জলছবি
বনের ধারে রাখালি দোচালাখানি,
বড় নিজের মনে হয়
বুনোলতা, বুনোলতানো ফুল গাছ উঠে গেছে চালার উপরে
নিদাঘের ভিতর এই ছায়াকুঞ্জ
এই-ই তুমি—
অনেক বছর আগে নবদ্বীপ, হোলির দিন
তোমাকে আর পাব না কোনোদিন
অতসী
সঞ্জিত প্রায়ই বলতো অতসীর কথা। যাদবপুরে সঞ্জিত ওর দিদার বাড়ি গেলেই ছাদ থেকে প্রথমে ইশারায়, তারপর দুই বাড়ির মুখোমুখি সিঁড়িঘরের জানালা দিয়ে, শেষে বাড়ির পাশে বিদ্যাসাগর শিশু উদ্যানে কথা হত ওদের দুজনের। এরপর পুজোর সময় একসাথে ঠাকুর দেখতে বেরুনো, অষ্টমীর অঞ্জলি, গড়ের মাঠে বইমেলা, ভিড় থেকে দূরে সরে গিয়ে হাত ধরাধরি করে সূর্যাস্ত, সব কিছু হতে থাকল। সঞ্জিত ছিল খুবই সুদর্শন, স্মার্ট। অতসীর কথা যখন শুনতাম সঞ্জিতের মুখে, মনে আছে অতসীকে স্পষ্ট দেখতে পেতাম আমি। ওর গা থেকে ভ্যানিলা আইসক্রিমের গন্ধ বেরত। একদিন তো পার্কের ভিতর ফুলগাছ ভেবে একঝাঁক প্রজাপতি এসে ঘিরে ধরল ওকে। আর ব্যাপারটা একদম স্বাভাবিক, ঠিক এভাবেই অতসী কথা বলে যেতে লাগল। অনেক বছর পর জানতে পারি, নাম বদলে বদলে এরকম আরও অনেকেরই গল্প করতো সঞ্জিত বন্ধুদের কাছে। এদের একজনকেও কেউ কখনো কোনোদিন সঞ্জিতের সঙ্গে দ্যাখেনি।
গতবছর সঞ্জিত মারা গেল অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে।
অতসী আজও বেঁচে আছে ওর ভ্যানিলা গন্ধের উপর কয়েকটা প্রজাপতি ওড়া নিয়ে।
আমি মরে গেলেও কী অতসী বেঁচে থাকবে?
ভাষা
সিডনি সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে বেরোবার মুখে, সাবওয়েতে এক টুকরো (সেলফোনে: “পাঁচটার মধ্যে চলে আসছি”) বাংলা ভাষা শুনতে পাই।
আশ্চর্য! ভাষার এই ছিটকে আসা টুকরোটিকে আমার বাংলা ভাষার ভগ্নাংশ মনে হয় না।
বাংলাভাষাই মনে হয়—
মনে হয় মিশ্র মাধ্যমে আঁকা বনগাঁ লোকাল
ধানক্ষেতে আলের উপর হলুদ চুড়িদার পরা কিশোরী
এত দূরে চলে গেছ তুমি
যেন সুদূর জুঁইফুলের গন্ধের মতো কোনো এক গান মনে পড়ে
যেন গানের কথা কিছুতেই মনে পড়ে না আর