এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  কাব্য  তর্জমা

  • ব্লাইজি সঁদরা : ট্রান্স-সাইবেরিয়ান এক্সপ্রেস

    Malay Roychoudhury লেখকের গ্রাহক হোন
    কাব্য | তর্জমা | ১৩ নভেম্বর ২০২২ | ৯৬৬ বার পঠিত
  • 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 | 31 | 32 | 33 | 34 | 35 | 36 | 37 | 38 | 39 | 40 | 41 | 42 | 43 | 44 | 45 | 46 | 47 | 48 | 49 | 50 | 51 | 52 | 53 | 54 | 55 | 56 | 58 | 59 | 60 | 61 | 62 | 63 | 64 | 65 | 66 | 67 | 68 | 69 | 70 | 71 | 72 | 73 | 74 | 75 | 76 | 77 | 78 | 79 | 80 | 81 | 82 | 83 | 84 | 85 | 86 | 87 | 88 | 89 | 90 | 91 | 92 | 93
    ব্লাইজি সঁদরা : ট্রান্স-সাইবেরিয়ান এক্সপ্রেস
                                           
    অনুবাদ : মলয় রায়চৌধুরী                                                           
                                               
    images
    তখন আমি বেশ তরুণ ছিলুম
    আমি সবে ষোলো বছরের হবো হয়তো কিন্তু ছেলেবেলার স্মৃতি মুছে গিয়েছিল
    যেখানে জন্মেছিলুম সেখান থেকে ৪৮,০০০ মাইল দূরে
    আমি ছিলুম মসকোতে, তিনঘণ্টির হাজার মিনার
    আর সাতটা রেলস্টেশান
    আর ওই হাজার আর তিন মিনার আর সাতটা রেলস্টেশান
    আমার জন্যে যথেষ্ট ছিল না
    কারণ আমি ছিলুম গরমমেজাজ আর পাগল তরুণ
    আমার হৃদয় ইফিসিয়াসের মন্দির কিংবা
    মসকোর রেড স্কোয়ারের মতন ছিল তপ্ত
    সূর্যাস্তের সময়ে
    আর আমার দুই চোখ ওই পুরোনো রাস্তা-ধরে চলার সময়ে জ্বলজ্বল করতো
    আর আমি আগেই এমন খারাপ কবি ছিলুম
    যে আমি জানতুম না তা কেমন করে নিজের সঙ্গে বয়ে নিয়ে যাই
     
    ক্রেমলিন ছিল যেন বিরাট তার্তার কেক
    সোনার আইসিঙে সাজানো
    তার ওপরে বড়ো মাপের ভাজা কাগজিবাদামের গির্জা
    আর ঘণ্টাগুলো মধু-সোনালী…
    একজন বুড়ো সন্ন্যাসী আমাকে নোভোগোর্দের কিংবদন্তি পড়ে শোনাচ্ছিল
    আমি ছিলুম পিপাসার্ত
    আর আমি কীলকাকার বর্ণমালা পড়ার চেষ্টা করছিলুম
    তারপর তক্ষুনি রেড স্কোয়ারে উড়তে লাগলো ঈশ্বরের তৃতীয় রূপ
    উড়ে গেল আমার হাতও, যেন অ্যালবাট্রস পাখির উড়ালের শব্দ
    আর, হ্যাঁ, শেষ দিনের ওইটুকুই আমার মনে আছে
    শেষ যাত্রার
    এবং সমুদ্রের ।
     
    তবু, আমি সত্যিই ছিলুম একজন বাজে কবি ।
    আমি জানতুম না কেমন করে তা সহ্য করতে হবে ।
    আমি ছিলুম ক্ষুধার্ত
    আর সেইসব দিনগুলো আর সেইসব নারীরা সেইসব কফির দোকানে
    আর সেইসব কাচের গেলাস
    আমি গলায় ঢেলে নিতে চাইছিলুম আর ভেঙে ফেলতে চাইছিলুম
    আর সেইসব জানালা আর সেইসব পথগুলো
    আর সেইসব বাড়িগুলো আর সেইসব জীবন
    আর সেইসব ঘোড়ারগাড়ির চাকা ভাঙা ফুটপাথ থেকে ধুলো ওড়াচ্ছে
    আমি তাদের আগুনের হলকায় ছুঁড়ে ফেলে দিতে চাইছিলুম
    আর আমি তাদের হাড়গোড় গুঁড়িয়ে দিতে চাইছিলুম
    আর টেনে বের করে আনতে চাইছিলুম ওই জিভগুলো
    আমাকে ওদের অদ্ভুত পোশাকের ভেতরের যে ল্যাংটো পেল্লাই শরীর
    পাগল করে তুলছিল তাদের গলিয়ে ফেলতে চাইছিলুম…
    আর দেখতে পাচ্ছিলুম রুশ বিপ্লবের লাল যিশুখ্রিস্ট আসতে চলেছেন
    আর সূর্য একটা নোংরা ঘা
    লাল গরম কয়লার মতন ফাটছে
     
    তখন আমি বেশ তরুণ ছিলুম
    আমি সবে ষোলো বছরের হবো হয়তো কিন্তু ভুলে গিয়েছিলুম কোথায় জন্মেছি
    আমি ছিলুম মসকোতে আগুনের শিখাকে খেয়ে নিতে চাইছিলুম
    আর আমার চোখে ঝলমল করার মতন যথেষ্ট মিনার আর রেলস্টেশান ছিল না
    সাইবেরিয়ায় কামানের আওয়াজ — যুদ্ধ চলছিল
    ক্ষুধা শীত প্লেগ কলেরা
    আর আমুরের কাদাটে জল লক্ষ লাশ বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল
    প্রতিটি রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে দেখছিলুম শেষ ট্রেনের ছেড়ে যাওয়া
    ব্যাস ওইটুকুই : ওরা আর টিকিট বিক্রি করছিল না
    আর সেনারা বরং চাইছিল থেকে যেতে…..
    একজন বুড়ো সন্ন্যাসী আমাকে শোনাচ্ছিল নোভোগোর্দের কিংবদন্তি
     
    আমি, একজন খারাপ কবি যে কোথাও যেতে চায়নি, আমি কোথাও যেতে পারতুম না
    আর  ব্যবসাদার লোকটার নিশ্চয়ই যথেষ্ট টাকাকড়ি ছিল
    বিদেশে গিয়ে ধনরত্ন কামাবার ধান্দায় চলেছে ।
    ওদের ট্রেন প্রতি শুক্রবার সকালে ছাড়ে ।
    শুনে মনে হতো যে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে ।
    একজন লোক কৃষ্ণ অরণ্য থেকে নিজের সঙ্গে একশো বাক্স অ্যালার্ম ঘড়ি
    আর কোকিল ঘড়ি নিয়ে যাচ্ছিল
    আরেকজন টুপির বাক্স, স্টোভের পাইপ, আর নানাধরণের
    শেফিল্ড কোম্পানির কর্ক খোলার প্যাঁচ
    আরেকজন, ম্যালমো থেকে কফিনে ভরে নিয়ে যাচ্ছিল টিনের খাবার
    আর তেলে চোবানো সার্ডিনমাছ
    আর বহু মহিলা জড়ো হয়েছিলেন
    ভাড়া করার জন্য উলঙ্গ উরুর তরুণী
    যারা কফিনও সরবরাহ করতে পারে
    সবার কাছে অনুমতিপত্র ছিল
    মনে হচ্ছিল যেন অনেক মানুষ ওই দিকে মারা যাচ্ছে
    তরুণীরা যাত্রা করছিল তাদের জন্য বরাদ্দ কম দামের টিকিটে
    আর তাদের সকলেরই ছিল ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট ।
     
    এবার, এক শুক্রবার সকালে আমার যাবার পালা এলো
    তখন ডিসেম্বর মাস
    আর আমিও যাত্রা করলুম, হারবিনযাত্রী এক ধনরত্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে
    এক্সপ্রেস ট্রেনটায় আমাদের ছিল দুটো কামরায় ভরা রওরঝিম থেকে আনা
    ৩৪ বাক্স ধনরত্ন
    জার্মানির বাজে মাল “মেড ইন জার্মানি”
    লোকটা আমাকে কয়েকটা নতুন পোশাক কিনে দিয়েছিল
    আর ট্রেনে চাপার সময়ে আমি একটা বোতাম হারিয়ে ফেলেছিলুম
    —আমার মনে আছে, আমার মনে আছে, আমি অনেক সময়ে ব্যাপারটা নিয়ে ভেবেছি–
    আমি ধনরত্নের ওপরে শুয়ে রইলুম আর ওনার দেয়া
    নিকেলকরা মাউথঅর্গান নিয়ে দারুন বোধ করছিলুম
    আমি বেশ খুশ ছিলুম আর অসতর্ক
     
    যেন চোর-পুলিশের ব্যাপার
    আমরা গোলকুন্ডার ঐশ্বর্য চুরি করে নিয়ে যাচ্ছি
    আর আমরা ট্রান্স-সাইবেরিয়ানে চেপে নিয়ে যাচ্ছি
    যাতে পৃথিবীর উল্টো দিকে লুকিয়ে রাখতে পারি
    জুল ভার্নের সার্কাসযাত্রী দলকে উরালের যে চোরেরা আক্রমণ করেছিল
    তাদের থামাতে পাহারা দিচ্ছিলুম
    খুনখুজ থেকে, চিনের বাক্স
    আর মহান লামার ক্রুদ্ধ বেঁটে মোঙ্গোলদের থেকে
    আলিবাবা চল্লিশ চোর থেকে
    আর পাহাড়ের ভয়ঙ্কর বুড়ো লোকটার অনুচরদের থেকে
    আর সবচেয়ে খারাপ, সবচেয়ে আধুনিক
    বিড়ালের মতন চোরদের থেকে
    আর আন্তর্জাতিক এক্সপ্রেসের বিশেষজ্ঞদের থেকে
    আর তবু, আর তবু
    আমি ছিলুম বাচ্চা ছেলের মতন দুঃখি
    ট্রেনের ছন্দ
    যাকে আমেরিকান মনোবিদরা বলেন “ রেলপথের স্নায়ু”
    বরফজমা রেললাইনের ওপরে দরোজা কন্ঠস্বর অ্যাক্সেলের ঘষটানি
    আমার ভবিষ্যতের সোনালী সূত্র
    আমার পিস্তল পিয়ানো পাশের কামরায় তাস খেলুড়েদের গালমন্দ
    জিন নামের তরুণীর দুর্দান্ত উপস্হিতি
    নীল চশমা-পরা লোকটার করিডরে পায়চারি আর আড়চোখে আমার দিকে তাকানো
    মহিলাদের পোশাকের আওয়াজ
    আর হুইসেলের
    আর চাকাগুলোর বিরতিহীন শব্দ আকাশের গায়ে দেগে দেয়া বুনো রাস্তায়
    জানালার কাচ তুষারে ঢাকা
    প্রকৃতিবিহীন !
    আর ওইদিকে সাইবেরিয়ার সমতলভূমিতে নেমে আসা আকাশ
    দীর্ঘ অনিচ্ছুক ছায়ারা উঠে যাচ্ছে আর নামছে
    আমি ঘুমিয়ে পড়েছি
    তার্তার পশমের চাদর ঢেকে
    ঠিক আমার জীবনের মতন
    আমার জীবনে  স্কচ শালের চেয়ে বেশি উষ্ণতা দিচ্ছে না
    আর সমস্ত ইউরোপ বাতাস-চেরা এক্সপ্রেস ট্রেনের তীব্র গতি দিয়ে দেখা
    আমার জীবনের চেয়ে অর্থবহ নয়
    আমার দুঃখের জীবন
    এই শাল
    সোনায় ভরা সিন্দুকের ওপরে ছত্রাখান
    আমি  গড়াই
    স্বপ্নে
    এবং ধোঁয়ায়
    আর বিশ্বজগতে একমাত্র আলো
    একটি ফালতু চিন্তা…
     
    আমার হৃদয়তল থেকে কান্না উঠে আসে
    যদি ভাবি, হে প্রেম, আমার দয়িতার সম্পর্কে ;
    মেয়েটি বেশ নষ্ট, যাকে খুঁজে পেয়েছিলুম, ফ্যাকাশে
    এবং বিশুদ্ধ, এক বেশ্যালয়ের পেছন দিকে ।
     
    মেয়েটি ফর্সাত্বকের শিশু বেশ হাসে,
    দুঃখি, হাসে না, কখনও কাঁদে না ;
    কিন্তু কবির কুসুম, শ্বেতপদ্ম, কাঁপতে থাকে
    যখন তোমাকে ওর চোখের গভীরতায় তা দেখতে দেয় ।
     
    মেয়েটি বেশ মিষ্টি, তুমি শুনতে পাও এমনকিছু বলে না.
    দীর্ঘক্ষণের শিহরণ তুলে যখন তুমি কাছে টেনে নাও,
    কিন্তু যখন আমি ওর কাছে আসি, এখান থেকে, সেখান থেকে,
    এক পা এগিয়ে আসে আর চোখ বন্ধ করে — আরেক পা এগিয়ে আসে ।
     
    তার কারণ ও আমার প্রেম আর অন্য নারীরা
    সোনার চাদরে মোড়া বিশালদেহ আগুন
    আমার দুঃখি বন্ধু এতো একা
    ও সম্পূর্ণ নগ্ন, শরীর নেই — ও বড়োই দুঃখি ।
     
    মেয়েটি এক নিষ্পাপ ফুল, রোগা আর অপলকা,
    কবির কুসুম, করুণা-জাগানো শ্বেতপদ্ম,
    এতো শীতল, এতো একা, আর এখন এতো শুকিয়ে গেছে
    ওর হৃদয়ের কথা ভাবলে আমার কান্না পায় ।
     
    আর এই রাত আরও শত সহস্র রাতের মতন যখন রাতের ভেতর দিয়ে
    একটা ট্রেন গলে বেরিয়ে যেতে থাকে
    –ধুমকেতুর পতন হয় —
    আর একজন পুরুষ ও একজন নারী, যতোই কমবয়সী হোক, প্রেম করার আনন্দ নেয়।
     
    আকাশ যেন ভাঙা সার্কাসের ছেঁড়া তাঁবু
    ফ্ল্যাণ্ডার্সের মেছোদের ছোটো গ্রামে
    সূর্য যেন ধোঁয়াটে লন্ঠন
    আর ওপরে দোলনায় এক নারী দ্বিতীয়ার চাঁদ
    ক্ল্যারিনেট ভেরী তীক্ষ্ণ বাঁশি তালদেয়া ঢোলোক
    আর এখানে রয়েছে আমার দোলনা
    আমার দোলনা
    ওটা সবসময় পিয়ানোর কাছে থাকতো যখন আমার মা, মাদাম বোভারির মতন
    বিটোফেনের সোনাটা বাজাতেন
    আমি শৈশব কাটিয়েছি ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগানে
    স্কুল-পালিয়ে, ট্রেনগুলোকে অনুসরণ করে
    যখন ওরা স্টেশন থেকে বেরিয়ে যেতো
    এখন আমি ট্রেনগুলোকে বাধ্য করেছি আমায় অনুসরণ করতে
    বাসেল-টিমবুকটু
    আতেউইল আর লঙচ্যাম্পসের মাঠের মতন ঘোড়াদের ছুটিয়েছি
    প্যারিস-নিউইয়র্ক
    এখন ট্রেনগুলো আমার পাশাপাশি ছোটে
    মাদ্রিদ-স্টকহোম
    সব হারিয়েছি ঘোড়দৌড়ের যৌথ আনন্দের খেলায়
    বেঁচেছে কেবল প্যাটাগোনিয়া, প্যাটাগোনিয়া, যার সঙ্গে আমার গভীর দুঃখের মিল
    প্যাটাগোনিয়া আর দক্ষিণ সমুদ্রে যাত্রা
    আমি রাস্তায়
    আমি চিরকাল রাস্তায় কাটিয়েছি
    আমি ফ্রান্সের ছোট্ট জিনের সঙ্গে পথে-পথে
    ট্রেন ডিগবাজি খেয়ে চার পায়ে দাঁড়ায়
    ট্রেন নিজের চাকায় ভর দিয়ে থামে
    ট্রেন চিরকাল নিজের চাকায় ভর দিয়ে থামে
     
    “ব্লাইজি, বলো, আমরা কি মমার্ত থেকে অনেক দূরে ?”
     
    অনেক দূরে, জিন, তুমি সাত দিন যাবত গড়িয়ে চলেছ
    তুমি মমার্ত থেকে অনেক দূরে, সেই পাহাড়তলি থেকে
    যেখানে তুমি বড়ো হয়েছ, সাকরে-কোয়ের যেখান ছিলে নিরালায়
    প্যারিস তার বিশাল ঝলকানিসুদ্ধ মুছে গেছে
    উড়ন্ত স্ফূলিঙ্গ ছাড়া সবকিছু মিইয়ে গেছে
    বৃষ্টি পড়ছে
    জলজঞ্জাল ফুলে ওঠে
    সাইবেরিয়া বাঁক নেয়
    তুষারের পরতের পর পরত জমতে থাকে
    আর নীল আলোয় উন্মাদনার পাগলাঘণ্টি বাজে শেষ আকাঙ্খার মতন
    ভারি দিগন্তের হৃদয়ে ট্রেনটা স্পন্দিত হতে থাকে
    আর তোমার এককীত্ব তোমায় কচুকাটা করে…
     
    “বলো, ব্লাইজি, আমরা কি সত্যিই মমার্ত থেকে অনেক দূরে ?”
     
    অশান্তি
    অশান্তির কথা ভুলে যাও
    পথের ভাঙাচোরা আর হেলেপড়া রেলস্টেশনগুলোকে
    যে টেলিগ্রাফ তার থেকে তারা ঝুলছে
    তাদের গলা টিপে ধরার জন্য হাত বাড়ানো গোমড়া স্তম্ভ
    পৃথিবীটা উন্মাদ মর্ষকামীর হাত দিয়ে বাজানো
    অ্যাকর্ডিয়ানের মতন বেড়ে দীর্ঘ হয় আবার কুঁচকে ছোট হয়ে যায়
    আকাশের চিড়ফাটল দিয়ে বুনো ইঞ্জিনগুলো উড়তে থাকে
    আর গর্তগুলোয়
    পাগলকরা চাকা কন্ঠস্বরের হাঁ-মুখ
    আর দুরবস্হার কুকুরেরা আমাদের চাকায় ঘেউঘেউ করে
    রাক্ষসদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে
    লোহায় নখ ঘষে
    সবকিছু আওয়াজ তোলে
    চাকার ঘ্যাঙঘ্যাঙে শব্দ থেকে
    সামান্য অন্যথা
    ঝাঁপায়
    নড়েচড়ে
    আমরা এক বোবা মানুষের খুলির ভেতরের ঝড়….
     
    “বলো, ব্লাইজি, আমরা কি সত্যিই মমার্ত থেকে অনেক দূরে ?”
     
    হ্যাঁ, আমরা তাইই, আমাকে বিরক্ত কোরো না, তুমি জানো, আমরা অনেক দূরে
    ইঞ্জিনের ভেতরে অতিউত্তপ্ত পাগলামি গোমরায়
    প্লেগ আর কলেরা আমাদের চারিধারে জ্বলন্ত স্ফূলিঙ্গের মতন ওড়ে
    আমরা যুদ্ধের সুরঙ্গে সরাসরি ঢুকে অদৃশ্য হয়ে গেছি
    ক্ষুধা, সেই বেশ্যাটা, আকাশে ছড়ানো মেঘ আঁকড়ে ধরে
    আর যুদ্ধের মাঠ ভরে যায় পচা লাশের দুর্গন্ধে
    তা যা চায় তাই করুক, তুমি তোমার কাজ করে যাও….
     
    “বলো, ব্লাইজি, আমরা কি সত্যিই মমার্ত থেকে অনেক দূরে ?”
     
    হ্যাঁ, আমরা দূরে, আমরা দূরে
    দুষ্কর্মের ভারবাহীরা ফুলেফেঁপে মরুভূমিতে নেতিয়ে পড়েছে
    এই খোসপাঁচড়ায় সেনার গরুর গলার ঘণ্টাধ্বনি শোনো
    টোমস্ক চেলিয়াবিনস্ক কানস্ক ওব টায়শেট ভের্কনে-উদিনস্ক কুরগান সামারা
    পেনজা-টুলুন
    মাঞ্চুরিয়ায় মৃত্যু
    সেখানেই আমরা নামবো আমাদের শেষ গন্তব্য
    এই যাত্রাটা ভয়াবহ
    কালকে সকালে
    ইভান উলিচের চুল পেকে গেল
    আর কোলিয়া নিকোলাই ইভানোভিচ দুই সপ্তাহ যাবত নিজের নখ খাচ্ছে…
    মৃত্যু আর দুর্ভিক্ষ যা করে তাই করো, তোমার কাজ করে যাও
    একশো ফরাসি টাকা লেগেছে — ট্রান্স-সাইবেরিয়ানে তা একশো রুবল
    বসার জায়গাকে তপ্ত করো আর টেবিলের তলায় লজ্জা ঢাকো
    শয়তানের কবজায় রয়েছে লেখবার চাবিকাঠি
    ওর গাঁটসুদ্ধ আঙুল নারীদের আপ্লুত করে
    সহজপ্রবৃত্তি
    ঠিক আছে মহিলাগণ
    তোমরা নিজেদের কাজ চালিয়ে যাও
    যতক্ষণ না আমরা হারবিনে পৌঁছোচ্ছি…..
     
    “বলো, ব্লাইজি, আমরা কি মমার্ত থেকে সত্যিই অনেক দূরে?”
     
    না, ওহে…আমাকে বিরক্ত কোরোনা….একা থাকতে দাও
    তোমার পোঁদ ঢাউস হয়ে গেছে
    তোমার পেট টকেছে আর রয়েছে তোমার প্রশংসা
    একমাত্র জিনিস যা প্যারিস তোমাকে দিয়েছে
    আর রয়েছে এক কচি আত্মা…কারণ তুমি অসুখি
    তোমার জন্য আমার কষ্ট হয় এসো আমার হৃদয়ে
    চাকাগুলো ককেন দেশের উইণ্ডমিলের মতন
    আর উইণ্ডমিলগুলো সেই ভিখারির যে নিজের লাঠি মাথার ওপরে ঘোরাচ্ছে
    আমরা শূন্যের নুলো
    আমরা আমাদের চার আঘাতের ওপর ভর দিয়ে চলাফেরা করি
    আমাদের ডানা ছেঁটে ফেলা হয়েছে
    আমাদের সাতটি পাপের ডানা
    আর ট্রেনগুলো হলো শয়তানের খেলনা
    মুর্গির খাঁচা
    এই আধুনিক জগতসংসার
    গতি কোনো কাজে লাগে না
    এই আধুনিক জগতসংসার
    ব্যবধানগুলো অনেক দূরে-দূরে
    আর যাত্রার শেষে একজন নারীর সঙ্গে একজন পুরুষের বসবাস ভয়াবহ…
     
    “ব্লাইজি, বলো, আমরা কি মমার্ত থেকে সত্যিই অনেক দূরে ?”
     
    তোমার জন্য কষ্ট হয় এখানে এসো একটা গল্প শোনাবো
    আমার বিছানায় এসো
    আমার কাঁধে তোমার মাথা রাখো
    আমি তোমাকে একটা গল্প শোনাবো…
     
    আরে এসো দিকিনি !
     
    ফিজিতে সব সময়েই বসন্তকাল
    তুমি সঙ্গম করে বেড়াও
    উঁচু ঘাসে প্রেমিক-প্রেমিকাদের মাতন লাগে আর তপ্ত সিফিলিস
    কলাগাছের বাগানে বইতে থাকে
    এসো প্রশান্তসাগরের দ্বীপগুলোয়
    ফিনিক্স, মারকোয়েসাস
    বোরনিও আর জাভা
    আর বিড়ালের মতন দেখতে সেলেবেস
     
    আমরা জাপানে যেতে পারব না
    মেকসিকোতে চলো !
    উঁচু সমতলভূমি টিউলিপ গাছে ছেয়ে থাকে
    সূর্য থেকে ঝুলে থাকা আলুলায়িত চুলের মতন আঙুরলতা
    যেন চিত্রকরের ব্রাশ আর প্যালেট
    বিস্ময়করভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে ঘণ্টাধ্বনির মতন–
     
    রুশো ছিলেন সেখানে
    ওনাকে চিরকালের জন্য ঝিলমিলিয়ে রেখেছিল
    দেশটা পাখির জন্য বিখ্যাত
    স্বর্গের পাখি বেহালার পাখি
    টউকান মকিংবার্ড
    আর কালো ফুলের মধ্যে টুনটুনি পাখিরা বাসা বাঁধে
    এসো !
    আমরা অ্যাজটেক মন্দিরের রাজকীয় ধ্বংসাবশেষে প্রেম করব
    তুমি হবে আমার দেবীপ্রতিমা
    খুকিরঙা জলের ছাটে কিছুটা কুৎসিত আর সত্যিকারের অপার্থিব
    ওহ এসো !
     
    তুমি চাইলে আমরা বিমানে চেপে হাজার হ্রদের দেশের ওপরে উড়ব
    সেখানে রাতগুলো দৌরাত্মপূর্ণভাবে দীর্ঘ
    ইঞ্জিনের আওয়াজে আমাদের প্রাগৈতিহাসিক পূর্বপুরুষরা ভয় পাবেন
    আমি নামবো
    আর ম্যামথের জীবাশ্ম দিয়ে গড়ে তুলব বিমান রাখার হলঘর
    আদিম আগুন আবার জাগিয়ে তুলবে আমাদের ক্ষীণ প্রণয়
    রুশদেশের চায়ের কেটলি
    আর আমরা সাধারণ মানুষের মতন মেরু অঞ্চলে সংসার পাতবো
    ওহ এসো !
    জিন জিনেট আমার খুকি আমার মাটির-পাত্র আমার পাদ
    আমার আমি মা পুপু পেরু
    পিপি কোকিল
    ডিঙডিঙ আমার ডঙ
    মিষ্টি শুঁটি মিষ্টি মাছি মিষ্টি ভ্রমর
    চিকাডি বেডি-বাই
    ছোট্ট পায়রা আমার প্রেমিকা
    ছোট কুকি-নুকি
    ঘুমোচ্ছে ।
     
    মেয়েটা ঘুমোচ্ছে
    আর সারা দিন পেটে কিছু পড়েনি
    স্টেশনে দেখা সেই সব মুখগুলো
    যাবতীয় ঘড়িগুলো
    প্যারিসের সময় বার্লিনের সময় সেইন্ট পিটার্সবার্গের সময় সেইসব স্টেশনের সময়
    আর উফাতে কামানদাজের রক্তাক্ত মুখ
    আর গ্রোন্ডোর অবাস্তব আলোজ্বলা ঘড়ির কাঁটা
    আর ট্রেন চলেই চলেছে শেষহীন
    রোজ সকালে তুমি তোমার ঘড়ি মিলিয়ে নাও
    ট্রেন এগোয় আর সূর্যের সময় ফুরোয় কোনো কাজে লাগে না ! ঘণ্টাধ্বনি শুনি
    নোট্রেদামের বিরাট ঘণ্টা
    সন্ত বার্থোলোমিউ দিবসে লুভরের তীক্ষ্ণ ঘণ্টাধ্বনি
    নিউ ইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরির বৈদ্যুতিক ঘণ্টাধ্বনি
    ভেনিসের ইতালীয় ঘণ্টাঘরের বাজনা
    আর বাজতে থাকে মসকোর ঘণ্টা, লাল সিংহদ্বারের ঘড়ি
    যা আমার জন্য সময় জানাতো যখন আমি একটা অফিসে কা্জ করতুম
    আর আমার স্মৃতিগুলো
    ট্রেন বিদ্যুৎচমকের মতন গোলঘরে প্রবেশ করে
    চলতে থাকে ট্রেন
    গ্রামোফোনে বেজে ওঠে ছোট্ট ভবঘুরে কুচকাওয়াজ
    আর জগতসংসার, প্রাগের ইহুদিপাড়ার ঘড়ির কাঁটার মতন
    পাগল হয়ে পেছন দিকে যেতে থাকে
     
    বাতাসের সতর্কতা উড়িয়ে
    ঝড় উঠেছে
    আর ট্রেনগুলো প্যাঁচালো রেললাইনে ঝড় তোলে
    নারকীয় খেলনা
    এমন ট্রেন আছে যাদের কখনও পরস্পরকে দেখা হয় না
    অন্যগুলো হারিয়ে যায়
    স্টেশানমাসটাররা দাবা খেলে
    ব্যাকগ্যামন
    শুট পুল
    ক্যারামের টুসকি
    প্যারাবোলা
    রেললাইনের প্রণালী হলো নতুন ধরণের জ্যামিতি
    সাইরাকিউজ
    আরকিমিডেস
    আর যে সৈন্যরা তাঁকে কোতল করেছিল
    আর ছিপনৌকা
    আর রণতরী
    আর বিস্ময়কর যন্ত্র যা উনি আবিষ্কার করেছিলেন
    আর যাবতীয় কোতল
    প্রাচীন ইতিহাস
    আধুনিক ইতিহাস
    জলঘুর্ণি
    জাহাজডুবি
    এমনকি টাইটানিকও যার বিষয়ে কাগজে পড়েছিলুম
    এতো চিত্রকল্পের জমায়েত আমি আমার কবিতায় আনতে পারছি না
    কেননা আমি এখনও সত্যিকারের খারাপ কবি
    কারণ ব্রহ্মাণ্ড আমার ওপর দিয়ে দ্রুত চলে যায়
    আর ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা পড়ার ব্যাপারে বীমার জন্য গা করিনি
    কেননা আমি জানিনা কেমন করে তা সারাটা পথে বয়ে নিয়ে যেতে হবে
    আমি বেশ ভয়ে আছি
    আমি ভিতু
    জানি না কেমন করে সারাটা পথ বয়ে নিয়ে যেতে হবে
    আমার বন্ধু শাগাল-এর মতন আমি যুক্তিবর্জিত ছবির সিরিজ আঁকতে পারি
    কিন্তু আমি প্রসঙ্গবিন্দু লিখে রাখিনি
    “আমার অজ্ঞতা ক্ষমা করুন
    ছন্দের প্রাচীন খেলা ভুলে গেছি বলে ক্ষমা করে দিন”
    গিয়ম অ্যাপলিনেয়ার যেমন বলেছেন
    যুদ্ধ সম্পর্কে যদি কিছু জানতে চাও তাহলে ক্রোপোটকিনের ‘স্মৃতিকথা’ পড়ো
    কিংবা নৃশংস ছবিসহ জাপানি সংবাদপত্র
    কিন্তু বইয়ের তালিকা তৈরি করে কীই বা হবে
    হাল ছেড়ে দিই
    লাফিয়ে ফিরে আসি আমার নাচতে থাকা স্মৃতিতে…
     
    ইরকুটস্কে যাত্রা হঠাৎ মন্হর হয়ে যায়
    সত্যি বলতে টেনে নিয়ে যেতে থাকে
    বাইকাল হ্রদের বাঁকে আমাদেরটাই ছিল প্রথম ট্রেন
    গাড়িটা লন্ঠনের আলোয় আর পতাকায় সাজানো ছিল
    আর দুঃখি গান “ঈশ্বর জারকে রক্ষা করুন” শুনে আমরা স্টেশন ছাড়লুম
    আমি যদি চিত্রকর হতুম এই যাত্রার শেষে প্রচুর হলুদ আর লাল রঙের ঝাপটা মারতুম
    কারণ আমার মনে হয় আমরা সবাই যৎসামান্য উন্মাদ
    আর সেই ছেয়েথাকা সন্মোহন আমার সহযাত্রীদের ক্লান্ত মুখ রক্তাভ করে তুলছিল
    আমরা যখন মোঙ্গোলিয়ার কাছাকাছি
    তা দাবানলের মতন গর্জন করছিল ।
    ট্রেন মন্হর হয়ে গিয়েছিল
    আর চাকার অবিরাম ঘষটানিতে আমি শুনতে পেলুম
    এক শাশ্বত প্রার্থনার
    উন্মাদ ফোঁপানি আর চিৎকার
     
    আমি দেখলুম
    আমি দেখলুম শেষ পূর্বপ্রান্ত থেকে যে শব্দহীন কালো ট্রেনগুলো ফিরে আসছে
    তারা যেন মায়াপুরুষ
    আর আমার চোখদুটো, গাড়ির পেছনের আলোর মতন,
    তখনও ট্রেনগুলোর পিছু ধাওয়া করেছে
    টালগাতে ১০০০০০ আহত লোক মারা যাচ্ছে অথচ কোনো সাহায্য আসছে না
    আমি ক্র্যাসনোইয়ার্সকের হাসপাতালে গেলুম
    আর খিলোকে আমাদের সঙ্গে সৈন্যদের এক সারির সঙ্গে দেখা হলো
    যারা পাগল হয়ে গেছে
    আলাদা করে রাখাদের দেহে দেখলুম জখমের হাঁ-মুখ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে
    আর কেটে ফেলা অঙ্গগুলো চারিদিকে নাচছে কিংবা কাঁচা বাতাসে উড়ছে
    তাদের মুখমণ্ডলে আর হৃদয়ে ছিল আগুন
    জানালায় টোকা দিয়ে বাজনা বাজাচ্ছিল মূর্খ আঙুলগুলো
    আর ভয়ের চাপে এমনই চাউনি যা থেকে ফেটে বেরোবে নালি-ঘা
    স্টেশনগুলোয় ওরা মোটরগাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল
    আর আমি দেখলুম
    ষাটটা ইঞ্জিন তপ্ত দিগন্তের তাড়া খেয়ে দৌড়োচ্ছে
    আর বেপরোয়া কাকেরা
    উধাও হয়ে যাচ্ছে
    পোর্ট আর্থারের দিকে
     
    শিটাতে পেলুম কয়েক দিনের বিশ্রাম
    পাঁচ দিনের বিরাম ততোক্ষণ ওরা রেললাইন পরিষ্কার করছিল
    আমরা মিস্টার ইয়াঙ্কেলেভিচের বাড়িতে আশ্রয় নিলুম যিনি
    ওনার একমাত্র মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে দিতে চাইলেন
    তারপর যাবার সময় এলো ।
    এখন আমিই পিয়ানো বাজালুম আর আমার দাঁতে ব্যথা করছিল
    আর যখনই চাই আমি আবার দেখতে পাই সেই নিঃশব্দ ঘর আর ভাঁড়ার আর
    ওনার মেয়ের দুই চোখ যে আমার সঙ্গে প্রতিরাতে শুচ্ছিল
    মুসোর্গস্কি
    আর হ্যুগো উল্ফের জার্মান গীতিকবিতা
    আর গোবি মরুভূমির বালিয়াড়ি
    আর খাইলারে শাদা উটদের একটা যাত্রীদল
    আমি দিব্যি করে বলতে পারি ৩০০ মাইলের বেশি মোদোমাতাল ছিলুম
    কিন্তু আমি পিয়ানো বাজাচ্ছিলুম — এসবই দেখেছি
    যাত্রায় বেরোলে তোমার উচিত চোখ বন্ধ করে নেয়া
    আর ঘুমিয়ে পড়া
    আমি ঘুমোবার জন্যে পাগল হয়ে যাচ্ছিলুম
    চোখ বন্ধ করে গন্ধ শুঁকে বলে দিতে পারি আমি কোন দেশে
    আর কোন ধরণের ট্রেন যাচ্ছে তা শুনে বলে দিতে পারি
    ইউরোপের ট্রেনগুলো ৪/৪ যখন কিনা এশিয়ার ট্রেন ৫/৪ কিংবা ৭/৪
    অন্যগুলো ঘুমপাড়ানি গানের সুর তুলে যায়
    আর কয়েকটা এমন যাদের চাকার একঘেয়েমি আমাকে
    মাতেরলিঙ্কের কঠিন গদ্য মনে পড়ায়
    চাকাগুলোর খণ্ডিত উচ্চারণের মানে আমি বুঝতে পারছিলুম
    আর সৌন্দর্যের সন্ত্রাসের উপাদানকে একত্রিত করতে পারছিলুম
    যার আমি মালিক
    আর যা আমাকে চালিয়ে নিয়ে যায়
     
    সিৎসিহার আর হারবিন
    অতোটাই আমি যেতে পারি
    শেষ স্টেশন
    ওরা রেড ক্রসের দপতরে আগুন ধরিয়ে দেবার পর
    হারবিনে আমি ট্রেন থেকে নামলুম
     
    ও প্যারিস
    পরম উষ্ণ আরামগেহ তোমার পথগুলোর মোড়ের ফুলকি
    আর তার ওপরে হেলে থাকা বাড়িগুলো পরস্পরকে তাপ দেয়
    ঠাকুমা-দিদিমার মতো
    আর এখানে রয়েছে লাল সবুজ সমস্ত রঙের পোস্টার আমার অতীতের মতন
    এক কথায় হলুদ
    ফ্রান্সের উপন্যাসের গর্বিত রঙ হলো হলুদ
    বড়ো শহরগুলোয় যখন বাস যায় আমি তাতে হাত ঘষি
    সঁ-জারমেঁ-মমার্ত রুটে যা আমাকে নিয়ে যায় ছোটো পাহাড়তলিতে
    নিচের মোটরগুলো যেন সোনালি ষাঁড়
    সন্ধ্যায় গরুগুলো সাকরে-কয়েরে চরে বেড়ায়
    ও প্যারিস
    প্রধান স্টেশন যেখানে অস্হিরতার মোড়ে আকাঙ্খাগুলো নামে
    এখন কেবল রঙের দোকানে দরোজায় ছোট্ট আলো জ্বলছে
    ইনটারন্যাশানাল পুলম্যান আর গ্রেট ইউরোপিয়ান এক্সপ্রেস কোম্পানি
    তাদের পুস্তিকা আমাকে পাঠিয়েছে
    এটা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর গির্জা
    আমার বন্ধুরা আছে যারা আমাকে রেলিঙের মতন ঘিরে থাকে
    ওরা ভয় পায় যে আমি চলে গেলে আর ফিরবো না
     
    প্যারিস
    যে নারীদের সঙ্গে  পরিচিত হয়েছি তারা দিগন্তে আমার চারিধারে দেখা দেয়
    বৃষ্টিতে দুঃখি লাইটহাউসের মতন দেখতে তাদের হাত বাড়িয়ে দেয়
     
    বেলা, অ্যাগনেস, ক্যাথারিন, আর ইতালিতে আমার ছেলের মা
    আর সেই মেয়ে যে আমেরিকায় আমার প্রেমের মা
    অনেক সময়ে হুইসিলের কান্না আমাকে ছিঁড়ে ফ্যালে
    মাঞ্চুরিয়াতে একটি গর্ভ স্পন্দিত হচ্ছে, যেন জন্ম দিতে চলেছে
    আমার ইচ্ছেকে
    আমার ইচ্ছে যে আমার কখনও যাত্রা করা উচিত হয়নি
    আজকের রাতে এক গভীর প্রেম আমাকে পাগল করে তুলছে
    আর আমি ফ্রান্সের ছোট্ট জিনের কথা ভুলতে পারছি না ।
    এক দুঃখের রাতে তার সন্মানে এই কবিতাটা লিখছি
    জিন
    কচি গণিকা
    আমি বড়ো দুঃখি বড়ো দুঃখি
    ফুরিয়ে যাওয়া যৌবনকে মনে আনার জন্য যাচ্ছি লাপাঁ অ্যাগাইল
    কয়েক গেলাস মদ খাবো
    আর বাসায় ফিরবো একা
     
    প্যারিস
    তুলনাহীন মিনার আর মহান ক্রুশকাঠ আর চাকার শহর

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 | 31 | 32 | 33 | 34 | 35 | 36 | 37 | 38 | 39 | 40 | 41 | 42 | 43 | 44 | 45 | 46 | 47 | 48 | 49 | 50 | 51 | 52 | 53 | 54 | 55 | 56 | 58 | 59 | 60 | 61 | 62 | 63 | 64 | 65 | 66 | 67 | 68 | 69 | 70 | 71 | 72 | 73 | 74 | 75 | 76 | 77 | 78 | 79 | 80 | 81 | 82 | 83 | 84 | 85 | 86 | 87 | 88 | 89 | 90 | 91 | 92 | 93
  • কাব্য | ১৩ নভেম্বর ২০২২ | ৯৬৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সায়ন্তন রায় | 103.18.***.*** | ১৩ নভেম্বর ২০২২ ২০:০৭513753
  • দুর্ধর্ষ। এবং চোখ খুলে গেলো আবার।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন