এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে

  • ফারাও-এর দেশে কয়েকদিন - ৩

    সুদীপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৯৩০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • সারাদিনের বিমান-যাত্রা, মিশরের ঘোরাঘুরি (দু-দুটো মিউজিয়াম) সব মিলিয়ে শ্রান্তিতে রাতের ঘুম ভালো-ই হয়েছিল। প্রতিদিন আমাদের সব হোটেলেই সকালে ‘Wake up call’-এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। যদিও আমরা তার অনেক আগেই উঠে পড়েছি। হোটেলেই প্রাতঃরাশ সেরে ঠিক সকাল সাড়ে সাতটায় আমরা বাসে উঠে বেরিয়ে পড়লাম আলেকজান্দ্রিয়া-র উদ্দেশ্যে। আলেকজান্দ্রিয়া থেকে ফেরার পথে আমরা গিজার লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো দেখে ফিরবো। আলেকজান্দ্রিয়া যেতে সময় লাগবে তিন ঘন্টা, মাঝে ব্রেক দেওয়া হবে ঘন্টা দুয়েক পর। বাসে উঠে আজ সবাইকে এক এক করে পরিচয় দিতে হল, যদিও সকলের সঙ্গে এর মধ্যেই আলাপ হয়ে গেছে ভালোই।  বাস থেকে কায়রোর দৃশ্য দেখতে দেখতে এবার তাহলে মিশরের দেবদেবীদের গল্প বলে নেওয়া যাক কিছুটা। আমাদের মতো তেত্রিশ কোটি দেবতা নয় বটে, প্রাচীন মিশরের দেবদেবী কম করে হলেও খান পঞ্চাশ! যদিও বহুল প্রচলিত দেবদেবী হাতে গোনা। আর গল্পগুলো শুনলে ছোটোবেলায় শুকতারায় পড়া নন্দলাল ভট্টাচার্যের পুরাণের গল্প মনে পড়ে, যেখানে দেবতারাও আমাদের মতোই মাটির মানুষ, রাগ-দ্বেষ- প্রেম-প্রীতি-ঈর্ষা-লড়াই সবই আছে।  তবে এই সমস্ত তিন হাজার বছরের প্রাচীন দেবদেবী আর তাঁদের পুজোপাঠ ৫০০ থেকে ৬০০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে খ্রীষ্ট আর ইসলাম ধর্মীয় শাসকদের আগ্রাসন আর নিষেধাজ্ঞায় মোটামুটি উঠে যায়। শেষ দেবী আইসিসের মন্দিরটি ছিল আসোয়ান-এর ফিলে টেম্পল, সেটিকেও বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমান মিশরের প্রধান ধর্ম ইসলাম আর ভাষা হলো আরবীয়।
     
    এবার আসা যাক দেবদেবীদের কথায়। মিশরের সৃষ্টিকর্তা দেবতা হলেন আতুম, আমাদের পুরাণে যেমন ব্রহ্মা! এই আতুমের আবার দুই যমজ ছেলে-মেয়ে (শুধু পিতার ঔরসে কিভাবে জন্মালেন এঁরা  সেসব জিগ্যেস ক’রে বিব্রত করবেন না, ওসব বায়বীয় জন্মের গপ্পো দেশে-দেশে ছড়িয়ে আছে) – শু আর তেফনুত। শু হলেন বাতাসের দেবতা আর তেফনুত জলের দেবী। শু আর তেফনুত-এর সন্তানেরা হলেন পৃথিবীর দেবতা গেব আর আকাশের দেবী নুত।  প্রাচীন মিশরে (এবং এখনো) ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহ প্রচলিত আছে বংশের রক্ত শুদ্ধ রাখা ইত্যাদি কারণে। দেবী নুত-এর একটি ছবি খুব-ই প্রচলিত এবং অধিকাংশ ফারাওদের সমধির মূল গর্ভগৃহের ছাদে এবং কফিনের উপরের আবরণের ভিতর দিকে এই অলংকরণ দেখা যায়, কারণ তাঁকে মৃতের রক্ষাকর্ত্রী বলে মনে করা হয়। ছবিতে দেবী নুত পুরো আকাশ জুড়ে থাকেন নগ্ন শরীরে, তাঁর শরীর জুড়ে থাকে অসংখ্য তারা, যেহেতু তিনি আকাশের দেবী আর ভিন্নমতে তারাদের জন্মদাত্রী। তাঁর নীচে থাকেন গেব, ঠিক যেমন আকাশ ছেয়ে থাকে পৃথিবী-কে। নুতের দুই হাত আর দুই পা ছুঁয়ে থাকে উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম দিক। এইবার মজার ঘটনা হলো, সূর্যের দেবতা রা (পরে আমুন বা একত্রে আমুন-রা), যাঁকে নুতের-ই সন্তান বলে ভাবা হয়, তাঁকে নুত প্রতিদিন ভোরবেলায় প্রসব করেন, অতএব সূর্যোদয় হয়, আর সন্ধ্যেয় গিলে ফেলেন, ফলে সূর্যাস্ত হয়। জন্মের পর রা ‘আতেত’ নামে একখানি নৌকায় নুতের শরীর বরাবর নীলনদ বেয়ে চলতে থাকেন দুপুর পর্যন্ত, আবার দুপুরের পর ‘সেখতেত’ নামের এক নৌকায় ফিরে আসেন নুতের কাছে, আর গপ করে নুত তাঁকে গিলে ফেলেন। তবে দৈনিক গিলে ফেলা আর প্রসব করার এই মূল গল্পটুকু নুত-সম্পর্কিত এই ছবির উপপাদ্য হলেও আরও অনেক ভাবে ছবিটি আঁকা হয় আর ব্যাখ্যা করা হয় সম্পাদ্য হিসেবে। গেব আর নুত-এর চার সন্তান, দুই ছেলে আর দুই মেয়ে – ওসাইরিস (ছেলে), আইসিস (মেয়ে), সেথ (ছেলে), নেফথিস (মেয়ে)। ওসাইরিস-এর সঙ্গে বিয়ে হয় আইসিস-এর আর সেথ-এর সঙ্গে বিয়ে হয় নেফথিস-এর। কিন্তু সেথ-এর আবার পছন্দ ছিল আইসিস-কে। অতএব আদিম রিপুর তাড়নায়, ঈর্ষান্বিত সেথ একসময় হত্যা করলেন তাঁর বড়দা ওসাইরিস-কে এবং দেহটাকে টুকরো টুকরো করে কেটে দেহাংশগুলো লুকিয়ে ফেললেন! সিংহাসন দখল করে পেতে চাইলেন আইসিস-কে। বেচারী আইসিস সেথ-কে প্রত্যাখ্যান করে মনের দুঃখে বেরিয়ে পড়েন ওসাইরিস-এর দেহাংশ খুঁজতে। অনেক বছর-মাস ধরে সেসব টুকরো খুঁজে খুঁজে জোড়া লাগিয়ে জাদুবলে ওসাইরিসের দেহে প্রাণসঞ্চার করেন। ওসাইরিস-কে বলা হয় মিশরের প্রথম ফারাও, কিন্তু মৃত্যুর পর বেঁচে উঠলেও তিনি ফিরে না এসে থেকে যান মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের দেবতা হয়ে। মামিফিকেশনের পর তাই ওসাইরিসের (আমাদের যমরাজ যেমন) সামনেই মৃতের হৃদপিন্ডের ওজন করেন আনুবিস আর বিচার করা হয় পাপ-পুণ্যের, চিত্রগুপ্তের মতো খাতায় সেসব লিখে রাখেন দেবতা থথ।

    ওসাইরিস তো বেঁচে উঠলেন, এদিকে তাঁর আর দেবী আইসিসের এক ছেলে জন্ম নিল, হোরাস। মিশরের সব ফারাও হোরাসের মানসপুত্র, যুদ্ধ আর শিকারের দেবতা। এঁর মুখ আঁকা হয় বাজপাখির আদলে। হোরাস জন্ম নিয়ে শুনলেন সেথ-এর অপকর্মের কথা, ফিরে এসে সিংহাসন দাবী করে শুরু করলেন ভীষণ যুদ্ধ সেথ-এর সঙ্গে।  যুদ্ধের ফাঁকেই হোরাসের চোখ উপড়ে নিলেন সেথ, পরে দেবী হাথোর এসে সেই চোখ (এই সেই বিখ্যাত ‘হোরাসের চোখ’) সারিয়ে তুললেন। এরপর আর-ও অনেক যুদ্ধবিগ্রহ, জয় পরাজয়ের পর শেষে হোরাসের জয় হলো আর ফিরে পেলেন সিংহাসন। সেথ হয়ে গেলেন হিংসা, মুরুভূমি আর ঝড়ের দেবতা। আইসিস পূজিত হলেন হলেন আদর্শ মাতা আর বধূরূপী দেবী হিসেবে। হাথোর ছিলেন দেবতা হোরাসের পালিকা মা, আবার কেউ বলেন তিনি ছিলেন হোরাসের পত্নী। হাথোর হলেন ভালোবাসা, যৌনতা এবং মাতৃত্বের দেবী। আরও অনেক দেবতা আছেন, যেমন সিংহ-মুখী দেবী সেখমেত (দেবতা পিতাহ-র স্ত্রী এবং যুদ্ধ, শত্রুনাশের দেবী), শকুন-মুখী দেবী নেখবেত, কুমীর-মুখধারী সোবেক বা আইবিস-মুখধারী থথ, বা বেবুন-মুখধারী হাপি এমন অনেক। আর দেবতাদের রাজা ভেড়া-মুখধারী আমুন-রা তো আছেন-ই। আবার পরে না-হয় এঁদের কারও কারও পরিচয় দেওয়া যাবে।
     
    বাসে যেতে যেতেই চোখে পড়ল কায়রো টাওয়ার আর সুন্দর স্থাপত্যের কিছু মসজিদ। কায়রো ছাড়ার আগে আমরা পার হলাম ‘6th October Bridge’। এই সেতুটি প্রায় একুশ কিলোমিটার দীর্ঘ আর নীলনদকে দুবার পার হয়, মাঝে পড়ে গাজিরা দ্বীপ। এছাড়া চোখে পড়ল মুকাত্তাম (বা মুকাদ্দাম) পাহাড়। এই পাহাড় থেকেই নাকি পিরামিড বা মন্দির তৈরীর চুনাপাথর বা লাইমস্টোন কেটে নিয়ে যাওয়া হতো। আমাদের বাস ছুটে চলেছে মরুভূমির মধ্যে একফালি রাস্তা দিয়ে। দুপাশে বালির মধ্যে দূরে খেয়াল করলে মরীচিকা সহজেই চোখে আসে। মাঝে মধ্যে ছোটো একটা দুটো গ্রাম, খান দশ-কুড়ি বাড়িঘর, কোনো কোনো জায়গায় মরুভূমির মধ্যেই জলের ব্যবস্থা করে বানানো ফলের আর সব্জীর ক্ষেত; ঘন্টা দুয়েক পর থামা হলো কফি ব্রেক নিতে। এরপর বাস যত এগোতে শুরু করলো আবহাওয়া পালটে যেতে থাকলো, আকাশে মেঘের আনাগোনাও বেড়ে গেল। শীতকাল মিশরের খুব আরামদায়ক সময় হলেও আলেকজান্দ্রিয়ায় এটি ঘোর বর্ষাকাল। তবে সমুদ্রের তীরে হওয়ায় সবসময়েই ফুরফুরে হাওয়া আর মেঘ-বৃষ্টিও এই আছে, এই নেই। আলেকজান্দ্রিয়ায় শহরে ভিতর ঢুকতেই মনে হলো বড়বাজার বা কলুটোলার রাস্তায় ঢুকে পড়েছি, রীতিমতো ট্রাম, অটো সবই চলছে, জায়গায় জায়গায় খানা-খন্দ, জমে থাকা বৃষ্টির জল পেরিয়ে হাঁটাহাঁটি, ভাঙাচোরা পুরনো বাড়িঘর, ঘিঞ্জি দোকানপাট; এর মধ্যে দিয়েই আমাদের বাস চলেছে, বাসে পুলিশ তো আছেই, মাঝে মধ্যে সামনের রাস্তাও পুলিশের গাড়ি হুটার বাজিয়ে এসে খালি করে দিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে হালকা বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। তার মধ্যেই আমরা এসে পৌঁছোলাম  ক্যাটাকম্ব-এ, যার নাম ‘ক্যাটাকম্ব অব কম-এল-শোকাফা’।
     
    কায়রো টাওয়ার

     
    কায়রোর রাস্তাঘাট - আমরা চলেছি ৬ই অক্টোবর সেতুর উপর দিয়ে 

     
    আলেকজান্দ্রিয়া না কলুটোলা - ধরতে পারবেন না! 

     
    আলেকজান্দ্রিয়া – ৩৩২ খ্রীষ্টপূর্ব – ম্যাসিডোনিয়ার সম্রাট তৃতীয় আলেকজান্ডার (ওরফে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট) পারস্য জয় করে আজকের গাজা পার হয়ে এসে ঢুকে পড়লেন মিশরে। পারস্যের অত্যাচার আর লুন্ঠন থেকে বাঁচতে মিশর-ও বাধ্য হয়ে বেছে নিল ‘লেসার ইভিল’ আলেকজান্ডারকে (যদিও তাঁর দিগবিজয়ে যাঁরা বাধা দিয়েছেন তাঁদের উপর অত্যাচারের কোনো মাত্রা রাখেননি , পুরু বা পোরাসের গল্প সত্যি ইতিহাস কিনা তা নিয়ে আজকের দিনে ধন্দ আছে) , তায় আবার যুদ্ধবিগ্রহে তিনি মিশরের প্রাচীন ফারাওদের মতো-ই পারদর্শী!  তার উপর প্রথমেই মিশরে এসে তিনি দেখতে চাইলেন ‘এপিস বুল’-কে এবং সম্মান জানালেন! ব্যস, মিশরীয়রা মুগ্ধ, নির্ঘাৎ সেই প্রাচীন যুগের-ই কোনো মহান ফারাও এসে গেছেন তাঁদের রক্ষা করতে। সুতরাং নীলনদের উপত্যকা সহজেই বিনা বাধায় ম্যাসিডোনিয়ান সাম্রাজ্যের আওতায় এসে গেল। কিন্তু আলেকজান্ডার আরও উত্তরে গেলেন হোমারের ওডিসি-তে পড়া ফারোস দ্বীপের সন্ধানে, পেলেন এবং তাঁর নিজের নামে একটি শহর স্থাপন করলেন ,  ব্যবসা-বাণিজ্য আর ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ আর রাজ্যগুলিতে যাতায়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগকারী স্থান হিসেবে। শোনা যায় বহু আগে দ্বিতীয় রামেসিস ক্রীট দ্বীপের সঙ্গে বাণিজ্যিক স্বার্থে এখানে একটি বন্দর স্থাপন করেছিলেন তবে তারপর সেসব সূত্র ক্ষীণ হয়ে যায়। আলেকজান্ডার যদিও কয়েক মাসের মধ্যেই আবার দিগবিজয়ে বেরিয়ে পড়লেন; এরপর তাঁর অকালমৃত্যুর পর মিশরের দায়িত্ব নিলেন তাঁর এক সেনাপতি সোতার, তিনি হলেন প্রথম টলেমি, শুরু হলো টলেমিক যুগ; মিশরের প্রাচীন ধর্ম ইত্যাদি পারস্যের দখলদারীতে অনেকটাই ভেঙে পড়েছিল, টলেমিক যুগ এসে তাকে কিছুটা ফিরিয়ে এনে খানিক গ্রীক আর রোমান ধর্মবিশ্বাস মিলিয়ে দিল। এতে মিশরীয়দের কিছুটা মন জয়-অ করা হলো। চলল টলেমি রাজাদের রাজত্ব পরের শ-তিনেক বছর। আর আলেকজান্দ্রিয়ার সঙ্গে জুড়ে আছে জুলিয়াস সীজার, মার্ক অ্যান্টনি আর ক্লিওপেট্রার নাম। ক্লিওপেট্রা (সপ্তম ক্লিওপেট্রা) নিয়ে লোকজন যতটা হৈ চৈ করে থাকে প্রকৃত প্রস্তাবে তেমন সুন্দরী তিনি ছিলেন বলে শোনা যায় না, কিন্তু তাঁর যৌন আবেদন এবং কূটবুদ্ধি ছিল অনবদ্য, যা তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন, সিজার থেকে মার্ক অ্যান্টনি সবার ক্ষেত্রেই। আর নিজেকে সর্বদা রেখেছিলেন সহ-শাসক করে, ত্রয়োদশ(ভাই), চতুর্দশ (ভাই – এঁকে ক্লিওপেট্রা নিজেই হত্যা করান), পঞ্চদশ (সিজারের ঔরসে পুত্র সিজারিয়ন) টলেমির সঙ্গে নিজের পদাধিকার অক্ষুণ্ন রেখে। ক্লিওপেট্রার গল্প সর্বজনবিদিত, সে এখানে বিস্তারিত বলব না।  শুধু এটুকু বলি ,  পরবর্তীকালে অক্টাভিয়ান আলেকজান্দ্রিয়া এবং মিশরের আধিপত্য দখল করলে ক্লিওপেট্রা বিষপান করেন এবং সে-খবর শুনে মার্ক অ্যান্টনি আত্মহত্যা করেন, এবং দুজনকেই একসাথে সমাহিত করা হয়। কিন্তু সেই সমাধি আজও খুঁজে পাওয়া যায় নি, মনে করা হয়, হয়ত আলেকজান্দ্রিয়াতেই আছে কোথাও লুকিয়ে অথবা স্থান পেয়েছে সমুদ্রের অতলে।
    ক্যাটাকম্ব হলো মাটির নীচে থাকা একধরণের সমাধিক্ষেত্র। নামার রাস্তা সরু সিঁড়ি দিয়ে হলেও, নীচে নামার পর চারদিক দিয়ে প্রশস্ত সুড়ঙ্গ আর প্রতি সুড়ঙ্গের দুপাশে খোপ কেটে তৈরী করা সারি সারি চৌকো গর্ত, এই গর্তগুলি-তেই রেখে দেওয়া হতো মৃতদেহের মমি। তবে এই ক্যাটাকম্ব ভ্যালি অব দ্য কিংস-এর মতো সমাধিক্ষেত্র নয়, এগুলো অনেকটা রোমান ধাঁচের। আবার এতে গ্রীক আর প্রাচীন মিশরীয় ধারার কারুকার্য-ও রয়েছে। প্রথমে ক্যাটাকম্বের চত্বরে ঢোকার পরেই রয়েছে কয়েকটি সার্কোফেগাস যার কারুকার্যে গ্রীক-রোমান প্রভাব স্পষ্ট। তারপর একটি সান-ডায়াল বা সূর্যঘড়িও রাখা রয়েছে। এরপর ক্যাটাকম্ব। এটির গভীরতা প্রায় ৩৫ মিটার। আর নীচে তিনটি স্তর বা তল আছে। উপর থেকে দেখতে এটি কুয়োর মতোই, নীচে প্রতি স্তরে প্রশস্ত জানলা করা আছে। উপর থেকে দড়ি দিয়ে মমি নামিয়ে দিলে নীচের ওই জানলা দিয়ে নিয়ে নেওয়া হতো, তারপর চালান করে দেওয়া হতো সমাধি-কক্ষের নির্দিষ্ট গর্তে। এই ক্যাটাকম্ব-টি বহুকাল আগেই হারিয়ে গিয়েছিল। ১৯০০ সনে হঠাৎ এক সুন্দর দিনে একটি গাধা কোনোকারণে এই ধ্বংসাবশেষের উপর এসে পড়ে আর একেবারে ক্যাটাকম্বের গর্তে পপাত চ! সেখান থেকেই বেরিয়ে পড়ে এই জায়গাটি। কম-এল-শোকাফা নামটি এসেছে আসলে মাটির হাঁড়ি-কুড়ির স্তূপ থেকে। যেহেতু এটি ছিল সমাধিক্ষেত্র, যাঁরা মমি নিয়ে আসতেন এখানে সমাধিস্থ করার জন্যে বা সমাধিস্থ ব্যক্তি-কে শ্রদ্ধা জানাতে, আর সঙ্গে আনতেন মাটির পাত্রে খাবার-দাবার, খাওয়ার পর সমাধিক্ষত্র থেকে আর সেসব ফিরিয়ে নিয়ে না গিয়ে এখানেই ফেলে যেতেন, ঐ আমাদের শ্মশানযাত্রীরাও যা করে থাকেন। সেসব জমে গিয়েই স্তূপ হয়ে গিয়েছিল, আর তা থেকেই এই নাম। নীচে সেই খাবার জায়গা বা ডাইনিং হল-ও রয়েছে। মূল সমাধিক্ষেত্রের গর্ভগৃহে ঢোকার মুখে দুপাশে দুই রোমান পুরুষ ও নারীর মূর্তি, মনে করা হয় এঁরাই হলেন এই ক্যাটাকম্ব-এর স্থপতি এবং তাঁর স্ত্রী, পুরুষ মূর্তির দেহে মিশরীয় পোষাক হলেও চুলের আকার রোমান্দের মতোই। প্রবেশদ্বারের মাথায় দুপাশে ডানা ছড়িয়ে বাজপাখি অর্থাৎ হোরাস,  দুপাশে দাড়িওয়ালা সাপ, তার মাথায় ফারাও-এর মুকুট, ইনি হলেন গ্রীক দেবতা অগাথোডেমন (মিশর ও গ্রীসের জগাখিচুড়ি ধর্মীয় প্রভাবের ফল), তাঁর উপরে স্বয়ং মেডুসা রাগী চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছেন প্রবেশকারীদের দিকে। এরপর দেওয়ালে ছবি এপিস বুলের, তাকে গলায় নেকলেস-সহ হার (পেকটোরাল) পরিয়ে দিচ্ছেন স্বয়ং ফারাও, আর একদিকে রয়েছেন দেবী মাত। আর একটু এগিয়ে গেলে মূল সমাধিকক্ষ, তার দরজার দুপাশে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং আনুবিস। ঢুকেই দেওয়ালে অসাধারণ একটি ছবি। দেবতা ওসাইরিসের মামিফিকেশন করছেন আনুবিস, দুপাশে দাঁড়িয়ে হোরাস (বাজ-মুখী) আর থথ (আইবিস-মুখী)। এই ঘর থেকেই শুরু হয়ে যায় সারি দিয়ে সমাধির গর্ত, একটি-দুটির পাথরের আবরণ এখনো আছে, বাকি সবই খোলা। বেশ গা ছমছমে ব্যাপার, ভাবছিলাম সব আলো যদি কখনো নিভে যায় আনুবিস কি এসে দেখা দেবেন? তবে তার আগেই সামাহ আমাদের ডেকে নিয়ে দেখাতে থাকলো যেখান দিয়ে সেই হতভাগ্য গাধা নীচে পড়ে গিয়েছিল, তারপর আমাদের নিয়ে গেল আর একটি প্রশস্ত হলঘরে যেখানে একটি কাচের বাক্সে রাখা রয়েছে অসংখ্য হাড়গোড়, এসব নাকি মানুষ আর ঘোড়ার হাড়। রোমান সেনাপতি বা সর্বাধিনায়ক কারাকাল্লা (মার্কাস অরেলিয়াস) এখানে বহু আলেকজান্দ্রিয়ার মিশরীয় বাসিন্দাদের (সম্ভবতঃ সম্রাটকে নিয়ে উপহাস-মশকরায় কোনোভাবে লিপ্ত হয়েছিলেন তাঁরা), তাদের পোষ্য ঘোড়া ইত্যাদি সব একত্রিত করে নৃশংসভাবে হত্যা করেন, এসব হাড় নাকি সেই হত্যালীলার নিদর্শন। তবে ঘোড়ার হাড়গুলো কোনো যুদ্ধক্ষেত্র থেকেও এসে থাকতে পারে, এ-ব্যাপারে দ্বিমত আছে।
     
    ক্যাটাকম্বের বাইরে রাখা সারকোফেগাস

     
    আধ-ভাঙ্গা সান-ডায়াল আর স্ফিঙ্কস

     
    ক্যাটাকম্ব 

     
    ক্যাটাকম্বে নামার শুঁড়িপথ 

     
    সমাধিস্থল নীচে 

     
    সমাধিক্ষেত্রের প্রথম প্রবেশদ্বারে অগাথোডেমন আর মেদুসা 

     
    ক্যাটাকম্ব-এর স্থপতি 

     
    হাড়মালা ছাড়ো,ফুলোমালা পরো ...

     
    গর্ভগৃহের দরজায় আনুবিস 

     
    ওসাইরিসের মামিফিকেশন করছেন আনুবিস, সঙ্গে আছেন হোরাস ও থথ  (বুক অব দ্য ডেড-এর পাতা থেকে)

     
    ঘোড়া আর মানুষের হাড়গোড় 

    ক্যাটাকম্ব থেকে বেরিয়ে এসে এবার আমরা চললাম রোমান অ্যাম্ফিথিয়েটার দেখতে, যাওয়ার পথে বাস থেকেই দেখলাম পম্পেই-এর পিলার, এটির সঙ্গে পম্পেই-এর কোনো সম্পর্ক নেই, এটি রোমান সম্রাট ডায়োক্লেশিয়ান-এর আলেকজান্দ্রিয়া জয়ের স্মারক একটি বিজয়-স্তম্ভ, যেটি বানানো হয়েছিল আনুমানিক ৩০০ খ্রীষ্টপূর্বে। এখানে আমরা নামি নি। বৃষ্টি এতক্ষণ ধরে এসেছিল, আবার শুরু হলো। আর তেমনি সরু রাস্তায় ঢুকে পড়লো বাস। সঙ্গে সঙ্গে হুটার বাজিয়ে পুলিশের গাড়িও এসে গেল। যা ট্রাফিক জ্যাম দেখেছিলাম, পুলিশ না থাকলে বা একা প্ল্যান করলে ওই গেরো থেকে সময়-মতো বেরিয়ে আসা একেবারেই অসম্ভব হতো! এখানে এক অদ্ভুত জিনিস দেখলাম, যত ছোটো ছোটো ব্যক্তিগত গাড়ি দেখছি সবই দেখি  মার্সিডিজ বা অডি বা ওই গোত্রের। সামাহ বলল তার কোনো মানে নেই, এখানে প্রচুর ছোটো ছোটো কারখানা আছে যেখানে গাড়ির বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন অংশ বা যন্ত্রাংশ জুড়ে দিয়ে অভিনব গাড়ি বানিয়ে দিয়ে দেয়। মানে আমি একটা গাড়ি বানালাম, যার পশ্চাদ্দেশ হল অডি, ইঞ্জিন হল মার্সিডিজের, সামনের বনেট হলো ফোর্ডের, এইরকম সব। আর সত্যি দেখি সার দিয়ে সেরকম অর্ধেক গাড়ির অংশ রাখা রয়েছে, এক এক ব্র্যান্ডের! কি কান্ড! বিস্ময় কাটতে না কাটতেই এসে হাজির হলাম রোমান থিয়েটারের দরজায়।
     
    পম্পেই-এর পিলার

    রোমান থিয়েটার – কম-এল-ডিকা – তৈরী হয়েছিল আনুমানিক তৃতীয় বা চতুর্থ শতকে। এটি সম্পূর্ণ রোমান শিল্পকলার নিদর্শন, দূরদূরান্তেও মিশরের কোনোকিছুর সঙ্গে খাপ খায় না। ভিতরে রয়েছে একটি মুক্তাঙ্গন থিয়েটার, তার চারপাশ দিয়ে ধাপে ধাপে বসার জায়গা, বসার জায়গা-গুলো সবই মার্বেল পাথরের আর তার গায়ে আজও নম্বর লেখা আছে দেখা যায়। গান-বাজনা, বিতর্ক, মল্লযুদ্ধ, আলোচনা ইত্যাদির জন্যেই এই অ্যাম্ফিথিয়েটার-টি ব্যবহার হতো।  এখান থেকে প্রশস্ত পথ ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলে রোমান বাথ-এর জায়গা। লাল ইঁট দিয়ে তৈরী সারি সারি কৃত্রিম জলাশয়ের  ধ্বংসাবশেষ। এগুলোর কোনোটা ছিল গরম জলের জন্যে নির্দিষ্ট, কোনোটা ঠান্ডা জলের। অর্ধভগ্ন কয়েকটি স্তম্ভ এখনো দাঁড়িয়ে আছে ভূমিকম্পে বার বার এলাকাটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরেও। আর বাকি পাথর, মাটি ছেয়ে গেছে মসৃণ ঘাসজমিতে, কোথাও কোথাও জংলী ফুলও উঁকি মারছে এদিক-ওদিক। কম-এল-ডিকা থেকে বেরিয়ে এবার আমরা চললাম ভূমধ্যসাগরের তীরে, সেখানেই আমরা আজ মধ্যাহ্নভোজ সারবো অ্যাথিনিওস নামে একটি গ্রীক রেস্তোঁরায়। 
     
    কম-এল-ডিকার দৃশ্য 

     
    রঙ্গমঞ্চ

     
    রোমান বাথ 

    ভূমধ্যসাগর দেখতে দেখতে মধ্যাহ্নভোজন সেরে রাস্তা পার হয়ে আমরা বাইরে থেকে দেখলাম কাইত-বে দুর্গ (সিটাডেল অব কাইত-বে , পঞ্চদশ শতকে সুলতান কাইত-বে নির্মিত), এটি ফারোস দ্বীপের উপরেই; এই দুর্গের এলাকাতেই  নাকি ছিল আলেকজান্দ্রিয়ার বিখ্যাত লাইটহাউজ, যা তৈরী হয়েছিল দ্বিতীয় টলেমি ফিলাদেলফিয়াস-এর রাজত্বকালে, ২৮০ খ্রীষ্টপূর্বের আশেপাশে। এর উচ্চতা ছিল প্রায় একশো মিটারের কাছাকাছি। তিনটি তলে বিভক্ত এই লাইটহাউজ উপর্যুপরি ভূমিকম্পে অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিশেষতঃ উপর দিকের অংশটি ভেঙে পড়ে। পড়ে শোনা যায়, বাইজেন্টাইন সম্রাট আবিদ-আল-মালিক-এর চক্রান্তে রটিয়ে দেওয়া হয় এই লাইটহাউজের নীচে গুপ্তধন আছে। অতএব সম্মিলিত খোঁড়াখুঁড়ির ফলে একসময় পুরো লাইটহাউজ-টি ভেঙে পড়ে। লাইটহাউজের একেবারে মাথায় বসানো ছিল জিউস আর পোসেইডনের মূর্তি, পরে সমুদ্রের তলদেশ থেকে পোসেইডনের মূর্তিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
     
    ভূমধ্যসাগর - একেবারে ডানদিকে দূরে দেখা যাচ্ছে সিটাডেল অব কাইত-বে,যেখানে ছিল লাইটহাউস

     
    কাইত-বের দুর্গ 

    এবার আমরা চললাম আলেকজান্দ্রিয়া-র অন্যতম আকর্ষণ সুবিখ্যাত গ্রন্থাগার দেখতে। বিবলিওথেকা আলেকজান্দ্রিয়া অর্থাৎ আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার। কিন্তু এটি নবনির্মিত। মূল গ্রন্থাগারটি আনুমানিক ৩০০ খ্রীষ্টপূর্বে দ্বিতীয় টলেমির রাজত্বকালে ডিমিট্রিয়াস-এর তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয়। এর সংগ্রহে ছিল প্রায় দুই লক্ষ বই, স্ক্রোল ইত্যাদি। পরে ৪৮ খ্রীষ্টপূর্বে জুলিয়াস সীজার আলেকজান্দ্রিয়া অবরোধ করলে, তীরবর্তী মিশরীয় জাহাজগুলিতে আগুন লাগানোর নির্দেশ দেন। সেই আগুন শহরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং গ্রন্থাগারেও ভয়াবহ আগুন লেগে বহু বই, স্ক্রোল, অন্যান্য লিখিত তথ্যাদি, পুড়ে নথি নষ্ট হয়ে যায়। এরপরেও গ্রন্থাগারটিকে আবার গড়ে তোলা হয়, সংগ্রহ বাড়িয়ে তোলা হয় নানা উপায়ে। কিন্তু ক্লিওপেট্রার সময়ের পর থেকেই এই গ্রন্থাগার আবার বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে থাকে এবং সম্ভবতঃ খলিফা উমর-এর নির্দেশে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেওয়া হয় এই গ্রন্থাগারের কফিনে বাকি সব বই আর স্ক্রোলগুলিকে আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করে। সুতরাং এখন আমরা যে গ্রন্থাগার দেখছি এটি সেই কুলীন প্রাচীন গ্রন্থাগারটি নয়, তা হারিয়ে গেছে কালের অতলে। নতুন গ্রন্থাগারটির নির্মাণের ভাবনা শুরু হয় ১৯৭৪ সন থেকে আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে, সঙ্গে ইউনেস্কো আর রাষ্ট্রসংঘ সাহায্য করে আর নির্মাণের পর গ্রন্থাগারটি খুলে দেওয়া হয় ২০০২ সনে। এর আকার সমুদ্রের দিক থেকে দেখলে একটি উদীয়মান সূর্য। কিছুটা বোঝা গেলেও আমাদের সমুদ্রের দিক থেকে দেখার উপায় ছিল না। ভিতরে শুধু পড়ার জায়গাটুকুই প্রায় ২০০০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে। এগারোটি তল জুড়ে কত যে বই থরে থরে সাজিয়ে রাখা, আর প্রচুর পড়ার টেবিল, কোথাও কোথাও কম্প্যুটার বসানো রয়েছে, প্রয়োজন-মতো ব্যবহারের জন্যে। আমরা বিভিন্ন অলিন্দে ঘুরে ঘুরে উপর-নীচ করে বই দেখতে শুরু করলাম, চেনা নামও দেখে ফেললাম বেশ কিছু। আর কে নারায়ণের বইগুলো দেখে বেশ ভালো লাগলো।  এই গ্রন্থাগারে মূলতঃ আরবী, ইংরাজী আর ফ্রেঞ্চ ভাষার বই-এর সংগ্রহ রয়েছে।  গ্রন্থাগারটি ছটি বিভাগে বিভক্ত – কলাবিভাগ ও মাল্টিমিডিয়া, দৃষ্টিহীনদের জন্যে বিভাগ, শিশু বিভাগ, তরুণদের বিভাগ, মাইক্রোফর্ম এবং সবশেষে দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহ। আমরা প্রথম তিনটি বিভাগ ঘুরে দেখলাম। এত সুন্দর পরিবেশ আর ব্যবস্থা, আমাদের সকলের বাড়িতেই এর একটা ক্ষুদ্র সংস্করণ থাকলে বেশ হতো! অবশ্য যা আছে তাই বা ধুলো ঝাড়ার  আর গুছিয়ে রাখার সময় মেলে কই! বেরিয়ে আসার আগে স্যুভেনির হিসেবে সংগ্রহ করে নিলাম খান চারেক বুকমার্ক, বিবলিওথেকা আলেকজান্দ্রিয়ার স্মৃতি। এখানে চারটি প্রদর্শনীশালাও আছে, তবে আমরা সময়ের অভাবে যাই নি সেখানে। গ্রন্থাগারের ঠিক উল্টোদিকেই রয়েছে আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রবেশদ্বার। সেখান থেকেই আমাদের ফিরে আসার পর্ব শুরু হলো আলেকজান্দ্রিয়া-কে বিদায় জানিয়ে। এখান থেকে আমরা সোজা চলে যাবো গিজায়, সেখানে দেখবো লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো, সঙ্গে প্যাপাইরাস ফ্যাক্টরি।
     
    বিবলিওথেকা আলেকজান্দ্রিয়া 

     
    গ্রন্থাগারের ভিতরের দৃশ্য - বই পড়ুন ও পড়ান 

     
    গ্রন্থাগার চত্বরে - আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৯৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • hu | 72.24.***.*** | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:০১528788
  • নুতের গল্পটা দারুণ। এই ছবিটা বহু বছর না দেখেও আমার খুব ডিটেলে মনে ছিল। ২০০৭এ যখন দেখেছি তখন ভ্যালি অফ কিংসে টুম্বের ভিতর ছবি তুলতে দিত না। তাই আমার কাছে কোনো ছবি ছিল না, কিন্তু স্মৃতিতে থেকে গেছিল। পরে যখ্ন গেলাম এই প্যাপিরাসটা কিনেছিলাম। আসল ছবিটায় এরকম দুজন নুত আছে - একে অপরের মিরর ইমেজ। আমি অর্ধেকটা অ্যাফোর্ড করতে পারলাম।
     
  • hu | 72.24.***.*** | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:০৬528789
  • আলেক্সান্দ্রিয়ার লাইব্রেরী আরেক অনন্য অভিজ্ঞতা। সেই প্রাচীন গ্রন্থাগার আর নেই। কিন্তু নতুনটাও ভারী সুন্দর ডিজাইন করেছে। বিশাল কালেকশন। গিয়ে দাঁড়ালে রোমাঞ্চ হয়। আমরা মে মাসে খুব ভালো আবহাওয়া পেয়েছিলাম। একদম ঝলমলে দিন। রাস্তায় ট্রাম দেখে খুব ভালো লেগেছিল।
     
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:d48f:275c:cb4c:***:*** | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৩:২১528798
  • সঙ্গে আছি। একটা ছোট্ট অনুরোধ। যতদূর মনে পড়ছে ৩০০ খ্রিস্টপূর্বে রোম রিপাবলিক। সম্রাটরা আরো অনেক পরের। তারিখটা একবার একটু চেক করবেন?
     
    আলেক্সান্ডারের কার্টুশ আছে লাক্সরের একটি মন্দিরে। ছবি তুলে থাকলে দেবেন প্লিজ।
  • kk | 2607:fb90:eab2:c595:cd4d:6d7e:49e5:***:*** | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৪:৪৫528800
  • বাঃ
  • সুদীপ্ত | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৩528806
  • ধন্যবাদ hu. হ্যাঁ নুতের গল্পটা বেশ! আমরা ভ্যালি অব দ্য কিংস-এ চতুর্থ আর নবম রামেসিসের সমাধির গর্ভগৃহের ছাদে এই মিরর-ইমেজটা দেখেছিলাম, পিঠোপিঠি দুদিকেই নুত-এর একই ছবি। পরে লেখার সময় দেবো। আলেকজান্দ্রিয়ার ট্রাম, অটো, ট্রামের ট্র‍্যাকের গ্র‍্যানাইটের ইট আর আকাশে ট্রামের তারের ক্রিসক্রস - হুবহু কলকাতা! 
     
    ধন্যবাদ পলিটিশিয়ান!  তারিখ মোটামুটি ঠিকই আছে, তবে ঠিক বলেছেন, কারাকাল্লা বা সীজার সম্রাট নন, সেনেট নিয়োজিত সর্বাধিনায়ক বা সেনাপতি বলা যেতে পারে, ওটা বদলে দেবো। সামাহ আমাদের কার্নাক মন্দিরে আলেকজান্ডারের কার্তুশ দেখিয়েছিল, এইটা সম্ভবত:, এতো ছবির মাঝে খুঁজে পাওয়াও চাপের।
     
  • সুদীপ্ত | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৭528807
  • লাক্সর মন্দিরেও আলেকজান্ডারের রিলিফ থাকার কথা, সামাহ-ই বলেছিল, আমরা ভিতরে ঢুকিনি যদিও। কার্নাক-এর গল্প পরে দেবো।
     
    ধন্যবাদ kk! 
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:1d42:15de:cd7c:***:*** | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৩৬528808
  • একদম ডান দিকের কার্তুশটা আলেক্সান্ডারের। যেটার একদম ওপরে একটা ভালচার।
  • সুদীপ্ত | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৩৪528812
  • বাহ, যাক ছবিটা আলাদা করে রাখবো তাহলে। ছবিগুলো তুলে এনেছি এইজন্যেই, পরে সময় করে কিছু যদি পাঠোদ্ধার করা যায়। 
  • | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:৫০528827
  • আকেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরিতে বাংলা বই আছে রবীন্দ্রনাথের তসলিমা নাসরিনের। শিবাজী দেখিয়েছিলেন। 
     
    মিশর একটা ওভারহোয়েল্মিং ব্যপার।  লেখায় ছবিতে জমজমাট।
  • সুদীপ্ত | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:০২528830
  • দমদি, আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরীতে কিন্তু বাংলা বই এখনো রাখা যায় না যতদূর শুনেছি, মানে বাংলা ওদের রেজিস্টার্ড ভাষা নয় সংগ্রহ নথিভুক্ত করার জন্যে, শুধু ইংরাজি,  ফ্রেঞ্চ আর আরবী। কেউ নিয়ে গিয়ে তাকে রেখে দিয়েছে হয়ত, বলা যায় না। আর কে নারায়ণ আর রবীন্দ্রনাথের কিছু অনূদিত বই দেখেছি। 
  • | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:২৮528831
  • হ্যাঁ হ্যাঁ ইংরিজি আর ফরাসী অনুবাদ রাখা। র‍্যাক নম্বর ৮৯১।  বাংলা মানে বালাভাষার বইয়ের অনুবাদ আর কি। 
  • সুদীপ্ত | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৪৯528833
  • ওহো হ্যাঁ অনুবাদ তো আছেই, দেখেছি। তবে এই লাইব্রেরীর ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল কে জানে, মানে ঐ ট্যুরিস্ট স্পটের ব্যাপারটুকু ছাড়া, ডাইভার্সিটির দিক থেকে বেশ পিছিয়ে।
  • মনমাঝি | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:১১528914
  • লেখাটা দারুন লাগল। পুরনো স্মৃতি মনে পড়িয়ে দিল কিছু কিছু। ২০০৭-এ এক বিশেষ পরিস্থিতিতে আমিও গিয়েছিলাম মিশরে মাস তিনেকের জন্য। এমাথা থেকে ওমাথা ঘুরে বেড়িয়েছি এলোমেলো। সে নিয়ে পরে অন্য একটা বাংলা ব্লগে লিখেওছি। মজার ব্যাপার হল যখন যাই তখন ভেবেছিলাম বড়জোর হপ্তাখানেকের জন্য যাচ্ছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা তিন মাসে গিয়ে দাঁড়ায়। সবাই যায় মমি / পিরামিড / প্রাচীণ ইতিহাস ইত্যাদি দেখতে। আমি গিয়েছিলাম একদম কিছু না দেখার জন্য!  স্রেফ নিজের কাছ থেকে পালাতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখব না দেখব না করতে করতে উত্তরে আলেক্সান্দ্রিয়া থেকে দক্ষিনে আবু সিম্বেল পশ্চিমে লিবীয় মরুভূমি থেকে পূবে সিনাই আর তার মধ্যবর্তী অনেক কিছুই দেখাদেখি হয়ে গেল। যখন গিয়েছি তখন এদের ইতিহাস প্রায় কিছুই জানতাম না। ফলে যা দেখেছি তার অনেক কিছুরই মর্মার্থ বুঝিনি। দেশে ফিরে ২-৩ বছর পরে যখন শখ করে একটা বাংলা ব্লগের জন্য লিখতে বসে দেখা বিষয়গুলি নিয়ে একটু রিসার্চ করতে বসলাম আসলে কি দেখেছি বোঝার জন্য -- তখন বুঝলাম না বুঝেই কি জিনিস দেখে এসেছি!!! হা হা হা...
     
  • সুদীপ্ত | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৩৩528929
  • ধন্যবাদ মনমাঝি! আমরা মোটামুটি দেখেশুনেই গিয়েছিলাম, ফেরার পর মনে হচ্ছে সেসবও কিছুই নয়। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন