এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  রাজনীতি

  • রাষ্ট্র-অতি রাষ্ট্র, নাগরিক-অনাগরিক এবং হাড়-হাভাতে ফ্যাতাড়ুরা

    জয়ন্ত ভট্টাচার্য
    আলোচনা | রাজনীতি | ৩০ জুলাই ২০২২ | ২০৯৭ বার পঠিত | রেটিং ৪.৩ (৩ জন)
  • প্রাককথন


    পশ্চিমবঙ্গের ঘটমান সামগ্রিক ঘটনাপ্রবাহে একজন সাধারণ, চিন্তাভাবনা করতে পারি এরকম মানুষ হিসেবে লজ্জিত বোধ করছি। নিজের ওপরেই ধিক্কার জন্মাচ্ছে - শেষ অব্দি এরকম এক সামাজিক আবহের মধ্যে আমরা চলে এসেছি, এই সময় আমরা যাপন করছি। বেঁচেও আছি, হয়তো “সমুখে শান্তি পারাবার”-এর স্বপ্ন নিয়ে।
    আমরা যাদেরকে নীতিনির্ধারক হিসেবে নির্বাচিত করেছি তাদের সমস্ত কার্যকলাপ, সামান্য কিছু ব্যতিক্রমী প্রতিরোধ বাদ দিলে, আমরা সবাই সমর্থন করেছি, আমাদের silence and acquiescence দিয়ে। যে যোগ্য মানুষগুলো বঞ্চিত হল তারাও তো খড়কুটো ধরে বেঁচে থাকার জন্য এ টাকা দিয়েছে।
    তবে এ তো সামান্য কয়েক কোটি! কয়েক লক্ষ কোটি টাকা ডাকাতি করে মহানন্দে আমোদে-প্রমোদে মেতে আছে কতজন মানুষ। কোনো কেন্দ্রীয় সংস্থা এদের পেছনে দেখা যাবেনা। কারণ এরাওতো কেন্দ্রীয় শক্তিই। প্রশাসনের ধরন, সংবিধানের মূল কাঠামো বদলে যাচ্ছে নিঃসাড়ে। আমাদের বোধ বদলে যাচ্ছে। ধরে নিচ্ছি এটা “নিউ নর্মাল”। এটাই স্বাভাবিক - আমাদের বোধে গেঁথে যাচ্ছে। এমনটাইতো আমাদের পরিচালকেরা, রাষ্ট্রিক অভিভাবকেরা চায়। স্ট্যান স্বামী মৃত্যু/হত্যার পরেও আমরা নিষ্পন্দ। Numbing of our collective consciousness – সামগ্রিকভাবে সামাজিক মানসিকতার বিবশতা।

    “আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না”!

    আড়াই বছর আগে লকডাউনের দিন করোনার "অশুভ আত্মা" তাড়ানোর জন্য আমরা সবার বাড়ি অন্ধকার করে "দিয়া" জ্বালিয়েছি। শববাহিনী গঙ্গা বা সারি সারি চিতা আমাদের মধ্যে সার্বিক কোন প্রশ্ন তোলেনি।

    আমরা কোথায় যাচ্ছি? কোথায় আছি? আমরা কারা?

    রাত কত হইল? উত্তর মেলে না!



    উত্তরের খোঁজে



    (বিধিসম্মত অসংলগ্ন সতর্কীকরণ – শুরুতেই বলা ভালো এরকম সতর্কীকরণ অনেকটা ধূমপান নিয়ে বিধিসম্মত সতর্কীকরণের মতো। গয়লানী উপযুক্ত পরিমাণ দুগ্ধ সরবরাহ করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, পাড়ার মোড়ে অহিফেনের গুলির যে দুটি দোকান ছিলো সে দুটোও সরকারি নিয়মকানুনের প্যাঁচে দমবন্ধ হয়ে মারা গেছে। আমার আবার “পাতা” বা “তামাক” চলেনা, গুরুদেব বারণ করেছেন। ফলে জৈষ্ঠ্যের এই ভরা গরমে কিছু অসংলগ্নতা ঢুকে পড়েছে কথার মাঝে, বলার মাঝে। কি আর করি! দস্তয়েভস্কির উপন্যাসের চরিত্রদের মধ্যে ঘুরে ঘুরে আসা “brain fever”-এ আক্রান্ত হবার মতো দশা। দস্তয়েভস্কির চরিত্রেরা অনেক কিছু মনে করতে পারেনা, ফলে বেনিফিট অব ডাউট পেয়ে যায়, স্মৃতিহরণ ঘটে।

    আমারও কি তেমন কিছু হল? ভয়ে ভয়ে আছি। প্রয়োজনে বেনিফিট অব ডাউট দিয়ে দেবেন আর কি!)

    Engrafted মডার্নিটির যে যাত্রা ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রিক উদ্যোগে শুরু হয়েছিল সেখানে সবাই মানে সমস্ত ভারতবাসী হয়ে উঠলো নাগরিক, খানিকটা হঠাৎ করেই। লক্ষ্যণীয় যে জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে যে ব্রিটিশ জাত প্রায় ৩৫০ বছর ধরে ধীরে ধীরে একটু একটু করে গড়ে উঠেছে ভারত সেসমস্ত ধাপ অতিক্রম করার জন্য পেয়েছে কয়েক দশক মাত্র। ফলে ইংল্যান্ড সহ ইউরোপের গুরুত্বপুর্ণ দেশগুলোতে যেভাবে ঐতিহাসিকভাবে প্রথমে ব্যক্তির অভ্যুদয়, পরবর্তীতে রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের সহাবস্থান, পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সমাজ জীবনে ধর্ম-নির্লিপ্ততার (secularism) যে পরিসর তৈরি হয়েছে তা ভারতে হয়নি। যেভাবে শ্রমিক তথা মার্ক্সের ধারণানুযায়ী সর্বহারা শ্রেণীর এবং পুঁজির সাথে শ্রমের টানাপোড়েন থেকেছে বিভিন্ন স্তরে, যেভাবে দেশগত ভিন্নতা থাকা সত্বেও বিভিন্ন সামাজিক ও শ্রেণী সম্পর্কের মানুষের একটি পাব্লিক ডিসকোর্সের পরিসর তৈরি হয়েছে, যেভাবে চার্চ এবং রাষ্ট্র পৃথক হয়েছে, যেভাবে সমাজ জীবন থেকে অপসৃত হয়ে ধর্মানুগত্য ব্যক্তিগত রুচি এবং পরিসরের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ঐতিহাসিকভাবে সেসব তো এখানে হয়নি। বিভিন্ন সামন্ত রাজ্যে বিভক্ত ভারত নামের ভৌগলিক ভুখন্ডে সামন্ত রাজা, উদীয়মান বৃহৎ শিল্পপতি শ্রেণী, ব্যবসায়ী, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজ এবং ওকালতি ও ডাক্তারির মতো বিভিন্ন স্বাধীন পেশার ব্যক্তিদের উপনিবেশের বিরুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থে রাজনৈতিক এবং সামরিক সংগ্রামের বিভিন্ন সফলতা ও ব্যর্থতার চিহ্ন বহন করেছে ১৯৪৭ পরবর্তী স্বাধীন ভারতবর্ষ।

    এধরনের বিভিন্ন সময়-চিহ্নের স্থায়ী ছাপ নিয়ে যে রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং একক ব্যক্তির একক ভোটাধিকার চালু হলো সেগুলো মূলত সমাজের উপরের স্তরের ক্ষমতা চিহ্ন। এরকম এক ঐতিহাসিকতায় প্রধানত কৃষিসম্পর্কে আবদ্ধ শতকরা ৮০ ভাগ মানুষকে নিয়ে গড়ে ওঠা নতুন ভারতীয় জাতি-রাষ্ট্রে মডার্নিটি বা আধুনিকতা প্রকৃত অর্থে engrafted হয়ে যায়, ঐতিহাসিকভাবে সামাজিক পরিবর্তন ও গতিশীলতার (social and historical dynamics) নিয়মে জন্ম নেয় না। রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যক্তি-সমাজ-কৌম-রাষ্ট্র-নাগরিকতার যে সম্পর্ক নতুন করে রচিত হয় ১৯৪৭ পরবর্তী ভারতবর্ষে তা প্রায়-সম্পূর্ণ ব্রিটিশ রাজনৈতিক সংবিধানের ধারায় তৈরি হওয়া। বিশেষ করে আমরা যদি দুটি বিষয় একবার স্মরণ করে নিতে পারি – (১) ভারতের উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনের প্রধান মুখ স্বয়ং গান্ধী তাঁর নিজের জীবনের ক্ষেত্রে একাধিকবার দুটি passion-এর কথা বলেছেন। প্রথমটি হল ব্রিটিশ সংবিধান (Pax Britannica-ও বটে) এবং দ্বিতীয়টি নার্সিং বা শুশ্রুষা। (২) প্রধানত শিল্প বিপ্লবোত্তর ইউরোপে সমাজ এবং কৌমের ধারণা খসে গেছে প্রায় ৩০০ বছর জুড়ে। নাগরিক ও রাষ্ট্রের মাঝে সরাসরি সম্পর্ক – অধিকার এবং কর্তব্যের বাঁধনে, cash nexus-এর প্রবল উপস্থিতিতে। এখানে মধ্যস্থতাকারী কোন সামাজিক পরিসর নেই, যা আছে তা নাগরিক পরিসর বা সিভিল স্পেস।

    ডেমোক্রাসির স্বর্ণযুগে কিংবা সামাজিক পরিসরের সবল, জোরালো উপস্থিতির সময় আধুনিকতা নির্মিত নাগরিকতার ভাষ্য ছাড়াও আরও অনেক স্বর, কণ্ঠ, আত্মপ্রকাশ করে – indiscernible (অশ্রুত) থেকে discernible (শ্রুতিগ্রাহ্য) হয়ে ওঠে, invisibility (অদৃশ্য) থেকে visibility (দৃশ্যমানতা)-র স্তরে উঠে আসে। বিখ্যাত উদাহরণ হিসেবে ১৯৬০-৭০-এর দশকের প্যারিসের ছাত্র বিদ্রোহ বা আমেরিকায় ভিয়েতনাম বিরোধী আন্দোলনের কথা কিংবা সাম্প্রতিক কালের “অন্য এক পৃথিবী সম্ভব” বা “Occupy Wall Street” আন্দোলনের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। এরকম একটা পরিসরে নাগরিক হবার ধারণার সাথে নাগরিক না-হবার কিংবা অ-নাগরিকের ধারণাও সামাজিকভাবে মান্যতা, গ্রাহ্যতা পায়। বহু ভাষ্যের নির্মাণ হতে থাকে।

    কিন্তু সমগ্র রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াটাই যদি ভিন্নধর্মী হয়? যদি জাতি-রাষ্ট্র তৈরিই হয় প্রভুত্বকারী সামন্ত রাজা ও এর উপযোগী পরিব্যাপ্ত মানসিকতা, কৃষি শ্রম, শিল্পীয় শ্রম, শিক্ষিত জায়মান নাগরিক সমাজ, বৃহৎ পুঁজি এবং জাতীয়তাবাদের উত্তুঙ্গ পর্বে গড়ে ওঠা ছোট বা স্বাধীন পুঁজির মধ্যেকার অসংখ্য বাস্তব দ্বন্দ্বকে অমীমাংসিত রেখে? যদি গড়ে ওঠে জাতিস্বত্তার প্রশ্নকে সমাধানের আওতায় না এনে? Integer বা পূর্ণসংখ্যা না হয়ে, কোন ত্রৈরাশিক বা ভগ্নাংশ কিংবা অ-নাগরিক হয়ে কেউ থাকতে পারেনা। আধুনিকতার একটি এবং একমাত্র ভাষ্যেই এদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রবণতাটি সবসময়েই কেন্দ্রাভিমুখী। প্রান্ত এখানে প্রান্তিক, কখনো ব্রাত্যও বটে। অসংখ্য দ্বন্ব অমীমাংসিত রেখে জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে ভারত গড়ে ওঠার এক অসামান্য চলমান চরিত্র (দলিলও বলা যেতে পারে) সতীনাথ ভাদুড়ীর সৃষ্টি "ঢোঁড়াই"। এরকম দলেই পড়বে আমার মতো সুশীল, সুবোধ, গোপাল-বালক গোছের মানুষজন।

    যাহোক, ঢোঁড়াই বড়ো মুশকিলে পড়ছিলো ওর জীবনটাকে নিয়ে। জীবনের বিভিন্ন পর্বে তাৎমাটুলির ঢোঁড়াই ধীরে ধীরে বুঝেছে, আত্মস্থ করেছে অজানা সব অভিজ্ঞতা – “অদ্ভুত জিনিস এই ‘বোট’। হঠাৎ টাকা পেলে লোকের ইজ্জৎ বাড়ে, এর অভিজ্ঞতা ঢোঁড়াইয়ের জীবনে হয়ে গিয়েছে। বোটও সেই রকম রাতারাতি লোকের ইজ্জৎ বাড়িয়ে দেয়, কেবল যে বোট দেবে তার নয়, সারা গাঁয়ের।” ঢোঁড়াইয়ের ইজ্জৎ সারা গাঁয়ের ইজ্জৎ হয়ে যায়। “বোটের” সুতোয় রাষ্ট্রের সাথে বাঁধা পড়ে একক ঢোঁড়াই, তখনো নাগরিক হয়ে উঠেছে কিনা স্পষ্ট নয়। কিন্তু তার অস্তিত্বের সাথে জড়িয়ে থাকে তার গ্রাম অর্থাৎ ব্যক্তি-সমাজ-কৌম-রাষ্ট্র-নাগরিকতার এক আখ্যান রয়ে যাচ্ছে আধুনিক জাতি-রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে চলা নতুন ভারতবর্ষের মধ্যে। “বলান্টিয়ারদের” দয়ায় নগণ্য ঢোঁড়াই “রামরাজ্য কায়েম করবার কাজে, কাঠবেড়ালীর কর্তব্যটুকু করবার সুযোগ পেয়ে গেল।” তার মননে বা psyche-তে যোগসূত্র তৈরি হল ঢোঁড়াই আর “মহাৎমাজীর” সাথে – imagined communities। আধুনিকতার নতুন কেন্দ্রীভূত রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রিক ডিসকোর্সে ঢুকে পড়ছে ঢোঁড়াইয়ের মতো প্রান্তিক মানুষ ও অঞ্চল – নিজস্ব সমাজ ও কৌম বোধ নিয়ে। এটা ব্রিটিশের জগতে জন্ম নেওয়া ইউরোপীয় আধুনিকতার চেহারা নয়, এর অবস্থান আধুনিকতার চেনা ডিসকোর্সের বাইরে।

    ঢোঁড়াইয়ের অন্য এক যাত্রা শুরু হয়। “এই নিঃসীম রিক্ত জগৎটার মধ্যে ‘পাক্কী’ না কী নামের যেন একটা অপরিচিত রাস্তা দিয়ে সে চলছে।” আধুনিক ভারতের “পাক্কী” রাস্তার বাঁকে ঢোঁড়াই – ভারতের উন্নয়নের কুল চিহ্ন (insignia)। কিন্তু তার নাগরিকতার মধ্যে রয়ে যায় ভগ্নাংশের উপাদান, যদিও রাষ্ট্র তাকে গ্রহণ করবে একক integer হিসেবেই। রাষ্ট্রের জন্মলগ্নেই রয়ে গেলো অন্তর্লীন বিরোধ। ইটি আব্রাহাম অল্প কথায় সমস্যাটাকে এভাবে বুঝেছেন – “Within these new spaces, a logic different from the representation of India as ‘traditional’ was meant to operate. These new spaces would be rationalized, scientifically ordered spaces filled with individuals who, having shed personal religious or sectarian loyalties would identify primarily as a modern man – in a word, ‘Indian’.” (The Making of the Indian Atomic Bomb, p. 21) নিজের সত্তা, অস্তিত্বকে অস্বীকার করে, ভগ্নাংশকে অন্তর্লীন রেখে ঢোঁড়াইয়ের মতো অগণন মানুষের আধুনিক রাষ্ট্রের উপযোগী integer হয়ে ওঠার সংকট প্রসারিত হতে থাকবে সামাজিক বিভিন্ন স্তরে।

    ইউরোপীয় আধুনিকতার ভাষ্য, যা আমাদের দেশে ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে অনুসৃত হচ্ছিল, তার উপাদানের মাঝে (matrix) নিহিত যুক্তি অনুসরণ করে আমরা বুঝতে পারলাম আমাদের মতো নাগরিকদের ধরা হবে একেকটি integer বা পূর্ণ সংখ্যা হিসেবে। এখানে ভগ্নাংশের কোন জায়গা নেই। উদো-বুধোর ত্রৈরাশিক না ভগ্নাংশ, এসব ভাবার কোন অবকাশই নেই। মণিপুরী বা কাশ্মিরী বলে আবার আলাদা কিছু হয় নাকি? এগুলো তো ভগ্নাংশ। পূর্ণসংখ্যা ভারতীয় নয়।

    এরকম এক social psyche তৈরির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হল ভাষা এবং disciplinary time তথা শৃঙ্খলাবদ্ধ সময়। আবার পূর্ণ সংখ্যা পজিটিভ বা ইতিবাচক হতে পারে, যেমন স্থিতধী, প্রজ্ঞাবতী-প্রজ্ঞাবান সব নাগরিক। পূর্ণ সংখ্যা নেগেটিভও (নেতিবাচক) হতে পারে। ভাবুন দেখি নেগেটিভ পূর্ণ সংখ্যার কি ভারী একখানা দল।

    শুরু করি যদি গোরখপুরের শিশু বিশেষজ্ঞ ডঃ কাফিল খানের কথা দিয়ে – সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ না থাকার ফলে কতগুলো বাচ্চা স্রেফ মরে গেলো, নিজের গাঁটের পয়সা দিয়ে গাড়ির তেল পুড়িয়ে বাইরে থেকে অক্সিজেন জোগাড় করে ডাক্তারবাবু বাঁচালেন অনেকগুলো প্রাণ, তারপরে ৮ মাস জেল খাটলেন যেন ওঁর জন্যই অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা যায়নি এমনটা আর কি। আমাদের স্মৃতিতে আসছে কি একটু একটু এ ইতিহাস?

    এখানেও তো আবার অন্য বিপদ আছে, ইংরেজিতে যাকে বলে numbing of collective consciousness – বিবশ হয়ে যাওয়া সম্মিলিত সংবেদনশীলতা, যাকে বলে historical and social amnesia – ঐতিহাসিক আর সামাজিক বিস্মরণ। এই বিস্মরণের জোরেই কিনা ডঃ খানের ভাই যে “অজ্ঞাত পরিচয়” দুষ্কৃতির হাতে মারা গেলো সে কথা বোধ করি আমরা বেমালুম ভুলে গেছি। পূর্ণ সংখ্যা মানে পজিটিভ পূর্ণসংখ্যা – একখানা গোটা, আস্ত নাগরিক। কিন্তু নেগেটিভ পূর্ণসংখ্যারা কেমন অদ্ভুতভাবে পৃথিবী থেকে, মনুষ্য সমাজ থেকে একে একে খসে পড়তে থাকে – কখনো গৌরি লঙ্কেশ নামে, কখনো কালবুর্গী, কখনো আখলাক, কখনো আসিফা, কখনো পানেসার। কি লম্বা মিছিল দেখুন। আমিও দেখি। কিন্তু তাতে হয়েছেটা কি? কি আর হবে! আমাদের যাপিত সময়ের জাগ্রত বিবেক শঙ্খ ঘোষ স্মরণ করিয়ে দেন –


    “আর সব উন্নয়ন পরিত্রাণ ঘূর্ণমান অগণ্য বিপণি দেশ জুড়ে
    যা দেয় তা নেবার যোগ্য নয়
    আমাদের চেতনাই ক্রমে অস্পষ্ট করে সাহায্যের হাত …..
    লোকে ভুলে যেতে চায়, সহজেই ভোলে।”


    স্মরণ করিয়ে দেন –


    “বেঁধেছ বেশ করেছ
    কী এমন মস্ত ক্ষতি
    গারদে বয়েস গেল
    তাছাড়া গতরখানাও
    বাবুদের কব্জা হলো
    হলো তো বেশ, তাতে কি
    বাবুদের লজ্জা হলো?”



    লজ্জা কি হলো সত্যিই? এসবের মাঝে সবার অলক্ষ্যে, আমাদের চোখের আড়ালে, নিঃসারে সামাজিকভাবে গণ পরিসরের যতটুকু স্থান রয়েছে, তার রাজনৈতিক চরিত্রের masculinization তথা পৌরুষীকরণ ঘটেছে। নৈতিকতার গোড়ার প্রশ্নগুলোকে অল্প অল্প করে দিনের শেষে ঘুমের দেশের মতো ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে (ethical tranquilization)।

    কত বিচিত্র বিষয় ভেবে দেখি একবার! নাগরিক-অনাগরিক, ভারতপ্রেমী-রাষ্ট্রদ্রোহী, হিন্দী-অহিন্দী, কেন্দ্রের ভারত-প্রান্তের ভারত, আলোর ভারত-আলো-আঁধারির ভারত, ক্ষমতার ভারত-ক্ষমতাহীনের ভারত, ক্রিকেটের ভারত-ডাংগুলির ভারত, টেনিসের ভারত-গোল্লা ছুটের ভারত, কমপ্লানের ভারত-ডিম খেতে চাওয়া মিড ডে মিলের ভারত! উফ, মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। এত্তো এত্তো ভারতকে মনে রাখতে হবে? সবাইকে প্রকাশ করতে হবে “তোমারই প্রকাশ হোক”-এর মতো পজিটিভ পূর্ণ সংখ্যা দিয়ে? আমার পরিচালক রাষ্ট্র তো সে কথাই বলছে। আমাদের কি আর নেগেটিভ সংখ্যা হবার – এরকম দলভারী মিছিল দেখার পরেও আমাদের কি বিশেষ কোন “সদিচ্ছা” আছে বা থাকতে পারে।

    “আমরা তো অল্পে খুশি / কি হবে দুঃখ করে / আমাদের দিন চলে যায় / সাধারণ ভাত কাপড়ে!”

    হয় তুমি ভারতীয়, নয় তুমি ভারতীয় নও। মানে তুমি আধুনিক, থুড়ি, বর্তমান রাষ্ট্রের নিয়ম-টিয়ম মানো তো? আমাদের আধুনিক গণতন্ত্রের প্রথম যুগে মানে ইউরোপে যখন এলায়িত সামন্ত রাজ্য/রাষ্ট্রগুলো নতুন করে জুড়ে এবং বিন্যস্ত হয়ে ধীরে ধীরে আধুনিক শিল্পনির্ভর জাতীয় রাষ্ট্র হয়ে উঠছে সেসময় থেকেই তো অস্তিত্বের অন্যসব স্তর তলিয়ে যাচ্ছে, ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নাগরিক সত্তার মাঝে। একটি নির্দিষ্ট ভুখণ্ড নিয়ে, তার নিজস্ব আইনকানুন নিয়ে একটি রাষ্ট্র – বহুলাংশেই জনমতের উপরে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে (যাকে এখন অ্যাকাডেমিক জগতের ভাষায় বলে “manufacturing consent”)।

    আরো একধাপ এগিয়ে আবার আমার আপনার মতো কোন অর্বাচীন, অকালপক্ক, অর্ধশিক্ষিত দেখে এর মাঝে hegemony তথা মান্যতা নিয়ে টিঁকে থাকবার নানা রকমের কৃৎ-কৌশল রয়েছে। কৃৎ-কৌশল রয়েছে রাষ্ট্রের অতিরাষ্ট্রের হয়ে ওঠার চারিত্র্যলক্ষণের মধ্যে আছে ক্রমশ ঘৃণাকে সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া – শব্দে, চিত্রকল্পে, প্রাত্যহিক সংলাপে। হিংসাকে আকর্ষণীয় প্রদর্শনী করে তুলতে হবে (spectacularized violence)। ধীরে ধীরে এগুলোকে সহনীয় করে তোলা। নিজের নিয়মেই সহনীয় হয়েও যায়। যাকে পছন্দ করিনা তাকে ‘দানব’ বানিয়ে দাও (demonization), শিক্ষা থেকে থেকে সরিয়ে দাও প্রশ্ন করার সাহস, উৎসাহ এবং পরিসর। শিক্ষকেরা হয়ে যাক educational managers, ছাত্রের মাঝে “কেন?”-র প্রবাহ তৈরি করার কোন জ্ঞানভিক্ষু নয়। একটি সংস্কৃতির জন্ম হবে যার ভিত্তি হবে কেবল তাৎক্ষণিকতা-নির্ভর, শুধুমাত্র বর্তমানকে চিনি বুঝি যাপন করি, অন্য কিছু নয়। অতীতের এবং ইতিহাসের পুনর্নিমাণ হবে। সমাজের অন্ধকার জগৎ, যাদেরকে চালু ভাষায় লুম্পেন বলা হয়) আলোয় আসার, রাজপথের দখল নেবার, ক্ষমতার বৃত্তের সাথে সংস্থাপিত থাকার গৌরব অর্জন করবে।

    এরকম এক পরিস্থিতি অন্য প্রেক্ষিতে ফ্রানজ ফ্যানঁ (Frantz Fanon) দেখেছিলেন তাঁর The Wretched of the Earth পুস্তকে। তিনি দেখেছিলেন – “The very same people who had it constantly drummed into them that the only language they understood was that of force, now decide to express themselves with force.”

    এরকম এক বিশেষ সময়ে আমাদের “ফ্যাতাড়ু”রা আর অন্তর্ঘাত ঘটাতে পারেনা। এরা নিজেরাই ধীরে ধীরে রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়া অন্তর্ঘাতের অংশীদার হয়ে যায়। এর হিংসা আর শক্তি প্রদর্শনের extra-judiciary, extra-state হাতিয়ার হয়। এরা “নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে”-র সৌম্যকান্তি পাগল চরিত্রটির মতো দুর্বোধ্য “গ্যাৎচরেৎশালা” উচ্চারণ করেনা। এরা স্পষ্ট ভাষায় হিংসা-ঘৃণা-হিংস্রতা-পেশির ভাষা উচ্চারণ করে। ভাষার চিহ্ন এঁকে দেয় “অপরের” শরীরে। পার্টি এবং রাষ্ট্রের ভেদরেখা মুছে যেতে থাকে। আমাদের বোঝা রাজনীতির চেনা ছকে ঠিক এই গল্পগুলো তৈরি হচ্ছেনা।

    রাজনৈতিক লুম্পেনিকরণ বহুদিন ধরেই চলছে। আমাদের বিবেক, মনন, চেতনা বিদ্ধ হলেও, রক্তাক্ত হলেও আমরা মেনে নিয়েছি বা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি। এখানে রাষ্ট্র শুধু অতিরাষ্ট্রের আচরণ করছে তাই নয়। সমস্ত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে পাশ কাটিয়ে লুম্পেনদের হাতে সেই ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে যেখানে রুনু গুহনিয়োগীর প্রয়োজন পড়েনা। কারণ তাকেও তো একটা নামকাওয়াস্তে বিচারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সেই বিচার যদি পার্টি বা দলের বিচার হয়? কিংবা যদি বিচারের আঙ্গিনায় প্রধান পুরুষ হয়ে দেখা দেয় রাষ্ট্রের প্রসারিত রাজশক্তির পৌরুষ – অদৃশ্যগোচর (invisible) এবং অশ্রুত (indiscernible) বহুদূরের প্রান্তজন মানুষটির পরিবর্তে? তখন তো ঔপনিবেশিক কালের মতোই বিচারের বাণী নীরবে চোখের জল ফেলতেই পারে।

    বর্তমানের যাপিত সময়ে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত স্তম্ভগুলোকে যদি স্মারকচিহ্নের স্তরে নামিয়ে আনা যায় তাহলে পার্টি এবং বকলমে রাষ্ট্র লালিত extra-judiciary এবং extra-democratic institutions-এর ধারণা জনমানসে নিঃসারে চারিয়ে যায়। লুম্পেনরাজ ঘোষিতভাবে সমাজের চলন, নীতি, নৈতিকতা, ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি পরিসর - সবকিছু নির্ধারণ করবে। আমরা তো জানিই “শীতলকুচি করে দেবো” বা “রগড়ে দেবো” বা “অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াড” গড়ে তোলার মতো প্রবল প্রত্যয় এবং অমৃত ও স্বস্তিবচন। আমরা ধীরে ধীরে সইয়ে নিয়েছি নিজেদের। এরকম এক সুবোধ, সুশীল “ফ্যাতাড়ু”বাহিনী পেলে আর কারা অন্তর্ঘাত ঘটাবে? এদেরকেইতো নবনির্মিত রাষ্ট্রের প্রয়োজন বা এভাবেই গড়ে নেবে। কিছু নির্মিত চিহ্ন বা শ্লোগানের প্রতি বশ্যতা ও আনুগত্য বোঝাবে পছন্দমতো-গড়ে-নেওয়া দেশ নামক ভূখণ্ডের নাগরিক বা না-নাগরিক।

    এখানেই রাষ্ট্র, পার্টি ও প্রচলিত আখ্যানের বাইরে গিয়ে জরুরী হয়ে পড়ে একটি তৃতীয় পরিসর গড়ে তোলা। জরুরী অবস্থার সময়ে ভারত জুড়ে পার্টি অস্তিত্বকে অতিক্রম করে সর্বব্যাপী তৃতীয় পরিসর জন্ম নিয়েছিল। এই তৃতীয় বা নাগরিক পরিসর নতুন চিন্তন, সৃষ্টিতরঙ্গ, নতুন কমরেডশিপকে বাস্তবের মাটিতে জীবন্ত চেহারা দিয়েছিল। এই তৃতীয় তথা নাগরিক পরিসরের সজীব উপস্থিতি জেলে অবরুদ্ধ কংসারী হালদারকে নির্বাচনী লড়াই জিতিয়েছে। ১৯৭৭-৭৮ বা ১৯৮৮-৮৯-এর পশ্চিমবঙ্গে বন্দীমুক্তি আন্দোলনকে সফল করেছে। নন্দীগ্রামের নরহত্যার পরে লাখো লোকের দৃপ্ত পদচারণা পশ্চিমবঙ্গ দেখেছে। নাগরিক পরিসর না থাকা বা ক্রম-সংকুচিত হবার জন্য আজ দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ বা রাজস্থানের চিত্র ভিন্ন। পশ্চিমবঙ্গের চিত্র খানিকটা ভিন্ন জায়গায় রেখেছে।

    অঁরি জিরো (Giroux) তাঁর একটি লেখায় আবেগঘন আবেদন রেখেছেন – “The current fight against a nascent fascism across the globe is not only a struggle over economic structures or the commanding heights of corporate power. It is also a struggle over visions, ideas, consciousness, and the power to shift the culture itself.”

    আমেরিকার প্রতিবাদী সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ১৯২৭ সালে প্রথম প্রকাশিত তাঁর দ্য ফ্যান্টম পাবলিক পুস্তকের শুরুতেই সেসময়ের আমেরিকার জন মানসিকতার বিচার করে বলছেন – “আজ প্রতিটি ব্যক্তি নাগরিক পেছনের সারিতে বসে থাকা একজন বোবা দর্শকের অনুভূতিতে পৌঁছেছে, যারা নিজেদের মনকে বলবে সামনের দিকে কি রহস্য চলছে তাতে দৃকপাত না করাই ভালো। নিজেকে জাগিয়ে রাখতে সে পারেনা। সে বোঝে চারপাশে যা ঘটছে সেসবের আঁচ তার গায়েও লাগছে ... কিন্তু এ বিষয়গুলো কে সে নিজের বিষয় বলে ভাবতে পারেনা। এরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অদৃশ্যে থাকে।”

    একই গ্রন্থে লিপম্যান বলেছিলেন – “Since the general opinions of large numbers of persons are almost certain to be a vague and confusing medley, action cannot be taken until these opinions have been factored down, canalized, compressed and made uniform. The making of one general will out of multitude of general wishes is not an Hegelian mystery, as so many social philosophers have imagined, but an art well known to leaders, politicians and steering committees. It consists essentially in the use of symbols which assemble emotions after they have been detached from their ideas.” আমাদের অশোকস্তম্ভের সিংহ কেমন করালবদ্ হাঁ-মুখ, আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। প্রতীক বা সিম্বলের ব্যবহার রূপন্তরিত হচ্ছে, যেমনটা লিপম্যান বলেছিলেন।

    আমাদের ভারতে তৃতীয় পরিসর আরও সঙ্কুচিত হবে, হচ্ছে – নতুন রাজনীতির নিয়মে। আজকের সর্বপ্লাবী অনৈতিকতা অথবা ভিন্ন স্বরকে স্তব্ধ করে দেবার জন্য রাষ্ট্রিক-অতিরাষ্ট্রিক-অরাষ্ট্রিক সমস্ত ধরণের হাতিয়া ব্যবহার করা কার্যত “চোখে আঙ্গুল দাদা!”

    ইতিহাসের তো পুনর্লিখন চলছে। অনেক নতুন বীর আর শহীদ গড়ে উঠবে। তোমার সামনে নেচে-কুঁদে বেড়াবে। বাঙ্গালী, বাংলা তথা ভারত বর্তমানের প্রয়োজনেই তোমাকে ভুলে যাবে। নতুন ইতিহাস গড়ে উঠছে!

    বিভিন্ন স্তরের মানুষের আন্তরিক, চোয়াল-কষা লড়াইয়ের ফলশ্রুতিতে একটি তৃতীয় পরিসরের বাস্তব দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। একে বাঁচাতে হবে। বাঁচাতে আসতে হবে ফ্যান্টম পাবলিক নয়, রক্তমাংসের বারেবারে হেরে যাওয়া, সর্বস্ব খুইয়ে হেরে যাওয়া আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে – ভোটের রাজনীতির জনপিণ্ড হবার অস্তিত্বকে অতইক্রম করে।

    এ চাহিদা বর্তমান সময়ের চাহিদা। এ দাবী বর্তমান সময়ের দাবী!




    গ্রাফিক্স: যদুবাবু
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ৩০ জুলাই ২০২২ | ২০৯৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সুদীপ্ত বসু | 2409:4060:e88:8f8b::b049:***:*** | ৩০ জুলাই ২০২২ ১৫:০০510574
  • তথ্যপূর্ণ লেখা, ধন্যবাদ 
  • দেবরাজ চক্রবর্তী | 2405:201:8015:7829:2:11f6:4e46:***:*** | ৩১ জুলাই ২০২২ ২২:২৮510631
  • এই ধরনের লেখা পড়ে সমৃদ্ধ হলাম।
  • দেবব্রত কর | 45.25.***.*** | ০৩ আগস্ট ২০২২ ১১:৩৫510709
  • বাস্তব চিত্রকথন।
  • দেবব্রত কর | 45.25.***.*** | ০৩ আগস্ট ২০২২ ১১:৩৭510710
  • স্যার,আমার মনে হয় প্রথমে মানুষ শাসকের সব কাজ সমর্থন করে না।কিন্তু ক্রমে শাসকের আধিপত্য দেখে অসহায় হয়ে পড়ে আর তারপরেই নিজের মনকে মানিয়ে নেয়। নিজের অজান্তেই ছদ্ম সমর্থন করে বসে।
  • রাজদীপ্ত রায় | 2409:4060:2d88:8f9a::104b:***:*** | ০৩ আগস্ট ২০২২ ১২:৫৯510711
  • অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখা। শ্রী জয়ন্ত ভট্টাচার্যকে কুর্নিশ। ভোট নির্ভর ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল ধারনাটিতেই কোনো স্পষ্টতা নেই। সর্ষের মধ্যে ভূত। ভোটের মান, বক্তব্য বা দিশা নয়, জড়দগব একটা আকাট সংখ্যাধিক্যই নির্ধারক ভূমিকা পালন করে। সত্যিই, এই দায়/দিশা/দৃষ্টিহীন জনপিণ্ড নির্ভর ভোটের রাজনীতি থেকে মুক্তি দরকার। 
  • বর্ণালী দও | 117.226.***.*** | ০৫ আগস্ট ২০২২ ১০:১২510770
  • "ইতিহাস তো পুনর্লিখন চলছে" চলুক আরো চলুক তোমার হাত ধরে কাকু।আর আমরা সেই পথের পাঠক হই।
  • সুকুমার ভট্টাচার্য্য | 122.17.***.*** | ২১ আগস্ট ২০২২ ১১:২৭511231
  • সময়োপযোগী লেখা। প্রথমে লজ্জা করত। এখন কান্না পায়। ব্রিটিশ আমলেও সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ হত। এখন আমরা চিড়িয়াখানার জন্তু হয়ে গিয়েছি। সব মেনে নেই। আঠার বছর কোথায় যেন হারিয়ে গেল। সুকান্ত আজকের দিনে ঐ কবিতা আর লিখতেন না।
  • কিরীটি রায় | 202.8.***.*** | ২১ আগস্ট ২০২২ ১৩:৪১511235
  • লেখককে ধন্যবাদ ভারতের শাসনব্যবস্থার ও আমাদের অবস্থা চিত্র উন্মোচনের প্রচেষ্টার জন্য। 
  • সুদীপ্ত বসু | 2409:4061:2e0e:d52a::b049:***:*** | ২৪ আগস্ট ২০২২ ১০:০৪511308
  • ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে কিন্তু নিজেদের দেশের লোক করছে এইসমস্ত কাজ। তথ্যপূর্ণ লেখা পড়ে
     সমৃদ্ধ হলাম
  • জগবন্ধু রায় | 103.17.***.*** | ০৫ অক্টোবর ২০২২ ১১:৪৮512556
  • অসাধারণ বিষয়, বর্ত্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিটিশিক্ষিত মানুষকে এবিষয়েঅবগত থাকা এবং ভাবা দরকার ৷
  • Deep biswas | 103.2.***.*** | ০৫ অক্টোবর ২০২২ ২৩:৪৫512560
  • খুব ভালো লিখেছেন স্যার , খুবখারাপ হলেও একদম বাস্তব 
  • সুদীপ্ত বসু | 2409:4061:40c:9443::4f5:***:*** | ০৬ অক্টোবর ২০২২ ০৯:৩৮512566
  •  ধন্যবাদ স্যার ভারতের শাসনব্যবস্থার ও আমাদের অবস্থা চিত্র উন্মোচনের প্রচেষ্টার জন্য। 
  • দেবলীনা | 2409:4060:e98:a4de::4549:***:*** | ০৬ অক্টোবর ২০২২ ১০:২৫512567
  • এই লেখাটা  একদম অন্য বিষয়ে।  প্রতিবাদ লেখার পরতে পরতে ঝলসে উঠেছে। ধন্যবাদ এমন লেখা পাঠকদের  উপহার দেওয়ার জন্য।  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন