এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • শমীকই কেন সভাপতি?  

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ জুলাই ২০২৫ | ৪৮ বার পঠিত
  • প্রথম ভাগ | দ্বিতীয় ভাগ
    আজ শমীক ভট্টাচার্য দ্বিতীয় ভাগ। এত লোক ছেড়ে এই দিগগজকেই সভাপতি ​​​​​​​করা ​​​​​​​হল ​​​​​​​কেন? ​​​​​​​কেনই বা এত চোখে লাগার মতো ফোকাস?  টিভিতে দেখে মনে হচ্ছিল, বিরোধী দলের রাজ্যসভাপতি না, যেন মহারানী ভিক্টোরিয়া এসেছেন। নেহাৎই একটা দলের একটা রাজ্যের সভাপতি হয়েই এত অভ্যর্থনা আমার জীবদ্দশায় দেখিনি। দিলীপ ঘোষ বা সুকান্ত তো ননই, যা পড়েছি, শেষ পেয়েছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু, কংগ্রেস সভাপতি হয়ে। তিনি অবশ্য সর্বভারতীয় সভাপতি হয়েছিলেন, অভ্যর্থনা মানুষের কাছে পেয়েছিলেন। এখানে মানুষ নেই, তাই মিডিয়া।  

    তো, এইটা কেন? ওঁর ইতিহাসের দৌড় তো আগেরদিনই লিখেছি, মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত, আর হিন্দুবীরের দৌড় হোয়াটস্যাপ অবধি। আজ অন্য বক্তব্যগুলো একটু ধরা যাক। আমাকে পছন্দ করুন, না করুন, এটা একটু মন দিয়ে পড়বেন, নইলে রাজনীতিটার তল খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ওঁর ​​​​​​​ একটা ​​​​​​​তথাকথিত উদার কথা ​​​​​​​দেখছি ​​​​​​​অনেককেই ​​​​​​​বেশ ​​​​​​​অবাক ​​​​​​​করেছে, ​​​​​​​সেটা ​​​​​​​হল হিন্দুত্ব ​​​​​​​কোনো ​​​​​​​ধর্ম ​​​​​​​নয়, ​​​​​​​হিন্দুত্ব ​​​​​​​একটি ​​​​​​​জীবনধারা। এটা নতুন ​​​​​​​কথা ​​​​​​​একেবারেই ​​​​​​​না, ​​​​​​​আরেসেসের বহুকালের পুরোনো লাইন। কিন্তু ​​​​​​​অনেকেই ​​​​​​​জানেন ​​​​​​​না, ​​​​​​​ফলে অনেককেই আরেসেসের বিরোধিতা করতে দেখেছি এই বলে, যে, "হিন্দুত্ব আবার ধর্ম নাকি?" সত্যিই হিন্দুত্ব কোনো ধর্ম নয়, এবং আরেসেস সেটা মেনে নেয়। নইলে স্রেফ মারমার কাটকাট করে এত আদর্শবান লোক জোটাতে পারতনা। সেই ১৯৮৯ সালে আদবানীকে বলতে শুনেছি, ভারতের সবাই হিন্দু। মুসলমানরা হলেন মোহাম্মদি হিন্দু। কারণ, হিন্দুত্ব কোনো ধর্ম না, এটা একটা জীবনধারা। 

    আরেসেসের এই আদর্শগত ভিত্তিটা অনেকেই জানেননা। কারণ আমরা ওদের লেখাপত্তর পড়িনা। ফলে আদর্শের স্তরে আমাদের বিরোধিতাটা মাঠে মারা যায় (এমনকি অমর্ত্য সেনের মতো মহাপণ্ডিত, যিনি সংস্কৃত গড়গড়িয়ে বলতে পারেন, শাস্ত্রজ্ঞ হিসেবে তুলনাহীন, তিনিও এই লাইনেই বিরোধিতা করেছিলেন)। এটা শুনতে বেশ উদার, আমাদের বক্তব্যের মতোই। তাহলে বিরোধিতাটা কোথায়? ওই বাক্যের মধ্যেই পাবেন, "হিন্দুত্ব একটি জীবনধারা"। এর "একটি" শব্দটা খেয়াল করুন। হিন্দুত্ব কি একটি জীবনধারা? না নয়। রামভক্ত নিরামিষভোজী উত্তর-ভারতীয় পেশিবহুল হিন্দুত্বের সঙ্গে শাক্ত আমিষভোজি কালীপূজারী বাঙালির কোনো মিল নেই। বাঙালির নবমীতে রাম নেই, দশমীতে রাবণ নেই। বাঙালি হিন্দুস্তানি নয়। এরকম পার্থক্য গোটা ভারত জুড়েই। এর মধ্যে কোনো "একটি জীবনধারা" নেই। "একটি জীবনধারা" বলে ওরা যা বিস্তার করতে চায়, তা হল  আসলে হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান এর আধিপত্য। কেন্দ্র এবং পরিধি, সাম্রাজ্যবাদ এবং উপনিবেশ। বহু ভাষা, বহু জাতি, বহুত্ববাদের যে দর্শন ভারতের, এটা তার পুরো উল্টোদিকে। এইটাই মৌলিক সমস্যা। এর ব্যবহারিক প্রয়োগ হল, আমিষ খেলে হিন্দু না, বাংলা বললে হিন্দু না, ইত্যাদি প্রভৃতি। 

    এই আদর্শের সবচেয়ে বড় উপযোগিতা হল, এটা ইলাস্টিকের মতো। এর উপরে দাঁড়িয়ে আপনি উনিজির মতো চর্ম আক্রমণাত্মক হতে পারেন। আবার নরম হয়ে বলতে পারেন, কে বলল আমি অনুদার, হিন্দু-সুসলমান-বাঙালি-অবাঙালি সবাই থাকুকনা, শুধু জীবনধারাটা মেনে নিলেই হল। এর আসল মানে হল, জীবনধারাটা ওঁরা ঠিক করে দেবেন। মুসলমানকেও 'জয় শ্রীরাম' বলতে হবে। বাঙালিকে হিন্দি। কিন্তু তার পরেও এই দ্বিতীয় ভারসানটা শুনতে ভালো। বেশ উদার-উদার লাগে। তার সঙ্গে একটু সংস্কৃতি পাঞ্চ করে দিলে আরও ভালো লাগে। হিন্দুত্ববাদীরা যখন প্রয়োজন হয়, গরম লাইনটা নেয়, আর দরকার হলেই এই তথাকথিত 'উদার' ব্যাপারটা। শমীক ভট্টাচার্য এই দ্বিতীয়টার প্রচারক। 

    এইটার হঠাৎ দরকার পড়ল কেন বাংলায়? কারণ, উগ্রতা তার চরমসীমায় পৌঁছেছে। তা থেকে যা দুধ দুইয়ে নেবার নেওয়া হয়ে গেছে। নতুন কিছু আসবেনা। এই উগ্রতার স্রোতটা চরমে উঠেছিল ২১ সালে। তাতে ৭৬ টা আসন এসেছে। ওই একই লাইন ধরে চলেও ২৪শে কিচ্ছু বাড়েনি। ফলে, যেকোনো স্থির মাথার রাজনীতিক যদি হিসেব করেন, তিনি দেখবেন, ওই লাইনে আর কোথাও যাবার নেই। ভোট জোগাড় করতে হবে অন্য কোনো জায়গা থেকে। বাংলায় বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। বাম-কংগ্রেস একটা ন্যূনতম ভোট পায়, কিন্তু পায়। এদের পুরোনো ভোটব্যাংক অনেকটাই হিন্দুত্ববাদীদের দখলে, কিন্তু পুরোটা নয়। বাকিরা, প্রাণে ধরে কিছুতেই ভোট দিতে পারবেন না। ফলে, এবার লক্ষ্য হল, হিন্দুত্ববাদীদের 'উদার' হতে হবে। পতাকা ছেড়ে সবাইকে একজোট হবার কথা বলতে হবে। সংস্কৃতির বাণী দিতে হবে। 'কিসের কুসুম' আর চলবেনা। এখন সমস্ত 'উদার'দের একজোট হবার সময়। কদিন আগেই সোশাল মিডিয়ায় সক্রিয় এক প্রাক্তন সম্পাদক লাইনটা নামিয়েছেন। আরও এক আধজনকে নামাতে দেখেছি। বামপন্থীরা বেশ গর্ব করে এঁদের সঙ্গ গা ঘেঁষাঘেঁষি করতেন। এখনও এইসব কথায় প্রায় কিছুই রিয়াক্ট করেননি। ওটা ছিল টেস্টিং। এবার লাইনটা নিয়েই নেওয়া হল। সঙ্গে চলছে ইমেজ বিল্ডিং। খুব কৌতুহলোদ্দীপক, যে, পতাকাহীন জোটের দাবী করেছেন শুভেন্দু, তিলোত্তমার বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে। এরকম দাবী, চাপ এবং ইমেজ-বিল্ডিং বাড়তেই থাকবে। 

    খুবই ব্রিলিয়ান্ট কৌশল, নিঃসন্দেহে। এমনি এমনি হিন্দুত্ববাদীরা এতদিন করে খাচ্ছেনা। শহরাঞ্চলে এমনিই তৃণমূলের ইমেজ খুব খারাপ, কিন্তু তারপরেও হিন্দুত্ববাদীদের অবস্থা আরও খারাপ বলে, তারা ৬০ এর উপর উঠবে বলে মনে হচ্ছিলনা। কিন্তু এই কৌশলটা খেটে গেলে, অবশ্যই উঠবে। ফাঁক কমে আসবে। বিপদ তৃণমূলের। কিন্তু বিপদ বামেরও। যে ভোটটা কাটার পরিকল্পনা করে শমীককে নামানো, সেটা মূলত বামদের। তাঁদের নিজেদের জোরে কিছু করার সময় আগেই চলে গেছে, কিন্তু ২৬ এর ভোটটা হল অস্তিত্বরক্ষার লড়াই। 'উদার হিন্দুত্ব'কে না রুখলে সেটা হবেনা। 

    তবে এটা বড় চিত্র। অবশ্যই এর পরেও আরও অনেক ফ্যাক্টর আছে। নওশাদ আছেন, কংগ্রেস আছে। হিন্দুত্ববাদীদের হাতে আরও বড় জিনিস আছে, ভোটার-তালিকা। এছাড়াও আছে বাঙালি বিতাড়ন। এই দুটো ক্রমশ বড় হতে চলছে। স্রেফ বাংলায় জিততে হবে বলে ওই সর্বভারতীয় লাইন তো ওরা বদলাতে পারবেনা। এরকম নাটকীয় ঘাত-প্রতিঘাত ৬৬-৬৭ র পরে বাংলায় আর হয়েছে বলে মনে হয়না।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    প্রথম ভাগ | দ্বিতীয় ভাগ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন