এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  সমাজ

  • পল ভেরলেন ও তাঁর কবিতা

    Malay Roychoudhury লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | সমাজ | ১০ নভেম্বর ২০২২ | ১১৭০ বার পঠিত
  • 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 | 31 | 32 | 33 | 34 | 35 | 36 | 37 | 38 | 39 | 40 | 41 | 42 | 43 | 44 | 45 | 46 | 47 | 48 | 49 | 50 | 51 | 52 | 53 | 54 | 55 | 56 | 58 | 59 | 60 | 61 | 62 | 63 | 64 | 65 | 66 | 67 | 68 | 69 | 70 | 71 | 72 | 73 | 74 | 75 | 76 | 77 | 78 | 79 | 80 | 81 | 82 | 83 | 84 | 85 | 86 | 87 | 88 | 89 | 90 | 91 | 92 | 93
    পল ভেরলেন ও তাঁর কবিতা : মলয় রায়চৌধুরী



    যদিও শেষ জীবনে, ১৮৯৬ সালে যখন তাঁর মৃত্যু হল,  তাঁকে ‘গুরু’র শিরোপা দিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু ও অনুরাগিরা, ফরাসি কবি পল ভেরলেনের সঙ্গে জনসাধারণের সম্পর্ক সারা জীবন ধরে বেশ ওতোর-চড়াও দিয়ে গিয়েছিল। আঁর সাহিত্যিক খ্যাতি ক্রমশ অপকর্ষের পথে গিয়ে আবার ফিরে এসেছিল, যখন প্যারিস শহরের অসংখ্য মানুষ তাঁকে ‘কবিদের রাজকুমার’ তকমায় ভূষিত করে মৃত্যুর তিনদিন পর তাঁর শবানুগমন করেছিলেন। জীবদ্দশায় তাঁর খ্যাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবার প্রধান কারণ তাঁর মর্মপীড়াদায়ক আচরণ, অথচ তখন তিনি প্রতীকবাদী কবিতা আন্দোলনকে প্রভাবকারী একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি হিসাবে স্বীকৃতি পেয়ে গেছেন। উনিশ শতকের সত্তর দশকে ‘ডেকাডেন্ট’ আন্দোলনের আদর্শ কবি হিসাবে তখন তিনি প্রতিষ্ঠিত। তাঁর সাহিত্যপ্রতিভার কারণে যতোটা ততোটাই তাঁর খ্যাতির ভিত্তি তাঁর চেয়ে বয়সে অনেক ছোট তরুণ কবি আর্তুর র‌্যাঁবোর সঙ্গে যৌনসম্পর্কের উথালপাথালের ও আবসাঁথ টেনে মাতাল থাকার দরুণ।



    উত্তর ফ্রান্সে ৩০ মার্চ ১৮৪৪ সালে পল ভেরলেনের জন্ম ; তিনি ছিলেন সেনাবাহিনির ক্যাপ্টেন নিকোলাস ও আরাসের জনেক কৃষকের মেয়ে স্তাফানি দেহির সন্তান। নিকোলাস ছিলেন কঠোর প্রকৃতির, কিন্তু তাঁর মা পলকে বাবার ক্রোধ থেকে আগলে রাখতেন। বাবা-মায়ের বিয়ের তারো বছর পর জন্মেছিলেন পল ; স্বাস্হ্য খারাপ হবার কারণে তাঁর মায়ের গর্ভপাত হয়ে যেতো বা মরা অবস্হায় বাচ্চা জন্মাতো। ১৮৫১ সালে সেনাবাহিনি থেকে পদত্যাগ করে নিকোলাস প্যারিসে চলে যান ; সেখানে পল সঙ্গী  হিসাবে পান এলিজা মোনকোম্বলে নামে তাঁর অনাথ খুড়তুতো বোনকে, যার প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন বয়ঃসন্ধির রসায়নে। পলকে স্কুলে ভর্তি করা হয়। যতো তাঁর বয়স বাড়তে থাকে ততোই প্রকাশ পেতে থাকে তাঁর  ক্রোধের দমক। পল ভেরলেনের বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই কবির কন্ঠস্বর লালিত হতে থাকে। সংবেদনের অস্হিরতা থেকে প্রথম দিকের কবিতায় তিনি জগত থেকে পালাবার কথা লিখেছিলেন : ভয়হীন স্বপ্নদ্রষ্টার জন্য তোমার ডানা মেলে ধরো,/আর তাকে উড়িয়ে নিয়ে যাও!/বিদ্যুৎ, আমাকে নিয়ে যাও!



    তাঁর আত্মা পরমের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছে, এমন কল্পনায় নিজেকে চুবিয়ে তিনি জগতকে প্রশ্ন করা আরম্ভ করলেন এবং নিজের সৃষ্ট জগতকে তুলে ধরলেন তার বিপরীতে। সাধারন মানের ছাত্র, তাঁর প্রধান আগ্রহ ছিল কবিতা লেখায় এবং প্যারিসে তিনি আইন-শিক্ষার চেয়ে, যে কলেজে তাঁর বাবা ভর্তি করে দিয়েছিলেন, লাতিন কোয়ার্টারে বেশি সময় কাটাতেন। ১৮৬৩ সালে প্রকাশিত হলো তাঁর প্রথম সনেট ‘মঁসিয় প্রুধোম’। ছেলে লেখালিখি করে বেয়াড়া হয়ে যাচ্ছে আঁচ করে তাঁর বাবা তাঁকে মেয়রের দপ্তরে চাকুরিতে ঢুকিয়ে দিলেন। কাজের পর সন্ধ্যায় ভেরলেন কবিদের আড্ডায় যাতায়াত আরম্ভ করলেন, বিশেষ করে থিওদোর দ্য বাঁভিলের কাছে, কবিতার সাম্প্রতিক টেকনিক সম্পর্কে আলোচনার জন্য। কিন্তু আশঙ্কা ও আশার পরস্পরবিরোধী মানসিকতায় আক্রান্ত হয়ে বিষাদে ভুগতেন ভেরলেন। কেবল কবিতায় পেতেন সাময়িক শান্তি। ১৮৬৬ সালে তিনি প্রথম কবিতা সংকলন প্রকাশ করলেন ‘শনির কবিতা’ ( Poemes saturniens ) শিরোনামে। বইয়ের নামকরণ করেছিলেন শার্ল বোদলেয়ারের ‘ক্লেদজ কুসুম’ ( Les Fleurs du mal, 1857 ) বইয়ের একটি কবিতার প্রভাবে  কিন্তু নিজের শৈলী গড়ার বদলে কবিতাগুলো ছিল বাঁভিল আর ভিক্তর উগোর অনুকরণ। বইটির অধিকাংশ কবিতা উৎসর্গ করেছিলেন খুড়তুতো বোন এলিজা মোনকোম্বলেকে, যাকে তিনি গোপনে ভালোবাসতেন। নিজের কাজের প্রতি বোদলেয়ারের অনাসক্তির প্রশংসা করলেও, ভেরলেন নিজের লেখালিখির সঙ্গে সম্পূর্ণ প্রলিপ্ত ছিলেন। ‘শনির কবিতা’ বইয়ের কবিতাগুলির কেন্দ্রে ছিল প্রেম ও কামেচ্ছা। এর পরই ১৮৬৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর কাব্যগ্রন্হ ‘দুরন্ত উৎসব’ ( Fetes galantes ) যার অধিকাংশ কবিতায় আছে চাঁদের চিত্রকল্প ; ভুতুড়ে গ্রামে প্রেতেদের  নাচ ; মিলিয়ে যেতে-থাকা স্বর্গোদ্যানের বিষাদময় বাগানে ফোয়ারা ঘিরে সঙদের আর ঘুঘুদের চরকি, লাফ আর নাচ। ভেরলেন প্রয়াস করেছিলেন আঠারো শতকের চিত্রকর আঁতোয়া ওয়াত্তেউয় ও জঁ-অঁরে ফ্রাগোনার উপস্হাপনাকে কবিতায় ধরে রাখতে, এবং সেই সঙ্গে ওয়ালটার পাতের, উগো, জেরার দ্য নেরভাল, থিয়োফিল গতিয়ে, ইতালিয় কমেদিয়া দেল-আরতে থেকে সূত্র আহরণ করতে। কিন্তু এই কাব্যগ্রন্হের পাঠক তিনি পাননি ; বইটা ছিল বিপর্যয়। তাঁর আবসাঁথ খাবার পরিমাণ বেড়ে গেল এই বিপর্যয়ে।



    কয়েকমাস পরে তাঁর  পরিচয় হয় ম্যাথিলে মত নামে বয়সে বেশ ছোটো তরুণীর সঙ্গে এবং গভীর প্রেমে পড়েন। ১৮৭০ সালে প্রকাশিত পরের কাব্যগ্রন্হ ‘ভালো গান’ ( La bonne chanson ) উৎসর্গ করলেন তাঁকে। এই কাব্যগ্রন্হের প্রকাশভঙ্গী অনেক সরাসরি ; প্রতিফলিত হয়েছে জীবনকে নিয়ন্ত্রন করার ও মানসিক শান্তি পাবার চেষ্টা -- জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে তাঁর ধারণা হয়ে গিয়েছিল এবং মানসিক শুদ্ধতার জন্য আকুল আকাঙ্খা দেখা দিয়েছিল। কবিতাগুলো দ্রুত লিখেছিলেন ভেরলেন এবং তার অধিকাংশই তিনি ম্যাথিলেকে প্রথম দেখার পর লিখে পাঠিয়েছিলেন। তাঁদের পরিচয়ের পরে-পরেই, প্রেমিক-প্রেমিকার চাপে, তাঁদের বিয়ে হয়, এবং ছয় মাস ভালোই কেটেছিল কিন্তু আর্তুর র‌্যাঁবো নামের এক কবি যশোপ্রার্থীর প্রতি তাঁর টান সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দ্যায়।



    ১৮৭১ সালে ভেরলেনের সঙ্গে র‌্যাঁবোর দেখা হয়, র‌্যাঁবো তাঁকে তাঁর ‘মত্ত নৌকো’ ( Le Bateau ivre ) কবিতাটি পড়ে শোনান। ভেরলেনের সঙ্গে র‌্যাঁবো যোগাযোগ করেছিলেন চিঠি লিখে, আর ভেরলেন তাঁকে তাঁর পরিবারে অতিথি হিসাবে থাকার আমন্ত্রণ জানান। অবিচ্ছেদ্য হয়ে দাঁড়াল তাঁদের পরস্পরের সম্পর্ক। ইতিমধ্যে ভাঙন দেখা দিলো ভেরলেন আর তাঁর স্ত্রীর সম্পর্কে ; র‌্যাঁবোর আচরণ সমালোচনা করার কারণে ভেরলেন স্ত্রীর গায়ে হাত তুললেন। এই সময়ে র‌্যাঁবোর অশহুরে চাষাড়ে আচরণ আর তাঁদের দুজনের যৌনসম্পর্কে প্যারিসে সাহিত্যিক মহলে ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৮৭১ সালের অক্টোবরে ম্যাথিলদের ছেলে জর্জের জন্ম হল। কয়েকমাস পরে ভেরলেন আর র‌্যাঁবো প্রথমে বেলজিয়াম আর সেখান থেকে ইংল্যাণ্ডে পাড়ি মারলেন। ম্যাথিলদে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করতে বাধ্য হলেন।



    পরের তিন বছর ভেরলেন ও র‌্যাঁবো, প্রেমিক-প্রেমিকার মতন জুটি বেঁধে,  লণ্ডন, ব্রুসেলস ও প্যারিস শহরগুলোয় ঘুরে-বেড়িয়ে কাটালেন। ১৮৭২ আর ১৮৭৩ সালের মাঝে দুই প্রেমাসক্তের মাঝে অনেকবার ছাড়াছাড়ি আর পুনর্মিলন হল, আর শেষ পর্যন্ত ব্রুসেলসে দুজনের কথা কাটাকাটির পর ভেরলেন র‌্যাঁবোকে পিস্তল দিয়ে গুলি করে আহত করলেন আর আঠারো মাসের জন্য জেলে গেলেন। জেলে তিনি ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা নিয়ে ঈশ্বরবিশ্বাসী হতে চাইলেন। 

    মার্চ ১৮৭৪ সালে প্রকাশিত হল ভেরলেনের কাব্যগ্রন্হ ‘শব্দহীন রোমান্স’   ( Romances sans paroles ) বেলজিয়াম ও ইংল্যাণ্ডে লেখা একুশটি কবিতা সংকলিত করে। প্রথম কয়েকটা কপি ভেরলেন জেলে বসে পেয়েছিলেন, এবং বইটা তিনি  উৎসর্গ করেছিলেন র‌্যাঁবোকে, কিন্তু তা তাঁর বিপক্ষকে প্ররোচিত করবে, উকিলের এই পরামর্শে, র‌্যাঁবোর নাম বাদ দিয়ে দ্যান। ‘ভুলে-যাওয়া গান’ ( Ariettes oubliees ) কবিতাটিতে ধরা যায় ভেরলেনের স্বরভঙ্গীর পরিবর্তন ; কবি  পরিচিত, সাঙ্কেতিক, স্মৃতিবেদনাতুর কন্ঠে তাঁর পাঠকদের কাছে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। র‌্যাঁবোর প্রভাবে ভেরলেন আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন শব্দের জীবন-বদলকারী ক্ষমতা। তাঁরা দুজনে যখন বেলজিয়ামে ছিলেন তখনকার কবিতায় যাত্রাপথে কবির কামুক অ্যাডভেঞ্চার উদ্ঘাটিত হয়, তাই ‘ওয়ালকোর্ট’ কবিতায় তিনি লেখেন :

    ইঁঁট আর টালির সারি,
    ওহ, কমনীয় আবরক
    আরামপ্রদ আশ্রয় 
    প্রেমীদের জন্য
    ……………...
    কাছেই রেলস্টেশন
    সমকামের পথ বেছে নেওয়ার 
    এখানে কোন ঝড়ো হাওয়া,
    শুভ পর্যটক ইহুদিরা ?)

    উপরোক্ত বইয়ের কিছু কবিতায় ধরা পড়ে ম্যাথিলদের প্রতি পাল্টা-অভিযোগ আর অসুখি বিয়ের জন্য ভেরলেনের অপরাধবোধ। বইটি প্রকাশের এক বছর পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি লণ্ডনে গিয়ে ফরাসি শিক্ষকের চাকরিতে যোগ দেন। ১৮৭৯ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য প্যারিস ফিরে তিনি আবার ইংল্যাণ্ড ফেরেন, নতুন সমকামী তরুণ লুসিয়েন লেতিনোসকে সঙ্গে নিয়ে। এক বছর পর প্যারিস ফিরলে তাঁর মা তাঁকে উত্তর ফ্রান্সে চাষের জমি কিনে দ্যান। চাষবাস জলাঞ্জলি দিয়ে দুজনে প্রেমে আর আবসাঁথ খাওয়ায় এতো মশগুল হয়ে পড়েন যে দেনার দায়ে জমজমা বিক্রি করে দিতে হয়। 



    ডিসেম্বর ১৮৮০ সালে প্রকাশিত হয় ভেরলেনের কবিতা সংকলন ‘জ্ঞান’ ( Sagesse ), কিন্তু পাঠক সমাদর পায়নি। পরবর্তীকালে এই বইটিকে বলা হয়েছে ফরাসি কবিতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান। লাম্পট্যের জীবন থেকে বেরিয়ে এসে এবং র‌্যাঁবোর জীবনদর্শন প্রত্যাখ্যান করে ভেরলেন তাঁর অন্তরজগতের টানাপোড়েন ও গ্লানিকে আনতে চেয়েছেন বইটির চল্লিশটি কবিতায়। নতুন বাস্তবতার সামনে তিনি বুঝে উঠতে পারলেন যে তিনি একা ও ক্ষয়িত। দশ বছর আগে ফেলে যাওয়া সাহিত্য জগতের সঙ্গে আবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেন প্যারিসে ফিরে। কেরানির যে কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তা ফিরে পেতে চাইলেন। কিন্তু কেউই তাঁকে চিনতে চাইল না। কয়েকজন বন্ধু তাঁর আর্থিক দুরাবস্হা দেখে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখার ব্যবস্হা করে দিলেন। ১৮৮৩ সালে লেতিনোইস মারা গেল টাইফয়েড রোগে। ভেরলেন ভেঙে পড়লেন একেবারে। পথে ও কাফেতে তাঁর মাতলামি অসহ্য হয়ে উঠল অনেকের কাছে ; তাঁকে পুলিশের হুঁশিয়ারিও দেয়া হল।



    ম্যাথিলদের সঙ্গে আইনত বিবাহবিচ্ছেদের কয়েক মাস আগে ১৮৮৪ সালে প্রকাশিত হল ভেরলেনের ‘সম্প্রতি ও পূর্বে’ ( Jadis et naguere ) কাব্যগ্রন্হ। কবিতাগুলো তাড়াতাড়ি একত্রিত করে বইটি প্রকাশ করেছিলেন থাকা-খাওয়ার টাকাকড়ি রোজগারের আর খ্যাতি বজায় রাখার জন্য। Le Chat Noir পত্রিকায় ১৮৮৩ সালে প্রকাশিত তাঁর সনেট ‘অবসন্নতা’ ( Langueur ) ডেকাডেন্ট কবিদের মহলে ‘শ্রেষ্ঠ কাব্যিক শিল্প’ হিসাবে ঘোষিত হয়েছিল। উনিশ শতকের শেষে আর বিশ শতকের প্রথম দিকে গড়ে ওঠা ডেকাডেন্ট কবিদের মতে প্রকৃতির চেয়ে শিল্প উচ্চতর এবং অসীম সৌন্দর্য পাওয়া যাবে মরণাপন্ন ও ক্ষীয়মান বস্তুতে। তাঁরা তখনকার প্রচলিত নৈতিক, নীতিমূলক ও সামাজিক মানদণ্ডের বিরোধী ছিলেন। ভেরলেনের খ্যাতিবৃদ্ধিতে অবদান ছিল জোরিস-কার্ল হুইসমাঁস-এর, যিনি ১৮৮৪ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে’ ( A rebours ) উপন্যাসে  ভেরলেনের কবিতায় “অস্পষ্ট ও সুস্বাদু বিশ্বাসের” ( vagues et delicieuses confidences ) প্রশংসা করেছিলেন। ভেরলেন অবশ্য তাঁর কবিতাকে এই শৈলী থেকে মুক্ত করে নিবেছিলেন এবং হুইসমাঁস-এর বক্তব্য ভেরলেনের ‘জ্ঞান’  ( Sagesse ) কাব্যগ্রন্হের শেষ কয়েকটি কবিতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।



    ১৮৮৬ সালে তাঁর মায়ের মৃত্যুতে ভেরলেন মানসিক ও আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তারপর আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি। সেই বছরই প্রকাশিত হয় র‌্যাঁবোর কাব্যগ্রন্হ ‘ইল্যুমিনেশানস’ , ভেরলেনের লেখা মুখবন্ধসহ ; পাণ্ডুলিপি তিনিই সাজিয়েছিলেন, কেননা র‌্যাঁবো তখন সাহিত্যজগত ছেড়ে  জন্য চলে গেছেন আফ্রিকায়। ভেরলেনের স্বাস্হ্য দ্রুত ভেঙে পড়ছিল, টাকাকড়ি আর আশ্রয়েরও প্রয়োজন ছিল। তিনি ১৮৮৮ সালে প্রকাশ করলেন ‘প্রেম’ ( Amour ) নামের কাব্যগ্রন্হ। পাঠক আর সমালোচকদের মধ্যে সাড়া জাগাতে পারলো না বইটা, যদিও বইটা পেয়ে বাঁভিল তাঁকে উৎসাহিত করার জন্য একটা চিঠি লিখেছিলেন।



    অত্যন্ত গরিব হয়ে গিয়েছিলেন ভেরলেন। প্রচুর আবসাঁথ টেনে মাতাল থাকতেন। প্যারিসের সাহিত্য সভায় কবিতাপাঠ ও বক্তৃতার ডাক পেলে যেতেন ; কিন্তু আশ্রয়ের জন্য দ্বারস্হ হলেন দুই বয়স্ক বেশ্যার, তাদের একজন বিধবা। তাদের মন যুগিয়ে চলার জন্য কবিতা লিখতেন যা নিয়ে দুই বেশ্যার ঝগড়াঝাঁটি তাঁকে আরও বদনাম করত। বদনামের দরুণ অন্তত লোকে তাঁর কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হল এবং আগেকার বইগুলো পাঠকরা পড়তে চাইলেন।  ১৮৮৯ সালে ভেরলেন প্রকাশ করলেন কামদ ও ধার্মিক কবিতার সংকলন ‘সমান্তরতা’ ( Parallelement )। কাব্যগ্রন্হটিতে তিনি তাঁর লাম্পট্যের জীবনের সঙ্গে তুলনা করলেন নিরীহ ধার্মিক জীবনের। ১৮৯১ সালে, যে-বছর র‌্যাঁবো মারা যান, ভেরলেন প্রকাশ করলেন ‘আনন্দ’ ( Bonheur ) নামের কবিতা সংকলন, যাতে তিনি একত্রিত করেছিলেন বিভিন্ন পত্রিকায় চার বছর যাবত লেখা কবিতা। তাঁর আগের কাব্যগ্রন্হগুলোর তুলনায় এই বইটিতে নানা আবেগের কবিতা ছিল ; ধার্মিক কবিতার পাশাপাশি ম্যাথিলদেকে অপমান করে লেখা কবিতা। সেই বছরই প্রকাশিত হল তাঁর কাব্যগ্রন্হ ‘তার জন্য গান’ ( Chansons pour elle ), যে বেশ্যাটি তাঁকে ভালোবাসতো আর খাওয়া-থাকার ভার নিয়েছিল, তাকে উদ্দেশ্য করে লেখা কবিতার সংকলন, তাতে ভেরলেন বলেছেন, “আমাদের পরোয়া করার দরকার নেই আর কলঙ্কজনক  হওয়া যাক”, তখন ভেরলেন দুস্হ অবস্হায় জীবনের শেষ প্রান্তে।



    ১৮৯২-১৮৯৩ সালে ভেরলেন অত্যন্ত অসুস্হ এবং সব সময়ে আবসাঁথ টেনে মাতাল, কয়েক মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ততদিনে তিনি ফরাসিভাষার একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি হিসাবে খ্যাত। ইউরোপের বিভিন্ন শহর থেকে কবিতা পাঠের জন্য তাঁকে ডাকা হলেও, স্বাস্হ্যের কারণে কোথাও যেতে পারেননি। প্যারিসেও, তিনি কয়েকটা সাহিত্য সভায় বক্তৃতা দিতে চাইলেও, এতো বেশি মাতাল থাকতেন যে কথা জড়িয়ে যেতো। ১৯৮৪ সালে ভেরলেন প্রকাশ করলেন ‘অঙ্গেপ্রত্যঙ্গে’ ( Dans les limbes ), এবং লিখলেন যে লেখালিখির জন্য তিনি আর কোনও উৎসাহ পান না। মৃত্যুর আগে, ১৮৯৪ সালে তিনি আরেকটি কবিতার বই প্রকাশ করেন ‘শ্লেষ’ ( Epigrammes ) এবং আরও দুটি বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করে যান, ‘মাংস, ১৮৯৬ ( Chair ) ও ‘আক্রমণমূলক’, ১৮৯৬ ( Invectives )। ১৮৯৫ সালের ৮ই জানুয়ারি মারা যান ভেরলেন। 



    মৃত্যুর কয়েকদিন আগে শেষ কবিতা ‘মৃত্যু’ ( Mort ) প্রকাশিত হয়েছিল। ভেরলেন জেনে যেতে পারেননি যে প্যারিসের তিন হাজার মানুষ তাঁর শবযাত্রায় অংশ নিয়েছিল।



    ঘাসের ওপরে

    “এলোমেলো চিন্তা করেন মঠাধ্যক্ষ” -- “আপনি, মারকুইস,
    আপনি কি আপনার পরচুলা তেরছা করে পরেছেন,”--
    সাইপ্রাসের এই মদ আমাকে কম
    জাগায়, তোমার চোখের চেয়ে, ওগো কামারগো!”
     
    “আমার আবেগ” -- “দো, মি, সোল, লা, সি”--
    “মঠাধ্যাক্ষ, আপনার শত্রুতা ফাঁস হয়ে গেছে”--
    “মেসদামেস, আমি ওই গাছে চড়ি
    আর এক নক্ষত্র পেড়ে আনি, ঘোষণা করছি সেকথা।”
     
    “যে যার নিজের নারীকে চুমু খাক, তারপর
    অন্যদের।” -- “আমিও তাই হতুম, যদি,
    কোলের কুকুর!”--- আলতো করে, মহাশয়গণ!”--
    “দো, মি।” -- “চাঁদ!”-- ওহে, কেমন আছো ?”
    গলিপথ
    ভেড়া চরানোর দিনে যেমন পাউডার আর রুজ মেখেছিল,
    বড়ো রিবন ফিতে বেঁধে মেয়েটির কোমলতা,
    গলিপথের ছায়ায় , যেখানে সবুজ জন্মায়
    বসবার পুরোনো জায়গায় শ্যাওলাধরা, মেয়েটি এঁকেবেঁকে এগোয়
    মিনমিনে লাবণ্য আর ভান-করা গোমরে
    যেমন আদরের পোষা টিয়াপাখি প্রায়ই করে
    মেয়েটির দীর্ঘ গাউন আর তার নীল চাদর ; হাতপাখা
    আঙটি-পরা সরু আঙুলে ছড়িয়ে
    প্রেমের দৃশ্যে আনন্দিত, প্রায়ান্ধকার
    মতামত, ইতউতি তাকাবার সময়ে চোখে হাসি ফুটে ওঠে।
    শ্বেতাঙ্গিনী ; টিকোলো নাক ; মোটার ধাত, টুকটুকে ঠোঁট, ঐশ্বরিক
    অবচেতনে গর্বিনী। -- নিগূঢ়, নিঃসন্দেহে,
    মাছির মতন রেখাঙ্কিত করা
    চোখের বোকা ঔজ্বল্য।
    পদচারণায়
    দুধেল আকাশ, অস্পষ্ট, ছিপছিপে গাছের সারি,
    মনে হয় হাসছে আমাদের হালকা পোশাক দেখে,--
    আমাদের মসলিন আড়ালের উড়াল যেন ডানার 
    ভঙ্গী, আমাদের সাটিন মৃদু বাতাসে পাখনা নাড়ায়।
    আর শ্বেতপাথরের বাটিতে ঢেউরা আলো খেলায়
    আর বীথিপথের বাতাপিলেবুর গাছের ভেতর দিয়ে
    নীলাভ হয়ে সূর্যের সোনালী ছেঁকে আসে আমাদের কাছে
    আর মৃতপ্রায়, কোনো স্বপ্নের সূর্যালোকের মতন।
    উৎসাহী ফাঁসুড়ে আর প্রতারকদের হৃদয়
    কোমলতায় বিরল, কিন্তু যৎসামান্য সঙ্কল্পে বাঁধা,
    আমরা প্রতিদিন ফুলঝাড়ের তলায় আনন্দ করি
    আর প্রেমিক-প্রেমিকারা মেলায় খেলাচ্ছলে ভিড় করে।
    পাওয়ার পর, ওরা কি সীমা অতিক্রম করবে,
    অসম্ভব ছোটো হাত থেকে এক মুঠো খাবার
    যখন তারা বীরের জানু নত করে
    সবচেয়ে ছোটো আঙুলকে চুমু খাবার।
    আর যেহেতু এটা আপত্তিকর স্বাধীনতা,  
    এক শীতল চাউনি সাহসী পাণিপ্রার্থীর পুরস্কার,--
    অবজ্ঞায় তার ততোটা ছাপিয়ে ওঠে না
    রক্তবর্ণ মুখের ভরসাজনক আশ্বাস।
    বন্যপ্রাণী
     পোড়ামাটির এক প্রাচীন গ্রাম্যদেবতা,
    সবুজের মাঝে এক ঝলক হাসি,
    বাগান থেকে আমাদের দেখে ঠোঁট ওলটায়,
    গোপন আর ব্যাঙ্গাত্মক হাবভাবে।
     
    ভাগ্যবশত, ও আগেই জেনে যায়,
    প্রিয় মুহূর্তগুলোর অসুখি সমাপ্তি
    যা মহানন্দের সঙ্গীত আর হালকা নাচে
    আমাদের, চিন্তামগ্ন তীর্থযাত্রীদের নিয়ে এসেছে, এইখানে।
     
    পৃথিবীর ভালোবাসা
    সেদিন রাতে বাতাস ভাসিয়েছিল প্রেম
    বাগানের প্রায়ান্ধকার কোনে
    মৃদু হাসি হাসতো, নিজের বাঁক নামিয়ে
    আর যাকে দেখে আমরা হতুম অভিভূত
     
    একদিন! অন্য রাতের বাতাস ভাসিয়ে দিল ওকে!
    সকালের হাওয়ায় শ্বেতপাথরের গুঁড়োর ঘুর্নিপাক।
    ওহ, মন খারাপ হয়ে যায় দেখে, বীথিসারির আড়াল,
    ওইখানে বেদির ওপরে, পরিচিত খ্যাতির নাম!
     
    ওহ, মন খারাপ হয়ে যায় ফাঁকা বেদি দেখে!
    আর বিষাদময় কল্পনা আসে আর যায়
    আমার স্বপ্ন জুড়ে, যখন একদিনের আর্তি
    পূর্বাভাস দিয়ে যায় -- আমি জানি আগাম বিপদ!
     
    ওহ, দুঃখ -- আর তুমিও দুঃখে ভুগছ, মিষ্টতায়,
    নয়কি তুমি, এই দৃশ্য দেখে ? যদিও তোমার চোখ
    সোনালী ও বেগুনি প্রজাপতিদের অনুসরণ করছে  
    যেগুলো আমাদের পায়ের কাছের জঞ্জালে ওড়াউড়ি করছে।
     
    নিঃশব্দে

    গাঢ় গোধুলীর প্রশান্তি
    গড়ে উঠেছে গাছগাছালির শাখায়
    এসো স্তব্ধতা ও ছায়ার
    এই প্রভাবকে শ্বাসে ভরে নিই।
     
    তোমার হৃদয়কে আমার হৃদয়ে মিশে যেতে দাও,
    আর তোমার আত্মাকে পৌঁছোতে দাও আমার কাছে,
    পাইনবনের স্নেহসিক্ত পরিবেশে
    আর গুল্মের দীর্ঘশ্বাসের মাঝে।
     
    দুচোখ বোজো, তোমার দুই হাত রাখো
    তোমার তন্দ্রাচ্ছন্ন হৃদয়ের ওপরে
    যার নিয়ন্ত্রণ থেকে যাবতীয় অবিশ্বাস
    চিরকালের জন্য চলে যায়, আর শিল্পীত হয়ে ওঠে।
     
    এসো সময় সঙ্গতিবিধান করুক!
    এসো মৃদু বাতাসকে আসতে দিই,
    রোদেপোড়া ঘাসেদের উড়িয়ে নিয়ে যাক,
    আমাদের মনকে ধীরতায় নিয়ে আসুক!
     
    আর যখন বাতাসের ভেতর দিয়ে রাত
    ছুঁড়ে ফেলে দেবে তার জাঁকজমক-ভরা ছায়া
    ছুঁয়ে যাবে আমাদের বিষণ্ণ কন্ঠস্বর,
    বহুক্ষণ গান শোনাবে পাপিয়া     
     
    যেহেতু ছায়ারা আদ্রচিত্ত হয়
    যেহেতু ছায়ারা আদ্রচিত্ত হয়, যেহেতি আজকেই সেই দিন,
    যেহেতু আমি ভেবেছিলুম আশা চিরকালের মতো বিদায় নিয়েছে,
    মেয়েটিকে ডাকে দিই প্রার্থনা করি ফিরে আসতে আমার কাছে,
    যেহেতু অতো আনন্দ আমার নিজেরই অনুমোদন,--
     
    সমস্ত কালো অভিসন্ধি আমি এখানেই পরিত্যাগ করছি,
    আর যাবতীয় অশুভ স্বপ্ন। আহ, আমি ফুরিয়ে গেছি
    সবার ওপরে কোঁচকানো ঠোঁটে, মুখ বেঁকিয়ে হাসা,
    নির্দয় হাস্যকর উক্তি যখন দীর্ঘশ্বাস ফেলার কথা।
     
    যাও, মুঠিবাঁধা ঘুষি আর বুকের ক্রুদ্ধ ফুলে ওঠা,       
    যে বোকা আর মূর্খদের প্রতিটি মোড়ে দেখা যায়।
    যাও, কঠিন ক্ষমাহীনতা! বিদায়,
    ঘৃণিত চোলাইতে পাওয়া বিস্মরণ!
     
    কেননা আমি বলতে চাই, এখন ভোরের এক প্রাণী
    আমার রাত জুড়ে ছড়িয়েছে রশ্মির উদ্ভাস
    যা প্রেমের যুগপৎ অমর ও সদ্যজাত,--
    মেয়েটের হাসির কৃপায়, তার চাউনিতে, তার গরিমায়,
     
    ওগো কমনীয় হাত, তুমি আমার হাত ধরে থাকো,
    আমার হাত কাঁপে,-- তোমার মিষ্টি চোখের চাউনিতে,
    সোজা হাঁটার জন্য, পথ তো শ্যাওলায় পিচ্ছিল
    কিংবা পাথর আর পাথরকুচিতে ভরা উষর বিস্তার।
     
    হ্যাঁ, আমি জীবনের পথে শান্তিতে হাঁটতে চাই, এগোতে চাই,
    ধৈর্য বজায় রেখে, গন্তব্যে পৌঁছোবার জন্য উদ্বেগহীন,
    ঈর্ষা, হিংসা, কিংবা ঘৃণা থেকে মুক্ত
    তা হবে উৎসাহী আত্মার কর্তব্য।
     
    আর যেমন আমি চাই, দীর্ঘপথকে আলোকিত করতে,
    সাহসী আর নতুনবাঁধা গান গাইতে গাইতে,   
    মেয়েটি শুনবে আমার গান অমায়িকভাবে, আমি বলছি,--  
    আর, তাছাড়া, অন্য কোনো স্বর্গ আমি চাই না। 
     
    তোমার আলো পুরোপুরি ব্যর্থ হবার আগে
    তোমার আলো পুরোপুরি ব্যর্থ হবার আগে,
    ইতিমধ্যে ক্ষয়িত হতে থাকা নক্ষত্র,
    ( তিতির পাখি
    দূরের ঝোপে বসে গান গায়! )
     
    কবির চোখকে অন্যদিকে ফেরাও
    প্রেম ছাপিয়ে চলে যায়---
    ( দেখতে পায় ভরতপাখি
    দেখা করতে যাচ্ছে সূর্যের সঙ্গে! )
     
    তোমার চাউনি, যা এখন
    ডুবে যাবে নীলাভ সকালে ;
    ( কী আনন্দ
    খেতের পাকা ফসলের হাসিতে! )
     
    তাহলে আমার সত্যকার বার্তা পাঠিয়ে দাও
    নিচের দিকে ওইখানে, -- অনেক দূরে!-- 
    ( শিশির
    খড়ের ওপরে ঝিকমিক করছে।)
     
    দৃষ্টি যতোদূর দেখতে চায়
    প্রিয়তমা যে  ঘুমোচ্ছে এখনও।
    ( তাড়াতাড়ি করো!
    সূর্য পাহাড়ের কাছে পৌঁছে গিয়েছে! )
     
    বনানীর ভ্রুর ওপরে
    বনানীর ভ্রুর ওপরে,
    ফ্যাকাশে, তাকিয়ে আছে চাঁদ ;
    প্রতিটি শাখায় 
    ভ্রাম্যমান হাওয়া
    ফিকে দীর্ঘশ্বাস ফ্যালে…
     
    হে হৃদয়ের আকাঙ্খা!
     
    দুটি উইলো গাছ
    দোল খায় আর কাঁদে,
    একটি বাতাসে
    অন্যটি গভীর বনে       
    স্রোতস্বিনী কাচ…
     
    আমরা স্বপ্নের স্বপ্ন দেখি…
     
    এক অসীম
    হাতাশ্বাস 
    ঝরে পড়ে যেখানে শ্বেতাভ
    কুয়াশা জ্যোতির্ময়
    চাঁদের আলোক ঝর্ণায়…
     
    থেকে যাও, নির্ভুল সময়!
     
    গাড়ির জানালা দিয়ে দেখা দৃশ্য
    গাড়ির জানালা দিয়ে দেখা দৃশ্য
    প্রমত্ত উড়ালে পাশ দিয়ে দ্রুত চলে যায় ; সমগ্র প্রান্তর জুড়ে
    জলধারা আর পাকা ফসলের খেত আর গাছ আর নীল
    তাদের গিলে ফ্যালে ঘূর্ণাবর্ত, যার ভেতরে
    টেলিগ্রাফের রোগাটে থামগুলো ঢলে পযেছে,
    তাদের তারগুলো গানের স্বরলিপির মতন অদ্ভুত দেখায়।
    ধোঁয়া আর বাষ্পের এক গন্ধ, এক  ভয়ঙ্কর হইচই
    হাজার শেকলের ঝনঝনা যেমন বেঁধে রাখে
    চাবকানো হাজার দানবের চিৎকারের মতন,--
    আর হঠাৎই, এক পেঁচার দীর্ঘ চিক্কুর।
     
    আমার কাছে এগুলো কী ? কেননা আমার চোখে
    যে দৃশ্য রয়ে গেছে তা পবিত্রতার,
    এখনও মিহিন কন্ঠ আমার কানে অনুচ্চস্বরে বাজে,
    আর যেহেতু তার নাম, এতো মধুর, এতো অভিজাত, এতো প্রিয়,
    এই পাগল-করা ঘুর্ণির বিশুদ্ধ অক্ষ, কি ছেয়ে যায়
    রেলপথের  ওপরের নিষ্ঠুর ঝনঝনানিতে ?
     
    আগুনের গোলাপি আঁচ, বাতির সঙ্কীর্ণ আভা
    আগুনের গোলাপি আঁচ, বাতির সঙ্কীর্ণ আভা
    ধ্যামগ্নতা বোধহয় এক স্বপ্ন
    যে চাউনি নিজেকে হারিয়ে ফ্যালে অভীষ্ট সৌন্দর্যে ;
    গরম চা আর বিসর্জিত বইয়ের সময় ;
    সন্ধ্যার মাধুর্য ফুরিয়ে চলেছে,
    প্রিয় কলআন্তি, আর বিশ্রামের অধিকার পাওয়া গেছে,
    আর রাতের প্রত্যাশাকে অঞ্জলি দিয়েছি,--
    ওহ, এই সমস্তকিছু, অকরূণ উড়ালে,
    আমার স্বপ্ন অযথা কালহরণকে অনুসরণ করে,
    সপ্তাহগুলো সম্পর্কে অধৈর্য, দিনগুলোতে উন্মাদ!   
     
    তাহলে, গ্রীষ্মের কোনো দিনে, ব্যাপারটা হবে
    তাহলে, গ্রীষ্মের দিনে, ব্যাপারটা হবে :
    সূর্য, আমার আনন্দসঙ্গী, ঝলমল করবে ঔজ্বল্যে,
    আর তোমার রেশম ও সূক্ষ্ম সাটিনের খোলতাই করবে,
    আরেক রশ্মি পর্যন্ত তোমার প্রিয় প্রতিভাস ;
     
    স্বর্গেরা, এক দামি শামিয়ানার মতন
    তাদের নীল ভাঁজগুলো ঝেড়ে ঝুঁকে লতিয়ে পড়বে
    আমাদের হানন্দিত ভুরু ঘিরে, যা মিশে যাবে
    প্রচুর আহ্লাদে, অনেক  বেশি আকাঙ্খায় ;
     
    আর যখন দিন শেষ হয়ে আসবে, বাতাস হয়ে উঠবে কোমল
    খেলবে তোমার তুষারঢাকা ঘোমটায়, আদর করবে,
    আর নরম হাসির চাউনি মেলে তাকিয়ে থাকবে নক্ষত্রের দল
    বিবাহিত জুটির দিকে সানুগ্রহে।   
     
    শহরে ধীরে ধীরে বৃষ্টি হচ্ছে -- আর্তুর র‌্যাঁবোকে
    আমার হৃদয়  ফোঁপায়
    যখন শহরে বৃষ্টি পড়ে।
    কী এই নিস্তেজ জ্বালা
    দখল করে রেখেছে আমার হৃদয় ?
     
    বৃষ্টির নরম আওয়াজ
    মাটিতে আর ছাদের ওপর!
    ব্যথাকাতর এক হৃদয়ে
    হে বৃষ্টির গান!
    কারণ ছাড়াই তা ফোঁপায়
    আমার অসুস্হ-হৃদয় হৃদয়ে।
    তার বিশ্বাসে, কী ? কোনো খাদ নেই ?
    বিষাদের কোনো কারণ নেই।
     
    এটাই নিশ্চিত মন্দতম দুর্ভাগ্য
    কে জানে কেনই বা
    আমার হৃদয় যন্ত্রণায় ভোগে
    কোনো আনন্দ বা আর্তি ছাড়াই।   
     
    তার সুখী, অবাঞ্ছিত, বাজনার সুর - পেত্রুস বোরেলকে
    পিয়ানোর রিড, যার ওপরে দুটি কোমল হাত ভাসছে,
    গোধুলীর গোলাপি ও ধূসর রঙে অস্পষ্টতায় দীপ্ত,
    যখন শব্দেরা ডানার মতন, ঝংকারের পর ঝংকার
    উড়াল নিয়ে তৈরি করে বিষাদের ছোট্ট আদল
    যা ঘুরে বেড়ায়, বিচক্ষণ ও কমনীয়, ক্ষীণ, বহু দূরের,
    ঘরের ভেতরে যেখানে মেয়েটির সুগন্ধ পথ হারায়।
     
    কী এই আচমকা স্তব্ধতা আমাকে আদর করে
    ওই সরল গানের স্বপ্নালু বিলম্বিত আর লঘু লয়ে  ?
    আমার কাছে তুমি কি চাও, ফ্যাকাশে সুর ?
    তুমি কি চাইছ, ভুতুড়ে সঙ্গীত
    যা ঢেউ খেলিয়ে জানালার দিকে মিলিয়ে যাচ্ছে
    ছোট্ট বাগানে দরোজা খুলতে ?
     
    ওহ, ভারি, বড়ো ভারি আমার বিষাদ,
    কারণ, কারণ একজন কতো বেশি সুন্দরী।
     
    আমার দুর্দশা কোনো উপশম জানে না,
    যদিও আমার হৃদয় ফিরে চলে এসেছে।
     
    যদিও আমার হৃদয়, যদিও আমার আত্মা,
    প্রাণনাশকের নিয়ন্ত্রণ থেকে পালিয়ে এসেছে।
     
    আমার দুর্দশা কোনো উপশম জানে না,
    যদিও আমার হৃদয় ফিরে চলে এসেছে।
     
    আমার হৃদয়, অনেক বেশি অনুভব করে,
    আমার আত্মাকে বলে, “এটা কি করা যায়,
     
    “এটা কি করা যায়, অনুভবকারী হৃদয়,
    যে তাকে ছেড়ে আমরা আলাদা থাকব ?”
     
    আমার আত্মা আমার হৃদয়কে বলে, “জানি আমি
    এই অদ্ভুত পতনের মানে ঠিক কি।  
     
    “আমরা, যদিও মেয়েটির থেকে দূরে, তবু কাছে,
    হ্যাঁ, বর্তমান, তবুও এখানে নির্বাসিত ?”
     
    “ একটি গাছের মগডাল থেকে পাপিয়া নিজের দিকে তাকায়
          মনে করেন ও নদীতে পড়ে গেছে। অথচ ও মগডালে
          একটি ওক গাছে, এবং তবুও সে ডুবে যাওয়ার ভয় পায়।”
                                                   সাইরানো দ্য বেরগেরাক  
    কুহেলী স্রোতধারায় গাছেদের প্রতিবিম্ব
    প্রাণবন্ত স্রোতে মারা যায় ;
    যখন সত্যিকারের ফুলের ঝোপে, একা,
    কম বয়সী ঘুঘুপাখিরা শোকপালন করে।
     
    হে পর্যটক, কতো অস্পষ্ট মুখশ্রী, এই অস্পষ্টতা
    ধূসর সমতলভূমির দিকে তাকিয়ে
    আর গাছেদের মগডালে কতো একা
    তোমার ডুবন্ত আশার বিলাপ!
        
    ব্রাসেলস
    দ্রুত চলে যায় পাহাড় আর ঝোপের বেড়া
    সবুজ-গোলাপি উড়ালের সঙ্গে মিশে
    আর ঘোড়ার গাড়ির হলুদ বাতি
    আধবোজা চোখকে ঝাপসা করে তোলে।
     
    সোনালী রঙ ক্রমশ লাল হয়ে যায়
    বিনয়ী অন্ধকার উপত্যকা জুড়ে ;
    অবনত ছোটো ছড়ানো গাছেতে
    দুর্বল পাখিশিশু একা বসে কাঁদে।
     
    বিরল দুঃখে, কতো নম্র আর স্পষ্ট
    গুটিয়ে আসা এই হেমন্তঋতুকে মনে হয় ;
    আমার সমস্ত খামখেয়ালি বিষণ্ণ স্বপ্নেরা,
    মৃদু হাওয়ার কোলে দোল খায়।
     
    রাতের পাখিরা



    প্রিয়তমা, তুমি আমার প্রতি ধৈর্য রাখতে পারোনি ;
    ধৈর্যের এই অভাবকে যে-কেউ সঠিক বুঝতে পারবে :
    তোমার বয়স অনেক কম! যৌবন চিরকালই প্রখর
    আর পরিবর্তনশীল ও হঠকারী!
     
    তোমার  ছিল না প্রয়োজনীয় দয়া, না ;
    কারোর তাতে আশ্চর্য হবার কথা নয়, দুঃখবশত :
    তোমার বয়স অনেক কম, শীতল বোন আমার, আর তাই
    স্বাভাবিক যে তোমার কোনো সংবেদন নেই!
     
    আমাকে জড়িয়ে ধরো ক্ষমা করে দিতে পারি তবে ;
    আনন্দে নয়, অবশ্যই! বরং যা সম্ভব তা-ই করতে চাই
    সাহসে মুখোমুখি হবো,-- যদিও গভীর মন খারাপ হয়
    হয়ে উঠব, তোমার মাধ্যমে, সবচেয়ে দুঃখী মানুষ।



    কিন্তু তুমি স্বীকার করবে যে আমিই সঠিক
    যখন মনখারাপ অবস্হাব আমি বলতুম তোমায়
    তোমার মধুর চাউনি, আমার আশা, একবার, আর পুলক!
    দেখে মনে হতো এই দুটি চোখ বিশ্বাসঘাতকতা করবে।
     
    তা ছিল অশুভ মিথ্যা, তুমি দোহাই দিয়ে বলতে,
    আর তোমার দৃষ্টি, যা মিথ্যাকথা বলত, প্রিয়তমা, আগুন ধরাতো,--
    বেচারা আগুন, প্রায় নিভন্ত, তাকে ঘাঁটিয়ে কেউ লেলিহান করতে চায়!’’
    আর তোমার কোমল কন্ঠে তুমি বলতে, “আমি তোমাকে ভালোবাসি!”
     
    হায়! কারোর উচিত আনন্দকে আঁকড়ে ধরা
    ইন্দ্রিয় দিয়ে, ঋতু দিয়ে, যাই হবে যাক না কেন!--  
    কিন্তু তা ছিল এক ঘণ্টার উল্লসিত তিক্ততা            
    যখন আমি নিশ্চিত হলুম যে আমিই ছিলুম সঠিক!     



    আর কোথায় আমি মেলে ধরব আমার হৃদয়ের আঘাত ?
    তুমি আমাকে ভালোবাসো না, -- সেখানেই শেষ, আমার নারী ;
    আর যেহেতু আমি সাহস করে বেছে নিইনি
    কৃপার ভিক্ষা, -- আমাকে কষ্টভোগ করতে হবে মুখবুজে।
     
    হ্যাঁ, কষ্টভোগ! কারণ আমি তোমায় গভীর ভালোবেসেছি, বাসিনি কি,--
    কিন্তু অনুগত সৈনিকের মতন আমি দাঁড়িয়ে থাকব
    আঘাতে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত, টলতে টলতে মারা যাওয়া,
    তবু অকৃতজ্ঞের জন্যও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ।
     
    ওগো তুমি ছিলে আমার সুন্দরী আর আমার নিজস্ব,
    যদিও তোমার কারণে আমাকে বহু দুর্ভোগ পোয়াতে হয়েছে,
    তবু তুমি আর গৃহের হতে পারোনি, তাহলে, তুমি একা,
    ফ্রান্সের মতন কম বয়সী আর উন্মাদ আর সুন্দরী ?



    এখন আমি আর চাই না -- কীই বা পাবার আছে ?--
    অতীতের ভাবনায় অশ্রুজলে বসবাস করে ;
    তবু হে নারী তুমি হয়তো ভাবো প্রেম পড়ে আছে কোতল হয়ে,   
    হয়তো শেষ পর্যন্ত দুই চোখ মেলে জেগে রয়েছে।
     
    হে নারী, হয়তো, -- যা এখন স্মৃতি! --  
    যদিও তোমার ভ্রুর তলায় চোখের পাতা নামানো ও কান্না
    আর রক্তাক্ত ইচ্ছা, আর নিশ্চয়ই, আমি দেখতে পাচ্ছি আগাম,
    দীর্ঘকাল কষ্ট ভোগ করবে আমি মারা যাবার আগে, -
     
    তোমাকে যথার্থ বিচার করে যখন বুঝতে পারে
    সবকিছুই তুচ্ছ সংযোগ নয়,
    আর বিষাদে আক্রান্ত তোমার স্মৃতি
    তোমাকে কলঙ্কিত করে, “আহ, অশুভ উপায়ে কেন!”



    এখনও দেখতে পাই তোমায়। আলতো খুলেছিলুম দরোজা--
    ক্লান্তিতে অবসন্ন তুমি শুয়েছিলে ;   
    কিন্তু অপলকা দেহকে জাগিয়ে তুলবে প্রেম,
    তুমি বাঁধনে জযিয়েছ, একই সঙ্গে কান্না আর আহ্লাদে।
     
    কতো জড়াজড়ি, মিষ্টি বেপরোয়া চুমু!
    আমি, উজ্বল চোখে হেসেছি তোমায় দেখে
    সেই সব মুহূর্ত, অনেকের মাঝে, হে কমনীয় খুকি, 
    আমার সবচেয়ে দুঃখের, কিন্তু মধুরতমা,
     
    তোমার হাসি আমি মনে রাখব, তোমার আদর, 
    তোমার দুই চোখ, কতো সদয় ছিল সেদিন, -- নিখুঁত ফাঁদ!--
    তোমার ছাড়া আর কারই বা মহিমা গাইব না,
    যেমনটা দেখলুম, যেমন দেখেছিলুম নয়।



    আমি আজও দেখতে পাই তোমায়! গ্রীষ্মের পোশাকে,
    হলুদ আর শাদা, পরদার ফুলে ছয়লাপ ;
    কিন্তু তোমার হাসির দীপ্তি হারিয়ে ফেলেছিলে তুমি
    আমাদের পুরোনো দিনের মনমাতানো প্রেমের।
     
    বড়ো মেয়ে আর ছোট্ট বউ
    যৎসামান্য বলেছিল তোমার বিষয়ে,--
    আগেই তো হায়! আমাদের বদলে যাওয়া জীবন
    আমার দিকে তাকিয়েছিল তোমার আবরুর জাল থেকে।
     
    আমাকে ক্ষমা! আর একটুও গর্বে নয়
    আমি তৈরি ছিলুম,-- আর তুমি, সন্দেহ নেই, দেখেছো তো কেন,--
    একদিকে বিদ্যুত-আলোর স্মৃতি
    যা তোমার রাগি চোখ থেকে ঝলকাতো!



    অনেক সময়ে,  আমি ঝড়ে ওপড়ানো ছাল     
    যা মাস্তুল থেকে খসে জলোচ্ছাসে দৌড়োয়,
    আর অন্ধকারে ভার্জিন মেরিকে দেখতে না পেয়ে
    ডুবে যাবার জন্য তৈরি হয়, আর প্রার্থনায় হাঁটু গেড়ে বসে।
     
    অনেক সময়ে, আমি তার প্রান্তের পাপী,
    যে তার সর্বনাশের কথা জানে যদি সে অবিশ্বাস নিয়ে যায়,
    আর কোনো ভুতুড়ে বন্ধুর আশা ত্যাগ করে
    নরকের খোলা দরোজা দেখতে পায়, অনুভব করে তার উদ্ভাস।
     
    ওহ, কিন্তু! অনেক সময়ে, আমার উদ্দীপনা দুর্দম
    সিংহের আশ্রয়ে প্রথম খ্রিষ্টধর্মির মতন,
    যিশু যে হাসির সাক্ষী ছিলেন, স্নায়ুর
    কোনো বেয়াড়াপনা ছাড়াই, একটা চুলও নাড়াতে পারেনি! 
       
    সবুজ

    দ্যাখো, ফুলের তোড়া, গাছের শাখা, ফল, পাতা নিয়ে এসেছি,
    আর আমার হৃদয় যা তোমার জন্যই শ্বাস নেয় ;
    তোমার ওই শ্বেতাভ হাতে, ওহ, ছিঁড়ে ফেলো না,
    কিন্তু গরিবের উপহার তোমার দৃষ্টিতে শ্রীবৃদ্ধি করুক।
     
    আমার মাথার শিশির এখনও শুকোয়নি,--
    সকালের বাতাস যেখানে আঘাত করে শীতলতা আনে।
    তোমার কাছে এসে ক্লান্তির যন্ত্রণা ভোগ করি
    সেই সময়ের স্বপ্ন দেখার জন্য যা নিষ্পত্তি করে দেবে।
     
    আমার মাথাকে তোমার বুকে রাখতে দাও
    যা তোমার অন্তিম চুমুগুলোয় প্রতিধ্বনিত হয়     
      বিষাদ
    গোলাপগুলো কতো লাল ছিল, কতো লাল
    আইভিগুলো একেবারে কালো।
     
     তুমি একবার এই দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলে,
    প্রিয়তমা, আমার সমস্ত বিষাদ ফরে এলো!
     
    আকাশ ছিল মিষ্টিমধুর আর নীল,
    সাগর দেখাচ্ছিল দ্রবীভূত সবুজ।
     
    আমার সব সময়ে ভয় করে, -- যদি তুমি তা জানতে!--
    তোমার প্রিয় হাত দিয়ে এক হত্যার আঘাত।
     
    শূলপর্ণী গাছের ক্লান্তি আমার
    আর ঝলমলে বাক্সের ও ঢেউখেলানো ঘাসের
     
    অশেষ বিস্তীর্ণ চারণভূমির ওপরে,--
    আর তুমি শুধু তুমি ছাড়া কেউ নয়, হায়!  
     
    পথগুলো
    এসো দ্রুততালে নাচি!
     
    সবার ওপরে আমি ওর চোখদুটো ভালোবাসতুম,
    মেঘহিন আকাশের নক্ষত্রদের চেয়েও স্পষ্ট,
    আর পুলকিত আর দুষ্টু আর বুদ্ধিমতী।
     
    এসো দ্রুততালে নাচি!
     
    এতো দক্ষতায় এগোবে মেয়েটি
    রক্তাক্ত করবে প্রেমিকের উন্মুক্ত হৃদয়,
    তা ছিল সত্যিই সুন্দর!
     
    এসো দ্রুততালে নাচি!
     
    কিন্তু গভীরভাবে উপভোগ করেছি
    ওর লালঠোঁটের চুমু
    কারণ আমার হৃদয়ে ও তো মারা গেছে।
     
    এসো দ্রুততালে নাচি!
     
    অবস্হাবিপাকে বড়ো আর ছোটো,-- 
    শব্দেরা, মুহূর্তেরা...মনে পড়ছে আমার, মনে পড়ছে    
    সবকিছুর মাঝে এটাই আমার ঐশ্বর্য।    
     
    এসো দ্রুততালে নাচি!
     
     
    মিথ্যা চমৎকার দিনগুলো
    মিথ্যা চমৎকার দিনগুলো আগুন ধরিয়েছে জীবনের সময়ে,
    তবু তারা রুক্ষ পশ্চিমে ফুলকি জ্বালে।
    চোখ নিচে নামাও, বেচারা আত্মা, যে আশীর্বাদ পায়নি তাকে রুদ্ধ করো :
    কুকর্মের এক মারাত্মক ফাঁদ। চলে এসো।
     
    সারাটা দিন ওরা আগুনের আলো দেখিয়েছে, পড়ে আছে
    পাহাড়ের সবুজ বুকের ওপরে নীচ মদিরা।
    ফসল বেশি হয়নি, -- আর যারা সবচেয়ে বিশ্বাসী,
    নীল আকাশ তাকিয়ে আছে সব সময়, হতাশা ত্যাগ করো।
     
    ওহ, হাত জোড় করো, ফ্যাকাশে হও, আবার ফিরে চাও!
    যদি অতীত দিয়ে সমস্ত ভবিষ্যৎ উপলব্ধ হয় ?
    যদি পুরোনো উন্মাদনা ফিরে আসে ?
     
    সেইসব স্মৃতি, প্রতিটিকে কি আবার কোতল করতে হবে  ?
    এক জবরদস্ত আক্রমণ, সবচেয়ে ভালো, নিঃসন্দেহে, শেষতম!
    যাও আসন্ন ঝড়ের বিরুদ্ধে প্রার্থনা করো, যাও প্রার্থনা করো!  
     
    নীলাকাশ ছাদের ওপরে হাসে
    নীলাকাশ ছাদের ওপরে হাসে
    তার কোমলতম ;
    আক সবুজ গাছ ছাদের ওপরে উঠে যায়
    মাথা দোলায়।
     
    বাতাসহীন আকাশে গির্জার ঘণ্টাধ্বনি
    শান্তিতে বাজে,
    আকাশে বহুদূরে উড়ে এক শাদা পাখি
    অবিরাম গান গায়।
     
    হে ঈশ্বর, আমার ঈশ্বর, সমস্ত জীবন পড়ে আছে,
    সরল ও মধুর ;
    মৌচাকের আরামপ্রদ গুঞ্জন
    রাস্তা থেকে ভেসে আসে!
     
    কী তুমি করেছ, ওহে তুমি তো কাঁদছ
    আনন্দের সূর্যালোকে, --
    বলো, তোমার যৌবন নিয়ে, তুমি যে কাঁদছ,
    কী করেছ তুমি ?      
     
    অবসন্নতা
    ফুরিয়ে আসার শেষ পর্যায়ে আমি এক সাম্রাজ্য,
    যা দেখতে পায় ঢ্যাঙা, পরিস্কার চুলের বর্বররা চলে যাচ্ছে, -- ততক্ষণ
    অবান্তর ছন্দোবদ্ধ গাথা রচনা করে, সে এক শৈলীতে
    সোনালী, তার প্রতিটি ছত্রে নাচছে নির্জীব রোদ।
     
    নিঃসঙ্গ আত্মা এক দুশ্চরিত্রতায় হৃদরোগাক্রান্ত
    অবসাদে। তুমি পতিত, ওরা বলে, যুদ্ধের মশাল রক্তকে উজ্বল করে।
    হায়, দুর্বল ইচ্ছাশক্তির কারণে, ফিরে আসা দরকার
    সাহসী অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ থেকে--
     
    মৃত্যুর, যদি আচমকা ঘটে! হায়, আকাঙ্খাহীন!
    আহ, সবাই তো মাতাল! ব্যাথিলাস ওর হাসি হেসে নিয়েছে, নাকি ?
    আহ, সবাই তো মাতাল, -খাওয়া হয়ে গেছে! বলবার আর কিছু নেই!
     
    একা, একজন আগুনে ফেলে দ্যায় নীরস কবিতা ;
    একা, একজন চোর ক্রীতদাস আরেকজনকে অবহেলা করছে ;
    একা, এক অস্পষ্ট বিরক্তি সূর্যের তলায়!
     
    ভুয়া মুদ্রণ
    বুড়ি ইঁদুর বকবক করে
    ধূসর ছায়ায় কালো ;
    বুড়ি ইঁদুর বকবক করে
    কালোর আড়ালে ধূসর।
     
    ঘুমোবার কাঁসরঘণ্টা শোনো!
    তক্ষুনি ঘুমোও, ভালো কয়েদিরা ;
    ঘুমোবার কাঁসরঘণ্টা শোনো!
    তোমাকে যেতেই হবে ঘুমোতে।
     
    স্বপ্নে ব্যাঘাত চলবে না!
    তোমার ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু ভেবো না :
    স্বপ্নে ব্যাঘাত চলবে না,
    সুন্দরীদের কথা ভাবো!
     
    চাঁদের আলো স্পষ্ট আর ঝকমকে!
    পাশে কেউ একজন নাক ডাকছে ;
    চাঁদের আলো স্পষ্ট আর ঝকমকে--
    ওই লোকটা  ঝামেলা বাধায়।
     
    এসে পড়েছে এক ভুষোমাখা মেঘ
    ফ্যাকাশে চাঁদের ওপরে হামাগুড়ি দিয়ে ;
    এসে পড়েছে এক ভুষোমাখা মেঘ--
    দেখার জন্য ধূসর সকাল আসছে গুঁড়ি মেরে!
     
    বুড়ি ইঁদুর বকবক করে
    নীলাভ রশ্মি জুড়ে গোলাপি ;
    বুড়ি ইঁদুর বকবক করে…
    অপদার্থরা, উঠে পড়ো! সকাল হয়েছে!
     
    ভবিষ্যতে আর নয়
    স্মৃতি, তুমি আমার সঙ্গে কী করতে চাও ? বছর
    ফুরিয়ে এলো ; স্হির বাতাসে পাখির স্পষ্ট গান,
    অলস রোদ অনুৎসাহী উঁকি মারছে না
    বনানীর শুকনো ঝরা পাতাদের মাঝে।
     
    আমরা ছিলুম একা,  আর চিন্তামগ্ন ঘুরে বেড়ালুম,
    কল্পনায় ইতিউতি জড়াজড়ি করছিলুম, যখন, আরে
    মেয়েটি তার  রোমাঞ্চকর চাউনিকে মেলে ধরল,
    আর ওর তরল সোনার কন্ঠে আমাকে জিগ্যেস করল,
     
    ওর টাটকা তরুণী গলায়, “কবে ছিল সবচেয়ে আনন্দের দিন ?”
    আমি বিচক্ষণ হাসিতে উত্তর দিতে চাইলুম, আর 
    নিষ্ঠার সাথে ওর ফর্সা হাতে চুমু খেলুম!
    --আহ, আমি! প্রথম ফুলগুলো, ওরা কতো মধুর!    
     আর কি উৎকৃষ্ট এক ফিসফিস ফাঁস করে   
    প্রথমতম “হ্যাঁ” ভালোবেসে পাওয়া ঠোঁট থেকে!
    তিন বছর পরে
    বাগানের সরু দরোজাটা যখন ঠেললুম,
    আরেকবার দাঁড়ালুম সবুজ অপসরণের মাঝে ;
    সকালের নরম রোদ তাকে আলোকিত করে দিলো,
    আর প্রতিটি ফুল পরে নিলো তাদের আদ্র জামার চুমকি।
     
    কিছুই বদলায় না। আমি আরেকবার তাকিয়ে দেখি :
    আঙরলতার কুঞ্জবন তার দেহাতি আসনে বসে..
    ফোয়ারা  এখনও মধুর রুপো ছেটায়,
    প্রাচীন ধ্বনিরা এখনও আগের মতো মর্মরিত হয়।
     
    গোলাপেরা স্পন্দিত হয় বিগত দিনের মতোই,
    যেমন তাদের অভ্যাস ছিল, গর্বিত লিলিফুল দোল খায়
    প্রতিটি পাখির উড়ে যাবার সময়ের ডাক এক বন্ধুর।
     
    আমি এমনকি ফ্লোরাকে এখনও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলুম,
    যার পলেস্তারা গলিপথের শেষে খসে পড়ছে 
    --একহারা, মিগনোনেট ফুলের বোকা গন্ধের মাঝে।
     
    আমার পারিবারিক স্বপ্ন
    প্রায়ই আমি  গভীর অন্তর্দৃষ্টির এই অদ্ভুত স্বপ্ন দেখি :
    এক অচেনা নারী, যাকে ভালোবাসি, যে আমাকে খুবই ভালোবাসে,
    যে কখনও বদলায় না, কিন্তু ভালোও থাকে না
    সেই একই, -- আর আমাকে খুব ভালোবাসে, আর জানে আমি কেমন লোক।
     
    কেননা ও আমাকে জানে! আমার হৃদয় স্ফটিক রশ্মির মতো স্পষ্ট
    কেবল সে, তার অনির্বচনীয়তাকে ক্ষান্তি দ্যায়
    কেবল সে, আর শুধু সেই জানে কেমন করে নিরসন করতে হবে
    আমার দুঃখ, তার অশ্রুফোঁটা দিয়ে শীতল করে আমার ভ্রু।
     
    সে কি শ্যামলী কিংবা ফর্সা ? আমি জানি না।
    তার নাম ? আমি যেটুকু জানি প্রবাহিত হয়
    কোমলতায়, সেই লোকেদের মতো যারা ভালোবেসে হেরে গেছে।
     
    তার চোখদুটি প্রতিমার মতো, -- মৃদু আর গভীর আর অপলক ;
    আর তার কন্ঠস্বর যেন তা সেইসব প্রেতের
    কন্ঠস্বর, -- যে কন্ঠস্বরেরা ভালোবাসা পেয়ে মারা গেছে।
     
    একজন নারীকে
    এই পংক্তিগুলো তোমাকে করুণার সান্ত্বনার জন্য
    তোমার দীঘল চোখের জন্য যেখানে কোমল স্বপ্নেরা দীপ্ত হয়,
    তোমার বিশুদ্ধ আত্মার জন্য, খুবই দয়ালু! -- এই পংক্তিগুলো তোমাকে
    আমার অপ্রতিম মর্মপীড়ার কৃষ্ণগহ্বর থেকে।
     
    এই ঘৃণ্য স্বপ্ন যা নিপীড়ন করে
    আমার আত্মাকে, হায়! এর দুঃখি শিকার কখনও হাল ছাড়ে না,
    কিন্তু এক পাল নেকড়ের উন্মত্ত তাড়ার মতন
    আমার রক্তাভ পদচিহ্ণকে অনুসরণ করে তপ্ত হয়ে ওঠে!
     
    আমি যন্ত্রণায় ভুগি, ওহ, আমি নিষ্ঠুরতা সহ্য করি!
    যাতে স্বর্গোদ্যানের আদি পুরুষের কান্না হারিয়ে যায়
    তা ছিল আমার কান্নায় গড়া মেঢো কবিতা!
     
    আর যে দুঃখগুলো, প্রিয়তমা,  ঘটেছে
    তোমার জীবনে, তা কেবল উড়ন্ত পাখি
    --পপিবতমা! -- সেপ্টেম্বরের উষ্ণ সোনালী  আকাশে।
     
    হেমন্তের গান
    পাতা ওড়ানো ঝড়ে
    মিহিস্বর রোদন
    বেহালার মতন,--
    আমার আত্মায় 
    তাদের লতানো দুঃখ
    লুকিয়ে জিতে যায়….
     
    দীর্ঘকাল কেটে গেছে!
    তেমন সময়ে, আমি,
    শ্বাসরুদ্ধ আর ফ্যাকাশে
    তোমার কথা ভাবি,--
    তারপর বাতাসের মতো
    ফোঁপাই আর কাঁদি।
     
    আর, বাতাসের মতো
    রুক্ষ ও নির্দয়
    দুঃখে তাড়িত
    আমি যাই, এখানে, সেখানে,
    বুঝি না কোথায় যাচ্ছি
    ঝরা পাতার মতন।
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 | 31 | 32 | 33 | 34 | 35 | 36 | 37 | 38 | 39 | 40 | 41 | 42 | 43 | 44 | 45 | 46 | 47 | 48 | 49 | 50 | 51 | 52 | 53 | 54 | 55 | 56 | 58 | 59 | 60 | 61 | 62 | 63 | 64 | 65 | 66 | 67 | 68 | 69 | 70 | 71 | 72 | 73 | 74 | 75 | 76 | 77 | 78 | 79 | 80 | 81 | 82 | 83 | 84 | 85 | 86 | 87 | 88 | 89 | 90 | 91 | 92 | 93
  • আলোচনা | ১০ নভেম্বর ২০২২ | ১১৭০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ১১ নভেম্বর ২০২২ ০৭:৫১513695
  • ভেরলেনকে নিয়ে, বা তার জীবন নিয়ে আপনার লেখাটি নেহাতই চর্বিতচর্বণ।
     
    কিন্তু কবিতার অনুবাদগুলো বেশ ভাল লেগেছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন