একটা মঞ্চনাটক দেখতে গিয়ে দর্শকসারিতে হঠাৎই তাকে চোখে পড়লো, হাত ইশারা করে ডাকছে আমাকে। তাতে সাড়া দিয়ে বিরতির সময়ে তার পাশের আসনে আমি গিয়ে বসলাম। শেষবার আমাদের দেখা হয়েছিল বহুদিন আগে; কেউ যদি তার নাম বলে না দিত আমাকে, শুধু মুখ দেখে মনে হয়না আমি তাকে চিনতে পারতাম। তবু আজ দেখা হতেই আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালো সে।
‘কী খবর? অনেকদিন বাদে দেখা হলো তোমার সাথে। সময় কীভাবে কেটে যায় দেখো, আমরাও কেমন বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রথম দেখার কথা কি তোমার মনে আছে? তুমি আমাকে দুপুরে খেতে নেমন্তন্ন করেছিলে।”
সেই ঘটনা আমি কেমন করেই বা ভুলি?
কুড়ি বছর আগের ঘটনা সেটা, আমি তখন প্যারিসে থাকি। ল্যাটিন কোয়ার্টারে খুব ছোট্ট একটা এপার্টমেন্টে থাকতাম তখন আমি। মোটামুটি দিন চলে যাবার মত উপার্জন ছিল আমার, একেবারেই বেশি কিছু না। আমার লেখা একটি বই পড়ে সেটি নিয়ে আমাকে উচ্ছ্বসিত চিঠি লিখেছিল সে, আমিও ভদ্রতাবশত ধন্যবাদ জানিয়ে তার উত্তর দিই। তারপরপরই আমি আবার একটা ফিরতি চিঠি পাই। তাতে লিখেছিল, ওই সময়েই প্যারিস হয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে সে; এই সুযোগে আমাদের দেখা হয়ে গেলে খুবই খুশি হবে। কিন্তু একই সঙ্গে তার সময়েরও আবার খুব টানাটানি, পরের বৃহস্পতিবারে ছাড়া আর কোনোদিন সময় বের করা খুব মুশকিল হবে। তাই জানতে চেয়েছে সেই বৃহস্পতিবারেই আমি তাকে ফয়ট’স-এ লাঞ্চের নিমন্ত্রণ করতে পারব কি না।
ফয়ট’স সে সময়ের খুবই নামী রেস্তোরাঁ, এমনকি ফ্রান্সের সিনেটররাও সেখানে নিয়মিত খেতে যান। তবে সেটা এতই ব্যয়বহুল যে, ওখানে খেতে যাওয়াটা আমার সাধ্যের বাইরে ছিল। ওই রেস্তোরাঁয় খাওয়ার চিন্তা আমি কখনো মাথায়ও আনতাম না! কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাপার অবশ্য একটু আলাদা। আমি তখন টগবগে যুবক, মেয়েদের না বলতে পারার মত বয়স তখনও আমার হয়নি। হিসেব করে দেখলাম, সারা মাস চলার জন্যে আমার কাছে তখনও আরও আশি ফ্রাঁ বাকি আছে, খুব পেট পুরে খেলেও একবেলা মধ্যাহ্নভোজে কোথাও পনের ফ্রাঁ-র বেশি খরচ হবার কথা নয়। ভেবে দেখলাম, পরের দু’ সপ্তাহ কফি বাদ দিলেই বাকি মাসটা আমি ঠিকই কাজ চালিয়ে নিতে পারবো।
সব ভেবে টেবে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে বারোটায় ফয়ট’স-এ তাকে নিমন্ত্রণ জানিয়ে দিলাম আমি।
কথামত দেখা হলো আমাদের। যেরকমটা ভেবেছিলাম সেরকম তরুণী আসলে নয় সে, বরং বছর চল্লিশের মহিলাই বলা যায় তখন তাকে। সাজগোজের বাহুল্য দিয়ে সৌন্দর্যের ঘাটতি লুকিয়ে রেখেছে। মুখের সারিবদ্ধ ঝকঝকে সাদা দাঁতগুলো সহসাই চোখে পড়ে। দরকারের চেয়ে অতিরিক্ত বিগলিত হাসি দেয়া ছাড়া এগুলো আর কোনো কাজে আসে বলে মনে হলো না আমার। প্রচুর কথা বলে চলেছিল সে; হয়তো আমার লেখালেখি নিয়েও কিছু বলবে, এই ভেবে আমি চুপচাপ শুনে যেতে থাকি।
খাবারের মেনু চলে এলে তা দেখে আমি চমকে উঠলাম! যা ভেবেছি সব জিনিসেরই দাম তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। কিন্তু সে আমাকে আশ্বস্ত করলো এই বলে যে, “দুপুরবেলায় আমি কখনোই তেমন কিছু খাই না।”
“না না, সেটা শুনবো না আমি কিছুতেই,” হাসিমুখে বলে উঠলাম।
“না, সত্যিই। আমি একটার বেশি পদ কখনো খাই না। ইদানীং লোকে আসলে খুব বেশি বেশি খায়, শুধু শুধু। আমার যেমন শুধু একটা ছোট মাছ হলেই চলবে এখন। আচ্ছা, ওদের কি স্যামন আছে মেনুতে?”
স্যামনের মৌসুম তখনও আসেনি, আর রেস্তোরাঁর মেনুতেও স্যামনের কোনও উল্লেখ ছিল না। তবু আমি ভদ্রতাবশত জিজ্ঞেস করলাম ওয়েটারকে। অবশ্যই, ওয়েটার জানালো, একটু আগেই বছরের প্রথম স্যামনের ডেলিভারিটি এসে পৌঁছেছে রেস্তোরাঁয়। তাহলে আর কি, আমি নির্দ্বিধায় সেটা অর্ডার করে দিলাম। ওয়েটার হাসিমুখে আমার অতিথিকে জিজ্ঞেস করলো, স্যামন রান্না হতে হতে সে আর কিছু খেতে চায় কি না।
“না না, আর কিছু খাবো না, এক পদের বেশি আমি কখনোই খাই না। অবশ্য, তোমাদের কি ক্যাভিয়ার আছে? ক্যাভিয়ার হলে অবশ্য মন্দ হয় না।”
শুনে আমি চুপসে গেলাম একটু। ক্যাভিয়ারের দামও অনেক, আমি জানি, আমার কিছুতেই পোষাবে না। কিন্তু এ কথা তো আর তাকে বলা যায় না! আমি তাই সেটাই নিয়ে আসতে বললাম ওয়েটারকে। আর অনেক দেখে আমার নিজের জন্যে একটা মাটন চপ, মেনুর সবচেয়ে সস্তা পদ এটাই।
“দুপুরে মাংশ খাওয়াটা কিন্তু একেবারে বোকামি,” সে বলে উঠলো আমার উদ্দেশ্যে, “মাটন চপের মত ভারি খাবার খেয়ে তারপরে কি আর কোনো কাজ করা যায়? অতিরিক্ত খেয়ে পেট ভরিয়ে ফেলাটা আমি একেবারেই পছন্দ করি না।”
তারপরে এলো পানীয়ের পালা।
“দুপুরে আমি কোনো ড্রিঙ্কস খাই না,” সে জানিয়ে দিলো।
“আমিও না,” প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সায় জানালাম আমি।
“শুধু সাদা ওয়াইন ছাড়া,” এমনভাবে সে বলে গেলো যেন আমার কথাটা শুনতেই পায়নি, “এই ফ্রেঞ্চ ওয়াইনগুলো অনেক হাল্কা, পরিপাকের জন্যেও বেশ ভালো।”
“তুমি কোনটা নিবে?” ঢোক গিলে আমি জিজ্ঞেস করলাম তাকে। গলায় আপ্যায়নের সুর আমার তখনও ছিল, তবে আবেগ কমে গিয়েছে ইতিমধ্যেই।
“শ্যাম্পেন,” মুখের সবগুলো সাদা দাঁত দেখিয়ে আবার একটা বিস্তৃত হাসি দিলো সে, “উপায় নেই, আমার ডাক্তার আমাকে শ্যাম্পেন ছাড়া আর কিছুই খেতে দিবে না!”
আমার মুখ ততক্ষণে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, আয়না না দেখেও আমি ঠিক বুঝে গেলাম। ওয়েটারকে ডেকে আধা বোতল শ্যাম্পেন অর্ডার করলাম আমি; সেই সাথে আলতো করে এটাও জানিয়ে দিলাম যে, ডাক্তার আমার শ্যাম্পেন খাওয়ার ওপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে।
“তাহলে কী নেবে তুমি?” সে জানতে চাইলো।
“শুধুই পানি,” আমি জানালাম।
কোনো বিরতি ছাড়াই সে প্রথমে ক্যাভিয়ার আর তারপরে স্যামন খেয়ে নিলো। খেতে খেতে সাহিত্য, সঙ্গীত আর সংস্কৃতি নিয়ে জ্ঞানগর্ভ অনেক কথাই বললো। যদিও সেসব খুব একটা কানে ঢুকছিল না আমার। আমি শুধু ভাবছিলাম, এই সমস্ত খাবারের বিল না জানি কত আসে। খানিক বাদে ওয়েটার যখন আমার জন্যে মাটন চপ নিয়ে এলো, মুখে বেশ অনেকখানি গাম্ভীর্য এনে সে বললো, “আমি ঠিক বুঝে গেছি, দুপুরে তোমার ভারি খেয়ে খেয়ে অভ্যেস। এটা কিন্তু বিরাট ভুল। তুমি কেন আমার মত শুধু একটা পদ খাওয়ার অভ্যাস করছো না বলো তো? একবার শুরু করেই দেখ, অনেক ভালো বোধ করবে তুমি।”
“আচ্ছা, ঠিক আছে, আমিও তাহলে এক পদই খাই,” ওয়েটার মেনু নিয়ে আবার কাছে আসতেই আমি চনমন করে বলে উঠলাম। কিন্তু এক হাতের আলতো ইশারায় সে ওয়েটারকে এক পাশে সরিয়ে দিলো।
“সেটাই, একটার বেশি পদ আমি দুপুরে কখনো খাই না। এই শুধু এক কামড়ের মত, ব্যস। একদমই এর বেশি না। তা-ও শুধু আলাপ করতে করতেই খেতে থাকা আর কি। না, না, আমি আর কিছুই খেতে পারব না এখন…,অবশ্য… যদি না ওদের মেনুতে আজ সেই দারুণ এসপ্যারাগাস থাকে। এটা না খেয়েই প্যারিস ছেড়ে চলে গেলে আমার অবশ্য মনে একটু দুঃখ থেকে যাবে।”
একদম ভরাডুবি হতে যাচ্ছে, খুব টের পেলাম আমি। বাজারে এই মৌসুমে এসপ্যারাগাস দেখেছি আমি এর মধ্যেই, আর সেগুলো ভীষণ দামিও বটে। দেখে খুব খেতে ইচ্ছে করলেও কখনো কিনে উঠতে পারিনি দামের জন্যে। আমি তাই ওয়েটারকে ম্লান স্বরে জিজ্ঞেস করলাম, “মাদাম জানতে চাইছেন, তোমাদের এখানে কি আজ এসপ্যারাগাস আছে?”
মনের সমস্ত ইচ্ছাশক্তি দিয়ে আমি চাইলাম ব্যাটা বলুক “নেই,” কিন্তু তাতে কোনো কাজ হলো না। উল্টো তার মুখ হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। ওয়েটার আমাদের সোল্লাসে জানালো, আমরা সত্যিই ভাগ্যবান। তাদের রান্নাঘরে চমৎকার রসালো স্বাদের দারুণ কিছু নরম আর বড় বড় এসপ্যারাগাসের মজুত রয়েছে।
“আমার কিন্তু একেবারেই ক্ষুধা নেই এখন,” আমার অতিথি বলে উঠলো, “তবে তুমি জোর করছো তাই আর মানা করবো না, কিছু এসপ্যারাগাস খাওয়া যেতেই পারে।”
তথাস্তু, আমি অর্ডার করে দিলাম।
“তুমি নেবে না কিছু?” সে জিজ্ঞেস করলো।
“না, আমি এসব খাই না,” মুখ শুকনো করে বললাম আমি।
“হ্যাঁ, অনেকেই আছে এসপ্যারাগাস খেতে পছন্দ করে না। আমি জানি সেটা। কিন্তু সত্যি কথাটা স্বীকার করছোনা তুমি, আসলে ঐ চপের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে মাংশ খেয়েই তোমার ক্ষুধা নষ্ট হয়ে গেছে। ”
অর্ডার নিয়ে ওয়েটার চলে গেলো। রান্না শেষ হওয়ার অপেক্ষা করতে করতে আমার মাথায় দুশ্চিন্তা এসে ভর করলো। বাকি মাসটুকু পার করার জন্যে আমার কাছে আর কত ফ্রাঁ বাকি থাকবে, সেটা নিয়ে আর ভাবছি না এখন। আসল চিন্তা হচ্ছে, এই আশি ফ্রাঁ দিয়ে অন্তত আজকের বিলটা আমি মেটাতে পারবো তো? যদি কোনও কারণে কিছু টাকা কম পড়ে যায় আর আমাকে সেটা তার কাছ থেকেই ধার নিতে হয়, সেটা বড় লজ্জার ব্যপার হবে। না, না, এটা কিছুতেই করা যাবে না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, বিল যদি বেশি আসে, আমি তাহলে বিরাট নাটক ফেঁদে বসবো। পকেটে হাত ঢুকিয়ে চিৎকার করে উঠে বলব, সর্বনাশ, আমার পকেটমার হয়ে গেছে! অবশ্য যদি তার কাছেও পর্যাপ্ত টাকা না থাকে, সেটা তখন আরেক অস্বস্তির ব্যাপার হবে। সে ক্ষেত্রে আমি আমার হাতঘড়িটা ওদের কাছে জমা রেখে যেতে পারি, পরে এসে বিল মিটিয়ে ছাড়িয়ে নিলেই হবে।
এসপ্যারাগাসের প্লেট চলে এলো টেবিলে। দেখতে দারুণ উপাদেয় দেখাচ্ছে সেগুলোকে। পরের কিছু মুহূর্ত আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম, নির্লজ্জ মহিলাটি সবগুলো এসপ্যারাগাস একে একে খেয়ে নিলো। কেবল পাতে পড়ে থাকা মাখনের লোভনীয় গন্ধটুকুই যেন আমার নাকে সুড়সুড়ি দিতে রয়ে গেলো।
তবু ভালো, ভোজন-পর্ব সমাপ্ত হলো তার অবশেষে।
“কফি?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“হ্যাঁ, খাওয়াই যায়। একটা আইসক্রিম আর এক কাপ কফি,” সে উত্তর দিলো।
আমি আর কোনো কিছুকেই পরোয়া করি না তখন। ওর আইসক্রিম আর কফির সাথে আমি নিজের জন্যেও একটা কফি অর্ডার করে দিলাম।
“জানো, একটা কথা আমি খুব বিশ্বাস করি,” মুখ ভরে আইসক্রিম খেতে খেতে সে বলা শুরু করলো, “পেটে কিছু জায়গা বাকি রেখেই আমাদের খাওয়া শেষ করা উচিত, যেন উঠে যেতে যেতেও মনে হয় চাইলেই আরও কিছু খাওয়া যেত।”
“তুমি কি আরও কিছু খাবে?” আমি দুর্বল গলায় তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
“না, না, আমি তোমার কথা বলছিলাম, এই যে এখন তুমি আর কিছুই খেতে পারছ না! আমার তেমন ক্ষুধা নেই। যেমনটা তোমাকে আগেই বলেছি, আমি আসলে লাঞ্চ করি না। সকালে এক কাপ কফি, তারপরে সন্ধ্যায় হয়তো ডিনার। কিন্তু দুপুরে একটার বেশি পদ কিছুতেই না।”
“ও আচ্ছা, আচ্ছা,” আমি আমতা আমতা করে বললাম।
ঠিক তখনি একটা সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার ঘটলো। কফির জন্যে আমরা যখন অপেক্ষা করছি, হেড-ওয়েটার তখন একটা বিরাট ফলের ঝুড়ি হাতে নিয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। ঝুড়িটা বড় বড় পীচ ফলে ভরা, ওয়েটারের মুখে তারচেয়েও বড় একটা কৃত্রিম হাসি ঝোলানো। পীচগুলো অবশ্য দেখতে দারুণ, কিন্তু আমি এটাও জানি যে তখন পীচেরও মৌসুম নয়, সেই হিসেবে এগুলোর দামও অনেক হবার কথা!
আলাপ চালাতে চালাতেই প্রায়-আনমনে সে হাত বাড়িয়ে একটা ফল হাতে তুলে নিলো, “দেখলে, এতগুলো মাংশ খেয়েই তুমি পেট ভরিয়ে ফেলেছ।” হায়রে আমার এক টুকরো মাটন চপ! “এখন তোমার পেটে আর কিছুই খাওয়ার জায়গা নেই। কিন্তু আমাকে দেখো। হাল্কা নাস্তার মত করে খেয়েছি এতক্ষণ, এখন আরাম করে একটা পীচও খেয়ে ফেলবো ।”
অবশেষে বিল এলো। আর সেটা মেটানোর পরে বখশিশ দেয়ার জন্যে মাত্র তিন ফ্রাঁ বাকি রইলো আমার হাতে। সেগুলোই আমি ওয়েটারের জন্যে রেখে দিয়ে বের হয়ে এলাম রেস্তোরাঁ থেকে। জানি তা দেখে নিশ্চয়ই আমাকে সে বিরাট কঞ্জুস মনে করলো, কিন্তু আমার পকেট তখন একেবারেই ফাঁকা আর সামনে রয়ে গেছে বাকি পুরোটা মাস কাটানোর দুশ্চিন্তা।
“আমাকে দেখে অন্তত শেখো,” বিদায়ী হাত মেলাতে মেলাতে সে আমাকে বললো, “দুপুরের খাবারে একটার বেশি পদ কিছুতেই খাবে না।”
“অবশ্যই,” আমি উত্তর দিলাম,“খুব শিখেছি আমি তোমার কাছ থেকে। আজ ডিনারেই আমি না খেয়ে থাকবো।”
“ইশ, রসিক আছো তুমি,” হাসতে হাসতে সে ট্যাক্সিতে চড়ে বসলো, “খুব রসিক।”
কুড়ি বছর পরে আজ মঞ্চনাটকের বিরতিতে বসে তার দিকে তাকিয়ে আমার মনে হলো, অবশেষে হাতেনাতে কর্মফল পেয়েছে সে। না, আমি খুব প্রতিশোধপরায়ণ কেউ নই, কিন্তু বিধাতা নিজেই যখন কাউকে শিক্ষা দিতে উদ্যত হন, সেটা আয়েশ করে পাশ থেকে তারিয়ে তারিয়ে দেখাটা হয়তো খুব মন্দ কিছু নয়।
তার ওজন এখন, একশ’ ত্রিশ কেজি।
মমের এই অসাধারণ গল্পটি স্কুলে পাঠ্য ছিল, আজ এতো বছর পর তারেকের অনুবাদে আবারও পড়তে বেশ লাগলো।
বরাবরই মনে হয়, প্যারিসে গেলে ওইসব স্যামন, কেভিয়ার, শ্যাম্পেন তো বটেই, বিশেষ করে এস্পারাগাস খেয়ে দেখতে হবে! আর গল্পের শেষ পাঞ্চ লাইনটি কি দারুণ!
প্রসঙ্গত, তারেকের লেখাও পড়লাম বহু বছর পর। এ-ও এক বড় প্রাপ্তি। আরও লিখুন
*সংশোধনী : মমের গল্পটি স্কুলে নয়, কলেজে পাঠ্য ছিল। তবে বড়দের পাঠ্যবই থেকে আমি এটি পড়েছিলাম হাইস্কুলেই।
ভাল,লাগল। চমৎকার অনুবাদ, ভাবানুবাদই বলা যায়।
সুন্দর একটা ভাবানুবাদ। অনুবাদ বেশি রভাগ সময় আসল কন্ঠ হারিয়ে ফেলে। এই লেখাটার ক্ষেত্রে তা হয়নি। লেখায় টাকা না থাকবার টেনশন টা ফিল কর যায়। পাঞ্চ লাইনটা অপ্রত্যাশিত রকমের মজার।