এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  অপর বাংলা

  • আমার 'গহ্বরযান'   উপন্যাস থেকে যৎসামান্য

    Malay Roychoudhury লেখকের গ্রাহক হোন
    অপর বাংলা | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১০২৫ বার পঠিত
  • 103 | 104 | 105 | 106 | 107 | 110 | 113 | 114 | 119 | 120 | 121 | 123 | 124 | 124 | 125 | 125 | 126 | 127 | 127 | 128 | 129 | 131 | 133 | 134 | 135 | 136 | 138 | 139 | 140 | 141 | 143 | 144 | 145 | 147 | 148 | 149 | 149 | 150 | 151 | 152 | 153 | 154 | 155 | 156 | 157 | 158 | 159 | 160 | 161 | 162 | 163 | 164 | 165 | 167 | 168 | 169 | 170 | 171 | 172 | 173 | 174 | 175 | 176 | 176 | 177 | 178 | 179 | 180 | 181 | 182 | 183 | 184 | 185 | 186 | 187 | 188 | 189 | 190 | 191 | 192 | 192 | 193 | 194 | 195 | 196 | 198 | 199 | 200
    বইমেলায় প্রকাশিত আমার ‘গহ্বরযান, ( Gahwarjan ) উপন্যাস থেকে যৎসামান্য


    .
    কার্তিকবাহন নিজের সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে গর্ব করেন, মুসলমানদের বলেন নেড়ে, তাঁর প্রতিষ্ঠিত কালীমন্দিরগুলো তাঁর মায়ের নামে,  যাঁর নাম ছিল গৌরী, তাই গৌরীকালীর মন্দিরগুলোতে, যেগুলো কারখানার জমিতে আর হোমস্টেগুলোয় প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেখানে বলিদানের ছাগলের দাড়ি থাকা জরুরি। দু-দুটো বিশাল ভারি খাঁড়া আছে প্রতিটি মন্দিরে, বলিদানের সুবিধার জন্য। সেই খাঁড়াগুলোর দুদিকে কার্তিকবাহনের মা গৌরীর মুখ খোদাই করা।
    .
    নামকরা শিল্পী ডেকে, স্মৃতি থেকে মায়ের মুখ আঁকিয়ে ছিলেন কার্তিকবাহন। সেই ছবি দেখিয়ে গড়া হয়েছে গৌরীকালীর মুখ।
    .
    নারীর স্তন কার্তিকবাহনের মস্তিষ্কে এই বয়সেও ডোপামিন নিঃসরণ করে। তাই স্তন দেখলে যুবকদের মতন তাঁরও ভালো লাগে অথচ কান্না পায়। উন্নত ভরাট স্তন পুরুষের মস্তিষ্কে উর্বরতার সিগনাল পাঠায়।  পূর্বপুরুষরা নারীর বড়ো স্তনকে সুস্বাস্থ্যের প্রতীক মনে করতো। তাই তারা জিনকে পরবর্তী প্রজন্মে স্থানান্তর করার জন্য বড়ো স্তনের নারীর সাথে সঙ্গম করতো। নারীও বড়ো স্তনের মাধ্যমে তার পছন্দের পুরুষকে আকৃষ্ট করে।  তবে এখন অপেক্ষাকৃত ছোট ফিট স্তনকেও আকর্ষণীয় মনে  হয় জুনিয়ার কেবিএসের। পারফেক্ট স্লিম ফিগার এখন অন্যরকম সৌন্দর্য। টলিউড কলিউড বলিউড হলিউড  সব ইন্ডাস্ট্রিতেই এখন এমন দেখা যায়। 
    .
    স্তন বলতে জুনিয়ার কেবিএসের বাধো-বাধো ঠেকে ; উনি বলেন মাই, এমনকী বাংলায় লেখা চুক্তিতেও স্তনের বদলে মাই লেখা আছে। টিভি বা কমপিউটারে ফিল্ম দেখার আগে সেবিকাদের কাছে জেনে নেন আজকাল কোন অভিনেত্রীর মাইয়ের মাপ বড়ো, কে ক্লিভেজ দেখায়।
    .
    আজ চুমুর আগেই কেবিএসের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। 
    .
    চুমু খাবার পর মোবাইলে রেকর্ড করা একটা চিঠি ওনাকে শোনায় সেবিকা, যার যেদিন ডিউটি, রোজকার রুটিন। 
    .
    চিঠিটা ওনার লেখা নয়, ওনাকেও লেখা নয়। জুনিয়ার কেবিএস রোজ সকালে বিছানায় শুয়ে চোখ বুজে চিঠিটা শোনেন, ওনার নিজের কন্ঠস্বরে, রেকর্ড করেছিলেন বছর দশেক আগে, তার কারণ চিঠির বুলি ওনার ছেড়ে আসা কিশোরগঞ্জের, সবকিছু ছেড়েছুড়ে এক কাপড়ে বাপের সঙ্গে পালিয়ে এসেছিলেন, সঙ্গে এনেছিলেন কেবল বুলিটুকু, যা রোজ শোনেন, অথচ যে বুলি উনি বলতে পারেন না, শুনতে-শুনতে চোখ বুজে ফিরে যান শৈশবে; চিঠি শেষ হলে বলেন জয় মা গৌরীকালী, মাগোওওও। 
    .
    চোখবুজে বিছানায় শুয়ে, মায়ের আবছা মুখ স্মৃতি থেকে তুলে এনে, শুনতে লাগলেন নিজের কন্ঠস্বরে অন্যের চিঠি।
    .
    ভাই হেমাঙ্গ,
    আৎকা তুমারে এই চিঠিডা ল্যেখলাম — কারণডা পরে জানাইতাছি। বুধয় মাসখানেক আগে তুমি আমার ঘরে আইয়া দর্শন দিছ্লায়, কামপুচিয়ার ব্যাপারে কী উগলা কাগজে আমার সই লওনের লাইগ্যা। সইডা দেই নাই। তুমারে কইছ্লাম যে নিজের দ্যাশের লাইগ্যাই কুছতা করতাম পার্লাম না, কামপুচিয়া দিয়া কিতা কর্বাম্? বুঝছিলাম তুমি আমার উপ্রে ব্যেশ্ গুশা কইরা গেলায় গিয়া। তবে হেইদিন বুঝতাম পারি নাই যে তুমি কইলকাত্তার রাজনৈতিক আর সাংস্কৃতিক ময়দানে শহীদ মিনারের উপ্রে উইঠ্যা পরছ। অখনে আমার খুব ডর্ লাগতাছে, সইডা দিয়া দিলেই অইত ভালা — কারণ যদি ভবিষ্যতে সরকারী ক্ষেমতা কিছু তুমার কান্ধে আইয়া পড়ে তইলে আমার অবস্থা ভুট্টো সাহেব। তবে আমার একটু আশা আছে তুমি ক্ষেমতা পাওনের আগেই আমি ভবনদী পার হইয়া যাইবাম্।
    .
    অখনে খবর পাইতছি তুমি নানান সভা-সমিতিৎ সভাপতি প্রধান-অতিথি ইত্যাদি অইয়া সাংঘাতিক প্রুগ্রেসিভ ল্যেকচার দিয়া আম্রার দ্যাশের মাইনষেরে মাতাইতাছ। আসরও খুব জমাইছ। জমাও — যত পারো জমাও। রাশিয়া চীন ভিয়েৎনাম কামপুচিয়া ইরান প্যালেষ্টাইন ব্যাবাকেই খুব আসর জমাইয়া রাখছে। অখন আসল কথায় আইতাছি।
    .
    কয়েক বছর আগে তুমি আমার ঘরে আইয়া কইছ্লা যে নির্মলেন্দু চৌধ্রী তুম্রার লুকসংগীতের বারডা বাজাইয়া দিতাছে। তুমার নিশ্চয়ই মন আছে যে তুমারে কইছলাম্ যে নির্মলেন্দু ঠিক কর্তাছে। তার ত গান হুনাইয়া প্যেট্ চালানি লাগব — সিলেটের লুকসংগীত হুনাইয়া সুবিধা অইত না — হেই লাইগ্যা তারে ফোকো-জাজ্, ফোকো-ফক্সট্রট, ফোকো-পপ বানাইয়া শ্রুতাধারে খুশী কইরা প্যেট চালানি লাগব। তুমি যে লুকসংগীত গাও হেইডা যে অরিজিন্যাল্ এবং বিশুদ্ধ লুকসংগীত তার কুনু গ্যারান্টি তুমি দিতা পারবা? দুইশ বছর আগে তুম্রার দ্যাশের লুকসংগীত কি ভায়্ গাওয়া অইত তার কুনু রেকর্ড বা স্বরলিপি তুমার কী আছে?
    .
    কয়েকমাস আগে উগলা মাসিক কিংবা সাপ্তাহিক পত্রিকায় দেখছিলাম তুমি সুচিত্রার জয়যাত্রা আর হেমন্তের দিনের শেষে লইয়া খামাখা কিছু কুমন্তব্য কর্ছিলায়। তুমার লগে পরে দেখা অইলে তুমারে কইছ্লাম পরের দুষ ধইরা কুনু লাভ নাই — এইডাতে খালি তিক্ততাই বাড়ে। মন আছে তুমার? সংস্কৃতি সংসদ হেইক্কা আমারে উগলা বই পাঠানি অইছে। হেই বইয়ে দ্যাখলাম বিজনের স্মরণ-সভায় সভাপতি অইয়া বিরাট এক সুচিন্তিত ভাষণ দিছ। বিজনের স্মরণসভায় ত বিজনের কথাই তুমার কওন উচিৎ — কিন্তু দ্যাখ্লাম আমারে খুব গাইল্ল্যাইছ। সংস্কৃতি-সংসদে প্রকাশিত তুমার ভাষণ হাছা না মিছা আমি জানি না। তুমি কইছ্লায় — "(১) জর্জদা খুব সিনিক্, (২) ভাবাও যায় না—যে লোকটা মোটর সাইকেলে দৌড়িয়ে রবীন্দ্রসংগীত শুনিয়ে প্রমাণ করতে চাইত যে রবীন্দ্রসংগীত লোকে বোঝে, শ্রমিকরাও বোঝে ও ভালবাসে, (৩)সে লোকটা আজ গণ-নাট্যের নাম শুনলেই ক্ষেপে ওঠে।"
    .
    ১ নং ব্যাপার — তুমি এ্যাংরাজী ভাষা কৎখানি হিখ্ছ আমি জানি না। 'সিনিক' কথাডার অর্থ ডিকশনারিৎ পাইবায় — (ক) disinclined to recognise goodness, (খ) sneering fault-finder।
    .
    (ক) আমি কিন্তু ব্যেবাক্ সময়ই ভালারে ভালা কই কিন্তু খারাপরে খারাপ কই না। কুনু চিনালুক যদি কিছু খারাপ কাম করে বা ভুল করে এবং হেই লুক্ যদি খুব বেশী চিনা হয় তইলে তারে সামনে পাইয়া কইয়া দেই যে কামডা ঠিক হইল না। যেমন সুচিত্রা আর হেমন্তের ব্যাপারে তুমারে কইছলাম।
    .
    (খ) আমার নিজের দুষ্ ছাড়া অন্য কুনু মাইনষের দুষ্ ধরনের লাইগ্যা আমি লেকচার দেইনা। সুতরাং তুমি যে ক্যারে আমারে 'সিনিক' উপাধিলা দিয়া গাইল্ল্যায়লায় — বুঝলাম না।
    .
    ২ নং ব্যাপার — আমি কুনুদিন প্রমাণ কর্তাম চাই নাই যে রবীন্দ্রসংগীত ব্যেবাকেই বুঝে এবং ভালবাসে — বরং আমি কই আমি নিজেই অনেক রবীন্দ্রসংগীতের গুপন অর্থ ও ভাব বুঝি না। তুমি কইত্থে এই তথ্য আবিষ্কার করলায় বুঝলাম না।
    .
    ৩ নং ব্যাপার — গণনাট্য আন্দোলনে ভিড়্যা পর্ছিলাম উগলা ব্যাপার বিশ্বাস কইরা — হেইডা অইল — গণচেতনা উদ্বুদ্ধ কইরা দ্যেশে বিপ্লব আনন্। কিন্তু বহু বৎসর পরে দ্যেখ্লাম আম্রার subject matter made in Calcutta and Bombay লইয়া, গ্রামেগঞ্জে হাডেমাডে গান গাইয়া, 'শহীদের ডাক' দেখাইয়া জনগণের মধ্যে আধ ইঞ্চিও penetrate কর্তাম পারি নাই। তার কারণ আমার মন হইছিল নানান্ জিলার, নানান্ গ্রামের নানান্ ভাষা, আদব্ কায়দা, আচার ব্যবহার জানন লাগব — হেইডা করতে অইলে নানান্ গ্রামে গিয়া থাকন্ লাগে — গ্রামের জনগণের লগে থাইক্কা হিখন্ লাগে। কইলকাত্তায় চাকরী কইরা হেই সুযোগ পাই নাই। সুতরাং জনগণ যেইখানে আছিল হেইখানেই আছে। খামাখা ভুল পথে গিয়া পর্ছিলাম। নিজের ভুল স্বীকার করছি। গণনাট্যের নাম শুনলেই আমি ক্ষেইপ্যা উঠি কইয়া কী আমার উপ্রে সুবিচার কর্লায়?
    .
    আন্তরিক শুভেচ্ছান্তে — জর্জদা
    .
    রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়ক দেবব্রত বিশ্বাস চিঠিখানা লিখেছিলেন হেমাঙ্গ বিশ্বাসকে, ১৭৪ ই রাশবেহারি অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে, ১৯৭৯ সালের ৭ই এপ্রিল। 
    .
    চিঠির বিষয়বস্তুতে জুনিয়ার কেবিএসের আগ্রহ নেই, রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনেন না, শ্যামাসঙ্গীত শোনেন। ওনার প্রিয় গান ‘দে মা আমায় তবিলদারি, আমি নেমকহারাম নই শঙ্করী, পদরত্নভান্ডার সবাই লুটে, ইহা আমি সইতে নারি’। উনি  নিজের জেলার বুলি শুনে আহ্লাদিত হন, যে বুলি কেবিএস নিজে বলতে পারেন না, শৈশবে কলকাতায় আসার পর যে বুলি ওনার মগজে কান্না হয়ে আটকে আছে, পালাবার সময়ে যারা তাড়া করে কেবিএসের মাকে মাটিতে ফেলে একের পর এক ধর্ষণ করেছিল, তারাও এই একই বুলিতে উল্লাস করছিল। 
    .
    ১৯৫০ সালে ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর আর কিশোরগঞ্জ সাব-ডিসট্রিক্টে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে পাইকারি হারে খুন শুরু হয়েছিল আর সমানতালে চলেছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কেবিএসের মাকে তুলে নিয়ে যায় ১১ ফেব্রুয়ারি আর ১২ ফেব্রুয়ারি বাবা কুবেরবাহনের কাঁধে চেপে ইন্ডিয়া পালান তিন বছর বয়সী কেবিএস। কুবেরবাহনের মুদির দোকান ছিল। 
    .
    এখন কেবিএস যাকে ভারত বলেন তখন  তাকে বলতেন ইনডিয়া। 
    .
    কলকাতার স্কুলে ক্লাস ফোরে, তেরো বছর বয়সে, মারামারির কারণে বরখাস্ত হয়েছিলেন কেবিএস, আর এগোননি, বাবা কুবেরবাহনের সঙ্গে লোহাপট্টিতে মজুরের কাজ আরম্ভ করেন। ঠেলাগাড়ি কিনেছিলেন কুবেরবাহন ; নানা জিনিস ঠেলায় চাপিয়ে বাপ-ছেলে মিলে গন্তব্যে পৌঁছে দিতেন।
    .
    পশ্চিমবঙ্গে এসে  তাঁরা সাহায্য না পেলেও ঘৃণা আর প্রতারণা পেলেন ভালমতোই। ক্যাম্পগুলোতে ইতরের মত জীবন কাটাতে না পেরে বাপ-ছেলে মিলে যে কাজ পেয়েছেন করেছেন। বাপ কেবিএস বারবার ছেলে কেবিএসকে বলতেন, উদ্বাস্তু হয়ে থাকা চলবে না, কলকাতার মানুষের মতন কথা বলতে শিখে নে, এখানের রাজনীতিতে ঢুকে পড়তে হবে। দলগুলো গুণ্ডা  চাইছে দাঙ্গা মারামারি খুনোখুনির জন্য, তুই তো ভালোই মাস্তানি করছিস আজকাল ; চিৎপুর বাজারে চপার আর ছুরির দোকান দেখে রেখেছি। 
    .
    মেদিনীপুরে গিয়ে লোহার কারখানাতে  মজুরি খেটে দেখে এসেছেন বাপ-ছেলে জুটি, কেমন করে চুল্লিতে দাউ দাউ করে জ্বলছে পুরোনো লোহার টুকরা। এক হাজার ছয়শো  ডিগ্রি তাপমাত্রায় লোহার টুকরো গলে তরলে পরিণত হচ্ছে। এভাবে দুই ধাপে অনেকক্ষণ পরিশোধন করে বিশেষ কায়দায় তৈরি করা হচ্ছে বিশুদ্ধ তরল লোহা। এই তরল লোহা আরেক ধাপে চেহারা নিচ্ছে গনগনে বিলেটে। আর বিলেট গনগনে লাল থাকা অবস্থায় আপনা থেকেই কারখানায় অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসছে রড হয়ে। সব মিলিয়ে সময় লাগছে মাত্র আশি মিনিট।  পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামের জিতুশোল, গজাশিমূল আর মোহনপুরের স্পঞ্জ আয়রন কারখানার কাজ খতিয়ে দেখে, কলকাতায় ফিরে, দুই কেবিএস নানা প্যাঁচ কষে আর চেনা নেতাদের স্যাঙাত-ঠ্যাঙাড়ের কাজ করে,  অতো টাকা যোগাড় করা সম্ভব ছিল না বলে, বাপ-ছেলে স্পঞ্জ আয়রন কারখানা বসালেন বিটি রোডের ধারে কেনা জমিতে, তখন জমিটা কল্মিশাকের ডোবা-ঝোপ-ঝাড়-জঙ্গলে ছেয়েছিল, শেয়ালরা থাকতো গর্তের ভেতরে।
    .
    উদ্বাস্তু মানবকুল শেষে বিরাট সংগ্রাম করে যেমন মিশে গেলেন ইনডিয়ার মাটিতে, তেমন ছেলে কেবিএস আর বাবা কেবিএসও মিশে গেলেন কলকাতার বুলি আয়ত্ত করে। সিনিয়র কেবিএসের জিভের আড় ভাঙতে সময় লেগেছিল।  একাধিক কলোনি গড়ে উঠলেও ওনারা দুজন আশ্রয় নেননি কোনো কলোনিতে। কারণ সরকারি প্রতিরোধ, স্থানীয় মানুষের অসহযোগিতা আর উপেক্ষা ছাড়া আরও লক্ষ প্রতিবন্ধকতা থাকলেও কলোনির লোকেরা কলকাতিয়া হতে পারছিলেন না।   
    .
    দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাবার আগেই ছেলে কেবিএস বুঝে গিয়েছিলেন তাঁর পেশীশক্তি তাঁর বয়সীদের থেকে বেশি। আর সব  ভূমিহীন, জনমজুর, সাধারণ মানুষ  প্লাটফর্ম, ভাঙা মন্দির, মিলিটারিদের বাতিল ছাউনি আর মানুষের বাসের অযোগ্য সব জমিতে বসবাসের লড়াই করতে থাকলেও, তাঁরা বাপ-বেটা দুই কেবিএস কলকাতার স্ট্র্যাণ্ড রোড আর বউবাজারের ফুটপাথকে বেশি আকর্ষক মনে করলেন। ঠেলার ওপরে রাতে শুয়ে থাকতেন বাপ-ছেলে, পাকানো গামছাকে বালিশ করে।
    .
    তারপর, যারা তাঁদের ভাড়া নিতো, লুম্পেন প্রলেতারিয়েত বলতো। ব্যাপারটা যে কী তা সিনিয়র আর জুনিয়র কেবিএস দুজনেই কোনোকালে  ঠাহর করতে পারেননি। 
    .
    বাপ-ছেলে জনমজুরের কাজ পেলেন বড়োবাজার আর লোহাপোট্টিতে ; ঠেলায় লোহার রড চাপিয়ে খিদিরপুর ডকে নিয়ে যাওয়া আর জাহাজ থেকে নামানো স্ক্র্যাপ নিয়ে আসা। বাপ কেবিএস প্রায়ই ছেলে কেবিএসকে বলতেন, দেশছাড়ার আগে নেড়েদের সরকারি সম্পত্তি  ভাঙচুর করা উচিত ছিল, সোনাদানা আনা উচিত ছিল। বউয়ের ওপর অত্যাচার আর হত্যা ভুলতে পারেননি সিনিয়ার কেবিএস কুবেরবাহন, মায়ের মৃত্যু ভুলতে পারেনি জুনিয়ার কেবিএস কার্তিকবাহন। খিদিরপুর ডকে অবশ্য মাল পাচারের তিকড়মবাজি শিখতে হয়েছিল নেড়েদের থেকেই, যে নেড়েদের দাদা-পরদাদা ওয়াজেদ আলি শাহের হারেমে পয়দা হয়েছিল।
    .
    বাবার উপদেশে কার্তিকবাহনের বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ালো মানুষের বিরুদ্ধে বদলা। মাউন্টব্যাটেন, নেহরু, জিন্না বিদেশি মদ খেতেন। বাপ-ছেলে একই আড্ডায় গিয়ে বাংলা খেতেন।
    .
     'যারা ভোর এনেছিল' নামে উপন্যাসে বাংলাদেশি লেখক আনিসুল হক ব্যাঙ্গমার মুখ দিয়ে যে কথাগুলো বলিয়েছে, জুনিয়ার কেবিএসকে তা পড়ে শুনিয়েছিল জীমূতবাহন : নেহরু এডুনা করে পিরিতি যখন। মাউন্টব্যাটেন ভাঙে ভারত তখন।কলমের দাগ দিয়া খণ্ডিল ভারতে।এডুনা নেহরু ওড়ে ভালোবাসা রথে। এক বাক্স চিঠি লিখবে প্রেমিক যুগলে।এই কথা লেখা থাকে কর্তিত ভূগোলে। এডুনার মাথা নিল নেহরু কিইনা।পোকা কাটা পাকিস্তান পাইল জিন্নাহ।
    .
    – ওদের ব্যাপারে শুনেছি বটে, আসল ঘটনাটা কী রে? নাতি জীমূতবাহনকে জিগ্যেস করেছিলেন জুনিয়ার কেবিএস।
    .
    জীমূতবাহন বলেছিল, জওহরলাল-এডউইনা-মাউন্টব্যাটেনের সম্পর্ক পাবলিকের সামনে আসার পর্বটাও  হয়েছিল  নোংরামি ও কদর্যতার মাধ্যমে, যখন আরেক বিবাহিতা নারী আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিল তার স্বামীর সাথে এডুইনার অবৈধ প্রণয়ের ব্যাপারে নালিশ জানাতে। এছাড়া এডুইনা ভালোবাসার খেলায় মেতেছিল লেসলি হাচিনসন নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পীর সাথেও, যে বিষয়টা পাবলিকের নজরে এলে চারিদিকে ঢি ঢি পড়ে গিয়েছিল।  স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে খুব বেশি দুঃখবিলাস করেনি মাউন্টব্যাটেন। অনেকের মতে, স্ত্রী সম্পর্কে মাউন্টব্যাটেন হয়ে পড়েছিল উদাসীন। ১৯২৯ সাল নাগাদ, মাউন্টব্যাটেন এডুইনার সাথে এক  সন্ধিচুক্তি করেছিল, যাকে ওরা বলে ‘খোলা বিয়ে’। 
    .
    – খোলা বিয়ে?
    .
    – হ্যাঁ, স্ত্রীকে বলেছিল, তার বিয়ের বাইরের সম্পর্ক নিয়ে সে কখনোই মাথা ঘামাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তা গোপন থাকছে, আর পাঁচজনের রসালো আলাপের গল্পে পরিণত না হচ্ছে। ১৯৩২ সালে মাউন্টব্যাটেন নিজেও যুবতী উপপত্নী রেখেছিল।  স্ত্রী আর উপপত্নীকে নিয়ে এক সান্ধ্যভোজে  গিয়েছিল মাউন্টব্যাটেন। সেদিনের পর তাকে পাঠানো  চিঠিতে এডুইনা লিখেছিল "তোমার 'যুবতীটি' তো বেশ ! আমার ওকে পছন্দ হয়েছে।".
    – খোলা বিয়ে করে জওহরলালের সঙ্গে বেশ গভীর সম্পর্ক পাতিয়ে ফেলেছিল নাকি রে? 
    .
    – জওহরলালের সাথে এডুইনার প্রেমের শুরুটা হয়েছিল ম্যাশোবরা নামের পাহাড়ি স্টেশনে। সবাই মিলে ফ্যামিলি পার্টিতে গিয়েছিল ওরা। সেখানেই, ইনডিয়ান জওহরের সাথে  সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল ইংল্যাণ্ডের মেম এডুইনার।  এডুইনা বলেছিল সম্পর্কটা ওদের  'দুর্লভ বন্ধন'। সেই বন্ধনের এক ধারে  এক বিপত্নীক পুরুষ, আরেক ধারে স্বামীর সাথে খোলা বিয়ের সন্ধিতে  এক নারী।সম্পর্কের প্রাথমিক পর্যায়ে জওহরলালকে লেখা এক চিঠিতে নিজেকে মেলে দিয়েছিল এডুইনা।  লিখেছিল,”আজ সকালে যখন তুমি গাড়ি চালিয়ে চলে যাচ্ছিলে, তখন আমার খুব খারাপ লাগছিল। তবে তুমি চলে গেলেও, আমাকে রেখে গিয়েছ এক অদ্ভূত প্রশান্তিময় অনুভূতিতে।তোমার মনেও কি আমি একই অনুভূতি জাগাতে পেরেছি?”
    .
    – কী আর বলি, বল? ওরা করলো প্রেম আর ভিটেমাটি ছাড়তে হলো, নেড়েদের হাতে কচুকাটা হতে হলো আমাদের। এতোকাল, বছরের পর বছরের পরও, কতো ভিটেছাড়া মানুষের মাথা গোঁজার ঠাই নেই, দুবেলা খাবার নেই, চাকরি-বাকরি নেই। কতো বাঙালি ভিনরাজ্যে গিয়ে আর বাংলা বলতে লিখতে পড়তে পারে না।
    .
    – সন্দেহ  রয়েছে জওহর-এডুইনার  প্রেমের নির্মলতা নিয়েও। কারণ অনেকেরই ধারণা, তাদের দুজনের প্রেম কেবল তাদের দুজনাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং প্রভাবিত করেছিল গোটা ভারতবর্ষকে। আবুল কালাম আজাদ লিখে গেছেন , ভারত ভাগ করার ব্যাপারে জওহরলালকে রাজি করানোয় মুখ্যতম ভূমিকা পালন করেছিল এডুইনা। স্বামীর চিন্তা-ভাবনা  ভাগ করে নিয়েছিল জওহরের সাথে, আর জওহরের উপর প্রেমের  প্রভাব খাটিয়ে তার সম্মতিও আদায় করে নিয়েছিল।
    .
    – ছি ছি ছি ছি ছি ! একে তুই বলছিস প্রেম?
    .
    – প্রেম ছাড়া আর কী বলব? কতো বেপরোয়া প্রেম ভেবে দ্যাখো। লায়লা-মজনু, শিরি-ফরহাদ, সেলিম-আনারকলি, শাহজাহান-মুমতাজ, ত্রিস্তান-ইসলদে, অরফিউস-ইউরিডাইস, নেপোলিয়ান-জোসেফিন, রামোস-থিইরি, মেরি-পিয়ের কুরি, ভিক্টোরিয়া-প্রিন্স অ্যালবার্ট, মার্ক অ্যান্টনি, ক্লিওপেট্রা, প্যারিস-হেলেন, রোমিও-জুলিয়েটও অমন প্রেম করেনি।
    .
    – ওসব গল্প তো তুই শোনাসনি কখনও ! একদিন সময় করে এক-এক জুটির গল্প শোনাস।
    .
    – শোবাবো, শোনাবো।
    .
    – এটা আমার কাছে সবসময়ই অদ্ভুত বলে মনে হয়েছে যে, মানুষের চরিত্রে এই সমাজ যে বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রশংসা করে, যেমন ঔদার্য, দয়া,  খোলামেলাভাব, সততা, সমঝোতা আর অনুভূতি, সেগুলো কিন্তু আমাদের জীবনে  ব্যর্থতা বয়ে আনে অথচ সমাজ যে সমস্ত বৈশিষ্ট্যগুলোকে ঘৃণা করে, যেমন  লোভ, অন্য লোকেদের ওপরে ছড়ি ঘোরানো, যথেচ্ছ টাকা করার প্রবণতা, নীচতা, অহংকার আর স্বার্থপরতা, সেগুলোই মানুষকে সমাজে সফল করে তোলে। আমরা বাপ-বেটা খারাপ গুণের জন্যেই সফল, বুঝলি? কথাগুলো মনে রাখিস, যদি সফল হতে চাস।
    .
    দুই কেবিএস টাকাকড়ি করার পরও দেশি বাংলা মদ ছাড়তে পারেননি। স্বদেশি আন্দোলনে তাঁদের এই যোগদান কম কথা নয়।
    .
    কেবিএসের মনে একটা খটকা ডায়াবেটিসের মতন বাসা বেঁধে আছে। কীভাবে একজন লোক দেশকে ঘৃণা করে, বা কাউকে ভালোবাসে? কেবিএস এটা সম্পর্কে সেবিকাদের প্রায়ই বলেন। আমি মানুষ জানি, আমি জানি শহর, ক্ষেত, পাহাড়, নদী,  আমি জানি কিভাবে শরতের গোধূলীবেলায় ভিক্টোরিয়া মনুমেন্টকে রাঙিয়ে দেয়। কিন্তু যে সব এলাকার একটা সীমানা দেওয়া হয়, নাম দেওয়া হয়, তার বাইরের এলাকাকে কি আর ভালোবাসবো না?  দেশের প্রতি ভালোবাসা কি; এটা কি অন্য একজনের দেশকে ঘৃণা করা? তাহলে এটা ভালো ব্যাপার নয়। এটা যেন নিজেকেই ভালোবাসছি? এটা যদি  ভাল ব্যাপার হয়, তাহলে একে  গুণ বা পেশা বানানো উচিত নয়।  আমি জীবনকে ভালবাসি, কেমন বলব? আমি রাতের বেলাকার কলকাতার রাস্তাগুলোকে ভালবাসি। তবে এই ধরণের ভালবাসার কোনও সীমারেখা নেই। অন্য শহরের রাস্তাঘাটকেও ভালোবাসি। দেশপ্রেমের ব্যাপারে, আমি অজ্ঞ, মূর্খও বলতে পারিস।
    .
    চার
    .
    নকশালরা আন্দোলন শুরু করতেই বাবা কেবিএস আর ছেলে কেবিএস সুযোগ পেয়ে গেলেন। লোকেদের বেছে-বেছে খুন করা আরম্ভ করেছিলেন মাস্তানরা। দলের ভেতরে বিপ্লবের নামে মানুষ খুনের রাজনীতিতে অনুমোদন দিয়েছিলেন   চারু মজুমদার নামে এক লিডার। দলের ভেতর অনেকেই  ‘ খতমের লাইন‘ এর বিরোধিতা করলেও দলে তাঁরা পাত্তা পাননি। 
    .
    ছোকরা নকশালপন্থীরা, স্কুল কলেজের মেধাবী ছাত্রের দল, খতমের নেশায় মেতে উঠছিলেন, তখনই ছেলে কেবিএসের সঙ্গে বাবা কেবিএসের নকশালবিরোধী কথাবার্তা শুনে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টরের খোচর হবার সুযোগ পেয়ে গেলেন। ইন্সপেক্টর পতিতপাবন সরকার।
    .
    বিপ্লবের নামে নকশালরা গ্রামের বড় কৃষককে খুন করতে লাগলেন। ডিউটি সেরে বাড়ির পথে ফেরা ট্রাফিক সার্জেন্টকে খুন করলেন। প্রাণ নিলেন উপাচার্যের‌ও। দলীয় পর্যায়ে  খুনোখুনিটা শুরু হয়েছিল নকশাল ভার্সেস সিপিএম দিয়ে। দুই কেবিএসের কাছে দুদলের কোনো ফারাক ছিল না। যেখানে টাকা সেখানে কোতল।
    .
    পুলিশ ইন্সপেক্টর পতিতপাবন সরকার মশায়ের  কথামতো ছেলে কেবিএস কংগ্রেসের খোচর হয়ে মেকি নকশাল সেজে ধরিয়ে দিতে লাগলেন আসল নকশালদের। দুজনেই হয়ে গিয়েছিলেন কংশাল, মানে নকশাল সাজা মেকি-কংগ্রেসি আর সুযোগ বুঝে মেকি-সিপিএম বা আসল খোচর। তারপর থেকে বাপ-ছেলে শাসক দলের খোচর, তা যে দলই গদিতে বসুক। 
    .
    সত্তর-একাত্তর-বাহাত্তর — এই তিন বছরে পশ্চিমবঙ্গের সমাজজীবন যেমন যেমন সন্ত্রাস আর নৈরাজ্যের গুয়ের ডাবায় ডুবছিল, তেমন তেমন দুই কেবিএস সেই ডাবা থেকে টাকা রোজগারের সুযোগ পেয়ে গেলেন। সন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস  আর  দলবাজ  খুনোখুনিতে জেরবার  পশ্চিমবঙ্গ সোনার ডিম পাড়তে আরম্ভ করেছিল দুই কেবিএসের জন্য। 
    .
    নকশাল ছেলেরা সিপিএমের ছেলেদের কচুকাটা করছিল। সিপিএম পাল্টা নকশাল মেরে বদলা নিচ্ছিল। দুই কেবিএস দুদলের ছেলেদের খবর পুলিশকে দিয়ে তাদের খতম করাচ্ছিলেন, নিজেরাও করছিলেন, আর তাদের কাছে যা ছিল কেড়ে নিচ্ছিলেন। 
    .
    কখনও ফর‌ওয়ার্ড ব্লক আর সিপিএমে খুনোখুনি।  এস‌ইউসি আর সিপিএমে খুনোখুনি। কোথাও সিপিএম ভার্সেস সিপিআই। কোথাও এস‌ইউসি আর আর‌এসপিতে খুনোখুনি । দুই কেবিএস পতিতপাবন সরকার আর ওনার ওপরতলার পুলিশের হুকুম শুনে খতমে হাত পাকিয়ে নিলেন। দিনে লোহাপট্টির দিনমজুর, রাতে শাসকের খুনমজুর।
    .
    একাত্তরের শেষে বাংলাদেশ যুদ্ধের আগে পর্যন্ত জেকিল-হাইড খেলে চালিয়ে দিলেন বাপ-ছেলে। বাংলাদেশ যুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর  সাফল্য পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে ফের তাজা করে ফেললে। ততদিনে খুনোখুনি করে  নকশাল আন্দোলনও  বাগে এসে গেছে।  
    .
    রাষ্ট্রপতির শাসনে  ১৯৭২ সালের ১১ই মার্চ পশ্চিমবঙ্গে যে বিধানসভা নির্বাচন  হয়েছিল সেটায় রিগিং করার কাজ পেয়েছিলেন বাপ-ছেলে। সেই থেকে  ‘রিগিং ‘ শব্দের জন্ম। তার আগে ভোটে অল্পস্বল্প কারচুপি হলেও অবাধে ছাপ্পা, বুথ দখল, বিরোধী দলের এজেন্টকে ঠেঙিয়ে তুলে দেওয়ার সংস্কৃতি ছিল না। ভোটের দিন দুপুরের মধ্যে মারের চোটে বুথ ছেড়ে পালালেন সিপিএম আর  বিরোধীরা। 
    .
    বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দৌলতে  হাওয়া কংগ্রেসের  এতটাই অনুকূলে ছিল যে  সিদ্ধার্থশংকর রায়ের  দল  ভোটে কেল্লা ফতে করে ফেললে। বাপ-ছেলে বুক ঠুকে বলতেন, এই দ্যাখ, আসল কংশাল, আসল মালাউন, পাক্কা কাফের, খাঁটি মুনাফেক, যার দরকার ভাড়া নিতে পারে আমাদের। ফ্যালো টাকা মাখো রক্ত।
    .
    বাহাত্তরে যখন আসরে নামল কংগ্রেস, তখন শাসক দলের সন্ত্রাস আর জবরদস্তির সুযোগ নিয়ে বিটি রোডে ঝোপঝাড়-জলাজমি কিনে ছিলেন বাপ কেবিএস, লোহার কারখানার ঘাঁতঘোত জানা হয়ে গিয়েছিল ততোদিনে। খিদিরপুর ডকে বাংলার রাজনীতিতে  বোমা , পাইপগান , ওয়ান শাটার কালচার পাকাপাকি ভাবে চলে আসায় ছেলে কেবিএস রপ্ত করে ফেললেন সেগুলোর ব্যবহার। 
    .
    পুলিশ আর  নেতার হাত মাথায় থাকায়  টাকার ডঙ্কা বাজানো আরও সহজ হয়ে গেল।  রাজনৈতিক খুনখারাপি  বাংলার সমাজজীবনে আর কেবিএসদের ব্যক্তিগত জীবনে অঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। ওনারা জেনে ফেললেন,  যে লোকগুলো  রাজনৈতিক শাসকদের বিরোধী তাদের খুন  করা যায়। যে অন্য দলের ঝাণ্ডা তোলে তাকে এলাকা থেকে খেদিয়ে দেওয়া যায়। কেউ অন্য দলকে ভোট দিতে পারে এই খবর পাওয়া মাত্র‌ই তার ঠ্যাঙ  ভেঙে দেওয়া যায়। .
    সিনিয়ার কেবিএস যে পুলিশ ইন্সপেক্টরের খোচর ছিলেন, পতিতপাবন সরকার, তার কাছ থেকে শিখে নিলেন ফাটকা খেলা। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের পাশের বিল্ডিঙেই তো ফাটকা বাজার। খুপরি ঘরে বসে থাকতেন ব্রোকাররা। জুনিয়ার কেবিএস সেই খেলাকে বলেন শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্টমেন্ট ; যেটুকু পড়াশুনা করেছেন, আর ছেলে-নাতি-নাতবউয়ের পরামর্শে ফাইনানশিয়াল টাইমসের শেয়ারের পাতাটা প্রতিদিন পড়তে কাজে দেয়। ইংরেজি জানা সেবিকারা ওনাকে পড়ে শোনায় ।
    .
    ব্যাস, কেনা জমিতে, জমানো টাকায়, লোহার কারখানা বসিয়ে ফেললেন বাপ কেবিএস। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই, উঠতি মাস্তানদের তোলা দিতে, পুজোর মোটা চাঁদা দিতে গাঁইগুঁই করার দরুন, খুন হতে হলো বাপ কেবিএসকে। অবশ্য ছেলে কেবিএস ততোদিনে ব্যবসা নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছেন, কয়েকজন মারোয়াড়ি ব্যবসা তুলে অন্য রাজ্যে নিয়ে যাচ্ছে দেখে উত্তরপ্রদেশ আর ওড়িষায় জমি কিনে রেখেছেন। মায়ের স্মৃতিতে গৌরীকালীর মন্দির বসিয়েছেন , কারখানার জমিতে। চীনের খাঁকতি মেটাতে কেবিএস এনটারপ্রাইজেস রপ্তানি থেকে আয় বাড়িয়েছে। বাপের খুনিকে খুঁজে তার মুখে আলকাৎরা মাখিয়ে, নিকেশ করে, চটের বস্তায় ঠুঁশে গঙ্গায় ভাসিয়ে বদলা নিতে ভোলেননি। বাপ আর ছেলে কেবিএস এই কায়দায় অনেকের গতি করেছিলেন বরানগরে, তার জন্য মোটা পারিতোষিকও পেয়েছিলেন।
    .
    কেবিএসের মনে ধরেছিল উৎপল দত্তের উপদেশ, “"একদিকে নকশালবাড়ি, অন্যদিকে বেশ্যাবাড়ি। বুদ্ধিজীবীরা পথ বেছে নিক।” 
    .
    ছেলে কেবিএস বেছে নিয়েছিলেন দ্বিতীয়টা, যদিও বুদ্ধিজীবী বলতে যা বোঝায় তা ছিলেন না উনি, জানতেনও না কাদের বলে বুদ্ধিজীবী। নিজেকে বলতেন  বিদ্রোহি উদ্বাস্তু। সেবিকারা ওনার বাবা কুবেরবাহনের ডায়েরি পড়ে শোনান মাঝে-মধ্যে, চীৎকার করে। ডায়রি মানে খরচের খাতার ফাঁকে-ফোকরে ভাবনাচিন্তার খেলা।
    .
    যেমন আজ, চুমু খাবার পর সুখেশ্বরী পাল ওনার ডায়েরিতে লেখা এই কথাগুলো শোনাচ্ছিলেন, রেড ওয়াইনে গলা ভিজিয়ে, “তখন দেশজুড়ে শুরু হয়েছে এক অভূতপূর্ব বিদ্রোহের রণহুঙ্কার, হাজার হাজার ছাত্র-যুবকদের স্বপ্নভঙ্গের বেদনার দ্রোহজ বিস্ফোরণ। সাতচল্লিশের ‘মিথ্যা স্বাধীনতা’কে ‘সত্যি স্বাধীনতা' ভেবে নেওয়ার স্বপ্নভঙ্গ। খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান, জীবন-জীবিকার প্রতিশ্রুতির নির্মম স্বপ্নভঙ্গ, ‘স্বাধীন গণতান্ত্রিক’ দারিদ্র্যমুক্ত নতুন ভারতবর্ষ গড়ার সরকার আর সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতির স্বপ্নভঙ্গ। এই উত্তাল সময়ে বারাসাত শহরেও ছড়িয়ে পড়েছিল সেই বিদ্রোহের আগুন।  ছাত্র-যুবকরা নিঃশঙ্কচিত্তে সেই বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিলেন। আন্দোলনের তীব্রতা এতটাই ছিলো যে, সেই বিদ্রোহ দমনে '৭১ সালের মে মাসে রাষ্ট্রকে মিলিটারি নামাতে হয়েছিল। বহু রাজনৈতিক কর্মীর সঙ্গে  গ্রেপ্তার হয়েছিলেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। সেই বিদ্রোহের ভুল-ঠিক নিয়ে আজও বিতর্ক চলছে। চলুক। হারজিত তো মুদির হিসেব; এই লড়াইটাই ছিল সন্দেহাতীতভাবে, প্রশ্নাতীতভাবেই সত্যি— এটাই তো জীবন। যাঁরা  নতুন পৃথিবী গড়ার জন্য লড়াই করে হাসিমুখে জীবন দিয়েছেন, তাঁরা আর তাঁদের পরিবার কিছুই পেলেন না কারণ তাঁরা মূর্খ। তাদের মরে যাওয়াকে লোকে বলে শহিদত্ব বরণ করা। কী হলো মরে গিয়ে,  আলোর পথযাত্রী  নাম কুড়িয়ে? এখনও লোকে বলে নকশালবাড়ি আন্দোলন হলো সেই মরণজয়ী পাখি যা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে আবার জন্মায়। এটা কেন লোকে ভুলে যায় যে পাশাপাশি তাদের লোপাট করার মানুষরাও জন্মায়। বোকারা চিরকাল জন্মায় চালাকদের হাতের পুতুল হয়ে।  সত্তরের দশকে নতুন  সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখা ছোঁড়াগুলো অনেকেই যেমন  পুলিশের খোচরদের হাতে খুন হয়েছিল, তেমনই আবার অনেকেই খুন হয়েছিল নানা লেবেলের রাজনৈতিক  গুণ্ডাদের হাতে।” 
    .
    সেবিকা সুখেশ্বরী পাল জিগ্যেস করলেন, “কেবিএস, আপনি, বেঁচে গেলেন কেমন করে?” জবাবে কেবিএস দেখিয়ে দিলেন উৎপল দত্তের উপদেশের দ্বিতীয় অংশ। তারপর বললেন, আমি যে দেশেই গেছি, নেদারল্যাণ্ডস বল, জার্মানি বল, ইংল্যাণ্ড বল, প্রথমে খোঁজ নিয়েছি কোন মেয়েটা মোচরমান, মানে নেড়েনি। তাদের সঙ্গে শুয়ে গায়ে এমন আগুন ধরে যেতো যেন আমাদের কিশোরগঞ্জের বাড়িতে আগুন ধরেছে, বাবার মুদির দোকানে আগুন ধরেছে। 
    .
    তারা বাঙালি মেয়ে?  জানতে চাইল সুখেশ্বরী।
    .
    কেবিএস বললেন, ইংল্যাণ্ডে বাঙালি মোচরমান মেয়ে পেয়েছি। অন্য দেশগুলোতে আফ্রিকার, আরবের, পূর্ব ইউরোপের। সেক্সকে পালটে ফেলেছিলুম প্রতিশোধে। আমার মাকে রেপ করে খুন করার বদলা। 
    .
    সিনিয়র কেবিএস বলতেন, ভুলতে পারিনি। হিংস্রতার  সাধারণ প্রতিক্রিয়া হল তাদের চেতনা থেকে লোপাট করে দেয়া। যৌবনের নিয়ম লঙ্ঘনগুলো জোরে-জোরে বলা খুব ভয়ানক ব্যাপার। হিংস্রতার স্মৃতিকে  কবর দেয়া যায় না। হিংস্রতাকে অস্বীকার করার ইচ্ছের মতনই শক্তিশালী হলো যে তাকে  অস্বীকার কাজ করে না।

    জুনিয়ার কেবিএসের ছোটোবেলায় গ্রামের লোকেরা ভুত প্রেত শাঁকচুন্নির গল্প শোনাতো। আসলে ওদের আতঙ্ক ভুতে ঠাশা আর ওদের গল্প বলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কবরে বিশ্রাম নিতে  দিতো না। 
    .
    –কী যে বলছেন, ঠিক করে বুঝতে পারলাম না। আপনিও একরকম রেপই করতেন বোধহয়, মনে-মনে। আপনি নিশ্চয় সেসময়ে কখনও মায়ের মুখ মনে করেছেন? জানতে চাইল সুখেশ্বরী। জুনিয়ার কেবিএস কোনো উত্তর না দিয়ে কাঁদো মুখে বসে রইলেন হুইলচেয়ারে। বললেন, নীচে বাগানে ঘোরাতে নিয়ে চল। বাউন্সারদের ইনফর্ম করে দে।
    .
    বাউন্সাররা সেই পুলিশ ইন্সপেক্টার, পতিতপাবন সরকারের কোম্পানির পালোয়ান, যে ইন্সপেক্টরের খোচর ছিলেন কেবিএস। অবসর নেবার পর বাউন্সার আর সিকিউরিটি গার্ড সাপলাইয়ের কোম্পানি খুলেছিলেন সিনিয়র কেবিএসের বেয়াই। কোম্পানিটা এখন ইন্সপেক্টারের ষণ্ডামার্কা  স্যাঙাত চালায়, যার গলায় কুকুর বাঁধার শেকলের মতন হার ঝোলে, সোনার শেকল।
    .
    পাঁচতলা বিল্ডিঙ কেবিএসের। একতলায় গ্যারেজ, দুই তলায় অফিস। তিন তলায় বাবা কেবিএস থাকতেন,  এখন থাকেন জীমূতবাহনের বাবা, কেবিএসের ছেলে বভ্রুবাহন। চার তলাটা জীমূতবাহনের, সেখানেই একটা ঘরে জিম করার সরঞ্জাম। পাঁচ তলাটা পুরো কেবিএসের। পাঁচতলায় ওঠার আলাদা লিফ্ট যা চব্বিশঘন্টা গার্ডরা পাহারা দেয়। কেবিএসের থেকে ইনটারকমে অনুমতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে অতিথিরা দেখা করতে পারে। বাবা কেবিএস খুন হবার পর কেবিএস বাউন্সার ছাড়া বাইরে বেরোন না। ওনার ছয় হাজার স্কোয়ার ফিট ফ্ল্যাটের দরোজার বাইরে লিফ্টের কাছে দুজন বাউন্সার পাহারায় থাকে।
    .
    জীমূতবাহনের একা-একা বেড়ানো, বন্ধু-বন্ধুনিদের সঙ্গে এখানে-সেখানে যাওয়া পছন্দ করেন না কেবিএস। ছেলেটা বিয়ে করে বাচ্চা পয়দা করতে পারেনি এখনও । বংশধর না হলে কে চালিয়ে নিয়ে যাবে কারখানাটাকে ! বউটাকে ওর বাপের বাড়ি পাঠিয়ে না দিয়ে ব্যবসার কাজে বসিয়ে যেতে পারতো। বউটা ফি-বছর কোম্পানির প্রফিট অ্যাণ্ড লস অ্যাকাউন্ট আর ব্যালেন্স শিট নিখুঁত তৈরি করে দেয়। হলিডে হোমের বুকিঙ আর গৌরীকালী মন্দিরগুলোর খরচাপাতির তদারকি করে জীমূতবাহনের বউ। জুনিয়ার কেবিএস প্রায়ই আপশোষ করেন, জীমূতবাহন একজন কংশালের নাতি হয়েও ভদ্দরলোক রয়ে গেল। 
    .
    জুনিয়ার কেবিএসের নির্দেশে একটা বই থেকে আগের দিন শোনানো অংশের পর  পড়তে আরম্ভ করলেন সেবিকা সুখেশ্বরী পাল, যা শুনে কেবিএসের মনে হেঁচকির নিঃশব্দ আনন্দ ওঠতে লাগলো। সুখেশ্বরী পাল পড়ছিলেন : 
    .
    “আমরা ইছলামে জিহাদে বিশ্বাস করি। সব মুসলমানের জন্য এটা ফরজ। আমরা বিশ্বাস করি যতদিন না পৃথিবীর সমস্ত কাফের ইছলামে ঈমান আনবে, ততোদিন আমাদের জিহাদ চালিয়ে যেতে হবে; জিহাদ পরম রাহমানির রাহিম আল্লাহর নির্দেশ, তা আমরা হরফে হরফে পালন করবো; নিজেদের বুকের খুন দিয়ে, কাফেরদের বুকের খুন নিয়ে। আমরা কোন ভণ্ডামোতে বিশ্বাস করি না; ভণ্ডামো হচ্ছে নাছারদের, মালাউনদের ধর্ম ও কর্ম; তবে অনেক ভন্ড আছে, যারা মুছলমানের ছদ্মবেশে প’রে আছে, তারা মহান আল্লাহর বাণীর ব্যখ্যা দেয় শয়তানের মতো,- তারা শয়তান, তারা শয়তানের ছহবতে উৎপন্ন; তারা বলে, ইছলামে আর গণতোন্ত্রে কোন বিরোধ নাই। যারা একথা বলে, তারা কাফের, তারা মুরতাদ। ইছলাম হচ্ছে আল্লাহর, গণতন্ত্র সমাজতন্ত্রের নামে খানকিবৃত্তি হচ্ছে কাফেরদের, নাছারদের ইহুদীদের খ্রিষ্টানদের; কাফেরদের ধ্বংস করা হচ্ছে রাহমানির রাহিম আল্লাহতালার অকাট্য নির্দেশ। ধ্বংস করতে হবে নিরন্তর, নিদ্রাহীন, বিরামহীন জিহাদের মাধ্যমে।
    .
    আল্লা-রছুলের বাণী ঠিক বুঝিয়েছেন হজরত আবু আলা মওদুদি ও আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনি, বেহেশতে তাঁরা শ্রেষ্ঠ স্থান পাবেন। এক সময় আমি সাম্যবাদ ও সর্বহারা করেছি- নাউজুবিল্লা,- মাক্স-এঙ্গেলস-লেলিন-ট্রটক্সি-স্ট্যালিন-মাওসেতুং নামের কতকগুলো ইবলিশ, শয়তান, ডেবিলের, মেফিস্তোর, বই পড়েছি; মনে করেছি শ্রেণীসংগ্রামই আসল কথা, সর্বহারার একনায়কত্ব স্থাপনই ইতিহাসের বিজ্ঞান-নাউজুবিল্লা; তারপর পাক ইছলামের পবিত্র কিতাবগুলো প’ড়ে বুঝতে পারি আমি কাফের হয়ে গিয়েছিলাম, বইগুলো পরা সহজ বুঝাও সহজ; কোন কচকচি নেই, আছে চরম সত্য, চরম নির্দেশ; আমি তওবা ক’রে ইছলামে ফিরে আসি, যেমন ফিরে এসেছেন আমার অনেক নেতা, প্রায় সব নেতা, যারা সাম্যবাদের জন্য নিজেদের কোরবানি করেছিলেন, এখন তাঁরা অন্য রকমে বলি হয়ে গেছেন। ওই কুফরি থেকে আমাকে উদ্ধার করে ‘জামঈ জিহাদে ইছলাম পার্টি। হজরত আবু আলা মাওদুদি ও আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনির কিতাব প’ড়ে আমি বুঝতে পারি খাঁটি ইছলামকে; আমরা দিল বদলে যায়, আমি পাক হয়ে উঠি, জিহাদি হয়ে উঠি।”
    .
    এটুকু শুনে জুনিয়ার কেবিএস ঘড়ঘড়ে কন্ঠস্বরে থামে-থেমে বললেন, এই লেখকের নাম জানিস? হুমায়ুন আজাদ। বইটার নাম পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীতের প্রথম লাইন, ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’। বইটা লেখার জন্য পাকিস্তানি নেড়েগুলো ওনাকে চপার মেরে-মেরে কোতল করেছিল। মৌলবাদী নেড়েগুলো চাপাতি মেরে আর গলার নলি কেটে নাজিমুদ্দিন সামাদ, আহমেদ রাজিব হায়দার , অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয়, আহমেদুর রশীদ টুটুল আর ফয়সাল আরেফিন দীপন নামের ব্লগারদেরও খুন করেছে। ওই মৌলবাদী নেড়েদের আব্বা-ফুফা,  আমার বাপের মুদির দোকানে আগুন লাগিয়ে,  আমার মাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। উদ্বাস্তু কলোনিতে যারা থাকতো তাদের নির্লজ্জ আত্মাভিমানহীন  ছেলেপুলেরা বাবা-দাদুর বেদখল হওয়া  পোড়া বাড়ি,  ইলিশ মাছের সিজনে আবার দেখতে যায়, গিয়ে পাকিস্তানি নেড়েগুলোকে চাচা-চাচা বলে ডাকে, গলায় কান্না আটকে থাকে ওদের, তবু মাওয়াঘাটের ইলিশ না খেলে মগজ কাজ করে না। 
    .
    –আপনি যাননি? জানতে চাইল সেবিকা।
    .
    —আমি কক্ষনো যাইনি,  একবার যাবার ইচ্ছা আছে, পদ্মাসেতু দেখার জন্য। তবে পাকিস্তানিরা যখন বাংলাদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করছিল আর দলে দলে মানুষ এপারে পালিয়ে আসছিল, তখন তাদের দুর্দশা দেখতে যশোর রোডে গিয়েছিলাম। তা দেখলাম যে তাদের মধ্যে মুসলমান পরিবারের সংখ্যা কম।অনেক পরিবার ভয়ে ফেরত যায়নি। 
    .
    –আমার মা-বাবাও তো এসেছিল সেই সময়ে, আর ফেরত যায়নি। শ্লেষ্মা-ভরা গলায় বলল সেবিকা।
    .
    কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জুনিয়ার কেবিএস বললেন, প্রমোদ দাশগুপ্তর নাম শুবেছিস?
    .
    নেতিবাচক মাথা নাড়লো সেবিকা।
    .
    –অ, শুনিসনি? তা লোকটা কী বলেছিল জানিস? বলেছিল, পুলিশের গুলিতে নকশালরা মরছে না কেন? পুলিশের বন্দুকে কি নিরোধ লাগানো আছে?
    .
    –বন্দুকে নিরোধ? চোখ নাচিয়ে, মুচকি হেসে, জানতে চাইলেন বিব্রত সুখেশ্বরী পাল।
    .
    –লোকটা কিন্তু জানতো আমরা দিনে খোচর, রাতে নকশাল আর বন্দুকের নলে লাগানো কন্ডোম ছিলাম আমরা, ঘড়ঘড়ে হেসে বললেন জুনিয়ার কেবিএস।শুরু-শুরুতে, যখন বাপ-বেটা মিলে ঠেলাগাড়ি নিয়ে ঘুরতাম, তখন আমরা পুলিশকে একটা প্রাকৃতিক বিপর্যয় হিসাবে দেখেছি,  যেমন বানভাসি, বাড়িতে আগুন, বা ভূমিকম্পর মতন। এগুলো থেকে বাঁচার চেষ্টা করা ছাড়া  এই ব্যাপারগুলো সম্পর্কে কেউ কিছুই করতে পারে না৷ আমাদের কোনও ভাবনাচিন্তা  ছিল না, সমাজ পরিবর্তন করা যায় এমন কোন বোধ ছিল না। এখনও বিশ্বাস করি না যে কয়েকজন মানুষ মিলে সমাজে রদবদল ঘটাতে পারে। আমরা, কম বয়সীরা ছিলাম নিজেদের মতো, উচ্ছৃঙ্খল আর  বিদ্রোহী হিসাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছি। আমরা মনে করিনি যে পুলিশ আমাদের লোপাট করবে , তবে তাদের বিরক্তিকর আর অনিবার্য ব্যাঘাত বলে মেনে নিয়েছিলাম। সৌভাগ্যবশত পরে পুলিশই আমাদের রক্ষক হয়ে উঠলো, এমনকি আমার শশুর, আমার বাপের বেয়াই।
    .
    —সিনিয়র কেবিএস তো শুনেছি খিদিরপুরে যেমন কাজ সামলাতেন তেমন লিলুয়াতেও কাজ সামলাতেন। আপনি থাকতেন বাবার সঙ্গে? 
    .
    —হ্যাঁ, থাকতাম তো। ওই দুটো জায়গায় তো আমার হাতেখড়ি।  লিলুয়ার ধ্রুব সিং, কেবল সিংদের পুলিশ বলতো তোলাবাজ,  গুণ্ডা, সমাজবিরোধী, মাস্তান। আমরা ওদের চামচা হয়ে গেলাম। ওরা লোহার ছাঁট, বাবরি, রেল ওয়াগনের টানা মাল খিঁচতো , রেল ওয়াগান ভেঙে  চিনি, প্যান্ট-জামার কাপড়, গুঁড়ো দুধ, যা পাওয়া যেতো দালালদের বিক্রি করতো। আমরা ঠেলায় চাপিয়ে দালালদের গুদামে পৌঁছে দিতাম। দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে মিশিয়ে কথাগুলো বললেন জুনিয়ার কেবিএস।
    .
    —আপনারা বাপ-বেটা তো বেশ সাহসী ছিলেন। উল্লসিত গদগদ সেবিকা সুখেশ্বরী পালের প্রশংসার কন্ঠস্বর।
    .
    —তা না হলে কি আর তোর চুমু পেয়ে ঘুম ভাঙতো? খালপাড়ের ঝুপড়িতে থাকতে হতো। তুই তখন জন্মাসনি।

    শ্যামলা সুখেশ্বরীর সুবিধা যে মুখের রঙে হাবভাব টের পাওয়া যায় না, বললে, আপনারা দেশের ভালো সময়ে জন্মেছিলেন, কতো কি দেখেছেন, করেছেন।
    .
    জুনিয়ার কেবিএস নির্ভেজাল উচ্ছ্বাসে বললেন, দেশভাগের পর পরই ট্রাম ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে সারা কলকাতা জুড়ে সে ছিল এক জব্বর আন্দোলন। ওই যাদের বলে  বামপন্থী, তারা এই আন্দোলনে ছিল। আর ছিলাম আমরা, গুন্ডা, মাস্তান, রুস্তম।  প্রেসিডেন্সি কনসোলিডেশন, অসীম চট্টোপাধ্যায়, ‘কাকা’, চিকি, ছোটো চিকি, বড়ো চিকি, সে বিরাট-বিরাট বামপন্হী লোক। তারপর দীপাঞ্জন রায়চৌধুরী, রণবীর সমাদ্দার, বিপ্লব হালিম, এনাদের প্রসাদ পেয়েছি কেননা আমার বাপ বোমা-পিস্তল-পাইপগানে অসম্ভব দড় ছিল,  তুখোড় নিশানাবাজ। আমরা তো ‘লুম্পেন প্রলেতারিয়েত’, ওনাদের দেখাদেখি বিপ্লব করছি।
    .
    —আর খিদিরপুর ডকে? স্নিগ্ধ মাধুর্যের অভিনয় করে জিগ্যেস করল সুখেশ্বরী পাল।
    .
    —খিদিরপুর ডকে  ফরোয়ার্ড ব্লকের কলিমুদ্দিন শামস  আর কংগ্রেস নেতার রেশারেশি, তোলা আর বখরা নিয়ে ঝামেলা ছিল ভয়ানক। আমরা ছিলাম চুনোপুঁটি। খেলে বেরিয়ে যেতে আমার বাপটা ছিল ওস্তাদ।বাপ মাঝে-সাঝে খবরের কাগজ পড়তো আর বলতে কী-কী লিখেছে। এই যেমন, প্রতিক্রিয়াশীলদের সন্ত্রাসের বলি, প্রতিবিপ্লবীদের নিষ্ঠুর আক্রমণে হত, শ্রেণীশত্রু খতম, সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে জনরোষ , চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান, আমার নাম তোমার নাম ভিয়েৎনাম, বিপ্লবের উৎস বন্দুকের নল, জনযুদ্ধ, গণশত্রু –এই সব বড়ো-বড়ো কথা পড়তো আর হাসতো। 
    .
    ভয়াবহ অভিজ্ঞতাকে বিনোদনে পালটে ফেলতে, উনি যে  বেশ পটু, বুঝিয়ে দিলেন জুনিয়ার কেবিএস।
    .
    –অনেকে ছড়া বেঁধেছিল, শুনেছি আমার বাবার কাছে।
    .
    –হ্যাঁ, বেশ মজার-মজার। কয়েকটা মনে আছে। শ্লেষ্মাভরা ঘড়ঘড়ে গলায়, বেশ আহ্লাদে বলতে আরম্ভ করলেন জুনিয়ার কেবিএস: ‘ভোট দিয়ে যা/ আয় ভোটার আয়/ মাছ কুটলে মুড়ো দিব/ গাই বিয়োলে দুধ দিব/ দুধ খেতে বাটি দিব/ সুদ দিলে টাকা দিব/ ফি দিলে উকিল দিব, আমার যাদুর কপালে ভোট দিয়ে যা।’ এ ছাড়া কলকাতা কর্পোরেশনের ভোটাভুটির সময়ের একটা ছড়া ছিল, ‘যিনি তস্কর দলপতি দৈত্যগুরু/ যিনি বাক্যদানে আজি কল্পতরু/ ঠেলি নর্দমা কর্দমে অর্ধরাতে/ কত মর্দজনে ফিরে ফর্দ হাতে,’ আরেকটা ছড়া ছিল  ‘ভোটামৃত’ নামে, ‘এবার হুইপ বেড়ে করবে হুইপ/ গ্যালপে চলেছি ভাই, করিব উইন রে/ দোহাই ভোটার যেন কোরো না রুইন রে।’ 
    .
    –কলকাতায় কার্তিকপুজোর সময়ে প্রতিবেশীরা এর-তার দরোজার কাছে কার্তিকের ছোটো মূর্তি রেখে দেয়। কার্তিক তো ছিলেন সমুদ্রগুপ্তের যোদ্ধার প্রতীক, বাবার কাছে শুনেছিলাম। আপনি সেই যোদ্ধা কার্তিক যাকে লোকে দরোজায় দেখে আঁৎকে ওঠে। খুনোখুনির স্মৃতি কিন্তু মাঝে-মাঝে আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। বলল সুখেশ্বরী পাল।
    .
    –শোন তাহলে। ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলোকে অস্বীকার করার ইচ্ছে আর সেগুলো নিয়ে জোরে-জোরে বড়াই করার ইচ্ছের মধ্যে খটমটি হলো মনে চোট পাবার ভয়। হিংস্রতা থেকে বেঁচে ফেরা লোকেরা প্রায়ই তাদের জীবনের গল্পগুলো খুবই আবেগ দিয়ে , পরস্পরবিরোধী ঘটনায় মুড়ে আর টুকরো-টাকরা জুড়ে-জুড়ে  বলে। ফলে তাদের বিশ্বাস করা যায় না। তাতে কী হয়? সত্যি ঘটনা আর  লুকোছাপার গোঁজামিল তৈরি হয়।সত্যি ঘটনা  যখন শেষকালে মেনে নেয়া হয়, তখন যারা  বেঁচে আছে তারা ঘটনাগুলোকে পুনরুদ্ধার  করতে চেষ্টা করে। আমাদের জীবনের ঘটনাগুলোকে গোপনীয়তার গেট দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমার আর আমার বাপের জীবনের আঘাতমূলক ঘটনা  মৌখিক বর্ণনা হিসাবে নয় বরং একটা উপসর্গ হিসেবে টিকে আছে। 
    .
    –হ্যাঁ। আপনাদের জীবনের গল্প আপনাদের সঙ্গেই চাপা পড়ে যাবে। নিজের দেশটাকেও আপনারা ভালোবেসেছেন, তাই অমন জীবন কাটিয়েছিলেন।
    .
    –না, আমি যখন দেশপ্রেম বলি, তখন আমি ভালোবাসার কথা বলতে চাই না। আমি আমার মনের ভয়ের কথা বলি। ভয়টা রাজনৈতিক। স্বদেশী আন্দোলনকারীদের মতন কাব্যিক নয়। এই দেশপ্রেম ঘৃণার, প্রতিদ্বন্দ্বিতার, আগ্রাসনের।
    .
    –আপনার কথা শুনে কতো কি শিখি।
    –জীমূতবাহন বলে যে আমেরিকার  কিসিঞ্জারব্যাটা  পূর্ব বাংলায় তাদের বেসামরিক গণহত্যা নীতি আর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ভারতে তাদের সশস্ত্র আক্রমণ দুটো ক্ষেত্রেই  পাকিস্তানি জেনারেলদের সমর্থন করার জন্য অন্য আমেরিকানদের  সমস্ত পরামর্শ অগ্রাহ্য করেছিল। সেই বিপর্যয় আমেরিকাকেই ডুবিয়ে ছাড়লো আর ওরা তার  প্রভাব এখনও অনুভব করে। কিসিঞ্জারের  কারণটা ছিল  নিক্সন আর  চীনের মধ্যে গোপন কূটনীতিক সম্পর্ক। চীনের অতো বড়ো বাজার। কী হলো শেষে? চীন হয়ে উঠেছে মহাশক্তিধর দেশ। আমরিকা ওদের ভয়ে হেগে ফেলছে। আর বাংলাদেশ আজ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক উন্নত রাষ্ট্র। চিনের উন্নতিতে আমাদের কারখানার মালও কাজে দিয়েছে।
    .
    –অতোশত জানি না। জানি যে নব্বুই হাজার পাকিস্তানি আমাদের জেলে বেশ কিছুদিন বন্দি ছিল।.
    .
    কেবিএস বললেন, আমরা কংশালরা  সমাজে একটা শূন্যতা পূরণ করেছিলাম আর সেই শূন্যতা ছিল পারিবারিক জীবনের অনুপস্থিতি। বলতে গেলে আমরা  একটা পরিবারে পরিণত হয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে অনেকের কাছে মাস্তানি-গুণ্ডামি-লুটপাট ছিল গোষ্ঠীবদ্ধ একমাত্র পরিবার, কারণ আমার মতন অনেকেরই মা ছিল না কিংবা বাপ ছিল না, কিংবা বাপ তার মাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল।  কেউ কেউ তো তাদের বাবাকেও দেখেনি বা  চিনতো  না। তাদের মা গর্ভবতী হওয়ার পরে তাদের বাবারা  পিছনে ফিরে তাকায়নি আর  সেই ছেলেরা যখন চরে খেতে শিখলো তখন  তারা কারও সঙ্গে  সম্পর্ক গড়তে পারেনি।
    .
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    103 | 104 | 105 | 106 | 107 | 110 | 113 | 114 | 119 | 120 | 121 | 123 | 124 | 124 | 125 | 125 | 126 | 127 | 127 | 128 | 129 | 131 | 133 | 134 | 135 | 136 | 138 | 139 | 140 | 141 | 143 | 144 | 145 | 147 | 148 | 149 | 149 | 150 | 151 | 152 | 153 | 154 | 155 | 156 | 157 | 158 | 159 | 160 | 161 | 162 | 163 | 164 | 165 | 167 | 168 | 169 | 170 | 171 | 172 | 173 | 174 | 175 | 176 | 176 | 177 | 178 | 179 | 180 | 181 | 182 | 183 | 184 | 185 | 186 | 187 | 188 | 189 | 190 | 191 | 192 | 192 | 193 | 194 | 195 | 196 | 198 | 199 | 200
  • অপর বাংলা | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১০২৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন