এই সাইটটি 37,758,517 বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা

  • ছত্তিশগড়ের গেঁয়ো ব্যাংকঃ স্মৃতির কোলাজ ১৬

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ০৭ এপ্রিল ২০২৫ | ২৯৯ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  • ছত্তিশগড়ের গেঁয়ো ব্যাংকঃ স্মৃতির কোলাজ ১৬

    নারী তুমি বেদনা
    এক হাজার  চারশ' বছর আগে অপ্রতিম বৌদ্ধ দার্শনিক ধর্মকীর্তি একটি চৌপদীতে নারী সম্বন্ধে তাঁর উপলব্ধি লিখে গেছেন। উনি নারীকে দেখেই বুঝতে পারলেন যে ভগবান তথাগতের কথাটি পরম সত্য—এই বিশ্বের কোন স্রষ্টা নেই।
     
    সেকী? কোথায় নারী আর কোথায় ভগবান! গল্পটা কী?

    ধর্মকীর্তির সোজাসাপ্টা লজিক। আরে, ভগবান বলে কেউ যদি বিশ্বের সৃষ্টি করে থাকেন তাহলে নারীকেও তিনিই নির্মাণ করেছেন। কিন্তু সৃষ্টির পর নারীর দিকে তাকিয়ে দেখলে উনি কি তাকে ছেড়ে থাকতে পারতেন? অতএব কিউ ই ডি—বিশ্বের স্রষ্টা কোন ঈশ্বর নন[1]
     
    বেশ, গত শতাব্দীতে জর্মন কবি ব্রেখটের নাটকে ‘মা’ নাটকের এই কবিতাটির অংশবিশেষ শুনুনঃ
     
    “ওই তো দেখুন ফাঁসির আসামী দাঁড়িয়ে
    লোকটা তো যাবে জীবনের মায়া ছাড়িয়ে
    সামনে মরণ বাড়িয়ে চরণ থমকে
    তবুও তাহার বুকের রক্ত গমকে
    কারণ কী তার?
    --মেয়েমানুষ!”

    তাহলে গ্রামীণ ব্যাংকের গল্পগাছায় মেয়েদের কথা থাকবে না তা কি হতে পারে! এই পর্বটি হোক প্রমীলাদের জন্যে।

    হেজা বাঈ
    গোলগাল হাসিহাসি মুখের মাঝবয়েসি মহিলাটির গায়ের রঙ যে শ্রীপঞ্চমীর হলুদ বাটা লাগানো। ছুরি ব্র্যাঞ্চের আমি চার্জ নিয়েছি একমাস আগে। আমার দীক্ষাগুরু মিঃ বোস আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে তাঁর নিজের ব্যাংক স্টেট ব্যাংকে ফেরত গেছেন।  কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল।
    এমন সময় মহিলাটি এসে ‘জয় রাম সাহেব”! সম্বোধন করে বলল—“আপনিই নতুন ম্যানেজার? বেশ, আমাকে চিনে রাখুন, আমার নাম হেজা বাঈ। হেজা মানে জানেন তো বাঙালী মোশায়?—কলেরা! আমি যেখানে যেখানে যাই উস ইলাকে মেঁ হেজা ফ্যাল যাতে! সাবধান!
    কী  হল, ভয়  পেলেন নাকি”?
     
    আমার মুখ থেকে কথা বেরোয় না। নিজের নাম নিয়ে এমন কাষ্ঠ রসিকতা!

    --আরে না না।  আমি কারও ক্ষতি করি না। 
     আপনি নতুন, তাই একটু মজাক করলাম। আমার বাঁশের চুবড়ি, ঝাঁটা এসব বিক্রির ছোটখাটো দোকান। আগের সাহেব দশহাজার টাকা দিয়েছিলেন। আমি ঠিকঠাক পটিয়ে যাচ্ছি। আজ শেষ কিস্তি দিয়ে খাতা বন্ধ করে দেব। আগামী মাসে আমায় নতুন লোন দেবেন, একটু বাড়িয়ে—ধরুন পনের হাজার টাকা। আমাকে বিশেষ ধরণের বাঁশ বনদপ্তর থেকে কিনতে হয়। আজকাল দাম বেড়ে গেছে।
     
    ছত্তিশগড়ের  গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের নাম মাহাত্ম্য

    এক, জন্মবার অনুসারে।
     
    যেমন সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র ইত্যাদিতে জন্মালে নাম হবে যথাক্রমে—সমারিন বাঈ, মঙ্গলিন বাঈ, বুধবারিন, গুরুবারিন, শুকোবারিন, শনিচরিন, ইতোয়ারিন ইত্যাদি। অবশ্য ছেলেদের নামও সে হিসেবে সমানে পাল্লা দিয়ে সমারু, মঙ্গলু, বুধবারু, গুরুবারু, শুকবারু, শনিচররা, ইতোয়ারু ইত্যাদি।
    দুই,
      জন্মস্থান অনুসারেঃ
    যেমন, কসরেঙ্গা গ্রাম বা বিলাসপুর, রায়পুর, ভোপাল বা কোলকাতায় জন্মালে কসরেঙ্গিন বাঈ, বিলাসপুরিন বা রায়পুরিন বাঈ, তেমনি ভুপলহীন বা কলকত্তিন বাঈ। ছেলেরা হবে কসরেঙ্গিয়া, বিলাসপুরিয়া, রায়পুরিয়া বা ভুপলিহা, কলকতিহা ইত্যাদি।
    তিন,
      আগের সন্তানগুলো অকালে মারা গেলে ছেলেমেয়ের নাম রাখা হবে—মেহতরীন বাঈ (মেথরানী!), চামরিন, ইত্যাদি। উদ্দেশ্য যাতে যমের নজর না লাগে। অর্থাৎ মেথর, ঝাড়ুদার, চামার এরা হল নিঘিন্নে, যমের অরুচি। তাই এইসব নাম রেখে মেয়েদের কপালে কালোটিকা পরিয়ে দেয়া!
     
    একইভাবে ছেলেরাও ঝাড়ুরাম, মহেতর রাম, ঝাড়ু সিং, চামার সায়, চামার রায় ইত্যাদি হয়--সে
    উচ্চকুলে জন্মালেও।
    চার,  
    জাতিসূচক জেনেরিক নাম। তাতে অবশ্য ব্যক্তি পরিচয় স্পষ্ট হয় না।
    যেমন বামুনের ঘরের মেয়েবৌ- বামনীন। কৈবর্তের ঘরের হলে কেওটিন, কামারের ঘরের লুহারিন, তাঁতির ঘরের কোষ্টিন, শুঁড়ি ঘরের কলারিন। কায়স্থের ঘরের লালাঈন ইত্যাদি।
     
    আমার দেখা মেয়েরা
    এহ বাহ্য।
    মেয়েদের আকর্ষণ তাদের ব্যক্তিত্বে- রূপ অবশ্যই তার একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।  
     
    ধরুন, ছুরি সমেত চার চারটে গাঁয়ের খাটা পায়খানা সাফ করেন ধাঙড় পরিবারের এক স্বামী-স্ত্রী। 
    শুনলাম মেয়েটির স্মার্ট শাড়ি পরার ধরণ, কপালে কাঁচ পোকার টিপ, চুল বাঁধার কায়দা –সবই নাকি স্থানীয় মহকুমার পাঞ্জাবি থানেদার থেকে ছুরির হাতুড়ে ডাক্তারবাবু, এবং সরকারি স্কুলের টিচার সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে। কিন্তু বলে রাখা ভাল, সবারই আঙুর ফল টক কিসসা। 
     
    উনি একেবারে ‘মাই নেম ইজ শীলা’ গানের মুখড়ার মত ‘তেরে হাত ন আনী’! ওনার ‘মেরো তো গিরিধারী গোপাল, দুসরা ন কোঈ’ নিষ্ঠা। বাকি সব গুজব।
    ওনার রুচিসম্মত সাজপোশাক নিয়ে ভদ্রপরিবারের মহিলাদের ঈর্ষা মাখানো তিক্ত মন্তব্য কয়েকবার কানে এসেছে।
     
    আমার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হল মাত্র দু’বার, যদিও ফি সপ্তাহে ছ’দিন এসে উনি খাটা পায়খানার নীচের মাটির গামলা থেকে মালমশলা তাঁর ঝুড়িতে তুলে নিয়ে যাবার আগে সেটা ফিনাইল দিয়ে ধুয়ে রেখে দিতেন।   

    তখন বর্ষাকাল। উঠোন জুড়ে ব্যাঙের চাষ আর ভুট্টা গাছের চারা, ঘাস হাঁটু অব্দি বেড়ে উঠেছে। 
    উনি বিদ্রোহ করলেন। বললেন—আমি আপনাদের কাজ ছেড়ে দেব। কেন জানতে চান? এই ঘাসটাসগুলো মজুর ডেকে কাটিয়ে দিন, সাপখোপের আড্ডা হচ্ছে।
     সেই মাসে আমাদের পাঁচজনের মেসের দায়িত্বে ছিল আমার মারাঠি কলীগ। সে এক নম্বর কঞ্জুস, মক্ষীচুষ! গোদা বাংলায় বললে—ও শালা পিঁপড়ের পোঁদ টিপে চিনি বের করে খায়! সে তেরিয়া হয়ে বলল—ফালতু জ্ঞান দেবে না! কাজ কর, টাকা নিচ্ছ যখন।
     
    এঃ, পাক্কা মনুবাদী বামুন! কিন্তু তরুণীটি ভ্রূভঙ্গে অনেক টলিউডিকে লজ্জা দিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে বললেন—অগর সাঁপ কাটেগা তো তুম বঁচাওগে?
    --ওষূধপত্তর, ডাক্তার বদ্যি সব করিয়ে দেব, তবে বাঁচবে কিনা তার গ্যারান্টি নিতে পারছি না।
    আমি আর পারলাম না। মাঝখানে এসে বললাম—কাল সব পরিষ্কার করিয়ে দেব’খন। তুমি পরশু থেকে কাজে এসে যেও’খন।
     
    দ্বিতীয়বার একেবারে ‘এনকাউন্টার অফ দ্য থার্ড কাইন্ড'! 

    সেদিন ওই মনুবাদী ছিল পায়খানার ভেতরে, আমরা খেয়াল করি নি। শ্রীমতী এসে যেই নীচের থেকে মাটির গামলায় হাত দিয়েছেন অমনি তাঁর হাতের উপর একগাদা গরম গরম ইয়ে! ব্যস্‌, জ্বলে উঠল দেবীর তৃতীয় নয়ন আর মুখ থেকে বেরিয়ে এল অশ্লীল খিস্তি, কুকৃত্যের জন্য দায়ী যে মানবক তার বাপ-মা-চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে।
     
    আমি বন্ধুর হয়ে ক্ষমা চেয়ে বললাম –আর হবে না। এটা সিস্টেমিক ফল্ট, আমি কোর্স কারেকশন  করছি।

    ঠিক হল, যেই ভেতরে যাবে সে মগ সমেত একটা জলের বালতি পায়খানার সিঁড়ির উপরে রেখে ঢুকবে। আর শ্রীমতীকে দেখলেই আমরা সমবেত কন্ঠে হেমন্ত কুমার প্রয়োজিত মেহমুদ-বিশ্বজিতের ফিল্ম “বিবি অউর মকান” এর গান গাইব, আ গয়ী, আ গয়ী!
    সিগন্যাল পাওয়া মাত্র ভেতরে বসে থাকা প্রাণী মিনিটখানেক কুলকুণ্ডলিনী নিয়ন্ত্রণ করে দম ধরে থাকবে।
     
    কৃষ্ণসুন্দরী
    ছুরি গাঁয়ের জনতা ওর নামের দিয়েছে ‘ব্ল্যাক বিউটি”। আমরা পাঁচ অফিসার তখন স্টেট ব্যাংক থেকে ডেপুটেশনে আসা ম্যানেজার শ্রীবসু মহাশয়ের কাছে কাজ শিখছি (ওনার গল্প পরের কোন কিস্তিতে)।  যে বাড়িটায় মেস করে থাকতাম তার পেছনে ঠিক রাস্তার উপরে একটি উঁচু দাওয়াওলা মাটির বাড়িতে ওর নিবাস। প্রেম করে বিয়ে করেছে এক ধাপ উঁচু জাতের ছেলেকে। ফলে ওর শ্বশুরবাড়ির পরিবার এবং বিরাদরি ছেলেটাকে ত্যাজ্য করেছে। কোন বিয়েশাদি, ষষ্ঠী এবং শ্রাদ্ধে ওকে ডাকা হয় না।
     
    সন্তানহীনা কৃষ্ণসুন্দরী গাঁয়ের মহিলাদের ভজনমণ্ডলীর লীড সিঙ্গার। রাত এগারোটায় শুনশান গ্রাম; হঠাৎ শুনতাম ওদের সমবেত সঙ্গীতে ওর চড়া স্বর; গাইছে মুকেশের গান—“সুহানী চাঁদনী  রাতেঁ হমেঁ সোনে নহীঁ দেতে”!
     
    ওরে, আমাদের ঘুমুতে দে রে!
     
    আমি সহজে মেয়েদের সম্বন্ধে বাজারচালু গল্পগুলোকে পাত্তা দিই না। ওগুলো বেশিরভাগ সময় লোভী এবং হিংসুটে পুরুষদের বানানো। কিন্তু এক রোববার সন্ধ্যাবেলার ঘটনা আমাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিল।
     
    আমরা চারজন কোরবা নগরী থেকে সিনেমা দেখে বাস থেকে নেমেছি। দু’পা এগোতেই  একটা ভীড়। 
    সাপ্তাহিক হাট ফিরতি পুরুষদের একটা ব্যুহ, তার কেন্দ্রে কৃষ্ণসুন্দরী। আর তাকে জুতোপেটা করছে তার প্রেমিকপ্রবর, তার স্বামী! তার মুখে দেশি মদের গন্ধ, গলার স্বর জড়ানো। সে থেমে থেমে অভিযোগ করছে ‘বেবফা’ স্ত্রীর বিরুদ্ধে আর কষাচ্ছে দু’ঘা জুতোর বাড়ি। হাহাকার করে বলছে-- একটা রেন্ডির জন্যে আমি ঘর-পরিবার-বাপমা-ভাইবোন সব ছাড়লাম! ফের দু’ঘা!  

    মেয়েটি অসহায় বোবা চোখে চারদিক তাকাচ্ছে আর হাত তুলে মার ঠেকানোর চেষ্টা করছে। কেউ বাঁচাতে আসছে না। বরং পুরুষের দল রোমান অ্যাম্ফিথিয়েটারের দর্শদের মত উল্লাসে হুঃ হুঃ করে তোল্লাই দিচ্ছে আর চেঁচাচ্ছে— মার ডাল শালীকো, কাট ডাল রেন্ডি কো!
    আমি ব্যুহভেদ করে ঢুকে যাই – থামাতে চেষ্টা করি মাতাল স্বামীকে, বাকি সপ্ত মহারথী আমাকে ঘিরে ধরে। --আপনি বাইরের লোক, স্বামী বেচাল স্ত্রীকে শাস্তি দিচ্ছে, আপনি কেন নাক গলাচ্ছেন?  
    --আচ্ছা! তা স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক ফয়সালা ওদের ঘরের মধ্যে হবে, রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে কেন? আর আপনারাই বা এই পরিবারের কে?
     
    দুই মহারথী আমাকে ঠেলতে ঠেলতে ব্যুহের বাইরে নিয়ে আসে। তারপর নীচু এবং দৃঢ় উচ্চারণে বলে—আপনি বাইরের লোক, কয় বছরের জন্য এসেছেন, ফের বদলি হয়ে যাবেন। আমাদের গ্রামের রীতি-রেয়াজের মধ্যে নাই বা ঢুকলেন! যান, ঘরে যান।
     
    একটা বছর কেটে গেল। বোস স্যার স্টেট ব্যাংকে ফিরে গেছেন। আমাকেই ছুরি শাখার চার্জ বুঝিয়ে দিয়ে। সহকর্মীরা বিভিন্ন শাখার চার্জ পেয়েছে। দুজন নতুন স্টাফ এসেছে। আমার সঙ্গে মেস করে থাকে।
    রায়পুর থেকে একটা হিন্দু পাঞ্জাবী ছেলে এসেছে, পুলিস পরিবারের, বীরেন্দ্র সিং। সে একেবারে সর্বগুণসম্পন্ন। রাত্তিরে রাজ পরিবারের ডেরায় গিয়ে রামি খেলা, বোতল বোতল মহুয়া গেলা এবং সবাইকে মারপিটের ধমকি দেয়া।
    আমি কিছু বললে আমাকেই ফান্ডা দেয়—স্যার, এই চাকরি আমার টাইম পাস। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিয়েছি। নির্ঘাৎ ডিএসপি হব। তখন আমার রোয়াব দেখবেন, এ তো কিছুই না।

    সেদিন আমি সকালবেলায় বিছানায় বসে চা খেতে খেতে কোন বই পড়ছি,  স্নান করে অফিস যাওয়ার সময় এগিয়ে আসছে। চন্দন নামের ক্যাশিয়ার ছেলেটি এসে ফিসফিসিয়ে বলল—স্যার, বীরেন্দরজি ব্ল্যাক বিউটিকে নিয়ে এসেছে।
    --কোথায়?
    --আগে নিজের কামরায়, এখন রান্নাঘরে।
    --বাজে কথা! এসব ফালতু জোক বলে ডিস্টার্ব করিস না। বইটা এখন ক্লাইম্যাক্সে।
    --না স্যার, আপনি নিজের চোখে দেখবেন তো আসুন।

    রাগে হাড়পিত্তি জ্বলে গেল। কিন্তু আমি যে খালি গায়ে এবং জাঙ্গিয়া পরে বসে আছি! ব্যাচেলর্স ডেন! ঝটপট অফিস যাওয়ার শার্টপ্যান্ট হ্যাঙার থেকে নামিয়ে নিই। কৃষ্ণসুন্দরী একজন নারী বটেন!

    রান্নাঘরে গিয়ে দেখি সুন্দরী দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে দণ্ডায়মান। আর বীরেন্দর-- এক হাত দেয়ালে আর এক হাত ওর কাঁধে—হিন্দি সিনেমার পোস্টারের পোজে বিশ্রম্ভালাপে নিমগ্ন।
    --হোয়াট ননসেন্স বীরেন্দর!
    --হেঁ হেঁ হেঁ, আপনাকে কে খবর দিল? চন্দন? ওকে খুন করব।
    আমি সুন্দরীকে বলি-- এখানে কেন এসেছেন? যান, ঘরে যান।
    সন্নাটা! সন্নাটা!

    গলার স্বর চড়াই।
    --বীরেন্দরজির সঙ্গে কোন কাজ থাকলে ব্যাংকে আসুন, এখন যান।
    সে  আমাকে পাত্তা না দিয়ে বীরেন্দরের দিকে তাকায়। তার নীরব অভিব্যক্তি যেন—প্রভু, আপনার আমার মাঝে এই লোকটা কে? ওই চলে যাক, আমি কেন?

    এবার বীরেন্দরকে বলি—বিদেয় কর, শিগগির।
    --হেঁ হেঁ হেঁ। আচ্ছা তুমি এখন যাও, দেখছ সাহেব নারাজ হচ্ছেন।

    তিন দেবিয়াঁ
    মাঝে মাঝে এমন সব ঘটনা ঘটে যাকে দৈব যোগাযোগ ছাড়া কী বলব? যেমন আমার সহকর্মীর বিলাসপুরের বাড়িতে বসে দূরদর্শনের হিট সিরিয়াল ‘বুনিয়াদ’ দেখছি। টিভির সামনে ওর বাবা-মা -বৌ-বাচ্চা সবাই বসে।
    দেশভাগের দাঙ্গায় মাস্টারজী অলোকনাথের মাথা খারাপ হয়েছে। ছেলে একজন স্থানীয় মানসিক চিকিৎসককে কল দিয়েছে।
    আমার বন্ধুটি বলল—দেখে নিও ডাক্তার রঞ্জন রায় আসবে। এ ছাড়া পাগলের স্যাঙাৎ আর কে হবে? সবাই হেসে উঠল, বন্ধুপত্নী গুরুজনের সামনে মুখে আঁচল চাপা দিলেন।

    তখনই পর্দায় দেখা গেল একজন পাকাচুল কালোমত আধবুড়ো ডাক্তার ওষুধের বাক্স নিয়ে ঢুকছেন। তিনি অলোকনাথের নাড়ি ধরে বললেন—মেরা নাম রঞ্জন রায়, মনোচিকিৎসক।  
    সবার কথা বন্ধ হয়ে গেল।
     
    কিন্তু এই হতচ্ছাড়া রঞ্জনের ডেস্কে যদি একই দিনে তিন দেবীর আবির্ভাব ঘটে! কী হবে? আরে ভ্যাবাচাকা খেয়ে বর চাইতে ভুলে যাব, এর বেশি কিছু নয়।  
    তবে অঘটন আজও ঘটে!
     
    তখন হেড অফিসে প্ল্যানিং ও এস্টাব্লিশমেন্টের ডেস্ক সামলাচ্ছি। বেলা এগারোটা। একজন সুবেশা সুন্দরী মহিলা ঢুকলেন এবং সঙ্গী এক তরুণ।
    হলঘরে সবাই কাজ থামিয়ে ওনাকে দেখছে।
    কাকে চান?
    মিঃ রঞ্জন রায়কে। উনি কোথায় বসেন?

    গোটা হলঘরে চাপা হাসির হিল্লোল। হরিদাস পাল রঞ্জন রায়ের সঙ্গে এমন শহুরে আধুনিকা মহিলার ক্যা কাম? 
     
    উনি ভিলাইনগরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপে থাকেন, কিন্তু দেড়শ কিলোমিটার দূরে পৈতৃক গ্রামে আমাদের একটি শাখার অফিসঘরের মালকিন। ভাড়া বৃদ্ধির তদারক করতে এসেছেন। চা খাওয়াই, সঙ্গে বিস্কুট। ছেলেটির বুলেট মোটরবাইকের পেছনে বসে এতদূর এসেছেন!  
    অফিসে সহকর্মীদের চাপা ঈর্ষার ঈথার তরঙ্গ টের পাচ্ছি। সবকিছুর পরে শেষরক্ষা হল না।

    লীজ এগ্রিমেন্ট সাইন করার সময় ছেলেটিকে বললাম—কে আগে সাইন করবেন? আপনি, না আপনার বড়দি?
    --ধেৎ ! আমি ওর দিদি নই, মা!
     
    ওনার রোষকষায়িত লোচনে কোথাও কি একটু হাসি লুকিয়েছিল?
     
    উনি চলে গেলে ছেলের দল ঘিরে ধরল –সবাইকে কফি খাওয়াতে হবে। আমি গম্ভীর হবার চেষ্টা  করে বললাম—যার যার টেবিলে যা!

    দশটা মিনিট। একটা রিজার্ভ ব্যাংকের চিঠির নোটশীট বানানোয় মন দিই, গতকাল থেকে পেন্ডিং।

    অবাক কাণ্ড, একজন তন্বী চল্লিশ ছুঁই ছুঁই মহিলা, বলা নেই কওয়া নেই— হাসিমুখে সোজা আমার টেবিলেই এগিয়ে আসছেন!  

    কাছে এলে চিনতে পারলাম—পাঞ্জাবী ললনাটি আমার গিন্নির সঙ্গে ভোপালে এক কলেজে পড়েছেন। রায়পুরে পোস্টিং এর সময় পুনঃ দর্শন; সর্দারজি রেলওয়েতে কাজ করতেন।
    শরীরে ঢেউ তুলে আবদার করে বললেন—আজ আপনার ছাড়াছাড়ি নেই। আমাকে সঙ্গে করে আপনার বাড়ি নিয়ে চলুন।

    হলের সবাই প্রায় কালীদা! কালীদা গো! বলে হেসে লুটিয়ে পড়ে। আমি এই আচমকা বাউন্সার কোনমতে সামলাই।  
    --এখন? অনেক কাজ। আমার বাড়ি শহরের অন্য দিকে।
    --ওসব অনেক শুনেছি। আমি স্টেশন থেকে রিকশা নিয়ে এসেছি। ওতে আমরা পাশাপাশি বসে যাব। আপনার গিন্নি আমার সহেলি, কিছু মনে করবেন না।

    আচ্ছা ফাঁপরে পড়া গেল। নাঃ, কঠোর হতে হবে। কামাখ্যার ভেড়া হলে চলবে না। আমি চটপট বাইরে  গিয়ে অপেক্ষমাণ রিকশাকে আবশ্যক পথনির্দেশ দিই, আর মহিলার হাতে ঠিকানা লেখা একটুকরো কাগজ গুঁজে দিই। কোথাও অসুবিধে হলে--।
     
    ওনার মুখে মেঘ ঘনায়।
    আমি একরকম জোর করে ওনাকে রিকশায় বসিয়ে ফিরে আসি। তখন মোবাইলের দিন শুরু হয় নি।
    পরে জানতে পারি, ওঁর উচ্ছল হাসির পেছনে অনেক কান্না লুকিয়ে ছিল। ওঁর সর্দারজি অফিসে কোন অভিযোগে সাসপেন্ড হয়েছেন। দুটো বাচ্চা মেয়ে রয়েছে। আর্থিক এবং আইনি পরামর্শ চাই।
     
    এবার শুধু ছেলেরা নয়, মেয়ের দল এসে টেবিল ঘিরে দাঁড়ায়। রায়দাদা, আজ আপনার কপাল খুলে গেছে। ভগবান প্রসন্ন হয়েছেন। আপনার চেহারাতেই ফুটে উঠেছে। আনন্দটা আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিন। নীলুকে বলুন সবার জন্য কফি আর সিঙারা আনতে, বেশি না, এক পিস করে।  
    সেরেছে! মাসের শেষ। মাইনে পেতে আরও চারদিন।
     
    মনে মনে মাথা গুনতি করি। সতেরো পিস সিঙারা, আর সতেরো কাপ কফি! বন্ধুদের থেকে ধার নিতে হবে।
     
    লাঞ্চের সময় হয়ে এসেছে। সবাই ফাইল পত্তর গোছাচ্ছে। এমন সময় দরজার বাইরে স্কুটার রেখে মাথায় হেলমেট চাপিয়ে আরেক সুহাসিনী আমার টেবিলে আসছেন।
    আবার! এরকম ত্র্যহস্পর্শ যোগ!
    এবার সবাই হাসতে ভুলে গেল।

    মহিলা হেলমেট খুলে আমার টেবিলে রাখলেন। আমার এনজিও বন্ধু, দিল্লিবাসিনী স্বাবলম্বী নারী। আমাকে বললেন—আপনাদের এখনকার জি এম লোকটা মহা মেয়েবাজ! আমাকে ফোন করে বলল—রবিবারে রতনপুর লেকে পিকনিকে যেতে চাই কিনা!
    --আরে উনি স্টেট ব্যাংকের অফিসার! আপনি আর উনি দুজনেই পাঞ্জাবী, সেই সুবাদে বলে থাকবেন। একই বিরাদরী তো! একটু  ওভার রিঅ্যাক্ট ক্করছেন না তো?
    দিল্লিসুন্দরী চটিতং!
    --দেখুন রায়, সাপের হাঁচি বেদেয় চেনে। মেয়েরা ঠিক টের পায় কার চোখ কোন দিকে সেঁটে যায়। কার কী মতলব। লোকটা পাক্কা ইয়ে। আপনার অফিসের মেয়েদের কাছে একটু খোঁজ করে দেখবেন।
     
    আমি এখন অফিসের মহিলা সহকর্মীদের কাছে আমার বসের চরিত্তির নিয়ে গোয়েন্দাগিরি করব! পাগল না পদ্মফুল!

    তুমি কার! কে তোমার!
    অচিরাৎ প্রমাণ পাওয়া গেল। আমাদের চারজনের ডেস্কে দু’জন ক্লার্ক, একজন মহিলা। তিনি ডিভোর্সি বলে অনেকের মনে হয় সহজ শিকার। তাঁর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব নিয়ে কিছু অম্লমধুর গল্প হাওয়ায় ভেসে বেড়াতো, অল্পদিনে সেসবের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি হয়।
    দক্ষিণী মহিলাটি আমায় বললেন—জিএম আমাকে বলছেন সন্ধ্যেয় ট্রেনিং সেন্টারে যেতে। উনি আমাকে টেবল টেনিস শেখাবেন।
    --আর কী বলেছেন?
    -- বলেছেন ইউ নো, আয়াম ওনলি ৪৬!
    --তুমি কী বললে?
    --আমার কাছে সময় নেই। ঘরে গিয়ে হেঁসেল সামলাতে হয়।
    --গুড্‌! দেখ তুমি কার সঙ্গে প্রেম করবে অথবা আদৌ করবে কিনা সেটা তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু স্টেট ব্যাংক? নৈব নৈব চ! 
    ওঁরা ইংরেজ কলোনিয়ালিস্ট। আমরা শোষিত ভারতীয়। অগর উন কো ভাও দিয়া তো মুঝসে বুরা কোই ন হোগা। গদ্দারী করবে না।

    বরবর্ণিনী খিলখিলিয়ে হাসেন। বলেন—যাই করি, আপনার সঙ্গে প্রেম করব না।
    --আমার বয়ে গেছে! কিন্তু এবম্বিধ সিদ্ধান্তের কারণ?
    --আপনি বাঙালী।
    --মানে?
    --বাঙালী ছেলেরা না, শুনুন স্যার,  জিভি করে না। দাঁত মাজার পর ব্রাশ দিয়েই ঘসে নেয়। জিভ ছোলে না।
    --হুঁ, ক’টা বাঙালি ছেলের জিভের পরীক্ষা নিয়েছ?  

    মনে মনে সত্যিটা জানি।
     অন্যের কথা যাই হোক, আমি আজও জিভি করি না। ব্রাশ দিয়েই জিভ ঘষি। 
     
    কিন্তু পরের দিন জিএম স্যারের চেম্বারে হিন্দিতে সহজলভ্য দশ পয়েন্ট “গীতা সার” পোস্টার সেঁটে দিই। উনি দেবদ্বিজে শ্রদ্ধাবান, খুশি হয়ে বললেন—রায়, এটা ভালো করলেন।
    আমি স্কেচ পেন দিয়ে তারকা চিহ্নিত একটি উপদেশের দিকে ইশারা করি— স্যার, এটা সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট।
     
            “ যে আজ তোমার হয়েছে, সে কাল অন্যের ছিল। আগামী কাল আর কারও হবে। তাই দুঃখ কর না। আসক্তি দুঃখের মূল”।
                                                                         (চলবে)

    [1] সূত্রঃ হাজার বছরের প্রেমের কবিতাঃ সম্পাদনা অবন্তী সান্যাল, পৃঃ ৫৩.

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৭ এপ্রিল ২০২৫ | ২৯৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হীরেন সিংহরায় | ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৩০542180
  • চট করে দুটো কথা মনে পড়ল। বিহারে (বর্তমানে ঝাড়খন্ড) তিসরা কোলিয়ারিতে পেয়েছি শনিচরি, বুধবারি! মেয়েদের নাম।

    জার্মানে যে মিল চালায় তাকে বলে মুলার - গ্রাম‍্য ঢঙে তার বৌ হল মুলারিন, তাঁতীর বৌ ওয়েবারিন।

    ঘানায় সমস্ত ছেলেদের নাম হয় সপ্তাহের দিন দিয়ে যেমন শুক্রবারে জন্মে ছিলেন বলে কোফি আনান (ইউ এনের প্রাক্তন প্রধান) সোমবারে জন্মালে কোজো মঙ্গলবারে কোবে (আমেরিকার Kobe Bryant), বুধবারে কোয়েকু, বেসপতিবারে ইয় শনিবারে কোয়ামে (প্রথম প্রধান মন্ত্রী কোয়ামে এনকরুমা)। এগুলো বেশি প্রচলিত তবে সপ্তাহের দিনের নামের রকমফের আছে, উত্তর বা দক্ষিণ ঘানায়। তালিকা দীর্ঘ।গল্প আর না বাড়িয়ে বলি মেয়েদের ক্ষেত্রেও এটি চালু আছে। রবিবারে জন্মানো মেয়ের নাম লাহিড়ী হতে পারে (Lahore)। বারেনদর সাবধান!
  • Ranjan Roy | ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ০০:০০542182
  • দারুণ। হীরেনদা।
  • Moumita Roy | ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৫৪542209
  • angry
  • swapan kumar mondal | ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৪৩542247
  • দুই মহাজনের ( হীরেনদা ও রঞ্জনদা) থকে জানলাম দুর্বল বা শোষিত শ্রেণীর লোকজনের নাম দেশ,কাল, পাত্র মিত্র ভেদে সরবত্রই সমান ছিল। সম্রতি বোধহয় কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
    রঞ্জনদাকে বলি সামান্য বিষয় কি অসামান্যভাবে লেখা যায় আপনার লেখা পড়লে বোঝা যায়।
  • সমরেশ মুখার্জী | ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৪৩542249
  • মানবজাতির  মধ্যে নারী প্রজাতির প্র‍তি যে মোর আগ্ৰহ, অনুরাগ আছে তা হয়তো আমার কয়েকটি খেজুরে লেখায় প্র‍তিবিম্বিত হয়েছে, যেমন পরীদের বর, নেভা ধূপের সুবাস, অলীক উষ্ণতা, অবাক রামধনু... ইত্যাদি। তাই এই পর্বটি বেশ লাগলো। 
     
    হীরেনদা, 
     
    অন এ লাইটার নোট - তাহলে ম্যাক্সমুলার মানে কী যে বিরাট বড় কোনো মিল চালায়? 
  • হীরেন সিংহরায় | ১০ এপ্রিল ২০২৫ ১২:১৫542250
  • সমরেশ 
     
    আসল নাম ফ্রিডরিখ ম্যুলার , ২৫ বছর বয়েসে ব্রিটেনে আসেন,  সত্ত্বর নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন । তাঁর কাছে তখন ঐ  ম্যুলার পদবি নিতান্ত গেঁয়ো ঠেকে , পাসপোর্টে তিনি মাকস যোগ করে মাকস ম্যুলার হয়ে যান । মহারানি ভিক্টোরিয়ার আমলে নানান ইউরোপিয়ান আসা যাওয়া করেন তাঁদের ভাষা বা বার্থ সার্টিফিকেট খুঁটিয়ে দেখার মতো বিদ্যে বুদ্ধি সরকারি আমলাদের ছিল না তবু পাসপোর্টে লিখলেন ফ্রিডরিখ মাকস  ম্যুলার। মাকস এক্ষেত্রে মিডল নেম কিন্তু আমরা পরে এসেছি ম্যাক্সম্যুলার। এটি কোন প্রচলিত  জার্মান পদবি নয়, তাঁর ছেলে মেয়েরা মাকস  ম্যুলার লিখেছেন, জুড়ে নয় । 
     
    সকাল সকাল  চায়ের পরে ট্রিভিয়া ছাড়ার এমন দারুণ সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ !  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি 37,758,518 বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন