নিপীড়ন অথবা ত্রাস : মলয় রায়চৌধুরী
ত্রাস ব্যাপারটা যে এখনই মানুষকে ভয়ের জগতে লুকোতে বাধ্য করেছে, তা কিন্তু নয়, যদিও দেশে-দেশে কিছু মানুষ অন্যান্য মানুষদের ত্রাসিত করার জন্য নানা ধরণের সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে, যা আমরা এখন মিডিয়ার কারণে জানতে পারছি, চোখের সামনে ঘটতে দেখছি, তাই মনে হতে পারে যে, এই কালখণ্ডের অবদান বুঝি ত্রাস । কেউটে বা গোখরো ফণা তুলে সামনে চলে এলে বা আফ্রিকায় সিংহের দল বুনো মোষের পালকে তাড়া করলে, বা চিতাবাঘ হরিণদের তাড়া করলে, বা হাঙর সিলমাছের পালকে তাড়া করলে, বা বাজপাখি পায়রাদের ঝাঁককে তাড়া করলে, সেই জীবদের দেহের রসায়নে একই প্রতিক্রিয়া হয় যা ত্রাসিত মানুষের দেহে ঘটে । চেঙ্গিজ খান, নাদির শাহ, আত্তিলা, প্রমুখেরা যে ত্রাসের কারবার করেছিলেন তা আমরা বিশেষ জানি না, ইতিহাসে সেসব পড়েও আমরা সেরকমভাবে চোখের সামনে ভেসে উঠতে দেখি না যেমনটা এখন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দেখে টের পাই । পৃথিবীতে জীবনের সূত্রপাতের সময় থেকেই জীবদেহে ত্রাসের জন্ম । ডারউইনকে কখনও সাপে কামড়ায়নি, কিন্তু প্রথমবার একটা সাপ দেখে তিনি অত্যন্ত ত্রাসিত বোধ করেছিলেন ।
ব্যাপারটা, জীব-অস্তিত্বের ভিত্তি, অপরিহার্য, মূলভূত এবং প্রতিক্রিয়াটা গভীরভাবে আমাদের শিরাতন্ত্রীতে বসবাস করে, অস্তিত্বের ইতিহাস থেকেই শুরু, যাতে প্রাণী তাৎক্ষণিকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে, যে, তার বেঁচে থাকার প্রতি চ্যালেঞ্জ জানানো হচ্ছে এবং তাকে যেকোনো উপায়ে আত্মরক্ষা করতে হবে । লজ্জাবতী-লতার নিজেকে গুটিয়ে নেবার মতন শামুকের শুঁড় ছুঁলেই তা নিজেকে গুটিয়ে নেবে, প্যাঙ্গিলোনকে ছুঁলেই গুটি মেরে নিজের চারিদেকের বর্ম দিয়ে ঘিরে ফেলবে, সজারুকে তাড়া করলে সারা দেহে কাঁটা মেলে ধরবে । মানুষের ক্ষেত্রে, উত্বেগ ও আতঙ্ক ঘটে, রাসায়নিক জটিলতা থাকলেও, বিভিন্ন ইন্দ্রিয় মস্তিষ্কে দ্রুত বার্তা পাঠায়, মস্তিষ্ক তৎক্ষণাত দেহের অন্যান্য অঞ্চলকে সতর্ক করে দ্যায় । একজন তরুণীকে অশোভনভাবে অচেনা পুরুষ যদি ছোঁয়, তার মনে তক্ষুনি ত্রাসের সঞ্চার হয় ।
ত্রাসের অভিজ্ঞতাকে পছন্দ বা অপছন্দ করলেও, মনোবিজ্ঞানিরা মনে করেন যে ত্রাসকে মানুষ নিশ্চিতভাবে শ্রদ্ধা করে । মানুষের মস্তিষ্কের তাৎক্ষণিক রসায়ন এবং ও মনঃসমীক্ষণের বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে রাসায়নিক বার্তা সে পায় তা হলো “লড়ো কিংবা পালাও”-- এটা তার পরাজয়বোধ থেকে আসে না, আসে তার আবেগস্হিতির কারণে । দেহের রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার ফলেই সে হাসে, উত্তেজিত হয়, আনন্দিত হয় । ত্রাসের অভিজ্ঞতা মাত্রেই নেগেটিভ মানসিকতা ভাবার কারণ নেই, কেননা বেঁচে থাকাটাই একজন মানুষের প্রধান উদ্দেশ্য । অবশ্য দেহের রসায়নের প্রতিক্রিয়ায় আচমকা মানসিক ঝলকানি ও ত্রাসের মুখে পড়ার মধ্যে পার্থক্য আছে । মনোবিদরা ত্রাসিতের চিকিৎসা করেন, বহু রোগি ভয়েতে ভোগে, তাদের চিকিৎসা করেন, মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন ডাক্তারি অনুসন্ধানের মাধ্যমে । ত্রাস যে ঘটে, তার একটা পৃষ্ঠভূমি থাকে, এমনকি যে রোগিরা নিজের মনেই ত্রাসিত বোধ করে এবং সাধারণ মানুষ তাকে পাগল বলে চালিয়ে দেয়, তারও কোনও কারণ নিশ্চয়ই থাকে । মস্তিষ্কের চিন্তাকে্দ্র যখন মস্তিষ্কের আবেগ কেন্দ্রকে বার্তা পাঠায় যে ভয় পাবার কারণ নেই তুমি সুরক্ষিত, তখন ত্রাসের স্হিতি থেকে আনন্দ বা উত্তেজনার স্হিতিতে দেহকে পাঠিয়ে দেয় মস্তিষ্ক---সে সময়ে লোকটা লড়ার বা পালাবার বদলে অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে চাইবে ।
শহরের কোনো ঘিঞ্জি পাড়ায় পথচারীকে কেউ যদি ফিসফিস করে বলে যায়, সন্ধ্যাবেলায় এই পাড়ায় এলেন কেন, এটা রেডলাইট এরিয়া, যত্তো গুণ্ডা-বদমায়েশদের আড্ডা, কখন ছিনতাই হবেন তার নিশ্চয়তা নেই ; ব্যাপারটা মিথ্যা হলেও শ্রোতার মস্তিষ্কের রসায়নে দ্রুত ক্রিয়া আরম্ভ হয়ে যাবে । যদি পথচারী বোঝেন যে লোকটা ঠাট্টা করছিল, তাহলে তাঁর মস্তিষ্কের রসায়নে আবার দ্রুত বদল ঘটবে । প্রথমে পথচারী ভেবেছিল পাড়াটা ছেড়ে দেদ্দৌড় দেবে, কিন্তু পরে সামলে নিলে, তা সত্বেও সে সাবধান থাকবে ।
ত্রাসের সূত্রপাত ঘটে মস্তিষ্কে এবং দেহে ছড়িয়ে পড়ে ; আমরা তাই শুনি লোকটা ভয়ে কাঁপছিল, বা ভয় পেয়ে সিঁটিয়ে গেল ইত্যাদি । আসলে মস্তিষ্ক বার্তা পাঠিয়ে জানিয়ে দেয় যে তৈরি হও, হয় আত্মরক্ষার পরিকল্পনা করো কিংবা কোন পথে তাড়াতাড়ি পালাতে পারবে তা আঁচ করে পালাও । মস্তিষ্কের যে অংশে ত্রাসের রসায়ন তেরি হয় তার নাম অ্যামিগদালা । কাগজি বাদামের মতন দেখতে এক প্রস্হ এই শাঁসের কাজ হলো অভিক্ষিপ্ত আবেগের উদ্দীপককে তাৎক্ষণিকভাবে চি্হ্ণিত করা -- কোনোকিছুর প্রতি প্রতিক্রিয়া কী হওয়া প্রয়োজন, তা জানানো । অনেকেই জানেন যে শৈলেশ্বর ঘোষ এবং সুভাষ ঘোষ যেদিন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, সেই দিনই পুলিশের ডেপুটি কমিশনারের হম্বিতম্বিতে ত্রাসিত বোধ করে তক্ষুনি আমার বিরুদ্ধে মুচলেকা লিখে দেন, রাজসাক্ষী হতে রাজি হন ও হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করার কথা লিপিবদ্ধ করেন ; তার কারণ তাঁরা এমন ত্রাসের সন্মুখীন হয়েছিলেন যে পালাবার পথ খুঁজে পাননি, সম্ভবত জীবনে অমন ত্রাসের মুখে পড়েননি কখনও । দেবী রায় কিন্তু গ্রেপ্তার হবার পর অমন মুচলেকা দেননি, তার কারণ তিনি হাওড়ার একটি বস্তিতে থাকতেন, কৈশোরে চায়ের দোকানে খদ্দেরদের চা দেবার কাজ করতেন, এবং বাজে লোকদের হম্বিতম্বির দরুন ত্রাসের সন্মুখীন হবার অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল ।
কেবল ত্রাসের ক্ষেত্রেই নয়, মানুষ যদি আরেকজন মানুষের মুখে এমন একটি আবেগের প্রতিফলন লক্ষ্য করে যা তার অপছন্দ, তাহলেও অ্যামিগদালা সক্রিয় হয়ে ওঠে । আক্রান্ত হবার ভয় থাকলে, অ্যামিগদালায় আসন্ন বিপদের লক্ষণের উদ্দীপক প্ররোচিত হয়, এবং সঙ্গে-সঙ্গে মানুষটিকে লড়বার জন্য বা পালাবার জন্য বার্তা পাঠিয়ে দেয় । সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসুও আমার বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, কেননা তাঁদের মস্তিষ্কের অ্যামিগদালা থেকে তাঁরা ব্যাপারটি থেকে নিষ্কৃতির পথ খুঁজেছিলেন । বস্তুত সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় একটি সাক্ষাৎকারে বলেওছিলেন যে তিনি পুলিশকে ভীষণ ভয় পান । লালবাজারের ডাকে তাঁদের স্ট্রেস হরমোন কাজ করা আরম্ভ করে দিয়েছিল । এই হরমোন ছড়িয়ে পড়ার দরুন দেহে যে প্রতিক্রিয়া ঘটে তা জীবকে আসন্ন বিপদের জন্য তৈরি করে দেয় । ফলে রোগা ডিগডিগে ছেলেও লড়বার জন্য তৈরি হয়ে যায়, জংলি মোষের মধ্যে থেকে একটা মোষ বেরিয়ে এসে সিংহের পালের সঙ্গে শিঙ উঁচিয়ে লড়তে ভিড়ে যায়, কখনও বা একটা সিংহকে শিঙে তুলে আছাড় মারে আবার কখনও সিংহের দল তাকে ঘিরে খেয়ে ফ্যালে । মস্তিষ্ক অতিসতর্ক হয়ে বিপদসংকেত পাঠিয়ে দেয় শরীরে । মানুষকে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে ত্রাসিত হবার কারণে তার হৃৎস্পন্দন ও রক্তচাপ বেড়ে যায়, চোখের তারা ডাইলেট হয় যেমন চোখের ডাক্তার অ্যাট্রোপিন দিয়ে বসিয়ে রাখলে হয়, শ্লেষ্মাও গলতে থাকে আর শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয়ে যায় । সে যাতে আত্মরক্ষা করতে পারে, হাড়ের সঙ্গে লেগে থাকা পেশীতে গ্লুকোজ বেড়ে যায় । তাৎক্ষণিক আত্মরক্ষার জন্য যা জরুরি নয়, যেমন পাকস্হলী আর অন্ত্র স্তিমিত হয়ে পড়ে । মস্তিষ্কের একটা অংশ, অর্থাৎ হিপোক্যামপাস, অ্যামিগদালার সঙ্গে লেপ্টে থাকে । হিপোক্যামপাস ও করটেক্সের সামনের অংশ মস্তিষ্ককে দ্রুত বুঝিয়ে দেয় যে বিপদটা কেমনতর, যুঝে নেয়া যাবে, জেতা যাবে, নাকি পালাতে হবে ।
সুন্দরবনে যাঁরা থাকেন তাঁরা বাঘের মুখোমুখি হলে যে ধরণের প্রতিক্রিয়া হয়, আলিপুর চিড়িয়াখানায় গিয়ে বাঘ দেখে তা হয় না । অথচ দুটি ক্ষেত্রেই বাঘ, একটি অবস্হা ত্রাসের সঞ্চার করে, আরেকটি করে না । চিড়িয়াখানায় গিয়ে হিপোক্যামপাস ও সামনের করটেক্স ভীতির বার্তা পাঠায় না দর্শককে । অনেকে কুকুর পোষেন, কিন্তু অনেকে আবার পোষা হোক বা রাস্তার, কুকুর দেখলেই ত্রাসিত হন । যাঁরা কুকুরকে ভয় পান তাঁরা প্রকৃতপক্ষে জলাতঙ্ক রোগ দ্বারা ত্রাসিত, তাঁরা ভাবেন কুকুরের কামড় মানেই জলাতঙ্ক । অনেক কুকুর আছে যেগুলোর মুখে টুপি পরানো থাকে কেননা তাদের তার মালিকও সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না । যাদের বাড়িতে কুকুর থাকে, এবং ঢোকার মুখেই ঘেউ-ঘেউ শোনা যায়, তাদের বাড়িতে ঢুকতে ভয় করবে, তার কারণ কুকুরটা বা কুকুরগুলো আগন্তুকের জন্য আসন্ন বিপদ, অথচ কুকুরের মালিকের জন্য তা নয় । তাই প্রবেশপথে সতর্কবার্তা ‘কুকুর হইতে সাবধান’ । মস্তিষ্কও ওই একই বার্তা পাঠায়, ‘সাবধানের মার নেই’ ।ত্রাস মানুষকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে তোলে, বিহ্বল করে তোলে, মনকে বিক্ষিপ্ত করে । মস্তিষ্ক তা ভালোর জন্যই করে । ত্রাসের সন্মুখীন হয়ে , সেই মুহূর্তে, লোকটা যা ভাবছিল, যে চিন্তায় আক্রান্ত ছিল, অফিসে গোলমাল, প্রেমিকা অন্যের সঙ্গে চলে গেছে, এমনকি যদি সেই সময়ে হাগাও পেয়ে থাকে, ত্রাসের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানো জরুরি হয়ে ওঠে, ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’ । ত্রাস মানুষকে এখন, এক্ষুনি, এই মুহূর্তে এনে দাঁড় করায় । ত্রাসের সামনে কেবল একাকী মানুষ পড়ে না, মোষের দল যেমন সিংহের দলের সামনে পড়ে যেতে পারে, একইভাবে একটি পরিবার ডাকাতদলের সামনে পড়ে যেতে পারে, একটি সম্প্রদায় আরেকটি মারমুখি দাঙ্গাবাজ সম্প্রদায়ের মুখে পড়ে যেতে পারে । সবায়ের মস্তিষ্কে ত্রাসের সৃষ্টি হয় । মানুষ সামাজিক প্রাণী, একে আরেকের কাছ থেকে শেখে, আরেকের অভিজ্ঞতার বয়ান থেকে শেখে ।
সামাজিকভাবে অন্যের জীবন থেকে শেখা, বিক্ষিপ্তচিত্ত হওয়া, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হওয়া, ঘটনাপ্রসঙ্গ -- এই উপাদানগুলোর ক্ষমতা আছে ত্রাসের অভিজ্ঞতাকে অন্যান্য মানুষদের মধ্যে চারিয়ে দেবার, এবং তাদের মধ্যে যে ব্যাপারটি পারস্পরিক সংযোগ ঘটায় তা হলো নিয়ন্ত্রণ । মানুষ যখন বুঝতে পারে যে কোনটা ত্রাস আর কোনটা ত্রাস ঘটাবে না, অর্থাৎ ত্রাসটা বাস্তব না কল্পিত, তখন সে স্হিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে । নিয়ন্ত্রণ করার অবস্হান খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেমন দাঙ্গার সময়ে একটি সম্প্রদায় এককাট্টা হয়ে মোকাবিলার প্রয়াস করে বা সবাই মিলে দাঙ্গাকে এড়াবার জন্য পালাবার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করে । ‘লড়াই করো কিংবা পালাও, এই দ্বৈততা থেকে মুক্তি পাবার পর, মানুষ একা বা দলবেঁধে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে । অর্থাৎ নিজেকে বা নিজেদের নিয়ন্ত্রণের অবস্হানে পৌঁছোয় ।
কলকাতা দাঙ্গা বা প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস (ইংরেজি: The Great Calcutta Killing বা Direct Action Day [) ছিল ১৯৪৬ সালের ১৬ অগস্ট তদনীন্তন ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশের রাজধানী কলকাতায় সংঘটিত একটি বহুবিস্তৃত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও নরহত্যার ঘটনা। এই দিনটিই ছিল "দীর্ঘ ছুরিকার সপ্তাহ" ("The Week of the Long Knives") নামে পরিচিত কুখ্যাত সপ্তাহকালের প্রথম দিন। ১৯৪০-এর দশকে ভারতের গণপরিষদের দুটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ছিল মুসলিম লিগ ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। ১৯৪৬ সালে ক্যাবিনেট মিশন ভারতীয় নেতৃবর্গের হাতে ব্রিটিশ ভারতের শাসনভার তুলে দেওয়ার প্রস্তাব রাখে। এই প্রস্তাবে একটি নতুন ভারত অধিরাজ্য ও তার সরকার গঠনেরও প্রস্তাব জানানো হয়। এর অব্যবহিত পরে, একটি বিকল্প প্রস্তাবে হিন্দুপ্রধান ভারত ও মুসলমানপ্রধান পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কংগ্রেস বিকল্প প্রস্তাবটি সম্পূর্ণত প্রত্যাখ্যান করে। এই প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে এবং একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে মুসলিম লিগ ১৯৪৬ সালের ১৬ অগস্ট একটি সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। এই প্রতিবাদ আন্দোলন থেকেই কলকাতায় এক ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্ম হয়। ] মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শহরে চার হাজারেরও বেশি সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান ও এক লক্ষ বাসিন্দা গৃহহারা হন। কলকাতার দেখাদেখি দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে নোয়াখালী, বিহার, যুক্তপ্রদেশ (অধুনা উত্তরপ্রদেশ) পাঞ্জাব ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশেও। তবে সর্বাপেক্ষা ভীতিপ্রদ দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছিল কলকাতা আর নোয়াখালীতে । এই ঘটনাই ভারত বিভাগের এবং দুই দেশে ( এখন তিনটি দেশ ) কৌমত্রাসের বীজ পুঁতেছিল ।
বাবরি মসজিদ ভাঙার আর গুজরাট দাঙ্গার পর ভারতীয় মুসলমানদের মনে ত্রাস বাসা বেঁধে ফেলেছে । তারপর দাউদ ইব্রাহিমের দল আর পাকিস্তানি মুজাহিদিনরা মুম্বাইতে বোমা ফাটিয়ে আর গুলি চালিয়ে বহু মানুষকে খুন করার পর রাস্তায়, স্টেশনে, এয়ারপোর্টে কোনো বাক্স বা প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখলেও জনসাধারণ ত্রাসিত বোধ করে আর সেখান থেকে পালায় । লোকমুখে পাকিস্তানের ঘটনাবলী শুনে আঁচ করতে পারি যে সেখানকার সাধারণ হিন্দু আর শিখদের মনেও ত্রাস বাসা বেঁধে ফেলেছে ।
ভারত ভাগকে উপলক্ষ্য করে হিন্দু ও মুসলমানদের মাঝে ত্রাসের মধ্যমে যে বিভাজন গড়ে তুলেছিল ব্রিটিশ সরকার, তা থেকে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ আজও বেরিয়ে আসতে পারেনি, কখনও পারবে বলে মনে হয় না । যখন-তখন দাঙ্গা বেধে যায় । দেশভাগের সময়ে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হয়েছিল নোয়াখালির দাঙ্গা এবং তার প্রতিশোধ হিসাবে বিহারের দাঙ্গা । দাঙ্গা মাত্রেই সাম্প্রদায়িক কৌমত্রাস । নোয়াখালীর হিন্দুদের উপর গণহত্যা শুরু হয়েছিল ১৯৪৬ সালের ১০ অক্টোবর কোজাগরি লক্ষ্মী পূজার দিন এবং প্রায় চার সপ্তাহ ধরে অব্যাহত ছিল। এতে প্রায় কমপক্ষে ৫০,০০০ হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়।] এছাড়া অনেক হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার হন এবং হাজার হাজার হিন্দু নারী-পুরুষদের জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়।[ প্রায় ৫,০০০ থেকে ৭,৫০০ বেঁচে পালানো হিন্দু পরিবারকে কুমিল্লা, চাঁদপুর, আগরতলা ও অন্যান্য জায়গার অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরগুলোতে আশ্রয় দেয়া হয়। এছাড়া প্রায় ৫০,০০০ হিন্দু আক্রান্ত এলাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে। কিছু এলাকায় হিন্দুদেরকে স্থানীয় মুসলিম নেতাদের অনুমতি নিয়ে চলা ফেরা করতে হত। জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিতদের কাছ থেকে বয়ান আদায় করা হয়েছিল যেখানে লেখা ছিল তারা স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছে। তাদের একটি নির্দিষ্ট বাড়িতে বা ঘরে বন্ধ করে রাখা হত এবং যখন কোন আনুষ্ঠানিক পরিদর্শক দল পরিদর্শনে আসত তখন তাদের ওই নির্দিষ্ট বাড়িতে যাবার অনুমতি দেয়া হত। হিন্দুদের ওই সময় মুসলিম লীগকে চাঁদা দিতে হত যাকে বলা হত জিজিয়া । উল্লেখ্য যে একসময় ভারতবর্ষে মুসলিম শাসন আমলে হিন্দুরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য তৎকালিন শাসকদের জিজিয়া নামের বাড়তি কর দিত ।
১৯৪৬ সালের নোয়াখালীর দাঙ্গার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিহারে দাঙ্গা আরম্ভ হয়। ৩০ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বরের মধ্যে সংগঠিত বিহার দাঙ্গার ফলে ভারত বিভাজন ত্বরান্বিত হয়। ২৫ থেকে ২৮ অক্টোবরের মধ্যে বিহারের ছাপরা এবং শরণ জেলায় দাঙ্গা ছড়িয়ে পরে। তারপর, পাটনা, মুঙ্গের, ভাগলপুরে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সরকারের পক্ষে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিত স্বাভাবিক রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে ওঠে এবং ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাজন অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। পরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট দাঙ্গার নারকীয়তা-বীভৎসতা দেখে গান্ধী-নেহেরু তথা কংগ্রেস নেতৃত্ব জিন্নাহের নেতৃত্বে থাকা মুসলিম লীগের ভারত ভাগের দাবী মেনে নেন।] ফলে ভারত বিভাগের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান নামে নতুন দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় আর সেই যে দুই সম্প্রদায়ের মাঝে বিভাজনরেখা তৈরি হল তা আর মুছে যাবার লক্ষণ দেখা যায় না । ভারতীয় মুসলমানরা ত্রাস থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার জন্য শহরের বিশেষ পাড়ায় বসবাসের এলাকা তৈরি করা সুরক্ষিত থাকার চেষ্টা করেন, অনেকটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রো-আমেরিকনদের Ghetto-র মতন । Ghetto শব্দটা এসেছে ইউরোপে ইহুদিদের পাড়া থেকে।
খানসেনার আক্রমণ থেকে পালাবার জন্য অখণ্ড পাকিস্তানের বহু বাঙালি পরিবার ভারতে পালিয়ে এসেছিলেন, দল বেঁধে, নিজেদের ত্রাসমুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে, না খেতে পেয়ে, এক কাপড়ে, চলে এসেছিলেন । পালিয়ে এসে, অভুক্ত থেকেও তাঁরা সন্তুষ্ট ছিলেন । আবার কিছু যুবক মুক্তিবাহিনী গঠন করে খানসেনাদের বিরুদ্ধে লড়ে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন, তাদের হত্যা করে বদলা নেবার আনন্দের স্হিতি তৈরি করতে পেরেছিলেন । মনে রাখা দরকার যে প্রত্যেকটা মানুষই একে আরেকের থেকে আলাদা, তাই খানসেনাদের উৎখাত করার মুক্তিবাহিনীতে যুবকমাত্রেই যোগ দেননি, কেউবা ত্রাসের কারণে আবার কেউবা অখণ্ড পাকিস্তানের সমর্থক ছিল বলে । যে পরিবারগুলো থেকে গিয়েছিল এবং খানসেনাদের দ্বারা ধর্ষণ, ধর্মবদল, হত্যা ইত্যাদি ত্রাসের মুখে পড়েছিলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টি হবার পর অনেকের, বিশেষ করে নারীরা, আক্রান্ত হয়েছিলেন পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার বা পিটিএসডি রোগে ; তাঁদের মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, দেহে-মনে অকথ্য অত্যাচারের কারণে । তাঁরা ত্রাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি । ভিয়েৎনাম, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া ইত্যাদি দেশে যে মার্কিন সেনারা যুদ্ধ করতে গিয়েছিল, তারা, তাদের অস্ত্রশস্ত্রের অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতা সত্বেও, সেসব দেশের গেরিলাদের আক্রমণ বা আক্রমণের ভয়ে, ত্রাসের দরুন, পিটিএসডিতে ভুগেছে।
হত্যাকারীরা নিজেরা যাতে ত্রাসমুক্ত থাকে, যে হত্যাকারীদের বলা হতো হাশাশিন, এবং যা থেকে ইংরেজি অ্যাসাসিন শব্দের উৎপত্তি, সেই হাশিশিনরা ছিল নিজারি ইসমাইলি মতবাদের একটি গোষ্ঠী। বিশেষ করে ইরান ও সিরিয়ায় তারা তাদের কর্মকাণ্ড চালাত। ১১ শতকে এই গোষ্ঠীর জন্ম হয়। সেসময় তারা সুন্নি সেলজুক সাম্রাজ্যের জন্য মারাত্মক খুনখারাপি আরম্ভ করেছিল। হাসান সাবাহ নামে একজন তাদের নেতৃত্ব দেন। তারা আলামুত নামের পাহাযি দুর্গ দখল করতে পেরেছিল । এটি ছিল তাদের সদরদপ্তর । মার্কো পোলোর বিবরণ থেকে জানা যায় , তাঁর দরবারে ১২ থেকে ২০ বছর বয়সের কয়েকজন যুবককে তিনি রেখেছিলেন হাশিশিন হিসেবে গড়ে তুলতেন । প্রথমে তাদের আফিমের পানীয় খাওয়াতেন যাতে তারা নির্দেশ পালন করতে অসুবিধা সৃষ্টি না করে । তাদের পাঠানো হতো হত্যা করার জন্য এবং বোঝানো হতো যে, যখন তুমি ফিরে আসবে দেবদূতরা তোমাকে স্বর্গে নিয়ে যাবে।আর যদি তোমার মৃত্যুও ঘটে তা স্বত্ত্বেও আমি তোমার দেহ বহন করে স্বর্গে দিয়ে আসার জন্য ফেরেস্তাদের পাঠাব। বিভিন্ন শাসক সেনাপতিকে এই গুপ্তঘাতকরা হত্যা শুরু করলে তখনকার বিশ্বে একটি আতঙ্ক সৃস্টি হয়েছিল। কোনও শাসকও পরাজিত করতে পারছিল না । পরে হালাকু খান ওদের ধ্বংস করেন । বর্তমান কালখণ্ডেও ত্রাস সৃষ্টির সময়ে হত্যাকারী যাতে আত্মগ্লানিতে না ভোগে, তা সে যুদ্ধবাহিনীর সৈন্যরা হোক বা গণহত্যার সন্ত্রাসবাদী, তাদেরও বিশ্বাসের ফাটলে বক্তৃতার বা আফিমের মাদক ঢুকিয়ে দেয়া হয় ।
সবচেয়ে বেশি আফিম হয় আফগানিস্তানে, যদিও ইসলাম ধর্মে মাদক নিষিদ্ধ । সোভিয়েত সেনারা আফগানিস্তানে ঢুকে পড়ার পর আমেরিকা পাকিস্তানের সামরিক আর অসামরিক যুবকদের হাশিশিন বানিয়ে পাঠিয়েছিল আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সেনাদের তাড়াবার উদ্দেশে ; শেষ পর্যন্ত তারা সফল হয়েছিল বটে কিন্তু তাদেরও মাদকের নেশা ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল যাতে নির্বিচারে হত্যা করতে পারে ; আফগানিস্তানের যুবকরা বেরোতে পারেনি অমন নেশার আনন্দধারা থেকে । পাঞ্জাবে খালিস্তান আন্দোলনের সময়ে দুই পক্ষেই আফিম-চরসের নেশা ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল যুবকদের মধ্যে যাতে হত্যা করার সময়ে তাদের পাপবোধ না হয় । সেই নেশার ফাঁদ থেকে বেরোতে পারেনি পাঞ্জাবের যুবকেরা, বরং মাদক নেবার আগ্রহ বেড়েই চলেছে । আন্দোলনের সময়ে যারা যুবক ছিল তারা এখন বুড়ো, কিন্তু নেশা ছাড়তে পারেনি । আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তান হয়ে পাঞ্জাবে পৌঁছোয় আফিম আর চরস ।
ত্রাসকে শাসকেরা মানব সভ্যতার প্রথম থেকেই গণনিয়ন্ত্রণের বা গণহত্যা বা বিতাড়িত করার জন্য প্রয়োগ করেছে । ফ্যারাওরা আদি ইহুদিদের তাড়িয়েছিলেন ত্রাস সৃষ্টি করে ; ইহুদিরাও প্রথম সুযোগেই পালিয়ে চলে গিয়েছিল । হিটলারের জার্মানি ইহুদিদের নিশ্চি্হ্ণ করার জন্য অনেক ব্যবস্হা করেছিল, ধরে-ধরে গরুমোষের মতন ট্রেন ভরে তাদের পাঠিয়েছিল বিষের ধোঁয়ায় মারার জন্য, যে কারণে ইহুদিমাত্রেই ত্রাসিত ছিলেন, এবং জার্মানি ছেড়ে পালাবার সুযোগ খুঁজতেন । রাশিয়ায় স্তালিনও ইহুদিদের তাড়াবার ব্যবস্হা করেছিলেন, যার দরুন বহু ইহুদি পরিবার ইউরোপে কিংবা প্যালেসটাইনে চলে গিয়েছিল ; সেই প্যালেসটাইনকে দখল করে ইহুদিরা নিজেদের রাষ্ট্র ইজরায়েল স্হাপন করল । এখন প্যালেসটাইনের মুসলমানরা আকাশে ইহুদি প্লেন দেখলেই ত্রাসিত হয়, কেননা বহুকাল যাবত আক্রান্ত হবার দরুন তারা জেনে ফেলেছে যে বোমার ঘায়ে মরতে হবে, তাই হয় লড়ো নয় পালাও ।
ত্রাসকে শাসকরা বিভাজনের উদ্দেশ্যেও প্রয়োগ করেছে, দুই দলের মধ্যে বা দুই কৌমের মধ্যে বা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে । যুগোসলাভিয়া যখন ভেঙে কয়েকটা টুকরো হয়ে গেল তখন যারা দেশটা ভাঙার আগে শাসন করত তারা ক্রিস্টধর্মী আর মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য ত্রাসকে প্রয়োগ করেছিল, ফলে জোড়া লাগার বদলে ফাটল আরও বেড়ে গিয়ে প্রতিটি কৌম নিজের আলাদা দেশ গড়ে নিয়েছে । বিভাজনের উদাহরণ হলো ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, লেবানন এমনকি পাকিস্তান । এই বিভাজনগুলোর আগে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাধারণ মানুষ জানতো না যে ইসলামে বিভাজন এরকম ভয়ংকর চেহারা নেবে । সুন্নিপ্রধান অঞ্চলে শিয়াদের হত্যা করা হচ্ছে, শিয়াপ্রধান অঞ্চলে সুন্নিদের হত্যা করা হচ্ছে । সবচেয়ে বেশি ত্রাসিত সবপক্ষের নারীরা, যাদের যৌনদাসী করে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, মধ্যযুগের মতন নিলামে বেচে দেয়া হচ্ছে, যুবক যোদ্ধাদের ধরে রাখার জন্য তাদের যৌনসঙ্গী হতে বাধ্য করা হচ্ছে ।
আফ্রিকার অধিকাংশ দেশ ছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশের উপনিবেশ । দেশগুলোকে স্বাধীনতা দেবার পরও তাদের ঘরোয়া ব্যাপারে নাক গলাতে এবং জাত-গোষ্ঠীদের মধ্যে খুনোখুনি বাধাতে কসুর করেনি ইউরোপ। দুটি ট্রাইবের মাঝে ত্রাসের সৃষ্টি করে লড়িয়ে দেবার সবচেয়ে হাল আমলের ঘটনা হল টাটসি আর হুটুদের মধ্যে বিভাজন ঘটিয়ে দেবার খেলা, যাতে মূলত অংশ নিয়েছিল ফ্রান্স আর বেলজিয়াম । আমেরিকা অংশ নিয়েছিল তাদের অস্ত্রশস্ত্র দুই পক্ষকেই বিক্রির উদ্দেশ্যে । রুয়ান্ডার গণহত্যা বলতে ১৯৯৪ সালে সেদেশের সংখ্যালঘু টাট্সি গোষ্ঠীর মানুষ এবং সংখ্যাগুরু হুটু গোষ্ঠীর মধ্যে উদার ও মধ্যপন্থীদের নির্বিচারে হত্যার ঘটনাকে বোঝায়। অন্তত ৫০০,০০০ টাট্সি এবং এক হাজারেরও বেশি হুটু নিহত হয়। অধিকাংশ সূত্রমতে মোট নিহতের সংখ্যা ৮০০,০০০ এর কাছাকাছি বা ১,০০০,০০০ এর কাছাকাছি। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা নানান খবরের ভিড়ে এই গণহত্যার সংবাদ আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে খুব কমই স্থান পেয়েছিল। এই সুযোগেই গণহত্যা বিভৎস রূপ ধারণ করেছিল, জীবন্ত মানুষের হাত-পা কেটে, নারীদের ধর্ষণ করে, বালকসেনার দল দিয়ে যথেচ্ছ খুন করিয়ে, ত্রাসের যে রাজত্ব চলেছিল তার কোনো তুলনা উত্তরঔপনিবেশিক আফ্রিকায় নেই । অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছিল হুটু সরকার ও নির্বাসনে দণ্ডিত টাট্সিদের মধ্যে সংঘটিত গৃহযুদ্ধ। সেই যুদ্ধে হুটুদের সহায়তা করেছিল ফ্রান্স ও আফ্রিকার কিছু ফ্রাংকোফোন রাষ্ট্র। আর টাট্সিদের সহায়তা করেছিল উগান্ডা।
আবার গৃহযুদ্ধের সূচনা এবং টাট্সি বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য হুটুদেরকে ফ্রান্স সরকারের সহযোগিতার কারণে গণহত্যা বিকট রূপ ধারণ করে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল না। ফলশ্রুতিতে হুটুরা নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। যুদ্ধ প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ফ্রান্সের সহায়তায় একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় হুটু শরণার্থীরা দক্ষিণ-পশ্চিমে পালাতে শুরু করে। টাট্সিরা এদের তাড়া করে। ফরাসি অভিযান শেষ হওয়ার পর এই হুটুরা সীমান্ত পেরিয়ে জায়ারে (বর্তমান গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র) আশ্রয় নেয়। এই শরণার্থীদের সাথে গণহত্যায় অংশগ্রহণকারী অনেকেও ছিল যারা উগান্ডা সীমান্তে বসবাস করছিল। এদের কারণেই পরবর্তীকালে প্রথম ও দ্বিতীয় কঙ্গো যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ এবং তাদের সাথে সরকারের সংঘর্ষ এখনও চলছে। জাতিসংঘ এই হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অনিচ্ছুক ছিল। কর্মকর্তা ছিল না। একসময় রুয়ান্ডা থেকে সব ইউরোপীয় ও মার্কিন লোকদেরকে সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু সেখানকার অধিবাসীদের রক্ষার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম ও ফ্রান্স সরকারকে এ কারণে এখনও সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়।
ভারতে জাতিপ্রথা নিম্নবর্ণের জীবনে ত্রাসের সবচেয়ে বড়ো কারণ যা আমরা সংবাদপত্র খুললেই প্রতিদিন পড়ি। নিম্নবর্ণের কেউ সবর্ণ পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করলে তাদের দুজনকেই অথবা ছেলেটিকে হত্যা করা হচ্ছে। পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলেও নিস্তার পাচ্ছে না তারা । নিজের আদিনিবাস গ্রাম বা শহর থেকে অচেনা জায়গয় গিয়ে সংসার বাঁধলেও তারা ত্রাসিত জীবন কাটায়, কখন তাদের আত্মীয়রা জেনে ফেলবে আর খুনিবাহিনী পাঠাবে নিকেশ করার জন্য । বিয়ের সময়ে নিম্নবর্ণের বরকে ঘোড়ায় চেপে বিয়ে করতে যাবার অনুমতি দেয় না সবর্ণরা, এমনকি জাঠরাও অনুমতি দেয় না, যখন কিনা জাঠরা ওবিসি বর্গের । মহারাষ্ট্রে মারাঠারা নিম্নবর্গের বিয়েতে নিমন্ত্রিত হলেও যায় না । উত্তরভারতে মুসলমান আর হিন্দুর মাঝে বিভাজন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিয়ে করার অনুমতি পাত্র-পাত্র বাড়ির সদস্যদের কাছে পায় না ; চুপচাপ বিয়ে করে নিলেও ত্রাসিত জীবন কাটাতে হয়, কেননা ইতিমধ্যে বেশ কিছু দম্পতি তাদের বাড়ির সদস্যদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারা পড়েছে। বস্তুত প্রেম ব্যাপারটাই যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে ত্রাসের উৎস ।
প্রথম ফরাসি বিপ্লবের সময়ে, সঠিকভাবে বলতে গেলে ৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ সাল থেকে যে ঘটনাবলী আরম্ভ হয়, এবং জুলাই ১৭৯৩ সালে শেষ হয়, তাকে ‘ত্রাসের রাজত্ব’ হিসেবে চি্হ্ণিত করেছেন ইতিহাস-লেখকরা । এই কালখণ্ডে ১৬,৫৯৪ মানুষের মাথা গিলোটিনে ধড় থেকে আলাদা করা হয়েছিল, যার মধ্যে খোদ প্যারিসে ২৬৯৩ জনকে গিলোটিনে চাপানো হয়েছিল । এই বিপ্লবের নেতা ছিলেন ম্যাক্সিমিলিয়েন দ্য রোবসপিয়ের, জঁ-জাক রুসোর অনুরাগী, জ্যাকোবিন সন্ত্রাসবাদের নেতা। তিনি শত্রু ছিলেন পোপ আর ক্যাথলিক চার্চের, কিন্তু 'অভিজাতদের নাস্তিকতা' তাঁর চোখে সন্দেহজনক ছিল, তাই তিনি বিশ্বাস করতেন ধর্মমুক্ত র্যাডিকাল মানবতাবাদী একেশ্বরবাদে এবং মনে করতেন জাত-বর্ণ-গোত্র-লিঙ্গ নির্বিশেষে সব মানুষ ঈশ্বরের সৃষ্টি হিসেবে সমান। তিনি বলেছিলেন যে শাসনের সাফল্যের জন্য ত্রাস অত্যন্ত জরুরি, কেননা ত্রাস নিয়ে আসে দ্রুত সুবিচার, অতএব ত্রাস হলো মানবকল্যাণের উপায় । ইতিহাসের ঘটনা বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন যে সেই কালখণ্ডে, ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে ত্রাস প্রয়োজন ছিল । ধর্মের যে কাঠামো ছিল তা ভেঙে পড়ে আর ধর্ম সম্পর্কে যে বিধিনিষেধগুলো ছিল তাও দুর্বল হয়ে যায় ত্রাসের রাজত্বে । শেষে অবশ্য রোবেসপিয়ার নিজেই ত্রাসের মুখে পড়েন যখন তাঁর মাথা আর ধড় গিলোটিনে দুটুকরো করা হয় ।
ফরাসি বিপ্লবের পর ভাবুক-দার্শনিক-রাজনীতিকরা ত্রাস ও সন্ত্রাসকে রাজনৈতিক পরিপবর্তনের উপায় হিসেবে প্রবোগ করা নিয়ে বিতর্ক আরম্ভ করেছিলেন, বিশেষ করে এডমাণ্ড বার্ক এবং ইম্যানুয়েল কান্ট । বার্ক যুক্তি দেন যে ফরাসি বিপ্লব বিপর্যয়করভাবে শেষ হবে কারণ তার বিমূর্ত ভিত্তিগুলি যুক্তিসঙ্গত নয় ; ত্রাস-নির্ভর সমাজবিপ্লব মানবপ্রকৃতি এবং সমাজের জটিলতাগুলোকে উপেক্ষা করে। তিনি একটি পুস্তিকা ১৭৯ সালে প্রকাশ করে লেখেন যে, মানুষের খাবার আর ওষুধের ব্যাপারে কোনও লোকের সঠিক অধিকার নিয়ে আলোচনা করার কী প্রয়োজন ? প্রশ্নটা হলো সেগুলো সংগ্রহ করা আর বিতরণ সম্পর্কিত । এই আলোচনায় আমি সর্বদা অধ্যাপকদের চাষি আর ডাক্তারদের পরামর্শ নেবো । সেন্ট অগাস্টিন এবং সিসেরোর অনুসরণে, বার্ক বলেছিলেন, তিনি "মানব হৃদয়" -ভিত্তিক সরকারে বিশ্বাস করেন। বার্ক বলেন যে সমাজকে জীবন্ত প্রাণীর মতো পরিচালনা করা উচিত, যাতে মানুষ ও সমাজ সীমাহীনভাবে সংযুক্ত হয় ।
উদ্দেশ্যমূলক ত্রাস, যা থেকে সন্ত্রাসবাদ নামের মতবাদ, তা প্রকৃতপক্ষে ঠিক কি? আধুনিক সাংবাদিকরা মনে করেন, এই ব্যাপারে তিনটি জিনিস প্রয়োজন: প্রথম, রাষ্ট্রের অংশ নয় এমন লোকজন ; দ্বিতীয়, একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা, এবং তৃতীয় নির্দোষ মানুষদের ইচ্ছাকৃত হত্যা। প্রশ্ন হল ত্রাস সৃষ্টিকারী মতবাদ থেকে পয়দা হওয়া সন্ত্রাসবাদে বেসামরিক মৃত্যু কিভাবে সামরিক খুনোখুনি থেকে ভিন্ন, ? যুদ্ধ বলে? হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেনিয়ার অ্যালান ডারশোভিট প্রশ্ন তুলেছেন যে, সন্ত্রাসবাদ কি নৈতিকভাবে ন্যায্য? ডারশোভিট মনে করেন রাষ্ট্র দ্বারা সূত্রপাত ঘটানো যুদ্ধ সন্ত্রাসবাদ হিসাবে নৈতিক স্তরে খারাপ নয়।
সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে চিন্তা করার জন্য কি এডমাণ্ড বার্ক, ইম্যানুয়েল কান্ট, নিৎশে প্রমুখের মতন কি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গী প্রয়োজন ? ডারশোভিট বলেছেন যে তিনি নৈতিক বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার জন্য একক নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি চান না। নির্যাতনকে কি ন্যায্য বলে মনে করা হবে যদি আপনি সন্দেহভাজনের মস্তিষ্কে ত্রাসের মাধ্যমে অত্যাচার চালিয়ে টাইম বোমা পেতে পারেন? রাষ্ট্র-পৃষ্ঠপোষকতায় পুষ্ট ত্রাস কি সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত? ডারশোভিট মনে করেন যে এটি উচিত, কারণ ফরাসি বিপ্লবের পর সন্ত্রাসবাদ ঐতিহাসিকভাবে রাষ্ট্র-পৃষ্ঠপোষক । এখন গোষ্ঠীগুলোকে স্পনসর ছাড়াই একটি রাষ্ট্র দ্বারা শিক্ষিত করে তোলা হয়, তৈরি করে পাঠানো হয়, এবং তারা নিজেদের সংগঠিত করার জন্য নতুন যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে । "সন্ত্রাসী" কেবল "নেতিবাচক যোদ্ধা" কিনা তা প্রশ্নসাপেক্ষ ?
রাজনীতিতে ত্রাস বা রাজনৈতিক ত্রাস নিয়ে পৃথিবী জুড়ে তাত্ত্বিক আলোচনা হয়ে চলেছে । রাজনৈতিক ত্রাসের পক্ষে যুক্তিও দেয়া হয়েছে । জার্মান রাজনৈতিক তাত্ত্বিক হানাহ আরেন্ড তাঁর অন ভায়োলেন্স (১৯৭০) বইয়ে রাজনৈতিক ত্রাস সৃষ্টির পক্ষে যুক্তি হিসেবে দুটি পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন। প্রথমত, চরম অন্যায্য আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এবং দ্বিতীয়ত, ত্রাস সৃষ্টি সেই মাত্রা পর্যন্ত যৌক্তিক, যা একটি রাজনীতির পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। ত্রাস সৃষ্টি কাজে দেয়—এই ধারণা যদি কেউ মেনে নেন, তাহলে এই পরিস্থিতি দুটিকে বিবেচনা করা প্রয়োজন ।
ত্রাস যে ঘটাচ্ছে এবং সন্ত্রাসবাদ দুটি দিক থেকে দেখা যেতে পারে । এমন ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যেতে পারে যে এটি প্রয়োগ করে কিংবা যার বা যাদের ওপরে প্রয়োগ করা হয় তার বা তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে। হেগেলের মতে, মাস্টার-স্লেভ সম্পর্ক দুটি পরস্পরবিরোধী ভূমিকায় অদল-বদল করার সম্ভাবনা সবসময় বিদ্যমান। আধিপত্যের সৃষ্টি করা ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদ, আধিপত্য বিস্তারের ফলে গোষ্ঠীদের বা সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ককে পরিবর্তন করে। হেগেল সামাজিক ও মানসিক জটিলতার সাথে দ্বান্দ্বিক বিনিময় হিসাবে এটি দেখেছেন। রাষ্ট্রের যন্ত্র হিসাবে ত্রাস সৃষ্টিকারী শক্তি উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত । এখানে রাষ্ট্রের সেবায় সন্ত্রাস প্রয়োগ করা হচ্ছে ! বর্তমান কালখণ্ডে সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদ এমন কিছু রাজনৈতিক প্রয়াসকে সফল করার জন্য পয়োগ হয় যা হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি হিংস্রতার পণ্য, কোটি-কোটি টাকার লেনদেনের ব্যাপার, যা মানবিক ও নৈতিক বিশ্বাসের নামে জীবনকে ধ্বংস করে । লক্ষ্য অর্জনের জন্য সেনা-বাহিনী, রাজনৈতিক ও ধর্মিক নেতারা ত্রাস সৃষ্টির হিংস্রতার পদ্ধতিগুলিকে ব্যবহার করেন যাতে কৌমত্রাস জাগিয়ে সবাইকে ভীত করে তোলা যায় । ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে নির্মম এবং মানবিক নৈতিকতার বিরুদ্ধে ।
ভারত সরকার, সন্ত্রাসবাদের নিম্নলিখিত সংজ্ঞা ব্যবহার করে যা বেশীর ভাগ দেশেও ব্যবহৃত হয় এবং যার খসড়া জাতিসংঘ-এ ১৯৮৮ সালে সিমিড ও জঙ্গম্যান (Schmid & Jongman) বানিয়েছিলেন:- "সন্ত্রাসবাদ হল এমন এক উদ্বেগ-তাড়িত হিংস্র বর্বর পন্থা যার উদ্দেশ্য হল ছদ্মগোপনে থেকে, ব্যাক্তিগত ভাবে, বা দলগত ভাবে বা সন্মিলিত ভাবে, কোনো স্বৈরাচারী ব্যাক্তির জন্য বা অপরাধমুলক কার্যসিদ্ধির জন্য বা রাজনৈতিক কারনের জন্য সরাসরি প্রধান উদ্দেশ্য ব্যাতিরেকে ত্রাস ছড়ানো। সাধারনতঃ নিজের বা নিজেদের কোনো উদ্দেশ্য প্রকাশের জন্য যথেচ্ছভাবে ( সুযোগ বুঝে) বা বেছে-বেছে ( বার্তা পাঠাবার জন্য ) একটি জনসমূহকে বেছে নেওয়া হয়৷ সন্ত্রাসবাদীদের পক্ষ থেকে হুমকি, বলপ্রয়োগ বা স্ব-প্রচারের উদ্দেশ্যে ভয় এবং ত্রাস-মেশানো এমন এক সংবাদ পাঠানোর চেষ্টা চলে যাতে তাদের মূল উদ্দেশ্যকে (নাগরিক সমাজ) তাদের (সন্ত্রাসবাদীদের) দাবির প্রতি মনোনিবেশ করে।"
ত্রাসের মাধ্যমে সৃষ্ট সন্ত্রাসবাদ নিজেই মানবাধিকারের উপর আক্রমণ। সন্ত্রাসবাদ ও মানবাধিকারের মধ্যকার সরাসরি সংযোগটি প্রথমবার ভিয়েনা ঘোষণায় মানবাধিকার সম্পর্কিত ‘বিশ্ব সম্মেলন এবং অ্যাকশন প্রোগ্রামের’ কর্মসূচিতে মান্যতা দেয়া হয়েছিল, "সন্ত্রাসবাদ, পদ্ধতি এবং পদ্ধতিগুলি এবং তার সমস্ত রূপ এবং প্রকাশের সাথে কিছু দেশে মানবাধিকার ধ্বংস করার লক্ষ্যে মাদক পাচারের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। আইন ও সাহিত্যের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে নীতিশাস্ত্র, মানবাধিকার, এবং মূল্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে সন্ত্রাস । ত্রাস সৃষ্টির কারণ নিয়ে প্রত্যেক ভাবুকের একটি উত্তর আছে এবং প্রতিটি উত্তর একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। সেগুলো হলো, অর্থনৈতিক দিক, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, আদর্শগত দিক ।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।