এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা

  • ছত্তিশগড়ের গেঁয়ো ব্যাংকের স্মৃতির কোলাজঃ পর্ব ১০

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৪৯০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ছত্তিশগড়ের গেঁয়ো ব্যাংকের স্মৃতির কোলাজঃ পর্ব ১০

    বাঘে ছুঁলে আঠেরো ঘা
    কেন, আঠেরো ঘা কেন?
    জানেন না? সামনের দুটো থাবায় পাঁচটা করে নখ, আর পেছনের দুটো পায়ে চারটে করে। মোট আঠেরোটা, তাই বাঘ হামলা করলে আঠেরোটি নখের দাগ হয়।
    অংকের গুরুজি ইদ্রিস কুরেশী আমাকে হিসেব বোঝাতে থাকেন।
    বায়োলজির খারে স্যার মুচকি মুচকি হাসছিলেন।

    আমি খোঁচাতে থাকি।
    -- আপনি কিছু বলুন। পেছনের থাবায় একটা করে কম কেন?
    খারে স্যার মাথা নেড়ে আমার খোঁচা হজম করে নিলেন। অর্থাৎ এ নিয়ে মুখ খুলবেন না, অভিন্নহৃদয় বন্ধু কুরেশীকে ভাট বকতে দেয়া হোক।

    এই ফাঁকে একটু স্থান-কাল-পাত্রের সঙ্গে পরিচয় হয়ে যাক।

    আজ ভূত চতুর্দশী, কাল কালীপূজো, তায় শনিবার। ভাইফোঁটা পড়েছে সোমবারে। তাই ছুরি গাঁয়ে সরকারি স্কুলের শিক্ষককুল এবং পঞ্চায়েত ইনস্পেক্টর বাড়ি যাবেন, বাসে করে বিলাসপুরে। সেখান থেকে যে যার গাঁয়ে। আমিও যাব বিলাসপুর, সেখান থেকে ট্রেন ধরে ভিলাই, ফিরব সোমবার সকালে।

    আমরা ক’জন শেষ বাসটা মিস করেছি। শেষে গায়ে আলোয়ান জড়িয়ে রামদীন পালোয়ান হয়ে গল্প করতে করতে নয় কিলোমিটার পায়ে হেঁটে এসেছি কাঠগোরা মহকুমা সদরে। রাত দশটা বাজে। বাস তুলে নেয়া হয়েছে। আমরা এগিয়ে গেলাম আরও ছয় কিলোমিটার। রাত বারোটা, একটা তেমাথার মোড়। এখানে সুরাকাছার কোলিয়ারির ট্রাক পাওয়া যেতে পারে।

    একটা ছোট্ট চা-ভাজিয়ার দোকান। স্বামী-স্ত্রী মিলে কালকে দীপাবলীতে বিক্রির আশায় বেসন গুলে তেল গরম করে সামোসা-জলেবী-ভাজিয়া বানানোর জোগাড় করছে। বলল, ভোর চারটের আগে কোন ট্রাক আসবে না। তার আগে ওরা আমাদের খালি চা খাওয়াতে পারে। তাই সই।
    জঙ্গলের রাস্তা, শীত লাগছে। ফুটন্ত চা আর গাঁজাখুরি গল্প শুনে আগামী চার ঘন্টা কাটাতে হবে। দলের মধ্যে অন্ততঃ দুজনের নিয়মিত কলকে ফাটানোর অভ্যেস রয়েছে।

    স্থানীয় ঠিকেদার সম্পতলাল সাহু শুরু করলেনঃ
    বুঝলেন ম্যানেজার সাহেব, বছর পনের আগেও এই পথে বাঘ বেরোত। এখনও হুড়ার দেখা যায়। হুড়ার জানেন না ? ওই বুনো কুকুর আর হায়েনার মাঝামাঝি একরকম জানোয়ার। বনবেড়াল বলতে পারেন। ছোটবাচ্চা মুখে করে নিয়ে পালায়। একা পথিক দেখলে--।
    আরে ভয় পাবেন না। দলবেঁধে চললে কোন চিন্তা নেই। তবে বাঘের কথা আলাদা।

    -- আপনি বাঘ দেখেছেন?
    -- সেই কথাই তো বলতে যাচ্ছিলাম। বছর কুড়ি আগের কথা। সেবার আমি আর আমার দেড়শালা (বড় ভগ্নিপতি) ভিনগাঁয়ের কুটুমবাড়ি থেকে বোগরা-ভাত (পাঁঠা র মাংস আর ভাত) খেয়ে বাড়ি ফিরছি। তখন এদিকে পাকা রাস্তা হয় নি, মোটরবাস চলে নি।
    পঞ্চায়েত ইন্সপেক্টর সদনলাল দেবাংগন বলে – আজ বোধহয় কল্কে ফাটাও নি; তাই কথার কোন কাঁড়-কাঁকুড় মাত্রা নেই।

    আমি আশু বিপদ বুঝে বলে উঠি — ভাইগে ! ভাইগে! হয়েছে, হয়েছে, ক্ষ্যামা দাও। আজ ভুত-চতুর্দশীর রাত। ভগবানের নাম নিয়ে রাম রাম করে বিলাসপুরে যাচ্ছ, ফালতু কথা কেন? বাঘের গল্প চলুক।
    সদনলাল হার মানবে না। আরে ওসব গাঁজায় দম দেওয়া গল্প, তেলি দেখবে বাঘ! ঘানিগাছে বাঘ থাকে, হুঁ!

    সাহু রেগে কাঁই।
    -- কী বলছ হে! আমি মিথ্যে কথা বলছি! মোলা লবরা কহিস ইয়ে কোস্টা? ব্যাটা তাঁতি, আমাকে মিথ্যেবাদী বলল?
    কুরেশি স্যার মুচকি হেসে চিমটি কাটেন।
    তোলা লবরা নহী, মিঠ-লবরা কহিস।
    তোকে মিথ্যুক বলে নি, বলেছে মিষ্টিখচ্চর, বুঝলি?

    বড় মুশকিল! আমার হাসি পেল। কিন্তু হাসলে আর গল্পটা শোনা হবে না।।
    — সাহুজি, সেই বাঘের গল্পটা!

    সাহুজির অভিমান যায় না। কী হবে গাঁজাখুরি গল্প শুনে? আমি তো মিথ্যে মিথ্যে বানিয়ে বানিয়ে বলি।
    বায়োলজি স্যার এবার ধমকের সুরে বললেন — বেশি ভাও খেও না, সাহু। আমি তোমার মুখে ওই গল্পটি অনেকবার শুনেছি, কখনও বলেছি যে বানিয়ে বলছ!

    সাহু এবার নতুন উদ্যমে শুরু করলেন।

    আমাদের মধ্যে সামনা সামনি বাঘ কেউ দেখেনি, এক আমি ছাড়া। এটা তো মানবেন? যা বলছিলাম, সেবার আমি ও আমার দেড় শালা কুটুমবাড়ি থেকে খেয়ে দেয়ে ফিরছি। জব্বর খাওয়া হয়েছে, ক’পাত্তর ঘরে তৈরি মহুয়াও ছিল। একদম বিশুদ্ধ; বোতলে আঙুল ডুবিয়ে মাচিস মারুন, আঙুল জ্বলবে মোমবাতির মত। পরানে দেদার ফুর্তি।

    আমার দেড়শালা ফাটা বাঁশের আওয়াজে গান ধরেছে —
    “পীপল কে পতিয়া ডোলত নাহী ও,
    মোর মন কে রাজা বোলত নাহী ও।
    “অশত্থ গাছের পাতা দেখি নড়ে চড়ে না ,
    আমার হৃদয়রাজা তো কথাই বলে না”।

    হঠাৎ সামনের পাকুড় গাছ থেকে, মানে ঠিক আপনার ডানদিকে যে গাছটা, পাখিদের চেল্লামেল্লি শুরু। আমি ওর গান থামিয়ে কান খাড়া করলাম। একটা খচমচ আওয়াজ আর বোটকা গন্ধ। ঘাড় ঘোরাতেই আমার বাক্যি হরে গেল। একটা কেঁদো বাঘ আমার দু’হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে লেজ আছড়াচ্ছে। কী রাগ! বাঘেরাও সুর বোঝে। বেসুরো গানা ওদের দিমাগ খারাপ করে দেয়।

    কী করি! আমার হাতে একটা খেঁটে লাঠি। ও দিয়ে কী আর-- !
    মোর দেড় শালাকে তো পুঁ সরক গইস। ওকর কপড়া মেঁ হো গইস। দেড় শালার তো ভয়ের চোটে কাপড়ে চোপড়ে!
    ওউ ডর কে মারে মোর গাঁড়কে অন্দর পোকর- পোকর পোকর-পোকর হোয়ত রইসে।

    তা আমিও কম যাই না! গুরুর নাম নিতেই বন্ধ দিমাগ খুলে গেল। হাতের খেঁটো নিয়ে বাঘের চোখে চোখ রেখে তাকালাম। বাঘের দুই থাবা আমার কাঁধে, রাগী চোখ আর দাঁতের পাটি আমার মুখের কাছে।
    আর জানেনই তো, বাঘ নন-ভেজ খায় কিন্তু দাঁত মাজে না।

    -- তারপর? ওই খেঁটে লাঠি দিয়ে বাঘের মোকাবিলা করলেন?

    -- কী যে বলেন! তা হয় নাকি? আমি গুরুর নাম নিয়ে খেঁটে সোজা ওর মুখের মধ্যে আড়াআড়ি ঢুকিয়ে দিয়ে হাঁ-মুখ মেঁ তালা লাগা দিয়া অউর লাঠিকে দোনো প্রান্ত শের কী দো মুঠঠি মেঁ থামা দিয়া! ব্যস্‌ বাঘ ভ্যাবাচাকা লেগে ঠুঁটো হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আর আমি প্রায়-মুচ্ছো যাওয়া দেড়শালাকে টানতে টানতে রাস্তায় এনে তারপর দে ছুট, দে ছুট! সোজা বাড়ি এসে দম নিলাম।

    সদনলাল জনান্তিকে বললেন যে এই গল্পটা উনি সাহুর দেড়শালার মুখেও শুনেছেন, তবে তাতে কর্তা-কর্ম-করণ-ক্রিয়া ইত্যাদি একটু অন্যরকম ছিল।
    সাহু শুনেও শুনলেন না।

    দশ বছর পরের ঘটনা

    আমি সদ্য এরিয়া ম্যানেজার হয়েছি। আমাকে দেয়া হয়েছে সবচেয়ে দূরের দেহাতি এলাকায় ২৮ টা শাখার দায়িত্ব। এইভাবে একদিন বম্বে মেল, তারপর দুটো বাস বদলে সূর্য ডোবার আগে পৌঁছে গেলাম এক অখ্যাত গ্রামে — পাটসিবনী। তার তিনদিকে পাহাড় আর ঘন জঙ্গল। সকালে একটা বিকেলে একটা বাস আসে। তারপর সন্ধ্যের আগেই ফিরে যায়। এখানে বিজলির লাইন এখনো আসেনি। মাঝখানে দু’বার নদী পেরোতে হয়, নীচু পুল- একদিন ভাল করে বৃষ্টি হলে জলে ডুবে যাতায়াত বন্ধ হয়ে জনপদটি সভ্য দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

    এক সম্পন্ন শিখ কৃষক পরিবারের বাড়িতে ব্যাংক খোলা হয়েছে। মাটি আর সুড়কির জোড়া দেয়া ইঁটের দেয়ালে টালির ছাদ। তিন ধাপ সিঁড়ি চড়ে ঊঁচু বারান্দা।
    গিয়ে দেখি সদ্য বিবাহিত ম্যানেজার মহাশয় পাঁচটা বাজার আগে দোকানের ঝাঁপ ফেলে দিয়েছেন। আমার কালাপাহাড়ি আগমনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললেন – শ্রীমতীজির শরীরটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেছল।
    জিজ্ঞেস করলাম – সারাদিনে ক’টা ভাউচার এসেছে?
    -- দশটা রিসিট আর সাতটা উইথড্রয়াল।

    ভাবলাম, এখান থেকে ব্যাংক তুলে দেয়ার রেকমেন্ডেশন দেব। সারাগায়ে ধূলো। কুয়োর পাড়ে গিয়ে কপিকলের সাহায্যে দড়ি টেনে বালতি দিয়ে জল তুলে হাত-মুখ ধুয়ে ভাবলাম – চা পাওয়া গেলে ভাল হত। এখানে তো কাছেপিঠে দোকানের নামগন্ধ নেই। চাইতে লজ্জা করছে।

    এমন সময় অল্পবয়েসি বৌ এসে নমষ্কার করে নরম গলায় জিজ্ঞেস করল — আপনি কি আগে পুজো বা সন্ধ্যা-আহ্নিক করবেন? জায়গা করে দেব? নাকি চা-নাস্তা দেব?
    ওরে মা রে! কাদের সঙ্গে পালা পড়েছে?
    -- না না, কাল স্নান করে তবে পুজো। এখন পেটপুজো।

    মেয়েটি ফিক করে হেসে ভেতরে গেল। পনেরো মিনিট পরে এল একটা বড় স্টিলের থালায় নৈবেদ্যর মত করে চারটে আলুর পরোটা, আচার, এবং ছোট বাটিতে একটু দই নিয়ে। আর থার্মস ভরা চা।
    এমন ভক্তিতে ভগবান গলে যান, আমি কোন ছার! আসলে হরিদাস পাল বই তো নই!

    তারপর ম্যানেজারকে সঙ্গে নিয়ে পায়চারি করতে বেরোলাম। কথা বলে দেখি, এখানের বিজনেস পোটেনশিয়াল, স্থানীয় কালচার – এসবের কিছু আভাস পাওয়া যেতে পারে।
    হাঁটতে হাঁটতে গাঁয়ের বাইরে; বোল্ডার, মোরাম, মাটি আর পাথরকুচি ফেলে রাস্তা তৈরি হচ্ছে, পাশে শুকনো নালা কাটা হয়েছে। বর্ষা নামার আগে কাজ শেষ করা চাই। সূর্য ডুবছে, রাস্তার ওপারে খেত পেরিয়ে জঙ্গল শুরু, আকাশ লাল থেকে গোলাপি হয়ে এবার কালচে নীল হচ্ছে।

    -- তারপর? ক্যা চল রহা হ্যায়? খুশ হো ইঁহা?
    -- স্যার, আমি না এই ব্যাংকে বেশিদিন থাকব না। জানেন, ইউনিয়ন ব্যাংকে ক্লার্ক-কাম-ক্যাশিয়ার নিচ্ছে, পরীক্ষা দিয়েছি। পেপার খুব ভাল গেছে।
    -- তা বেশ, কিন্তু বড়মুখে ব্যাংক অফিসার বলেই তো বিয়ে করেছ? দহেজ নিয়েছ কত?
    -- স্যার, কিচ্ছু নিই নি, সংসার পাততে যা লাগে। তবে শ্বশুর পাঁচ একর চাষের জমি ওনার মেয়েকে লিখে দিয়েছেন। উনিও খুশি, ক্লার্ক হলেই বা? মেয়ে-জামাই তো শহরে থাকবে। গ্রামে আর নয়।
    -- ইংরেজির পেপার কেমন হয়েছে?
    -- উসী মেঁ তো—

    ওর কথা শেষ হয় না। পেছন থেকে একটা আর্ত চিৎকার -- আঁউ-আঁউ-আঁউ!
    ঘাড় ঘোরানোর আগেই একটা লোক সাইকেল নিয়ে হুড়মুড় করে শুকনো নালায় পড়ে গেল। পড়ে থেকে চেঁচাচ্ছে — শের! শের! শের!
    -- কোথায়? কোথায়?
    -- ঠিক আপনাদের পেছনে, গুঁড়ি মেরে আসছিল, তখন থেকে চেঁচাচ্ছি।

    আমরা ওকে টেনে তোলার বদলে চমকে পেছনে তাকাই। একটা বাছুরের সাইজের জন্তু আমাদের পেছন থেকে খেতে নেমে আড়াআড়ি পথে দুলকি চালে ক্রমশঃ জঙ্গলে মিলিয়ে গেল। অন্ধকার নেমে আসছে। আলো আঁধারিতে কিছু ঠাওর হয়না।
    লোকটিকে টেনে তুলি।
    সে একজন ফরেস্ট গার্ড, ভয় পেয়ে নালায় পড়েছে।

    -- কেমন শের? ডোরাকাটা?
    -- না সাহেব, বুঁদিয়া শের – গায়ে বড় বড় ফোঁটা। বহুত পাজি জানোয়ার। উপায় না দেখে জোরে চিৎকার করায় আপনারা বেঁচে গেলেন।

    রাত্তিরে আর জানলা দরজা খুলে শুই নি। মাঝরাত্তিরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে একটা মাটির গামলাই যথেষ্ট, এটাই নাকি এদিকের দস্তুর!

    আরও পাঁচ বছর পরে

    সবাই জি-টিভি এবং দূরদর্শনে ছত্তিশগড়ে রায়পুর—সম্বলপুর( উড়িষ্যা) ন্যাশনাল হাইওয়ে থেকে আটাশ কিলোমিটার ভেতরে বারনয়াপারা অভয়ারণ্যের বিজ্ঞাপন দেখেছেন। আছে হরিণ, বাঘ এবং জংলী ভঁয়সা বা বাইসন।
    আমাদের প্রথম চেয়ারম্যান সারদা স্যার ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী। এই ঘনঘোর জঙ্গলে বনবিভাগের বীটের চৌকিদারের ঘর ভাড়া নিয়ে খুলে দিলেন ব্যাংকের ব্র্যাঞ্চ। এখন অভয়ারণ্য হওয়ায় সরকার বাহাদুর ওসব ফেরত নিয়েছেন।

    কপালগুণে ওই ব্র্যাঞ্চও আমার জিম্মায়। চারদিকে ফরেস্ট ভিলেজ, বিজনেস এতই কম যে সি এ ফার্মের বার্ষিক অডিট তিনবছরে একবার হয়। সেবার পালা পড়েছে। আমাকে দশ দিনে সতেরোটি শাখার অডিট করাতে হবে। ছোট ব্রাঞ্চ হলে সকাল থেকে রাত পর্য্যন্ত দিনে তিনটে ব্রাঞ্চ সারতে হবে।

    মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ, আগুন গরম। তায় নন-এসি অ্যাম্বাসাডর গাড়ি। দুটো বাচ্চা মত আর্টিকল্ড ক্লার্ককে পেছনে বসিয়ে আমি ড্রাইভারের বাঁ-পাশে, আগুনে পুড়ে যাচ্ছি। মাঝে মধ্যে কোথাও দোকানপাট দেখতে পেলে কোল্ড ড্রিংক কিনে বোতল আগে কপালে এবং গালে চেপে ধরছি।

    বিকেলের দিকে বারনয়াপারা পৌঁছনোর রাস্তায় হঠাৎ দেখি একসার হরিণ, আমাদের রাস্তা আটকে জিভ বের করে হ্যা-হ্যা করে হাঁফাচ্ছে, ছুটে পালাচ্ছে না। যেন গাঁয়ের লোক মন্ত্রী মহোদয়ের গাড়ি আটকে নিজেদের অভাব-অভিযোগ নিয়ে ডেপুটেশন দেবে।

    বুঝলাম, জঙ্গলে নদীনালায়, পুকুরে জল শুকিয়ে গেছে। আমরা কী করতে পারি? সঙ্গে দু’বোতল জল আছে, কিন্তু দেব কিসে?

    ড্রাইভার সোনীজি বের করল ওর লাঞ্চবক্স, দেখাদেখি ছেলে দুটোও তাই করল। আমরা নেমে পড়ায় ওরা লাফিয়ে দূরে সরে গিয়ে গাছের আড়াল থেকে আমাদের দেখতে লাগল। তিনটে প্লাস্টিকের লাঞ্চ বক্স আর তার ঢাকনায় দুবোতল জল খালি করে রাস্তার পাশে রেখে আমরা এগিয়ে গেলাম। বললাম — শহরে পৌঁছে আমি বক্স কিনে দেব, ব্যাংকের পয়সায়।

    ওরা হাসল, ওটুকু ওরাও পারে। জলদানে পুণ্য হয়।

    ব্যাংকে পৌঁছে দেখি ফরেস্ট গার্ড এবং আরও দু’একজন স্থানীয় আদিবাসী নাগরিক বসে আছেন। সবাই উত্তেজিত, কিন্তু হাসছে। চাপরাশিও হাসছে। শুধু ম্যানেজার মাথা চুলকোচ্ছে।
    কী কেস?

    কাল রাতে প্রচণ্ড গরমে ত্রস্ত হয়ে ম্যানেজার শ্রীমান রাজপুত ঘরের বাইরে কুয়োর পাড়ে সিমেন্ট বাঁধানো চাতালে মাদুর পেতে ঘুমুচ্ছিল। মাঝরাতে একটা বিচ্ছিরি বোটকা গন্ধে ঘুম ভেঙে ও পাথর হয়ে গেল।

    কৃষ্ণপক্ষের রাত। কিন্তু আকাশ থেকে ফিকে একটা তারার আলোয় আবছা সিল্যুয়েট দেখা যায়। গন্ধের উৎস ওর গায়ের পাশে। একটা বড় বাঘ ওর পাশে আয়েস করে বসে ওকে শুঁকছে। গোঁফ, ভাঁটা চোখ, মুখের কষে ফেনা।

    খানিকক্ষণ ও মড়ার মত পড়ে থেকে চোখ সামান্য ফাঁক করে দেখতে লাগল। বাঘমামা নড়ে না যে! মৃত্যুভয় মানুষকে বেপরোয়া করে তোলে। মরিয়া হয়ে হঠাৎ এক বিকট চিৎকার করে দুই লাফে ঘুরের ভেতর ঢুকে দরজায় খিল তুলে ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগল।

    সকাল হল। শ্রীমান দরজা খুলল না। আটটা নাগাদ চাপরাশি এল ব্যাংক ঝাঁট দিতে, দরজা খুলুন স্যার। একটু পরে কাস্টমার আসবে।
    -- ভাই, কুয়োর পাড়ে আমার লুঙিটা পড়ে রয়েছে। ওটা জানলা দিয়ে গলিয়ে দে। রাত্তিরে লাফানোর সময় গিঁট খুলে বাইরে পড়ে গেছল।

    অডিট শেষ হল। সুর্য ডুবছে। সবাই বলল আজ রাতে এখানেই থেকে যান, ফরেস্ট বিভাগের গেস্ট হাউস খুলিয়ে দিচ্ছি, অবশ্য কুড়ি কিলোমিটার দূরে। ড্রাইভারও ঘ্যান ঘ্যান করছে, জঙ্গলের ভেতরের রাস্তা চিনি না স্যার। কাল সকালে —
    -- বাজে কথা। আজ রাত্তিরে আমাদের কসডোল পৌঁছুতে হবে, মাত্র তিরিশ কিলোমিটার। নইলে আমার অডিটের শিডিউল বিগড়ে যাবে। কাল কসডোলের অডিট সকাল সাতটায় শুরু হওয়া চাই।
    আর বনবিভাগের সাইনবোর্ড এবং দিকচিহ্ন দেখে ঠিক পৌঁছে যাব, পথ হারাবে না।
    -- কিছু হলে আপনি দায়িত্ব নেবেন?
    -- নেব, কথা না বাড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট কর।

    অডিট ক্লার্ক ছেলেদুটো খুব খুশি, ওরা হয়ত বাঘ দেখতে পাবে।
    ম্যানেজার আর ফরেস্ট গার্ড মিলে আমাদের রাস্তা আর সাইনগুলো বুঝিয়ে দেয়। তারপর যাত্রার সাফল্যের জন্য শুভ কামনা জানায়।

    বন অনেক ঘন, হাওয়া দিচ্ছে না, গাছের পাতা নড়ছে না। আমরা শার্টের বোতাম খুলে ফেলি। তারার ভরা কালো আকাশ। একজায়গায় রাস্তা বন্ধ, পাশে নদীর শুকনো খাত। বনবিভাগের সারি সারি কাঠি পোতা নিশান বলছে এই শুকনো খাত দিয়েই আমাদের ডাইভার্সন রোড গেছে। আমরা পেরিয়ে যাই একটা এলাকা। বাঘের হাঁ-মুখের ছবিওলা সাইনবোর্ড বলছে এটা হার্ডকোর বাঘের এলাকা, সতর্ক থাকুন!

    কিন্তু ধূসর কিছু খরগোস লাফাতে লাফাতে চলে গেল। একজন ছেলে ফুট কাটল, খরগোস দেখা গেছে মানে -- আজ বাঘের দেখা কপালে নেই। ধুত্তোর!
    আমার হাড়পিত্তি জ্বলে যায়। তেতো গলায় বলি — এই যে নিশ্চিন্তে যাচ্ছ, বনের গা ছমছমে ভাব টের পাচ্ছ, এটাই এনজয় কর। বাঘ দেখতে হলে চিড়িয়াখানায় যাও।

    বন ফুরিয়ে আসে। একটা সাইনবোর্ড বলে বাঘের এলাকা শেষ। তারপর আমরা থেমে যাই। সাপের চেরা জিভের মত দুটো রাস্তা। কোনদিকে যাব? একটা সামনের দিকে একটু সরু মত, আর একটা একটু চওড়া, ডাইনে বেঁকে উপরের দিকে উঠে গেছে।
    ড্রাইভার আমার দিকে তাকায় – এবার?
    -- ডানদিকেরটা ধর, ওটাই চওড়া গাড়ি চলাচলের রাস্তা।
    গাড়ি উঠতে শুরু করে। তারপর বাঁ-দিকে বেঁকে চলতে থাকে। যাক, আমরা ঠিকই যাচ্ছি, এটা নিঘঘাৎ নীচের রাস্তার সমান্তরালে চলছে। একটা মাইলস্টোন বলছে কসডোল আরও ১৫ কিলোমিটার।

    আমাদের মনে ফুর্তি। ব্যাংকে পৌঁছে স্নান করতে হবে, তারপর খাওয়া ও ঘুম। এবং সকালে উঠে কাজে লেগে পড়া।

    কিন্তু এ কেমন রাস্তা! ডানদিকে ঘন গাছের জঙ্গল আর বাঁদিকে বড় বড় বোল্ডারের প্যরাপিট, নীচে গড়িয়ে পড়লে অন্ততঃ একহাজার ফুট! কিন্তু রাস্তা বড্ড খারাপ, নুড়ি পাথরে ভর্তি। একটুও হাওয়া দিচ্ছে না। আমরা দরজার কাঁচ নামিয়ে জামা খুলে গেঞ্জি গায়ে যাচ্ছি।
    ড্রাইভার সোনী কিচকিচ করে।
    -- স্যার, টায়ার পাংচার হলে আপনি দায়ী থাকবেন, আমি তো না করেছিলেম। আপনার গোঁ!

    গাড়ি চলছে ঘন্টায় পাঁচ কিলোমিটার গতিতে। সোনী সাবধানে পাথরের খোঁচা বাঁচিয়ে চালাচ্ছে। কখনও একটু কাত, কখনও সোজা।
    পনের মিনিট কেটে গেল। কেউ কোন কথা বলছে না, ছেলেগুলো ঘুমিয়ে পড়ল নাকি? সারাদিনের গরমে এত ধকল।

    হঠাৎ ছেলেদুটোর উত্তেজিত স্বর — স্যার, কসডোল আর কতদূর? কতক্ষণ লাগবে?
    আমি বিরক্ত, মাইল স্টোন দেখছে না নাকি? আরও এগারো কিলোমিটার, রাস্তা খারাপ, সময় লাগবে। ছেলেগুলো বড্ড ছটফট কড়ছে, উসখুস করছে, ধেত্তেরি! দাঁত চেপে বাংলায় বলি -- যত নতুন বালের কচকচানি!
    ড্রাইভার ফিসফিস করে — স্যার, জানোয়ার!

    জানোয়ার! মানে বাঘ? কোথায়?
    -- ডানদিকে তাকান, আমাদের গাড়ির গা ঘেঁষে সমান তালে চলেছে। পাঁচ মিনিট ধরে আমাদের ফলো করছিল, এখন গা ঘেঁষে —স্পীড বাড়াতে পারছি না। কাঁচ তুলতে পারছিনা, স্টিয়ারিং থেকে হাত সরালে অ্যাকসিডেন্ট হতে পারে।
    তাকিয়ে দেখি সম্বর হরিণের সাইজের একটা বড়সড় ছায়া। গাড়ির গায়ে প্রায় লেগে চলছে তো চলছেই।
    -- আপার নিভিয়ে ডীপার জ্বালাও, লাইট যেন বন্ধ না হয়। তাড়াহুড়ো করবে না, স্টেডি থাকো। পাকা রাস্তা না আসা পর্য্যন্ত স্পীড বাড়াবে না। সোজা চালাও, কোন ভয় নেই।
    ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি পেছনের ছেলে দুটো পিঠের কুশন দুটো তুলে জানলার দিকে বাগিয়ে রেখেছে। বাঘের থাবা ঢুকলে আটকে যাবে!

    আরও পাঁচ মিনিট, বাঘ একেবারে আমাদের হমারে দোস্ত, হমারে হমসফর হয়ে গেছে।
    হঠাৎ সামনে পিচের রাস্তা। সোনী একেবারে আশি-নব্বইয়ের স্পীড তুলল।
    -- আরে সামলে! সামলে!

    দশ কিলোমিটার এগিয়ে একটা টি-পয়েন্ট; কয়েকঘর দলিতের বস্তি। আমরা নেমে পড়ি। সামনের দুটো ঘরের বন্ধ দরজায় দুমদাম ধাক্কা দিই। ভয়ে গোটা পাড়া লাঠি নিয়ে বেরিয়ে আসে — ডাকাত পড়ল নাকি?
    -- জল, খাবার জল!
    মাটির কুঁজো থেকে ঢকঢক করে জল খাই।
    সব শুনে ওরা বলে — কসডোল আর চার কিলোমিটার। আপনারা ভুল করে উপরের রাস্তায় উঠে গেছিলেন। ওই পথে যাতায়াত বন্ধ অনেকদিন। পাংচার হলে সারারাত্তির আটকে থাকতেন।

    হেড অফিসে ফিরে এলে সোনী ড্রাইভার আমার নামে কমপ্লেন করল। আমার জিদে ভুল রাস্তায় উঠে টায়ার ড্যামেজ হয়েছে, সারাতে হবে। চেয়ারম্যানের চেম্বারে আমার ডাক পড়ল।
    টেবিলের ওপাশে ওনার সঙ্গে জিএম।

    -- হ্যাঁরে, সত্যিই বাঘ দেখেছিলি? একেবারে গাড়ির পাশে! ইস্‌, আমরা এতবার গেছি, কোনদিন তো দেখলাম না।

    আমি চৈতন্যচরিতামৃত গুনগুন করিঃ
    “অদ্যাপিহ সেই লীলা খেলে গোরা রায়।
    কোন কোন ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়”।

    (চলবে)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৪৯০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হীরেন সিংহরায় | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:০৫540288
  • রঞ্জন 
     
    এক জীবনে এতগুলো জীবন দেখা এবং তার গল্প বলার ভাগ্য কজনের হয়! মাঝে মাঝে শঙ্কা হয় ক্যাপ্টেন ওটসের মতো বলবে একটু বেরুচ্ছি , ফিরতে দেরি হবে !
  • বিশ্বজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। | 2409:40e0:103d:a98d:2c8e:f2a1:34c9:***:*** | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:১৬540303
  • কথায় বলে হাগা পেলে বাগার ডর থাকে না। কিন্তু দেখা গেল বাঘা পেলে হাগারও ভয় থাকে না। একেবারে ভাইস ভার্সা।
  • Nirmalya Nag | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৪২540329
  • দারুণ দারুণ 
  • swapan kumar mondal | ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:২৩540407
  • রঞ্জনদার লেখা সে পড়তেই হবে, একবার যে তার রস পেয়েছে সে না পড়ে থাকতে পারবে না। এই ঘটনাগুলো ওনার 'বাঙাল জীবনের চালচিত্র' বইতে বিক্ষিপ্ত ভাবে বোধহয় এসেছে। সাধারণ ঘটনা কি অসামান্য দক্ষতায় উপস্থাপন করা যায় ওনার লেখা পড়লে তা বোঝা যায়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন