পিসতুতো বোনকে চুমু খাবার চুক্তি
হাংরি মামলার সময়ে পিসতুতো দাদা অজয় হালদার একদিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে এসে জানালো যে পিসেমশায় একটা পারিবারিক সভা ডেকেছেন তাতে আত্মীয়দের উপস্হিত থাকতে হবে। সেন্টুদা বলল, যেন বেশ স্বাভাবিক ঘটনা, ‘গীতু ওর বরের ভাগ্নের সঙ্গে ইলোপ করেছিল। কয়েকদিন আগে সেই ভাগ্নে, তার নাম কিংকর, আর গীতু এসে জানিয়ে গিয়েছিল যে ওরা কালীঘাটে বিয়ে করে নিয়েছে। গীতু বলেছে ও কিংকরের সঙ্গে সংসার করছে, বরকে ছেড়ে দেবে। যাদবপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে সংসারের জন্য সব জিনিসপত্র কিনে ফেলেছে।’
আমার সেসময়ে কোথাও মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না বলে আমার খোঁজে আদালতে আসতে হয়েছিল ওনাকে। সেসময়ে রাতের বেলায় সুবিমল বসাকের জেঠার বৈঠকখানা পাড়ায় স্যাকরার দোকানঘরে শুতুম বা শরদ দেওড়া নামের মারোয়াড়ি সাহিত্যিকের গদিতে। উত্তরপাড়ার আদিবাড়ির খণ্ডহরে অনেক সময়ে থাকতুম যখন দুটো ডেটের মাঝে সপ্তাহের বেশি সময় থাকতো।
সেন্টুদাদের আহিরিটোলায় কেবল একটাই শোবার ঘর ছিল, তাই সেখানে রাতে শোবার মতন জায়গা কুলোতো না। সেন্টুদারা নিজেরাই গরমকালে ছাদে উঠে শুতো আর শীতকালে ঘরে গাদাগাদি করে। খাটটার তলায় চার ভাই আর দুই বোন শোবার দরুন মেঝে একেবারে চকচকে থাকতো। খাটে শুতেন পিসিমা আর পিসেমশায়।
—তোমাদের ঘরে তো জায়গা নেই, সভা হবে কোথায়? জিগ্যেস করলুম।
—তুই সকাল দশটায় আমাদের বাড়ি চলে আসিস, তোর দাদাকেও বলেছি, যেখানে সভা বসবে, নিয়ে যাবো।
দাদার অবস্হা আরও খারাপ ছিল কলকাতায়। বন্ধুরা দাদার নানা পোস্টিঙের জায়গায় দলবেঁধে বা সপরিবারে যেতো, সেসব নিয়ে উপন্যাস-গল্প লিখেছে, কিন্তু কেউই দাদাকে তাদের বাড়িতে থাকতে দেয়নি মামলার সময়ে। পরে দাদা যখন বাঁশদ্রোণীতে বাড়ি করল তখনও অনেকে গিয়ে সেই বাড়িতে থেকেছে, বিনা ভাড়ায়। দাদার সস্তা হোটেল জানা ছিল সেখানেই উঠেছিল হাংরি মামলার সময়ে।
সেন্টুদা আদালত চত্ত্বর ছাড়ার কিছুক্ষণ পর গীতু এলো, একই প্রস্তাব নিয়ে।
আমি ওকে বললুম, যাবো, কিন্তু তুই আমাকে চুমু খেতে দিবি।
গীতু ফিসফিসিয়ে বলল, জুতো মারবো, শালা, তুই আমার নিজের মামাতো ভাই হয়ে চুমু খেতে চাইছিস ? এই সব লোচ্চামি করিস বলেই এখন মামলা লড়তে হচ্ছে।
বললুম, কী করব ! তুই সেক্সুয়ালি এতো অ্যাট্রাকটিভ, আমি ব্রাহ্ম হলে তোকে বিয়ে করতুম।
গীতু দেখতে বেশ ভালো, ফর্সা, বড়ো-বড়ো চোখ, চুলও পিঠে ছড়ানো কোমর পর্যন্ত। গীতাশ্রী বা গীতু পিসেমশায়ের বড়ো মেয়ে। আমার কথা শুনে রাজি হয়ে গেল গীতু। মামলা কোর্টে উঠল আর পরের ডেট দিলেন জজসাহেব।
বাসে চেপে গীতু বলল, বাসায় চল, দেখে তো মনে হচ্ছে এক বছর চান করিসনি, চান করে চুমু খাস আর দুপুরের মাছ-ভাতও খেয়ে নিস। দাদা তোকে বলেনি, কিজন্য তোদের ডাকা হয়েছে। আমি আমার কুচ্ছিত বরকে ছেড়ে ওর কম বয়সী ভাগ্নের সঙ্গে সংসার পেতেছি আজ দু মাস হতে চলল।
গেলুম গীতুদের বাড়ি।
ও তালা খুলে ফ্ল্যাটে ঠুকতেই জড়িয়ে ধরে চুমু খেলুম। গীতু বাধা দিল না, চুমু খেতে-খেতেই বলল, আর কিছু করবি না, উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছিস, ছাড় এবার।
ঠোঁটে ঠোঁট রেখেই বললুম, “It’s the kind of kiss that inspires stars to climb into the sky and light up the world.”
গীতু বলল, সাহিত্য করিসনি, চুমুর সময় চুপচাপ চুমু খা। সাহিত্য করতে গিয়ে তো গাড্ডায় পড়েছিস।
হাত ছাড়িয়ে গীতু ভেতরের ঘরে গিয়ে একটা ওয়াকিঙ স্টিক এনে আমার দিকে উঁচিয়ে বলল, ল্যাঙটো হ।
আমি ভ্যাবাচাকা।
গীতু আরেকবার বলল, ল্যঙটো হ, নইলে এটা দিয়ে পেটাবো, তুই গায়ের জোর দেখাবার আগে কয়েক ঘা কষে দেবোই দেবো।
আগে কখনও কোনো যুবতীর সামনে উলঙ্গ হইনি। গীতু কী চায় বুঝতে পারছিলুম না। ট্রাউজার খুলে নামিয়ে দিলুম। সেসময়ে আণ্ডারওয়ার পরতুম না, কেননা বহুদিন চান করা হয় না, কাচাকাচির ঝামেলা।
ছড়িটা আমার লিঙ্গে ঠেকিয়ে গীতু বলল, আমার বরটার এর চেয়ে ওয়ানফোর্থ। কিংকরেরও তোরই মাপের। অমন বরের সঙ্গে ঘর করার মানে হয় না; দেখতেও কুচ্ছিত। সভায় গেলে ওকে দেখে তোর বমি পেয়ে যাবে।
গীতু ছড়িটা দেয়ালে ঠেসান দিয়ে রাখতেই জড়িয়ে চুমু খেলুম। গীতু বলল, বজ্জাত কোথাকার, অন্য কিছু করবি তো চেঁচিয়ে লোক জড়ো করব।
বললুম, তুইই তো আইরিটোলার বাড়িতে খাটের তলায় শুয়ে রাত্তিরে জড়িয়ে চুমু খেয়ে ছিলিস। শুরুটা তুইই করেছিলিস। ল্যাঙটো হতে বললি, আর উত্তেজিত করে দিলি।
—তখন বয়স কম ছিল আর তোকে দেখে মনটা চাগিয়ে উঠেছিল।
চুমু খেয়ে ভালো লাগলো। ট্রাউজার পরে, বললুম, ওই সভায় দেখা হবে। তোর পক্ষেই ভোট দেবো।
গেলুম পিসেমশায়ের বাড়ি। সবাই বেশ গম্ভীর। ব্যাপারটা কেউ বলল না। আমাদের দুই ভাইকে নিয়ে সেন্টুদা বিবেকানন্দ রোডের একটা বাড়ির উদ্দেশে চলল। পিসিমা আর পিসেমশায় গেলেন না আমাদের সঙ্গে।
—ব্যাপারটা কী ? দাদা জানতে চাইল।
—তোরা ওখানে গিয়ে একটা ফয়সালা করবি, তাই ডাকা হয়েছে, ওখানে তোরা আমাদের প্রতিনিধি হয়ে যাচ্ছেস। বললেন পিসিমা।
একটা বাড়িতে ঢুকলুম। পুরোনো আমলের দোতলা বাড়ি।
যেতে-যেতে সেন্টুদা বলল, এই বাড়ির ছেলের সঙ্গে গীতুর বিয়ে হয়েছিল।
সভা আরম্ভ হয়ে গেয়েছিল। সবাই মেঝেয় বসে। সবাই গম্ভীর। প্রায় কুড়ি-পঁচিশজন। ডিটেকটিভ উপন্যাস লেখক স্বপনকুমারও ছিলেন; উনি গীতুর শশুরবাড়ির কেউ হন, শুনেছিলুম। সভায় গীতুর শশুর
বাড়ির লোকজনই বেশি। সেন্টুদা আর আমরা দুজন গীতুর বাপের বাড়ির লোক হিসেবে কোরাম পুরো করলুম।
সেন্টুদা আর আমরা পৌঁছোবার পর গীতুর শশুর জানালেন যে পারিবারিক সভা ডাকা হয়েছে গীতু আর ওর বরের সম্পর্ক নির্ণয় নেবার জন্য। গীতুর বরকে দেখলুম, প্রথমবার, গায়ের রঙ বেশ ময়লা, রোগা, ঢ্যাঙা, দাঁত বেরিয়ে আছে। বুঝলুম যে পিসেমশায় যৌতুক দেবার অবস্হায় ছিলেন না বলে এরকম এক পাত্রের সঙ্গে গীতুর বিয়ে দিয়েছেন। আরও খোঁজখবর করলে এর চেয়ে ভালো পাত্র পেতেন।
বরের বাড়ির কেউ একজন, পরে জেনেছিলুম বরের মামা, বেতের মোড়ায় বসেছিলেন, জানালেন যে, গীতু ওর বরকে পছন্দ করতে পারেনি। এমনকি বাসরঘরে রাগ দেখিয়েছিল। যখন-তখন বরের সঙ্গে ঝগড়া করত। একই ঘরে শুতে চাইত না। এখন কিংকরের সঙ্গে থাকে। বিয়ে-করা বরকে ছেড়ে দেবে।
—এখন কিংকরের সঙ্গে চুটিয়ে সংসার করছে ! কম বয়সী এক বউ বললেন হাসিমুখে। ওনার ইশারা বুঝে অনেকেই ফিকফিকে হাসলেন।
–ছেড়ে দেবে ? অচেনা এক মহিলা জিগ্যেস করলেন।
–হ্যাঁ, গীতু ওর বরকে ভেন্ন করে দেবে, তাহলে কিংকরের সঙ্গে গীতু সংসার করতে পারবে।কেউ একজন বলল।
—আগেকার কালে বউ পছন্দ না হলে বর তাকে ভেন্ন করে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিত; তখনকার দিনে চার-পাঁচটা বউ থাকতো বলে ওসব করতে পারতো, কিন্তু বউই বরকে ভেন্ন করে দিতে চাইছে, এমন কথা তো শুনিনি। বেশ ভারিক্কি টাইপের এক প্রৌঢ়া বললেন।
–না, বর ভেন্ন করে দেবে, তাহলে ল্যাটা চুকে যাবে, লোকের মুখে অকথা-কুকথা শুনতে হবে না। বললেন মামাবাবু।
কিংকর ছেলেটার সঙ্গে গীতু মাসদুয়েক আছে। কিংকরকে দেখে আমার ভালোই লাগল, স্মার্ট।
দাদা জিগ্যেস করল, আমাদের কোনও ভূমিকা আছে?
সেন্টুদা বলল, পরিবারের লোকেরা অনুমোদন করলে গীতাকে ওর বর ভেন্ন করে দেবে।
যাঁরা উপস্হিত ছিলেন তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ ভেন্ন করার পক্ষে মত দিলেন। কয়েকজন নিরপেক্ষ রইলেন। কয়েকজন বিরোধ করেও বললেন, অমন মেয়েকে ঘরে তোলা যাবে না।
গীতুর বর মুণ্ডু ঝুলিয়ে বসেছিল। বেচারা। আমি ভেন্ন করার পক্ষে ছিলুম। দাদা ছিল নিরপেক্ষ। ‘ভেন্ন’ হবার প্রক্রিয়া শুরু হলো আর তক্ষুনি শেষ হয়ে গেল।
এই সভায় আমি গীতুর মামাতো ভাই। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় সুযোগ পেয়ে ওকে জড়িয়ে বললুম, সুখে সংসার কর, একদিন যাবো।
গীতু ফিসফিসিয়ে বলল, রাসকেল লম্পট কোথাকার। সবাইকে শুনিয়ে বলল, আসিস।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।