এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  প্রবন্ধ

  • ধ্যান ও  স্নায়ুবিজ্ঞান: তৃতীয় পর্ব - ধ্যান কেন বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয়

    অরিন লেখকের গ্রাহক হোন
    প্রবন্ধ | ২২ জুন ২০২৪ | ৩৫৭ বার পঠিত
  • | |
    প্রবন্ধাবলীর প্রথম পর্ব 
    প্রবন্ধাবলীর দ্বিতীয় পর্ব 
    প্রবন্ধের তৃতীয় পর্ব 
    (এটি চতুর্থ পর্ব)
     
     ধ্যান ও স্নায়ুবিজ্ঞান নিয়ে লেখায় মনের স্বাভাবিক অবস্থা (default mode network) বিষয়টিতে প্রবেশ করার আগে আরো একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক  । প্রদীপ জ্বালাবার আগে সলতে পাকানোর মতন, এই লেখাটিতে ধ্যান আদৌ কেন বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয় তাই নিয়ে দু চার কথা লিখে শুরু করা  যাক । আমরা তার পর পর্যায়ক্রমে দেখব যে ধ্যান নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কোথায় স্নায়ুবিজ্ঞানের অবদান ।  ধ্যানের বৈজ্ঞানিক গবেষণার বয়ান দিয়ে শুরু করার  কয়েকটি কারণ আছে ।
     
    অনেকের ধারণা যে ধ্যান আধ্যাত্মিক বিষয়, সে বিজ্ঞানের বিষয় হতে  পারে না । এই কথাটি সর্বাংশে সত্যি নয়, তার কারণ আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে যে বিজ্ঞানচর্চা হতে পারে না তা নয়, যেখানে ব্যাপারটি ধর্মের আওতায় পড়ে , সেখানে ধর্মের ধ্বজাধারীরা যেহেতু বিজ্ঞান বা বৈজ্ঞানিক প্রথায় "বিশ্বাস' করেন না, ফলে সেখানে বিজ্ঞানচর্চার সুযোগ নেই । এখন ধ্যান ব্যাপারটি অনেকে মনে করেন যে যারা ধর্মচর্চা করেন তাদেরই বুঝি একচেটিয়া, তা কিন্তু নয় । তাছাড়া ধর্মীয় গোঁড়ামি  ও আধ্যাত্মিকতা এক জিনিস নয়, ফলে ধ্যানকে আধ্যাত্মিক চর্চা বলা যেতে পারে, ধার্মিক পদ্ধতিও বলা যেতে পারে, কিন্তু তাহলেও ধ্যানের মানুষের জীবনে একটি অনন্য ভূমিকা রয়েছে যেখানে ধর্মপ্রাণ মানুষ ও নাস্তিক উভয়য়েই ধ্যান করতে পারেন, তাতে কোন বিরোধ থাকার কথা নয় । এই ব্যাপারটা বোঝার এবং বোঝানর একটি ক্ষেত্র রয়েছে । এই বিষয়টি নিয়ে আরো একটা ব্যাপার বিবেচ্য ।  
     
    ধ্যান মানে শুধু যদি বসে থাকা হয়, ভাবা যেতে পারে তাতে করে বড়োজোর  এক ধরণের "মন ভালো" করা (placebo ) ধরণের কিছু হতে পারে । কাজেই কেউ যদি দাবি করেন যে ধ্যান করে শারীরিক ও মানসিক উন্নতি হয়েছে, ও তাকে নিয়ে বিজ্ঞানের চর্চা করার কথা বলেন, সাধারণভাবে মনে হতে পারে এতে অপবিজ্ঞানের চর্চা করাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, অনেকটা হোমিওপ্যাথি, টেলিপ্যাথি, জ্যোতিষবিদ্যার মতন । বিশেষ করে একথা অনেকে ভাবেন যে ধ্যান করলে মানুষের মানসিক বা শারীরিক অবস্থার যে উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে তাকে  স্বাস্থবিজ্ঞানের  প্রচলিত গবেষণার পন্থার সূত্রে দেখান  যাবে না । একথাটি আপাত ভাবে ঠিক মনে হলেও বাস্তব ক্ষেত্রে তেমন হয় না । তার একটা কারণ হচ্ছে ধ্যান কাজটি বা ক্রিয়াটি কিন্তু শুধুই এক জায়গায় স্তব্ধ হয়ে বসে থাকার মতো ব্যাপার নয়, তার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে, এবং কাকে ধ্যান বলা হবে তার একটি নির্দিষ্ট কার্যনির্বাহী সংজ্ঞা (operational definition ) ও রয়েছে । রয়েছে  বলেই সহজ বুদ্ধিতে যাই মনে হোক না কেন, ধ্যান কে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা হয়েছে, হচ্ছে, এবং হবে, এর মধ্যে অন্তত বৈজ্ঞানিকদের তরফে কোন অসদুদ্দেশ্য নেই । কাজেই ধ্যান ব্যাপারটিকে নিয়ে গবেষণা করার কোন অসুবিধে থাকার কথা নয়, তবে অনেকে সেই গবেষণার ফলাফল নিয়ে খুব একটা নিশ্চিত নন, কারণ এখানে তাঁদের প্রশ্ন হচ্ছে যে ধ্যান কে নিয়ে যে ধরণের গবেষণা করা হয় তা  কতটা যথার্থ ও তাতে কি ধরণের ফলাফল পাওয়া যায় । 
     
    একটা উদাহরণ দিয়ে দেখা যাক । সচরাচর ধ্যানের শরীরের ও মনের ওপর কি প্রভাব, তাই নিয়ে যে সমস্ত গবেষণা হয়, তার একটি প্রধান  বিবেচ্য বিষয় ধ্যানের প্রভাব মানুষের anxiety বা depression বা stress জনিত মানসিক অবস্থার ওপর কেমন, এবং তাদের কারণে যে সমস্ত অন্যান্য অসুস্থতা হয়, যেমন ধরুন উচ্চ রক্তচাপ ("হাই ব্লাড প্রেসার") , বা ডায়াবিটিস , তাদের প্রতিকারে ধ্যান কতটা কাজে দেয় । যেহেতু stress , anxiety , depression সমাজে বহু লোকের মধ্যে রয়েছে, এবং তাদের বহুবিধ কারণ, এখন এ নিয়ে ধ্যান কে কেন্দ্র করে গবেষণার যে ফলাফল বেরোতে পারে, তাদের সম্বন্ধে আমাদের সাধারণ বুদ্ধি বলে যে, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও  নিই  ধ্যানের যদি কোন প্রভাব থেকেও থাকে,  সে প্রভাব এতো বেশি কিছু হবার কথা নয় যাতে করে বলা যেতে পারে যে ধ্যানের "কারণে" মানুষের মনে বা শরীরে পরিবর্তন হয় । এই ধারণাগুলোও  প্রচলিত হলেও সর্বাংশে ঠিক নয়, এই কারণে, যে,  প্রভাবের পরিমাণ কম  হতে পারে, তার মানে এই নয় যে সে প্রভাবের চরিত্র কার্যকরণগত নয়  ।  তবে ধ্যান কে কেন্দ্র করে জনমানসে এতো রকমের বিরূপ ধারণার একটা কারণ হতে পারে বিষয়টিকে নিয়ে বহু লোক "জল ঘোলা" করেন । 
     
    যেমন একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে ধ্যান নিয়ে তথাকথিত "আধ্যাত্মিকতার" মোড়কে, বিশেষত ধর্মের মোড়কে অনেকে ব্যবসা করেন । সে ব্যবসায় তাঁরা মানুষকে প্রতারণা করেন । এ ব্যাপার কারোর অজানা নয় ।  কিন্তু যে ব্যাপারগুলো জনমানসে অজানা বলে মনে হয়, ধ্যানের বৈজ্ঞানিক গবেষণার সঙ্গে ধ্যানের ধর্মীয় যোগাযোগের সূত্রে মানুষের সঙ্গে যে তঞ্চকতা করা হয় তার কোন যোগাযোগ নেই । প্রবঞ্চকরা ধ্যানের গবেষণার ফলাফল নিজেদের লাভের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারেন, সেটি অপব্যবহারের সামিল ।  এই ব্যাপারটা সাধারণ, এমনকি বহু বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের পক্ষেও অনুধাবন করা সমস্যার, তার একটা কারণ আমার মনে হয় ধ্যান এবং ধ্যানের মনের, স্নায়ুর, ও মস্তিষ্কের ওপর কি প্রভাব পড়ে , তাই নিয়ে অতি জটিল গবেষণা অপেক্ষাকৃত নতুন এবং অপেক্ষাকৃত অল্প কয়েকজন গবেষকের মধ্যে সীমাবদ্ধ । ফলে হঠাৎ করে ধ্যান নিয়ে "neuroscience " জাতীয় কথা লিখতে গেলে ধ্যান যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক ও বৈজ্ঞানিক বিষয়, ব্যাপারটিতে যে কোন রকম অবৈজ্ঞানিক প্রতারণার কিছু নেই, তাই  নিয়ে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করে না লিখলে এই লেখাটির উদ্দেশ্য অসফল হবে ।

    ধ্যান কেন শুধুই একটি আধ্যাত্মিক ব্যাপার নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয়? কোথায় ধার্মিক লোকের বা ধর্মের ধ্বজাধারীদের ধ্যান আর নাস্তিক বৈজ্ঞানিকদের ধ্যান বিষয়টির তফাৎ?  প্রথমত,  ধ্যান একটি প্রক্রিয়া, তার সূত্র ধার্মিক ( আধ্যাত্মিক বলাটা ঠিক নয়) ক্রিয়াকর্ম  হলেও প্রক্রিয়াটি  মানুষের আর চার পাঁচটা কাজের থেকে আলাদা কিছু নয় ।  খাওয়াদাওয়া, খেলাধুলো, নাচ, গান, যেমন কাজ,  তেমনি, ধ্যান ব্যাপারটিও তাই, ধ্যান ব্যাপারটির উদ্দেশ্য কোন কিছুর ওপর "মন দেওয়া" । মানুষ কবে থেকে ধ্যান করতে শুরু করেছে, তার ঠিক মতন কোন হদিশ পাওয়া যায় না, তবে  ধ্যান শুধু ভারতবর্ষে নয়, সারা পৃথিবীতে প্রায় সমস্ত জনগোষ্ঠী এবং ধর্মের সংস্কৃতির অঙ্গ,  অন্তত ৫০০০ বছরের পুরোনো প্রথা । শুধু তাই নয়, বিজ্ঞান ব্যাপারটিও মানুষের জীবন বহির্ভূত কোন অপ্রাকৃত বিষয় নয় । অতএব যাঁরা ধ্যান ব্যাপারটিকে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করেন  বা অবৈজ্ঞানিক বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন, তারা খুব সম্ভবত ধ্যান ব্যাপারটির সঙ্গে পরিচিত নন বলে প্রকারান্তরে একটি বহমান সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে বুঝে উঠতে না পেরে ঐরকম করেন  । 
     
    দ্বিতীয়ত , আপাত ভাবে যাই মনে হোক, ধ্যান ব্যাপারটি শুধুই বা কেবলই আধ্যাত্মিক বিষয় নয়, তার একটি মনস্তাত্বিক এবং শারীরিক তাৎপর্য রয়েছে, যে বিষয়টি আমাদের আলোচ্য, বিশেষ করে neuroscience এর আলোয়  । একেও অস্বীকার করা অসম্ভব । 
     
    তৃতীয়ত , ধ্যান বলে যে ব্যাপারটির চর্চা করা হয়, সেটি কোন monolithic বা একমাত্রিক বিষয় নয়, বরং তার নানান রূপ এবং প্রকারভেদ, ধর্মের প্রেক্ষিতে তার এক রকমের বহিঃপ্রকাশ, কিন্তু ধ্যান মানেই ধর্মীয় কিছু ব্যাপার নয় । ধর্মনিরপেক্ষ ধ্যানও আছে । ধর্মনিরপেক্ষ ধ্যান ব্যাপারটি অন্তত ভারতবর্ষে বুদ্ধদেবের জন্মের আগের আমল থেকে চলে আসছে, এবং কিছু না হলেও দু-আড়াই হাজার বছর ধরে ভারত ও অবশিষ্ট এশিয়ায় মানুষ ধ্যান করেছে, তার সবটাই কেবল অবৈজ্ঞানিক ধর্মীয় উন্মাদনার বশে করে নি । 
     
    চতুর্থত , পৃথিবীতে, মানুষের সভ্যতায় এমন অনেক জিনিস, অনেক প্রথা আছে যার উৎপত্তি ধর্মীয় কার্যকলাপের মধ্যে, বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে, যাদের একটি নিশ্চিত রকম আধ্যাত্মিক পরিপ্রেক্ষিত রয়েছে, তাই বলে তাদের নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে কারো কখনো আটকায়নি । যেমন ধরুন ওয়াইন বা মদিরা সংক্রান্ত গবেষণা । মদিরা র বিজ্ঞান বা Oenology রা যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ আধ্যাত্মিক ব্যাপার স্যাপারকে বিজ্ঞানের মোড়কে হাজির করা নিয়ে আপত্তি করে  বলে জানা যায় নি । একই রকম  ভাবে চা পান, এবং  কফির উৎসও ধর্মীয় রীতিনীতির মধ্যে । দূরপ্রাচ্যের কথা যদি বলেন , কারাটে,  কুংফু, জুডো,  তাইচি ইকেবানা, এর সবকিছুতেই চীন,বা জাপানের বৌদ্ধ ধর্মের  অবদান । পাশ্চাত্যে ক্লাসিকাল music,  আমাদের দেশেও ধ্রুপদী নৃত্য, সংগীত এসবের  একটি আধ্যাত্মিক যোগাযোগ রয়েছে,তাই বলে তাদের একমাত্র পরিচয় শুধু আধ্যাত্মিক নয়,সংগীতকে কেন্দ্র করে রীতিমতন বৈজ্ঞানিক চর্চা হয় । এই বিষয়গুলো যদি আধ্যাত্মিক হয়েও সাধারণ সমাজে বৈজ্ঞানিক চর্চার বিষয় রূপে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে, ধ্যান কেন শুধু আধ্যাত্মিক হবে? পঞ্চম কথা, ধ্যানকে কেন্দ্র করে বহু দশক  ধরে মনোবিজ্ঞান এবং আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞানের চর্চা হয়েছে, কাজেই ব্যাপারটা হালফ্যাশনের বিষয় নয়, বরং ধ্যানের সঙ্গে নিউরো সায়েন্সের অগ্রগতি এবং computation এর অগ্রগতির সঙ্গে ধ্যান ও ধ্যান কে কেন্দ্র করে মানব মন ও মস্তিষ্কের আকার প্রকার, কাজকর্ম নিয়ে বিস্তর নতুন তথ্য আবিষ্কৃত হচ্ছে, তাদের সঙ্গে আধ্যাত্মিক লোকেদের, সাধু সন্তদের যোগাযোগ আছে বটে, কিন্তু এই কাজটি মূলত বৈজ্ঞানিকদের কাজ  । ষষ্ঠ কথা ,  ধ্যানের সঙ্গে হোমিওপ্যাথি, বা অন্যান্য অবৈজ্ঞানিক ক্রিয়াকলাপের কোথাও কোন মিল নেই, তবুও, অনেকেই  একেবারেই গুলিয়ে ফেলেন, ব্যাপারটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক  । অবাক লাগে দেখলে এঁদের  মধ্যে  অনেকেই প্রকৃত অর্থে বিজ্ঞানপ্রেমী শুধু নন, প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানপন্থী এবং যুক্তিবাদী মানুষ । এঁরা গুলিয়ে ফেলেন, এবং তার বহু কারণ রয়েছে । যেহেতু জনমানসে ধ্যান ব্যাপারটির অনেকের কাছে শুধু আধ্মাতিক বাদে আরো কোন পরিচয় নেই, একদল তথাকথিত বৈজ্ঞানিক ধ্যান বিষয়টির বৈজ্ঞানিক গবেষণা কে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন । একই রকম ভাবে "ধ্যান নিয়ে যাঁরা Wellness " এর ব্যবসা করেন, তাঁরা ধ্যানের বৈজ্ঞানিক গবেষণাপ্রসূত বিষয় আশয় গ্রহণ করেন  প্রচারের জন্য,কিন্তু সেগুলোর অপব্যবহার করেন । এখন একথা অনস্বীকার্য যে , ধ্যান বিষয়টি এমন জটিল যে তাকে নিয়ে  প্রচুর অসৎ, ভুল মেথডের গবেষণাও  বিস্তর হয়, ফলে কোনটা দুধ আর কোনটা জল, এই ব্যাপারটি অনেক বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের কাছেই অনেক সময় স্পষ্ট রূপে প্রতিভাত হয় না । কাজেই ধ্যান করলে কি হয়, এবং বৈজ্ঞানিক চর্চার কারণ কি তাই নিয়ে প্রাথমিক কথা আলোচনা করাটা ধ্যানের neuroscience নিয়ে আলোচনার শুরুতে করা প্রয়োজন  । 
     
    এই আলোচনা করতে গেলে অবধারিত ভাবে সেখানে কিছুটা আমরা "কার্য কারণ" কাকে বলে তার একটি আলোচনা আসবে, ব্যাপারটি এখানে অপ্রাসঙ্গিক নয়  । 
     
    ধ্যান ব্যাপারটা কি, কাকে বলে 
     ধ্যান কি ভাবে করা হয়, তাই নিয়ে অল্প বিস্তর এই প্রবন্ধাবলীর প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে লিখেছি, তাই আর বিশদে লিখছি না, তাহলেও এখানে আলোচনার খাতিরে দু একটি কথা লিখতে হবে ।
     
    Mindfulness Meditation বনাম Focused Attention Meditation : দুটোর পার্থক্য 
     
    ধ্যানের তত্ত্ব 
     
    কার্যকারণ কাকে বলে এবং কি ভাবে দেখতে হয় 
     
    উইলিয়াম জেমস, ফ্রন্সিসকো ভ্যারেলা , কাবাত জিন : ত্রয়ী 
     
    Mindfulness Based Stress Reduction  গবেষণার সূত্রপাত 
     
    এই ধরণের গবেষণায় কি কি দেখতে হয় 
     
    বুঝবেন কি করে কোনটা বিজ্ঞান আর কোনটা ঠিক বিজ্ঞান নয় 
     
    কেন হোমিওপ্যাথি, জ্যোতিষ ইত্যাদি নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হলেও তাই নিয়ে সংশয় থেকে যায় 
     
    গবেষণাপত্রের পর্যালোচনা 
     
    Meditation নিয়ে Randomised Controlled Trial কি বলে?
     
    মোটামুটি ভাবে ধ্যান নিয়ে সমকালীন গবেষণা কি বলে?
     
     
     
    ডিফল্ট মোড নেটওয়ার্ক কাকে বলে ও তাকে কি করে মাপজোক করা হয় 
     
     "একেলা জগৎ ভুলে পড়ে আছি নদিকুলে
    পড়েছে নধর বট হেলে ভাঙ্গা তীরে ।
    ...
    হৃদয় এলায়ে পড়ে যেন কি স্বপন ভরে
    মুদে আসে আঁখিপাতা যেন কি আরামে ।
    অন্যমনে চাহি চাহি কত ভাবি কত গাহি
    পড়িছে গভীর শ্বাস গানের বিরামে ।
    নিঝুম মধ্যাহ্ন কাল অলস স্বপন জাল
    রচিতেছি অন্যমনে হৃদয় ভরিয়া ।"
    (মধ্যাহ্ন , অক্ষয় কুমার বড়াল ( ১৮৬০-১৯১৯)
     
    ডিফল্ট Mode Network: "অন্যমনে চাহি চাহি কত ভাবি কত গাহি "
     
    (চলবে) 
    --- 

     
    ধ্যান এবং মানব মনপ্রবাহ - ব্রুস লি ও মিহালি  জিকসেনমিহালি 
     
    মন যেন জলের মতন বয়ে চলে 

    (সূত্র : Bruce Lee. Artist of Life)
     
    মস্তিষ্ক (neuroplasticity )

    বহতা  নদীর মতন মন 

     

    https://miro.medium.com/v2/resize:fit:1400/format:webp/0*czyV80pxGYjalLAj.png
    (মিহালি সিকসেনমিহালি মশাইয়ের প্রবহমান মনের চিত্রণ, সূত্র:  https://medium.com/human-restoration-project/march-flow-the-psychology-of-optimal-experience-cb6b7029742c )

    ধ্যান ও চিকিৎসার জগৎ  জন কাবাত  জিন, MBSR
     
    আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞানের প্রেক্ষিতে ধ্যানের, বিশেষ করে মনোনিবেশের ধ্যানের গল্পটি শুরু হচ্ছে আজ থেকে প্রায় ৪২ বছর আগে, জন কাবাত জিন নামক এক চিকিৎসকের সূত্রে । 
    (ক্রমশ) 
     
    ধ্যান ও মানুষের মনের ওপর তার প্রতিক্রিয়া: গবেষণা কি বলে?
    (আসছে এর পর) 
     
    স্নায়ুবিজ্ঞানের সহজ পাঠ 
     
    মস্তিষ্কের কাজকর্মের মাপ 
      
     
     

    https://www.frontiersin.org/files/Articles/856697/fpsyg-13-856697-HTML-r1/image_m/fpsyg-13-856697-g001.jpg
    (স্বপ্ন, অ্যানাসথেসিয়া, ধ্যান ইত্যাদি বিভিন্ন অবস্থায় মানুষের মস্তিষ্কে কি ধরণের পরিবর্তন হয় তার একটি রূপরেখা, সূত্র: "EEG Microstates in Altered States of Consciousness", https://doi.org/10.3389/fpsyg.2022.856697 বিশদ ব্যাপারটি লেখায় বর্ণিত )
     

    https://media.springernature.com/full/springer-static/image/art%3A10.1038%2Fs41598-021-90729-y/MediaObjects/41598_2021_90729_Fig1_HTML.png
    ( ধ্যান ও এমআরআই , মস্তিষ্কের কোন অংশে রক্ত চলাচল ধ্যানে কতটা বাহিত হয় ও তাকে বোঝা যায় কিভাবে (লেখাটিতে বিস্তারিত)
     

    https://ars.els-cdn.com/content/image/1-s2.0-S0149763414000724-gr2.jpg
    (মস্তিষ্ক এবং ধ্যান, সূত্র: "Is meditation associated with altered brain structure? A systematic review and meta-analysis of morphometric neuroimaging in meditation  practitioners", https://doi.org/10.1016/j.neubiorev.2014.03.016 )
     
     https://media.springernature.com/full/springer-static/image/art%3A10.1038%2Fnrn3916/MediaObjects/41583_2015_Article_BFnrn3916_Fig1_HTML.jpg?as=webp

    ( মস্তিষ্কের যে অংশগুলোতে ধ্যানের প্রভাব বিস্তৃত হয় বলে মনে করা হয়, সূত্র: Tang, YY., Hölzel, B. & Posner, M. The neuroscience of mindfulness meditation. Nat Rev Neurosci 16, 213–225 (2015). https://doi.org/10.1038/nrn3916 )
     
    MBSR এবং কাবাত জিন 
     
    ক্লিনিক্যাল গবেষণা কি বলে? 
     
    আন্তর্জাতিক সমতা প্রকল্প 
     
    স্নায়ুবিজ্ঞানের সহজ পাঠ -- কত রকম ভাবে মস্তিষ্কের অন্দরের হদিশ পাওয়া যায় 
     
    EEG 
    fMRI 
    ডিফল্ট মোড নেটওয়ার্ক 
    অন্যান্য বিষয়সমূহ 
     
    কি কি পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে? সে কি শুধুই ধ্যানের কারণে? জানছি কি করে? 
     
    সীমাবদ্ধ 
     
    উপসংহার 
     
    তথ্যসূত্র 
     
    ১) ACEM Mediation, https://en.wikipedia.org/wiki/Acem_Meditation
    2) https://www.frontiersin.org/articles/10.3389/fnhum.2014.00086/full
    3) ব্রেমার প্রমুখ, Mindfulness meditation increases default mode, salience, and central executive network connectivity. https://www.nature.com/articles/s41598-022-17325-6
    ৪) Zagkas প্রমুখ, How Does Meditation Affect the Default Mode Network: A Systematic Review, https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/37581797/
    ৫) ব্রিউয়ার প্রমুখ , Meditation experience is associated with differences in default mode network activity and connectivity https://www.jstor.org/stable/23060108?seq=4
    ৬) হানা প্রমুখ, The default network and self-generated thought: component processes, dynamic control, and clinical relevance, https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4039623/pdf/nihms553303.pdf
    ৭) বাকনার প্রমুখ, The brain’s default network: updated anatomy, physiology and evolving insights, https://www.nature.com/articles/s41583-019-0212-7
    ৮) গার্সিয়া কামপায়ীও প্রমুখ, Contemplative sciences: A future beyond mindfulness, https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC8040148/pdf/WJP-11-87.pdf
    ৯) Carlos Valiente-Barroso. Brain Plasticity Associated with Meditation Experience: Neurofunctional Approach and Structural Findings. http://article.sapub.org/10.5923.j.ijbcs.20140301.02.html

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | |
  • প্রবন্ধ | ২২ জুন ২০২৪ | ৩৫৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন