এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বাজম্-ই-শাহ্জাহানাবাদ

    লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ | ১০৮৭ বার পঠিত
  • লালকিল্লা, দেওয়ান-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস, জামা মসজিদ, চওরি বাজার, খারি বাওলি এই নামগুলোর সাথে পরিচয় সেই ক্লাস থ্রী ফোর থেকে| অর্ধেক শব্দের মানে বুঝি, অর্ধেক বুঝি না, কিন্তু শব্দগুলোর মধ্যে কী একটা আকর্ষণ আছে যা টেনে রাখে| আমার কল্পনায় আমাদের উঠোনের নারকেল গাছের নীচের নির্জন কোণা হয়ে যায় লাহোরি গেট আর নিতান্ত মধ্যবিত্ত বাড়ীর স্নানঘরটা একটাও আয়না না থাকা সত্ত্বেও হয়ে যায় শিশমহল| কিছু আত্মীয়স্বজন থাকতেন দিল্লীতে আরও কিছুজন যেতেন তাঁদের কাছে বেড়াতে আর এই যাওয়া আসার পরে পরেই শুনতাম এই নামগুলো আর সম্ভব অসম্ভব নানা গল্প| তা কল্পনার সেই লালকিল্লার সাথে আমার চাক্ষুষ পরিচয় হয় ক্লাস সেভেন নাগাদ; একদিনে দিল্লী ভ্রমণের ঝটিকাসফরে| ফরিদাবাদ থেকে সাত সক্কালে বেরিয়ে দিল্লী গিয়ে প্রথমেই যাওয়া হয় লালকিল্লা, গাইডেড ট্যুরে যতটুকু যা দেখার তা দেখতেই দলের অনেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েন --- "এই ফাঁকা ফাঁকা মস্ত মস্ত ঘর বারান্দায় দেখার আছেটা কী!" এবং তারপর জামা মসজিদ দেখা হয় না কারণ 'মসজিদের মইধ্যে আসেটা কী? অরার তো কুনো ঠাহুর দ্যাবতাও নাই যে দেখা যাইব, তো মসজিদ দেখনের কাম নাই, এই তো বাইর থেইক্যা দেখা যাইতাসে| বরং কালীবাড়ী গিয়া বসি একটু|" এর অনেক বছর পরে এই জায়গাগুলোর সাথে আমার অল্পস্বল্প চেনাশোনা হয়, যখন আমি দিল্লীতে থাকতে যাই বেশ কয়েক বছরের জন্য, ততদিনে অপছন্দের দলের সাথে গাইডেড ট্যুর নিতে বাধ্য হওয়া অন্য এক জন্মের গল্প হয়ে গেছে|

    ২০০৬ এর এক রোদ ঝলমলে শীতের দুপুরে সহকর্মী গোপাল এসে জানাল ও গত দুইরাত "বাজমঁমে বিতায়াঁ"| অ্যাঁ!! বলে কি রে লোকটা? বাজম্, মানে মেহফিল? রোজ অফিসে এসে আমাদের সাথে বসে কোবল কোড দ্যাখে, লেখে, আমাদের সাথেই আলুপরাঠা কিম্বা ছোলে বাটুরে খায়, সে কিনা দুই রাত মেহফিলে কাটিয়ে এল! গোপাল ভেঙে বলে হ্যাঁ মেহফিলই বটে, চাঁদনি চওকে 'বাজম্-ই-শাহজাহানাবাদ' নামে একটা উর্দু শায়েরীর সারারাত্রিব্যপী আসরের নাকি আয়োজন করে কারা যেন| ওর এক পরিচিত উর্দুভাষী অধ্যাপকের দৌলতে গোপালও সেখানে নিমন্ত্রিত ছিল| গোপালই জানায় বাজম্ শবের অর্থ শুধুই মেহফিল বা নাচগান, শায়েরীর আসর নয়, যে কোনোরকম সোশ্যাল গ্যাদারিংকেই “বাজম্” বলা যায়| প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক হয়ে যায় পরের শনিবার আমাদের টীমের জনা সাত আট মিলে আমরা পুরানা দিল্লীর চাঁদনি চওক অঞ্চলে যাব আমাদের নিজস্ব বাজম্-ই-শাহজাহানাবাদ জমাতে| দুপুর নাগাদ যাওয়া হবে, ঘুরে বেড়ানো হবে মূলত জামা মসজিদ, চাঁদনি চওক, পরাঠেওয়াল্লে গলি এলাকায়| করিমস'এ দুপুরের খাওয়াটা হবেই সেটা স্থির, এছাড়া যখন যেমন খিদে পাবে বা খেতে ইচ্ছে হবে, তক্ষুণি সেখানে খেয়ে নেওয়া হবে| অথেন্টিক মোগলাই খাবারদাবারের অজস্র দোকান ঐ অঞ্চলে কাজেই অসুবিধে নেই কোনও|

    শাহজাহানাবাদ তৈরী হয়েছিল ১৬৪০ নাগাদ, আগ্রাদুর্গে তীব্র গরম ও স্থানাভাবে মুঘল সম্রাট শাহজাহান স্থির করেন রাজধানী দিল্লীতে স্থানান্তরিত করবেন আর তখনই গড়ে ওঠে যমুনার তীরে প্রায় গোলাকৃতি উঁচু পাঁচিলঘেরা শহর শাহজাহানাবাদ| শাহজাহান এই শহরে পাকাপাকিভাবে চলে আসেন ৮-ই এপ্রিল ১৬৪৮ খ্রীস্টাব্দ| লালকিল্লা ও তার ভেতরের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ী তৈরী করতে আনুমানিক ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৬০ লক্ষ তঙ্কার মত| জামা মসজিদ তৈরীর খরচ প্রায় দশ লক্ষ তঙ্কা| শাহজাহানের প্রিয় কন্যা জাহানা-আরা বেগমের বানানো নকশা অনুযায়ী লালকিল্লার লাহোরি গেট থেকে শুরু হয়ে অপর প্রান্তের্ ফতেপুরী মসজিদ পর্যন্ত বর্গক্ষেত্রাকৃতি বাজার চাঁদনি চওক তৈরী হয়, যার ঠিক মাঝখানে একটি তালাও বা জলাশয়| চাঁদনিরাতে তালাওয়ের জলে প্রতিফলিত চাঁদ নাকি অপূর্ব্ব মায়াজাল সৃষ্টি করত| চাঁদনি চওক গড়ে ওঠে পাইকারি বাজার বা ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে, আজও এটি শহরের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাকেন্দ্র| মুঘল আমলে দোকানগুলি ছিল অর্ধচ্ন্দ্রাকারে সাজানো যা পরবর্তী সময়ে অপরিকল্পিত নির্মাণের ফলে আজ আর দেখা যায় না| ঐ তালাওয়ের জায়গায় ১৮৭০ নাগাদ তৈরী হয় ঘন্টাঘর (নর্থব্রুক ক্লকটাওয়ার), যার শীর্ষে ১৯৪৭ সালের ১৫-ই আগস্ট ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করে স্বাধীন ভারতের আত্মপ্রকাশ ঘটে| এখানে বিভিন্ন ধর্মের ধর্মস্থানও অনেকগুলো| সবচেয়ে বড় ও উল্লেখযোগ্য অবশ্যই মুসলমানদের জামা মসজিদ| এরপর আছে জৈনদের শ্রী দিগম্বর জৈন লালমন্দির, হিন্দুদের গৌরীশঙ্কর মন্দির ও শ্রী শিব নবগ্রহ মন্দিরধাম, ক্রীস্টানদের সেন্ট্রাল ব্যপটিস্ট চার্চ, শিখদের সিসগঞ্জ সাহিব গুরুদ্বোয়ার এবং আরও দুটো মসজিদ, সুনহেরি মসজিদ ও ফতেপুরী মসজিদ| কথিত আছে ১৭৩৯ সালের ১১-ই মার্চ এই সুনহেরি মসজিদের ছাদে দাঁড়িয়েই নাদির শাহ্ ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে 'কতল-ই-আম' (দেখামাত্রই কোতল) পর্যবেক্ষণ করেন| আনুমানিক ৩০ হাজারের মত লোক ঐ একইদিনে কোতল হয়|

    তো, যেমন ঠিক হয়েছিল সেইমতই আমরা বিভিন্ন থেকে এসে জমা হলাম লালকিল্লার সামনে| সর্বসম্মতিক্রমে লালকিল্লাটা কাটিয়ে দিয়ে হাঁটা শুরু হল| চাঁদনি চওক প্রথমবার ভাল করে দেখে খানিক বিরক্তই লেগেছিল| এ যেন এক মহা ক্যাওস, অজস্র অজস্র দোকান, রাস্তায় উপচে পড়েছে পশরা, তার মধ্যেই লোকজন চলছে, সাইকেল রিকশা আটোও চলছে যে যার মত| আবার তারই মধ্যে দুই তিনজন রাস্তার যে কোনও জায়গায় দাঁড়িয়ে আড্ডা মারছে কিম্বা কোনও গম্ভীর আলোচনা করছে| কোথাও বা নির্বিকার একটা ষাঁড় দাঁড়িয়ে আছে আর ততোধিক নির্বিকার মানুষজন তাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে| খানিক হাঁটার পরে অবশ্য বুঝলাম যে এখানে হাঁটার সময় অটো, সাইকেল রিকশা বা অন্য মানুষজন কাউকেই খুব একটা পরোয়া করার দরকার নেই, নিজের মত হেঁটে গেলে আশপাশ তার সাথে মানিয়ে নেয়| অবশ্য দোকানদারদের ডাকাডাকি চলতেই থাকে, বরং নিজের রেলায় চলতে থাকলে ডাকাডাকির জোর আরও বাড়ে, তায় আবার আমরা ৯ জনের এক দল| সে যাহোক দিগম্বর জৈন মন্দির, গৌরীশঙ্কর মন্দির ইত্যাদি পেরিয়ে গিয়ে একেবারে চাঁদনি চওক আর দরিবা কালান রোডের কোণায় 'জলেবিওয়ালা'র দোকানে গিয়ে থামা| শতাব্দীপ্রাচীন দোকানের মুচমুচে গরম জিলিপী খেয়ে টুক করে দরিবা কালান রোডের জুয়েলারি মার্কেটে ঢুকে পড়া গেল| অজস্র ছোটবড় রূপোর গয়নার দোকান, অল্পকিছু স্বর্ণালঙ্কারও আছে আর আছে বিভিন্ন ধরণের পাথর আর কস্টিউম জুয়েলারি| খানিক এগিয়ে যাওয়া গেল পরাঠেওয়াল্লে গলিতেও| কত যে বিচিত্র জিনিষের পরাঠা ওরফে পরোটা হতে পারে তা এখানে না এলে বিশ্বাস করতাম কিনা সন্দেহ| যে দুই রকম পরোটা সত্যিই দুর্দান্ত লাগল তার একটা পাঁপড় কা পরাঠা আর অন্যটা রাবড়ি পরাঠা| আজ পর্যন্ত আর কোথাও অত ভাল রাবড়ি পরাঠা খাই নি|

    খাবার দাবারের কথা হচ্ছে যখ্ন ত্খন আরেকটু বিশদে বলা যাক বরং| ফতেপুরী মসজিদের কাছেই 'জিয়ানি দি হত্তি'র কথা না বললে ভীষণ পাপ হবে| এদের বিশেষত্ব হল রাবড়ি-ফালুদা আর শীতের দিনে দাল-হালওয়া| মিষ্টিছাড়া দুধের রাবড়ি, গুঁড়ো চিনি অথবা সুইটনার, গুঁড়ো বরফ আর ফালুদা একসাথে মিশিয়ে গ্লাসে ঢেলে একটা পাতলা ফিরফিরে প্ল্যাস্টিকের স্বচ্ছ চামচ দিয়ে ধরিয়ে দেয় রাবড়ি-ফালুদা| খাঁটি দুধের রাবড়ির সুগন্ধ আর ফালুদার টেক্সচার যখন জিভে পড়ে, সে এক অবিস্মরণীয় অনুভুতি| দাল-হালওয়া স্রেফ শীতের দিনে পাওয়া যায়| মস্ত বড় থালায় ছড়ানো ঘী চপোঅচপে হালওয়া আর তার ওপরে আমন্ড পেস্তা কাজুর একটা পুরু স্তর| থালার একপাশ দিয়ে কমলাচে সোনালী রঙের হালওয়া খানিক দেখা যায় আর বাকীটা সম্পূর্ণ ঢাকা ঐ ড্রাইফ্রুটসের স্তরের নীচে| এটি পরিবেশনের তরিকা হল একটা প্লেটে প্রথমে এক খাবলা হালওয়া নিয়ে তার ওপরে খানিক ড্রাই ফ্রুটস দিয়ে তারওপরে খানিকটা অর্ধতরল ঘী (যেটা থালার ধারের দিকে গড়িয়ে এসে জমা হয়ে থাকে) দিয়ে খুব হালকাহাতে মিশিয়ে প্লেটটা খদ্দেরকে ধরিয়ে দেওয়া| আহা খাঁটি ঘীয়ের গন্ধে মৌ মৌ সেই হালওয়া যে একবার অন্তত না খেয়েছে তার চাঁদনি চকে যাওয়াই বৃথা| ফতেপুরী মসজিদের কাছেই দুশো বছরের পুরানো আরেকটি দোকান চায়নারাম সিন্ধি হালওয়াই| এদের করাচী হালওয়া অতীব সুখাদ্য| এই করাচী হালওয়া পশ্চিমবঙ্গের কোনও কোনও বিয়েবাড়ীতে 'বোম্বাই হালুয়া' নামে খেয়েছি কমলা সবুজ লাল ইত্যাদি রঙের একধরণের জেলিগোছের খেতে কিছুটা স্পঞ্জি টেক্সচার -- অখাদ্যগোছের একটা ব্যপার| সেই অভিজ্ঞতার্ফলে চেহারা দেখে করাচী হালওয়া মুখে তুলতে চাই নি প্রথমে| কিন্তু সকলের আহাউহু দেখে একটা মুখে দিয়ে দেখি কোথায় বা সেই স্পঞ্জিভাব আর কোথায় বা সেই কিটকিটে মিষ্টি! হালকা মিষ্টিস্বাদের নরম হালওয়া, মুখে দিলে জিভের চাপেই ভাঙতে থাকে| মিষ্টি ছেড়ে একটু অন্যদিকে গেলে করিমসের কথা তো নতুন করে বলার কিছু নেই| শুধু এইটুকু বলে রাখি যে গুরগাঁও বা নিজামুদ্দিনের করিমসে খাওয়ার অভিজ্ঞতার থেকে এখানকার করিমসের অভিজ্ঞতা একেবারে আলাদা| ঐ রাস্তার ওপরে উনুনে ছুঁড়ে ছুঁড়ে বানানো ঈষৎ মিষ্টিস্বাদের নান, যা মুখে দিলেই মিলিয়ে যেতে চায় আর ঐ মস্ত মস্ত হাঁড়িতে রান্না হওয়া ঘী চপচপে  বিরিয়ানি কিম্বা মাটন ব্যুরা অথবা মাটন রান, শিককেবাব একবার অন্তত খেতেই হয়|

    জিয়ানির রাবড়ি-ফালুদা (নেট থেকে পাওয়া ছবি)

    শেষ যে অংশটার কথা না বললেই নয় সে হল খারি বাওলি, মূলত মশলার বাজার| ফতেপুরী মসজিদের গা লাগা রাস্তাটা, চাঁদনি চওকের পশ্চিমপ্রান্তে এশিয়ার সবচেয়ে বড় মশলা আর ড্রাইফ্রুটসের মার্কেট এই খারি বাওলি| বাওলি অর্থাৎ ধাপে ধাপে নেমে যাওয়া ছোট জলাশয় আর খারি বা খারা অর্থৎ নোনতা| শাহজাহানাবাদ গড়ে ওঠার আগে এখানে নোনতা জলের একটি জলাশয় ছিল মূলতঃ পালিত পশুকে স্নান করানো বা জল খাওয়ানোর জন্য ব্যবহৃত হত| ১৬৫০ নাগাদ এইখানে গড়ে ওঠে মশলার পাইকারি বাজার যা এখনও রমরম করে চলছে| এই রাস্তায় পা দেওয়ামাত্র দোকানীরা সরবে জানালেন এখানে নাকি সারা পৃথিবীর সব রকমের মশলা ও শুকনো ফল পাওয়া যায়| মশলা ছাড়াও এখানে কিছু সবজীর দোকানও আছে আর আছে বেশ কিছু দুগ্ধজাত দ্রব্যের দোকান| মাওয়া, ঘী, মাখন, পনির বিক্রী হচ্ছে| তাই বলে জায়গাটা ছানার জলে একাকার হয়ে নেই, খুব পরিস্কার নয় বটে তবে জলে জলাক্কারও নয়| এখানেই এক দোকানে খেলাম 'দৌলত-কা-চাট'| নামে চাট হলে কি হবে পাপড়ি চাট বা অন্যান্য চাটগোত্রের জিনিষ নয় এ| মটকি বা ঘট আকৃতির মাটির ভাঁড়ে ঈষদুষ্ণ আধাঘন দুধক্রীম আর তাতে সরু করে কাটা পেস্তা আমন্ড কাজু কিশমিশ, অল্প মাওয়া, জাফরান মেশানো| রূপোলী তবক দেওয়া অদ্ভুত অন্যরকম স্বাদের এক স্বর্গীয় খাদ্য| এও শীতের দিন ছাড়া মেলে না| ১২ টাকায় এক প্লেট অমৃত| খারি বাওলির অন্য প্রান্ত জুড়ে আছে দিল্লীর লালবাতি এলাকা আর সদর বাজার| অসম্ভব বর্ণময় জায়গা এই খারি বাওলি, বিভিন্নরকম মশলা আর শুকনো ফলের রঙে ঝলমল করে আর এক অদ্ভুত গাঢ় সুগন্ধে ছেয়ে থাকে| প্রায় ২৫ বছর বাদে এখানেই দেখলাম রিঠাফল|ছোটবেলায় মাথা ঘষবার আগের রাতে রিঠা ভিজিয়ে রাখা হত, পরেরদিন সকালে ফলগুলি কচলে কচলে নির্যাস বের করে নির্যাসমেশানো সেই জলটা ভাল করে ছেঁকে নিয়ে তাই দিয়ে মাথা ঘষা হত| এ ছিল শ্যাম্পুর স্যাশে বাজারে আসার আগের গল্প| এত ঝকমারির কারণেই তখন মাসে একবারের বেশী মথা ঘষা প্রায় হতই না, মাঝে বিয়েবাড়ী না থাকলে| এতদিন বাদে সেই রিঠাফল দেখে সেইসব দিনগুলো আবার হইহই করে মনে পড়ে গেল|
     

    দৌলত কা চাট - ফোটো ইন্সটায় লিভিং বাইটসের 

    আমাদের নিজস্ব বাজম্ শেষ হওয়ার আগে আমরা একবার যাই তুর্কমান গেটে| এই সেই অতি কুখ্যাত এলাকা যেখান থেকে উচ্ছেদ করতে গিয়ে সঞ্জয় গান্ধীর পুলিশ ১৯৭৬ এ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য লোক মারে| শোনা যায় সঞ্জয় গান্ধী নাকি তুর্কমান গেট থেকে কোনও বাধা ছাড়া সোজাসুজি জামা মসজিদ দেখতে চেয়েছিলেন আর তাই পুলিশ নামে 'অবৈধ বসবাসকারী'দের উচ্ছেদ করতে| দীর্ঘকাল মিউনিসিপাল ট্যাক্স দেওয়া, বৈধ কাগজপত্রওয়ালা লোকজনদের ঘরবাড়ী যখন বুলডোজারের নীচে গুঁড়িয়ে যেতে থাকে তখন ক্ষেপে ওঠে জনতা, লাঠিসোঁটা পাথর যে যা পারে তাই নিয়ে প্রতিরোধ করতে নামে আর তখনই এলাকার সমস্ত ইলেকট্রিক ও টেলিফোন কানেকশান বিযুক্ত করে বড় বড় ফ্লাডলাইট জ্বেলে পুলিশ প্রথমে নির্বিচারে গুলি চালায় পরে নির্বিচারে গুঁড়িয়ে দেয় সমস্ত সেটেলমেন্ট| সম্পূর্ণ হারিয়ে গেছে কত লোক, পরিবার, মুছে গেছে সঞ্জয় গান্ধীও, শাহজাহনাবাদের জীবন কিন্তু বহমান, সাড়ে তিনশো বছর ধরে অনেক ওঠাপড়ার সাক্ষী থেকে একই রকমভাবে বয়ে চলেছে শাহজাহনাবাদের প্রাণস্পন্দন|

    # লেখাটির সংক্ষিপ্ত অংশ 'এই সময়' পত্রিকার রবিবারোতারি'তে ৬-ই ডিসেম্বার প্রকাশিত
    গোপালের মোবাইলে তোলা কয়েকটা ছবি















    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ | ১০৮৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Abhyu | unkwn.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৯69508
  • খুব সুন্দর
  • হুম্ | unkwn.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৫69509
  • ভালোই, তবে একটু নীরস বর্ণনা লাগল। একটু প্যারাগ্রাফ ব্রেকিং দিলেই ছন্দ এসে যেত। একটানা পড়তে গিয়ে কেমন দমবন্ধ হয়ে আসছিল।
  • hu | unkwn.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:১১69510
  • লেখাটির আসল অংশই তো এই সময় থেকে বাদ পড়েছে দেখছি!

    যাই হোক, যেটা বলার ছিল - এই হালওয়া জিনিসটা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি হলেও মোক্ষ লাভ করেছে ভারতে এসে। টিমের ইরানী বন্ধুর সাজেশানে ইরানী হালওয়া খেয়েছি। সে বড় শক্ত আর কিটকিটে মিষ্টি। আর তুরস্কে গিয়ে সুজির হালওয়া খেলাম কেমন পানসে মত। আমাদের মোহনভোগের পাশে দাঁড়াতেই পারবে না। ভারতের তেল-ঘি-দুধ-মাখন-ছানা খেয়ে এদের সবার স্বাদ খুলেছে।
  • শ্রী সদা | unkwn.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:৩৫69511
  • বেশ ভালো লাগলো।
    যা বুঝলাম, একটা দিল্লী ট্রিপ করতে হবে জাস্ট খাওয়াদাওয়ার জন্যে ঃ)
  • b | unkwn.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৫:৩৪69512
  • বাল্লিমারান। সেখানে আমার কিছু বন্ধু গিয়ে খেয়ে এসেছিলো একটা গেস্টহাউসে, যেখানে নাকি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আফগান ব্যবসায়ীরা এসে থাকে। যা অর্ডার করে সবকিছুর সাথেই নান কমপ্লিমেন্টারী।

    এখানে কাবলিদার কিছু কমেন্ট আশা করছি। উনি নাকি বড় হয়েছেন "তিন, জামা মসজিদ" এই ঠিকানায়।
  • | unkwn.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৬:৪৫69513
  • বেশ লাগলো, যদিও আমি হালওয়া রসে বঞ্চিতঃ)
  • ranjan roy | unkwn.***.*** | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:২৫69515
  • দুই দশকের দিল্লির বাসিন্দা এবং দিল্লিতে স্থায়ী বসবাস করনেওয়ালা সিকি এবার দিল্লির বিভিন্ন খাবার ও তার দোকানের ওপরে একটা লেখা নামিয়ে ফেলুক।
    ও সিকি!
    আর সঙ্গে যদি কুমু/ফরিদা/রাজদীপ ধরতাই দেয় তো সোনায় সোহাগা।
    আমার অনুভূতি যে দিল্লি একটা অসব্যের মত খাবার জায়গা। ভ্যারাইটিতে কোলকাতাকে দশ গোল দেবে।
    ভয়ে ভয়ে বল্লাম।
  • ন্যাঃ | unkwn.***.*** | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৪১69516
  • কলকাতায় খাবারের গল্পটা অন্যরকম, দিল্লিতে একেবারে অন্যরকম। কেউ কারুকে গোল দেবার পজিশনে নেই।
  • de | unkwn.***.*** | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৮:৪৫69514
  • আহা! কি ভালো সব খাবারদাবার!
  • Blank | unkwn.***.*** | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৮:১৩69517
  • এইবারে খাবো সব কটা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন