১
আজ সকাল থেকেই রজতশুভ্রবাবু বাড়িতে একেবারে হুলুস্থূল কাণ্ড শুরু করে দিয়েছেন। গিন্নিকে ব্যতিব্যস্ত করে দিচ্ছেন, এমন কী মেয়েকেও ছাড়ছেন না। বারোটা পঞ্চান্নর কাটোয়া লোকালটা তাঁকে ধরতেই হবে। বারোটা পঞ্চান্নয় হাওড়া থেকে ট্রেন ধরা মানে তাঁকে অন্ততঃ সোয়া একঘন্টা আগে বেরোতে হবে। চিল্কা, তাঁর মেয়ে একবার বলেছিল, “আজ রোববার বাবা, আজকে তো আর অন্যদিনের মতো জ্যাম হবে না, পঁয়তাল্লিশ মিনিট আগে বেরোলেই চলবে। তাছাড়া চিন্তা করো না, আমি তোমাকে ওলা বা উবর বুক করে দেবো...সাঁ সাঁ করে হাওড়া পৌঁছে যাবে”। মেয়ের কথাটা মনঃপূত হয়নি রজতশুভ্রবাবুর, দাড়ি কামাতে কামাতে বললেন, “তোমাদের মতো আমি শিরে সংক্রান্তি করতে পারবো না, বাপু। আমি একটু ধীরস্থির, হাতে সময় নিয়েই বেরোতে চাই। তোর মাকে বল, পঞ্চব্যঞ্জন কিচ্ছু রান্না করতে হবে না, দুটো ভাতে-ভাত ডিমসেদ্ধ করে দিক, আমি সোয়া এগারোটা নাগাদ খেতে বসবো”। অন্যদিন রজতশুভ্রবাবু একবার সোজা আর একবার উল্টো রেজারে শেভ করেন, আজ তিনবার করলেন, সোজা দুই, উল্টো এক। গালে মাছি বসলে, নির্ঘাৎ পা পিছলে যাবে!
মেয়ের মুখে বাবার লাঞ্চের অর্ডার শুনে, খুন্তি হাতেই শুক্লা, রজতশুভ্রবাবুর গিন্নি, বেরিয়ে এলেন রান্নাঘর থেকে, বললেন, “তোমার কী মাথা-টাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? যাচ্ছো একটা শুভ কাজে, তার আগে অলক্ষুণে ওই জিনিষটার নাম না বললেই চলছিল না?” রজতশুভ্রবাবু অবাক হয়ে গিন্নি এবং মেয়ের মুখের দিকে তাকালেন, অলক্ষুণে বস্তুটা কী সেটাই বুঝতে পারছিলেন না। গিন্নির পেছনে দাঁড়ানো মেয়ে ঠোঁট নেড়ে ফিসফিস করে বলল, “পাখিরা যে বস্তুটি তাদের বাসায় পাড়ে, সেটি গোল তাই অলক্ষুণে”। ভ্রূকুটি করে ঘাড় ঘুরিয়ে একবার মেয়ের দিকে তাকিয়ে গিন্নি আবার বললেন, “ভাত-মুগের ডাল, ঘি, পটলভাজা আর চারাপোনা ভাজা। শুভ কাজে মৎস্যমুখ করে যাওয়াটাই দস্তুর...”! রজতশুভ্রবাবু আর কথা বাড়ালেন না, সুবোধ বালকের মতো শ্বাস ফেলে বললেন, “বেশ, তা না হয় হল, কিন্তু সোয়া এগারোটা মানে এগারোটা পনের”।
গিন্নি তাড়াহুড়ো করে রান্নাঘরে ঢুকতেই, রজতশুভ্রবাবু কাবার্ড থেকে জামা প্যান্ট গেঞ্জি রুমাল বের করতে লাগলেন। তাঁর পেছন পেছন মেয়েও এসে দাঁড়াল। বলল, “বাবা, আজকের দিনে রোজ অফিসে পরে যাওয়া একঘেয়ে জামা-প্যান্টগুলো পরো না, প্লিজ। ধুতি-পাঞ্জাবি না পরো, অন্ততঃ পাজামা-পাঞ্জাবি পরো”। কথাটা রজতশুভ্রবাবুর মাথাতেও এসেছিল, কিন্তু একটু লজ্জা-লজ্জা করছিল বলে, ও পথে হাঁটেননি। তিনি মেয়ের দিকে সস্নেহে তাকিয়ে প্রশ্রয়ের মৃদু ধমক দিয়ে বললেন, “ধুস্, এ কি বিয়েবাড়ি যাচ্ছি নাকি? অত সাজগোজ দেখলে লোকে বলবে কী?”
“কী আবার বলবে? যাঁরা তোমাকে ডেকেছেন, তাঁরা কী তোমাকে অফিসের কাজের জন্যে ডেকেছেন?”
“তা না... ইয়ে... তা অবিশ্যি ঠিক। তবে...ওসব পরে আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে, একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে”!
“কিচ্ছু হবে না। আচ্ছা, তুমি এক কাজ করো, তুমি এখন চান করতে যাও, ততক্ষণে আমি সব বের করে রাখছি। আজকে চুলে একটু শ্যাম্পু দিও, বাবা। শ্যাম্পু করে আবার মাথায় গুচ্ছের তেল দিও না যেন, তোমার যা মাথা ঠাণ্ডার বাতিক...জুলপি দিয়ে তেল গড়ালেই হয়েছে আর কী!”
মেয়ের ভালোবাসা ও আদরে রজতশুভ্রবাবুর মনটা বেশ একটু মাখোমাখো হয়ে উঠল, খুব দুর্বল স্বরে তিনি প্রতিবাদ করে উঠলেন, “তোরা আমাকে কী পেয়েছিস বল তো? মা আর মেয়ে, যা নয় তাই বলে চলেছিস তখন থেকে। বলি, আমি কী তোদের হাতের পুতুল, যেমন সাজাবি, তেমন সাজতে হবে”! ফিক করে হেসে মেয়ে বলল, “তা নয় তো কী! যাও, যাও চানটা সেরে এস দেখি, ওদিকে পৌনে এগারোটা বাজতে চলল, সে খেয়াল আছে?” রজতশুভ্রবাবু কিছুটা চমকে উঠে বললেন, “ওঃ তাই তো! তোদের পাল্লায় পড়ে আমার যাওয়াটাই না ভেস্তে যায়। বললে তো আর শুনবি না, যা পারিস কর, আমি চানে চললাম”।
গল্পটি সম্পূর্ণ পড়তে হলে নীচের লিংকে ক্লিক করুন - তাতে এই গল্পটি ছাড়াও অন্যান্য সাহিত্যিকের আরো ভালো ভালো গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ...পড়ে নিতে পারবেন।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।