এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো  ইদের কড়চা

  • বিমলানন্দের বাড়ি

    অনিন্দিতা গোস্বামী
    গপ্পো | ০৭ মে ২০২৩ | ১৪৪৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ইদের কড়চা | বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় | সুতনু হালদার | ষষ্ঠ পাণ্ডব | আনোয়ার সাদাত শিমুল | শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় | উপল মুখোপাধ্যায় | মোঃ আব্দুল উকিল | দীপ্তেন | সোমনাথ রায় | ফরিদা | মোহাম্মদ কাজী মামুন | সুদীপ্ত গাঙ্গুলী | কৌশিক বাজারী | সুকান্ত ঘোষ | এস এস অরুন্ধতী | মণিশংকর বিশ্বাস | তনুজ | অরিত্র চ্যাটার্জি | তারেক নূরুল হাসান | স্বাতী ভট্টাচার্য | সৈয়দ কওসর জামাল | তন্ময় ভট্টাচার্য | দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় | পার্থজিৎ চন্দ | অত্রি ভট্টাচার্য | অর্ণব সাহা | চিরশ্রী দেবনাথ | শেখরনাথ মুখোপাধ্যায় | ইমানুল হক | একক | অনিন্দিতা গোস্বামী | নিরমাল্লো | দেবনাথ সুকান্ত | বেবী সাউ | অনুরাধা কুন্ডা | দোলনচাঁপা চক্রবর্তী | সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
    ছবি - ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক


    শুকনো লংকা তেলের ওপর দুবার নাড়াচাড়া করে নিয়ে সামান্য পাঁচফোড়ন কড়াইয়ে দিল ললনা। তারপর পাশে জিরিজিরি করে কেটে রাখা পেঁয়াজ। গ্যাসের ফ্লেমটা কমিয়ে হালকা লাল করে করে ভেজে নিতে হবে এগুলোকে। সুন্দর নাম এই রঙটার, গোল্ডেন ব্রাউন। মনটা উশখুশ করছে তার। ফ্লেমটা একটু বেড়িয়ে দিল। আবার পুড়ে গেলে চলবে না। পেঁয়াজ পুড়ে গেলে তিতকুটে লাগে। এবার সেদ্ধ করে রাখা মুসুর ডাল ঢেলে দিল কড়াইয়ে। নুন দিল, হলুদ দিল, ক'টা কাঁচা লংকা ফেলে দিল ওপরে। ডাল ফুটছে। সময় লাগবে। তোয়ালেয় হাত মুছে বারান্দায় এলো সে। ভুরু কুঁচকে দেখল উল্টো দিকের বাড়িটার দরজায় এখনো তালা ঝুলছে। বেশ বড় তালা। দুপুরের রোদে চকচক করছে। কী কোম্পানির তালা সেটা এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে না। তবে কী হোলটা বেশ স্পষ্ট। দেখলো বাগানের ঝোপে কতগুলো জবা আর বিদেশি কল্কে ফুল ফুটে আছে। দু'চারটে হলুদ সবুজ পাতাবাহার। জল দেওয়া হয়নি কদিন। কিছুটা মরা মরা। ফনফনে ঝাঁকড়া ব্যাপারটা নেই। চাতালের ওপর পড়ে আছে খড়কুটো। ফিরে গেল ললনা। হাতা করে উঠিয়ে দু ফোঁটা ডাল বাঁ হাতের তালুতে ফেলে জিভ দিয়ে চেটে দেখে নিল। হুম। ঠিকঠাক। নুন, ঝাল, সব। পাশের কল থেকে হাত ধুয়ে গ্যাস অফ করে সাঁড়াশি দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে কড়াইটা নামালো। তারপর হাতা দিয়ে তুলে তা কাঁচের বাটিতে ঢেলে টেবিলে রেখে এলো। আর কড়াইটা সামান্য জল দিয়ে ধুয়ে নিচে নামিয়ে দিল মাজতে।

    গ্যাসের টেবিল মুছে রান্না ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়ে সে বেডরুমে এলো। বেশ গরম। ফ্যান চালিয়ে খবরের কাগজ খুলে বসল। খবর তো সেই একই। আগের দিন সন্ধ্যেবেলাতেই সব দেখা হয়ে যায়। তাই সে বিজ্ঞাপনগুলো দেখে। কোথায় কী ছাড় দিচ্ছে। জম্মকালেও সে এইসব দেখে কিছু কিনতে যায় না। কিন্তু ছাড়ের গল্পটা এরা কতটা রঙদার করে বলতে পারছে সেটা সে দেখে। আর পড়ে সম্পাদকীয় পাতা। অবশ্য সেটাও সবসময় পড়া হয়না। হেডলাইন গুলো পড়ে। কখনো বিনোদনের পাতা ওল্টায়। এইসব আর কি। পটলভাজা আর মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে অফিস চলে গিয়েছে নদু। ভাত ছিল কিছুটা ফ্রিজে, সেটা গরম করে দিয়েছিল। ও বেরিয়ে গেলে ভাত আর ডালটুকু সে করে নিল। ভাতটা হতে বেশ সময় লাগে বলে সে প্রতিদিনই সকালের ভাতটা আগের দিন করে রেখে দেয়। ওর অফিসে বেরনোর আগে যাতে হুটোপুটি না লাগে তাই। অত তাড়াহুড়ো করে কাজ করতে সে পারে না কখনো। শাশুড়ি থাকতে ঢিলে বলে গঞ্জনা কম শুনতে হয়নি তাকে। তা গঞ্জনার আর কে তোয়াক্কা করে। ওসব সে আঁচল উপুড় করে অঞ্জনা নদীতে ফেলে দেয়। আচ্ছা দুদিন ধরে দরজার তালা খুলছে না কেন কেউ? মনে হয় মিয়া বিবি কোথাও বেড়াতে গিয়েছে। ইস কতদিন তারা কোথাও বেড়াতে যায় না। টুবলুর পরীক্ষার হুজ্জুতি বেড়ে গিয়ে থেকে তাদের সবকিছু ডকে উঠেছে। না ওঠে নি। নেমেছে। উঠলে তো ভোঁ দিত। তারপর ভটভট করে ছাড়ত জাহাজ। জল ছিটকে উঠত দুদিকে ফোয়ারার মতো। টুবলু তার পিঠের ওপর দিয়ে ঝুলে পড়ত জলের দিকে, বলত মা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
    সে রূপকথার মতো ঘাড় ঘুরিয়ে বলত, সাত সমুদ্দুর তের নদীর পার।
    টুবলু আঙুল দেখিয়ে বলত, সে কি ওই দিকে?
    ঘাড় নাড়ত সে, হুম।
    আমরা কতদিনে পোঁছব?
    তুই কতদিনে পৌঁছতে চাস?
    অনেক অনেক পরে মা। তাহলে অনেক দিন সমুদ্রে ভেসে থাকা যাবে।
    সে বলে, হুম, বটে! তাহলে অনেক দিন আর ইশকুলে যেতে হবে না। অনেক দিন আর পড়াশোনা করতে হবে না।
    ঠিক, ঠিক। মা কী মজা হবে।

    ইস, টুবলুটা খুব দ্রুত বড় হয়ে যাচ্ছে। ক্লাস ইলেভেন হয়ে গেল। তবু সে তার বয়সী বাচ্চাদের থেকে একটু ছেলেমানুষ। সে উঠে আবার বারান্দায় গেল। ফুলগাছগুলো অল্প অল্প দুলছে। বাড়িটার দেওয়ালে নতুন রঙ। এখানে সবাই এতো চুপচাপ। কান পাতলে শব্দ অনেক দূর থেকে শোনা যায়। ওদের ছেলে দূরে চাকরি করে। আর আগেও হস্টেলে থাকত। তাদেরই মতো। টুবলুকে যখন হস্টেলে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো তখন ললনার প্রথমে এই বাড়িটার ছবিই মনে এসেছিল। তবে মনে এলেও সে খুব একটা কথা বলে না। কারণ এতোদিন ধরে নদু তাকে এটুকু বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে সে যা ভাবে তা বিলকুল ভুল। সে বোঝে এখন এসব। বোঝে সে বি কুল। নাহলে বিপদ আছে। পৃথিবীর উষ্ণায়ন প্রতিরোধে ইহাই একমাত্র উপায়। বাস্তব বুদ্ধি জাগ্রত কর। বাড়িটার দিকে তাকালেই মন ভালো হয়ে যাবে। কী সুন্দর বাগান। তার ইচ্ছে করলো মগে করে বাড়িটার দিকে কিছুটা জল ছুড়ে দেয়। কিম্বা যদি লম্বা একটা পাইপ থাকত, রাস্তা পেরিয়ে চলে যেত। সে কেবল কলের মুখে পাইপটা লাগিয়ে কল খুলে দিত। গড়িয়ে গড়িয়ে জল ভিজিয়ে দিত পুরোটা মাটি।

    সে খেয়ে নিল। ভাত, ডাল, পটলভাজা। জল খেল। ঢকঢক। ঠক করে কাচের টেবিলের ওপর রাখল গ্লাস। বিছানায় এসে গড়ালো একবার এদিক, একবার ওদিক। পর্দায় ফাঁক দিয়ে বিকেল হচ্ছিল। তন্দ্রা। ঘোর ঘোর সন্ধ্যায় ঝাউগাছ দুলছে। ঢোলকলমির ফুল তন্দ্রায় দুলছে। ঘুম আসছে আর চলে যাচ্ছে, আবার আসছে। ট্রাংক, অনেক ট্রাংক ঘষে ঘষে, টেনে টেনে সরাচ্ছে কেউ। ভারী ট্রাংক সরাচ্ছে কেউ।

    ঠিক করলো যাবে সে একবার। বাড়িটায় গিয়ে দেখে আসবে উঁকিঝুঁকি দিয়ে। আলোও জ্বলছে মনে হয় কোথাও। নেমে গেল সে। গ্রিল গেটের আংটা খুলে ভেতরে ঢুকল। এদিকে ওদিকে তাকালো। সব বন্ধ। তালাটা চকচক করছে। কাঁচের জানলা দিয়ে আলো আসছে ভেতর থেকে। সে হাতে তুলে দেখল তালাটা বেশ ভারী। তারপর দরজায় কান পাতল। প্রথমটায় কিছু শুনতে না পেলেও কিছুক্ষণ পরে শুনল তকমক, কচতক, মচতক, তকমক একটা একটা শব্দ আসছে। কীসের শব্দ এটা? পুরনো টাইপ রাইটার? কিন্তু দরজায় তো বাইরে থেকে তালা লাগানো। ভেতরে কেউ কি আছে? তার গা ছমছম করে উঠল। ঠিক করলো পরদিন সকাল বেলা আসবে। সে একবার তালাটার দিকে তাকালো। হ্যাঁ, স্টিলের তালাটা, বেশ ঝকঝকে।
    পরদিনও সে রান্না করলো। ভাত, ডাল, বেগুন ভাজা আর পুঁটিমাছের ঝাল। যেমন করে রাঁধে। কমন পদ্ধতি। সরু সরু লম্বা লম্বা করে আলু কেটে পেঁয়াজ আর কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে। একটু জিরেগুঁড়ো দিয়েছিল। সামান্য। কাঁচালংকা চিরে দিয়েছিল। নদু মাছগুলো এনেছিল খুব টাটকা। জিরেগুঁড়ো না দিলেও চলত। কিন্তু বেশি সাদামাটা নদুর মুখে রোচে না। আর সরষে বাটা আবার তার সহ্য হয়না।

    নদু বেরিয়ে গেলে সে স্নান সেরে ছোট্ট একটা জলের বোতল হাতে করে বাগানে নামল। দেখলো রাস্তা দিয়ে টোটো রিক্সা, লোকজন। দুপুর না গড়ালে যাওয়া যাবে না। বোতলের জল গাছের গোড়ায় ঢেলে দিয়ে সে উঠে এলো এবং রোজকার মতো কাজকম্ম সারলো। তালা থেকে ছিটকে আলো এসে লাগছিল ললনার চোখে। সে নিজের ঘরের পর্দা টেনে দিল। তালাটা বড়, তবে এতো বড়ও নয় যে সে আলো ছিটকে এতোদূর আসবে। কিন্তু হচ্ছে তেমনই। আজকাল কী থেকে যে কী হয় টের পাওয়া যায় না। আর কী হচ্ছে না হচ্ছে তা নিয়ে অত মাথা ব্যথা করার সময়ও নেই কারো। নেহাত তার কোনো কাজ নেই। টুবলু হস্টেলে চলে গিয়ে থেকে আরও অবসর। সে ফের নামল। রাস্তা পেরিয়ে ঢুকল সেই বাড়িটায়। সাদা ফলকের ওপর লেখা প্রফেসর বিমলানন্দ রায়। সে বাগানের কল থেকে জল নিয়ে একটু একটু করে গাছগুলোয় জল দিল। তারপর আবার দরজায় কান রাখল। অবিকল গতকালকের মতো শব্দ। তকমক, কচতক। সে বোঝার চেষ্টা করলো, নাহ, টাইপরাইটার তো নয়। কীসের শব্দ? খাবার চিবানোর শব্দ কি? হ্যাঁ। তা-ই তো মনে হচ্ছে। দুটো মানুষ যেন কিছু খাচ্ছে। ফাঁকা ঘরে প্রতিধ্বনিত হয়ে তা বিকট আকার নিচ্ছে। দেওয়ালে দেওয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে সেই শব্দ। জল খাওয়ার শব্দ। জলের গ্লাস ঠক করে টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখার শব্দ। সে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ডাকল, প্রফেসর রায়! মিসেস রায়! শুনছেন? বাড়িতে কেউ আছেন? তারপর বন্ধ তালাটা ঠকঠক করে দু'বার ঠুকলো সে দরজার ওপর। কোন সাড়াশব্দ পেল না। কেবল সেই এক শব্দের ওঠা নাম। যেন চোয়াল, দাঁতের মাড়ি, জিভ, লালা আর পিষন যন্ত্রের অদ্ভুত ককটেল। চর্বিত চর্বন।

    সে ফিরে এলো নিজের ঘরে। রাতে খেতে বসল ওরা দুজনে খাওয়ার টেবিলে, মুখোমুখি। ভাত খেতে লাগলো। ডাল, এবেলা আলুর ভর্তা আর সকালের রান্না করা সেই পুঁটিমাছের ঝাল। তকমক, কচতক।

    চমকে তাকালো সে নদুর দিকে। মনোযোগ দিয়ে তৃপ্তি করে ভাত মাখছে নদু। সে খাওয়া থামিয়ে তাকিয়ে রইলো নদুর দিকে। চিবোচ্ছে। চিবোচ্ছে নদু। শব্দ হচ্ছে। মৃদু। এবার সে-ও চিবোতে আরম্ভ করলো। হ্যাঁ টিউনে মিলেছে। অবিকল।

    কিন্তু মুশকিল হলো সে চিবোলো বটে কিন্তু তার আর গিলতে ইচ্ছে করলো না। ক্রমবর্ধমান শব্দের সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ থেকে সব খাবার বেরিয়ে আসতে চাইল। সে সামনের বাটিতে ফেলতে লাগলো সব ছিবড়ের মতো। নদু লক্ষ্য করলো না। এই একটা সুবিধা আছে। একহাত দূরে বসে সে কি করলো না করলো নদু লক্ষ্য করে না। সে খুব মন দিয়ে খায়। খায় খুব বেশি না। সামান্যই। কিন্তু খুব মনোযোগ দিয়ে। নদুর ছোটবেলায় ওদের বাড়িতে একটা গরু ছিল। ওর মা নাদা ভরে খড়বিচালি মেখে দিত তাকে। আর সে খুব চমৎকার দুধ দিত। ছোট্ট নদুর সেই দুধ খেয়ে একটা নাদুসনুদুস ভুড়ি হয়েছিল। তাই দেখে তার ঠাকুরমা তাকে অমন নাম দিয়েছিল। এসব সে তার শাশুড়ির কাছে শুনেছে। তার শাশুড়িমা গর্ব করে বলতেন তা শুধু ভুড়ি তো আর হয়নি আমার নদুর, বুদ্ধিটাও হয়েছিল ওই খাঁটি দুধের মতোই। মিথ্যে বলবে না এই নিয়ে ললনারও মনে মনে কিঞ্চিৎ গর্ব আছে। ব্যাংকে নদু নাকি সবচেয়ে দ্রুত টাকা গোনে। ফররর করে টাকার বান্ডিলে যখন আঙুল চালায় সে শব্দে নাকি ঝোড়ো স্ট্যান্ড ফ্যানও ফেল। কিন্তু নদু আর সে খেতে বসলে এমন শব্দটা সে আগে কখনো শোনে নি। সারাদিন অফিসে কাজ কম্ম করে ফিরে রাতে দুটো ভাত খেতে বসে এইসব অবান্তর কথা নদুর শুনতে ভালো লাগবে না সে জানে। তাই সে চুপচাপ উঠে চলে যায়। এবং দূর থেকে সে নদুকে লক্ষ্য করতে থাকে। দেখে হ্যাঁ ঠিক সময় মেপে উঠে আসছে তার চোয়াল নিচ থেকে উপরে। সে কিছু বলে না। শুয়ে পড়ে। পরদিন সকালে সে দেখে নদু ঠিক এক রকম ভাবে স্নান সেরে এসে গামছা দিয়ে চুল মুছছে। তারপর খুব তাড়াতাড়ি, দু'বার ঝাঁকিয়ে নিয়ে বারান্দায় দড়িতে মেলে দিচ্ছে গামছে। ঠিক ডান দিকে নির্দিষ্ট অ্যাঙ্গেলে কাত করে চুল আঁচড়াচ্ছে। ললনা জানে ছড়িয়ে হাতের বুড়ো আঙুল নদুর কাঁধে ঠেকালে তা এক বিঘত। নদু ভাত মাখছে, সাপটে ডান দিক থেকে বুড়ো আঙুলের নিচে উঁচু হয়ে ওঠা অংশটুকু দিয়ে ঠেলে। নেমে যাচ্ছে নদু সিড়ি দিয়ে। হেলমেট এবার থামের মাথায় ঝুলিয়ে রেখে জুতা পরবে। ললনা আর দাঁড়ালো না। উঠে এলো ওপরে।

    সে ঠিক করলো আজ বিকেলে সে বাজারে যাবে। একঘেয়ে থোর বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোর। বিরক্ত লাগছে তার। ব্যাগ হাতে নিয়ে সে বেরল বাজারে। প্রচুর লোক। নিচু হয়ে টিপে টিপে দেখছে পটল, বেগুন, কাঁচকলা, মোচা, এখন সবসময় সবকিছু পাওয়া যায়, শুটকো বাঁধাকপি, ছ্যাৎড়ানো ফুলকপি। বাঁধানো চালায় আলু, পেঁয়াজ, রসুন, পুরনো ওল। লংকা, আদা। লোকে বাজারের ব্যাগ ফাঁক করে ধরছে দোকানীর সামনে। প্রত্যেকের ব্যাগের দু'হাতলের মধ্যের মাপ এক। বিক্রেতা দাঁড়িপাল্লার ঝুঁটি বাঁ হাতে উঁচু করে দেখাচ্ছে ক্রেতাকে। হাত উঁচু করার আগে চোখে বেঁধে নিচ্ছে কালো ফেট্টি। তারপর এক অ্যাঙ্গেলে পাল্লা কাত ঢেলে দিচ্ছে ব্যাগে। ব্যস্তসমস্ত হয়ে কেউ এগিয়ে যাচ্ছে এদিক, কেউ বা ওদিক। প্রত্যেকের ডান হাত এগোচ্ছে আগে, পরে বাম হাত। প্রত্যেকের বাম পা এগোচ্ছে আগে পরে ডান পা। পায়ের ফাঁক অথবা হাতের এগোনো পিছনোর মোটামুটি তিনটি ভাগ। লম্বা, মাঝারি, বেঁটে। একটা গুঞ্জন। প্রায় সেই শব্দটার মতো ধীরে ধীরে জোরালো হচ্ছে। তকমক কচমচ। খসখস, ঘসঘস। ভারী দুপাটি দাঁত ওঠানামার মতো।

    সে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলো বাজার থেকে। এক টানা ওই শব্দ শুনতে শুনতে তার গা বমি লাগছে। মাথা ঘুরছে। বাজারের ব্যাগটা কোন রকমে বাড়িতে নামিয়ে সে ঠিক করলো দৌড়তে যাবে। জগিং শুরু করলো সে রাস্তা দিয়ে। ঘরে বসে থেকে থেকে তার কান, মাথা, পেট সবই ভারী হয়ে উঠছে।

    ঠক করে একটা শব্দ হলো। যেন কাঁচের টেবিলের ওপর কেউ রাখল ধাতব গেলাস। সে তাড়া খাওয়া মানুষের মতো সাইসাই করে চক্কর দিতে লাগলো মস্ত বড় ফুটবল খেলার মাঠ। তার মাথার মধ্যে জগঝম্পের মতো বাজছিল খোল করতাল সহ অসংখ্য শব্দের খিঁচুড়ি। ফিউশন। ফিউশন। একটানা অবিশ্রান্ত মনোটনাস সুর, তাল, লয়, ছন্দ থেকে মুক্তির এক জান্তব চিৎকার।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    ইদের কড়চা | বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় | সুতনু হালদার | ষষ্ঠ পাণ্ডব | আনোয়ার সাদাত শিমুল | শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় | উপল মুখোপাধ্যায় | মোঃ আব্দুল উকিল | দীপ্তেন | সোমনাথ রায় | ফরিদা | মোহাম্মদ কাজী মামুন | সুদীপ্ত গাঙ্গুলী | কৌশিক বাজারী | সুকান্ত ঘোষ | এস এস অরুন্ধতী | মণিশংকর বিশ্বাস | তনুজ | অরিত্র চ্যাটার্জি | তারেক নূরুল হাসান | স্বাতী ভট্টাচার্য | সৈয়দ কওসর জামাল | তন্ময় ভট্টাচার্য | দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় | পার্থজিৎ চন্দ | অত্রি ভট্টাচার্য | অর্ণব সাহা | চিরশ্রী দেবনাথ | শেখরনাথ মুখোপাধ্যায় | ইমানুল হক | একক | অনিন্দিতা গোস্বামী | নিরমাল্লো | দেবনাথ সুকান্ত | বেবী সাউ | অনুরাধা কুন্ডা | দোলনচাঁপা চক্রবর্তী | সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
  • গপ্পো | ০৭ মে ২০২৩ | ১৪৪৬ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ঘন্টাঘর - একক
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীমু | 182.69.***.*** | ০৭ মে ২০২৩ ১৩:২১519503
  • yes 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন