এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা

  • ছত্তিশগড়ের গেঁয়ো ব্যাংকঃ স্মৃতির কোলাজ (৮)

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৬৭২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ছত্তিশগড়ের গেঁয়ো ব্যাংকঃ  স্মৃতির কোলাজ (৮)
     
    জেনারেল লেজারের আতংক
    পরশুরামের কোন ছোটগল্পে পড়েছিলাম বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের একটা মোটা ডিকশনারি হাতে নিয়ে কাউকে তাড়া করার আখ্যান, সঙ্গে একটা ছবি, সম্ভবতঃ যতীন্দ্র সেনের আঁকা।
     
    সেটা ছিল লেখকের কল্পনা। কিন্তু একটা মোটাসোটা বাঁধানো জেনারেল লেজারের দুঃস্বপ্ন আমাকে অনেক দিন তাড়া করেছে। আমি একটা জঙ্গলের ভেতর এলোমেলো দৌড়ুচ্ছি আর একটা জেনারেল লেজার হাওয়ায় ভেসে সুদর্শন চক্রের মত আমার পেছন পেছন আসছে, ধরে ফেলল বলে!
     
    কারণ, ছুরি শাখার ম্যানেজার স্টেট ব্যাংক থেকে ডেপুটেশনে আসা সত্যদেব বসু আমায় দু’মাস জেনারেল লেজার ছুঁতে বারণ করেছিলেন। একমাস পরে একবার বন্ধুদের কথায় বার খেয়ে যেই জেনারেল লেজারে এন্ট্রি করেছি উনি সন্ধ্যেবেলা চেক করার সময় ঠিক ধরে ফেললেন। তারপর যা হল!
     
    বুঝলাম আমার বুদ্ধিশুদ্ধি পণ্ডিত ডাকনামের (কারণ ও ব্রাহ্মণ) চাপরাশি ছেলেটির সঙ্গে তুলনীয়। তবে কখনও পণ্ডিত আগে, কখনও আমি!
    কিন্তু জেনারেল লেজারে তো খালি সংখ্যা বসাতে হয়, কোন শব্দ লেখার প্রশ্ন নেই। তাহলে উনি কি করে বুঝলেন যে ওটা আমার হাতের লেখা?
     
     এখন আমি ছুরি বলে বিলাসপুর জেলার একটি আদিবাসী অঞ্চলের গ্রামীণ শাখায় পোস্টেড। জেনেছি রায়পুর জেলায় ঘনঘোর অরণ্যানীর মাঝে একটি আদিবাসী অঞ্চলে ‘ছুরা’ নামের একটি ব্র্যাঞ্চও আছে। সেটা ব্লক হেড কোয়ার্টার, কাজেই বিডিও অফিস আর সিভিল লাইন্স রয়েছে।
    আর ছুরিতে আছে  ‘কোট অফ আর্মস’ সমেত একটি আস্ত রাজবাড়ি এবং রাজ পরিবার। তাদের জেলখানা (লক আপ শুদ্ধু) এখন হাইস্কুল বিল্ডিং--ব্যাডমিন্টন এবং ভলিবল কোর্ট সমেত।  
     
    সেধে বাঁশ পেছনে নিয়েছি।  
    সেই যে দেরাদুনের ধর্মপুরা এলাকায় স্টেট  ব্যাংকের স্টাফ ট্রেনিং সেন্টারে ছ’সপ্তাহের ট্রেনিং –সেটাই হল কাল। রোজ সন্ধ্যের মুখে সবাই দল বেঁধে যায় শহরের কেন্দ্রস্থলে ঘন্টাঘর এলাকায়। উদ্দেশ্য একটাই—সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখা।
    ছত্তিশগড় নামক ভারতের হিন্টারল্যাণ্ড থেকে সদ্য কলেজ  পেরিয়ে চাকরি করতে এসে দেরাদুন পৌঁছে যাওয়া ছেলেদের মানসিক অবস্থা বলতে গেলে—“আমার চোখে তো সকলই শোভন, সকলই নবীন, সকলই বিমল”।  
    তো সবাই মিলে বাজার এলাকার ওই রাস্তার নামকরণ করল ‘দিল ধড়কন রোড”। তারপর রইল সিনেমা দেখা। আহা, সিটে বসে পা লম্বা করা যায়! অমন থিয়েটার তো সত্তরের দশকে ছত্তিশগড়ের কোথাও নেই। কাজেই যে কোন সিনেমাই হোক, যেতে হবে।
    আমার কপাল ভাল। রোববারের দুটো মর্নিং শোতে দেখে ফেললাম সত্যজিত রায়ের ‘জন অরণ্য’ এবং “শতরঞ্জ কী খিলাড়ি”।

    মুসৌরিতে বরফপাত, ফলে ঠান্ডা বেড়ে গেল। সবাই পেল তিনটে করে কম্বল। উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, বিহারের সাঁওতাল পরগণা সব জায়গা থেকে ট্রেনি অফিসারেরা মিলে নরক গুলজার।
    রোজ রাতে খেয়ে দেয়ে কারও না কারও ঘরে বসে আসর। রাজস্থানের কেউ মুকেশের গান গেয়ে সবাইকে মাতিয়ে  দিল। হিন্দি সিনেমার গান রাষ্ট্রীয় একতার চেতনা বাড়ায় এমনটি শুনেছিলাম। কিন্তু দেশাত্মবোধক গানের অশ্লীল প্যারডি, সেটাও?

    ‘অভী ভট্টাচার্য অভিনীত জাগৃতি’ সিনেমার গান “আও বাচ্চে তুমে দিখায়েঁ ঝাঁকি হিন্দুস্থান কী ” সব স্কুলে ১৫ই অগাস্টে বাজানো হয়। কিন্তু “ঝাঁকি ফিল্মিস্তান কী”?
    ছত্তিশগড়ের রামপ্রসাদ খালি মুখড়াটুকু ধরেছে অমনই পরের লাইনটা ধরে নিল গোরখপুরের ছেলেটি। পাশের কামরার দরজা খুলে অতি অশ্লীল অন্তরা গাইতে গাইতে বেরিয়ে এলেন রাজপুতানার এক ঠাকুর সাহেব। আমি তথৈবচ! 
    এতগুলো প্রদেশের সবাই কী করে একই অশ্লীল প্যারডিটা হবহু জানে সেটা আজও বিস্ময়!
    অবশ্যি কোলকাতারও অমন একখানি আছে, তবে তাতে পেঁয়াজ রসুন নেই। হেমন্ত কুমারের গলায় সোলবাঁ সাল সিনেমার চিরনবীন গান ‘ এ আপনা দিল, তু আওয়ারা’! আমার এক মাস্টারমশাই মুচকি হেসে জানিয়েছিলেন ওর স্থুল প্যারডিটা ওনারও জানা। 

    চারদিকে মদের দোকান। পাঁচ টাকায় পুরো বোতল বীয়ার, নয় টাকায় এক পেগ হুইস্কি।  গার্জেনের রক্তচক্ষু নেই। ফলে  সদ্য গোঁফের রেখা দেখা দিয়েছে অমন কয়েকজন প্রথমবার  নিষিদ্ধ বস্তুর স্বাদ নিয়ে  আউট হয়ে পুরো ক্যাম্পাসে সবার হাসির খোরাক হল।
    একদিন সন্ধ্যেবেলা দিল ধড়কন রোড থেকে বোতল কিনে পাঁচ স্যাঙাৎ ঘোড়ার গাড়ি চড়ে রাজকীয় মেজাজে হোস্টেলে ফিরে আসছি, দেখা গেল  টাঙাওয়ালা বেশ  আশিক মেজাজ এবং শের-শায়েরির রসিক। সারাটা রাস্তা কেটে গেল ওর একটার পর একটা শায়েরি শুনে। 
     
    প্রায় পাঁচ দশক পেরিয়ে শুধু একটাই মনে পড়ছেঃ
    “শীশা ক্যা করেগা কদর তুমহারি,
    মেরে আঁখো মেঁ দেখো তসবীর তুমহারি”।

    “আয়না তোমার রূপের বাহার বুঝবে কেমন করে?
    আমার চোখে দেখ তোমার ছবি পরাণ ভরে”।

     ক্যাম্পাসে ফিরে দেখি হোস্টেল খালি, আমরা ক’জন ছাড়া সবাই গেছে সিনেমা দেখতে, ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে আটটা। আর আমাদের কারও কাছে নিজেদের রুমের চাবি নেই। যারা পরে বেরিয়েছে তারা নিয়ে গেছে।
    কী করা যায়!

    আমার মাথায় দুর্বুদ্ধি খেলল। ভাবলাম বরানগর রামকৃষ্ণ মিশনের কিছু  ট্রিকস্‌ এদের দেখাই। বললাম—কুছ পরোয়া নেই। আমরা রাজস্থানের ছেলেদের কোন রুমে ঢুকে এনজয় করব। এখনও দু’ঘন্টা বাকি।  
    কী করে?
    কার্নিশে দু’জন নেমে ওদের পেছনের জানলার ছিটকিনি খুলে  ভেতরে ঢুকে পানক্রিয়া সমাপন করে খালি বোতল ওদের  টেবিলে সাজিয়ে সময়মত কেটে পড়ব।
     --শুনতে ভাল লাগছে। কিন্তু ছিটকিনি তো ভেতর থেকে আটকানো!

    দেখ , কেমন করে খুলে দিই। তোরা কেউ ফিজিক্স পড়েছিস? ধুস সবকটা আমার মতই , হয় আর্টস্‌ নয় কমার্স।  এবার বন্ধুদের থেকে শেখা ফোর্স, প্রেসার, এরিয়া নিয়ে কিছু গম্ভীর মুখে ভুলভাল ফান্ডা আর ফর্মূলা বলি। তারপর বলি— এবার থিওরির প্র্যাকটিক্যাল দেখ।
    পকেট থেকে মোটা ওয়ালেট নিয়ে ছিটকিনির কাঁচের গায়ে ওটা ঠেকিয়ে আলতো করে কিল মারি। চরমরিয়ে কাঁচ ভেঙে যায়, ফাঁক তৈরি হয়-- ঠিক ওয়ালেটের মাপে একটা আয়তক্ষেত্র। সেই ফাঁকফোকর দিয়ে আঙুল গলিয়ে ছিটকিনি খুলে ফেলা তো দুধভাত।

      খোলা জানলা দিয়ে চারজন ঢুকে পড়ল। পাঁচজনের বেলায় কিছু কাঁচ ঠুং ঠাং করে নীচে পড়ে গেল। আর কে জানত যে ঠিক নীচেই প্রিন্সিপালের অফিস, সেখানে মিটিং চলছে!
    দু’জন ফ্যাকাল্টি—বলবিন্দর সিং কাং এবং  পি কে বাহেতি বেরিয়ে এসে চারদিকে তাকাচ্ছেন। আমি শ্বাস বন্ধ করে কার্নিশের গায়ে  লেগে রইলাম।
    খানিকক্ষণ পরে বন্ধুরা জানলা দিয়ে অল ক্লিয়ার সাইন দিলে আমিও ভেতরে ঢুকে মধুশালায় কমরেড হলাম।  আমার নজর চানাচুর আর কাজুবাদামের দিকে। 
     
    কয়েকজনের একটু পরে দুঃখ উথলিয়ে উঠল।

    ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে কেস খেয়ে কমার্স পড়া ছেলেটি বলতে শুরু করল—বস্‌, আমি যে বন্ধুর জন্য স্ট্যান্ড নিলাম, দুজনে কেস খেলাম, তার বাবা-মা এসে আমাদের বাড়ি বয়ে শুনিয়ে গেল যে ওদের হিরের টুকরো ছেলে নাকি আমার জন্য খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। আমি যেন ওর ত্রিসীমানায় না যাই।
    অথচ, সেই কিন্তু -- কী আর বলব—আমাকে হস্তমৈথুন করতে শিখিয়েছিল।
    আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে হাসি চাপলাম।

    আর একজন বালাঘাট এলাকার, প্রেমে হাফসোল খেয়ে দেবদাস হয়েছেন।
    সে বাঁহাতের অনামিকা তুলে একটা সোনার আংটি দেখাল।
    --বস, ইয়ে যো অংগুঠি দেখ রহে হো –ইয়ে এক বেবফাই কী অংগুঠি হ্যায়।
    বাঃ , ইন্টারেস্টিং তো! কী কেস, ঝেড়ে কাশো।
     
    ও বিনাবাক্যবয়ে পকেটের ওয়ালেট খুলে একটা ছবি বের করল, শাড়ি পড়া একটি অল্পবয়েসি মেয়ে। মেয়েটি তেওয়ারি ব্রাহ্মণ আর ছেলে কায়স্থ শ্রীবাস্তব। মেয়ের বাড়ি থেকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। কিন্তু মেয়ে বাধা দেয়নি। হাসতে হাসতে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে, আবার শ্রীবাস্তবকে বিয়ের কার্ডও পাঠিয়েছে। ফলে দেবদাসের মদ খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে।
     
    আমি সহানুভূতি দেখিয়ে কিছু বলব তার আগে দরজায় ধাক্কা, কিছু গলার আওয়াজ। ঘরের লোকেরা এসে গেছে। আরে সিনেমার শো ভেঙে গেছে? কীভাবে সময়ে কেটে গেল!
    কিন্তু ঘরের আসল অধিবাসীরা ধাঁধায় পড়েছে। বাইরে থেকে তালা খুলেছে তবু দরজা কেন খুলছে না?
    আর অনুপ্রবেশকারীদের নেশা যাকে বলে হিরণ হো গয়া!
    ভাগ্যিস,  আমি গোড়াতেই দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে ছিলাম।এবার এক এক করে কার্নিশে নেমে আমাদের ঘরে গিয়ে জানলায় টোকা দিলাম।
     
    মিশ্র আর সৈয়দ অবাক। হলটা কী? 
    আরে শিগগির খোল। রাজস্থানওয়ালোঁ কে সাথ লফড়া হো গয়া।  হয়ত একটু পরে রোলকল হবে। আমরা যেন আমাদের ঘরে হাজির থাকি। অন্য ঘরের দুই দুঃখী আত্মাদেরও ওদের ঘরে চটপট পাঠিয়ে দেয়া হল।
    পরের দিন ক্লাসরুমে কথা হল—এখানে ভূতের উৎপাত শুরু হয়েছে।

    সেই সময় আমাদের চেয়ারম্যান সারদা সাহেব এলেন ট্রেনিদের সঙ্গে রুবরু বা মুখোমুখি হতে। কথায় কথায় জানালেন—কোরবা শিল্পনগরীর কাছে ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশনের ২১০০ মেগাওয়াটের থার্মাল পাওয়ার স্টেশন তৈরি হবে। কৃষকদের জমি অধিগ্রহণ চলছে।
    ওদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে সরকার যে টাকা দেবে সেগুলো ওরা কোন ব্যাংকে জমা করবে? এ বড় বিষম প্রশ্ন। ইলেকশনের মত ঘরে ঘরে গিয়ে ক্যাম্পেন করতে হবে। স্টেট ব্যাংক কোরবা সবচেয়ে বড় দাবিদার, আর  আছে সেন্ট্রাল ব্যাংক।

    আমাদের ছুরি বলে একটি শাখা থেকে এলাকাটি দশ কিলোমিটার দূরে। সবাই চাইবে বহতী গঙ্গায় ডুব দিতে। স্টেট ব্যাংকের বড় টিম আসছে ভোপাল থেকে। আমাদেরও ছোট একটা টিম বানাতে হবে। তাহলে বাঘের পেছনে ফেউয়ের মত আমরাও কিছু প্রসাদ পাব।
     
    কথায় বলে বাঙালির লোহা দেখলেই পেছন চুলকোয়। তো এমন সময়ে আমার বাঙালি সত্তা জেগে উঠল।
    --স্যার, ওই স্পেশাল ক্যাম্পেন টিমে কি কেউ ভলান্টিয়ার করতে পারে?
    --তুমি যেতে চাও? বেশ, ফিরে যাবার পর সাতদিনের মধ্যে ছুরি ব্রাঞ্চে ট্রান্সফারের চিঠি পেয়ে যাবে।
    আমার ফুর্তি গড়ের মাঠ। এখানে আমার দুই রুম পার্টনার মিশ্র এবং সৈয়দ ওই শাখাতেই ট্রেনি শাখামৃগ। ওরাও আমাকে পছন্দ করেছে।
     ব্যস্‌ থ্রি মাস্কেটিয়ার্স শপথ নিল। পরবর্তী তিরিশ বছর সেই শপথের মর্যাদা মোটামুটি অক্ষুণ্ণ ছিল।   

    প্রথমদিন আমাকে দেখে বোস স্যার নাক কোঁচকালেন।
    --ইস বাঙ্গালী দাদা কো কহাঁ সে লায়ে হো? এখানে শুধু হিন্দি জানলে কাজ হবেনা। ছত্তিশগড়ী ডায়লেক্টও জানতে হবে। এতো কিছুই জানে না। কলকাতার স্কুল-টুলে হিন্দি  শেখায় না। শ্রীমান তো আমাদের বোঝা হবে। 
    ‘না কাম কা , না কাজ কা,
    দুশমন আনাজ কা’।  
     
    'কোন কাজের নয় 
    শুধু অন্নধ্বংস হয়'। 

    আমি অপ্রস্তুত, মিশ্রের দিকে তাকাই।
    মিশ্র চশমার ফাঁকে হাসে।
    --না স্যার, যতটা ল্যাবা ভাবছেন তা নয়। দুটো মাস সুযোগ দিয়ে দেখুন, পরে হাতে মাথা কাটবে।

    একটি ভাড়া বাড়িতে মিশ্র ও সৈয়দের সঙ্গে থাকতে শুরু করি। পাঁচিল ঘেরা বাড়িটির ভেতরে বড়সড় আঙিনা, একমাথায় তিনটে কামরা। দুটো শোয়ার, আরেকটি রান্না করার। টালির ছাদ, চূণ সুরকি ও কাদার জোড় দেয়া ইঁটের দেয়াল।
     ঘরগুলোর দরজা আছে, জানলা নেই। মানে জানলার জায়গায় বড় ফাঁক, তাতে ফ্রেম বসানো, কিন্তু কপাট লাগানো হয়নি। ভাড়া কম, শীতকালে হু হু করে ঠান্ডা হাওয়া  ঢোকে, গ্রীষ্মকালে গরম হাওয়া বা লু।
     
    তবে টালির ছাদ মাটির বারান্দার উপরে অনেকটা হেলে রয়েছে। তাই ঘরে বৃষ্টির ছাঁট ঢোকে না। জানলার খালি ফাঁকে খবরের কাগজ সেঁটে দিই। ইলেক্ট্রিসিটি আছে, মাসে একশ টাকা দিতে হয়। বর্ষাকালে বৃষ্টির পর রোদ উঠলে একগাদা হেলে সাপ উঠোনে দৌড়য়। গাদা গাদা ব্যাঙ এবং ব্যাঙাচি সারা বছর লাফাতে থাকে। যেন ব্যাঙের চাষ হচ্ছে।  
     
     কাঁচা  আঙিনায় বাড়ির মালিক ভুট্টা লাগিয়েছেন। তার মাঝে পায়ে চলা পথ দিয়ে যেতে হয় খাটা পায়খানায়, আঙিনার শেষ প্রান্তে, বিপরীত কোণে। বেশ উঁচু সেই পায়খানা, তিন ধাপ সিঁড়ি পেরিয়ে ছোট বালতি করে জল এবং মগ নিয়ে উঠে বসতে হয়। চোখে পড়ে অনেক নীচ মাটির গামলা।
      একজন মেথর এবং তার বৌ পালা করে এসে ওই গামলা সাফ করে ডেটল মেশানো জল দিয়ে ধুয়ে আবার বসিয়ে দিয়ে যায়। তার জন্যে আলাদা ঝাঁটা এবং এক বালতি জল রাখা থাকে। সমস্যা হল ওই ডিপোজিট মোবিলাইজেশন ক্যাম্পেনের জন্য আরও দুজন স্টাফ আসায়। আমরা খুশি, আমাদের মেসের পার- ক্যাপিটা ওভারহেড কম হবে।
     
    কিন্তু মেথর দম্পতির দাবি টাকা বাড়াও, লোক বেড়েছে। মিশ্র বলে, তাতে কী, ধুতে তো হচ্ছে সেই একটা গামলা। ইকনমিক্সের ভাষায় অপটিমাম ক্যাপাসিটির নীচেই রান করছে সিস্টেম, নো ওভার প্রোডাকশন।
    একদিন হল বাওয়াল। আমাদের পঞ্চম ব্যক্তিটি যখন পায়খানার মঞ্চে আয়েস করে বসেছে, তখনই নীচে আমাদের শ্রীমতী শুচিতা মাটির গামলা পরিষ্কার করতে এসেছেন। গরম গোবর হাতে পড়ায় উনি কাঁচা খিস্তি করে ব্যাংকওয়ালে সাহাবমনকে চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করে দিলেন।

    আমরা মিটিং করলাম। দুটো রেজোলুশন সর্বসম্মতিক্রমে পাস হল।
    এক, যিনি ভিতরে যাইবেন, তিনি জলের বালতি সিঁড়ির উপরে এমন ভাবে রাখিবেন যেন দূর হইতে আমরা বুঝিতে পারি যে ভিতরে কেহ আছেন।
    দুই, এমতাবস্থায় শ্রীমতী শুচিতা আসিলে আমাদের মধ্যে কেহ উচ্চৈঃশ্বরে হেমন্ত কুমার প্রযোজিত মেহমুদ, বিশ্বজিৎ অভিনীত “বিবি অউর মকান” ফিল্মের বিখ্যাত গানের মুখড়াটি গাহিবেন—‘আ গিয়া, আ গিয়া’।
    অন্তঃশুদ্ধি বাহ্যশুদ্ধিতে নিরত ব্যক্তিটি সিগ্ন্যাল বুঝিয়া মিনিট খানেক দম ধরিয়া তলপেটের পেশি সংকুচিত করিয়া রাখিবেন।
     ওই নিয়মসকল পালন করি বার ফলে কোন দুর্ঘটনা ঘটে নাই।  
    ভালই চলছিল, হঠাৎ এমন দুটো ঘটনা ঘটল যে আমার উপরে বোস স্যার সমেত সবার ভরসা ধূলিসাৎ।
     
    সেদিন  সকাল বেলায় বোসসাহেবের তলব। কী ব্যাপার? 
    খবর এসেছে আজ খোদ চেয়ারম্যান সারদা তাঁর পাত্র-মিত্র-অমাত্য সমভিব্যাহারে আমাদের ব্র্যাঞ্চ পরিদর্শনে আসিবেন। উনি সরেজমিনে ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশনের ভুমি অধিগ্রহণ সাইট বা গ্রামগুলি দেখিয়া স্টেট ব্যাংকের স্ট্র্যাটেজি এবং আমাদের মত পিপীলিকার কি কাউন্টার স্ট্র্যাটেজি হওয়া উচিত, তথা তাহার সম্ভাবিত ব্যয়ের অনুমান  করিতে আগ্রহী। 
     
    সবাই যেন দাড়ি কামিয়ে ধোপদুরস্ত জামাকাপড় পরে আধঘন্টা আগে আসে। রায় যেন হাওয়াই চটি না পড়ে শু পরে আসে। উনি অফিসে হাওয়াই চটি দেখলে খুব রেগে যান।
     
    আমরা তাই করলাম। আমি ঘরের কোণ থেকে বাটার স্পোর্টস শু ঝেড়ে টেরে রাখলাম এবং মোজা জুতো পরে সবার সঙ্গে  ব্যাংকে হাজির। ওনার আসতে দেরি হচ্ছে। আমি বললাম—বড় মানুষেরা কখনই সময়মত আসেন না। ফলে স্যারের দাঁত খিঁচুনি শুনলাম।
    টেনশন বাড়ছে। দোতলা থেকে ওনার গিন্নি খবর পাঠালেন—কোলের বাচ্চাটাকে একটু ধরতে হবে, আমি স্নানে যাব।
    স্যার বিরক্তবাবু হয়ে চাপরাশি পণ্ডিতকে দোতলায় গিয়ে বাচ্চা সামলে আসতে বললেন।
    আমার পা চুলকোছে। কিছু একটা জুতোর ভেতর নড়ছে । আমি হাত ঢুকিয়ে বের করে আনলাম—একটা রক্তাক্ত অর্ধমৃত ছোট্ট ব্যাঙ। ভয় পেয়ে জুতো খুলতেই তিনটে ব্যাঙাচি বেরিয়ে ব্যাংকের মেজেতে লাফাতে লাগল।
    স্যার বললেন—একি! একি! পণ্ডিতকে ডাকো। ঝেঁটিয়ে সাফ করুক।
     
    কিন্তু পণ্ডিত তো দোতলায় বাচ্চা সামলাচ্ছে। ইতিমধ্যে আমি বাঁ পায়ে সুড়সুড়ি লাগায় জুতো মোজা খুলে ফেললাম। মোজার ভেতর থেকে  আরও ছোট ছোট উচ্চিংড়ে মার্কা ছোট্ট ব্যাঙ লাফাতে লাগল। শেষে একজন গ্রাহক গয়ারাম সেগুলোকে হাতে করে বাইরে ফেলার চেষ্টা করল।
     
    তক্ষুণি বাইরে গাড়ির হর্ণ। হেড অফিস থেকে দুটো গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে। হর্ন বাজছে। চেয়ারম্যান নামলেন না। দেরি হয়ে গেছে। বোস সায়েবকে নিয়ে ফিল্ড দেখতে বেরিয়ে গেলেন। ফিরে এসে ব্যাংকে ঢুকবেন।
    স্যার মিশ্রকে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন—ইডিয়েট রায়কে বল সব সাফ করে রাখতে –একঘন্টা সময়, নইলে--।
     
    দ্বিতীয় ঘটনা।
    জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। আমরা ব্যাংকের উঁচু বারান্দায় দুটো টেবিল এনে রোদে পিঠ দিয়ে লেজারে ইন্টারেস্ট লাগাতে ব্যস্ত। তখন ক্যালকুলেটর দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যবহার হত না। স্টেট ব্যাংকের প্রিন্টেড 'ইন্টারেস্ট রেডি রেকনার' বুক থাকত।
    সেটাও দুরকম – সেভিংস ব্যাংকে মান্থলি প্রোডাক্টে ইন্টারেস্ট ( ১০ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে লোয়েস্ট ব্যালান্সে), আর বাকি লোন অ্যাকাউন্টে ডেইলি প্রোডাক্টে। ফলে কোন অ্যাকাউন্টে যত বেশি লেনদেন ততবার ব্যালান্স বদল, এবং কোন রাশি কত দিনের সেসবের ক্যালকুলেশন !
    পরে ডিজিটাল ক্যালকুলেটর আসায় আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। এখন তো কম্পিউটারের সফটওয়্যার নিজে নিজেই হিসেব করে এবং চোখের পলকে।  
    সে যাক গে,  সেদিন আমি বসেছি রাস্তার দিকে পিঠ করে এবং  একজন মুসলিম মহিলা আর তার ছেলের একটা লোন অ্যাকাউন্ট বন্ধ করছি। খুব সাবধানে হিসেব করছি যাতে কোনরকম ভুল না হয়।
     
    স্যারের প্রশ্ন কানে এল—ইয়ে কিসকা হ্যায়?
    বুঝলাম, আমার কাজটা নিয়ে প্রশ্ন; বললাম—ইসকী মাঁ কা।
    সবাই চুপ। ফের প্রশ্ন-- ইয়ে কিসকা হ্যায়?
    স্যার কি শুনতে পান নি? ঝাঁঝিয়ে উঠে বললাম—বোল তো রহা হুঁ, ইসকী মাঁ কা।
    অস্বাভাবিক সন্নাটা!

    হঠাৎ মিশ্রের গলার আওয়াজ।– ডাক্তার সাহাব কা।
    চমকে উঠলাম। কোথাও কি ভুল হচ্ছে? ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি রাস্তা দিয়ে ডাক্তার জয়সোয়ালের চাকর দুটো বাঘা কুকুরকে চেন লাগিয়ে ঘোরাতে নিয়ে যাচ্ছে।
     
    আমার গ্রাহক মা আর ছেলে চলে গেলে বোস সাহেব চাপরাশিকে বললেন—যা দেখে নে ওরা দূরে গেছে কিনা।
    তারপর চোখ পাকিয়ে আমাকে—রায় তুম বেওকুফ হো; বহুত বড়া বেওকুফ।  একদিন তুম হম সব কো জুতে খিলাওগে।
    সাম ডে, ইউ উইল ফীড  শুজ্‌ টু অল অফ আস্‌! দেয়ার ইজ নো ডাউট অ্যাবাউট ইট।

    (চলবে)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৬৭২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kishore Ghosal | ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:২৪540060
  • এটা "আহিরণ নদী..." -র zoom version? বেশ লাগছে, কিন্তু।  
  • হীরেন সিংহরায় | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০১:২৮540067
  • রঞ্জন 
     
    আমার বাল্যকালে দেব দুলাল বন্দোপাধ্যায় আকাশবাণী কলকাতায় খবর পড়তেন তাঁর খবর পড়ার কায়দাটি ছিল অনবদ্য যাকে বোধহয় হিন্দিতে বলে 'নিরালা'। ষাটের দশকে -ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ে বাসে দুজনের কথোপকথন শুনেছিলাম একজন আরেকজনকে বলছেন আপনে ওই দেব দুলালের খবর পড়া শুনসেন ? কেমন বুঝাইয়া বুঝাইয়া কয় 
     
    তোমার লেখা পড়ি আর সেই গল্প মনে পড়ে  ;এমন ভাবে বুঝাও যে মনে হয় ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি যেন মোটেই জটিল কিছু নয় !
     
    অন্ধজনে দেহ আলো . 
  • kk | 172.58.***.*** | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৩:২৪540068
  • ভালো লাগছে সিরিজটা পড়তে। ঝরঝরে ভাষার মধ্যে কেমন যেন একটা আনকাট র' বোল্ডনেস আছে যেটা মাঝেমাঝে সপাটে মুখে একটা বাড়ি মারে। তব্য সেটা উপভোগ্য। চাটনি লজেন্স খেয়ে খেয়ে জিভ ছুলে যাবার মত উপভোগ্য। চলুক।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:১৫540071
  • "চাটনি লজেন্স খেয়ে খেয়ে জিভ ছুলে যাবার মত উপভোগ্য।" - kk একেবারে মোক্ষম বলেছে। ওর সাথে গলা মিলিয়ে আমিও বলি - চলুক। laugh
  • Mahua Banerjee | ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৫০540077
  • প্যারোডি গুলো কিন্তু আমি জানি না। কি মিস করলাম, কি মিস করলাম ভেবে উসখুস করছি।
  • Ranjan Roy | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৪৭540102
  • মহুয়া
     
    আপনার জন্য  'এ আপনা দিল' এর শিশুসুলভ প্যারডির  হিন্টস দিচ্ছি।
          " এ আপনা দিল,
           ' ----' মারো ঢিল।
          '----' হল ঘা,
        ডাক্তারখানায় যা"। 
     কিন্তু 'আও বাচ্চে তুমে দিখায়ে ঝাঁকি ফিল্মিস্তান কী'র প্যারডি গোবলয়ের রাস্তার ভাষা। এখানে লিখলে সবাই ক্যালাবে। 
    অতিকষ্টে দুটো লাইন বিশেষ শাব্দগুলো বাদ দিয়ে লিখছি।
     
    আও বাচ্চে তুমে দিখায়ে ঝাঁকি ফিল্মিস্তান কী
     নুতন কো তুম নহীঁ ----, ---মারোগে প্রাণ কী।
       দারা সিং কা---,
       দারা সিং কা--। 
      
    বৈজন্তীমালা কে পিছে দেবানন্দ জব দৌড়া  থা,
    এক হাথ মেঁ ----- ---, এক হাথ মেঁ--- থা।।
     
     
  • হীরেন সিংহরায় | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:১৪540103
  • পটনার পরিমল দয়ালের মতে
     
    নন্দা কি---_ দেব আনন্দ ভি দৌড়া থা 
     
    বাকিটা এক। 
  • হীরেন সিংহরায় | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৫540104
  • রঞ্জন 
     
    আর সেই ভোজপুরী গানের লাইন? 
     
    মুহওয়াসে বোলো কনখিয়া না মারো 
    পটনাকে বাবু জতনিয়া সমভালো 
     
     
     
    লাগি নহি ছুটে রামা ছবি মনে পড়ে ? 
     
     
     
     
  • উজ্জ্বল | 146.196.***.*** | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:০৯540105
  • আমি যে ভার্সন টা শুনেছি সেটা একটু আলাদা
     
    ইসি জগহ রাজ কাপুর নে নার্গিস কা ---তোড়া  থা
    গুরু দত্ত কা---মারনে বাচ্চা বাচ্চা দৌড়া থা
    এক হাথ মে তেল কী শিশি এক হাথমে---থা
    দেখনে ওয়ালে বোল রহে থে---নেহি হথোড়া থা ইত্যাদি ি
     
     
  • Ranjan Roy | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৪540107
  • আমি এবার পালাই l
    এগুলো men only দুনিয়ার ক্যাওড়ামি।
     
    সবারে আমি প্রণাম করে যাই।
     
    তবে প্রিয়ংকা চোপড়ার একটা বিজ্ঞাপন মনে পড়ছে:
    Why only the boys have all the fun?
  • উজ্জ্বল | 146.196.***.*** | ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:২২540115
  • আমি ব্যাংকে ঢুকি আপনার বেশ কয়েক বছর পরে, ১৯৮৩ । স্টেট ব্যাঙ্কের এডিবি ব্রাঞ্চে বিহারের এক গ্রামে। এই ২০২২ এ ৩৯ বছর  চাকরি করে অবসর নিয়েছি। আপনার প্রায় সব অভিজ্ঞতা আমারও হয়েছে। ঘুম না এলে বা ঘুম ভেঙে গেলে এই সিরিজটা খুঁজে পড়ি। সেই সময়ের বাহু অভিজ্ঞতা থেকে একটা বলি, আপনাদের ভালো লাগতে পারে।
    তখন আমার বয়স বাইশ তেইশ, গ্রামের ব্রাঞ্চ, পায়জামা পাঞ্জাবি পরে যাওয়া যেত,  তাই পরে গিয়েছিলাম। বাড়ি ফিরবার শেষ বাস মিস করলাম আমি ও আমার বন্ধু এজাজ আসগর, আমারই বয়সী, টাকমাথা হাসিখুশি ছেলে। আমাদের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার জিপের ব্যবস্থা করে দিলেন কুড়ি কিলোমিটার দূরের রেল স্টেশন অব্দি। ট্রেন ও পাওয়া গেল না। মাইনে পাওয়ার পর হাতখরচ পাই আর সেই পয়সায় চার্মস ছেড়ে ফিল্টার উইলস সিগারেট খাই। তাই খাচ্ছি. । সেই স্টেশনে খোলা আকাশের তলায় বেঞ্চিতে আমরা বসে, শীতের হিমেল হাওয়া দিচ্ছে জোরে, আমার প্রচণ্ড জ্বর এলো সেখানেই। দোকানপ্যাট বন্ধ, জল পর্য্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। আসগর আমাকে ভুলিয়ে রাখবার জন্য নানারকম গল্প করতে লাগল। শোনাল বিখ্যাত শায়র বশীর বদ্র এর সেই অমর কবিতা, কভি ইয়ুন ভি আ মেরি আঁখ মে কি মেরি নজর কো খবর না হো, মুঝে এক রাত নওয়াজ দে;  উসকে বাদ সহর না হো।  সেই সময়টা বাংলা হিন্দি ইংরিজি যা পাই গিলি, উর্দু তেমন জানি না। সেই প্রথম উর্দু ভাষার সঙ্গে পরিচয় সেই আশ্চর্য সুন্দর পংক্তিদুটো দিয়ে--জ্বর, অন্ধকার নির্জন স্টেশন হিমেল বাতাসে কাঁপছি, গলা শুকিয়ে কাঠ , জল নেই...আর কানের কাছে আসগরের ঘ্যানঘ্যানে গলায় সেই রোমান্টিক লাইনদুটো ---আমাকে একটি রাত ভালোবেসে দাও, কিন্তু তারপর যেন সকাল না হয়। আজও শুনতে পাই। প্রিয় কবি বশীর বদ্র হয়তো আজও  বেঁচে , কিন্তু আজ ওনার কিছু মনে থাকেনা, নিজের কবিতাও নয়।
  • হীরেন সিংহরায় | ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:২৭540121
  • উজ্জ্বল 
     
    লিখুন না আপনার ডায়েরি 
  • উজ্জ্বল | 146.196.***.*** | ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৪২540122
  • খুব ইচ্ছে হয় হীরেনদা, প্রায় সমস্ত দিন আইপ্যাড পেনসিল নিয়ে বসে থাকি, আপনাদের লেখা পড়ি দুএক লাইন লিখি, ভালো লাগে না বয়স র দুদিন আগে চৌষট্টি পেরোল, আর কি হবে ? ভালো থাকবেন সবাই 
  • হীরেন সিংহরায় | ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:২৯540123
  • ডান হাত বাঁ হাতের সঙ্গে অজুহাত! আমি ৭১ বছরে লেখা শুরু করেছি । ৬৪ কোন বয়েস নয়
  • Ranjan Roy | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:০০540134
  • উজ্জ্বল, 
    শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে শায়র বশীর বদ্র নব্বই ছুঁয়েছেন।
     
    আপনি লেখা শুরু করুন। এর জন্য গুরুচণ্ডালী চমৎকার প্ল্যাটফর্ম। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন