সেই মামলায় বলা হয়েছে, মেঘনা আলম, দেওয়ান সমির এবং অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন নাকি এক বিদেশি কূটনীতিকের কাছে পাঁচ মিলিয়ন ডলার দাবি করেছিলেন।
আবারও সেই একই কথা, মামলার কোথাও সেই কূটনীতিকের নাম নেই। যেন মহামান্য কূটনৈতিক এক 'খোদাই খাসি', যার প্রতি অক্তে নেকি, তার নামোল্লেখ পর্যন্ত শরিয়তে নিষিদ্ধ।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, গত ২৯ মার্চ ধানমন্ডির একটি রেস্তোরাঁয় একটি গোপন বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকে মেঘনা, সমিরসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই নাকি কূটনীতিকের কাছে এত বড় অঙ্কের টাকা চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই গোপন বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল নাকি প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায় করা। আসামিদের এই কাজ নাকি ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষতি’ করতে পারে!
আরব দেশে সোনার খনি, ডলার মাখা বালি
ওইদিন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী সাংবাদিকদের জানান, বিচারকের অনুমতি নিয়ে মেঘনা নাকি আদালতেও কথা বলেছেন। তিনি আদালতকে বলেছেন, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলানের সঙ্গেই তার পরিচয় ছিল। এমনকি রাষ্ট্রদূত নাকি তাকে ফোনও করেছিলেন!
ওমর ফারুক ফারুকী আরও জানান, মেঘনা নাকি আদালতে দাবি করেছেন যে তিনি দেওয়ান সমিরকে চেনেনই না।
আদালত মেঘনাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে, দেওয়ান সমিরকে পাঁচ দিনের জন্য রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়। ঢাকার সিএমএম আদালত এই নির্দেশ দেয়।
এর আগে, ভাটারা থানায় দায়ের করা আরেকটি চাঁদাবাজির মামলায় গত ১১ এপ্রিল গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এই দেওয়ান সমির। সেই মামলায় তিনি এখনও রিমান্ডে আছেন।
গত ১০ এপ্রিল রাতে ডিবি পুলিশ মেঘনাকে তার বসুন্ধরার বাসা থেকে আটক করে। পরের দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে আটকের আসল কারণ স্পষ্ট না করায় দেশজুড়ে শুরু হয় নানা আলোচনা, ক্রমেই প্রকাশ্য হতে থাকে আরবি ঘোড়ায় পররাষ্ট্রীয় কদমবুচি।
গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তখন এক বিবৃতিতে জানায়, মেঘনার বিরুদ্ধে নাকি 'রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত' করা, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে 'আন্তর্জাতিক সম্পর্কে খারাপ প্রভাব ফেলার চেষ্টা' এবং দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মডেল মেঘনা যখন গলার কাঁটা
মিডিয়ার 'মেঘনার হ্যানি ট্রাপ'র সুপার ফ্লপ কিছু গল্পগাছা এবং তৎসংলগ্ন লেজে গোবরে কীর্তিতে প্রকাশ্য হতে থাকে ইউনূস সরকারের 'লাল ইমেজ' ক্রমেই ফিকে হয়ে আসার আইরনি।
১৩ এপ্রিল খোদ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নিজেই স্বীকার করে বলেন, মেঘনাকে 'আটকের প্রক্রিয়াটি সঠিক হয়নি'! নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করা হয়েছে।
ঠিক সেদিনই, মেঘনাকে আটকের পদ্ধতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে তার পদ থেকে সরিয়ে ডিএমপি সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।
ওইদিনই মেঘনার বাবা বদরুল আলম একটি রিট আবেদন করলে আদালত তা আমলে নেয়।
হাইকোর্ট জানতে চায়, কোনো পরোয়ানা ছাড়া আটক, গ্রেপ্তারের কারণ না জানানো, ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে হেফাজতে রাখা এবং আইনজীবীর সাহায্য না পাওয়ার সুযোগ কেন বেআইনি নয়?
পাশাপাশি, বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশের আইনগত বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
অন্যদিকে ব্যাকফুটে খেলার নজিরও আছে ১৫ এপ্রিল সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, মডেল মেঘনার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মেঘনাকে আটক করার ঘটনাকে তিনি ‘বেআইনি কোনো পদক্ষেপ নয়’ বলেও মন্তব্য করেন। এই নিয়েও বিভিন্ন মহলে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
আইন উপদেষ্টা কেন ‘প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি’ বলেছেন, সে বিষয়ে তার কিছু জানা নেই উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, উপদেষ্টা নাকি এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
নদী ভরা ঢেউ, বোঝ না তো কেউ
'আমি একদিন নদীর ধারে গিয়েছিলাম,
মেঘনার তীরে,
যেখানে ঢেউগুলো
নাচে অবিরাম'...
বলা ভাল, মার্কিন লবির প্রক্সি যুদ্ধের পর ইউনূস জামানার বিএনপি-জামায়াত-হেফাজতের সফট তালেবানি চালিকাশক্তি সেভাবে কোনো দিকই সামাল দিতে পারছে না।
সম্ভবতঃ সবচেয়ে বেশি জন দুর্ভোগ এখন দ্রব্যমূল্য নিয়ে, আকাশচুম্বী চাল, সবজি, ডিম, মাছ-মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার। পুরনো ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের বাজার সিন্ডিকেট-চাঁদাবাজ চক্র ৩৬ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর গা ঢাকা দিয়েছে সত্য, কিন্তু তৈরি হয়েছে আবারও সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজ চক্র।
এবার ছাত্রদল-বিএনপি অনেকটা প্রকাশ্যেই তৈরি করেছে এই নতুন বাজার সিন্ডিকেট, বলা ভাল সিন্ডিকেটের মুখ ও দল বদল হয়েছে মাত্র, পরিস্থিতির সংস্কার খুব একটা হয়নি। এ নিয়ে খোদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারাও খোলাখুলি আলোচনা করেছেন, প্রকাশ পেয়েছে তাদের অসহায়ত্ব।
এ অবস্থায় রাষ্ট্র সংস্কার বাদ দিয়েই সরকারের ওপর দ্রুত নির্বাচন আয়োজনে দেশি-বিদেশি চাপ বাড়ছেই।
'সামাল সামাল' পরিস্থিতিতে টালমাটাল সরকারের মডেল মেঘনায় হোঁচট খাওয়া খুব বড় ঘটনা, কারণ এটি জ্বরের মত অসুখ নয়, বরং অসুখের পূর্ব লক্ষ্মণ মাত্র।
এছাড়া মেঘনাকাণ্ডে সরকারের ইমেজ নামতে নামতে কোন অতলে নামে সেটিই এখন দেখার বিষয়।
আর সেইসংগে ইউনূস জামানার এক্সিট রুট তো বটেই।।