এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  গপ্পো

  • ছোট গল্প - অদ্বিতীয়া 

    Kishore Ghosal লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | গপ্পো | ২৫ মে ২০২৫ | ২৬ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)


  • চেতলা অহীন্দ্র মঞ্চের উল্টোদিক থেকে রোজকার মতোই “চেপে পড়ো” অ্যাপের নির্দিষ্ট গাড়িতে উঠল মঞ্জরী। গাড়িতে উঠতেই গুরপ্রীত কওর মিষ্টি হেসে তাকাল, বলল, “গুড মর্নিং, মঞ্জু”। মঞ্জরীও উত্তরে বলল, “ভেরি গুড মর্নিং”। মঞ্জরী গাড়ির দরজা বন্ধ করে বেল্ট লাগাতেই, সামনে পাছা বেঁকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অটোটাকে পাশ কাটিয়ে গুরপ্রীত গাড়ি চালিয়ে দিল। মঞ্জরীর মুখের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে বলল, “কীরে, আজ কি মুড অফ নাকি, মুখটা গোমড়া করে রয়েছিশ যে?”
    মঞ্জরী হেসে উত্তর দিল “কোথায় মুখ গোমড়া? কিছুই হয়নি”!
     
    গুরপ্রীত থাকে নিউ আলিপুরের বি ব্লকে, আর তার অফিস নিউ টাউনে। এতটা দূরত্ব বাসে-টাসে গুঁতোগুঁতি করে রোজ অফিসে যাওয়া এবং ফেরা তার পোষাচ্ছিল না। তাই বাবার গাড়িটা সে নিজেই ড্রাইভ করে যাওয়া-আসা করছিল। কিন্তু এতটা পথ মুখ বুজে প্রত্যেকদিন গাড়ি চালিয়ে যাতায়াত করাও তো বেশ বিড়ম্বনার ব্যাপার। তাই সে “চেপে পড়” অ্যাপে রেজিস্টার করে তিনজন সহযাত্রিনী যোগাড় করে ফেলেছে। চারজনে গল্প করতে করতে জার্নি-টাইমটা দিব্যি কেটে যায় – আবার তেলের খরচা আর গাড়ি সার্ভিসিংয়ের পয়সাও উঠে আসে। মঞ্জরী ওঠে চেতলায়, সহেলি ওঠে গড়িয়াহাট থেকে, আর সিক্তা ওঠে কসবা মোড় থেকে। গুরপ্রীতের মাতা বঙ্গবালা এবং পিতা শিখ সর্দারজি। ইংরিজি, গুরুমুখী, পাঞ্জাবি, হিন্দী ও বাংলা অনর্গল বলতে পারে। বাংলায় তো অসম্ভব দখল, শুধু একটাই দোষ গুরপ্রীতের – ওর উচ্চারণে স নেই শবই শ।
     
    রাসবিহারী মোড়ের সিগন্যালটা খেয়ে গাড়ি থামাল, তারপর মঞ্জরীর কথার উত্তরে গুরপ্রীত বলল, “কিছুই হয়নি বললে হবে? পতিদেবের সঙ্গে কিংবা শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে কিছু একটা খিটিমিটি তো নিশ্চিত হয়েছে”।

    মঞ্জরী বলল, “না রে বাবা, সে সব কিছু না। বাই দা ওয়ে আমি কিন্তু ফেরার সময় তোর সঙ্গে ফিরব না। অফিস থেকেই সোজা মানিকতলা মায়ের কাছে যাব”।
     
    সিগন্যাল খুলে যাওয়াতে, গুরপ্রীত গাড়ি স্টার্ট করে ফার্স্ট গিয়ার ফেলতে ফেলতে জিজ্ঞাসা করল, “এনি থিং রং? বাবা-মার শরীর খারাপ হয়নি তো?”
     
    “না, না। ওঁদের শরীর ঠিক আছে। অনেকদিন যাওয়া হয়নি – তাই ভাবলাম কটা দিন থেকে আসি মায়ের কাছে...”।
     
    “একদম খালি হাতে? কোন ব্যাগ-ট্যাগ নিসনি?”
     
    “টুকটাক কিছু আমার এই ব্যাগেই নিয়ে নিয়েছি...আর কাপড়চোপড় মায়ের কাছে রাখাই থাকে...ও নিয়ে কোন চাপ নেই”।
     
    “ওক্কে। যাই বলিস, তুই কিন্তু আসল ব্যাপারটা চেপে গেলি। আমাকে বললি না”।
     
    মঞ্জরী কিছুক্ষণ চুপ করে সামনের দিকে তাকিয়ে বসে রইল, তারপর লেকমলের হাল্কা সিগন্যালটা পার করে বলল, “সকালে ছোট্ট একটা ব্যাপারে মা এমন রিয়্যাক্ট করলেন, জাস্ট ভাবা যায় না”।
     
    “কোন মা, শাশুড়ি মা? তুই যে বলিস তোর শ্বশুর শাশুড়ি খুব ভাল – তোকে নিজের মেয়ের মতো দেখেন?”
     
    “সেটাই। মেয়ের মতো – আর নিজের মেয়ের মধ্যে কিছুটা ফারাক হয়তো থেকেই যায়। ব্যাপারটা এতই সামান্য, এখনও চিন্তা করলে অবাক লাগছে”। মঞ্জরী একটু চুপ করে থেকে আবার বলল, 
     
    “অফিসের জন্যে রেডি হয়ে পথিক আর আমি টেবিলে খেতে বসেছিলাম, মা খাবার সার্ভ করছিলেন। হঠাৎই আমার হাতে লেগে কাচের গেলাসটা টেবিল থেকে পড়ল - ভেঙে চুরমার – মেঝেয় জল থৈ থৈ। তাড়াহুড়োর সময় মেঝেয় ভাঙা কাচ, ছড়িয়ে পড়া জল ... খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার”।
     
    দেশপ্রিয় মোড়ের সিগন্যালটাও খেয়ে গেল গুরপ্রীত, বলল “ধ্যাত্তেরিকা...দুটো সেকেণ্ডের জন্যে... যাগ্‌গে, তারপর?”
     
    “ভাঙা কাচ আর জলটা মুছে নেওয়ার জন্যে আমি চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাব...মা রীতিমতো ঝংকার তুলে বললেন, থাক থাক বৌমা, আমি দেখছি... খাওয়া ছেড়ে উঠে তোমাকে আর কাজ দেখাতে হবে না...তারপর প্লেটে ভাত আর তরকারি দিতে দিতে বললেন, কদিনের জন্যে তুমি বাপের বাড়ি থেকে ঘুরে এস বৌমা। বুঝতে পারছি তুমি খুব প্রেসারে আছ। আজই সন্ধেবেলা অফিস থেকে চলে যাও – কদিন ওখানে থেকে মাথাটা ঠাণ্ডা করে এস”।
     
    “তোকে নাম ধরে ডাকেন আর “তুই” বলেন – বলেছিলি না?”
     
    “হ্যাঁ তাই বলেন, কিন্তু কোন কারণে বিরক্ত হলে “বৌমা” আর “তুমি” বলেন”।
     
    সিগন্যাল খুলতে গুরপ্রীতের গাড়ি আবার গড়াতে লাগল, গাড়ি থার্ড গিয়ারে তুলে বলল, “হুম। বুঝলাম, তারপর? তুই কিছু বললি না?”
     
    “নারে, ব্যাপারটা এতটাই আচমকা ঘটে গেল, আমি মাথা নিচু করে ভাত নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে, উঠে পড়লাম। ওই সময় আমি যদি কিছু বলতাম, ব্যাপারটা আরও জটিল হয়ে উঠত...”।
     
    “তা ঠিক, পথিকও কিছু বলল না?”
     
    “নাঃ, কিচ্ছু না। আমার দিকে খুব সহানুভূতি মাখা দুঃখীদুঃখী মুখে তাকাচ্ছিল বারবার”। গুরপ্রীতের হাসি পেলেও হাসল না, গম্ভীর মুখে তাকিয়ে রইল সামনের দিকে। লেক ভিউ রোডের সিগন্যালটা নির্বিঘ্নে পেরিয়ে – ট্রাঙ্গুলার পার্কের সিগন্যালে আবার আটকে গেল।
     
    মঞ্জরী আবার বলল, “আমরা বাড়ি থেকে বেরোনর সময়ে মা আবার বললেন, অন্যভাবে নিস না, মা। কদিন ও বাড়ি থেকে ঘুরেই আয়। আজ শুক্রবার, মঙ্গলবার ফিরে আসিস - আর ওই দিন অফিসে ছুটি নিয়ে নিস, কিন্তু। যা বললাম, তার যেন নড়চড় না হয়, আমার কথার অবাধ্য হবি না”।
     
    গুরপ্রীত মঞ্জরীর মুখের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে দেখল, তারপর সিগন্যাল খুলতে গাড়ি স্টার্ট করে বলল, “ বেরোনর সময় আবার “তুই” বললেন? আশ্চর্য তো?”
     
    “হ্যাঁ”।
     
    “দেখ মঞ্জু, গড়িয়াহাটে সহেলি ওঠার আগেই আমি এই প্রসঙ্গটা ক্লোজ করতে চাই। ওদের সামনে এসব আলোচনা না করাই ভাল। তবে আমার কেমন খটকা লাগছে, মঞ্জু, উনি তোর ওপর 
    মোটেও বিরক্ত হননি। অন্য কিছু ব্যাপার আছে”।
     
    “কে জানে? জানি না। রাস্তায় বেরিয়ে পথিক বলল, মায়ের কথায় ও খুব বিরক্ত হয়েছে... এ কটা দিন ও আমার সঙ্গেই থাকবে”।
     
    গুরপ্রীত হেসে বলল, “ওয়াও। আমি শিয়র এসবের পেছনে দারুণ একটা প্ল্যান আছে – তোর জন্যে সারপ্রাইজ”।
     
    “তোর তাই মনে হচ্ছে?” মঞ্জরী ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইল গুরপ্রীতের দিকে।
     
    “গড়িয়াহাট এসে পড়েছি, এখন এসব কথা থাক। তবে যা বুঝলাম, কাল, সোম আর মঙ্গল তোর সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। দেখা হবে সেই বুধবার...”। সহেলি গাড়ির দিকে এগিয়ে এল, গুরপ্রীত এবং মঞ্জরী একই সঙ্গে বলে উঠল, “হাই সহেলি, গুড মর্নিং”।


     
    সন্ধে সাড়েসাতটা নাগাদ মঞ্জরী পথিকের সঙ্গে মানিকতলায় তার বাপের বাড়ি পৌঁছল। ওদের দুজনকে একত্রে দেখে মঞ্জরীর মা প্রীতমা একটু আশ্চর্য হয়েই বললেন, “ওমা, কোন খবর না দিয়ে দুটিতে এসে উপস্থিত হলি? আয়, আয় ভেতরে আয়, খবর-টবর সব ভালো তো?”
     
    মঞ্জরী বসার ঘরের সোফায় বসে বলল, “তোমার কাছে থাকতে এলাম। কাজের চাপে আমার হাতপা নাকি বশে নেই। তাই ওবাড়ির মা এখানে পাঠালেন কটা দিন রিল্যাক্স করে যেতে।”
    প্রীতমাদেবী আরও অবাক হলেন, “সে আবার কি? নিশ্চয়ই কিছু ঘটিয়েছিস – বাবা পথিক, কী ব্যাপার বলো তো? তোমার মা অকারণে এরকম বলার মানুষ তো নন?”
     
    পথিক মঞ্জরীর পাশেই বসেছিল, বলল “আজ সকালে খাবার টেবিলে মঞ্জুর কনুই লেগে একটা কাচের গ্লাস ভেঙে গেছে... সেই সময়েই...”।
     
    প্রীতমাদেবী কী বলবেন ভেবে পেলেন না, মেয়ে জামাইয়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, “যাগ্‌গে, মঞ্জরী পথিককে নিয়ে তোর ঘরে যা, অফিসের জামা কাপড় ছেড়ে ফ্রেস হয়ে আয়, তারপর সব কথা শুনব। এখন তোদের জলখাবারের যোগাড় দেখি। এদিকে তোর বাবা একবার বেরোলে আর ফেরার নাম করে না। জামাই এসেছে... আর তিনি এখন বন্ধুদের সঙ্গে...যা ওঠ - ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নে”।
     
    মঞ্জরী আর পথিক উঠে ভেতরে গেল, প্রীতমাদেবী ফোন তুলে কর্তাকে ধরলেন, “শুনছো, মঞ্জু আর জামাই এসেছে, আড্ডা ছেড়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি এস – কথা আছে। আর ফেরার সময় কিছু মিষ্টি-টিষ্টি – চিকেন-টিকেন নিয়ে এস”। ফোন বন্ধ করে তিনি রান্নাঘরে গেলেন।
     
    গিন্নির ফোন পাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলেন অতনুবাবু। ঘরে ঢুকতেই তাঁর নাকে এল লুচিভাজার গন্ধ। ইদানীং তাঁর লিপিড প্রোফাইল আর বিপি সামান্য বিশ্বাসঘাতকতা করায় – ও জিনিষ তাঁর গালের নাগালে আর আসে না। বাইরের ঘরে জুতো ছেড়েই তিনি সরাসরি রান্নাঘরে ঢুকে দেখলেন, গিন্নি বেজায় ব্যস্ত। প্রতিমা লুচি বেলছে আর প্রীতমা গরম তেলে লুচি ছাড়ছেন। পাশে একটা থালায় বড়ো বড়ো বেগুনের টুকরো নুন আর হলুদ মেখে হাসছে। অতনুবাবু অন্ততঃ চারটে লুচি উইথ দুপিস বেগুনভাজার আশায় বুক বেঁধে খুব নরম সুরে জিজ্ঞাসা করলেন, “মঞ্জুরা এমন হঠাৎ করে চলে এল, তোমায় আগে ফোন করেনি?”
     
    প্রীতমা গরম তেল থেকে লুচি তুলতে তুলতে বললেন, “হাত চালা প্রতিমা, এর পরে আবার বেগুন ভাজতে হবে। একবার ফোন করলে এত হুটোপাটি করতে হত? সব যোগাড় করে রেখে দিতাম”। শেষ কথাগুলি তিনি অতনুবাবুকে বললেন।
     
    “হুঁ। কী ব্যাপার কিছু বুঝলে? মঞ্জু তো এমন করে না!”
     
    “ঠিক বুঝলাম না। জামাই বলল, আজ সকালে খেতে বসে মঞ্জুর হাত লেগে নাকি একটা কাচের গ্লাস ভেঙেছে। তাতেই বিরক্ত হয়ে বেয়ান মঞ্জুকে খুব বকাবকি করেছেন, আর বলেছেন, কটা দিন বাপের বাড়ি থেকে ঘুরে এস, বৌমা”।
     
    অতনুবাবু মিষ্টির বাক্সদুটো ফ্রিজের মাথায় রেখে, প্লাস্টিকের ব্যাগ থেকে চিকেনটা বের করে একটা বড় বাটিতে ঢালতে ঢালতে বললেন, “তেলের শিশির জায়গায়, জলের গেলাস?”
     
    প্রীতমাদেবী বললেন, “সে আবার কি?”
     
    “কেন শোননি? তেলের শিশি ভাঙল বলে খুকুর ওপর রাগ করো? অন্নদাবাবু সেখানে ভারত ভাঙার কথা বলেছিলেন, কিন্তু এখানে যে পরিবার ভাঙার উপক্রম?”
     
    “যাঃ ও আবার কী অলক্ষুণে কথা বলছ? বেয়ান আমাদের তেমন লোকই নন। আমাদের মঞ্জুই কিছু একটা বড়ো গণ্ডগোল বাধিয়েছে”।
     
    “উঁহু, তাহলে পথিককে সঙ্গে নিয়ে এসে পড়ল কেন? ব্যাপারটা অত সহজ আর সিম্পল নয় মনে হচ্ছে”!
     
    “কি জানি বাপু, আমার এখন অত ভাববার সময় নেই। আগে দুজনকে খেতে দিই। ওদের ফ্রেশ হতে বললাম, তুমি দেখ তো ওদের হল কি না?”
     
    অতনুবাবু বাইরে এসে, মঞ্জুদের ঘরের সামনে দাঁড়ালেন, গম্ভীর গলায় একটু বেশ জোরে কাশলেন, তারপর দরজায় টোকা মেরে বললেন, “পথিক, মঞ্জু তোমাদের হল বাবা? খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাবে, তোমাদের মা তাড়া দিচ্ছেন যে”।
     
    খুট শব্দে দরজার ছিটকিনি খুলে প্রথমে পথিক, পিছনে মঞ্জু বের হল। পথিক পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল, দেখাদেখি মঞ্জুও।
     
    অতনুবাবু হাসতে হাসতে বললেন, “আরে ধ্যাৎ কী যে করিস তোরা, খেতে বসার আগে কেউ পায়ের ধুলো নেয়? আবার তো হাত ধুতে হবে”।
     
    পথিক হেসে উত্তর দিল, “ওই তো বেসিন, হাতটা ধুয়ে নিলেই হল”।
     
    অতনুবাবু ডাইনিং টেবিলে বসলেন, বললেন, “আয় আয় বসে পড়, তোর মা এখনই সব নিয়ে আসছে”। বেসিনে হাত ধুয়ে পথিক এবং মঞ্জু টেবিলের উল্টোদিকের চেয়ারে বসল। অতনু দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলেন। মঞ্জুটার মুখ কিছুটা গম্ভীর, তবে পথিকের স্বাভাবিক। এর মধ্যেই প্রীতমা দু হাতে দুটি প্লেটে চারটে করে লুচি আর দুটো করে বেগুনভাজা এনে পথিক আর মঞ্জুর সামনে রাখলেন। বললেন, “গরম গরম খেয়ে নাও বাবা, সেই কোন সকালে দুটো ভাত মুখে গুঁজে অফিসে বেরোও... খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই। অফিসে কী খাও কে জানে?”
     
    মঞ্জু একটু মনখারাপি সুরে বলল, “মা, লুচি চারটে না, দুটো তুলে দিচ্ছি, আর একটা বেগুনভাজা”।
     
    প্রীতমাদেবী অতনুবাবুর জন্যেও একটা প্লেটে দুটো লুচি আর বেগুনভাজা নিয়ে এসেছিলেন, কর্তাকে দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন কী হয়েছে? খিদে হয়নি না মন খারাপ? খেয়ে নে, রাত্তিরে বরং রুটি কম খাস”।
     
    মঞ্জু ঘ্যানঘেনে সুরে বলল, “না মা, প্লিজ। একদম ভাল্লাগছে না। আমি বাবার প্লেটে তুলে দিচ্ছি”।
     
    পথিক মঞ্জুর দিকে তাকিয়ে বলল, “এত টেনশান কর না, মঞ্জু। বারবার তো তোমাকে বলছি কিচ্ছু হয়নি। মা তোমার ওপর মোটেই রাগ করেননি। যেটুকু করেছেন, আমি বলছি মিলিয়ে নিও, মঙ্গলবার তিনিই সব কিছু ভুলিয়ে দেবেন”।
     
    মঞ্জু কান্নাধরা গলায় বলল, “আমাকে বাচ্চা মেয়ে পেয়েছ? যা বোঝাবে তাই বুঝে যাব?”
     
    মঞ্জুর চোখের জল দেখে বিচলিত হলেন প্রীতমাদেবী এবং অতনুবাবুও। একমাত্র কন্যা। এই বছর খানেক আগে ভালো ঘর-বর দেখে বিয়ে দিয়েছেন। পথিকের মতো জামাই লাখে একটা মেলে। কিন্তু তার থেকেও বড় ব্যাপার পথিকের বাবা-মা। এমন সজ্জন ভালোমানুষ আজকাল বড়ো দেখা যায় না। তাঁরা যতবারই গিয়েছেন, তাঁদের কন্যা মঞ্জুকে ও বাড়িতে বিরাজ করতে দেখেছেন। ও বাড়ি থেকে ফিরে তাঁরা কত্তা-গিন্নিতে মাঝে মাঝে অভিমানও করেছেন, দেখলে, মেয়েটা আমাদের যেন ভুলেই গিয়েছে! মনে হচ্ছে শ্বশুর-শাশুড়িই ওর বাপ-মা, আর আমরা কেউ নই! ওরে মুখপুড়ি তোকে যে দশমাস পেটে ধরেছি, তোর বাপ আর আমি যে তোকে বুকে করে আগলে আগলে এতটি বড় করে তুললাম, সে সব কথা ভুলে গেলি? আবার মনকে সান্ত্বনাও দিয়েছেন, সারাজীবন মেয়েকে আপন করে রাখার জন্যে তো মেয়েদের জন্ম হয় না। তিনিও কি বাবা-মায়ের কম আদরের দুলালি ছিলেন? স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি এবং মঞ্জুকে নিয়ে তিনিও কি তাঁর বাপ-মাকে ভুলে যাননি?
     
    মঞ্জু মুখ নামিয়ে কোনরকমে দুটো লুচি আর বেগুনভাজা খেয়ে উঠে গেল। প্রীতমাদেবী বললেন, “কী রে উঠে পড়লি কেন? বাবা তোদের জন্যে হাতে করে সন্দেশ নিয়ে এল, দুটো মুখে দিবি না?” বেসিনে মুখ হাত ধুয়ে এসে মঞ্জু বলল, “ভাল্লাগছে না, রাত্রে খাবো”, তারপর নিজের ঘরে ঢুকে পড়ল।
     
    পথিক দেখল কিছু বলল না। খুব মন দিয়ে ছটা লুচি, বেগুনভাজা আর দুটো কড়াপাক সন্দেশ তৃপ্তি করে খেয়ে উঠল। বেসিনে মুখ হাত ধুয়ে রুমালে মুখ মুছতে মুছতে বলল, “আমার মায়ের ব্যবহারে মঞ্জু একটু মুষড়ে পড়েছে, কিন্তু বিশ্বাস করুন মঞ্জুকে নিয়ে মায়ের একটা মজার প্ল্যান আছে। আর তার জন্যেই এত সব নাটক”।
     
    প্রীতমাদেবী স্বামীর মুখের দিকে অসহায় চোখে তাকালেন, তারপর ব্যাকুল স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন, “মেয়েটাকে বহুদিন এমন মনমরা থাকতে দেখিনি, তোমার মায়ের কী প্ল্যান, বাবা?”
     
    অতনুবাবু পথিকের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোমরা মঞ্জুকে গোপন করে, ওকে চমকে দেওয়ার জন্যে কিছু একটা মজার প্ল্যান ভেঁজেছ, তাই না? তা তোমরা ফিরছ কবে?”
     
    পথিক ম্লান হাসল, বলল, “মঙ্গলবার। মায়ের সেরকমই আদেশ”।
     
    প্রীতমাদেবী জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার মায়ের প্ল্যানটা কী, বললে না তো?”
     
    পথিক প্রীতমাদেবীর দিকে তাকিয়ে বলল, “আগামী কাল আমার মা-বাবা আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে আসবেন। আমরা দুজন অফিস বেরিয়ে যাওয়ার পর, সাড়ে এগারোটা-বারোটা নাগাদ। দুপুরে এখানেই খাবেন। এর থেকে বেশি কিছু বলতে আমার মানা আছে। যা বলার মা-বাবাই বলবেন”।
     
    প্রীতমাদেবী অবাক হয়ে পথিকের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। সঙ্কোচের হাল্কা হাসিমাখা মুখে পথিক বলল, “আগামীকাল আমার বাবা-মা আসার ব্যাপারটাও মঞ্জুকে এখনই বলবেন না, প্লিজ”।



    আধুনিক সভ্যতায় কত ট্রেন কত এরোপ্লেন নিত্য দেরি করে চলে। কিন্তু মঞ্জরীর মাথায় গুচ্ছের দুশ্চিন্তা এবং দ্বিধার বোঝা চাপিয়ে, মঙ্গলবার সকালটা ক্যালেণ্ডারের পাতার মতো একেবারে কাঁটায় কাঁটায় এসে পড়ল। গত রাত্রে তার ভাল ঘুম হয়নি। নানান চিন্তায় তার বারবার ঘুম টুটেছে। আচ্ছা, সে কি আজ থেকে পঞ্চাশ-একশ বছর আগেকার যুগে ফিরে যাচ্ছে? শাশুড়ি যেমন খুশি নাচাবে সেও মাদারির হাতে বাঁধা বাঁদরীর মতো নেচে চলবে? কাচের একটা গেলাস কনুইয়ের ধাক্কায় পড়ে ভেঙে যাওয়াতে – শাশুড়ি তাকে মুখ ঝামটা দিয়ে বললেন বাপের বাড়ি থেকে কয়েকটা দিন ঘুরে আয়। আর মঞ্জরীও সুবোধ বালিকার মতো চলে এল? শাশুড়ি বলেছিলেন, মঙ্গলবার অফিসে ছুটি নিয়ে সকাল আটটার মধ্যে বাড়ি আসবি। এর যেন কোন অন্যথা না হয়। আর সেও আজ এই সকাল সাড়ে ছটার মধ্যে স্নান-টান সেরে সাজুগুজু করতে বসেছে, নেচে নেচে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্যে?
     
    সে শুনেছে শনিবার তারা অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার পর ওর শাশুড়িমাতা ও শ্বশুরপিতা এ বাড়িতে এসেছিলেন। তার মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প-গাছা করে গেছেন। সানন্দে মধ্যাহ্ন ভোজন সেরেছেন। এবং তার জন্যে রানি কালারের জমিতে ছোট্ট ছোট্ট হলুদের বুটি দেওয়া উজ্জ্বল সুন্দর টাঙ্গাইল তাঁতের একটি শাড়ি দিয়ে গেছেন। সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজ এবং শায়া। তিনি নাকি বারবার বলে গেছেন মঞ্জু যেন মঙ্গলবার এই শাড়ি পরেই ও বাড়িতে যায়। আজকে সে সাজতে বসেছে এবং সেই শাড়িটিই বিছানায় রেখেছে সেজে উঠে পরবে বলে!
     
    কেন? কিসের জন্যে? সে যথেষ্ট লেখাপড়া করেছে। নিজের যোগ্যতায় সে চাকরি যোগাড় করেছে। তার বয়স অনুপাতে তার পদমর্যাদা এবং বার্ষিক ক্ষতিপূরণ অনেকের কাছেই ঈর্ষণীয়। সে তো পতি-নির্ভর লবঙ্গলতাসম গৃহবধূ নয়। সে তার ইচ্ছেমত জীবন যাপন করতেই পারে – তার মধ্যে নাক গলানোর অধিকার শ্বশুর-শাশুড়ির কতটা আছে? এমন কি তেমন তেমন হলে তার বাবা-মায়েরও নেই। তাহলে সে কেন যাচ্ছে আজ? মঞ্জরী কাল রাত্রে শোবার পর ভেবেছিল – অফিসেই যাবে, শ্বশুরবাড়ি যাবে না। ছুটি নেওয়া সত্ত্বেও অফিসে গেলে সহকর্মীরা অবাক হবে? হোক না। যে অনুষ্ঠানের জন্যে সে ছুটি নিয়েছিল, সে বলবে, সেই অনুষ্ঠান ভেস্তে গিয়েছে? আর শ্বশুরবাড়ি না গেলে, শাশুড়ি রাগ করবে? কতটা? তার স্বামী পথিক সেও কি ক্ষুণ্ণ হবে? কতটা? ও বাড়ির সঙ্গে তার সম্পর্কটাই ছিন্ন হয়ে যাবে? ডিভোর্স? সধবা মঞ্জরী থেকে, ডিভোর্সি মঞ্জরী? তাদের কোন ছেলেপুলে হয়নি, অতএব তার বাবা-মা কি আবার খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেবেন, “ডিভোর্সী - নাম-মাত্র বিবাহ – কর্পোরেট অফিসে চাকরিরতা সুন্দরী গৃহকর্মনিপুণা শাণ্ডিল্য গোত্রীয় যুবতীর জন্য পাত্র চাই”? এই দুই বাড়ির সম্পর্কগুলো কি ওই কাচের গেলাসের মতোই ঠুনকো? তার কনুইয়ের হাল্কা ঠোকাতেই ভূমিসাৎ হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে ছিটকে পড়বে মেঝেয়? ভাঙা সম্পর্কের টুকরোতে ক্ষতবিক্ষত হবে তাদের সকলের জীবন?   
     
    নাঃ। এতটা দূরদর্শী দুশ্চিন্তার সপক্ষে সবল যুক্তি বা প্রমাণ মঞ্জরী নিজের মনের অন্দরে খুঁজে পাচ্ছে না। যাকে বলা যায় “ঠোস সাবুদ”। তার মনের মধ্যে এখনও জাঁকিয়ে বসে রয়েছে, তার প্রতি শ্বশুর এবং শাশুড়ির নিঃস্বার্থ অপত্য স্নেহ – তার ওপরে ওঁদের অকুণ্ঠ নির্ভরতা ও বিশ্বাসও। মাত্র একদিনের আচরণ থেকে এতটা বিষম পরিণতির চিন্তা করার সময় এখনও আসেনি। আজ ও বাড়ি গিয়ে তাকে ঘিরে কী ঘটনা ঘটে, দেখাই যাক না? তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে!
     
    অতএব সাড়ে সাতটা নাগাদ মঞ্জরী আর পথিক রেডি হয়ে তাদের ঘর থেকে বের হল। মায়ের ঘরের দরজা খোলাই ছিল। ওদের দেখে প্রীতমাদেবী বেরিয়ে এলেন। মঞ্জরী অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি এত সকালে কোথায় বেরোচ্ছ, মা?”
     
    “আমরাও যাবো তো, ও বাড়িতে। তোর বাবাও রেডি, গাড়ি বের করতে গিয়েছে। তোরা রেডি?”
     
    “তোমরাও ও বাড়িতে যাবে?” মঞ্জরীর বিশ্বাসই হচ্ছে না, “কিন্তু কেন?”
     
    প্রীতমাদেবী থমথমে মুখে বললেন, “বেরোনর সময় সে সব কথা এখন থাক। তিক্ততা বাড়বে...”।
     
    মঞ্জরী বলল, “কিসের তিক্ততা?”
     
    সে কথার উত্তর না দিয়ে বললেন, “ঘরের জানালাগুলো বন্ধ করেছিস তো? তোরা এগো, আমি দরজা বন্ধ করে সদরে তালা দেব”।
     
    হতভম্ব মঞ্জরী পথিকের সঙ্গে বাইরে এল। পথিকের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কী ব্যাপার বলো তো?” পথিক মঞ্জরীর দিকে তাকিয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়ে ঘাড় নেড়ে বলল, “নো আইডিয়া”!
    অতনুবাবু গাড়ি বের করে রাস্তার ধারে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। প্রীতমাদেবী গাড়ির কাছে এসে বললেন “তোরা দুজনে পিছনে বস, আমি সামনে বসছি”। মঞ্জরীর বিয়ের পর থেকে একসঙ্গে কোথাও গাড়ি নিয়ে বেরোলে, অতনুবাবুর পাশের সিটটা জামাই পথিকের জন্যেই বরাদ্দ থাকত। মা আর মঞ্জরী বসত পিছনের সিটে, কথা বলতে বা গল্প করতে সুবিধে হত বেশ। আজ তার ব্যত্যয় কেন? মঞ্জরীর মনে খটকা।
     
    গলি থেকে বেরিয়ে গাড়ি বড়ো রাস্তায় পড়তেই, মঞ্জরী জিজ্ঞাসা করল, “তখন তুমি কিসের তিক্ততা বাড়বে বলছিলে, মা?”
     
    “ওফ্‌, একটা কথা তোর মাথায় ঢুকলে, সেটাতেই তুই আটকে থাকিস, মঞ্জু! ওসব আলোচনা এখন থাক না”।
     
    মঞ্জরীর গলায় জেদ, “না, বলতেই হবে। বলা নেই কওয়া নেই - তোমরা হঠাৎ সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লে কেন”?
     
    অতনু সামলানোর চেষ্টায় বললেন, “কেন আবার কি? গাড়িটা অনেকদিন বের করিনি, তোরা এতটা পথ যাবি – গাড়িটা ঠিকঠাক থাকবে, আমারও হাতপাগুলোর একটু প্র্যাক্টিস হবে...এই সব ভেবেই...”।
     
    “একদম বাজে অজুহাত দিও না, বাবা। তোমাদের আজই ও বাড়িতে যাওয়ার কী এমন দরকার পড়ে গেল, সেটাই জানতে চাইছি”।
     
    সকাল সকাল গাড়ি নিয়ে বেরোনর এই এক মজা, রাস্তা-ঘাট বেশ খালিই থাকে। পরপর দুটো-তিনটে মোড়ের সিগন্যাল ক্লিয়ার পাওয়া যায়। অতনুবাবু মিনিট পনেরর মধ্যেই বেকবাগান মোড় পার হয়ে শরৎ বোস রোডে ঢুকে পড়লেন।
     
    “মা, তুমি বলবে না?”
     
    “আচ্ছা, কী এত জিদ করিস বলতো, ছেলেমানুষের মতো? পথিকের বাবা-মা শনিবার আমাদের বাড়িতে এসে নেমন্তন্ন করে গেছেন, আজ যাওয়ার জন্যে। যাচ্ছি। কেন আত্মীয়-পরিজনের বাড়ি কী মানুষ যায় না?”
     
    “একশবার যায়, কিন্তু সেখানে তিক্ততা আসছে কোত্থেকে? আর তুমি আগে বলনি কেন? আমাদের সঙ্গে তোমরাও যাবে?”
     
    “তিক্ততা নয়? এই যে তুই সেই শুক্কুরবার থেকে আজ পর্যন্ত মুখটা তোলো-হাঁড়ির মতো করে ঘরে ঘুরে বেড়ালি, সেটা তিক্ততা নয়? তার ওপর আগেই যদি বলতাম, আমরাও তোদের সঙ্গে যাবো, তুই কী ভাববি, কী মনে করবি – সেই ভয়েই তোকে বলিনি”।
     
    অতনুবাবু গম্ভীরভাবে বললেন, “তিক্তম্‌ আশুফলপ্রদম্‌”, রেয়ার ভিউ দিয়ে মেয়ের মুখটা দেখে মুচকি হাসলেন।
     
    বিরক্তমুখে মঞ্জু বাবার দিকেই তাকিয়ে বলল, “তার মানে?”
     
    অতনুবাবু হাসলেন, বললেন, “এগুলো আগেকার দিনের কবিরাজদের প্রবচন – ওষুধ যত তেঁতো হবে, তার ফল হবে তত তাড়াতাড়ি। আমি কবিরাজ নই, তবে এটুকু বলতে পারি – এই কদিনের তিক্ততার শেষে, একটু পরেই দারুণ মজাদার কিছু ঘটবে। ওই তো রাসবিহারি মোড় এসে গেছে। আহা সিগন্যালটাও খোলা আছে, সাঁ সাঁ করে পৌঁছে যাব, চেতলা অহীন্দ্র মঞ্চ। এখনকার মতো এই সব কথার নটেগাছগুলোকে মুড়িয়ে ফ্যাল”।        



    গাড়ির আওয়াজ পেয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন শুক্তিদেবী আর অনীশবাবু। অনীশবাবুর মুখে হাসি, কিন্তু শুক্তিদেবীর মুখেচোখে কেমন যেন উদ্বেগ। মঞ্জুকে কাছে টেনে নিয়ে হাত ধরে ঘরে ঢুকলেন, সোজা নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে, বিছানায় বসালেন। তারপর মঞ্জুর মুখটা তুলে ধরে তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন অনেকক্ষণ। মঞ্জু অবাক হয়ে দেখল, শুক্তিদেবী কাঁদছেন, তাঁর দুচোখ বেয়ে নেমে আসছে অবিশ্রান্ত অশ্রুধারা। মঞ্জু দুহাতে জড়িয়ে ধরল শাশুড়িকে।
     
    শুক্তিদেবী কান্নাধরা গলায় বললেন, “আমার ওপরে যাচ্ছেতাই রাগ করেছিস না? শুনেছি এ কদিন তুই ভালো করে খাসনি, হাসিস নি। মুখ গোমড়া করে ছিলি সারাক্ষণ। শুনে আমার বুকের ভেতরটা যে কেমন করছিল, সে কথা তোকে বোঝাতে পারব না, পাগলি। আমারও মুখে রুচি নেই, রাতে ঘুম নেই, সিরিয়ালে মজা পাইনি। ভাবছিলাম আমার সোনার টুকরো মেয়েটাকে সিরিয়ালের দজ্জাল শাশুড়ির মতো আমি এত কষ্ট দিতে পারলাম তো?”
     
    মঞ্জুও আবেগ সামলাতে পারল না, তার দুই চোখ ঝামড়ে জল চলে এল, কানে কানে বলল, “কেন এমন করলে বলো তো, মা?”
     
    শুক্তিদেবী উত্তর দিলেন না। নিজের চোখ মুছলেন, পরম মমতায় মঞ্জুরও চোখের জল মুছে দিলেন। তার কপালে একটি চুম্বন এঁকে দিয়ে গভীর স্বরে বললেন, “বলছি, এখন ও ঘরে চল”।    
    বসার ঘরে সবাই রুদ্ধশ্বাস বসেছিল, শুক্তিদেবী আর মঞ্জু ঢুকতেই সবাই গভীর শ্বাস নিল। মঞ্জুর শ্বশুর অনীশবাবু ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, “যাক, কিছুটা বৃষ্টি যখন হয়েছে, তখন মেঘলাভাবটা কেটে এবার রবিকিরণ দেখা যাবে, কী বলেন, অতনুবাবু?”
     
    অতনুবাবু বললেন, “ঠিক বলেছেন, চারদিনের টানা দুর্যোগ মনে হচ্ছে আজ কেটে গেল”।
     
    বসার ঘরের অন্যদিকে ডিভান সরিয়ে, মেঝেয় কার্পেটের বড় একটা আসন পাতা ছিল। সুন্দর রঙিন আলপনা আঁকা সেই আসনটি ঘিরে। শুক্তিদেবী মঞ্জুকে বুকের কাছে ধরে নিয়ে আসনের সামনে দাঁড়ালেন, বললেন, “এই আসনটিতে লক্ষ্মীসোনার মতো চুপটি করে বস। পূবমুখো। আমি এখনই আসছি”।
     
    মঞ্জু অবাক হয়ে শাশুড়ির মুখের দিকে তাকাল, কিছু বলল না, তার চোখের কোলে এখনও জল টলটল করছে। শুক্তিদেবী স্নেহস্বরে মৃদু ধমক দিলেন, “হাঁ করে মুখ দেখছিস কি? কথা কানে গেল না? আসনে বস, আমি এখনই আসছি।”
     
    মঞ্জু আসনে পা দিয়ে দাঁড়াল, সসঙ্কোচে ধীরে ধীরে বসল, সলজ্জ মুখে সোফায় বসা সকলের মুখের দিকে তাকাল। সকলের মুখেই এখন হাসি, বাবা, মা, পথিক, অনীশবাবু। সকলেই সোফা ছেড়ে মেঝেয় এসে বসলেন, মঞ্জুকে ঘিরে। প্রীতমাদেবী মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন।
     
    অনতিবিলম্বেই শুক্তিদেবী ঘরে এলেন, তাঁর হাতে সাজানো বরণডালা। পিছনে সুষমাদি পেতলের বড় থালায় এনেছে, প্রদীপ, ধূপদানি আর শাঁখ, একপাশে ধান, দুর্বা। শুক্তিদেবী মেঝেয় বসলেন, বরণডালা রাখলেন মঞ্জুর সামনে। সুষমাদির হাত থেকে পেতলের থালাটি নিয়ে, মেঝেয় এক পাশে রাখলেন। দেশলাই জ্বেলে প্রদীপ জ্বাললেন, প্রদীপের জ্বলন্ত শিখা থেকে ধরিয়ে নিলেন দুটি ধূপ। সুগন্ধে ভরে উঠতে লাগল বসার ঘরের প্রতিটি কোণ। এবার শুক্তিদেবী হাঁটুগেড়ে বসলেন, দুহাতে সাজানো বরণডালা নিয়ে, বললেন, “সুষমা, শাঁখ বাজা, প্রীতমা উলু দাও। তারপর নিজেও উলু দিতে দিতে বরণ করলেন মঞ্জুকে। আশ্চর্য ভালো লাগায় মঞ্জুর দুই চোখ আবার জলে ভরে উঠল। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শুক্তিদেবীর মুখের দিকে। শুক্তিদেবী মঞ্জুর চিবুক স্পর্শ করে চুমো খেলেন।
     
    বরণডালাটি সুষমার হাতে তুলে দিয়ে, মঞ্জুর মাথায় ধান আর দুর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করে বললেন, “আশীর্বাদ করলাম, অ্যাই মেয়ে, আমাকে প্রণাম করার কথাটা বলে দিতে হবে নাকি? এবার সকলেই তোকে আশীর্বাদ করবেন, চুপটি করে বসে থাক। আমি আসছি।” শুক্তিদেবী উঠলেন, সুষমাদির সঙ্গে রান্নাঘরে গেলেন।
    সকলের আশীর্বাদ পর্ব শেষ হতেই, শুক্তিদেবী বড় প্লেটে সাজিয়ে আনলেন চারটে লুচি আর বেগুনভাজা। মঞ্জুর সামনে রেখে বললেন, “শুরু কর, আরো আনছি”।
     
    “আমি কি একা একা খাবো নাকি? সবাইকে দাও। তুমিও নাও”।
     
    “কেউ পালাচ্ছে না, সবাই খাবে – আজকে তুই আগে...আজ তোর দিন, আমাদের মধ্যে আজ তুই অদ্বিতীয়া রানি”।
     
    সকলের হাসি হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে মঞ্জু লজ্জা পাচ্ছিল, কিন্তু শাশুড়ি ছাড়বেন না, তাই লুচি ছিঁড়ে বেগুনভাজার টুকরো সহ মুখে পুরে বলল, “আজকে কী বলো তো? আমাকে এত আদর করছ? আমার কিন্তু ভীষণ লজ্জা লাগছে”।
     
    মমতামাখা স্বরে শুক্তিদেবী বললেন, “আজ আমাদের বধূদ্বিতীয়া”।
     
    মঞ্জু থমকে গেল, “সে আবার কি? এমন তো কোনদিন শুনিনি”।
     
    অনীশবাবু বাবু হা হা করে হাসলেন, বললেন, “আমাদের মানে জামাইদের নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে চিরকাল অনেক আদিখ্যেতা হয় – বলা হয় জামাই ষষ্ঠী! কিন্তু কই, বাপ-মায়ের ঘর ছেড়ে আসা মেয়েটিকে কোন বিশেষ দিনে কোন যত্নআত্তি আমরা কোনদিন করি না তো? এটি তোমার শাশুড়িমায়ের আবিষ্কার, বৌমা, বধূদ্বিতীয়া”।
     
    শুক্তিদেবী মঞ্জুর মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছিলেন। কর্তার কথা শেষ হতে সুষমাদিকে ডাকলেন, “কইরে, সুষমা দুটো লুচি আরো নিয়ে আয়। সঙ্গে মিষ্টির প্লেটটাও নিয়ে আসিস”।
    মঞ্জু আঁতকে উঠল যেন, “তুমি জান মা, আমি চারটের বেশি লুচি কোনদিন খাই না”।
     
    শুক্তিদেবী রীতিমতো ভিলেনি কায়দায় বললেন, “কিন্তু আজ তো আপনাকে ছটা লুচি খেতেই হবে মঞ্জরীদেবী। শুক্রবার চারটে লুচি আপনি খাননি, দুটো লুচি খেয়েই মাকে বলেছিলেন, ভাল্লাগছে না। সে আমার ওপরে রাগ করেই না?”
     
    মঞ্জু এবার খিলখিলিয়ে হেসে উঠল, বলল, “তোমরা সবাই মিলে আমার সঙ্গে চিটিং করলে না? পথিক তো বটেই, এমন কি আমার বাবা-মাকেও দলে টেনে নিয়েছিলে?”
    শুক্তিদেবীও হাসলেন, বললেন, “পথিকের বাবাকে প্রথম যখন এসব কথা বলেছিলাম, ও তো এককথায় রাজি হয়ে গেল। কিন্তু আমি বললাম, মঞ্জুকে এ বাড়ি থেকে কদিনের জন্যে তাড়াই কী করে?”
     
    মঞ্জু আঁতকে উঠে বলল, “তার মানে?”
     
    শুক্তিদেবী বললেন, “আহা, ব্যাপারটা পুরো শোন না। জামাইরা সকলেই জামাইষষ্ঠীর দিন সেজেগুজে বউকে বগলে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যায়। তুই তো শ্বশুরবাড়িতেই আছিস। তুই বাড়ির মধ্যেই থাকবি, আর আমি বরণডালা সাজিয়ে উলু দিয়ে তোকে বরণ করব... নাঃ আমার মোটেই মনঃপূত হল না। সেটা বড্ডো ন্যাকা-ন্যাকা হয়ে যাচ্ছিল”।
     
    মঞ্জু চার নম্বর লুচি শেষ করে পঞ্চমে হাত দিয়ে বলল, “আমাকে বললেই পারতে, আমি কদিন না হয় বাপের বাড়ি থেকে এমনিই ঘুরে আসতাম”।
     
    শুক্তিদেবী মুখ ভেংচে বললেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তুই আমার সেই মেয়েই বটে। তোকে সব কথা বললে, তুই আমাকেই উপদেশ আর জ্ঞান দিয়ে আমার পুরো স্বপ্নটাই ভেস্তে দিতিস। বলতিস, ওসব বধূদ্বিতীয়া- টিতিয়া কোন কাজের কথা নয়, ওসব বোরিং আর বোকাবোকা ব্যাপার-স্যাপার তোর একদমই পছন্দ নয়। তোকে আমি চিনি না, হুঁঃ”।
     
    মঞ্জু খিলখিল করে হাসল, বলল, “সে কথা মন্দ বলনি। কিন্তু কাচের গেলাস ভাঙা?”
     
    শুক্তিদেবী বিখ্যাত গোয়েন্দাদের মতো মুচকি হেসে বললেন, “ওটাই তো আমার ফাঁদ – যে ফাঁদে তুই কনুই ঠেকালি। অন্যাদিন আগেই দিই, সেদিন খাবার বাড়ার পরে জলের গ্লাসটা দিয়েছিলাম। তোরা চেয়ারে বসে খেতে শুরু করার পর। জলভরা গেলাসটা রাখলাম, টেবিলের একদম কোণায় তোর হাতের একদম কাছাকাছি। ব্যস, তুই ঠেলা মেরে গেলাসটা ভাঙলি, আর আমিও তোকে তাড়াবার জন্যে কড়া করে দুটো কথা শুনিয়ে দিলাম”।
     
    মঞ্জু হাসল, বলল, “বাব্বাঃ, তোমার মাথায় এত দুষ্টু বুদ্ধি? বোঝা যায় না তো?”
     
    অনীশবাবু বললেন, “তোকে তো তাড়াল বৌমা, তুই যাওয়ার পর সে কি কান্না তোর শাশুড়ি মায়ের। বললে, মেয়েটাকে খেতে দিয়ে অমন মুখ ঝামটা দিলাম? ছিছি ছিছি। তার পরের দিন তোদের বাড়ি গিয়ে সব কথা খুলে বলে কতকটা স্বস্তি হল। তাও এ কটা দিন তোর চিন্তায় যা করল শুক্তি, সে কথা...”।
     
    শুক্তিদেবী এবার মুখ ঝামটা দিয়ে স্বামীকে বললেন, “থাক, থাক। আমার কথা নিয়ে তোমার এত ঢাক পেটানোর কী দরকার বুঝি না বাপু। সুষমা, মঞ্জুর হয়ে গেছে, এবার আমাদের খাবারগুলোও নিয়ে আয়। কদিন পরে সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়া যাক”।

    -০০-   

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৫ মে ২০২৫ | ২৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন