সত্যি কথাই বলি। আমি হলাম বিশ্বের সেই ক্ষুদ্রতম অংশ যাদের আশ্বিন মাস আসলেই মুখ শুকিয়ে যায়। ঢাকের আওয়াজে আমার মাথা ধরে, কাশ ফুলে আমার অ্যালার্জি, ভীড় দেখলে আমি ভির্মি খাই। আমার পুজো ভাল্লাগে না।
আকাশ থেকে মনসুনের মেঘ সরলো তো বুভুক্ষু বাঙালী ঝাঁপিয়ে পড়লো পুজো নিয়ে। শারদীয়া পত্রিকা এখন সরতে সরতে বর্ষাকালেই বার হয়। একই নামের লেখক লেখিকা,একই অপকাশিত পত্রাবলী ও আঁকা ছবি। একটি ফরম্যাট মাত্র। তাও ও কিনতে হয়। কিনে খুব রাগতে হয়। "কিস্যু হসসে না" বলতে হয় কিন্তু বর্ষাকালের শারদীয়াগুলি কিনতে হয়। কিনতেই হয়।এটি পুজার নামতা। অত্যাচারী ও অত্যাচারিত, দু পক্ষেই মিলে জুলে এ খেলাটি খেলে চলেন প্রতি বছর।
এ ছাড়াও নানান পত্র পত্রিকায় শুরু হয়ে যায় বিপুল নস্টালজিয়ার ঘনঘটা। এতো পড়েছি যে আমি ও দু চারটে অমনি লিখে দিতে পারি চোখ বুজেই ।।। 'আমার ছেলেবলার কথা মনে পরে। মান্ধাতা আর আমি ছুটে চলেছি চন্ডীতলায়। সিংহের ন্যাজ গড়া হবে আজ। বাড়ী ফিরে দেখি মিঠে রোদে জ্যাঠাইমা একমনে শাঁকালু কাটছেন, শরৎ রাণীর সোনাগলা রোদে জ্যাঠাইমার পাকা গোঁপজোড়া ঝিলমিল করছে। বাড়ী ময় ম ম করছে বাসী নকুলদানার সৌগন্ধ। ।।।।।" ইত্যাদি। ইত্যাদি। আপনারা পড়েছেন অনেকবার, নিজেরাই লিখেছেন অনেক বেশী।
তবু নিজের থেকেই ছ্যাড়ছ্যড়িয়ে এই স্মৃতিকথারা আসতে থাকে রেকারিং ডেসিমেলের মতন।
আর থাকে বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন ছাড়া পুজো নেই। টিভিতে,ব্যানারে,পোস্টারে,কাগজে ও ম্যাগাজিনে। ব্র্যান্ডেড জিভেগজা, বৈদিক রূপটান বা জন্মনিয়ন্ত্রনের বটিকা - সবেতেই ঠকাশ করে তিনটি চোখ এঁকে দিন। তাহলে সেটি এম্নি বিজ্ঞাপন থেকে ঝাঁ করে 'পুজোর বিজ্ঞাপন' হয়ে যাবে। খুবই সহজ পদ্ধতি।
সারাদিন বাড়ীতে সাজুগুজুর ঝিনঝিনে আওয়াজ। দেরী হয়ে যাওয়ায় ছটফট ও মৃদু অভিমান। গাড়ীতে উপছে পড়ে ঠাসাঠাসি। প্যান্ডেলে সেই একই চেনামুখদের সাথে মোলাকাত। তফাতের মধ্যে আজকে মুখে পোর্সেলিনের প্রলেপ লাগানো। তাও রাত জেগে ঘুমে ক্লান্ত ও সুবিশাল হাই তুলে, নিপুন ভাবে বেশী রাতে খাওয়া মটন রোলের উদ্গার তুলে, আমরা চেঁচিয়ে বলি। 'উহু, বচ্ছরকার দিন। এই সকলে গোল হয়ে ঘিরে গল্প করছি,ওম্মা সাড়ে বারোটা বেজে গ্যাছে বুঝি? তা হোগ্গে, আমরা কী এনজয় করছি কী এনজয় করছি তাই না?' সভাদ্ষদগনও বিকট হাই তুলে তুলে সম্মতি দেয় "খুব এনজয় করছি, বাপরে বাপ, ভীষন মজা হচ্ছে কিন্তু।"
আমি মুহ্যমান হয়ে বসে থাকি। এই ভাবে চলে চারদিন। প্রতি বছর।