কাজী নজরুল ইসলামের ("বিদ্রোহী কবি") ভাঙার গান শীর্ষক "কারার ঐ লৌহকপাট" গানটিকে সম্প্রতি আল্লারাখা রহমান সাহেব পিপা নামে একটি চলচ্চিত্রে নিজের মতন করে সুর দিয়ে ব্যবহার করেছেন। গানের কথা এক রেখেছেন কিন্তু সুরটি নিজের মতন করে অনেকটা বাংলার লোকসঙ্গীতের আঙ্গিকে (শুনে মনে হল, আমি সুরের সমঝদার নই, পাঠকদের কাছে নিবেদন, যদি ভুল মনে হয়, শুধরে দেবেন)। এর পর বহু বাঙালী শ্রোতা গানটি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন, গানটির ইউটিউব চ্যানেলে প্রচুর নিন্দনিয় কমেন্ট দেখা যাচ্ছে। এমনকি পবিত্র সরকার প্রভৃতিরা প্রতিবাদমূলক চিঠি দিয়েছেন যাতে তাঁরা দাবী করেছেন নজরুলের বিদ্রোহী “চেতনাকে অসম্মানীত" করা হয়েছে।
তবে সবাই যে একাদিক্রমে নিন্দা করছেন তাও নয়। অনেকেই মনে করেন যে যারা গানটির নিন্দা করছেন তারা বাড়াবাড়ি করছেন, তারা মাত্রাতিরিক্ত সংবেদনশীল। নজরুলের "কারার ঐ লৌহকপাট" গানের প্রসঙ্গে একটা বিষয় নিয়ে ভাবনার অবকাশ রয়েছে। আমাদের গান শুনতে কেন খারাপ/ভাল লাগে? সে কি গানের কথার জন্য, না কি, গানের সুরের জন্য? যেমন, কারার ঐ লৌহকপাট গানটিতে রহমান গানের কথার কোন পরিবর্তন করেননি, যদিও সুর, তাল, লয় সমস্তকিছুর পরিবর্তন করেছেন, গানটার কথার যেখানে সেখানে যতি দিয়েছেন, এমন একেক জায়গায় যতি দিয়েছেন যেখানে ঠিক সাধারণ ভাবে যতি থাকার কথা নয়। যার জন্য গানটি সাধারণত যে প্রেক্ষিতে গাইবার কথা (কারারুদ্ধ মানুষের বিদ্রোহের গান), সেই প্রেক্ষিতটি নষ্ট হয়ে গেছে বা হয়ত ইচ্ছাকৃতভাবে রাখা হয়নি, গানের কথা অপরিবর্তিত থাকা সত্ত্বেও। হয়ত এই কারণেই, যারা নজরুলের সুরে এই গানটি এর আগে শুনেছেন, তারা প্রায় একমত যে রহমান "সম্পূর্ণ গানটির" বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছেন। শুধু তাই নয়, রহমান গানের অন্তর্নিহিত ভাবটাকেই নষ্ট করে ফেলেছেন, এমন অভিযোগও ভদ্রলোকের বিরুদ্ধে অনেকেই তুলেছেন। যদিও এই প্রবন্ধটির সূত্রপাত নজরুলের এই গানটিকে এবং তাকে ঘিরে বিভিন্ন মানুষের প্রতিক্রিয়াকে কেন্দ্র করে, এই আলোচনাটি মূলত গান ভাল লাগা না লাগার একটি মনস্তাত্ত্বিক বা আরেকটু ভেবে দেখলে এর যে একটি স্নায়ুশাস্ত্রের দিক রয়েছে, তাকে নিয়ে।
এখানে, মনে করুন, উল্টোটা ভাবা যাক, ধরুন গানটার সুর যদি রহমান এক রাখতেন, কিন্তু নিজের মতন করে কথা বসাতেন, তাহলে ব্যাপারটা কেমন হত? তাহলেও কি একই অভিযোগ উঠত? খুব সম্ভবত, মনে হয় না কেউ সাংঘাতিক আপত্তি করতেন। সুর একই রইল, কথা বদলে গেল, এমন প্রচুর উদাহরণ রয়েছে, হাতের কাছে আমার প্রিয় দুটো গানের কথা লিখি, আপনারা নিশ্চয় শুনেছেন। মোৎসার্টের ৪০ নম্বর সিমফনি লিওনার্ড বার্নস্টাইনের নির্দেশনায় যারা শুনেছেন, আমার সঙ্গে হয়ত একমত হবেন যে কি প্রাণ ভরানো সে অভিজ্ঞতা। আবার সেই একই সুরে যখন সলিল চৌধুরির হাতে হিন্দিতে “ইতনা না মুঝসে তু" রূপ পায়, সে গানও শুনতে বড় ভাল লাগে। আমি অন্তত কাউকে এমন দাবী করতে শুনিনি যে সলিল চৌধুরি মোৎসার্টের সিমফনির বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছেন। মোৎসার্টের বাজনা না হয় ক্লাসিক এবং সুপ্রাচীন, আরো একটু সমসাময়িক কালে, জোয়ান বায়েজের গলায় ফাইভ হানড্রেড মাইলস অপূর্ব শুনতে লাগে, আবার সেই একই "সুরে" ভিন্ন ভাষায়, ভিন্ন কথায় রাজেশ রোশনের লেখায়, সুরে, আর কুমার শানু/সাধনা সরগমের গলায় “যব কোই বাত বিগড় যায়ে" গানটি শুনলে কি মনে হয়, শানু/সাধনা ফাইভ হানড্রেড মাইলস গানটার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন? বরং অনেকে মনে করেন, হিন্দি জনপ্রিয় ফিলমি গানের জগতে এ এক কালজয়ী গান। শুধু তাই নয়, বাংলায় এককালে প্যারডি গানের রমরমা বাজার ছিল, এবং মিন্টু দাশগুপ্ত প্যারডি গাইয়ে হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন (এখনো ইউটিউবে তাঁর বেশ কিছু গান শুনে দেখতে পারেন, ⇒ )
কাজেই কথা অপরিবর্তিত রেখে গান ভিন্ন সুরে শুনলে মানুষের এক রকমের প্রতিক্রিয়া; আবার একই সুরে ভিন্ন কথায় গান শুনলে অন্য রকমের প্রতিক্রিয়া কেন হয়? এর একটা কারণ হতে পারে, গান শোনবার সময় সুর আর কথা আমরা বিভিন্নভাবে মস্তিষ্কে উপলব্ধি করি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে সত্যি তাই, আমরা গানের সুর মস্তিষ্কের যে অংশে বিশ্লেষণ করি, এবং গানের কথা যে অংশে বিশ্লেষণ করি, সে দুটো অংশ একে অপরের থেকে পৃথক, যদিও এদের মধ্যে সমন্বয় রয়েছে । আবার এও হতে পারে, যে, গানে হয়ত সুরই প্রধান, কথা তার আনুষঙ্গিক, বা অন্তত ততটা শ্রোতার কাছে গুরুত্ব পায় না। আপাতভাবে যাই মনে হোক, এর স্বপক্ষেও গবেষণা রয়েছে। শুধু তাই নয়। গানের একটি সামাজিক নির্মাণের ব্যাপার রয়েছে, যেখানে শুধু সুর নয়, শুধু কথা নয়, দুটো ব্যাপারের এবং তাদের সামাজিক পরিস্থিতির একটি অবিচ্ছেদ্য মেলবন্ধন থেকে যায়। যেমন নজরুলের যে গানটি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেছি, "কারার ঐ লৌহকপাট” গানটির বেলাতেই দেখা যাচ্ছে, ১৯২০ সালে যখন নজরুল গানটি লিখেছিলেন তখন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে সে গানের অন্য তাৎপর্য ছিল। আজকে গানটির সুর পরিবর্তন করে যখন বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিকায় গানটিকে রাখা হয়েছে, সেখানেও অন্যরকম মাত্রা পেয়েছে। তাছাড়াও যারা গানটি গেয়েছে, বাংলা ভাষাতেই গেয়েছে, তাদের নিশ্চয়ই খারাপ লাগেনি, তারা প্রতিবাদও করে নি নিশ্চয়ই। এর বাইরে স্নায়ুবিজ্ঞানের একটি ব্যাপার রয়ে গেছে। দেখা যাক।
একটা কাজ করুন। নীচের একটি wav ফাইলে লিঙ্ক করা আছে, ফাইলটি একটি কথার, শুধু কথাটিকে কম্পিউটারেরা সাহায্যে একটু বদলিয়ে দেয়া হয়েছে, কথাটি শুনুন প্রথমে:
তৃতীয়বার প্রথম বাক্যটি আরেকবার যখন ফিরে শুনলেন, তখন মনে হল না এবার বেশ বুঝতে পারলাম? খুব স্পষ্ট না হলেও কথাটিতে কি বলতে চাইছে সেটা বুঝে উঠতে অন্তত অসুবিধে হল না। এই যে কথার শব্দজব্দ, মানে শব্দটাকে পালটে দেয়া, এর নাম sine-wave speech, মানে কথার বিভিন্ন জায়গায় কিছু পিওর টোন শিস জাতীয় শব্দ জুড়ে তৈরী করা হয়েছে। এর উদ্ভব সত্তরের দশকে আমেরিকায় গবেষকদের হাতে, এরা আবিষ্কার করার চেষ্টা করছিলেন মানুষ সাধারণত অন্যের কথাকে কি করে অনুধাবন করে। শব্দতরঙ্গের ঠিক কোন জায়গাটাতে আমরা "মন দিই", এইটা এদের গবেষণার বিষয় ছিল। আপনি হয়ত লক্ষ্য করেছেন, প্রথমে কথাটার কিছুই বোঝা গেল না, অথচ তৃতীয়বার সেই একই কথা মোটামুটি বুঝতে পারা গেল। প্রথমবার যেমন কিছু বোঝা যাচ্ছিল না, দ্বিতীয়বার আসল কথাটা শোনার পরে যখন আবার শুনলেন, তখন সেই অনিশ্চয়তাটি আর রইল না। দ্বিতীয়বার শোনার পর সেই একই কথার scrambled অবস্থার মধ্যে থেকেও মূল কথাটি "ধরতে পারার" সমস্যাটা আর রইল না, তাই না? শুধু তাই নয়, আপনি যদি এই ধরণের scrambled বা গুলিয়ে দেয়া শব্দসমষ্টি বার বার শোনেন মূল কথাটিকে না শুনেই, কিছুক্ষণ পরে দেখবেন যে এক সময় এই কথাগুলো দিব্যি বোঝা যাচ্ছে, সেগুলো আর অচেনা অসংলগ্ন শব্দবন্ধ হয়ে থাকছে না। এ এক অদ্ভুত ব্যাপার। আরো দুটো অডিও ক্লিপ শোনাই। মন দিয়ে শুনুন, প্রথমটা: https://en.wikipedia.org/wiki/File:YannyLaurel.ogg শুনে কি মনে হচ্ছে? কি বলতে চাইছে? কথাটা কি “ইয়ানি" না “লরেল”? এবার আবার শুনুন, একই কথা, এবার শব্দের কম্পাঙ্কের হারটিকে বা স্পন্দনের হারটিকে আরেকটু বাড়িয়ে দেয়া হল: https://en.wikipedia.org/wiki/File:Laurel.ogg এবার খুব সম্ভবত শুধুই “লরেল" শুনলেন, অথচ মূল কথাটি একই ছিল, বিশ্বাস করুন। ২০১৮ সালে আমেরিকার দুজন ইস্কুলের ছেলে ব্যাপারটিকে প্রথম রেডিটে প্রকাশ করে, পরে আরেকজন এই সাউণ্ড ক্লিপ নিয়ে ইনস্টাগ্রামে দেন | এ নিয়ে পরে ইন্টারনেটে "ঝড়" ওঠে, যথারীতি একদল ইয়ানি শুনেছেন দাবী করেন, একদল লরেল শুনেছেন দাবী করেন। টুইটারে প্রায় পাঁচ লক্ষ লোকের মধ্যে সমীক্ষায় ৫৩% বলে তারা শুধুই ইয়ানি শুনেছিল, অন্যরা, প্রায় সমসংখ্যক মানুষ, ৪৭% দাবী করে তারা শুধুই লরেল শুনেছিল। অনেকটা নজরুলের "কারার ঐ লৌহকপাটের" এরই মতন ব্যাপার, একই কথা, একই আওয়াজ, একেকজন মানুষ একেক রকমভাবে শোনেন, একেকরকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন । কেন? আপাতভাবে বিষয়টা অদ্ভুত মনে হতে পারে, যদিও আমরা সবাই এইভাবেই আমাদের বাইরের জগতের সঙ্গে পরিচিত হই: একদিকে আমাদের চোখ, কান, নাক, জিভ, স্পর্শ দিয়ে বাইরের জগতের সংবেদন আমাদের ভেতরে প্রবেশ করে, আবার অন্যদিকে মস্তিষ্কের গভীরে এক অদৃশ্য, অজ্ঞাত “প্রারব্ধ চেতনা” তাকে তাৎক্ষণিক প্রতিনিয়ত অনুমান, কি হতে চলেছে (prediction) এর পরতে মুড়ে আমাদের জগৎ চিনতে “শেখায়”। তবে কারার ঐ লৌহকপাটের বিষয়টা আরেকটু জটিল। সে কথায় আসছি। তবে তার আগে চেতনা আর চেনা জানা শেখা নিয়ে আরেকটু লেখা যাক।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
মানিকে মাগে হিতে গানটা গত বছর প্রবল জনপ্রিয় হয়েছিল। আর প্রায় প্রত্যেকটা ভারতীয় ভাষায় আসলিটার সাথে রিমিক্স করেছিল। ওনেক কটাই শুনতে বেশ ভাল লেগেছিল। তার মানে সুরটাই আমরা চিনি।
অরিন | 2404:4404:173a:a700:589c:279f:aaf9:***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৩৫526037
@kk, @দ, পড়ার এবং কমেন্ট করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। কাজের ফাঁকে লিখতে হচ্ছে, যার জন্য লেখাটা খুব ধীর লয়ে লিখতে হচ্ছে। @দ, রিমিক্সের ব্যাপারটা দারুণ লিখলেন, এটাও আরেকটা উদাহরণ আমরা গানের সুরকে যতটা গুরুত্ব দিই, গানের কথাকে হয়ত ততটা দিই না।
dc | 2401:4900:1cd0:b15f:3849:4d52:a2dd:***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১১:২০526038
এটা ভারি ইন্টারেস্টিং টপিক। কারার লৌহ কপাট এর রিমিক্স নিয়ে কোন বক্তব্য নেই, কারন রহমান এর ভার্শানটা শুনিনি। তবে আমাদের পাঁচটা ইন্দ্রিয় কিভাবে ডেটা কালেক্ট করে, কিভাবে সেই ডেটা অ্যানালাইজ করে আমাদের ব্রেন একটা মডেল তৈরি করে, সে নিয়ে প্রচুর রিসার্চ চলছে। কতোভাবে ব্রেন আমাদের "ধোঁকা" দেয়, অর্থাত ডেটার ফাঁকফোকরগুলো ভরে একটা সিমলেস মডেল বানায়, যেটা আমরা ভাবি রিয়েলিটি, আর তার ফলে আমরা কতোরকম ইলিউশানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি, সেসব নিয়েই অনেক কিছু লেখা যায় :-) অরিনবাবু লিখতে থাকুন, আগ্রহ নিয়ে পড়বো।
আ খোঁ | 2402:3a80:1985:cbf:378:5634:1232:***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:২৪526043
একটা গান মানুষ কিভাবে শুনবেন ও কিভাবে মনে রাখতে চাইবেন সেটা তার ব্যক্তিগত রুচি, সংগীত শোনার অভ্যেস, বেড়ে ওঠা, সামাজিক পরিস্থিতি অনেক কিছুর ওপরেই হয়তো নির্ভরশীল। ফলে এটা একটা ওয়াইডলি ভ্যারিড বিষয়। তবে আমার নিজের মনে হয় কোনো কোনো জায়গায় একটা ন্যূনতম স্ট্যান্ডার্ড থাকা উচিত। আমি রুচি বৈচিত্র্যের কথায় যাচ্ছি না। কিন্ত কোনোভাবেই ওরিজিনাল ক্রেডিট পিছনে চলে যাওয়া ঠিক না। যেমন ধরুন লেখক যেমন উল্লেখ করেছেন কুমার শানু/সাধনা সরগমের গাওয়া ৫০০ মাইলস গানটির হিন্দি সংস্করণটি অনেকের মতেই হিন্দি গানের ইতিহাসে একটি কালজয়ী গান। আমার ব্যক্তিগত ভাবে ঐ সংস্করণটি অতি খাজা অখাদ্য লেগেছিল - সেটাও একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় এবং আমার মন্তব্যের প্রতিপাদ্যও তা নয়।
যা বলতে চাইছি - প্রথমতঃ এই প্রক্রিয়ায় প্রকৃত সৃষ্টিকর্তার প্রাপ্য ক্রেডিটের বিপুল উল্লঙ্ঘণ ঘটে। আমি যদ্দুর জানি - ৫০০ মাইলসের হিন্দি ভার্সানে ক্রেডিটলিস্টে সর্বত্র সুরকার হিসেবে রাজেশ রোশনের নামটিই রয়েছে। ফলে তামাম ভারতবর্ষে (যাঁরা আসলটি শোনেননি) গানটি এক ধরণের তঞ্চকতার মধ্যে দিয়ে কালজয়ী(?) হয়ে গেল। এমনকি লেখকও এখানে গানটিকে জোয়ান বায়েজের গাওয়া গান হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। (আমাদের দেশে প্লেব্যাক এতো প্রভাবশালী যে সেটাই এখানে স্বাভাবিক।) ফলে গানটির আসল সৃষ্টিকর্তা হেডি ওয়েস্ট কোথাও কোনো চর্চাতেই এলেন না। অরিজিনাল সোর্স না বলাটা আমি তঞ্চকতা বলেই মনে করি। সুরকার ইনস্পিরেশন নিতেই পারেন বা ইম্প্রোভাইজ করতেই পারেন, কিন্ত অরিজিনালিটির প্রাপ্য সম্মান পাওয়া উচিত। প্রাচীন লোকগান মুখে মুখে চলে এসেছে। কিন্তু আজকের প্রেক্ষিতটা অন্যরকম।
দ্বিতীয়তঃ একই সঙ্গে সেই সৃষ্টির সংশ্লিষ্ট ভাবনাটিরও সম্মান থাকা উচিত। যখন সুর একক অর্থাৎ লিরিকবিহীন, তখন তা মূলত মুডকে বিস্তার করে। সেখানে মোৎসার্টের সিম্ফোনিতে কথা বসিয়ে গান তৈরিটা একরকম। (সেটাও ঠিকঠাক করা কঠিন, এবং সলিল চৌধুরী কোনোভাবেই অনু মালিক নন) কিন্তু যেখানে সুর ও লিরিক অবিচ্ছেদ্য, সেখানে একটু বিপদ তো আছেই। ধরুন ডিলানের ব্লোইন' ইন দ্য উইন্ডের সুরে যদি ইতনা না তু মুঝসে বসিয়ে দিই! এই আর কি!
তৃতীয়তঃ অন্যের তৈরি নিতে হয় কেন? যখন নিজের সৃষ্টিদক্ষতায় ভাটা পড়ে, তাই? এক মানুষকে আমি চিনি যাঁর কাজই ছিল কোথায় কোন কপিরাইট শেষ হচ্ছে।
dc | 2401:4900:1cd0:b15f:386d:4ea2:f595:***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৫৩526044
ইয়ে, সেভাবে দেখতে গেলে পাঁচশো মাইল গানটার সৃষ্টিকর্তা হেডি ওয়েস্ট বলা যায় না, উনি ফোক টিউন থেকে গানটা বানিয়েছিলেন। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন প্রায়ই ভয়েস অফ অ্যামেরিকায় নানান কাউন্টডাউন শুনতাম। তখন মাঝে মাঝে নশো মাইল গান দিতো। তাছাড়া কার্পেনটার্সের একটা গান আছে, দশ হাজার মাইল। আসলে ব্লুজ আর কান্ট্রির অনেক গানেরই রুটস বহু প্রাচীন। তবে সেসব নিয়ে লিখতে গেলে আলাদা টই খোলা উচিত :-)
আ খোঁ | 2402:3a80:1985:cbf:378:5634:1232:***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:১৫526046
ডিসি
নশো মাইল তো বটেই। সবগুলোই সাদার্ন ফিডল টিউন ঘরানা থেকেই এসেছে। কিন্তু গানটির আজকের যে গোটাগুটি রূপ সেটা তো হেডির হাত ধরেই।
এই পারস্পেকটিভটা বেশ অন্যরকম লাগলো, পড়ছি। তবে রহমান এই কম্পোজিশনটা খাজা বানিয়েছেন বলে ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়েছে।
ইয়ানি বা লরেল | 173.49.***.*** | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:২২526054
বেশ কিছুবার শুনলাম। কিভাবে ইয়ানি শোনা যাচ্ছে বুঝলাম না। মানে, আমি চেষ্টা করেও ইয়ানি শুনতে পারলাম না।
এ দুটো শব্দের সুর তো আলাদা। লিঙ্গুইস্টিকের ভাষায় জ্ঞান নেই, তাই পরিষ্কার করে বলতে পারি না - কিন্তু সোজা বাংলায়, ক্লিপের সুরে শব্দের শেষে ই -এর কোন টান তো পেলাম না!
যাগ্গে, এ তুচ্ছ ব্যাপার, বিষয়ের বিস্তারের তুলনায়।
gr17 | 208.127.***.*** | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:৩০526055
অরিনদা দেখছি খেরোতে লিখছেন। হরিদাস পালে লিখলে পর্ব জুড়তে সুবিধে হবে। ব্লগ খুঁজে না পেলে একবার লগআউট করে লগিন করে নিতে পারেন। পরের পর্ব হপাতে লিখে মাস্টার টপিক 28649 করে দিলেও কাজ হবে বলে মনে হয়।
লেখা নিয়ে মন্তব্য করার জ্ঞান নেই, সাগ্রহে পড়ছি।
অরিন | 119.224.***.*** | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৫৯526072
মতামত জানানোর জন্য প্রত্যেককে ধন্যবাদ । কৈফিয়ৎ হিসেবে দু একটা প্রাসঙ্গিক কথা এখানে মনে হয় লেখা যেতে পারে।
আ খোঁ র কমেন্ট প্রসঙ্গে: জোয়ান বায়েজ আর হেডি ওয়েসটের ব্যাপারে, আপনার পয়েন্ট অবশ্যই শিরোধার্য, যদিও আমি জোয়ান বায়েজের উল্লেখ করেছিলাম আমার নিজের ভাল লাগে বলে, জোয়ান বায়েজ এই গানটির স্রস্টা, এই কথা আমি কিন্তু কোথাও উল্লেখ করিনি, তবে আপনার পড়ে যখন অন্যরকম লেগেছে, ব্যাপারটা আমার আরো স্পষ্ট করে লেখা উচিৎ ছিল হয়ত। এই লেখাটি লেখার উদ্দেশ্য ছিল গানের কথা এবং সুরের তুলনামূলক গুরুত্ব নিয়ে, সেক্ষেত্রে আপনার বক্তব্যের যে সুর এবং কথা দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই , আমিও সহমত। তবে কোনটাকে আমরা বেশী প্রাধান্য দিই, সেইটা নিয়েই লেখাটার সূত্রপাত। আমার আপনার ব্যক্তিগত মতামতের তারতম্য থাকাটা স্বাভাবিক।
@ইয়ানি না লরেল, :-), তুচ্ছ কেন হবে, এই ব্যাপারটা না হলে লেখাটাই হয় না যে!
@gr17, ঠিক আছে, এর পরের লেখাগুলো ব্লগেই রাখব।
আ খোঁ | 2402:3a80:1981:34dc:178:5634:1232:***:*** | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:৫৮526092
না না অরিন, আপনার কৈফিয়তের কোনো প্রশ্ন নেই। লেখাটি খুবই উপভোগ্য। আমি একটি পার্সপেক্টিভ রেখেছি মাত্র। আমি বা আপনি সবাই বোধহয় এভাবেই বড় হয়েছি যেখানে ওইটা 'কিশোরের গান' বা ঐটা 'উত্তম কুমারের ছবি' এইভাবেই শুনতে বা বলতে অভ্যস্ত হয়েছি। আপনাকে আলাদা করে মিন করতে চাইনি। আর পছন্দের তারতম্য তো হবেই। আমার খারাপ লাগলো মানে আমি ভালো খারাপের বিধান দিয়ে দিলাম, সেটা তো হাস্যকর। আপনি লিখুন। পড়তে থাকবো।
বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে,
মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা,
কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
আমাদের কথা
আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের
কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি
জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
বুলবুলভাজা
এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ।
দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও
লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
হরিদাস পালেরা
এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে
পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান
নিজের চোখে...... আরও ...
টইপত্তর
নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান।
এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর।
... আরও ...
ভাটিয়া৯
যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই,
সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক
আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
টইপত্তর, ভাটিয়া৯, হরিদাস পাল(ব্লগ) এবং খেরোর খাতার লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব, গুরুচণ্ডা৯র কোন দায়িত্ব নেই। | ♦ :
পঠিত সংখ্যাটি ১৩ই জানুয়ারি ২০২০ থেকে, লেখাটি যদি তার আগে লেখা হয়ে থাকে তাহলে এই সংখ্যাটি সঠিক পরিমাপ নয়। এই বিভ্রান্তির জন্য আমরা দুঃখিত।
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।
অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি।
যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।
মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি
বার পঠিত
সকলকে জানান
উপরে যে কোনো বোতাম টিপে পরিচিতদের সঙ্গে ভাগ করে নিন
গুরুচন্ডা৯ বার্তা
গুরুতে নতুন?
এত নামধাম দেখে গুলিয়ে যাচ্ছে? আসলে আপনি এতদিন ইংরিজিতে সামাজিক মাধ্যম দেখে এসেছেন। এবার টুক করে বাংলায়ও সড়গড় হয়ে নিন। কটা তো মাত্র নাম।
গুরুর বিভাগ সমূহ, যা মাথার উপরে অথবা বাঁদিকের ভোজনতালিকায় পাবেনঃ
হরিদাসের বুলবুলভাজা : গুরুর সম্পাদিত বিভাগ। টাটকা তাজা হাতেগরম প্রবন্ধ, লেখালিখি, সম্ভব ও অসম্ভব সকল বিষয় এবং বস্তু নিয়ে। এর ভিতরে আছে অনেক কিছু। তার মধ্যে কয়েকটি বিভাগ নিচে।
শনিবারের বারবেলা : চিত্ররূপ ও অক্ষরে বাঙ্ময় কিছু ধারাবাহিক, যাদের টানে আপনাকে চলে আসতে হবে গুরুর পাতায়, ঠিক শনিবারের বারবেলায়।
রবিবারের পড়াবই : পড়া বই নিয়ে কাটাছেঁড়া সমালোচনা, পাঠপ্রতিক্রিয়া, খবরাখবর, বই নিয়ে হইচই,বই আমরা পড়াবই।
বুধবারের সিরিয়াস৯ : নির্দিষ্ট বিষয় ধরে সাপ্তাহিক বিভাগ। ততটা সিরিয়াসও নয় বলে শেষে রয়ে গেছে ৯।
কূটকচা৯ : গুরু কিন্তু গম্ভীর নয়, তাই গুরুগম্ভীর বিষয়াশয় নিয়ে ইয়ার্কি ফুক্কুড়ি ভরা লেখাপত্তর নিয়েই যতরাজ্যের কূটকচা৯। কবে কখন বেরোয় তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।
হরিদাস পাল : চলতি কথায় যাদের বলে ব্লগার, আমরা বলি হরিদাস পাল। অসম্পাদিত ব্লগের লেখালিখি।
খেরোর খাতা : গুরুর সমস্ত ব্যবহারকারী, হরিদাস পাল দের নিজের দেয়াল। আঁকিবুঁকি, লেখালিখির জায়গা।
টইপত্তর : বিষয়ভিত্তিক আলোচনা। বাংলায় যাকে বলে মেসেজবোর্ড।
ভাটিয়া৯ : নিখাদ ভাট। নিষ্পাপ ও নিখাদ গলা ছাড়ার জায়গা। কথার পিঠে কথা চালাচালির জায়গা। সুতো খুঁজে পাওয়ার দায়িত্ব, যিনি যাচ্ছেন তাঁর। কর্তৃপক্ষ দায়ী নন।
লগিন করে থাকলে ডানদিকের ভোজনতালিকায় যা পাবেনঃ
আমার গুরুঃ আপনার নিজস্ব গুরুর পাতা। কোথায় কী ঘটছে, কে কী লিখছে, তার মোটামুটি বিবরণ পেয়ে যাবেন এখানেই।
খাতা বা খেরোর খাতাঃ আপনার নিজস্ব খেরোর খাতা। আঁকিবুকি ও লেখালিখির জায়গা।
এটা-সেটাঃ এদিক সেদিক যা মন্তব্য করেছেন, সেসব গুরুতে হারিয়ে যায়না। সব পাবেন এই পাতায়।
গ্রাহকরাঃ আপনার গ্রাহক তালিকা। আপনি লিখলেই সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকরা পাবেন নোটিফিকেশন।
নোটিঃ আপনার নোটিফিকেশন পাবার জায়গা। আপনাকে কেউ উল্লেখ করুক, আপনি যাদের গ্রাহক, তাঁরা কিছু লিখুন, বা উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটুক, জলদি পেয়ে যাবেন নোটিফিকেশন।
বুকমার্কঃ আপনার জমিয়ে রাখা লেখা। যা আপনি ফিরে এসে বারবার পড়বেন।
প্রিয় লেখকঃ আপনি যাদের গ্রাহক হয়েছেন, তাদের তালিকা।