typst: অনলাইনে সহজ টাইপসেটঅনলাইনে বাংলা লেখার এখন বিবিধ উপায় এবং বহু অনলাইন প্রকাশনী নানারকমের লেখা, প্রবন্ধ ইত্যাদি প্রকাশ করে। তাদের বেশীর ভাগ সরাসরি ওয়েব পেজে দেখতে পাওয়া যায় | লেখাকে একই সঙ্গে অনলাইনে ওয়েবে এবং কাগজে ছাপার মতন করে প্রকাশ করতে গেলে পোর্টেবল ডকুমেন্ট ফরম্যাট (PDF) একটি ভাল উপায়। অনেকে মাইক্রোসফট ওয়ারডে লিখে তাকে পিডিএফে রূপান্তরিত করে নেন। অনেকে অন্য অনেক রকমের সফটওয়্যার ব্যবহার করেন, বিশেষ করে টাইপসেটিং এর জন্য। টাইপসেট বিশেষ করে যেখানে গণিত বা নানান রকমের সিম্বল লেখা হয়, বা গবেষণাধর্মী লেখার জন্য আজ প্রায় পঞ্চাশ বছরের ওপর টেক (TeX), এবং তার 'অপভ্রংশ' লেটেক (LaTeX) বহুল প্রচলিত। গণিত, রাশিবিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি নিয়ে যারা কাজ করেন, তাঁরা প্রবন্ধ লেখার কাজে এই সফটওয়্যারটি প্রায় ব্যবহার করেন। এছাড়াও যারা লেখাকে পিডিএফ ফর্মে বইএর আকারে ছাপতে চান, তাঁরাও ব্যবহার করেন। এখন লেটেক বা লাটেক যদিও খুব কাজের, তাহলেও তাকে শিখে কাজে লাগানোর একটি জটিল ব্যাপার রয়েছে। তাছাড়াও অনলাইনে একে ব্যবহার করে খুব সহজ নয়। বাংলায় লাটেক ব্যবহার করতে গেলে
https://ctan.org/pkg/bangtex%3Flang%3Den ব্যবহার করা যেতে পারে। এ সব ব্যাপার বেশ জটিল, বিশেষ করে লাটেক সফটওয়্যারটি ইনস্টল করাই অপেক্ষাকৃত জটিল, অনেকে আজকাল আর একে অন্যান্য কাজ যেমন চিঠি লেখা, গবেষণার কাজ ইত্যাদিতে ব্যবহার করেন না। তাহলেও ইলেকট্রনিক টাইপসেটিং এর ক্ষেত্রে এর জুড়ি নেই | ব্যাপারটিকে সহজ করার জন্য অনেকে
https://www.overleaf.com বা Overleaf]নামে একটি অনলাইন সফটওয়্যার ব্যবহার করেন, তাতে লাটেক লেখাও হল, লাটেকের জটিলতা প্রায় নেই | বহু ছাত্র এবং গবেষক একে ব্যবহার করেন।
সম্প্রতি বছরখানেক হল দু'জন জারমান ছাত্র
https://typst.app নাম দিয়ে একটি অত্যন্ত সহজ এবং চমৎকার অনলাইন ওয়েবকেন্দ্রিক টাইপসেটিং সিস্টেম লিখেছেন, এটিকে আপনি ইচ্ছে করলে শুধুই অনলাইনে ব্যবহার করতে পারেন, না হলে নিজের কমপুটারে ইনস্টল করেও ব্যবহার করতে পারেন, বিশদে জানবার জন্য
https://typst.app নামের সাইটটিতে গেলে ব্যাপারটা দেখতে পাবেন। আলাদা করে কোন সফটওয়্যার না নিয়েই বাংলা ভাষায় টাইপস্ট দিযে ভালভাবেই টাইপসেট করে লেখা যায়। বাংলায় লেখা, সঙ্গে সঙ্গে পিডিএফ ও তৈরী হয়ে যায়। এই প্রবন্ধটিতে টাইপস্টের একটি সংক্ষিপ্ত 'অবতরণিকা' লিখে রাখলাম, মূল লেখাটি টাইপস্টেই লেখা হয়েছে।
প্রবন্ধ লিখতে গেলে সাধারণত তালিকা, ছবি, সারণী, লিঙ্ক, টীকা, তথ্যপঞ্জী দিয়ে লিখলে লেখাটা বেশ হয়। ইংরেজীতে সে সব লেখা অপেক্ষাকৃত সহজ, বাংলায় লিখে তাকে ছাপানো খুব একটা সহজ নয়। অন্যান্য অনেক অনলাইন সফটওয়্যারে ভাল করে করা যায় না। টাইপস্টে এ কাজগুলো মোটামুটি ভাল ভাবে করে ফেলা যায়। এই লেখাটি খুব সামান্য একটি প্রয়াস, আসল সফটওয়্যারটিতে আরো _অনেক_ কাজ করে যায়।
তালিকা নম্বরের তালিকা এইভাবে লিখতে হয়:
+ প্রথম
+ দ্বিতীয়
+ তৃতীয
লক্ষ করুন, একটি যোগচিহ্ন দিয়ে তারপর একটু জায়গা রেখে বাকী লেখাটা |
নম্বর না দিয়ে তালিকা:
- প্রথম
- দ্বিতীয়
- তৃতীয়
ছবি ও সারণী (ইং: টেবিল)
আপনি এমনিই ছবি তুলে সেটিকে সরাসরি দেখাতে পারেন। বা আরো ভাল হয় যদি সে ছবিকে একটি ছবির "পরিবেশের" মধ্যে রাখেন। কিভাবে করবেন তার কোড নীচে লেখা হল:
`
#figure(caption:['গোলাপ'],
image("rose_tipspng.png"))<rose>
`
এটা লিখলে নীচের গোলাপ ফুলের ছবিটি দেখতে পাওয়া যাবে।
একই রকম ভাবে, লেখার সারণী (ইং: Table) লিখে রাখা যেতে পারে।
যেমন ধরুণ,
#figure(caption: ["টেবিল বা সারণী"],
table(columns: 2,
[* কি লিখবেন*], [* কিভাবে লিখবেন *],
"italics", "_ এর মাঝে শব্দ _",
"হেডলাইন", "= দিয়ে একটু জায়গা ছেড়ে লিখতে হবে",
"তালিকা", "- ড্যাশ, তারপর একটা স্পেস ছেড়ে লিখতে হবে",
"গাঢ় অক্ষরে লেখা", "* শব্দ * (তারা চিহ্নের মাঝে)",
"অন্যান্য", "তার জন্য 'ফাংশান' ব্যবহার করতে হবে"
)
)<howto>
লিখলে নিম্নলিখিত টেবিলটিকে দেখা যাবে
এখানে আরো একটি ব্যাপার আছে, যেমন ধরুণ আপনি গোলাপ ফুলের ছবিটিকে প্রবন্ধ বা গল্পের অন্য একটি জায়গায় "রেফার" করতে চান, যেহেতু এটির একটি নাম দেওয়া হয়েছে ("rose"), এবং Figure 1 নামে দেখানো আছে, আপনি যদি `@rose` কথাটি লেখেন, তাহলে আপনার লেখার সফটওয়্যার সেই জায়গাটিতে Figure 1 কথাটি আপনা আপনিই বসিয়ে দেবে | এবার মনে করুন, আপনি আপনার লেখায় প্রচুর ছবি রেখেছেন, ও এখন যেটি প্রথম ছবি বলে লিখেছেন তার আগে আরো একটি বা দুটি ছবি রাখলেন। তখন নিজে থেকেই সফটওয়্যারটি ছবিগুলোকে কোনটা প্রথম, কোনটা দ্বিতীয়, ইত্যাদি স্থির করে ঠিকমতন লিখে রাখবে, আপনাকে আর আলাদা করে লিখে রাখতে হবে না। এই ব্যাপারটি অবশ্য এই ধরণের প্রায় সব রকমের সফটওয়্যারেই করা যায়, আলাদা করে টাইপস্ট করছে এমন নয়।
লিঙ্ক এবং টীকাপ্রায় যে কোন প্রবন্ধ লিখতে গেলে যে কোন লেখককেই বিভিন্ন সূত্রের সাহায়্য নিতে হয়। সাধারণত লেখার শেষে তাদের সারিবদ্ধভাবে তথ্যপঞ্জী নাম দিয়ে লিখে রাখা হয় একং মূল লেখার যে যে জায়গায় তথ্যসূত্রের উল্লেখ রয়েছে, সেখানে তাদের উল্লেখ করতে হয়। ধরুণ, আপনি গুরুচণ্ডালীতে সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের "সিঁড়ির নীচে বিড়ির দোকান" নামের লেখাটির কোথাও উল্লেখ করতে চান। একে আপনি দুরকম ভাবে করতে পারেন।
১) লেখাটার একটা লিঙ্ক লিখে সরাসরি পাঠককে দেখাতে পারেন, যেটি আমার মনে হয় ওয়েব পেজে সুবিধর হয় | সেটা করতে গেলে হয় আপনি সরাসরি লিঙ্কটির উল্লেখ করতে পারেন, যেমন,
https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=28948সেটা না করতে চাইলে যদি "সিঁড়ির নীচে বিড়ির দোকান" এই কথাটির হাইপারলিঙ্ক দেখাতে চান তাহলে `#link("
https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=28948")[সিঁড়ির নীচে বিড়ির দোকান]` লিখলে দেখবেন হাইপারলিঙ্কে দেখাচ্ছে,
সিঁড়ির নীচে বিড়ির দোকান২) সেটা না করে যেহেতু আপনি লেখাটিকে পিডিএফ বা ধরুন পাতায় ছাপা অবস্থায় দেখাতে চান, বা দেখতে চান, আলাদা করে তথ্যপঞ্জীতে লিখে রাখুন, যে কথা বলে লেখার এই অংশ শুরু করেছিলাম। সেটা করতে হলে দুরকম ভাবে করা যেতে পারে। টাইপস্টের নিজের হয়গ্রীব নামে একটি রেফারেনস ম্যানেজমেন্ট এর ব্যবস্থা আছে, বা সচরাচর অনেকে bibtex ব্যবহার করেন, যেটি সুপ্রচলিত। আপনি bibtex এ মনে করুন সৈকতবাবুর লেখাটি এইভাবে নথিবদ্ধ করেছেন,
`
@article{saikatb,
title = "সিঁড়ির নীচে বিড়ির দোকান",
journal = "গুরুচণ্ডালী",
year = 2024
}
`
এখানে saikatb কথাটি এই আর্টিকেলটির "নাম" বা চিহ্ন যা দিয়ে টাইপস্ট খুঁজে বার করবে। এবার লেখার শেষে "তথ্যপঞ্জী" লিখে রাখলেন | নীচের কোড লক্ষ করুন,
`
#bibliography("refs.bib",
title: [তথ্যপঞ্জী])
`
এবার যেখানে সৈকতবাবুর লেখাটির সূত্র উল্লেখ করতে চান, সেখানে `@saikatb` কথাটি লিখলে লেখার শেষে সৈকতের লেখাটির [1] সূত্র উল্লিখিত হবে |
== পরিশেষে
টাইপস্ট দিয়ে যা দেখা যাচ্ছে ভালভাবেই লেখালিখি করা যায়। তবে আজকালকার দিনে যেহেতু অনলাইন লেখা পড়ার জগৎ, একে যদি ওয়েবে পড়ার জন্যও ডেভেলপররা তৈরী করেন, তাতে সুবিধে হবে। প্যানডক নামের একটি অ্যাপ দিয়ে সে সব কাজই করা যায়, তাহলেও শুধু পিডিএফ না করে ওয়েবসাইটেও দেখা গেলে ভাল হত। তো সেটি একটা দিক |
তথ্যপঞ্জী
[1] সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়, সিঁড়ির নীচে বিড়ির দোকান, গুরুচণ্ডালী, 2024
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।