এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  ইতিহাস

  • ইসলামের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ১

    Eman Bhasha লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ইতিহাস | ১২ জুলাই ২০২৪ | ৩৫৫ বার পঠিত
  • 1
    ইসলাম প্রবর্তনের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা
    ইমানুল হক

    ধর্মের সম্পর্কে কেউ বাড়াবাড়ি করবে না। এই বাড়াবাড়ির জন্য বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।
    - হজরত মহম্মদ। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মার্চ আরাফত ময়দানে শেষ ভাষণে।

    ১.

    খ্রিস্টান স্ত্রী মরিয়মের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন হজরত মহম্মদের পুত্র ইব্রাহিম। শিশু অবস্থাতেই মারা যান তিনি। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি। ওই দিন সূর্যগ্রহণ হয়। মহম্মদ কুসংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন না। তাই সঙ্গী মুসলমানদের বলেন, ‘এর সঙ্গে আমার পুত্রের মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই’।

    হজরত মহম্মদ (সা:)একটি যুক্তিবাদী ধর্মপ্রচারের প্রধান বাণীবাহক। পৃথিবীর অন্য ধর্মগুরু ও প্রবর্তকরা যখন নিজেদের ‘ঈশ্বরের সন্তান’ বা ‘ঈশ্বর’ বলে দাবি করেছেন তখন তিনি উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। নিজে কোনো কুসংস্কারে বিশ্বাস করতেন না। মানুষের অলৌকিক ক্ষমতা নেই, সেকথা জানাতেও ভোলেন নি। কোরেশরা যখন তাঁকে কোনো অলৌকিক ক্ষমতার পরিচয় দিতে বলে, যথা ধুলোকে সোনা, শূন্য থেকে মিষ্টি বা কোরান নামিয়ে আনা ইত্যাদি -- তিনি প্রতিটি কথার জবাবে বলেন, আমি একজন মানুষ এবং মরণশীল মানুষ।

    ব্যক্তি পূজার তীব্র বিরোধী ছিলেন পবিত্র মহম্মদ (সা)। তাঁর কোনো মূর্তি নেই। ছবি পর্যন্ত আঁকতে দেন নি। কারণ, তিনি জানতেন, রক্তজ পৌত্তলিক মানুষরা তাহলে তাঁকেই পুজো শুরু করবে। নিজেকে কখনও কোনোদিন ঈশ্বরের সন্তান বলেও দাবি করেন নি। তিনি ঈশ্বরের প্রেরিত দূত --- এভাবেই তাঁর ব্যাখ্যা।

    ২.

    একমাত্র বর্তমানের চোখ দিয়েই আমরা অতীতকে দেখার ও তার সম্বন্ধে বোধ অর্জন করতে পারি।
    ই.এইচ.কার। কাকে বলে ইতিহাস পৃ. ১৯।

    ইসলামের ইতিহাস জানতে হলে আরব, আরব জাতি ও মহম্মদকে জানা জরুরি। আরব ছিল রহস্য ও রোমান্সের দেশ। এই দেশ নীরবতা ও নির্জনতায় আচ্ছাদিত ছিল, জগতের বৃহৎ জাতিসমূহ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, তাদের যুদ্ধ বিগ্রহ ও শাসনব্যবস্থার প্রভাবমুক্ত ছিল। খসরু ও সিজারের সৈন্যবাহিনী শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তার সীমান্ত অভিযান চালিয়েছে, কিন্তু তার নিদ্রাভঙ্গ হয়নি। যদিও বাইজানটাইন ও পারস্য সাম্রাজ্যের ওপর বারংবার আপতিত গুঞ্জনের দূর গুঞ্জনধ্বনি প্রায়ই তার কানে প্রবেশ করেছে, কিন্তু তা ঘুম টুটাতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তারও পালা আসল এবং সে তার মহানতম সন্তান হজরত মহম্মদ-এর বাণীর মধ্যে তার বাণী খুঁজে পেল।

    ‘দ্য স্পিরিট অব ইসলাম’ গ্রন্থে এই মন্তব্য করে সৈয়দ আমির আলি লিখছেন --
    ‘‘ জাতির লৌকিক কাহিনি সম্পর্কে তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল, কিন্তু আধুনিক অর্থে শিক্ষা বলতে যা বোঝায় তা তাঁর ছিল না। হজরত মহম্মদ (সা:) যখন জন্মগ্রহণ করেন সে সময় আরব সমাজ ছিল নীতিভ্রষ্ট পথভ্রষ্ট। মানুষ অন্যকে বিশ্বাস করত না, এমনকি নিজেরও ওপর তার ছিল অনাস্থা। আরব জাতির প্রতি ভালোবাসা সত্ত্বেও মহম্মদ ছিলেন ভাবনা-চিন্তায় স্বতন্ত্র। সমাজ ছিল উচ্ছৃঙ্খল। অগম্যাগামী এই সমাজে যথেচ্ছাচার ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। বিনা কারণে বিভিন্ন গোত্রগুলি ঘৃণা ও বিদ্বেষে উদ্দীপিত হয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হত। তীব্র প্রতিহিংসাপরায়ণতা ছিল সম্মানজনক বিষয়। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটত যখন মানুষ কোনো মেলায় অংশ নিয়েছে আনন্দের জন্য, তখন দুই গোত্রের দুটি লোকের তুচ্ছ কারণে কথা কাটাকাটি রূপান্তরিত হত দুই বা তাদের সমর্থক গোত্রের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষে। এতে মানুষ প্রায় মারা যেতেন। আর এই মৃতু্যর প্রতিশোধ গ্রহণ পর্ব চলত প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। যুক্তি নয় ভাবাবেগই ছিল প্রধান বিবেচ্য। মানুষ ছিল নীতিহীন এবং সন্দেহপরায়ণ। প্রতিবেশীর সম্পর্কে উদার মনোভাব ছিল না। ’’

    হজরত মহম্মদ (সা:) শিশু অবস্থায় লক্ষ্য করেছিলেন এক ভয়ংকর অবমাননাকর যুদ্ধ। প্রসিদ্ধ জুলকাদ মাসে ওকাজ-এ বাৎসরিক মেলা বসত। এই সময় সংঘর্ষ বা যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া বা রাগের মাথায় রক্তপাত ছিল নিষিদ্ধ বিষয়। এটা ছিল ‘ঐশী যুদ্ধবিরতি’। ওকাজ-এর মেলা ছিল জাতীয় মেলা। এই সময় যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ, শত্রুতা এবং গোত্রবিরোধও থাকত মুলতুবি।
    আরব দেশে সে সময় জুল, মার্জাজ ও মাজনায় অন্যান্য মেলা বসত। কিন্তু ওকাজের মেলা ছিল আরবের জাতীয় মেলা। এই মেলায় আরবের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও বিভিন্ন দূরবর্তী দেশ থেকে বণিককুল কবিদল, বীর ও অভিনেতাগণ সমবেত হত। বহু পণ্যসম্ভারে পূর্ণ হত মেলাপ্রাঙ্গণ। কবিরা শোনাত বীরত্ব, প্রেম ও প্রতিহিংসার উদ্দীপক গান। আসত নর্তকী ও বেশ্যারা। গান, নাচের মধ্যে দিয়ে উত্তেজিত করত আরব পুরুষদের। তাঁবুতে তাঁবুতে চলত যথেচ্ছ যৌনাচার। মদের প্লাবন বইত। জুয়াড়িরা মত্ত থাকত রাতভর জুয়ার আসরে। আর সেকালে কবিরা ছিল আরব জীবনে বিপুল ভুমিকা গ্রহণকারী। তাঁদের প্রতিহিংসার বন্দনায় মুখর কবিতাগুলি প্রমত্ত জনতাকে প্রায়ই লিপ্ত করত প্রলয়ঙ্করী সংঘর্ষ। প্রসঙ্গত, আরব দেশই কবিতার জন্মভূমি। অন্যত্র ছিল সংগীত।

    ৩.

    এই দুর্দশাগ্রস্ত আরব জীবন হজরত মহম্মদের শিশুমনে রেখাপাত করে। প্রতিহিংসা, প্রমত্ততা থেকে কী করে মুক্ত করা যায় জাতিকে, ভাবতে থাকেন তিনি। তিনি লক্ষ্য করেন, ওকাজ হচ্ছে আরব দেশের অলিম্পিয়া, সেই অলিম্পিয়াও বিবাদহীন অবস্থায় সম্পন্ন হয় না।

    হজরত মহম্মদের শিশু বয়সে আরব দেশে শুধু নয়, অন্যত্রও ছিল হিংসা ও প্রতিহিংসার জয়যাত্রা। বাইজানটাইনের তৎকালীন সম্রাটমরিসকে এক খ্রিস্টান রাজার আদেশে প্রাসাদ থেকে টেনে হি¥চড়ে বের করে চোখের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সম্রাটপত্নী ও তাঁর কন্যারাও রেহাই পাননি। সম্রাট মরিসের শিরচ্ছেদে রক্তাপ্লুত মাটিতে সম্রাজ্ঞী ও তাঁর কন্যাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। রাজঅমাত্য ও বন্ধুদের কারও চোখ তুলে নেওয়া হয়, কারও হাত-পা কেটে ফেলা হয়। কাউকে পুড়িয়ে মারা হয়। ঐতিহাসিক গিবন এই নৃশংসতা, যা প্রচলিত ছিল ষষ্ঠ শতকের খ্রিস্টান সমাজে, তার বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন, ‘সহজ দ্রুত মৃত্যু ছিল নিহতদের জন্য করুণা। কিন্তু তাদের ভাগ্যে তা প্রায়ই জুটত না।’ আর মিলম্যানের মন্তব্য---ধর্মযাজকরা ধর্মীয় বিশ্বাসের একানুবর্তিতা চাপিয়ে দেওয়ার মত্ততায় উন্মাদ হয়ে উঠেছিল।

    সভ্য বলে পরিচিত আলেকজান্দ্রিয়ার রাজপথে নিহত হয়েছিলেন হাইপাটিয়া নামে একজন শিক্ষিতা, সুন্দরী ও বিদুষী মহিলা। এই বিদুষী মহিলার নিজস্ব একাডেমিতে পড়াশোনা ও বিতর্ক চলত। যা খ্রিস্টান যাজকদের না-পসন্দ ছিল। শেষে একজন ধর্মযাজক, যিনি সেন্ট বা ‘সন্ত’ উপাধিতে ভূষিত হন, তার প্ররোচনায় একদল খ্রিস্টান অধ্যাপকের দ্বারা হাইপাটিয়া প্রকাশ্য রাজপথে আক্রান্ত হন। ওই বিদুষী তাঁর নিজস্ব একাডেমি থেকে যখন শকটে চড়ে বের
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    1
  • ধারাবাহিক | ১২ জুলাই ২০২৪ | ৩৫৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন