এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  লিঙ্গরাজনীতি  অন্য যৌনতা

  • মানুষের অকুস্হল

    Malay Roychoudhury লেখকের গ্রাহক হোন
    লিঙ্গরাজনীতি | অন্য যৌনতা | ০৮ জুলাই ২০২৩ | ৫৫৯ বার পঠিত
  • 103 | 104 | 105 | 106 | 107 | 110 | 113 | 114 | 119 | 120 | 121 | 123 | 124 | 124 | 125 | 125 | 126 | 127 | 127 | 128 | 129 | 131 | 133 | 134 | 135 | 136 | 138 | 139 | 140 | 141 | 143 | 144 | 145 | 147 | 148 | 149 | 149 | 150 | 151 | 152 | 153 | 154 | 155 | 156 | 157 | 158 | 159 | 160 | 161 | 162 | 163 | 164 | 165 | 167 | 168 | 169 | 170 | 171 | 172 | 173 | 174 | 175 | 176 | 176 | 177 | 178 | 179 | 180 | 181 | 182 | 183 | 184 | 185 | 186 | 187 | 188 | 189 | 190 | 191 | 192 | 192 | 193 | 194 | 195 | 196 | 198 | 199 | 200
    মানুষের অকুস্হল : মলয় রায়চৌধুরী

    এক

    স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে, প্রাথমিক লিঙ্গ নির্ধারণ কঠোরভাবে ক্রোমোসোমাল এবং সাধারণত পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয় না। কিছু প্রজাতি যেমন বিভিন্ন উদ্ভিদ আর মাছের কোনো নির্দিষ্ট লিঙ্গ থাকে না এবং পরিবর্তে জীবনচক্র চলতে থাকে আর জীবনের কোনও পর্যায়ে তারা জিনগত সূত্রের ভিত্তিতে লিঙ্গ পরিবর্তন করে। এটা মৌসম এবং তাপমাত্রার মতো পরিবেশগত কারণগুলির কারণে হতে পারে। কুমির, কিছু কচ্ছপ এবং টুয়তারা সহ সরীসৃপের কিছু প্রজাতির লিঙ্গ তাপমাত্রা দিয়ে নির্ধারিত হয়। এছাড়াও কিছু প্রজাতি রয়েছে যাদের পার্থেনোজেনেসি র কারণে কেবল একটি লিঙ্গ থাকে আর নিষেক ছাড়াই স্ত্রী প্রজনন করার কাজ করে।

    মানুষের সমাজে, শিশু জন্মালেই সবচেয়ে প্রথমে তার মা আর  আত্মীয়রা জানতে চান শিশুটির অকুস্হলের নিদর্শন পুরুষের না নারীর। এক্স এক্স প্যাটার্ন ডিম্বাণুর সমন্বয়ে মেয়ে শিশু আর এক্স ওয়াই প্যাটার্ন থেকে জন্মায় ছেলে শিশু। ভ্রূণের পূর্ণতার স্তরগুলোতে ক্রোমোজোম প্যাটার্নের প্রভাবে ছেলে শিশুর মধ্যে অণ্ডকোষ আর কন্যা শিশুর মধ্য ডিম্বকোষ গড়ে ওঠে। অণ্ডকোষ থেকে নিঃসৃত হয় পুরুষ হরমোন এন্ড্রোজেন আর ডিম্বকোষ থেকে নিঃসৃত হয় এস্ট্রোজেন। 

    ভারতে সব পরিবারই ‘ছেলে’ সন্তান চায়। কন্যাভ্রূণ হত্যা রোধ ও সামগ্রিকভাবে কন্যা সন্তানের সুরক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর স্বপ্নের প্রকল্পের সূচনার জন্য তাই প্রথমেই বেছে নিয়েছিলেন হরিয়ানাকে। আর সে রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর যোগগুরু রামদেবই এবার পুত্রসন্তান লাভের জন্য মহিলাদের মধ্যে 'ওষুধ' বিক্রি করা শুরু করলেন।রামদেবের দিব্য ফার্মেসি এখন জোর কদমে  তাদের আয়ুর্বেদিক ওষুধ ''পুত্রজীবক বীজ'' বিক্রিতে ব্যস্ত। এই ওষুধের সঙ্গেই আর একটি ওষুধ বিক্রি করছে দিব্য ফার্মেসি। নাম 'শিবলিঙ্গ বীজ' যার মধ্যে রয়েছে 'পুত্রজিবা রক্সাবুর্ঘি'। আয়ুর্বেদ মতে এই ওষুধটি নাকি বন্ধ্যাত্ব রোধক এবং কামোদ্দীপক।

    ভ্রূণের গঠনকালে নিষিক্তকরণ ও বিভাজনের ফলে বেশকিছু অস্বাভাবিক প্যাটার্নের সৃষ্টি হয়, যেমন এক্স এক্স ওয়াই বা এক্স ওয়াই ওয়াই। এর ফলে বিভিন্ন গঠনের অবমানব বা হিজড়ে শিশুর জন্ম হয়।মূলত এটি একটি শারীরিক গঠনজনিত সমস্যা যা অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের মতনই কিন্তু প্রতিবন্ধকতার স্থানটি ভিন্ন হওয়াতেই তারা সুস্পষ্টভাবে পুরুষ বা নারী নয়।  ভ্রুনের বিকাশকালে নিষিক্তকরণ ও বিভাজনের ফলে বেশকিছু অস্বাভাবিক প্যাটার্নের সৃষ্টি হয় যেমন XXY অথবা XYY। এর ফলে বিভিন্ন গঠনের হিজড়ে শিশুর জন্ম হয়। হিজড়ে এক ধরনের ইন্টারসেক্স ডিজঅর্ডার (আইএসডি) বা ডিজঅর্ডারস অব সেক্সুয়াল ডেভেলপমেন্ট (ডিএসডি) জাতীয় জন্মগত ত্রুটি। কয়েকটি ইন্টারসেক্স ডিজঅর্ডার হলো : কঞ্জেনিটাল এড্রিনাল হাইপার প্লাসিয়া, অভোটেস্টিকুলার ডিজঅর্ডার অব সেক্স ডেভেলপমেন্ট, টেস্টোস্টারন বায়োসিন্থেসিস ডিফেক্ট, এস্ট্রোজেন ইন্সেসিটিভিটি সিনড্রোম, গোনাডাল ডিসজেনেসিস ইত্যাদি।  

    মূলত ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরিত লিঙ্গ হলো — মানুষ যে জৈবিক লিঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন এরসঙ্গে নিজেকে সনাক্ত করতে পারেন না। শারীরিকভাবে পুরুষ অথবা নারী হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেও এদের মানসিক লিঙ্গবোধ তাদের জৈবিক লিঙ্গের বিপরীত বা এদের লৈঙ্গিক অনুভূতি সুস্পষ্টভাবে নারীসুলভ বা পুরুষসুলভ নয়। কিছু ট্রান্সজেন্ডার এক লিঙ্গ থেকে অন্য লিঙ্গে রূপান্তরিত হতে চিকিৎসার সহায়তা নেয়। এদের ট্রান্সসেক্সচুয়াল বা রূপান্তরকামী বলা হয়। এটা ট্রান্সজেন্ডারদের লৈঙ্গিক পরিচয়ের একটি স্থায়ী সমাধানের অভিব্যক্তি বলা যেতে পারে। তবে হিজড়া এবং ট্রান্সজেন্ডার এক নয়। বিভিন্ন দেশে রূপান্তরিত নারী (ট্রান্সওম্যান) ও রূপান্তরিত পুরুষদের (ট্রান্সমেন) তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছে রূপান্তরিত লিঙ্গের জনগোষ্ঠীরা।

    কিছু ট্রান্সজেন্ডার মানুষ, যদিও সবাই নয়, এমন চিকিৎসা  বেছে নেয় যা তাদের লিঙ্গ পরিচয়ের সাথে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে তাদের দেহকে পালটে ফ্যালে। চিকিত্সায় হরমোন থেরাপি, সার্জারি এবং অন্যান্য শল্যচিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। ট্রান্সজেন্ডার শব্দটা একজন মানুষর রোমান্টিক আর যৌন পছন্দকে বর্ণনা করে না। কারণ লিঙ্গ পরিচয় যৌন অভিযোজনের মতো নয়।  শব্দটি পুরুষ, মহিলা বা উভয় লিঙ্গের সাথে রোমান্টিক বা যৌন সম্পর্কের জন্য একজন ব্যক্তির সহজাত পছন্দ বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। বিষমকামী ("সোজা") লোকেরা বিপরীত লিঙ্গের সদস্যদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। সমকামী মানুষ (গে এবং লেসবিয়ান) একই লিঙ্গের মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়। উভকামী মানুষ নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রতিই আকৃষ্ট হয়। রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তিবর্গ বিপরীতকামী, সমকামী, উভকামী বা নিষ্কামী ইত্যাদি হিসেবে চিহ্নিত হতে পারেন।

    অবমানব বা হিজড়েদের শারীরিক গঠন মূলত তিন ধরণের।
    ১. নারীদের সকল বৈশিষ্ট্য থাকলেও নারী জননাঙ্গ থাকে না,
    ২.পুরুষের সকল বৈশিষ্ট্য থাকলেও পুরুষ জননাঙ্গ থাকে না,
    ৩. উভয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।

    ট্রান্সজেন্ডার,  হার্মাফ্রোডাইট, খোজা, শিখণ্ডী, বৃহন্নলা, উভয় লিঙ্গ ইত্যাদি নাম দেয়া হয় অবমানবদের। অবমানব শব্দটা মানবী (সোমনাথ) বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি। ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, তাঁর পত্রিকার নাম ‘অবমানব’ কেন? ঋতুপর্ণ বলেছিলেন, ‘আপনি কি মনে করেন মানুষগুলো অবমানব?’ তখন মানবী  বললেন, ‘‘দেখুন, আমি যদি ওঁদের ‘মহামানব’ বলি, ওঁরা কি সেই মর্যাদা পাবেন? কখনও পাবেন না। সামাজিক ক্ষেত্রে যে ভাবে ওঁদের দেখা হয়, সেই অর্থেই অবমানব।” হিজড়া শিশুকে পরিণত বয়সে যাওয়ার আগে যদি যথযথ মেডিকেল ট্রিটমেন্ট করা হয় তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাকে সুস্থ করা সম্ভব। কিন্তু যখন বোঝা যায় সে সাধারণ আর দশজনের থেকে আলাদা তখন আসলে অনেক দেরি হয়ে যায়। একইভাবে কোন পুরুষ বা নারীও হিজড়া হতে পারেন। ভারতের বিভিন্ন স্থানে, রূপান্তরিত লিঙ্গের হিজড়ারা আরাভানি, আরুভানি এবং জাগাপ্পা নামেও পরিচিত।

    হিজড়া বলতে বোঝায়
    ১. আন্তঃলিঙ্গ - জন্মগতভাবে দৈহিক বা জিনগত পুরুষ ও নারীর মধ্যবর্তী কোন অবস্থানের ব্যক্তিবর্গ।
    ২. তৃতীয় লিঙ্গ - নারী ও পুরুষ ব্যতিরেকে সকল লিঙ্গের পৃথক একক শ্রেণিবিভাগ।
    ৩. রূপান্তরিত লিঙ্গ - সেসকল ব্যক্তিবর্গ যাদের যৌন পরিচয় বা যৌন অভিব্যক্তি তাদের জন্মগত যৌনতা হতে আলাদা।
    ৪. খোজা - শুক্রাশয় অপসারণকৃত নপুংসক পুরুষ।
    ৫. পুরুষ থেকে নারী রুপান্তরিত বা রূপান্তরকামী নারী।
     
    ট্রান্সজেন্ডার একটি স্ব-প্রযোজ্য, বিস্তৃত শব্দ যা সেই সমস্ত লোকদের বোঝায় যাদের লিঙ্গ পরিচয় ঐতিহ্যগতভাবে জন্মের সময় তাদের আপাত জৈবিক লিঙ্গের সাথে যুক্ত থেকে আলাদা। লিঙ্গ পরিচয় বলতে একজন ব্যক্তির পুরুষ বা মহিলা বা এই বিভাগের মধ্যে বা বাইরের কিছু হওয়ার অভ্যন্তরীণ অনুভূতি বোঝায়। ট্রান্সজেন্ডার শব্দটিও লিঙ্গ অভিব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে। লিঙ্গ অভিব্যক্তি সেই আচরণকে বোঝায় যার মাধ্যমে লোকেরা তাদের লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করে। কিছু আচরণের মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট সর্বনাম ব্যবহার করা, নির্দিষ্ট ধরণের পোশাক পরা এবং একটি নির্দিষ্ট চুলের স্টাইল থাকা। যদিও লিঙ্গ পরিচয় এমন কিছু নয় যা অন্যরা দেখতে পারে, লিঙ্গ অভিব্যক্তি সর্বজনীনভাবে দৃশ্যমান। অনেকে বলেন,ট্রান্সজেন্ডারের কোনো সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞা নেই। আসলে, বিভিন্ন গবেষক বিভিন্ন উপায়ে শব্দটি ব্যবহার করেন।

    যেহেতু ট্রান্সজেন্ডার একটি বিস্তৃত ছাতা শব্দ, এটি বিভিন্ন গোষ্ঠীর লোকদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। এই গোষ্ঠীগুলির মধ্যে এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত যারা বিশ্বাস করে যে তাদের জন্মের সময় তাদের নির্ধারিত লিঙ্গের বিপরীত লিঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। ট্রান্সসেক্সুয়াল ব্যক্তিরা অস্ত্রোপচার বা হরমোন থেরাপির মাধ্যমে শারীরিকভাবে তাদের শরীর পরিবর্তন করতে চাইতে পারেন। অন্যান্য লোকেরা বিপরীত লিঙ্গের সাথে লিঙ্গ-শনাক্ত করে তবে তাদের দেহ পরিবর্তন করতে চায় না। ট্রান্সজেন্ডার ছাতার অধীনে অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে অ্যান্ড্রোজাইনস। এন্ড্রোজাইন হল এমন মানুষ যাদের মধ্যে জৈবিক বা মনস্তাত্ত্বিকভাবে উভয় লিঙ্গের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর বিস্তৃত অর্থে, ট্রান্সজেন্ডার আরও সাম্প্রতিক শব্দ লিঙ্গের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত. এই শব্দটি এমন লোকেদের দ্বারা স্ব-প্রয়োগ করা হয় যারা ট্রান্সজেন্ডার বা যাদের কোনো লিঙ্গ নেই, তৃতীয় (পুরুষ বা মহিলা নয়) লিঙ্গ, বা ওঠানামা করা লিঙ্গ।

    এটি একটি বিস্তৃত কিন্তু ভুল ধারণা যে সমস্ত ট্রান্সজেন্ডার মানুষ সমকামী পুরুষ বা লেসবিয়ান (অর্থাৎ, জন্মের সময় তাদের নির্ধারিত লিঙ্গের সদস্যদের প্রতি আকৃষ্ট হয়)। লিঙ্গ পরিচয় এবং যৌন অভিমুখিতা ভিন্ন। কিছু ট্রান্সজেন্ডার মানুষ সমকামী বা লেসবিয়ান। অন্যরা বিষমকামী বা উভকামী। এখনও অন্যরা কোন নির্দিষ্ট যৌন অভিমুখীতার সাথে সনাক্ত করে না।

    ট্রান্সজেন্ডার হল একটি সাধারণ শব্দ যা এমন মানুষদের কথা বলে যাদের লিঙ্গ পরিচয়, জন্মের সময় তাদের নির্ধারিত লিঙ্গের সাথে মেলে না। বিপরীতে, ‘সিসজেন্ডার’ শব্দটি এমন লোকদের বর্ণনা করে যাদের লিঙ্গ পরিচয় তাদের জন্মের সময় নির্ধারিত লিঙ্গের সাথে মিলে যায়। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা লিঙ্গবিহীন হতে পারে, যার অর্থ তারা এমন প্রথা এবং অভ্যাস গ্রহণ করে যা সাধারণত তাদের জন্মের সময়ের লিঙ্গের সাথে যুক্ত নয়। অর্থাৎ, তারা তাদের কথাবার্তা, অভিনয়, পোশাক, চুলের স্টাইল এবং অন্যান্য আচরণের মাধ্যমে তাদের লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করতে পারে। একটা নতুন নাম বেছে নেয় যা একজনের লিঙ্গ পরিচয়ের সাথে আরও ভালভাবে খাপ খায়।

    বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মেয়ে সেক্স চেঞ্জ করে পুরুষ হতে চাইছেন শুনে মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “সুচেতনা  আমাদের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কন্যা। তিনি পুত্রে রূপান্তরিত হচ্ছেন এটা আমার কাছে এক অদ্ভূত অনুভূতি!ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি না কি।বুদ্ধবাবুর মুখ্যমন্ত্রীত্বকালীন সময়ে আমার সেক্স রিঅ্যাসাইনমেন সার্জারি হয় এবং শাস্তিস্বরূপ আমার পিএইচডি অগ্রাহ্য হয়! আমি রিডার পোস্ট থেকে বঞ্চিত হই। আমার প্রাপ্য দুটি ইনক্রিমেন্ট থেকে চিরতরে বঞ্চিত হই! যেটা অকারণ এক বিশাল আর্থিক ক্ষতি! দুহাজার ছয় সালে আমি পিএইচডি অ্যাওয়ার্ডেড হয়েছিলাম! ২০০৩-০৪ সালে আমি লিঙ্গ পরিবর্তন করে নারী হই! বুদ্ধবাবুর সরকার তা মেনে নেন নি! কর্মস্থলে পুরুষ করে রাখা হয়েছিল! ভোটের ডিউটিতে পুরুষদের সঙ্গে ডিউটি দেওয়া হয়েছিল। অপমান অসম্মানের চূড়ান্ত! আত্মহত্যার পথে ঠেলা হয়েছিল! বাবা মা ভয় পেতেন শহর থেকে বহু দূরে গ্রামের কলেজের চাকরিতে খুন না হয়ে যাই!” স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটতে কাটতেই তিনি, সায়ন্তনী ঘোষ মেঘ রাজ্যের প্রথম রূপান্তরকামী (Transgender) মহিলা আইনজীবী। একই সঙ্গে সমাজের বাকি তৃতীয় লিঙ্গদের সম্মান এনে দিতে গড়ে তুলেছেন রুদ্রপলাশ নৃত্য একাডেমি। 

    অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিঙ্গপরিবর্তন বা সেক্স চেঞ্জ খুব জটিল প্লাস্টিক সার্জারী অপারেশন। এই অপারেশনে যারা নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন হ্যারি বেঞ্জামিন, স্টিনাক, আব্রাহাম, জন মানি প্রমুখ। রূপান্তরকামী এবং উভলিঙ্গ মানবদের চাহিদাকে মূল্য দিয়ে ডাক্তাররা সার্জারির মাধ্যমে সেক্সচেঞ্জ অপারেশন করে থাকেন। যেসকল রূপান্তরকামী একে অসুখ মনে করেন না, তাদের ঔষধ প্রয়োগ করে উক্ত মানসিকতাকে বদলে ফেলা সম্ভব হয় না। এদের অনেকেই সেক্সচেঞ্জ অপারেশনের মধ্য দিয়ে মানসিক পরিতৃপ্তি পেয়ে থাকেন। পুরুষ রূপান্তরকামী অর্থাৎ যারা পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হতে চায়, তাদের জন্য এক ধরনের অপারেশন, আর নারী রূপান্তরকামীদের জন্য ভিন্ন অপারেশন রয়েছে। মুলতঃ শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে চামড়া অ টিস্যু নিয়ে গ্রাফটিং এর মাধ্যমে যোনিপ্রদেশ গঠন করা হয়, হরমোন থেরাপির সাহায্যে স্তন গ্রন্থির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটানো হয়, সিলিকন টেস্টিকেলের সাহায্যে অন্ডকোষ তৈরি করা হয়; ইত্যাদি মানসিক ব্যাধি।

    জৈবিক লিঙ্গ (সেক্স) শারীরিক বৈশিষ্ট্য বহন করে। আর মানসিক লিঙ্গ (জেন্ডার) একটি নির্দিষ্ট সমাজে সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে নির্ধারিত বিশিষ্টতা নির্দেশ করে। একজন নারী ও পুরুষের কার কী রকম পোশাক-পরিচ্ছদ হবে; কে কী রকম আচার-আচরণ করবে; আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা কার কী রকম হবে; সমাজের নানা ধরনের কাজে একজন নারী বা একজন পুরুষের ভূমিকা কী হবে এই বিষয়গুলো নির্ধারণ করে জেন্ডার বা লিঙ্গ। অর্থাৎ, সেক্স বা জৈবিক লিঙ্গ বিষয়টি পুরোপুরি শরীরের উপর নির্ভরশীল কিন্তু জেন্ডার বা মানসিক লিঙ্গ নির্ভররশীল সমাজের উপর। যেহেতু নারী বা পুরুষের দায়িত্ব, কাজ ও আচরণ মোটামুটি সমাজ কর্তৃক নির্ধারিত হয়, তাই সমাজ পরিবর্তন বা সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে জেন্ডারের ধারণা বদলে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ- আমরা যখন কাউকে ‘নারী’ বা ‘পুরুষ’ হিসেবে চিহ্নিত করি, তখন সেখানে জৈব-লিঙ্গ নির্দেশ করাটাই মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাড়ায়। কিন্তু ‘মেয়েলি’ বা ‘পুরুষালি’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে জেন্ডার প্রপঞ্চকে যুক্ত করা হয় যেখানে নারী বা পুরুষের লিঙ্গীয় বৈশিষ্ট্যকে ছাপিয়ে স্বভাব-আচরণগত ইত্যাদি বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। আর এ কারণে সেক্সকে জৈবলিঙ্গ এবং জেন্ডারকে সামাজিক বা সাংস্কৃতিক লিঙ্গ বলে অনেকে অভিহিত করেন। বস্তুত জৈব বৈশিষ্ট্যর বলয় অতিক্রম করে সাংস্কৃতিক বলয়ে অন্তর্ভুক্ত হবার বাসনার কারণেই মানব সমাজে রূপান্তরকামিতার অস্তিত্ব আছে বলে মনে করা হয়।

    দুই

    ভারতবর্ষে মানুষের দেহের অকুস্হল নিয়ে বহুকাল আগে থেকে ভাবনাচিন্তা করা হয়েছে। ট্রান্সজেন্ডার বা রূপান্তরকামীর কথা বহুকাল আগে উপস্হাপন করা হয়েছে সংস্কৃত মহাকাব্য ‘মহাভারত’-এ। মহাভারতের  প্রাচীনতম অংশটি মোটামুটি ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ গুপ্তযুগে রচিত হয়, মানে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। মহাভারতের   একটি যক্ষের নাম স্হূলকর্ণ। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের নাম শিখণ্ডী। এদের দুজনেই ঘটনাক্রমে নারী অথবা পুরুষে রূপান্তরিত। শিখণ্ডীর পূর্বজন্মের নাম চিল ‘অম্বা’। তিনি ছিলেন কাশীরাজের বড়ো মেয়ে। 

    সত্যবতীর গর্ভে ও শান্তনুর ঔরসে জন্মগ্রহণ করে চিত্রাঙ্গদ আর বিচিত্রবীর্য। অবিবাহিত যুবক চিত্রাঙ্গদ গন্ধর্বরাজ চিত্রাঙ্গদের হাতে নিহত হয়। কারণ তাদের দুজনার নাম এক হওয়ায় গন্ধর্বরাজ তাকে যুদ্ধে আহ্বান করেন। এরপর বিচিত্রবীর্য রাজা হলে ভীষ্ম তার বৈমাত্রেয় ভাইয়ের জন্য কাশীরাজের তিন মেয়ে অম্বা, অম্বিকা ও অম্বালিকাকে কিডন্যাপ করে আনেন। কিন্তু কাশীরাজের বড়ো মেয়ে অম্বা আগেই রাজা শাল্বকে মনে মনে স্বামী হিসেবে  বরণ করে নিয়েছিল। কিন্তু ভীষ্ম তাকে তুলে আনায় শাল্বরাজ আর মেয়েটিকে বিয়ে  করতে রাজি হননি। অম্বা এরপর ফিরে এসে ভীষ্মকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু পূর্ব প্রতিজ্ঞার কারণে ভীষ্ম অম্বার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ ভীষ্ম আজীবন ব্রহ্মচর্য গ্রহণের পাশাপাশি অমরত্ব লাভ করেছিলেন। কিন্তু অম্বা তার দাবি বজায় রাখতে উপস্থিত হয় ভীষ্মের গুরু পরশুরামের দরবারে। প্রতিজ্ঞার কারণে গুরুর আদেশেও অসম্মত হয় ভীষ্ম। ফলে পরশুরাম আর ভীষ্মের যুদ্ধ শুরু হয় কিন্তু কেউই জয়লাভ করে না। তখন পরশুরাম অম্বাকেই ভীষ্মের কাছে যেতে বলেন। কিন্তু অম্বার বদলা নেবার ইচ্ছে এত বেশি ছিল যে, যেকোনোভাবে ভীষ্মের প্রাণনাশ করার কথা ভাবেন। কারণ ভীষ্মের কারণেই তাঁর প্রেমিক  শাল্বকে হারাতে হয়েছিল। আবার ভীষ্মও তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।

    হিন্দুধর্মে ও ভারতীয় পুরাণে একাধিক দেবদেবীকে বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন রূপে পুরুষ ও নারী উভয় সত্ত্বা ধারণ করতে দেখা যায়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার একজন দেবতা ও একজন দেবী একই সময়ে একই মূর্তিতে একাধারে পুরুষ ও নারী রূপে প্রকাশিত হন। এই রকম একটি মূর্তি হল অর্ধনারীশ্বর। ইনি শিব ও তাঁর পত্নী পার্বতীর সম্মিলিত রূপ। অর্ধনারীশ্বর নামটির অর্থ "প্রভু, যাঁর অর্ধাংশ নারী"। শিবের এই মূর্তিটি "দ্বৈতসত্ত্বার উর্ধ্বে স্থিত সামগ্রিকতা"র প্রতীক। এই মূর্তি নশ্বর জীব ও অমর দেবদেবীদের এবং পুরুষ ও নারীসত্ত্বার যোগসূত্র। অ্যালাই ড্যানিলোর মতে, "উভলিঙ্গ, সমকামী ও রূপান্তরকামীতার একটি প্রতীকী মূল্য রয়েছে এবং এঁদের সম্মানীয় সত্ত্বা অর্ধনারীশ্বর মূর্তি মনে করা হয়।" আরেকটি অনুরূপ মূর্তি হল লক্ষ্মী-নারায়ণ। এই মূর্তিটি সৌন্দর্য ও সম্পদের দেবী লক্ষ্মী ও তাঁর স্বামী বিষ্ণুর যুগল উভলিঙ্গ মূর্তি।
    ভাগবত পুরাণ গ্রন্থে পাওয়া যায়, বিষ্ণু অসুরদের অমৃত থেকে বঞ্চিত করার জন্য ছলনাকারী মোহিনী অবতার গ্রহণ করেছিলেন। শিব মোহিনীকে দেখে আকৃষ্ট হন এবং তাঁর বীর্যপাত হয়। সেই বীর্য পাথরের উপর পড়ে সোনায় পরিণত হয়।

    ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ গ্রন্থে দেখা যায়, শিবের পত্নী পার্বতী তাঁর স্বামীকে মোহিনীর প্রতি আকৃষ্ট হতে দেখে "লজ্জায় মাথা নত করেন"। কোনও কোনও উপাখ্যানে দেখা যায়, শিব পুনরায় বিষ্ণুকে মোহিনী মূর্তি ধারণ করতে বলেন, যাতে তিনি প্রকৃত রূপান্তরটি স্বচক্ষে দেখতে পারেন। যে সকল উপাখ্যানে শিব মোহিনীর সত্য প্রকৃতিটি জানতেন, সেই উপাখ্যানগুলিকে "যৌন আকর্ষণে লিঙ্গের অনিশ্চয়তার পরিচায়ক" হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়।

    শুধুমাত্র সমকাম উদ্দীপনার দিকে গুরুত্ব আরোপ করলে, লেখকের রচনার গভীর অধিবিদ্যামূলক গুরুত্বটি হারিয়ে যায়: মোহিনীর নারীসত্ত্বা হল সত্যের জাগতিক দিক এবং শিবকে আকর্ষিত করার যে চেষ্টা মোহিনী করেছিলেন, তা শুধুমাত্র শিবকে জাগতিক বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার জন্যই তিনি করেন। পট্টনায়ক অপর একটি উপাখ্যানের উদাহরণ দেখিয়ে বলেছেন যে, কেবলমাত্র বিষ্ণুরই শিবকে "মোহিত" করার ক্ষমতা ছিল: এক অসুর নারীমূর্তি ধারণ করে শিবকে হত্যা করতে যায়। সে তার নারীমূর্তির যোনিতে তীক্ষ্ণ দাঁত স্থাপন করেছিল। শিব তার ছলনা ধরে ফেলেন এবং নিজের "পুরুষত্বে" একটি "বজ্র" স্থাপন করে "রতিক্রিয়া"র সময় সেই অসুরকে হত্যা করেন।

    হিন্দু পুরাণে প্রায়শই দেখা যায় দেবদেবীরা লিঙ্গ পরিবর্তন করছেন বা বিভিন্ন সময়ে বিপরীত লিঙ্গের রূপ ধারণ করছে অথবা একজন দেবতা ও একজন দেবী মিলিত হয়ে একই শরীরে উভলিঙ্গ রূপ ধারণ করছেন। যৌনমিলনের সুবিধার্থেও দেবতাদের বিপরীত লিঙ্গের অবতার রূপে অবতীর্ণ হতে দেখা যায়।দেবতা ভিন্ন অন্যান্য চরিত্রদেরও দেবতার বরে বা অভিশাপে অথবা পুনর্জন্মের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় লিঙ্গ পরিবর্তন করতে দেখা যায়।

    হিন্দু দেবতা আয়াপ্পার জন্ম সংক্রান্ত পৌরাণিক কাহিনিটির মধ্যেও অ-বিষমকামী যৌনপ্রবৃত্তির আভাস পাওয়া যায। শিবের ঔরসে মোহিনীরূপী বিষ্ণুর গর্ভে আয়াপ্পার জন্ম হয়। বিষ্ণু লজ্জায় তাঁকে পরিত্যাগ করেন। পট্টনায়ক লিখেছেন, শিবের ঔরসে মোহিনীর গর্ভে আয়াপ্পার জন্ম হয়নি। মোহিনীকে আলিঙ্গন করার সময় শিবের বীর্যপাত হয় এবং সেই বীর্য থেকেই আয়াপ্পার জন্ম হয়েছিল। এই কাহিনির অন্য একটি পাঠান্তর অনুসারে, পন্তলমের পাণ্ড্য রাজা রাজশেখর একটি শিশুকে দত্তক গ্রহণ করেছিলেন। এই কাহিনি অনুসারে, আয়াপ্পা হলেন অযোনিজাত (অর্থাৎযোনি থেকে যাঁর জন্ম হয়নি) এবং হরিহরপুত্র (অর্থাৎ,বিষ্ণু ও শিবের পুত্র)। বড়ো হয়ে আয়াপ্পা একজন মহান যোদ্ধা হয়েছিলেন।

    মহাভারত মহাকাব্যের তামিল সংস্করণ অনুসারে, বিষ্ণুর অবতার কৃষ্ণ মোহিনী মূর্তি ধারণ করে অরবানকে বিবাহ করেছিলেন। ইরাবান আত্মবলিদানের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে প্রেমের স্পর্শ দান করার জন্য কৃষ্ণ তাঁকে বিবাহ করেন। অরবানের মৃত্যুর পর কৃষ্ণ মোহিনী মূর্তিতেই তাঁর জন্য বিলাপ করতে থাকেন। বার্ষিক তালি অনুষ্ঠানে অরবানের বিবাহ ও মৃত্যুর ঘটনাকে স্মরণ করা হয়। এই অনুষ্টানে হিজরারা (ভারতীয় তৃতীয় লিঙ্গ গোষ্ঠীর মানুষ) কৃষ্ণ-মোহিনীর ভূমিকা গ্রহণ করে এবং একটি গণবিবাহ অনুষ্ঠানে অরবানকে "বিবাহ" করে। এরপর ১৮ দিন ধরে উৎসব চলে। উৎসব শেষ হয় অরবানের আনুষ্ঠানিক সমাধিদানের মধ্য দিয়ে। এই সময় হিজরারা তামিল প্রথানুসারে নৃত্য করতে করতে বুক চাপড়ায়, হাতের চুড়ি ভেঙে ফেলে এবং বৈধব্যের শ্বেত বস্ত্র পরিধান করে।

    আরেকটি উপাখ্যান হল ইলার কাহিনি। এই কাহিনিটি একাধিক হিন্দু ধর্মগ্রন্থে পাওয়া যায়। ইলা ছিলেন এক রাজা। তিনি শিব ও পার্বতীর অভিশাপে এক মাস পুরুষ রূপে এবং পরবর্তী এক মাস নারী রূপে দেহধারণ করতেন। লিঙ্গ পরিবর্তনের পর ইলা তাঁর পূর্বতন লিঙ্গের কথা বিস্মৃত হতেন। এই রকম একটি পর্যায়ে ইলা গ্রহদেবতা বুধকে বিবাহ করেন। বুধ ইলার পরিবর্তনশীলতার কথা জানতেন। কিন্তু তিনি ‘পুরুষরূপী’ ইলাকে তা জানালেন না। ইলাও তাঁর নারী রূপের কথা বিস্মৃত হলেন। ইলা যখন স্ত্রী রূপে থাকতেন, তখনই বুধ ও ইলা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একত্রে বাস করতেন। রামায়ণ অনুসারে, ইলা বুধের এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। যদিও মহাভারত অনুসারে, ইলাকেই সেই পুত্রের মাতা ও পিতা বলা হয়েছে। পুত্রের জন্মের পর ইলার অভিশাপের মেয়াদ শেষ হয়। তখন ইলা পাকাপাকিভাবে পুরুষে পরিণত হন। এরপর ইলা তাঁর স্ত্রীর কাছে ফিরে যান এবং তাঁর একাধিক সন্তানের জন্ম হয়।

    তিন 

    একজন ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি সাধারণত এমন একটি দেহ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন যার দ্ব্যর্থহীন যৌন বৈশিষ্ট্য রয়েছে (পুরুষ বা মহিলা) কিন্তু তারা ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচয়ের সাথে মেলে না। বিপরীতে, একজন ইন্টারসেক্স ব্যক্তি এমন একটি দেহ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন যা স্পষ্টভাবে পুরুষ বা মহিলা নয়। উদাহরণস্বরূপ, পুরুষ ক্রোমোজোম সহ একটি শিশুর যৌনাঙ্গ এবং অন্যান্য যৌন বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে যা নারী বলে মনে হয়। মহিলা ক্রোমোজোম নিয়ে জন্মানো শিশুদের ক্ষেত্রে বিপরীতটি সত্য হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, একজন ইন্টারসেক্স ব্যক্তির প্রজনন শারীরস্থান পুরুষ এবং মহিলা বৈশিষ্ট্যগুলিকে একত্রিত করতে পারে।  একজন ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিও ইন্টারসেক্স হতে পারে এবং এর বিপরীতে, যদিও এটি সাধারণত হয় না। একজন ইন্টারসেক্স ব্যক্তি এমনভাবে জীবনযাপন করতে পারে যা তাকে জন্মের সময় নির্ধারিত লিঙ্গের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, জন্মের সময় একটি আন্তঃলিঙ্গের শিশুকে মেয়েলি লিঙ্গের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে একটি মেয়ে হিসাবে বেড়ে উঠতে পারে এবং সারা জীবনের জন্য ঐতিহ্যগতভাবে মেয়েলি পদ্ধতিতে আচরণ, পোশাক এবং বর চালিয়ে যেতে পারে। যাইহোক, কিছু যারা এক লিঙ্গ হিসাবে বেড়ে উঠেছেন তারা পরবর্তীতে বিপরীত লিঙ্গের লিঙ্গ পরিচয়কে আলিঙ্গন করে, তাদের চেহারা, আচরণ এবং দেহে পরিবর্তন আনে যা অনেক ট্রান্সজেন্ডার মানুষের দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। কিছু ট্রান্সজেন্ডার লোকেদের জন্য, জন্মের সময় তাদের নির্ধারিত লিঙ্গ এবং তাদের লিঙ্গ পরিচয়ের মধ্যে অমিলের কারণে লিঙ্গ ডিসফোরিয়া নামের  মানসিক সমস্যা হতে পারে। কিশোর-কিশোরীরা লিঙ্গ ডিসফোরিয়া বিকাশ করতে পারে, যদিও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থা অনেক সময়ে শেষ হয়ে যায়। লিঙ্গ ডিসফোরিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা যে যৌন বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিল তা থেকে মুক্তি পেতে এবং অন্য লিঙ্গে পরিণত হওয়ার তীব্র এবং অবিরাম আকাঙ্ক্ষা অনুভব করে। পরিবার আর সমাজ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হবার বোধ সামাজিক ডিসফোরিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। 

    আন্তঃলিঙ্গ বা ক্লীবলিঙ্গ (ইংরেজি: Intersex, ইন্টারসেক্স), মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর ক্রোমোজোম, কর্মক্ষম জননাঙ্গ, যৌন হরমোন অথবা গোপনাঙ্গসহ বিভিন্ন যৌন বৈশিষ্ট্যের সে সকল পার্থক্যকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যেগুলো জাতিসংঘের "অফিস অব দি হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস" এর বর্ণনা অনুযায়ী নারী বা পুরুষ দেহের যৌন দ্বিরূপতার ধারণার সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না। এই পার্থক্যগুলো হতে পারে যৌনাঙ্গের অস্পষ্টতা, এবং এক্সওয়াই-পুরুষ এবং এক্সএক্স-নারী ব্যতিরেকে অন্যান্য ক্রোমোজোমীয় জিনোটাইপ (জেনেটিক বৈশিষ্ট্য) এবং যৌন ফিনোটাইপ (বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য) এর সমন্বয়।আন্তঃলিঙ্গকে পূর্বে উভলিঙ্গ বলা হত কিন্তু বর্তমানে উভলিঙ্গ শব্দটির ব্যবহার সীমিত হয়ে আসছে কারণ শব্দটিকে বিভ্রান্তিকর এবং অসম্মানজনক বলে বিবেচনা করা হয়। ২০০৬ সালে ''ডিজঅর্ডার অব সেক্স ডেভলাপমেন্ট'' (যৌন ক্রমবিকাশের বৈকল্য) হিসেবে আন্তঃলিঙ্গীয় বৈশিষ্ট্যের মেডিক্যাল সঙ্গায়ন প্রবর্তিত হয় যা প্রবর্তনের পর থেকেই যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছে।

    চার

    ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন ভারতের এলজিবিটি সম্প্রদায়ের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। জীবনের শেষ বছরগুলিতে তিনি রূপান্তরকামী জীবনযাত্রা নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করছিলেন। তিনি নিজের সমকামী সত্ত্বাটিকে খোলাখুলিভাবে স্বীকার করে নেন, যা ভারতের চলচ্চিত্র জগতের খুব কম মানুষ করেছেন। ঋতুপর্ণ ঘোষ দশ বছর ধরে ডায়াবেটিস (ডায়াবেটিস মেটিলাস টাইপ টু) রোগে এবং পাঁচ বছর ধরে প্যানক্রিটিটিস রোগে ভুগছিলেন।এছাড়াও তার অনিদ্রা রোগ ছিল এবং সেই জন্য তিনি ঘুমের ওষুধ খেতেন। ডাক্তারদের রিপোর্ট অনুযায়ী, অ্যাবডোমিনোপ্ল্যাস্টি ও ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্টের পর প্রয়োজনীয় হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করাতে গিয়ে তার শারীরিক অসুস্থতা বেড়ে যায়। আরেকটি প্রেমের গল্প ছবিতে এক সমকামী চিত্রপরিচালকের ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য তাকে এগুলি করাতে হয়েছিল।

    হিন্দু পুরাণে এলজিবিটি বিষয়বস্তু বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। কয়েকজন দেবদেবী ও যোদ্ধার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে বা আচরণে স্ত্রী সমকামীতা, পুরুষ সমকামীতা, উভকামীতা বা রূপান্তরকামীতা অর্থাৎ (এককথায় এলজিবিটি) বৈশিষ্ট্য বা আচরণ পরিদৃষ্ট হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাঁদের চরিত্রে লিঙ্গ পার্থক্যঅ-বিষমকামী যৌনপ্রবৃত্তিরও আভাস মেলে। ঐতিহ্যগত হিন্দু সাহিত্যে সরাসরি সমকামিতার কথা উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু বেদ, রামায়ণ, মহাভারত ও বিভিন্ন পৌরাণিক সাহিত্যে এবং স্থানীয় লোকসাহিত্যে লিঙ্গ পরিবর্তন, সমকামোদ্দীপক (হোমোইরোটিক) ঘটনা এবং আন্তঃলিঙ্গতৃতীয় লিঙ্গ চরিত্রের উপস্থিতি প্রায়শই লক্ষ্য করা যায়। হিন্দু পুরাণে এমন অসংখ্য ঘটনা দেখা যায়, যেখানে যৌনমিলন একটি অযৌন পবিত্র উদ্দেশ্যে সাধিত হয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এগুলি সমকামী যৌনমিলন। কখনও কখনও দেবতাদের এই জাতীয় মিলনকে নিন্দা করতে দেখা যায়। কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে এগুলি তাঁদেরই বরে ঘটেছে।

    আধুনিক গবেষক ও সমকামী-অধিকার আন্দোলনকারীরা মূলধারার প্রাচীন সাহিত্যে উল্লিখিত লিঙ্গ বিভিন্নতা ও অ-বিষমকামী যৌনপ্রবৃত্তি সংক্রান্ত উপাখ্যানগুলি ছাড়াও অপেক্ষাকৃত অল্পপরিচিত গ্রন্থগুলিতে প্রাপ্ত এলজিবিটি বিষয়বস্তুর উপর আলোকপাত করেছেন। এমনকি সাধারণ দৃষ্টিতে যে সকল উপাখ্যানের মধ্যে কোনও প্রকার সমকামিতার আভাস নেই, তাঁরা সেগুলিরও অ-বিষমকামী ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অবশ্য এই ধরনের ব্যাখ্যাকে কেন্দ্র করে প্রাচীন উপাখ্যানগুলির অর্থ সংক্রান্ত মতবিরোধও দেখা দিয়েছে।

    একাধিক দেবদেবীকে তৃতীয়-লিঙ্গ বা সমকামীদের রক্ষাকর্তা মনে করা হয়। এই সব দেবদেবীদের পৌরাণিক কাহিনি বা তাঁদের পূজার রীতিনীতিগুলি এই ধারণার উৎস। কনার ও স্পার্কস মনে করেন যে, অগ্নি, প্রেম ও যৌনতার দেবী অরণিকে তাঁর অনুষ্ঠানগুলির মাধ্যমে স্ত্রী সমকামিতার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে: উক্ত অনুষ্ঠানে দুটি কাঠের টুকরোকে নারী মূর্তি মনে করা হয়। এগুলির নামকরণ করা হয় অধরারণি ও উতরারণি। তারপর এই দুটি টুকরোকে পরস্পরের সঙ্গে ঘষা হয়। এটি একটি আধ্যাত্মিক স্ত্রী সমকামী মিলনের পরিচায়ক।

    বহুচারা মাতা হলেন হিজরাদের দেবী। তাঁর জনপ্রিয় মূর্তিটিতে দেখা যায়, তিনি একটি মোরগের পিঠে বসে আছেন এবং হাতে ধরে আছেন একটি তরবারি, ত্রিশূল ও একটি বই। বহুচারা সংক্রান্ত কাহিনিগুলিতে পুরুষাঙ্গ কর্তন এবং শারীরিক যৌন বৈশিষ্ট্যের অন্যান্য পরিবর্তনের বেশ কিছু উদাহরণ পাওয়া যায়। এই জন্য তাঁকে পুরুষের প্রতি অভিশাপদাত্রী দেবী মনে করা হয়। কথিত আছে, বহুচারা ছিলেন এক নশ্বর নারী। তিনি শহিদ হন। একটি গল্পে দেখা যায়, একদল দস্যু বহুচারাকে ধর্ষণ করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করেছিল। কিন্তু তিনি তরবারি বার করে নিজের স্তনদুটি কেটে ফেলেন এবং মারা যান। অন্য একটি গল্পে দেখা যায়, বহুচারার স্বামী যখন একটি উপবনে সমকামী রতিক্রিয়ায় রত ছিলেন, সেই সময় বহুচারা তাঁকে ধরে ফেলেন। ফলে তাঁর পুরুষাঙ্গ খসে যায় এবং তিনি নারীর বেশ ধারণ করতে বাধ্য হন।

    বহুচারার উপাখ্যানগুলিতে তাঁর দৈবসত্ত্বা পাওয়ার পর লিঙ্গ পার্থক্যের বিষয়টি লক্ষিত হয়। একটি কিংবদন্তি অনুসারে, এক রাজা বহুচারার কাছে পুত্রসন্তান কামনা করেছিলেন। বহুচারা তাঁর প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। কিন্তু বড়ো হয়ে রাজকুমার সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হন। এক রাত্রে বহুচারা স্বপ্নে সেই রাজকুমারকে দেখা দেন এবং আদেশ করেন যাতে তিনি নিজের পুরুষাঙ্গ কর্তন করেন, নারীর বেশ ধারণ করেন এবং তাঁর দাসত্ব করেন। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, বহুচারা এরপরও পুরুষত্বহীন পুরুষদের চিহ্নিত করে সেই কাজ করতে বলেন। যারা তা করতে অস্বীকার করে, তিনি তাদের শাস্তি দেন। তারা পরবর্তী সাত জন্ম পুরুষত্বহীন হয়ে থাকে। এই গল্পটিই বহুচারা কাল্টের উৎস। বহুচারার ভক্তদের নিজের পুরুষাঙ্গ কর্তন করে আজীবন ব্রহ্মচারী থাকতে হয়।

    কৃষ্ণের পুত্র শাম্বও খোজা পুরুষ, রূপান্তরকামী ও সমকামোদ্দীপনার পৃষ্ঠপোষক। শাম্ব নারীর বস্ত্র পরিধান করে মানুষকে উপহাস করতেন এবং বিপথে চালনা করতেন। নারীর বেশ ধারণ করে তিনি সহজেই নারীদের সঙ্গে মিশতে পারতেন এবং তাঁদের সম্ভোগ করতেন। মৌষলপুরাণ গ্রন্থে দেখা যায়, শাম্ব একবার নারীর বেশ ধারণ করে কয়েকজন ঋষিকে নিজের গর্ভধারণ নিয়ে প্রশ্ন করেন। ঋষিরা তাঁকে অভিশাপ দেন যে, পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও তিনি লৌহ মুষল প্রসব করবেন।

    দেবতাদের মধ্যে সমকামী বা উভকামী ক্রিয়াকলাপ ঘটতে দেখা যায়। যদিও এই ধরনের আদানপ্রদান যৌনসুখ উপভোগের জন্য ঘটে না। এগুলি শুধুমাত্র অনুষ্ঠান-সংক্রান্ত বা অন্যান্য উদ্দেশ্যে ঘটে। আগুন, সম্পদ ও সৃষ্টিশক্তির দেবতা অগ্নির সঙ্গে সমকামিতার সম্পর্ক রয়েছে। তিনি অন্যান্য দেবতাদের বীর্য গ্রহণ করেন। অগ্নি দেবী স্বাহাকে বিবাহ করেছিলেন। তা সত্ত্বেও তাঁকে ও চন্দ্রদেবতা সোমকে সমকামী যুগল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই সম্পর্কে অগ্নি গ্রহিতার ভূমিকা পালন করেন। তিনি নিজের মুখে সোমের বীর্য গ্রহণ করেন। এটি পৃথিবী থেকে স্বর্গে যজ্ঞের আহুতি নিয়ে যাওয়ায় অগ্নির ভূমিকাটির অনুরূপ। রক্ষণশীল হিন্দুধর্মে এটিকে "মিথুন" বা আনুষ্ঠানিক যৌন ক্রিয়া বলা হয় এবং বলা হয় যে অগ্নি ও তাঁর মুখ নারীর ভূমিকা পালন করেন।

    পুরুষ-সৌন্দর্য ও যুদ্ধের দেবতা কার্তিকের জন্ম-সংক্রান্ত পুরাণকথাতেও অগ্নিকে বীর্যগ্রহিতা রূপে দেখা যায়। কার্তিকের জন্মকাহিনির একাধিক পাঠান্তর পাওয়া যায়। এগুলির অনেকগুলিতেই দেখা যায় যে, শুধুমাত্র পুরুষের দ্বারাই কার্তিকের জন্ম হয়েছে। তবে এগুলিতে বিষমকামী যৌনতা বা ইচ্ছাও একটি ভূমিকা গ্রহণ করেছে। যদিও পার্বতীকেই কার্তিকের মা বলা হয়ে থাকে। কারণ, শিবের সঙ্গে মিলিত হয়ে তিনিই শিবের বীর্যপাতের কারণ হয়েছিলেন। কোনও কোনও কাহিনিতে গঙ্গাকে কার্তিকের মা বলা হয়। তিনি অগ্নির থেকে বীর্য গ্রহণ করে অজাত শিশুটিকে বহন করেছিলেন। এই ক্ষেত্রে জনকের ভূমিকায় কোথাও শিবকে, কোথাও অগ্নিকে অথবা কোথাও শিব ও অগ্নি দুই জনকেই রাখা হয়েছে। শিবপুরাণ ও রামায়ণ গ্রন্থে রয়েছে, দেবতারা শিব ও পার্বতীর ‘মহাসুরতে’র (প্রগাঢ় রতিক্রিয়া) ফল কী হতে পারে, তা চিন্তা করে ত্রস্ত হয়ে পড়লেন। তাঁরা সেই রতিক্রিয়ায় বাধা দিলেন। শিব তখন তাঁদের সামনে উপস্থিত হয়ে বললেন, “এখন যে বীর্য আমি পাত করব, তা যে গ্রহণ করতে পারবে সে সামনে আসুক।” দেবতাদের অনুরোধে অগ্নি শিবের বীর্য নিজের হস্তে গ্রহণ করলেন এবং তা পান করলেন। এই কাহিনিগুলিতে দেখা যায়, শিব ও পার্বতী অগ্নির কাজকে অনুমোদন করছেন না। তাঁরা এই কাজকে ‘অশুভ’ ও ‘ভুল’ বলে উল্লেখ করছেন। খ্রিস্টীয় ১১শ শতাব্দীতে রচিত কথাসরিৎসাগর গ্রন্থে যদিও দেখা যায়, শিব বলপূর্বক অগ্নিকে নিজের বীর্য গ্রহণে বাধ্য করছেন। সেই বীর্য অগ্নির উদরে প্রচণ্ড জ্বলন সৃষ্টি করল। তখন তিনি শিবের উপদেশে তা একদল ঋষিপত্নীর উপর উগরে দিলেন। ঋষিপত্নীগণ আবার সেই বীর্য গঙ্গা নদীতে ফেলে দিলেন। গঙ্গার তীরে পড়ে কার্তিকেয়ের জন্ম হল। মহাভারত গ্রন্থেও কার্তিককে অগ্নির পুত্র বলা হয়েছে। এই গ্রন্থ অনুসারে, অগ্নি একজন কৃত্তিকার হাতে নিজের বীর্য দান করেছিলেন। উক্ত কৃত্তিকা সেই বীর্য একটি হ্রদে নিক্ষেপ করেন। তা থেকেই কার্তিকের জন্ম হয়। কোনও কোনও পুরাণকথায় দেখা যায়, অগ্নি তাঁর বীর্য এমন এক পর্বতের উপর পাত করেছিলেন, যেটি শিবের দিব্য বীর্যে নির্মিত হয়েছিল। এইভাবে কার্তিক শিব ও অগ্নির সন্তান। বনপর্ব অংশের মার্কণ্ডেয় কৃত একটি ব্যাখ্যায় তা-ই বলা হয়েছে।

    পাঁচ

     সামগ্রিকভাবে "এলজিবিটি" বলতে বোঝায় "লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়ালট্রান্সজেন্ডার" অর্থাৎ, নারী ও পুরুষ সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামী। ১৯৮০-এর দশকের মধ্য থেকে শেষ ভাগের মধ্যে "গে কমিউনিটি"-র পরিবর্তে "এলজিবি" আদ্যক্ষরটির ব্যবহার চালু হয়। এরপর ১৯৯০-এর দশকে "এলজিবিটি" আদ্যক্ষরটি গৃহীত হয়। উল্লেখ্য, "গে কমিউনিটি" শব্দটি সম্প্রদায়ের অনেকেরই যথাযথ প্রতিনিধিত্ব করছিল না বলে মনে করা হচ্ছিল।

    "যৌনতা ও লিঙ্গ পরিচয়-ভিত্তিক সংস্কৃতিগুলির" বৈচিত্র্যের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করার জন্য "এলজিবিটি" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে অ-বিষমকামী সমকামী, উভকামী বা রূপান্তরকামী কোনো ব্যক্তিকে বোঝাতেও এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের অন্তর্ভুক্তির স্বীকৃতি হিসেবে আদ্যক্ষরটির একটি জনপ্রিয় পাঠান্তরে ইংরেজি "কিউ" (Q) অক্ষরটি যুক্ত করা হয় যৌন অভিমুখিতার স্থলে কুইয়্যার (কিম্ভুত) বা কোয়েশ্চনিং (প্রশ্নবিদ্ধ) বোঝাতে (অর্থাৎ, "এলজিবিটিকিউ" বা "জিএলজিবিটিকিউ", ১৯৯৬ সাল থেকে নথিভুক্ত। 

    সংজ্ঞাবাচক নাম হিসেবে এই আদ্যক্ষরটি মূলধারায় পরিণত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য কয়েকটি ইংরেজি-ভাষী দেশের অধিকাংশ "যৌনতা ও লিঙ্গ পরিচয়-ভিত্তিক" কমিউনিটি সেন্টার ও গণমাধ্যম দ্বারা গৃহীতও হয়। তবে এই আদ্যক্ষরটি সমাজের সংশ্লিষ্ট অংশের অনেকেরই সমর্থন লাভে বঞ্চিত হয়। অন্যদিকে কোনো কোনো ইন্টারসেক্স ব্যক্তি নিজেদের এলজিবিটি গোষ্ঠীভুক্ত করতে চেয়ে আদ্যক্ষরটিকে "এলজিবিটিআই" পর্যন্ত প্রসারিত করার পক্ষে মত দেন আবার এক গোষ্ঠীর কেউ কেউ মনে করেন যে তাদের সঙ্গে অপর গোষ্ঠীর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এই জাতীয় আদ্যক্ষর ব্যবহার অপমানজনক। কারোর কারোর মতে রূপান্তরকামীরা "এলজিবি" গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে ন। এই জাতীয় ধারণাগুলি "লেসবিয়ান ও গে বিচ্ছিন্নতাবাদ" তত্ত্বের প্রমাণ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। উক্ত তত্ত্ব অনুযায়ী, নারী ও পুরুষ সমকামীদের পৃথক সমাজ গঠন করা প্রয়োজন ও সাধারণভাবে তাদের যেসব গোষ্ঠীমণ্ডলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তা থেকেও বিচ্ছিন্ন করা প্রয়োজন। কেউ কেউ আবার এই শব্দটিকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনেন না। তারা এটিকে রাজনৈতিকভাবে অতিরিক্ত রকম সঠিক শব্দ মনে করেন। তাদের মতে, এটি বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একই ধূসর এলাকার আবদ্ধ করার এবং প্রধান গোষ্ঠীর ইস্যু ও প্রধান বিষয়গুলিকে সম গুরুত্ব প্রদানের একটি প্রয়াস মনে করেন।

    ১৯৬০ সালের পূর্বে বিসমকামীহীনতার পক্ষে কোন সাধারণ শব্দের প্রচলন ছিল না। কাছাকছি শব্ যেটি ব্যবহৃত হত তা হল, তৃতীয় লিঙ্গ, যা ১৮৬০ সালেও ব্যবহৃত হয়েছে কোন কোন জায়গায়। তবে তা আমেরিকার সমাজে তখন পর্যন্ত গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সমকামী শব্দটি সর্বপ্রথম ভালো অর্থে মোটেই ব্যবহার করা হয় নি। হোমোফাইল শব্দ কর্তৃক এটি স্থানান্তরিত হয় ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দিকে।  এবং ১৯৭০ সালে গে শব্দ ব্যবহার প্রচলন হয়। পরবর্তীতে, সমকামি সমাজে গে শব্দটি গ্রহণযোগ্যতা পায়।  লারস উলেরস্টাম সেক্সুয়াল মাইনরিটি শব্দজোড়া ১৯৬০ সালের দিকে সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। যা মূলতঃ জাতীয়তার দিক দিয়ে সংখ্যালঘু শব্দের সাথে মিল রেখে প্রয়োগ করে করা হয়। 

    এলজিবিটি বা জিএলবিটি আদ্যাক্ষর সকলের কাছে সমান গ্রহণযোগ্যতা পায় না। অনেকেই রূপান্তরলিঙ্গের ও রূপান্তরকামীদের লেসবিয়ান, গে ও বাইসেক্সুয়ালদের (এলজিবি) সাথে একই তালিকায় ফেলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। তাদের পক্ষে যুক্তি হল, রূপান্তরলিঙ্গ ও রূপান্তরকামিতা যৌন পরিচয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত, যৌন অভিমুখিতার সাথে নয। এলজিবি ইস্যুগুলো যৌন অভিমুখিতাকে কেন্দ্র করে, যৌন পরিচয় নিয়ে নয়। মূলত এলজিবি সম্প্রদায়ের বেশ কিছু অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এই পার্থক্য তুলে ধরা হয়। এলজিবি সম্প্রদায় সমলিঙ্গের বিবাহের আইনি অধিকার এবং মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছে, যা রূপান্তলিঙ্গের মানুষের ক্ষেত্রে অনেকক্ষেত্রেই প্রয়োগ করার মত নয়। 

    ছয়

    রূপান্তরকামিতা (ইংরেজি: transsexualism ট্রান্সেক্সুয়্যালিজম) বলতে বিশেষ একটি প্রবণতা বোঝায় যখন সেক্স বা ‘জৈব লিঙ্গ’ ব্যক্তির জেন্ডার বা ‘সাংস্কৃতিক লিঙ্গ’-এর সাথে প্রভেদ তৈরি করে। রূপান্তরকামী বা ট্রান্সসেক্সুয়াল লোকেরা এমন একটি যৌন পরিচয়ের অভিজ্ঞতা লাভ করে যা ঐতিহ্যগতভাবে তাদের নির্ধারিত যৌনতার সাথে স্থিতিশীল নয়, এবং নিজেদেরকে স্থায়ীভাবে সেই লিঙ্গে পরিবর্তন করতে চান। ট্রান্সেক্সুয়াল বা রূপান্তরকামী মানুষেরা ছেলে হয়ে (বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যে) জন্মানো সত্ত্বেও মনমানসিকতায় নিজেকে নারী ভাবেন (কিংবা কখনো আবার উল্টোটি- নারী হিসেবে জন্মানোর পরও মানসিক জগতে থাকেন পুরুষসুলভ)। এদের কেউ কেউ বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরিধান করেন, এই ব্যাপারটিকে বলা হয় (ট্রান্সভেস্টিজম / ক্রসড্রেস), আবার কেউ সেক্স রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারির মাধ্যমে রূপান্তরিত মানবে (Transexual) পরিণত হন। এরা সকলেই রূপান্তরিত লিঙ্গ নামক বৃহৎ রূপান্তরপ্রবণ সম্প্রদায়ের (Transgender) অংশ হিসেবে বিবেচিত।

    রূপান্তরকামী : রূপান্তরকামিতা (Transsexualism) বলতে বিশেষ একটি প্রবণতা বোঝায় যখন জৈব লিঙ্গ ব্যক্তির জেন্ডারের সঙ্গে প্রভেদ তৈরি করে। রূপান্তরকামী ব্যক্তিরা এমন একটি যৌন পরিচয়ের অভিজ্ঞতা লাভ করেন, যা ঐতিহ্যগতভাবে তাঁদের নির্ধারিত যৌনতার সঙ্গে স্থিতিশীল নয় এবং  নিজেদেরকে স্থায়ীভাবে সেই লিঙ্গে পরিবর্তন করতে চান। রূপান্তরকামী মানুষেরা পুরুষ হয়ে (বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যে) জন্মানো সত্ত্বেও মন-মানসিকতায় নিজেকে নারী ভাবেন এবং নারী হিসাবে জন্মানোর পরও মানসিক জগতে থাকেন পুরুষসুলভ। এঁদের কেউ কেউ বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরিধান করেন, এই ব্যাপারটিকে বলা হয় ট্রান্সভেস্টিজম বা ক্রসড্রেস। আবার কেউ সেক্স রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারির মাধ্যমে রূপান্তরিত মানবে (Transexual) পরিণত হন। যেমন সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে যাওয়া। এঁরা সকলেই রূপান্তরিত লিঙ্গ নামক বৃহৎ রূপান্তরপ্রবণ সম্প্রদায়ের (Transgender) অংশ হিসেবে বিবেচিত।

    মানবসভ্যতার বিভিন্ন সমাজব্যবস্থায় লিখিত ইতিহাসের সমগ্র সময়কাল জুড়ে রূপান্তরকামিতার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এর মধ্যে আমেরিকার পুরুষ রূপান্তরকামী জর্জ জরগেন্সেনের ক্রিস্টিন জরগেন্সেনের রূপান্তরিত হওয়ার কাহিনি মিডিয়ায় একসময় আলোড়ন তুলেছিলো। এ ছাড়া জোয়ান অব আর্ক, জীববিজ্ঞানী জোয়ান (জনাথন) রাফগার্ডেন, বাস্কেটবল খেলোয়াড় ডেনিস রডম্যান, চক্ষুচিকিৎসক এবং পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় ডঃ রেনি রিচার্ডস, সঙ্গিতজ্ঞ বিলিটিপটন সহ অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তির মধ্যে রূপান্তর প্রবণতার উল্লেখযোগ্য ইতিহাসে পাওয়া যায়। ১৯৬০ সালে মনোচিকিৎসক ওয়ালিন্দার রূপান্তরকামীদের উপরে একটি সমীক্ষা চালান। তাঁর এই সমীক্ষা থেকে জানা যায়, প্রতি ৩৭,০০০ জনের মধ্যে একজন পুরুষ রূপান্তরকামীর জন্ম হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতি ১০৩,০০০ জনের মধ্যে একজন স্ত্রী রূপান্তরকামীর জন্ম হচ্ছে। ইংল্যান্ডে এই সমীক্ষাটি চালিয়ে দেখা গেছে যে, সেখানে প্রতি ৩৪,০০০ জনের মধ্যে একজন পুরুষ রূপান্তরকামী ভূমিষ্ট হচ্ছে, আর অন্যদিকে প্রতি ১০৮,০০০ জনের মধ্যে একজন জন্ম নিচ্ছে একজন স্ত্রী রূপান্তরকামী। অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, সেখানে ২৪,০০০ পুরুষের মধ্যে একজন এবং ১৫০,০০০ নারীর মধ্যে একজন রূপান্তরকামীর জন্ম হয়।

    সাত

    হিজড়া , দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবহৃত একটি পরিভাষা - বিশেষ করে, ভারতের রূপান্তরকামী বা রূপান্তরিত লিঙ্গের নারীদের বুঝিয়ে থাকে। ভারতের বিভিন্ন স্থানে, রূপান্তরিত লিঙ্গের হিজড়ারা আরাভানি, আরুভানি এবং জাগাপ্পা নামেও পরিচিত। বাংলা ভাষায়, হিজড়া বলতে আন্তঃলিঙ্গ ব্যক্তিবর্গকেও বোঝানো হয়, অর্থাৎ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ক্রোমোজোমের ত্রুটির কারণে জন্মগত যৌন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যাদের জন্মপরবর্তী লিঙ্গ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়। সমাজকর্মী ও রূপান্তরিত লিঙ্গের সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদেরকে সাধারণত খাওয়াজা সিরা  নামে চিহ্নিত করে এবং এসকল ব্যক্তিবর্গকে রূপান্তরকামী ব্যক্তি, রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তি (খুসরা), ক্রস-ড্রেসার বা আন্তঃলিঙ্গীয় পোশাকধারী (জেনানা) বা খোঁজা (নরবান) বলে ডেকে থাকে। "হিজড়া" শব্দটি একটি উর্দু শব্দ, যা সেমেটিক আরবি ধাতুমূল হিজর থেকে "গোত্র হতে পরিত্যাক্ত" অর্থে এসেছে। এবং পরবর্তীতে তা হিন্দি ভাষায় বিদেশী শব্দ হিসেবে প্রবেশ করেছে। শব্দটির ভারতীয় ব্যবহারকে প্রথাগতভাবে ইংরেজিতে "ইউনাক" (Eunuch, অর্থঃ খোজা) বা "হারমাফ্রোডাইট" (hermaphrodite, অর্থঃ উভলিঙ্গ) হিসেবে অনুবাদ করা হয়, যেখানে "পুং জননাঙ্গের অনুপস্থিতি হল উক্ত সংজ্ঞার কেন্দ্রীয় বিষয়বস্ত। দক্ষিণ এশিয়ায়, বহু হিজড়া সুসংজ্ঞায়িত ও সংবদ্ধ সর্ব-হিজড়া সম্প্রদায়ে বসবাস করে, যা একজন গুরুর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই সম্প্রদায়গুলো অসহায় দরিদ্র, পরিত্যাক্ত অথবা পরিবার থেকে পালিয়ে আসা বালকদের দত্তক নেয়ার মাধ্যমে প্রজন্ম হতে প্রজন্মান্তরে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে এদের মধ্যে অনেকেই জীবিকার তাগিদে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করে। সাধারণ মানুষের মত ওদের গলার স্বর নয়। মহিলাদের মত করে কথা বলে ওরা। গলার স্বর অনেকটা নারী পুরুষের মিশ্র ভঙ্গিতে। দুহাতে তালি, কোমড় দোলোনোসহ অদ্ভুত চালচলন পথিককে দৃষ্টি কাড়ে। যাই হোক, সাধারণত অধিকাংশ হিজড়াই স্বাভাবিক পুরুষের শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণকারী, এদের মধ্যে আন্তঃলিঙ্গ বৈচিত্র্য নিয়ে জন্মানো সদস্য খুবই অল্পসংখ্যক। কিছু হিজড়া সম্প্রদায়ে নতুন সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার পূর্বে তাদেরকে "নির্বাণ" নামক এক আচার পালন করতে হয়, যেখানে শিশ্ন, শুক্রথলি এবং শুক্রাশয়দ্বয় অপসারণ করা হয়।

    পাকিস্তান ও বাংলাদেশে, হিজড়াগণ সরকার কর্তৃক আইনগতভাবে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত, যারা সম্পূর্ণরূপে পুরুষ বা নারী কোনটাই নয়। ভারতেও, রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তিবর্গকে তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে সমাজ কর্তৃক পরিত্যাজ্য হওয়া সত্ত্বেও তাদের অধিকারকে আইনগতভাবে সুরক্ষিত করা হয়েছে। নেপাল, পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশ আইনগতভাবে পাসপোর্ট এবং অন্যান্য দাপ্তরিক কাগজপত্রে লিঙ্গ অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে একটি তৃতীয় লিঙ্গের অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

    নবজাতকের কান্নার শব্দে যেন ওরা সারা দেয় তেমনি বিয়ে , জন্মদিন উপলক্ষে দলবদ্ধভাবে ওদের সরব পদচারণা। “ওগো পেয়ারে পোলা নাচাইবি ”। ময়মনসিংহ জেলা, উপজেলা শহর এমনকি গ্রামাঞ্চলের উচ্চ বিত্ত মধ্যবিত্ত পরিবারে নবাগত বাচ্চার কান্না কানে আসলেই ফটকে কড়া নাড়ে ওরা। এরপর ঢোল বাজিয়ে তালি দিয়ে টাকার আবদার। ওদের আবদারে নবজাতকের অভিভাবক মহল কেউবা সাড়া দেয় হাসি মুখে। কেউবা আবার খালি হাতে ফেরৎ দেয়। বেশীরভাগ মানুষই নজজাতককে তুলে দেয় তাদের কোলে। দুহাতের বিচিত্র ভঙ্গির তালি আর ঢোলের তালে তালে কোরাস গায় ওরা। ওদের নেই নির্দিষ্ট কোন পেশা। ওদের জীবন জীবিকা বড়ই করুণ। 

    হিজড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবহৃত একটি পরিভাষা— বিশেষ করে ভারতের ট্রান্সসেক্সয়াল বা ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিকে বুঝিয়ে থাকে।চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ক্রোমোজোমের ত্রুটির কারণে জন্মগত যৌনপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যাদের জন্ম-পরবর্তী লিঙ্গ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়, মূলত তাঁরাই হিজড়া। হিজড়া শব্দের অপর অর্থ হচ্ছে ‘ট্রান্সজেন্ডার’, ট্রান্সজেন্ডার বলতে এমন এক লৈঙ্গিক অবস্থাকে বোঝায় যা দৈহিক বা জেনেটিক কারণে মেয়ে বা ছেলে কোনো শ্রেণিতে পড়ে না। প্রকৃতিতে কিছু মানুষ নারী এবং পুরুষের যৌথ বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। বাংলা ভাষায় এই ধরনের মানুষগুলো হিজড়া নামে পরিচিত। সমার্থক শব্দে শিখণ্ডী, বৃহন্নলা, তৃতীয় লিঙ্গ, উভলিঙ্গ, নপুংসক, ট্রান্সজেন্ডার (ইংরেজি), ইনুখ (হিব্রু), মুখান্নাতুন (আরবি), মাসি, বৌদি, চাচা, তাউ, ওস্তাদ, মাংলিমুখী, কুলিমাদর, ভিলাইমাদর, মামা, পিসি, অজনিকা ষণ্ড, অজনক, সুবিদ, কঞ্চুকী, মহল্লক, ছিন্নমুষ্ক, আক্তা, পুংস্তহীন ইত্যাদি। হরিদ্বারে হিজড়াদের সকলে তাওজি বা পণ্ডিতজি বলে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মে হিজড়াদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

    হিজড়া, সমকামী, উভকামী, রূপান্তরকামী– এঁরা না-নারী না-পুরুষদের দলে অন্তর্ভুক্ত হলে এঁদের সূক্ষ্ম মূলগত পার্থক্য আছে। সবাইকে পাইকারি দরে এক পংক্তিতে ফেলা যাবে না। প্রথমে আসি হিজড়া প্রসঙ্গে।

    হিজড়া : লিঙ্গ ও অণ্ডকোশ কর্তন করে যাঁরা বাচ্চা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে তাঁরা হিজড়া বলে পরিচিত। বা যাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও অপরিণত বা ত্রুটিপূর্ণ যৌনাঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে তাঁদেরও হিজড়া বলা হয়। এঁরা সমকামী হতে পারে আবার নাও হতে পারে। এঁরা সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

    ধর্মবেত্তারা হিজড়াদের নিয়ে বিপুল শ্রম খরচ করে ভয়ানক ভ্রম সৃষ্টি করে রেখেছেন। ঘৃণা আর অবজ্ঞা ছড়িয়ে রেখেছেন। তা সত্ত্বেও হিজড়ারা কেউ নাস্তিক নয়। তথাকথিত ‘ঈশ্বরের এই বিধান ও ধর্মীয় অনুশাসনকে মাথায় পেতে নিয়ে নিজেদেরকে ‘অভিশপ্ত’ বলেই গোটা জীবন কাটিয়ে দেন। 

    আট

    সমকামিতা (হোমোসেক্সুয়ালিটি) বা সমপ্রেম বলতে সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি "রোমান্টিক আকর্ষণ, যৌন আকর্ষণ অথবা যৌন আচরণ"কে বোঝায়। যৌন অভিমুখিতা হিসেবে সমকামিতা বলতে বোঝায় মূলত সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি "আবেগীয়, রোমান্টিক ও/বা যৌন আকর্ষণের একটি স্থায়ী কাঠামোবিন্যাস"। এই ধরনের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ব্যক্তিগত বা সামাজিক পরিচিতি, এই ধরনের আচরণ এবং সমজাতীয় ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত কোনো সম্প্রদায়কেও এই শব্দটি দ্বারা নির্দেশ করা হয়।"

    উভকামিতাবিপরীতকামিতার সাথে সমকামিতা বিপরীতকামী-সমকামী অনবচ্ছেদের অন্তর্গত যৌন অভিমুখিতার তিনটি প্রধান ভাগের অন্যতম বলে স্বীকৃত।বিজ্ঞানীরা সমকামিতার প্রকৃত কারণ জানেন না, কিন্তু তারা তাত্ত্বিকভাবে ধারণা করেন যে, জিনগত, হরমোনগত এবং পরিবেশগত কারণসমূহের এক জটিল আন্তঃক্রিয়ার ফলে এটি ঘটে থাকে তারা জীববিদ্যা-নির্ভর তত্ত্বগুলোকে বেশি সমর্থন করে থাকেন,এর অন্তর্গত হল জিন, মাতৃগর্ভের পরিবেশ, এই দুই প্রভাবের মেলবন্ধন অথবা এই সব কিছুর সাথে সামাজিক প্রভাবের মেলবন্ধন। যৌন অভিমুখিতা নির্ধারণে যে সন্তানপালন বা শৈশবের অভিজ্ঞতার কোনো ভূমিকা আছে তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ সমকামী যৌন আচরণকে অপ্রাকৃতিক মনে করলেও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, সমকামিতা মানব যৌনতার একটি সাধারণ ও প্রাকৃতিক প্রকরণ, এবং অন্য কোনো প্রভাবকের অস্তিত্ব ছাড়া এটি কোনো নেতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে না। যৌন অভিমুখিতা পরিবর্তনের বিভিন্ন কর্মসূচীর কার্যকারিতা সম্পর্কে যথেষ্ট প্রমাণ নেই।

    মহিলা সমকামীদের বোঝাতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দটি হল লেসবিয়ান এবং পুরুষ সমকামীদের ক্ষেত্রে গে, যদিও গে কথাটি প্রায়শ সমকামী মহিলা ও পুরুষ উভয়কে বোঝাতেও সাধারণভাবে ব্যবহৃত হয়। নানা কারণে স্বঘোষিত সমকামীর সংখ্যা এবং মোট জনসংখ্যার মধ্যে সমলৈঙ্গিক সম্পর্কে আবদ্ধ মানুষের অনুপাত নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। এই কারণগুলোর মধ্যে প্রধান হল সমকামভীতিবিপরীতকামবাদের সমর্থনজনিত বৈষম্যের কারণে অনেক সমকামী প্রকাশ্যে তাদের যৌনতা স্বীকার না করা। অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যেও সমকামী আচরণের নিদর্শন নথিভুক্ত হয়েছে।

    অনেক সমকামী মানুষ স্থায়ী পারস্পরিক সম্পর্কে আবদ্ধ আছেন, যদিও আদমশুমারির ফর্ম, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইত্যাদির আনুকূল্যে তাদের আত্মপ্রকাশের পথ নিরাপদ হয়েছে একেবারে সাম্প্রতিক কালে। মূল মনস্তাত্ত্বিক গঠনের দিক দিয়ে এই সম্পর্কগুলো বিপরীতকামী সম্পর্কের সমান।নথিভুক্ত ইতিহাস জুড়ে সমকামী সম্পর্ক এবং কার্যকলাপের প্রশস্তি ও নিন্দা - উভয়েরই নিদর্শন মেলে; কেবল প্রকাশের ভঙ্গিমা ও সংশ্লিষ্ট সংস্কৃতিজনিত তারতম্য দেখা যায়।] ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়েছে, যার অন্তর্গত বিবাহ, দত্তক গ্রহণসন্তানপালন, কর্মক্ষেত্রে সমানাধিকার, সামরিক পরিষেবা, স্বাস্থ্য পরিষেবায় সমানাধিকার, এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সমকামীদের নিরাপত্তার স্বার্থে অ্যান্টি-বুলিং আইন

    বাংলা সমকামিতা শব্দটির গঠন সংস্কৃত-সঞ্জাত। সংস্কৃত শব্দ ‘সম’-এর অন্যতম অর্থ সমান অথবা অনুরূপ এবং ‘কাম’ শব্দের অন্যতম অর্থ যৌন চাহিদা, রতিক্রিয়া তথা যৌন তৃপ্তি। অতঃপর এই দুই শব্দের সংযোগে উৎপন্ন সমকামিতা শব্দ দ্বারা অনুরূপ বা সমান বা একই লিঙ্গের মানুষের (বা প্রাণীর ক্ষেত্রে অন্য প্রাণীর) প্রতি যৌন আকর্ষণকে বোঝায়। সমকামিতার ইংরেজি প্রতিশব্দ হোমোসেক্সুয়ালিটি তৈরি হয়েছে গ্রিক ‘হোমো’ এবং ল্যাটিন ‘সেক্সাস’ শব্দের সমন্বয়ে। গ্রিক ভাষায় ‘হোমো’ বলতে বোঝায় সমধর্মী বা একই ধরনের। আর ‘সেক্সাস’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে যৌনতা।

    বর্তমানে হোমোসেক্সুয়াল শব্দটি বিদ্বৎসমাজে এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হলেও ‘গে’ এবং ‘লেসবিয়ান’ শব্দদুটি অধিক জনপ্রিয়। গে শব্দটির দ্বারা পুরুষ সমকামীদের বোঝানো হয় এবং নারী সমকামীদেরকে বোঝানো হয় লেসবিয়ান শব্দটির দ্বারা। পশ্চিমে ‘গে’ শব্দটি সমকামী অর্থে প্রথম ব্যবহৃত হতে দেখা যায় সম্ভবত ১৯২০ সালে। তবে সে সময় এটির ব্যবহার একেবারেই সমকামীদের নিজস্ব গোত্রভুক্ত ছিলো। মুদ্রিত প্রকাশনায় শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হতে দেখা যায় ১৯৪৭ সালে। লিসা বেন নামে এক হলিউড সেক্রেটারী ‘Vice Versa: America’s Gayest Magazine’ নামের একটি পত্রিকা প্রকাশের সময় সমকামিতার প্রতিশব্দ হিসেবে ‘গে’ শব্দটি ব্যবহার করেন। আর ‘লেসবিয়ান’ শব্দটি এসেছে গ্রিস দেশের ‘লেসবো’ নামক দ্বীপমালা থেকে। কথিত আছে, খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে স্যাফো নামে সেখানকার এক কবি/শিক্ষিকা মেয়েদের সমকামী যৌন জীবন নিয়ে কাব্য রচনা করে ‘কবিতা উৎসব’ পালন করতেন।এইভাবে প্রথম দিকে লেসবিয়ান বলতে ‘লেসবো দ্বীপের অধিবাসী’ বোঝালেও, পরবর্তীতে নারীর সমকামিতার সাথে এটি যুক্ত হয়ে যায়।

    দেশ ও কালভেদে সমকামিতার প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির বিভিন্ন স্তর পরিলক্ষিত হয়েছে। সমকামী সম্পর্ককে স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক বলে মনে করা, এর প্রতি সামাজিক উদাসীনতা, সাধারণ সহনশীলতা বা তীব্র অসহনশীলতা, একে একপ্রকার লঘু পাপ হিসেবে গণ্য করা থেকে শুরু করে আইন প্রণয়ন ও বিচারব্যবস্থার সাহায্যে এর অবদমন এবং মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে সমাজ সমকামিতাকে গ্রহণ বা বর্জন করেছে। প্রাক্‌-শিল্পায়ন সংস্কৃতিসমূহের ঐতিহাসিক ও জাতিতত্ত্বগত নমুনার একটি সুপরিকল্পিত সংকলনে উল্লিখিত তথ্য অনুযায়ী "সমীক্ষাধীন ৪২ টি সংস্কৃতির ৪১ শতাংশে সমকামিতার প্রবল বিরোধিতার নমুনা পাওয়া গেছে; ২১% এর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, আর ১২% জানিয়েছে তারা এমন কোনো ধারণার সঙ্গে পরিচিত নয়। সমীক্ষাধীন ৭০ টি জাতির মধ্যে ৫৯% জানয়েছে সমকামিতা তাদের মধ্যে অনুপস্থিত বা বিরল, এবং অবশিষ্ট ৪১% এর মতে তা উপস্থিত বা 'বিরল নয়'।

    আব্রাহামীয় ধর্মসমূহের দ্বারা প্রভাবিত সংস্কৃতিসমূহে আইনগির্জা কর্তৃক সডোমিকে ঐশ্বরিক বিধানের পরিপন্থী তথা 'প্রকৃতির বিরুদ্ধাচার' বলে অভিহিত করা হয়েছে।এবং ইসলাম ধর্মে সমকামিতা কে হারাম ঘোষণা করা হয়ে। কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী লূতের জাতিকে সমকামিতা অপরাধে ধংস্য করা হয়পুরুষদের মধ্যে পায়ুসঙ্গমের নিন্দা অবশ্য খ্রিস্টধর্মের চেয়েও প্রাচীন; প্লেটোর কাজকর্মেও "অপ্রাকৃতিক"-এর ধারণার প্রমাণ পাওয়া যায়।

    বহু ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, যেমন সক্রেটিস, লর্ড বায়রন, দ্বিতীয় এডওয়ার্ড, হাদ্রিয়ান-এর ক্ষেত্রে সমকামী বা উভকামীর মত পরিভাষাগুলো মাঝেমধ্যে প্রয়োগ করা হয়। মিশেল ফুকোর ন্যায় কিছু দার্শনিকের মতে এই অভ্যাস ভুল, কারণ প্রাচীন বা মধ্যযুগীয় সমাজে যৌনতার উক্ত ধারণাগুলির অস্তিত্ব ছিল না, তাই আধুনিক যুগে নির্ণীত শব্দ দিয়ে তৎকালীন পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গেলে কালবিভ্রাটজনিত দোষের আশঙ্কা তৈরি হয়। অবশ্য অন্যান্য দার্শনিক এই বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।

    সমাজবিজ্ঞানে সমকামিতার প্রতি "আবশ্যকতাবাদী" ও "গঠনবাদী" দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে মতভেদ আছে। প্রথম পক্ষের মতে "স্ট্রেট" (বিপরীতকামী), "গে" প্রভৃতি শব্দগুলি দেশ, কাল তথা সংস্কৃতি-নিরপেক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়; দ্বিতীয় পক্ষের সমর্থকেরা মনে করেন এই শব্দগুলি কেবল নির্দিষ্ট সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিতেই প্রযোজ্য। "আবশ্যকতাবাদীরা" বলেন, যৌন অভিমুখিতা হল স্বতঃস্ফূর্ত জৈবিক ক্রিয়াবিশেষ, কিন্তু "গঠনবাদীরা" বলেন তা অর্জিত বৈশিষ্ট্য।বিজ্ঞানের দার্শনিক মাইকেল রুজ বলেছেন যে ফুকো প্রভাবিত সামাজিক গঠনবাদী মতবাদটি ইতিহাসের বিশেষ কিছু নিদর্শনের উপর জোর দেওয়ার ফলে এতে সমকামীদের বাস্তব অবস্থার সাথে তাদের সম্পর্কে অবশিষ্ট জনসমাজের ভ্রান্তিকে গুলিয়ে ফেলার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    103 | 104 | 105 | 106 | 107 | 110 | 113 | 114 | 119 | 120 | 121 | 123 | 124 | 124 | 125 | 125 | 126 | 127 | 127 | 128 | 129 | 131 | 133 | 134 | 135 | 136 | 138 | 139 | 140 | 141 | 143 | 144 | 145 | 147 | 148 | 149 | 149 | 150 | 151 | 152 | 153 | 154 | 155 | 156 | 157 | 158 | 159 | 160 | 161 | 162 | 163 | 164 | 165 | 167 | 168 | 169 | 170 | 171 | 172 | 173 | 174 | 175 | 176 | 176 | 177 | 178 | 179 | 180 | 181 | 182 | 183 | 184 | 185 | 186 | 187 | 188 | 189 | 190 | 191 | 192 | 192 | 193 | 194 | 195 | 196 | 198 | 199 | 200
  • লিঙ্গরাজনীতি | ০৮ জুলাই ২০২৩ | ৫৫৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন