জীবনের সবচেয়ে ফান্ডামেন্টাল কথা হল; বাঁচতে হলে লড়তে হবে, লড়াই করেই বাঁচতে হবে... ... ...
১৯৭৭ সাল। সকাল সকাল ইন্দোরের মহারানী ঊষারাজে ট্রাস্ট ক্রিকেট গ্রাউন্ড( অধুনা হোলকার স্টেডিয়াম)-এ ইন্ডিয়া ট্যুরে আসা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব( এম.সি.সি) আর বম্বে দলের মধ্যে শুরু হয়েছে ক্রিকেট ম্যাচ। রেডিওয় খেলার ধারাবিবরনী শোনার জন্য শত ব্যস্ততার মধ্যেও কান পেয়েছেন শহরের জনতা। কিন্তু এ কী! চেনা সব পুরুষ কন্ঠের পাশাপাশি খেলার প্রতিটি বল- প্রতিটি ব্যাটিং স্ট্রোক আর ফিল্ডিংয়ের প্রতিটি মুভমেন্টের ধারাভাষ্য দিচ্ছেন এক মহিলা কন্ঠ! শ্রোতারা অবাক হয়ে জানলেন কখনও হিন্দি আর কখনও বা চোস্ত ইংরেজিতে খেলার এমন অনায়াস ধারাবিবরণী দিয়ে চলা এই মহিলা ধারাভাষ্যকারের নাম চন্দ্রা নাইডু। ... ...
“ ওঃ নো! ডেমন মীনা আগেইন! ও যাতে এই ম্যাচে অন্তত খেলতে না পারে সে ব্যবস্থা আমাদের করতেই হবে…” ১৯৫৪ সালের টেরেন্স শোন ট্রফির দ্বিতীয় ম্যাচ খেলার আগে বিপক্ষের রোশনারা ক্লাবের মহিলা টিমের ক্রিকেটারদের তালিকায় থাকা ফাস্ট বোলারটির নাম দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসলেন ব্রিটিশ হাই কমিশন ওমেন্স ক্রিকেট টিমের মেমসাহেব খেলোয়াড়রা! দ্রুত শুরু হল সেই পঞ্চদশী কিশোরীকে বাদ দেওয়ার জন্য নানা চেষ্টা-অপচেষ্টা! ... ...
১৬ জুন, সকাল ৭.৩০! স্কুলের প্রিন্সিপাল এবং বাকি শিক্ষকদের কাছ থেকে আশীর্বাদ আর শুভেচ্ছা নিয়ে মিছিল শুরু করল নালেডি হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা! তারা যাবে অরল্যান্ডো স্টেডিয়ামে। এসেম্বলিতে সমবেত মিছিলে অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীদের শান্তিপূর্ণ এবং অহিংস পথে থাকার জন্য কিছুক্ষণ আগেই সতর্ক করে দিয়েছে তাদের স্কুলের ছাত্র তথা অ্যাকশন কমিটির প্রথম চেয়ারপার্সন টেপেলো মোটোপেনিয়েন। সকাল ৮টা নাগাদ অরল্যান্ডো অভিমুখী নালেডি স্কুলের মিছিলে যোগ দিল মরিস আইজ্যাকসন হাই স্কুল আর ফেফেনি জুনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের হাজার দুয়েক ছাত্রছাত্রীও! অনেক ছাত্রছাত্রীই জানত না যে ১৬জুন মিছিল হবে, কিন্তু স্কুলে এসে যখন তারা জানতে পারে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিছিলে যোগ দিয়েছিল তারা। আর যারা মিছিলের কথা জানত, তারা? স্কুলের একমাত্র ইউনিফর্মটা কেচে ধুয়ে ইস্তিরি করে পরে আর ধুলোমলিন জুতোজোড়া পালিশ করে যথাসম্ভব ধোপদুরস্ত হয়ে মিছিলে হাঁটতে এসেছিল সেই সব উজ্জ্বল কিশোর কিশোরীরা! ... ...
কুপার কোম্পানির টার্গেট ক্রেতা ছিলেন ব্যাচেলর গ্রাহকরা। সমকালীন নানা পত্রপত্রিকায় পাওয়া যায় কুপার কোম্পানির তাদের নবজাতক পণ্যটির জন্য বানানো নানা মজাদার বিজ্ঞাপন, যাঁর একটির এক ছবিতে লং জনস পরিহিত ছিন্নবোতাম বেচারামুখ এক উদাস ব্যাচেলর আর অন্যটিতে বোতাম আর সেফটিপিনের ঝঞ্ঝাটবিহীন নতুন কুপার অন্তর্বাসে এক ঝকঝকে ব্যাচেলর। এর সঙ্গে লেখা ছিল, ‘যে সমস্ত যুবক অবিবাহিত এবং সিঙ্গেল, যারা জামার বোতাম ছিঁড়ে গেলে সেলাই করে নিতে পারবেন না, এ জামা তাদের জন্যই!’ চলুন, একটু ফিরে দেখা যাক আট থেকে আশি, কচি মেয়ে থেকে বুড়ো দাদু সক্কলকে অন্যতম প্রিয় পোশাক টি-শার্টের ইতিহাসকে! ... ...
“শেষ পর্যন্ত শহীদ দিবসের প্রায় একমাস আগেই আমার প্রথম শব্দলিপি তৈরী হয়ে গেল।…ঠিক করলাম মাকে প্রথমে একটা চিঠি লিখে আমার যাত্রা শুরু করবো। দিনটি ছিল ২৫শে জানুয়ারী, ১৯৮৫ – দিনটি মনে রাখার বিশেষ কারণ হচ্ছে, কাকতালীয় ভাবে ঐ দিনটি আমার জন্মদিনও ছিল। চিঠিটা এ্যাপেলের ডট-মেট্রিক্স প্রিন্টারে প্রিন্ট করে সেদিনই ডাকে পাঠালাম মাকে।…১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ – এ চার বছর যখন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র – তখন প্রতিটি শহীদ দিবসে শহীদ মিনারে যেতাম প্রভাত ফেরীতে যোগ দিয়ে। শেষের বছরগুলোতে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার কারণে আরও ব্যস্ততায় কাটতো ওই দিনটি। ফলে ১৯৮৫ সালে যখন লন্ডন থেকে কম্পিউটারে প্রথম বাংলায় চিঠি লিখে পাঠালাম ঢাকাতে আমার মা’কে, তখন একটা নামই শুধু মনে এসেছিল – শহীদলিপি।” ... ...
ফ্রাঙ্কফুর্টের বাণিজ্যমেলার ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, মোটামুটি ১৪৭৮ সাল থেকে নিজস্ব বইয়ের সম্ভার নিয়ে শরতের সময় ১সপ্তাহের জন্য এই মেলায় আসতে শুরু করেন বই ব্যবসায়ীরা। ছাপানো বইয়ের সেই আদ্যিকালে অবশ্য বই ছাপানো থেকে বিক্রি পর্যন্ত সমস্ত ধাপগুলোর কোন আলাদা কেন্দ্র বা ভাগ বিভাজন হয়নি। তাই নিজস্ব কর্মচারী আর শ্রমিকদের সাহায্যে গোটা প্রক্রিয়াটিকে সামলাতেন ১জন বই মুদ্রকই। অর্থাৎ সেকালে বইয়ের মুদ্রকই হতেন বইয়ের প্রকাশক আর বই বিক্রেতাও। ... ...
"বাবাই পাল এখন মধ্য চল্লিশ! সেই দুগ্গা পুজো, সেই আলোর মালা আর কুয়াশায় মোড়া দশমীর পাড়া, সেই চোখ পাকানো কল্যাণকাকা, সেই দস্যি হেবো.. বা বলা ভালো, নিজের সেই গোটা অমলিন শৈশবটাই এখন অলীক অলৌকিক বলে প্রতীয়মান হয় তার কাছে। দায়দায়িত্ব আর রোজগারপাতির চক্করে পুরুষমানুষের নরমসরম হয়ে রয়ে যাওয়ার জো থাকে নাকি?" ....... পুজোর পরে পুজোর গপ্প! সময় পেলে পড়ে দেখতে পারেন একবার! ... ...
"সাদাকো মাত্র বারো বছর বয়সে মারা গেছিল। নিশ্চয়ই ও আরেকটু খেলতে চেয়েছিল, আরেকটু পড়তে, আরেকটু খেতে, ওর বন্ধুদের সঙ্গে আরেকটু গল্প করতে চেয়েছিল...আরও কত্তো কিছু করতে চেয়েছিল ও! কিন্তু সে সব কিছুর স্বাদ নেওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেছিল ওর জীবন। ইচ্ছেগুলো, স্বপ্নগুলো সত্যি করার সুযোগ পাবে না বলে কত যে কষ্ট হতো সাদাকোর...!" সাদাকো সাসাকির দাদা মাশাহিরো যখন লেখেন এমন কথা লেখেন, তখন তাঁর শব্দের ভাঁজে ভাঁজে দেশকালসময়সীমানা সব পেরিয়ে আবারও কেমন যেন একাকার হয়ে যায় বড়োদের বাঁধিয়ে দেওয়া প্রতিটা অনর্থক যুদ্ধ আর অনন্ত হিংসায় বলি হতে থাকা অগুনতি অগুনতি শৈশব-কৈশোর! আজ ক'ঘন্টা পর আমাদের অনেকেই যখন উৎসবের রাজপথে হাঁটব, সেসময় আগুনে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কিছু দূর এক দেশে বেবাক থেঁতলে যাবে আরও কিছু অমলিন প্রাণ! আজকের এই লেখা অসময়ে ঝরে যাওয়া বা যেতে থাকা পৃথিবীর এমন প্রতিটি প্রাণের জন্য... ... ...
যুদ্ধ হচ্ছে, যুদ্ধ হবেও । আজকাল দু'তরফের সমর্থনে অজস্র যুক্তি-কুযুক্তি-প্রতিযুক্তি শুনতে শুনতে, দেখতে দেখতে সব গুলিয়ে যায়! এলোমেলো মনের ভেতর আজকের নিহত-আহত-ক্ষতিগ্রস্ত প্যালিস্টিনীয় আর ইসরায়েলি শিশুদের আতঙ্ক আর অসহায়তার সঙ্গে কেমন করে যেন একাকার হয়ে যায় কোন ১৯৪৭ এর দেশভাগজনিত দাঙ্গায় সব হারানো শিশুদের কান্না আর অনপনেয় ক্ষতবোধ। ইতিহাস বা রাজনীতির ঠিক-ভুল, ন্যায়-অন্যায়ের সমস্ত হিসেব নিকেশের বাইরে, যুদ্ধ-দাঙ্গা-সন্ত্রাসের ভাগাভাগি ভেঙে, দেশ কাল সময়ের সমস্ত গন্ডি পেরিয়ে অগুনতি-অগুনতি অপাপবিদ্ধ, অনপরাধ শিশুর দেহমনের অন্তহীন যাতনার অন্ধকারই জীবনের বুকে মৃত্যুর মতো একমাত্রতম সত্যি হয়ে জেগে থাকে। আর কিচ্ছু নয়।। ... ...