এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  বাকিসব  মোচ্ছব

  • দস্তয়েভস্কির ধর্মদ্বন্দ

    Malay Roychoudhury লেখকের গ্রাহক হোন
    বাকিসব | মোচ্ছব | ১০ নভেম্বর ২০২২ | ১৩৩৪ বার পঠিত
  • 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 | 31 | 32 | 33 | 34 | 35 | 36 | 37 | 38 | 39 | 40 | 41 | 42 | 43 | 44 | 45 | 46 | 47 | 48 | 49 | 50 | 51 | 52 | 53 | 54 | 55 | 56 | 58 | 59 | 60 | 61 | 62 | 63 | 64 | 65 | 66 | 67 | 68 | 69 | 70 | 71 | 72 | 73 | 74 | 75 | 76 | 77 | 78 | 79 | 80 | 81 | 82 | 83 | 84 | 85 | 86 | 87 | 88 | 89 | 90 | 91 | 92 | 93
    দস্তয়েভস্কির ধর্মদ্বন্দ্ব : মলয় রায়চৌধুরী

    ফিয়োদর দস্তয়েভস্কির বাবা, মিখাইল আঁদ্রিভিচ দস্তয়েভস্কি ১৮৩৯ সালে মারা যান, যখন ফিয়োদর সেন্ট পিটার্সবুর্গে মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়তেন। ফিয়োদরের বাবার মৃত্য সম্পর্কে তিনটি পরস্পরবিরোধী কারণের কথা শোনা যায় এবং সত্যটি আজও অজানা। প্রথমটি হল যে তাঁকে তাঁর জমিদারির চাষিরা খুন করেছিল, দ্বিতীয়টি হল যে স্ত্রী মারিয়া নেচায়েভার মৃত্যুর পর মিখাইল অত্যধিক মদ খেতেন যার দরুন তাঁর সিরোসিস হয়ে গিয়েছিল, তৃতীয় হল যে মিখাইল হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। মিখাইলের মৃত্যু যদিও রহস্যে ঢাকা, তাঁর ছেলে আঁদ্রের রচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে স্ত্রী মারিয়ার মৃত্যুর পর মিখাইলের স্বাস্থ্য দ্রুত খারাপ হয়ে গিয়েছিল আর সমস্ত রকমের প্রতিরোধ-শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষরা ছিলেন রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের যাজক এবং তাঁদের আদিনিবাস ছিল লিথুয়ানিয়ার পিন্সকে, যা এখন বেলারুসের অন্তর্গত। লিথুয়ানিয়ায় তাঁর নামের উচ্চারণ ছিল মিখাইল। ফলত, শৈশব থেকে ফিয়োদরের মনে খ্রিস্টধর্মের ব্যাখা নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ পরিবারিক। বাঙালি হিন্দু লেখকদের কী এই ধরণের প্রশ্ন মনে জাগে না?

    মিখাইল ছিলেন মসকোয় গরিব রোগীদের মারিনস্কায়া হাসপাতালের ডাক্তার। ১৮২৮ সালে, যখন তাঁর দুই ছেলে, মিখায়েল আর ফিয়োদরের বয়স যথাক্রমে আট আর সাত বছর,  তিনি কলেজিয়েট অ্যাসেসরের পদে উন্নীত হন, যা তাঁকে আইনত অভিজাত শ্রেণির সদস্য হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং তিনি মসকো থেকে দেড়শো কিলোমিটার দূরে দারোভোয়েতে একটি ছোটো জমিদারি কেনেন; সেখানে তাঁরা গ্রীষ্মাবকাশে গিয়ে থাকতেন। এই চাষজমির একটা পয়োনালিতে পাওয়া গিয়েছিল মিখাইলের মৃতদেহ।  মৃতদেহ এই ভাবে পাওয়া, ফিয়োদরের চরিত্রে ‘পাপবোধ’ বা ‘সিন’ সম্পর্কে নানা প্রশ্ন ক্ষত তৈরি করে দিয়েছিল, যেমনটা ক্যাথলিকরা খ্রিস্টের মৃত্যুর জন্য অনুশোচনা করেন।

    ফোবিদরের বাবার আরও ছয়টি সন্তান হয়েছিল : ভারভারা (১৮২২-১৮৯২), আঁদ্রেই (১৮২৫-১৮৯৭), লিউবভ (১৮২৯ সালে জন্মের পরই মারা যায়), ভেরা (১৮২৯-১৮৯৬), নিকোলাই (১৮৩১-১৮৮৩) এবং আলেকসান্দ্রা (১৮৩৫-১৮৮৯)। মিখাইল ছিলেন সুশিক্ষিত ও স্নেহময় মানুষ, কিন্তু তাঁর আচমকা চটে যাবার স্বভাব তাঁকে এমন করে তুলতো যে তখন তাঁকে অত্যন্ত কড়া মেজাজের ও অবিশ্বাসযোগ্য মনে হতো।  যখন তাঁর মনের ভাব খারাপ থাকতো তখন মিখাইল জগতসংসারকে  তিক্তভাবে দেখতেন, উত্ত্যক্ত হয়ে যেতেন, সদাচার ভুলে যেতেন এবং আত্ম-সচেতনতা থাকতো না। বাবার চরিত্রের তিক্ততা ও অন্তর্মুখীনতা বর্তেছিল ফিয়োদরের ওপর। 

    মিখাইল  ছিলেন অত্যধিক ধার্মিক এবং তিনি ও স্ত্রী মারিয়া বাচ্চাদের গোঁড়া রুশ খ্রিস্টধর্মের ঐতিহ্য অনুসারী করে তুলতে চাইতেন, যার বৈশিষ্ট্য হল ভয়, কঠোরতা ও আনুগত্য। কাথলিক শব্দটি গ্রীক শব্দ কাথোলিকোস থেকে এসেছে, যার অর্থ সর্বজনীন কিন্তু রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চ তাকে সর্বজনীন বলে মনে করে না। একই ধর্মের এরকম দুটি ভিন্ন ব্যাখ্যা, ফিয়োদরকে শৈশবেই অবাক করেছিল। বাচ্চাদের তিন-চার বছর বয়স থেকে ওল্ড ও নিউ টেস্টামেন্ট পড়ে ও ব্যাখ্যা করে শোনাতেন তাঁদের মা-বাবা। পাশাপাশি, বাচ্চাদের আয়া আলেনা ফ্রোলভ্‌না রাতে শোবার সময় তাদের খ্রিস্টধর্মীদের বীরগাথা, রূপকথা ও কিংবদন্তির গল্প পড়ে শোনাতেন। 

    ১৮৩৭ সালে মারিয়া যক্ষ্মা রোগে মারা যান আর ফিয়োদরের ছোটো ভাই আঁদ্রেই এই সময়ের পর বাবার মধ্যে প্রভূত পরিবর্তন লক্ষ করেন। আঁদ্রেই লিখেছেন যে তাঁর মা মারা যাবার পর বাবার মধ্যে অদ্ভুত বদল ঘটতে থাকে, নিজের সঙ্গে এমন জোরে-জোরে কথা বলতেন যেন স্ত্রী মারিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন। আঁদ্রেই একটি চিঠির কথা উল্লেখ করেছেন যাতে তাঁর বাবা ফিয়োদরকে লিখছেন যে মারিয়ার মৃত্যুর ফলে গড়ে ওঠা নিজের অসীম দুঃখ আর যাতনা তাঁর সহ্যের অতীত হয়ে গেছে। ফিয়োদরের মনে হয়েছিল যে এই দুঃখ ও যাতনা তো আসলে খ্রিস্টের! আঁদ্রেই-এর মতে, চরম একাকীত্ব তাঁর বাবাকে মদ্যপ আর প্রায়-উন্মাদ করে তুলেছিল। বাবার মৃত্যু সম্পর্কে তিনটি সম্ভাব্য কারণের মধ্যে চাষিদের হাতে খুন হওয়াকেই সত্য বলে মনে করেন আঁদ্রেই ; মিখাইলের বদমেজাজের কারণে একবার তিনি চিৎকার করে একজন চাষিকে অপমান করেছিলেন; সেই চাষি অন্য চাষিদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে খুন করেছিল তাঁর বাবাকে। ঘটনাস্হলে পুলিশ এসেছিল কিন্তু চাষিরা সবাই মিলে মোটা ঘুষ দেবার দরুন হত্যাকাণ্ড ধামা চাপা পড়ে যায়; সরকারি নথিতে লেখা হয় যে মিখাইল হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। 
    মিখাইলের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ আশি বছর অজানা ছিল। মিখাইলের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ আজও জানা যায়নি, তবে মৃত্যু ঘিরে যে রহস্য এবং বাবাকে হারানোর বিষাদ, ফিয়োদরের লেখালিখি ও বিশ্ববীক্ষার ওপর প্রভূত ছাপ ফেলেছিল। ফ্রয়েড বলেছেন যে দস্তয়েভস্কির মৃগীরোগ যেভাবে আচমকা দেখা দিয়েছিল তা তাঁর বাবার মৃত্যুর ঘটনাকে কিনারা করতে  ও সহ্য করতে গিয়ে মস্তিষ্কে ব্যাখ্যাহীন ছাপের দরুন,  সারাজীবন যাতনাটি ফিয়োদরের সঙ্গী ছিল। মৃগীরোগ তাঁর রচনার থিম, বিশেষ করে ‘দি ইডিয়ট’ উপন্যাসে। পিতৃহত্যা ও পিতৃস্হানীয়ের হত্যা এবং বাবা ও ছেলেদের পরস্পর সম্পর্ক দস্তয়েভস্কির থিমগুলোর অন্যতম, বিশেষ করে ‘দি ব্রাদার্স কারামাজোভ’ উপন্যাসে, যে রচনায় বাবার মৃত্যু সম্পর্কিত অপরাধবোধ তাঁর ছেলেদের মধ্যে সঙ্ঘাতের কারণ হয়ে ওঠে। উল্লেখ্য যে যিশুর পিতা হলেন ঈশ্বর।

    জার-শাসিত রাশিয়ায় ফিয়োদর দস্তয়েভস্কি  এমন একটি জীবন যাপন করেছিলেন যা তাঁর উপন্যাসগুলোয় ভয়াবহভাবে  প্রতিফলিত হয়েছে : জটিল, উত্তেজনায় টান-টান এবং মানসিক অস্থিরতা ও প্রশ্নজালে জর্জরিত। মানুষের স্বভাবচরিত্র তাঁর উপন্যাসে বল্গাছাড়া পরিসর পেয়েছে, তারা যেন সেই লোকগুলোর মতন যারা নির্দিধায় যিশুর হাতে আর পায়ে গজাল ঠুকে ক্রুশকাঠে ঝুলিয়েছিল। দস্তয়েভস্কি দেখেছেন যে এই এরাই আবার পরস্পরের নির্মমতা, হিংস্রতা, ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রগাঢ় প্রেমে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে পড়ার আনন্দ আহ্লাদিত ও যন্ত্রণায় কাতর হয়।  তাছাড়া মহৎ ব্যক্তির জীবনেও থাকতে পারে গোপন নোংরামির ঘা যেমন থাকে বহু যাজকের। 

    বাবা মিখাইলের হাসপাতাল ছিল মস্কোর প্রায় বাইরে গরিবদের এলাকায়। হাসপাতালের ঘাসহীন মাঠে একা-একা ঘুরে বেড়াবার সময় নানা অসুখে-ভোগা রোগিদের যাতায়াত নিয়মিত দেখতেন ফিয়োদর, সেই ধরণের রোগী যারা যিশুর ছোঁয়ায় সেরে উঠতো। সেই সব লোকেরা বেশির ভাগ ছিল দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত  নিচুতলার মানুষ। সেই নিম্নবিত্ত এলাকায় বন্ধুহীন নিরানন্দ  কঠোর ও নিঃসঙ্গ  শৈশবের একাকীত্ববোধ, শৈশবের ফ্ল্যাটের দমবন্ধকরা পরিবেশ ফিয়োদরের মধ্যে গড়ে তুলছিল ভিন্ন একটি অ-বালক চারিত্র্য। তিনি যেন কাঁধে ক্রুশকাঠ বইবার একাকীত্ববোধে নির্বাসিত।

    নিউ ও ওল্ড টেস্টামেন্ট শোনার সময় থেকে ফিয়োদরের মনে আব্রাহামিক বাইনারি বৈপরীত্যের দ্বন্দ্ব আরম্ভ হয়েছিল। ঈশ্বর সম্পর্কে দ্বন্দ্ব থেকে  কখনও মুক্তি পাননি তিনি এবং তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী অ্যানার মতে, এই বিষয়ে দস্তয়েভস্কি একটি পুরো গ্রন্হাগারের বই পড়ে ফেলেছিলেন। “দ্য ইডিয়ট’ উপন্যাস লেখার আগে, দস্তয়ভস্কি  একটি চিঠিতে বন্ধু এ. এন.মাইকভকে  লিখেছিলেন, “যে ব্যাপারে  আমি আমার সারা জীবন সচেতনভাবে বা অজ্ঞানভাবে যাতনা ভোগ করেছি---তা হলো ঈশ্বরের অস্তিত্ব।"। অর্থাৎ যিশুর বাবার অস্তিত্ব। 

    দস্তয়েভস্কির অধিকাংশ বই  খ্রিস্টান মতবাদের কাঠামোর মধ্যে লেখা হয়েছে, এবং ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের ও অবিশ্বাসীদের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে আলোকিত করেছে : চূড়ান্ত ভাল এবং খারাপের দ্বন্দ্ব। দস্তয়েভস্কি বিশ্লেষণ করেছেন, যীশু খ্রিষ্টের "সত্য" উপলব্ধির ধাপে অন্তর্নিহিত মানসিক যন্ত্রণা এবং সেই সূত্রে জেগে ওঠা প্রশ্নাবলী। তাঁর সমালোচক বারদাইয়েভ-এর মতে , “দস্তয়েভস্কিকে  পৌত্তলিকদের মতো ঐশ্বরিক সমস্যার সমাধান করতে হয়নি, বরং তাঁকে ভাবতে হয়েছে মানবজাতির সমস্যা, ব্যক্তিমানুষের যন্ত্রণা, আধ্যাত্মিক মানুষ হিসাবে একজন খ্রিস্টানের সমস্যা।" দস্তয়েভস্কি বলেছেন যে, বিবেকের স্বাধীনতার চেয়ে মানুষের জন্য আর কিছু প্রলুব্ধকর নয়। কিন্তু যাতনা ভোগার তার চেয়ে  বড় কারণ আর নেই। যিশু এই যাতনা ভোগ করেছিলেন। ঈশ্বর ও শয়তানের দ্বন্দ্বে একজন হিন্দু বা অনীশ্বরবাদী পাঠকের  জড়িয়ে পড়া এবং তার যাতনা বুঝতে পারা কঠিন কেননা হিন্দু তো জানে না শয়তান বলতে কাকে বোঝায়, তাই সে সহজেই নিজের দুষ্টু ছেলেকে ‘শয়তান কোথাকার’ বলে বকুনি দিতে পারে।

    দস্তয়েভস্কির ভাবুক সত্তার বিকাশ মোটামুটি দুটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। তাঁর কারাবাসের আগের ছোটো লেখাগুলো, যাতে লক্ষ করা যায় রুশ ও বিদেশি সাহিত্যিকদের প্রভাব, যদিও কিছু বৈশিষ্ট্য এবং শৈলীগত উদ্ভাবন যা পরে তাঁকে চিহ্ণিত করবে, তার আভাস সেগুলোয় স্পষ্ট। গোগলের দ্বারা সেন্ট পিটার্সবার্গের কেরানিদের অপমানজনক চরিত্রচিত্রণ এবং তাদের ক্ষতিকারক পরিবেশের বর্ণনা যুবক দস্তয়েভস্কির ভালো লেগেছিল। দস্তয়েভস্কি নিজেও এই সমস্ত প্রান্তিক, হিংসুটে, ঝগড়ুটে লোকেদের সঙ্গে শৈশব থেকে পরিচিত ছিলেন; এরা যেন জুডাসের বংশধর। দস্তয়েভস্কির সেই সময়ের গল্পগুলোতে এই উপাদানগুলো এতো বেশি যে তিনি নিজেকে গোগলের শিষ্য হিসেবে চিহ্নিত করতেন। ই.টি.এ. হফমান -এর  গল্পের বৈশিষ্ট্যগুলো, বিশেষ করে  গথিক এবং রোমান্টিক মেলোড্রামা,  পছন্দ ছিল দস্তয়েভস্কির। তা সত্বেও, দস্তয়েভস্কিকে অমন প্রভাব থেকে যা আলাদা করে তা হল গরিব বর্গের লোকেদের যাতনার আর কষ্টের কার্নিভালিস্ট অতিরঞ্জন।

    রুশরা যে ধর্ম সম্পর্কে গোঁড়া তা সোভিয়েত দেশ ভেঙে যাবার পর অর্থোডক্স চার্চের স্বমহিমায় ফেরা থেকে টের পাওয়া যায়, যখন কিনা ইউরোপের অন্যান্য দেশে ঈশ্বর ও ধর্মে বিশ্বাস ক্রমশ ফিকে হয়ে এসেছে। প্রকৃতপক্ষে, দস্তয়েভস্কি একটি গোঁড়া ধর্মীয় পরিবারে বেড়ে ওঠেন। উনি নিজেই বলেছেন, "আমি একজন ধার্মিক রাশিয়ান পরিবার থেকে এসেছি। আমরা আমাদের পরিবারে আমাদের শৈশবকাল থেকেই গসপেলের কথা জানি। আমার কাছে, তা একটি গৌরবময় ব্যাপার।" তিনি অবশ্যই বাইবেলের বিষয়বস্তুর সাথে ভালভাবে পরিচিত ছিলেন, কারণ তাঁর নিষ্ঠাবান মা তাঁর সন্তানদের পড়তে এবং লিখতে শেখানোর জন্য শুধুমাত্র ওল্ড এবং নিউ টেস্টামেন্ট ব্যবহার করতেন। 

    দস্তয়েভস্কি তাঁর প্রিয় আয়ার কথাও বলতেন, যিনি  তাঁকে রাতে শুতে যাবার আগে এই  প্রার্থনা করতে বলতেন, "আমি আমার সমস্ত আশা তোমার ওপরই রাখি, মাদার মেরি, আমাকে তোমার সুরক্ষা দিও।" শৈশবে এই ধরনের  শক্তিশালী মহিলারা  সম্ভবত দস্তয়েভস্কির পরবর্তী লেখাকে প্রভাবিত করেছিল, যার কারণে তিনি নারী চরিত্রগুলোকে এমন ভূমিকা দিয়েছেন যা সত্য এবং সম্পূর্ণ ধার্মিক, যার প্রমাণ পাওয়া যায় ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’ উপন্যাসের সোনিয়া চরিত্রে। যদিও দস্তয়েভস্কির লালন - পালনের একটি বড় অংশ খ্রিস্টান পরিবারে ঘটেছিল,  তিনি মানুষের কঠোর স্বভাবচরিত্রের পরিচয়ও শৈশবেই পেয়েছিলেন। তাঁর বাবাকে তিনি শ্রদ্ধা করতেন বটে, কিন্তু তিনি মাতাল ছিলেন এবং পরে তাঁর অমানবিক আচরণের কারণে চাষিদের হাতে খুন হন, এটা তিনি জীবনে কখনও ভুলতে পারেননি। 

    দস্তয়েভস্কি পরিচিত সাহিত্য সমালোচক বেলিনস্কির দ্বারা প্রভাবিত "রাশিয়ান ইউটোপিয়ান সোশ্যালিস্টস"  দলে যোগ দেন। এই দলের মতাদর্শ সম্ভবত দস্তয়েভস্কির বিশ্বাসকে নাড়া দিয়েছিল, কারণ  বেলিনস্কি মনে করতেন যে "সমাজতান্ত্রিক হিসাবে, তাঁদের প্রথমে খ্রিস্টধর্মকে ধ্বংস করতে হবে, কেননা বিপ্লব অবশ্যই নাস্তিকতা দিয়ে শুরু হওয়া উচিত।" পরে, যদিও, দস্তয়েভস্কি আন্দোলনের এই শাখা থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছিলেন, তবু অর্থোডক্স চার্চের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক অভিব্যক্তিতে পূর্ণ একটি ব্যক্তিগত চিঠির প্রচারের জন্য তাঁকে  গ্রেপ্তার করে কারাগারে চালান করা হয়েছিল। স্পষ্টতই, দস্তয়েভস্কি মাদার মেরিকে এবং যিশুকে ভুলে গিয়েছিলেন। 

    কারাগারে থাকাকালীন (যেখানে একমাত্র বই বাইবেল অনুমোদিত ছিল) মনে হয় দস্তয়েভস্কি একজন ঈশ্বর-বিশ্বাসী হিসেবে আবার নিজেকে আবিষ্কার করতে আরম্ভ করেন। শ্রীমতী ফনভিজিনকে একটি চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন: "আমি বিশ্বাস করি যে এর চেয়ে প্রিয়, গভীর, আরও সহানুভূতিশীল, যুক্তিসঙ্গত কিছু নেই। ত্রাণকর্তার চেয়ে বড়ো এবং নিখুঁত পুরুষ আর কেউ নেই; যদি কেউ আমাকে প্রমাণ দেখাতে পারে যে খ্রিষ্ট সত্যের বাইরে, এবং যদি তারা খ্রিস্টকে বাদ দেয় তবে আমার উচিত হবে খ্রিস্টের সাথে থাকা।” 

    ঈশ্বর ও যিশুকে বিশ্বাসের প্রকৃত পুনর্জন্ম দেখা গেল ‘দ্য ব্রাদার্স কারামাজভ’,’ ডেভিলস’,’ দ্য ইডিয়ট’ এবং ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’-এর মতো উপন্যাসগুলোয়, যে রচনাগুলোতে অর্ধোডক্স চার্চের বক্তব্য স্পষ্ট এবং অবিচল। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনার বিষয় হল এই আধ্যাত্মিক পুনর্জন্ম সাইবেরিয়ায় কারাবাসের সময় ঘটেছিল, যেখানে দস্তয়েভস্কি পুরুষদের মধ্যে খারাপ হবার ক্ষমতা সম্পর্কে তথ্যের একটি বড় সংগ্রহ গড়ে তুলেছিলেন। দস্তয়ভস্কি এমন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে একটি বিশ্বাস গড়ে তুলতে পেরেছিলেন যা একইসঙ্গে ঈশ্বর ও শয়তানের পরস্পরবিরোধের বনেদ।

    তার মানে দস্তয়ভস্কির কাছে ঈশ্বর-বিশ্বাসের  সমস্যা সত্যের স্বীকৃতি সমস্যা নয়, বরং তা সংশয়কে  দূর করে। সন্দেহে যন্ত্রনাক্ত দস্তয়েভস্কির আত্মপ্রশ্নের প্রাথমিক উৎস ছিল পৃথিবীতে এতো  যন্ত্রণা রয়েছে কেন, এবং কেমন করেই বা প্রেমময় ঈশ্বরের ধারণার সঙ্গে তা খাপ খায়। দস্তয়েভস্কি এই দ্বন্দ্বটি আইভান কারামাজভের মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন, "এমন নয় যে ঈশ্বরকে আমি মানি না, বোঝার চেষ্টা করো,  আমি এই জগতকে গ্রহণ করি না, যা তিনি সৃষ্টি করেছেন, ঈশ্বরের এই জগতকে, এবং এর সাথে একমত হতে পারি না।" ‘ব্রাদার্স কারামাজভ’, যে উপন্যাসে দস্তয়েভস্কি ঈশ্বরের প্রশ্ন নিয়ে সবচেয়ে স্পষ্টভাবে আলোচনা করেছেন, এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল যা "বিশ্বাস বনাম নাস্তিকতার” দ্বন্দ্বকে পরিণাম দিতে পারে।  

    প্রাথমিকভাবে তাঁর ভাই অ্যালোয়িশার "সক্রিয় স্নেহ", দস্তয়েভস্কির মতে, বিশ্বাস। কিন্তু  জোসিমাকে তিনি উপস্হাপন করেছেন একটি ‘আদিরূপ’ হিসাবে, যার মাধ্যমে দস্তয়ভস্কি দেখাতে চেয়েছেন যে তিনি "মানুষকে স্বীকার করতে বাধ্য করতে পারেন, যে, প্রকৃত খ্রিস্টধর্ম  বিমূর্ত বিশ্বাস নয়, বরং জীবনে গ্রহণযোগ্য উজ্জ্বল বাস্তবতা। এই খ্রিস্টধর্ম আছে নাগালের মধ্যে, এবং অর্থোডক্স চার্চের খ্রিস্টধর্মই রাশিয়ান ভূখণ্ডের সমস্ত মন্দ থেকে একমাত্র পরিত্রাণ। এই খ্রিস্টধর্ম রোমান ক্যাথলিকদের নয়, যারা স্পেনে মানুষদের খুঁটিতে বেঁধে পোড়াতো।  অ্যালিয়োশা এবং জোসিমা চরিত্র দুটি দস্তয়েভস্কির আগের উপন্যাসে বিশ্বাস বিষয়ক প্রচেষ্টার তুলনায় সফল এবং এই দুজন ধার্মিক চরিত্র হলো আদর্শ সৎকর্মের উদাহরণ। পক্ষান্তরে ধরা যাক, ‘দ্য ইডিয়ট’ উপন্যাসের প্রিন্স মিশকিন, যে একজন মামুলি মূর্খ আর শেষ পর্যন্ত মূর্খ থেকে গেছে, কেননা  খ্রিস্টান হিসাবে তার বিশ্বাসে গড়ে ওঠেনি, সে খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে গেছে। 

    ‘ব্রাদার্স কারমাজোভ’ উপন্যাসে ফিয়োদর কারমাজোভের ছেলেদের প্রত্যেককে দস্তয়েভস্কি নিজের চৈতন্যের একটি অংশ দিয়ে চিত্রিত করেছেন, যাতে তাঁর নিজের ভেতরের ঝগড়া তাদের মুখ দিয়ে করাতে পারেন এবং বিশ্বাসের যাতনার বিশ্লেষণ করতে পারেন। অ্যালোয়িশা, তাঁরই এক ছেলের নাম যে এই উপন্যাস লেখার সময়ে মারা যায়। চরিত্রটি দস্তয়েভস্কির আধ্যাত্মিক দিকের প্রতিফলন,  যে দস্তয়েভস্কির আধ্যাত্মিক আদর্শকে সমর্থন করে। দিমিত্রি তাঁর চরিত্রের আবেগময় দিক, যার কন্ঠে সব সময় দস্তয়েভস্কির প্রিয় কবিতা শোনা যায়, আর যার আর্থিক দুরবস্হা লেখকের সঙ্গে মিলে যায়, যিনি লিখেছিলেন “রুবলগুলো কাঁকড়ার মতন এদিক-ওদিক পালায়”। স্মেরদিয়াকভ চরিত্রটি  দস্তয়েভস্কির মতনই জীবনের অসহ্য যন্ত্রণা ও তিক্ততা ভোগ করেছে; দস্তয়েভস্কি এই চরিত্রের মাধ্যমে রাশিয়ায় যুবকদের বিপ্লবী নৈতিকতা বিশ্লেষণ করেছেন। আইভান হলো সব ভাইদের মধ্যে একজন বুদ্ধিজীবী, যার মাধ্যমে দস্তয়েভস্কি নিজের দার্শনিক ও ধর্ম-সম্পর্কিত বক্তব্যগুলো ঝালাই করার সুযোগ পেয়েছেন। যদিও আইভানের চরিত্র দস্তয়েভস্কির সঙ্গে মেলে না, কিন্তু পরস্পরবিরোধী ভাবনাগুলোকে তিনি কাটাছেঁড়া করতে পেরেছেন, বিশেষ করে আইভানের দীর্ঘ ‘দি গ্র্যাণ্ড ইনকুইজিটর’ বক্তব্যের  মাধ্যমে, যাকে দস্তয়েভস্কি বলেছেন কবিতা।

    অ্যালিয়োশার চরিত্রে প্রদর্শিত বিশ্বাসের মাধ্যমে মূলত আইভান কর্তৃক ঈশ্বরের বৌদ্ধিক নিন্দা প্রতিহত করেছেন দস্তয়েভস্কি। তবুও, নাস্তিকতার সমর্থনে আইভানের দৃষ্টিভঙ্গি নিহিত রয়েছে  মানবজাতির প্রতি তার ভালোবাসায় -- দস্তয়েভস্কির যৌবনের রাজনীতি যা তাঁকে কারাগারে বন্দী করেছিল এবং ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড় করিয়েছিল। আইভান তর্ক দিচ্ছে স্রষ্টার বিরুদ্ধে, কেননা সে মানুষের যন্ত্রণাভোগে বিপর্যস্ত। দুজন কারামাজভ ভাইয়ের মতামতের দ্বন্দ্ব মানুষের আত্মার মধ্যে পাওয়া যায়, সেখানে চলছে সতত সংগ্রাম। অদ্ভুত ব্যাপার  হল যে সৌন্দর্য যেমন রহস্যময় তেমনি ভয়ঙ্কর। ঈশ্বর এবং শয়তান সেখানে অবিরাম যুদ্ধ করে চলেছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রটি হলো ব্যক্তি-এককের মস্তিষ্ক। দুটি তর্কবিন্দুতে আইভান অ্যালিয়োশার বিরোধিতার প্রয়াস করে, তা হলো, নির্দোষদের কষ্টভোগ এবং অদম্য সাহসের ধারণা, মূলত  ইচ্ছার স্বাধীনতা বা খ্রিষ্টধর্মে যাকে বলা হয়েছে ‘মানুষের ফ্রি উইল’। বলাবাহুল্য এই দুই তর্কবিন্দু দস্তয়েভস্কির সারাজীবনের ক্ষত হয়ে কাজ করেছে মস্তিষ্কে।

    শিশুদের যন্ত্রণাভোগ আইভানের দৃষ্টিতে সবচেয়ে অযৌক্তিক এবং অন্যায়, এবং আলিয়োশার কাছেও তা ক্ষতিকর। আইভান স্বগতোক্তির মাধ্যমে শিশুদের নির্যাতনের ভয়াবহ উদাহরণ উপস্হাপন করে এবং তার দ্বারা বুঝে উঠতে চায় অ্যালিয়োশা কেমন করে অমন নির্যাতনের সঙ্গে তার ঈশ্বরপ্রেম মেলাতে পারে।  অ্যালিয়োশার অপরিসীম দয়ার প্রতি আবেদন করার তর্কে আইভান এইভাবে যুক্তি দেয়: “কল্পনা করো যে তুমি  মানুষকে সুখী করার, তাদের শান্তি ও বিশ্রাম দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে মানব-নিয়তির একটি পরিকল্পনা তৈরি করলে, অথচ সেই পরিকল্পনায় অপরিহার্যভাবে দেখা গেল একটি ক্ষুদ্র জীবনকে  অত্যাচারে জর্জরিত করা অনিবার্য হয়ে উঠেছে, তুমি কি সেক্ষেত্রে অমন পরিকল্পনার স্হপতি হতে রাজি হবে?” আইভানের মতে ‘ফ্রি উইল’ আলোচনায় পাঠক ঈশ্বর সম্পর্কে আরেকটি সমস্যার সন্মুখীন হয় যা বিদ্যায়তনিক নাস্তিকতার অন্যতম প্রধান নীতির উপর আঘাত করে। মানুষের পতনের কারণ হিসেবে আইভান মনে করে যে ঈশ্বর দোষী, এবং তাঁর প্রতি অবিশ্বাসের  যুক্তিও খাড়া করে : “মানুষের অস্তিত্বের রহস্য কেবল বেঁচে থাকা নয়; বরং কোনও উদ্দেশ্যে বেঁচে থাকা। খ্রিস্টের উক্তি স্মরণীয়, “নট বাই ব্রেড অ্যালোন।” এ-ও দস্তয়েভস্কির নিজস্ব অন্তরদ্বন্দ্ব।

    অ্যালিয়োশা আইভানের বক্তব্যের বিরুদ্ধে যিশুখ্রিষ্টের উদাহরণ দেয়, যিনি সমগ্র মানবজাতির জন্য ক্রুশে বিদ্ধ হয়ে ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা সহ্য করেছিলেন। দূরদর্শিতা হিসেবে এই ধারণাটিকে  অ্যালিয়োশা ব্যাখ্যা করে যে 'প্রত্যেকেরই সবার প্রতি দায় আছে।' যে-কোনো অপরাধবোধ, এবং ফলস্বরূপ যে-কোনো  যাতনাভোগ, প্রত্যেক ঈশ্বর-বিশ্বাসীর কাছে একই হওয়া উচিত, কারণ আমরা সবাই অ্যাডাম ও ইভের আদি পাপের জন্য দোষী। আর যদি আমরা সেই দায়িত্বকে প্রগাঢ়ভাবে অনুভব করি তাহলে যন্ত্রণাভোগকে ভবিষ্যতে দূর করতে পারি। অ্যালিয়োশার বক্তব্যের  প্রতিক্রিয়ায় দস্তয়েভস্কি যা লিখেছেন তা তাঁর সবচেয়ে গভীর দার্শনিক মতামত  হিসাবে সূত্রায়িত করেছেন বিভিন্ন ভাবুক। এটি কাহিনির ভেতরে কাহিনি টেকনিকে লেখা এবং  আইভানের কবিতা ‘দ্য গ্র্যান্ড ইনকুইজিটর’ নামে বিখ্যাত স্বগতোক্তি। 

    “দ্য গ্র্যান্ড ইনকুইজিটর" নামের গদ্যটি, যাকে দস্তয়েভস্কি বলেছেন কবিতা, তা উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং আধুনিক সাহিত্যের অন্যতম সুপরিচিত অনুচ্ছেদ, কারণ মানুষের প্রকৃতি ও স্বাধীনতা সম্পর্কে ধারণা এবং মৌলিক অস্পষ্টতা নিয়ে তাতে তর্কবিতর্ক করা হয়েছে। দীর্ঘ স্বগতোক্তিতে, ‘দি গ্র্যান্ড ইনকুইজিটর’ এই ধারণাগুলো সমর্থন করেন: “কেবল শয়তানের নীতিগুলিই মানবজাতির সার্বজনীন একীকরণের দিকে পরিচালিত করতে পারে: মানুষকে রুটি দিন, তার বিবেককে নিয়ন্ত্রণ করুন এবং বিশ্বকে শাসন করুন; যীশু নিজেকে নির্বাচিতদের একটি ছোট গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন, যখন কিনা ক্যাথলিক চার্চ নিজেদের কাজের উন্নতি করে, এবং সমস্ত মানুষকে তার আওতায় আনে। গির্জাগুলো ঈশ্বরের নামে বিশ্ব শাসন করে, কিন্তু তা আসলে শয়তানের নীতি অনুসরণ করে ;  মানুষকে উচ্চ মর্যাদা-সম্পন্ন মনে করা ছিল যিশুখ্রিস্টের ভুল।” ‘দি ইনকুইজিটর’ স্বগতোক্তিটি নিজেদের রচনায় আলোচনা করেছেন বা উদ্ধৃতি দিয়েছেন নোয়াম চমস্কি, আলডস হাক্সলি, ডেভিড বেন্টলি হার্ট, ডেভিড ফস্টার ওয়ালেস, ক্রিশ্চিয়ান ফিলোস্ট্র্যাট, ইরভিন ডি ইয়ালম, পিটার ব্রুক, হেলেনা ব্লাভিটস্কি, লুই আলথুসার, ওরহান পামুক প্রমুখ।

    শুরুতে ছিল অল্প স্বাধীনতা, যা কিছু  ভালো তাকে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা, অথচ তা  পাপের সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করে না; শেষ পর্যায়ের স্বাধীনতা ছিল বড়ো মাপের, ঈশ্বরকে পাবার স্বাধীনতা, ঈশ্বরের বুকে ঠাঁই পাবার স্বাধীনতা। মানুষের মর্যাদা এবং তার বিশ্বাসের মর্যাদার জন্য দুটি স্বাধীনতারই স্বীকৃতি প্রয়োজন : সত্যকে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা এবং সত্যের স্বাধীনতা; কিন্তু বাঁধনহীন  কল্যাণ, যা একমাত্র সত্য, তা অশুভের স্বাধীনতাকে স্বীকার করে। এই সেই ট্র্যাজেডি যা  দস্তয়েভস্কি যাচাই এবং অধ্যয়ন করেছেন। আর এতে রয়েছে খ্রিস্টধর্মের রহস্য। ফলে এটি আইভানের যুক্তিকে নস্যাৎ করে, কেননা অশুভের জন্য যদি  স্বাধীনতার প্রয়োজন হয়, তাহলে মানুষের কারণেই দুষ্টতা এবং যন্ত্রণা ঘটে, আর তাই ঈশ্বরকে দোষ দেওয়া যায় না। তবে স্বাধীনতারও প্রয়োজন আছে, যাতে আমরা ঈশ্বরের ভালবাসাকে গ্রহণ করে তাঁকে সম্পূর্ণ উপলব্ধি করতে পারি। এমন একটি জগতের অস্তিত্ব সম্ভব নয়, যা একই সঙ্গে মুক্ত এবং ভাল, কারণ মানুষের খুঁত তা হতে দেবে না। পৃথিবী বজ্জাতিতে ঠাশা আর কৃপণ, কারণ তা মুক্তির বনেদে দাঁড়িয়ে। তবু, সেই মুক্তি বা উত্তরণ মানুষের এবং তার জগতের সমগ্র মর্যাদা দিয়ে গঠিত। যাই হোক, পাঠবস্তুর ছকের ভেতরে দস্তয়েভস্কি বিতর্কটা তোলেননি। তিনি অ্যালিয়োশার কাজকারবারের  মাধ্যমে  স্বাধীন-ইচ্ছার কূটাভাসের জবাব দিয়েছেন। তত্ত্ব থেকে অনুশীলনে গেছেন।  দস্তয়েভস্কি  দেখিয়েছেন প্রেমের আকাঙ্খা, যা কিচ্ছু করে না এবং কেবল আত্মসমর্পণ করে, তার সঙ্গে সক্রিয় প্রেম যা বাঁচিয়ে তোলে, তার পার্থক্য আছে। 

    যদিও দস্তয়েভস্কি খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কে নিজের সন্দেহগুলো যাচাই করতে-করতে এগিয়েছেন, তাঁর দ্বন্দ্বকে কিন্তু  বিশ্লেষণ করেছেন চরিত্রগুলোর মাধ্যমে। শেষ পর্যন্ত  এটা স্পষ্ট হয় যে তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঈশ্বরের উপস্থিতির  প্রত্যয়ের মধ্যে নিহিত। তাঁর উপন্যাসের সমাপ্তির সময়  চরিত্রগুলোকে এমনভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন যে বোঝা যায়, ‘‘ভালো’’ বা পছন্দসই চরিত্রগুলোকে তিনি ঈশ্বরের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন, যখন কিনা "মন্দ" ব্যক্তিরা সর্বশক্তিমানের বিরোধিতা করে। ‘দ্য ব্রাদার্স কারামাজভ’ উপন্যাসের শেষান্তে আমরা দেখি অ্যালিয়োশা, মিতিয়া এবং কোলিয়া সকলেই বিশ্বাসী হিসাবে উপস্হাপিত, আর তাদের সকলের প্রতিই পাঠক সমবেদনা বোধ করেন। কিন্তু ধূর্ত এবং ক্ষতিকর স্মারদিয়াকভ আত্মহত্যা করে, যা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে  সবচেয়ে ধর্মদ্রোহী বিদ্রোহ। ‘ডেভিল’ উপন্যাসে  কিরিলভ এবং নিকোলাই আত্মহত্যা করে, আর তারা রচনাটির  সবচেয়ে নিন্দনীয় চরিত্র। দস্তয়েভস্কি  সাধারণত তাঁর নায়কদের ঈশ্বরের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী হিসাবে উপস্হাপন করেন, কিন্তু খলনায়কদের উপস্হাপন করেন নাস্তিক হিসেবে। পাঠক কী নির্ণয় নেবেন তা তাঁদের হাতেই ছেড়ে দেন।

    এছাড়াও তাঁর উপন্যাসগুলোতে খ্রিস্টান পাঠকদের জন্য পাতা আছে কিছু ছোটখাট ফাঁদ, যা দস্তয়েভস্কির মনোভাব ও বিশ্বাসকে মেলে ধরে। যেমন সুপারম্যান তত্ত্ব, অন্যায় খ্রিস্টানদের নমুনা, অর্থোডক্স চার্চের বাড়াবাড়ি, পাপের জয় এবং "আলোর" প্রতি চরম ও প্রকৃত আত্মসমর্পণ। ১৮৭৮ সালে এন. এল. ওজিমভকে  একটি চিঠিতে দস্তয়েভস্কি লিখেছিলেন: "এখন ধরে নিন ঈশ্বর বলে কিছু নেই কিংবা আত্মার অমরত্ব নেই। এখন আমাকে বলুন, যদি আমি নিছক পৃথিবীতেই মারা যাই, তাহলে আমি কেন (যতোদিন না আইন আমাকে ধরে ফেলছে,  নিজের চাতুর্য আর তৎপরতায়) সৎভাবে জীবন যাপন করব এবং ভাল কাজ করব? অন্য একজনের গলা কাটবো না, ছিনতাই করব না, আর চুরি করব না?” 

    এই সুপারম্যান তত্ত্ব, প্রাথমিকভাবে ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’-এ রাসকোলনিকভে প্রতিষ্ঠিত, ঈশ্বরের অস্তিত্বে প্রকাশ করা সন্দেহের ফল, যার জন্য রয়েছে প্রচুর গর্ববোধ। তত্ত্বটি  রাসকোলনিকভকে বিনা প্ররোচনায় দুই নারী এবং একটি সম্ভাব্য অনাগত শিশুকে হত্যা করার অনুমতি দেয়। উচ্চতর সত্তা হিসাবে, সে তাদের জীবন নিতে পারে, যাদের জগতে দরকার নেই, যারা না থাকলেও চলে। একই যুক্তি ব্যবহার করে কিরিলভ ঈশ্বরের কাছে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়, আর নিজের জীবন শেষ করে ফেলার প্রস্তুতিতে বলে যে, "যদি ঈশ্বর থাকেন, তাহলে সবকিছুই তাঁর ইচ্ছা, এবং আমি তাঁর ইচ্ছা ছাড়া নিজে থেকে কিছুই করতে পারি না। যদি ঈশ্বর না থাকেন, তাহলে সবকিছু আমার ইচ্ছা, এবং আমি আমার ইচ্ছা প্রকাশ করতে বাধ্য। " এই আশ্চর্যজনক অহংকার কিরিলভের যিশুখ্রিস্টে অবিশ্বাস  থেকে উদ্ভূত, তার বদলে কিরিলভের রয়েছে নিজের প্রতি অটুট বিশ্বাস  :
    “আপনি যদি নিজেকে গুলি করেন, তাহলে আপনি ঈশ্বর হয়ে যাবেন, তাই না? 
    "হ্যাঁ, আমি ঈশ্বর হয়ে যাবো।" 

    এই তত্ত্বটি অবশ্য দস্তয়েভস্কি তাঁর প্লটের  বিকাশে নিজেই খণ্ডন করেছেন। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর রাসকলনিকভ নিজের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। যদিও তার বিকৃত তর্ক তার জঘন্য কাজের জন্য একটা যুক্তি খাড়া করতে চেয়েছে, কিন্তু তার কোন কাজ ভুল  আর কোন কাজ ঠিক, সেগুলোর মানদণ্ডের অনুভূতি মুছে ফেলতে রাসকলনিকভ অক্ষম। প্রথম-প্রথম সে গতানুগতিকভাবে জীবন চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, নিজের চতুর কৌশল উপভোগ করে এবং এই  উপসংহারে পৌঁছোয় যে, সে একজন সুপারম্যান। তা সত্বেও, নম্রস্বভাবের সোনিয়া যখন রাসকোলনিকভের বোধবুদ্ধিকে কাটাছেঁড়া করে, আর তাকে তার আত্মার নিম্নতম স্তরে নিয়ে যায়, তখন সে স্বীকার করে যে সে দোষী, সে অপরাধ করেছে এবং খারাপ কাজ করেছে এবং তার ক্ষমা দরকার। দস্তয়েভস্কি সুপারম্যান তত্ত্বটি খারিজ করে দেন সংশ্লিষ্ট চরিত্রগুলোয় মানসিক যন্ত্রণা সৃষ্টি করে, যতক্ষণ না তারা খ্রিস্টধর্মের সত্য এবং আলোকে স্বীকৃতি দেয় ততোক্ষণ তারা যাতনায় ভোগে। 

    দস্তয়েভস্কির রচনায় প্রস্তাবিত আরেকটি ধারণা, যা ঈশ্বরে বিশ্বাসকে দুর্বল করে দিতে পারে তা হলো অসাধু খ্রিস্টানদের উদাহরণ। পাঠবস্তুতে এমন ব্যাপার পুরে দিয়েছেন তিনি, যেগুলো বিশ্বাসের ভিত্তিকে নড়িয়ে দিতে পারে। যেমন, অ্যাদেলায়াদা ইভানোভনা, "স্বামী ফিয়োদর পাভলোভিচের হাতে তিন বছরের শিশু মিত্যাকে ছেড়ে বাড়ি থেকে পালালো গরিব একজন চার্চ-ছাত্রের সঙ্গে।" তক্ষুনি প্রশ্ন ওঠে, এ কেমনতর, যে, খ্রিস্টধর্মের ছাত্র পালিয়ে যায় অন্যের স্ত্রীর সাথে, যে কিনা এক শিশুর মা! লক্ষনীয় যে স্বামীর নাম ফিয়োদর। এই অসঙ্গতিকে দস্তয়েভস্কি ‘দ্য ব্রাদার্স কারামাজভ’ উপন্যাসে আরও স্পষ্ট করেছেন  রাকিতিন চরিত্রটির বিকাশের মাধ্যমে। রাকিতিন, একজন সন্ন্যাসী হয়েও উপন্যাসের  নাস্তিক চরিত্রদের তুলনায় ঈশ্বরের বিরুদ্ধে আরো তীব্রভাবে কাজ করে। অ্যালিয়োশার সবচেয়ে দুঃখের সময়ে, যখন তার বড়ো ভাই সদ্য মারা গেছে, রাকিতিন অ্যালিয়োশাকে খাবার-দাবার, মদ আর গ্রুশেঙ্কাকে এগিয়ে দিয়ে লোভ দেখায়। তাছাড়া, রাকিতিন ক্রমাগত ঝামেলা আর পরচর্চায় জড়িয়ে পড়ে, শেকসপিয়ারের ইয়াগোর ছোটো নমুনা যেন। বজ্জাত আর নকল  খ্রিস্টানরা সম্ভবত দস্তয়েভস্কির মানসিক যাতনা। দস্তয়েভস্কি যেন নোংরা চরিত্রগুলোকে সৃষ্টিই করেন যাতে উপন্যাসে তাদের আলোচনা করে মুখ বন্ধ করে দেয়া যায়। 

    দস্তয়েভস্কির কাছে এই ধরনের সমস্যা তথাকথিত ধার্মিক লোকেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং খবরদারি সংস্হা হিসেবে চার্চের  (বিশেষ করে রোমান ক্যাথলিক চার্চ) বাড়াবাড়ি পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। দস্তয়েভস্কি ক্রমাগত সমালোচনা করেছেন  যাজকদের আরামদায়ক জীবনধারা আর উৎসবের মতন ব্যাপারের প্রতি তাদের তড়িঘড়ি অনুমোদনকে। ফিয়োদর পাভলোভিচ,  ফাদার সুপিরিয়রের খাবারের সময়ে ঢুকে পড়ে বিরাট তর্ক আরম্ভ করে , সংস্থার সমগ্র সংগঠনকে নিন্দা করে। বলে, হে যাজকমশায়, আপনি সমাজে নিজের সততা প্রমাণের চেষ্টা করেন, সমাজে ভাল কাজ করার প্রদর্শন করেন, অন্যান্য লোকের খরচে একটা মঠে খাসা থাকেন, জানি, এর জন্য কোনো পুরষ্কারের আশা করেন না -- অথচ আপনি সেই খাটুনিকে একটু কঠিন মনে করেন। ওই বোতলগুলো দেখুন যেগুলো চার্চের পাদ্রিরা এনে দিয়েছেন আর কারা কাকে এই সব দিয়েছে? রাশিয়ার গরিব চাষিরা খেতমজুররা। একবার যদি দস্তয়েভস্কি কোনও চরিত্রের মধ্যে খ্রিস্টধর্ম-কথিত সত্যের জ্ঞান প্রতিষ্ঠা করেন, তাহলে পরবর্তী সমস্যা দেখা দেয় ঈশ্বরকে নিয়ে --- সেই সত্যকে দৃঢ় করা এবং তাকে বজায় রাখার সমস্যা। 

    পরিশেষে, দস্তয়ভস্কি দ্বারা প্রস্তাবিত ঈশ্বর সম্পর্কিত  সমস্যা হল পাপ করার ক্রমাগত তাগিদ আর অমন কাজে জড়িয়ে পড়ার লোভ। মিত্যা স্বীকার করে, "যদিও আমি শয়তানকে অনুসরণ করছি, আমি তোমার পুত্র, হে প্রভু।"  এখানে, এই দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার মধ্যে রয়েছে ভুল পথে এগোনো, যে, ঈশ্বরই হলেন পিতা, যাঁর প্রতি আমাদের অনুগত হওয়া উচিত, যদিও আমরা বারবার ভুল করতে পারি। 

    যদিও দস্তয়েভস্কির লেখায় স্পষ্টভাবে এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং সেই বিশ্বাসকে বজায় রাখার মানসিক লড়াইয়ের সাথে মোকাবিলা করে, তার চূড়ান্ত উপসংহার প্রশ্নাতীত -- তা হলো এই যে, যদিও মানুষ হিসাবে আমরা ঈশ্বরবিশ্বাসকে যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ করার চেষ্টা করতে পারি, এমনকী অনুমিত অসঙ্গতিগুলি আমাদের আলোড়িত করতে পারে, বিশ্বাসী হিসাবে তাঁর কৃপায় আমাদের তুচ্ছ অজ্ঞতা সত্বেও আমরা তা করি । ‘দ্য ব্রাদার্জ কারমাজভ শেষ হয়  যিশুর পুনরুত্থান সম্পর্কে তার সহপাঠীদের আশায়। খ্রিষ্টের পুনরুত্থানে বিশ্বাসের একটি উপযুক্ত পৃষ্ঠভূমি এখানে উপস্হাপন করেন দস্তয়ভস্কি।  অনেকসময়ে দেখা গেছে,  বিতর্কের যে উদ্ভাসগুলো দস্তয়েভস্কি আলোচনা করছেন, তিনি যেন নিজেই ঈশ্বরে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছেন। দস্তয়ভস্কির পাঠক এবং তাঁর বিতর্কের সাক্ষী হিসাবে খ্রিস্টানরা ‘দি ইনকুইজিটরের’ মতো যুক্তি খাড়া করতে পারছেন, এবং যুক্তি দিয়ে বিশ্বাসের কাছাকাছি হতে পারছেন। যাইহোক, দস্তোয়েভস্কির অভিপ্রায়কে বুঝে ওঠার জন্য, পাঠককে মনে রাখতে হবে তিনি যিশুর মহিমান্বয়ন করেছেন অবিরাম।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 | 31 | 32 | 33 | 34 | 35 | 36 | 37 | 38 | 39 | 40 | 41 | 42 | 43 | 44 | 45 | 46 | 47 | 48 | 49 | 50 | 51 | 52 | 53 | 54 | 55 | 56 | 58 | 59 | 60 | 61 | 62 | 63 | 64 | 65 | 66 | 67 | 68 | 69 | 70 | 71 | 72 | 73 | 74 | 75 | 76 | 77 | 78 | 79 | 80 | 81 | 82 | 83 | 84 | 85 | 86 | 87 | 88 | 89 | 90 | 91 | 92 | 93
  • বাকিসব | ১০ নভেম্বর ২০২২ | ১৩৩৪ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    উংলি - Malay Roychoudhury
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ১১ নভেম্বর ২০২২ ০৭:২৫513694
  •  "তাছাড়া মহৎ ব্যক্তির জীবনেও থাকতে পারে গোপন নোংরামির ঘা যেমন থাকে বহু যাজকের। "
     
    "দমবন্ধকরা পরিবেশ ফিয়োদরের মধ্যে গড়ে তুলছিল ভিন্ন একটি অ-বালক চারিত্র্য। তিনি যেন কাঁধে ক্রুশকাঠ বইবার একাকীত্ববোধে নির্বাসিত।"
     
    "দস্তয়েভস্কি ক্রমাগত সমালোচনা করেছেন  যাজকদের আরামদায়ক জীবনধারা আর উৎসবের মতন ব্যাপারের প্রতি তাদের তড়িঘড়ি অনুমোদনকে।  ফিয়োদর পাভলোভিচ,  ফাদার সুপিরিয়রের খাবারের সময়ে ঢুকে পড়ে বিরাট তর্ক আরম্ভ করে , সংস্থার সমগ্র সংগঠনকে নিন্দা করে"।
     
    --- গোটা লেখাটাই খুব ভালো  লেগেছে। 
  • Sobuj Chatterjee | ১১ নভেম্বর ২০২২ ২৩:৫৩513722
  • ঋদ্ধ হলাম। দারুন লেখা! 
  • :|: | 174.25.***.*** | ১২ নভেম্বর ২০২২ ০৪:৪০513725
  • প্লিজ টাইটেলের দ্বন্দ্ব টাইপোটা ঠিক করে দিন। চোখে লাগছে। 
  • যোষিতা | ১২ নভেম্বর ২০২২ ২২:৪৭513731
  • আঁদ্রিভিচ নয়, আন্দ্রেইভিচ।
    এত ভুল দেখলে আসল লেখাটা পড়তে বড্ড হোঁচট খেতে হয়। রুশ ভাষায় চন্দ্রবিন্দু নেই মলয়বাবু।
  • যোষিতা | ১২ নভেম্বর ২০২২ ২২:৫৩513732
  • "মিখাইলের মৃত্যু যদিও রহস্যে ঢাকা, তাঁর ছেলে আঁদ্রের রচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে স্ত্রী মারিয়ার মৃত্যুর পর মিখাইলের স্বাস্থ্য ..." 
    একী?!
    মিখাইলের ছেলে কী করে আন্দ্রেই হয়? আন্দ্রেই তো মিখাইলের বাবা।
  • যোষিতা | ১২ নভেম্বর ২০২২ ২২:৫৯513733
  • এই লেখাটা কোনও একটা ইংরিজি লেখা থেকে অনুবাদ করা। অযত্নের অনুবাদ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন