
প্রথমেই বলি এ লেখা খুব সামান্য লেখা। তাড়া হুড়োর লেখা। ফেসবুক পোস্টের চেয়ে সামান্য বড় কিন্তু নিবন্ধের চেয়ে অনেক বেশি অগোছাল আর তরল। তবু এই দু-চারদিনে যেটুকু লিখে উঠতে পারলাম। অবিশ্বাস্য ফাঁকা ভাবের ভেতরেও।
পুরোনো একটি ছবিতে দেখছি শরৎকুমার পুরোপুরি কর্পোরেট বেশে। যে সময়ের ছবি, সে সময়ে কবি বললেই মনে আসে ধুতি ও শার্ট, ধুতি ও পাঞ্জাবি, ধুতি ও ফতুয়া। পাজামা পাঞ্জাবি। শরৎ সেখানে বিপ্রতীপ, স্মার্ট, পাশ্চাত্য পোশাকে অনায়াস।
আমরা এও জেনেছি তখন, ততদিনে, যে, শরৎকুমার সওদাগরি আপিসের চাকুরে। অফিসার। তখন বাতাসে ভাসে যে যে পেশার কথা, তথাকথিতও সাহিত্যিক, কবির, তা ছিল মান্য অধ্যাপক বা শিক্ষকের পেশা। সেখানেও তিনি অপ্রতিম, অতুলনীয়।
আজকের শরৎ বিদায়ের পর বার বার উঠে এসেছে মধ্যরাতে কলকাতা শাসন করা যুবকদের কথা। ফুটপাত বদল হয় মধ্যরাতে। ইতিমধ্যে মিথ। পঞ্চাশের গল্প কথায় বিধৃত। সুতরাং, ক্লিশেও। প্রচুর সম্পর্ক করার, প্রচুর মদ্যপান করার, সারারাত কলকাতার পথে ঘোরার, যখন তখন রাস্তায় হাল্লা মাচানর, মদ্যপানের ঠেকে গিয়ে হৈচৈ ফেলে দেওয়ার ইত্যাদির কাহিনিতে পরিপূর্ণ পঞ্চাশের এই কবিকুলের অবাধ্য যৌবনের ইতিহাস। লেখার ইতিহাসের চেয়ে এইসব "বাওয়ালি"র ইতিহাস অনেক বেশি মুখরোচক আর প্রচলিত।
কিন্তু এই ক্লিশেগুলির মধ্যে, যেভাবে কুয়াশায় পথ কেটে চলে মানুষ, আমরা খুঁজব সেই প্রস্থান বিন্দু, যা ধরিয়ে দেবে শরৎকুমারের নিজস্ব অর্জন। অনেকের মধ্যে তিনি কীভাবে একা হচ্ছেন। সেইটে দেখার ইচ্ছে থাকবে আমাদের।
শরৎকুমার-সুনীল-শক্তি-সমরেন্দ্র-তারাপদ বেলালদের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের। আবার আত্মস্থও। চাকরিতে প্রাইভেট কোম্পানির একজিকিউটিভ বলে নিজের একটা আলাদা সত্তা বা আইডেন্টিটি বহন করেন। স্ত্রী বিজয়া, নিজের ভাষায়, উৎপল কুমার বসুর সঙ্গে বাদানুবাদে, প্রায় চ্যালেঞ্জ নিয়ে কবিতা লেখেন যিনি, তিনিও সংস্কৃত ভাষার স্কলার এবং পড়ুয়া। সংসার আর কৃত্তিবাসের এক্সটেন্ডেড বাউন্ডুলে কমিউনিটি সংসার, দুয়ের ভেতোর দিয়ে বিজয়া ও শরৎ নিজেদের বহন করে নিয়ে চলেছেন দশকের পর দশক। দাপুটে দম্পতি। ছেলে সায়নকে বড় করছেন বিজয়া। স্মৃতিতে অমলিন, সায়ন কতোটা ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল কৃত্তিবাসী ঐ বাউন্ডুলে বোহেমিয়ান যাত্রাপালার জন্য। শক্তি মাতাল হয়ে চুল ধরে টেনে তুলে এক পাশে ফেলে দিয়েছিলেন সায়নকে, ভোলেননি বিজয়া। এগুলো যৌথ গল্প গাথার অংশ, আজও অগ্রন্থিত। যেমন শরতেরই এক স্মৃতিকথা থেকে চুরি করে বসিয়েছিলাম একটি উপন্যাসে যে, সেইটির খণ্ড অংশ রইল এখানে। সে সময়টা এভাবেই ধরা দেয় গল্পকথার ও পঞ্চাশ দশকের রূপকথার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে আমার কাছে।
"আজ খাওয়া হল কবিরাজি কাটলেট আর কফি। জনা পাঁচেক ছিল। লোভে লোভে আশপাশের টেবিল থেকে ও আরো কয়েকজন এসে জুটল।
সব মিলিয়ে বেশ। আড্ডায় শরৎ রসিয়ে রসিয়ে বলছিল বেশ্যা পল্লীতে ওর অভিজ্ঞতার কথা। সোনা নামে এক বারবনিতা ওকে দিয়ে নিজের প্রেমিককে চিঠি লিখিয়ে নিয়েছিল। কুচবিহারে থাকতো সেই প্রেমিক। বেশ কিছুদিন 'কামাই' দিচ্ছিল। তাই চিঠি লেখার প্রয়োজন।
পিয়োতমো! বেশ নিকেচ... সোনা আমাকে বলল।
শরৎ বড় চাকরি করে। কিন্তু কি যে মজা করে কথা বলে।
তারপর?
দু’মাস আগে বলে গেলে এই শনিবার আসবে? আমাকে ভুলে গেছ পাষাণ? কী নিষ্ঠুর তুমি, উঃ! কাকে পেয়ে আমায় ভুলে গেলে গো?
শরৎ বলছে... আর সবাই হেসে লুটোপুটি। কে একজন ফুট কাটল, এসব তোর মাথা থেকে বেরল? এরকম নেকু নেকু করে লেখা?
তারাপদ ভারি গলায় বলল, আরে সোনাটোনা কেউ আছে নাকি, সবটাই শরৎ বানিয়ে বলছে রে।
শরৎ বেজায় রেগে বলল, তাহলে আমি বলবই না।
সুনীল গম্ভীরভাবে বলল, আরে পুরোটা শোনাই যাক না। গল্পটা কোন দিকে গিয়ে দাঁড়ায়। শরৎ, কনটিনিউ!
শরৎ বলে চলে, আমি একটু পরে রেগে বললাম, আচ্ছা আমাকে দিয়ে পেয়ারের নাঙকে চিঠি লেখাচ্ছিস তো, কে এমন কার্তিক এই লোকটা? সোনা বলে, রাগ করে না লক্ষ্মী ছেলে, আসলে এ লোকটা মাসে মাসে আমায় দু’শো টাকা করে দেয়। ব্যবসা আছে। ঘরে বউ আছে ... কিন্তু আমার কাছে যদি না আসে অন্য কারুর ঘরে যায়? সে বড় কষ্টের হবে। নইলে সংসারে মন বসাক না কেন... তাতে আমি বাদ সাধব নিগো!
পরের বার, শরৎ বলল, গিয়ে দেখি দিদির ঘরের দোর বন্ধ। টোকা দিতেই খুলল। দেখি জংলা জামা পরা লোকটা ভেতোরে। সোনা পেটিকোট বুকের কাছে জড়ো করেই এসেছে।
তারপরে শোন না, সেদিন তো চলে এলাম, ভাই টাই বলে গায়ে হাত বুলিয়ে ভাগিয়ে দিলে। পরের দিন ফাঁকায় ফাঁকায় গিয়ে দেখি, সোনা তো ঘরে আলমারি খাট সব করে ফেলেছে। ঘরের কোনে টেলিফোন। কালী রামকৃষ্ণ জগন্নাথের ছবি সরিয়ে আয়না দেওয়া টেবিল... সব ঐ কুচবিহারের পয়সায়। বেটাছেলে নাকি কেঁদে বলেছে ওকে বিয়ে করতে চায়।
অ্যাঁ, বিয়ে? বেশ্যাকে বাবু বিয়ে করতে চাচ্ছে?
উফ। শোনই না। তখন সোনা বলল কি বলত, আমি তো সধবা । আমার তো স্বামী আছে। মুর্শিদাবাদ জেলায়। স্বামীটা পঙ্গু। তাকেই তো টাকা পাঠায় সোনা। অভাবে সোনাকে এই পথে পাঠিয়েছে। এখনও সোনা স্বামীর কথা ভেবে কপালে সিঁদুর দেয়।
বোঝ! সমস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে সবাই।
চোখ বড় করে সমরেন্দ্র বলে, ঠিক। বেশ্যাবৃত্তি ওর জীবিকা বটে, কিন্তু সনাতন বিশ্বাসটা নিজের কাছে একইরকম আছে। বহু ব্যবহৃত ওর শরীরটা। মনটা নয়।
শরৎ শেষ কথা বলে। আরে আমিও তো চাকরি করি... আমারও তাই। জীবিকা আলাদা, আমি আলাদা। জীবিকা শরীরটাকে ছুঁতে পারে, নিংরে ফেলতে পারে। আমার মনকে ছুঁতে পারে না।"
(মদীয় উপন্যাস কমলা রঙের রোদ্দুর থেকে)।
১
এক গোষ্ঠীর ভেতরে থেকেও, শরৎকুমার কীভাবে যেন নিজস্ব। শক্তি বা সুনীলের বিপুল জনপ্রিয়তা পাননি। কিন্তু অনেকে ভাবে কৃত্তিবাসের ঐসব হৈচৈ এর ফলে প্রতিফলিত দ্যুতিতে তাঁর আলো। আমার মতে একেবারেই তা নয়। কারণ শরৎদার লেখা আমাকে চিরদিন টেনেছে তার নিজের ভঙ্গির জন্য। তাঁর লেখার ভেতরেও নিজস্বতা প্রচুর। শরৎ মূলত কবিতার কবিতা-কবিতা, লিরিকাল, স্বপ্নিল, রোমান্টিক লুক কে ভেঙে দিতে উদ্যত। তাঁর কবিতা গদ্যময়। তাঁর নিজের ভাষায় "ডোজ দিতে" উৎসুক।
(একটি ভিডিওতে সেরকমই বলছেন তিনি, প্রমাণ আছে। কোন লেখায় পাইনি অবশ্য)। ফলে পরবর্তী প্রজন্মের অনেকের কাছে কবিতাগুলি সুকুমার-সৌন্দর্যে ভরপুর না। কাঠখোট্টা টাইপ। আমার কাছে তারা মিনিমালিস্ট জাপানি চিত্রকলার মত। অমোঘ। শীর্ণ বপু কিন্তু অগাধ গভীর।
তোমার জন্য শোকসভা হবে না মহম্মদ আলি
কেননা
ক্ষমতার লড়াইয়ে তুমি ছিলে না
নামডাকে ছিলে না
তাছাড়া, তুমি পা ফসকে পড়ে গেছ।
অতএব এই কবিতা।
শুক্রবার সকালের পর কাজ করনি তুমি
তবু শনিবার অবধি মাইনে পাবে।
ঠিকেদার সদয় হলে
পনেরো হাজার টাকা জীবন বীমা
তা-ও পাবে তোমার বিবি,
পঙ্গু হয়ে বেঁচে থাকলে যা পেতে না।
মেট্রো রেল ভবনের ওই উঁচু দেওয়াল
তোমার হাতে রং...
মানুষকে ছোট দেখাচ্ছে, ছোট দেখাচ্ছে
ভাবতে ভাবতে তোমার পা ফসকে গেল।
এই খবরটাও সকলের জানা দরকার।
(এলিজি / শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়)
২
হতে পারে তাঁর কবিতা স্বনির্বাচিত ভাবে গদ্যময়, হতে পারে ছন্দের প্রয়োগ না করা থেকে শুরু করে শব্দের নির্মাণে, আটপৌরে দেশজ শব্দের প্রতি মনোযোগ, বিষয়ে দৈনন্দিন ও মিনিমালিস্ট থাকাকেই তিনি বেছেছিলেন। এই সবকিছুর ভেতরে একটি পরিচ্ছন্ন, সুষমাময় শিল্পবোধ না থাকলে কখনো এমন নিয়ন্ত্রিত ভাবে কলম চালান যায়না। আর সে কারণেই শরৎকুমার একজন কবি। প্রতি মুহূর্তে একটি বিশেষ মনোভঙ্গি, দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে চলেছেন তিনি। ছোট গল্পের বইতেও শরতের এই মনোভঙ্গির বিষয়টা এসেই যায়।
দশ তলার বারান্দায় গেঞ্জি পরা একটা লোক
হাওড়া ব্রিজের দিকে, ন-তলায় টেরিকটের শার্ট একা দুলছে
সাততলায় শান্ত স্বামী-স্ত্রী, চায়ের কাপ,
কাঠের টবে গুল্মলতা।
সন্ধে হয়-হয়।
ছ-তলাটা খাঁচার মত, বাচ্চারা মারপিট করছে
পাঁচতলার চাকর পাশের ফ্ল্যাটের ঝিয়ের সঙ্গে
হেসে হেসে, চারতলায় এখনও ঝুলছে মেরুন শাড়ি।
সন্ধে হয়-হয়।
তিন তলার বারান্দাও মেরুন শাড়িতে ঢাকা
দোতলার গিন্নী চুল বেঁধে চুলের গুটি
উড়িয়ে দিলেন হাওয়ায়,
এক তলায় ব্যাঙ্ক, আজ বন্ধ।
আট তলার কথা বলা হল না,
ওই স্লাইডটায় কোনো ছবি নেই
শুধু সন্ধে হয়-হয়।
(স্লাইড/শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়)
এই কবিতাটি নিয়ে একটি মন্তব্যে সন্দীপন চক্রবর্তী সেদিন যা লিখল সেটিও উদ্ধৃত না করা অসমীচীন হবে।
"মিড-লং শট থেকে ক্রমে জুম করে মিড-ক্লোজ শটে দেখছি, দশতলার বারান্দা। তারপর এক্সট্রিম লং শটে একঝলক হাওড়া ব্রিজ। তারপরের শটেই ক্যামেরা টিল্ট ডাউন করে নামছে ধীরে ধীরে দশতলার বারান্দা থেকে। ন’তলা। তারপরেই একটা স্মুথ কাট করে ক্যামেরা সোজা চলে আসছে সাত তলায়। আবার টিল্ট ডাউন করে নামছে। ধীরে। এভাবেই নামবে পুরোটা। একতলা পর্যন্ত। তারপর যেন একটু থেমে থাকছে ক্যামেরা। আচমকা জার্ক দিয়ে ক্যামেরা আছড়ে পড়ছে আটতলায়। মিড শট থেকে আস্তে আস্তে ক্লোজে যাচ্ছে। ছবিটা স্টিল হয়ে ধরে রাখল কিছুক্ষণ। ফিল্মের মত কবিতা। আসলে যে বইতে এই কবিতাটা আছে, সেখানেই, তার তিনটে কবিতা পরেই আরেকটা কবিতা আছে – ‘সিকি’। তার শেষ লাইন – ‘আমার শাটার নড়ে, মুভি-ক্যামেরায় ছবি ওঠে’। আর এ কবিতা যেন সেই মুভি ক্যামেরাতেই তোলা ছবি।"
শিল্পবোধ এক পরিবর্তনশীল জিনিস আর তাই মডার্নিস্টের আঁকা ক্লাসিকাল পন্থীর পছন্দ হয়না। শরৎকুমারের চেতনা এক রকমের সমসাময়িক দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করেছে গোটা কবিতা বিষয়টিকে, আর সে কারণেই, শরৎ তাঁর সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমগুলির মধ্যে সিনেমার মত মাধ্যমটিকে নিয়ে বিশেষ ভাবে কাজ করতেই পারেন। যেভাবে আমরা জীবনানন্দের ক্যাম্পে কবিতায় পাই সিনেমা, অথবা, ভাস্কর চক্রবর্তীর লেখায় পাই সিনেমার চলন... সেভাবেই এখানেও পাচ্ছি।
৩
আমাকে নিজে তিনি পোস্ট কার্ড লিখে বন্ধুতা পাতিয়েছিলেন লেখা পড়ে। সেটা আমার কবিতা লেখা হয়ে চলার বছর ছ-সাতেক পরের কথা। নিজে থেকে গিয়ে আলাপ করিনি। বড়রা ডেকে আলাপ করেছেন, এই সৌভাগ্যকে দামি মনে করেছি। শরৎদা-বিজয়াদি দু’জনে এভাবে প্রায় আত্মীয় হয়ে ওঠেন। বিজয়াদি একেবারেই আপনজনের মত যে কোন লেখা পড়ে ফোন করতেন আর এক একটি শব্দ ব্যবহার নিয়ে ঘন্টাখানেক বিতর্ক হত। বিজয়াদি ছিলেন তৎসম ও তদ্ভব বাংলা শব্দের প্রতি পক্ষপাতী আর ইংরেজি হিন্দি শব্দ ব্যবহারের ব্যাপারে ছুঁৎমার্গ ছিল তাঁর। সে এক বিশেষ সময়, যখন বারে বারে তিরস্কৃত হচ্ছি বিজয়াদির কাছে, আমার লেখার এই সব প্রবণতা নিয়ে।
শরৎদা অন্যভাবে উৎসুক, জানতে চাইছেন নানা কথা, কবিতার পেছনের কথা, অ্যানেকডোট বলছেন। উজ্জ্বল দুটি চোখ দিয়ে দেখছেন যেন পরবর্তী প্রজন্মের পৃথিবীকে। এরই ভেতর আমার বর তৃণাঞ্জন চক্রবর্তী সম্পাদনা করল, শূন্য তাপাঙ্কের নীচে নামে একটি ফরাসি সমসাময়িক কবিতার অনুবাদ গ্রন্থ। সে বইতে বড় বড় সমসাময়িক ফরাসি কবির অনুবাদ করলেন এখানকার বড় কবিরা। শরৎদা বিজয়াদি উৎপল কুমার বসু, তুষার চৌধুরী, আরো অনেকেই যুক্ত হলেন সে পরিকল্পনায়। বইটি বেরুল ২০০৫। তার আগে এক বছর ধরে কাজ চলেছিল। যাঁরা ফরাসির মূল ভাষা জানতেন না, তাঁদের লাইন বাই লাইন শব্দ ধরে ধরে প্যারাফ্রেজ করে দেওয়ার দায়িত্ব পড়ল আমার ও আরো অনেক ফরাসি জানা ছেলেমেয়ের। আমি অ্যাঁলা বস্কে-র হাসপাতাল সিরিজের কবিতাগুলি শব্দ ধরে ধরে বাংলা করে দিয়েছিলাম। শরৎদা সেগুলিকে নিয়ে কাজ করলেন, কবিতার আকৃতি দিলেন তাদের। সেই সময়ে আমাদের নৈকট্য বেড়েছিল ওঁদের সঙ্গে। শরৎদা এক্সাইটেড কবিতাগুলি পড়ে... তৃণাঞ্জনকে ফোন করে বললেন, যশোধরা অনুবাদ করে দিয়েছে বলে ভেব না আমি কিছু কাজ করছি না। তবে ও যেটা করে দিয়েছে সেটাও ভাল, পড়তে পড়তে তো এমন আনন্দ হচ্ছে, ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে আমার!
এই সব দু-চার পয়সার মত আমাদের জীবনের অলেখা কাহিনি খুচরো খাচরা এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে থাকা। আজ এখানে লিখতে ভাল লাগছে।
যেমন, শরৎদা বিজয়াদি, দু’জনেই, সাগ্রহে এসেছিলেন, ২০১০ নাগাদ আমার মায়ের বাড়িতে। সে বাড়ির ছাতে শব্দহরিণের অনুষ্ঠানে কবিতা পড়লেন শীতের রাতে। সেই সব কবিতার মধ্যে অজস্র বিতর্কিত বিষয় নিয়ে শ্রোতাদের সঙ্গে বাদানুবাদ চলল। মহাশ্বেতা দেবী বা মাও সে তুং, কেউ ছাড়া পেলেন না শরতের কলমের খোঁচা থেকে। শরৎদা বলেছিলেন, রাতে স্বপ্ন দেখেই উঠে লিখে ফেলতেন কবিতা। এই করে করে হার্টের রোগ ধরিয়েছিলেন। কি দুর্দান্ত সেসব লেখা। আমরা বায়না ধরেছিলাম শরৎদার কাছে, সেদিন, রান্না শিল্প সিরিজের লেখা পড়ার জন্য। আমার অতি প্রিয় "দই-পাতা" কবিতাটি পড়েছিলেন শরৎদা।
এক লিটার দুধ ঘন করে নাও।
ঠান্ডা হতে দাও।
একশো গ্রাম টক দই ঘেঁটে মসৃণ করে রাখ।
ওদের মিলন হবে।
মাটির পাত্র হলে ভাল।
নাহলে চীনেমাটির বাসন।
দুধ কুসুম গরম থাকতে টকদই ভাল করে মিশিয়ে নাও।
একটা কাঠের তক্তার ওপর দুধের পাত্রটি বসিয়ে ঢাকা দিয়ে দাও।
তারপর মোটা কাপড় দিয়ে বেশ করে মুড়ে দাও, যাতে ঠান্ডা হাওয়া না ঢোকে।
ওম পেলে মিলন সার্থক হবে।
চার ঘন্টা ঐভাবে থাকুক।
ঘর থেকে বেরিয়ে এস।
তারপর ঢাকনা খুলে দেখবে, দই স্থির হয়ে গেছে। জল কাটছে।
মাঝখানে নাড়াচাড়া করতে নেই।
দই চমকে গেলে কখনোই বসবে না।
দুধ কাটিয়ে ছানা করা সহজ
দই পাতা সহজ নয়।
একজন সহানুভূতিশীল মানুষের স্নেহস্পর্শ পেলেই দুধ জমে দই হয়।
দইয়ের মধ্যে প্রাণ আছে।
সে প্রাণ স্পর্শকাতর।
এ কথা স্মরণ রাখা উচিত।
বাজারে যে মিষ্টি দই পাওয়া যায় তা অকবিতা।
সম্বিৎ | ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:৩১502351
arindam | 2409:4060:2e0a:2287:cdc0:7bcd:6197:***:*** | ০২ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:০৮502438
ঈশিতা ভাদুড়ী | 115.187.***.*** | ০৩ জানুয়ারি ২০২২ ০০:৪৫502452
সেবন্তী ঘোষ | 103.***.*** | ০৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৩:৫৭502459
সংযুক্তা বাগচি | 110.225.***.*** | ০৩ জানুয়ারি ২০২২ ১৫:৩১502469
Ekak | 103.76.***.*** | ০৩ জানুয়ারি ২০২২ ১৫:৪৭502470
সিএস | 103.99.***.*** | ০৩ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:৪২502471
সিএস | 103.99.***.*** | ০৩ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:১৫502475
aranya | 2601:84:4600:5410:b0ce:3124:a6c7:***:*** | ০৪ জানুয়ারি ২০২২ ০০:৩৯502485
একক | ০৪ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:৪৭502487
সন্দীপন | 2401:4900:3a1b:c1d:5879:561d:1133:***:*** | ০৪ জানুয়ারি ২০২২ ১২:৪৫502490
পুরঞ্জয় মুখোপাধ্যায় | 42.***.*** | ০৬ জানুয়ারি ২০২২ ২১:৩৩502521