জুফিলিয়া বা বিস্টিয়ালিটি বা মানুষের পশুরতি : মলয় রায়চৌধুরী
আমার ‘রাহুকেতু’ নিরুপন্যাসে একটি ঘটনা আছে। রাহু বা রাহুল সিংহ হিমালয়ের তরাইতে নেপাল সীমান্তের গ্রামগুলোয় অফিসের কাজে গিয়ে বাঁশে চারপা বাঁধা চিৎ করে শোয়ানো মৃত এক বাঘিনীর গোলাপি যোনি আর মাইকুঁড়ির দিকে তাকিয়ে অপ্রতিরোধ্য চাঞ্চল্যে আক্রান্ত হয়েছিল ; রাহুল সিংহের অন্তরজগতের বাঘ তার দেহকে একটু-একটু করে জাগিয়ে তোলার পর, সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে এলে, রাহুল সিংহের সহকারি ভেটেরিনারি অফিসার বাঘিনীর দেহে পারফিউম ছিটিয়ে দিতে, রাহুল সিংহ অনেকটা রাম টেনে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে শুয়ে পড়েছিল বাঘিনীর বুকের ওপরে। রাহুল সিংহের এই পশুপ্রণয়ের ইংরেজি শব্দ ‘জুফিলিয়া’ (zoophilia); এবং পশুরতির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘বেস্টিয়ালিটি’ (Bestiality)।
হয়তো উপরোক্ত শব্দগুলোর সংস্কৃত বা পালি প্রতিশব্দ আছে, কেননা খাজুরাহোর (দশম শতাব্দী) লক্ষ্মণ মন্দিরের গায়ে ঘোড়ার সঙ্গে সঙ্গমরত এক যুবকের একটি ভাস্কর্য আছে যাকে ঘিরে রেখেছেন উঁচু-বুক উঁচু-পাছা চাণ্ডেলা যুবতীরা। ঋষি বিভণ্ডক একটি হরিনীর সঙ্গে সঙ্গম করে ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির জন্ম দিয়েছিলেন। কর্ণাটকের শিমোগা জেলার বাল্লিগাভির কেদারেশ্বর মন্দিরের দেয়ালে জনৈকা নারীর পশুরতি খোদাই করা আছে ; মন্দিরটি একাদশ শতকে চালুক্য রাজত্বের সময়ে তৈরি। জাহাঙ্গির ও শাহ জাহানের সময়ে আঁকা বেশ কিছু মিনিয়েচার পেইনটিঙে দেখা যায় হারেমের নারীরা নানা রকমের পশুর সঙ্গে সঙ্গম করছেন; খোজা পরিবৃত প্রাসাদে হয়ত তা অস্বাভাবিক ছিল না, কেননা, উইলিয়াম ডালরিমপলের লেখা বাহাদুর শাহ জাফরের জীবনী থেকে জানা যায় যে, উইলিয়াম হডসনের নেতৃত্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সৈন্যরা যখন দুর্গ আক্রমণ করে তখন সম্রাটের হারেম থেকে অজস্র মহিলা পালাতে আরম্ভ করেন। দিল্লিশ্বরেরা নিজেরাও জানতেন না তাঁদের হারেমে কতজন উপেক্ষিতা নারী আছে। যোগাড় করে এনে প্রথম রাতে কুমারীত্ব দখল হয়ে গেলে তাঁরা হারেমের তরুণীদের ভুলে যেতেন হয়ত।
দুটি গ্রিক অভিধা ‘জোলোন’ অর্থাৎ পশু এবং ‘ফিলিয়া’ অর্থাৎ প্রেম শব্দের সন্ধি হল জুফিলিয়া ; ফিলিয়া অভিব্যক্তিটি ‘ফোবিয়া’র বিপরীত। জুফিলিয়া শব্দটির উৎপত্তি প্যারাফিলিয়া (Paraphilia) থেকে ; প্যারাফিলিয়া হল একটি স্পিসিসের সঙ্গে আরেক স্পিসিসের সঙ্গম, যেমন আমরা দেখেছি সিংহের সঙ্গে বাঘের, জেব্রার সঙ্গে ঘোড়া বা গাধার, ছাগলের সঙ্গে ভেড়ার সঙ্গমে জন্মানো প্রাণী। জুফিলিয়া হল মানুষ আর পশুর প্রণয় ; সাম্প্রতিককালে পশুর সঙ্গে মানুষের যৌনসম্পর্ককে বলা হয়েছে ‘বেস্টিয়ালিটি’। অধিকাংশ দেশে মানুষ-মানুষীর পশুরতি নিষিদ্ধ হলেও ব্রাজিল, ক্যামবোডিয়া, ফিনল্যান্ড, নামিবিয়া, ফিলিপিনস, রোমানিয়া এবং থাইল্যান্ডে তা এখনও আইনত নিষিদ্ধ নয়, আদালতে প্রতিটি মামলা পৃথকভাবে বিচার হয়। যে দেশগুলোয় নিষিদ্ধ সেখানে আইনপ্রণেতারা আন্তর্প্রাণী যৌনসম্পর্ককে ধার্মিকভাবে অনৈতিক এবং ক্রিয়াটিকে প্রকৃতিবিরোধী ও পশুনিগ্রহ বলে মনে করেন। ১৮৮৬ পর্যন্ত ক্রিয়াটিকে প্যারাফিলিয়া হিসাবে চিহ্ণিত করা হত।
১৮৮৬ সালে জার্মান মনোবিদ তাঁর ‘সাইকোপ্যাথিয়া সেক্সুয়ালিস’ গ্রন্হে মানুষ-পশু প্রণয়সম্পর্ককে চিহ্ণিত করার জন্য ‘জুফিলিয়া’ শব্দটি তৈরি করেন। অনেকে পশুদের চাবকে বা কষ্ট দিয়ে মর্ষকামী যৌন আনন্দ পান– সেই কাজটিকে ১৯৯০ সালে আর্নেস্ট বনেমান ‘জুস্যাডিজম’ (Zoosadism) হিসাবে চিহ্ণিত করেছেন। পশুদের চামড়া এবং লোম থেকে যাঁরা যৌন আনন্দ পান তাঁদের কাজকেও জুফিলিয়া বলা আরম্ভ হলে পশুর সঙ্গে মানুষের যৌনসম্পর্ককে গ্যাস্টন ডুবয়-ডেসাউল তাঁর ‘বেস্টিয়ালিটি: অ্যান হিসটরিকাল, মেডিকাল, লিগাল অ্যান্ড লিটেরারি স্টাডি’ (২০০৩) গ্রন্হে বলেছেন ‘বেস্টিয়ালিটি’; আমেরিকায় বিভিন্ন রাজ্যের আইনে বেস্টিয়ালিটি, জুফিলিয়া ও জুস্যাডিজমের পার্থক্য করা হয়েছে। ভারতে পশু-মানুষ যৌনসম্পর্কের জন্য আইনের পৃথক ধারা নেই ; ভিক্টোরীয় ভাবধারায় প্রতিপালিত ম্যাকলে সায়েব যে ধারাটি সমকামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করে গেছেন, অর্থাৎ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা, সেটিকেই বেস্টিয়ালিটির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।
পর্তুগালের চোয়া ভ্যালিতে পশুরতির প্রমাণ গুহার দেয়ালে প্রাগৈতিহাসিক মানুষের আঁকা চিত্র থেকে পাওয়া যায়। ইতালির কামোনিকা ভ্যালিতে গুহার দেয়ালে যে পশুরতির চিত্র পাওয়া গেছে তা খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০-এর সময়কার; সম্ভবত সেই সময় নাগাদ কুকুর, ছাগল, ভেড়া, গোরু, হরিণ ইত্যাদি প্রাণীরা গৃহপালিত জীব হয়ে ওঠে। প্রাচীন গ্রীক দেবীদেবতাদের নিয়ে তৈরি কাহিনীগুলোয় মানবাকৃতির দেবী আর দেবতারা পশুর সঙ্গে সঙ্গম করেছেন, যেমন ষাঁড়ের সঙ্গে ইউরোপা, ঈগলের সঙ্গে গ্যানিমিড, রাজহাঁসের সঙ্গে লেডা, মাদি-ছাগলের সঙ্গে স্যাটির ইত্যাদি, এরকম কাহিনির সঙ্গে আমরা পরিচিত। স্যাটিরিয়াসিস এমন একটি যৌনতাড়না, যার দরুন রোগি আত্মসংবরণ করতে পারে না এবং বহু নারীর সঙ্গে ক্রমাগত সঙ্গম করে বেড়ায়, যে রোগে গল্ফ খেলোয়াড় টাইগার উডস আক্রান্ত হয়েছিলেন।
পঞ্চম শতকে হেরোডোটাস এবং পিনডার লিখে গেছেন যে তাঁদের সময়ে মিশরীয় নারীরা ‘পবিত্র’ রামছাগল পুষতেন, সঙ্গম করার জন্য; সেসব প্রাণীদের তা করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। আবার একই সময়ে গ্রিকদের সম্পর্কে প্লুটার্ক লিখে গেছেন যে গ্রীক পুরুষরা মাদি-ছাগল, ঘোটকী, মাদি-শুয়োর পুষতেন, সঙ্গম করার জন্য। অনুমান করা যায় যে, ওই সমাজগুলোয় সেসময়ে এই ধরনের যৌনসম্পর্ক নিষিদ্ধ ছিল না। ইউরোপে ইহুদিধর্ম, খ্রিস্টধর্ম এবং ইসলাম প্রবেশের পরে তা নিষিদ্ধ হয়। ইহুদি ধর্মগ্রন্হে পশুরতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে মানুষ এবং প্রাণিটিকে মৃত্যুদণ্ড দেবার কথা বলা আছে ; ইহুদিদের প্রাচীন আচারসংহিতা ‘তালমুদ’-এ বলা হয়েছে যে কোনো যুবতীকে যেন কোনো পুং ভেড়া বা গৃহপালিত পুংজীবের সঙ্গে একা না রাখা হয়। নিষেধাজ্ঞা থেকে আঁচ করা যায় যে তাদের সমাজে পশুরতির প্রচলন ছিল।
ফ্রান্সে ১৪৬৮ সালে বাছুর এবং মাদিছাগলের সঙ্গে সঙ্গম করার অভিযোগে জাঁ বেইসিকে ফাঁসিকাঠে ঝোলানোর পর তার দেহকে পোড়ানো হয়েছিল। ১৫৩৯ সালে মাদিকুকুরের সঙ্গে সঙ্গম করা অভিযোগে গিয়ম গারিঙকে বেদম পেটানো হয়েছিল, তারপর তাকে আর তার কুকুরকে একসঙ্গে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। ১৬০১ সালে ক্লদাঁ দ্য কুলাম নামে একটি ষোলো বছরের মেয়ে কুকুরের সঙ্গে সঙ্গম করার সময়ে ধরা পড়ে ; তাকে এবং তার কুকুরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেহগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়। এই ধরনের সাজা সত্ত্বেও, ইউরোপে উইচক্র্যাফ্ট বা ডাকিনিবিদ্যা শেখার জন্য গোপনে পশুরতির প্রচলন ছিল ; তারা ধরা পড়লেও তাদের কল্পিত ক্ষমতার ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে প্রতিবেশিরা ভয় পেত। জার্মান চিত্রকর ফ্রানৎস ভন বেয়ার্স (১৮৬৬ – ১৯২৪) পশুরতির বেশ কিছু ড্রইং ও পেইনটিং এঁকে গেছেন, যার মধ্যে বিখ্যত ড্রইং হল একজন তরুণীর যোনিতে জিভ দিয়ে মুখমেহন করছে একটি হরিণ। পনের শতকের ইরানের কয়েকটি বইতে নারীর সঙ্গে পশুর সঙ্গমের ছবি পাওয়া গেছে।
আমেরিকা আবিষ্কারের পর ১৬০০ সাল থেকে ইউরোপিয়রা সে ভূখণ্ডে ভাগ্যান্বেষণের জন্য যাওয়া আরম্ভ করেন; ভাগ্যান্বেষীদের মধ্যে আধিক্য ছিল পুরুষদের। নারীর অভাবে এবং পুরুষে-পুরুষে বন্ধুত্ব জরুরি হয়ে উঠলে পাশাপাশি সমকামও দেখা দেয়। এফ ডাবলু ভোগেট তাঁর ‘সেক্স লাইফ অফ আমেরিকান ইনডিয়ানস’ (১৯৬১) গ্রন্হে বলেছেন যে, কোনো কোনো রেড ইন্ডিয়ান গোষ্ঠীতে (আরিজোনার হোপি উপজাতি এবং কানাডার ইনুইট উপজাতি) পশুরতি অনুমোদিত থাকায়, ভাগ্যান্বেষী তরুণ ইউরোপীয়দের মধ্যে পশুরতি, বিশেষ করে গরু এবং ঘোটকির সঙ্গে সঙ্গম গ্রহণযোগ্য আচরণ হিসাবে স্বীকৃতি পায়। আফ্রিকা থেকে ক্রীতদাসীদের চালান করে আনার পরও তাদের কাছে তুলনামূলকভাবে পশুরতি কাম্য ছিল, কেননা আফ্রিকা থেকে আনা কালো মানুষদের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ককে প্রথমদিকের যাযকরা শাস্তিযোগ্য মনে করতেন, কৃষ্ণাঙ্গদের তখনও মনে করা হতো মানবেতর প্রাণী। ধর্মের স্তরে তা অনুমোদন না করলেও, শ্বেতাঙ্গিনীর সংখ্যা কম হবার কারণে সমকাম ও পশুরতি বৃদ্ধি পেতে থাকলে, কালো তরুণীদের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কের কথা জানতে পারলেও, তেমন গুরুত্ব দেয়া হতো না। ক্রমে ইউরোপ থেকে নারীরা আসা আরম্ভ করলে যাযকরা, বিশেষ করে দক্ষিণের রাজ্যগুলোয়, বিধিনিষেধ লাগু করেন, যা গৃহযুদ্ধের সময় পর্যন্ত প্রচলিত ছিল।
হিন্দুদের ‘ভাগবত পুরাণ’ অনুযায়ী গোরুর সঙ্গে সঙ্গম করলে নরক প্রাপ্তির কথা বলা আছে বটে, কিন্তু অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক সম্পর্কে কোনো বার্তা নেই। প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যে, খ্রিস্টপূর্ব ১২৫ থেকে ৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অপরাধীদের, পুরুষ ও নারী দুইই, শাস্তি দেবার জন্য, জনসাধারণের উপস্হিতিতে, কলোসিয়ামে ও সার্কাস ম্যাক্সিমাসে, তাদের উলঙ্গ করে তাদের ওপর ধর্ষণে প্রশিক্ষিত পশু ছেড়ে দেয়া হতো ; অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরাধীদের মৃত্যু ছিল অবশ্যম্ভাবী।
টম রিগান তাঁর ‘অ্যানিমাল রাইটস: হিউমান রঙস’ (২০০৩) গ্রন্হে বলেছেন যে, ইউরোপে ‘আলোকপ্রাপ্তি’র পর পশুরতিকে অনৈতিক ঘোষণা করা হলেও বর্তমানে যে যুক্তিটি প্রধান তা হল যে দৈহিক সম্পর্কের জন্য পরস্পরের যে অনুমতি থাকা দরকার তা একটি মাদি-পশু পুরুষ মানুষকে দিতে পারে না যে ভাবে সে নিজের প্রজাতির প্রাণীকে দিতে পারে। পুরুষমানুষ যখন একটি পশুর সঙ্গে সঙ্গম করে তখন সে যা করে তা হল ধর্ষণ। নারীরা যখন পশুরতি করে তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে পশুটির অনুমোদন থাকে, কেননা পশুটিকে তা করার জন্য প্রশিক্ষিত করে তোলা হয়, বা পশুটি অনোন্যপায় হয়ে নিজের যৌনতার প্রয়োজন মেটায়। মাইকেল রবার্টস তাঁর ‘দি আনজাস্টিফায়েড প্রহিবিশান এগেইনস্ট বেস্টিয়ালিটি’ (২০০৯) রচনায় বলেছেন যে, যাঁরা পশুরতির পক্ষপাতী, তাঁদের বক্তব্য হল যে, পশুদের বীর্য সংগ্রহে মানুষ নিজের সুবিধার্থে গাজোয়ারি করে, পশুর মাংস খাবার জন্য তাদের সুখাদ্য খাইয়ে চর্বিদার করা হয়, গোরু বা ছাগলকে গর্ভসঞ্চার করাবার জন্য তাদের যখন ষাঁড় বা রামছাগলের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন মানুষ নিজের ইচ্ছানুযায়ী নিয়ে যায়, গবেষণাগারে কাটাছেঁড়া করার সময়ে তাদের অনুমতি নেয়া হয় না, ইত্যাদি; পক্ষান্তরে যারা পশুরতি করে তারা পশুটিকে গোপনে নিজের প্রেমিক বা প্রেমিকার মতো যত্ন করে, ভালোবাসে। এম জেকব অ্যাপেল তাঁর ‘থ্রি রিজনস সোসায়টি শুড নট রাশ টু কনডেম বেস্টিয়ালিটি’ (২০০৯) রচনায় যুক্তি দিয়েছেন যে মানুষেরা পশুদের বন্দী করে রাখে, চেন বেঁধে রাখে, তাদের অনুমতি ব্যতিরেকে যখন কিনা মানুষের সঙ্গে অমন ব্যবহার করা যায় না ; পশুর সঙ্গে রতিসম্পর্ক গড়ে তুললে তাকে চেন বেঁধে বা বন্দী করে রাখার প্রয়োজন হয় না।
টি. জন অ্যালেকজান্ডার তাঁর ‘ক্যাথারিন দ্য গ্রেট : লাইফ অ্যান্ড লিজেন্ড’ (১৯৮৯) গ্রন্হে লিখেছেন যে রুশ দেশের অষ্টাদশ শতকের সম্রাজ্ঞীর বাইশজন সঙ্গমকারী সঙ্গী ছিল, এবং তাঁর সময়ে গুজব প্রচলিত ছিল যে তিনি এতই কামাসক্ত ছিলেন যে পুরুষ সঙ্গীরা তাঁকে তৃপ্তি দিতে অক্ষম হলে পশুদের ব্যবহার করতেন। তাঁর মৃত্যও পশুর সঙ্গে সঙ্গম করতে গিয়ে ঘটে বলে বহুকাল জনগণের মাঝে গালগল্প প্রচলিত ছিল। সেকারণে জনগণ তাঁকে বলত রুশ দেশের ‘মেসালিনা’। রোম সাম্রাজ্যের খ্রিস্টপূর্ব একাদশ শতকের সম্রাট ক্লদিয়াসের স্ত্রী ছিলেন মেসালিনা ; তাঁর যৌনতাড়না সম্পর্কে প্রচলিত গল্পগুলোর অন্যতম হল তিনি প্রতিরাতে রোমের বেশ্যালয়ে গিয়ে খদ্দেরদের সঙ্গে অবিরাম একের পর এক সঙ্গম করতেন, এবং তাতেও তৃপ্তি না পেলে রাজপ্রাসাদের প্রশিক্ষিত পশুদের ব্যবহার করতেন। ‘হিসটরিয়া নাতুরালিয়া’ (খ্রিস্টপূর্ব ৮০) গ্রন্হে প্লিনি লিখে গেছেন যে এক রাতে জনৈকা যৌনকর্মীর সঙ্গে প্রতিযোগীতায় ২৫ জন পুরুষের সঙ্গে সঙ্গম করে মেসালিনা বিজয়ী হন। স্বামীকে সরিয়ে নিজেই সিংহাসনে বসার ষড়যন্ত্র করে ধরা পড়ার পর তাঁর স্বামীর হুকুমে তাঁকে মৃত্যু দণ্ড দেয়া হয়।
স্বমেহনের জন্য ইউরোপ আমেরিকার বাজারে যে বস্তুগুলো পাওয়া যায় তার মধ্যে এমন আকৃতির জিনিশও আছে যেগুলো কুকর, ষাঁড়, রামছাগল ইত্যাদির লিঙ্গের মতো বা কুক্কুরি, মাদিছাগল, হরিণী, বাছুরের যোনির আকারের। ভারতের বাজারে এগুলোর বিক্রি নিষিদ্ধ। যাঁরা বিদেশে যান, লুকিয়ে কিনে আনেন বা ইনটারনেটের মাধ্যমে কেনেন। ইনটারনেটে পশুরতিকারীদের জমায়েত আছে, যেমন আছে অন্যান্য যৌন আগ্রহের মানুষদের গোপন জমায়েত।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।