চরিত্রাবলী
সূত্রধর -- ২ জন (সর্বক্ষণ মঞ্চে থাকবে)
রাজা
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী -- ডাকনাম সরু
বিদেশমন্ত্রী -- ডাকনাম বিদেশ
শিল্পমন্ত্রী -- ডাকনাম শিল্প
শিক্ষামন্ত্রী -- ডাকনাম সংস্কৃতি
কৃষিমন্ত্রী -- ডাকনাম কৃষি
(মন্ত্রীদের নামগুলি গায়ে কাগজ সেঁটে লিখে দেওয়া যেতে পারে। যেকোনো চরিত্রই পুরুষ বা মহিলা হতে পারে, কেবল সংস্কৃতি চরিত্রটি মহিলা হওয়া বাঞ্ছনীয়)
গুপ্তচর
সেনাপতি
সঞ্চালক
নৃত্যশিল্পী -- অন্তত ১ জন। বেশি হলে খুবই ভালো।
কৃষক -- অন্তত ২ জন। বেশি হলে খুবই ভালো
বিমান -- ২ টি।
(নৃত্যশিল্পী, বিমান, কৃষক চরিত্রগুলি প্রয়োজনমতো একই অভিনেতা করতে পারে)
গায়ক-বাদক -- প্রয়োজন মতো। গানগুলি রেকর্ড করে স্পিকারেও বাজানো যেতে পারে।
অভিনয়স্থলের গঠন
নাটকের আলাদা কোনো মঞ্চ থাকবেনা, শুধু পিছনে একটি দেয়াল থাকবে, ধরে নিয়ে এই গঠনটি তৈরি করা হয়েছে (মঞ্চ থাকলে আলাদা করে ভাবা যেতে পারে)। এর মূল নীতি হল:
১। অভিনেতারা কখনই চোখের আড়ালে যাবেনা। সর্বক্ষণই অভিনয় করবে।
২। দর্শকদের মধ্যেও অভিনয় চলবে। দর্শকদের বসা বা দাঁড়ানোর জায়গা আলাদা, অভিনয়ের জায়গা আলাদা, এরকম কোনো জলবিভাজিকা থাকবেনা।
সঙ্গীত এবং আবহ
গানগুলির শব্দ উচ্চমানের হতে হবে। সমবেত সঙ্গীত হলে খুবই ভালো হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে বাজনাও জোগাড় করতে হবে। অথবা আগে থেকে রেকর্ড করে বাজানো যেতে পারে। অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা।
সূত্রধর ১: (টেনে-টেনে) অনেক অনেক বছর আগের কথা। অনেক দূরে এক দেশ ছিল। সে দেশে বড় বড় ক্ষেত, লম্বা লম্বা নদী, উঁচু-উঁচু পাহাড়, আর গভীর-গভীর সমুদ্র। সেখানে গোলা-ভরা ধান, নদী-ভরা জল, গোয়াল-ভরা গরু, গাছ ভরা হনুমান।
সূত্রধর ২: (থামিয়ে) ছোটো করে বল না। এত লম্বা করলে লোকে পালাবে।
সূত্রধর ১: (বিরক্ত হয়ে) লোক জমবে বলেই তো লম্বা করছি। অ্যানাউন্সমেন্টের কী বুঝিস তুই। সব ধর-তক্তা-মার-পেরেক নাকি? যাই হোক। (আবার শুরু করে) সেখানে ছিলেন এক রাজা। রাজা যেমন বড়, তেমনি ধার্মিক।
সূত্রধর ২: (থামিয়ে) রাজার দুই রানী। সীতা আর গীতা। রানীদের গা ভরা গয়না, প্রজাদের পকেট ভরা মায়না। কোথাও কোনো অভাব নেই, কেউ করে না বায়না।
সূত্রধর ১: (আরও বিরক্ত) তোদেরকে কে স্টেজে তুলে দেয় রে? প্রজাদের পকেটে কোনো পয়সা নেই।
সূত্রধর ২: অ্যাঁ? তবে খায় কী?
সূত্রধর ১: প্রজারা টাকার কলে লাইন দেয়। রোজ কিছু করে করে টাকা ছাড়া হয়। যারা পায়, তারা খায়। যারা পায় না, তারা পরেরদিন আবার লাইন দেয়। রাজা এসেই সব মোহর বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছিলেন।
সূত্রধর ২: কেন?
সূত্রধর ১: যাতে লোকেরা মোহর নিয়ে অপচয় না করতে পারে।
সূত্রধর ২: সব টাকা এখন রাজার ভান্ডারে? হেবি বুদ্ধি তো।
সূত্রধর ১: তোর মতো গাড়ল হলে কি আর রাজা হত? রাজত্ব হত?
সূত্রধর ২: আর রানী?
সূত্রধর ১: ওরে পাঁঠা, এ রাজার কোনো রানী নেই।
সূত্রধর ২: এ বাবা, বিয়ে করেনি? দেখতে বাজে?
সূত্রধর ১: দেখতে বাজে? ছাতির মাপ জানিস? ইয়াব্বড়ো ছাতি। এত বড়, যে, বৌকেও ভয় পায়না। একজন বৌ আছে, কিন্তু সে রানী নয়। আলাদা থাকে।
সূত্রধর ২: ডিভোর্সি রাজা?
সূত্রধর ১: (কান না দিয়ে) রাজার রাজত্বে সব দিকেই সুখ। গাছে গাছে হনুমান খেলে বেড়ায়। গরুদের কোনো জীবনের ভয় নেই। তারা ইচ্ছেমতো দুধ দেয়। সেই দুধ তুলে নিয়ে শিবলিঙ্গে ঢালা হয়। দেবতারাও তুষ্ট।
সূত্রধর ২: দুধ খায় না? ফেলে দেয়? খায় কী?
সূত্রধর ১: যা খাবার জিনিস। রাজা নিয়ম করে গোবর আর গোমূত্র খান। প্রজাদেরও খেতে বলেন। রাজার রাজত্বে হনুমান থেকে গরু—সবাই খুশি। কোথাও কোনো অশান্তি নেই। শুধু, রাজার শত্রু একটাই। সে এক বিরাট দৈত্য। সে যেখানে-সেখানে যখন-তখন আক্রমণ করে। যাকে-তাকে খেয়ে নেয়। রাজার দাপটে কিছুদিন চুপচাপ থাকে। তারপর আবার এসে ঝামেলা পাকায়। তার নাম পাকিস্তান।
সূত্রধর ২: ভ্যাট। অনেকদিন আগে পাকিস্তান কোথায়? পার্টিশান তো হল ৪৭ সালে।
সূত্রধর ১: এ কোথাকার উন্মাদ রে। পাকিস্তান কোনো দেশ নয়। পাকিস্তান হল দৈত্য। যতদিন সূর্য-চাঁদ আছে, ততদিন থেকেই ওই দৈত্য আছে। আর তাকে পটকে দেবার জন্য আছেন, রাজা ইব্রাহ্মিন লোদি।
সূত্রধর ২: কিন্তু।
সূত্রধর ১: চোপ, রাজা আসছেন।
ঘটি কাঁসর বাজে।
সূত্রধর ১: (চিৎকার করে) রাজাধিরাজ মহারাজ রাজচক্রবর্তী ব্রহ্মতেজা মহাব্রাহ্মণ ইব্রাহ্মিন লোদি জলপথ দিয়ে দিল্লির রাজদরবারে প্রবেশ করছে-এ-এ-এন।
রাজা আর মন্ত্রীরা প্রবেশ করেন। একটু রাজকীয় পোশাক হলে ভালো হয়।
সূত্রধর ২: (নিচু গলায়) জলপথ কই। এ তো হেঁটেই আসছে গো।
সূত্রধর ১: (কড়া নিচু গলায়) ওটা একটা জায়গার নাম রে গাড়ল। দিল্লির পাশে। অনেক যুদ্ধ হয়েছে।
সূত্রধর ২: ও, পানিপথ?
সূত্রধর ১: তুই দেশদ্রোহী না বাংলাদেশী ম্লেচ্ছ রে? অনুপ্রবেশ করে এসেছিস? পানি, নয়, জল বল। নইলে এনআরসি করে দেবে কিন্তু।
সূত্রধর ২: কিন্তু…
সূত্রধর ১: চোপ। রাজসভা শুরু হচ্ছে।
রাজা: কই হে মন্ত্রীরা। দেশের কী খবর?
মন্ত্রীরা সমস্বরে: বিন্দাস হুজুর।
রাজা: আবার বলো।
মন্ত্রীরা সমস্বরে: বিন্দাস জাঁহাপনা।
রাজা: সব মন্ত্রীরা হাজির?
সূত্রধর ১: (এগিয়ে এসে) রোলকল করি স্যার?
রাজা: কর।
সূত্রধর ১: রোলনম্বর ১। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: উপস্থিত।
রাজা: কী সংবাদ?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: সব বিন্দাস জাঁহাপনা। তিনজন দেশদ্রোহীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। কালই তাদের জেলে পুরে ফেলা হয়েছে। এখন দেশময় শান্তি। পুরো শ্মশানের মতো।
রাজা: (ভুরু কুঁচকে) কী করেছিল তারা?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: উত্তরপ্রদেশ বনাম বঙ্গদেশের ডাংগুলি প্রতিযোগিতা চলছিল হুজুর। বঙ্গদেশের এক বাঁহাতি গাঙ্গুলি ডাঙ্গুলিতে দুই ছক্কা মারার পর, এই দুই অর্বাচীন মাঠে চিৎকার বলে, বিরাটের চেয়েও বড় মস্তান, দাদা যেন পাকিস্তান।
রাজা: এ তো ভয়াবহ ব্যাপার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: তৃতীয়জন আরও খারাপ জাঁহাপনা। দিল্লির চন্দ্রাহত চৌমাথায় দাঁড়িয়ে বলেছে, দিল্লির বাতাসের যে দূষণ, তার জন্য পাকিস্তান দায়ী নয়। ধুলো পাকিস্তান থেকে আসেনি। আসলে মহারাজের ফৌজের ঘোড়ার ধুলোতে দিগন্ত ঢেকে গেছে। সেখান থেকেই হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, পেটের ব্যারাম হচ্ছে দিল্লিবাসীর।
মন্ত্রীরা: (সমস্বরে) কী ভয়ানক। কী ভয়ঙ্কর।
রাজা: তারা এখন কোথায়?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: নির্বিচারে জেলে হুজুর।
রাজা: উত্তম। অতি উত্তম। পরের জন?
সূত্রধর ১: রোলনম্বর ২। বিদেশমন্ত্রী।
বিদেশমন্ত্রী: হাজির।
রাজা: খবর কী?
বিদেশমন্ত্রী: বিদেশে সব জবরদস্ত জাঁহাপনা। মুর থেকে পারস্য, তুর্কিস্তান থেকে বিলেত, পুরোনো দুনিয়া থেকে নতুন দুনিয়া, সবাই আপনাকে নিয়ে মুগ্ধ।
রাজা: তো আমি এখানে কী করছি?
বিদেশমন্ত্রী: (বিস্মিত হয়ে) হুজুর?
রাজা: আমার শেষ বিদেশ সফর কবে হয়েছিল?
বিদেশমন্ত্রী: গত মাসে জাঁহাপনা।
রাজা: পরেরটা কবে?
বিদেশমন্ত্রী: সামনের মাসে মহারাজ।
রাজা: তার মানে, এই গোটা মাসটা আমি দেশে বসে কাটাব? তুমি কি জানো না, আমার বিদেশ ভ্রমণের শখ?
বিদেশমন্ত্রী: বিলক্ষণ জানি হুজুর। সেই আপনি যখন গুজরাতের ফৌজদার ছিলেন, আপনাকে নতুন দুনিয়ার রাজা দাঙ্গাবাজ আখ্যা দিয়ে ঢুকতে দেয়নি, ঢোকার ভিসা নামঞ্জুর করেছিল, সেই থেকেই আপনার জেদ চেপে গেছে। প্রত্যেক মাসে আপনি বিদেশ ভ্রমণ করে দেখিয়ে দেন—আম্রিকার ভিসা পাবার জন্য একজন গুজরাতি ফৌজদার ঠিক কী কী করতে পারে।
রাজা: তবে? এই মাস ফাঁকা কেন?
বিদেশমন্ত্রী: মহারাজ, গুপ্তচররা খবর এনেছে, চৈনিকরা আপনার ভ্রমণে কুনজর দিচ্ছে। গুজব রটাচ্ছে, আপনি বিদেশের নৃপতি দেখলেই জড়িয়ে ধরেন, তারা আপনাকে পছন্দ করুক বা না করুক। তাই নৃপতিরা আপনাকে দেখলেই পালায়।
রাজা: পালায়? কাউকে তো দেখিনি।
বিদেশমন্ত্রী: অপপ্রচার জাঁহাপনা। আমরা কূটনৈতিক স্তরে মোকাবিলা করছি। মিটে গেলেই সামনের মাসেই আপনার ভ্রমণ। একসঙ্গে তিনটে দেশ ঘুরিয়ে দেব মহারাজ।
রাজা: (পছন্দ না করে) পরের জন!!
সূত্রধর ১: রোলনম্বর ৩। শিল্পমন্ত্রী।
শিল্পমন্ত্রী: উপস্থিত।
রাজা: কী সংবাদ?
শিল্পমন্ত্রী: অতি উত্তম জাঁহাপনা। শিল্পের গুণমান চরমে। আপনার মোহর ইন ইন্ডিয়া স্লোগান জাদুর মতো কাজ করছে। শিল্পপতিরা আসছে, আর ভান্ডার থেকে মোহর নিয়ে যাচ্ছে।
রাজা: কীসের চরমে। আর তো কোনো চাহিদা নেই, সামান্য একটু সাজগোজ করি। আমিই জামাকাপড় পাচ্ছি না ঠিকঠাক।
শিল্পমন্ত্রী: কেন জাঁহাপনা? (খাতা দেখে) কালকের জন্য আপনার ফিরিঙ্গি স্যুট, বাঙালি চাপকান, আর দিল্লির শেরওয়ানি তৈরি হয়ে আছে। সকাল, বিকেল, রাত্রে পরবেন। আর মুম্বাইয়ের নটদের সঙ্গে দর্শন দেবার জন্য উত্তরীয়ও তৈরি। সরবরাহে তো কোনো গোলযোগ নেই।
রাজা: নিকুচি করেছে সরবরাহের। আমার সবুজ কাশ্মীরি কুর্তাটা কুটকুট করছিল কাল। পরশুর হলদে পাঞ্জাবি পাগড়িটা পরতে গিয়ে দেখি, চুলে রঙ লেগে গেছে। এবার তো আমাকে হলদে-সবুজ ওরাং-ওটাং বলবে। এরা মোহর তো নিচ্ছে, মাল দিচ্ছে কি?
শিল্পমন্ত্রী: সে হিসেব তো আমার কাছে নেই জাঁহাপনা। মোহর কেউই প্রায় ফেরত দিচ্ছে না, এইটুকু বলতে পারি। কেউ কেউ তো মোহর ফ্রম ইন্ডিয়া বলে বিলেত চলে যাচ্ছে। আর ফিরছে না।
রাজা: ফিরছেই না? ভালো করে বলেছিলে?
শিল্পমন্ত্রী: বলেছি হুজুর। বাবা-বাছা করে বললেও ফিরছে না। তবে তাতে কোনো সমস্যা নেই। আপনার মোহরবন্দির কল্যাণে ভান্ডারে স্বর্ণমুদ্রার কোনো কমতি নেই। নিক না শিল্পপতিরা কিছু। কী আর সমস্যা?
রাজা: শোনো। আমার মাথায় একটা ফন্দি এসেছে। ইশকুলে কোনো ছাত্র দুষ্টুমি করলে আমরা কী করি?
শিল্পমন্ত্রী: ঠ্যাঙাই হুজুর।
রাজা: তোমার মুণ্ডু। ক্লাসের মনিটর করে দিই।
শিল্পমন্ত্রী: আজ্ঞে হুজুর।
রাজা: এখানে তাহলে কী করব?
শিল্পমন্ত্রী: কী হুজুর?
রাজা: ভান্ডারটাই ওদের দিয়ে দেব। নে, নিজের টাকা নিজেই কী করে নিবি নে। কেমন ফন্দি?
মন্ত্রীরা: (সমস্বরে) যুগান্তকারী, অসাধারণ।
রাজা: যে ব্যাংক লুট করবে, তাকেই ব্যাংকটা দিয়ে দেব। একে কী বলে জান? যে ভক্ষক, সেই রক্ষক। হাহাহা।
শিল্পমন্ত্রী: যথা আজ্ঞা জাঁহাপনা।
রাজা: তাহলে তাই ঠিক হল। পরের জন?
সূত্রধর ১: রোলনম্বর ৪। শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী: উপস্থিত।
রাজা: তুমি সংস্কৃতিটাও দেখো না? তার কী হাল?
শিক্ষামন্ত্রী: দেশজুড়ে আমরা বিরাট কার্যক্রম নিচ্ছি হুজুর। দেশজুড়ে নাট্যশালা তৈরি হচ্ছে। শহরে শহরে। গ্রামে গ্রামে। আর দূরদর্পণ চালু হচ্ছে দেশের প্রতিটি কোনায়।
রাজা: দূরদর্পণ টা কী?
শিক্ষামন্ত্রী: নখদর্পণ জানেন হুজুর? আপনি এখানে বসেই শুধু নখের দিকে তাকিয়েই, বহুদূরের ঘটনা দেখতে পাবেন?
রাজা: এরকম হয় নাকি? এ কি মাতুলালয়? আমাকে বোকা পেয়েছ?
শিক্ষামন্ত্রী: মহারাজ নিশ্চয়ই রসিকতা করছেন। মহারাজ তো রামায়ণ-মহাভারতে সুপণ্ডিত। মহাভারতের সঞ্জয় এসব পারতেন—জানেন কি আর না?
রাজা: মহাভারত? হমম। তাও বটে।
শিক্ষামন্ত্রী: সেই টেকনোলজি আমাদের এখন আমাদের করায়ত্ত। বড়-বড় পর্দায় এখন দূরের ঘটনা সম্প্রচার করে দেওয়া যাবে।
রাজা: তাতে হবেটা কী?
শিক্ষামন্ত্রী: দেশজুড়ে শাশুড়ি-বউ ধারাবাহিক নাটক হবে মহারাজ। সংস্কৃতির হদ্দমুদ্দ করে দেওয়া হবে। দেখুন...
রাজা: ফায়দা? তাতে মুনাফা আসবে?
শিক্ষামন্ত্রী: আসবে জাঁহাপনা। ধারাবাহিকের মাঝে-মাঝেই বিজ্ঞাপনের বিরতি। শিল্পপতিরা তখন সাবান বেচবেন। আপনার মনের কথাও পড়া হবে।
রাজা: উত্তম। আর শিক্ষা?
শিক্ষামন্ত্রী: দেশজুড়ে সুশিক্ষার বড়ই অভাব মহারাজ। দুঃখের কথা কী বলব, শিক্ষিত ব্যক্তিরাও ম্লেচ্ছ ভাবধারায় না-জেনে না-বুঝে আচ্ছন্ন।
রাজা: কীরকম?
শিক্ষামন্ত্রী: এই যে দেখুন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এইমাত্র বললেন দিল্লিতে হাঁপানি। কথাটা কি শুদ্ধ?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: শুদ্ধ না?
শিক্ষামন্ত্রী: না। পানি একটি ম্লেচ্ছ শব্দ। আপনাকে হাঁপানি না বলে হাঁ-জল বলতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: হাঁ-জল?
শিক্ষামন্ত্রী: এইভাবেই গোটা দেশে ম্লেচ্ছ শব্দের চলন হয়েছে। দিল্লির পাশেই রয়েছে জলপথ। তাকে কেউ-কেউ পানিপথ বলছে। পাঠ্যপুস্তক থেকে এই সমস্ত ম্লেচ্ছপনা আমরা শেষ করে দেব হুজুর। এবার আর কেউ পানিফল বলবে না। বলবে জলফল। ঘোড়াকে আর দানাপানি খাওয়ানো হবে না। দানাজল দেওয়া হবে। পরীক্ষায় কেউ আর জলপানি পাবে না। সবাই জলজল করবে।
রাজা: সাধু। সাধু।
মন্ত্রীরা: (সমস্বরে) সাধু, সাধু।
সূত্রধর ১: রোলনম্বর ৫। কৃষিমন্ত্রী।
কৃষিমন্ত্রী: হাজির মহারাজ। কৃষির সংবাদ অতি উত্তম।
রাজা: উৎপাদন বেড়েছে?
কৃষিমন্ত্রী: না হুজুর। বাড়বে কেন? আমরা তো অতি উৎপাদনের সমস্যায় ভুগছি। বেশি-বেশি চাষ করে ফেলছি।
রাজা: কীরকম?
কৃষিমন্ত্রী: হুজুর, ফসল অতিরিক্ত হয়ে গেছে। সব গুদামে পড়ে আছে। লোকের হাতে অত কেনার টাকাই নেই।
রাজা: ফসল গুদামে নষ্ট হবে?
কৃষিমন্ত্রী: না হুজুর। এ বছর শিল্পপতিদের দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিদেশে বেচে দু-পয়সা আনুক। কেষ্টর জীব। ওদের উপকারেই দেশের উপকার। আর সামনের বছর থেকে উৎপাদন এমনিই কমে যাবে। বিক্রি না হলে লোকে চাষবাস করবে কেন বলুন?
রাজা: এ তো অতি উত্তম ব্যাপার।
কৃষিমন্ত্রী: শুধু একটাই সমস্যা আছে।
রাজা: কীসের সমস্যা?
কৃষিমন্ত্রী: কিছু দুর্বিনীত কৃষক খুব হট্টগোল করছে।
রাজা: হট্টগোল? কীসের হট্টগোল?
কৃষিমন্ত্রী: (বিনীত ভাবে) বলছে, সব মোহরই তো কোষাগারে। লোকে অনাহারে, কিন্তু মোহরের অভাবে ফসল কিনতে পারছে না। এই নিয়ে বিক্ষোভও দেখাচ্ছে হুজুর।
রাজা: বিক্ষোভ? আমার রাজত্বে? তাদের জেলে ঢোকাওনি কেন?
কৃষিমন্ত্রী: আমি তো স্বরাষ্ট্রদাকে বলেছিলাম। উনি রাজি হননি।
রাজা: সরু, কী ব্যাপার?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিগলিত হেসে উঠে দাঁড়ান।
রাজা: কী ব্যাপার, হাসছ কেন?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: হাসিনি হুজুর। আমাকে সবাই মোটা বলে বডিশেমিং করে। আপনি সরু বললেন শুনে আহ্লাদিত হয়েছি।
রাজা: বাজে বকা বন্ধ কর। এ কি সত্য, যে, লোকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, অপপ্রচার করছে, তারপরও তারা গারদের বাইরে?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: সত্য জাঁহাপনা।
রাজা: ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: কী করে হবে হুজুর। আপনার সংস্কৃতিমন্ত্রী যা কল করেছে।
রাজা: সংস্কৃতি? তার এখানে কী ভূমিকা?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: ওই যে দূরদর্পণ জাঁহাপনা। সেখানে সরাসরি দেখাচ্ছে তো সবকিছু। লোকে বাড়িতে বসে দেখছে। সবার সামনে কী করে রক্ষীবাহিনী নামিয়ে প্যাঁদাই, বলতে পারেন? ওকে বহুবার বলেছি সম্প্রচার বন্ধ করতে। আমার বাক্যে ভুল ধরতে সে এত ব্যস্ত, যে, বন্ধ করার সময় পায়নি।
রাজা: সংস্কৃতি, এ কি সত্য?
শিক্ষামন্ত্রী: (উঠে দাঁড়িয়ে) বন্ধ করিনি, একথা সত্য। সময় পাইনি কথাটা সঠিক নয় হুজুর।
রাজা: উফ, তোমাদের এই ঝগড়া বন্ধ কর। বন্ধই বা করোনি কেন? তোমরা কি আমাকে পাগল করে দেবে?
শিক্ষামন্ত্রী: কী করে বন্ধ করব জাঁহাপনা। শিল্পপতিরা বললেন, লোকে এখন ওটাই দেখছে বেশি। বলছে রিয়েলিটি শো। বন্ধ করে দিলে সাবান আর শ্যাম্পু বিক্রি কমে যাবে। আপনার মনের কথাই বা কী করে দেখবে লোকে।
রাজা: এ তো বিরাট সমস্যা।
শিক্ষামন্ত্রী: হ্যাঁ, হুজুর।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: এই সংস্কৃতিটাকে বরখাস্ত করে এইসব বকবকস্বাধীনতা কেড়ে নিন না। সিধে সৈন্য নামিয়ে দেব।
রাজা: উফ চুপ কর। একটু ভাবতে দাও।
রাজা এবং মন্ত্রীরা সবাই মাথা নিচু করে ভাবতে থাকে।
অভিনয়স্থলের সামনের দিকে টুল নিয়ে হাজির হয় একজন লোক (বা মহিলা)। একটু ফর্মাল জামাকাপড় পরা। এ হল দূরদর্পণের সঞ্চালক। হাতে একটা মাইকের মতো দেখতে লাঠি। প্রয়োজনে সত্যিকারের মাইকও ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্য দিক থেকে হাজির হয় দু-তিনজন দরিদ্র লোক।
সঞ্চালক: (টুলের উপর উঠে) সিংহপুর সীমান্ত থেকে আপনার দেখছেন, সরাসরি সম্প্রচার। অভাবনীয় হলেও সত্যি, এখানে মহারাজ ইব্রাহ্মিন লোদির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কিছু কৃষক। এমনকি কেউ-কেউ তাঁর মুণ্ডু চাইও বলছেন। এরকম লোকদের সচরাচর জেলের বাইরে পাওয়া যায় না। আপনারা এদের দেখতে পাবেন, কেবলমাত্র আমাদের দূরদর্পণে। আমরা সরাসরি জেনে নেব, এঁদের বক্তব্য। আপনারা শুনবেন বাড়িতে বসে। কেবলমাত্র আমাদের দর্পণে।
কৃষকদা, আপনারা লোদিজির মুণ্ডু চাই বলেছেন?
কৃষক ১: বলিনি। ওই আহাম্মকের মুণ্ডু নিয়ে আমরা কী করব? ফুটবল খেলব?
সঞ্চালক: আপনারা শুনলেন, সর্বভারতীয় দর্পণে লোদিজিকে আহাম্মক বলা হল। কেবলমাত্র আমাদের দর্পণেই। কৃষকদা, আপনি লোদিজিকে আহাম্মক বললেন কেন?
কৃষক ১: বেশ করেছি।
কৃষক ২: আহাম্মকটা আমাদের থেকে সব টাকা নিয়ে নিয়েছে। সবই নিজের ভান্ডারে জমা। এখন ভান্ডারটাই বেচে দেবে বলছে। এ তো যে কোনোদিন, নিজের সিংহাসনটাই বেচে দেবে।
সঞ্চালক: এই কারণে অন্যকিছু বলতে পারতেন, কিন্তু আহাম্মক?
কৃষক ১: বেশ তো, উনি কালিদাস। যে ডালে বসে আছেন, তারই গোড়া কাটেন।
সঞ্চালক: কালিদাস, মানে মহাকবি কালিদাস? লোদিজি কি কাব্য লিখেছেন? ওঁর কি কাব্যপ্রতিভা আছে? এর উত্তর জানতে পারবেন একটি বিজ্ঞাপন বিরতির পর। কেবলমাত্র আমাদের দর্পণে। সঙ্গে থাকুন, দেখতে থাকুন।
নাচতে নাচতে একটি মেয়ে ঢোকে। সঙ্গে গান: (ওয়াশিং পাউডার নির্মার সুরে)
ওয়াশিং পাউডার বড়দা
ধুয়ে ফেলে কাদা
করে দুধ সাদা
ব্যাপম জিও নারদা সারদা
যে দলে যে পক্ষে আছে বা বিক্ষুব্ধ
থলে ভরে কিনে এনে করবে শুদ্ধ
বোম্বে দিল্লি কলকাতা থেকে খড়দা
ওয়াশিং পাউডার বড়দা
গান শেষ হলে সূত্রধররা এগিয়ে আসে। সঞ্চালক আর কৃষকরা পাশে চলে যায়, বা বেরিয়ে যায়।
সূত্রধর ২: এ তো হেবি কেলো।
সূত্রধর ১: তা আর বলতে। তবে লোদিজি তো, ঠিক সামলে নেবেন।
রাজা: চুপ, চুপ, চুপ।
সূত্রধর রাজার পাশে দৌড়ে যায়।
সূত্রধর ১: আবার রোলকল করি হুজুর?
রাজা: না। উপায় পাওয়া গেছে।
সূত্রধর ১: তাহলে ওইটা বলি?
রাজা: বল।
সূত্রধর ১: লোদিবাবুর স্পেশাল জব।
মন্ত্রীরা: (সমস্বরে) সম্ভব করে অসম্ভব।
(তিনবার স্লোগান চলে)
রাজা: শান্ত হও, শান্ত হও।
সূত্রধর ১: শান্ত, শান্ত, শান্ত।
রাজা: আমাদের দেশে কৃষকদের কোনো সমস্যা আছে?
মন্ত্রীরা: (সমস্বরে) নেই জাঁহাপনা।
রাজা: তাহলে এরা এসব বলছে কেন?
মন্ত্রীরা: (সমস্বরে) অপপ্রচার জাঁহাপনা।
রাজা: অপপ্রচার কার প্ররোচনায়?
বিদেশমন্ত্রী: কার জাঁহাপনা?
রাজা: উফ। আমাদের শত্রু কে?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: পাকিস্তান।
রাজা: তাহলে প্ররোচনা কার?
মন্ত্রীরা: (সমস্বরে) পাকিস্তান, পাকিস্তান।
রাজা: তাহলে কর্তব্য কী?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: পাকিস্তানকে টাইট দেওয়া।
রাজা: উত্তম। অতি উত্তম। তাহলে সেই সিদ্ধান্তই হল।
বিদেশমন্ত্রী: (একটু কিন্তু কিন্তু করে) কিন্তু পাকিস্তান তো এখন কিছু করছেনা জাঁহাপনা।
রাজা: কিছু করছে না মানে? নিঃশ্বাসও নিচ্ছেনা?
বিদেশমন্ত্রী: সেটা নিশ্চয়ই নিচ্ছে হুজুর।
রাজা: তবে আর সমস্যা কী? বেঁচে যখন আছে, তখন শত্রুতাও করছে।
বিদেশমন্ত্রী: কিন্তু, এখানে তো কিছু করেনি। গুপ্তচরাও কোনো খবর আনেনি।
রাজা: উফ, এত কম বুদ্ধি নিয়ে চল কী করে। কিছু যদি না করে থাকে তো করাও।
বিদেশমন্ত্রী: কী করে জাঁহাপনা?
রাজা: মাথা খাটাও। বিদেশমন্ত্রী তুমি না আমি? সীমান্তের বাইরে যখন দৈত্য আছে, তার দায়িত্ব তোমার।
বিদেশমন্ত্রী: আমি? একা?
রাজা: না, সংস্কৃতিকেও সঙ্গে নাও। ঝামেলা যখন ওই পাকিয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী: আমি, হুজুর? আমার শিল্পীর আঙুল, কোকিলের মতো গলা, রাজহংসের মতো চলন। আমি এসব যুদ্ধবিদ্যার কী জানি।
রাজা: বাজে বোকো না তো। তোমাদের দু-জনের দায়িত্ব। পাকিস্তানকে দিয়ে কিছু করাও। আমার অন্য কাজ আছে। জামাকাপড়গুলো একটু ট্রায়াল দিই। বিকেলে মুম্বইয়ের লোকেদের সঙ্গে দর্শন দিতে হবে।
রাজা এবং বাকি মন্ত্রীরা উঠে পড়ে। অভিনয়স্থলের পাশের দিকে গিয়ে জামার ট্রায়াল দেয়। মঞ্চ হলে বেরিয়েও যেতে পারে।
বিদেশ: এ তো ফাটা বাঁশে ফেঁসে গেলাম।
শিক্ষা: পাকিস্তান নাকি দেখতে পেলেই কামড়ে দেয়।
বিদেশ: শুনতে পেলেও দিতে পারে।
শিক্ষা: জলাতঙ্ক হয় কি?
বিদেশ: হলেই বা তোর কী? তোর তো পানিতঙ্ক না হলেই হল।
শিক্ষা: ইয়ার্কি মেরো না বিদেশ দা। তোমার গুপ্তচরদের একটু ডাকো না। গুপ্তচর, অ্যাই গুপ্তচর।
বিদেশ: এটা কি তোর শাশুড়ি-বৌ সিরিয়াল নাকি রে। ওইভাবে ডাকলে কেউ আসবে না। (জোরে) গুপ্তচর, ইধার আও। জলদি।
একজন সাদামাটা পোশাকের লোক দৌড়ে ঢোকে। সেই গুপ্তচর। (এর পরে স্যার এবং ম্যাডাম সম্বোধন আছে, প্রয়োজনে বদলে নিতে হবে)
বিদেশ: সাবধান।
গুপ্তচর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
বিদেশ: স্যালুট মার।
গুপ্তচর স্যালুট মারে।
বিদেশ: বিশ্রাম।
গুপ্তচর আবার আলুথালু হয়ে দাঁড়ায়।
বিদেশ: কী করছিলি ব্যাটা? এত ডাকতে হয় কেন?
গুপ্তচর: খাচ্ছিলাম স্যার।
বিদেশ: সারাদিন শুধু খাইখাই।
গুপ্তচর: সারাদিন নয় স্যার। বলছে, এরপর আর খাবার-দাবার পাওয়া যাবে না। চাষীরা স্ট্রাইক করবে।
বিদেশ: কে বলছে? কোন দেশের অপপ্রচার?
গুপ্তচর: দেশ নয় স্যার। দূরদর্পণে দেখাচ্ছে।
বিদেশ: উফ। আবার দূরদর্পণ। যত অনিষ্টের মূল।
শিক্ষা: (কাঁদো কাঁদো হয়ে) কাজের কথায় এসো না বিদেশ দা। আমারও তো জলাতঙ্কের ভয়, আমার উপর চিৎকার করে কী হবে। ও গুপ্তচরভাই, পাকিস্তানের কোনো খবর রাখো?
গুপ্তচর: পাকিস্তান? না তো ম্যাডাম।
বিদেশ: তা তো রাখবেই না। সারাদিন শুধু দূরদর্পণ।
গুপ্তচর: না স্যার। বৌ তো দেখতেই দেয় না। সারাদিন শাশুড়ি-বউ সিরিয়াল চলছে।
শিক্ষা: ছাড় না বিদেশদা। ও গুপ্তচর ভাই। সে কোথায় আছে বলতে পার?
গুপ্তচর: বৌ? সে তো বাড়িতেই আছে।
বিদেশ: বৌ নয়রে আহাম্মক। পাকিস্তান।
গুপ্তচর: তা কী করে জানব স্যার। আমি তো বাড়িতে ছিলাম।
বিদেশ: (ভেঙিয়ে) তা কী করে জানব স্যার। আমি তো বাড়িতে ছিলাম। এইজন্য তোমাকে তংখা দেওয়া হয়?
গুপ্তচর: তবে মন্টু বলেছে স্যার, পাকিস্তানকে শেষ দেখা গেছে ইসলামপুরের জঙ্গলে। পরশু রাতে। ঘুমোচ্ছিল।
বিদেশ: মন্টু কে?
গুপ্তচর: আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট স্যার।
বিদেশ: তাও ভালো। অ্যাসিস্ট্যান্টগুলো তবু কাজ করে।
শিক্ষা: সে কি এখনও ওখানে আছে? গুপ্তচরভাই?
গুপ্তচর: মন্টু? না ম্যাডাম। ভয় পেয়ে পরশুই চলে এসেছে।
বিদেশ: (দাঁত খিঁচিয়ে) মন্টু না। পাকিস্তান।
গুপ্তচর: তা কী করে জানব স্যার। গিয়ে দেখতে হবে।
বিদেশ: তা যাও, দেখে এসো।
গুপ্তচর: ওরেবাবা। একা স্যার?
বিদেশ: মন্টুকে নিয়ে যাও।
গুপ্তচর: সে তো সিক লিভ নিয়েছে স্যার। শ্বশুরবাড়ি যাবে বলে।
বিদেশ: শ্বশুরবাড়ি যাবে বলে সিক লিভ? এটা পেয়েছ কী? মামার বাড়ি?
শিক্ষা: ও বিদেশদা। বলি কি, আমরাও একটু সঙ্গে যাই, নাকি? একটু সরেজমিনে দেখে আসি?
বিদেশ: পাগল নাকি? আর তোর নাকি জলাতঙ্কের ভয়?
রাজার প্রবেশ। বা পাশ থেকে সামনে আসা। নতুন উত্তরীয় ঝুলিয়ে।
রাজাঃ বিদেশ, সংস্কৃতি, কিছু এগোলো কাজ?
বিদেশঃ মেরেই এনেছি জাঁহাপনা।
রাজাঃ উত্তম। অতি উত্তম। দ্রুতগতিতে কাজ কর।
রাজার প্রস্থান। বা পাশে গিয়ে আবার পোশাকের ট্রায়াল দেওয়া।
বিদেশঃ চল তবে। কিন্তু দূর থেকে দেখব। কাছে একদম নয়।
তিনজনে মিলে পাকিস্তানকে খুঁজতে বেরোয়। এটা মঞ্চ হলে প্রস্থান এবং প্রবেশ। রাস্তা হলে পাকিস্তান দর্শকের মধ্যেই থাকবে। সেদিকে এগিয়ে যাওয়া হবে। পাকিস্তান নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। বসে বা চিৎ হয়ে, যেটা যেখানে দেখানোর সুবিধে।
তিনজনে হাঁটছে।
গুপ্তচরঃ ওই দিকে স্যার। ওর মধ্যেই ছিল।
তিনজনে হাঁটছে।
গুপ্তচরঃ চুপ, স্যার। কীসের যেন একটা শব্দ।
তিনজন চুপ।
গুপ্তচরঃ মনে হয় ওই দিকেই আছে।
বিদেশঃ বুঝলি কী করে? তোর জন্য শব্দ করছে নাকি?
গুপ্তচরঃ না স্যার, ঘুমোচ্ছে।
বিদেশঃ ঘুমোচ্ছে তো শব্দ করছে কী করে?
গুপ্তচরঃ নাক ডাকছে স্যার।
শিক্ষাঃ ওরে বাবা, নাক ডাকার এত আওয়াজ? তাহলে কথা বললে কী হবে?
গুপ্তচরঃ চুপ, চুপ।
তিনজনে আরও একটু এগোয়।
গুপ্তচরঃ ওই যে স্যার। ওই যে।
বিদেশঃ ওইটা? নাক ডাকাচ্ছে? ওইটা তো বেশ মানুষের মতোই লাগছে। দৈত্য তো না।
গুপ্তচরঃ ওইটাই পাকিস্তান স্যার। ঘুমোচ্ছে বলে ওরকম লাগছে। উঠলেই অন্য রূপ।
বিদেশঃ তোলা যায় না? দূর থেকে, কাছে যাস না।
গুপ্তচরঃ তুলব কেন স্যার?
বিদেশঃ খোঁচাতে হবে রে মর্কট।
গুপ্তচরঃ খোঁচাবো কেন স্যার?
বিদেশঃ ঘুম থেকে তুলতে হবে। দূর থেকে।
গুপ্তচরঃ তাহলে ইট মারি স্যার?
বিদেশঃ তোর প্রাণের ভয় নেই? যদি তেড়ে আসে?
শিক্ষাঃ পুষ্পক রথ ছোঁড়ো না।
বিদেশঃ এই আরেকজন। পুষ্পক রথ ছুঁড়বে? পুষ্পক রথ কি হাতের মোয়া? একেকটার ৬০০ কোটি টাকা দাম।
শিক্ষাঃ বিদেশদা, ওই রথ না। তোমরা ইশকুলে ছুঁড়তে না? এই দেখ।
শিক্ষামন্ত্রী একটা কাগজের এরোপ্লেন বানায়।
শিক্ষাঃ এবার ছোঁড়ো তো, গুপ্তচর ভাই।
গুপ্তচর এরোপ্লেন ছোঁড়ে। ঠিক জায়গায় পড়ে না। কুড়িয়ে আনে। আবার ছোঁড়ে। দু-তিনবারের পরে পাকিস্তানের লাগে। পাকিস্তান একটু নড়ে।
শিক্ষাঃ লেগেছে।
বিদেশঃ চুপ।
গুপ্তচরঃ নড়ছে।
পাকিস্তান একটু নড়ে।
গুপ্তচরঃ নড়ছে।
বিদেশঃ চুপ।
শিক্ষাঃ লেগেছে।
পাকিস্তান আবার নড়ে।
গুপ্তচরঃ নড়ছে।
বিদেশঃ চুপ।
শিক্ষাঃ দেখে ফেলবে কিন্তু।
পাকিস্তান এবার গর্জন করে আড়মোড়া ভাঙে।
গুপ্তচরঃ ওরে বাবা।
বিদেশঃ দেখে ফেলল নাকি?
শিক্ষাঃ পালাও বিদেশদা।
তিনজনে মিলে দৌড় লাগায়।
বিদেশঃ (গুপ্তচরকে) তুই পালাচ্ছিস কোথায়? লুকিয়ে নজর রাখ।
দুজনে দৌড়য়। রাস্তা হলে দৌড়ে আবার রাজার কাছে। মঞ্চ হলে রাজা আর এই দুজন উল্টোদিক থেকে মঞ্চে ঢোকে। রাজার এর মধ্যে পোশাকে আরও কিছু বদল হয়েছে।
রাজাঃ কী সংবাদ? হাঁপাচ্ছ কেন?
বিদেশঃ পাকিস্তানকে দেখে এলাম।
রাজাঃ খোঁচানো হয়ে গেছে? তর্জন গর্জন করছে?
বিদেশঃ করবে জাঁহাপনা। ঠিক করবে। আমার লোকেরা নজর রেখেছে।
রাজাঃ দেখো। বেশি দেরি যেন না করে। আমার আবার একটা নৈশভোজ আছে। সকালের মধ্যে সব ব্যবস্থা করে ফেলো।
রাজার প্রস্থান। মঞ্চ হলে প্রস্থান। রাস্তা হলে আবার পুরোনো জায়গায় গিয়ে খাওয়া দাওয়া শুরু করে।
ওদিকে পাকিস্তান আবার ঘুমিয়ে পড়ে। এটা অবশ্য মঞ্চ হলে দেখা যাবে না।
বিদেশঃ এ তো আচ্ছা ঝকমারি হল। পাকিস্তান কি গর্জন করছে? জানার কোনো উপায় নেই।
শিক্ষাঃ আবার গিয়ে দেখতে হবে মনে হচ্ছে।
হাঁপাতে হাঁপাতে গুপ্তচরের প্রবেশ।
শিক্ষাঃ কী গুপ্তচর ভাই। পাকিস্তান কি গর্জন করছে?
গুপ্তচরঃ না ম্যাডাম।
বিদেশঃ তবে পালিয়ে এলি কেন। ভিতুর ডিম।
গুপ্তচরঃ আবার ঘুমিয়ে পড়েছে স্যার। আমি বসে থেকে কী করব। বড্ড মশা।
বিদেশঃ কী করি বলতো সংস্কৃতি। এ তো সারাদিন বসে বসে পুষ্পক রথ ছুঁড়ে মারতে হবে মনে হচ্ছে। ভুর্জপত্রের বান্ডিল লাগবে।
গুপ্তচরঃ অর্ডার দিলেও পাওয়া যাবে না স্যার। চাষীরা রাস্তা আটকে দিয়েছে।
শিক্ষাঃ সে কী?
গুপ্তচরঃ দর্পণে দেখাচ্ছে তো। দেখুন না।
দূরদর্পণের সঞ্চালক আবার হাজির হয়।
সঞ্চালকঃ (টুলের উপর উঠে) আপনারা আবার দেখছেন সরাসরি সম্প্রচার। এবার আর আর সিংহপুর না। অভাবনীয় হলেও সত্যি, বিক্ষোভ চলে এসেছে দিল্লি দরবারের কাছে। গোটা রাজপথ আটকে দিয়েছে একদল লোক। গোটা রাজপথ। খানকতক গরুর গাড়ি ছাড়া আর কিছু চলছেনা। আমরা সরাসরি চলে যাব বিক্ষোভকারীদের কাছে। কৃষকদা, কৃষকদা, আপনাদের দাবি কী?
কৃষকঃ (চিৎকার করে) বেচারামের পদত্যাগ।
সঞ্চালকঃ আপনি মহামহিম লোদিজিকে বেচারাম বললেন?
কৃষকঃ লোদিজিকেই বলেছি, আপনি জানলেন কীকরে? আমি কারো নাম করেছি?
সঞ্চালকঃ না, মানে, আপনাদের দাবি তো লোদিজির বিরুদ্ধেই।
কৃষকঃ কী দাবি বলুন তো?
সঞ্চালকঃ এই যে, উনি গোটা কোষাগারটাই বেচে দিচ্ছেন। আর দেশের লোক না খেয়ে আছে।
কৃষকঃ এই দেখুন, দুনিয়াশুদ্ধ সবাই জানে, লোদিজি কী করছেন। শুধু আমরা না, খাস দর্পণের লোকেরাই বলছে। কী, বলছেন তো?
সঞ্চালকঃ কৃষকদা, ও কৃষকদা, জানলেই কি আর সব কথা বলা যায়। আমরা তো সর্বভারতীয় দর্পণে...
শিক্ষাঃ অ্যাই, অ্যাই কী হচ্ছে। সম্প্রচার বন্ধ। এখনই। এ তো আচ্ছা ঝামেলা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীটা পিছনে পড়েই আছে। বীর হনুমান তো, এসব দেখলে ল্যাজে আগুন লাগিয়ে লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে দেবে।
কৃষকরা এবং সঞ্চালক ফ্রিজ করে যায়। একজন প্ল্যাকার্ড হাতে অবতীর্ণ হয়। তাতে লেখাঃ "অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত"।
শিক্ষাঃ অ্যাই দর্পণওয়ালা, অ্যাই দর্পণ, তুমহারা পরিচালককো বুলাও।
গুপ্তচরঃ কিন্তু ম্যাডাম, পাকিস্তান?
শিক্ষাঃ চোপ। দেখছ, ঝামেলার শেষ নেই। শত্রু চার দিক থেকে ঘিরে ধরেছে। ওটা তোমরা সামলাও।
গুপ্তচরঃ একা?
শিক্ষাঃ ন্যাকা। কী হল, দর্পণের পরিচালক কই?
পরিচালক দৌড়ে আসে। এটা সঞ্চালক নিজেও হতে পারে। কেবল মাথায় একটা টুপি পরে নিয়েছে। বিদেশ আর গুপ্তচর চিন্তামগ্ন ভাবে মাথা নাড়তে নাড়তে অন্য দিকে যায়।
পরিচালকঃ ম্যাডাম, ম্যাডাম।
শিক্ষাঃ উজবুক।
পরিচালকঃ ম্যাডাম, কেস হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষাঃ এখনও যাচ্ছে? কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক হওয়া যায়, অ্যাঁ?
পরিচালকঃ (চিন্তান্বিত মুখে) সে তো জানি না।
শিক্ষাঃ কী জান? তোমাদের দর্পণের বার্ষিক বাজেট কত মুদ্রা? সেটা জান?
পরিচালকঃ এই রে।
শিক্ষাঃ এটাও জানো না তো?
পরিচালকঃ একটু জেনে নিয়ে কাল বলি ম্যাডাম?
শিক্ষাঃ কাল কী করে বলবে?
পরিচালকঃ কাস্টমার কেয়ারে ফোন করব না হয়। ওরা পেরে যাবে ম্যাডাম।
শিক্ষাঃ কাল তো তুমি কারাগারে থাকবে। জেলের ভাত কেমন জান তো অন্তত? দেশদ্রোহী স্পেশাল?
পরিচালকঃ (হাত জোড় করে) ম্যাডাম, ম্যাডাম...
শিক্ষাঃ বল তো, কোন অপরাধে দীর্ঘমেয়াদে সংসার গারদে থাকিবে?
পরিচালকঃ কোন অপরাধে ম্যাডাম?
শিক্ষাঃ ওই যে তোমাদের বাজেট জিজ্ঞাসা করলাম। তোমাদের বাজেটের টাকা কোথা থেকে এসেছে? লোদিজির ভাণ্ডার বিলাও প্রকল্প থেকে। তোমরা তো সেই অর্থ নয়ছয় করছ হে।
পরিচালকঃ নয়ছয়?
শিক্ষাঃ রাহাজানি, লুট। নইলে লোদিজির অর্থ নিয়ে এইসব দেখাও?
পরিচালকঃ কিন্তু আমরা কী রাহাজানি করলাম ম্যাডাম। যা ঘটছে তাইই তো দেখাচ্ছি।
শিক্ষাঃ দেখা। হুঁ। দেখা। জুলিয়াস সিজার কি বলেছেন জানো? নিশ্চয়ই জানো না। বলেছেন, এলাম, দেখলাম, জয় করলাম। আর আমরা কী বলি জানো? জয় করলাম, এলাম, দেখলাম। তুমি যা দেখাবে লোকে তাই দেখবে, আগে তো জয় করে ফেলতে হবে। এইজন্যই আমাদের স্লোগানঃ ভিনি ভিসি ভিডি, লেলিয়ে দেব ইডি। কেমন হয়েছে?
পরিচালকঃ (ভয়ে ভয়ে) দারুণ। আপনার লেখা?
শিক্ষাঃ না, আমার লেখা না। কিন্তু আমার অনুপ্রেরণায়। একই হল। কেউ শোনেনি, শুধু তুমি জেলে যাবার আগে রহস্যটা জেনে গেলে।
পরিচালকঃ বিশ্বাস করুন, আমাদের দোষ না। ওই কৃষক হারামজাদারা এত শয়তান, যে, আমাদের দিয়ে বলিয়ে ছাড়ছে। এই শয়তানের বাচ্চাদের...
শিক্ষাঃ আমাকে এসব বলে কী হবে?
পরিচালকঃ আর কার কাছে বলব ম্যাডাম। আর কে আছে আমাদের?
শিক্ষাঃ মরণ দশা। আর কে আছে? তোমার কাছে দর্পণ আছে। যাও সেখানে গিয়ে ওদের শয়তানের বাচ্চা বল।
পরিচালকঃ কিন্তু ম্যাডাম, দর্পণে তো ওভাবে বলা যায় না। দেখা যাবে তো সব...
শিক্ষাঃ তুমি ওদের শয়তানের বাচ্চা বললে এইমাত্র। সেটা বিশ্বাস করে বললে? না অন্য কোনো কারণে?
পরিচালকঃ বিশ্বাস করে ম্যাডাম। শত শতাংশ। ওই শয়তানের বাচ্চারা আমার জিনা হারাম করে দিয়েছে। এবার ওদের জন্য জেলেও যেতে হবে।
শিক্ষাঃ সংবাদমাধ্যমের কাজ কী পরিচালক?
পরিচালকঃ ইয়ে, মানে...
শিক্ষাঃ যা সত্য, তাই বিশ্বাস করা। আর যা বিশ্বাস করে, তাই বলা। তাহলে তোমার কী কাজ?
পরিচালকঃ যা বিশ্বাস করি তাই বলা।
শিক্ষাঃ তুমি কী বিশ্বাস কর?
পরিচালকঃ ওই শয়তানের বাচ্চারা আমার জিনা হারাম করে দিয়েছে।
শিক্ষাঃ তাহলে দাঁড়িয়ে কেন? যাও। যাও।
পরিচালক দৌড় লাগায়। বাইরে বেরিয়ে যায়।
শিক্ষাঃ এবার আবার কী গোলমাল পাকবে কে জানে।
বিদেশ আর গুপ্তচর আবার ফিরে আসে শিক্ষার কাছে।
বিদেশঃ আমার মাথায় কিছু আসছে না।
শিক্ষাঃ আমারও না।
পরিচালক এবার সঞ্চালক হয়ে দৌড়ে ফিরে আসে। কৃষকরা ফ্রিজ হয়ে ছিল। এবার আবার সম্প্রচার শুরু হয়।
সঞ্চালকঃ আবার সরাসরি দেখছেন, দিল্লির সীমান্ত থেকে। এখানে কিছু দুর্বৃত্ত, কিছু শয়তানের বাচ্চা, মাপ করবেন আমার ভাষার জন্য, রাস্তা দিয়েছিল আটকে। কিন্তু জনতার প্রতিরোধে তার আর চিহ্নমাত্র নেই। এখন কৃষকরা সবাই লোদিজিকে ভালোবাসছেন। যারা বাসছে না তারাই পাকিস্তান। এখানে চলছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এবং লোদিজির পক্ষে জয়ধ্বনি। আপনারা শুনতে পাচ্ছেন, একমাত্র আমাদেরই দর্পণে...
কৃষকঃ লোদিজির চামড়া
সমস্বরেঃ গুটিয়ে নেব আমরা
কৃষকঃ মোটার ভুঁড়ি করব লিক
সমস্বরেঃ আমরা হলাম আঞ্চলিক।
সঞ্চালকঃ (একটু অপ্রস্তুত হয়ে) এতক্ষণ শুনলেন লোদিজির নামে জয়ধ্বনি। উচ্ছ্বাসের নানারকম বহিঃপ্রকাশ হয়। চলছে উচ্ছ্বাস। কারণ এটা বসন্তকাল। এই বসন্তে এবার একটা ছোট্টো বিরতি। শুনুন উচ্ছ্বাসের গান। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিশেষ করে বেঁধেছে লোদিজির জয়ধ্বনি দেবে বলে।
গানঃ
নাজি দখিন দুয়ার খোলা
এসো হে এসো হে এসো হে
আমার নরেন্দ্র এসো
দিব পিছনে গুঁজে আছোলা।
তিনজনে মাথায় হাত দিয়ে বসে চিন্তামগ্ন হয়ে পড়ে।
সূত্রধর ২: কেলোর কীর্তি তো কমছে না গো দাদা।
সূত্রধর ১: তোর কী? তুই দেখতে থাক না। যা জট পেকেছে, সেকেন্ড হাফে দেখ খোলে কীকরে।
পথনাটিকা হলে না দিলেও হয়। কিন্তু সম্ভব হলে দেওয়াই ভালো। লোকে একটু জটটা নিয়ে ভাববে।