হাতিবাগান নিবাসী হরিধন হালদার ভাবলেন তাঁর আজন্ম বাহিত নামটি পরিবর্তন করবেন। সেই জন্য তিনি হরিহর আত্মা প্রতিবেশী বন্ধু বলাইচাঁদ বটব্যালের কাছে গেছেন শলা করতে - কী করণীয়।
বলাইবাবু বলেন, খামোখা নাম পরিবর্তনের ঝামেলায় যাওয়ার কী দরকার শুনি?
হরিধনবাবু বলেন, নামটা আমার পছন্দ নয়।
বলাইবাবু বলেন, পছন্দ নয় কেন? কতো লোক কতো বিদঘুটে নাম নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তোমার নামটা খারাপ কীসের শুনি? নিত্যধন, গোবর্ধন, দূর্যোধন, শান্তিধন, সত্যসাধন, নিমাইসাধন … শেষে ধনযুক্ত কতো নামের লোক আছে বঙ্গে, তোমার হরিধন কী দোষ করলো?
হরিধনবাবু ছেলেমানুষের মতো একগুঁয়েমি করে বলেন, না, এ নামটা আমি বদলাবো। তুমি তো কোর্ট কাছারির ব্যাপার স্যাপার জানো, বল না, নাম বদলাতে গেলে কী করতে হয়।
বলাইবাবু বলেন, শুনবে না যখন, বদলেই ছাড়বে, তখন শোনো। আদালতে আবেদন করতে হবে। সাথে হলফনামা দাখিল করতে হবে এই মর্মে যে এই নাম বদলের কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নেই। তোমার এই নামে কোনো পুলিশ কেস চলছে না। বাজারে কোনো দেনা নেই তোমার। তারপর দু তিনটে কাগজে তুমি যে নাম বদল করতে চাইছো এই মর্মে একটা বিজ্ঞপ্তি ছাপিয়ে জানাতে হবে এর জন্য কারুর কোনো আপত্তি থাকলে অমুক ঠিকানায় বা পোষ্ট বক্সে একমাসের মধ্যে জানাতে হবে। একমাস পরে আবার একটা এই মর্মে হলফনামা লিখতে হবে যে কাগজে নাম পরিবর্তনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের একমাস পরেও কারুর কাছ থেকে তুমি কোনো আপত্তিমূলক নোটিশ পাওনি। এই সব নিয়ে আদালতে কোর্ট ফি জমা দিয়ে কাগজপত্র পেশ করলে, হয়ে যাবে। এ এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়।
হরিধনবাবু বলাইবাবু বর্ণিত সবকিছু পদক্ষেপ করে আদালতে আবেদন করেছেন। নির্দিষ্ট দিনে বিচারপতির সামনে হাজির হয়েছেন হরিধনবাবু। কাগজপত্র সহকারে আবেদন পেশ করলেও জজসাহেব আদালতে একবার আবেদনকারীকে মৌখিক জিজ্ঞাসা করে নেন। এটাই দস্তুর। জজসাহেব কাগজপত্রে চোখ বুলিয়ে পেশকারকে জিজ্ঞাসা করেন, কাগজপত্র সব ঠিক আছে?
পেশকার বলেন, হ্যাঁ হুজুর।
এবার তিনি হরিধনবাবুকে বলেন -
- আপনার নাম?
-হরিধন হালদার হুজুর।
-পিতার নাম?
-স্বর্গত শ্রী মধুসূদন হালদার হুজুর।
-আপনি স্বেচ্ছায় নাম পরিবর্তন করতে চান?
-হ্যাঁ, হুজুর।
-কেন জানতে পারি?
-নামটা আমার পছন্দ নয় হুজুর।
-অন্য কোনো গোপন, অসৎ উদ্দেশ্য নেই তো?
-না হুজুর।
-বেশ। পরিবর্তন করে কী নাম রাখতে চান?
-হরিলাল হালদার হুজুর।
জজসাহেব আবেদন পত্রে সই করে পেশকারকে বলেন - এই আবেদন অনুযায়ী শ্রীযুক্ত হরিধনের ধন কাটিয়া লাল করিয়া দেওয়া হউক।
পুনশ্চঃ - টুনটুন মুনটুন লেখাটিতে একটি তথ্যবিচ্যূতি ঘটেছিল। আমি ষাঁড়ের বদলে বলদ লিখেছিলাম। জনৈক Technical question ভুলটি ধরিয়ে দিয়ে মন্তব্য করেছিলেন “লেখাটায় বলদের বদলে ষাঁড় লিখবেন?”
আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে - লেখায় যেখানে যেখানে বলদ ছিল - সেগুলো ষাঁড় করে দিয়েছি। তবে তা না করে হরিধনবাবুর নাম পরিবর্তন কিস্যার মতো আমিও লেখায় সব জায়গায় বলদ না বদলে তলায় এক লাইনের মন্তব্য লিখে দিতে পারতাম :: বলদ = ষাঁড় পড়িতে হইবে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।