এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  অপার বাংলা

  • আনন্দ আর দুঃখ

    Malay Roychoudhury লেখকের গ্রাহক হোন
    অপার বাংলা | ০৪ মার্চ ২০২৩ | ১০৪৮ বার পঠিত
  • 103 | 104 | 105 | 106 | 107 | 110 | 113 | 114 | 119 | 120 | 121 | 123 | 124 | 124 | 125 | 125 | 126 | 127 | 127 | 128 | 129 | 131 | 133 | 134 | 135 | 136 | 138 | 139 | 140 | 141 | 143 | 144 | 145 | 147 | 148 | 149 | 149 | 150 | 151 | 152 | 153 | 154 | 155 | 156 | 157 | 158 | 159 | 160 | 161 | 162 | 163 | 164 | 165 | 167 | 168 | 169 | 170 | 171 | 172 | 173 | 174 | 175 | 176 | 176 | 177 | 178 | 179 | 180 | 181 | 182 | 183 | 184 | 185 | 186 | 187 | 188 | 189 | 190 | 191 | 192 | 192 | 193 | 194 | 195 | 196 | 198 | 199 | 200
    আনন্দ আর দুঃখ : মলয় রায়চৌধুরী

    এক

    জ্ঞানচৌতিশা শব্দটির উদ্ভাবক ষোলো শতকের ভাবুক মীর সৈয়দ সুলতান। হয়তো তিনি উদ্ভাবক নন, তাঁর সময়ে শব্দটির প্রচলন ছিল। তবে, তাঁর পুঁথিতে শব্দটি ব্যবহৃত হতে দেখা গেছে। শব্দটির চৌ্হদ্দিতে তিনি ফিলজফি, থটপ্রসেস, আইডিয়া, স্টেট অব মাইন্ড, প্রবলেম্যাটিক, ফেনমেনলজি, ইনটেলিজেন্স, এথিক্স, উইজডম, যুধিষ্ঠির-কথিত ধর্ম ইত্যাদির সমন্বয়ে গড়ে-ওঠা ব্যক্তি-মনের কথা বলেছেন। মীর সৈয়দ সুলতানের মতন প্রণম্য মানুষের সময়কে, ইংরেজদের নকল করে, কেন মধ্যযুগ বলা হয়েছিল, ওই নকল করা ছাড়া, ব্যাখ্যা করা মুশকিল। বেশ কিছুকাল যাবৎ আমি ‘আমার চিন্তা কী করে চিন্তা করে’ এই চিন্তার ভেতরে রয়েছি। মস্তিষ্কের এই প্রক্রিয়াটিকে জ্ঞানচৌতিশা অভিধাটি দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। চৌতিশা শব্দটির তৎকালীন অর্থ সম্ভবত ছিল চিন্তার ছন্দ। ইংরেজরা যে ভাষাভাবনা আমাদের বিদ্যায়তনিক শিক্ষাজগতে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন, ছন্দ বলতেই আজকাল শব্দ ও বাক্যের কথা এসে পড়ে। মীর সৈয়দ সুলতানের কালখন্ডে চিন্তার ছন্দ সম্ভব ছিল। আমাদের কালখন্ডে চিন্তা যখন বিশৃঙ্খল দ্রুতিতে আক্রান্ত, আমার মনে হয় চিন্তার ছন্দ অসম্ভব। তবু আমি আমার আনন্দক্রিয়া আর দুঃখক্রিয়া নিয়ে চিন্তা করার চেষ্টা বজায় রেখেছি। কিছু একটা মনের মধ্যে ঘটলে সেটা নিয়ে ভেবে দেখার চেষ্টা করি।

    দুই

    কোট্টায়ামের চাঙ্গানাসেরি গ্রামের গৃহবধূ অঞ্জু ববি জর্জ প্যারির বিশ্ব চাম্পিয়ানশিপে ৬.৭০ মিটার লাফিয়ে অ্যাথলেটিক্সে ভারতকে প্রথম পদক জেতালেন, তৃতীয় স্হান পেয়ে ব্রোঞ্জ মেডেল, যা মিলখা সিং আর পি টি উষাও পারেননি। খবরটা টিভিতে দেখে প্রচণ্ড আনন্দ হল। টিভি আমি একা দেখি, বালিশে ঠেসান দিয়ে, সেন্টার টেবিলের ওপর ঠ্যাং তুলে। হঠাৎ এরকম আনন্দ হল কেন? আমি তো অ্যাথলিট ছিলুম না। ফুটবল আর ক্রিকেট শেষ হয়ে গিয়েছিল স্কুল ছাড়ার সময়ে। শাদা জামা-ফুলপ্যান্ট করিয়ে দেবার মতন পারিবারিক স্ফূর্তি না থাকায়, কেবল ফালতু ক্রিকেট খেলতে হয়েছে স্কুলের সর্বজনীন ব্যাট হাতে, বিনা প্যাডে। ঘরেলু ক্রিকেটও খেলা হয়নি। রোগাপ্যাংলা ছিলুম বলে ফুটবলেও চোটজখম সয়ে বেশি সময় মাঠের কিনারে বসে থাকতে হয়েছে। খেলার বা খেলা সম্পর্কিত উৎসাহ বাবা-কাকা-জ্যাঠার কারোর ছিল না। তার মানে অঞ্জু ববি জর্জের পদকপ্রাপ্তিতে ৩০ আগস্ট ২০০৩ তারিখে আমার যে আনন্দ হয়েছিল, তার উৎস খেলাধুলা নয়। তাহলে কী? কেনই বা হল অমন আনন্দ? হঠাৎ? তা কি প্যাটরিয়টিজম? কিন্তু অঞ্জু ববি জর্জের আগে যে-খবরটা দেখেছিলুম তা হল সংসদভবনে হামলার মূল পাণ্ডা গাজি বাবা নামক জৈশ-ই-মহম্মদের জনৈক জঙ্গির গুলি খেয়ে শ্রীনগরে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের হাতে মৃত্যু। সে খবর দেখে, যাক ল্যাটা চুকেছে, এরকম মনোভাব হয়েছিল। প্যাটরিয়টিজম তো গাজি বাবার নিকেশে চাগিয়ে ওঠার কথা। লোকটার আসল নাম গাজি বাবা নয়। যারা কাফের বা হিন্দুদের মারে তারা গাজি উপাধি পায়। জম্মু-কাশ্মীরে ট্যুরে যেতে হত অফিসের কাজে, তাই অভিজ্ঞতা থেকেও মনে হয়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাপারটা সেটল হোক। দাড়ির জন্যে আমাকে প্রায় সর্বত্র অফিসের দেয়া আইডেনটিটি কার্ড দেখাতে হত। আমি যে সত্যিই আমি তা প্রমাণ করার জন্যে। ওভাবে প্রমাণ দেবার জন্যে মনে হত তোমাদের তুলনায় আমি কম ভারতীয় নাকি? তাহলে ল্যাটা চোকার মনোভাব কি এই জন্যে যে, প্রায়ই দুটো চারটে গাজি বাবা মরছে? অথচ অঞ্জু ববি জর্জ এশিয়াডে সোনার পদক পেয়েছিলেন, সে-খবর আমি জানতুম না। তার জন্যে, জানতুম না বলে, আমার খারাপ লাগেনি। প্যারির বিশহব মিটে তাঁর ব্রোঞ্জ পাওয়াটা আমার কাছে তাঁর সম্পর্কে প্রথম খবর, যা টিভিতে দেখামাত্র আমি আনন্দে আক্রান্ত হয়েছিলুম। সে আনন্দ কেবল ওই দুতিন মিনিটের জন্য ছিল। আজকের টিভিতে যখন দেখলুম অঞ্জু ববি জর্জের গ্রামের বাড়িতে তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে নানা জায়গা থেকে লোকজন আসছেন, বুঝতে পারলুম যে, ওনাদের আনন্দক্রিয়ায় এখনও ওনারা আক্রান্ত। ছোটো, বড়ো, বেশ বড়ো, অনেক রকমের আনন্দের স্প্যান হয় তার মানে। আমার কাছে অঞ্জু ববি জর্জ আনন্দের এজেন্ট। গাজি বাবার গাজিত্ব বিনাশ আমার আনন্দের এজেন্ট নয়।

    তিন

    মীর সৈয়দ সুলতানের চেয়ে আরও আগের কালখন্ডে যাই। উপনিষদ রচনার কালখন্ডে। ষোলো শতক সম্পর্কে তবু কিছু-কিছু ধারণা করতে পারি। কিন্তু উপনিষদের কালখন্ডকে রিয়্যাল টাইমে হাজির করা, আমি বহুবার একা-একা বসে ভিজুয়ালাইজ করার চেষ্টা করেছি; একেবারে অসম্ভব। আর টিভিতে সনাতন ভারত নিয়ে যে-সব গল্পগাছা দেখানো হয় তা তো কল্পনার জগতকে সম্পূর্ণ হাইব্রিড রূপকল্পে ঠেশে দিচ্ছে। তৈত্তিরীয়োপনিষদে বলা হয়েছে, ব্রহ্মজ্ঞান পাবার জন্যে যে পরম সুখ, তা-ই আনন্দ (আনন্দং ব্রহ্মণো বিদ্বান ন বিভেতি কুতশ্চন), বলা হয়েছে ব্রহ্মাই আনন্দের স্বরূপ (স তপস্ততা আনন্দো ব্রহ্মেতি বাজানাৎ)। ব্রহ্মজ্ঞান, ব্রহ্মা, এই ভাবকল্পগুলো এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, শুনলেই মনে হয় হিন্দুধর্মের গ্যাঁড়াকল। আমার মনে হয়, যে-লোকটার মধ্যে আনন্দ ঘটছে, তা কী ভাবে ঘটছে, এর একটা পর্যায়ক্রম গড়ে নিয়ে, সর্বাধিক এথিকাল অ্যাবস্ট্র্যাক্টকে বলা হয়েছিল ব্রহ্ম, যে-কারণে তাকে বলা হয়েছিল অতিমহৎ। এই এথিকাল অ্যাবস্ট্রাকশানের চরম করা হয়েছে সচ্চিদানন্দ ভাবকল্পটিতে। মহৎ বা সৎচিত্ত কি সম্ভব? সম্ভব হতে পারে, যদি যে-লোকটার মধ্যে ঘটছে, তার ব্যক্তিগত কাজকারবারের সঙ্গে ওই ভাবকল্পের সম্পর্ক না থাকে। প্রতিদিন, সর্বক্ষণ, একজন মানুষ আনন্দের মধ্যে রয়েছে, এরকম ব্যাপার সম্ভব বলে মনে হয় না। উপনিষদের সময়ে, মীর সৈয়দ সুলতানের সময়ে, অথবা পরবর্তী কালখন্ডগুলোয়, কখনই তা সম্ভব ছিল না। পৃথিবীতে কারো না কারো আয়ত্তে, মুহূর্ত-বিশেষে, আনন্দ রয়েছে, থাকতে পারে, এ-ভাবে ভাবলে তাকে ব্রহ্ম বলে ভাবা যেতে পারে। এ-ও এথিকাল অ্যাবস্ট্রাকশান। হয়তো সে-কারণে উপনিষদের কালখন্ডে ব্রহ্ম অব্যক্ত, চিরন্তন, অনন্ত, অনাদি, কালাতীত, স্বয়ম্ভূ ও সর্বব্যাপী।

    চার

    জানি না ব্রাহ্মধর্মের এ-ব্যাপারে কিছু করার ছিল কি না। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘আনন্দধারা বহিছে ভূবনে’, ‘আনন্দেরি সাগর থেকে এসেছে আজ বান’, ‘তাহে তরঙ্গ উঠে সঘন আনন নন্দ রে’ ইত্যাদি। বহু ব্রহ্ম গান তো আনন্দ ভাবকল্পটিকে এমন গুরুত্ব দিয়েছে যে, ওই কালপর্বের ব্রাহ্ম মননবিশ্বকে বিমূর্তসন্ধানী ছাড়া অন্যকিছু ভাবা মুশকিল। যেমন এই গানগুলো: ‘আনন্দ অমৃতরূপে উদিবে হৃদয় আকাশে’, ‘আনন্দ মনে, বিমল হৃদয়ে, ভজরে ভবতারণে’, ‘ঐ যে দেখা যায় আনন্দধাম, অপূর্ব শোভন ভবজলধির পারে জ্যোতির্ময়’, ‘আনন্দময় তোমার বিশ্ব শোভা-সুখ পূর্ণ’, ভজরে আনন্দময়ে সব যন্ত্রণা এড়াও রে, পাপ তাপ দূরে গেল, আনন্দরস উথলিল’, ‘তুমি তো আনন্দলোক জুড়াও প্রাণ’ ইত্যাদি। ব্রাহ্মগানগুলো থেকে মনে হয়, আনন্দ একটা পাওয়ার সেন্টার, এবং তা বিমূর্ত। রবীন্দ্রনাথের লেখা থেকে মনে হয় সে পাওয়ার সেন্ট্রালাইজড নয় এবং তা নিছক কল্পিত। লালন ফকিরের কোনো গীতিকায় আনন্দ নিয়ে উক্তি আমার চোখে পড়েনি। ফলে সন্দেহ থেকে যায় নযে ব্রাহ্মদের, রবীন্দ্রনাথসহ, আনন্দ ভাবকল্পটা ইংরেজদের আনা থিয়রিটিকাল অভিব্যক্তি কি না। হ্যাপিনেস নিয়ে নানা রকম গ্রেকো-রোমান ভাবনা ইংরেজরা এনেছিল। যেমন স্টোইসিজম, এপিকিউরিয়ানিজম, ফেলিসিক ক্যালকুলাস, অ্যালট্রুইজম, খ্রিস্টান বিটিচ্যুড ইত্যাদি। অর্থাৎ একজন লোক নিজে আনন্দের মধ্যে না-থেকেও আনন্দের কথা বলে যেতে পারেন। আনন্দ ব্যাপারটাকে এথিকাল অ্যাবস্ট্রাকশানের বাইরে আনার জন্যে ব্রিটেনে ষোলো-সতেরো শতকে অ্যান্টিনোমিয়ানিজম নামে একটা আনন্দসন্ধানী ধর্মতত্ব প্রট্যাস্টেন্টরা চাউর করেছিল। সে-তত্ব অনুযায়ী কোনো কোনো খ্রিস্টান হলেন আনন্দের বরপুত্র; তাঁরা যা ইচ্ছা করতে পারেন, কোনো আচারসংহিতা মান্য করার দরকার নেই। ব্রাহ্মরা নানা রকম আচার সংহিতা নিজেদের জন্যে ফেঁদেছিলেন বলে আনন্দকে মূর্ত থেকে বিমূর্ত করে তুলেছিলেন।

    পাঁচ

    যত অতীতে যাই, আনন্দ ভাবকল্পটিকে তত বিমূর্ত মনে হবার কারণ, এখন ব্যক্তিএকক বলতে যা বুঝি, তা তখন ছিল না। ব্যক্তি নির্মাণ প্রকল্পটি এনেছিল ব্রিটিশরা। অমন প্রকল্পকে কার্যকরী করতে যা জরুরি ছিল, তা হল প্রকৃতির অংশবিশেষের স্বামীত্ব। ইংরেজরা আসার আগে পার্সোনাল পজেশান বা ব্যক্তিগত বস্তু ছিল। প্রায়ভেট প্রপার্টি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তি ব্যাপারটা ছিল না। লক্ষ করলে দেখা যাবে যে সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত যাবতীয় শব্দ বিদেশি, অবাঙালি। যেমন টাইটেল, টাইটেল-হোলডার, ডিড, রেজিস্ট্রি, রাইট, উইল, প্রোবেট, এফিডেভিট, অ্যাডভোকেট, উকিল, দলিল, দস্তাবেজ, ওকালতনামা, তোউজি, মৌজা, জমিদারি, শরিক, সেরেস্তা, মোক্তার, পেশকার, একরারনামা, হিসাব, নিলাম, মাল, মালগুজারি, তালুক, ওয়ারিস, দখলনামা, একতিয়ার ইত্যাদি। যে-লোকটার প্রতিস্বে প্রকৃতির আংশিক মালিকানার বোধ এলো, এবং যে-লোকটির সময়ে প্রকৃতি ছিল সমাজের সম্পদ, এই দুটি মানুষ সম্পূর্ণ আলাদা। ব্যক্তি যদি প্রকৃতির —- জমিজমা, পুকুর, নদী, পাহাড়, জঙ্গল— মালিক হয়ে ওঠে, তাহলে তার আনন্দবোধও হয়ে উঠবে কৌমনিরপেক্ষ। ব্যক্তির চরিত্রে আনন্দ ব্যাপারটা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হয়ে গেছে। নতুন লোকটি, যার আনন্দবোধ কৌমনিরপেক্ষ, যে আগে নিজেই প্রকৃতির অংশ ছিল বলে প্রকৃতির মতনই আনন্দের মধ্যে থাকত, সে যখন প্রকৃতিবিচ্ছিন্ন হয়ে প্রকৃতির মালিকানার অধিকারী, সে নিজেই নিজের প্রভু, সে যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারে, জগৎকে নির্মাণ ও আত্মনির্মাণ করতে পারে। তাই যত অতীতে যাই, আনন্দ ভাবকল্পটিকে তত বিমূর্ত মনে হয়, তা তত এথিকাল। ব্রহ্ম ভাবকল্পটি চূড়ান্ত এথিকাল বিমূর্ততা। রবীন্দ্রনাথের কালখন্ডটি ব্রিটিশ বাঁকবদলে আক্রান্ত হলেও, প্রাতিস্বিকস্তরে রবীন্দ্রনাথ নৈতিক বাদবিচার ও দায়িত্ববোধের এথিক্সকে, আমাদের পক্ষে দুর্বোধ্য আনন্দ-পরিসরে, বহাল রাখতে পেরেছিলেন। আমার পক্ষে তো জীবনদেবতা ভাবকল্পকে ভিজুয়ালাইজ করা ততটাই কঠিন যতটা ব্রহ্ম। অ্যাবস্ট্র্যাকশান থেকে কংক্রিটাইজ করার প্রয়াস থেকে সনাতন কালপর্বের ব্রহ্ম ভাবকল্পটিকে এগোতে হয়েছে ব্রহ্মার পুরাণগল্পের দিকে।

    ছয়

    অতীত বলতে কেবল ভারতীয় ভাবুকের অতীত নয়। অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতায় দেখা মেলে অনুরূপ এথিকাল অ্যাবস্ট্রাকশানের। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের চিনে সাও ইয়েন নামে জনৈক দার্শনিক দুটি তেজোময়তা এবং তাদের ক্রিয়া-বিক্রিয়ার আনন্দস্বরূপের উদ্ভবের কথা বলেছিলেন, যার নাম তিনি দিয়েছিলেন ‘চি’। তেজ দুটি হল ‘য়িন’ ও ‘য়াং’। ‘য়িন’ মেয়েলি, শীতল, অন্ধকারাচ্ছন্ন, অপ্রতিরোধী শক্তি। ‘য়াং’ পুরুষালি, আলোময় ও উষ্ণ শক্তি। য়িন ও য়াংকে সনাতন ভারতীয় চিন্তায় প্রকৃতি ও পুরুষের সঙ্গে তুলনা করা ভুল হবে। এরা উভয়েই প্রকৃতি; ধাতু, কাঠ, জল, আগুন ও মাটি, এই উপাদানগুলোর ভারসাম্য-উপজাত। নিশ্বাস-প্রশ্বাস, আত্মিক উদ্দীপনা, কর্মশক্তি ‘চি’ ব্যতিরেকে সম্ভব নয়। মৃত্যু হলে ‘চি’ শেষ হয়। চৌ রাজত্বে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম-ষষ্ঠ শতকে যখন নৈতিক অবনমনের সামাজিক চূড়ান্ত, ‘চি’ ভাবনাটিকে মানুষের আচার-আচরণের বিধিনিষেধে বাঁধতে চেয়েছিলেন কনফুসিয়াস। বিধিনিষেধগুলোর তিনি নাম দিয়েছিলেন ‘লি’। তিনি বলেছিলেন যে, ব্যক্তিজীবনে ও সমাজজীবনে মানবিকতা চর্চা করে পাওয়া যায় আনন্দ। এই মানবিকতার অর্থ হল বদান্যতা, সদাশয়তা, পরোপকারের ইচ্ছা, যা বর্তমান কালখন্ডের বঙ্গসমাজে বিরল। প্রাচীন ভারতে ও চিনে আনন্দ বলতে যা বোঝাত, এখন আনন্দ বলতে, অতএব, তা বোঝায় না। আমরা যে আনন্দ আজকের দিনে পাই, তা একযোগে একাধিক ফ্ল্যাশ, উদ্ভাস। সে আনন্দ অঞ্জু ববি জর্জের খবরে হোক বা আমার নাতনি মিহিকার সঙ্গে খেলা করার সময়ে হোক। মারতিন হাইদেগার কথিত Dasien দিয়ে একে টের পাওয়া যাবে না। নাতনি তার মায়ের কোলে চেপে আহমেদাবাদ ফিরে গেছে মাসখানেক হল, কিন্তু ফ্ল্যাশগুলো আমি অনায়াসে ফেরত আনতে পারি।

    সাত

    দুঃখের বেলায় ফেরত ডেকে আনতে পারি না, চাই বা না চাই। তার মানে আনন্দের বিপরীত দুঃখ নয়। অভিধানে আনন্দ বলতে বোঝায় প্রীতি, হর্ষ, সুখ, প্রমোদ, যেগুলোর স্প্যান ওই ফ্ল্যাশটুকু। বিরল প্রতিস্বের মানুষের কথা যদি ভাবি, যেমন ধরা যাক চৈতন্যদেব বা রামকৃষ্ণ পরমহংস, তাঁদের ক্ষেত্রেও আনন্দের স্প্যান দীর্ঘ হবার কোনো কারণ দেখি না। বয়সের সঙ্গে এই স্প্যানের হেরফের হয়, এমনও মনে হয় না। দুঃখের ক্ষেত্রে হয়। যে-কারণে দুঃখের কোনো দীর্ঘ স্প্যানের মধ্যে এক বা একাধিক আনন্দের ফ্ল্যাশ গড়ে উঠে মিলিয়ে যাবার ঘটনা ঘটতে পারে। বস্তুত এই ফ্ল্যাশের বিমূর্ততার জন্যে অনির্বচনীয় আনন্দ শব্দবন্ধ তৈরি হয়ে থাকবে। কেননা দুঃখও তো বর্ণনাতীত, অনির্ণেয়, অনির্বাচ্য হতে পারে; আনন্দের তুলনায় বেশি। আনন্দকে যে-কালখন্ডে ব্রহ্মা বলা হয়েছিল, সে-সময় থেকেই আনন্দকে, মনে হয়, অনির্বচনীয় মনে করা হয়েছে। ব্রহ্মের দুটি রূপের কথা ভাবা হয়েছিল। একটি নির্গুণ ও অমূর্ত, অন্যটি সগুণ ও মূর্ত। সে-যুগে দুঃখ নিয়ে সাংখ্য দর্শনে ভাবা হয়েছিল, এবং স্বাভাবিকভাবে তাকেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অ্যাবস্ট্রাকশানে। অন্তত আমাদের সময়ে চিন্তা-ভাবনার ফর্মে তা অ্যাবস্ট্রাক্ট মনে হবে। সাংখ্যের প্রণেতা কপিল মুনির আগে থাকতে ব্রহ্ম ভাবকল্পকে আনন্দের সঙ্গে একাত্ম করে ফেলা হয়েছিল। সাংখ্য দর্শনে দুঃখ নিয়ে ভাবা হল, তার কারণ কপিল মুনি ঈশ্বরকে অসিদ্ধ প্রমাণ করলেন; বললেন বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে প্রকৃতির বিকার থেকে। সাংখ্য অনুযায়ী দুঃখ ত্রিবিধ : আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক, আর আদিদৈবিক। আধ্যাত্মিক দুঃখ দুরকম : শরীর খারাপ হবার দুঃখ, এবং ঈর্ষা, ভয়, রিপুর কারণে মনের দুঃখ। আধিভৌতিক দুঃখও দুরকম : প্রথম, যদি ভুতে ধরে; দ্বিতীয়, মানুষ, পশু, পাখি, সাপখোপের দেয়া দুঃখ। আধিদৈবিক দুঃখ উৎপন্ন হতে পারে দেবতার প্রকোপে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে। এই সমস্ত অ্যাবস্ট্রাকশানগুলোর কারণে আনন্দ ও দুঃখের ভাবকল্পে প্রাচীনকালে ভেবে দেখা হয়নি, বা সম্ভবত চিন্তার ফর্মের জন্যে ভাবা সম্ভব হয়নি, যে, সমাজ ও সম্প্রদায়ের ব্যবস্হাটি থেকেই কারোর আনন্দ আর কারোর দুঃখ ঘটতে পারে।

    আট

    বৌদ্ধধর্মে দুঃখকে আনা হল ডিসকোর্সের কেন্দ্রে। অথবা বলা যায় যে ‘অহং’ সম্পর্কে যে-চিন্তা দেখা গেল তা থেকে দুঃখ ভাবকল্প পেল বিশেষ গুরুত্ব। সকলের সুখ আর সকলের হিতের কথা ধার্মিকস্তরে প্রথমবার ভাবা হল। সে-কারণে কাফের বা ম্লেচ্ছ ভাবকল্প বৌদ্ধধর্মে নেই। ঈশ্বর এবং শয়তানের বাইনারি অপোজিট নেই। জরা, ব্যাধি, মৃত্যু ও পূর্ব জন্মের কবল থেকে মানুষকে মুক্ত করার কথা ভাবা হল। তার আগে, বৈদিক ক্রিয়াকান্ড এবং বর্ণভেদের কারণেও যে দুঃখ জন্ম নিতে পারে, তা জানা থাকলেও কপিল মুনিসহ অন্যান্য সাংখ্য দার্শনিকরা তাকে আমল দেননি। হিন্দুধর্ম বলতে যা আমরা এখন বুঝি, তা তখন ছিল না। বর্ণভেদ ব্যাপারটি হিন্দু ধর্মের আগে এসেছে। বৌদ্ধধর্ম নাকচ করল বৈদিক ক্রিয়াকান্ড ও বর্ণভেদ। চারটি সামগ্রিক সত্যের কথা বলল। সব কয়টিই দুঃখকেন্দ্রিক। এই চারটি সত্য হল : ১) জীবের সকল দুঃখের কারণ জন্মগ্রহণ। জন্ম, ব্যাধি, জরা, মৃত্যু, প্রিয়বিয়োগ, অপ্রিয় সম্প্রয়োগ, ঈপ্সিত বস্তুর অপ্রাপ্তি ও পঞ্চ উপাদান। ২) দুঃখ সমুদয় — দুঃখের উৎপত্তি। কতকগুলো কাজকারবার থেকে এর উৎপত্তি। ৩) দুঃখ নিরোধ– দুঃখ নিরোধের উপায় হল প্রবৃত্তিকে বিনাশ করে, সমভাবে আর শান্তির অবস্হা তৈরি করলে, দুঃখ হবে না। শান্তির অবস্হায় যদি থাকা যায়, তাহলে নির্বাণ ঘটবে। নির্বাণ ঘটলে আবার জন্ম নিতে হবে না। ৪) দুঃখ নিরোধগামী মার্গ — গৌতম বুদ্ধ যে পথে চলতে বলেছেন, তা থেকে বিপথগামী না হলে দুঃখে আক্রান্ত হতে হবে না। সংসার থেকে মুক্তি পেতে হলে ওই পথেই চলতে হবে। সংসার অর্থে জীবন-মৃত্যু-পূনর্জন্মের চক্র, যা কর্ম দ্বারা নির্দেশিত। কর্মের অর্থ যেমন কাজ করবে তেমন ফল ভোগ করবে। অর্থাৎ কার্যকারণ। সাংখ্যতেও আত্ম ও নৈরাত্মের পার্থক্য না করতে পারার কারণে দুঃখের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ কার্যকারণ। দুঃখের কারণ কি থাকতেই হবে?

    নয়

    আমাকে তিন বছর বয়সে ক্যাথলিক স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল। প্রতিদিন চার্চে যেতে হত বাইবেল ক্লাস করতে। চার্চের যে স্মৃতি আমার রয়ে গেছে তা দুঃখের। আজও যে-কোনো ক্যাথলিক চার্চে ঢুকলে ইন্সটিংকটিভলি আমার দুঃখ চাগিয়ে ওঠে। আমি একজন পাথুরে দেবীদেবতাহীন হিন্দু। খ্রিস্টান নই। কিন্তু চার্চে ঢুকলে দুঃখে আক্রান্ত হই। বেরিয়ে এলে আবার নর্মাল। ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টানরা ব্যথায় আক্রান্ত হন, যিশুর যন্ত্রণাকাতর মুখের দিকে তাকিয়ে। আনন্দস্বরূপ ব্র্হ্ম আর বেদনাময় খ্রিস্ট, এ-দুটি ভাবনাকে রেনেসঁসকালীন ধর্মান্তরিত হিন্দুরা কীভাবে মেলাতেন, জানতে ইচ্ছা করে; খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিতরা অধিকাংশই তো ছিলেন উচ্চবর্ণের। আমার কাছে আনন্দস্বরূপ ব্রহ্মকে এথিকাল অ্যাবস্ট্রাকশান মনে হয়। বেদনাময় খ্রিস্ট বললে টানা তিন রাত আর তিন দিন ক্রুসে বিদ্ধ যিশু নামের এক ঐতিহাসিক চরিত্রের কথা মনে পড়ে, যিনি প্যালেস্টাইনের বেথলেহেমে জন্মেছিলেন, প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার দোষে ইহুদি বিচারব্যবস্হা সানহেদ্রিন দ্বারা মৃত্যুদণ্ড পান, যাকে কার্যকর করার আদেশ দেন রোমান অভিশংসক পনতিয়াস পিলাতে। এসট্যাবলিশমেন্ট (যে শব্দের ভুল বাংলা প্রতিশব্দ ‘প্রতিষ্ঠান’)ভাবকল্পটির উৎস হলেন যিশুখ্রিস্ট, যিনি নিজের সময়ের তাবৎ ক্ষমতাকেন্দ্রের বিরোধিতা করেছিলেন, খ্রিস্টধর্মের শুরুতে তাকে অ্যান্টিএসট্যাবলিশমেন্ট বিশ্বাস (ফেইথ) বলা হতো, ধর্ম বলা হতো না। খ্রিস্টধর্মের প্রভাবেই আধুনিকতাবাদী পাশ্চাত্য কবিদের রচনায় এত বেশি দুঃখ, ব্যথা, বেদনা, কষ্ট ও যন্ত্রণা। লক্ষণীয় যে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ গ্রন্হে ব্যথা ও বেদনা শব্দ দুটি নেই, যদিও ব্যথ ও বেদন আছে: অর্থাৎ ইংরেজরা আসার পর নিজেদের দুঃখকষ্ট নিয়ে বাঙালির চিন্তার ফর্মে বিপুল পরিবর্তন ঘটেছে। প্রাক-ঔপনিবেশিক বাংলা সাহিত্যে আনন্দ ভাবকল্পটির আধিক্য দেখা দেয়। রবীন্দ্রনাথও, ব্যক্তিগত দুঃখের মধ্যে বাস করে, আনন্দ-পরিসর এনেছেন কবিতায়। এলেজি আর এপিটাফ লেখার পাশ্চাত্য ঐতিহ্য সম্পর্কে তাঁর ভালই জানা ছিল নিশ্চই। ইংরেজদের শিক্ষাজগত, যাকে ম্যাকলে বলেছিলেন খ্রিস্টধর্ম প্রচার ও প্রসার, মধ্যবিত্ত বাঙালি প্রতিস্বকে যেভাবে গড়তে লাগল, ঔপনিবেশিক বাংলা সাহিত্যে আমরা বাংলা কবিতায় পেলুম দুঃখ, কষ্ট, ব্যথা, বেদনা, যন্ত্রণার আধিক্য। উত্তরঔপনিবেশিক কালখণ্ডে দেশভাগে আগত উদবাস্তুদের রচনায় ব্যাপারটা এমন ছেয়ে গেল যে বাংলা সাহিত্য একেবার রিফিউজি সাহিত্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যা থেকে মুক্তি ঘটায় হাংরি, শ্রুতি, নিমসাহিত্য, ধ্বংসকালীন ইত্যাদি আন্দোলনগুলো।

    দশ

    খ্রিস্টধর্মের প্রভাব ছাড়া হেগেল, ফিউয়েরবাখ এবং মার্কসের এন্তফ্রেমদুং বা এলিয়েনেশন ভাবকল্পটি সম্ভব ছিল না; রেনে দেকার্তের কজিতো এরগো সাম সম্ভব ছিল না; বদল্যারের আন্যুই সম্ভব ছিল না, লিবনিৎসের ফেনোমেনা বেনে ফান্দাতা সম্ভব ছিল না, জেমস জয়েসের এপিফ্যানি সম্ভব ছিল না, হাইদেগার-কথিত দাসেইন সম্ভব ছিল না, নিৎশের আলসো স্প্রাখ জারাথুস্ট্রা সম্ভব ছিল না, ইম্যানুয়েল কান্টের ক্রিতিক সম্ভব ছিল না, জার্মান কবিতার অ্যাংগস্ট সম্ভব ছিল না, ফরাসি কবিতার  angoisse সম্ভব ছিল না, কিয়ের্কেগার্দের অস্তিত্ববাদ সম্ভব ছিল না, আঁতোয়া আরতোর নাট্যভাবনা সম্ভব ছিল না, স্যামুয়েল বেকেটের ওয়েটিং ফর গোডো সম্ভব ছিল না, টি এস এলিয়টের ওয়েস্ট ল্যান্ড সম্ভব ছিল না। এই সমস্ত যাবতীয় ভাবনাচিন্তার উৎস খ্রিস্টধর্মের ব্যথাবেদনা, যার সঙ্গে সাংখ্য দর্শনের ও বৌদ্ধধর্মের দুঃখ বিষয়ক ভাবনার কোনো মিল নেই। বাংলা আধুনিক কবিতাকে কবি যখনই আত্মকেন্দ্রিক করতে চেয়েছেন, আমরা পেয়েছি খ্রিস্টধর্ম উদ্ভূত মনের অশান্তি। রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর পূর্বের বাঙালি কবিদের আনন্দের যে-জগৎ ছিল তা পাইনি। দেখা যাবে যে টাকাকড়ি বাড়িগাড়ি করে নেবার পরও রিফিউজি বাড়ির কবিরা ব্যথাবেদনা-কষ্টযন্ত্রণাকে গ্লোরিফাই করছেন। বাংলা কবিতায় আনন্দ এল পোস্টমডার্ন বাঁকবদলের পর। কিন্তু এ -আনন্দ প্রাকঔপনিবেশিক আনন্দস্বরূপ নয়। এ আনন্দ রচয়িতার আনন্দ নয়। এ হল পাঠবস্তুটির নিজের আনন্দ। খুনসুটির ভাইব থাকলেও পাঠবস্তুটি নিজের আহ্লাদে গড়ে নিতে থাকে। আর শ্লেষ-মসকরা-মজা যদি ভাইব হয়, তাহলে তো কথাই নেই।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    103 | 104 | 105 | 106 | 107 | 110 | 113 | 114 | 119 | 120 | 121 | 123 | 124 | 124 | 125 | 125 | 126 | 127 | 127 | 128 | 129 | 131 | 133 | 134 | 135 | 136 | 138 | 139 | 140 | 141 | 143 | 144 | 145 | 147 | 148 | 149 | 149 | 150 | 151 | 152 | 153 | 154 | 155 | 156 | 157 | 158 | 159 | 160 | 161 | 162 | 163 | 164 | 165 | 167 | 168 | 169 | 170 | 171 | 172 | 173 | 174 | 175 | 176 | 176 | 177 | 178 | 179 | 180 | 181 | 182 | 183 | 184 | 185 | 186 | 187 | 188 | 189 | 190 | 191 | 192 | 192 | 193 | 194 | 195 | 196 | 198 | 199 | 200
  • অপার বাংলা | ০৪ মার্চ ২০২৩ | ১০৪৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • আনন্দ | 2600:1002:b057:dfdf:5dac:50fd:8a77:***:*** | ০৪ মার্চ ২০২৩ ২১:০৮516980
  • জিড্ডু কৃষ্ণমূর্তিই বা বাদ গেলেন কেন? বা ওশো?  
  • আনন্দ | 2600:1002:b057:dfdf:5dac:50fd:8a77:***:*** | ০৪ মার্চ ২০২৩ ২১:১৩516981
  • এই নানা রকম আনন্দের প্রকৃতি কি এক? এর বেশির ভাগই তো সুখ! সব কিছুকে গোল গোল এক খোপে ফেল্লে হবে কি? 
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | ০৫ মার্চ ২০২৩ ০০:১৯516987
  • বেশ বড় ধরণের জার্নি হল একটা। বৌদ্ধের দুঃখকেন্দ্রিক সত্যগুলো ...জানা হল। 
  • Ranjan Roy | ০৫ মার্চ ২০২৩ ১৪:০০517005
  • বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে--এটা ভালো কথা। 
    আমার মত গোলা পাঠকের চোখে এটি চিন্তা ভাবনার একটি অত্যন্ত সুলিখিত প্রকাশ।
    মলয় বাবুর আগের সবগুলো প্রবন্ধই পড়েছি।
    এই লেখাটিই সবচেয়ে ভালো লাগল, কারণ বিভিন্ন দার্শনিক স্কুল নিয়ে চর্বিতচর্বণের বদলে কিছু মৌলিক চিন্তা রয়েছে। আমরা একমত হই বা না হই, ভাবনার খোরাক পেলাম। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন