এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  টুকরো খাবার

  • খিক খিক.....অন্যের চিঠি পড়ার আনন্দ গো....

    Malay Roychoudhury লেখকের গ্রাহক হোন
    টুকরো খাবার | ১৩ নভেম্বর ২০২২ | ১০১২ বার পঠিত
  • 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 | 31 | 32 | 33 | 34 | 35 | 36 | 37 | 38 | 39 | 40 | 41 | 42 | 43 | 44 | 45 | 46 | 47 | 48 | 49 | 50 | 51 | 52 | 53 | 54 | 55 | 56 | 58 | 59 | 60 | 61 | 62 | 63 | 64 | 65 | 66 | 67 | 68 | 69 | 70 | 71 | 72 | 73 | 74 | 75 | 76 | 77 | 78 | 79 | 80 | 81 | 82 | 83 | 84 | 85 | 86 | 87 | 88 | 89 | 90 | 91 | 92 | 93
    হাংরি আন্দোলনের সংশ্লিষ্ট চিঠিপত্র

    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে লেখা সমীর রায়চৌধুরীর চিঠি

    Bombay, ২০/৫
    সুনীল
    তোর দীর্ঘ চিঠি পেলাম। তোর মানসিক অবস্হা জেনে যথেষ্ট কষ্ট পেয়েছি। শক্তিকে আমরাই এত বড় করে তুলেছি। এর মূল দায়িত্ব তোর, আমার ও মলয়ের। এবং এখনো আমার প্রতিটি বন্ধুকে বড় করেই তুলতে চাই আমি। শক্তিকে লেখার জন্য প্রাথমিক উৎসাহ তুইই দিয়েছিলি। বারেবারে বাহবা দিয়ে “বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ কবি” একথা তুইই প্রথম তুলেছিস। অর্থাৎ শুধু এই যে আজ শক্তি সেকথা নিজে বলছে। চাইবাসায় থাকতেই তোকে বাদ দিয়ে শিল্পের সিংহাসনে বসার একটা ঘোরতর প্ল্যান উৎপল ও শক্তি অনেকদিন আগেই করেছিল। আমাকেও উপস্হিত থাকতে হয়েছিল এই সব আলোচনায়। পত্রিকা বের করার প্ল্যান তখনই হয়। আন্দোলনের ব্যাপারটাও মলয় বারবার তাগাদা দিতে থাকে। আমি বরাবরই কৃত্তিবাসকে ছাড়তে পারব না জানিয়েছি। নানান সেন্টিমেন্টাল কারণে কৃত্তিবাসকে আমি আমার নিজের পত্রিকা মনে করি। অনেকের মতন ‘সুনীলের কাগজ’ মনে করা সম্ভব নয়। শক্তি ও উৎপল তোকে বাদ দিয়ে ‘জেব্রা’ বার করতে পারবে কিনা মনে হয় না। অন্তত মলয় এটা হতে দেবে না। তাছাড়া সমস্ত নীচতার মধ্যেও সূক্ষ্ম বোধশক্তির দংশন শক্তিও এড়াতে পারবে না। আমাদের মধ্যে একটা ভাঙন গড়ে উঠবে এ আমার বিশ্বাস হয় না। হলে শক্তিরই প্রচণ্ড ক্ষতি হবে। টাকাপয়সার দরকার ওর শিল্পের জন্যও, শীলাও আছে, দার্শনিক ঋণও প্রয়োজন, সমীর ও মলয়কে ও সেইসঙ্গে সুনীলকে বাদ দিলে যে মারাত্মক অবস্হায় ও পড়বে তা ও জানে। আমাকে শক্তি লিখেছে ‘জেব্রা’য় তোর লেখা থাকছে। বেরোতে নাকি মাস দুয়েক দেরি। বরং উৎপলই একটু বেশিমাত্রায় তোর বিরোধী। হয়তো ঈর্ষা, হয়তো অন্য কোনো কারণ। উৎপলকে খুশি রাখতে গিয়ে হয়তো এই সব জটিলতায় শক্তি বাধ্য হচ্ছে। মলয়ের অভিমান এই যে তুই ওকে বিন্দুমাত্র স্নেহ করিস না; নিতান্ত ছেলেমানুষী। সেবার শীলা পাটনায় ভর্তি হতে গেলে শক্তিকে পাটনায় নিয়ে যাই আমি। সেখানে মলয় ওকে এই আন্দোলন সম্পর্কে Convince করে। ছোটোগল্পে লিখেছে যে গল্পটা, তারই প্লট ও প্ল্যান মলয় শক্তিকে দেয় (ক্ষুৎকাতর আক্রমণ)। ঠিক হয় যে কলকাতায় গিয়ে পুস্তিকা বের করে ব্যাপারটা আরম্ভ হবে। আমরা সবাই থাকবো। তুইও নিশ্চয়ই। আমাদের পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষা না করেই শক্তি কলকাতায় ফিরেই ব্যাপারটা আরম্ভ করে দেয়। এদিকে ট্রেনিং-এ চলে আসতে হয় আমাকে। মলয় পাটনায়। কলকাতায় শক্তি একা নানান ভাবে নিজের স্বপক্ষে সিংহাসন গড়ে তোলে ক্রমে। তুই ব্যাপারটায় যোগ না দেওয়ায়, যেটা ভুল-বোঝাবুঝিতে পেছিয়ে গেছে, আজ অবস্হা এখানে এসে দাঁড়িয়েছে। এটা মলয়ও বলেছে। মলয় এখন যেকোনো রকমে তোকে চায়। ফলে হয়তো তোকে এই ধরণের আক্রমণ চালাচ্ছে। অদ্ভুত সব জটিলতা। ‘ক্ষুধার্ত’ নামে একটা কবিতা সংকলন বার করতে চায় ও। আমাকে লিখেছে তোকে পদ্য পাঠাতে বলতে। ব্যাপারটা নিজেই সম্পাদনা করতে চায়, শক্তির জটিলতা এড়িয়ে। সন্দীপনও বোধহয় একটা গদ্য সংকলন বের করবে। আমি ‘চিহ্ণ’, ‘ছোটগল্প’ ও ‘জেব্রা’র জন্য ছোটগল্প পাঠিয়েছি ওদেরই অনুরোধে।

    খ্যাতির প্রতি শক্তির প্রলোভন চিরদিনই আছে। ওর পরিবেশ অনুযায়ী হয়তো এটা স্বাভাবিক। আসলে মানুষ না হয়েই শিল্পী হওয়া যায়, এটাই যতো গণ্ডগোলের। ছোটোলোক, নীচ ও চোরও শিল্পী হতে পারে। শিল্পী হওয়ার জন্য বরং এসব ব্যাপার সাহায্যই করে। ফলে বন্ধুত্ব, মনুষ্যত্ব নিয়ে গণ্ডোগোল বাধে। এক মুহূর্তেই হয়তো শক্তির সমস্ত দম্ভ, অহংকার, নীচতা ভেঙে চুরমার করে দেওয়া যায় বাংলাদেশের কাছে। এর উপযুক্ত নজিরের অভাব নেই আমার কাছে; কিন্তু শক্তির বিরুদ্ধে বা কারোর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয় কোনোদিন। আমার কতকগুলো নিজস্ব আদর্শ আছে, তা ভুল বা ঠিক হোক আমি তা নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। প্রতিক্রিয়া হয়ে বেঁচে থাকতে চাই না।

    কৃত্তিবাসের জন্যও তোর যে আদর্শ, তাকে ধরে রাখতে হবে তোকে, আশপাশের কারো চিৎকারে বিব্রত হওয়ার কিছুই নেই। কৃত্তিবাস আমরা বের করে যাবোই। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিল্পের চেয়ে মানুষকে বেশি ভালোবাসি। শক্তি শিল্পী হিসেবে অনেক বড়ো ও মানুষের চেয়ে শিল্পকে অনেক অনেক বড়ো মনে করে। আমি শিল্পকে পৃথক মনে করতে পারি না।

    প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গী পৃথক হওয়াই স্বাভাবিক এবং উচিতও। শক্তি বা উৎপলের মতো কবিতা না লিখলে কবি নয়, এসব ছেলেমানুষীতে আমি বিশ্বাস করি না। শক্তির কিছু-কিছু কবিতা যেমন আমাকে উন্মত্ত  বিহ্বল করে, অলোকরঞ্জনের কোনো কোনো কবিতায় আমি তেমনই প্রস্ফূট হয়ে যাই। সেই মুহূর্তে অলোকরঞ্জনকে আমার সমস্ত সত্তার মালিক মনে হয়। কি করে তাকে অস্বীকার করি? তেমনই হয়তো এমনও কেউ আছেন যাঁর তারাপদর পদ্যে আরোগ্য হয়। এসব শ্রেষ্ঠত্ব স্হির করার আমরা কে? যাঁরা কবিতা পড়েন তাঁদের ওপরই, সময়ের ওপর, এসব ছেড়ে না দিয়ে নিজেদের ঢাক ঢোল নিয়ে কাড়াকাড়ি করার কি যে সুখ আমি বুঝি না। এসব চালিয়ে গেলে শক্তি অনেক বড়ো ভুল করবে। যতো বড়ো হতে পারে ও তাকে নিজ হাতে খর্ব করবে। হয়তো অ্যালেনের বিশ্বজোড়া নাম দেখে ও কিছুটা উত্তেজিত হয়েছে। একথা শক্তি কয়েকবার বলেওছে আমাকে।

    জুনে পনেরো তারিখে এখান থেকে রওনা হয়ে সতেরো তারিখে চাইবাসা পৌঁছোব। তুই আয় না তখন। শক্তিকেও আসতে বলব। একসঙ্গে তিনজন থাকলে অনেক ভুল বোঝাবুঝি ভেঙে যাবে আপনা থেকেই। চারিদিকে বেড়িয়ে বেড়ানো যাবে। বেলাও বেশ সুস্হ হয়ে উঠেছে।

    চিঠি দিস। হাংরি জেনারেশনের বিরুদ্ধেই না হয় কয়েকটা প্রচণ্ড গদ্য ও পদ্য লেখ। হাংরি জেনারেশনের একটা বিশেষ পুস্তিকায় বের করব আমি; মলয়ও রাজি হবে। আসলে এই সব আন্দোলনের চেয়ে হৃদয়ের আন্দোলনটাই আগে দরকার।

    সারা জীবন একাকীত্বের দুর্ভোগ হয়তো এভাবেই আত্মসাৎ করে যেতে হবে আমাকে। তবু এবং হয়তো এই জন্যেই শিল্পের চেয়ে আমি মানুষকে পৃথক করতে পারি না, বড়ো মনে করার বা ছোট মনে করার কারণ খুঁজে পাই না।
    সমীর রায়চৌধুরী


    হাংরি আন্দোলনের সময়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে লেখা মলয় রায়চৌধুরীর চিঠি

    পাটনা
    ১.৯.১৯৬২
    সুনীলদা,
    শক্তিদাকে আমি ভয়ংকর ভালবাসি, অথচ শক্তিদা আমাকে ভালো তো বাসেই না, উপরন্তু উদাসীন। আপনি লক্ষ করে থাকবেন, আধুনিক কবিতা বা আধুনিক ছোটগল্প সম্পর্কে আমার এমন কোনো প্রবন্ধ নেই যাতে শক্তিদার নাম নেই। শক্তিদা তো আমার কথা ভুলেই থাকেন। কেবল কলকাতার কিছু যুবকের সঙ্গে সময় কাটান, যারা শক্তিদাকে শ্রদ্ধা করা তো দূরের কথা, আমার মতন ভালোবাসে না।
    শক্তিদা একেবারে মেয়েদের মতো। সুতরাং শক্তিদাকে আমার কাছে টেনে এনে, আমার অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভাগিয়ে দেওয়ার একমাত্র উপায় হলো চতুর্দিক থেকে ওঁকে আক্রমণ করে দিশেহারা করে দেওয়া, তারপর উপর্যুপরি আকর্ষণ করা -- অনেকটা মেফিসটোফিলিসের মতো।
    আমি জানি, আক্রমণের পর হঠাৎ আহ্বান জানালে, তখন আর আমার সম্পর্কে শক্তিদার উদাসীন থাকা সম্ভব হবে না। আর আমি ছাড়া এখন শক্তিদার চলবেও না।
    শক্তিদাকে আমি লিখেছি, প্রেসের সব কাজ আপনাকে বুঝিয়ে দিতে। এই ইশারাটা আমি আশা করেছিলাম কাজ করবে। ভেবেছিলাম যে শক্তিদা নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন, যে সুনীলদা সম্পর্কে আমি আজ পর্যন্ত কোথাও কিছু লিখিনি, তাঁকেই বলছি দায়িত্বটা দিতে। কিন্তু এর পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলেন উনি, ধরতে পারলেন না কি আমার বলার উদ্দেশ্যটা। পাটনায় যখন এসেছিলেন শক্তিদা, তখন ওঁর সমস্ত রচনার গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ওনাকে জানিয়েছিলাম। অথচ উনি বুঝতেই পারলেন না শুধু ওঁর রচনারই আমি পারছি আলোচনা করতে, আরও যাঁদের নাম উনি করলেন যাঁদের সম্পর্কে আমায় হ্যাঁ-হুঁ দিয়ে সারতে হলো।
    শক্তিদা আমার আক্রমণাত্মক চিঠি আপনাকে দেখিয়েছেন। ঠিক তারপরেই আহ্বানের চিঠিটা পেয়ে উনি নিশ্চয়ই ঘাবড়ে গেছেন। বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই যে আক্রমণ করাটা ছিল আহ্বানের অন্য রূপ। শক্তিদাকে অপমান করা আমার পক্ষে অসম্ভব। কারণ, দাদার চেয়েও শক্তিদাকে বোধহয় আমি বেশি ভালোবাসি। এখন, শক্তিদাকে ভালো বাসতেই হবে আমায়। শক্তিদা কলকাতায় আরও অনেকের সঙ্গে ঘুরবেন। আমার সম্পর্কে উদাসীন থাকবেন, এটা আমার পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব।
    আমি যে চিঠি লিখব, শক্তিদা তার উত্তর দেবেন দাদাকে। অথচ দাদা বা আপনি শক্তিদাকে যতোটা ভালোবাসেন, আমি ওঁকে তার চেয়েও বেশি ভালোবাসি।
    আপনি হয়তো বলবেন, “শক্তি যেরকম মেয়েলি, তুমি সেরকম ছেলেমানুষ” -- (শ্রীমান লিখেছেন।)-- কিন্তু এটা লৌকিকতার ব্যাপার নয়। শক্তিদাকে আমি ভালোবাসি, আর ওখান থেকে সরে আসা সম্ভব নয়। শ্রদ্ধা করি আপনাকে বেশি, কিন্তু শক্তিদাকে করি এমন কিছু একটা, যেটা ভায়োলেন্ট, হট, ডেসপারেট।
    শক্তিদার লেখা দিয়ে আমি এই যুগটাকেই চিহ্ণিত করতে চাইছি। এটাও কি শক্তিদার পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি?
    প্রণাম নেবেন।
    মলয়


    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা ত্রিদিব মিত্র’র চিঠি

    উন্মার্গ, সালকিয়া, হাওড়া, ১৭/৭
    ডিয়ার মলয়,
    পোস্টকার্ড পেয়েছ সম্ভবত। শুক্রবার পাঞ্জাব মেলে চাপছি। সুবিমলের সঙ্গে গতকাল হঠাৎ হাওড়া স্টেশানে দেখা, সন্ধেবেলা। ট্রেন ধরতে না পারায় সোমবার রাত্তিরে সিদ্ধি চলেছিল। সুভাষ ইদানিং নতুন সাকরেদ জোগাড় করেছে, কফিহাউস থেকে বা কফিহাউসে এনে। গদ্য ও কবিতার ওপর, হাংরিদের, অমিতাভ দাশগুপ্ত ও মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের দুটো প্রবন্ধ ক্ষু.প্র.তে থাকছে। সে-ব্যাপারে উভয় ঘোষবাবু ও দাশগুপ্তবাবু, দাশগুপ্ত ও চাটুজ্জেবাবুর বাড়িতে ঘনঘন যাতায়াত, পাঞ্চিং, লিঞ্চিং ইত্যাদি ব্যাপারে বড়োই ব্যস্ত। সুভাষ প্রচার করত, ১৯৬০ সালে তুমি নাকি সুবোকে তুলে এনেছ।  AVANT GARDE   আদ্যপান্ত পড়েও খুঁজে পেলাম না। তাছাড়া হাংরি বুলেটিন প্রথম বেরোয় ১৯৬১-এর শেষে আর সুবোর লেখা গোলমাল হাংরি বুলেটিনে ১৯৬৩ তে, তখন আমার বাসায় থাকত। সুভাষ ক্ষু.প্র.র জন্যে ১ পৃষ্ঠার লেখা চেয়েছিল। এবং আমিও ‘উন্মাগ’-র জন্যে সুভাষের। কিন্তু সুভাষবাবু এত ব্যস্ত কিংবা… – ত্রিদিব 
     
    সমীর রায়চৌধুরীকে লেখা সুবিমল বসাকের  চিঠি :

    ১৩ বিপিন গাঙ্গুলি রোড, দমদম, কলকাতা ৭০০ ০৩০, ২৭/৭/১৯৬৪
    প্রিয় সমীরদা
    আমি পাটনায় গিয়েছিলুম, শুনলুম আপনি চাইবাসায়। মলয়কে সম্পূর্ণ ব্যাপারটা বলেছি। শক্তি একদিন ( যেদিন যুগান্তরে নিউজ বেরিয়েছিল ) আমায় কফিহাউস থেকে নীচে ডেকে মারধোর করার চেষ্টা করেছিলো। আপনি জানেন, আমি পাটনার ছেলে, মুখে কথা বলার চেয়ে কাজে বেশী— সেদিনই আমি শক্তিকে উচিত শিক্ষা দিয়ে দিতুম, কিন্তু আমার বন্ধুদের জন্য করলাম না। তবে আমি ডায়েরি করেছি থানায়, এই বলে রটিয়েছি, এবং ভবিষ্যতে শক্তির নামে কেস ঠুকে দেবো বলেছি। ‘হাংরি জেনারেশান’ বুলেটিনটা এখনও বের হল না। প্রেসগুলি ছেপে দেবে বলে কথা দিচ্ছে অথচ ম্যাটার দেখে সরে যাচ্ছে। এখানে অবশ্য নানা রকম রিউমার শোনা যাচ্ছে। অনেক কথা। আজ স্টেনসিলে একটা ‘হাংরি বুলেটিন’ বের করে দিলাম– ডিসট্রিবিউট করিনি। ওটা পাটনা থেকে ছেপেছি, বলেছি। কলকাতায় কবে আসছেন? মলয় সম্ভবত অগাস্টে আসবে বলে কথা দিয়েছে। দেখা যাক। এখন এলে পরে সবার সঙ্গে দেখা করার চান্স আছে। মলয়কে ‘হাংরি’ বুলেটিন পাঠিয়েছি।
    সুবিমল

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা দেবী রায়ের চিঠি

    হাওড়া,১৭ মে, ১৯৬৫
    শোনো মলয়,
    কে আমার সঙ্গে কীরকম ব্যবহার করেছিল, আমি ভুলিনি। লালবাজারে টেবিল ঠুকে অনিল ব্যানার্জি বলেছে হেড কোয়ার্টার কোথায় — হোঃ হোঃ, শৈলেশ্বর বলেছিল, “আজ্ঞে পাটনায়”। তোমার খবর কী? আমার ওলড ফুল নামটা ব্যবহার করেছ — যা অতীতের তা যেতে দাও। খালসিটোলায় সুভাষের কলার চেপে ধরতে বলে ওঠে, “প্রণবদা, দেখুন না, এঁরা কী করছেন আমাকে, একটা পান খাওয়ান না। হাঃ হাঃ, আরে সবই জানি। নিজেদের কবিতার স্বপক্ষে একটা প্রবন্ধ লিখেছি।
    দেবী রায়।

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা সুভাষ ঘোষের চিঠি

    কলকাতা, ২২ মে ১৯৬৫ 
    “হ্যাঁ, যা বলছিলাম —ক্ষু.প্র.তে হারাধনের বইয়ের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে বলে ওর লেখা জেব্রাতেও ছাপা হবে — এরকম কথা আছে নাকি? কই তোমার সঙ্গে দেখা হল যখন এরকম বললে না তো— এই তোমার দোষ — আমি তখন হারাধনের লেখা গুণগত যোগ্যতা না থাকায় ছাপতে বারণ করেছিলাম তোমাকে — গুণও বড়ো কথা নয় — আসল কথা দেবী রায়ের ক্লিক + এক্সপ্লয়টেশন + নোংরামি। আসলে ওর লেখা ক্ষু প্র-তে ছাপা হচ্ছে না যখন জানল তখন মরিয়া আর কি— আর তো…হেঁ হেঁ। তুমি তখন জিগ্যেস করলেও আমি পরিষ্কার করতাম সব — ফলে তুমি জেব্রা থেকে ওর লেখা withdraw করে নাও। ওর নাকি সব বিদেশি নাঙরা ১০০০-১০০০ পৃষ্ঠার প্রশংসা পাঠিয়েছে — ওই নিয়ে থাকুক ও — OK. ভালোবাসা নিও। সুভাষ।

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা ত্রিদিব মিত্রের চিঠি

    সালকিয়া, হাওড়া, ১৭ জুলাই, ১৯৬৫
    ডিয়ার মলয়,
    পোস্টকার্ড পেয়েছ সম্ভবত। শুক্রবার পাঞ্জাব মেলে চাপছি। সুবিমলের সঙ্গে গতকাল হাওড়া স্টেশানে দেখা, সন্ধ্যাবেলা। ট্রেন ধরতে না পারায় সোমবার রাত্তিরে সিদ্ধি চলেছিল। সুভাষ ইদানিং নতুন সাকরেদ যোগাড় করেছে, কফিহাউস থেকে বা কফিহাউসে এনে। গদ্য ও কবিতার উপর, হাংরিদের, অমিতাভ দাশগুপ্ত ও মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের দুটো প্রবন্ধ ক্ষু.প্র.তে থাকছে। সে ব্যাপারে উভয় ঘোষবাবু ও দাশগুপ্তবাবু, দাশগুপ্ত ও চাটুজ্জেবাবুর বাড়িতে ঘনঘন যাতায়াত, পাঞ্চিং, লিঞ্চিং ইত্যাদি ব্যাপারে বড়োই ব্যস্ত। সুভাষ প্রচার করত, ১৯৬০ সালে তুমি নাকি সুবোকে তুলে এনেছো ! AVANT GARDE আদ্যন্ত পড়েও খুঁজে পেলাম না। তাছাড়া এইচ জি প্রথম বেরোয় ১৯৬১-এর শেষে আর সুবোর লেখা গোলমাল HG-তে ১৯৬৩ সালে, তখন আমার বাসায় থাকত। সুভাষ ক্ষু.প্র.র জন্য এক পৃষ্ঠার লেখা চেয়েছিল। এবং আমিও ‘উন্মার্গের জন্য সুভাষের। কিন্তু সুভাষবাবু এত ব্যস্ত কিংবা……ত্রিদিব

    সমীর রায়চৌধুরীকে লেখা অদ্রীশ বিশ্বাসের চিঠি

    জুলাই ২০১৩, ৩/১ ডি, নস্করপাড়া লেন, কলকাতা – ৩১
    প্রিয় সমীরদা,
    সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়কে লেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি চিঠি ( ১৫ জুন ১৯৬৪ তারিখে আইওয়া থেকে ) যা সম্প্রতি ‘শহর’ পত্রিকার অক্টোবর-নভেম্বর ২০১২ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে, তার একটি প্রতিলিপি পাঠালাম। চিঠি ছাপা হওয়ার পর মলয়দা একদিন মুম্বাই থেকে ফোন করেছিলেন। আমাদের দীর্ঘক্ষণ কথা হয়। আমি সেই চিঠির মধ্যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কিছু হাংরি আন্দোলন ও মলয় রায়চৌধুরী বিষয়ে ব্যক্তিগত মতামত, যা হাংরি এবং মলয়দা বিরোধী দেখতে পাই। অনেকেই দেখেছেন, মলয়দাও দেখেছেন। আমার মনে হয় এগুলো যেহেতু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের চিঠির সূত্রে একতরফা ভাবে প্রকাশিত, তাই আপনাদের মতামত ও পিছনের কারণগুলো সামনে আসা দরকার। বিশেষভাবে মলয়দার। যদিও এই ধরণের মতামত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আমরা আগেও পড়েছি হাংরি নিয়ে, মলয়দাকে নিয়ে। অনেক সময়ে গোটা হাংরি আন্দোলনের একমাত্র ধারক হিসাবে সুনীলবাবু বারবার তাই মলয়দাকে টার্গেট করেন। এটা বোঝা যায় যে হাংরির মূল থিংক ট্যাঙ্ক কে, কাকে আক্রমণ করলে কী হবে, অতএব মলয় রায়চৌধুরীকে আক্রমণ করো। হয়তো সুনীলবাবু মলয় রায়চৌধুরীকেই শুধু শক্তিশালী প্রতিপক্ষ বলে মনে করতেন আর তাই বারবার তাঁকে আক্রমণের একটা পদ্ধতি ব্যবহার করতেন, যাতে মলয়, হাংরি আন্দোলনের চিন্তার ধারক, তাকে ধ্বসিয়ে দিলে, নস্যাৎ করলে, অন্যরা বাঁচবে না, থাকবে না। এটা হাংরি বিষয়ে আমার অবজারভেশন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আক্রমণ প্রসঙ্গে। কিন্তু আমরা জানি, উনি হাংরি মামলায় পক্ষে মতামত জানিয়েছিলেন। সেটা তাঁর আদর্শবোধ নাকি সাহিত্যিক রাজনীতি, সেটাও আজ নতুন জেনারেশনের জানা দরকার, মলয় রায়চৌধুরীকে নিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এত আপত্তি কেন, শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছাড়া আর কী কী কারণে মলয়দাকে এই খেলায় বাদ দিতে চাইতেন তিনি বা দ্বিচারিতা করতেন, অপছন্দ করতেন, নাম কাটতেন, সে-সব এখন পরিষ্কার হওয়া দরকার। তাই যদি সেই চিঠির একটা আলোচনা আপনারা করেন, যা সাহিত্যিক ইতিহাসের প্রকৃত ইতিহাস বুঝতে সাহায্য করবে। এটা হওয়া জরুরি। আমরা জানি মেইনস্ট্রিম তার মতো করে ইতিহাস রচনা করে এবং সেটাকেই একমাত্র ইতিহাস বলে; সেটা যে একমাত্র সত্য নয়, সেটা এবার সামনে আসা দরকার। ইতিহাস মুখ তুলে তাকাক।
    অদ্রীশ বিশ্বাস

    সমীর রায়চৌধুরীকে লেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের চিঠি

    কলকাতা, ১৯৬৬
    সমীর,
    কয়েকদিন একটু এলোমেলো ছিলুম বলে চিঠি লেখা হয়ে ওঠেনি। আমার কবিতার বইটা আগামী সোম-মঙ্গলবার বেরিয়ে যাবে বোধহয়। বেরোলেই তোকে পাঠাবো।     তোর কবিতাগুলো অত্যন্ত ভালো হয়েছে। এরকম স্পষ্ট এবং প্রত্যক্ষ লেখাই কবিতা, আমি আজকাল এরকমই লিখতে চাই, ঠিক পারছি না। তোর এই কবিতাগুলির মধ্যে যে সচেতন আর্তনাদ আছে তা খুব গভীরভাবে বুকে লাগে — এবং তথাকথিত  ‘কবিত্ব’ এবং ছন্দ বাদ দিয়ে তুই যে একেবারে ডাইরেক্ট ভাবে লিখেছিস— এইটাই বড় সার্থকতা।      তুই বারোটা কবিতা নিয়ে যে এক ফর্মার কবিতা ছাপতে চেয়েছিস — তা অনায়াসেরই বার করা যায়। তুই কোন কবিতাগুলো দিতে চাস — ঠিক করে দে— আমি ছাপার দিকটা দেখছি। এপ্রিলের শেষেই বেরিয়ে যেতে পারে। তুই যে কবিতাগুলো পাঠিয়েছিলি — তার মধ্যে যেকটা সম্ভব আমি কৃত্তিবাসে দিয়ে দিচ্ছি, তবে কৃত্তিবাসের কাজ সবে শুরু হয়েছে। বেরুতে কিছু দেরি হবে।        তুই যে ঝটিকা কবিতা পাঠের প্ল্যানটা পাঠিয়েছিলি — সেটা শুনতে খুবই ভালো, কিন্তু কার্যত সম্ভব নয়। আমার কোনোই অসুবিধা ছিল না — আমি অনায়াসে যেতে পারতুম। কবিতা পড়তে আমার আজকাল খুবই ভালো লাগে। কিন্তু অন্য আর কেউই তো এখন যেতে পারবে না। শরৎ বছরে  টানা এক মাস ছাড়া , আর এক দিনও ছুটি পায় না। কোনো সময়েই ও ৭/৮ দিন ছুটি নিতে পারে না, সত্যিকারের অসুখ না হলে — তখন অফিসের ডাক্তার বাড়িতে আসে। জ্যোতি আমেরিকা চলে গেছে। তারাপদ নতুন সন্তান ও স্ত্রীকে ফেলে বাইরে যেতে পারে না। অর্থাৎ আস্তে আস্তে এখন সকলেই প্রায় কোনো না কোনো বন্ধনে জড়ানো।  শক্তির সাপ্তাহিকী ভালোই চলছে। অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত এক জার্মান মহিলাকে অকস্মাৎ বিয়ে করেছে। বিনয় রাত্রে কোথায় থাকবে— এটা প্রত্যেক দিন আলাদা সমস্যা। সন্দীপন কলকাতা শহরেই আছে কিন্তু অদৃশ্য হয়ে। তোর কবিতাগুলি সত্যিই খুব ভালো লাগলো। একেবারে স্বাদ বদল। আমি বহুদিন কবিতা লিখতে পারছি না।        বেলা আর হনি ভালো আছে নিশ্চয়ই।
    সুনীল
     
    সমীর রায়চৌধুরীকে লেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের চিঠি

    ২০.৬.১৯৭৩
    ৩৭/২ গড়িয়াহাট রোড, কলকাতা ৭০০ ০১৯
    ভাই বেলা ও সমীর,
    টেলিগ্রামটা পাবার পর খুব মন কেমন করছে। কিন্তু এক্ষুনি যেতেও পারছি না। সংসার পেতে বসলেই অনেক ঝামেলা। তোমাদের ওখানে হঠাৎ চলে যাওয়ার জন্য আমি আর স্বাতী সব ঠিকঠাক করে ফেলেছিলুম— এমন সময় স্বাতীর জ্বর হলো। ও সেরে ওঠার পর আবার ছেলের জ্বর। দু’জনেই সেরে ওঠার পর আবার অন্য অসুবিধে। অম্বুবাচীর সময় মা প্রায় এক মাস দমদমে গিয়ে থাকেন— পরশু চলে গেলেন। আমাদের এ-বাড়িটা এমন যে তালাবন্ধ করে সবাই মিলে চলে যাওয়া যায় না। অন্তত স্বাতী তাই মনে করে। আমি একলাই দ্বারভাঙ্গা যাবো ভেবেছিলাম— কিন্তু স্বাতী একলা থাকতে পারে না— ভুতের ভয় পায় ! তাহলেই বুঝে দেখো কি ব্যাপার !   দ্বারভাঙ্গা যাবার জন্য কিছুদিন ধরেই ছটফট করছি। আগামী মাসে আর একবার উদ্যোগ নেওয়া যাবে— দেখা যাক কি হয়।          তোমাদের ওদিককার খবর কি? গত সপ্তাহে শান্তি লাহিড়ীর বাড়ির কাছে এক জলসায় গিয়েছিলাম। নানারকম সব মজার ব্যাপার হয়েছিল। এখানকার অন্যান্য খবর সব চলছে একরকম। ছোটোদের সবাই ভালো আছে।  ভালোবাসা জানাই।
    সুনীল

    সমীর রায়চৌধুরীকে লেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের চিঠি

    ৩২/২ যোগীপাড়া রোড, কলকাতা ২৮, ১৬.৩.১৯৬৬
    সমীর,
            তোর দুটো টেলিগ্রাম পেয়েছি। চিঠি পেলে ব্যস্ততার কথা জানতে পারতুম। ‘ভিয়েতনামের’ এক ফর্মা ছাপা হচ্ছে দু’এক দিনের মধ্যেই, বাকি এক ফর্মা খুব শিগগির তো সম্ভব নয়। কারণ বেরুতে পারে না। কৃত্তিবাসে তোর অনেকগুলো কবিতা ছাপা হয়ে গেছে— এখন কৃত্তিবাস বেরুবার আগে— তোর বই বার করি কি করে। বই বেরিয়ে যাবার পর— সে বইয়েরই কবিতা কৃত্তিবাসে ছাপা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু— সুতরাং কৃত্তিবাস বেরুবার কয়েকদিন পর তোর বই বেরুনো উচিত।      কৃত্তিবাসের কাজও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে — এবার কৃত্তিবাস ৭ ফর্মার মতন হচ্ছে। কিন্তু কয়েকটি বিজ্ঞাপনের জন্য অপেক্ষা করছি — বেরুতে বেরুতে এ মাসের শেষ— বা আগামী মাসের প্রথমে— রবীন্দ্র জন্মদিবসের হৈ-হল্লার সময়ে।        তোর বই মে-মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ আন্দাজ বেরুতে পারে। 
    ভালোবাসা নিস
    সুনীল

    সমীর রায়চৌধুরীকে লেখা প্রবাল দাশগুপ্ত’র চিঠি

    সেন্টার ফর এ এল টি এস, ইউনিভারসিটি অফ হায়দ্রাবাদ, হায়দ্রাবাদ ৫০০ ১৩৪
    ৩১.৭.১৯৯৩
    সমীরবাবু,
    ধরে নিচ্ছি শেষ পর্যন্ত ‘অধুনান্তিক এলাকা’ পেয়েছেন। ছাপার কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেল নিশ্চই। কবে নাগাদ বেরোবে জানতে পারলে ঠিক করতে পারব, আমার যে দু’য়েকজন বন্ধু লেখাটা এখন পড়তে চাইছে তাদের পাণ্ডুলিপির জেরক্স পাঠাবার দরকার আছে কিনা।      একজন বন্ধু বলছে যে একটি গ্রন্হমালায় ‘সাজানো বাগানের পরের স্টপ’ আর ‘অধুনান্তিক এলাকা’ পুনর্মুদ্রণ করতে চায়। আপনারা কি এ-প্রস্তাবে রাজি? আপনাদের অনুমতি না পেলে স্পষ্টতই আমি কিছু বলতে পারি না। পত্রিকায় মুদ্রিত লেখায় সম্পাদকের আর লেখকের যৌথ স্বত্ত্ব থাকে।    প্রীতি ও শ্রদ্ধা জানবেন। আশা করি ভাল আছেন।
    ইতি
    প্রবাল দাশগুপ্ত

    সমীর রায়চৌধুরীকে লেখা মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের চিঠি

    কেতকী, পো: মণিহারা, পুরুলিয়া, ৪.১০.১৯৯৬
    শ্রদ্ধেয় সমীরবাবু,
    আপনার গুচ্ছ কবিতা শারদ সংখ্যায় ছাপা হয়েছে। কেতকী এবার কলকাতা থেকে ছাপা হচ্ছে। এখান থেকে পত্রিকা প্রকাশ করা আর সম্ভব হচ্ছে না। কলকাতায় একজন কবিকে যাবতীয় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেখানেই অফিস খোলা হয়েছে। মাসে ১/২ বার আমাকে যেতে হবে। আর কি?         কবি মলয় রায়চৌধুরীর কবিতাও আছে।      হাওয়া কি বের হয়েছে? আমার কিছু কবিতা পাঠিয়েছিলাম। দেখবেন চলে কিনা। ছাপা হলে জানাবেন।      টেলি-কবিতার সংকলন পেলাম কই? পাঠাবেন। একান্ত অনুরোধ। পাঠাতে ভুলবেন না। চিঠি দেবেন। নতুন কোনো সংবাদ থাকলে জানাবেন।

    নমস্কার
    মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের চিঠি 

    আয়ওয়া, ১০ জুন ১৯৬৪
    মলয়,
    তুমি কলকাতায় কী সব কাণ্ডের বড়াই করে চিঠি লিখেছ জানি না। কী কান্ড করছ? আমার বন্ধুবান্ধবদের কেউ-কেউ ভাসাভাসা লিখেছে বটে কফিহাউসে কী সব গণ্ডোগোলের কথা। কিছু লেখার বদলে আন্দোলন ও হাঙ্গামা করার দিকেই তোমার লক্ষ্য বেশি। রাত্রে তোমার ঘুম হয় তো? এ-সব কিছু না — আমার ওতে কোনো মাথাব্যথা নেই। যত খুশি আন্দোলন করে যেতে পারো — বাংলা কবিতার ওতে কিছু আসে যায় না। মনে হয় খুব একটা শর্টকাট খ্যাতি পাবার লোভ তোমার। পেতেও পারো বলা যায় না। আমি এসব আন্দোলন কখনো করিনি, নিজের হৃৎস্পন্দন নিয়ে আমি এতই ব্যস্ত। তবে, একথা ঠিক, কলকাতা শহরটা আমার। ফিরে গিয়ে আমি ওখানে রাজত্ব করব। তোমরা তার একচুলও বদলাতে পারবে না। আমার বন্ধুবান্ধবরা অনেকেই সম্রাট। তোমাকে ভয় করতুম, যদি তোমার মধ্যে এখন পর্যন্ত একটুও জেল্লা দেখতে পেতুম। আমার চেয়ে কম বয়সিদের মধ্যে একমাত্র তন্ময় দত্ত এসেছিল, আমার চেয়ে অন্তত ছ বছরের ছোটো— কিন্তু জীবনানন্দের পর অত শক্তিশালী কবি এদেশে আর কেউ আসেনি। প্রচণ্ড অভিমান করে ও চলে গেছে। সেজন্যে এখনও আমি অপরের হয়ে অনুতাপ করি। আমি নিজে তো এখনও কিছুই লিখিনি, লেখার তোড়জোড় করছি মাত্র, কিন্তু তোমার মতো কবিতাকে কমার্শিয়াল করার কথা আমার কখনো মাথায় আসেনি। বালজাকের মতো আমি আমার ভোকাবুলারি আলাদা করে নিয়েছি কবিতা ওগদ্যে। তোমার প্রতি আমার যতই স্নেহ থাক মলয়, কিন্তু তোমার কবিতা সম্বন্ধে এখনো কোনোরকম উৎসাহ আমার মনে জাগেনি। প্রতীক্ষা করে আছি অবশ্য। অনেকের ধারণা যে পরবর্তি তরুণ জেনারেশনের কবিদের হাতে না রাখলে সাহিত্যে খ্যাতি টেকে না। সে জন্যে আমার বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে কেউ-কেউ একসময় তোমাদের মুরুব্বি হয়েছিল। আমি ওসব গ্রাহ্য করি না। নিজের পায়ে আমার যথেষ্ট জোর আছে, এমনকী একা দাঁড়াবার। আমার কথা হল : যে যে বন্ধু আছ, কাছে এসো, যে ভালো কবিতা লেখো কাছে এসো — যে যে বন্ধু নও, বাজে কবিতা লেখো, দূর হয়ে যাও কাছ থেকে। বয়সের ব্যবধান তোলা আমার কাছে অত্যন্ত ভালগার লাগে। চালিয়ে যাও ও সব আন্দোলন কিংবা জেনারেশনের ভণ্ডামি। আমার ওসব পড়তে কিংবা দেখতে মজাই লাগে। দূর থেকে। সাহিত্যের ওপর মৌরসি পাট্টা বসাতে এক-এক দলের অত লোভ কী করে আসে, কী জানি। তবে একটা কথা জানিয়ে রাখা ভালো। আমাকে দেখেছ নিশ্চয় শান্তশিষ্ট, ভালো মানুষ। আমি তাই-ই, যদিও গায়ে পদ্মাপাড়ের রক্ত আছে। সুতরাং তোমাদের উচিত আমাকে দূরে-দূরে রাখা, বেশি খোঁচাখুঁচি না করা। নইলে, হঠাৎ উত্তেজিত হলে কী করব বলা যায় না। জীবনে ওরকম উত্তেজিত হয়েছি পৌনে একবার। গতবছর। দুএকজন বন্ধুবান্ধব ও-দলে আছে বলে নিতান্ত স্নেহবশতই তোমাদের হাংরি জেনারেশন গোড়ার দিকে ভেঙে দিইনি। এখনও সেক্ষমতা রাখি, জেনে রেখো। তবে এখনও ইচ্ছে নেই ও খেলাঘর ভাঙার। আমার এক বন্ধু জানিয়েছে যে তোমরা নাকি আমার কোনো-কোনো চিঠির অংশবিশেষ ছাপিয়েছ/ পত্রসাহিত্য-ফাহিত্য করার জন্য আমি চিঠি লিখি না। আমার চিঠি নেহাত কেজো কথা। অবশ্য লুকোবারও কিছু নেই। কিন্তু আগে-পরের কথা বাদ দিয়ে, ডটডট মেরে চালাকির জন্য আমার কোনো চিঠি কেউ ছাপিয়ে থাকে— তবে আড়াই মাস পরে ফিরে তার কান ধরে দুই থাপ্পড় লাগাব বলে দিয়ো/ আশা করি শারীরিক ভালো আছ। আমার ভালোবাসা নিও।
    সুনীলদা


    তালপাতা প্রকাশনীর ‘সুনীলকে লেখা চিঠি’ বইয়ের মুখবন্ধ : হাংরি আন্দোলন নিয়ে সুনীল শক্তি সন্দীপন সমীর মলয় প্রমুখের চাপান-ওতোর

    এগোল না পিছোল? পরে দেখছি। সময় এগোয়। বিদেশ যাত্রা, পাকাপাকি থাকার ব্যবস্থাকে গ্রহণ না করে পুনরায় কলকাতায় ফিরে আসা। দমদম এয়ারপোর্ট। পকেটে হাত। মাত্র দশ টাকা। মাথাতেও।পুনরায় বেকার। এ দোর ও দরজায় টোকা। সংসার চালানোর জন্য। দিন বদলায়।এক পা কবিতায় রেখেও অন্যটি গদ্যে। দু’হাতে, চারহাত পরিমাণ লেখা। দেখতে দেখতে
    জুলফি দুটো পাকা…। পকেটে দশ টাকা পুঁজি নিয়ে পারিজাতের ৯ তলা। অর্থ যশ খ্যাতি। যে যাই বলুক সখী- সফলতা এরেই কয়। সাফল্যের স্বীকৃতি বহির্জগত থেকে। সমাজের কোন তলায় তোমার বাস…ব্যস-এইসময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। দেখা যাক সাফল্য কী দিল আর কী কেড়ে নিল…

    ১৯৯০
    সবিনয় নিবেদন
    শারদীয়া আনন্দবাজারে প্রকাশিত আপনার ধূলিবসন উপন্যাস পড়ি গত অক্টোবরের প্রথম দ্বিতীয় সপ্তাহে। উপন্যাসটি একই সাথে আমাদের আকৃষ্ট করে এবং প্রচন্ড একটা মানসিক ধাক্কা দেয়। প্রথম পাঠের চারমাস কেটে গেছে, মন্দিরার তাড়না থেকে আজও মুক্তি পাইনি। ….
    কাহিনীটি দিকশূন্যপুরের ফ্যানটাসি হত তাহলে আপত্তি কিছু ছিল না। কিন্তু ধূলিবসন ফ্যানটাসি নয়। জ্যান্ত বাস্তবের পটভূমিতে গল্পকে গেঁথেছেন…বাস্তবতাকেই রূপ দিয়েছেন। বিশ্বাস্য বাস্তবের ভেতরে অবিশ্বাস্য এক ফ্যানটাসি ঢুকিয়ে দিয়ে দুইয়েরই জাত মেরে দিলেন?’
    (তারপর বেশ কিছু সমালোচনা। সুন্দরবনের নদীতে সহবাস হয়না, বড় নদী কোন নদী? ইত্যাদি ইত্যাদি। কখনও লাইন ধরে, কখনও পাতার সংখ্যা দিয়ে)
    চমক লাগে। প্রশ্ন অথচ প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর। জাস্ট লেখাটাকে ছাল ছাড়িয়ে নুন মাখিয়ে রোদে ফেলে দিল।
    আমি এমনকিছুই চাইছিলাম। ভাবছি এইবার, এইবার কী হবে! এ চিঠি’ত বুদ্ধদেব বসু, শঙ্খ ঘোষ বা শক্তি-সন্দীপনের নয়। এমনকী নয় ফরাসি প্রেমিকা বা NRI ধনী বন্ধু-বান্ধবের। তা’হলে?
    এই’ত পেয়েছি। দেখি…

    ২৭-২-৯০

    শ্রী রজত রায়
    প্রীতিভাজনেষু,
    আপনার ও দীপান্বিতা রায়ের সই করা চিঠি পেয়েছি। অতি চমৎকার, সহৃদয় চিঠি… আপনাদের চিঠির উত্তর দেবো বলে যত্ন করে রেখেছিলাম। এতে বেশি যত্নে যে, তারপর কোথায় যে রেখেছি আর খুঁজেই পাইনা। তা ছাড়া বাইরে ঘোরাঘুরি করতে হ’ল অনেক। উত্তর না দেবার জন্য লজ্জিত ছিলাম কিন্তু চিঠির বিষয়বস্তু মনে ছিল বলেই শারদীয় সংখ্যার উপন্যাসটি বই হয়ে বার করার আগে পরিমার্জনরা কথা ভেবেছি। করেছি সাধ্যমতন।
    আমার এতদিনের লেখকজীবনে পাঠকদের কাছ থেকে এমন অসাধারণ চিঠি পেয়েছি কদাচিৎ। আপনি এত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছেন… রচনাটা ভালো হোক বা না হোক, তবু তো একজন অভিজ্ঞ পাঠককে এমনভাবে ভাবে নাড়া দিয়েছে!
    (বিস্ময়ের এখনো বাকী। লিখছেন কোথায় কোথায় বদল এনেছেন ও কেন এনেছেন। কেন কিছু জায়গা অপরিবর্তিত রাখলেন। তার জাস্টিফিকেশান দিয়েছেন। )
    আর শেষে লিখছেন-
    ‘এইরকম আমি ভেবেছি, হয়তো ঠিকমতন ফুটে ওঠেনি, সেটা আমার অক্ষমতা। আপনার চিঠির জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আপনার কাছ থেকে অনেককিছু শিখেছি। সুন্দরবনের নদীর ওপর নৌকায় সহবাস যে নিষিদ্ধ তা সত্যিই আমার জানা ছিল না।’
    বড় বড় লেখকরা এত জাস্টিফিকেশান দেয়! নিজের লেখা নিয়ে কী কেন ইত্যাদি প্রভৃতি!
    জানা ছিল না। জানলাম। শিখলাম। শুধরে নিলাম। যা পারলাম সবই আপনার জন্য যা পারলাম না তার দায় একান্তই আমার- এমন অনায়াস স্বীকারোক্তি। সাহিত্য মিনারের চূড়ায় বসেও…
    গড়িয়ে গেলাম। পুরোনো দিনে…
    টুকটাক নানা কথার মধ্যে জনা পাঁচেক ছাত্র তাদের বাংলা শিক্ষককে প্রশ্ন করেছিল, স্যার লেখক-কবির সবচেয়ে বড় গুণ কী? মানে, কী কী থাকলে একজন কেউ ভালো লেখক হতে পারে?
    মিতভাষী শিক্ষক বলেছিলেন, দেখ জ্ঞান বুদ্ধি’ত থাকতেই হবে। আগ্রাসী পাঠক হতে হবে কিন্তু তারচেয়েও বেশী যেটা দরকার তা’হল সমালোচনা, বিশেষ করে নিন্দা গ্রহণ করার ক্ষমতা। ভুল স্বীকার করার সাহস। মনে রাখতে হবে, পাঠকই লেখকের ঈশ্বর। মনে রাখবি- লাইফ ইজ লারনিং।
    তাই যেন দেখলাম। শুনলাম।
    একজন পারফর্মারের প্রস্তুতি। বিভিন্ন রূপে। কখনও কবি কখনও বাচিক শিল্পী কখনও বা গদ্য লেখক ,সমালোচক। সারজীবন ধরে।
    পর্ব (২)
    অন্য কিছু চাই। অন্যকিছু দেখতে চাই। ঘুরছি। দেখছি। বুদ্ধ থেকে মমতা।অফিসের বস থেকে পত্রিকার সম্পাদক। বদল দেখছি। নামের। ক্ষমতা, চরিত্রে অনড়, অচল। সেই হুঙ্কার। সেই ‘আমি’ ‘আমি’। আমি সর্বস্ব নেতা। তর্জনী। অস্থিরতা।
    ধ্যাত্তেরি! ঢুকে পড়ি। পড়লাম।
          ৬০ এর দশক। কৃত্তিবাস দপ্তরে কবিতা বাছাই হচ্ছে। দেখছেন শক্তিশালী এক কবি। বাজে,অঘন্য, চলবে না…বলছেন আর ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছেন। ঠিক পাশেই বসে সম্পাদক। প্রত্যেকটা ফেলে দেওয়া কাগজ তুলে ফাইলে রাখছে। কৃত্তিবাস ঠিক দিনে, ঠিক সময়ে প্রকাশিত হচ্ছে। যদিও সব কবিতাই বাতিল করেছিলেন সেই কবি আর সব কবিতাই যত্ন করে তুলে রাখলেন সম্পাদক।
    এ দৃশ্যের কথা মনে এল স্বাভাবিকভাবেই কতগুলো প্রশ্ন উঁকি মারে মনে। যেরকম , সম্পাদক কি অতিরিক্ত লিবারাল? শিল্পের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করেছেন?খালি চোখে স্পষ্ট, করছেন। কিন্তু পাশাপশি এটাও সত্যি একসঙ্গে বহু পাঠক ও লেখককে ধরে রাখছেন। বহু তরুণ কবিকে সুযোগ দিচ্ছেন।
    সুযোগ দেওয়াকে কি জাস্টিফাই করা যায়? করলে কেন, কিভাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সুযোগের মধ্যে অনেক সময় ‘পাইয়ে দেওয়া’ লুকিয়ে থাকে। পাইয়ে দেওয়ায় আঁশটে গন্ধ। পাচ্ছি?
    দেখি ভাল করে –
    সেই কৃত্তিবাস দপ্তর।
          কমলকুমার মজুমদারের একটি গল্পের বই রিভিউ করতে হবে। কমলকুমারের স্নেহধন্য শিষ্যরা(সকল স ও শ) আছে। সম্পাদক নিজেও কমলকুমারের আপ্ত সহায়ক অথচ কী আশ্চর্য ভাবে সেই বই উঠে যাচ্ছে এক তরুণ অখ্যাত লেখকের হাতে। এমনই একজন যে কমলকুমারের একটিও গদ্য পড়েনি। সকলেই অবাক। স্বাভাবিক। সম্পাদক সমালোচিত। কিন্তু নির্বিকার।
    বিন তুঘলক নাকি! ভাবি। ভাবাভাবির খেলা। ভাবনার উল্টোপিঠে অন্য ভাবনা।
    ভাবনাগুলি বাছি:-
    অখ্যাত এক তরুণকে বিখ্যাত কমলকুমারের বই রিভিউ করতে দিয়ে লাইমলাইটে নিয়ে আসা। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত। গভীরে গিয়ে খুঁজলে কেমন চমক লাগে। কোথায়?
    এখানে…
    আপনাকে যদি অপরিচিত একজন লেখকের বই রিভিউ করতে বলা হয় তা’হলে প্রথমে যেটা হবে আপনাকে পড়তে হবে। আগাপাশতলা পড়তে হবে এবং মন দিয়ে। কারণ তার লেখার সঙ্গে আপনি অপরিচিত।
    এতে লাভ?
    এক, পাঠক হিসেবে আপনার পুরো পড়া হয়ে গেল বইটি। নব্যধ্রুপদী সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় হল আপনার( সেইসময় ঐ ছেলেটির যা হয়েছিল)।
    দুই, নব্যধ্রুপদী সাহিত্য আজও স্বকীয় স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল কিনা তাও প্রমাণিত হল। লেখক কমলকুমারের নব মূল্যায়নের পাশাপাশি তরুণ এক উঠতি লেখককে অপ্রচলিত গদ্যধারার সঙ্গে পরিচিতি প্রদান।
    এক ঢিলে দুই পাখি।
    মনে পড়ল, সেই ৮০ এর দশকের শেষদিকের গল্প। এক সপ্রতিভ স্মার্ট ছাত্র প্রশ্ন করেছিল তাদের বাংলা শিক্ষককে- এই যে আমরা কিছুতেই শিখব না ভেবে রাখি। আর সেই সমস্ত ভানায় আপনি জল ঢেলে দেন নিজস্ব ভঙ্গীতে। কোন শিক্ষকোচিত গাম্ভীর্য প্রদর্শন না করেই, এটা কী করে?
    রসরাজ শিক্ষক হেসে- কেন বাতাস যে বলে আমি খুব ইয়ে টাইপ। ঘোড়েল।
    ইয়ে টাইপ আর ঘোড়েল…একথা ছাত্ররা জানত তাদেরই কথা। তাদের বলা আড়ালে আবডালে। দে দে চম্পট সেদিন।
    এখন মনে পড়ছে সেদিনের কথা …
    – কী করে জানল বলতো?
    – আমরা বলেছি। তাও সেতো অনেক আগে।
    – জানত অথচ জানতে দেয়নি।
    – জানে আমরা বলেছিলাম?
    – কে জানে।
    – কী ভয়ঙ্কর!
    – কোন রূপে পুজিব উহারে?
    – বন্ধু বা শত্রু যে-কোন রূপে। তবে স্বস্তি নেই। দোলাচল। অস্থিরতা।
    – কাছে গিয়ে দূরে আসা। দূর থেকে কাছে…বারবার।
    বন্ধু না শত্রু। শত্রু না বন্ধু। কাছের দূরের। শব্দে ঘুরপাক… খেতে খেতে ‘৬১।
    ২১.১.৬১
          ‘আপনার সম্পর্কে,মূলত একমাত্র কথা, যা আপনাকে জানানোর। আপনার ব্যবহার আমাকে সাবধান করে দিয়েছে। কোনরকম সচেতন মনোযোগ না দিয়ে, শেষের দিকে আমি আপনার সঙ্গে মেলামেশা করছিলাম; যাবতীয় সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ধরে নিয়েছিলাম আপনি আমার বন্ধু। …
    গত এক বছরে আপনি আমাকে মাঝে মাঝেই অপমান করেছেন। অপমান করা সঙ্গত হয়েছিল কি হয়নি, সে-কথা ভাবছি না। কারণ অপমান হচ্ছে অপমান। বন্ধুকে কেউ অপমান করে না।
    যে বন্ধু নয়, অবশ্য তাকে করে। কিন্তু ঐ যে বললাম, আমার শেষপর্যন্ত ধারনা জন্মে যায় যে আপনি আমার বন্ধু, বা আরো কত বড় ভুল, আপনি আমার বন্ধু। আগের অপমানগুলি আমি ক্রমশ ভুলে যাই। কিন্তু ঐ যে হাসতে হাসতে বললেন একদিন, ‘ কী মশাই, are you angry with me’ জিজ্ঞেস করেছিলেন বলে আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর সুযোগ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আপনার অনুরক্ত হয়ে পড়া ছাড়া আমার উপায় ছিলনা’- সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
    এখনও ৬১, ঘুরছি। ঘুরছি। শুনছি-
          ’আমার প্রথম বই ক্রীতদাস-ক্রীতদাসী বেরল। আপনি লিখলেন আনন্দবাজার পত্রিকায় সেই বিখ্যাত পঙক্তি – ‘ বাংলা সাহিত্য যদি কোনদিন সত্যভাষী হয় তবে আজ থেকে ৩০ কি ৫০ বছর পরে এই কৃশকায় গল্পগ্রন্থটির আর একবার খোঁজ পড়বে।’
    আমার লেখা নিয়ে আপনার শেষ লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে। ‘সমবেত প্রতিদ্বন্দ্বী’ প্রকাশ হলে। এরপর চুপচাপ। পড়েননি তা’হয়না। লিখিত মন্তব্য নেই। সামনে তো নয়ই। পিছনেও না। আড়ালে বললেও কানে তো আসতই।’- সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
    ৩২ বছর ঘুরে ঘুরে। ক্লান্ত কিন্তু সজাগ। দেখি’ত-
    ৩০ শে জানুয়ারি ১৯৯৩
          ‘বন্ধুত্ব ব্যাপারে এক-একজনের একটা নিজস্ব খেলা আছে। শতরঞ্চের ওপর চার আনা দানা ফেলে কেউ বলে, ‘এই ষোলো আনা ফেললাম’। বিশ্বাস করে যারা ষোলো আনা খেলে(অনেকে ডাবল দেয়), তারা পরে বুঝতে পারে, তারা ষোলো আনা খেলেছে মাত্র চার আনার ওপর।… এই কারণেই তাঁর সমসাময়িক বন্ধুরা কেউ জীবনানন্দের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পেরেছিলেন, এমন শোনা যায়নি। কারণ, উনি চার আনা ফেলতেন।
    ‘আপনি’ ষোলো আনা দেন, তবে ‘আপনার’ বন্ধুতা আঠারো আনা। দু আনা নিজের কাছে’- সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
    দু আনা তাহার কাছে, তার কাছে। সেই দু আনা কেন কিসের জন্য কোন কাজে? পরে। আগে –
    ১৭ জুলাই ২০০০
          ‘মৃত্যু যত এগিয়ে আসছে আগাগোড়া আপনাকে মনে পড়ছে। আপনাকেই নম্বর দিয়েছি সবচেয়ে বেশী। হিসেবে এবং বেহিসেবে। আপনার যত বেহিসেব সব হিসেব নিয়ে। যে কতটা যাবে? একটাকা খরচ করে অনেকে ভাবে ১৬ আনাই খরচ করে দিল- অনেক মদ খেয়ে AAEI- তে ‘আপনি’ একদিন বলেছিলেন্- ‘ আমি জানি তখনো আমার ১ আনা আছে। তাই ১ টাকা খরচ…’- সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
    আমকে টানল- ১টাকা খরচের পরও ১ আনা আছে – তে। দিক নির্দেশ করছে। প্রচলিত প্রবাদ – জাতে মাতাল তালে ঠিক।
    অথচ কিপটে বলতে পারছিনা। কী বিপদ! হয়ত বা এই কারণেই বাংলা ভাষায় লিখে সব’চে উপার্জনক্ষম। সবসময় সতর্ক ও সচেতন।
    দু আনা নিজের কাছে রাখে। হিসেব মেলেনি। এখনও। খুঁজে দেখি…
    যা দেখলাম, তাতে স্পষ্ট বন্ধুর সঙ্গে মতান্তর আছে কিন্তু মনান্তর নেই। যতটা সহজে মতান্তর আর মনান্তর লিখি বিষয়টা অত সহজ নয়। কারণ অধিকাংশ সময়ই ‘ইগো’ নামক বস্তুটি টেনে ধরে। আমি কেন নিচু হব বা নামব মাথা চাড়া দেয়। এখানে কিন্তু ওসব ঝেড়ে ফেলে দিয়েই- ‘কী মশাই, are you angry with me’ বলে টেনে নেওয়া কাছে।
    আর আছে, যতটুকু বলা সামনেই বলা। পিছনে নয়। আর তাই হয়ত দীর্ঘ পথ চলার পরও জীবনের উপান্ত বেলায় এসে শোনা যায়- ‘মৃত্যু যত এগিয়ে আসছে আগাগোড়া আপনাকে মনে পড়ছে। আপনাকেই নম্বর দিয়েছি সবচেয়ে বেশী।’
    একটা বিশ্বাসযোগ্যতা, নির্ভরতার গন্ধ পাচ্ছি? পাচ্ছি কিন্তু এত সহজে একজনের কথার ওপর ভিত্তি করেই কোন সীদ্ধান্তে আসতে পারছিনা। তাই ঘোরাঘুরি চলতেই থাকে…
    ঘুরি…
    বিহার-পাটনা- চাইবাসা। মলয়-শক্তি-উৎপল ও সমীর। অ্যাংরি যুবক। হাংরি জেনারেশান।
          শুনতে পাই… ‘আমার বইটা পেলাম। শক্তিদাকে বলবেন বাজার থেকে প্রতিটি কপি ফিরিয়ে নিতে এবং যতো কপি আছে তাদের সকলকে একত্রিত করে কেরাসিন তেলে ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিতে’- মলয় রায়চৌধুরী।
    বুঝতেই পারি বইয়ের কথা। বই প্রকাশ নিয়ে ক্যাচাল। রাগ শক্তির ওপর কিন্তু চিঠি লিখছে অন্য একজনকে…. কেন?
    শুনি। আর কী শোনা যায়। যায়…
          ‘ইতিমধ্যে বম্বে চলে এসেছি, শক্তির কাছে শুনেছিস নিশ্চয়ই। পাটনা থেকে ১৭।৭ তারিখে চাইবাসা ফিরে, সেখানেই তোর চিঠি পাই…
    মলয়ের বইয়ের ব্যাপারে আমাদের পরস্পরের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি রয়ে গেছে। মলয়ের বই সম্পর্কে সবচেয়ে দুঃখের কারণ এই যে ১। খুবই Neglected ভাবে ছাপা হয়েছে, বিস্তর ভুল, যা কোথাও Sentence এর মানে পর্য্যন্ত বদলে দিয়েছে ইত্যাদি এবং সবচেয় দুঃখ ওর এই কারণে যে তুই কোন আগ্রহ নিসনি।
    Manuscript পাঠিয়েছিলাম। তোর কাছে, টাকাও পাঠিয়েছি তোরই কাছে। অথচ তুই কেবল Hand-over করেছিস শক্তিকে। তাহলে কি সরাসরি শক্তিকেই পাঠানো যেত না!
    শক্তির সম্বন্ধে যে উচ্ছ্বসিত উক্তি করেছি তা এখনও stand করে। ঐ উক্তি ওর দুর্বলতাকে কখনই include করে না। …তুই অনেক বেশী serious। কিন্তু কার্যত তুই তা করিসনি। তুই বিশেষ ভাবে treat না করে বিষয়টিকে formal ভাবে ভেবেছিস। আমি কখনই তোর সঙ্গে formal ব্যবহার করি না।’- সমীর
    বুঝলাম। মলয়ের বই উপলক্ষ্যে টাকা ও Manuscript এসেছিল লোকটির কাছে। যদিও দায়িত্বে ছিলেন শক্তি এবং স্বভাবসিদ্ধ ভাবে কিছু খেয়াল করেননি। সমীর ও মলয় তাই অভিযোগ জানাচ্ছেন। সমীর ঘনিষ্ট বন্ধু। তাই, অভিযোগের থেকে চিঠিতে অভিমান বেশি। মলয় সমীরের ভাই হাংরি আন্দোলনের নেতা। শক্তির পূজারি। তবুও বইয়ের দায়িত্ব দিতে চাই অন্যজনকে। এটা কেন? আর একটু খুঁজে দেখি।
    এই’ত-
          ‘আপনি বলেছেন্- ” শক্তি যেমন মেয়েলী, তুমি সেরকম ছেলেমানুষ”-(শ্রীমান লিখেছেন)- এটা লৌকিকতার ব্যাপার নয়। শক্তিদাকে আমি ভালোবাসি, আর ওখন থেকে সরা সম্ভব নয়। শ্রদ্ধা করি আপনাকে বেশী।’- মলয় রায়চৌধুরী।
    একজনের প্রতি ভালোবাসা যেটা ভায়োলেন্ট, হট, ডেসপারেট কিন্তু শ্রদ্ধা অন্যজনকে। এখানেই হয়ত আবার ও প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে বিশ্বাসযোগ্যতা বা নির্ভরতার প্রসঙ্গটি। পড়ে? সত্যি পড়ে?
    পড়ে। পড়ুন…
          ‘শক্তিদাকে আমি লিখেছি, প্রেসের সব কাজ আপনাকে বুঝিয়ে দিতে। এই ইশারাটা আমি আশা করেছিলাম, কাজ করবে। ভেবেছিলাম শক্তিদা শক্তিদা নিশ্চয়ই বুঝবেন, যে আপনাকে নিয়ে আমি আজ পর্যন্ত কোথাও কিছু লিখিনি তাঁকেই বলছি দায়িত্ব নিতে।’- মলয় রায়চৌধুরী।
    ঘুরি। পড়ি। ঘুরে পড়ি… ল্যাং? দেখি-
          ‘ হাঙ্গরি জেনারেশান যাতে দলাদলির মধ্যে না পড়ে, তাই প্রত্যেককেই বলে দেওয়া হয়েছে, যে যা ইচ্ছে যেখান থেকে হোক ছাপাতে পারে। হাঙ্গরি জেনারেশান কোনো পত্রিকা নয়, কোনো মহল্লা নয়।
    আসলে একটা ওভার-অল দেখাশোনার জন্যে একজন প্রাইমাস ইনটার- প্রেয়ার্সের দরকার ছিল। আপনি ভাবছেন আপনাকে জানানো হয়নি আগে। সেরকম ভাবে এটার আবির্ভাব হয়নি। শক্তিদা এখানে এসেছিলেন, কলকাতায় গিয়েই দুম করে প্রস্তাব দিয়ে দিলেন।
    নাঃ , আপনি অন্তত আমার দিকের দেখাশোনার ভারটা নিন। কারণ এমনিতেই এত দূর থেকে কিছুই হচ্ছে না, বরং হাঙ্গরি জেনারেশানের চেহারা বদলে যাচ্ছে।
    আপনি যদি নেনে, তাহলে দেখবেন ব্যাপারটা একটা সিরিয়াস মোড় নিয়েছে। আপনি হয়তো ভাবছেন যে, অনেকে বলবে, ‘ শক্তি আরম্ভ করল, আর ও তাতে গিয়ে যোগ দিল’ তেমন যদি কেউ বলে, তাহলে সে-সব সমালোচকদের বাড়ী-ঘর্-দোর আগুন লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
    আপনি দায়িত্বটা নিন। খাটবার দরকার হবে না। হারাধনকে( হাংরি জেনারেশান দেবী রায়) বললে সবই ও করবে। আপনি শুধু নির্দেশ দিয়ে দেবেন।
    এখনকার মত আপনি যে-কোন একটা লেখা দিন, আর সেটা যেমন ভাবে বলবেন, তেমনভাবেই বের করা হবে। আপনি দায়িত্ব নিলে আরো অনেকেই অংশগ্রহণ করবেন। তাহলে আপনা থেকেই অন্যরকম হবে H.G.-এর ট্রেন্ডটা। যে-রকম ভেবেছিলুম আর কি। শক্তিদা নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন সর্বদা, নেতৃত্ব করাটা যে ওঁর পক্ষে সম্ভব নয়, তা বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই?’ – মলয় রায়চৌধুরী।
    ’নেতৃত্ব’। এসে গেল। অত সহজ! কতটা পথ হাঁটলে গুরু নেতা হওয়া যায়… মনে মনে। বলছি। ঘুরছি। ঘুরছি। বলছি।
    আরও ল্যাং মারামারি চাই। আরও প্রতিকুল পরিস্থিতি। তবেই না বুঝব কন্ট্রোল কীরকম…
    এই’ত-
          ‘তোর দীর্ঘ চিঠি পেলাম। শক্তিকে আমরাই এত বড় করে তুলেছি।এর মূল দায়িত্ব তোর, আমার ও মলয়ের্। শক্তিকে লেখার জন্য প্রাথমিক উৎসাহ তুই-ই দিয়েছিলি। বারেবারে বাহবা দিয়ে ‘ বাংলা দেশের শ্রেষ্ঠ কবি’ এ কথা তুই-ই প্র্থম তুলেছিস। অর্থাৎ শুধু আজ শক্তি সে কথা নিজে বলছে। চাইবাসায় থাকতেই তোকে বাদ দিয়ে শিল্পের সিংহাসনে বসার একটা ঘোরতর প্ল্যান উৎপল ও শক্তি অনেকদিন আগেই করেছিলো। আমাকেও উপস্থিত থাকতে হয়েছিল এইসব আলোচনায়্।

    শক্তি ও উৎপল তোকে বাদ দিয়ে জেব্রা বের করতে পারবে বলে মনে হয় না। অন্ততঃ মলয় এটা হতে দেবে না। তাছাড়া সমস্ত নীচতার মধ্যেও সূক্ষ্ম বোধশক্তির দংশন শক্তিও এড়াতে পারবে না।…তোকে বাদ দিলে ওযে মারাত্মক অবস্থায় পড়বে তাও জানে। ও বলেছে জেব্রায় নাকি তোর লেখা থাকছে’- সমীর রায়চৌধুরী
    এটুকু বুঝছি একটা চক্রান্ত হয়েছে। ঈর্ষার কারণ আছে। ঈর্ষা স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক। ঠিক না ভুল? ওসব থাক। ঈর্ষা প্রমাণ করে লোকটা সফল। সাফল্য শত্রু বৃদ্ধি করে। আপন হয় পর। তা’হলে কী শক্তি পর হয়ে গেল? দেয়াল আর দরজা এল সম্পর্কে? দেখি…
    সেই চাইবাসা, সিংভূম…
          ‘ এখন তোমাকে চিঠি লিখতে ভালো লাগছে না। কথা বলতে ইচ্ছে করছে। …
    তোমার চিঠিতে আমার বাড়ির বিষয় থাকে। আমি খুব পছন্দ করি নি জানো। এই কারণে নয় যে মাকে বা ভাইকে বা সাংসারিকতাকে আমি অপছন্দ করি। তা করা যায় না। আমি ওদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, আর ওদের চিন্তা করার যেমন বিশেষ কারণ রইলো না, চাইবো, তুমি ঐকারণে পীড়িত হছো না। এই সব সামান্যে তোমার পীড়া দেয় তা আমার অসহ্য।
    আমি কতকগুল সহজ, দিনানুদৈনিকতা নষ্ট করে ফেলি সম্পূর্ণ আলস্যে, তুমি হয়তো সেগুলোর জন্য আমায় দোষী করবে। তুমি দোষী করলে আমি সত্যতা অমান্য করব না তবে আমি অপারগ। আমি অতো হিসেব করতে শিখিনি। আমি যেমন আমি তেমন। কিন্তু এ সত্ত্বেও তুমি আমায় না ভালোবেসে পারবে না। তোমার প্রতি আ-আলাপ নানাবিধ অন্যায় ক’রে চলেছি এবং পারিও দেখছি। জানি তোমার মতন আশ্রয় আমার নেই। সন্দীপ নয়, সমীরও নয়।
    কেননা তোমার প্রতি আঘাতসমূহের সামান্য একটিতেও ওরা আমায় ঘৃণা করতো। এতৎসত্ত্বেও নিজেকে খুব ছোট মনে হয় না, হয়না হয়ত তোমার সুব্যবহারে বা আমার পূর্বোক্ত অর্থরহিত স্মৃতির জন্য’- শক্তি চট্টোপাধ্যায়।
    ঘুরি ফিরি। কথাগুলো ঘুরপাক খায়…
          ‘মৃত্যু যত এগিয়ে আসছে আগাগোড়া আপনাকে মনে পড়ছে। আপনাকেই নম্বর দিয়েছি সবচেয়ে বেশী। হিসেবে এবং বেহিসেবে।’
          ‘যে আপনাকে নিয়ে আমি আজ পর্যন্ত কোথাও কিছু লিখিনি তাঁকেই বলছি দায়িত্ব নিতে।’
          ‘আপনি দায়িত্ব নিলে আরো অনেকেই অংশগ্রহণ করবেন। তাহলে আপনা থেকেই অন্যরকম হবে H.G.-এর ট্রেন্ডটা। যে-রকম ভেবেছিলুম আর কি। ‘
          ‘ জানি তোমার মতন আশ্রয় আমার নেই। সন্দীপ নয়, সমীরও নয়।
    কেননা তোমার প্রতি আঘাতসমূহের সামান্য একটিতেও ওরা আমায় ঘৃণা করতো। এতৎসত্ত্বেও নিজেকে খুব ছোট মনে হয় না, হয়না হয়ত তোমার সুব্যবহারে ‘
    বিভিন্ন মানুষের কথা। ভিন্ন প্রেক্ষিতে। তবুও তারা কোথায় যেন এক সূত্রে বাঁধা।
    আঘাত আছে। প্রত্যাঘাত নেই। উদাসীনতা আছে। বর্জন নেই। একটা আশ্রয়। একটা নো-ম্যানস ল্যান্ডের হাতছানি।
    হাতছানি। ঢুকে গেলাম…
          গ্রান্ড হোটেল। আনন্দ পুরষ্কার অনুষ্ঠান। অনুজ কবির কাঁধে হাত রেখে বলছে একজন- ‘ কবিতা জয়ের মাতৃভাষা’
    এমনই একজন যাঁর অনেক পুরষ্কার ঝুলিতে কিন্তু কবিতার জন্য একটিও পুরষ্কার নেই।
    পুরষ্কার শেষ কথা নয়্। পুরষ্কারের পিছনে কত ছকবাজি…জানি জানি। তবুও অবাক হয়ে ভাবি কবিতার জন্য যে মানুষ অমরত্ব তাচ্ছিল্য করে তার মনে কী কোথাও কোন খেদ নেই? ঈর্ষা নেই?
    এত অনায়াসে সমসাময়িক অগ্রজ বা অনুজদের শুধু ভাল, ভাল আর ভাল বলে যাওয়া।
    মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত আনন্দ পুরষ্কার কমিটির একজন সক্রিয় সদস্য হয়েও…
    কী অদ্ভুত না!
    আমি ঘুরি। কথারা ঘোরে। আমি দেখি….
          পারিজাত। ৯ তলা। অনেক লোক। স্তাবক। স্তাবক। কখনও স্তুতি তো কখনও হুঙ্কার…
    তখনও মমতা আসেনি। বাংলা স্টেটসম্যান হৈ হৈ মাচিয়ে দিয়েছে। শাসকের ছাল খুলে নিচ্ছে। নিয়মিত কলামে গালি- ’গ্রেট গাঙ্গু’, সম্বোধন করে… ধান্দার কথা ইত্যাদি ইত্যাদি।
    নাম আছে তবে ছদ্মনাম। স্তাবকেরা সব জানে… তারা কথা বলে-
    – আপনি জানেন বেনামে এইসব কে লিখছে? আমরা জানি।
    – আপনি এইসব অপপ্রাচারের বিরুদ্ধে কিছু বলুন।
    – লোকে’ত বলবে আপনি প্রতিবাদ করেননি। তারমানে যা রটে তার কিছু’ত বটে…
    কান পেতে আছি… কী একটা বলছে…শুনি…
    – পড়ি’ত। রোজই পড়ি। ভাবি কবে প্রমাণ সহ আসবে আমি কী কী ধান্দা করেছি…করে কী কী পেলাম সেই লিস্ট…আসে না। আমি তাই আর ওসব নিয়ে ভাবি না।
    বরং আমাকে নাড়া দিয়েছে একটি চিঠি। নামহীন একটি চিঠি। আমাকে অনুরোধ করেছে বাচ্চাদের জন্য, শুধুই বাচ্চাদের জন্য লিখতে…
    সত্যি তো এখন তো অর্থের আর অত দরকার নেই। চুক্তিবদ্ধ থাকার জন্য লিখতে হয় কিছু লেখা কিন্তু আমি ভাবছি এবার বাচ্চাদের জন্যই লিখব…
    – লিখছেন?
    – আসলে আবাপ একসঙ্গে উপন্যাস জমা দিতে বলে। আমি’ত ওভাবে লিখিনা… তাই সমস্যা। দেখি কী হয়…
    সঙ্গে সেই অমলিন হাসি।
    কবি বলেছিলেন – কেউ কথা রাখে না…
    কিন্তু কেউ কেউ রাখে। তাই হয়ত মৃত্যুর আগের দিন লিখতে পারার অবস্থায় না থেকেও মুখে মুখে বলে গিয়েছিলেন ছোটদের মহাভারত …
    যা শালা! বলতে বলতে মৃত্যু এনে ফেললাম। একটু পিছিয়ে যাই…
    ’৮০ র দশকের শেষদিকে। গল্প হচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে…
    – স্যার একবার নেতা হয়ে গেলে আর চিন্তা নেই। ওপরে নীচে ডাইনে বাঁয়ে। পয়সাই পয়সা। লাইফ পুরো স্মুথ এন্ড ফর্সা…
    মিতভাষী বাংলা শিক্ষক বলেছিলেন- ভোট দাঁড়ালে নেতা হওয়া যায়। পয়সা দিয়ে ভয় দেখিয়ে ভোট কেনাও যায়… কিন্তু নেতৃত্ব এক অর্জিত গুণ। যা অর্জন করতে হয়। তার জন্য দরকার এক দীর্ঘ প্রস্তুতি… নিরুচ্চারিত বহিঃপ্রকাশহীনতা নেতৃত্বের এক উল্লেখযোগ্য দিক। নিজের মত বলবে কিন্তু চাপাবে না। অ-মানবিক সমালোচনা শোষন করার ক্ষমতা…
    – ও বুঝেছি..চুমু থেকে চড় কোনকিছুতেই এক্সপ্রেশান বদলাবে না। অন্তত বাইরে দেখা যাবে না। কী ডেঞ্জারেস… অমানবিক নীরবতা…
    অমানবিক নীরবতার ওপর দু-ফোঁটা…
          ‘ কত কথা যে আপনি রেখে দিয়েছেন- অন্য যে কেউ হলে ফেটে যেত। আপনি আত্মজীবনী লিখলে সে হবে এক পারমানবিক বিস্ফোরণ’- সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়
          ‘আজকের এই সাহিত্য সমাজে থেকেও বোধহয় একমাত্র মানুষ, যিনি কখনো কারো নিন্দে করেননি। এমনকি আড্ডার সময়েও অন্য কেউ কারো নিন্দেমন্দ করলে তাঁকে থামিয়ে দিতেন। সর্বদা অকুন্ঠভাবে নিজের মত প্রকাশ করেছেন তেমনই অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, এ গুণটা আমি মনে করি খুব দুর্লভ’- শঙ্খ ঘোষ
    মনে এল, কবি লিখেছেন-
         ’ কেউ আমাকে শিরোপা দেয়, কেউ দু’চোখে হাজার ছি ছি
          তবুও আমার জন্ম-কবচ ভালোবাসাকে ভালোবেসেছি’( জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় ন)
    দু’ আনা নিজের জন্য রাখত মানুষটা। আর এই দু’ আনাতেই রয়েছে এই প্রস্তুতিগুলো…। সামাজিক সম্পর্ক পালনের প্রস্তুতি। আরও কিছু আছে। সে গল্প পরে..অন্যকোনদিন…
    কিন্তু ভাট শেষ করার আগে… নাম।
    যদিও সকলেই বুঝে গেছেন কার প্রস্তুতি পর্ব। জানেন সকলে বাংলা শিক্ষকের নাম… তবুও…
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শ্যামল কুমার মিত্র…
     
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে লেখা সন্দীপন চট্টোপাধ্যয়ের চিঠি
    হাওড়া, ২১ জানুয়ারি ১৯৬১
    প্রিয় সুনীলবাবু,
    মাত্র এই পৃষ্ঠা এবং এর উল্টোপাতাটুকু লিখব, অর্থাৎ আগে থেকেই একটা সংযম আরোপ করে নিচ্ছি। চিঠিটা পাঠাব অনেকদিন পরে, অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত পাঠাব কিনা খুবই সাবধান হয়ে গেছি আমি। এই সাবধানতা, আপনার সম্পর্কে, মূলত একটিমাত্র কথা, যা আপনাকে জানানোর। আপনার ব্যবহার আমাকে সাবধান করে দিয়েছে। কোনোরকম সচেতন মনোযোগ না দিয়ে, শেষের দিকে আমি আপনার সঙ্গে মেলামেশা করছিলাম; যাবতীয় সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ধরে নিয়েছিলাম আমি আপনার বন্ধু। যে-ভাবেই তার সংজ্ঞা করা যাক, যে-কোনো বিরুদ্ধতা সত্ত্বেও আপনাকে আমার বন্ধু ভেবেছিলাম। শেষ পর্যন্ত এই ধারণা আমার হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মানে এই যে তার আগে বহুদিন তা হয়নি, বহু সময় লেগেছিলল এ-জন্যে অনেক স্বার্থত্যাগ ( চারিত্রিক ) আমি করেছিলাম, দাম দিয়েছিলাম এর। পুরো দাম দিলে একটা জিনিশ আমি পাব, আমি আশা করেছিলাম। তারপর আপনি আমাকে সাবধান করে দিলেন। ৬-ই ডিসেম্বরে মধ্যরাতে ইডেন হসপিটাল রোডের মুখে দাঁড়িয়ে যে-সব কথা আপনি আমাকে বলেন, তা-ই আমাকে সাবধান করে দেয়। অবশ্য অতটা অপ্রত্যাশিত লাগা উচিত হয়নি, কারণ গত এক বছরে মাঝে-মাঝেই অপমান করেছেন, কোথাও একটা প্রত্যাশা আমার সেদিন থাকা উচিত ছিল। সত্যি, আজ মনে পড়ছে অনেকবার, পাঁচ বার কি ছ’বার, আমাকে সকলের সামনে অপমান করেছিলেন। অপমান করা আপনার সঙ্গত হয়েছিল কি হয়নি, সে-কথা ভাবছি না। কারণ, এটাই ভাবছি যে, অপমান হচ্ছে অপমান। এবং বন্ধুকে কেউ অপমান করে না। যে বন্ধু নয়, অবশ্য তাকে করে। কিন্তু ওই যে বললাম, আমার শেষ পর্যন্ত ধারণা জন্মে যায় যে আমি আপনার বন্ধু, বা আরো কতো বড়ো ভুল, আপনি আমার বন্ধু। আগের অপমানগুলি আমি ক্রমশ ভুলে যাই। কিন্তু আপনি অনুতপ্ত দেখে ৬-ই ডিসেম্বরের অপমানও আমি পাছে ভুলে যাই, তাই পরদিন হাসতে-হাসতে, ‘কী মশাই, are you angry with me’ জিজ্ঞাসা করেছিলেন বলে আজ পর্যন্ত আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর সুযোগ আমার হয়নি। শেষ পর্যন্ত আপনার অনুরক্ত হয়ে পড়া ছাড়া আমার উপায় ছিল না। বন্ধুত্ব আমার কাছে বড় আশার জিনিশ ছিল। অন্য কোনো human value সম্পর্কে আমি সুনিশ্চিতভাবে জানতে পারিনি, যেমন প্রেম, ভাতৃত্ব, দেশ বা বাবা-মার সম্পর্কে অনুভব, এইসব। বন্ধুত্ব সম্পর্কে কিছুটা পেরেছিলাম। যতদিন ভুল ধারণা ছিল, বন্ধুত্ব ছিল বেঁচে থাকার একটা আশ্বাস, একমাত্র মানে।
    ইতি, প্রীতিসহ
    সন্দীপন

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা দেবী রায়ের চিঠি

    সকালে, বাড়িতে, হাওড়ায়, ২২/৬/১৯৬৪
    মলয়,
    তুমি-আমি নাকি কলকাতায় অ্যারেস্ট হয়ে গেছি। চতুর্দিকে গুজব। কয়েকজন চেনা, হাফচেনার সঙ্গে দেখা হলে অবাক চোখে তাকাচ্ছে; ভাবখানা এই, ‘কখন ছাড়া পেলে’। আমার তো এখন একতারা নিয়ে বাউল হয়ে বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে কলকাতায়। সবাই তালে আছে, ‘বাঘে ছুঁইয়ে দেওয়ার’, পর্নোগ্রাফি প্রমাণ করার। সুবিমলকে মে সে কে একজন বলেছে, ‘দেখব কী করে ‘হাংরি জেনারেশন’ বের হয়। সমীর রায়কে টেলিফোন করে ‘আমাদের দাদারা’ বাণী দেওয়ার তালে ছিল; কিন্তু বুঝে গেছে সমীর খচ্চর ছেলে, শালাদের কোঁচা খুলে নেবে। সমীরদার কী খবর? এদিকে পারিজা খচে লাল। আমরা কেন গনদা পরতিকা দিয়েছি ইত্যাদি… শৈলেশ্বর বালুরঘাট থেকে ফিরেছে, দেখা করেনি, চিঠিও দেয়নি…ডাকে পাঠিয়েছি ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’। শৈলেশ্বররা লেখে এক, করে এক, বলে এক, ভাবে আরেক, ছোঃ: ‘এষণা’-র ব্যাপারটা জেনে নিও। চিঠি দিও। লালমোহন বলছিল, ‘ছোটোগল্প’ বেরোবে।
    দেবী রায়

    দেবী রায়কে লেখা সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের চিঠি

    প্রিয় দেবী,
    পর-পর দুসপ্তাহ এলেন না, কোনো চিঠিপত্রও নেই, দোষ একটিমাত্র করেছি। এতোদিনের বন্ধুত্বে একটি, আপনাকে লেখা দিইনি। এজন্যে যদি কিছু মনে করে থাকেন, আমার কিছু করার নেই। উৎপল আপনার ওখানে গিয়েছিল? প্রিয় উৎপল অনেকদিন দেখা হয়নি। রয়েড স্ট্রিটে উঠে গেছেন? আমি সুনীলের একটা চিঠি পেয়েছি। আমি খুব ভালো নেই। একদিন যদি চলে আসেন ভাল হয় — আপনি তো শক্তির মতো ধান্দায় ঘোরেন না। আপনি চলে এলেই পারেন। বীটদের একটা পত্রিকা Now ডাকে পেয়েছি। প্রেরক C.Plymell একজন কবি। 1537 N. TO Peka/Wichita/Kansas/USA. একটা উত্তর দিন। ভাই শক্তি, ‘দেশে’ কলাম ছাপানো ব্যাপারে তৈরি plan কী successful হল, অন্যান্য planগুলো, শংকর, বরেন, সুভাষ মুখো থেকে শুরু করে নরেশ গুহ স্টিল সুনীল, বুদ্ধদেব, নীরেনবাবু ইত্যাদি মিলিয়ে, ও বিধু, রবীন দত্ত, সামসের সমেত ও অধুনা সংকর কী যেন ( ছাড়পত্র সম্পাদক ) প্লাস শরৎ, ভাস্কর, প্রণব প্রভৃতি নিয়ে যে বিরাট জাল ফেলেছিস, সেটা এবার তোল। আমরা আর কতো সময় দাঁড়িয়ে থাকব? তারপরেও অপেক্ষা করতে হবে। আমেরিকাগামী প্লেনে দমদমে see off  করতে পারলে তবে আমাদের ছুটি। প্রিয় সুনীল, আপনার চিঠি পেয়েছি। আমার bedroom-এ উঁকি মারছেন কেন? আমার সমূহ বিপদ — এই প্রথম আমার মনে হচ্ছে, আমার দ্বারা বুঝে ওঠা সম্ভব হবে না এখন আমার কী করা উচিত, এখন এই প্রথম আমাকে অপরের উপদেশমতো চলতে হবে। প্রিয় দীপেন, তোমার কী হল? কোথায় থাক? তুমি যেন আমার সব অপরাধের শাস্তি আমি ভোগ করছি। প্রিয় উৎপল, আপনি ছাড়া কারো সম্পর্কে এখন বন্ধুত্বের বোধ নেই। সুনীলের জন্য আছে, কিন্তু তা বোধহয় সে আমেরিকায় আছে বলে। শ্যামবাজার থেকে টু-বি ধরেছি, দোতলা, মাঝে-মাঝে বাসস্টপগুলির সুযোগ নিয়ে লিখছি। একদিন আসুন।
    আপনাদের সন্দীপন।

    সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়কে লেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের চিঠি

    15 June 1964, 313 South Capital, Iowa City, Iowa, USA
    সন্দীপন,
    নদীর পাড়ে গাছের ছায়ায় বসেছি, প্রচণ্ড হাওয়া, সঙ্গে ৫ ডজন বিয়ার ক্যান, পাশে সাঁতারের পোশাক পরা একটা ধলা মেয়ে, মাঝে মাঝে তার পাছায় টোকা মারছি পায়ের আঙুল দিয়ে, এ দৃশ্য কেমন? অবিকল এই দৃশ্যের মাঝে আমি শুয়ে আছি। চিঠি লিখছি। কিন্তু আমি এ দৃশ্যের মধ্যে নেই। হাতের তালু গোল করে খুব ছোটো করে, চোখের কাছে আনছি — সব কিছু দূরে চলে যাচ্ছে। মেয়ের মুখও। খিদে নেই। তেষ্টা নেই। তবু বিয়ার খাচ্ছি। কারণ, এখানে বসে খাওয়া বেআইনি বলে, ঘরের মধ্যে খুব গরম, থাকতে পারিনি। ঘাসের ওপর গড়িয়ে এলাম। একটা দূরন্ত খরগোশকে ধরার জন্য পাঁচবার ছুটে গিয়েছিলাম। কী ভালো লেগেছিল আপনার চিঠি পেয়ে। বিশেষত লাল পেনসিলের অক্ষর। যেন দুটো চিঠি পেলুম। গল্পটা আপনার ভালো লাগবে না জানতুম। গদ্য লিখে আপনাকে খুশি করতে পারব এমন দুরাশা আমার নেই। সত্যি নেই। কারণ, আপনি গ্রেট গদ্য লিখেছেন একসময়, এখন আর তেমন না। কিন্তু যা লিখেছেন, তার ধারে কাছে আর কেউ পোঁছতে পারেনি। আমি ওরকম গদ্য লিখতে পারি না। লিখবো না। কিন্তু ওই গদ্যই আমার প্রিয় পাঠ্য। আপনি পড়বেন, এই ভয়ে আমি সহজে গদ্য লিখতে চাই না। তবু কখনও লিখি, হয়তো টাকার জন্য, টাকার জন্য ছাড়া কখনও গদ্য লিখেছি বলে মনে পড়ে না। লিখেছিলুম একটা উপন্যাস, সেতা ছাপার সম্ভাবনা নেই। আমার কবিতার জন্য আপনাকে ভয় করি না, কবিতা লেখার ক্ষমতার ওপর আমার বেশি আস্হা নেই, আপনি যেরকম কবিতা ভালোবাসেন, অথবা যাই হোক — আমি সেরকম কখনও লিখব না। আমি কবিতা লিখি গদ্যের মতো, ওরকমই লিখে যাবো। ও সম্বন্ধে আমার কোনো দ্বিধা নেই। শক্তি অসাধারণ সুন্দর বহু লাইন লিখেছে। আমার চেয়ে অনেক বড়, আমি ওকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু শক্তির কবিতা মুণ্ডহীন, আমি ওরকম লিখতে পারব না, চাই না, কারণ আমি ওরকম ভাবে বেঁচে নেই। বরং উৎপলের কবিতা আমাকে অনেক বেশি আকর্ষণ করছে। কিন্তু এখানে এই শুয়ে থাকা, গাছের ছায়া মুখে পড়ছে — তখন মনে হয় কোথাও কিছু নেই, না কবিতা, না হৃদয়।
    প্রিয় সন্দীপন, দু-দিন পর আজ সকালে আবার আপনার চিঠি পেলুম। কি সব লিখেছেন কিছুই বুঝতে পারলুম না। কেউ আমাকে কিছু লেখেনি। শরৎ ও তারাপদ কফিহাউসে কি সব গণ্ডোগোলের কথা ভাসা-ভাসা লিখেছে। সবাই ভেবেছে অন্য কেউ বুঝি আমাকে বিস্তৃত করে লিখেছে। কিন্তু আপনার চিঠি অত্যন্ত অস্বস্তিজনক। তিনবার পড়লুম, অস্বস্তি লাগছে। বিছানা থেকে উঠে কলের কাছে গেলুম, ফিরে এলুম টেবিলে, আবার রান্নাঘরে, ভালো লাগছে না, কেন আমাকে এরকম চিঠ লিখলেন। আমি তো শুয়েছিলুম। আমি তো বিছানায় রোদ ও আলস্য নিয়ে খেলা করছিলুম। কেন আমাকে এমনভাবে তুললেন !
    সন্দীপন, আপনি অনেকদিন কিছু লেখেননি, প্রায় বছরতিনেক। তার বদলে আপনি কুচোকাচা গদ্য ছাপিয়ে চলেছেন এখানে সেখানে। সেই স্বভাবই আপনাকে টেনে নিয়ে যায় হাংরির হাঙ্গামায়। আমি বারণ করেছিলুম। আপনি কখনও আমাকে বিশ্বাস করেননি। ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছিলেন। আমি শক্তিকে কখনও বারন করিনি, কারণ আর যত গুণই থাক — শক্তি লোভী। শেষ পর্যন্ত উৎপলও ওই কারণে যায়। কিন্তু আমি জানতুম আপনি লোভী নন। আপনার সঙ্গে বহুদিন এক বিছানায় শুয়েছি, পাশাপাশি রোদ্দুরে হাঁটার সময় একই ছায়ায় দাঁড়িয়েছি। সেই জন্য আমি জানতুম। আমি আমার লোভের কথা জানতুম। সেই জন্যই বুঝেছিলুম আপনার লোভ আমার চেয়ে বেশি নয়। আমার ওতে কখনও লোভ হয়নি, হয়েছিল অস্বস্তি থেকে ঘৃণা। ইংরেজিতে রচনা ছাপিয়ে ইওরোপ আমেরিকার দৃষ্টি আকর্ষণ করা আমার বিষম বদ রুচি মনে হয়েছিল আগেই, এখানে এসে আরও বদ্ধমূল হয়েছি। হাংরির গ্যাঁড়াকলের প্রতি আরও ক্রুদ্ধ হয়েছি। অপরের কৌতূহল এবং করুণার পাত্র হতে আপনার ইচ্ছে করে? হাংরি এখানে  যে দু’একজন পেয়েছে, তাদের কাছে তাই। আমি এতদিন দেশে রইলুম — অনেক সুযোগ এবং আহ্বান পেয়েছিলুম, কোথাও তবু একটি লাইনও ইংরেজি পদ্য ছাপাইনি। ছাপালে কিছু টাকা পেতুম, তবু না। কারণ সবাইকে বলেছি, আমি বাংলা ভাষার কবি, আমি শুধু বাংলাতেই লিখি, যে ভাষাব কথা বলে ৭ কোটি লোক — ফরাসি ও ইতালির চেয়ে বেশি। এবং ফরাসি ও ইতালির চেয়ে কম উন্নত ভাষা নয়। আমার কাজ কবিতালেখা, নিজের কবিতা অনুবাদ করা নব, ও কাজ অন্যের। তোমাদের দরকার হলে বাংলা শিখে অনুবাদ করে নাও। এই ধরনের সূক্ষ্ম পিঠ চাপড়ানির ভাব লক্ষ্য করেই আমি বাংলা কবিতার ইংরেজি অনুবাদ গ্রন্হের কাজ, যেজন্য আমি এখানে এসেছিলুম, এক লাইনও করিনি।
    হাংরির এই ইংরেজি মতলোব ছাড়া, বাংলা দিকটা আরও খারাপ। ওর কোনো ক্রিয়েটিভ দিক নেই। শর্টকাটে খ্যাতি বা অখ্যাতি পাবার চেষ্টা — অপরকে গালাগাল বা খোঁচা দিয়ে। আপনি মলয়কে এত পছন্দ করছেন —   কিন্তু ওর মধ্যে সত্যিকারের কোনো লেখকের ব্যাপার আছে, আপনি নিশ্চই মনে-মনে বিশ্বাস করেন না। আমি চলে আসার পরও আপনি হাংরির পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন — হিন্দি কাগজের জন্য আপনি কি একটা লিখেছিলেন — তাতেও হাংরির জয়গান। ভাবতে খুব অবাক লাগে — আপনার মতো অ্যাব্সট্র্যাক্ট লেখক কী করে ইলাসট্রেটেড উইকলিতে ছবি ছাপাটাও উল্লেখের মনে করে। এগুলোই হাংরির গোঁজামিল। এই জন্যেই এর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক থাকাতে বারবার দুঃখ পেয়েছি, দুঃখ থেকে রাগ, রাগ থেকে বিতৃষ্ণা। একটা জিনিশ নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, আমি কখনও প্রত্যক্ষভাবে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করিনি, ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করিনি। পারতুম। করিনি, তার কারণ, ওটা আপনাদের শখের ব্যাপার, এই ভেবে, এবং আপনারা আপনারা ওটাকে দাঁড়  করাবার চেষ্টা করছিলেন কৃত্তিবাস বা সুনীলের প্রতিপক্ষ হিসেবে। সে হিসেবে ওটাকে ভেঙে দেওয়া আংমার পক্ষে নীচতা হতো খুবই। বিশ্বাস করুব, আমার কোনো ক্ষতির কথা ভেবে নয়, আপনার অপকারের কথা ভেবেই আমি আপনার ওতে থাকার বিরোধী ছিলুম। এটা হয়তো খুব সেন্টিমেন্টাল শোনালো, যেন কোনো ট্রিক, কিন্তু ও-ই ছিল আমার সত্যিকারের অভিপ্রায়। এবারে নতুন করে কী ঘটলো বুঝতে পারলুম না। যে ছাপা জিনিসটার কথা লিখেছেন, সেটা দেখলে হয়তো বুঝতে পারতুম। এবং এটা খুবই গোলমেলে — যে চিঠি আপনি চারজন বন্ধুকে এক সঙ্গে লিখেচেন, যেটা চারজনকে একসঙ্গে পাঠানো যায় না, সেতা হারাধন ধাড়াকে পাঠালেন কী জন্য, বুঝতে পারলুম না। কিংবা আমার বোঝারই বা কী দরকার? আচ্ছা মুশকিল তো, আমাকে ওসব বোঝার জন্য কে মাথার দিব্যি দিয়েছে এই আষাড় মাসের সন্ধ্যাবেলা? আমি কলকাতায় ফিরে শান্তভাবে ঘুমোবো, আলতো পায়ে গুরবো — আমার কোনো সাহিত্য আন্দোলনের দরকার নেই। মলয় আমার চিঠি কেন ছাপিয়েছে? আমার গোপন কিছু নেই— বিষ্ণু দেকে আমি অশিক্ষিত বলেছি আগেও, কৃত্তিবাসের পাতায় ব্যক্তিগত রাগে, কারণ উনি ওঁর সংকলনে আমার কবিতা আদ্দেক কেটে বাদ দিয়েছেন বলে। কিন্তু মলয়ের সেটা ছাপানোর কি মতলব? যে প্রসঙ্গে লিখেচিলুম সেটা ছাপিয়েছে তো? আমি ওকে লিখেছি সম্প্রতি, ‘সামনে-পেছনে বাদ দিয়ে , ডট ডট মেরে চালাকির জন্য আমার চিঠি যদি ছ আপাও, তাহলে এবার ফিরে গিয়ে কান ধরে দুই থাপ্পড় মারব।’ আপনার চিঠি সম্বন্ধেও তাই। আপনার চিঠি ওরা ছাপিয়েছে, সেটাই খারাপ — যা লিখেছেন তা নয়। বেশ করেছেন লিখেছেন — আমি না পড়েই বলছি। ওটা আপনার শক্তির আর আমার ঘরোয়া ব্যাপার — আর কার কি তাতে? আপনার যা খুশি বলার অধিকার আছে।
    কিন্তু ওসব থাক সন্দীপন। আপনাকে কেউ মারবে না। কার অমন স্পর্ধা আছে? যদি আপনি জায়গা দেন, আমি সব সময় আপনার পাশে আছি।  অনেকে আছে। আপনার সঙ্গে কত ঝগড়াঝাঁটি হয়েছে — কিন্তু এই দীর্ঘদিন নিরালায় ভেবে দেখলুম, আপনাকে বাদ দিয়ে আমাদের চলে না। এক হিসেবে আপনি আমার অপরাংশ, আপনার চরিত্রের  অসংলগ্নতা, ভুল এবং জোচ্চুরি — সব কিছু আমার প্রিয়। যেন আমার না পাওয়া জীবন। লেখক হিসেবে, ‘প্রতিভাবান’ এই শব্দটা যদি ব্যবহার করতে হয় — তবে আমাদের পুরো জেনারেশনে তন্ময় দত্ত ছাড়া — শুধু আপনার সম্বন্ধেই আমি ওকথা ভাবি। আপনার ঐ সুখের সূক্ষ্ঞ শরীর কেউ ছোঁবে না — কলকাতা শহরে এমন কেউ নেই। না নেই। আপনি নরম ভাবে শুয়ে থাকুন রীনার পাশে, আপনি ওঁকে মঙ্গল গ্রহের গল্প বলুন। আমি কলকাতায় পৌঁছোবো — ১৮ আগস্ট। নানা কারণে এখানে এক মাস দেরি হয়ে গেল। দেরি হয়ে গেল আমারই বোকামিতে খানিকটা। জুনের মাঝামাঝি বা আস্টের প্রথমে প্যারিসে একটা থাকার জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কয়েকদিনের জন্য। আমি জুন মাসটা নষ্ট করেছি — সুতরাং আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা না করে উপায় নেই। এই ঠিকানায় আছি জুলাই-এর বারো তারিখ পর্যন্ত অন্ততঃ, তারপর নিউইয়র্ক ও ইংল্যান্ড। এখানে থেকে এম. এ. পড়তে পারি আমি — আপনার মনে এরকম ধারনা এল কি করে? আমি কি সম্পূর্ণ কাণ্ডজ্ঞানহীন হয়েছি? কৃত্তিবাসে আপনার লেখা নিয়ে প্রচুর গণ্ডোগোল করেছি — তবু, এবার কৃত্তিবাসে আপনার লেখা না দেখে মন খারাপ লাগলো। এখান থেকে কোনো জিনিস নিয়ে যাওয়ার হুকুম আছে আপনার কাছ থেকে? ভালোবাসা।
    সুনীল

    দেবী রায়কে লেখা সন্দীপন চট্টোপাথ্যায়ের চিঠি (হারাধন পিতৃদত্ত নাম)

    মির্জাপুর, ৫ অক্টোবর ১৯৬৩
    প্রিয় হারাধনবাবু, 
    হাংগরি জেনারেশনের জন্য লেখা পাঠালাম। প্লট, কনটেন্ট, ক্র্যাফ্ট — এসব বিষয়ে ডেফিনিশন চেয়েছেন, আপাতত অন্য কতকগুলো ডেফিনিশন পাঠালাম, ওগুলো পরে লিখব। প্রকাশযোগ্য কিনা দেখুন।       ছাপালে সবকটি একসঙ্গে ছাপাতে হবে — নইলে খাপছাড়া লাগবে। ছাপার ভুল যেন বেশি না থাকে, দরকার পড়লে অনুগ্রহপূর্বক একটা ফ্রেশ কপি করে প্রেসে দেবেন। ‘অমৃত’তে আমার বইয়ের যে বিজ্ঞাপনটা বেরিয়েছিল, দেখেছেন? নইলে পাবলিশারের কাছে গিয়ে তার একটা কাটিং পাঠাবার ব্যস্হা করেন তো খুশী হই। ওই বিজ্ঞাপনটাই দেশে বেরোবার কথা আছে — যদি বেরোয় তার প্রুফটা কাইন্ডলি দেখে দেবেন। আনন্দবাজারে লেখকদের লেখকদের কোনো বিবৃতি বেরিয়েছিল নাকি? তাহলে তারও একটা কাটিং পাঠাবেন। সামনের মাসে বাড়ি পাল্টাব। আরো একমাস থাকবো বা ততোধিক। সহজে যাব না। শরীর ভালো। ছোটোগল্পে আবার লেখা দিতে পারলাম না, সম্ভব হলে ক্ষমা করবেন। আগামি সপ্তাহে নতুন ঠিকানা পাঠাবো। তার আগে চিঠি দিলে, কুমুদ বাঙলো, রুম নং ৫, টিকোর, চুনার, মির্জাপুর, — এই ঠিকানায় দেবেন। ‘আক্রমন’ বানান কী? ‘ন’ না ‘ণ’? লেখাটা প্রকাশ হবার আগে আপনি ছাড়া কেউ যেন না দেখে। অনেক বাদ দিয়ে, খুব নরম করে, সবদিক বাঁচিয়ে লিখেছি, ভয় নেই। হাংগরি জেনারেশনের একটা সিম্বল করতে বলেছিলুম, তার কী হল? ৫ নয়া পয়সা দাম করতে পারেন।  কমাগুলো ভেবেচিন্তে দিয়েছি, ওইগুলোই আসল জিনিস যেন থাকে। শেষের তারিখটা যেখানে আছে, ওখানে প্রকাশের তারিখ দেবেন।‘অভিযান’ পূরবীতে হয়েছিল তো? সুনীলবাবুকে (হাজরা) প্রীতি জানাচ্ছি। ইতি
    সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের চিঠি 

    কলকাতা, 15 March 1965
    প্রিয় মলয়,
    হাইকোর্টের রায় পড়ে তোমাকে মনে-মনে তৎক্ষণাৎ কনগ্র্যাচুলেট করেছি। একটা মামলা হওয়া দরকার ছিল, কাউকে না কাউকে এরকম মামলার আসামী হতেই হত। সীমাবদ্ধ হওয়া সত্বেও এর ফলাফল আধুনিক সত্য সাহিত্যের পক্ষে যথেষ্ট ভালো হবে, মনে হয়। কৃতিত্ব সবটাই তোমার একার, তবু লেখক নামের যোগ্য সকলেই একে পুরস্কার বলে মনে করবে ও ভাগ করে নিতে চাইবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি পুরস্কৃত হওয়ার আনন্দ পেয়েছি।
    প্রীতিসহ,
    সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়

    বিশ্বভারতী থেকে প্রদীপ চৌধুরীর রাস্টিকেট হবার চিঠি

    নং. আই.ডি.পি/VII-১০/৬৩-১০
    তারিখ ১৮ জুলাই ১৯৬৩
    শ্রীপ্রদীপ চৌধুরী
    আপনাকে সতর্ক করে দেওয়া সত্তেও এই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপ থেকে আপনি বিরত হননি। কর্তৃপক্ষের নির্ণয় অনুযায়ী এই পরিসরে ছাত্র হিসাবে আপনার উপস্হতি কোনোমতেই কাম্য নয়। অতএব আজ দ্বিপ্রহরের পূর্বেই আপনাকে ছাত্রাবাস ত্যাগ করার আদেশ দেওয়া হচ্ছে এবং জানানো হচ্ছে যে যতো সত্বর সম্ভব আপনি আপনার ট্রান্সফার সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে নিন ও সমস্ত বকেয়া চুকিয়ে দিন।
    কালিদাস ভট্টাচার্য                      পি.সি দাশগুপ্ত          হীরেন্দ্রনাথ দত্ত
    অধ্যক্ষ বিদ্যাভবন                          প্রোকটর   বিভাগীয় প্রধান
    শান্তিনিকেতন                            বিশ্বভারতী           ইংরেজি
     
    বহিষ্কার সংক্রান্ত যে-চিঠি বিদ্যাভবন কর্তৃপক্ষ প্রদীপ চৌধুরীর বাবাকে লেখেন  :

    নং. সি.এস.এস VII-I/৬৩/৭৯
    তারিখ ১৮ জুলাই ১৯৬৩
    শ্রীপ্রমোদরঞ্জন চৌধুরী
    প্রিয় মহাশয়
    শ্রীমান প্রদীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর।   কয়েক মাস পূর্বে ‘স্বকাল’ পত্রিকার একটি সংখ্যায় সে জনাকয় ছাত্রীর নামোল্লেখ করে একটি অর্ধ-অশ্লীল কবিতা লেখে। প্রচ্ছদে জানানো হয় যে পত্রিকাটি বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন হতে প্রকাশিত। তাকে ডেকে সতর্ক করে দিয়ে জানানো হয় যে ভবিষ্যতে যেন কোনো সংখ্যায় বিশ্বভারতীর নাম না থাকে এবং অশ্লীল কবিতা বা রচনা প্রকাশিত না হয়, অন্যথা তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।  পরবর্তী সংখ্যায় কেবল যে বিশ্বভারতীর নাম ছিল তা নয়, সঙ্গে অত্যন্ত অশ্লীল একটি কবিতে দেখে আমরা স্তম্ভিত হয়ে যাই, যা একজন ছাত্রের কাছ থেকে আশা করা যায় না, যদি তার রুচি অত্যন্ত নোংরা না হয়। অতএব বিশ্বভারতীর ছাত্র হিসাবে তার উপস্হিতি সম্ভব নয় এমন একটি নির্ণয় নেওয়া হয় এবং তাকে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে বলা হয়। আদেশের একটি কপি পাঠানো হল।      শ্রীমান প্রদীপ চলে যাবার পর অ্যাকাউন্টস অফিসার জানিয়েছে যে ৪৫৫ টাকার বিশাল অঙ্ক সে বাকি রেখে গেছে।
    কালিদাস ভট্টাচার্য, অধ্যক্ষ,  বিদ্যাভবন, শান্তিনিকেতন

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা হাংরি আন্দোলনের কবি প্রদীপ চৌধুরীর চিঠি

    ৭ এপ্রিল ১৯৬৫
    প্রিয় মলয়,
    এর মধ্যে তোমাকে চিঠি, সুভাষকে চিঠি এবং টেলিগ্রাম পাঠিয়েছি, তোমার ঠিকানা সম্পর্কে আমি শিওর নই, তাই আর কিছু করতে পারলাম না। ট্রাঙ্ক কল করার ইচ্ছে ছিল।    কলকাতার পুলিশ আমাকে ৩১ মার্চ ১৯৬৫ ত্রিপুরায় এসে গ্রেপ্তার করেছে; কিন্তু আজ আর সেই প্রাথমিক উচ্ছ্বাস একদম নেই, জুজুর ভয়ও নেই। কবিতার বুকের ওপর চেপে বসলে সম্ভবত এইটেই ভবিতব্য। তুমি হাজতে বসে যা আমাকে লিখেছিলে — আমি তার সিগনিফিক্যান্স আগে যেমন, এখন তার চেয়ে অনেক স্বাভাবিক, তাই অনেক ভয়ংকর করে ভাবতে পারছি।   অনেকদিন এমন নিঃসঙ্গতা ও ভয় এবং অনুশোচনায় কাটিয়েছি যে, কী দারুণ উৎকন্ঠার ভিতর আমি প্রদীপ চৌধুরীর যাবতীয় আবরণ খুলে, লাথি মেরে নষ্ট করে, একজন কবন্ধ লেখকে পরিণত হয়েছি। আমাকে না দেখলে, আমার মুখোমুখি না হলে, তুমি বুঝতে পারবে না । অসম্ভব দুঃখ পেয়েছি যেদিন শৈলেশ্বরদের ঠিকানা থেকে আমার বই ফেরত এসেছিল ( ওরা রিফিউজ করেছিল ) — হ্যাঁ তখন থেকে আমার অসহায় দুঃখকে চাবুকের মতোই আমি নিজের শরীরে ব্যবহার করে আসছি। এনি হাউ, আমি ১২ এপ্রিল দুপুর ১২-১২.৫০-এর মধ্যে দমদম বিমানঘাঁটিতে পৌঁছব। কলকাতা পৌঁছে ব্যক্তিগতভাবে আমার একমাত্র সান্ত্বনা থাকবে বিমানঘাঁটিতে পৌঁছেই যদি তোমাকে ও অন্যান্য সবাইকে দেখতে পাই। তারপর এয়ার-অফিসের গাড়িতে না এসে একসঙ্গে ট্যাক্সিতে করে ফেরা যাবে কলকাতায়।  ১৪ এপ্রিল কোর্টে সারেণ্ডার করার দিন। এর মধ্যে জামিনের সব ব্যবস্হা করে রেখো। আজ আর কিছু লিখি না— লিখলে কেবল অনুশোচনা ও বর্বর সহানুভূতিই আমাকে কাটবে। ভালোবাসা জানাই। তোমার
    প্রদীপ চৌধুরী

    ২৭ মে ১৯৬৭
    India Hotel, Surya Sen Street, Kolkata - 9                                                                                                                                                                        প্রিয় মলয়,
    কলকাতা এসেই ভীষণ অর্থকষ্টে পড়ে গেছি। সঙ্গে বউও রয়েছে। তুমি আমার চিঠি পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে কমপক্ষে ২০০ টাকা ধারদেনা করে হলেও পাঠিয়ে দাও। টাকাটা আমার ১ জুনের মধ্যে দরকার। DON'T FAIL TO WIRE RUPEES TWO HUNDRED AT ONCE.  এটাকে কোনো শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে দিও না।   বিয়ে করে আমি এতই crippled হয়ে পড়েছি যে কারোর সঙ্গেই ঠিকমতো সময় কাটাতে পারছি না। আমি তোমার T.M.O.-র অপেক্ষা করব। অসম্ভব risk-এর মধ্যে আছি।
    প্রদীপ

     
    মলয় রায়চীধুরীকে লেখা বিট কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ-এর চিঠি

    704 East, 5th Street, New York,  28 September, 1964
    Dear Malay,
    I saw clippings from BLITZ, Sept 19, 1964 p6 and also I think Calcutta STATESMAN 17 September 1964 that you were arrested as well as Samir and two boys named Ghosh whom I don’t know, for your HUNGRY GENERATION manifestoes. Are these the same as were printed in the issue of KULCHUR#15? As soon as I read about it, I racked my brain what I could do to help, and so today wrote a whole bunch of letters to the following:-
    A.S.Raman, Editor, Illustrated Weekly, Dr. Dadabhai Naoroji Road, Bombay.
    Sharad Deora, Editor,Gyanodaya, 18 Brabourne Road, Calcutta.
    Abu Sayeed Ayub, Editor, Quest ( sent message to him indirectly), and member of Indian Congress for Cultural Freedom.
    Shyam Lall, Editor, Times of India, New Delhi.
    Khushwant Singh, novelist and member of Congress for Cultural Freedom, 49 East Sujan Singh Road, New Delhi.
    I also wrote to Jyoti Dutta and phoned Lita Hornick of KULCHUR. I asked them, the Indians above all, what they could do to help you, suggested they activate the congress for Cultural Freedom as this sort of thing is the proper activity of the Congress and Quest magazine, and told them that the manifestoes were printed here in CITY LIGHTS JOURNAL and KULCHUR, and were not obscene. So the whole mess was scandalous bureaucratic illiteracy. Please if you need literary help or advice do try to contact these people for support. And in addition perhaps ask for advice/help from Mrs. Pupul Jayakar, 130 Sundar Nagar, New Delhi---she was our protectress in India, we stayed with her, she’s a friend of Indira Gandhi and others. I also notified Bonnie Crown here in New York, the Asia Society, 112E 64 Street, NYC---she commissioned poetry to be translated by Sunil and others and that pack of poems plus your rhythms etc. will be printed together by CITY LIGHTS. She can send you a letter on her official stationary saying your manifestoes are known, published and respected in US and not considered obscene. I will also enquire of Mr. S.K.Roy, the Indian Consul General here in New York who I do not know what he can do at this distance.
    If there is anything you want me to do let me know. Write me and let me know what the situation is and what is the cause of the trouble. In judging from BLITZ I suspected jealous ideological Marxists or something. Are you ruined at the bank?? I hope not. Regard to your family. Get the Congress for Cultural Freedom to supply you with a good lawyer who’ll take no fee. If the Indian Congress doesn’t cooperate, let me know, we’ll explain to the European office. Who are the Ghosh brothers? The manifestoes on prose and politics are pretty funny. I thought they were a little literary-flowery, but they MUST HAVE HIT SOME MENTAL NAIL ON THE HEAD. Good Luck.
    Jai Ram
    Allen Ginsberg

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা বিট কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ-এর চিঠি

    704 East 5th Street, NYC,  January 11, 1965
    Dear Malay,
    Enclosed copies of letters from KULCHUR, from Abu Sayeed ayub ( 3 letters in answer to mine---each letter 2 pages) and one from A.B.Shah---Congress in Bombay. You should follow their letter up. Congress office in Paris has been contacted & they will probably send some note, notice to the Indian Committee.
    I answered some of your letters via Utpal---I sent copies of these letters, also, to show Sunil, Jyoti, etc.
    CITY LIGHTS JOURNAL#2 is on its way to you.
    That Jyoti, Sunil, Sandipan & your self are all working at slight cross-purposes is making things difficult. I suppose they are embarrassed by your ‘brashness’ (as TIME magazine might term it) or your slight edge of naievette as I would term it. However, if it is possible to reconcile with them & put up a united front it would be best for everybody’s safety. Best thing is to stop all cutty gossip, for it is only mainly gossip that Abu Sayeed is using as an excuse. Obviously they also were questioned by the Police, and so, feel a common threat with you. Don’t get angry at them---just work out a basis where you can all defend each other---and try you now---the only present basis (since there seems to be some literary disagreement) being freedom of literary expression.
    They all don’t want to be grouped as Hungry exclusively apparently, and they may resent or be scared or not want you to lump them all under your Hungry banner. And this is natural. Once a MOVEMENT gets name and publicity it is also a drawback as I’ve found. Also, the name is irrelevant & a drag sometimes to one’s individuality. See the first sentence of my letter to Shakti, Feb10,1963 that was published in a Hungry type magazine in Bengali.
    Best not to get angry at anyone---Jyoti, Abu Sayeed---even the police. Think carefully & coolly & get all working together if it is possible. I leave for Cuba in a week and will be back in 2 months.
    Love & Happy New Year
    Allen

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা হাংরি আন্দোলন গবেষক হাওয়ার্ড ম্যাককর্ড-এর চিঠি

    304 Oak Street, Pullman, Washington. 22 May 1965
    Dear Malay Roychoudhury:
    I have enjoyed very much reading your letter and coming in contact with your thoughts. Artaud, Genet, Burroughs:yes.They are the dialecticians of chaos presiding at the dissolution of the west. They describe, with joy and exactitude, the destruction in which they are themselves involved. Burroughs, to me, is a man performing an autopsy on himself. They are all quite mad, and therefore speak the truth. We can only trust the mad anymore. The West began to die around 1750, and it has been the function of poets to recite, in series, the long funeral oration. William Blake began it. Goethe, Baudelaire, Lautremont, Rimbaud, Huysmans(unknowingly), Pound, Eliot, Crane, and all the other familiar names have continued the chant. We are their heirs, and perhaps the culmination, for our anguish and despair, the aesthetic suicide of which we are capable, may mark the end. Perhaps it will go on. Sometimes it seems as though it is the plan for it to go on.
    The inadequacy of my coming, touristic encounter with India is deeply felt. I am not an Indian, I will not become one in two months of hurrying through the landscape. I will be richer only by the validity of my meetings, the openness I can maintain. Here in my own country I am alien enough, separated from the culture by an aversion to much of it, by a self-imposed identification with the Mexican part of my life (perhaps it is as if you felt yourself drawn to Tibet), by a long-standing estrangement from its more common goals. I identify most closely with the folk of the southwestern deserts---the American Indians---Apache, Navajo, Pueblo, Hopi, Zuni, Yaqui, Tarhumara, Comancha---and the ranchers. (My family has for a century run cattle ranches in Texas, New Mexico and Arizona---all poor people in a poor land). My wife is Mexican, my second language is Spanish: my children, blond & blue-eyed though they be, are technically mestizos---the mixed-blood that is the strength and heart of Mexico. And here I sit, perfumed with education, owning not an acre of ground, lost from the desert, 2000 miles from Mexico, a poet in my decadence and reality. My children are apt to be technicians, I pray they will be artists.
    I have plans, most vague and tenuous, for a book of Contemporary Indian Poetry. University published. Likely no money would come of it, but some passing fame. I ask now for some of your poems for this nebulous enterprise, and your aid in contacting other Indian poets.
    From the foregoing you can see some of the difficulty in raising money from letters in the USA. Raising money per se is not to hard. It is raising it in a way that feels decent that is difficult.
    Such fantastics we are!
    I look forward to seeing the poem that has been the cause of all your trouble. I envy you for your courage, for the more I understand about contemporary Indian society, the greater your courage and daring seem.There are no longer any words we can not use in literature, nor any scenes we can not describe. Our only constraint lies in the definition of hard-core pornography where the obvious intention lies in the excitation of base impulses without any redeeming social features. The change in the last ten years has been tremendous. I remember first reading Miller’s TROPICs in their prohibited Paris editions and actually worrying about official interference were the fact of my reading known. Now the TROPICs are available everywhere and professors use them in discussion groups (though not in class here, perhaps elsewhere). It would be stupid of me to laugh or denigrate Indian society in which movies, for example, may not show kissing or the like, and in which mention of the sexual organs is prohibited. I do not like censors or censorship, but I do not expect Indian censorship to cease with my dislike. You have a hard, long battle before you, for a society of great and unyielding complexity must be moved before you are free. If free you must be. And I suppose you must. But may I say, from the point of view of one who can say in print fuck, shit, cunt, prick, whatever, describe scenes of fellatio, cunnelingus, hetero (Praise God) sexual intercourse or homosexual intercourse, and all (Please pardon my spelling, for I have been drinking very much). My bloody prose style suffers!
    That saying these things is not very important. I have one poem in which the cunts of women are sweet and moist as peaches, and one other in which ‘the fuck of voices’ appears as an image. Henry has more, and we ought to be able to say these words, because the mind is like the penis, coming out of the spinal column, sewn to the belly, hard as sugarcane, it talks.
    But I will say that there is more. That the societal context is more, that the identity of speaker and spoken to is more. (As I could not honestly, without compunction, use Fuck in conversation with my parents). For they do not so much respond to it as they are defended by it, and do not hear. (So for me Kandel’s POEMS FOR PERVERTS misses, collapses; fatigues itself). What must we use to drive the mule? WE SHALL SAY ANY WORD.
    WHEN ANY WORD NEEDS SAYING.
    This is an oblique way of saying that I do not trust EVERGREEN REVIEW. There is the stink of money about that magazine. Money that comes from the hard-on, the erection (it is the intellectual’s PLAYBOY, complete with airbrushed nudes. Something coy, cute, cloying---and dead). Hard words for a magazine that has published great writers like Eastlake………
    Send me a translation of your poem: for obviously, I have worked myself into a blew-eyed stupor about the problem.
    I see you as trying to survive an artist in a society 70 years detained. India is strangely Victorian in its public morals. (How did this come about? Considering Khajuraho, etc.?) Were the English that potent? Or is it Muslim? Hindu? Who digs the mithuna couples now save us degenerate foreigners? All right. The pattern: woman’s position in marriage/household: the corporate family (security at the cost of independence?), the precarious economy (do not rock boats, ever), the tension with the West. The civil service.
    Now I must go to bed.
    Next day:
    The questions still seem to be here.And tomorrow I must lecture three hours on Epictetus, the Enchiridon, and stoic philosophy. Later in the week a special lecture on Blake’s THE MAARRIAGE OF HEAVEN AND HELL (which I contend is the first modern poem, the very beginning of all of us). It is so fine. I am translating it into Spanish for the Goosetree Press, which will publish it next year, with fragments from Blake’s drawings. So, I best get busy and to work.
    Best wishes. And I hope that we can meet. Write again soon, please.
    Howard McCord

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা নিকারাগুয়ার বিপ্লবী কবি মার্গারেট র‌্যানডাল-এর চিঠি

    Mexico City, June 17, 1965
    Dear Malay,
    Please, please excuse so much time without writing, and now that I finally am able to sit down to write, this jumpy typewriter is driving me out of my mind. The man promised to come this week to fix it but this is Mexico (land of ‘manana’) etc!. How are things going for you---the trial; your case, the things taken from you and your friends, etc.??? All over the world, through EL CORNO, people write asking about you and wish you well, it has caused an international scandal among people in the arts, at least. I hope for good news, please write!!!
    And the book with Carlos Coffeen’s drawing on the cover---did it come out???
    Under separate cover and by regular surface mail I have sent you two copies of our 13 in which I printed your letters. Hope they arrive one of these days and in good shape. Naturally: when the issue was printed I sent you a copy, but it must have gone astray. I don’t know why Samir Ray received his and you didn’t.
    Here we are in deep problems with the magazine. No money, for one thing, and tremendous work. Just when EL CORNO seems to have become a world wide interest spiritually and literally, it faces a quick death financially. The change of government here in Mexico in December has thrown us into utter gloom. All our base patronage was cut out from under us, and we were faced with stopping publication altogether, and so we had turn to a thousand improvised plans to get us through. At the moment we are having a giant art show (more than 50 painters and other artists have donated works to sell for the benefit of the magazine). The show opened at a local gallery a week and a half ago. So far we have sold 18 works, keeping the linotype purring at least through the first part of 15. 15 is now at press and we hope to get through all of it, fingers crossed. I’ll try to use your poem first part of next year, but it isn’t at all sure. We have so much work at hand and so little space and money. In reality, space and money are the same thing!
    Otherwise we are fine. Working like hell! Translating; writing, praying, trying to keep the mag going. Learning daily from our children (now there are three), the youngest is a year old today!
    Be well. Write. Good luck with the court case!
    Love
    Margaret Randall

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা বিট কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ-এর চিঠি

    c/o City lights, 261 Columbus, SF, Calif, July 11, 1965
    I have been wandering around from Moscow to Havana to Warsaw to Prague & thus didn’t get your letter of Jan 29th, much of which is obsolete by now? I have gotten so many conflicting letters & gossip from everybody, I actually have no idea who’s doing what to who in India. Is your trial over or not, & what’s what? I’ve done all I can from here. I went to Cuba, as a judge of a poetry contest ( and later got kicked out for talking too much). It was a Latin American contest, the judges (as myself) all had to be able to read Spanish. Also they’d published poetry of mine & I had friends there and I had spent years in South America. So I got invited. I’ve been back a week & leave again for San Francisco in 2 days. Then settle down to solitary poesy again. Write me news. I haven’t much time to correspond, tho, except in big emergency.
    As ever
    Allen

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা বিট মহিলা কবি ক্যারল বার্জ-এর চিঠি
    New York, 15 January 1966
    Dear Malay,
    Now I have the third letter from you. Now I have news for you. First of all, I have sent you books, or rather magazines, and in a separate package my own copy of ‘Lady Chatterly’---but if you don’t get my book that’s okay, since we can get them here. The magazines are for the most part just literary types, and they are a ‘test’ to see if you will indeed receive things I send you. They have no risky stuff in them. If they arrive, let me know at once.
    News: our Ed Sanders has just been arrested for pornography and is out on $500 bail. We’ve all been waiting for this move for years. This will probably not hurt him, since he is by now a national figure, and many of this country’s finest literary figures are published in his magazine, over the five years it’s been going. But it should be an interesting trial---if it gets to that stage. He is just ready to publish another issue, in which I believe your poem would be included. I’ll tell you more later.
    It is so beautiful of you to speak of love to me. Let me put my hand on your cheek and tell you something about me and about my child. Although many men have been in love with me in my small time, it is not a good idea.
    I am the kind of woman who has the innate temperament of all writers. It is not so easy for me to remain calm and easy, as the women of your country. We Americans are troubled and difficult. My ideal is to become gentle and fine and quiet, but I am not like that. I love to be active and alive and making things happen. Of course this applies to things literary, such as the group of poets
    Who need guidance and action here in New York. Now we have arranged for a new and more comfortable place for the group to read poetry (we used to be at a place called Le metro but the owners were such racists and I felt as did many others that we could and should move out). There is more news. About twenty of us made a recording which will be issued on Folkways Records soon. It is called Jazz Poets’, a category which does not always apply but was used to attract buyers. You shall have a copy if I have any way to get it to you for sure.
    I am so very glad to hear that you’re free and safe. I had worried about you. There is a good pride in your being the first to go through this ordeal. Of course, if your friend does the essay on your writings, send it along to me at once; I will go over it and give it in to AMERICAN DIALOG or another good mag, and hope they print it.
    You don’t say how old you are but I will tell you I am now in my thirties and my son is 9. He and I are both dark of hair and eyes. I am a small woman and very intense, somewhat pretty, and the boy is very beautiful, with shining eyes and tremendously strong ways. It is getting very difficult to raise him alone. What he needs is to go out into the woods the way we did this summer, and run wild a bit. But it isn’t so easy for me to make this happen. Yes, I love the countryside as much as he does. But I don’t feel safe without a man. So we go very very timidly. But this is a good city to live in. I wish you were here, so that we could share some of it with you. We too believe in love, any and all love, which is all that is worth living for. I love the writing too, as it gives us our friends. Here we have friends and in many cities of this world. Japan, London, Helsinki, Cologne, Mexico, you know. I wish we could come there to visit you. But I too don’t see how it is possible. I have saved some money but it will have to go toward our next long summer---the boy is out of school over three months---I must find a place outside the city for us.
    But Malay---somehow I am with you---we all feel alone most of the time---‘the sanctity of the scull’---it is not easy to be a writer and a human---I think of philosophical ideas much of the time these days---how it is to live on earth in this time---how each man is the center of his world---how we move toward and away from each other---I would give you the warmth of your wishes if I could---with this New Year. O yes there is a great difference between being alone and being lonely, which you know. I have so much respect for the struggle of many of my friends, whose work is strong and true. I just wrote a book review on the book LAST EXIT TO BROOKLYN, by friend Hubert Selby Jr., which is a major book because it tells in true language about a group of so-called depraved and perverted types---and in the review I defended them and him, because those people have had no choice about how to spend their lives. They (and we) have become what they are, because of the circumstances of their birth and their experience. Of course, Selby has run into a lot of unfavorable comments on his book. And you have heard o0f the trial and subsequent suppression of magazine EROS, whose contents are obvious from the title. Well, Selby had to go through a court trial for one section of his book, called ‘Tralala’ as published in the magazine PROVINCETOWN REVIEW. I think they seized and suppressed all copies of that issue. But eventually, all such cases win out. You know, they have to. Because we writers are dealing with the medieval morality of the masses---who, after all, can use the kind of FREEDOM and LOVING , which we are able to teach them. To me, this is a prime reason for being a writer: to use this gift for a good purpose. It strikes me this is as strong a cause to work for as the Peace Foundation. How do you feel about it? Though I feel I already know your answer; of course. I would like you to send me one of these things: most important, a picture of you. Or, and, a small woodcut or print of any kind which speaks to me about ‘your’ India, and which I can put on my wall and know you are there. Tell me in your next letter about the room in which you live, or the house. Where are your parents? Who are your friends and how do they live? Let me share your in any way you can. I am absolutely your loving friend. The skin on my back says so to you. My boy Peter is your boy and your friend as well. You would find us always loving and sharing. In future I will try to be more faithful about answering your mail. I will send you some more books if you get the magazines I sent. And I will send you a photo and also a print or such, for those moments when the world seems too dry and too difficult or alone. You have our love, Malay---
    I kiss you.
    Carol Berge

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা সংকলক ডেইজি অ্যালডান-এর চিঠি

    325 East 57 Street, New York, February 1, 1966
    My dear Malay Roychoudhury
    A friend of yours, Howard McCord, has sent me your address. I am distressed to hear about your plight, and hope that the situation will be ameliorated as soon as possible, even though, I do not at present, agree with the kind of poetry you and your friend are writing. I think YOU ARE EXTREMELY TALENTED. I am a poet myself and Editor, and a great associate of the Avant Garde. I consider myself in the forefront of the true Avant Garde. I published a magazine called FOLDER which presented poets whose work could not be published elsewhere because of its contemporaneity. But I think what you are doing now is first of all, passé, and second of all, a debasement of the spirit and language. I also think it is all wrong for India, and that there is room for excellence and contemporaneity without debasement. However, this is just my opinion, and I am sure you have good reasons for yours. You certainly should not be persecuted for your poems.
    The major reason for this letter is to let you know that I am editing a book for Thomas Crowell called POEMS OF INDIA and I would be happy to consider some of your poems, and those of your friends. I wish to include poems of every region of India. Since the book is directed to young people, I can not publish any of the poems of the nature of the one Howard McCord published (a copy of which I have). If you wish to choose poems that do not deal with sex in this way, then I shall be more than happy to consider including them. I am eager to publish much contemporary work. Also any suggestions you may have about poems of the past which should definitely be included would be deeply appreciated. If any of your friend wishes to send me poems, then they should include a brief biography and permission for me to use.
    I will send you under separate cover, my own poems: THE DESTRUCTION OF CATHEDRALS, SEVEN:SEVEN, and A NEW FOLDER:AMERICANS:POEMS AND DRAWING, an anthology. Since it takes months for mail to get to India, I hope your answer will arrive before you receive them. All submitted poems, by the way, must be in English or translations.
    I spent four months in India last year---mostly in Bombay and gave a lot of readings of my work. I met many poets whose work I admire, among them, Padgaonkar, Karandikar, Ezekiel, Bapat, Katrak.
    I love India, and happy to be involved in this project. My best wishes to you, and I look forward to hearing from you soon.
    Fraternally,
    Daisy Aldan

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা বিট কবি ও প্রকাশক লরেন্স ফেরলিংঘেট্টির চিঠি

    City Lights Book Store, San Francisco, 26 March, 1966
    Dear Malay:
    I have read the legal decision on your case, and thank you very much for sending it. I find it laughable. I want to publish it together with your poem STARK ELECTRIC JESUS in the next ‘City Lights Journal’ which will be out this coming summer, and I enclose a small payment immediately, since I know you must need it desperately. I am sending a Copy of this letter to Howard McCord. Perhaps he knows the answers to the following questions and will send them to me right away, since time is of essence, and it may take some time to get a reply from you. I think it is a wonderful poem, and I will certainly credit McCord for having first published it. Bravo. Allen is in NY and his new address is: 408 East 10 Street, (Apt 4C), New York, NY.
    I need to know the answers to the following questions: (1). Was the poem first written in Bengali and was it the Bengali or the English version which was seized and prosecuted? (2). Is this your own translation, or whose is it? (3) Do you wish me to use the typewritten copy of the poem which you sent me last year, or the version printed by McCord? (I find some differences.) Let me hear as soon as you can. Holding the press. And Good Luck. I hope you are still able to survive! With love.
    Lawrence Ferlinghetti

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা কবি ওক্তাভিও পাজ-এর চিঠি

    New Delhi, The 16th of July, 1966
    Dear Mr. Choudhury:
    Last time I was in Calcutta, I met some of your friends who talked to me about you.
    I hope I shall find an opportunity to meet you when I visit your city or whenever you get a chance to come to Delhi
    Meanwhile please accept my best regard.
    Cordially yours,
    Octavio Paz

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা উর্দু কবি আমিক হানফির চিঠি (মলয়ের কবিতার অনুবাদক)

    104 Gandhi Park Colony, Indore, 26 July 1966
    My dear Malay,
    I am extremely grateful to you for your permission to translate your poem ‘Zakhm’ into Urdu. I assure that Urdu version of your poem will do full justice to it and may even sound better than the Hindi one. The Hindi translator has done his job very well, no doubt, but at places either he or the press has not been very careful in the use of ka! ki! Ke! etc., as well as certain Urdu words. On the whole the Hindi version seems to be a fairly faithful reproduction of the mood, spirit and expression of the original.  I had written to Subimal Basak to send me literature of and on the Hungryalist writings and movement, and he had promised to enlighten me, but I did not get anything except his own article, the Calcutta Presidency Court judgement and the Hindi version of ‘Zakhm’. Whatever I know about your movement is through what I read in BLITZ, TIME, DHARMAYUG, MARAL, GYANODAYA, ANIMA, and LAHAR. I wish to go still deeper before venturing to write about the Hungryalists in Urdu. I am a poet and find your poetry---Hungryalist poetry---full of inspiration, freshness, fire and oxygen. I am looking forward to the day when we will meet and not only compare notes but also exchange heart and mind. I was all the more interested in ‘Zakhm’ because I found that you and I share a lot of common ground. There are so many lines in ‘Zakhm’ which express the same or similar experiences I have expressed in my long poems ‘Sindbad’, ‘Sharzad’ and ‘Shabgasht’. I must give you the credit of being more modern---rather up to date in your imagery, diction and poetic statements than I could be. Still your wound is not very different from mine. Let us all succeed in exploding the atom for real peace and freedom---the atom of our individual experience. After all the subterranean source is the same from which we all have our blood-lines connected.
    With admiration, regards and love
    Ameeq Hanfee

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা কার্ল ওয়েসনার-এর চিঠি (মলয়ের জার্মান অনুবাদক)

    24 September 1966
    Dear loving brother guru
    This finds me in the process of recovery from illness & series of bringdowns & now again working diligently on issue 4 of the mag….before the sickness had led my metabolic blues astray. I had got me a job & they had to pay me for the whole period of illness which is the only pleasant thing abt a job,…I have been able to cut costs for printing the mag down to something like 150 bucks, but still…Tell me: did you get yr copy of the manifesto? (I mailed two copies to Subimal Basak) and did you get my last letter? what abt the proceedings of appeal? already over? And what the outcome? favourable for you I hope!....yes will write to Donatella…..she has just sent English translation of her Ginsberg essay which appeared in ‘Studi Americani’ in Italy last year…also good letters from Carol and Dan…. YES! BY ALL MEANS SEND THE TYPE SCRIPT OF LIFE , ARREST, TRIAL, GINSBERG, CALCUTTA!!!!! Listen:!! Gerard Malanga just sent a large and fantastic collection of poems, 4 of them dedicated to Allen! Also magnificent photos of Allen and himself! He will probably also write for KLACT abt his friendship with Allen! And Diana Di Prima sent a collection of cute short poems, all from 1957….all this will be included in KLACT 5 (spring 67)…I have also written to Allen & asked him to conyribute original work, hoping he be willing to do so…COULD YOU WRITE HIM AND TELL HIM A FEW GOOD WORDS ABOUT ME AND KLACTO PLAN AND URGE HIM TO SEND STUFF??!!!! He is at 408 East 10th Street, Apt. 4C, New York, NY 10009…
    I have not yet found time to contact the people you told me, but will do so any day now….I will concentrate on Subimal’s and your work, tho… in No 5….but may be I will also contact Howard McCord (please give me his address!)….if it shd turn out that I have space left for more Bengali/Indian in No 5….. DID YOU RECEIVE THE ‘ICONOLATRE’ ISSUE I SENT YOU??!!! Also Larry Eigner sent me more poem: today, which will be in KLACT 5…yeah, things are really swinging now!....I am also thinking of publishing George Dowden’s new great visionary poem RENEW JERUSALEM in a limited edition, sometime later this year, if I have the money….(!)….. The English original of yr article of course will be in KLACT, and I will translate it into German, too, and look around for possible publication in German mag…ok? O YEAH! Looking forward to translated passages from ‘JAKHAM’ plus one page in original BENGALI! GREAT! Please note: Bengali page, if possible, should be written on white sheet of paper in black ink, and should be sent whole, that is, not folded----so that it can be used for repro….
    Do you know MAHENJODARO (ed. Samir Roy, 55/4 Natabar Pal Road, Howrah)? What it is like?---and POETRY TODAY (ed. Nissim Ezekiel, The Retreat, Bellasis Road, Bombay 8)? Qk. So much for this time.
    All best to you
    Love
    Carl

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা কার্ল ওয়েসনার-এর চিঠি 

    5 December 1966
    Dear malay
    The great sky is open----northern Italy washed away in vast mud & storm chaos & deluge----desperate letters from Donatella Manganotti----priceless artwork destroyed forever---and just a few minutes ago I hear in the news that they are in for yet another meterologic showdown---Bihar province like a vast dried-up cunt I gather---hunger & revolts everywhere---German government collapsed, neo-Nazi movement scoring for the gaps: Christian & Social Democrats joining forces to make a last desperate attempt at saving the old ship St. Nanana already half drowned---Hanoi set ablaze by efficient hordes of technicians of death masterminded by sick pentagon eunuchs & a corny Texan cowboy putting out fake charismatic vibrations that materialize in tons of explosives & charred remnants of Asian bodies enabling Wall Street to hang on for another fiscal year---you see how they are caught in loops and spins of lethal genetic roulette---a uniform grey generation scurrying among nuclear debris of heavily infected areas of cancerous mind like rats in terminal stage of dream withdrawl eating erogenous holes in huge chaotic setup of punch-cards that represent lives marked for Total Disposal---one more turnstile before the whole shithouse blows up---Nova Criminals wishing up dwarfed marks everywhere on this sick planet---SECONDS TO GO---you can already hear that heaving human blues heading for its irrevocable Dead Whistle Stop---so? Burning heavens, mister---nova armies conspiring across the wounded galaxies---icarus, nova-directed asteroid, due to blot out a terrestrial spot of bother the size of new york or tokio or London, on june 15, 1967---or September 13, 1968---what’s the difference---with the impact of one thousand hydrogen bombs---you see how things have grown to hitherto unimaginable bad proportions---a disarmament conference would have to include representatives of Nova, Interzone & Minraud, and there’s little chance that one could ever bomb this intergalactic gook rot to parley---and god knows how many of their agents are already operating among us disguised as word & image technicians seconds to go---we’ve got to attune our paranoiac feelers to that vast danger around us, spot them wherever they show a blind spot & stop them dead in their tracks---
    In order to achieve this we have to provide ourselves with an insight into their methods & operating schedules, and the work of Bill Burroughs & a few other semantic cosmonauts shows precisely who they are & how they operate---in supersonic patterns of sense-wave control---or long, medium, short & ultra short waves of the world---in cozy bed sitters, court-rooms, arenas, parliaments, newspapers, or gone streets---in subcutaneous offices of annexed brains around the paralyzed globe---right where you are sitting now there in Bad News Department walking in on you cool & casual with a perfunctory ‘hello there’---and metamorphosing you into an obedient Hate Virus host in a matter of seconds---if you are not fully aware---each second & if you do not know who they are & how to fight them---now---in forthcoming issue of KLACTOVEEDSEDSTEEN you will find more details & outlines of steps to be taken towards an immediate universal survival training in a peiceby Mr. Burroughs & Mr. Weissner; called LAGUERRE PARTOUT (war everywhere), precisely showing some of the hideous techniques by which the nova criminals try to mono-police & control & manipulate so-called ‘reality’ in order to subvert & takeover mind & consciousness of every single of us---
    Carl

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা হাওয়ার্ড ম্যাককর্ড-এর চিঠি

    Washington State University, 10 January, 1967
    Dear Malay,
    A joy to receive your last three letters, for I see in them your good spirits and your kindness in telling me of the various Indian drugs. I do hope things turn for the better with you from now on, and that your appeal is successful. I have sent today the copy of CITY LIGHTS JOURNAL you requested. I sent it direct to you by airmail. Yesterday I sent you a copy of my new book. Just today I received a copy of Gary Snyder’s reaction to the book, and it was wonderful. I admire him greatly as a poet, and he found my own poetry worthy and exciting, so I too am in good spirits.
    Yes, I would like some things from India: either ganja, bhang, or charas. I like the hemp/hashish derivatives of cannabis sativa (here in America the plant is generally weaker than in India, and the leaves and flowers are only smoked). But I do not care for any of the opiates. They are physiologically addictive, and depressants, additioanally, cannabis is a psychedelic. In working over your letters, I have found INDIAN MATERIA MEDICA, by A.K.Nadkarni---and it is a great store of information about Indian medicinal plants. It has an especially good section on cannabis(marijuana).
    I have just been through many of the proofs of the new SALTED FEATHERS. It has a fine production, and should be out in a month. Dick may well already have sent one of the flyers, but I enclose one also. He has also written to Ferlinghetti for permission to publish once more STARK ELECTRIC JESUS, with more money coming to you, and I hope Ferlinghetti grants his request.
    My anthology goes along---I think by Feb I shall have the manuscript finished. Most of your things---like SEJ---will be included and as soon as I have a good list of contents, I’ll send it along to you.
    I really liked the paragraph about your mother & your youth. It would make a good poem.
    Ether is probably a good bash & drunk, but I wonder if it does what LSD does. In the old days Nitrous Oxide (laughing gas---as anesthetic) also provided researchers with interesting experiences---William James for one. If, by the way, you should get into bad LSD trip, THORAZIME, a tranquilizer, is supposed to be a good antidote.
    A thick letter could probably also contain enough ganja, etc., for a cigarette or two and not be too noticeable, yes?
    Much love to you, and I hope the poem in
    FABLES AND TRANSFIGURATIONS talks.
    Howard

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা হিন্দি কবি ও অনুবাদক রাজকমল চৌধারীর চিঠি

    Mahisi PO, (Saharsa). 2 February, 1967
    Dear Malay
    How are you? Life in village is very healthy to me. So I am here, silent, also, and happy. But to let me be in contact with all of you, all of us, be sending me magazines…..and…..
    Raj Kamal.

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা বিট মহিলা কবি ক্যারল বার্জ-এর চিঠি

    New York, March 7, 1967
    Dear Malay,
    Now I have your photo. McCord sent me a copy, or was it Dick Bakken! .Anyway, one of the friends here. You seem a fine handsome man---and I am glad to see Samir’s daughter as well. Your face sits opposite me, it is over my kitchen table, on the wall, so that each day when I break bread, I can share with you. Sometimes I don’t like being a part of a big city, but I never feel alone. This is trouble, in a way: there are always too many things to see and do: too many people and friends. The hardest thing is to be alone and do the work, too much temptation to go out and be busy. I tend therefore to be a recluse in my own way, though quite active to other eyes, in writing activities. I stay home almost all day everyday, to write or read or answer letters etc. I go out three or four nights a week, reading poetry or listening, going to dance programs, or to hear music etc.,---there are many activities within just a four-block radius of where I live. Yes, of course, I received your resume, didn’t I acknowledge it yet? I gave copies to McCord, to David Antin, to Joel Oppenheimer (I think), and to Bob Creely up at Buffalo (State Univ). I have no idea what might happen but all I can do is to try for you, with those friends who are academically affiliated…..I wish you so much good luck! Sure, I would like to have a double-volume of poems out, your poems and mine. I shall make the suggestion to Nelson Ball, Apt 4, 22 Young St., Kitchenar, Ontario, Canada, who publishes VOLUME 63, at University of Waterloo, Canada. Nelson recently let me edit a section of New York poets for his magazine. He is also editing a series of small poetry books. Let me get him to write to you; in the meantime, you could write to him if you wish, offering him 15-18 pages of poetry for him to select from. What do you think? I had the idea of giving him two or three ‘long’ poems, each about three pages long. You might do the same. This is one of the proposition that he would be interested in the idea of double volume. I think it would be very interesting indeed & it is possible it would give us a nice public interest, and a tiny bit of money maybe. How are you doing for money these days? Are you working still? Tell me.
    What you say about always having felt that in your life there is always something pending, something big about to happen----no, my story is that I did not go anywhere or do anything at all of any importance till I was 30 years of age---so that at 30 I still looked around 22, and my mind and emotions were that of an adolescent. I’ve done all of my growing up in the last eight years. This keeps me naïve and still 10 years behind my peers in my work and my ideas. But I sure did live a fast and hectic 8 years, trying to catch up. All the work of mine that you’ve seen comes from this period. All of everything. I think it is a question of working against fate to get the world accept you on your own terms. You could call it ‘the Establishment’ too if you wanted to. Of course here we don’t have. The desperate poverty and the simple physical argument you have in India---although I was poor as a child. But each artist constructs its irritant against which the struggle seems stronger. All of us seem ill---suited to fit into the society in most ways. I think it has always been thus, as we shall always have wars. Part of the human condition. And the artist representing the human condition has to extend to cover all of human experience somehow---the rich, the satisfied, the ugly, the lovely---all of it---you know all of it no matter where you live or how you live. And so do I, somehow…. A friend, Wendell Metzger, a strange fine man who is a playwright, is going to be in India soon. I gave him your address so that he could contact you if he was able. He is not a part of our ‘hip’ scene as with Allen G. & our other friends, somewhat older too, but a good friend. See him if you can. Today I think that life mean only resisting; there seem no easy steps or solutions. I wish for too much and then I wish for the peace of no-wishing. This has been a good year until now but begins to get difficult and moody again. But my health is good and there are a few people who understand, and a few others who love me, and always the writing, so one continues. I havent any idea what sustains any of us, do you? I call it ‘The Infernal Spirit’ in my own mind sometime.That doomed flame. You will be a popular success in this country before you are accepted in your own! And how often this has been the case. US writers succeeding in England before US, and our musicians certainly find more success and response in European Opera halls, concert halls and Jazz cellers than in the slow sedentary stiff minds of their own countrymen. Stubborn!
    Write to me again soon, now I feel we’ve had some kind of long talk about the condition of being creative----at least a beginning---- With love as always, yr friend

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা উর্দু কবি আমিক হানফির চিঠি

    140 Gandhi Park Colony, Indore 1, April 12, 1967
    My dear Malay,
    I am sorry that my correspondence stood still for the last two months or so. I found myself quite barren to create and produce anything. NO communication was possible. A very turbulent emotional and neurotic storm was raging within me. My intellect failed to play the Noah’s Ark. Somehow I am emerging out of this and feel better and fertile. It was quite an experience I never had before. Though incomplete, I find it has filled a gap. When I look back, I feel that only a storm could wash my inner self that had accumulated a lot of dirt and the wet dusters of reason could not clear it off. I feel it was a process of catharsis. It was like a surgical operation of the heart of my soul and the suffering and pain was because no anaesthesia was given. Now, when the wounds are healing up, I have different vision. It is a pleasure that fills me. The words break, the images crack and the expressions burst when I try them to contain this new experience---perhaps because still it is too hot. I very much doubt if LSD and other drugs can bring forth the images and ecstatic patterns that this semi-mystic experience is projecting before the inward eye. Language is a very weak vehicle to convey this. Well I am anxiously awaiting the finale of your trial. It is not you but all of us on trial. It is freedom, in you, on trial. I am glad to hear that the Hungryalists have warmed up again and are assailing the literary scene with more vigour and virulence. ‘Zakhm’ is waiting to appear in print. The mag in which two of my articles and ‘Zakhm’ have been accepted for publication has been delayed and I have not been told when it will be published. Your suggestion that I must bring out a cyclostyled collection of my translated poems strikes me immensely. I am inclined to take it.
    Sincerely
    Ameeq Hanfee

    মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা গিন্সবার্গ গবেষক জর্জ ডাউডেনের চিঠি

    London. 22 April 1967
    Dear Malay,
    Good to hear from you; glad you have some kind of job now. I’ve gotten together with Utpal Basu here, good bloke, but doesn’t seem to be doing any writing here; just teaching. He introduced me to the shehnai (recording: The Magical Shehnai of Bismillah Khan), which is a lovely instrument. I dig the morning raga on that recording, but not the evening one particularly. I also wrote to Dick Bakken about collecting SALTED FEATHERS, just yesterday. I am about to write to the National Library of India about Ginsberg, as you suggested. Meanwhile, if you have spare copies of any Indian mags he was in, please send, like UTTARSURI of Dec 1963, MOHENJODARO of 1963 etc. AS I said, I’ll pay---or send you things in exchange. You mentioned wanting books on Cubism, Surrealism and Dadaism---there is a good series here, which includes all of these, a book on each; the publisher is Thomas Hudson; the Cubism book is by Edward f. Fry, the Surrealism by Patric Waldberg, the Dadaism by Hans Richter. Do you have these available there? If not, I’ll get them for you and send them. Let me know. Did RENEW JERUSALEM arrive all right? Let me hear you about it. Seeing lawyers now, wanting to safely bring out an edition here. America is getting worse and worse; lies and destruction, threat to the whole world. Fortunately the youth are not listening to their bullshit except to jeer at it, and as long as that goes on, can not be stopped, there is hope. If the totalitarian impetus in America gets its own way, and all the power, then all hope is gone. South America would become the next Vietnam, and so on. But think they will be stopped---though not until more blood flows. Let me know how you are doing. Write soon. Cheers,
    George Dowden

    অ্যালেন গিন্সবার্গকে লেখা আবু সায়ীদ আইয়ুব-এর চিঠি

    Pearl Road, Calcutta, 31 October, 1964
    Dear Mr Ginsberg,
    I am amazed to get your pointlessly discourteous letter of 13th. That you agree with communist characterization of the Congress for Cultural Freedom as a fraud and a bullshit intellectual liberal anti-communist syndicate, did not, however surprise me; for I never thought the Congress had any charge of escaping your contempt for everything ‘bourgeoisie’ or ‘respectable’.
    If any known litteratur or intellectual had come under police repression for their literary or intellectual work, I am sure the Indian Committee for Cultural Freedom would move in the matter without any ungraceful promptings from you. I am glad to tell you that no repressions of that kind has taken place here currently. Malay Roychoudhury and his young friends of the Hungry Generation have not produced any worthwhile work to my knowledge, though they have produced and distributed a lot of self-advertising leaflets and printed letters abusing distinguished persons in filthy language ( I hope you agree that the word ‘fuck’ is obscene and  ‘bastard’ filthy at least in the sentence ‘Fuck the Bastards of the Gangshalik School of Poetry’; they have used worse language in regard to poets whom they have not hesitated to refer to by name ). Recently they hired a woman to exhibit her bosom in public and invited a lot of people including myself to witness this wonderful avantgarde exhibition ! You may think your duty to promote in the name of cultural freedom such adolescent pranks in Calcutta from halfway round the world. You would permit me to differ from you in regard to what is my duty.
    It was of course foolish of the police to play into the hands of these young men and hold a few of them in custody for a few days ( they have all been released now) thus giving the publicity and some public sympathy — publicity is precisely what they want to gain through their pranks.
    I do not agree with you that it is the prime task of the Indian Committee for Cultural Freedom to take up the cause of these immature imitators of American Beatnik poetry. I respect your knowledge of European literature but can not permit myself to be guided by your estimation of writers in my language — a language of which you chose to remain totally ignorant.
    With all good wishes in spite of your grave disagreements and in admiration of some of your wonderful poems.
    Yours sincerely
    Abu Sayeed Ayyub
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 | 31 | 32 | 33 | 34 | 35 | 36 | 37 | 38 | 39 | 40 | 41 | 42 | 43 | 44 | 45 | 46 | 47 | 48 | 49 | 50 | 51 | 52 | 53 | 54 | 55 | 56 | 58 | 59 | 60 | 61 | 62 | 63 | 64 | 65 | 66 | 67 | 68 | 69 | 70 | 71 | 72 | 73 | 74 | 75 | 76 | 77 | 78 | 79 | 80 | 81 | 82 | 83 | 84 | 85 | 86 | 87 | 88 | 89 | 90 | 91 | 92 | 93
  • টুকরো খাবার | ১৩ নভেম্বর ২০২২ | ১০১২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন