এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  লঘুগুরু  কড়চা

  • ত্রাণের একাল সেকাল পর্ব ১

    Eman Bhasha লেখকের গ্রাহক হোন
    লঘুগুরু | কড়চা | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৬৭ বার পঠিত
  • ত্রাণের একাল সেকাল পর্ব ১

    কথা ছিল ত্রাণ সংগ্রহ। খান্না হরি শাহের হাট থেকে মেটিয়াবুরুজ। টাকা যে খুব ওঠে তা নয়। তবে মেটিয়াবুরুজের মানুষ খুব উদার। ২০১৫ তে নেপালের ভূমিকম্প ত্রাণে মাইকে আমাদের আবেদন শুনে মানুষ এসে টাকা দিয়েছেন। ৫০ হাজার টাকার বেশি সংগ্রহ হযেছিল।
    ২০০৯ এ আয়লা ত্রাণে গিয়েছি। এশিয়ার সবচেয়ে বড় বস্ত্র বাজারে ১০ টাকা করে দিলেন হাটুতে মানুষ তথা কারিগর তথা ছোট মালিকরা। ওই বাজারের মালিক আলমগীর ফকির বললেন, কত টাকা চান? 
    আমরা বললাম, টাকা নয় কিছু চাল ডাল আলু পেঁয়াজ যদি দেন। 
    বললেন, বুধবার আসুন। 
    আমি এক সহযাত্রী অভিজিৎকে নিয়ে গিয়ে দেখি দানের উৎসব শুরু হয়েছে।। দু ট্রাক চাল ডাল আলু পেঁয়াজ জল। আর অজস্র নতুন জামাকাপড়। 
    সেবার ছটি গ্রামে প্রথম দফায় দিই। তারপর সবশেষে এলেন এক তরুণ। ম্লান মুখে কথা, আমাদের কিছু দেবেন? 
    তখন কুইন্টাল চারেক চাল, এক কুইন্টাল ডাল, দুই কুইন্টাল আলু, ৫০ কেজি পেঁয়াজ, জলের হাজার খানেক বোতল আর এক টিন তেল ও শ চারেক নতুন জামা কেবল পড়ে। 
    কত দুরে আপনাদের গ্রাম?
    গোলাবার অন্য পাড়ে বসে কথা হচ্ছিল। 
    বলল ঠিকঠাক চললে, ঘন্টা খানেক লাগবে নৌকায়। 
    বললাম, এগুলো নিয়ে যে যাবেন, লোক কোথায় ? 
    কেউ নেই। 
    বাজারে এসে শুনলাম কলকাতা থেকে একদল এসেছেন, প্র চুর ত্রাণ নিয়ে। শুনে ভাবলাম, যদি কিছু পাওয়া যায়। তিনদিন না খেয়ে বসে আছে মানুষ। কিছু নাই। রান্নার সরঞ্জাম পর্যন্ত নাই। কোনও সাহায্য আসেনি। 
    তাহলে? 
    রান্নাঘর চালাতে পারবেন? 
    পারবো, কিন্তু  টাকা তো নাই। 
    মশলা জ্বালানি লাগবে। 
    চলুন, আমরা দেবো।
    নৌকায় উঠে বসলাম। বিকেল। পৌঁছালাম সন্ধ্যার মুখে।। সেই প্রথম আশি কেজি চালের বস্তা মাথায়। 
    ২৫ কেজি চালের বস্তা তখন চালু হয়নি সেভাবে । ৮০ কেজির বস্তা। 
    ঘাড় বেঁকে যাচ্ছে। 
    নদীর পিছল গড়ানে মাটি। 
    পড়লাম। উঠলাম। গেলাম। 
    রাতে ফিরতে পারলাম না। ফেরার সময় প্রবল ঝড়। 
    নৌকা উল্টে যাওয়ার দশা।
    চার ঘন্টা লাগলো ঘাটে ভিড়তে। খিদেয় পেট চোঁ চোঁ। 
    নৌকার ওপরেই খালি পেটে  ঘুমিয়ে পড়লাম।
    ভোরের দিকে মাঝিরা তুলে বললেন, ভাত রেঁধেছি। আলু সেদ্ধ ভাত ভাত।। 
    ভোরে গরম ভাত সেই প্রথম খাওয়া। 
    আগের দিন দুপুরে খেয়েছি। তারপর আর খাওয়া নেই। 
    গায়ে বড় বড় দাগ। কী করে হল? 
    মাঝি বললেন, মশার। 
    খেয়াল হল, আমাদের নিয়ে যাওয়া চন্দন মাইতির ভায়ের খালি গায়ে এটা দেখেছি। 
    ভেবেছিলাম, চর্ম রোগ। 
    সিদ্ধান্ত নিলাম, ত্রাণে মশার ধূপ, পারলে মশারি দিতে হবে। 

    গতকাল কলকাতা থেকে আশি কিলোমিটার দূরে চারদিকে জলে ঘেরা ভাটোরা যাওয়ার সময় ম্যাটাডোরের উপরে সাড়ে চার ঘন্টা ধরে খর রোদে পুড়তে পুড়তে মনে পড়ছিল ২০০৯এর ২৯ মের স্মৃতি। 
    কিন্তু তখন বয়স ছিল ১৫ বছর কম। 
    আমার ট্রেন দুর্ঘটনায় পাঁজর ভাঙ্গেনি, সুগার প্রেসার, অস্টিওপোরোসিসসহ ৮-৯ টি রোগ জাঁকিয়ে বসেনি। 

    তবে তখনও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল এমন। 
    নন্দীগ্রাম পরবর্তী বাংলা কোনও ভাবেই কোনও কাজ যা সামান্য সুবিধা হয় করতে নারাজ। 
    আয়লা পরবর্তীতে নাগরিক সমাজ পথে নামে নি। সুশীল সমাজ  ত্রাণ তোলেননি। 
    ব্যতিক্রম শঙ্খ ঘোষ অশোক মিত্র। 
    আমার দুই মানসিক আশ্রয়। 
    তাঁদের কাছে গেলাম। বললাম, অবস্থা কত ভয়াবহ। 
    গ্রামের পর গ্রাম অরন্ধন। খাবার নেই। 
    সরকারি সাহায্য নেই। 
    বিরোধী দল কিছু করে নারাজ।
    সরকার বিপদে পড়ুক আরও। জনরোষ বাড়ুক এই লক্ষ্য। 
    বামফ্রন্ট সরকারের বাকি মন্ত্রীরা চুপ। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একা ছুটছেন। 
    বিধায়করা কাজ করতে গেলে মুখে কাদা মাখিয়ে বিরোধী দলের প্ররোচনায় লোকে জুতো ছুঁড়ছে। 
    কান্তি গাঙ্গুলী সাধ্যমতো করছেন। 
    তখন এমন অবস্থা তাঁকেও আমাদের ত্রাণসামগ্রী দিতে হয়েছে।। আর শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়। মন্ত্রী তখন। 
    দপ্তরের লোক মুখে স্যার স্যার বলছেন, কাজ করছেন না। 
    এদিকে রটে গেছে, ত্রাণ দিতে গেলে লুঠ হয়ে যাচ্ছে। 
    বিকাশ ভট্টাচার্য তখন মেয়র, আজ যাদের চোখের মণি তাঁরা গাল দিচ্ছেন আড়ালে দলের ভিতরে। 
    আর টিভি চ্যানেল খবরের কাগজ ( আজকাল ছাড়া) ধুইয়ে দিচ্ছে। 
    বিকাশ ভট্টাচার্য নিজে গাছ কাটার তদারকি করছেন। 
    পার্টির লোক পাশে নেই। 
    শহর জুড়ে গাছের ডালপালা।
    বিদ্যুৎ নেই বহু এলাকায়। জলবন্দি কিছু এলাকা।। এই সময় শঙ্খ ঘোষ অশোক মিত্রের নামে একটা বিবৃতি দেওয়া হল, আসুন সুন্দরবনের লাখ লাখ বিপন্ন মানূষের পাশে দাঁড়াই। 
    নন্দীগ্রাম মিছিলে যাঁরা বুম নিয়ে কলম নিয়ে শঙ্খ ঘোষের পিছু সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য বিফল মনোরথ হয়ে ছুটছিল তাঁরা কেউ লাইন খবর করলেন না। 
    মনোভাব, অবাক করা। আজকের মতোই। 
    'আজকাল' সম্পাদক অশোক দাশগুপ্ত এবং দৈনিক স্টেটসম্যান সম্পাদক মানস ঘোষ বিনা পয়সায় বিজ্ঞপ্তি ছেপে দিলেন। 
    সব বিদ্বজ্জনকে ফোন করলাম। 
    স্যারও কররেন। 

    তেসরা জুন খররোদে বিকাল তিনটায় কফি হাউসের সামনে নামলেন অশক্ত বৃদ্ধ অশোক মিত্র। স্যার আগেই গিয়েছিলেন। 
    এলেন কেবল রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, বিভাস চক্রবর্তী ও সুবোধ সরকার। 
    সুবোধ সরকারের নাম নিয়ে কয়েকজন সহত্রাণী আপত্তি করেছিলেন। 
    শঙ্খ ঘোষ বললেন, বিপন্ন মানুষের পাশে যিনি দাঁড়াতে চান, তিনিই স্বাগত। 
    ( যাঁরা তীব্র আপত্তি করেছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ এখন একসঙ্গে নিয়মিত বৈঠকে বসেন)। 

    সুবোধ ঘোষ, বিভাস চক্রবর্তী, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত আমার অনুরোধে কৌটো নিয়ে কফি হাউসের টেবিলে টেবিলে কৌটো নিয়ে ঘুরলেন। 
    কেউ কেউ দিলেন। 
    কেউ কেউ দিলেন না। 
    বললেন, ওরা আমরা এক হয়ে গেল?
    রাতে টিভি চ্যানেলে বিরাট বিতর্ক: ওরা আমরা এক হয়ে গেল? কেন? 

    বিপন্ন মানুষের ওরা আমরা করতে নেই, কে বলবেন? 
    এদিকে তলায় নেমে দেখি আরেক নাটক। 
    আমাদের মাইকের পিছনে আরেকটি ম্যাটাডোর হাজির।। 
    তাতে তারস্বরে ঘোষণা হচ্ছে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এজেন্টের দল খুনী নন্দীগ্রামের গণহত্যাকারী সরকারের পক্ষে ত্রাণে নেমেছে। 
    একটি পয়সাও দেবেন না। 

    যিনি বলছিলেন, তিনি ভালো করেই জানতেন, সিঙ্গুরে জমি নেওয়ার বিরুদ্ধে প্রথম বই আমি লিখেছি। 
    তথ্যচিত্র বানিয়েছি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • লঘুগুরু | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৬৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন