দূরের জানালা দিয়ে যে মেয়েটিকে দেখা যায়, তার মন
যাইনি কখনো ও বাড়িতে
চানঘরে দেখিনি কখনো জল পড়ে যায়—
অথচ শরীর ভেজেনি একটুও
শুনিনি রবি ঠাকুরের গান বসবার ঘরে বসে
শুধু দেখেছি সিঁড়ি ঘরে আলো—
সিঁড়ি চলে গেছে
উড়ন্ত পর্দা সরিয়ে
ঘরের ভিতর
আমি
আর হিমরাত শুধু
অন্ধকারে চোরের মতো দাঁড়িয়ে থেকেছি
তোমার সুগন্ধের পাশে।
অপমান
ঢোক গিলে ফেলি—
তবু সহজ হয় না কিছু
ঘরের ভিতর যে আলো জ্বলে
তাকে আনন্দ বলা যায় না কিছুতেই
বড়জোর অকরুণ বলা চলে—
অথচ রাত্রি মানে তো এমন একটা দিন
যার সূর্য চলে গেছে মাথা নিচু করে—
হয়তো বোনের বিয়ে, টাকা যোগাড় হয়নি
এসবের ভিতরই আমি প্রাণবৈচিত্র্যের মানচিত্রখানি খুলে দেখি—
আমি ও বাগানের পেয়ারা গাছটি
অবিকল একই জিন ব্যবহার করে
ভেঙে ফেলছি
সকল মৌলিক ও সরল শর্করাগুলি—
তবু—তবু সহজ হচ্ছে না কিছুই...
অতিকথন
যতটুকু নষ্ট করেছি, তার সবটুকু ধ্বংস হয়নি এখনো।
বিগ্রহের মতো দেখি তোমাদের ভালো সময়—
রমাদি’র বাচ্চা হল, রমণদা’র দোকান
বিশ্বাসদের শরীকী ঝামেলা মিটে এখন আমে-দুধে
অম্বরীশবাবুরা রাজারহাটে ফ্ল্যাট পেয়ে গেলেন—
আর ভৌতধর্মে আমার শরীরে আরো মেদ জমে যায়।
আমার অধঃপতন ছিল জলের মতন সহজ সরল—
দেখেছি টাইমকলে মেয়েদের ভিড়—
তাদের জল্পনা, পরিমিতি বোধ, কাণ্ডজ্ঞান।
জানা গেলো বহু— প্রিয়া মেহতার (স্টার প্লাস)
আগের পক্ষের স্বামী হসপিটালে, দাসবাবু ঘুসের টাকায়
অল্টো কিনেছেন, হাবুর অবিবাহিত দিদি গর্ভবতী...
আর হুঁশ থাকে না, বালতি বোতল ডিব্বা
উপচে পড়তে থাকে জল
মিশে যায় নোংরা জলে, তবু জল পড়তেই থাকে...
ওই উপচে পড়া, ওই অব্যবহারটুকু আমি।
হাবুর দিদির মতো কোনোদিন বোবা হয়ে যাব।
ইউথ্যানেসিয়া
ভেবেছিলাম হাঁটতে বেরিয়ে সকালে
ভাঙ্গা দুর্গ হতে ফেরবার পথে, হারিয়ে ফেলব পথ
তবে কেন আজ অন্যরকম পথ—
গির্জার মিলনায়তনে মোমদানের মতো ভারি ও কালচে
আতরদানের মতো সুরভিত, আমাকে ডাকে?
যেন অদৃশ্য হবার আগে বুনো আদা ও বনতুলসীর ঝোপ হতে
তক্ষক-লাঙ্গুল এক, গোশালার ছাদে, সংযুক্ত জামের ডালে
চলে গিয়ে আমাকে জানালো
আসা ও যাওয়ার পথ এক নয় গো
কিছু জটিলতা, সামান্য আতান্তর আছে।
আমি তাই অচেনাকে ডেকে বলি, ভাই, যত্ন নিও।
এই দুরারোগ্য আত্মা তোমাকে দেবার আগে—
শিরার ভিতর অর্ধদগ্ধ ডানা আর সুতীক্ষ্ণ নখর নিয়ে
যে পাখিটি ক্লান্ত, তাকে এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দেবার আগে—
স্নায়ুগুলি যেন শিথিল ও শান্ত করে নিতে পারি—
সন্ধ্যাতারা, অনিবার ভিক্ষাপাত্র হাতে করে, শুধু এইটুকু প্রার্থনা করি।