নানা পণ্ডিতের নানা মত, তাও মোটামুটিভাবে বহুজন গ্রাহ্য টাইম লাইনটা এরকম-
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ, যদি সত্যি ঘটে থাকে, মানে একটা বড় রকমের যুদ্ধ, তবে সেটি হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব নবম শতকে (কম বেশি একশো বছর)। এবং মহাভারতের আদি রচনাকাল শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে। প্রথমে ছিল জয় নামে এক নেহাতই যুদ্ধ কাহিনী, পরে নানান ধর্ম ও উপনিষদের সংস্পর্শে এসে একটা মহাকাব্যের রূপ নেয় খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকের আগেই। এটি দ্বিতীয় পর্যায়, যেখানে যুদ্ধ বিবরণীর সাথে যোগ হয়েছিলো নানান উপকথার। প্রায় এক পুরাণের মতন।
এই শ-তিনেক বছর ধরে সংযোজিত দ্বিতীয় পর্বের পরে আসে তৃতীয় পর্ব, যাকে বলা হয় ব্রাহ্মণ্য সংযোজন। গুপ্তযুগের সূচনায় ভৃগু বংশীয় উগ্র ব্রাহ্মণদের হাতে এই "মূল" মহাভারতটি সম্পূর্ণ হয়। সেগুলি নেহাতই অনুশাসন ভিত্তিক, মূল মহাভারতের সাথে সম্পর্কহীন নীরস ও অপকৃষ্ট রচনা।
শুরুতে যে যুদ্ধ কাহিনী ছিল আট থেকে নয় হাজার শ্লোকের, দ্বিতীয় দফায় সেটি চব্বিশ হাজার শ্লোকের আয়তন নেয়, আর তৃতীয় সংযোজনে সেটি নব কলেবরে প্রায় পঁচাশি হাজার শ্লোকের এক মহাকাব্য হয়ে ওঠে।
বর্তমানে প্রচলিত মহাভারতের আঠারো পর্বগুলির মধ্যে আদি, সভা,বন ও বিরাট পর্বের অল্প অংশ এবং উদ্যোগ থেকে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শেষ অর্থাৎ স্ত্রী পর্ব ছিল "জয়" যুদ্ধ কাহিনী। দ্বিতীয় পর্বে এই গুলির মধ্যেই কিছু কিছু উপকথা প্রবেশ করে এবং শান্তি পর্বের কিছুটা রচিত হয়। বাকীটা প্রায় পুরোটাই তৃতীয় পর্যায়ের ব্রাহ্মণ অনুপ্রবেশ।
আমার সুবিধে হচ্ছে, বেশি বই তো পড়ি নি, তাই ধানাই পানাই বাদ দিয়ে একমাত্র সুকুমারী ভট্টাচার্যের মতামতটাই টুকে দিলাম।
তো কলেবর এতোটাই বৃদ্ধি পেলে আর তো স্মৃতিতে কুলায় না। লিপি বদ্ধ করতে হয়। এবং মূল লেখাটির হাতে লিখে কপি করে তা বিভিন্ন যায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। ভারতবর্ষের মৌসুমি আবহাওয়ায় সেই প্রতিলিপিগুলিও কিছুদিন পরেই নষ্ট হতে থাকে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি, ভারতবর্ষে দুটি পুঁথির নামডাক ছিল মুলানুগ হিসেবে। একটিকে বলা হতো বেঙ্গল কপি আর অন্যটি ছিল বোম্বাই কপি।
১৮৫৮ নাগাদ কালীপ্রসন্ন সিংহের তত্ত্বাবধানে মহাভারতের পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদ শুরু হয়। ঠিক ঐ সময়েই বর্ধমানের মহরাজাও অনেক পণ্ডিতদের সহযোগে মহাভারতের বাংলা অনুবাদ শুরু করেন। কালীপ্রসন্ন, তাঁর ঠাকুরদার বাবা দেওয়ান শান্তিরাম সিংহের সংগৃহীত বারাণসীধামের মহাভারতের পুঁথি, এশিয়াটিক সোসাইটির সংগ্রহের পুঁথি, রাজা যতীন্দ্রমোহন, শোভাবাজার রাজবাটীর ও আশুতোষ দেবের সংগৃহীত পুঁথি - এইগুলি একত্র করে অনেক পণ্ডিতকে দিয়ে প্রায় আট বছরের পরিশ্রমে মহাভারতে পূর্ণ অনুবাদ সম্পন্ন করেন।
বর্ধমানের মহারাজার উদ্যোগেও মহাভারত পূর্ণাঙ্গ বঙ্গানুবাদ, গোপালধন চূড়ামণি ও সারদাপ্রসাদ জ্ঞাননিধি এই দুই পণ্ডিতের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত হয় ১৮৬৩ থেকে। হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ মশাই দীর্ঘ একুশ বছর ধরে একাকী আরেকটি বঙ্গানুবাদ করেন যেটি শেষ হয় ১৯৫০ সালে। তিনিও চারটি পুঁথির সাহায্য নেন।
এই তিনটি পূর্ণ অনুবাদের মধ্যে, বিশেষতঃ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের বিবরণে, খুব একটা তফাৎ নেই। হয়তো এই যুদ্ধ বিবরণ মহাভারতের মূল অংশ বলেই খুব একটা পল্লবিত হয় নি। এক সাথে তিনটি বই পড়লেও তেমন ফারাক চোখে পড়ে নি। পর্ব অধ্যায়ে কিছু অদল বদল রয়েছে।আর অল্প কয়েকটি নামের বানানে সামান্য ফারাক রয়েছে (যেমন ক্ষেমধূর্তি/ক্ষেমমুর্তি)।
উদাহরণ দেই, বর্ধমান মহাভারত আর কালীপ্রসন্ন সিংহের মহাভারতে অষ্টম দিনের যুদ্ধে শকুনির ছয় ভাইয়ের সংগে অর্জুন পুত্র ইরাবানের যুদ্ধের যে বিবরণ দিয়েছে তাতে গান্ধার রাজাদের নাম ছিল না। কিন্তু সিদ্ধান্তবাগীশের অনুবাদের ঐ ছয় ভাইয়ের নাম দেওয়া আছে। খুব গুরুত্বপূর্ণ তফাৎ কিছু নয়, এরকম আরো উদাহরণ দেওয়া যেতেই পারে, কিন্তু মূল ধারা বিবরণীতে বিশেষ তফাৎ দেখি নি।
ভাষার ব্যাপারে বর্ধমান মহাভারতের ভাষা খুবই সংস্কৃত ঘেঁষা, আর সিদ্ধান্তবাগীশের অনুবাদ খুবই আধুনিক। কালীপ্রসন্ন এদের মাঝা মাঝি। উদাহরণ দেই,চতুর্দশ দিনের নিশীথ যুদ্ধে, কর্ণ ও অশ্বত্থামার যে প্রচণ্ড বিতণ্ডা হয়, তাতে সিদ্ধান্তবাগীশের অনুবাদে দুজনেই দুজনকে কথ্য বাংলার "তুই" সম্বোধন করেছেন, অন্য দুটি অনুবাদে সেরকম নয়।
আমার নিজস্ব পছন্দ এই আধুনিক প্রচলিত বাংলার অনুবাদ। কিন্তু আমার পাঠ তো নেট নির্ভর। সিদ্ধান্তবাগীশের সব কটি খণ্ড আমি নেটে খুঁজে পাই নি। আমার এই লেখায়, যেখানেই অনুবাদককে হুবহু কোট করেছি, সেখানে সিদ্ধান্তবাগীশের অনুবাদই আমার কাছে সব থেকে পছন্দের। মানে,ওনার যত গুলি খণ্ড আমি পড়তে পেরেছি। নেহাত না পেলে কালীপ্রসন্ন সিংহের অনুবাদই কপি করেছি।
এই সাফাইটুকু না গাইলেই নয়। কেনো না সংস্কৃত ভাষা না জানার ফলে মূল লেখা তো পড়ি নি। ঐ অনুবাদই সম্বল। আরো বড় কারণ, কেউ যদি আমার এই লেখা পড়ে তথ্য সূত্র চান তো জানিয়ে রাখি আমার এই অকিঞ্চিৎকর রচনা শুধু এই তিনটি মূলানুগ অনুবাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
মহাভারতের কয়েকটা বিষয়, মনে হয় অনেক পণ্ডিতেরই চোখ এড়িয়ে গেছে বা গৌণ বিষয় ভেবে ঠিক পাত্তা দেন নি। তো, আমার লেখা এই কয়েকটি ব্যাপার নিয়েই।
প্রথমে লিখিঃ নামকরণের রাজনীতি
মহাভারত তো বিজয়ীদের অর্থাৎ পাণ্ডবদের পক্ষের রচিত ইতিহাস। সুতরাং পাণ্ডব পক্ষকে যে টেনে খেলানো হবে তাতে আর আশ্চর্যের কী? তাও, বড্ড চোখে লাগে দুর্যোধন নাম, আর আরও বেশি করে দুঃশাসন নাম। এ কখনো বাবা মায়ের দেওয়া নাম হতে পারে? অনেক টীকাকার বলেন দুর্যোধনের প্রকৃত নাম ছিল সুযোধন (অর্থাৎ যুদ্ধে পটু)। হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ তাঁর অনুবাদে অনেকবারই সুযোধন নামটাই উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া আরো যে ভাইয়েরা ছিলেন তাদের কয়েকজনের নামও আরোপিত মনে হয় যেমন দুষ্কর্ণ, দুর্ম্মুখ, দুঃসহ, দুর্ম্মদ, বা মেয়ের নাম দুঃশলা।
দুর্যোধনের স্ত্রীর নাম ও কখনো উল্লেখ হয় নি - অথচ উনি ছিলেন রাজমহিষী,কুরু বংশের পাটরানি বলে কথা। শুধুমাত্র দুটি ক্ষেত্রেই তাঁর উল্লেখ আছে, সেই সভা পর্বে স্বয়ংবর সভায়, যেখানে তার উল্লেখ শুধুমাত্র কলিঙ্গ রাজ কন্যা হিসেবে আর স্ত্রী পর্বে. যেখানে উনি পুত্র লক্ষণ আর স্বামী দুর্যোধনের জন্য শোক প্রকাশ করছেন।না, কোথাও নাম নেই। কৌরব পক্ষের কারুর স্ত্রীর'ই কোনো ভূমিকা ছিল না, নাম ও লেখা ছিল সামান্য কয়েকজনেরই।
মোটামুটিভাবে সপ্তম শতাব্দীতে ভট্টনারায়ণ নামে এক নাট্যকার "বেণীসংহার" নামে এক নাটক লেখেন। সেখানে চরিত্র হিসেবে দুর্যোধনের স্ত্রী'র নাম ভানুমতী উল্লেখিত হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে এটি লোকমুখে প্রচলিত হলেও এই নামের কিন্তু কোনো মহাভারতীয় ভিত্তি নেই। মহাভারতে- কুরুবংশের পাটরানী অনামাই থেকে যাবেন। আর দুঃশাসনের যে ছেলে সম্মুখ যুদ্ধে সম্পূর্ণ নিজের পরাক্রমে অভিমন্যুকে পরাজিত ও নিহত করেন তিনিও আগাগোড়াই অনামা থেকে গেলেন। অভিমন্যুর শেষ লড়াই কিন্তু এক ডুয়েল -অভিমন্যু আর দুঃশাসনের অনামা পুত্রের। মুখোমুখি গদাযুদ্ধে এক সময়ে দুজনেই দুজনের আঘাতে মাটীতে আছড়ে পড়লেন কিন্তু দুঃশাসন তনয় "সত্বর অগ্রে সমুত্থিত হইয়া উত্তিষ্ঠমান"অভিমন্যুর মাথায় গদা দিয়ে মারলেন মোক্ষম আঘাত। অভিমন্যুর সেখানেই মৃত্যু হয়। সম্পূর্ণ নিরস্ত্র অভিমন্যুর কাছে ঐ গদা ছাড়া আর কোনো অস্ত্র ছিল না। কিন্তু দুঃশাসন তনয় ছিলেন নিজ দলের রথী, মহারথীদের মধ্যে সুরক্ষিত। তিনি তো পারতেন নিজের রথ থেকেই দূর থেকে তীর বিদ্ধ করে অভিমন্যুর নিধন - যেমনটি অর্জুন করেছিলেন রথহীন কর্ণকে বা ভুরিশ্রবাকে। কিন্তু তিনি সমানে সমানে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই বেছে নিয়েছিলেন।তার কথা বেশ কয়েকদিনের যুদ্ধে উল্লেখ করা হয়েছে - কিন্তু, ঐ শুধু "দুঃশাসন তনয়" নামেই। তাকে ঐটুকু সম্মানও দিতে পারেন নি মহাভারতকারেরা।
মহাভারতের আরেকটা ধাঁধা হচ্ছে গান্ধারীর শতপুত্রের নাম। আদিপর্বের ৬৭ অধ্যায়ে জন্মের ক্রম অনুসারে একশো জনেরই নাম দেওয়া আছে। শশিভূষণ তর্কালঙ্কারের "পৌরাণিক জীবনী কোষে"ও এই লিস্টটাই দেওয়া আছে। যদিও নেটে খুঁজলে অল্প রদ বদল করে অন্য এক লিস্টও চোখে পড়ে; যদিও সেটির কোনো তথ্য সূত্র দেওয়া নেই। ঐ লিস্টেই গান্ধারীর দ্বিতীয় পুত্র হিসেবে নাম রয়েছে যুযুৎসুর। অথচ মহাভারতে যুযুৎসু নাম ছিল ধৃতরাষ্ট্র ও এক দাসীপুত্রের। একই নামে দুজনের - দাসী পুত্র ও গান্ধারীর সন্তান - এটা অসম্ভব না হলেও অস্বাভাবিক। তবে এও ঠিক, প্রায় একই সাথে একশোজন ছেলে জন্মালে নামের হিসেব রাখাও মুশকিল! কুরুক্ষেত্র যুদ্ধেও দেখি অর্জুন একদিন "ধৃতরাষ্ট্রের দশজন পুত্রকে নিহত করেন"। তাদের কোনো পরিচয় নেই। হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ তাঁর টীকায় লেখেন এরা সব ধৃতরাষ্ট্রের "অসবর্ণ পুত্র"। তাই নাম ধামের কোনো প্রয়োজনও নেই, লেখাই বাহুল্য।
এইবারে ভীমের হাতে, প্রতিদিনের কুরু ভাইদের নিহত হওয়া যোগ করলে সাকুল্যে পঁচাত্তর (কিছু নাম আবার একাধিকবার উল্লেখিত হয়েছে বিভিন্ন দিনে) জন হন। আর তাদের অনেকেরই নাম ঐ আদি নাম তালিকার মধ্যে নেই। আসলে কুরুপক্ষের নাম উল্লেখের ক্ষেত্রে মহাভারতকারের অযত্ন চোখে পড়ার মতন।এ ছাড়াও যদিও বহুবারই লেখা হয়েছে ভীমের হাতেই গান্ধারীর শত পুত্র নিহত হয়েছিলেন কিন্তু আঠেরো দিন যুদ্ধের বিশদ বিবরণে দেখি ষষ্ঠ দিনে অর্জুন পুত্র শ্রুতকর্মার হাতে দুর্ম্মুখ আর নকুল পুত্র শতানীকের হাতে দুষ্কর্ণ - এই দুই গান্ধারী পুত্রের নিধন হয়েছিলো। দাসীপুত্র যুযুৎসুও তার এক বৈমাত্রেয় ভাইয়ের মৃত্যু ঘটান(দ্বাদশ দিনে)।
এই নামের রাজনীতি ছাড়া দ্বিতীয় যেটি চোখে পড়ে সেটি হচ্ছে দুই পক্ষেই কন্যা সন্তানের অনুল্লেখ। দুর্যোধনের কন্যা ছিল লক্ষণা - যাকে বিয়ে করেন কৃষ্ণ পুত্র শাম্ব। আর পাণ্ডব পক্ষে? সকলেরই শুধুই কি পুত্র সন্তান হতো? গান্ধারীর এক মাত্র মেয়ে দুঃশলা - তিনি বোধহয় স্বনামেই ঠাঁই পেয়েছেন তাঁর স্বামী জয়দ্রথের জন্য। নাহলে মানতে হয়, কন্যা সন্তানদের নাম করণ বা উল্লেখ করা প্রয়োজন হতো না।কুরু বা পাণ্ডব পক্ষে আরো কোনো বীরেরই কন্যা সন্তানের নাম নেই।
তৃতীয় বিষয়টি উত্তরাধিকারের। সে সময়ের নিদান মেনে বংশের পরবর্তী প্রজন্মের জ্যেষ্ঠ পুত্রেরই সিংহাসনের অধিকার ছিল। ধৃতরাষ্ট্রের ভুবন কেঁপে উঠেছিলো যখন আচমকাই কুন্তী তাঁর পাঁচ সন্তানকে নিয়ে হাজির হলেন সভাস্থলে। এবং সমবেত মুনি ঋষিরা জানালেন যুধিষ্ঠিরই জ্যেষ্ঠতম। কুরুবংশের উত্তরাধিকার আর নয় দুর্যোধনের।
এক তর্কাতীত অধিকার।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষের সবাই জেনে গেলেন কর্ণ ছিলেন জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব। তাঁর ছিল নয়জন পুত্র। কনিষ্ঠটি, বৃষকেতু সেই সময়ে বালক মাত্র। তার বাকী আটজন দাদা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে অংশ নেন ও নিহত হন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষ হলে, বৃষকেতু, পাণ্ডবদের, বিশেষতঃ অর্জুনের বিশেষ স্নেহের পাত্র হয়ে ওঠেন। কাকা অর্জুনের কাছেই তিনি যুদ্ধবিদ্যা শেখেন ও পরবর্তীকালে যুধিষ্ঠিরের অশ্বমেধ যজ্ঞে সক্রিয় সহযোগিতা করেন ও অর্জুনের সঙ্গী হন। পাণ্ডবেরা তাকে কর্ণের অঙ্গদেশ "দান" করেন। ব্যাস।
কিন্তু বৃষকেতুই তো জ্যেষ্ঠতম জীবিত সন্তান- সমগ্র কুরু পাণ্ডব বংশে। কেনো তিনি হলেন না যুবরাজ? কেনো?
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগেই কুন্তীর সাথে একান্ত সাক্ষাতে কর্ণ নিজের জন্ম পরিচয় জানতে পারেন। প্রশ্নাতীতভাবে কুরুবংশের সিংহাসন তার প্রাপ্য - না যুধিষ্ঠিরের, না দুর্যোধনের। কিন্তু নিতান্ত অবহেলে সেই সুখাসন তিনি বর্জন করলেন। দশম দিনে ভীষ্মের মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত ভীষ্ম ও দ্রোণের কথায় তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণেও বঞ্চিত ছিলেন। সেই প্রচণ্ড অপমানেও কিন্তু তিনি তাঁর অঙ্গীকার থেকে একচুলও নড়েন নি।
তার থেকেও অনেক বেশি বিশ্বাসঘাতকতা ঘটলো তার একমাত্র জীবিত সন্তান বৃষকেতুর সংগে।
মহাপ্রস্থানের পর, পাণ্ডবেরা রাজপাট তুলে দিলেন উত্তরা অভিমন্যুর সন্তান পরীক্ষিতের হাতে।
মৃত কর্ণ আবার বঞ্চিত হলেন। পাণ্ডবদের স্নেহধন্য বৃষকেতু,কুরুবংশের পরবর্তী প্রজন্মের জ্যেষ্ঠ সন্তান, অঙ্গ রাজ্যের রাজা হয়েই রইলেন। এর কোনো মহাভারতীয় ব্যাখ্যা কখনো পড়ি নি। ব্যাখ্যা তো দুরের কথা, প্রশ্নটাও শুনি নি।