এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  বইপত্তর

  • অ্যানাঈস নিন

    Malay Roychoudhury লেখকের গ্রাহক হোন
    বইপত্তর | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৬৫৬ বার পঠিত
  • 103 | 104 | 105 | 106 | 107 | 110 | 113 | 114 | 119 | 120 | 121 | 123 | 124 | 124 | 125 | 125 | 126 | 127 | 127 | 128 | 129 | 131 | 133 | 134 | 135 | 136 | 138 | 139 | 140 | 141 | 143 | 144 | 145 | 147 | 148 | 149 | 149 | 150 | 151 | 152 | 153 | 154 | 155 | 156 | 157 | 158 | 159 | 160 | 161 | 162 | 163 | 164 | 165 | 167 | 168 | 169 | 170 | 171 | 172 | 173 | 174 | 175 | 176 | 176 | 177 | 178 | 179 | 180 | 181 | 182 | 183 | 184 | 185 | 186 | 187 | 188 | 189 | 190 | 191 | 192 | 192 | 193 | 194 | 195 | 196 | 198 | 199 | 200
    মোহিনী, কামুক, দ্রোহী লেখিকা আনাঈস নিন : মলয় রায়চৌধুরী

    অ্যানাঈস নিনের আসল, সেন্সরবিহীন ডায়েরির মতো সূক্ষ্ম, অন্তর্দৃষ্টি এবং বেদনাসহ খুব কম লেখাই একজন নারীর বহুগামী মাংসল যৌনতা ও প্রেমের জীবনকে এমন খোলাখুলিভাবে মেলে ধরেছে। অসাধারণ জীবনের যাবতীয় তথ্য, সম্পর্কের শারীরিক দিকগুলির সাথে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবের সম্পূর্ণ বর্ণালীর ছটাকে স্পষ্টভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।এমনই এক যুবতী যিনি তাঁর যৌন এবং মানসিক আকাঙ্ক্ষাপূর্তির জন্য সামাজিক বিধিনিষেধ, অপরাধবোধ ও অনৈতিকতার তকমা বিসর্জন দিয়ে নিজেই নিজেকে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন আর লিখে গেছেন, যা সাধারণত পুরুষরাও লিখতে ইতস্তত করে। নিন ছিলেন অপার্থিবভাবে নারীসুলভ, সূক্ষ্মতা, টেক্সচার এবং আবেগে আনন্দিত। নারীর অসারতা বা দুর্বলতা হিসেবে অনুভূতিগুলোকে চাপা দেননি। তাঁর আত্ম-জ্ঞান ছিল তাঁর কাছে একটি সম্পদ। তিনি নারীর অভ্যন্তরীণ বিশ্বের বর্ণনা করার জন্য অব্যর্থ শব্দাবলী খুঁজে পেয়েছেন। তিনি লিখেছেন, "একজন মহিলার পুরুষের মতো আনন্দ পাওয়ার অধিকার রয়েছে!"

    তার ডায়েরি শিখিয়েছে যে জীবনের গুণমান বাড়িয়ে তোলার জন্য সৌন্দর্যের ছোট মুহুর্তের সঞ্চয় জরুরি। যে নারী এক হতে প্রত্যাখ্যান করতে পারে সেইই স্বয়ংকে একাধিক করে তুলতে পারে।

    ১৯৬৬ সালে নিন যখন তাঁর ডায়েরির অংশগুলো প্রকাশ করা শুরু করেন, তখন তাঁর জীবনের এই দিকটি বাদ দেওয়া হয়েছিল, যদিও স্পষ্টতই লেখক ও অভিনেতা অঁতনা আতোর সাথে, হেনরি মিলার এবং তাঁর স্ত্রী জুনের সাথে তাঁর উভকামী যৌন সম্পর্কের বিষয়ে সে সময় প্যারিসে অনেকে জানতো। এছাড়াও হিউ পার্কার গুইলার এবং রুপার্ট পোলের সাথে তাঁর বিয়ের কথা লিখেছেন; একই সময় এ দুজনের স্ত্রী ছিলেন তিনি। রোজনামচা অনুযায়ী অ্যানাঈস নিন তাঁর মনোবিদ রেনে অ্যালেন্ডি এবং অটো র‌্যাঙ্ক ছাড়াও, জন স্টেইনবেক, এডমন্ড উইলসন, গোর ভিদাল, জেমস এজি, জেমস লিও হারলিহি এবং লরেন্স ডুরেল সহ অনেক সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বের প্রেমিকা ছিলেন। মিলারের সাথে তাঁর আবেগপূর্ণ প্রেমের সম্পর্ক এবং বন্ধুত্ব তাঁকে যৌনতা এবং লেখিকা হিসাবে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করেছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ - অ্যানাঈস নিন, প্রতিশোধ নেবার জন্য, তাঁর বাবার সাথেও যৌন সম্পর্ক পাতিয়েছিলেন।

    নিন তার নিজের বাবাকে প্রলুব্ধ করেছিলেন এই জন্য যে তাঁর বাবা শৈশবে তাঁকে আর তাঁর মাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন আর শৈশবে পরিত্যাগের প্রতিশোধের জন্য বাবাকে অজাচারী যৌনতায় জড়িয়ে নিয়েছিলেন। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত ‘ইনসেস্ট’ অনেকের মতে, এক স্তরে ঘৃণ্য, এবং তবুও নিন বিজয়িনী এবং সীমালঙ্ঘনকারী যা সচরাচর কোনো নারীর ক্ষেত্রে দেখা যায় না। তাঁর জার্নালের তৃতীয় খণ্ডে,’অজাচার’ নামে তিনি তাঁর বাবার সঙ্গে তাঁর প্রাপ্তবয়স্ক যৌন সম্পর্কের কথা অকপটভাবে আর বিশদে লিখেছেন।

    আনাঈস নিন ছিলেন "ফেমে ফেটাল", যা একটি ফরাসি শব্দ, আক্ষরিক অর্থে, "মারাত্মক মহিলা।" একজন ফেমে ফেটাল হলেন একজন মহিলা যিনি নরকের মধ্য দিয়ে গেছেন। সম্ভবত সে একটি গোপন ব্যথার আশ্রয় নিয়েছে বা একটি আঘাতমূলক শৈশব হারানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে ফলস্বরূপ, সে নিষ্ঠুর এবং বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে বা অন্তত বিপদের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে। একজন সংবেদনশীল স্প্যানিশ মেয়ে, আনাঈস নিন তার বাপের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিল এবং বাপ তার মাকে পরিত্যাগ করেছিল। বাপ হামেশাই তার ধনী সঙ্গীত ছাত্রীদের সাথে পালিয়ে যেতো।

    ১৯৩৩ সালে, ২০ বছরের বিচ্ছেদের পর, নিন তাঁর বাবার সাথে আবার দেখা করেছিলেন। মেয়ে এবং বাবা অপরিচিত ছিলেন, বাবা তখন একজন কুখ্যাত ডন হুয়ান এবং নিন একজন ৩০ বছর বয়সী নারী। নিন আশ্চর্য হয়ে গেলেন যে তাঁর বাবা কীভাবে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের ধ্বংস করেছেন তার জন্য এক টুকরো অনুশোচনা পর্যন্ত ছিল না। স্ত্রী-সন্তানদের দুরাবস্হা সম্পর্কে তাঁর বাবার কোনও ধারণা ছিল না। আনাঈস বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর বাবা একজন ভয়ঙ্কর এবং স্বার্থপর মানুষ। মোটেই আদর্শিক দেবতা নন যা তিঁনি তাঁর ডায়েরিতে বর্ণনা করেছিলেন। তাই বদলা নিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।

    তারপরে, একটি চিত্তাকর্ষক বাঁকবদলে, অ্যানাঈস নিন, একসময়ের আঘাতপ্রাপ্ত শিশু, তাঁর পিতার প্রলোভনকারী দ্বৈত ব্যক্তিত্বকে সৃজনশীল ডায়নামো হিসাবে গ্রহণ করেছিল। নিনের বহু প্রেমিক ছিল এবং অবশেষে তাঁর জার্নালে তাঁর দুঃসাহসিক কাজগুলোকে ধরে রাখার জন্য দুইজন স্বামীর স্ত্রী হয়ে উঠলেন। তিনি কয়েক ডজন সূক্ষ্ম সুন্দর গদ্যের টুকরাও তৈরি করেছিলেন, এমনকি আধুনিক মহিলা ইরোটিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে যা পরিচিত। তাঁর ডায়েরিগুলো অবশেষে অসাধারণ প্রশংসা পেয়েছে এবং তিনি তার "স্বপ্ন থেকে এগিয়ে যাওয়ার" উদাহরণ অনুকরণ করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ অনুসারী নারীদের কাছে হ্যামেলিনের বাঁশিঅলা হয়ে গেছেন।

    আনাঈস নিনের ডায়েরিগুলো সাহিত্যের একটি অসাধারণ কাজ। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন "আমাদের ব্যক্তিত্বের ওপরের মাটি আসলে কিছুই নয়"। তাঁর ডায়েরি তার অভ্যন্তরীণ জীবন, "সেন্সরবিহীন স্বপ্ন, মুক্ত অচেতন" বর্ণনা করে গেছে এবং তা টিকার টেপের মতন পাঠকের মগজে ফিল্মের মতন চিত্রিত হয়।যদিও ডায়রিগুলোই গভীর ব্যক্তিগত নথি, যা শুধুমাত্র একজন নারীর মনস্তাত্ত্বিক ভূগোলই প্রকাশ করে না, বরং সমস্ত মহিলাদের, সমস্ত মানুষের অভ্যন্তরীণ জীবনের রহস্য উন্মোচন করে৷

    তার সেন্সরবিহীন ডায়েরিগুলো সাহিত্যের প্রচলিত মানদণ্ডে বিস্ফোরক। নিঃসন্দেহে সেগুলো বিক্ষুব্ধ নৈতিকতাবাদী দলকে চটিয়ে দেবে যারা নিনের নিজের নৈতিক কোড অনুসারে বাঁচার সাহসের জন্য, তাঁর দুঃসাহসিক কাজগুলো সম্পর্কে লিখতে এবং তারপরে সেই লেখা সবার পড়ার জন্য প্রকাশ করাকে মেনে নিতে পারেননি। যেভাবে তাঁকে আক্রমণ করা হয়েছে তা প্রমাণ করে যে তার ডায়েরি পচনরত স্নায়ুতে আঘাত করেছে।

    তার জীবনের অবিশ্বাস্য পরীক্ষায়, আনাঈস নিন অনেক কিছু করেছিলেন যা খুব কম মহিলাই লেখায় স্বীকার করবেন – বা বিবেচনা করতে পারেন। তাঁর জীবনের বেশিরভাগ ঘটনা তাঁর যৌন জীবনের সঙ্গে ছিল, এমন এক অঞ্চল যা নারীরা তাদের নিজস্ব শর্তে নিয়ন্ত্রণ করতে লড়াই করে। নিনের ঘটনাবহুল এবং উত্তেজনাপূর্ণ জীবন ছিল বলে মনে হয়, কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে তিনি "নিউরোসিস" বা "অসুস্থতায়" ভুগছিলেন এবং তিনি এর কারণ বোঝার জন্য লড়াই করেছিলেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ছাড়াই, নিন একটি আধুনিক শিল্প ফর্ম তৈরি করে গেছেন যা শেষ পর্যন্ত ইন্টারনেট যোগাযোগের এই শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন ভাষায় স্থান করে নিয়েছে যখন কিনা তাঁর ডায়রি ব্যক্তিগত স্বীকারোক্তিতে পূর্ণ।

    অ্যানাঈস তাঁর ব্যাঙ্কার স্বামী গুইলারের কাছে একজন ভাল স্ত্রী হয়ে বেড়ে ওঠতে চেয়েছিলেন, কিন্তু অস্তিত্বের বিষণ্নতা ইতিমধ্যেই তাঁর মস্তিষ্কে তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তাঁর বাবার তাঁদের পরিত্যাগ এমন একটা ঘটনা ছিল যা থেকে তিনি কখনই নিজেকে পুরোপুরি মুক্ত করতে পারেননি। ফলে তাঁর আশ্রয় ছিল ডায়েরি। এটি সেই বাহন যার মাধ্যমে তিনি তাঁর কল্পনাগুলিকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, কারণ এটা তাঁর সৌন্দর্য এবং সুখের এবং ভালবাসা এবং আরাধ্য হওয়ার স্বপ্নগুলোকে সংরক্ষণ করেছিল। তবে একথা সত্য, তিনি আদর্শ প্রেমের লোভে পদে-পদে নিজের জীবনকে ধ্বংস হতে দিয়েছিলেন।

    আনাইস নিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে হেনরি মিলার, তার স্ত্রী জুন, নিনের নিজের স্বামী এবং তাঁর মনোবিদ ও অন্যদের সাথে যৌন সম্পর্কের অন্তরঙ্গ বিবরণ তাঁর জীবদ্দশায় আর প্রধান অংশগ্রহণকারীরা জীবিত থাকাকালীন যেন প্রকাশ করা না হয়। নিন ছিলেন রোমান্টিক, কামুক, বিদ্রোহী, পারার মতন চনমনে আর উপলব্ধি-সন্ধানী। তিনি সৃজনশীলতা এবং কল্পনাকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তা কম নারীই পারেন। তিনি এমন একটি জীবনযাপন করেছিলেন যেখানে কোনও আনন্দ বা ঝুঁকি প্রত্যাখ্যান করা হয়নি।

    একজন নারীর নিজের লেখার মধ্যেই পরিত্রাণ খুঁজে পেতে, গোপনীয়তা বাদ দিয়ে, রোজনামচার পাতাগুলো এক অবিস্মরণীয় আনাই নিনকে উন্মোচন করে, যিনি শেষ পর্যন্ত রহস্যময়, সম্ভবত অবর্ণনীয়। ১৯৭৭ সালে তাঁর মৃত্যুর সময়, ডায়েরিগুলো প্রায় ১৫০টি হাতে-লেখা খাতায় পাওয়া যায়। ১৯৬০-এর দশকে সাতটি সম্পাদনা এবং প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৩১ সালের আগে লেখা তাঁর প্রাথমিক ডায়েরির চারটি খণ্ড ১৯৮০ সালে প্রকাশিত হয়। তার পরের ডায়েরিগুলো ১৯৮৬ সাল থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

    নিন সিগমুন্ড ফ্রয়েডের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী অটো র‌্যাঙ্কের কাছে মানসিক চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন, কিন্তু অটো র‌্যাঙ্কও নিনের প্রেমে পড়েন এবং এই গল্পটি ডায়েরিতে, ‘ফায়ার’ অংশে লেখা আর সেই নামে প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর ‘নিয়ারার দ্য মুন’ অংশে নিন মার্কসবাদী গঞ্জালো মোরে-এর সাথে তাঁর যৌন সম্পর্কের কথা লিখেছেন এবং 'মিরাজ'-এর ডায়েরি অংশের শুরুতে বর্ণিত৷

    'মিরাজ' অংশ ১৯৩৯ সালে নিনের আমেরিকায় যাওয়ার সাথে শুরু হয় এবং ১৯৪৭ সালে শেষ হয় যখন তিনি সেই বিশিষ্ট প্রেমিকের সাথে দেখা করেন যিনি তাঁর অতৃপ্ত ক্ষুধা মেটাবেন। মাঝামাঝি সময়কে নিন "নরক" হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যে সময় তিনি এক ধরণের কামুক উন্মাদনা অনুভব করতেন, এমনই একজন যে তাঁর প্রেমে জ্বালানি যোগাবে। ‘মিরাজ’ অংশ ঠিক তেমনই। একের পর এক মরীচিকা রাস্তায় নাচছে, একের পর এক আশ্রয় ও জলের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কিন্তু তারপরে অনেক আশা ও স্বপ্নের মতো নিষ্ঠুরভাবে বাষ্প হয়ে গেছে। সমস্ত শিল্পীর মতো, নিনের চর্যা ছিল তাঁর অনুভূতি এবং তিনি তাঁর বাবার প্রত্যাখ্যান থেকে উদ্ভূত ছিন্নভিন্ন ব্যথার আয়নায় নিজেকে প্রতিবিম্বিত করেছেন। এই অংশে, নিন তাঁর "অসুখ" সম্পর্কে লিখেছেন, নিজেকে বারবার আত্ম-এবং পেশাদার বিশ্লেষণের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন, এবং যা তাঁর মনে হয়েছে বিপদজনকভাবে ধ্বংসের কাছাকাছি।

    অবশেষে, ১৯৪৭ সালের গোড়ার দিকে রুপার্ট পোলের সাথে পরিচয় হবার পর, নিন শেষ পর্যন্ত একটি পরিপূর্ণ সম্পর্ক উপভোগ করবেন, যেটি তার প্রেমের জন্য উন্মাতাল অনুসন্ধানের অবসান ঘটাবে, যদিও এখানে তাঁর গল্প শেষ হয় না। পরিবর্তে, তিনি তারপর একটি "ট্র্যাপিজ" জীবন শুরু করবেন যেখানে তিনি বছরের পর বছর ধরে দুজন স্বামী রুপার্ট পোল এবং হুগো গুইলারের মধ্যে দোল খাবেন - এক অসম্ভব কীর্তি এবং তার জীবনকাহিনির সবচেয়ে আকর্ষণীয় সময়গুলোর অন্যতম৷ বাবা ও প্রেমিকদের দ্বারা পরিত্যক্ত, প্রচন্ড বেদনা, এবং যৌন চাহিদা থেকে, আনাঈস নিন একটি জীবনব্যাপী শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন যা অতুলনীয়, যা কল্পকাহিনী এবং গম্ভীর সন্দর্ভ, ডায়েরি এবং উপন্যাসের মধ্যে বাধা ভেঙে দেয়, সচেতন এবং অচেতন, সামাজিকভাবে- অনুমোদিত এবং অননুমোদিত, সরকারী এবং ব্যক্তিগত, সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। এই ধরনের সেন্সরশিপ সমাজে ছিল এক সময়ে।

    অ্যানাঈস নিনের কাছে, একটি ডায়েরি শুরু করার জন্য একজন বীর নায়িকার নির্মাণ দরকার ছিল। তিনি নিজের একটি আদর্শ সংস্করণ হিসেবে গড়ে তুললেন সেই বীরাঙ্গনা। তবে তাঁর ডায়েরিতে লেখার ফলে তাঁর চরিত্রের প্রকৃত দিকগুলিও আবিষ্কার করেছেন তিনি নিজে এবং তাঁর পাঠকরা। লেখাগুলো খাঁটি ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য একত্রিত করতে পেরেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে লেখা ছিল "তার বিভক্ত ও বিশৃঙ্খল স্বভাবের সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান" এবং বলেছিলেন, "আমি যতই বিচ্ছিন্ন প্রভাব অনুভব করতাম না কেন, লেখা আমার কাছে ছিল সম্পূর্ণতার একটি কাজ।" এইভাবে, নিনের ডায়েরি একটি অনন্য নথি হিসাবে কাজ করে যা একজন ব্যক্তিত্বের বিবর্তন, আর দ্রোহকে বর্ণনা করে।

    ডায়েরি লেখা নিনের আত্মনির্মাণকে স্পষ্ট করে তোলে, এও প্রকাশ করে যে কেন তা প্রয়োজনীয় ছিল এবং সেই আত্মের বিভিন্ন দিক উন্মোচন করতে সহায়তা করেছিল। সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, ডায়েরি লেখা নিনকে বুঝতে সাহায্য করেছিল যে তাঁর প্রথম অভিজ্ঞতা, প্রথম সম্পর্ক এবং নিজের প্রথম দর্শনের জন্য তাঁর "বন্ধনে থাকা" দরকার নেই। তিনি "বিকৃত আয়না" ভেঙে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং পরিপূর্ণতা ও আনন্দ অনুভব করতে পেরেছিলেন।

    নিনের কাছে ডায়েরি লেখা ছিল ক্যাথারসিস, সৃজনশীলতা এবং থেরাপি সবকিছু একত্রে। লেখা নিজের কাছে আসার একটি উপায়। তিনি যেমন ব্যাখ্যা করেছেন, “অভিজ্ঞতার মুহূর্তটি ইতিমধ্যে চলে গেলে, লেখাটাই আবার সেই জীবনযাপন করার একটি উপায়। জীবন ঘটনা দিয়ে তৈরি এবং অ্যানাঈস এটি জানতেন কারণ তিনি নিজের জীবনের একাধিক সংস্করণ এবং গল্প, জার্নাল, কবিতা এবং সৃজনশীল কথাসাহিত্যে তার অভিজ্ঞতার মুহূর্তগুলো আরেকবার তৈরি করেছিলেন। তাঁর প্রতিভা এবং তাঁর উন্মাদনা প্রতিটি পৃষ্ঠায় ঢেলে দিয়েছেন।

    অ্যানাঈস নিন-এর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো

    ডায়রি ও চিঠিপত্র : ১) চার খণ্ডে ১৯১৪ থেকে ১৯৩১ ডায়েরি ; ২ ) সাতখণ্ডে ডায়রি যা তিনি নিজে সম্পাদনা করেছিলেন ; ৩ ) হেনরি অ্যণ্ড জুন -জার্নাল অফ লাভ ( ১৯৩১-১৯৩২ ) যা নিনের মৃত্যুর পর তাঁর স্বামী রুপার্ট পোল প্রকাশ করেন ; ৪ ) ইনসেস্ট : ফ্রম এ জার্নাল অফ লাভ ( ১৯৯২ ) ; ৫ ) ফায়ার : ফ্রম এ জার্নাল অফ লাভ ( ১৯৯৫) ; ৬ ) নিয়ারার দ্য মুন : ফ্রম এ জার্নাল অফ লাভ ( ১৯৯৬ ) ; ৭ ) মিরাজেস : দি আনএক্সপারগেটেড ডায়ারি অফ অ্যানাই নিন, ১৯৩৯-১৯৪৭ ( ২০১৩ ) ; ৮ ) ট্র্যাপিজ : দি আনএক্সপারগেটেড ডায়ারিজ অভ অ্যানাই নিন ১৯৪৭ -১৯৫৫ ( ২০১৭ ); ৯ ) দি ডায়ারি অফ আদার্স : দি আনএক্সপারগেটেড ডায়ারিজ অফ অ্যানাই নিন ১৯৫৫ - ১৯৬৬ ( ২০২১) ; ১০ ) লেটার্স টু এ ফ্রেণ্ড ইন অসট্রেলিয়া ( ১৯৯২ ) ; ১১) এ লিটারেট প্যাশান : লেটার্স অফ অ্যানাই নিন অ্যান্ড হেনরি মিলার ( ১৯৮৭ ); ১২ ) অ্যারোজ অফ লঙগিঙ : লেটার্স বিটউইন অ্যানাই নিন অ্যান্ড ফেলিক্স পোলাক ১৯৫২ - ১৯৭৬ ( ১৯৯৮ ) ; ১৩ ) রিইউনাইটেড : লেটার্স বিটউইন অ্যানাই অ্যান্ড জোয়াকিন নিন ১৯৩৩ ১৯৪০ ( ২০২০) : ১৪ ) লেটার্স টু লরেন্স ডুরেল ১৯৩৭ - ১৯৭৭ ( ২০২০ )

    উপন্যাস : ১ ) হাউস অফ ইনসেস্ট ( ১৯৩৬ ) ; ২ ) উনটার অফ আর্টিফিস ( ১৯৩৯ ); ৩ )সিটিজ অফ দি ইনটিরিয়র - পাঁচ খণ্ডে ( ১৯৫৯ ); ৪ ) ল্যাডার্স অফ ফায়ার ; ৫ ) চিলড্রেন অফ অ্যালবাট্রস ; ৬ ) দি ফোর চেমবার্ড হার্ট : ৭ ) দি স্পাই ইন দ্য হাউস অফ লাভ ; ৮ ) সিডাকশান অফ দি মিনোটর ( ১৯৫৮ সালে সোলার বার্ক নামে প্রকাশিত হয়েছিল ) ; ৯ ) কোলাজেস ( ১৯৬৪ )

    ছোটগল্প সংকলন : ১ ) ওয়েস্ট অফ টাইমলেসনেস ( মৃত্যুর পর প্রকাশিত ) ; ২ ) আণ্ডার এ গ্লাস বেল ( ১৯৪৪ ) ; ৩ ) ডেল্টা অফ ভেনাস ( ১৯৭৭ ) ; ৪) লিটল বার্ডস ( ১৯৭৯ ); ৫ ) অলেট্রিস ( ২০১৬ )

    প্রবন্ধ : ১ ) ডি এইচ লরেন্স - অ্যান আনপ্রফেশনাল স্টাডি ( ১৯৩২ ); ২) দি নভেল অফ দি ফিউচার ( ১৯৬৮ ) ; ৩) ইন ফেভার অফ দি সেনসিটিভ ম্যান ( ১৯৭৬); ৪ ) দি মিসটিক অফ সেক্স - ১৯৩৪ - ১৯৭৪ ( ১৯৯৫ )

    সমালোচকরা, সমাজে তাঁর ডায়েরি ও উপন্যাসের নৈতিক প্রভাবের চেয়ে তাঁর ভাষা ব্যবহার সম্পর্কে বেশি আপত্তি করেছেন। হেনরি মিলারের সাথে ক্ষিপ্ত তর্কে নিন দাবি করেছিলেন যে নারীরা তাদের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে পারে আর ‘মেল গেজ’ বা পুরুষের দৃষ্টিকে এড়িয়ে যেতে পারে।যদিও তিনি সাহিত্যিক সাফল্যের উচ্চতা অর্জন করতে পারেননি যা তিনি চেয়েছিলেন, নিন একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের হোতা হয়ে উঠেছিলেন এবং তা হলো ১৯৬০ ও ১৯৭০ দশকের নারীবাদী আন্দোলন। তিনি নারীর স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বরের বিরল ক্ষমতার জন্ম দিয়েছিলেন। ‘ ডেল্টা অফ ভেনাস’ বইতে নিন পাঠকদের নতুন অভিজ্ঞতার জগতে স্বাগত জানান যেখানে তিনি দাবি করেন যে 'কান্না, হাসি, প্রতিশ্রুতিনতুন মুখ, নাচ এবং মদের সাথে যৌনতা মিশ্রিত করা হোক।’ গল্পের এই সংকলন নারীর যৌনতা সম্পর্কিত চাহিদা তুলে ধরেছে। অ্যানাঈস নিজে যাকে 'প্যান্ডোরার বাক্স' নাম দিয়ে খুলে দিয়েছিলেন। নিনের লেখাগুলোয় নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন জনপ্রিয় নারীবাদী বক্তা করে তুলেছিল; অবশ্য নারীবাদী আন্দোলনের রাজনৈতিক সক্রিয়তা থেকে নিন নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ছিলেন। ১৯৭৩ সালে, তাঁর মৃত্যুর আগে, নিন ফিলাডেলফিয়া কলেজ অফ আর্ট থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট পেয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারসের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।১৯৭৬ সালে ‘লস এঞ্জেলেস টাইমস’ তাঁকে বর্ষসেরা নারীর পুরস্কার দিয়েছিল।

    নিনকে অনেক সমালোচক নারীর লেখা ইরোটিকার পথিকৃৎ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি ছিলেন নারীদের মধ্যে প্রথম একজন যিনি ইরোটিক লেখার এলাকার সবটুকু অন্বেষণ করেছেন এবং অবশ্যই ইউরোপ-আমেরিকার আধুনিক সাহিত্যে প্রথম মহিলা যিনি ইরোটিকা লেখার জন্য পরিচিত। তার আগে, কেট চোপিনের কাজের মতো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম সহ মহিলাদের দ্বারা লেখা ইরোটিকা বিরল ছিল। তাঁর ডায়রিতে নিন লেখক ডুনা বার্নস, ডিএইচ লরেন্স, মার্সেল প্রুস্ত, আঁদ্রে জিদ, জাঁ ককতো, পল ভ্যালেরি এবং আর্তুর র‌্যাঁবোর দ্বারা অনুপ্রেরণার কথা লিখেছেন।

    তাঁর পুরো নাম অ্যাঞ্জেলা আনাঈস হুয়ানা আন্তোলিনা রোসা এদেলমিরা নিন ই কুলমেল (জন্ম ১৯০৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি; মৃত্যু ১৯৭৭ সালের ১৪ জানুয়ারি ) নামটা স্প্যানিশ। পরিচিত অ্যানাঈস নিন নামে। আনাঈস নিন জন্মেছিলেন ফ্রান্সের নিউইলিতে। তাঁর বাবা জোয়াকিন নিন ছিলেন কিউবান পিয়ানোবাদক এবং সুরকার এবং মা কাতালান বংশদ্ভুত রোজা কুলমেল, ফরাসি এবং ডেনিশ বংশোদ্ভূত কিউবান গাযিকা। তাঁর বাবার দাদা বিপ্লবের সময়ে ফ্রান্স থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন, প্রথমে সান্তো ডোমিঙ্গোয়, তারপর নিউ অরলিন্স, এবং অবশেষে কিউবায়।

    নিন তাঁর প্রারম্ভিক বছরগুলো স্পেন আর কিউবায়, ষোল বছর প্যারিসে ( ১৯২৪- ১৯৪০) আর তাঁর জীবনের বাকি অর্ধেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়েছেন, যেখানে তিনি একজন ভিন্নধারার লেখিকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। অ্যানাঈস নিন ক্যাথলিক রোমান পরিবারে জন্মালেও ষোলো বছর বয়সে ধর্মের সঙ্গে সব সম্পর্ক চুকিয়ে গির্জায় যাওয়া ছেড়ে দেন। তিনি তাঁর শৈশব এবং প্রাথমিক জীবন ইউরোপে কাটিয়েছেন। তাঁর বয়স যখন দুবছর তখন তাঁর বাবা-মা আলাদা হয়ে যান; তাঁর মা তারপর অ্যনাঈস আর তার দুই ভাই, থোরাভিদ আর জোয়াকিনকে নিয়ে প্রথমে বার্সেলোনা, আর তারপর নিউ ইয়র্ক সিটিতে বসবাস করতে চলে যান, যেখানে অ্যানাঈস উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। নিন ১৯১৯ সালে ষোল বছর বয়সে হাইস্কুল ছেড়ে দেন। তাঁর ডায়েরি অনুযায়ী তিনি একজন শিল্পীর মডেল হিসেবে কাজ শুরু করেন। বেশ কয়েক বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার পর, নিন স্প্যানিশ বলতে ভুলে গিয়েছিলেন, কিন্তু ফরাসি ভাষা বলতে পারতেন আর ইংরেজিতে সাবলীল হয়ে ওঠেন।

    ৩ মার্চ, ১৯২৩ সালে, হাভানা, কিউবাতে, হিউ পার্কার গুইলারকে ( ১৮৯৮ - ১৯৮৫ ) অ্যানাঈস নিন বিয়ে করেন। গুইলার ছিলেন একজন ব্যাঙ্কার এবং শিল্পী। গুইলার পরে "ইয়ান হুগো" নামে পরিচিত হন; সেসময়ে গুইলার ১৯৪০ দশকের পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র তৈরি করা আরম্ভ করেন। পরের বছর তাঁরা দুজন প্যারিসে চলে যান। সেখানে গুইলার তাঁর ব্যাঙ্কিং ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং নিন লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ দেখাতে শুরু করেন। তাঁর ডায়েরিতে তিনি ফ্ল্যামেংকো নাচ শেখার কথাও লিখেছেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাজটি ছিল ১৯৩২ সালে ডি এইচ লরেন্সের মূল্যায়ন নিয়ে ষোলো দিনে লেখা ‘ডিএইচ লরেন্স: একটি এ প্রফেশনাল স্টাডি’।

    তাঁর ১৯৩১-১৯৩৪ ডায়েরি অনুযায়ী, নিন ইরোটিকায় প্রথম আকৃষ্ট হন যখন তিনি তাঁর স্বামী, মা এবং দুই ভাইয়ের সাথে প্যারিসে ফিরে যান। তাঁরা গ্রীষ্মের জন্য একজন আমেরিকানের অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়েছিলেন, এবং নিন বেশ কয়েকটা ফরাসি পেপারব্যাক পেয়েছিলেন। ডায়রিতে লিখেছেন "একের পর এক, আমি এই বইগুলো পড়ি, যেগুলো আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন ছিল৷ আমি আমেরিকাতে কখনও কামুক সাহিত্য পড়িনি৷ বইগুলো আমাকে অভিভূত করেছিল। সেগুলো পড়ার আগে আমি নির্দোষ ছিলাম, কিন্তু যখন আমি সেগুলো পড়লাম, তখন যৌন শোষণ সম্পর্কে আমি জানতাম না এমন কিছুই বাকি রইল না। বলা যায় ইরোটিক বিদ্যায় আমি ডিগ্রি পেলাম।" নিন লিখেছিলেন, “আমি শুধুমাত্র পরমানন্দের জন্য বাঁচতে চাই। ছোট ডোজ, মাঝারি ভালবাসা, অর্ধ-ছায়া, ঠান্ডা চাই না। আমি বাড়াবাড়ি পছন্দ করি। এমন চিঠি পেতে চাই যা পোস্টম্যান বইতে পারে না, এমন বই যা তাদের কভার থেকে উপচে পড়ে, এমন যৌনতা থার্মোমিটারকে ফাটিয়ে দেয়।”

    ১৯২৩ সালে, নিন প্যারিসে আমেরিকান লেখকদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। হেনরি মিলার আর হেনরির স্ত্রী জুনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় এবং আরম্ভ হয় হেনরি আর জুন মিলারের সঙ্গে অ্যানাঈস নিনের জটিল প্রেমের ত্রিভুজ যা তাঁর সেই সময়ের ডায়েরির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। পরে এই ত্রিভুজ নিয়ে একটা সিনেমা হয়েছে। তাঁর ডায়েরি অনুসারে, অ্যানাঈস নিনের বোহেমিয়ান জীবনধারা শুরু হয় প্যারিসে হেনরি মিলারের সঙ্গে যৌনসম্পর্কের সময়কালে। মিলারের সাথে তাঁর মিলন খুব আবেগপূর্ণ এবং শারীরিক ছিল যার ফলে নিন গর্ভবতী হয়ে পড়েন আর ১৯৩৪ সালে গর্ভপাত করাতে হয়। হেনরি মিলার পাঁচবার বিয়ে করেছেন আর ডিভোর্স দিয়েছেন : ১) বিয়েট্রিস সিলভাস উইকেন্স, বিয়ে ১৯১৭, ডিভোর্স ১৯২৪; ২) জুন স্মিথ ম্যান্সফিল্ড, বিয়ে ১৯২৪, ডিভোর্স ১৯৩৪; ৩ ) জ্যামিনা মার্থা লেপ্সকা, বিয়ে ১৯৪৪, ডিভোর্স ১৯৫২ ; ৪ ) ইভ ম্যাকক্লুর, বিয়ে ১৯৫৩, ডিভোর্স ১৯৬২ ; এবং ৫ ) হোকি টোকুডা, বিয়ে ১৯৬৭, ডিভোর্স ১৯৭৮। মিলারের শেষ প্রেমিকা ছিলেন ব্রেণ্ডা ভেনাস, যাঁকে তিনি বিয়ে করেননি, লিভ টুগেদার করতেন আর অজস্র প্রেমপত্র লিখতেন, যেগুলো সংকলিত করে ব্রেণ্ডা ভেনাস একটি গ্রন্হ প্রকাশ করেছেন। অ্যানাঈস নিন বিবাহিত ছিলেন এবং মিলারকে বিয়ে করতে চাননি।

    মিলারের জীবনে অ্যানাঈস নিনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, নিন ছিলেন একই সঙ্গে তাঁর মা আর শয্যাসঙ্গিনী। নিনের অনুমতি না নিয়ে মিলার কোনো সাহিত্যিক নির্ণয় নিতেন না। ১৯৩৫ সালে নিন আমেরিকায় থাকতে চলে গেলে মিলার তাঁর পেছু নিয়েছিলেন এবং নিনকে বোঝান তাঁর স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে তাঁকে বিয়ে করতে। নিন রাজি হননি। মিলার তাঁর “ব্ল্যাক স্প্রিঙ” বইটি নিনকে উৎসর্গ করেন। অ্যানাঈস নিন তাঁর ডায়েরিতে হেনরি মিলার সম্পর্কে, আরও অনেক কথার সঙ্গে এইকটা কথাও লিখেছেন, “হেনরি যেন একজন পৌরাণিক অপরাধী। ওর গদ্য তরঙ্গায়িত অগ্নিশিখার মতন, প্রবল স্রোতপূর্ণ, বিশৃঙ্খল, বিপজ্জনক ও মায়াময়। আমাদের যুগে দরকার হিংস্রতা। আমি ওর লেখার তেজকে উপভোগ করি, ওর কুৎসিত, ধ্বংসাত্নক, ভয়হীন, নান্দনিক শৌর্য। জীবনকে পুজো করার পাশাপাশি, সমস্তকিছু সম্পর্কে অত্যুৎসাহী এবং আবেগি দক্ষতা, হাসিঠাট্টা, প্রাচুর্য এবং আকস্মিক ধ্বংসাত্মক ঝড় আমাকে অবাক করে। সমস্তকিছুকে ও তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয় : ভণ্ডামি, কপটতা, ভয়, ছ্যাঁচড়ামি, আশাভঙ্গ। এটা ওর প্রবৃত্তির হুলিয়া। ও উত্তম পুরুষে লেখে, প্রকৃত নামগুলো ব্যবহার করে, ও শৃঙ্খলা আর আঙ্গিককেই কাহিনি হিসাবে গড়ে তোলে। ও অসংযতভাবে এমনকরে লেখে যে আমরা তা বিভিন্ন স্তরে একযোগে অনুভব করি”।

    এই সময় অর্থের জন্য মরিয়া, নিন, হেনরি মিলার এবং তাঁদের কয়েকজন বন্ধু একজন বেনামী "সংগ্রাহকের" জন্য এক ডলার প্রতি পাতার বিনিময়ে কামোত্তেজক এবং পর্নোগ্রাফিক আখ্যান লিখতে শুরু করেন, কিছুটা রসিকতা হিসাবে। নিন তাঁর ইরোটিকার চরিত্রগুলিকে চরম ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্হাপন করেছিলেন। ১৯৭০ এর দশকের শুরুতে সেগুলো ‘ডেল্টা অফ ভেনাস’ নামে প্রকাশ করার অনুমতি দেন আর রাতারাতি সাড়া পড়ে যায়।২০১৬ সালে, ইরোটিকার একটি পূর্বে অনাবিষ্কৃত সংগ্রহ, ’অলেট্রিস’, প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হয়েছিল।

    অ্যানাঈস নিনের সাথে হেনরি মিলারের প্রথম দেখা হয় ১৯৩১ সালে। তিনি যেন মিলারের মতন একজন পুরুষের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ১৯৩১ সালের ডিসেম্বরের জার্নালে তাঁদের প্রথম পরিচয়ের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি প্রথমে মিলারের লেখার প্রেমে পড়েছিলেন, এবং তারপরে মিলারের স্ত্রী জুনের দ্বারা প্রলুব্ধ হন। হেনরি মিলার ‘ট্রপিক অফ ক্যানসার’ এবং ‘ব্ল্যাক স্প্রিং’-এর মতো নিষিদ্ধ, কামোত্তেজক উপন্যাসের লেখক ছিলেন। অ্যানাঈস নিনের সাথে দেখা করার সময়, হেনরি তার পাঁচ স্ত্রীর মধ্যে দ্বিতীয় স্ত্রী জুন অ্যান্ডারসনের সাথে ছিলেন।

    নিন ডায়রিতে লিখেছেন,’যখন মিলার প্রথম গাড়ি থেকে নেমে দরজার দিকে হেঁটে এলো যেখানে আমি অপেক্ষা করছিলাম, আমি একজন পুরুষকেকে দেখতে পেলাম যাকে আমি পছন্দ করতে পারবো। তাঁর লেখায় তিনি সাবলীল, সাহসী, পশুসুলভ, মহৎ। তিনি এমন একজন মানুষ যে জীবন মাতাল করে তুলতে পারবে, আমি ভেবেছিলাম। মিলার আমার মতন। আমার দরকার ছিল একজন বয়স্ক মনের পুরুষ, একজন বাবা, আমার চেয়ে শক্তিশালী একজন মানুষ, একজন প্রেমিক যে আমাকে ভালবাসায় পথ দেখাবে কারণ বাকি সবই এক-একজন নিজের তৈরি জিনিস। বেড়ে ওঠার এবং তীব্রভাবে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা আমার মধ্যে এতটাই শক্তিশালী যে আমি তা প্রতিরোধ করতে পারি না। আমি কাজ করব, আমি আমার স্বামীকে ভালবাসব, তবে আমি নিজের চাহিদাকেও পূরণ করব।

    জুন আনাঈসকে প্রলুব্ধ করেছিল; : নিনের ডায়েরিতে জুনের প্রতি তার শারীরিক আবেগের কথা আছে, তা পরিপূর্ণ হোক বা না হোক, কিন্তু হেনরির প্রতি তার দৈহিক সম্পর্ক অবশ্যই পূর্ণ হয়েছিল। নিন লিখেছেন, “"আমি ইতিমধ্যেই হেনরির লেখায় আকৃষ্ট, কিন্তু আমি আমার শরীরকে আমার মন থেকে আলাদা করেছি। আমি মিলারের শক্তি, তার কুৎসিত, ধ্বংসাত্মক, নির্ভীক, ক্যাথার্টিক শক্তি উপভোগ করি।" হেনরি যদি কুৎসিত তাহলে জুন অপ্রতিরোধ্যভাবে সুন্দরী। অ্যানাঈস এবং হেনরির মধ্যে সম্পর্ক ত্রিমুখী হয়ে ওঠে: নিয়ন্ত্রক জুন আবেগপ্রবণ অ্যানাঈসকে প্রলুব্ধ করে ফ্যালে।

    গুইলার হেনরির সাথে নিনের সম্পর্কের কথা সবই জানতেন এবং ভয়ও পেয়েছিলেন যে তিনি মিলারের কাছে আনাঈসকে হারাবেন। নিন লিখেছেন, “গুইলার মিলারের প্রশংসা করে। একই সঙ্গে সে উদ্বিগ্ন। গুইলার ন্যায়সঙ্গতভাবে বলেছে, তুমি মানুষের মনের প্রেমে পড়ে যাও। আমি তোমাকে হেনরির কাছে হারাতে যাচ্ছি।" গুইলার সত্যিই নিনকে হারিয়ে ছিল, প্রথমে মিলারের কাছে, পরে রুপার্ট পোলের কাছে, যদিও তারা বিবাহিত ছিল।

    নিন এবং মিলারের সাহিত্যিক বন্ধুত্ব এবং যৌন সম্পর্ক একটা তীব্র রোম্যান্সে পরিণত হয়েছিল যা কয়েক দশক ধরে চলেছিল এবং এটি লক্ষণীয় যে নিন তার ডায়েরির বিশাল সংগ্রহে তাঁর যৌন জীবন বিশদে নথিভুক্ত করেছেন। তাঁরা দুজনেই ধারাবাহিক, জেদপ্রিয় প্রেমিক-প্রেমিকা ছিলেন। মিলার তাঁর উপন্যাসে যৌনতার বিস্তারিত প্যাসেজ লিখেছেন, আর নিন সেরা মহিলা ইরোটিকা লেখকদের একজন হিসাবে বিবেচিত হয়েছেন, নিঃসন্দেহে দুজনেই একে অপরের প্রতি তাদের আবেগপূর্ণ আসক্তি দ্বারা উৎসাহিত হয়েছেন। নিন মিলারের বইয়ের প্রথম মুদ্রণ থেকে শুরু করে প্রায় এক দশকের ভাড়ার কিস্তি পর্যন্ত সবকিছুর জন্য অর্থ সাহায্য করেছিলেন, কিন্তু তারপরে যখন মিলার তাঁর উপন্যাসগুলো থেকে প্রচুর রোজগার আর প্রশংসা পেতে আরম্ভ করলেন তখন তিনি নিনকে সমর্থন করা থেকে সরে যান যার ফলে শেষ পর্যন্ত সম্পর্কটা ভেঙে যায়।

    অ্যানাঈস নিনকে লেখা হেনরি মিলারের প্রেমপত্র ( নিনের স্বামীর অবর্তমানে তাঁর বাড়িতে কয়েকটা দিন অবিরাম যৌনসম্পর্ক কাটিয়ে আসার পর লেখা )–

    ১৪ আগস্ট ১৯৩২

    অ্যানাঈস

    আমাকে আর সুস্হমস্তিক বলে মনে কোরো না। নিজেদের আর বোধবুদ্ধিসম্পন্ন বলে মনে কোরো না। লোভেসিয়েঁতে যা ঘটেছিল তা বিবাহ — তুমি এর বিরোধিতা করতে পারো না। তোমার দেহের অংশ গায়ে এঁটে নিয়ে আমি ফিরে এলুম; আমি ঘুরে বেড়াচ্ছি, সাঁতার কাটছি, রক্তের সমুদ্রে, তোমার আন্দালুশিয় রক্তে, চোলাই- করা আর বিষাক্ত। আমি যা কিছু বলছি আর ভাবছি তা ফিরে-ফিরে ওই বিবাহের কাছেই চলে যাচ্ছে। তোমার বাড়ির গৃহকর্তৃীর রূপে তোমাকে দেখলুম, ভারি মুখশ্রীর এক মুসলমাননি, শাদা ত্বকের এক নিগ্রোনারী, সারা গায়ে অজস্র চোখ, নারী, নারী, নারী। জানি না কেমন করে তোমার থেকে দূরে থাকবো, এই মাঝের সময়গুলো আমার মৃত্যু। হিউগো যখন বাড়ি ফিরে এলো তখন তোমার কেমন লেগেছিল ? তখনও কি আমি সেখানে ছিলুম ? আমি দেখতে পাচ্ছি ওর সঙ্গে সেভাবেই চলাফেরা করছ যেমন আমার সঙ্গে করেছ। পা একের সাথে আরেক। কমনীয়। মিষ্টি, বিশ্বাসঘাতী মৌনসন্মতি। পাখির সহজবশ্যতা। আমার সঙ্গে তুমি হয়ে উঠেছিলে নারী। আমি তার জন্য প্রায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলুম। তুমি কেবলমাত্র তিরিশ বছরের নও — তুমি হাজার বছরের।

    আমি এখানে ফিরে এসেছি আর এখনও ধিকিয়ে-ধিকিয়ে আসক্তিতে জ্বলছি, ধোঁয়াওঠা মদের মতন। মাংসের আসক্তির জন্য তা কিন্তু নয়, তোমাকে পাবার সম্পূর্ণ ক্ষুধায়, গিলে ফেলার ক্ষুধায়। কাগজে আত্মহত্যা আর হত্যার সংবাদ পড়ি আর আমি তা ভালো করে বুঝতে পারি। আমি কাউকে হত্যা করার মতো বোধ করি, আত্মহত্যা করার ইচ্ছা হয়। আমার মনে হয় চুপচাপ বসে থাকাটা অবমাননাকর, সময় কাটানো, দার্শনিক দিক দিয়ে ভাবলে, বোধবুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া। সেই দিনকাল কোথায় গেলো যখন পুরুষরা একখানা দস্তানার জন্য, একটা চাউনির জন্য পরস্পর লড়তো, মেরে ফেলতো, মরে যেতো ? ( মাদাম প্রজাপতির সেই ভয়ংকর গানটা কেউ বাজাচ্ছে — “একদিন সে-পুরুষ আসবেই !”)

    আমি এখনও শুনতে পাচ্ছি তুমি রান্নাঘরে গান গাইছো — একধরণের সঙ্গতিহীন কিউবার গোঙানির রেশ। আমি জানি রান্নাঘরে তুমি আনন্দ পাও, আর যে খাবার রান্না করছ তা দুজনে একসঙ্গে বসে খাওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো খাবার। আমি জানি তুমি নিজেকে ছ্যাঁকা লাগিয়ে ফেলবে কিন্তু নালিশ করবে না। আমি সবচেয়ে বেশি শান্তি আর আনন্দ পাই তোমার খাবার ঘরে বসে যখন চলাফেরার দরুণ তোমার পোশাকের শব্দ শুনতে পাই, তোমার পোশাকে যেন ইন্দ্রের হাজার চোখের কারুকাজ করা।

    অ্যানাঈস, আমি এর আগেও তোমার কথা ভেবেছি, কিন্তু এখন আমার মধ্যে যা ঘটছে তা নিশ্চিত আর সেরকম নয়। ব্যাপারটা এই জন্যেই কি আহ্লাদের যে তা ছিল সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আর লুকিয়ে-চুরিয়ে করা ? আমরা দুজনে কি পরস্পরের জন্য অভিনয় করছিলুম, পরস্পরের প্রতি ? আমি কি কম আমি ছিলুম, নাকি বেশি আমি, আর তুমি কম না বেশি তুমি ? এটা কি মাথাখারাপের ব্যাপার যে বিশ্বাস করতে হবে এই ভাবেই চলবে ? কবে আর কোথায় একঘেয়ে মুহূর্তগুলো আরম্ভ হবে? আমি তোমায় লক্ষ করি সম্ভাব্য খুঁত বের করার জন্য, দুর্বল বিষয়ের জন্য, বিপজ্জনক এলাকার জন্য, আমি কিছুই খুঁজে পাই না — কিচ্ছু নয়। তার মানে আমি প্রেমে পড়ে গেছি, অন্ধ, অন্ধ। সারাজীবন অন্ধ থাকার ( এখন ওরা ‘হেভেন অ্যাণ্ড ওশান’ গাইছে লা জিওকোণ্ডা থেকে )।

    আমার চোখে ভাসছে তুমি গ্রামোফোন রেকর্ড বার বার বাজাচ্ছ — হিউগোর রেকর্ড, “পারলে মোই দ আমোর”। দুজন দুমুখো মানুষের বাঁচা, দুজন দুমুখো মানুষের স্বাদ, দুজন দুমুখো মানুষের আনন্দ ও কষ্ট। এর ফলে তুমি যে কেমনভাবে হলরেখায় কেটে যাচ্ছ আর চষে যাচ্ছ। আমি সবই জানি, কিন্তু তা বন্ধ করার জন্য করতে পারি না কিছুই। আমি সত্যিই চেয়েছি যে ওগুলো আমিই সহ্য করি। আমি জানি এখন তোমার দুই চোখ খোলা। কিছু ব্যাপারকে তুমি আর বিশ্বাস করতে পারবে না, বিশেষ অঙ্গভঙ্গী তুমি দ্বিতীয়বার আর করবে না, কিছু বিশেষ দুঃখ, ভুলবোঝাবুঝি তুমি আর দ্বিতীয়বার অনুভব করতে পারবে না। এক ধরণের ফাঁকা অপরাধী আলোড়ন তোমার কোমলতায় দেখা দেবে আর তার সাথে ক্রুরতা করবে। পশ্চাত্তাপ নয়, প্রতিশোধ নয়, দুঃখ নয়, গ্লানি নয়। একটা বেঁচে নেবার উপায় যা তোমায় অতল থেকে টেনে তুলবে না, কিন্তু এক উচ্চতর আশা, এক বিশ্বাস, এক আনন্দ, যার স্বাদ তুমি পেয়েছ, তা ইচ্ছে করলেই আবার পেতে পারো।

    সারা সকাল আমি আমার নোটগুলো নিয়ে বসেছিলুম, আমার জীবনের তথ্যগুলো ঝালাই করছিলুম, ভেবে পাচ্ছিলুম না কোথা থেকে শুরু করি, কেমন করে আরম্ভ করি, আমার সামনে কেবল একটা বই দেখতে পাবার জন্যই কেবল নয়, বরং বইয়ের জীবনসমগ্র চাই। কিন্তু আমি আরম্ভ করতে পারছি না। দেয়ালগুলো একেবারে ফাঁকা — তোমার সাথে দেখা করতে যাবার আগে আমি সবই নামিয়ে নিয়েছিলুম। যেন আমি সবকিছু ছেড়েছুড়ে চলে যাবার জন্য তৈরি ছিলুম। দেয়ালের দাগগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে — যেখানে আমরা দুজনে মাথা রেখেছিলুম। বাইরে যখন বাজ পড়ছে আর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আমি বিছানায় শুয়ে অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছি। আমরা রয়েছি সেভাইল-এ আর তারপর ফেজ-এ আর তারপর কাপ্রিতে আর তারপর হাভানায়। আমরা অবিরাম বেড়িয়ে বেড়াচ্ছি, কিন্তু রয়েছে টাইপরাইটার আর বই, আর তোমার শরীর সবসময় আমার পাশে আর তোমার চোখের দৃষ্টি কখনও বদলাচ্ছে না। লোকে বলাবলি করছে যে আমরা দুর্দশায় আক্রান্ত হবো, আমরা পরে পশ্চাত্তাপ করবো, কিন্তু আমরা খুশি, আমরা হাসাহাসি করছি, আমরা গান গাইছি। আমরা স্প্যানিশ আর ফরাসি আর আরবিয় আর তুর্কি ভাষায় কথা বলছি। আমাদের প্রবেশ সর্বত্র অবাধ আর আমাদের চলার পথে ফুল বিছিয়ে দেয়া হয়েছে।

    আমি বলছি এ এক অদ্ভুত স্বপ্ন — কিন্তু এই স্বপ্নকে আমি বাস্তবে পেতে চাই। জীবন ও সাহিত্য একযোগে, বিদ্যুৎপ্রবাহ উৎপাদন যন্ত্রের প্রতি ভালোবাসা, তুমি তোমার রঙবদলানো গিরগিটির আত্মা নিয়ে আমাকে দিচ্ছ হাজার ভালোবাসা, সবসময়ে নোঙরে বাঁধা, তা যেকোনো রকমের ঝড়জলই হোক বা বাড়িতে বা যেখানে আমরা দুজনে থাকবো। সকালবেলায়, যেখানে আমরা শেষ করেছিলুম, সেখান থেকে আবার শুরু করবো। পুণর্জন্মের পর পুণর্জন্ম। তুমি দৃঢ়ভাবে নিজেকে জাহির করছ, জীবনের বৈভবশালী বৈভিন্ন্য তোমার চাই, আর যতো তুমি নিজেকে জাহির করো ততো তুমি আমাকে চাও, আমার প্রয়োজন বোধ করো। তোমার কন্ঠস্বর ভেঙে পড়ে, গভীর হয়ে ওঠে, চোখ আরও কালো, তোমার রক্ত আরও ঘন, তোমার দেহ আরও সুঠাম। এক ইন্দ্রিয়সুখী আজ্ঞা আর পীড়নশীল প্রয়োজনীয়তা। আগের থেকে বেশি নিষ্ঠুর — সচেতনভাবে, ইচ্ছাকৃত নিষ্ঠুরতা। অভিজ্ঞতার তৃপ্তিহীন আহ্লাদ।

    ২৩ মে, ১৯৩৩ সালে আনাঈস নিন এই চিঠিটি হেনরি মিলারকে লিখেছিলেন:

    হেনরি, জুন যখন বলেছিল তুমি সম্পূর্ণ স্বার্থপর, আমি এটা বিশ্বাস করিনি। আজ তুমি আমাকে গভীরভাবে হতবাক করেছ। আমি সর্বদা জানতাম যে আমি তোমাকে যা দিতে পারি তার জন্য তুমি আমাকে ভালোবাসো আর আমি তা বুঝতে এবং গ্রহণ করতে ইচ্ছুক কারণ তুমি একজন শিল্পী। আমি কখনই আশা করিনি যে তুমি সারাজীবন মানুষ হয়ে থাকবে, এমনকি সপ্তাহে সাত দিনও। সপ্তাহে একদিন, বা দশদিন পর একদিন এতটা কঠিন মনে হয়নি। তুমি আমাকে ছেড়ে যে সোমবার চলে গেলে সেদিন গুইলার ফিরে এসেছে। আমি বুঝতে পেরেছি যে যা ঘটেছিল তা নিয়ে তুমি একেবারে পরোয়া করো না। তুমি অবিলম্বে সব ভুলে যেতে চাও। তুমি আমাকে লিখেছিলে: “আমি খুব অসহায় বোধ করছি”। আমি সে সব কিছু মনে করিনি। তুমি আমার সব কিছু থেকে মুক্ত, তোমাকে মুক্ত করার ইচ্ছা মেনে নিয়েছ। তুমি জানো আমি এটা বোঝাতে চেয়েছিলাম কিন্তু যত তাড়াতাড়ি আমি তোমাকে সমস্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিয়েছি, তুমি তোমার আত্মমগ্ন জীবনে ফিরে গেলে। আর আমি এটা জানতাম। শুক্রবার আমি নিজেকে বললাম: ‘আমি হেনরিকে আসতে দেব না। ও আমাকে স্বার্থপরের মতন ভালবাসে, শুধুমাত্র নিজের আনন্দের জিনিস জন্য। সে সত্যিই আমাকে পাত্তা দেয় না। আর আজ তুমি এটা প্রমাণ করেছ। তুমি ভাল, সুস্থ, চিন্তামুক্ত থাকতে চাও তুমি আমার জীবনকে পাত্তা দিলে না। তুমি আমাকে দশদিন দেখে ঠান্ডা হয়ে গেছো। তুমি আমাকে আদরও করোনি। তুমি সৌম্য হতে ঘরের ভেতরে আসোনি, তোমার নির্মমতার প্রমাণ। সত্য হল তুমি ক্লিচিতে সম্পূর্ণ সুখী, একা। আমি দেখব যে তোমার নিরাপত্তা, তোমার স্বাধীনতা যেন অব্যাহত থাকে। কিন্তু হেনরি, বাকি সব মৃত। তুমি এটা মেরে ফেললে।

    আনাঈস

    ডায়রিতে নিন লিখেছিলেন, “কাল রাতে আমি কেঁদেছিলাম। আমি কেঁদেছিলাম কারণ যে প্রক্রিয়ায় আমি নারী হয়েছি তা বেদনাদায়ক ছিল। আমি কেঁদেছিলাম কারণ আমি আর অন্ধ বিশ্বাসের শিশু ছিলাম না। আমি কেঁদেছিলাম কারণ আমার চোখ বাস্তবে উন্মুক্ত হয়েছিল - হেনরির স্বার্থপরতা, জুনের ক্ষমতার প্রতি ভালবাসা, আমার অতৃপ্ত সৃজনশীলতা নিজের জন্য অপর্যাপ্ত হতে পারে না।

    ফ্রান্সে বসেই ‘ট্রপিক অফ ক্যানসার’ বইটি চার বছর ধরে লিখেছিলেন মিলার কিন্তু সেখানেও বইটির প্রকাশক পাওয়া সহজ ছিল না, তার প্রধান কারণ সেখানকার সাহিত্যিক মহলে বুদ্ধিজীবি হিসেবে নিজেকে জাহির করতে পারছিলেন না প্রায়-ভিকিরি ভবঘুরে চালচুলোহীন চল্লিশবছরের মাগিবাজ হেনরি মিলার, যিনি ১৯৩০ সালে লেখা আরম্ভ করে বইটি শেষ করেন ১৯৩৪ সালে। বইটির জন্যে আর্থিক সাহায্য করেন মিলারের যৌনসঙ্গিনী লেখিকা অ্যানাইস নিন, তাঁর আরেক প্রেমিক মনোচিকিৎসক অটো র‌্যাঙ্কের কাছ থেকে টাকা নিয়ে, তারপরই বইটি প্রকাশ করতে রাজি হয় ওবেলিস্ক প্রেসের মালিক জ্যাক কাহানে। ছাপতে দেবার আগে বইটির পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা করেছিলেন অ্যানাইস নিন, ভূমিকাও তিনি লিখে দিয়েছিলেন।

    ১৯৩৯ সালের গ্রীষ্মের শেষের দিকে, যখন যুদ্ধের কারণে বিদেশি বাসিন্দাদের ফ্রান্স ছেড়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল, নিন প্যারিস ত্যাগ করেন এবং তাঁর স্বামী গুইলারের সাথে নিউইয়র্ক সিটিতে ফিরে যান।

    প্রথম বিয়ে বজায় থাকতেই নিন তাঁর চেয়ে বয়সে ছোটো রুপার্ট পোল নামে সৌম্যকান্তি এক যুবককে বিয়ে করেন। পোল ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার একজন সুদর্শন, ফরেস্ট রেঞ্জার। কিছু আবেগপূর্ণ রাত একসাথে থাকার পর, নিন গুইলারের জন্য একটি গল্প তৈরি করে ফেলেছিলেন — গুইলারকে তিনি ইতিমধ্যেই "ট্রপিক অফ ক্যান্সার" লেখক হেনরি মিলারের সাথে যৌনজীবন কাটিয়ে প্রতারণা করেছিলেন। পোল, যিনি ভেবেছিলেন যে নিন তাঁর প্রথম স্বামী হিউ পার্কার গুইলারকে তালাক দিয়েছেন, নিনকে তার সাথে পশ্চিম উপকূলে যেতে বলেছিলেন। নিন তা করতে রাজি হন, কিন্তু গুইলারকে বলেছিলেন যে তিনি লাস ভেগাস ড্রাইভে এক বন্ধুর কাছে যাচ্ছেন।

    নিন এবং পোল ১৭ মার্চ, ১৯৫৫ সালে অ্যারিজোনার কোয়ার্টজ সাইটের জাস্টিস অফ পিসের অফিসে বিয়ে করেছিলেন। নিন এগারো বছর ধরে গুইলারের সাথে তাঁর বিয়েকে পোলের কাছ থেকে গোপন রেখেছিলেন।এক দশকেরও বেশি সময় ধরে, আনাঈস নিন দ্বৈত জীবন যাপন করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পৃথক উপকূলে দুটি ভিন্ন পুরুষের সাথে যৌনজীবন-রহস্যের মহানন্দে। একজন স্বামী ছিলেন নিউ ইয়র্ক সিটির ধনী চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং ব্যাংকার, যিনি নিনকে বিলাসবহুল একটি সর্বজনীন জীবনধারা দিয়েছিলেন। অন্য স্বামী ছিলেন নিনের চেয়ে কুড়ি বছরের ছোটো সুদর্শন ফরেস্ট রেঞ্জার, যার সাথে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার সিয়েরা মাদ্রেতে পাহাড়ের পাশের কেবিনে আবেগপূর্ণ জীবন কাটাতেন। পোল আর নিন সিয়েরা মাদ্রেতে একটা কেবিনে মার্কিন গ্রামীণ জীবনযাপন করতেন, যেখানে নিন নিজেকে মিসেস আনাঈস পোল হিসাবে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন যদিও তিনি তখনও গুইলারের সাথে বিবাহিত।

    দুজনের কেউই অন্য স্বামীর কথা জানতেন না। নিন তাঁর সময়কে তাদের মধ্যে ভাগ করে, ছয় সপ্তাহের জন্য পিছনে উড়ে এক দিকে আবার ছয় সপ্তাহের জন্য অন্য দিকে উড়ে যেতেন। তিনি এই ভারসাম্যমূলক কাজটিকে তাঁর ‘ট্র্যাপিজ উড়াল’ বলে অভিহিত করেছেন — দুই শহর এবং দুই পুরুষের মধ্যে অবিরাম দোল-খাওয়া। নিন একসঙ্গে দুটি অভিজ্ঞতার জন্য একটি উপায় খুঁজে বের করেছিলেন। আমেরিকার পূর্ব উপকূলে একটি পরিশীলিত শহুরে জীবন এবং পশ্চিমে একটি রোমান্টিক জীবন। সেই সময়ের প্রেক্ষিতে ব্যাপারটা অস্বাভাবিক ছিল বিশেষ করে তিনি একজন মহিলা আর সময়টা এমন যখন বহুবিবাহ এবং ‘খোলা সম্পর্ক’ সমাজের অনুমোদন পেতো না। মহিলাদের জীবন মানেই ছিল বিয়ে, মাতৃত্ব আর সংসার করা। তার বিরুদ্ধে অ্যানাঈস নিন নিজের শর্তে জীবনযাপন করেছেন। কিন্তু দুজন পুরুষ একইসঙ্গে তাঁকে ট্যাক্সের খাতিরে নির্ভরশীল বলে দাবি করায় আইনি গণ্ডোগোল এড়াতে ১৯৬৬ সালে অ্যানাঈস নিনকে পোলের সাথে বিবাহ বাতিলের ব্যবস্থা করতে হয়। কাগজে-কলমে বিয়ে বাতিল হলেও পোলকে ছাড়েননি নিন। যদিও বিয়ে বাতিল করা হয়েছিল, নিন এবং পোল ১৯৭৭ সালে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একসাথে বসবাস করতেন, যেন তাঁরা বিবাহিত স্বামী-স্ত্রী। বারবারা ক্রাফটের মতে, তাঁর মৃত্যুর আগে অ্যানাঈস হিউ গুইলারকে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন।

    প্রথম স্বামীর দৌলতে অ্যানাঈস নিনের পার্সে প্রচুর টাকাকড়ি আর চেকবুকের দুটো সেট থাকতো। নিউইয়র্কের জন্য আনাইস গুইলার আর লস অ্যাঞ্জেলেসের জন্য আনাইস পোল নামে। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার ডাক্তার এবং নিউইয়র্কের ডাক্তারদের কাছ থেকে দুটি ভিন্ন নামের প্রেসক্রিপশন নিতেন। নিন আর্থিক সহায়তার জন্য আইনত গুইলারের সাথে বিবাহিত ছিলেন, কিন্তু তাঁর শেষ বছরগুলি পোলের সাথে কাটিয়েছেন। তিনি এবং পোল লস এঞ্জেলেসের সিলভার লেকের আশেপাশে একটি ছোট বাড়িতে থাকতেন যেটি পোল তাঁর ফরেস্ট রেঞ্জার এবং পরে লস অ্যাঞ্জেলেসের থমাস স্টার কিং জুনিয়র হাই স্কুলে বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসাবে চাকরি থেকে বাঁচানো অর্থ দিয়ে তৈরি করেছিলেন।

    নিনের সার্ভিকাল ক্যান্সার রোগ ধরা পড়ে ১৯৭৪ সালে।তিনি কয়েক বছর ধরে ক্যান্সারের সাথে লড়াই করেন কারণ রোগটা মেটাস্ট্যাসাইজ হয়েছিল, এবং অসংখ্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল, তার সঙ্গে বিকিরণ এবং কেমোথেরাপি করা হয়েছিল। নিন ক্যান্সারে মারা যান সিডারস-সিনাই মেডিকেল সেন্টারে, ক্যালিফোর্নিয়ায়, ১৪ জানুয়ারী, ১৯৭৭ সালে। নিনের ইচ্ছানুযায়ী তাঁর দেহ দাহ করা হয়, আর ছাই ছড়িয়ে দেয়া হয় সান্তা মনিকা বে মারমেইড খাঁড়িতে।

    ১৯৭৭ সালে নিনের মৃত্যু হলে, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস-এ তাঁর মৃত্যুতে পোলকে তাঁর স্বামী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল, কিন্তু নিউ ইয়র্ক টাইমস গুইলারকে তাঁর স্বামী হিসাবে উল্লেখ করেছিল।

    অ্যানাঈস নিনের সাহিত্য নির্বাহক হিসাবে, পোল ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত প্রকাশনার নতুন মরণোত্তর সংস্করণের প্রস্তুতির তত্ত্বাবধান করেছিলেন। ১৯৮৫ সালে গুইলারের মৃত্যুতে, পোল সান্তা মনিকার উপকূলের একটি খাঁড়িতে, যেখানে নিনের ছাই ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সেখানেই গুইলারের ছাই ছাই ছড়িয়ে দেন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    103 | 104 | 105 | 106 | 107 | 110 | 113 | 114 | 119 | 120 | 121 | 123 | 124 | 124 | 125 | 125 | 126 | 127 | 127 | 128 | 129 | 131 | 133 | 134 | 135 | 136 | 138 | 139 | 140 | 141 | 143 | 144 | 145 | 147 | 148 | 149 | 149 | 150 | 151 | 152 | 153 | 154 | 155 | 156 | 157 | 158 | 159 | 160 | 161 | 162 | 163 | 164 | 165 | 167 | 168 | 169 | 170 | 171 | 172 | 173 | 174 | 175 | 176 | 176 | 177 | 178 | 179 | 180 | 181 | 182 | 183 | 184 | 185 | 186 | 187 | 188 | 189 | 190 | 191 | 192 | 192 | 193 | 194 | 195 | 196 | 198 | 199 | 200
  • বইপত্তর | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৬৫৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন