এই মস্তিষ্কময় চক্ষু হৈতে কেবল নিচস্থ শরিলটি পিত্তলের ঘন্টারূপ দেখায় বা নেহাৎ কাঁধ হৈতে বুক হৈতে রোমাঞ্চে থিরবত, তৃণবত স্বতঃ সমস্তিপুর; যদিচ সোনার বন্নটি ফুটিয়াছে যেন বুড়াশিবের ঢং। মনোময় আপনি দুলিয়া পালংটি লড়াইবার চেষ্টা পায় খানিক। দৃশ্য ভিন্ন কেহই লড়ে না।
পরনের ফতুয়াটি দুইমাসাধিক ধীরেও নয় ধৌতি, মাদনে গন্ধ, মাতনে নালকৃষ্ণ হে মাতঃ, তত্রাচ এই গোকুল সন্ধ্যা এই ঘিরি ঘিরি কর্দম মর্তম পালং জুড়িয়া বেডশিটে সমাসীনা কার্পাস কল্লকাগুলি, শ্রীলঙ্কার নিকট অই নিউ বেঙ্গল বস্ত্রালয় ব্লকছাপখানি, এ নেহাৎ ঘন্টাঘরের কেন্দ্ররূপ বৈ ত নয়। মনোময় সেই কেন্দ্রগতে দণ্ডবৎ হইবার পারে। তাহার হস্তের অঙ্গুলিমাল নখাগ্রে ওতপ্রোত, নখাগ্র টিউলাইটের ম্লানালোকে থিরকম্প্র। আজ দুইদিবস কেহ দরোজাকরে আঘাত করে নাই। আজি মাসাধিক দ্বারদ্রুম বন্ধ।
কে বা কাহারা দুদ্দার শব্দে দ্বিতলে বহমান। কে বা কাহারা অপরকে বলিল : ভন্তে! কাশরোগী কেহ বিরামহীন। নামিবার কালে দ্বারাঘাত করিল বা! নামিবার না উঠিবার। সময় কোনদিকে বহে রে। মনোময় খানিক ইতঃ খানিক ততঃ খানিক আলমানাকে নিবদ্ধ সময়ের আগা পশ্চাদ্ পাইল না। মাসাধিক এই নিউ বেঙ্গল বস্ত্রালয়, এই পালংটিরে জরায়ে স্থানুবৎ। বিশ কেজি আলু, তিন ডজন আন্ডা ও চালের বস্তা লৈয়া দোর দিয়াছিল বন্দীঘোষণার প্রাক্কালে। সেও দুইমাস হৈল কী। ঠাহর হয় না। কেবল অই কাশরোগী উঠিতেছে না নাবিতেছে ঠাহল পাইলে বেশ হৈত। কেশভন চতুর্থতলবাসী। মুত্থুস্বামী ষষ্ঠ। মনোময়?
এ-ই ক্ষণে মনোময় কাঁহাপিয়া আত্থির। নিউ বেঙ্গলকে মুষ্টিতে আকর্ষণ করিলো। ছাড়িলো। মনোময় কয় তল? মনোময় ক' তলা হে, মনোময়! এহ্। উপর নিচ না আগু পিছে? (এই ভাবে, ভাবে; মাত্রাছাড়া চড়কি খায়, মনোময়, মাত্রাহীন নয়)। মনে মনে দরোজা খুলিবে? কয় তল নাবিলে রাস্তা। নাহ্। রাস্তায় নাবা তো বারন। তবে ও কাহারা চলিয়াছে। শুধু মস্তিষ্কময় চক্ষু জাগিয়ে রহে। সমস্তিপুর নালে নাল। মোবিলে ফাটা গোড়ালির ছপি দেখে দুইখান। রেলের পাটি। দুইটা রুটি। তাহে ঘিরি কী উচ্ছ্বাস। এতো অক্ত কেনো! ইহারা কোন স্থানাঙ্ক মা টে! ঠাহর হয় না।
শুধু সিঁড়ি বাহিয়া দুদ্দার শব্দ। কয় দিবস পূর্বে কাহারা কাঁদিয়া উঠিয়া চুপ। ভুল শুনিয়াছে? মুত্থুস্বামী দেহ রাখিল? তাহা হৈলে, রইল বাকি কয়! মুত্থু উপরিতলে থাকিত, না নিম্নে। এইযে জনস্থানমধ্যবর্তী বিল্ডিংখানি বা আশপাশের ইল্ডিং বিল্ডিং সই লো, কোন ফ্ল্যাটে কে মরিলো? ঠাহর হয় না।
শুধু মনোময় এই ঘন্টারূপ ঘোটকচক্রে খাড়াইতে চট্টান। সেই শৈশবের মেলার মাঠ যেন সমস্তি। অই কাঠের ঘোড়া খানি ঘূর্ণি জুড়িয়াছে আহা কর্দম মর্দম, মাতসল্যে গ্রীবা ধরি ঝুলিছে কে বালক সে কি বাল্য না প্রাবৃট কে- কেহ দিশা নাই অগ্র নাই মাত্রাটুকু শুধু, নাম মাত্রা লয়ে আপনি দুলিতে থাহে। আপন হৃদয়ের পিণ্ড হৈতে। দিংহীন। মাতৃক। মাত্রাছাড়া। মায়ে খেদানো।
ঘন্টারূপ দুলিতে থাহে মনোময়। ইল্ডিং বিল্ডিং সই লো। ইল্ডিং বিল্ডিং..