এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  লিঙ্গরাজনীতি

  • গনিমতের মাল? নারীরা!

    Malay Roychoudhury লেখকের গ্রাহক হোন
    লিঙ্গরাজনীতি | ০৫ নভেম্বর ২০২২ | ২৮২৯ বার পঠিত
  • 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 | 31 | 32 | 33 | 34 | 35 | 36 | 37 | 38 | 39 | 40 | 41 | 42 | 43 | 44 | 45 | 46 | 47 | 48 | 49 | 50 | 51 | 52 | 53 | 54 | 55 | 56 | 58 | 59 | 60 | 61 | 62 | 63 | 64 | 65 | 66 | 67 | 68 | 69 | 70 | 71 | 72 | 73 | 74 | 75 | 76 | 77 | 78 | 79 | 80 | 81 | 82 | 83 | 84 | 85 | 86 | 87 | 88 | 89 | 90 | 91 | 92 | 93
    গনিমতের মাল? নারীরা! : মলয় রায়চৌধুরী

    এক



    ‘মাল’ শব্দটা আমাদের দেশে এসেছে আরবি ভাষা থেকে। কেবল বাংলা ভাষায় নয়, অন্যান্য ভারতীয় ভাষাতেও। অথচ প্রভাবশালী প্রথম ইসলামি শাসক তো আরব থেকে আসেননি, এসেছিলেন আফগানিস্তান থেকে যা সেই সময়ে ছিল পারস্য অর্থাৎ ইরানের অংশ। তাছাড়া বাবরের ভাষা ছিল চাঘতাই, যে ভাষায় উনি বাবরনামা লিখেছিলেন। তাঁদের পারিবারিক ভাষা আর রাজ্য চালাবার ভাষা ছিল ফারসি। বাবর যাঁকে পানিপতে হারিয়েছিলেন, সেই ইব্রাহিম লোদির ভাষা ছিল ফারসি। সুবে বাংলায় ঢাকা-মুর্শিদাবাদের শাসকদের পারিবারিক ও সরকারি ভাষা ছিল ফারসি। সরকারি কাজে যুক্ত বাঙালির ভাষা ছিল ফারসি। ইংরেজরা আসার আগে উচ্চবিত্ত বাঙালি পরিবার ফারসি শিখতেন। আমাদের সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা ফারসি শিখতেন। কলকাতা সুতানুটি গোবিন্দপুর হস্তান্তরের দলিল, যাতে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের কয়েকজন সদস্য ফারসিতে সই করেছিলেন, তা ফারসিতে লেখা। শের শাহ সুরি আফগান সেনাপতি হলেও তাঁর ভাষা ছিল ফারসি। ইরান আর তুর্কি থেকে সরাসরি যে শাসকরা এসেছিলেন এবং তখনকার ভারতে কোনও এলাকা শাসন করতেন, তাঁদের ভাষাও ছিল ফারসি। সেই সময়ের ভারতীয় ইসলামি শাসকরা সকলেই তুর্কি ও আরবিকে ফারসির তুলনায় অনুন্নত ভাষা মনে করতেন।

    উত্তর থেকে আসা ইসলামি শাসকদের বহু আগে  ইয়েমেন ও ওমান থেকে আরব ব্যবসায়ীরা দক্ষিণ ভারতে আসতেন মশলাপাতি কেনার জন্য। তাঁরা ‘মাল’ অভিব্যক্তি মালায়ালি-কন্নড়-তামিল  ভাষায় চাপাননি। তাঁরা অনেকে স্হানীয় নিম্নবর্ণের হিন্দু মেয়ে বিয়ে করে এদেশে সংসার পাততেন। তাঁদের বলা হতো ‘মাপপিলা’ বা জামাই। পর্তুগিজরা মাপপিলাকে মোপলা উচ্চারণ করতো। এখন কেরালায় বহু মোপলা মুসলমানের বাস, তারা রাজনৈতিকভাবে বেশ প্রভাবশালী। ১৮৭১-এর সেনসাস রিপোর্ট অনুযায়ী ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যে নিম্নবর্ণের সদস্যরা ছিল উচ্চবর্ণের দাস। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিষিদ্ধ করার আগে দাস কেনা-বেচার প্রথা ছিল সেখানে। আরব ব্যবসায়ীরা দাসীদের কিনে স্ত্রীর মর্যাদা দিতেন বলে ‘মাল’ অভিব্যক্তির প্রয়োজন হয়নি সেখানে।
     
    সংস্কৃত ও বাংলা ভাষাতেও ‘মাল’ শব্দ আছে বটে কিন্তু ‘আরবি. ভাষায় যে অর্থে প্রয়োগ হয় সেই অর্থে সংস্কৃত ও বাংলায় প্রয়োগ হতো না। আরবি ভাষায় ‘জিনিসপত্র’ ও ‘সম্পত্তি হিসাবে মানুষ’’ হলো ‘মাল’; সম্পত্তি হিসাবে নারী হলো ‘মাল’। লক্ষণীয় যে ‘মালাউন’ ও ‘বাইতুল মাল’ শব্দগুলোও এসেছে আরবি থেকে। বাংলায় ব্যবহৃত কয়েকটা নমুনা দিলুম :


    [মাল্‌, মালো] (বিশেষ্য) ১ জাতিবিশেষ। ২ সাপের ওঝা। ৩ সাপুড়ে। ৪ ‍হিন্দু সম্প্রদায়বিশেষের পদবি। মালবৈদ্য (বিশেষ্য) সর্পবিষের চিকিৎসা করে যে; সাপের ওঝা। {(তৎসম বা সংস্কৃত) মল্ল>}
    [মাল্‌] (বিশেষ্য) উন্নত ক্ষেত্র; উঁচু জমি। মালভূমি (বিশেষ্য) যে উন্নত বিশাল ক্ষেত্রের চারদিকের ভূমি যথেষ্ট নিচু। {(তৎসম বা সংস্কৃত) √মা+র(রন্‌)>(নিপাতনে)}
    [মাল্‌] (বিশেষ্য) কুস্তিগির; মল্লযোদ্ধা; বাহুযোদ্ধা। মালকোঁচা, মালকাছা (বিশেষ্য) দুই পায়ের মধ্য দিয়ে পেছনে গোঁজা ধুতি লুঙ্গি প্রভৃতির কোঁচা (তাহবন্দ উল্টাইয়া মালকাছা মারে-আবুল মনসুর আহমদ)। মাল-সাট (বিশেষ্য) ১ মালকোঁচা। ২ আস্ফালন; তাল ঠোকা। {(তৎসম বা সংস্কৃত) মল্ল>}
    [মাল্‌] (বিশেষ্য) মদ (মাল খেয়ে ওরা বে-সামাল হয় মোরাকাসি আর হাঁচি-কাজী নজরুল ইসলাম)। মাল-টানা (ক্রিয়া) (ব্যঙ্গার্থ) মদ খাওয়া; মদ্য পান করা। {(ফারসি) মাল}
    [মাল](পদ্যে ব্যবহৃত) [মাল্‌] (বিশেষ্য) মালা (মুকুতার মাল-কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী)। {(তৎসম বা সংস্কৃত) মাল্য> (প্রাকৃত) মল্ল>মাল}
    [মাল্‌] (বিশেষ্য) ১ ক্রয়বিক্রয়ের দ্রব্য; ব্যবসায়ের জিনিস; পণ্যদ্রব্য (দোকানের মাল)। ২ জিনিসপত্র; দ্রব্য; পদার্থ (মাল-গাড়ি)। ৩ ধনসম্পদ (সামলায় মাল মালওয়ালা-কাজী নজরুল ইসলাম)। ৪ রাজস্ব; খাজনা; কর (মালগুজার)। ৫ সরকারের খাজনা দেওয়া জমি। মাল কাটা (ক্রিয়া) পণ্যদ্রব্য বিক্রি হওয়া। মালক্রোক (বিশেষ্য) অস্থাবর সম্পত্তি আটক। মালখানা (বিশেষ্য) ১ বহু মূল্যবান ধনসম্পদ রাখার কক্ষ; ধনাগার; ধনকোষ। ২ খাজনাখানা (আাঁটা আঁটি সেই গড়ে থাকে মালখানা-ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর)। মালগাড়ি, মালগাড়ী (বিশেষ্য) বিবিধ দ্রব্য বহনকারী যান; মালবহনকারী রেলগাড়ি। মালগুজার (বিশেষ্য) যে রাজস্ব বা খাজনা দেয়; জমির মালিক। মালগুজারদার (বিশেষ্য) যে মালগুজারি বা খাজনা দেয়। মালগুজারি (বিশেষ্য) ভূমিকর; খাজনা; রাজস্ব (হাল গরু ক্রোক আকালের কালে করিতেও মালগুজারি-সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)। মালগুদাম (বিশেষ্য) যে ঘরে নানাবিধ মালপত্র রাখা হয়। মালজমি (বিশেষ্য) যে জমির খাজনা স্থির করা হয়েছে। মালজামিন (বিশেষ্য) ১ সম্পত্তির জামিন বা প্রতিভূ। ২ জমিন হিসেবে গচ্ছিত সম্পত্তি। মালদার (বিশেষণ) সম্পদশালী; ধনবান; ধনী। মালপত্র (বিশেষ্য) জিনিসপত্র; নানা দ্রব্য। মালমসলা (বিশেষ্য) উপাদান; উপকরণ; কোনো দ্রব্য প্রস্তুত করতে যে সমস্ত দ্রব্যের প্রয়োজন হয় (যিনি সভ্য হবেন তিনি সভ্যতার মালমসলা নিজের খরচেই যোগাবেন-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। মালমাত্তা (বিশেষ্য) ১ ধনসম্পদ; জিনিপত্র। ২ অস্থাবর সম্পত্তি। {(আরবি) মাল্‌}
    [মাল][মালাউন্‌, মালউন] (বিশেষণ) ১ লানতপ্রাপ্ত; অভীশপ্ত; বিতাড়িত; কাফের (অনাচারে কার সরদার মুসলিম অভিমানে ছাড়িয়ে গেল চিরতরে মালাউনকে-শাহাদাত হোসেন; মালাউনের ছুড়ির খোঁচায়-মুনীর চৌধুরী)। ২ শয়তান। ৩ মুসলমান কর্তৃক ভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়রে লোককে দেয় গালিবিশেষ। {(আরবি) মল্‌‘উন’}
    [মাল][মাল্‌কোশ্‌] (বিশেষ্য) সঙ্গীতের একটি রাগ। {(তৎসম বা সংস্কৃত) মালকৌশ>}
    [মাল] [মাল্‌ঝাঁপ্‌] (বিশেষ্য) বাংলা ছন্দের নাম; ত্রিপদী ছন্দবিশেষ। {(তৎসম বা সংস্কৃত) মল্ল+ঝম্প>}
    মালঞ্চ [মালোন্‌চো] (বিশেষ্য) পুষ্পোদ্যান; ফুলবাগান (আমি তব মালঞ্চের হব মালাকর-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। {(তৎসম বা সংস্কৃত) মালা+পঞ্চ> (প্রাকৃত) মালাঅংচ>মালঞ্চ} 
    মালতী [মালোতি] (বিশেষ্য) ১ এক প্রকার ফুল বা লতা। ২ চামেলি ফুল। ৩ একটি সংস্কৃত ছন্দের নাম। {(তৎসম বা সংস্কৃত) √মল্‌+অত(অতচ্‌)+ই(ইন্‌), +ঈ(ঙীষ্‌)}
    মালপুয়া, মালপোয়া, মালপো [মাল্‌পুয়া, মাল্‌পোয়া, মালপো] (বিশেষ্য) ময়দা বা চালের গুঁড়ায় তৈরি ঘিরে বা তেলেভাজা লুচিজাতীয় মিষ্ট খাবারবিশেষ (আমি মালপোর লাগি তল্পী বাঁধিয়া-কাজী নজরুল ইসলাম)। {(তৎসম বা সংস্কৃত) মাল+পূপ>}
    মালব[মালোব্‌] (বিশেষ্য) ১ মধ্য ভারতের প্রাচীন জনপদ বা দেশ। ২ সঙ্গীতের একটি রাগের নাম। {(তৎসম বা সংস্কৃত) মালব+অ(অণ্‌)}
    মালভূমি [মাল্‌ভূমি] (বিশেষ্য) উচ্চ সমতলভূমি (গোলান মালভূমি)। {(তৎসম বা সংস্কৃত) মাল+ভূমি}
    মালসা [মাল্‌শা] (বিশেষ্য) ১ হাঁড়িজাতীয় মাটির পাত্রবিশেষ (এক ছিলিম তামাক সাজাইয়া মালসা হইতে আগুন উঠাইল-কাজী আবদুল ওদুদ)। ২ মাটির তৈরি বড় সরা; তুষের আগুন রাখার পাত্র। {মালা+সা(সাদৃশ্যার্থে)}
    [মাল্‌সি]১ (বিশেষ্য) মাটির তৈরি ক্ষুদ্র সরা। {মালসা>} 
    [মাল্‌সি] ২ (বিশেষ্য) ১ সঙ্গীতের একটি রাগিণী। ২ কবিগানের অংশরূপে প্রচলিত শ্যামা সঙ্গীতবিশেষ। {(তৎসম বা সংস্কৃত) মালশ্রী>?}
    [মালা] (বিশেষ্য) ১ হার; মাল্য; পুষ্পনির্মিত মাল্য (বিদায় বেলার মালাখানি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। ২ বহুবচন প্রকাশক শব্দ (অনুষ্ঠানমালা); শ্রেণিসমূহ (তরঙ্গমালা, কথামালা)। 
    [মালা]মালাকর, মালাকার (বিশেষ্য) (বিশেষণ) ১ পুষ্পমাল্য রচনাকারী; মালী (আমি তব মালঞ্চের হব মালাকর-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। ২ হিন্দু বাঙালি জাতিবিশেষ। মাল্যচন্দন, মালাচন্দন (বিশেষ্য) পূজনীয় বা সম্মানিত ব্যক্তিকে হিন্দু পদ্ধতিতে বরণ করার উপকরণ; ফুলের মালা ও চন্দন। মালাবদল (বিশেষ্য) হিন্দু বিয়েতে বর ও কনের পরস্পর মালা বিনিময়। মালা জপা (ক্রিয়া) রুদ্রাক্ষ প্রভৃতি গুটিকা দ্বারা রচিত মালার দানা গণনা করে ঈশ্বরের নাম জপ করা; তসবিহ পড়া। {(তৎসম বা সংস্কৃত) মা+√লা+অ(ক)+আ(টাপ্‌)}
    [মালা, মালো] (বিশেষ্য) ধীবর; জেলে; হিন্দু সম্প্রদায়বিশেষ। {(আরবি) মাল্লাহ}
    [মালা] (বিশেষ্য) নারেকেলের বাটির আকারের অর্ধেক খোল। {(তৎসম বা সংস্কৃত) মল্লক>মল্লয়>বাংলা মালিয়া>মালা}
    [মালাই] (বিশেষ্য) দুধের সর। মালা কারি/কারী (বিশেষ্য) মিষ্টিবিশেষ; ময়মনসিংহে তৈরি এক রকম মিষ্টি। মালাই বরফ (বিশেষ্য) বরফে দুধে তৈরি মিষ্টি খাবারবিশেষ। {(ফারসি) বালাই}
    [মালাইচাকি] (বিশেষ্য) মানুষের জানুর বা হাঁটুর চক্রাকার অস্থি (ওটা নাকি লখিন্দরের মালাইচাকি-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। {(তৎসম বা সংস্কৃত) মালাচক্র>}
    [মালাদিপক্‌] (বিশেষ্য) দীপক নামক অর্থ অলঙ্কারের মালা। {(তৎসম বা সংস্কৃত) মালা+দীপক}
    [মালাবার্‌] (বিশেষণ) ১ দক্ষিণ ভারতের একটি প্রদেশ। ২ উক্ত প্রদশে সম্বন্ধীয়। ৩ উক্ত প্রদেশের অধিবাসী। {(তৎসম বা সংস্কৃত) মালাবার>}

    [বাইতুল মাল ]একটি আরবি শব্দ যার অর্থ “টাকাকড়ির ভাঁড়ার”। ঐতিহাসিকভাবে, এটি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যাকাত এর জন্য ইসলামী রাষ্ট্রর প্রশাসন, বিশেষত প্রাথমিক যুগে ইসলামিক খেলাফতে এটির কাজ ছিল। এটি খলিফা ও সুলতানদের জন্য ব্যক্তিগত আর্থিক এবং সরকারী ব্যয় পরিচালনার জন্য একটি রাজকীয় কোষাগার হিসাবে কাজ করত। এছাড়া, এটি সরকারিভাবে যাকাত বিতরণ পরিচালনা করত। প্রাচীন আরবে ‘বায়তুল মাল’ নামের বিভাগটি রাজ্যের রাজস্ব এবং অন্যান্য সমস্ত অর্থনৈতিক ব্যাপারে কাজ করতো। নবীর সময়ে কোনও স্থায়ী বায়তুল-মাল বা সরকারী কোষাগার ছিল না। যা কিছু রাজস্ব বা অন্যান্য টাকাকড়ি যোগাড় হতো তা তাৎক্ষণিকভাবে বিতরণ করা হতো। সুতরাং জনসাধারণের জন্য কোষাগারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হয়নি। আবু বকর এমন একটি বাড়ি রেখেছিলেন যেখানে সমস্ত টাকা রসিদে রাখা হয়েছিল। সমস্ত অর্থ তৎক্ষণাৎ বিতরণ করা হওয়ায় সাধারণত কোষাগারটি খালি থাকত। আবু বকরের  মৃত্যুর সময় সরকারী কোষাগারে একটি মাত্র দিরহাম ছিল। অথচ আজকাল বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবির ‘বাইতুল মাল’ নামে তোলা আদায় করেন, অনেকটা আমাদের এখানে ‘পার্টির’ আর পুজোর চাঁদা তোলার মতন। বায়তুল মালের নামে শিবির তার সংগঠনের কোষাগারের জন্য চাঁদা তুলে আসছে বছরের পর বছর। শিবিরের চাঁদা আদায়ের রশিদে বায়তুল মাল লেখা থাকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারুক হত্যাকাণ্ডের পরপরই শিবিরের বেশ কিছু গোপন নথি উদ্ধার করে বাংলাদেশ পুলিশ। উদ্ধার করা শিবিরের গোপন নথিপত্রে মিলেছে এসব চাঁদাবাজির নজির। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিবিরের চাঁদাবাজি থেকে রেহাই পায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বল্প বেতনের মালি-ঝাড়–দার  থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের ক্ষুদ্র দোকানির কেউই। রাবি শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ছাত্র শিবির নিয়ন্ত্রিত রুমগুলোতে কয়েক দফায় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ উদ্ধার করেছে তাদের চাঁদাবাজির তালিকা। শিবিরের নির্বিচার চাঁদাবাজি থেকে বাদ পড়েনি ওই হলের কর্মচারীরাও।সোহরাওয়ার্দী হল থেকে উদ্ধার করা শিবিরের চাঁদাবাজির তালিকায় দেখা যায়, তারা হলের ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে নিয়মিত ধার্য করা চাঁদা তুলত। এদের মধ্যে হলের মালি জাবের ও লোকমানের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে, চান মিয়ার কাছ থেকে ১০০ টাকা, ঝাড়ুদার সাইদুরের কাছ থেকে ১০০ টাকা; প্রহরী আলাউদ্দিন, চান মিয়া, মোহাম্মদ আলী ও রাজ্জাকের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে; প্রহরী আমজাদের কাছ থেকে ৩০ টাকা; ক্যান্টিন ম্যানেজার আবুল হাশেমের কাছ থেকে ১০০ টাকা; লাইব্রেরি কর্মচারী আজহার আলীর কাছ থেকে ১০০ টাকা; ডাইনিং কর্মচারী ইসমাইলের কাছ থেকে ৫০ টাকা; গেমরুমের কর্মচারী আলী ও আশরাফের কাছ থেকে ১০০ টাকা কওে; ক্রীড়াশিক্ষক মন্টু সিংয়ের কাছ থেকে ৩০০ টাকা এবং ডাইনিং কর্মচারী হকের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করেছে শিবির। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও চাঁদাবাজি করেছে শিবির। সোহরাওয়ার্দী হল থেকে উদ্ধার করা শিবিরের চাঁদা আদায়ের একটি রসিদে দেখা গেছে, তারা নানা প্রক্রিয়ায় হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত নিয়মিত চাঁদা আদায় করেছে। সোহরাওয়ার্দী হলের কাছেই বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন বাজার এলাকা। হলের আশপাশেও রয়েছে বেশকিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর দোকান। স্বল্পপুঁজির এসব ব্যবসায়ীর কাছে থেকেও নিয়মিত চাঁদা নিতো শিবির। 

    ওপরে দেয়া ‘মাল’ ও মাল সম্পর্কিত কোনও শব্দ ইঙ্গিত করে না যে যুবতীদের ‘মাল’ বলা হয়েছে। অন্যান্য ব্যাপারের সঙ্গে  টাকাকড়ি সোনাদানা ইত্যাদিকে ‘মাল’ বলা হয়েছে। তাহলে হঠাৎ করে যুবতীদের ‘মাল’ বলা হয় কেন? কবে থেকেই বা বলা আরম্ভ হলো? শিশু আর বৃদ্ধাদের তো বলা হয় না। 


    দুই

    আসিফ মহিউদ্দিন-এর ব্লগে পড়ছিলুম বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ঘটনা এবং তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন ‘গনিমতের মাল’ অভিব্যক্তি। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি সেনারা আর তাদের বাংলাদেশি দোসররা যে যুবতীদের তুলে নিয়ে যেতো তাদের বলতো ‘গনিমতের মাল’ এবং তাদের কুকর্ম যুদ্ধাচরণ-সংহিতা অনুমোদিত। আসিফ মহিউদ্দিনের লেখা থেকে তুলে দিচ্ছি; তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে যুদ্ধে পাওয়া অপরপক্ষের যুবতীরা ‘মাল’ হিসাবে গণ্য করা হয়। 

    “আমরা বাঙালিরা ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি। এই যুদ্ধে আমাদের প্রায় দুইলক্ষ নারী ধর্ষিত হয়েছে পাকবাহিনীর হাতে। বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা আজকে জানি, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সহ বাঙলাদেশেরই কিছু ইসলামপন্থী গোষ্ঠী যেমন জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলো রাজাকার আলবদর আলশামস নামক নানা বাহিনী গঠন করে বিভিন্ন কায়দায় তাদের ধর্ষণ করেছে। এরকম অনেক প্রমাণও রয়েছে যে, একটি কক্ষের ভেতরে নগ্ন করে বাঙালি যুবতী মেয়েদের রাখা হতো, যেন তারা জামা দিয়ে গলার ফাঁস বানিয়ে আত্মহত্যা করতে না পারে। সেই প্রবল ধর্ষণ আর অত্যাচারে আমাদের মা এবং বোনেরা আত্মহত্যার চেষ্টা করতো, কিন্তু পাকবাহিনী তাদের মরে যেতেও দিতো না। কারণ মৃত মেয়েরা আর ধর্ষণের উপযোগী থাকে না। আবার সেই পাকবাহিনী বৃদ্ধা দেখলে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যেত না, ওখানেই গুলি করে মেরে ফেলতো। কারণ বৃদ্ধা রমণী ধর্ষণের উপযোগী নয়।সেই সময়ে যেই পাকসেনাবাহিনীর সাথে হাজার হাজার রাজাকার, আলবদর, আলশামস এসে দলে দলে যোগ দিয়েছিল, তার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল সম্পত্তি লুটপাট, নারী ধর্ষণ এবং রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান হয়ে ওঠা। এই যে পাকবাহিনী এবং তাদের এদেশীয়় চামচা রাজাকার, আলবদরদের সীমাহীন অত্যাচার- আপনারা যদি পাকবাহিনীর সেনাদের বা রাজাকার আলবদরদের কাছ থেকে ৭১ এর ইতিহাস শোনেন, কি জানবেন আমি বলে দিতে পারি।রাজাকার বাহিনীও একই কথা বলেছে দীর্ঘসময়। তারা প্রথমত স্বীকারই করেনি ধর্ষণের কথা। এরপর প্রমাণ দেয়া হলে তারাও পাকবাহিনীর মতো একই কথা বলে নিজেদের অপরাধকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছে। আপনাদের কি কথাগুলো হজম হচ্ছে? আপনি মানুষ হলে অন্তত কথাগুলো হজম হওয়ার কথা নয়। কথাগুলা কোন বাঙালির পক্ষেও হজম করা সম্ভব না। কি নারকীয় ধর্ষণ আর হত্যাযজ্ঞই না চালিয়েছে পাকবাহিনী আমাদের উপর। কিছু বর্ণনা দিতেই হচ্ছে।
    • ধরা পড়া কোন মেয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়লে সেই মেয়েগুলো আর ধর্ষণের উপযোগী থাকবে না। তাই গর্ভবতী হয়ে গেলে তাদের এক রাতে কয়েকজন মিলে ধর্ষণ করে পেট চিরে ফেলত। গর্ভবতী হয়ে গেলে আর ধর্ষণ করা যাবে না, তাই ভিন্ন পদ্ধতিতে তাদের সাথে সঙ্গম করা হতো, যাতে বাচ্চা জন্ম না নেয়। 
    • আবার বয়ষ্ক মহিলারাও ধর্ষণের উপযোগী নয়। তাদেরকে রাখা হতো ক্যাম্পের কাজের মানুষ হিসেবে এবং দেখা হতো তাদের ধর্ষণ করা সম্ভব কিনা, অথবা মেরে ফেলা হতো।
    • এমনও দেখা গেছে, স্তন ছোট বা গায়ের রঙ কালো হলে সেসব মেয়েদের একবার ধর্ষণ করেই মেরে ফেলা হয়েছে।
    “আপনারা সকলেই হয়ত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভালোভাবে পড়েছেন। ঘটনাগুলো আপনারা জানেন, তারপরেও প্রাসঙ্গিকভাবেই বললাম। যুদ্ধবন্দীদের সাথে ইতিহাসে নানা যুদ্ধে কী কী আচরণ করা হয়েছে তা আপনারা সকলেই কমবেশি জানেন। সেগুলো নতুন করে ব্যাখ্যা করবার কিছু নেই। কোন গোত্রে আক্রমণ করা হলে, সেই সব গোত্রের সকল পুরুষকে হত্যা করে সেখানেই ধর্ষণযজ্ঞে মেতে উঠতো বিজয়ী বাহিনী। কোন দেশ আক্রমণ করা হলে, সেই দেশের নারীদের ওপর নেমে আসতো সীমাহীন নির্যাতন। মাসের পর মাস বছরের পর বছর ধরে ধর্ষণ করা হতো তাদের। সেরকম অবস্থায় সেই ধর্ষণ সহ্য করা ছাড়া মেয়েদের আর কোন উপায়ও থাকতো না। পুরো পরিবারকে হত্যা করে যখন বিজয়ী বাহিনী অস্ত্র হাতে একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে, সেই সময়ে একটা মেয়ের কী বা করার থাকতে পারে? এমনকি, ভারতে এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যে, কোন অঞ্চলের সব মেয়ে শত্রুর আক্রমণের ভয়ে একসাথে আত্মহত্যা করে ফেলেছে। কারণ তারা জানতো, শত্রু বিজয়ী হলে তাদের সাথে কী করা হবে। আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে দেয়া হবে না।” যুদ্ধ চলাকালে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে যেসব সম্পদ শত্রুর কাছ থেকে হস্তগত হবে তা গনীমত আর যুদ্ধ শেষে দেশ দারুল ইসলামে রূপান্তরিত হওয়ার পর যেসব সম্পদ হস্তগত হবে তা ‘ফাই’ হিসেবে পরিগণিত হবে।”

     বলা বাহুল্য, আসিফ মহিউদ্দিনের পোস্টের বিরুদ্ধে প্রচুর মন্তব্য। হয়তো বিভিন্ন আইটি সেলের কাজ, বা পাকিস্তানি সমব্যথিদের ক্রোধের প্রকাশ। ‘গনিমত’ শব্দটা এসেছে আরবি ‘আল-গনিম’ থেকে। ‘আল গনিম’ নিয়ে সুন্নি ও শিয়াদের মাঝে মতভেদ আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ে শর্ষীনার পীর বাঙালি নারীদের ‘গনিমতের মাল’ হিসেবে পাকবাহিনী এবং রাজাকার আলবদরদের ভোগ করার ফতোয়া দিয়েছিলেন। ইতিহাসের অন্যরা কী একই কাজ করেন নি?  অনেকেই করেছেন, আলেক্সান্ডার-আত্তিলা থেকে আরম্ভ করে, যারা অপর একটি দেশ আক্রমণ করে জেতার মুখ দেখছিল তারা যুবতীদের ‘মাল’ হিসেবে লুটপাট চালিয়ে তুলে নিয়ে গেছে। ১৬৩৫ সালে মুঘল সম্রাট শাহজাহান বুন্দেলখণ্ড আক্রমণ ও দখল করেন। বুন্দেলখণ্ড দখলের পর বুন্দেলা রাজা বীর সিংহের পরিবারের নারীরা মুঘল বাহিনীর হাতে বন্দি হন। এসব বন্দি নারীদের জোর করে ধর্ম পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হয় এবং তারা মুঘল সৈন্য বা সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন। 

    আরবরা লুটের ‘মাল’কে কোডিফাই করেছিল। অন্যান্য দেশ তা করেনি, যদিও যুদ্ধের সময়ে নারীদের যৌন-নিপীড়ন চালিয়েছে প্রতিটি দেশের সৈন্য। ধর্ষণ করা যায় এমন নারীদের ‘মাল’ বলার সূত্রপাত ‘গনিমতের মাল’ শব্দ থেকে, ৬১০ খৃষ্টাব্দ নাগাদ, যবে থেকে যুদ্ধাচরণ সংহিতায় লুটের জিনিসপত্রের সঙ্গে যুবতীদেরও বন্দী করে ‘মাল’ হিসেবে তুলে নিয়ে যাবার পাপবোধ থেকে আক্রমণকারীদের মুক্ত করা হলো। চেঙ্গিজ খান ( প্রকৃত নাম ছিঙ্গিস খাং ) বহু দেশ আক্রমণ করে ছারখার করে দিয়েছিলেন ; তিনি নিজে আর তাঁর সেনারা আক্রান্ত দেশটিতে অবিরাম ধর্ষণ চালাতেন, কিন্তু মোঙ্গলিয়ায় তাদের বন্দি করে নিয়ে যেতেন না, কেননা মোঙ্গোলিয়ায় অন্য রক্তের প্রজন্ম গড়ে উঠুক, তা তিনি চাননি। একই ব্যাপার ল্যাঙড়া  তৈমুরের ক্ষেত্রে ; তিনি ও তাঁর সেনা দিল্লিসহ বহু দেশের শহর ধ্বংস করার আগে ধর্ষণযজ্ঞ চালিয়েছিলেন, কিন্তু উজবেকিস্তান ও মোঙ্গোলিয়ায় অন্য দেশের নারীদের তুলে নিয়ে যাননি।তাঁর সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল আধুনিক তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক, কুয়েত, ইরান থেকে মধ্য এশিয়ার অধিকাংশ অংশ যার মধ্যে রয়েছে কাজাখস্তান, আফগানিস্তান, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, ভারতবর্ষ এমনকি চীনের কাশগর পর্যন্ত। জন জোসেফ স্যান্ডার্সের মতে, তৈমুর হলেন “একটি ইসলামিক ও ইরানীয় সমাজের ফসল”, মোঙ্গোলিয় সমাজের নয়।

     নারীদের বন্দি করে ‘মাল’ হিসেবে তুলে নিয়ে যাওয়া আরম্ভ করেছিল প্রথমে আরবের বিভিন্ন গোষ্ঠী আর তার পরে অটোমান বা উসমানীয় সুলতানরা, যারা বন্দিনীর সংখ্যাবৃদ্ধির কারণে হারেমপ্রথাকে একটি রাজকীয় প্রতিষ্ঠানে গড়ে তুলতে বাধ্য হয়। পারিবারিক আচরণ-সংহিতা অনুযায়ী চারটে বিয়ে অনুমোদিত, তার চেয়ে বেশি, এমনকি কয়েক হাজার হয়ে গেলে দরকার হয়ে পড়ে ‘মাল’দের স্বীকৃতি দেবার কোড আবিষ্কার এবং সেই কোড হলো হারেম। ১৬শ ও ১৭শ শতাব্দীতে বিশেষত সুলতান প্রথম সুলাইমানের সময় উসমানীয় সাম্রাজ্য দক্ষিণপূর্ব ইউরোপ, উত্তরে রাশিয়া কৃষ্ণ সাগর, পশ্চিম এশিয়া, ককেসাস, উত্তর আফ্রিকা ও হর্ন অব আফ্রিকা জুড়ে , মধ্যপ্রাচ্য ও আরব অঞ্চলসহ বিস্তৃত একটি শক্তিশালী বহুজাতিক, বহুভাষিক সাম্রাজ্য ছিল। ১৭শ শতাব্দীর শুরুতে সাম্রাজ্যে ৩৬টি প্রদেশ ও বেশ কয়েকটি অনুগত রাজ্য ছিল। এগুলোকে কিছু পরে সাম্রাজ্যের সাথে একীভূত করে নেয়া হয় এবং বাকিগুলোকে কিছুমাত্রায় স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়। উসমানীয় সাম্রাজ্য সুদীর্ঘ ছয়শত বছরেরও বেশি ধরে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে। তবে তারা ক্রমশ ইউরোপীয়দের তুলনায় সামরিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে। ধারাবাহিক অবনতির ফলে সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়। এরপর আনাতোলিয়ায় নতুন প্রজাতন্ত্র হিসেবে আধুনিক তুরস্কের উদ্ভব হয়। বলকান ও মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যের সাবেক অংশগুলো প্রায় ৪৯টি নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

    হারেম শব্দটি আরবি, যার অর্থ মহিলাদের জন্য নির্ধারিত  স্থান, যেখানে পরপুরুষদের প্রবেশ নিষেধ। ইতিহাসের সর্বাধিক বিখ্যাত হারেম সম্ভবত অটোমান সুলতানদের গ্র্যান্ড সেরগ্লিও। অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতানরা – যা আধুনিক কালের তুরস্কের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে ছিল – সাধারণত নারী পরিচারক এবং দাসী-বাঁদিদের  এক বিশাল সংখ্যক নারীদের  হারেম ছিল। সুলতানের পরিবারের সদস্যদেরও হারেমে রাখা হতো, যেমন সুলতানের মা, সৎ-মা, সুলতানের বিভিন্ন স্ত্রীর অবিবাহিত মেয়েরা এবং অন্যান্য মহিলা আত্মীয়ারা সেখানে থাকতেন। এরা সবাই খোজা সেনার পাহারায় থাকতো। যেহেতু তারা নপুংসক, তারা যৌনতায় লিপ্ত হতে পারতো না। পুরুষদের সেখানে প্রবেশের অধিকার ছিল না। উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজকীয় হারেম তোপকাপি প্রাসাদে সুলতানের ব্যক্তিগত অ্যাপার্টমেন্টের একটি বড় অংশ জুড়ে  ছিল, যেখানে ৪০০ এরও বেশি কক্ষ ছিল। যদিও এর হারেমের রাখেল সংখ্যা সম্পর্কে কোনও নথিপত্র নেই, তবে প্রাসাদটির উচ্চতা ও আকার থেকে অনুমান করা যায়, সেখানে হারেমে প্রায় ছয় থেকে আটশত নপুংসক পাহারাদার ছিল। এই হারামে স্হান সংকুলান হচ্ছিল না বলে, ১৮৫৩-এর পরে ডলমাশেতে নতুন  প্রাসাদে সমান সৌন্দর্যের হারেম  চতুর্থাংশ দখল করে তৈরি হয়েছিল। হারেমের সর্বোচ্চ পদটি রানীমা বা সুলতানের মা ‘ওয়ালিদা সুলতানের’ হতো। তিনি নিজেও সুলতানের পিতার উপপত্নী হয়ে হারেমের শীর্ষ পদে উঠেছিলেন। রানী মায়ের সুস্পষ্ট অনুমতি ব্যতীত কোনও উপপত্নী আর রাখেল হারেমের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে বা বেরোতে পারতো না। উপপত্নী ও রাখেলদের উপর রানী মায়ের শাসন  এমন ছিল যা তাদের জীবন এবং মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতো। খোজারা চরের কাজ করতো আর সরাসরি তাঁর কাছে রিপোর্ট করতো। সম্প্রতি তুর্কির রাষ্ট্রপতি এরডোগানের বেগম বলেছেন যে হারেম ব্যাপারটা ভালো ছিল।

    সর্বকালের অন্যতম ভয়ঙ্কর যোদ্ধা, চেঙ্গিস খান মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার জন্য সুপরিচিত, যা তাঁর মৃত্যুর পরে ইতিহাসের বৃহত্তম  সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। তবে চেঙ্গিস খানের জীবন সম্পর্কে নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম বিজয়ী হওয়া ছাড়াও তিনি সর্বকালের অন্যতম সেরা ধর্ষক হতে পেরেছেন। চেঙ্গিস খানের ছয়টি মঙ্গোলিয়ান স্ত্রী ছিল, প্রথম তিনি ওঙ্গিরাত গোত্রের বোর্তেকে বিয়ে করেন, যখন তাঁর মাত্র নয় বছর বয়স। পরে, তিনি মোঙ্গোলিয়ার সীমান্তে একটি বিশাল হারেম প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি বিদেশী রাজাদের অনেক মেয়েকে উপহার পেয়ে বিয়ে করেছিলেন, যদিও বোর্তে তাঁর একমাত্র সম্রাজ্ঞী ছিলেন। স্পষ্টতই তাঁর হারেমের মেয়েরা সংখ্যায় দু’হাজার থেকে তিন হাজারের  বেশি ছিল। ঘটনাটি এখন বিজ্ঞানের দ্বারাও প্রমাণ হয়েছে, যেহেতু মঙ্গোলিয়ার সীমান্তবর্তী জনসংখ্যার জিনটিস্যু নমুনাগুলির বিশ্লেষণ করার পরে, রাশিয়ার একাডেমি অফ সায়েন্সেসের বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে নির্মম এই শাসকের অন্তত একশো ষাট লক্ষ পুরুষ বংশধর মধ্য এশিয়ায় বাস করছে যা সেখানকার জনসংখ্যার প্রায় ৮%।

    ইসমাইল ইবনে শরীফ সম্ভবত সর্বোচ্চ সংখ্যক সন্তান জন্মদানের গৌরবের অধিকারী – আশ্চর্যের নয় যে গনিমতের ‘মাল’ হিসেবে পাওয়া তাঁর পাঁচ হাজারেরও বেশি রাখেল ছিল আর তাদের  বাসস্থান ছিল সবচেয়ে বড় হারেম। তিনি ছিলেন মরোক্কোর শাসক এবং ১৬৭২ থেকে ১৭২৭ পর্যন্ত মরোক্কান আলাউইট রাজবংশের দ্বিতীয় শাসক ছিলেন। রাজবংশের অন্যান্য সদস্যদের মতো, মৌলে ইসমাইলও হাসান ইবনে আলীর বংশধর হয়ে নিজেকে নবীর বংশধর বলে দাবি করতেন। তিনি “যোদ্ধা-সম্রাট” হিসাবে স্বদেশে পরিচিত, এবং ইসমাইল উসমানীয় তুর্কিদের সাথে যুদ্ধ করে বহু ‘মাল’ তুলে আনতে পেরেছিলেন।  আজ যদিও তিনি আট শতাধিক সন্তানের পিতা হবার কারণে বেশি প্রচারিত।

    মালওয়ার পনেরো শতকের সুলতান গিয়াস-উদ্দিন খলজির হারেমে  ছিল পনের হাজার যুবতী, অধিকাংশই যুদ্ধ জয় করে তুলে আনা এবং তাদের জন্য আলাদা পাঁচিল-ঘেরা শহর গড়ে তোলার প্রয়োজন হয়েছিল তাঁর। বাস্তবে, জাহাজ মহল, বর্তমানে মান্ডুর অন্যতম  আকর্ষণ – মধ্য ভারতের একটি স্থান – এর জাহাজের মতো নকশা করা হয়েছিল বলে মনে করা হয় যে এটি তাঁর হারেমের বন্দিনী রাখেলদের জন্য একটি আনন্দ করার জায়গা হিসাবে নির্মিত হয়েছিল।দুইটি হ্রদের মধ্যবর্তী স্থানে তৈরি করেছিলেন জাহাজ মহল।

    ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য স্হাপনার পর তাঁদের হারেমেও ‘গনিমতের মাল’ তুলে আনার ব্যত্যয় ঘটে নি। তবে প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর ‘মাল’ তুলে নিয়ে যাবার বদলে ইব্রাহিম লোদির সৈন্যদের মাথা কেটে একটি মিনার তৈরি করেছিলেন, তাঁর পূর্বপুরুষ ল্যাঙড়া তৈমুরের মতন। কখনো কখনো তাঁদের হারেমে মেয়েদের সংখ্যা সাত-আট হাজার ছাড়িয়ে যেত। বাদশাহ আকবরের হারেমেই প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি বেগম ও সেবিকা ছিল !
     
     হারেমপ্রথার প্রথম দিকে প্রাসাদের ভেতরেই আলাদা ঘরের ব্যবস্থা থাকতো। পরে বিভিন্ন ধর্ম ও আচরণের জন্য আলাদা ভবন নির্মাণের রীতি শুরু হয়। মুঘল আমলেই হারেম পূর্ণাঙ্গ রাজকীয় পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠে। মুঘল পরিবারের যুবতীদের আবাসস্থলগুলো ‘মহল’ নামে পরিচিত ছিল। এছাড়াও জেনানা-মহল, হারেম-সারা, হারেম-গাঁ, মহল-সারা, রানীবাস ইত্যাদি নামেও হারেমের এলাকাকে আখ্যায়িত করা হতো। ‘আইন-ই-আকবরী’ ও ‘আকবরনামার’ লেখক আবুল ফজল মুঘল হারেমকে বলেছেন ‘শাবিস্তান-ই-খাস’। রাজপ্রাসাদের এক বিশাল অংশ জুড়ে ছিল মহল এলাকা। সিকান্দ্রা আর লাল কেল্লায় এখনও টকে আছে। বাগান আর ফোয়ারার দিকে মুখ করে থাকা অগুনতি কামরায় হাজার দুয়েক নারীর বাস। হারেমের দারোগা ও পরিচালকের দায়িত্ব পেতেন নির্ভরযোগ্য মহিলারা। হারেমের সর্বোচ্চ পদাধিকারী মহিলা কর্মচারী ছিলেন ‘মহলদার’। এরা সম্রাটের গুপ্তচর হিসেবেও কাজ করতো। হারেমের মহিলাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে তারা নিয়মিত সম্রাটকে খবর দিতো।  মহলদারের তীক্ষ্ম নজরদারি রাজপুত্ররা পছন্দ করতেন না। সম্রাট জাহাঙ্গীর সতেরো শতকের শুরুর বছরগুলিতে এক হাজারেরও বেশি যুবতীকে তাঁর হারেমে রেখেছিলেন। একই সময়ে, জাহাঙ্গীর  আরও এক হাজার যুবকেকে রেখেছিলেন সমকামের জন্য। তিনি ও তাঁর বাবা আকবর দুজনেই আনারকলি নামে এক দাসীর প্রেমে পড়েন। বাবা ও ছেলের সংঘাতে মারা যায় বেচারা দাসী। আকবর তাঁর হারেমের জন্য একটি পৃথক প্রাসাদ তৈরি করিয়েছিলেন যেখানে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আনা ‘মাল’ আর উপহার পাওয়া যুবতীদের রাখা হতো।

    ‘গনিমতের মাল’ ব্যাপারকে বিশ্ব জুড়ে নৃশংসতার নিদর্শনে পরিণত করেছে আইসিস জঙ্গীরা। মৃত্যুর থেকেও কঠিন শাস্তি হলো আইসিস জঙ্গীদের যৌন দাসত্ব। আইসিস জঙ্গীরা ‘গনিমতের মাল’ হিসাবে  তুলে নিয়ে যায় ইয়েজদি, শিয়া, খ্রিস্টান, ইহুদি যবতীদের।  প্রতিদিন তাদের সহ্য করতে হয় নৃশংস অত্যাচার। একের পর এক পুরুষ  দিনভর-রাতভর অবিরাম ধর্ষণ করে তাদের। রোজকার ধর্ষণে বার বার অন্তঃস্বত্বা হয়ে পড়ে তারা। কিন্তু তাতেও রেহাই নেই। ভ্রূণ হত্যা করে ফেলার পর আবার আরম্ভ হয় ধর্ষণ। মূলত ইরাক-সহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টিকারী আইসিস জঙ্গিরা হত্যা ও ধ্বংসলীলার সঙ্গে অন্য একটি বিষেয়েও হাত পাকিয়েছে। ইরাক ও সিরিয়ার সংখ্যালঘু পরিবারদের নিকেশ করাই তাদের লক্ষ্য। এরই জেরে ওই সমস্ত পরিবারের মেয়েদের অপহরণ করা অভ্যাসে পরিণত করেছে আইসিস জঙ্গিরা।  রাত-দিন সেখানে নাগাড়ে মেয়েদের ধর্ষণ করে নানা বয়সী পুরুষ। নিত্যনতুন অচেনা পুরুষের লালসার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয় বন্দি মেয়েদের।  তারা যুবতীদের ক্রীতদাসী হিসেবে ব্যবহার করে। যুবতীরা আইসিস সদস্যদের যৌন লালসা পরিপূর্ণ করার দাস ছাড়া আর কিছু নয়।

    তিন

    যুদ্ধকালীন যৌন নিপীড়ন বলতে সাধারণত যুদ্ধ, সশস্ত্র সংঘাত অথবা সামরিক দখলদারিত্বের সময় যোদ্ধাদের দ্বারা সংঘটিত ধর্ষণ এবং অন্যান্য যৌন নিপীড়ণকে বোঝানো হয়। সাধারণত যুদ্ধের সামগ্রিক পরিবেশে এটা ঘটে থাকে, তবে জাতিগত সংঘাতের ক্ষেত্রে এর বৃহত্তর সমাজতাত্ত্বিক উদ্দেশ্য থাকে। যুদ্ধকালীন যৌন নিপীড়ণে গণধর্ষণ এবং বস্তুর সাহায্যে ধর্ষণও অন্তর্ভুক্ত। এটি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘটিত যৌন নিপীড়ণের ঘটনা থেকে পৃথক। কোনো দখলদার শক্তি কর্তৃক দখলকৃত ভূখণ্ডের নারীদের পতিতাবৃত্তি কিংবা যৌন দাসত্বে বাধ্য করাটাও যুদ্ধকালীন যৌন নিপীড়ণের অন্তর্গত। যুদ্ধ বা সশস্ত্র সংঘাতের সময় প্রায়ই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অংশ হিসেবে শত্রুকে অপমানিত করার উদ্দেশ্যে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠিকে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার জন্য ধর্ষণকে ব্যবহার করা হলে সেটিকে গণহত্যা এবং জাতিগত নির্মূলকরণ হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ধরনের অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির জন্য আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে, কিন্তু সবেমাত্র ১৯৯০-এর দশক থেকে এই আইনের ব্যবহার শুরু হয়েছে।

    বাংলায় মারাঠা আক্রমণ : ১৭৪২ সাল থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত মারাঠা নেতা রঘুজীর সৈন্যরা ক্রমাগত বাংলা আক্রমণ করে। এসময় বাংলার অসংখ্য নারী মারাঠাদের দ্বারা ধর্ষিত হন। মারাঠারা বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সুন্দরী নারীদের অপহরণ ও ধর্ষণ করে। অসংখ্য নারী মারাঠা সৈন্যদের হাতে গণধর্ষণের শিকার হয়। সমসাময়িক সূত্রসমূহ বর্ণনানুযায়ী, মারাঠা সৈন্যরা হিন্দু নারীদের মুখে বালি ভরে দিত, তাঁদের হাত ভেঙ্গে দিত এবং পিছমোড়া করে বেঁধে তাদের গণধর্ষণ করত। সমসাময়িক বাঙালি কবি গঙ্গারাম বাংলার নারীদের ওপর মারাঠাদের অত্যাচারের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, “তারা সুন্দরী নারীদের টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যেত এবং দড়ি দিয়ে তাদের আঙ্গুলগুলো তাদের ঘাড়ের সঙ্গে বেঁধে দিত। একজন বর্গি (মারাঠা সৈন্য) একজন নারীর সম্ভ্রমহানি করার পরপরই আরেকজন বর্গি তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত। এসব নারীরা যন্ত্রণায় চিৎকার করতেন। এইসব পাপপূর্ণ কার্যকলাপের পর তারা এসব নারীদেরকে মুক্ত করে দিত। সমসাময়িক বর্ধমানের মহারাজার রাজসভার পণ্ডিত বনেশ্বর বিদ্যালঙ্কারও মারাঠা সৈন্যদের সম্পর্কে লিখেছেন, তারা সমস্ত সম্পত্তি লুণ্ঠন করে এবং সতী স্ত্রীদের অপহরণ করে।”

    ভারতে বিদেশি আক্রমণ :  আফগান সম্রাট আহমদ শাহ আবদালী মু্ঘল-শাসিত ভারত আক্রমণ করেন। এসময় আফগান সৈন্যরা দিল্লি ও মথুরাসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে হাজার নারীকে ধর্ষণ করে এবং আরো বহুসংখ্যক নারীকে অপহরণ করে নিয়ে যায। সম্ভ্রমহানির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বহু নারী আত্মহত্যা করেন। একই কাজ করেছিলেন গজনির মাহমুদ, যিনি গনিমতের মাল হিসাবে কেবল নারীদের নয়, সোমনাথ মন্দিরের সম্পদও লুট করে নিয়ে গিয়েছিলেন।  মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনকালে তাঁদের শাসিত এলাকা থেকে তাঁরা ‘মাল’ তুলে নিয়ে যেতেন – এঁদের মধ্যে কুখ্যাত হলেন কুতুবউদ্দিন আইবক, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বখতিয়ার খলজি ও আলাউদ্দিন খিলজি। আলাউদ্দিন খিলজি ছিলেন খিলজি বংশের প্রতিষ্ঠাতা জালালুদ্দিন খিলজির ভাগ্নে এবং জামাই ; শশুরকে খুন করে তিনি সিংহাসন দকল করেন। ১২০৬ থেকে ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতে রাজত্বকারী একাধিক মুসলিম রাজ্য ও সাম্রাজ্যগুলি “দিল্লী সালতানাত” নামে অভিহিত। এই সময় উত্তর থেকে আসা বিভিন্ন তুর্কি ও আফগান রাজবংশ দিল্লি শাসন করে। এই রাজ্য ও সাম্রাজ্যগুলি হল: মামলুক সুলতান (১২০৬-৯০), খিলজি রাজবংশ (১২৯০-১৩২০), তুঘলক রাজবংশ (১৩২০-১৪১৩), সৈয়দ রাজবংশ (১৪১৩-৫১) এবং লোদি রাজবংশ (১৪৫১-১৫২৬)। ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বখতিয়ার খলজির সেনাবাহিনী ‘গনিমতের মাল’ হিসাবে বহু যুবতীকে ধর্ষণ করে আর তার দরুন নিজেদের ধর্মের প্রসার ঘটাতে সফল হয়।

    রুশ-জাপান যুদ্ধ : ১৯০৪–১৯০৫ সালে রুশ–জাপান যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধের অন্যতম প্রধান রণাঙ্গন ছিল চীন সাম্রাজ্যের মাঞ্চুরিয়া। এই যুদ্ধের সময় রুশ সৈন্যরা মাঞ্চুরিয়ায় বহু চীনা গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়, অসংখ্য চীনা নারীকে ধর্ষণ করে এবং যারা তাদের এসব কর্মকাণ্ডে বাধা দিয়েছিল তাদের মেরে ফেলে।

    পোল্যান্ডে জার্মান আক্রমণ : ১৯৩৯ সালে জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ ও দখল করে এবং ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত দেশটি জার্মান সামরিক দখলদারিত্বের অধীনে থাকে। এই সময়ে জার্মান সৈন্যরা অসংখ্য পোলিশ ইহুদি নারীকে ধর্ষণ করে। এছাড়া জার্মান সৈন্যরা ইহুদি ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বী হাজার হাজার পোলিশ নারীকেও ধর্ষণ করে। অসংখ্য পোলিশ নারীকে ধর্ষণের পর গুলি করে হত্যা করা হয়।

    সোভিয়েত ইউনিয়নে জার্মান আক্রমণ : ১৯৪১ সালের ২২ জুন জার্মানি এবং এর মিত্ররাষ্ট্রসমূহ (ইতালি, রুমানিয়া, হাঙ্গেরি ও অন্যান্য রাষ্ট্র) অতর্কিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করার পর সোভিয়েত সশস্ত্রবাহিনীতে কর্মরত হাজার হাজার মহিলা ডাক্তার, সেবিকা এবং ফিল্ড মেডিক আগ্রাসী সৈন্যদের হাতে বন্দি হন। তারা জার্মান ও অন্যান্য আক্রমণকারী সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষিত হন, এবং প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ধর্ষণের পর তাদেরকে হত্যা করা হয়। এছাড়া জার্মান সৈন্যরা সোভিয়েত ইউনিয়নে তাদের দখলকৃত অঞ্চলসমূহে অসংখ্য বেসামরিক নারীকে ধর্ষণ করে। জার্মান সৈন্যরা বন্দি সোভিয়েত নারী মুক্তিযোদ্ধাদের এবং অন্যান্য নারীদের দেহে হিটলারের সৈন্যদের যৌনদাসী শব্দগুচ্ছ লিখে দিত এবং তাদেরকে ধর্ষণ করত। পরবর্তীতে সোভিয়েত সৈন্যদের হাতে বন্দি হওয়ার পর কিছু জার্মান সৈন্য সোভিয়েত নারীদের ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যায় অংশ নেয়ার বিষয়ে গর্ব করেছিল। জার্মান সৈন্যরা ইহুদি ও স্লাভ জাতিভুক্ত মানুষদেরকে তাদের তুলনায় নিচুশ্রেণির বলে মনে করত, এবং এজন্য এসব জাতির নারীদের ধর্ষণ করাকে তারা অপরাধ বলে মনে করত না। তারা ধর্ষণকে দখলকৃত অঞ্চলের অধিবাসীদের মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের স্মোলেনস্ক শহরে জার্মান দখলদার বাহিনী একটি পতিতালয় খুলেছিল, যেখানে শত শত বন্দি সোভিয়েত নারীকে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হত। লভিভ শহরে একটি পার্কে জার্মান সৈন্যরা একটি পোশাক কারখানার ৩২ জন নারী শ্রমিককে জনসম্মুখে ধর্ষণ করে। একজন পাদ্রী তাদের অপকর্মে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তারা তাকে হত্যা করে। বারিসাভ শহরে অগ্রসরমান জার্মান সৈন্যদের কাছ থেকে পলায়নরত ৭৫ জন নারী জার্মান সৈন্যদের হাতে বন্দি হন। জার্মান সৈন্যরা তাদেরকে ধর্ষণ করে এবং এরপর তাদের মধ্যে থেকে ৩৬ জনকে হত্যা করে। এছাড়া হাম্মার নামক একজন জার্মান অফিসারের নির্দেশে জার্মান সৈন্যরা এল. আই. মেলচুকোভা নাম্নী ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীকে একটি জঙ্গলে নিয়ে যায় এবং সেখানে তাকে ধর্ষণ করে। এরপর অন্য যেসব মহিলাকে জঙ্গলের মধ্যে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাদের সামনে মেলচুকোভার স্তন কেটে ফেলা হয়। কের্চ শহরে জার্মান সৈন্যরা বন্দি নারীদের ওপর বর্বর নির্যাতন ও ধর্ষণ চালায়, তাদের স্তন কেটে ফেলে, পেট চিরে ফেলে, হাত ছিঁড়ে নেয় এবং চোখ উপড়ে ফেলে। পরবর্তীতে সোভিয়েত সৈন্যরা শহরটি মুক্ত করার পর সেখানে তরুণী মেয়েদের ছিন্নভিন্ন দেহে পরিপূর্ণ একটি গণকবর পাওয়া যায়। জার্মানির সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণকালে এক কোটিরও বেশি সংখ্যক সোভিয়েত নারী জার্মান সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন এবং এর ফলে ৭,৫০,০০০ থেকে ১০,০০,০০০ যুদ্ধশিশুর জন্ম হয়।

    পোল্যান্ডে সোভিয়েত অভিযান : ১৯৪৪ সালে সোভিয়েত বাহিনী পোল্যান্ড থেকে দখলদার জার্মান বাহিনীকে বিতাড়িত করে সাময়িকভাবে পোল্যান্ড দখল করে। এসময় সোভিয়েত সৈন্যরা অসংখ্য পোলিশ নারীকে ধর্ষণ ও করে। ১৯৪৪–১৯৪৭ সালে এক লক্ষেরও বেশি পোলিশ নারী সোভিয়েত সৈন্যদের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়।

    হাঙ্গেরিতে সোভিয়েত আক্রমণ : ১৯৪৫ সালে অগ্রসরমান সোভিয়েত সৈন্যরা হাঙ্গেরি দখল করে। এসময় প্রায় ২,০০,০০০ হাঙ্গেরীয় নারী সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন। হাঙ্গেরীয় মেয়েদের অপহরণ করে সোভিয়েত সেনা ঘাঁটিগুলোতে নিয়ে যাওয়া হত, যেখানে তাদের বারবার ধর্ষণ করা হত এবং কখনো কখনো হত্যা করা হতো। সোভিয়েত সৈন্যরা এমনকি বুদাপেস্টে অবস্থিত নিরপেক্ষ দেশগুলোর দূতাবাস কর্মীদেরও গ্রেপ্তার ও ধর্ষণ করে, উদাহরণস্বরূপ, সোভিয়েত সৈন্যরা শহরটিতে অবস্থিত সুইডিশ দূতাবাসে আক্রমণ চালিয়ে দূতাবাসের একজন নারী কর্মীকে ধর্ষণ করেছিল।

    অস্ট্রিয়ায় সোভিয়েত আক্রমণ : ১৯৪৫ সালের এপ্রিলে সোভিয়েত সৈন্যরা জার্মান-অধিকৃত অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা দখল করে। ভিয়েনা দখলের পরপরই সোভিয়েত সৈন্যরা শহরটিতে অসংখ্য অস্ট্রীয় নারীকে ধর্ষণ করে।

    পার্বত্য চট্টগ্রাম সংঘাত : পার্বত্য চট্টগ্রাম সংঘাত চলাকালে ১৯৮১ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশি সৈন্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের ২,৫০০-এরও বেশি সংখ্যক উপজাতীয় নারীকে ধর্ষণ করে। কবিতা চাকমা এবং গ্লেন হিলের মতে, উপজাতীয় নারীদের বিরুদ্ধে যৌন হিংস্রতার মাত্রা ব্যাপক। সংঘাত চলাকালে বাংলাদেশি নিরাপত্তারক্ষীরা ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্ষণকে যুদ্ধের একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে।

    পূর্ব তিমুরে ইন্দোনেশীয় আক্রমণ : ১৯৭৫ সালে ইন্দোনেশিয়া পূর্ব তিমুর আক্রমণ ও দখল করে এবং ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সেখানে ইন্দোনেশীয় দখলদারিত্ব অব্যাহত থাকে। এসময় হাজার হাজার পূর্ব তিমুরীয় নারী ইন্দোনেশীয় সৈন্য ও পুলিশদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন। পূর্ব তিমুরীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্ত্রী, নারী বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং সন্দেহভাজন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নারী সহযোগীরা ছিলেন ধর্ষিত নারীদের একটি বড় অংশ। অনেক সময় ইন্দোনেশীয় সৈন্য বা পুলিশরা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের না পেয়ে তাদের স্ত্রী, বোন বা অন্যান্য নারী আত্মীয়দের ধর্ষণ করত। বন্দি নারীদের অর্ধনগ্ন করে তাদের ওপর নির্যাতন ও ধর্ষণ চালানো হত এবং তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হত। বহু নারীকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে বন্দি করে রেখে বারবার ধর্ষণ করা হত।

    আফগানিস্তানে সোভিয়েত আক্রমণ: ১৯৭৯—১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান দখলকালে সোভিয়েত সৈন্যরা অসংখ্য আফগান নারীকে অপহরণ ও ধর্ষণ করে। যেসব নারী সোভিয়েত সৈন্যদের দ্বারা অপহৃত ও ধর্ষিত হন, তারা বাড়ি ফিরলে তাদের পরিবার তাদেরকে ‘অসম্মানিত’ হিসেবে বিবেচনা করে এবং তারা সামাজিক লাঞ্ছনার শিকার হন।

    সিয়েরা লিয়নের গৃহযুদ্ধ ১৯৯১ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে সংঘটিত সিয়েরা লিয়নের গৃহযুদ্ধের সময় ধর্ষণ, যৌন দাসত্ব এবং জোরপূর্বক বিবাহ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বিদ্রোহী আরইউএফ দলের সদস্যরা অধিকাংশ ধর্ষণের জন্য দায়ী ছিল। এছাড়া এএফআরসি, সিডিএফ এবং সিয়েরা লিয়ন সেনাবাহিনীর সদস্যরা ধর্ষণে লিপ্ত হয়েছিল। আরইউএফ সদস্যরা বহুসংখ্যক নারীকে অপহরণ করে যৌনদাসী কিংবা যোদ্ধা হিসেবে ব্যবহার করে। এছাড়া আরইউএফ সদস্যরা প্রায়ই বেসামরিক নারীদের ধর্ষণ করত। আরইউএফ-এর নারী সদস্যরা বাহিনীটির পুরুষ সদস্যদের যৌনসেবা দিতে বাধ্য ছিল। গণধর্ষণ এবং একক ধর্ষণ ছিল দৈনন্দিন ঘটনা। পিএইচআর-এর প্রতিবেদন অনুসারে, এই যুদ্ধের সময় সংঘটিত ধর্ষণের ৯৩ শতাংশ আরইউএফ সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল। এক হিসাব অনুযায়ী, সিয়েরা লিয়নের গৃহযুদ্ধের সময় ২,১৫,০০০ থেকে ২,৫৭,০০০ নারী ধর্ষিত হন।

    সারবিয়-বসনিয়ার যুদ্ধ : ১৪শ শতকে রাজপুত্র শাসিত বসনিয়া দক্ষিণের ডিউক শাসিত হার্জেগোভিনার সাথে মিলে একটি ক্ষণস্থায়ী মধ্যযুগীয় রাজ্য গঠন করেছিল। তারপর ১৫ শতকে সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ বসনিয়াকে  উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করার সময়ে অটোমান সেনারা যুবতীদের ‘গনিমতের মাল’ হিসাবে পাইকারি হারে ধর্ষণ চালায় এবং জনসাধারণের ধর্মান্তরণ ঘটায়।  উনিশ শতকের শেষদিকে রাশিয়ার সাথে উসমানীয় সাম্রাজ্যের যুদ্ধের ফলে দেশটি উসমানীয় সাম্রাজ্য হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং অস্ট্রিয়হাঙ্গেরি রাজ্যের অধীনে চলে যায়। তারপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কমিউনিস্ট রাষ্ট্র যুগোস্লাভিয়ার অংশ ছিল। সোভিয়েত রাষ্ট্র ভেঙে যাবার পর বিংশ শতাব্দীর শেষে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে।  সার্বরা ১৯৯৫ সালের জুন মাসে সেব্রেনিচা শহরটি  দখল করে সেখানে আশ্রয় নেয়া অসংখ্য বেসামরিক পুরুষদের হত্যা করে এবং হাজার হাজার নারীকে ধর্ষণ করে। রাতকো মিলাদিচের নেতৃত্বাধীন সার্ব বাহিনী এই গণহত্যা ও ধর্ষণ  চালায়।

    রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ : শোনা যাচ্ছে রুশ সেনারা বৃদ্ধাদেরও ধর্ষণ করছে। যুদ্ধ শেষ হলে আমরা তাদের কুকীর্তির কথা বিস্তারে জানতে পারব।
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 | 31 | 32 | 33 | 34 | 35 | 36 | 37 | 38 | 39 | 40 | 41 | 42 | 43 | 44 | 45 | 46 | 47 | 48 | 49 | 50 | 51 | 52 | 53 | 54 | 55 | 56 | 58 | 59 | 60 | 61 | 62 | 63 | 64 | 65 | 66 | 67 | 68 | 69 | 70 | 71 | 72 | 73 | 74 | 75 | 76 | 77 | 78 | 79 | 80 | 81 | 82 | 83 | 84 | 85 | 86 | 87 | 88 | 89 | 90 | 91 | 92 | 93
  • লিঙ্গরাজনীতি | ০৫ নভেম্বর ২০২২ | ২৮২৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • যোষিতা | ০৫ নভেম্বর ২০২২ ১৩:০৫513464
  • খুব ভালো লেখা
  • ক্ষপণক গুপ্ত | 45.64.***.*** | ০৫ নভেম্বর ২০২২ ২০:২২513482
  • এরকম লেখাই আশা করি।
  • অশোক রায় | 2402:3a80:1985:2b6f:378:5634:1232:***:*** | ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৫৪525652
  • ভালো লেখা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন