা আছে, কোমরে তোয়ালে গামছা বেঁধে সব রেডি। মোটা দানার হাতে গড়া কাগজ পাতা হয়, এক ব্যাচ উঠে গেলেই সে কাগজ তুলে ফেলা হয়। কলাপাতার পাত পড়ছে ব্যাচে ব্যাচে। মাটির খুরিতে জল। আদ্ধেক মাটির খু্রিতে ছোট ছিদ্র থাকে, ফিনকি দিয়ে জল বেরিয়ে আসে, অথবা খুরির তলাটা নড়বড় করে জল উল্টে সোজা নিমন্ত্রিতের কোলে ।
শীতকালের দুপুরে পীতাম্বর রায়ের শাশুড়ির শ্রাদ্ধ খাওয়া হচ্ছে। নিমন্ত্রিতের সংখ্যা বেশি না হলেও তিন ব্যাচ হবে। পাড়ার মধ্যে একটা চত্বর আছে, চারদিকে বাড়ি, মধ্যিখানে অসমান পাথর বসানো। সেই খানেই সাদাকাপড়ের প্যান্ডেল হয়েছে।
এই প্যান্ডেলেই খাওয়া। খাওয়ার পর দুপুর চেপে এসেছে। আলো হঠাৎ নেমে গেল। হঠাৎ শীত শীত, শিরশির ভাব এসে বসল।
এই সময়েই, বড়রা সবাই যখন খেয়ে দেয়ে একটু গ্যাঁজাচ্ছে, অল্পবিস্তর গড়াতে চাইছে, বাচ্চারা এক জায়গায় গজল্লা করছিল।
বড়দের শোকের চাপ নেই আর। পীতাম্বর নামেই গৃহকর্তা। এখন ওঁর কাঁচাকোছার ঠিক থাকে না। পঁচাত্তর বছর বয়সে একটি সেরিব্রালের ফলে একেবারে শিশুর মত হয়ে গিয়েছেন। পীতাম্বরের গৃহিণীই এই গৃহের সর্বেসর্বা। মালতীলতা কাঁচা সোনার মত গায়ের রং আর তীব্র ব্যক্তিত্বের সুবাদে এখন মাতৃমূর্তির শেষ কথা। মা দুর্গার মত ঘর সামলান। তবে এদিকে ওদিকে নানা রকম ছোট ছোট দেবতারা মাথাচাড়া দিচ্ছে সেসব উপেক্ষাও করেন। তা নিয়ে ছেলেমেয়েদের মধ্যে সূক্ষ্ম বিসংবাদ মাথাচাড়া যে দেয় না তা নয়।
মালতীর মা নব্বই অতিক্রম করে মারা গেলেন। মৃত্যুর কটা দিন আগেও নিজে স্বপাকে খেয়েছেন। কালো পাথরের বড় থালায়। বিধবার হবিষ্যান্ন। মালতীর মা বিধবা হয়েছেন দেশভাগের পর পর। মালতীর পিতৃদেব ঢাকার বড় বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় চলে এসেছিলেন। ঘরে ঘরে অজস্র শৌখিন সামগ্রীর শোক, বাড়ির শোক, দেশের শোক, সামলাতে পারেন নি, তাই বাঁচলেন না আর , হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন। মেয়েদের জান পুরুষের চেয়ে কড়া। মালতীর মা বুকে পাথর রেখেও ইন্ডিপেন্ডেন্সের পর এতগুলো বছর বাঁচলেন।
অসাধারণ রান্নার হাত। মাঝে মাঝে কালোজিরে কাঁচালংকা ফোড়ন দিয়ে যে সাদা আলুর তরকারিটি সকালের খাবার হিসেবে নরম ময়দার রুটির সঙ্গে বানাতেন, অমৃতের মত তার স্বাদ নিতে ছুটে আসত মালতীর ছেলেমেয়েরা এমনকি নাতিনাতনিও। কেউই বঞ্চিত হয়নি কালো হয়ে আসা একটা ডালডার টিনে মালতীমাতার রক্ষিত আমসত্ত্ব বা হরলিক্স বিস্কুট থেকে। বিকেলে সাদা শ্বেতপাথরের গেলাসে সাবু, অথবা গ্রীষ্মে লেবুর সরবত, ঘোল ইত্যাদিও পরিপাটি করেই খেতেন। তারও প্রসাদ পেত ওরা, নাতিপুতিকুল।
সেই মানি সামান্য কদিনের অসুখে দেহ রক্ষা করলেন। শোকের কিছু নেই। দীর্ঘ সুস্থ জীবনের পর, সবাইকে সুখী করে, শান্ত স্মিত, স্থিতধী মানির এই মৃত্যু যেন সময়োচিত, সাধনোচিত ধামে গমন।
শুধু খ্যাঁটনটা খুব বড় রকমের হল। কাজের দিনের লুচি আলুরদম ছানার ডালনা ধোঁকার ডালনার পর পর আজ মৎস্যমুখীতে মাছের মাথা দেওয়া ডাল আর পাকা রুইমাছের কালিয়া, দুটোই অসামান্য ছিল। লাবড়াটিও যথার্থ হয়েছিল। সমস্ত সব্জি গলে গিয়ে কারুকে আর আলাদাভাবে চেনা যাচ্ছিল না, আলু কুমড়ো পালংশাক মুলো ফুলকপি সবাই স্ব স্ব বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ হারিয়েছিল কিন্তু অনৈসর্গিক এক স্বাদ দান করেছিল লাবড়াতে। এ সবই প্রচুর সরষের তেলের ভেতরে, ঠাকুর বনমালীর সুবিশাল কালো লোহার কড়ার কুম্ভীপাকে পড়ে বহুক্ষণ মরো মরো আঁচে থাকার ফলাফল।
বাঙালির সত্তর দশকের মিলমিশগুলোও ওই লাবরার মত। কারুর সচরাচর কোন তাড়াহুড়ো থাকেনা, সবাই দীর্ঘ সময় ধরে খায় আরো দীর্ঘ সময় ধরে খাওয়ার গল্প করে, আরো দীর্ঘ সময় খাওয়ার পরের রোমন্থন চলে। নেমন্তন্ন বাড়িতে পানের খিলি দেওয়া হয়। পারিবারিক ঘরোয়া অনুষ্ঠানেও পান আসে, তা মোড়ের বিহারির দোকান থেকে। পান বেনারসওয়ালা... গুন গুন করে গাইতে গাইতে মলি পলির ছোট মামা নিয়ে আসে সবার জন্য খেয়ে উঠে বেরিয়ে... সঙ্গে নেয় ফুলমামাকে। ফুল মামা হল মলি পলির সপ্তম মামা।
বেরিয়ে ছোটমামা ফুলমামা যে বেনারসি পানওয়ালা ঠেরাকুয়ার কাছ থেকে শুধু পান না, ফুলমামার সদ্য পাওয়া চাকরির টাকায় সরু সাদা কাগজের নল দেওয়া তন্বী, হেলেনের মত আকর্ষক ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিক্স সম্পন্ন কোকের কাচের বোতলের থেকে কোক নামে এক অপার্থিব পানীয় খান ও খাওয়ান। যে কোন ভূরিভোজের পর সোডাভুরভুর ওই কালচে পানীয় তুলে দেয় কয়েকটি সুখের ঢেঁকুর... এবং এর পর চার্মিনারের মত সস্তা সিগারেটের মুখবদলে ফুলমামা ছোটমামাকে কিনে দেন রিজেন্ট... সে কথা বাড়ির বড়দের জানা র কোন অধিকার নেই। নৈব নৈব চ।
এই বিশাল বাড়ি বিশাল পরিবারের ভেতরে দীর্ঘকাল ছোটদের আর বড়দের মহল আলাদা আছে। ছোটমামা অবশ্য সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং উত্তীর্ণ হয়ে বড়দের মহলে ঢুকেছেন। পরের প্রজন্ম পুরোটাই ছোটদের মহল। এবং সে মহলের ভেতরেও আবার বয়সের বিভাগে দুটি উপদল। দাদুর আট ছেলেমেয়ের প্রত্যেকের গড়ে দুটি করে ছেলেমেয়ে এবং তাদের বয়সের ফাঁক বছর তিন থেকে পাঁচেকের। আর সেজন্যেই গোটা সতেরো তুতো-ভাইবোনের ভেতরের দুটি উপদলের এক দল ছেলেমেয়ের বয়স এখন এগারো থেকে ষোলর ভেতরে, আরেকদলের বয়স তিন থেকে আট-নয়ের ভেতরে। অলিখিত সংবিধানে লেখা আছে ছোটরা যাতে দুষ্টুমি না করে, বিপদে না পড়ে, হাত পা না কাটে, বড়রা তা দেখবে। তবে বস্তুত তা দেখে না।
যথা, পীতাম্বরের বড় মেয়ে নন্দিনীর দুই কন্যা পলি ও মলি। পলি এখন পনেরো আর মলি নয়। ছ বছরের দূরত্ব।
ফলত পলি বড়দের দলের পান্ডা আর মলি ছোটদের দলের হাফ পান্ডা। ছোটদের দলে মলির চেয়ে বড় একজনই আছে, বাকিরা সব তার চেয়ে দু কি দেড় বছরের ছোট।
৩
খেলাটার নাম হল রস কষ সিঙাড়া বুলবুলি। আসল নাম হল রস কষ সিঙাড়াবুলবুলি মস্তক। তবে মস্তকটা কেউ বলেনা। চার জন লাগে এ খেলাতে। চার জন চারটে নাম নেবে, রস কষ সিঙাড়া বুলবুলির ভেতরে একেকটা একেকজন নেবে। তারপর গোল হয়ে বসে হাতের আঙুল পেতে বসবে, আর আঙুল গুনতে গুনতে যাওয়া হবে, সে গোণাতেও প্রতি আঙুল পিছু একটি করে নাম ডাকা হবে। ওইই, রস, কষ... ইত্যাদি।
শেষ আঙুলে যে নাম উঠবে সেই নামের লোকটি তখন সেফ। আবার গোনা শুরু, এই করে করে তিন জন সেফ হয়ে গেলেই চতুর্থ জন তখন "ধরা পড়ল"। তাকে এবার হাত উল্টো করে ধরতে হবে, সেই হাতের ওপর আগের জন চাঁটি মারবে । প্রতিবার চাঁটি মারার সময় ঠিক আগের মুহূর্তে ধরাপড়া বান্দাকে হাত কায়দা করে সরিয়ে নিতে হবে। যাতে চাঁটিটা না পড়ে হাতে। নইলে আঙুলের গাঁটের ওপর গাঁট্টা বা চাঁটি, তার ধার খুব, কড়া ধাঁচের সেসব জিনিস।
কয়েক রাউন্ড খেলার পরই নতুন ক্যাবলা মিনমিনে ছেলেটা ধরা পড়ল। আর মানব শুনু বুলটুন ঘিরে ধরে ওকে বলল, হাত পাত।
গাঁট্টাগুলো নেমে আসছিল বৃষ্টির মত। আর টুকলুর প্রতিবার হাত সরাতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল। প্রতিবার।
আগে আগে যারা ধরা পড়েছিল তারা চট করে হাত সরিয়ে নিয়েছে। ওরা ত খেলাটা জানে। টুকলু জানেনা। টুকলুর হাত কেমন যেন কোলাব্যাঙের মত টেবিলের ওপরে রয়ে যাচ্ছে, আর প্রতিবার... প্রতিবার গাঁট্টা নেমে আসছে বৃষ্টির মত শতধারে। আরো ঘাবড়ে একেবারে থম মেরে যাচ্ছে টুকলু...
মিনিট কয়েক মেরে মেরে ওর ওপর হাতের সুখ করে নিল ওরা। ... খিঁক খিঁক খিঁক, মানব হাসে। ও ই এ দলের পান্ডা। সারাজীবনে বাবার ঠ্যাঙানি যতবার খেয়েছে সব ও উশুল করে নিচ্ছে হাতে চাঁটি মেরে মেরে।
টুকলুর চোখ ফেটে জল আসছে। কে যেন কে এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়, তার শ্রাদ্ধে এসেছে... আসতেই হবে , মা বাবা এসব বিষয়ে খুব পাট্টিকুলার ত! অথচ এদের ও চেনেই না। এই অচেনা ছেলেগুলো জ্যাঠতুতো খুড়োতুতো ভাই... সবাই সবাইকে চেনে... টুকলুর মা কেন যে টুকলুকে এখানে রেখে দিয়ে খেতে চলে গেল... ওদের সঙ্গে খেলতে বলে গেল... কোনদিন রস কষ সিঙাড়া বুলবুলি খেলেনি আগে টুকলু, নিয়ম জানেনা তাই... এখন হাতের পেছনে আঙুলের গাঁটগুলো জ্বলে যাচ্ছে। লাল হয়ে গিয়েছে...। ও মার খেয়ে যাচ্ছে... ও ক্যাবলা... বোকা... আনস্মার্ট... মাও ত সবসময়ে বলে এইসব... ওকে বলে মেনিমুখো তুই, বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারিস না? শত্রু এলে কী করবি তুই... আচ্ছা এরা কি তাহলে শত্রু!
হঠাৎ দাঁড়িয়ে উঠল টুকলু, আর নিতে পারল না এই অত্যাচার। তারপর মুখ লাল করে কোনমতে কান্না চেপে, মা ডাকছে, আমি যাচ্ছি বলে এক দৌড় দিল...
পালাচ্ছে টুকলু, সোজা ওই তিনতলা বাড়িটাতে ঢুকে গেছে। পেছনে হো হো হাসি... তিনটে ছেলে হেসে কুটিপাটি হচ্ছে... মুখ টিপে এতক্ষণ হাসছিল এবার বোমার মত ফেটে পড়েছে... কী জিনিস এটা , সত্যি... কেমন হাঁদার মত মার খাচ্ছিল... হাত সরিয়ে যে নিতে হয় চট্ করে সেটাও জানেনা ক্যাবলাটা।
৪
টুকলুর কী হয়েছিল কেউ দেখেনি। কিন্তু পরদিন , একে একে অতিথিরা যখন বিদায় নিচ্ছে, হঠাৎ সারাবাড়ি তোলপাড় হয়ে গেল। মালতীর সুখের দুধে সামান্য চোনা পড়ল। নন্দিনীর মাতৃমূর্তির ভেতর থেকে খড়্গহস্তা দেবীর উদবোধন হল... আর সেটার কারণ নন্দিনীর দুই কন্যার অভিযোগ।
এসব বড় বড় উৎসব অনুষ্ঠানে সারাবাড়ির নানা ঘরে জমাট বেঁধে আড্ডা বসে। এক ঘরে সব মেয়েরা, এক ঘরে পুরুষেরা... বেশির ভাগ বাড়িতে তাইই হয়, আর অন্য খানে, বাড়ির কোন প্রান্তিক অংশে বসে যায় বাচ্চাদের হাট। এবাড়ি অবশ্য বেশি আলোক প্রাপ্ত তাই বিকেলের চায়ের আসরে মেয়েদের আলাদা আড্ডা মাঝে মাঝে বসলেও, বসবার ঘরের আড্ডায় মালতীও থাকেন, আর মেয়ে বউমারাও অনাড়ষ্ট ভঙ্গিমায় আড্ডায় যোগ দেয় পুরুষদের সঙ্গেই। সঙ্গে থাকে কখনো মুড়ি সিঙাড়া কখনো বা চিঁড়ের পোলাও।
আজ কিছুটা ভাঙা হাট। বম্বেনিবাসী ফুলমামা চলে গেছে। টালিগঞ্জের মাসিরাও চলে গেছে। নেহাতই মৎস্যমুখী শনিবার পড়েছিল বলেই রবিবার দুপুর অব্দি থেকে গেছে অনেকে।
আর বেলা এগারোটার সময়েই ঘটে গেল সেই ঘটনা... পলি ছুটে এসে তাদের মা নন্দিনীর কানে কানে কিছু বলল। আর মলি এল কাঁদতে কাঁদতে, হাঁপাতে হাঁপাতে।
কী হয়েছে, মলি?
নন্দিনী সম্ভাব্য ঔদাসীন্যের ফলে ঘটে যাওয়া কোন দুর্ঘটনার কথা ভেবেই বোধ হয় আরেকটু হলেই বকতে যাচ্ছিল পলিকে... ছ বছরের ছোট বোনকে চোখে চোখে কেন রাখেনি। কিন্তু মলির পেছন পেছন দৌড়ে এল নন্দিনীর দুই দাদার দুই ছেলে... মলির সমান বয়সী ওরাও... কেউ ছয় ত কেউ সাত... সবাই এক সংগে উত্তেজিত। আর প্রত্যেকের মুখ লাল। হাঁপাচ্ছে।
পলি ডেকে নিয়ে এল তার সমবয়সী, নন্দিনীর বড়দার মেয়ে তুলিকে... দুজনে মুখ নিচু করে অপরাধী মুখ করে দাঁড়াল। ওদেরই দায়িত্ব ছিল ছোটদের দেখার। কিন্তু ইস্কুলে সদ্য শেখা কিছু অসভ্য কথার ব্যাখ্যা ওরা নিজেদের মধ্যে আদ্যন্ত গোপনীয়তায় করবে বলে ছাতে চলে গিয়েছিল। কিছুই জানত না।
আরে তোরা সবাই এরকম হাঁপাচ্ছিস কেন? কী হয়েছে বলবি ত?
নন্দিনী উত্তেজিত। মালতী তখুনি স্নান সেরে বেরিয়ে পুজোয় বসবেন, সাদাতে সরু লালপেড়ে গরদের কাপড়টি আলগা করে গায়ে জড়ানো...নন্দিনী দলবল সহ মাকে পাকড়াও করলেন। মালতীর পুজোয় বসা হল না।
বাচ্চারা ছেড়ে ছেড়ে ভেঙে ভেঙে যা বলে উঠতে পারল, তা এই রকম...
মানবদাদা...। বুলটুশদাদা। ওরা আমাদের ওপরে চেপেছিল।
কী? ওপরে চেপেছিল মানে?
আমরা ছোটরা মিলে ঘর অন্ধকার করে জলদস্যু জলদস্যু খেলছিলাম। হঠাৎ মানবদাদা আর বুলটুশদাদা ঢুকে বলল, আমরাও তোদের সঙ্গে খেলব।
তারপর?
তারপর বালিশ নিয়ে ওরা আমাদের অ্যাটাক করল। আমার ঘাড়ে বুলটুশদাদা বসেছিল। আর মানবদাদা পুটুর ঘাড়ে।
মানে! কী বলছিস কি!
আমাদের পিঠে বালিশ চেপে বসল। পা দিয়ে আটকে ছিল, আমার গলার ওপর পা দিয়েছিল আমি নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মাথাটা হাত দিয়ে চেপে রেখেছিল...
মিনিট দশেকের মধ্যে সারাবাড়ি একটা শোরগোলের বাতাস বয়ে গেল...। অন্যথা এ ত ঝিমিয়ে পড়া উৎসব বাড়ি। উৎসবের পরের দিন অনেকটাই ছত্রভঙ্গ। তবু, দুপুরের রান্না হচ্ছে, এ বেলা খেয়ে তবে সবাই বেরুবে যার যার বাড়ির উদ্দেশে।
প্রথম শোরগোলের আওয়াজ পেলেন মানবের বাবা মা, এ বাড়ির মাথা পীতাম্বরের জেঠতুতো বড়দার ছেলে, প্রদীপ আর প্রদীপের স্ত্রী। তখন ওরা লাস্ট মিনিটের ব্যাগ গুছোচ্ছেন, খেয়ে উঠেই ফিরবেন। হৃদয়পুরের দিকে থাকেন। শেয়ালদা স্টেশন গিয়ে ট্রেন ধরবেন।
ছেলের কথা পল্লবিত হয়েই হয়ত এল তার কাছে কিন্তু কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে থাকল প্রদীপ... তার কণ্ঠার হাড় দপদপ করে ওঠানামা করল... রোগা, আদ্ধেক শিরা বেরিয়ে ওঠা মুঠি দুবার জোরে মুঠো করল সে... এই ছেলেকে ত পিটিয়েও সিধে করা যাচ্ছে না। প্রদীপের স্ত্রী পুত্রের আরেক প্রস্থ শাসনের ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেল... কিন্তু কুকীর্তিটা পুত্র ঘটিয়েছে তাদের শ্রদ্ধেয় কাকার বাড়িতে, বাড়িশুদ্ধ আত্মীয়কুটুমের সামনে তার স্বামীর মাথা হেঁট হয়ে গেল... প্রদীপের এই অপমানটাও তাকে বিদ্ধ করল চকিতে...
তারপর চিৎকার, চড় থাপ্পর। চারতলার ছাতে তুলে নিয়ে গিয়ে বুলটুশকে চার ঘা দিল বুলটুশের বাবা... আর তেতলার ফাঁকা একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে প্রদীপ উত্তম মধ্যম দিল তার ছেলেকে...। বাইরে থেকে শোনা গেল তার হুংকার ও আস্ফালন, বেইমান, কুত্তা, দুধ কলা দিয়া কালসাপ পুষতাসি অ্যাদ্দিন... এমন ত্যাঁড়াঘেঁটি এই পোলা দ্যাখ, দ্যাখ বিমলা... অ্যারে মাইর্যাও তুমি কিসু করতে পারবা না।
সব শেষে থমথমে মুখে বেরিয়ে, কাঁধে ব্যাগ তুলে নিয়ে, চোখ নামানো স্ত্রী আর ঘাড় বেঁকানো ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে গেল প্রদীপ। দুপুরের খাওয়ার প্রসঙ্গ কেউ তুলল না আর। "খুড়িমা, এলাম" বলে মালতীকে প্রণাম করে তারা চলে গেল সেবাড়ি ছেড়ে।
খুড়িমা, মালতী স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলেন। শিউরে উঠেছেন এই ভয়ংকর কাণ্ড দেখে। "ও ছেলে ত একদিন ফাঁসি যাবে, মানুষ খুন করতে পারে ও ছেলে। আর কোনদিন মা তুমি ওদের ডাকবে না এখানে..."... নন্দিনী তখনো কাঁপছে... ছোট মেয়েটাকে কোলে মধ্যে চেপে রেখেছে।
মালতীর পুজো মাথায় উঠল। বুলটুশকে নিদারুণ পিটুনি দেবার পর সমবেত ভাইবোনদের মধ্যে এসে ভ্রুকুঞ্চিত অবিনাশ বসলেন। মায়ের প্রিয় পুত্র অবিনাশ... স্ত্রী মারা গেছেন তাঁর... "ছেলেটা অমানুষ হয়ে গেল, মা!" বলে চুপ করে রইলেন তিনি।
রবিবার দুপুরের বোরোলিনের সংসারের জিঙ্গল তখন ইনিয়ে বিনিয়ে বাজছে পাশের বাড়ির রেডিওগুলো থেকে... হাওয়ায় ভাসছে চাঁপাফুলের সুগন্ধের মত শ্রাবন্তী মজুমদারের কণ্ঠ... ঠাকুরের রান্না শুক্তো আর ছানার ডালনার, মাছের ঝোলের ঘ্রাণ... কিন্তু এবাড়ির শিশুরা তখনো ফোঁপাচ্ছে... বড়রা গুম হয়ে রয়েছে... এতবড় সম্মানিত, শিক্ষিত, আলোকপ্রাপ্ত বাড়ির কিশোর সদস্যেরা এত বড় একটা নৃশংসতার কাণ্ড করেছে, কেউ মানতে পারছে না।
মালতী কেবল তাকিয়ে দেখেন ওদের... চিরদিন সহ্য আর ধৈর্য এই দুই জিনিস নিয়ে তিনি চলেছেন। আজো মেজাজ এতটুকু খারাপ করেন নি মালতী। শুধু ভেবেছেন, হে ঠাকুর, আরো কত দেখতে হবে... দেশভাগ, অসুখ বিসুখ, ঘর ছেড়ে এসে নতুন করে বার বার সংসার পাতা... মৃত্যু... বিচ্ছেদ... সব সহ্য করেছেন... আজ এই কান্ডেও বয়সোচিত দুর্বার ডানপিটেমিই দেখলেন তিনি... ওরা কেউ ত আর দুর্বৃত্ত নয়।
বড় বড় অনুষ্ঠানে এমন কত কীই ত ঘটে। আবার আরেকটা অনুষ্ঠানে ওরা সবাই আসবে... আবার সবাই এক সঙ্গে বসবে। খেলবে। আনন্দ করবে।
গঙ্গার বুকে জল গড়িয়ে যাবে... ওরা একদিন বড় হয়ে যাবে। ভদ্র, সুসভ্য নাগরিক হবে এই দেশের... পুরুষ মানুষ বলে কথা... কঠোর জীবন সংগ্রামে ব্রতী হবে একদিন। মালতী জানেন, তিনি তখন আর থাকবেন না তা দেখতে।
সবাই চলে যাবার পর বাড়ি খালি হয়ে যায়। অবিনাশ , ও তো ছোটবেলায় পীতাম্বরের হাতে কম মার খায়নি... মার খেতে খেতে তবেই না পুরুষমানুষ হয়েছে। জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েছে... এই পৃথিবীতে জোর যার মুলুক তার... এই ত হয়েছে, এই ত হবে চিরটাকাল...
মালতী দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলেন...পলি মলিকে নিজের কাছে টেনে নেন... তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন... চুপ হয়ে থাকেন।
৫
নিজেদের বাড়িতে সেদিন ভূগোল বইয়ের তলায় নিজের গল্পের বইয়ের ওপর ঝুঁকে পড়েছে টুকলু। নিজের আঙুলগুলো দেখছে। আঙুলের পেছনের গাঁটগুলো এখনো লাল, ব্যথা করে। মাকে বলেনি সে এসব লজ্জার কথা। বললে মায়ের কাছে আরো গঞ্জনা ছাড়া কিছুই জুটত না হয়ত বা। বোরোলিন লাগিয়ে দিত, কিন্তু অপদার্থ বলতে ছাড়ত না।
মা রান্নাঘর থেকে চিৎকার করে বলে, টুকলু, ভুতুকে খেতে দিয়ে আয়... খুব চেঁচাচ্ছে বাইরে...
টুকলুর একটুও ইচ্ছে করেনা পড়া ফেলে উঠতে। চাঁদের পাহাড় বইটার একটা এমন জায়গায় আছে ও। এখন এ বই ছেড়ে যাওয়া যায় নাকি? ধুত। মা যে কী না!
বাবা ঠিকই বলে, মায়ের তাড়নপীড়নেই নাকি বাবার জীবন ফালাফালা হয়ে গেছে। আসলে টুকলুরও গেছে। টুকলু জানত না এতদিন। এখন জানে। একটা ভয়ানক রাগ তার ভেতর ফুঁড়ে উঠে আসে... হঠাৎ তার মনে হয় সবকিছু ধ্বংস করে দিতে হবে... চারপাশে যা কিছু আছে। সময়ে খেয়ে সময়ে পড়াশুনো করে... ঠিক সময়ে ঘুমিয়ে... মায়ের বকুনির ভয় পেয়ে থুতুবুতু হয়ে সে থাকবে না আর... এবার সে তছনছ করে দেবে সব কিছু।
ভুতুর ভাতের বাটিটা নিয়ে সে গেটের কাছে যায়। গেটের বাইরে বাঁধা ভুতুকুকুরের ল্যাজ তাকে দেখেই টিকটিক করে নড়ে ওঠে।
ভুতুকে দেখেও টুকলুর কেমন রাগ হয়... আর তখুনি সে আদর করে প্রতিদিনের মত ভাতের বাটিটা তার সামনে না নামিয়ে রেখে বাটিটা সিঁড়ির ওপরে ছুঁড়ে দেয়। ঠনঠন ঝনঝন করে বাটিটা পড়ে যায়। ভাতগুলো ছিটকে ওঠে।
টুকলুর ইচ্ছে করে সে এক লাথি মারে ভুতুকে। ইচ্ছে করলেই মারা যায়... আর মারলেই সে তার ভেতরের আগ্নেয়গিরিকে শান্ত করতে পারবে...তার ভেতরে আরেকজন পুরুষমানুষের জন্ম হবে। যেমন ওই মানবদাদা বা বুলটুশদাদারা... ওরা সফল, সে হেরো... ওরা সাহসী, সে ভীতু... ভুতুর মত দুর্বল, চারপেয়ে পুষ্যির ক্যাঁকালে কোঁৎ করে এক লাথি মারলেই দারুণ আনন্দ পাবে টুকলু... চূড়ান্ত সুখ হবে তার... ও সমান হয়ে যাবে ওবাড়ির ওই দাদাগুলোর সঙ্গে...
মা ছুটে আসে বাটি পড়ে যাওয়ার ঠনঠন শুনে... কী হল, কী হল, এ কী! সব ভাত ফেলে ছড়ালি! তুই একটা অপদার্থ টুকলু।
টুকলু শুধু বলে, হাতটা ফস্কে গেল। তারপর উল্টো দিকে ঘুরে, ঘরে ফিরে যায়। লাথি মারা হয় না। তবে জমে থাকে ইচ্ছেটা। পরে কোনদিন বেরিয়ে আসবে বলে।
খুব সুন্দর গল্প
চমৎকার গল্প।
সুন্দর
এইভাবেই তো হয় ! এই অবদমনগুলো জমতে জমতে। প্রত্যেকের মন সমান গুরুত্ব পেয়েছে লেখকের কলমে। তাইতে মনস্তাত্ত্বিক ভাবে এতো সফল এই গল্প।
এক নিঃশ্বাসে পড়লাম।. আবার পড়লাম ।.আবার পড়লাম।. খুব সুন্দর ।..অপেক্ষায় রইলাম পরের কিস্তির ...
ভাল লেগেছে।
দারুন লাগল
স্মুথ লেখা। শুধু "অলিখিত সংবিধানে লেখা" আছে এতেই হোঁচট খেয়েছি।
সব পাঠক কে কুর্নিশ।
প্রতিভাদি, ভালবাসা কমেন্টের জন্য। অলিখিত সংবিধানের ব্যাপারটা তে, হেঁ হেঁ... স্যরি
যশোধরার পুরুষমানুষ তৈরির গল্প ভালো লাগল।
ভালো গল্প।পুরোন দিনের ভালো মন্দ মেশানো স্মৃতি ।
ভালো লাগল
স্বীকার করি, পুরুষেরা এভাবেই তৈরি হয়।
টুকলুকে দিয়ে যেন ফেলে আসা নিজের শৈশবটুকু এক নজরে রিকল করে নিলাম। অসাধারণ লেখনি।
ঢাকা থেকে অভিনন্দন ও শুভ কামনা
গল্পটা আগে মিস করে গেছিলাম। গল্পটার এতগুলো পরত, এত ডিটেল - এরকমটা নয় যে এক পাঠেই গল্পের পুরো পরিসর ধরা যাবে। সত্তর-আশির সময়-কাল-অবস্থান অসম্ভব ভাল ধরেছে। পড়লেই মনে হয়, আরে তাই তো, এরকমই তো হত। যশোধরাদির লেখায় মনস্তত্ব ছোঁয়া লেখায় যে পরত তৈরি করে, লেখাটা অনেকক্ষণ লিঙ্গার করে। এ লেখাও করছে।
চাকরির প্রথমদিকে অ্যামেরিকান বসের সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনা হচ্ছিল, হাইস্কুল কলেজের। বলছিলাম আমাদের সমাজে ছেলেমেয়েদের মেলামেশার দৌড। শারীরিক কোনরকম ঘনিষ্টতা বিরাট ট্যাবু। শুনে জন বলেছিল, বাট আই ডোন্ট থিংক হরমোনস ক্যান ওয়েট দ্যাট লং, নর ইফ দ্যাট ইজ হেলদি। যশোধরাদির গল্প পড়ে পঁচিশ বছর পরে এটা মনে পড়ল।
খুব সুন্দর লিখেছেন। একদম আমাদের ছোটবেলায় এরকমই হত। কত দিন পরে এই রস কষ সিঙাড়া বুলবুলি মস্তক খেলাটার নাম শুনলাম। এহ খেলাটা ছোটবেলায় প্রচুর খেলেছি এইং ঠিক লেখার মত একজনকে টার্গেট বানানো হত।
যে কোন অনুষ্ঠান বাড়িতেই সে শ্রাদ্ধই হোক বা বিয়ে পৈতেই হোক এরকম আত্মীয় স্বজনের আগমান হত আর হৈ হৈ হোত। তারপর ভাঙা হাট। এখনো এইসব স্মৃতি রোমন্থন করে চলেছি।
ধন্যবাদ এই সুন্দর লেখাটি উপহার দেবার জন্য
অনেক পড়ে পড়লাম। যশোধরা র গদ্য ও খুব সাবলীল। মনের ভিতরের গল্প লিখেছে।আমাদের মনের গভীরে ও গেছে এই সন্দর্ভ।