এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  ঘুমক্কড়

  • যোধপুর 

    দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | ঘুমক্কড় | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১০০৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • রাজপুতানার সবথেকে বড় তিনটে রাজ্য ছিল আমের , মেবার এবং মারওয়ার। এছাড়াও বিকানের , জয়সলমীর এগুলো ছোট ছোট রাজ্য। রাঠোর বংশের সিংহাসন এই মারওয়ার রাজ্যেরই রাজধানী ছিল যোধপুর। মাড়োয়ারী বলতে প্রাক্তন এই দেশীয় রাজ্যের প্রজাদেরই বোঝানো হয়ে থাকে। দশ ঘন্টায় পুরোনো দিল্লি থেকে ম্যান্ডোর এক্সপ্রেস যায় যোধপুর জংশন। তারপর সেখান থেকে চাইলে জয়সলমের যাওয়া যায়। এই যোধপুর জয়সলমের লাইনে সুপারফাস্ট ট্রেন চলে না। মরুভূমি মাটিতে সম্ভবত লাইনের দ্রুত ভারবহনে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। সেজন্য দিল্লি থেকে জয়সলমের যেতে সময় লেগে যায় আঠেরো ঘন্টা। অথচ এই একই আঠেরো ঘন্টায় রাজধানী কলকাতা পৌঁছে যায়।
     
    এই ম্যান্ডোর যোধপুর থেকে অল্প দূরে এক প্রাচীন শহর , পনেরোশো বছর আগে গুর্জর প্রতিহারদের সময় তৈরী। কনৌজের গাড়োয়াল রাজাদের বংশধর রাঠোরদের এই অঞ্চলে আগমন ১৪০০ সালে। তখন ম্যান্ডোরই তাদের মারওয়ার রাজ্যের রাজধানী ছিল। রাও যোধা ১৪৫৯ সালে যোধপুর স্থাপন করে সেখানে রাজধানী সরিয়ে নিয়ে আসেন। যোধপুরের উঁচু পাহাড়ের ওপর তৈরী হয় মেহেরনগড় কেল্লা। রাও যোধার এক ছেলে রাও বিকা পরবর্তীকালে এই বংশ থেকে আলাদা হয়ে বিকানীর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবেন। 

    ট্রেন থেকে কিছুই মরুভূমি দেখা গেল না। স্টেশন থেকে বেরোতেই যেটা সহজেই বোঝা গেল - জায়গাটা বেশ নোংরা। অথচ জয়পুর উদয়পুরের মত এখানেও প্রচুর জার্মান আর অন্যন্য ইউরোপীয় পর্যটকদের ভিড়। সকালবেলা রাস্তাঘাট সরু , নোংরা এবং ঘিঞ্জি। কিছুদূর হেঁটে গেলে যোধপুরের বিখ্যাত ঘন্টাঘর। তাকে ঘিরে যোধপুরের প্রধান বাজার। সকালবেলা পেঁয়াজ কচুরি আর দুধের চা। কচুরির পুরের ভেতর পেঁয়াজ ছড়ানো থাকে বলে এরকম নাম। 
     

    যোধপুরের ঘন্টাঘর 
     
    ঘন্টাঘরের বাজার থেকে দূরে মেহেরানগড়ের পাহাড় 
     
    এখান থেকে অল্প দূর ওই পাহাড়ের দিকে হেঁটে গেলে তিনশো বছরের পুরোনো তুরজির ঝালরা বলে এক বিখ্যাত বাওলি। 
     

    নিচের জলে মাছেরা খেলা করছে 
     

     
    গভীর এই বাওলি দেখে ডার্ক নাইট রাইজেস সিনেমার পিটের কথা মনে পড়লে অবাক হবেন না কারণ এই সিনেমায় মেহেরনগড় কেল্লাই দেখানো হয়েছিল। এই বাওলি দেখেই হয়ত সেই পিট বলে কয়েদখানার ডিজাইন মনে এসেছিল পরিচালক এবং সেট নির্মাতার। 
     
    এরপর উঁচু পাহাড়ের ওপর মেহেরনগড় যাবার জন্য তুরজির ঝালরা থেকে অটো। ফেরার সময় পাহাড় থেকে হেঁটে নামতে সুবিধা হবে। 
     

    মেহেরনগড় কথার মানে সূর্যের কেল্লা। ছবি অটো থেকে। 
     

    কেল্লাটা বেশ উঁচু। এমনি এই কেল্লায় ঢুকতে প্রবেশমূল্য নেই। কেল্লার ভেতরে প্রাসাদ , মিউজিয়াম ইত্যাদিতে যেতে দুশো টাকা। পায়ে না হেঁটে সোজা ওপরে যেতে চাইলে লিফ্ট আছে। 
     
    পাহাড়ের গায়ে ঘুরে ঘুরে প্রাসাদে ওঠার রাস্তা। প্রাসাদের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত এই লাল লম্বাটে উঁচু পাথরগুলো নিয়ে পরে লিখছি। 
     

    দুদিকে খাড়াই দেওয়াল এবং মাঝে পাথরের স্ল্যাব ফেলে তৈরী ৪৫ডিগ্রী কোণের খাড়াই রাস্তা 
     
    ওপরে ওঠার পর প্রাসাদের ভেতর ঢুকতে গেলে টিকিট দেখতে চায়। ভেতরটা উদয়পুরের প্রাসাদের মত , অনেকগুলো মহল , ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা ইত্যাদি। 
     

    যেমন এই হাতির পিঠে চড়ে যাবার হাওদাটা শাহজাহান মারওয়ারের তৎকালীন রাজা যশবন্ত সিংহকে দিয়েছিলেন। সিংহের মুখের জায়গায় রাজার মুখ বসানো। 
     
    এই হাওদাটা বিকানেরর রাজা দিয়েছিলেন। মুঘলদের সঙ্গে অন্য রাজপুতদের উপহার দেওয়া হাওদার প্রধান পার্থক্য ওই ছাতা। মুঘলদের উপহার দেওয়া হাওদাতে ছাতা থাকত না কারণ রাজপুতরা মুঘলদের বশ্যতা স্বীকার করেছিলেন। 
     

    প্রাসাদের দৌলতখানা এখন অস্ত্র ইত্যাদির সংগ্রহশালা 
     
    যেমন ঢালাই লোহায় তৈরী এই মকরমুখী কামানটি
     
    এরকম অলংকৃত কামান বাংলাতেও ছিল। ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য নিচের ছবিটা চিপকে দেওয়া যায়।
     
    নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের গরুড়মুখী কামান। ছবিটা ভিক্টরিয়া মেমোরিয়ালে তোলা। আগুন দেবার জায়গায় খোদাই করা থাকত কামানের নির্মাতা কামারের নাম। কৃষ্ণচন্দ্রের এই কামানে বাংলায় নাম খোদাই করা আছে কিশোরদাস কর্মকার।  
     
    মাড়োয়ার ঘরানার মিনিয়েচার ছবি। তিনশো বছরের পুরোনো এই ছবির থিম বিলাওল রাগিণী 
     
    ছবিতে আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা বর্ষার আগমনের সংকেত 
     
    এই প্রাসাদের ছবির গ্যালারিতে ঢোল মারু সিরিজেরও ছবি আছে। ঢোল আর মারুর প্রেমকাহিনী শুধু মারওয়ার নয় , পুরো রাজপুতানাতেই বেশ বিখ্যাত। এই লোককথাটা বেহুলা লখিন্দরের ঠিক উল্টো। মারুকে সাপে কামড়েছিল বলে ঢোল পুরুষ সতী হিসেবে আগুনে পুড়তে চেয়েছিলেন।  শেষ পর্যন্ত দুজন যোগী এবং যোগিনী তাদের বাজনা বাজিয়ে মারুকে বাঁচিয়ে তোলেন ফলে কাউকেই মরতে হয়নি।  
     

    মহলের জানলা দিয়ে নিচে কামান প্রদর্শনের জায়গা 
     
    অন্যদিকে দূরে যোধপুর শহর 
     
    প্রাসাদের ভেতরের এক বর্গক্ষেত্র। উদয়পুর বা জয়পুরের প্রাসাদের ছাদে অসমান ছত্রী বসানো থাকে কিন্তু যোধপুরের ছাদগুলো সমান এবং ছত্রীবিহীন। দেখলে সহজেই চিনতে পারবেন। 
     
    প্রাসাদের দোতলায় 
     
    রাজাদের মৌতাত করবার জায়গা 
     
    পাশে আরেক মহলের উঠোন 
     
    প্রাসাদ ঘুরে বেরিয়ে আসার সময় সামনে প্রাসাদে ঢোকার রাস্তা। 
     
    প্রাসাদ থেকে হেঁটে নামতে নামতে দেখলাম বেলায় প্রাসাদে ভিড় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাল চাদর পেতে পাগড়ি পরে বাজনদাররা রাবণহাত্তা বাজাতে বসে গেছে। কেল্লা থেকে বেরিয়ে কেল্লার পেছন দিকে চললাম পাথর উদ্যানের জন্য। রাও যোধা পাথর উদ্যান [ডেজার্ট রক পার্ক]। আসলে পুরোটাই রাজপরিবারের জায়গা , মানে বৃহত্তর মেহেরনগড় পাঁচিলের ভেতরে পড়ে। সেখানে মরুভূমির ইকোলজি বজায় রেখে এই নিরিবিলি উদ্যানটা তৈরী হয়েছে। মরুভূমির গাছপালা , পোকা , পাখি , ইত্যাদি সেখানে নিজেরাই গজায়। উদ্যানের মধ্যে দিয়ে গেছে লাল , হলুদ প্রভৃতি ট্রেল। টিকিট একশো টাকা , ঢোকার সময় ম্যাপ এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের ফোন নাম্বার ইত্যাদিযুক্ত একটা রঙিন মিনিবুক দিয়ে দেওয়া হয়। পথ হারিয়ে ফেললে ওই নাম্বারে ফোন করলেই হবে। 
     
    ওই পাথরের উদ্যানে ঢোকার আগে রাজস্থানের ভূতত্ত্ব নিয়ে কিছু কথা লেখা দরকার। রাজস্থানের পাথর মূলত দুরকম - আগ্নেয় এবং পাললিক। আগ্নেয়শিলা তৈরী হয় লাভা , ছাই ইত্যাদি জমে গিয়ে। আর পাললিক শিলা নানারকম প্রাণী , গাছের মৃতদেহ মাটির সঙ্গে মিশে গিয়ে। ৭৫০০ লক্ষ বছর আগে আজকের এই পশ্চিম রাজস্থান ছিল এক জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। তখন সবে রোডিনিয়া ভেঙে তৈরী হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশ। অগ্ন্যুৎপাতের পর ৬৩৫০ লক্ষ বছর আগে বৃষ্টিও নেমেছিল। আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ বুজে গিয়ে তৈরী হয়েছিল বড় হ্রদ। কালক্রমে সেই হ্রদ শুকিয়ে গিয়ে এত লক্ষ বছর পর আজকের পশ্চিম রাজস্থান। 
     
    ১৯৪৬ সালে রেজিনাল্ড স্প্রিগ বলে একজন ভূতত্ত্ববিদ অস্ট্রেলিয়ার এডিকারা পাহাড়ে কাজ করার সময় কিছু পাথরের গায়ে সরু সরু দাগ খুঁজে পেয়েছিলেন। তার আগে মনে করা হত পৃথিবীতে প্রথম জটিল প্রাণী এসেছিল ক্যামব্রিয়ান যুগে [৫৪১০ লক্ষ বছর]। কিন্তু স্প্রিগ খুঁজে পেলেন তারও আগেকার ৬৩৫০ লক্ষ বছরের পুরোনো জেলিফিশ , সামুদ্রিক আগাছা ইত্যাদির চিহ্ন। এই চিহ্ন গুলো ট্রেস জীবাশ্ম হিসেবে খ্যাত কারণ এদের দেহে কোনো হাড় বা শক্ত অংশ ছিল না। দাগগুলো আসলে ভেজা মাটির ওপর তাদের ছটফট করবার অথবা জমে যাবার দাগ। স্প্রিগের আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এখন ৬৩৫০ লক্ষ থেকে ৬৪১০ লক্ষ বছরের সময়কালকে এডিকারান যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।  
     
     
    বৃষ্টি নামার পর আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের হ্রদের নিচে তৈরী হয়েছিল যোধপুরের প্রায় ৬০০০ লক্ষ বছরের পুরোনো বিখ্যাত 'সোনিয়া ফর্মেশন'। সেই স্ল্যাবের একটা ছোট অংশ রাখা আছে পাথর উদ্যানের বাইরে। এরকম স্ল্যাবই স্প্রিগও অস্ট্রেলিয়াতে খুঁজে পেয়েছিলেন। 
     
    এর সঙ্গে পার্কের ফটকের বাইরে রাজস্থানের অন্যন্য জায়গা থেকে পাওয়া নানারকম পাথরও রাখা আছে। এগুলো দেখতে টিকিট লাগে না। ফটকটি পুরোনো আমলের কেল্লার মেরামত করা। 
    পাথরে রঙের উপস্থিতির কারণ আসলে কোনো খনিজ পদার্থ সেই পাথরে মিশে আছে। যেমন লাল মানে লোহা , কমলা মানে অ্যালুমিনিয়াম , সাদা হলে ক্যালশিয়াম , হলুদ হলে ফসফেট , ধূসর মানে ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতি রয়েছে সেই পাথরে। 
     

    জয়সলমীরের হাবুর গ্রাম থেকে পাওয়া যায় ছোট সামুদ্রিক জীবাশ্মযুক্ত বিখ্যাত হলদে চুনাপাথর। [পাললিক]
     
    রাজস্থানের চিত্তোর থেকে পাওয়া সমুদ্রের তলার মৃত প্রাণী জমে তৈরী ক্যালসিয়াম বাইকার্বনেটের বহুস্তরীয় chert পাথর। [পাললিক]
     
    বিকানেরের জুরাসিক যুগের কোনো এক সমুদ্রে তৈরি হওয়া বেলেপাথর। [পাললিক]
     
    সামুদ্রিক প্রাণীর হাড় , দাঁতের ফসফরাস জমে সাগরের তলদেশে তৈরী হওয়া ফসফেট নডিউল। [পাললিক] 
     
    দুই প্লেটের ধাক্কায় আরাবল্লী পর্বতমালা তৈরী হবার সময় ক্যালসিয়াম কার্বনেট আর সিলিকার লবণ একসঙ্গে জুড়ে গিয়ে উদয়পুরের কাছে এরকম পাথর তৈরী হয়েছিল। [পাললিক] 
     
    সাদা ক্রিস্টাল যুক্ত পিগমেটাইট পাথর [আগ্নেয়] 
     
    সবজেটে ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত ডলোরাইট পাথর। [আগ্নেয়] 
     
    উদ্যানে ঢোকার পর প্রাচীন যোধপুরের দেওয়াল 
     
    এই  লম্বাটে আগ্নেয়শিলায় তৈরী পাথর দেখেছি বিদিশার কাছে উদয়গিরি বা ভীমবেটকায়। অগ্নুৎপাতের পর লাভা , ছাই , ম্যাগমা জমে এই লম্বাটে রিওলাইট পাথর তৈরী হয়। মেহরনগড়ের কেল্লার ভিত্তি কিন্তু এই একই রিওলাইট শিলা। সেরকম কেটে উদ্যানের একটি ট্রেল বানানো হয়েছে। 
     

    উদ্যান থেকে মেহেরনগড়
     
    রেড কটন বাগ ?
     
    উদ্যানের ভেতর পুরোনো যোধপুরের ধ্বংশাবশেষ 
     
    রাজস্থানের থর মরুভূমির নামকরণ এই থর কাঁটাগাছ [euphorbia caducipholia] থেকেই। ক্যাকটাসের মত দেখতে এবং ক্যাকটাসের মত কাণ্ডের ভেতর জল ধরে রাখলেও থর আসলে আদৌ  ক্যাকটাস গোত্রীয় নয়।  এই গাছের কান্ড চিড়লে  সাদা দুধের মত যে রস বেরোয় তা মরুভূমির লোকেরা কাটা ঘা ইত্যাদি সারাতে কাজে লাগায়। 
     
    পূর্ণাঙ্গ থর গাছ এরকম ছড়ানো দেখতে হয়। ফুল লাল রঙের। 
     
    lepidagathis / পাথরকুচি প্রজাতির গাছ পাথরের ফাঁকে যা জন্মায়। 
     
    ছোট ছোট রিওলাইটের টিলা। এখানেই কাছে ব্যাটম্যানের ছবির শুটিং হয়েছিল। 
     

    ডার্ক নাইট রাইজেসের দৃশ্য। পিছনে মেহেরনগড়। 
     
    বাগানের তিনটে ট্রেলের মধ্যে একটা 
     
    সিনেমার শুটিং হলেও এখন এর ভেতরে প্রি ওয়েডিং ইত্যাদির ফটোশুট হয় না। ফটকে একজন জিজ্ঞেস করতে এসেছিলেন , নিরাপত্তাকর্মী সটান না করে দিলেন। 
     
    শীতকালেও আকাশের মুখ ভার, নীলের দেখা নেই। পাথরের বাগান থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আরেকটু দূরে যশবন্ত থাডায় পৌঁছন গেল। এখানেও টিকিট আছে - তিরিশ টাকা। জায়গাটা রাজপরিবারের সমাধিস্থল। প্রধান বাড়িটা ~১৯০০ সালে রাজস্থানের মাখরানার বিখ্যাত সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরী। মাখরানা ভারতের সবথেকে পুরোনো সাদা মার্বেলের খনি এবং ওখানকার পাথর জিআই তালিকাভুক্ত। ওই মার্বেল দিয়েই তাজমহল এবং কলকাতার ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল তৈরী হয়েছিল।
     

    ভেতরে রাজাদের পোর্ট্রেট ইত্যাদি টাঙানো আছে। ছত্রী সমেত অনেকটা শিখ + ইসলামিক আর্কিটেকচার।  
     
    বাগানে আরো ছোট ছোট ছত্রী। ওই বেদির ওপর কুলুঙ্গিগুলোর খিড়কি খুলে ফেলা যায়। ভেতরটা ফাঁকা। একজন মহিলা ফুল একটা খিড়কি খুলে ভেতরে বেলপাতা , ধূপ দিয়ে আবার খিড়কি বন্ধ করে দিলেন। 
     

    যশবন্ত থাডার বাগান থেকে মেহেরনগড় 
     
    দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল। এরপর হেঁটে হেঁটে পাহাড় থেকে নেমে আবার ঘন্টাঘরের দিকে। রাস্তায় চারদিকে ঘোমটা টানা মহিলাদের ভিড় , কারুর মুখ দেখা যাচ্ছে না। উদয়পুরের ঘন্টাঘরের মত এখানেও বাজারে জলখাবার বা মিষ্টি ছাড়া বড় কিছু খাবার জায়গা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। মশলা , জুতো এইসবের দোকান। উদয়পুরে ছিল গয়নার। 
     
    বাড়ির দেওয়ালগুলোকে নীল রং করে হেরিটেজ ওয়াকের নামে টুপি পরানো চলে এই নীল যোধপুর শহরের অলিগলিতে। গলির মধ্যে একটা জায়গায় রেস্তোরাঁর বোর্ড দেখে ঢুকে পড়লাম। সেটা একজনের চারতলা বাড়ি। একতলায় তারা নিজেরা থাকে , পরের দুটো তলায় এয়ার বিএনবি। আর চারতলায় খোলা আকাশের নিচে খাবার টেবিল চেয়ার পাতা। বলা বাহুল্য খাবারের বিলে কোনো জিএসটি নেই। পাতি হলুদ প্যাডের কাগজই ক্যাশমেমো। 
     

    চারপাশের বাড়িগুলো সবই এরকম। কয়েকটা তলায় বাড়িওলারা থাকে , কয়েকটা তলায় বিদেশী পর্যটকরা , আর ছাদে তারা সাদা কাঠি ইত্যাদি ফুঁকতে ফুঁকতে নাচছে। ছাদগুলোকেও নীল রং করা হয়েছে। ব্লু সিটি বলে কথা। 

    ছাদের গেরুয়া পতাকাগুলো রাম মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষ্যে লাগানো। সমস্যা হচ্ছে এই ধারে কাছেই কিছু বাড়িতে সবুজ পতাকাও উড়তে দেখলাম। অর্থাৎ পতাকাই এখন বাড়ি শনাক্তকরণের উপায়।

    যোধপুরের খাবার বলতে গোলাপজামের কারি। মানে গোলপাজামগুলোকে মিষ্টির রসে না চুবিয়ে / ফুটিয়ে মাখন টোম্যাটো দই ইত্যাদির মিশ্রণে ফেলে দিয়েছে। আর মাংসের মধ্যে খাসীর লাল মাস। বাইরে গেলে অজানা জায়গায় পাঁঠার মাংস খাই না। গোলাপজামের মাখামাখি ঝোল আর তন্দুরি রুটি, লস্যি। খেতে খেতে বিকেল নামে। 

    শহরটা কেন রাজস্থানের অন্য নামী পর্যটন কেন্দ্রের তুলনায় একটু বেশি নোংরা সেটা ট্রেনে ফেরার সময় বুঝতে পারলাম। আগ্রার মত যোধপুরও এখন ভারতের চর্মশিল্পের একটা কেন্দ্র। কামরায় একজন চর্মব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি বছরে পাঁচ কোটি টাকার বসার চেয়ার , সোফার চামড়ার আপহোলস্টারি ইত্যাদি জিনিস ডেনমার্ক না সুইডেন কোথায় একটা এক্সপোর্ট করেন।
     
    শিলা বিষয়ক অতিরিক্ত লিংক -
    https://www.sciencedirect.com/science/article/abs/pii/S0301926807002549
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১০০৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2607:fb90:eab2:c595:b588:2f45:5560:***:*** | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:৩৭528280
  • দারুণ! ঘন্টাঘর, মেহেরণ গড়ের ছবি, যেগুলো নীচ থেকে তোলা হয়েছে, ভীষণ ভালো লাগলো। ঐ মেঘলা আকাশের পটভূমিতে হলুদ-বাদামী-লালচে পাথর খুব সুন্দর দেখতে লাগছে। অবশ্য নীল আকাশের গায়ে দৌলতখানাও একই রকম সুন্দর। তারপর লাল-নীল কাঁচের মৌতাত ঘর, সাদা পাথরের যশওয়ন্ত থাডা, নক্সী কামান, সবই খুব চোখ টানা। পাথরের ইতিহাসও পড়তে খুব ভালো লাগলো। এ নিয়ে ভাসাভাসা কিছুটাই আইডিয়া ছিলো, আজ অনেক জানলাম। আপনার এই ভ্রমণের লেখাগুলো একত্র করলে খুব ভালো কফিটেবল বুকস হয়।
  • সুদীপ্ত | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:১৮528284
  • মেহেরানগড় আর তার ছবি খুব ভালো লাগলো! ওই ঝুল-বারান্দা দেখলেই রাজকাহিনীর ছবি মনে পড়ে! ডার্ক নাইট রাইজেস-এ এই পিটটা এখানকার জানা ছিল না!
  • | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:১২528287
  • সাদা ছত্রীগুলো, বাওলি আর মেহেরানগড় থেকে যোধপুরের ভিউ খুব ভাল লাগল। লেখা একদম ইতিহাস বর্তমা আর ভূগোলের পার্ফেক্ট মিলমিশ। 
  • দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:২৮528296
  • ধন্যবাদ কেকে , সুদীপ্ত , দদি , ইন্দ্রাণীদি। এই সিরিজটা আসলে ছবিতে গল্প বলার মত , ছবিগুলোর পুরো প্রসঙ্গটা বোঝাতেই সঙ্গের সংক্ষিপ্ত লেখা/ক্যাপশন গুলোর অবতারণা। সেদিক থেকে দেখলে কফিটেবিল বইয়ের মতোই। 
     
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৭ মে ২০২৪ ০৭:৫৬531470
  • অবশেষে আজকে সময় করে একটানা বারোখানা পর্ব শেষ করলাম। দুপুর থেকে শুরু হয়ে এখন রাত ন'টা বেজে গেছে, একটা ঘোরের মধ্য দিয়ে কাটলো। অসাধারণ সময় কাটলো। কফি-টেবল বই হওয়াই উচিত। 
  • পাপাঙ্গুল | ০৭ মে ২০২৪ ১৫:৪৮531483
  • এতগুলো পর্ব একটানা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ অমিতাভদা। কফি-টেবিল বই পরে আরো সময় সুযোগ করে কখনো হবেখন। 
  • Suvasri Roy | ১৯ মে ২০২৪ ১৩:১১531965
  •    মন দিয়ে পড়লাম। আবার পড়ব। দারুণ ভ্রমণ কাহিনী। আমার কোনো দিন রাজস্থান যাওয়া হবে বলে মনে হয় না। লেখাটা পড়ে যোধপুরের কিছু আভাস পেয়ে গেলাম।
  • Suvasri Roy | ২০ মে ২০২৪ ০৯:৩৬532008
  • @পাপাঙ্গুল
    ধন্যবাদ। নিশ্চয় পড়ে নেব।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন