এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে

  • ফারাও-এর দেশে কয়েকদিন - পর্ব ৬

    সুদীপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৪ মার্চ ২০২৪ | ৭৫৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • “আছো যেথা যত আমীর-ওমরা
    আর যত ব্যাটা হোমরা-চোমরা
    বার্তা ভীষণ শোনো হে তোমরা
    হাল্লা চলেছে যুদ্ধে!
    শুন্ডির-ও দেবো পিন্ডি চটকে…”

    ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস হিট্টাইট-দের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার আগে এমন কোনো গান গেয়ে ভিজির-উজীর বা সেনানায়কদের চাঙ্গা করেছিলেন কিনা জানা নেই যদিও, তবে প্রস্তুতি ভালোই নিয়েছিলেন আর যুদ্ধের সমাপ্তিতে উৎসব-অনুষ্ঠানে খাদ রাখেননি। শুধু তাই নয়, নিজের কীর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে আবু সিম্বেল-এ বানিয়ে ফেলেছিলেন পেল্লায় মাপের দু-দুখানি মন্দির, একটি স্বয়ং তাঁর নামে, আর একটি তাঁর পাটরাণী নেফারতারি-র নামে, যেটি-তে পূজ্য ছিলেন দেবী হাথোর। যদিও সেই যুদ্ধে সত্যি-ই কে কার পিন্ডি চটকেছিল, তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে আজ-ও দ্বিমত আছে। আজকের বেড়ানোর থিম হলো কাদেশ-এর যুদ্ধ!  পৃথিবীর প্রাচীনকালের যুদ্ধগুলির মধ্যে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি যুদ্ধ কারণ এই যুদ্ধের পর একটি সন্ধিপ্রস্তাব বা শান্তিচুক্তি গৃহীত হয় মিশরের ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস এবং হিট্টাইট সাম্রাজ্যের সম্রাট তৃতীয় হাটুসিলি-র মধ্যে (যুদ্ধ কিন্তু হয়েছিল এই হাটুসিলির দাদা দ্বিতীয় মুয়াতাল্লিস-এর সঙ্গে)। যদিও যুদ্ধের পর ষোল বছর দুই সাম্রাজ্যের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা আর টানাপোড়েনের পর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই লিখিত সন্ধিপ্রস্তাব-টি পৃথিবীর প্রথম সন্ধিপত্র হিসেবে আজও স্বীকৃত। যুদ্ধের কথা আবার পরে; আমাদের ক্রুজ আজ আসোয়ান ছাড়বে দুপুর ঠিক দেড়টায়। আসোয়ানের এই বন্দর থেকে প্রায় ২৮০ কিলোমিটার পথ, সাড়ে তিন ঘন্টা সময় লাগে। তাই রাত আড়াইটেয় উঠে এই যাত্রা। আবু সিম্বেল মিশরের নুবিয়া অঞ্চলের একটি গ্রাম, এর  অবস্থান মিশর ও সুদান-এর সীমানার কাছেই। আর একেবারেই প্রত্যন্ত এলাকা, একদিকে আদিগন্ত মরুভূমি, অন্যদিকে সুবিশাল নাসের হ্রদ। আসোয়ান থেকে যাত্রাপথের অধিকাংশ-ই খাঁ-খাঁ মরুভূমির উপর দিয়ে। আর এই পথে ডাকাতির সম্ভাবনাও থাকে। তাই গাড়ি আর বাস মিলিয়ে একটি লম্বা কনভয় বানিয়ে একসাথে এই রাস্তা অতিক্রম করা হয়, বিশেষতঃ রাতের অন্ধকারের সময়টুকু। রাত দুটো-য় ওয়েক আপ কল, ঠিক আড়াইটে-য় দলের সবাই নীচের লবিতে হাজির। আমাদের পুরো দলটার এই সময়ানুবর্তিতার প্রশংসা করতেই হবে, পুরো ট্যুরে একদিনের জন্যে একজনও কোথাও একটা মিনিটও দেরী করেননি। লবিতেই আমাদের প্রত্যেকের জন্যে প্রাতঃরাশের বাক্স আলাদা পলিথিনের ব্যাগে রাখা ছিল, সবাই যে যার বাক্স উঠিয়ে নিয়ে ক্রুজ ছাড়লাম। আজকের প্রাতঃরাশ বাসে বসেই।
     
    জাহাজ-ঘাটের পাশের রাস্তায় উঠে বাসে চড়ে বসলাম, সেখান থেকে প্রায় পাঁচ-সাত কিলোমিটার দূরে এসে পৌঁছোলাম একটি আর্মি চেকপোস্টে। এখানে কাগজপত্র দেখিয়ে কতজন যাচ্ছে সেসব নথিবদ্ধ করা হল। তারপর প্রায় আধ-ঘন্টা অপেক্ষা কনভয় প্রস্তুত করার জন্যে। পরপর গাড়ি আর বাস এসে জমা হতে লাগল পিছনে। অবশেষে যাত্রা শুরু। ধু-ধু মরুভূমির বুক চিরে চলে গেছে কালো পিচের  রাস্তা, আর বাস, গাড়ি সবই চলছে দুরন্ত গতিতে, ঘুটঘুটে অন্ধকারে সামনে শুধু গাড়ির দুই আলোর বৃত্ত, তাতেই যেটুকু দেখা যায়, রাতের যাত্রায় বাস-ও নিশ্চুপ, রীতিমতো গা-ছমছমে ব্যাপার। আজও পুলিশ রয়েছে যথারীতি এবং স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সমেত।  ঘন্টা-দুয়েক চলার পর যখন ভোরের আলো ফুটছে মরুভূমির বুকে, আমরা মিনিট পনেরো-র বিশ্রাম নিলাম রাস্তার পাশের একটি ক্যাফে-তে। এখানে ক্যাফের সঙ্গে অন্য জিনিসপত্র কেনাবেচাও চলছে। এখান থেকে আরও ঘন্টাখানেক চলার পর আমরা মরুভূমি ছাড়িয়ে কয়েকটা নুবিয়া গ্রাম পার হলাম। গ্রামে লোক-জন বা বাড়িঘরে খুব কম, রুখা-সুখা প্রকৃতি, তেমন চড়া রোদ! এই নুবিয়া অঞ্চল মিশরের ফারাওদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল সোনার কারণে, এই অঞ্চল থেকে পাওয়া সোনা রসদ জোগান দিত ফারাও-এর রাজকোষে।  আধঘন্টার মধ্যেই আমাদের বাস এসে দাঁড়াল নাসের লেকের কাছে পার্কিং-এ। দূর থেকে দেখা গেল আবু সিম্বেল-এর পাহাড়। আমরা নেমেছি পিছন দিকে, বেশ অনেকটা হেঁটে গিয়ে ডানদিক দিয়ে  নাসের লেকের পাড় ধরে সেই পাহাড়ের পাশ দিয়ে সামনে পৌঁছলাম। যা দেখলাম প্রথম দর্শনে, অভিভূত হলাম বললেও হয়ত কম বলা হবে! বাঁদিকের পাহাড়ে দ্বিতীয় রামেসিসের মন্দির, আর তার বেশ কিছুটা ডানদিকে নেফারতারি-র মন্দির, সকালের নরম আলোয় অপরূপ হয়ে উঠেছে তাদের আদল।
     
    আবু সিম্বেলের দুই মন্দির 

     
    ফারাও প্রথম সেতির জীবিতাবস্থায় দ্বিতীয় রামেসিস আপার ইজিপ্টের ফারাও হন। এই সময়ে সেতি শুধু লোয়ার ইজিপ্টের ফারাও ছিলেন।এই লোয়ার ইজিপ্টের উত্তর-পূর্ব সীমানা থেকে মাঝে মধ্যেই হিট্টাইটদের অনুপ্রবেশ, আক্রমণ  লেগেই থাকত। হিট্টাইট-রা ছিল অধুনা টার্কি-র প্রাচীন অধিবাসী; সেতির সময়কাল থেকে দ্বিতীয় মুয়াতাল্লিসের (বা মুয়াতাল্লি) অধীনে হিট্টাইট সাম্রাজ্য বিস্তার হতে থাকে। যার ফলে শোনা যায় সেতি তাঁর জীবনকালেই সেনাবাহিনী একত্রিত করে প্রশিক্ষণ আর অস্ত্র-শস্ত্র সংগ্রহ শুরু করেছিলেন। সেতির মৃত্যুর পর দ্বিতীয় রামেসিস থীবস থেকে তাঁর রাজধানী সরিয়ে আনেন আভারিস-এর কাছে নীলনদের বদ্বীপ এলাকায় আর পাই-রামেসিস নামে রাজধানীর পত্তন করে যুদ্ধের প্রস্তুতি চালাতে থাকেন হিট্টাইট-দের কাদেশ প্রদেশ থেকে নির্মূল করে মিশরের পূর্ব সীমানা সুরক্ষিত করার জন্যে। কাদেশ প্রদেশ ছিল অধুনা সিরিয়া-র অন্তর্গত, অরন্তেস নদীর ধারে। রামেসিস সংখ্যার বিচারে মুয়াতাল্লিসের বাহিনীর তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু তাঁর সহায় ছিল কুশলী সেনাপতিরা, সুশিক্ষিত সেনাবাহিনী আর ছোটো হালকা রথী-বাহিনী। এই হালকা রথ অতি দ্রুত যুদ্ধক্ষেত্র অতিক্রম করতে খুবই সহায়ক ছিল। আর ছিলেন তিনি নিজে, দুরন্ত ধনুর্ধর এবং বীর যোদ্ধা। কাদেশের যুদ্ধযাত্রার আগে নিজের বিশ-হাজারি বাহিনীকে রামেসিস ভাগ করে নিলেন চার ভাগে, নাম দিলেন চার দেবতার নামে, আমুন, রা, পিতাহ এবং সেথ। নিজে রইলেন আমুন দলের সেনাপতিত্বে, বাকি তিন দলের আলাদা সেনানায়ক রইল। যুদ্ধযাত্রা এমনভাবে করা হলো যে সামনে থেকে গুপ্তচরেরা দেখলে মনে করবে শুধু আমুন দল চলেছে পাঁচ হাজার সেনা নিয়ে। এর পিছনে বেশ কিছু দূরত্ব রেখে বাকি চার দল। ১২৭৪ খ্রীষ্টপূর্বের এক সকালে পাই-রামেসিস-এর দুর্গ থেকে বিশ হাজার সৈন্য আর শয়ে শয়ে রথীদের নিয়ে ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস রওনা হলেন কাদেশের পথে। শত শত মাইল পার হয়ে কাদেশের কাছাকাছি এসে ফারাও শুনলেন মিশরের সেনাবাহিনীকে ভয় পেয়ে মুয়াতাল্লিস কাদেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন সৈন্যসামন্ত সমেত। হিট্টাইটদের দুই গুপ্তচর ধরা পড়ার পরে জানা গেল সেকথা ঠিক। সেইমতো নিশ্চিন্ত মনে পিতাহ দলের অপেক্ষায় না থেকে নিজের আমুন দলকে নিয়েই ফারাও বেরিয়ে পড়লেন কাদেশ অধিকার করতে! গুপ্তচর-রা যে আরও কিছু গুপ্ত রেখেছিল সে-খবর কে রাখে। কাদেশের পথে কিছুদূর চলার পর ফারাও-এর যাত্রাপথের  দুদিকের পাহাড়-জঙ্গল থেকে হঠাৎ হাজারে হাজারে নেমে এল হিট্টাইট সেনা, ছারাখার করে দিতে লাগলো সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত মিশরীয় সেনাদের। হ্যাঁ, বহু যুদ্ধের অভিজ্ঞ সেনানায়ক মুয়াতাল্লিস স্বয়ং সৈন্যসামন্ত নিয়ে লুকিয়েছিলেন এই পাহাড়-জঙ্গলে। এই অতর্কিত আক্রমণে আমুন দল প্রায় যায় যায় অবস্থা! এমন সময় ফারাও স্মরণ করলেন দেবতা আমুন-কে, তাঁর আশীর্বাদে অমিত শক্তির অধিকারী হয়ে ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস নিজেই সম্মুখসমরে নেমে বিপক্ষকে ছিন্নভিন্ন করে এগিয়ে চললেন। আর তাই দেখে তাঁর অবশিষ্ট সেনারাও মরণপণ যুদ্ধ শুরু করল, যে যুদ্ধ অতি সহজে প্রায় জিতে ফেলেছিলেন হিট্টাইটরা, তার মোড় ঘুরে গেল। এমন সময় পিছন থেকে এসে হাজির হল পিতাহ সেনাদল। এবার যুদ্ধ শুরু হল প্রায় সমানে সমানে। অবশেষে অরন্তেস নদীর ধারে এসে মুয়াতাল্লিসের বহু সৈন্য পিছিয়ে যেতে যেতে নদীতে ডুবে বা ভেসে যেতে লাগল। যুদ্ধজয় হল রামেসিসের। কিন্তু তিনি বেরিয়েছিলেন কাদেশ জয় করতে, সেখানে তখনও তৈরী ছিল মুয়াতাল্লিসের সেনাদল; এই ভাঙা সেনাদল নিয়ে সে সাহস আর দেখালেন না ফারাও, অরন্তেসের ধার থেকেই ফিরে চললেন। ওদিকে মুয়াতাল্লিস যুদ্ধ হেরেও কাদেশের আধিপত্য রেখে দিলেন, সুতরাং নিঃশেষে মীমাংসা কিছু হলো না। মিশরে প্রচার হল ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের বীরত্ব আর যুদ্ধজয়ের কথা, ওদিকে কাদেশ জানল মুয়াতাল্লিসের চাতুর্য আর ফারাও-কে নদীর ওপারে আটকে রাখার কথা। সেযুগেও রাজারা প্রোপাগান্ডা প্রচার করতেন বৈকি! তবে যুদ্ধক্ষেত্রে রামেসিসের বীরত্ব প্রদর্শন নিয়ে তেমন সংশয় নেই কোনো পক্ষের-ই। এই হলো কাদেশের যুদ্ধের গল্প। এই যুদ্ধের প্রায় ষোল বছর পর হিট্টাইট রাজা তৃতীয় হাটুসিলি-র সঙ্গে শান্তিচুক্তি হলো ফারাও-এর, যেটি পৃথিবীর প্রথম শান্তিচুক্তি বলে আজও মনে করা হয়। এই চুক্তির ফলে মিশরের সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার রাজ্যগুলোর বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বেড়ে যায়, পুরো সাম্রাজ্যে রাজনৈতিক স্থিরতা আসে, সীমানাও সুরক্ষিত হয়। আর ফারাও এই যুদ্ধের স্মৃতিকে অবিনশ্বর করে রাখতে নীলনদের তীরে (তখন লেক নাসের ছিল না) নির্মাণ করান এই দুটি বিশালাকার মন্দির, যা এই সাড়ে তিন হাজার বছর পরেও তাঁর এবং তাঁর পাটরাণী নেফারতারির খ্যাতি ধরে রেখেছে।
     
    আবু সিম্বেল মন্দির লেক নাসের-এর পশ্চিম তীরে আর নীলনদের দ্বিতীয় ক্যাটারাক্ট বা খরস্রোতের কাছে (প্রথমটি ছিল আসোয়ানে)। প্রথম মন্দিরটি অর্থাৎ ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের মন্দিরটি দেবতা আমুন, পিতাহ এবং রা-হোরাখতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত। দ্বিতীয় মন্দিরটি অর্থাৎ রানী নেফারতারির মন্দিরটি দেবী হাথোরের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। এই দুটি মন্দির-ই আসোয়ান হাই ড্যাম তৈরীর সময় জলস্তরের উচ্চতা বেড়ে ডুবতে বসেছিল। ইউনেসকোর সহায়তায় মন্দির-দুটিকে খন্ড খন্ড করে মাপ অনুযায়ী কেটে এনে প্রায় ২০০ মিটার দূরে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে এনে আবার একইভাবে বসানো হয়, প্রায় চার বছর ধরে এই বিপুল কর্মযজ্ঞ চলেছিল। বলা হয়, বেলজোনি, যিনি এই মন্দির দুটিকে নতুন করে আবার জনসমক্ষে আনেন, তাঁকে আবু সিম্বেল নামে একটি বালক পথ দেখিয়ে এই মন্দিরের চত্বরে পৌঁছে দিয়েছিল, সেই থেকেই এই জায়গার নাম হয় আবু সিম্বেল।
     
    ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের মন্দির 

     
    দেবতা হাপি আপার ও লোয়ার ইজিপ্টকে একসূত্রে বাঁধছেন 

     
    হাইপোস্টাইল হল ও রামেসিসের আট মূর্তি 

     
    ফারাও চলেছে যুদ্ধে - কাদেশ চলো 

     
    রণমত্ত দ্বিতীয় রামেসিস 

     
    ধনুর্ধর রামেসিস দ্য গ্রেট - রথারোহী 

     
    যুদ্ধবন্দীদের শাস্তি দিচ্ছেন ফারাও 

     
    আমুনের নৌকো 

     
    আমুনকে সুগন্ধী নিবেদন করছেন ফারাও 

     
    রা-হোরাখতিকে বিভিন্ন উপঢৌকন নিবেদন করছেন ফারাও - দেওয়ালের ছবি থেকে চোখ ফেরানো যায় না! 

     
    গর্ভগৃহ - বাঁদিক থেকে পিতাহ , আমুন , ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস এবং রা-হোরাখতি 

     
    যুদ্ধবন্দীদের গলায় দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে 

     
    বাঁদিকের রামেসিসের মন্দিরটি তুলনায় অনেকটাই বড়, প্রায় ত্রিশ মিটার উঁচু। মন্দিরের মাঝে দরজা আর তার দুপাশে দুটি করে মোট চারটি দ্বিতীয় রামেসিসের সুবিশাল মূর্তি! এই মূর্তিগুলির উচ্চতাও  প্রায় ২০ মিটার। মূর্তির মাথায় দুটি মুকুট একসাথে, একটি লোয়ার ইজিপ্টের, অন্যটি আপার ইজিপ্টের। তবে প্রবেশদ্বারের বাঁদিকের মূর্তির উপরের অংশটি ভাঙা, এটি নাকি ভূমিকম্পের ফলে ভেঙেছে। মূর্তি চারটির পায়ের কাছে আরও কিছু মূর্তি, নেফারাতারি, তার মা মাতনোজমেত আর রামেসিসের সন্তানাদির। ভিতরে ঢোকার পথে জনৈক রক্ষীর হাতে দরজার চাবিটিও দেখার মতো, পিতলের চাবি, এর আকার আঁখ চিহ্নের। এই আঁখ মানে চোখ নয় , আঁখ হলো অমরত্বের একটি চিহ্ন যা দেবতারা ফারাও-কে দিয়ে থাকেন। দরজা দিয়ে ঢোকার ঠিক আগে দুপাশে দেবতা হাপির বিখ্যাত রিলিফ, হাপি আপার আর লোয়ার ইজিপ্ট-কে একসূত্রে বাঁধছেন। হাপি হলেন নীলনদের বন্যার দেবতা। নীলনদে বন্যা হলে নদের দুপাশের জমিতে যে পলির স্তর পড়ত, ফসল উৎপাদনের জন্যে তা হতো খুবই উর্বর। হাপিকে তাই শস্যের দেবতাও বলা হতো। এর নীচে রয়েছে যুদ্ধবন্দীদের গলায় দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়ার ছবি। দরজার ঠিক উপরে দেবতা রা-হোরাখতির রিলিফ, দুপাশে ফারাও তাঁকে পুজো নিবেদন করছেন। কিছু কিছু জায়গায় গ্রীক এমনকি ইংরাজীতেও সাল তারিখ লেখা রয়েছে, হয়ত বহুযুগ আগে আসা পর্যটকদের, একটি সাল চোখে পড়ল খোদাই করা - ঊনবিংশ শতকের, বিশেষ দ্রষ্টব্যের গায়ে ইচ্ছেমতো লিখে দেওয়ার রেওয়াজ সব দেশেই আছে! ভিতরে ঢুকেই লম্বা হাইপোস্টাইল হল, দুপাশে ছাদ পর্যন্ত লম্বা থামের সারি। দুদিকে চারটি করে আটটি বিশালকায় রামেসিসের ওসাইরিড মূর্তি, অর্থাৎ ওসাইরিসের আদলে তৈরী, বুকের উপর দু-হাত ভাঁজ করে রাখা। এই হলের চারপাশের দেওয়ালে কাদেশের যুদ্ধের দৃশ্যের বিভিন্ন রিলিফ রয়েছে, কোথাও রামেসিস যুদ্ধক্ষেত্রে চলেছেন রথ হাঁকিয়ে, এক হাতে খড়্গ, এক হাতে ধনুক আর ঘোড়াদের লাগাম, রথের এক পাশে তূণীর, পাশে সৈন্যদের সারি, এমনকি একটি সিংহও রয়েছে। আবার কোনো রিলিফে শত্রুদমনের ছবি, একজনকে পায়ে পিষে ফেলছেন ফারাও, আর একইসঙ্গে আরেকজনের প্রতি বর্শা তাক করছেন। কোথাও রথারোহী বাহিনী নিয়ে ধনুর্ধর ফারাও শরনিক্ষেপ করতে করতে এগিয়ে চলেছেন, কোথাও আবার জল্লাদের সঙ্গে যুদ্ধবন্দীদের শাস্তি দিচ্ছেন। রিলিফের উৎকর্ষ আর শিল্পীর দক্ষতার প্রশংসা করতে হয়, এতটাই নিখুঁৎ আর যত্ন নিয়ে বানানো। এই ঘরের পর আরও একটি ঘর ভিতরে, সেখানেও বেশ কিছু সুন্দর রিলিফ - রামেসিস আর নেফারতারি দেবতা আমুন আর রা-হোরাখতি-কে পুজো নিবেদন করছেন, তাঁদের নৌকো বয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইত্যাদি। আর সবশেষে মন্দিরের গর্ভগৃহ। এখানে রয়েছে পাথর কেটে তৈরী করা চারটি মূর্তি, ডানদিক থেকে রা-হোরাখতি, ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস, আমুন আর সবশেষে পিতাহ। গর্ভগৃহের দেওয়াল জুড়ে বিভিন্ন দেবতার রিলিফ। মন্দিরটি এমনভাবে তৈরী করা, প্রবেশদ্বার থেকে সরাসরি এই গর্ভগৃহ আর এই মূর্তিগুলি দেখা যায়। বছরের দুটি দিন, বাইশে ফেব্রুয়ারী আর বাইশে অক্টোবর সূর্যের আলো এসে পড়ে রা-হোরাখতি, রামেসিস আর আমুন-এর মূর্তির উপর, অথচ আশ্চর্যজনকভাবে অন্ধকারেই থেকে যান পিতাহ। এই দিন দুটিতে এই চত্বরে চলে 'সান ফেস্টিভ্যাল'। এই তারিখের কথা খুব ভেবেচিন্তেই আমরা এড়িয়ে গিয়েছিলাম যেহেতু প্রচন্ড ভিড়ের মধ্যে ভালো করে সবকিছু দেখা সমস্যা হতো। মনের মধ্যে ঘোর লাগা অবস্থায় মন্দির থেকে বেরিয়ে এলাম, বিশ্বাস হচ্ছিল না যে সাড়ে তিন হাজার বছর আগেকার এই মন্দির আর তার ইতিহাসকে স্পর্শ করলাম!
     
    রাণী নেফারতারির মন্দির 

     
    হাইপোস্টাইল হলের থামে হাথোরের মুখ 

     
    রামেসিস ও নেফারতারি ফুল ও মদ্য নিবেদন করছেন দেবী হাথোর-কে 

     
    নেফারতারিকে দেবী হাথোর ও মাত-এর আশীর্বাদ

     
    হাথোরের নৌকো

     
    ফারাও শত্রুকে শাস্তি দিচ্ছেন, সঙ্গে রাণী - দেবতা রা-হোরাখতি বরাভয় দিচ্ছেন 

     
    গর্ভগৃহ 

     
    নেফারতারি মন্দিরের পাশ থেকে দুই মন্দির 

     
    ডানদিকে বেশ কিছুটা সরে এসে এবার রাণী নেফারতারির মন্দির। নেফারতারি ছিলেন দ্বিতীয় রামেসিসের পাটরাণী। শোনা যায় ইনি ছিলেন নেফারতিতির বোনঝি। বলাই বাহুল্য সব ফারাওদের মতোই রামেসিসের রাণীর অভাব ছিল না, বরং কিছু বেশীই ছিল। তবে নেফারতারি সম্ভবতঃ তাঁর পরামর্শদাতাও ছিলেন রাজ্য পরিচালনার ব্যাপারে আর শোনা যায় তিনি বেশ কিছু ভাষা জানতেন, যা দৌত্যকার্যের সহায়ক ছিল। তবে এই প্রথম কোনো রাণীর জন্যে মন্দির তৈরী করা হয়েছিল প্রাচীন মিশরে। মনে রাখতে হবে, হ্যাৎসেপশুট যা বানিয়েছিলেন সবই নিজে ফারাও হওয়ার পর। নেফারতারির মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ১২ মিটার। আর এর গায়ে রয়েছে মোট ছটি বিশালকায় মূর্তি, দশ মিটার করে উচ্চতা। প্রবেশপথের দুপাশে তিনটি করে। দুদিকে চারটি মূর্তি ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের আর মাঝে দুটি নেফারতারির। মূর্তিগুলির উচ্চতা সমান, তবে সংখ্যাধিক্য ফারাও-এর। এই মূর্তিগুলির পায়ের কাছে ছোটো ছোটো মূর্তি রয়েছে তাঁদের সন্তানদের।  রামেসিস নেফারতারিকে নিয়ে এই মন্দিরে এসেছিলেন তাঁর রাজত্বের ২৪ তম বছরে। এখানে বলে রাখি, আগের পর্বে যে হেব-সেদ উৎসবের কথা বলেছিলাম, যা ফারাও-এর ত্রিশ বছর রাজত্বের উৎসব (আর তার পর তিন বছর অন্তর), রামেসিস সবচেয়ে বেশী সেই উৎসব করেছিলেন তাঁর সুদীর্ঘ জীবন এবং রাজত্বকালে। প্রায় তেরো বার। প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকে রীতি মেনেই হাইপোস্টাইল হল, তার ছটি পিলার, প্রতিটিতেই দেবী হাথোরের মুখমন্ডল খোদাই করা। দেওয়াল জুড়ে বিভিন্ন দেবদেবীর পুজোর রিলিফ, এঁদের মধ্যে হাথোর-ই মুখ্য, রামেসিস আর নেফারতারি বিভিন্ন দ্রব্য নিবেদন করছেন।  এর পরের ঘরটিতে রয়েছে একটি সুন্দর নৌকোর ছবি, নৌকোয় সওয়ারী স্বয়ং গোরুর রূপধারিণী দেবী হাথোর, তাঁকে প্যাপাইরাস গাছ নিবেদন করছেন দ্বিতীয় রামেসিস। এরপর গর্ভগৃহ, সেখানে ফারাও আর রাণী হাথোরের উদ্দেশ্যে পুজো নিবেদন করছেন।  রামেসিসের মূর্তিটি ঠিক থাকলেও হাথোর আর নেফারতারির মূর্তিটি প্রায় বোঝা যায় না। এখানেও গর্ভগৃহের দেওয়ালে বিভিন্ন দেবতাদের পুজো-অর্চনার ছবির রিলিফ। বেরিয়ে আসার সময় খেয়াল করলাম, প্রবেশপথের ঠিক আগে দুপাশের দেওয়ালে রয়েছে ফারাও-এর শত্রুকে শাস্তি দেওয়ার ছবি, দুপাশে দাঁড়িয়ে নেফারতারি এবং হাথোর। মন্দির থেকে বেরিয়ে এসে একপাশে স্যুভেনির-এর দোকান। আমাদের হাতে পনেরো মিনিট আছে আর, কোথা দিয়ে যে ঘন্টা তিনেক কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না! আমাদের  এই মন্দিরে গাইডের প্রবেশ নিষেধ ছিল, তাই সামাহ আমাদের এই চত্বরে পৌঁছে দিয়ে পাশেই অপেক্ষা করছিল। দূর থেকে দুই মন্দিরকে একসাথে বেশ ভালো লাগছিল দেখতে। একটূ এগিয়ে একেবারে লেক নাসের-এর পাশ থেকেও দেখলাম রামেসিস-এর মন্দিরের দৃশ্য। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাঙ্গণে পর্যটকের ভিড় বেড়ে চলেছে। সামাহ আমাদের ঠিক সময় মতো ভিড় কম থাকাকালীন এনে ফেলেছিল, তাই এত সুন্দর সব দেখা হলো। এবার ফেরার পালা। পিরামিডের মতোই আবু সিম্বেলের মন্দির-ও থেকে যাবে স্মৃতির মণিকোঠায়।
     
    লেক নাসের-এর পাড়ে 

     
    সাহারায় শিহরণ 
     
    ঠিক সওয়া দশটায় আমরা ফিরে চললাম আসোয়ান-এর উদ্দেশ্যে। প্রাতঃরাশ এত পরিমাণে ছিল যে সকালে কিছুটা খেয়ে আমরা বাকিটুকু রেখে দিয়েছিলাম। এখন আবার কিছুটা খেলাম। ঠিক দুপুর দেড়টায় আমাদের ক্রুজ রওনা দেবে; নেহাৎ দরকার না পড়লে তাই ফেরার পথে আর দাঁড়ানো হবে না। আবার সেই ধূ ধূ মরুভূমির মাঝখান দিয়ে ছুটে চলা, মাঝে মধ্যে বালির বা ধূসর পাথরের টিলা, দূরে মরীচিকার আভাস – এইসব দেখতে দেখতেই সময় কেটে গেল। ক্রুজে ফিরে দরজায় কার্ড জমা দিয়ে সটান চলে গেলাম বেসমেন্টে মধ্যাহ্নভোজ সারতে। ক্রুজ থেকে আমাদের যে কোনো জায়গায় বেরনোর সময় একটি কার্ড দিয়ে দেওয়া হতো, সেটি দিয়ে ক্রুজের কর্মীরা খেয়াল রাখেন চলা শুরু করার আগে কেউ বাদ পড়ে গেল কিনা, এই কার্ড তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাই হোক, টেবিলে বসে এক টুকরো গুলাশে কামড় দিতে দিতেই পাশের বৃত্তাকার জানলা দিয়ে খেয়াল করলাম, ক্রুজ চলতে শুরু করেছে নীলনদের জল ঠেলে। 
     
    কেবিনের জানলা-কাম-ব্যালকনি থেকে

     
    আজ আমরা সন্ধ্যেবেলা পৌঁছবো কোম ওম্বো। সেখানে কোম ওম্বো মন্দিরও দেখবো রাতের আলোয়। আপাততঃ ঘন্টা কয়েকের বিশ্রাম আর কেবিন থেকেই নীলনদের শোভা-দর্শন। কেবিনে ফিরে  আজকের পুরো দিনটাকে নিয়ে ভাবতে বসে প্রবহমান নীলনদের দিকে তাকিয়ে প্রথমেই অদ্ভুতভাবে একটা গান-ই মনে এলো,
     
    “পৃথিবী হারিয়ে গেলো মরু সাহারায়,
    মিশরের নীলনদ আকাশে মিলায়..."

    আশির দশক বা তার আশে-পাশে জন্মে ঘরে-বাইরে উৎসব অনুষ্ঠানের মন্ডপে বাপ্পিদার সুরে মহম্মদ আজিজের কন্ঠে 'গুরুদক্ষিণা' ছবির এই গান শোনেনি তেমন বাঙালী পাওয়া মুশকিল, সে ভালো লাগুক বা না লাগুক! এতদিনে সে গানের সম্যক রসাস্বাদন হলো বটে! নাহ, "জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা"! 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ২৪ মার্চ ২০২৪ | ৭৫৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পলিটিশিয়ান | 2607:fb91:881e:d7d1:ac39:d1f1:7de8:***:*** | ২৪ মার্চ ২০২৪ ০১:৫৯529739
  • যতদূর জানি নেফারতারির কবরে রামেসিসের কোন ছবি নেই। ফারাওদেরও বউ ফুটিয়ে দিত।
  • সুদীপ্ত | ২৪ মার্চ ২০২৪ ১০:৪৭529746
  • কবরে ঢুকলে আর কে বা ফারাও, কে বা রাণী! তখন আনুবিস আর ওসাইরিস ভরসা! এক হ্যাৎসেপশুট (আর কিছুটা নেফারতিতি) ছাড়া প্রাচীন মিশরে ও-ব্যাপারে ব্যতিক্রম পাওয়া মুশকিল। আর ক্লিওপেট্রা অতি জটিল-কুটিল মানুষ, রাজ্যশাসন বা দেশের-দশের ভালো নিয়ে তাঁর বিশেষ মাথা ব্যথা ছিল বলে মনে হয় না! 
  • বিপ্লব রহমান | ২৪ মার্চ ২০২৪ ১৯:০৪529760
  • অতি তথ্যবহুল লেখা, অনেকটা পাঠ্য বইয়ের মতো নিরস লাগলো ভাই।  বরং ভ্রমণ কাহিনীর আদলে কিছু হালকা চালে লিখতে পারতেন। শুভ
  • সুদীপ্ত | ২৪ মার্চ ২০২৪ ২১:৫৬529768
  • ধন্যবাদ বিপ্লব, পড়ে মতামত জানানোর জন্যে। মিশর ভ্রমণ নিয়ে লিখতে গেলে মিশরের পুরাণ, ইতিহাস, আর তথ্য ছাড়া লেখা আমার পক্ষে অসম্ভব, এতটাই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে! তাছাড়া আমার নিজেরও উৎসাহ ছিল এসব আরও বিস্তারিত জানার ব্যাপারে। অন্য কেউ নিশ্চয়ই ঘুরে এসে পরে তথ্য বাদ/কম রেখে আরও ভালো লিখবেন। 
  • | ২৪ মার্চ ২০২৪ ২৩:২৩529771
  • দুর্দান্ত। কি যে ভাল হচ্ছে এই সিরিজটা। তেমনি ছবিগুলো।
     
    রামেসিসের বাহিনী সাজানো মহাভারতের  সেই ব্যুহ রচনা।  যে গুপ্তচররা ইনফো উইতহেল্ড রেখেছিল তাদের পরিণতি কী হয়েছিল কে জানে! এরকম ডাবল এজেন্টগিরি মানবসভ্যতার আদিযুগ থেকেই আছে যা দেখছি।
  • hu | 72.24.***.*** | ২৫ মার্চ ২০২৪ ০১:৩২529773
  • খুবই ভালো লাগছে পড়তে। এই ইতিহাসগুলো নিয়ে আমারও আগ্রহ আছে। খুব ভালো হল এখানে লেখা রইল। মাঝে মাঝে দেখে নিতে পারবো।

    তবে "মিশরের নীল নদ আকাশে মিলায়" গানটা সত্যি বলতে কি ছোটবেলায় শুনিনি। ছোটবেলাটা যদিও আশির দশকই ছিল। এখন জানতে পারছি খুবই পপুলার গান। গানটা ইনফ্যাক্ট প্রথম শুনলাম মাত্র কিছু সপ্তাহ আগে সৈকতদার গলায়। এটা তাই আমার কাছে "গুরুদক্ষিণা"র নয়, সৈকতদার গান। কিন্তু তিনি মনে হয় একথা শুনলে বিশেষ খুশি হবেন না ঃ-(
  • Suvasri Roy | ২৫ মার্চ ২০২৪ ০৯:৫১529782
  • ভালো লেগেছে। আরেকটু যত্ন নিয়ে লিখলে আরো সুখপাঠ্য হ'ত। স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা, মিশরের খাবারের কথাও একটু বললে পারতেন।
    অনুগ্রহ করে আরো লিখুন।
  • সুদীপ্ত | ২৫ মার্চ ২০২৪ ১১:১৫529786
  • ধন্যবাদ দমদি! হ্যাঁ একেবারেই এই গুপ্তচরেরা ছিল ডাবল এজেন্ট। আঠারো আর ঊনিশতম সাম্রাজ্যের ফারাওরা অনেকেই যুদ্ধবিদ্যা আর রাজ্যশাসনে পারদর্শী ছিলেন, এন এম ই সি তে মমির সাথে লেখাগুলোয় সেকথা বলা ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যেও মিশর এই সময় অনেক উন্নতি করেছিল।
     
    ধন্যবাদ হু! সৈকতদা এ-গান গেয়ে শুনিয়েছে! কি কান্ড! 
     
    ধন্যবাদ শুভশ্রী মতামতের জন্য, কিন্তু আপনি সবকটি পর্ব পড়েননি। খাবারের কথা তো আছেই, জনজীবন নিয়েও কিছু কথা বলেছি, এর বেশী জানতে বা লিখতে হলে অন্তত: এক মাস মিশরে থাকতে হবে, সে সুযোগ আমার একেবারেই নেই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন