এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বাঙালির জাত গোখরো 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ জুলাই ২০২৫ | ১২৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • জাত গোখরো চতুর্দিকে। জনৈক অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী গতকাল বললেন শুনলাম, বাঙালির উপর কোথাও কোনো আক্রমণ হচ্ছেনা। রাগ করে লাভ নেই, বলিউডি নায়করা মূলত অশিক্ষিত, এঁদেরকে আক্রমণের লিস্টি, এনআরসির ইতিহাস বলে লাভ নেই। তার আগের দিন শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ভিন-রাজ্যের বাঙালি আতঙ্কিত নাকি মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে। জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে হচ্ছিল, যে, আগে বাঙালি তাড়ানো শুরু হয়েছে, না আগে ভাষণ? কিন্তু সেটা করেও লাভ নেই, কার্যকারণ সম্পর্ক গুলিয়ে না ফেললে হিন্দু বীর হওয়া যায়না। তাছাড়া ওই অর্ধেক-হিন্দি, সবদিক-বাঁচিয়ে-খেলা ভাষণের কারণে যদি কেউ বিপদে পড়েন, তাহলে মানতে হয়, যে রাজ্যে বিপদে পড়ছেন, সে রাজ্যের সরকারই বর্বর। ওটাতে কারো উপর কোনো থ্রেট একেবারেই ছিলনা। সত্যিকারের আপত্তিকর ভাষণ দিয়েছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তাঁর উগ্র এবং চরম আপত্তিকর ভাষণে বাংলার অসমীয়ারা আতঙ্কে? 

    এঁদের তবু একটা রাজনৈতিক চাদর আছে। রাজনৈতিক কারণে মাথায় গোলমাল বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু কাল একটু টিভি চালিয়ে দেখি, সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদার বলছেন। তিনি যা বললেন, সে তো যাকে বলে অতুলনীয়। বললেন, এই যে বাঙালি আক্রান্ত বলা হচ্ছে, এটা নাকি হুজুগ, ভিত্তিহীন ধুয়ো তোলা। যে খবরগুলো আমরা পাচ্ছি, সেগুলো নাকি উড়ো খবর। এবং তারপর যা বললেন, তা উচ্চ ও মধ্যবিত্ত বাঙালির মনের কথা। শুধুমাত্র কতিপয় পরিযায়ী শ্রমিক ছাড়া শিক্ষিত, উচ্চপ্রতিষ্ঠিত কারও তো এতে কোনো অসুবিধে হচ্ছেনা। 

    বিশ্বের অন্য কোনো জায়গায় এইসব বললে ঢি-ঢি পড়ে যেত। কিন্তু ভদ্র বাঙালি এবং গোদি মিডিয়ার প্রিয় স্লোগান হল, আমাদের ছেলেমেয়েগুলো সব বেঙ্গালুরু চলে গেল গো, আর অনুপ্রবেশে বাংলা ভরে গেল। এই ব্রেনওয়াশড তথাকথিত শিক্ষিত লোকজনকে পরিসংখ্যান দিয়ে লাভ নেই। কিন্তু ইনি তো আরজি কর আন্দোলনের সময় আগুনে বক্তব্য রাখতেন। এঁকে শুধু বলি, আরজি করের সময় বাংলার গুচ্ছের লোক যদি বলতেন, একটাই তো রেপ হয়েছে, আমাদের চারদিকে তো কেউ হচ্ছেনা, অতএব এগুলো হুজুগ, ভিত্তিহীন ধুয়ো তোলা, তাহলে ওঁর কেমন লাগত? সরকারি প্রতিষ্ঠানে একটা খুন হলেও সেটা হইচই করার জন্য যথেষ্ট, একটা বাঙালিকেও বিএসএফ পুশব্যাক করে বেআইনীভাবে বাংলাদেশে পাঠালেও সেটা মারাত্মক। যদিও একের চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে। উচ্চবিত্তসমাজে বসে টের পাচ্ছেন না, কারণ, সত্যিই তো ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-আইটির লোককে তো ঠ্যাঙানো হচ্ছেনা। যাদের হচ্ছে, তাদের প্রতি এই তাচ্ছিল্য সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ অনেক আগেই বলে গেছেন, যারে তুমি পিছে ফেল সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে। এরকম নিখুঁত বুকবাজিয়ে গরীব-মানুষের বিরুদ্ধে শ্রেণীযুদ্ধ ঘোষণা করার মতো ভয়ঙ্কর বক্তব্য না  রাখলে এগিয়ে-থাকুন-মিডিয়ায় আজকের দিনে কথা বলা মুশকিল। কিন্তু আসলে পশ্চাতে কোন ম্যানহোলে যে পৌঁছচ্ছেন, সেটা আপনার আন্দাজও নেই। 

    এবং এখানেই শেষ নয়। এরপর একজন বামপন্থীকে বলতে শুনলাম, চিনিনা, নাম ভুলে গেছি। শুরুই করলেন দেখলাম, ওখানে বিজেপি গোলমাল পাকাচ্ছে, এখানে মমতার ভোট বাড়ছে, এই জাতীয় একটা বক্তব্য দিয়ে। বাদবাকি যা বললেন, তা নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। মমতাকে গাল পাড়া নিয়েও নয়। কারণ ২০০৩ সালে মমতা সত্যিই তো নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে ছিলেন, সে নিয়ে গাল দিন না। আম্মো দিই। কিন্তু সমস্যা হল ওঁরাও এও এর পক্ষে ছিলেন, এনআরসিরও পক্ষে ছিলেন। তাহলে অন্য কোনো জিনিস খুঁজে নিয়ে গাল দিন, কোনো চাপ নেই। কিন্তু এটা কী? সেলিমের অসমাপ্ত লাইনের ভূত? বিজেমূল লাইন? তাই যদি হবে তো এই  দুদিন বেবি সায়েব অভিষেকের সঙ্গে জোটে একই ফ্রেমে কী করছিলেন?  এই নানা জায়গায় নানা ভুজুং দিয়ে তো ম্যানেজ করে নেওয়া আর যাবেনা। স্পষ্ট  একটা পক্ষ নিতেই হবে। 

    এগুলো আসলে আসলে বাম-ডান শিক্ষিত-অশিক্ষিতের ব্যাপার না। চাদরের নিচ থেকে ভুরভুর করে য বেরোচ্ছে তা হল শ্রেণী। এঁরা সবাই হলেন গোদি-মিডিয়া আশ্রিত মধ্যবিত্তপক্ষ। শ্রেণীগতভাবে উচ্চবিত্তের পক্ষে, এবং গোবলয়ের আধিপত্যের পক্ষে। ইচ্ছে করেই সবকটা উল্লেখ করলাম। ক্লিপ দিয়ে কাল ভিডিওও করে রাখব। কারণ এই যুদ্ধটা বাঙালি জিতবে কিনা এখনও জানা নেই। যদি না জেতে তো ভবিষ্যতের জন্য নথিভুক্ত হয়ে থাকবে। আর যদি জেতে, তো এঁদের জায়গা হবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। বাঙালি তার ছেলেপুলেকে গপ্পো বলবে, এই দেখ, যখন আমরা অস্তিত্বরক্ষার লড়াই লড়ছিলাম, এরা এই বলছিল। এবং অন্য যেকোনো জায়গায় এইসব বললে ঢিঢি পড়ে যেত। বাংলায় পড়েনি, কারণ, সত্যি কথা বলতে কি, প্রচণ্ড সংবেদনশীল, ভীষণ নরম, কিন্তু নিজের শ্রেণীর লোকজন ছাড়া আর কারো কিচ্ছু হলে কিচ্ছু এসে যায়না, এই জিনিস পৃথিবীর অন্যত্র এত প্রকটভাবে দেখা গেছে কিনা সন্দেহ। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অরিন | 202.36.***.*** | ২৫ জুলাই ২০২৫ ০৭:৫০732685
  • এই দোলাচলে ভোগা মধ‍্যবিত্ত শ্রেণীদের নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই। এরা লাইনে আসবে, পশ্চাদ্দেশে লাথি এদেরও পড়বে। আপাতত অস্তিত্ব বাঁচানোর একটা লড়াই সামনে, সেই যুদ্ধ নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:ed3d:e87:76fe:***:*** | ২৫ জুলাই ২০২৫ ০৭:৫৬732686
  • হুজুগ, উড়ো খবর !!! সর্ব ভারতীয় মিডিয়াতেও তো রিপোর্ট আসছে। 
    কলেজের গ্রুপে অন্য রাজ্যের বন্ধুদের সাথে কথা হয়, তারাও জানে যে বাঙালী পরিযায়ী শ্রমিকরা আক্রান্ত হচ্ছে, বিজেপি শাসিত রাজ্যে 
  • অরিন | 202.36.***.*** | ২৫ জুলাই ২০২৫ ০৮:২৯732688
  • "এই যে বাঙালি আক্রান্ত বলা হচ্ছে, এটা নাকি হুজুগ, ভিত্তিহীন ধুয়ো তোলা। যে খবরগুলো আমরা পাচ্ছি, সেগুলো নাকি উড়ো খবর। এবং তারপর যা বললেন, তা উচ্চ ও মধ্যবিত্ত বাঙালির মনের কথা। শুধুমাত্র কতিপয় পরিযায়ী শ্রমিক ছাড়া শিক্ষিত, উচ্চপ্রতিষ্ঠিত কারও তো এতে কোনো অসুবিধে হচ্ছেনা। "
     
    এই gaslighting এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। 
  • MP | 2401:4900:3141:2260:62ef:e903:e7ac:***:*** | ২৫ জুলাই ২০২৫ ০৮:২৯732689
  • লেখক সৈকতবাবু হক কথাই বলেছেন l তবে আমার মনে হয় , কোলকাতার মধ্যবিত্ত "বাবু" শ্রেণী নিজেকে আরো জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলছে ভিনরাজ্যে বাঙালী শ্রমিকের উপরে শুধুমাত্র বাংলা বলবার জন্যে নেমে আসা আক্রমণের প্রতিবাদ না করে l গতবছর আরজি করের ঘটনার সময়েই দেখেছি যে মুর্শিদাবাদের একটি বাঙালী মুসলমান দিনমজুর ছেলেকে বিফ খাবার জন্যে হরিয়ানাতে পিটিয়ে মেরে ফেলে দেওয়া হয় l কিন্তু আরজি কর আন্দোলনে লিপ্ত কোলকাতার বাবুরা তাতে সাড়াও দেননি l এর ফলেই এই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া l তবে সৈকতবাবু যেমন দেখাচ্ছেন যে , একটি দলমতধর্ম নির্বিশেষে বাঙালী জাতি যেদিন গঠিত হবে সেইদিন এরা সবাই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন l সেদিনের আশাতেই বসে আছি l 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন