এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  অপার বাংলা

  • আজ বাংলার প্রথম কম্পিউটার লিখন সফ্টওয়্যার শহীদলিপির জন্মদিন 

    Suchetana Mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    অপার বাংলা | ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ | ৫৬৫ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • এই যে এখন আমি কেবল আঙুলগুলো ছুঁইয়ে বাংলা হরফে আমার মুঠোফোনে গড়গড়িয়ে লিখছি বা আপনারা সবাই আপনাদের ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ট্যাব বা মুঠোফোনে বাংলা ফন্টে দিবারাত্র মনের আশ মিটিয়ে যা যা… যা কিছু লিখে চলেছেন, তার শুরুটা কে কোথায় কবে কেমনভাবে করেছিলেন, সে সব খানিক বিস্তারে ফিরে দেখার জন্যই আজকের এই লেখা!
    …….
    আমাদের পড়শী বাংলাদেশের কিংবদন্তি কম্পিউটার প্রযুক্তিবিদ সাইফুদ্দাহার শহীদ ছিলেন কম্পিউটারে পৃথিবীর প্রথমতম বাংলা লিখন সফটওয়্যার 'শহীদলিপি'র উদ্ভাবক। পেশায় যন্ত্রকৌশলী হলেও সাইফুদ্দাহার বাংলাদেশের বেক্সিমকো কম্পিউটার কোম্পানিতে চাকরিরত অবস্থায় ১৯৮৩ সালের দিকে তাদের কম্পিউটার সিস্টেমের দায়িত্বে ছিলেন। তখন থেকেই তিনি বাংলা কম্পিউটিংয়ের উপর কাজকর্ম শুরু করেছিলেন। সাইফুদ্দাহার শহীদ নিজেকে যে নামে পরিচিত করতে পছন্দ করতেন, সেই ‘সাইফ শহীদ’ নামেই এ লেখায় পরিচায়িত হবেন তিনি।

    ১৯৬৫তে বাংলা কি-বোর্ডের ধারণাটি প্রথম ভাবেন এবং বাস্তবায়িত করেন সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের শহীদ মুনীর চৌধুরী নামের আরেক বরেণ্য প্রযুক্তিবিদ। তাঁর ‘মুনীর’ কি-বোর্ড আসলে ছিল টাইপ রাইটারের জন্য তৈরী করা একটি যান্ত্রিক কোয়ার্টি কি-বোর্ড লে-আউট। কিন্তু কম্পিউটারের জন্য তো শুধুমাত্র একটা লে-আউট হলেই হয় না! সঙ্গে তার প্রয়োজন একটা সফটওয়্যার বা মূল প্রোগ্রামিং, যা এই লে-আউটটিকে কম্পিউটারের বোধগম্য ভাষায় রূপান্তর করবে আর প্রয়োজন এমন এক ‘ফন্ট’-এর, যা বাংলা লেখাকে কম্পিউটারের মনিটরে দেখাবে।  

    মুনীর কি-বোর্ডের কার্যপদ্ধতি ছিল ভীষণ জটিল। যুক্তাক্ষর লেখার ক্ষেত্রেও তাতে ছিল নানা অসুবিধা। মাতৃভাষার লিখনকে “যন্ত্রের কারনে বিকৃত” হতে দেখে কষ্ট পাচ্ছিলেন সাইফ শহীদ।  ফলে কম্পিউটারের সাহায্যে হাতে লেখা ভাষার মতো নিখুঁত করে বাংলা লেখার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি । ১৯৮০র দশকে কম্পিউটারের দাম যেমন ছিল আকাশ ছোঁয়া, তেমন সাধারণ মানুষেরও মধ্যেও কম্পিউটার সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা ছিল না। কিন্তু প্রশাসনিক আর বানিজ্যিক কাজকর্মের ক্ষেত্রে একটি সহজবোধ্য বাংলা সফটওয়্যার আর সোজাসাপ্টা বাংলা ফন্টের প্রয়োজন দিনে দিনে বাড়ছিল সরকারি আর বেসরকারি স্তরে।

    যেহেতু কম্পিউটার যন্ত্রের সঙ্গে আম আদমির সম্পর্ক ছিল না, তাই সাইফ শহীদ বেশ জানতেন যে লেখার জন্য নতুন বাংলা ফন্ট তৈরি করলেও তা মোটে ব্যবসা সফল হবে না! তবু শুধুমাত্র আপন ভাষায়, আপন হরফে সেকালের আধুনিকতম যন্ত্র কম্পিউটারে কিছু লেখার আকুতিতে কাউকে কিছু না জানিয়ে ১৯৮৩তে একক উদ্যোগ আর আর্থিক ব্যয়ে প্রথমতম বাংলা ফন্ট তৈরির প্রস্তুতি শুরু করলেন তিনি। তবে জানেন কী, কোথায় সাইফ শহীদ শুরু করেছিলেন এই কাজ? না, প্রযুক্তিবিদদের স্বর্গ মার্কিন মুলুক, ইউরোপ বা জাপানে নয়, বরং এই কাজ তিনি শুরু করেছিলেন, আমাদের পাশের বাড়িতেই, ৮০র দশকের সদ্যজাত 'অনুন্নত' বাংলাদেশে! 

    ১৯৮৩-১৯৮৫ পর্যন্ত দু’বছর বাংলা ফন্ট উদ্ভাবনের কাজে সাইফ শহীদকে সর্বতোভাবে সহায়তা করেছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের কয়েকজন সমমনস্ক মাতৃভাষাপ্রেমী কম্পিউটার বিজ্ঞানী এবং ম্যাকিনটশ কর্পোরেশন। তিনি ও তাঁর সহযোগী গবেষকদের নিরলস গবেষণা আর পরিশ্রম আর ম্যাকিনটশ কর্পোরেশনের জরুরি প্রযুক্তিগত সাহায্যের ফলে শেষপর্যন্ত ১৯৮৪র মধ্যেই ম্যাক কম্পিউটারের জন্য কি-বোর্ড লেআউট ‘শহীদ লিপি’ তৈরি করে ফেলেন সাইফ শহীদ। ১৯৮৫’র ২৫ জানুয়ারির এক শীতল দিনে (সম্ভবত সেদিন ছিল তাঁর জন্মদিনও) দু’বছরের অনলস শ্রমে নির্মিত ‘শহীদ লিপি’ সফটওয়্যার এবং ‘যশোর’ ফন্টের যুগ্ম ব্যবহারের মাধ্যমে ম্যাকিনটশ কম্পিউটারের কি-বোর্ডে বাংলা হরফ টাইপ করে আর ম্যাকেরই ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারে প্রিন্ট করে কম্পিউটারে লেখা পৃথিবীর প্রথম বাংলা চিঠিখানিকে ‘সফট’ থেকে ‘হার্ড’ রূপে বদলে ফেলেন সাইফ শহীদ! যেহেতু তখনও ইন্টারনেটের ব্যবহার প্রচলিত হয়নি তাই এই ‘প্রিন্ট আউট’ করা চিঠিটি তাঁকে ঢাকায় তাঁর ইংরেজি পড়তে না পারা মায়ের কাছে ডাকযোগে মায়ের ঠিকানায় পাঠাতে হয়েছিল!

    নিজের কলেজ, ক্যাডেট কলেজের ব্লগে 
    সাইফ শহীদ বিস্তারিতভাবে ‘শহীদ লিপির ইতিহাস’ লিখেছিলেন ২০১০এর মে-জুন মাসে।
    নিজের উদ্ভাবিত সফটওয়্যারটির নাম তিনি ‘শহীদলিপি’ কেন রেখেছিলেন, সে সম্পর্কে সেখানে সাইফ শহীদ লেখেন, “শেষ পর্যন্ত শহীদ দিবসের প্রায় একমাস আগেই আমার প্রথম শব্দলিপি তৈরী হয়ে গেল।…ঠিক করলাম মাকে প্রথমে একটা চিঠি লিখে আমার যাত্রা শুরু করবো। দিনটি ছিল ২৫শে জানুয়ারী, ১৯৮৫ – দিনটি মনে রাখার বিশেষ কারণ হচ্ছে, কাকতালীয় ভাবে ঐ দিনটি আমার জন্মদিনও ছিল। চিঠিটা এ্যাপেলের ডট-মেট্রিক্স প্রিন্টারে প্রিন্ট করে সেদিনই ডাকে পাঠালাম মাকে।…১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ – এ চার বছর যখন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র – তখন প্রতিটি শহীদ দিবসে শহীদ মিনারে যেতাম প্রভাত ফেরীতে যোগ দিয়ে। শেষের বছরগুলোতে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার কারণে আরও ব্যস্ততায় কাটতো ওই দিনটি। ফলে ১৯৮৫ সালে যখন লন্ডন থেকে কম্পিউটারে প্রথম বাংলায় চিঠি লিখে পাঠালাম ঢাকাতে আমার মা’কে, তখন একটা নামই শুধু মনে এসেছিল – শহীদলিপি।”

    এতক্ষণে পাঠক নিশ্চিত বুঝে গেছেন যে, আজকের দিনেই ঠিক ৩৯বছর আগেকার এক ১৯৮৫’র ২৫ জানুয়ারিতে মা’কে লেখা দূরপ্রবাসী সন্তানের একটি চিঠির মধ্য দিয়ে চিরকালের মতো কম্পিউটারে বাংলা ভাষা লেখার সূত্রপাত হয়েছিল। বাংলা তথা বাঙালির ইতিহাসের এই যুগান্তকারী ঘটনাটি তথা তার প্রচারবিমুখ উদ্ভাবক সাইফুদ্দাহার শহীদ ও তাঁর উদ্ভাবন প্রক্রিয়াকে একালের ‘টেক স্যাভি’ বাঙালির কাছে পরিচিত করে তোলার লক্ষ্যে গত কয়েকবছর ধরে ওপার বাংলার কিছু অগ্রগণ্য বাংলা ব্লগ ২৫ জানুয়ারি দিনটিকে “কম্পিউটারে বাংলাভাষা প্রচলন দিবস'' হিসেবে সাড়ম্বরে পালন করে চলেছেন।

    সাইফ শহীদ আর তাঁর গবেষক দল ‘শহীদ লিপি’ তৈরির পাশাপাশি কি-বোর্ডে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় কিন্তু সহজতর আরও কিছু লিখন সফটওয়্যার এবং যশোর ছাড়া আরও কয়েকটি ট্রু-টাইপ বাংলা ফন্ট; যেমন ‘ঢাকা’, ‘ফরিদপুর’, ‘ভোলা’, ‘লালমনিহাট’, ‘মেহেরপুর’, ‘জয়পুরহাট’, ‘চিটাগং’, ‘সিলেট’ ইত্যাদিও তৈরি করেছিলেন। শহীদ লিপি’র প্রথম ভার্সনটি করা হয়েছিল গ্রাফিক্স নির্ভর অ্যাপলের ম্যাকিনটশ কম্পিউটারের জন্য। প্রত্যাশিতভাবে বৃহত্তর চাহিদার অনুপস্থিতির কারনে শহীদলিপি সফটওয়্যার বাজারজাত হওয়ার পরেও ব্যবসাসফল হয়নি। যদিও উদ্ভাবনের পর পরই ‘শহীদলিপি’ সফটওয়্যারটিকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট এবং সমকালীন বিভিন্ন ম্যাগাজিন আর সংবাদপত্র তাদের রোজকার কাজে একচেটিয়াভাবে ব্যবহার করতে শুরু করে। পরবর্তীতে উইন্ডোজের জন্যও শহীদ লিপির একটি ভার্সন নির্মাণ করে বাজারজাত করেছিলেন সাইফ শহীদ। 

    বছর দুয়েক বিলেতবাসের পর বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে ইনফরমেশন টেকনোলজির অসীম সম্ভাবনাময় আগামী দুনিয়ার জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন দেশপ্রেমিক বাঙালি কম্পিউটার বিজ্ঞানী সাইফ শহীদ। ফেরার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ন্যাশনাল কম্পিউটার্স নামক সংস্থাও গড়ে তোলেন এই লক্ষ্যে। তবে নিখাদ আন্তরিকতা সত্ত্বেও তাঁর প্ৰচেষ্টাগুলির সামনে কেবলই আসছিল একের পর এক বাধা! কখনও সরকারি তরফের দীর্ঘসূত্রিতা আর রক্ষণশীলতা, কখনও বা অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে আসা অসহযোগিতা আর অযৌক্তিক সমালোচনায় ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের নানা ওঠাপড়াও! শেষ পর্যন্ত ৯০এর দশকের গোড়ায় দেশ ছেড়ে তিনি স্থায়ীভাবে সপরিবারে মার্কিন মুলুকে চলে যান। আর কখনও নিজের প্রাণের প্রকল্প শহীদলিপিকে আপডেট করেন নি সাইফ শহীদ। ফলে সাইফ শহীদের দেশত্যাগের সঙ্গেই শহীদলিপির অনন্য অভিযাত্রা থেমে গেছিল চিরতরে।

    এরপর যদিও আরও উন্নত, আরও দ্রুতগামী বাংলা লিখন সফ্টওয়্যার আর কি- বোর্ডের সৃজনে  এগিয়ে আসতে থাকেন পরবর্তী প্রজন্মের প্রকৌশলীরা। সাংবাদিক মোস্তফা জব্বারের তৈরি 'বিজয়' কি-বোর্ড ছিল বাংলা ভাষার প্রথম ব্যবসা সফল কম্পিউটার হরফ, যা কম্পিউটার ব্যবহারকারী আমজনতার কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ১৯৯০এর দশকে। ২০০৩ সালে আমাদের মাতৃভাষাকে আরও “উন্মুক্ত” করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হল কিংবদন্তি 'অভ্র' কি-বোর্ড! কম্পিউটারে বাংলা হরফের ব্যবহারকে যুগপৎ সহজতর ও উন্নততর করে তোলার প্রয়াস এখনও অনবরত চলছে নানা জায়গায়। সেই সূত্র ধরেই পার্সোনাল কম্পিউটারের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে এই মুঠোফোনের যুগ পর্যন্ত সময়ের সঙ্গে নানা নামে আর রূপে। সোনার বাংলা, বর্ণ, নিকষ, রিদমিক,পার্বতী ইত্যাদি আরও আরও সফ্টওয়্যার আর ফন্টের নাম জুড়েই চলেছে বাংলা কম্পিউটার লিখনের ইতিহাসে। সাইফ শহীদ নিজেও যে কতখানি আগ্রহী ছিলেন বাংলা লিখন সফ্টওয়্যার ও ফন্ট সংক্রান্ত নতুন প্রজন্মের কাজগুলি সম্পর্কে, তা তাঁর ব্লগের লেখাগুলি পড়লে বোঝা যায়!
    ……..
    তবু, নতুনের সমস্ত আগমনের মধ্যেও প্রথম বাংলা কম্পিউটার লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবক সাইফ শহীদের কাছে আপামর বাংলাভাষীর ঋণ কোনদিনও ফুরানোর নয়! আদ্যন্ত প্রচারবিমুখ এই গবেষক মানুষটি অনেক কাল ধরেই আবছা হয়ে গেছিলেন বাঙালির স্বল্পায়ু স্মৃতি থেকে। গত ২০২১এর ৯জানুয়ারি মার্কিন মুলুকে ৭৪ বছর বয়সে প্রয়াত হওয়ার পর সাইফ শহীদের উদ্যম, সৃজনশীলতা, সাহস, শ্রম, সাফল্য আর হতাশার কাহিনীগুলি ওপার বাংলার গণমাধ্যমগুলিতে নতুন করে ফিরে এলেও এ বঙ্গে তিনি অনুচ্চারিত থেকে গেছেন বরাবরের মতো! যদিও স্বীকৃতি পাওয়া বা না পাওয়ার বিষয়গুলিকে তাঁর উচ্চতার কাছে সর্বদাই খাটো লাগে, কারন মৃত্যুর অনেক আগেই তিনি অবিনশ্বর হয়ে গেছিলেন কম্পিউটার আর মুঠোফোন ব্যবহারকারী সমস্ত বাঙালির আঙুলের নিয়ত চলনে! ২৫ জানুয়ারী, আজ ‘শহীদলিপি’ আর তার অনন্য লিপিকারের জন্মদিন। “বর্ণ সৈনিক” সাইফ শহীদের জন্য মুঠোফোনে বাংলা লিখে চলা এক তুচ্ছ বাঙালির পক্ষ থেকে আজ রাখা রইল অশেষ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা!
    ……..

    ক্যাডেট কলেজ ব্লগ এবং সচলায়তন ব্লগের জন্য ২০১০ এর মে-জুন মাসে সাইফুদ্দাহার শহীদ ৬টি পর্বে ‘শহীদলিপির ইতিহাস’ নামক একটি আংশিক আত্মকথা লিখেছিলেন। নিচে সেই অসামান্য আত্মকথাটির কিছু অংশ অপরিবর্তিত বানান সমেত উদ্ধৃত করা হল। যা থেকে হয়ত অধুনা প্রায় বিস্মৃত এই মহান উদ্ভাবক আর তাঁর উদ্ভাবন প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে পাঠকদের একটি স্পষ্ট ধারণা তৈরি হবে।

    "……যশোরে আমার বাবার একটি প্রিটিং প্রেস ছিল এবং আমি সখ করে সেখানে কম্পোজ করা, মেসিন চালানো, ইত্যাদি শিখেছিলাম। এর ফলে অক্ষরের স্বরূপ যাই হোক, সহজে পড়তে পারতাম আমি।….এছাড়া ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময় বাংলার উপর ভিত্তি করে আমি আমার নিজের ব্যবহারের জন্যে এক ধরনের সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে ডায়েরী লিখতাম, যাতে অন্যরা কেউ আমার ডায়েরী পড়তে না পারে। এর ফলে আমি বেশ সহজেই যে কোন চিহ্ন ব্যবহার করা বাংলা সহজেই পড়তে পারতাম। আমার এই গুনটা পরে বিশেষ কাজে এসেছে যখন ম্যাকের সম্পূর্ণ অপারেটিং সিসটেম বাংলায় রূপান্তরিত করেছি। অন্য কাউকে দেখানোর আগে আমার এই কাজটি অ্যাপেল কম্পুউটারকে জানিয়েছি এবং তারা বাংলায় রূপান্তরিত সিসটেম দেখে আপত্তি তো করেইনি, বরং উৎসাহিত করেছে আমাকে।….

    ….এ ব্যাপারে বেক্সিমকোতে আমার সহকর্মী আমিনুল হককে কাজে লাগিয়ে দিলাম। একটা মোটা রেজিট্রি খাতাতে আমরা বাংলা অক্ষরের তালিকা লিপিবদ্ধ করতে থাকলাম। প্রায় ৭০০ অক্ষরের তালিকা হয়ে গেল। এর পর দেখি নতুন অক্ষর সহজে খুঁজে পাচ্ছি না। ঘোষনা করে দিলাম আমাদের তালিকার বাইরে বিদ্যমান কোন নতুন যুক্তাক্ষরের খোঁজ দিতে পারলে ১০ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। আরও নতুন কিছু যুক্তাক্ষরের খোজ পেলাম এভাবে। তারপর পুরস্কারের অঙ্ক বাড়িয়ে ২০ টাকা করলাম। এভাবে শেষ পর্যন্ত প্রায় ১২০০ যুক্তাক্ষরের তালিকা প্রস্তুত হল। এই তালিকা অনুযায়ী স্বরবর্ণ, ব্যাঞ্জনবর্ণ, যুক্তাক্ষরগুলি ও স্বর-চিহ্ন গুলি প্লট করা শুরু করলো আশরাফ। তার বন্ধু রশীদ এবং আলমের সহযোগিতা পেয়েছিল সে এই কাজে। তারা সবাই আর্ট কলেজের ছাত্র ছিল এক সময়।….

    …..প্রথমে আমার ইচ্ছা ছিল বাংলা টাইপ রাইটারকে ভিত্তি হিসাবে দাঁড় করিয়ে বাংলা কম্পুউটারের কী-বোর্ড তৈরী করবো। কিন্তু অচিরেই অনুধাবন করলাম সেটা করলে বোকামী করা হবে।….অক্ষরের ব্যবহারের উপর ফ্রিকোয়েন্সি এনালাইসিস করে যে জিনিসটা নজরে এলো সেটা হচ্ছে বাংলাতে সব চাইতে বেশী ব্যবহৃত প্রথম ২৪টি অক্ষর।

    ….অনেক চিন্তা করে নতুন আকারের বড় করে বাংলা কী-বোর্ড বানাবার চাইতে প্রচলিত ইংরেজী কী-বোর্ডকে বাংলা কী-বোর্ডে রূপান্তরিত করাই বেশী যুক্তিযুক্ত মনে হলো। বাংলা বর্ণমালায় মূল অক্ষরের সংখ্যা ৪৮ টি। এর মধ্যে ব্যঞ্জনবর্ণে ৩৬টি (বা ৪০টি) অক্ষর এবং স্বরবর্ণে ১২টি (অথবা ১১ টি)। সুতরাং কী-বোর্ডের একটি কী দিয়ে যদি দু’টি অক্ষর প্রকাশ করা যায় তা হলে ইংরেজী কী-বোর্ডের অক্ষরের ২৬টি কীর মধ্যে মাত্র ২৪টি কী ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বাংলা বর্ণমালা প্রকাশ করা সম্ভব। আমার প্রথম প্রচেষ্টা এভাবেই ছিল। এই পদ্ধতির সুবিধা হলো যে যুক্তাক্ষর তৈরীর কাজটি কম্পুউটার নিজে থেকে করতো।….

    ….শেষ পর্যন্ত বাংলা অক্ষরের ৩টি সাইজের ফন্ট তৈরী সম্পূর্ণ হলো। এদের নাম দিলাম – যশোর, ঢাকা ও চট্টগ্রাম। এই তিন স্থানেই আমি আমার শিক্ষা জীবন অতিবাহিত করেছি। ….একটি ইংরেজী ফন্টও রাখলাম যাতে প্রয়োজনে বাংলার মধ্যে ইংরেজী শব্দ লেখা যায়।

    …..এর পর ম্যাক অপারেটিং সিসটেমের ফাইলগুলি খুঁজে খুঁজে বিভিন্ন মেনু আইটেমের ইংরেজী নামগুলি বদলিয়ে বাংলা নাম বসালাম। নিজের সীমাবদ্ধ জ্ঞানে যা বুঝলাম, সেই ভাবে ইংরেজীর বাংলা প্রতিশব্দ বানিয়ে চললাম। ফাইল, এডিট, ফাইন্ড, ফরম্যাট, ফন্ট, টাইপ -এর বদলে নথি, সম্পাদনা, অনুসন্ধান, কাঠামো, বর্ণমালা ও ধরন লিখলাম। কাট, কপি ও পেস্ট -এর স্থলে কর্তন, প্রতিলিপি ও সংযোজন লিখলাম।….

    ….অনেকটা খেলার ছলে এ্যাপেলের ছবিটির জায়গায় বাংলাদেশের ছোট একটি ম্যাপ বানালাম ফন্ট এডিটরের সাহায্যে। সিসটেম ফাইলটা সেইভ করলাম আগের ফাইলের স্থানে। তারপর যখন আবার কম্পুউটার চালু করলাম তখন দেখলাম – কি আর্শ্চয্য, এ্যাপেলের প্রতিকের জায়গায় জ্বলজ্বল করছে আমার প্রিয় বাংলাদেশের ছোট মানচিত্রটি। অতটা সুন্দর বা নিখুত হয়তো হয়নি মানচিত্রটি, ....তবুও এই খারাপ হাতের লেখায় আকা বাংলাদেশের মানচিত্রটির দিয়ে তাকিয়ে থাকলাম অনেকক্ষণ ধরে। এই মানচিত্রটি পাবার জন্যে কতই না ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে একটি জাতিকে। অদ্ভুত এক ধরণের ভাল লাগায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল মন।…"

    বেক্সিমকো কম্পুউটারস-এ তখন আমরা ৬০ জনের বেশী কাজ করি। তখন এটি ছিল বাংলাদেশের সর্ব-বৃহৎ কম্পুউটার কোম্পানী। আমার উদ্দেশ্য ছিল, শুধু দেশের ভিতরে নয়, দেশের বাইরে ও আমরা আমাদের কাজের পরিধি বিস্তার করবো। বিলাতে থাকার সময়ই আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে পৃথিবী জুড়ে এই আই, টি সেকটরে উপযুক্ত দক্ষ জনবলের অনেক অভাব। বাংলাদেশে যদি আমরা নিজেদেরকে উপযুক্ত করে তুলতে পারি, তা হলে সমগ্র পৃথিবী উন্মুক্ত হয়ে যাবে আমাদের জন্যে। ততদিনে ডজন খানেক কোম্পানী কম্পুউটার ব্যবসায়ে ভালভাবে নেমে পড়েছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের সাথে দেন-দরবার করার জন্যে আমরা কয়েকটা কোম্পানী এক সাথে হয়ে বাংলাদেশ কম্পুউটার সমিতি নামে একটা প্রতিষ্ঠান গঠন করলাম। এই প্রতিষ্ঠানের একজন ফাউন্ডার সহ-সভাপতি ছিলাম আমি। বেশ কিছু তদবিরের পর শেষ পর্যন্ত ‘কম্পুউটারে বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন ও ষ্টান্ডার্ডাইজেশন কমিটি’ নামে একটি কমিটি সরকার থেকে গঠন করা হল। এই কমিটির অর্ধেক সদস্য এলেন দেশের বিভিন্ন কম্পুউটার কোম্পনীতে যারা বাংলা ভাষা নিয়ে কাজ করছে তাদের মধ্যে থেকে, আর বাকী অর্ধেক এলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমী জাতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে, যারা ভাষার উপর বিশেষজ্ঞ। আমিও ছিলাম এই কমিটিতে। দুর্ভাগ্য বসত, এই কমিটির কাজ চললো খুবই ধীর গতীতে। কমিটির সভাতে দেখা যেতো, যারা ভাষাবিদ তারা সময় ব্যয় করছেন তাদের কম্পুউটার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করতে, অন্য দিকে কিছু কিছু ‘তথা-কথিত টেকীরা’ বাংলা ভাষার উপর তাদের জ্ঞান জাহির করে কালক্ষেপণ করছেন।

    অবশ্য ব্যাপারটা এতো সহজও ছিল না। বাংলা ভাষার একটি ঐতিহ্যবান অতীত রয়েছে। এমন কিছু করাটা ঠিক হতো না যাতে করে সেই অতীতের সাথে আমাদের সংযোগ ছিন্ন হয়ে যায় এবং অতীতের লেখা সাহিত্য পড়তে নতুন প্রজন্মের অসুবিধা হয়।

    এছাড়া রাজনীতির প্রশ্ন ছিল। পশ্চিম-বাংলার বাংলার প্রমিত রূপ অনেকটা হিন্দীকে অনুসরণ করে করা হয়েছে। আমরা কি বৃহত্তর স্বার্থে সেটাই অনুসরণ করবো, না পূর্ব-পাকিস্তানী ভাব ধারা বজায় রাখবো বাংলাদেশে?

    যেহেতু তখনও বাংলা ভাষার কোন প্রমিত রূপ স্থির করা হয়নি, বিভিন্ন ডেভেলপাররা তাদের নিজেদের চিন্তা ও যুক্তি অনুসারে বিভিন্ন কী-বোর্ড লে-আউট এবং বিভিন্ন ক্যারেকটার কোডিং ব্যবহার শুরু করে দিল। আমার ইচ্ছা ছিলো কিছু ডাটাবেসের কাজ করার এবং বাংলা স্পেল চেকার জাতীয় কিছু টুলস তৈরী করার। তবে আমি তখন প্রমিত রূপ ঠিক হবার আশায় আপাততঃ অপেক্ষা করতে মনস্ত করলাম।

    আজ প্রায় ২৫ বছর পরে, আমি এখনো জানি না আমার সেই অপেক্ষার দিন সত্যিকার ভাবে শেষ হয়েছে কিনা।”
    ……

    তথ্য সূত্র: 
    ১) ৬টি পর্বে লিখিত শহীদলিপির ইতিহাস : সাইফ শহীদ, সচলায়তন ব্লগ( প্রথম ৩টি পর্ব) ক্যাডেট কলেজ ব্লগ( ৬টি পর্বের সম্পূর্ণ ইতিহাস), ১৯ মে ২০১০- ১৬ জুন ২০১০
    ২) কম্পিউটারে বাংলা লেখার ইতিহাস : আহমেদ ইসমাইল হোসেন / মিডিয়াম.কম
    ৩) সাইফ শহীদের কাজ সম্পর্কে লিখিত বাংলাদেশের আরও নানা আর্টিকল গুগল খুঁজলে সহজেই পাওয়া যায়। 
    ৪) এই লেখার সঙ্গের ছবিগুলি শহীদলিপির ইতিহাস ব্লগ থেকে নেওয়া হয়েছে এবং সাইফ শহীদের ছবিটি নেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট থেকে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • অপার বাংলা | ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ | ৫৬৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন